আবিসিনিয়া - ১

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ৩১/০৩/২০১৫ - ৩:০৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আবিসিনিয়া হল ইথিওপিয়ার আদি নাম। প্রায় তিন হাজার বছর আগে মালিকা হাবেশিয়া নামক একজন রানী আবিসিনিয়া দেশটি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পরিচালনা করছিলেন। একদিন মালিকা হাবেশিয়া স্বপ্ন দেখেলন তাঁর কোলে একটি ছোট্ট শিশু খেলা করছে আর তিনি পরম মমতায় শিশুটির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। হঠাত ঘুম ভেঙ্গে যেতেই রানী টের পেলেন তিনি গর্ভবতী! অতঃপর তিনি একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম দিলেন। কিন্তু আশ্চর্যজনক ঘটনা হল শিশুটির একটি পা দেখতে ঠিক ছাগলের পায়ের মত! রানী খুব দুঃখ পেলেও তা প্রকাশ করলেন না। মেয়েটিকে তিনি সুনিপুনভাবে মানুষ করতে লাগলেন। রানীর মৃত্যুর পর এই মেয়েটির উপর পড়ল রাজ্য শাসনের ভার। রুপে-গুনে যতই অতুলনীয় হোক না কেন মেয়েটির মনে সব সময়ই তার পা নিয়ে একটা হতাশা কাজ করত! একদিন মেয়েটি জানতে পারল আবিসিনিয়ার আর এক রাজা সলোমন এর কথা। একমাত্র সলোমন-ই নাকি পারবেন তার মনুষ্য পা ফিরিয়ে দিতে! মেয়েটি চলে গেল রাজার কাছে। তাঁকে অনুরোধ জানালো পা ঠিক করে দেয়ার জন্য। মেয়েটিকে দেখেই রাজা কেমন যেন আনমনা হয়ে গেলেন, যাকে বলে ‘প্রথম দর্শনেই প্রেম’। তার পা ঠিক করে দিলেন আর বিয়ে করলেন মেয়েটিকে। কে এই মেয়ে? এতক্ষণে এই প্রশ্ন নিশ্চই সবার মনে উদয় হয়েছে! এই মেয়েটি হল ‘শেবার রানী’! ক্লাস নাইন-টেনে পরার সময় আমরা খুব কমন একটা ট্রান্সলেশন করতাম- কিং সলোমন আর কুইন অব শেবা কে নিয়ে। এই হল এদের অমর প্রেম কাহিনী! যদিও এই প্রেম কাহিনী খুব জনপ্রিয় একটা মিথ ছাড়া আর কিছুই নয়, তবে ‘শেবার রানী’-র কথা কিন্তু পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থেও আছে। কোরাআন শরিফে ‘শেবার রানী’ কে উল্লেখ করা হয়েছে রানী বিলকিস নামে। বিলকিস সূর্যের উপাসনা করতেন। পরবর্তীতে রাজা সলোমন (নবী সোলায়মান আঃ) তাঁকে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করেন। বাইবেল-এ ‘শেবার রানী’ কে উল্ল্যেখ করা হয়েছে দক্ষিনের রানী হিসেবে।

http://www.sachalayatan.com/files/imagefield_thumbs/20140601_235601.jpg?1427714903
(বোলে ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট)

জুন, ২০১৪। দিল্লী থেকে নেয়া হল ইথিওপিয়ার ভিসা। অতঃপর চিরাচরিত লম্বা জার্নি ঢাকা-দুবাই-আদ্দিস-এন্তেব্বে-আদ্দিস। আদ্দিস আবাবা-র বোলে ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট আমার কাছে একটা খুবই ভীতিকর নাম। কারন বছর দুয়েক আগে ক্যামেরুন যাওয়ার সময় এই এয়ারপোর্টে যে পরিমান নাস্তানাবুদ হতে হয়েছিল তা বোধহয় আমার জীবদ্দশায় ভোলা মুশকিল! তবে এবার কিন্তু কোন ঝামেলায় পরতে হয় নাই। যেহেতু ইথিওপিয়ার ভিসা নেয়া ছিল, তাই খুব উষ্ণ অভ্যর্থনার মাধ্যমে আদ্দিসে প্রবেশ করে রাত প্রায় সাড়ে এগারটায় হোটেল কেনেনিসা-য় চেক ইন করলাম। ইথিওপিয়ান অ্যাথলেট কেনেনিসা বেকেলে-র কথা মনে আছে নিশ্চয়ই। বিশ্ব রেকর্ড আর অলিম্পিক রেকর্ডের অধিকারী এই খেলোয়াড় হোটেলটির মালিক। রুমে ঢুকে একটু ফ্রেশ হয়েই দিলাম ঘুম। মরণ-ঘুম যাকে বলে!

