বখতিয়ারের সাদা ঘোড়া এবং রক্তপাতহীন বঙ্গ দখলের কেচ্ছা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ১১/০৬/২০১৫ - ২:০১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বখতিয়ারের সাদা ঘোড়া, কল্কি অবতারের সাদা ঘোড়া এগুলোর সাথে ডিভাইনিটি বা আধ্যাত্মিকতা মেলানো ভন্ডামি। মূল রহস্যটা আসলে অন্য জায়গায়। সাদা ঘোড়া বলতে আমরা যেগুলো চিনি সেগুলো আসলে সাধারণত ঘিয়া বা গ্রে কালারের ঘোড়া। 'প্রকৃত' সাদা ঘোড়া খুবই দুর্লভ প্রানী। এই কারণেই প্রাচীনকালের অধিকাংশ রাজাই সাদা ঘোড়া ব্যবহার করতেন তাদের আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে। আবার সাদা ঘোড়া যুদ্ধক্ষেত্রেও সহায়ক হত তাদের জন্য। কারণ অজস্র কালো-বাদামি-ঘিয়া রঙের ঘোড়ার মাঝে রাজা কোন জন সেটা বুঝতে সহায়ক হত।

মিথোলজি আর ইতিহাস থেকে কয়েকটা উদাহরণ দিচ্ছিঃ

হিন্দু পুরানে আমরা দেখি, সমুদ্র মন্থনের সময় দেব-দৈত্যের সাথে উচ্চৈশ্রবা নামের সাত মাথাওয়ালা সাদা ঘোড়া উঠে আসার গল্প। দেবরাজ ইন্দ্র এই ঘোড়া ব্যবহার করতেন। এমনকি বিভিন্ন অশ্বমেধ যজ্ঞ থেকে ইন্দ্রকে সাদা ঘোড়া চুরি করতেও শুনি আমরা। দেবরাজ এতটাই পছন্দ করতেন সাদা ঘোড়া!
সুর্যদেবের রথের ঘোড়াগুলিও সাদা। কল্কি অবতারের ঘোড়াও নাকি হবে সাদা!

গ্রিক মিথলজির পেগাসাস নামের পাখাওয়ালা সাদা ঘোড়ার গল্প সবারই জানা। বেলেরোফন থেকে পার্সিয়াস সব বীরের কাহিনীতেই রয়েছে সমুদ্র দেবতা পসাইডন আর গর্গন মেডুসার সন্তান এই পেগাসাস ঘোড়া। নর্স মিথলজির ওডিন সম্ভবত সাদা ঘোড়া না পেয়েই ব্যবহার করেছিলেন আট পা-ওয়ালা ঘিয়া রঙের ঘোড়া।

গৌতম বুদ্ধের ঘোড়াও ছিল সাদা, নাম ছিল কন্ঠক। বুদ্ধের গৃহত্যাগে দুঃখে বেচারা ঘোড়াটা নাকি মরেই গিয়েছিল!

মুহাম্মদ সাধারণত উটে চড়েই যুদ্ধ করেছিলেন যদ্দুর জানি, তবে উপঢৌকন হিসেবে পাওয়া সাদা ঘোড়া সংগ্রহে রেখেছিলেন। বোখারি শরীফে আছে, মুহাম্মদ মেরাজের উড়ে যাবার সময় ব্যবহৃত বোরাক নামক কথিত প্রাণীটির রঙ নাকি ছিল সাদা।
আবার বোরাক নামের এই প্রাণীতে চড়ে উড়ার গল্প কিন্তু আমরা ইব্রাহীম নবীর ক্ষেত্রেও শুনি।

রেনেসাঁ যুগে আঁকা খ্রিস্টান সন্তদের যত পেইন্টিংস আমরা দেখি তাঁদের বেশিরভাগকেই দেখি সাদা ঘোড়ায় চড়তে। ক্রুসেডের অনেক পেইন্টিংস এও রয়েছে সাদা ঘোড়া। যদ্দুর মনে পড়ে যিশু নিজেও সাদা ঘোড়ায় চড়ে নেতৃত্ব দিবেন, এমন একটা কথা আছে টেস্টামেন্টে।

