কার্বনের মায়াজাল

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৮/০২/২০১৯ - ১:২০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশে শুক্রবার সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস।দুপুর থেকে সবার মন উড়ুউড়ু করে।অফিসের কাজের চাপ একটু কম থাকলে অনেকেই আগে আগে বাসার দিকে ছুট লাগান। পরিবার কিংবা বন্ধুদের সাথে একটু বেশি সময় কাটানোর আশায়।কিন্তু অজানাকে জানা ই যাদের একমাত্র তৃষ্ণা, জ্ঞান চর্চাই তাদের মনের খোরাক জোগাবে তাতে আর আশ্চর্য কি! তাই পৃথিবীর অনেক গবেষণাগারে বিজ্ঞানীরা শুক্রবার বিকালটা কে বেছে নেন, একটু ভিন্নধর্মী কিংবা পাগলাটে পরীক্ষা করার জন্য। তাঁরা এর নাম দিয়েছেন ‘ফ্রাইডে নাইট এক্সপেরিমেন্ট’। ধরেই নেয়া হয় এটা নিছক খেলা, কিন্তু খেলাচ্ছলে যদি চমৎকার কোন আবিষ্কার হয়ে যায়, তাতে মন্দ কি!

ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আন্দ্রে জেমস এবং অধ্যাপক কস্তা নোভোসেলভ প্রায় সপ্তাহেই এরকম ফ্রাইডে নাইট এক্সপেরিমেন্ট করতেন। তাঁদের এই পরিক্ষাগুলো সবসময়ই থাকত তাঁদের দৈনন্দিন গবেষনার কাজ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা বিষয় নিয়ে। ২০০৪ সালের কোন এক শুক্রবার সন্ধ্যায় তাঁরা খেলাচ্ছলে এমনি এক বিস্ময় বস্তুর সাথে পৃথিবীকে পরিচয় করিয়ে দেন, যার নাম ‘গ্রাফিন’। এর আগে যে বিজ্ঞানীদের গ্রাফিন সম্পর্কে কোন ধারণাই ছিলনা, এমনটা নয়।প্রকৃতিতে গ্রাফিন পাওয়া যায় গ্রাফাইট রূপে। যে গ্রাফাইট আমরা পেন্সিলের শীষ হিসাবে ব্যাবহার করে থাকি।অনেকগুলো গ্রাফিন স্তর থরে থরে একটার উপর একটা সাজালে গ্রাফাইট হয়। এই তথ্য বিজ্ঞানীদের কাছে ছিল।কিন্তু গ্রাফিন কে গ্রাফাইট থেকে আলাদা করার কৌশল কেউ জানত না। কিংবা আলাদা করা গেলেও গ্রাফিন যে আলাদা অবস্থায় কারও সাথে বিক্রিয়া না করে ঠায় দাড়িয়ে থাকবে, এ বিষয়গুলো অজানা ছিল। সবচেয়ে বেশি অজানা ছিল, গ্রাফিনের গুনাগুন। জিনিসটাকে কাজে লাগানো না গেলে আলাদা করে আর লাভ কি!

প্রফেসর নভোসেলভ এবং প্রফেসর আন্দ্রে স্টিকি/স্কচ টেপ ব্যাবহার করে গ্রাফাইট এর পৃষ্ঠ থেকে গ্রাফিন আলাদা করার চেষ্টা করেন। ব্যাপারটা অনেকটা ওয়াক্সিং করে গায়ের লোম উঠানোর মত। প্রথমে তাঁরা লক্ষ করেন এক এক বারে কয়েক স্তর করে গ্রাফিন উঠে আসছে।এই কয়েক স্তর গ্রাফিনের উপর বারংবার স্টিকি টেপ প্রয়োগ করে তাঁরা একটা গ্রাফিন স্তরকে আলাদা করতে সক্ষম হন। গ্রাফিন আসলে বিশুদ্ধ কার্বনের তৈরি একটা শীট ছাড়া আর কিছুই না। যেখানে কার্বন পরমাণুগুলো এক জন আরেকজনকে সমযোজী বন্ধনের মাধ্যমে শক্ত করে ধরে রাখে আর মৌচাক সদৃশ ষড়ভুজাকৃতি আকার ধারন করে।এক একটা গ্রাফিন স্তর মাত্র ০.৩১৮ ন্যানোমিটার পাতলা, যা কিনা একটি কার্বন পরমানুর ব্যাসের সমান; অর্থাৎ খালি চোখে দেখাই যায়না। কিন্তু এই অদৃশ্য কার্বনের জাল যে বিপুল সম্ভবনা আর জাদুকরী গুনাগুন নিয়ে পৃথিবীকে নাড়া দিয়েছে তা অভূতপূর্ব!