http://www.sachalayatan.com/files/imagefield_thumbs/20140609_081920.jpg?1427714189
(হোটেল কেনেনিসা)

জ্ঞান আহরণের জন্য চীনদেশে যাওয়ার কথা বলা আছে। আর আমার মতে যদি কেউ দেশপ্রেম কাকে বলে জানতে চায় তাহলে অবশ্যই তার ইথিওপিয়া যাওয়া উচিত। ইথিওপিয়া হল আফ্রিকার একমাত্র দেশ যেখানে কখনো কোন উপনিবেশ স্থাপিত হয় নি, আর এ কারনে ইথিওপিয়ানরা অনেক গর্বিত। পুরো দেশটি আরো পাঁচটি দেশ দিয়ে ভূমি-পরিবেষ্টিত। আয়তনে ইথিওপিয়া হচ্ছে বাংলাদেশের প্রায় দশগুণ কিন্তু জনসংখ্যা মাত্র চুরানব্বই মিলিয়ন। ইসলামের ইতিহাসে প্রথম হিজরত হয় ৬১৫ সালে আর সে সময় মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর নির্দেশে তাঁর অনুসারীগন মক্কা থেকে ইথিওপিয়ায় হিজরত সম্পন্ন করেন। তাই দেশটির রয়েছে বেশ পুরোনো ধর্মীয় ঐতিহ্য। এখানে প্রতিটি ধর্মের লোক স্বাধীনভাবে তার নিজ নিজ ধর্ম পালন করছে, কারো ব্যাপারে কেউ নাক গলানোর নেই। আছে অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী। একদিন খেয়াল করলাম একটু পর পর আনন্দ করতে করতে শুধু বিয়ের গাড়ি যাচ্ছে। ব্যাপারটা কেমন জানি অস্বাভাবিক লাগছিল! পাশে বসে থাকা ডক্টর মেসকেরেম কে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম নেক্সট সপ্তাহ থেকে যেহেতু মুসলমানদের রমজান মাস শুরু হবে, তাই ইসলাম ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে অন্য ধর্মের লোকেরা বিয়ে কাজটা শেষ করে ফেলছে রোজা শুরুর আগেই। একেই বলে সকল ধর্মের সহবস্থান!