সর্বপ্রাচীন ইতিহাসবিদ হিরোডটাস বলছেন, যার্ক্সিস (Xerxes the Great, ruled 486-465 BC) এর রাজদরবারেও সাদা ঘোড়াকে বিবেচনা করা হত পবিত্র প্রাণি হিসেবে।

লর্ড অফ দ্য রিংস সিনেমায় গেন্ডালফ নামের যাদুকরের সাদা ঘোড়ার কথা সবার নিশ্চয়ই মনে আছে।গেইম অফ থ্রোনস টিভি সিরিয়ালে ডানেরিস টারগেরিয়েন এর ঘোড়াও কিন্তু সাদা, যা তিনি উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন 'খাল দ্রগো' এর থেকে। রূপকথার ইউনিকর্ন নামের সেই এক মাথাওয়ালা ঘোড়া সদৃশ প্রাণিটাও কিন্তু সাদা।

স্লাভ-স্কট-কোরিয়ান সহ আরও অনেক মিথলজিতেও আমরা সাদা ঘোড়ার ব্যবহার পাই। এখন যারা প্রচার করেন, ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজীর সাদা ঘোড়া দেখেই তাকে কল্কি অবতার ভেবে পালিয়ে গিয়েছিলেন লক্ষণ সেন সেটা এক ধরণের মিথ্যাচার হবে। হিন্দু পুরান থেকেই আমরা জানতে পারছি, সাদা ঘোড়া ভারতবর্ষের রাজাদের কাছেও ছিলো। হয়ত সেন রাজাদের আস্তাবলেও যথারীতি থাকার কথা এক-দুইটা। ৮২ বছর বয়স্ক লক্ষ্মণ সেন মূলত পালিয়েছিলেন ঘটনার আকস্মিকতায়। মূল সেনাবাহিনীকে অন্য এক পথে পাঠিয়ে ১৭ জন সৈন্য সহ ঝাড়খন্দের শ্বাপদশংকুল অরণ্য দিয়ে শর্টকাট করে বখতিয়ার খলজি পৌছে গিয়েছিলেন লক্ষন সেনের নদীয়ার প্রাসাদের কাছে। যার ফলশ্রুতিতে নদীয়া বিজয়।

সাদা ঘোড়ায় চড়ে বখতিয়ার খলজির রক্তপাতহীন বঙ্গ দখলের গল্প শুনিয়ে আসলে বোঝানোর চেষ্টা করা হয় উপমহাদেশে ইসলামের প্রচার হয়েছে সম্পূর্ণ রক্তপাতহীনভাবে। যা কিনা সত্য না অনেকভাবেই। এক্ষেত্রে বখতিয়ার খলজির নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস ও সেখানের সকল ছাত্রকে হত্যাসহ অন্যান্য নৃশংস ঘটনাবলী সম্পূর্ণ চেপে যাওয়া হয়। হিন্দু রাজ্যগুলো আক্রমন ও লুন্ঠন করেই সামান্য সৈন্য থেকে তিনি হয়েছিলেন নৃপতি। মুসলমান নৃপতিদের রক্তপাতহীন ভালো মানুষ সাজানোর কাজটা করেন সাধারণত করেন ডানপন্থীরা তথা মূলত মুসলমানরা আর তাদের পাশাপাশি বামাতিরা। আপনারা মনে হয় বুঝতে পারছেন কোন বামাতির কথার বিপরীতে এত কিছু লিখলাম। হাসি ;

অতিথি লেখকঃ আহমদ রনি।

ছবি: 
24/08/2007 - 2:03পূর্বাহ্ন
24/08/2007 - 2:03পূর্বাহ্ন
24/08/2007 - 2:03পূর্বাহ্ন
24/08/2007 - 2:03পূর্বাহ্ন
24/08/2007 - 2:03পূর্বাহ্ন
24/08/2007 - 2:03পূর্বাহ্ন
24/08/2007 - 2:03পূর্বাহ্ন

মন্তব্য

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

১৭ জন সৈন্য নিয়ে বখতিয়ারের নদীয়া দখলের বিষয়ে একটা হাইপথিটিক্যাল প্রশ্ন করি-
লক্ষন সেনের নিশ্চয়ই হাজার হাজার সৈন্য ছিল, এবং বখতিয়ারের সেটা না জানার বা বোঝার কথা নয়। লক্ষন সেনের সৈন্যরা ১৭ জন ঘোড় সওয়ারীর একটা ক্ষুদ্র দলকে চ্যাংদোলা করে নিয়ে যে গঙ্গায় ফেলে দিয়ে আসবে না, সে বিষয়ে বখতিয়ার আগে থেকেই নিঃসন্দেহ হল কি ভাবে? তাহলে কি ভেবে, কোন সাহসে মূল বাহিনীকে ছাড়া মাত্র ১৭ জন সৈন্য নিয়ে সে নদিয়ায় হাযির হল? সে কি আগে থেকেই জানত যে লক্ষন সেন তাকে কল্কী অবতার ভেবে পালিয়ে যাবে? কাহানী মে কুচ গড়বর লাগতা হায়।

অতিথি লেখক এর ছবি

বখতিয়ারের সাদা ঘোড়ার চড়ে আসার ঘটনাটা যে মিথ্যা তা বলি নাই। কিন্তু সাদা ঘোড়ার নিয়ে আসার ফলে যুদ্ধ জেতা গিয়েছিলো এই বিশ্লেষণটা সঠিক বলে মনে করিনা। আর সে যে শুধু ১৭ জন সৈন্য নিয়ে রওনা দিয়েছিল তা কোথায় পেলেন? একটা সৈন্যদল অনেকগুলো ডিভিশনে ভাগ থাকে, মাঝে একটা ছোট গ্রুপ সবার আগে পৌছে গিয়েছিলে। ব্যাপারটা এইটুকুই।

অল্প সৈন্য নিয়ে ঘটনার আকস্মিতায় ক্ষমতা দখলের ঘটনা ইতিহাসে নতুন না। গ্রিক-আর ট্রয়ের যুদ্ধের সেই ঘোড়ার ঘটনাও এইখানে মনে করা যেতে পারে। শেখ মুজিবকে হত্যা করেছিল জনগণের সহায়তা ছাড়াই অল্প কয়েক সেনা অফিসার।

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

১৭ জনের ছোট একটা গ্রুপ সবার আগে পৌঁছে গিয়েছিল, আর তাদের দেখেই লক্ষন সেনের হাজার হাজার সৈন্য পালিয়ে গিয়েছিল? বেশ! বেশ!!
ট্রয়ের যুদ্ধ অল্প সংখ্যক গ্রীক সৈন্য জয় করেনি, অল্প কিছু সৈন্য নগরের মূল ফটকটা খুলে দিয়েছিল মাত্র। তার ফলে বিপুল সংখ্যক গ্রীক সৈন্যের পক্ষে নগরে প্রবেশ করে ট্রয় দখল করা সম্ভব হয়েছিল।
আর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিষয়টি কোন সেনাদলের সামরিক অভিযানের ফলস্রুতি নয়, সেটা ছিল একদল ষড়যন্ত্রকারী সৈন্য কর্তৃক প্রায় নিরস্ত্র, স্বল্পসংখ্যক একদল প্রহরীকে পর্যুদস্ত করা ও হত্যাকান্ড সংঘটিত করা।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

মন মাঝি এর ছবি

ব্যাপারটা এমন হতে পারে যে ঐ ১৭ জনকে "দেখার" বা ১৭ জন যে "১৭ জন"ই বা কতজন - তার অনেক বেশি না - সেটা তাৎক্ষণিকভাবে জানার সময় ও সুযোগ হয়নি লক্ষণ সেনের "হাজার হাজার" সৈন্যের। তার আগেই হয়তো রাজার খিড়কি-দুয়ার দিয়ে পলায়নের সংবাদে ডিমরালাইজড ও দিশেহারা হয়ে পড়ে তারা, হয়তো হাল ছেড়ে দেয় - এমনকি ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে হয়তো। এবং তার অল্প পরেই বখতিয়ারের সুসংবদ্ধ মূল বাহিনি শত্রুশিবিরে এই নেতৃত্বশূন্য ক্যাওটিক অবস্থার মধ্যে এসে পড়ে। এরপর কি হল বা হতে পারে, তা কি আর বলা লাগে?