পুরো ভ্রমনে সাথে ছিল রবার্ট নামে এক দেশপ্রেমিক ড্রাইভার। বয়স চল্লিশ হবে, চুলগুলো রজার মিলার মত, সদা হাস্যময় এক লোক। রবার্ট আগে ট্যুরগাইড হিসেবে কাজ করত। সে কারনে ইথিওপিয়ার ইতিহাস আর আদ্দিসের অলি-গলি তার নখদর্পণে। রবার্টের কাছে প্রথম শুনলাম শাসক হাইলা সিলাসির নৃশংসতার কথা। এত অকপট আর সুনিপুণ কথা বলার ঢং যে কাউকে মুগ্ধ করবে তাতে কোন সন্দেহ নাই। ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি যেকোন রোগা-পটকা লোককে ‘ইথিওপিয়ার দুর্ভিক্ষ’ নামে অভিহিত করতে। তাই মনে মনে ভাবছিলাম এই ব্যাপারটা জিজ্ঞেস করবো নাকি রবার্ট কে! যেই ভাবা সেই কাজ, জিজ্ঞেস করা মাত্রই রবার্ট যেন কিছুটা খেপে গেল (আমার তেমনটাই মনে হল)। এরপর যা জানতে পারলাম তাতে মনে হল ‘হলুদ সাংবাদিকতা’ পারে না এমন কিছু নাই! ঘটনাটা একটু না বললেই না। অনেক বছর আগের ঘটনা – ইথিওপিয়ার এক মরুভূমিতে খননকাজ করার জন্য বিদেশী এক প্রতিষ্ঠান অনেক শ্রমিক নিয়োগ দিল। দিনের পর দিন কাজ করার পরও তাদের মজুরী দেয়ার নাম নাই! এমনকি খাবার-পানি কিছুই দেয়া হচ্ছিল না তাদের। না খেয়ে লোকগুলো দুর্বল হয়ে পড়ল, আস্তে আস্তে হাড্ডি বের হয়ে যেতে লাগল, বেশকিছু লোকও মারা গেল। লাশের গন্ধ পেয়ে শকুনের ঝাঁক এসে মৃত ব্যক্তিদের খুবলে খুবলে খেতে লাগল। এই খবর চলে গেল বহিবিশ্বের কাছে। সাংবাদিকরা চলে এল তাঁদের ক্যামেরা নিয়ে, ছবির পর ছবি তুললো তারা। তারপর ছবিসহ বড় বড় পত্রিকার শিরোনাম “ইথিওপিয়ার দুর্ভিক্ষে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু”! কি ঘটে আরে কি রটে!

http://www.sachalayatan.com/files/imagefield_thumbs/20140609_141321.jpg?1427714423
(দেশপ্রেমিক রবার্ট)

আদ্দিসের মেয়েদের সৌন্দর্যে আমি পুলকিত! এত সুন্দর ওরা আর ছিমছিমে গড়ন! গভীর রাতে মেয়েরা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে, কোন ইভটিজিং নেই! এও সম্ভব নাকি! ওদের যত্ত ফ্যাশন সব যেন চুলকে ঘিরে। মাথা ভরা বেনী, নয়তো ফুটবলের মত কোঁকড়ানো, অথবা মাথার কিছুটা ন্যাড়া করা! ভালোই লাগে দেখতে, ওদের চেহারার সাথে মানিয়ে যায়!

হাবেশা সঙ্গীত ও নৃত্য উপভোগ করা ছিল ইথিওপিয়া ভ্রমনের সবচেয়ে উল্ল্যেযোগ্য অংশ। নৃত্যশিল্পীদের পুরো শরীরটা যেন স্প্রিং এর তৈরী, আর এমন অদ্ভুতভাবে মাথা ঝাঁকাচ্ছিল যে আমারই মাথা ঘুরে যাচ্ছিল! হাবেশা বাদ্যযন্ত্রের সুরেলা আওয়াজ আর মিহি সুরের সঙ্গীত সেই সন্ধ্যাটাকে যেন আরো মোহনীয় করে তুলেছিল!

http://www.sachalayatan.com/files/imagefield_thumbs/20140609_200818.jpg?1427714583
(হাবেশা নৃত্য)

http://www.sachalayatan.com/files/imagefield_thumbs/20140609_201640.jpg?1427714653
(হাবেশা সঙ্গীতশিল্পী)

http://www.sachalayatan.com/files/imagefield_thumbs/20140609_204151.jpg?1427714754
(ইনজেরা - ইথিওপিয়ার জাতিয় খাবার)

http://www.sachalayatan.com/files/imagefield_thumbs/20140608_175352.jpg?1427715051
(আদ্দিস আবাবা)

http://www.sachalayatan.com/files/imagefield_thumbs/20140608_172730.jpg?1427715174

http://www.sachalayatan.com/files/imagefield_thumbs/20140608_062742.jpg?1427715279

[সামশাদ]