লক্ষণ সেন যেখানে যেখানে সৈন্যবাহিনি মোতায়েন করেছিলেন (সম্ভবত প্রাসাদ / রাজধানি থেকে দূরে) বখতিয়ার সেদিক দিয়ে না এসে সম্পূর্ণ অরক্ষিত অপ্রত্যাশিত রুট ধরে এসে কমাণ্ডো স্টাইলে সরাসরি তার প্রাসাদ দুয়ারে হাজির হন এবং আক্রমণ করেন। লক্ষণ সেন উপায়ান্তরহীণ হয়ে পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যান। লক্ষণের সেনাবাহিনির অধিকাংশই হয়তো এই ঘটনা "দেখারই" সুযোগ পায়নি, তার আগেই হয়তো এই খবর শাখা-প্রশাখায় পল্লবিত ও অতিরঞ্জিত হয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে অন্যত্র মোতায়েনকৃত লক্ষণ সেনের মূল বাহিনিতে। যেমন ১৭ হয়তো ১৭০০০ হয়ে গিয়েছিল বা অন্য কিছু, এরকম অবস্থায় অনেক কথাই ছড়ায় যা প্যানিক ও বিভ্রান্তি সৃষ্টিতে মোক্ষম। সেই সাথে কল্কি অবতার হোক, ভূতপ্রেত হোক কিম্বা চাঁদে কারও মুখ দেখা গেছে জাতীয় রটনা হোক - কুসংস্কারাচ্ছন্ন প্রাচীণ সৈন্যদের ডিমরালাইজ করতে সেসবও প্রভাবিত করে থাকতে পারে। সর্বোপরি সৈন্যদের জন্য স্বয়ং রাজার পলায়নের সংবাদের চেয়ে বড় ডিমরালাইজিং আর কিছু হয় না। এই সংবাদ হয়তো লক্ষণ সেনের সৈন্যদেরও পালাতে বা হাল ছেড়ে দিতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। এই ধরণের ঘটনা এই একবিংশ শতাব্দীতেও ঘটে - ঐতিহাসিক কালের প্রিমিটিভ সৈন্যদের মধ্যে সেটা আরও অনেক বেশিই ঘটতো সম্ভবত। যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত রাজা মারা গেছেন দূরে থাকুক, কোন কারনে তার ঘোড়া বা হাতি খালি দেখা গেলেও (হয়তো পড়ে গেছেন বা অন্যকিছু) - তিনি মারা গেছেন এমন গুজব রটে গিয়ে সৈন্যরা হুড় হুড় করে নাকি অনেক সময় পালাতো।

যাহোক, আমি বলছি না এমনটাই ঘটেছে - তবে এটা একটা সম্ভাব্য সিনারিও হতেই পারে। আমার কাছে মোটেই অসম্ভব বলে মনে হয় না। অন্তত এই ঘটনা সম্পর্কে আমি সামান্য যতটুকু জানি তার ভিত্তিতে। নীচে আমি বাংলা উইকি থেকে প্রাসঙ্গিক অংশটুকু কোট করলাম - এই বর্ণনা বা ঘটনা-প্রবাহের সাথে উপরের অনুমান সাঙ্ঘর্ষিক হবে না বলেই মনে হয়ঃ

...এতে করে লক্ষন সেনের মনে ভীতির সঞ্চার হয় এবং নদিয়ার প্রবেশপথ রাজমহল ও তেলিয়াগড়ের নিরাপত্তা জোরদার করেন। লক্ষন সেনের ধারণা ছিল যে ঝাড়খন্দের শ্বাপদশংকুল অরণ্য দিয়ে কোন সৈন্যবাহিনীর পক্ষে নদীয়া আক্রমন করা সম্ভব নয় কিন্তু বখতিয়ার সেইপথেই তার সৈন্যবাহিনীকে নিয়ে আসেন। নদিয়া অভিযানকালে বখতিয়ার ধাড়খন্দের মধ্য দিয়ে এত দ্রুতগতিতে অগ্রসর হয়েছিলেন যে তার সাথে মাত্র ১৮ জন সৈনিকই তাল মেলাতে পেরেছিলেন[৩][৪]। বখতিয়ার সোজা রাজা লক্ষন সেনের প্রাসাদদ্বারে উপস্থিত হন এবং দ্বাররক্ষি ও প্রহরীদের হত্যা করে প্রাসাদের ভিতরে প্রবেশ করেন। এতে প্রাসাদের ভিতরে হইচই পড়ে যায় এবং লক্ষণ সেন দিগ্বিদিক হারিয়ে ফেলে প্রাসাদের পেছনের দড়জা দিয়ে নৌপথে বিক্রমপূরে আশ্রয় নেন।

সবশেষ কথাঃ অনেক ছোট বাহিনির কাছে যে অনেক বড় ও কাগজে-কলমে অনেক শক্তিশালী বাহিনিও পরাজিত হতে পারে, এমন উদাহরণ ইতিহাসে অনেক আছে। এমনকি আমাদের যুগেই আছে। যথোপযুক্ত ট্রেনিং, অস্ত্রশস্ত্র, রনকৌশল, বেতন-ভাতা ইত্যাদির যে কোনটিতে তো বটেই - এমনকি স্রেফ নেতৃত্ব, মোরাল বা ডিসিপ্লিনে ঘাটতি থাকলেও এমন হতে পারে। ইরাক ও নাইজেরিয়াতে প্রায় এরকম ঘটনাই বর্তমানে ঘটছে অহরহ। আর হ্যাঁ, একটু চিন্তা করলে বেশ কিছু ক্ষেত্রে সেনবাবুর ঘটনার সাথে ট্রোজান হর্স ও ৭৫-এর অভ্যুত্থানেরও মিল দেখা যায় বৈকি।

****************************************

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

ব্যাপারটা এমন হতে পারে যে.............

হ্যাঁ, আলোচ্য ইতিহাসের এটাই হল পরিহাসের বিষয়। হিসাব মিলানোর জন্য এই ইতিহাসের পাঠক কিংবা শ্রোতাকেই এভাবে একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে হয়। এই ইতিহাসের একমাত্র উপস্থাপক মিনহায ই সিরাজ বখতিয়ারের বঙ্গ বিজয়ের অনেক বছর পর বাংলায় এসে লোক পরস্পরায় এই কাহিনীটি শুনেছিলেন। তাঁর বয়ান মতে বখতিয়ার(১৭ জন সৈন্য নিয়ে) নদীয়ায় লছমনিয়ার প্রাসাদ আক্রমন করেছিলেন, আর লছমনিয়া তখন সোনা রুপার থালায় বাড়া ভাত ফেলে রেখে খিড়কী দুয়ার দিয়ে পালিয়ে যান। লক্ষনের রাজধানী ছিল লক্ষণাবতী, বখতিয়ার লক্ষণাবতী আক্রমন না করে কেন নদীয়া আক্রমন করতে গেলেন, আর লক্ষনই বা রাজধানী ছেড়ে কেন নদিয়ায় বসবাস করছিলেন, ইত্যকার নানা প্রশ্নের কোন সন্তোষজনক ব্যাখ্যা বা উত্তর মিনহায রচিত তাবাকাত-ই-নাসিরিতে নেই। ভাবীকালের তাই এরকম নানান ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে হিসেব মেলাতে হয়েছে।
যাই হোক, আমি অবশ্য এ জাতীয় কোন প্রশ্নের অবতারণা করি নাই। বখতিয়ার যে ১৭ জন ইসলামী সৈন্য নিয়ে কাপুরুষ লক্ষনের রাজ্য হেলায় জয় করেছিলেন, সে বিষয়েও আমার নাহক কোন দ্বিমত নাই। আমি শুধু জানতে চেয়েছি যে, বখতিয়ার মাত্র ১৭ জন সৈন্য নিয়ে যে সম্ভাব্য হাজার হাজার সেনার মাঝে চলে এলেন, তা কি শুধু ভাবীকালের ইতিহাস পাঠককুলের মনে কিঞ্চিৎ বীররস সঞ্চালনের নিমিত্তে? কিংবা ঠিক কি কারনে তিনি এমন নির্বোধ সাহসের পরিচয় দিলেন? পূর্ণ বাহিনী নিয়ে একদিন পরে এসে নিরাপদে রাজ্য দখল করলে নিশ্চয় তাঁর গৌরবের কোন হানি ঘটত না।