ছবি: 
24/08/2007 - 2:03পূর্বাহ্ন
24/08/2007 - 2:03পূর্বাহ্ন
24/08/2007 - 2:03পূর্বাহ্ন
24/08/2007 - 2:03পূর্বাহ্ন
24/08/2007 - 2:03পূর্বাহ্ন
24/08/2007 - 2:03পূর্বাহ্ন
24/08/2007 - 2:03পূর্বাহ্ন
24/08/2007 - 2:03পূর্বাহ্ন
24/08/2007 - 2:03পূর্বাহ্ন

মন্তব্য

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

ছবির কম্যান্ডে বোধহয় কোনও ভুল হচ্ছে

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

হাসিব এর ছবি
  • ক্লাসিকাল আবিসিনিয়ার কোন নির্ভরযোগ্য ম্যাপ আছে? আমাদের দেশে যে হাবশি শাসকেরা ছিলো তারা কি এই আবিসিনিয়ার লোক?
  • তারপর ছবিসহ বড় বড় পত্রিকার শিরোনাম “ইথিওপিয়ার দুর্ভিক্ষে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু”! কি ঘটে আরে কি রটে!

    মানে কি ইথোপিয়াতে কোন দুর্ভিক্ষ ঘটেনি? সবই মিডিয়ার অপপ্রচার?

অতিথি লেখক এর ছবি

ট্যুর গাইড সব সময় নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র নন। বরং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রোপাগান্ডা মেশিন। তাজমহল দেখতে গিয়েই সেইটা বুঝেছিলাম।

খরার জন্য ১৯৮৩-৮৪ সালে ইথিওপিয়াতে দুর্ভিক্ষ হয়।
http://en.wikipedia.org/wiki/1983%E2%80%9385_famine_in_Ethiopia

সত্যপীর এর ছবি

আমাদের দেশে যে হাবশি শাসকেরা ছিলো তারা কি এই আবিসিনিয়ার লোক?

আবিসিনিয়ার আরবি নাম হাবশ, সেইখান থেকে হাবশি। অবশ্য পরে ইনল্যান্ড ভারতে আফ্রিকান হইলেই হাবশি ডাকা হইত মনে হয়, সবাই আবিসিনিয়ান না। আর পশ্চিম ভারতের আফ্রিকানদের ডাকা হইত সিদ্দি, কুপাকুপি নেভাল কমান্ডো ছিল এই সিদ্দির গুষ্টি। মোগল বিটিশ ডাচ সবেই ডরাইত সিদ্দি নেভিরে। যাই হোক শক্তপোক্ত খাঁটি কয়জন আবিসিনিয়ান ভারতে দাপট দেখায় গেছিলেন, তাদের পয়লা নম্বর হাবশি লিডারের নাম ছিল মালিক অম্বর। আসল নাম "চাপু"। দক্ষিণ আবিসিনিয়ায় জন্মানো বালক। পরে দাসবাজারে বিক্রি হয়ে আরব ইত্যাদি ঘুরতে ঘুরতে মুসলমান হইলেন, নাম হইল মালিক অম্বর। দাক্ষিণাত্যে এসে মিলিটারিতে জয়েন করার পরে বুদ্ধিবলে লাফ দিয়ে কমান্ডার হয়ে যান একসময়। বাপব্যাটা আকবর জাহাঙ্গীর দুইটারেই প্রচুর না'হক পেইন দিয়া গেছেন মালিক অম্বর, এদিকে বিটিশ ডাচ পর্তুগীজ সবাই তার ভালুবাসা চাইছে কিন্তু পুরা পায় নাই মন খারাপ

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

দেবদ্যুতি

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ সবাইকে! কিন্তু ঠিক বুঝতে পারলাম না ছবিগুলো এভাবে ওলটপালট হল কেমন করে! ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে গ্রহণ করবেন প্লিজ!