বিঃ দ্রঃ বখতিয়ার বলতে আমরা সর্বসাধারন যাকে বুঝি, তার নাম আসলে ইখতিয়ার। পূর্বতন ইতিহাসবিদদের ছেলেমানুষি ভুলের কারনে আমরা একজন বিখ্যাত ব্যাক্তিকে তাঁর পিতার নামে সম্বোধন করে চলেছি। "ষষ্ঠ পাণ্ডব" অনেক আগেই সচলে এই ভুল সবার দৃষ্টিগোচর করেছিলেন।

অতিথি লেখক এর ছবি

রাজধানী লক্ষণাবতী ছেড়ে লক্ষণ সেন নদীয়ায় গিয়েছিলেন পূণ্য স্নানের জন্য। কিছুদিন থেকে ফিরে আসবেন ব্যাপারটা এমন ছিল। সেই কারণেই সম্ভবত সেখানে তার মূল সেনাবাহিনী ছিলও না।
তাছাড়া নদীয়ায় হেরে যাবার পরও লক্ষণ সেন আরও বছরখানেক বঙ্গ শাসন করেছিলেন।

আর বখতিয়ার শব্দটা লেখা আসলেই ভুল। ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজি নাম থেকেই বোঝা যায় আমরা যাকে নিয়ে কথা বলছি তিনি বখতিয়ারের ছেলে, ইখতিয়ার।
বখতিয়ার শব্দটা সর্বক্ষেত্রে প্রচলিত বলেই এক্ষেত্রে বখতিয়ার রেখেছি।

এক লহমা এর ছবি

"রাজধানী লক্ষণাবতী ছেড়ে লক্ষণ সেন নদীয়ায় গিয়েছিলেন পূণ্য স্নানের ... ... ... আরও বছরখানেক বঙ্গ শাসন করেছিলেন।" প্রায় চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ বছর আগে যে ইতিহাস পড়েছিলাম বলে মনে পড়ে সেখানে বর্ণনা এইরকম-ই কিছু ছিল। পরবর্ত্তীতে অল্প যা পড়ার সুযোগ হয়েছিল তা ষষ্ঠ পাণ্ডব-এর এই পোস্টের সাথে চমৎকার ভাবে মিলে যায়।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

রাজধানী লক্ষণাবতী ছেড়ে লক্ষণ সেন নদীয়ায় গিয়েছিলেন পূণ্য স্নানের জন্য। কিছুদিন থেকে ফিরে আসবেন ব্যাপারটা এমন ছিল।

এই বিশ্লেষণটি কিন্তু তুলনামূলকভাবে সাম্প্রতিক এবং অনুমানভিত্তিক। যেহেতু লক্ষন সেন সাত্ত্বিক জীবনযাপন করতেন এমন পরোক্ষ ক্ষীণ প্রমান আছে, সে কারনে আধুনিক কালের ইতিহাসবিদগন এরকম অনুমান করেছেন, অবশ্য ভিন্নরকম অনুমানও আছে। যাই হোক, ১৭ জন সৈন্য সহযোগে বাংলা দখলের যে প্রণোদনা মূলক কাহিনী আমরা তাবাকাত ই নাসিরি তে পাই, সেখানেই লক্ষনের নদীয়ায় অবস্থানের কারন এবং বখতিয়ারের রাজধানী দখল না করে নদীয়া দখল করার যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা থাকলে ভাল হত।

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

দেবদ্যুতি

অতিথি লেখক এর ছবি

দারুন, তথ্যমূলক

অতিথি লেখক এর ছবি

”রূপকথার ইউনিকর্ন নামের সেই এক মাথাওয়ালা ঘোড়া সদৃশ প্রাণিটাও কিন্তু সাদা” লেখক সম্ভবত এক মাথাওয়ালার জায়গায় এক শৃঙ্গওয়ালা ঘোড়া সদৃশ প্রাণি ”মিথিকাল ক্রিয়েচার ইউনিকর্ণ” এর কথা লিখতে চেয়েছিলেন । যেহেতু অনুসন্ধাণ শুরু করেছেন আশা করছি যৌক্তিক ব্যাখ্যা ও প্রমাণাদী সহ লেখা পর্ব আকারে উপস্থাপিত হতে থাকবে ।

আরেকটা ব্যাপার উল্লেখ না করে পারছি না, লেখক মিথলজি আর ইতিহাস থেকে উদাহরণ দেয়ার সময় উল্লেখ করেছেন এভাবে

”দেবরাজ ইন্দ্র”

”গৌতম বুদ্ধ”

”মুহাম্মাদ”

ইন্দ্রকে দেবরাজ এবং বুদ্ধকে গৌতম সহ না লিখলেও তাদের চেনার জন্য পাঠককে বিশেষ বেগ না পাবার ই কথা, বিষয় হলো তাদের যেমন ভাবে টাইটেল সহ উপস্থাপন করা হয়েছে মুহাম্মাদ (স:) কিন্তু করা হয় নি । হয়তো বিষয়টি লেখকের দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে হয়তো বিষয়টি অনিচ্ছাকৃত । যদিও আমার উল্লেখিত বিষয়টি মূল বিষয়ের সাথে খুউব কম সংগতিপূর্ণ তাও যেহেতু দৃষ্টিকটু তাই উল্লেক করলাম ।

( বি: দ্র: আমি আর দশটা সাধারণ মানুষের মতোই খুউব সাধারণ তবে জিনিস !!! এর যৌক্তিক ব্যাখ্যা পেতে এবং দিতে পছন্দ করি । আমার ধারণা সচলের বেশির ভাগ ভিজিটর ই আমার মতো মানে সাধারণ যারা লিখতে কম পড়তে বেশি এবং তার চেয়েও মন্তব্য করতে বেশি পারদর্শী হাসি

মোস্তফা কামাল

অতিথি লেখক এর ছবি

ইউনিকর্ন নিয়ে আপনার প্রশ্নটা মাথার উপর দিয়ে গিয়েছে। আমি বুঝি নি।

১/ ইন্দ্র যে দেবরাজ, আর বুদ্ধের আসল নাম যে গৌতম সেটা সব পাঠক জানেন বলে আমি মনে করিনা।
২/ নামের পাশে অহেতুক টাইটেল যুক্ত করাটা আমার পছন্দ না। সেই কারণেই বুদ্ধ না লিখে গৌতম লেখাটাই শ্রেয়, ঠিক যেমন যিশু খ্রিস্ট না লিখে শুধু যিশু লিখেছি।
৩/ পদবী আর উপাধী এক করে দেখছেন কেনও? দেবরাজ শব্দটা পদবী আর বুদ্ধ, খ্রিস্ট এগুলো উপাধি। আর মুহাম্মদ নামের শেষে বহুল ব্যবহৃত (সঃ) এই দুইটার কোনটাই না। এইটা দরূদ এর সংক্ষিপ্ত রূপ। যারা মুসলমান তারা এই দরূদ পাঠ করবেন কিনা সেটা তাদের ব্যাপার কিন্তু একাডেমিক ক্ষেত্রে এই দরূদ পাঠ বা লেখাটা অর্থহীন ও অগ্রহণযোগ্য।

নামের শেষে (সঃ) লেখা হল কি হল না তা নিয়ে চিন্তিত না থেকে লেখার মূল বক্তব্য বোঝার চেষ্টা করাটাই সম্ভবত ভালো।