(সামশাদ)

আয়নামতি এর ছবি

ট্যুর গাইডের উপর ভিত্তি করে ইথিওপিয়ার দুর্ভিক্ষ নিয়ে এভাবে বলাটা ভালো লাগেনি।
ইথিওপিয়া নিয়ে আপনার উচ্ছ্বাস ভালোই লাগলো।
আরো লেখা পাবো নিশ্চয় আপনার কাছ থেকে হাসি
আপনি আপু না ভাইয়া জান্তে পারলে একটা প্রশ্ন করতাম।

অতিথি লেখক এর ছবি

আয়নামতি, হা .... হা.... হা....
আমি আপু, এইবার জলদি প্রশ্নটা করে ফেলুন (ওহহো, ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য)
- সামশাদ

আয়নামতি এর ছবি

হেহেহে আমাকেও হতাশ হতে হলু রে আপু। নিচে বলেছি কেন জান্তে চেয়েছিলাম খাইছে

মন মাঝি এর ছবি

আপনি আপু না ভাইয়া জান্তে পারলে একটা প্রশ্ন করতাম।

হুম! কেমন যেন জেণ্ডার বায়াস, লিঙ্গ বৈষম্য, ইত্যাদি ইত্যাদির গন্ধ পাচ্ছি! চাল্লু

****************************************

আয়নামতি এর ছবি

হুদাই গন্ধমন্ধ পাইলেই হবে নাকি হে! পোস্টের এই লাইনটা

আদ্দিসের মেয়েদের সৌন্দর্যে আমি পুলকিত! এত সুন্দর ওরা আর ছিমছিমে গড়ন!

ভাইয়া হলে তাকে লুল বলে মজা করতাম। তাই জান্তে চাওয়া। আপনাকে হতাশ হতে হলু কিন্তু দেঁতো হাসি

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

ক্যান? আপুরা লুল হইলে সমিস্যা কুথায়? হুয়াটস দি পোবলেম? চিন্তিত

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ইথিওপিয়া হল আফ্রিকার একমাত্র দেশ যেখানে কখনো কোন উপনিবেশ স্থাপিত হয় নি, আর এ কারনে ইথিওপিয়ানরা অনেক গর্বিত।

কমপক্ষে ১৯৩৬ থেকে ১৯৪১ সাল পর্যন্ত ইথিওপিয়া ইতালীর উপনিবেশ ছিল। আর ইরিত্রিয়াসহ হিসাব করলে সময়কালটার শুরু ১৮৯০ থেকে হবে। ১৯৪১ থেকে ১৯৫০ পর্যন্ত ব্রিটিশরাও শাসন করে গেছে। এই তথ্যগুলো জানা এবং ভেরিফাই করাটা মোটেও কঠিন কাজ না। লেখা পাঠকের পাতে দেবার আগে একটু ভেরিফাই করে না নিলে কি ঠিক হয়?

একেই বলে সকল ধর্মের সহবস্থান!

দুই বছর ইথিওপিয়াতে কাজ করেছেন এমন একজনের কাছ থেকে আমি ভিন্ন কাহিনী শুনেছি।

রবার্টের কাছে প্রথম শুনলাম শাসক হাইলা সিলাসির নৃশংসতার কথা।

হাইলে সেলাসি'র নৃশংসতার কথা একটু বিস্তারিত বলুন। কারণ, নিষ্ঠুরতা সত্ত্বেও ইথিওপিয়ান আর রাস্তাফারিয়ানদের কাছে সে ঐশ্বরিক মর্যাদা কী করে পায় সেটা বুঝতে চাই।

১৯৫৮ -এর দুর্ভিক্ষে ইথিওপিয়ার ২ কোটি লোকের মধ্যে কমপক্ষে ১ লাখ জন মারা যান।
১৯৬৬ -এর দুর্ভিক্ষে ইথিওপিয়ার ২ কোটি ৫৭ লাখ লোকের মধ্যে কমপক্ষে ৬০ হাজার জন মারা যান।
১৯৭২-১৯৭৪ -এর দুর্ভিক্ষে ইথিওপিয়ার ৩ কোটি লোকের মধ্যে কমপক্ষে ৫ লাখ জন মারা যান।
১৯৮৩-১৯৮৫ -এর দুর্ভিক্ষে ইথিওপিয়ার ৩ কোটি ৮৫ লাখ লোকের মধ্যে কমপক্ষে ৬ লাখ জন মারা যান।
- এই তথ্যগুলোও জানা এবং ভেরিফাই করাটা মোটেও কঠিন কাজ ছিলনা।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