--আহমদ রনি।

অতিথি লেখক এর ছবি

ইউনিকর্নের বৈশিষ্ট্য একটা মাথা নয়, সব ঘোড়াদেরই তাই, তার বাড়তি আছে একটা শিং।
--বুড়া

অতিথি লেখক এর ছবি

আচ্ছা। এবার বুঝেছি। মূল লেখায় 'এক শিংওয়ালা' না লিখে আমি টাইপিং করার সময় লিখেছি 'এক মাথাওয়ালা'। তাই এই বিপত্তি। হাসি

নজমুল আলবাব এর ছবি

আরেকটু বড় হতে পারতো। আরও বিস্তারিত। মাঝখানে থেমে গেছে মনে হলো।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হুমমম

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

বখতিয়ার খলজী নাহয় 'ভুল করে' নালন্দা ধ্বংস করেই ফেলেছিলো আর বৌদ্ধদেরকে মেরেকেটে লুট করেছিলো। আর তাই নিয়ে নাহয় কেউ একটু পিনিকেই থাকলো। তাই 'বৌলে' আপনি এরকম একটা পোস্ট নাজেল করে দিবেন? তেব্র নিন্দা জানাই চোখ টিপি

যাউগ্গা... ভালো হইছে

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সুবোধ অবোধ এর ছবি
রানা মেহের এর ছবি

লেখার মূল থেকে ভুমিকা বড় হয়ে গেছে।
বখতিয়ারের তথাকথিত 'রক্তপাতহীন' বিজয় সম্পর্কে আরেকটু বিস্তারিত বর্ণনা আশা করেছিলাম।

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

অতিথি লেখক এর ছবি

বখতিয়ার এর এই বিজয় নিয়ে আরো আলোকপাত করা যেত কথাটা ঠিক, কিন্তু সেটা নিয়ে বাংলায় অনেকেই আগে লিখেছেন। আমার মনে হয়েছিল আমি এক্ষেত্রে মৌলিক কিছু যোগ করতে পারব না।
বরং সাদা ঘোড়ার ব্যাপারটা নিয়ে আগে কেউ লেখেননি। তাই সেই অংশটায় ফোকাস বেশী রেখেছি।

--আহমদ রনি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

সাদা ঘোড়া নিয়ে আলোচনা ভালো লেগেছে। ইখতিয়ারের তথাকথিত 'বঙ্গবিজয়' নিয়ে এই অধমের একটা পোস্ট ছিল। আগ্রহীরা চাইলে সেই আলোচনাটা দেখতে পারেন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ।
আমিও ইফতিয়ার শব্দটাই ব্যবহার করতে চেয়েছিলা।
কিন্তু পক্ষে-বিপক্ষে সবক্ষেত্রে 'বখতিয়ার' শব্দটা কেনও প্রচলিত সে ব্যাপারে আপনার কিছু জানা আছে?
অথচ বখতিয়ার বলাটা সরাসরি ভুল। আমরা যাকে নিয়ে কথা বলছি তিনি ছিলেন বখতিয়ারের ছেলে!

সুবোধ অবোধ এর ছবি
এক লহমা এর ছবি

সাদা ঘোড়ার গপ্পো ভাল লেগেছে। হাসি

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

ইতিহাস যেভাবে স্কুলে পরতাম সাবজেক্টটার প্রতি আগ্রহ সারাজীবনের মত চলে গেছে।
গল্প ভালো লেগেছে, কমেন্টের লিংক পরে আরো অনেক কিছু জানলাম।
চলুক
- সো।

তানিম এহসান এর ছবি

এক্ষেত্রে বখতিয়ার খলজির নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস ও সেখানের সকল ছাত্রকে হত্যাসহ অন্যান্য নৃশংস ঘটনাবলী সম্পূর্ণ চেপে যাওয়া হয়।

চলুক

ভালো লেগেছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

তথ্যসমৃদ্ধ লেখা। ভালো লেগেছে।

সাদা মেঘদল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।