এক লহমা এর ছবি

চলুক

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

শেবা'র রাণীর কাহিনীটা একটু গোলমেলে টাইপের, তার নামে ইয়াহুদী, কেরেস্তানী, ইসলামিক, আবেসিনীয় এবং আরও বিভিন্ন ঘরানার নানা রকম উপকথা প্রচলিত আছে। সবচেয়ে প্রচলিত ভাষ্য অনুযায়ী তার অবস্থান ছিল ইয়েমেন এ, আবিসিনিয়ায় নয়। বিশেষ করে ইসলামিক ভাষ্য অনুযায়ী বিলকিস নাম্নী এই রাণীর অধিকারে ছিল ইয়েমেন রাজ্য, সুলাইমান নবীর সাথে তার বিবাহ হয়(?), তার একটি পা ছিল ঘন লোমে আবৃত, মতান্তরে ছাগলের পা এর মত। ইথিওপিয়ান ভার্সনে অবশ্য শেবা'র রাণীর নাম মাকেদা, এবং তার পা ছিল স্বাভাবিক নারীর মতই।
সুলাইমান নবীর সাথে বিলকিসের সাক্ষাৎ কিংবা বিবাহের কাহিনীতেও রয়েছে নানা বৈচিত্র। অধিকাংশ সেমেটিক কাহিনী মতে সুলাইমানের বিপুল জ্ঞানের খবর জেনে তা পরীক্ষা করার জন্য রাণী বিলকিস স্বয়ং সুলাইমানের দরবারে হাযির হন। নানা প্রশ্নের মাধ্যমে তার জ্ঞানের বহর পরিমাপ করে সন্তুষ্ট হন এবং ফলস্রুতিতে সুলাইমানের প্রতি অনুরক্ত হন। আবেসিনীয় ভাষ্য মতে মাকেদার অপরূপ রুপের সুখ্যাতি শুনে সুলাইমান তাকে এক রাজকীয় ভোজসভায় নিমন্ত্রন করেন। মাকেদা সে নিমন্ত্রন রক্ষার্থে প্রাসাদে গমন করলে পানাহারান্তে সুলাইমান তাকে সেখানে রাত্রি যাপনের প্রস্তাব দেন। মাকেদা একটি শর্তে রাত্রি যাপনে সম্মত হন, তা হল- সুলাইমান যেন বলপূর্বক তাকে অধিকারের চেষ্টা না করেন। শর্তে রাজী হয়ে সুলাইমানও একটি পাল্টা শর্ত দেন- মাকেদা যেন বিনা অনুমতিতে সেই প্রাসাদের মুল্যবান কোন কিছু আত্মসাৎ করার চেষ্টা না করেন, মাকেদা এই শর্ত ভঙ্গ করলে সুলাইমানও তার শর্ত পালনে বাধ্য থাকবেন না। গভীর রাতে নিদ্রাভঙ্গ হলে মাকেদা খুব তৃষ্ণার্ত বোধ করেন এবং পানির পাত্র থেকে পানি পান করেন। এসময় অকস্মাৎ সেখানে সুলাইমানের অভ্যুদয় ঘটে, সুলাইমান অভিযোগ করেন পানি হল এই প্রাসাদের অতি মুল্যবান একটি সম্পদ। বিনা অনুমতিতে সেই পানি আত্মসাৎ করে মাকেদা সুলাইমানকে দেয়া শর্ত ভঙ্গ করেছেন। সুতরাং মাকেদা যেহেতু শর্ত ভঙ্গ করেছেন, অতএব সুলাইমানও...........।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

মিথলজিগুলাতে কি ছলে-বলে-কৌশলে পোন্দাপুন্দি ছাড়া কিছু নাই? ইয়ে, মানে...

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

দ্যাখেন, পোন্দাপুন্দি তো সবতেই করে, কিন্তু এমন বুদ্ধিমত্তার সাথে কয়জন করতে পারে? চোখ টিপি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।