চিত্র ১ গ্রাফিনে মৌচাকের মত করে কার্বন পরমানুর সজ্জা

গ্রাফিন এখনও পর্যন্ত বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে আবিষ্কৃত সবচেয়ে পাতলা বস্তু যা কিনা স্টিলের চেয়ে ২০০ গুন বেশি শক্তিশালী আর কপারের চেয়ে ১০ লক্ষ গুন বেশি বিদ্যুৎ পরিবাহী! তাই ইলেক্ট্রনিক্স এর জগতে গ্রাফিন এর সবচেয়ে বেশি কদর। ম্যাটেরীয়াল আর ইলেক্ট্রনিক্স সায়েন্টিস্ট দের কাছে গ্রাফিন যেন এক রুপকথার যাদুর কাঠি, যার স্বপ্ন তাঁরা আজীবন দেখে এসেছেন। সুপারকন্ডাক্টার, সুপার ক্যাপাসিটর আর সেন্সর হিসাবে গ্রাফিনকে ব্যাবহার করার জন্য গত দশ বছরে গবেষণা জগতে বিপ্লব ঘটে গেছে।বিশ্বের বড় বড় সব বিশ্ব বিদ্যালয়ে আলাদা গ্রাফিন রিসার্চ সেন্টার কিংবা নিদেন পক্ষে একটা করে গ্রাফিন রিসার্চ গ্রুপ গড়ে উঠেছে।

গ্রাফিনের শক্তিশালী সমযোজী বন্ধন কার্বনের অনুগুলিকে এমন নিবিড়ভাবে ধরে রাখে যে হিলিয়াম গ্যাসের মত ক্ষুদ্র অণুও এই গ্রাফিনস্তর ভেদ করতে পারেনা।তাই গ্রাফিন যেকোন কিছুর উপর চমৎকার প্রলেপ হিসাবে কাজ করে। কোন কিছুর উপর গ্রাফিনের আবরন থাকলে তা যেমন মরিচা ধরেনা একই সাথে বিদ্যুৎ পরিবহনেও কোন সমস্যা হয়না, বরং সাহায্য করে।

গ্রাফিনের সাথে অক্সিজেনকে যুক্ত করে তৈরি হচ্ছে গ্রাফাইট অক্সাইড। এই বস্তু আবার পানিকে প্রবাহিত হতে দেয়, কিন্তু পানির সকল আবর্জনা আর লবন আটকে দেয়। তাই পানি পরিশোধনের গবেষণায় গ্রাফিন অক্সাইড এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। আজকের বিজ্ঞান তাই সমুদ্রের পানিকে সহজে আর স্বল্প খরচে সুপেয় পানিতে পরিনত করার প্রযুক্তি বাজারজাত করার দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছে।

শক্তিশালী হবার পাশাপাশি গ্রাফিন খুবই নমনীয়। বড় বড় মোবাইল প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলি গ্রাফিন ব্যাবহার করে মোবাইল স্ক্রিন বানানোর কাজে অনেক এগিয়ে গেছে। সেদিন আর বেশি দূরে নয় যেদিন মোবাইলটাকে যেভাবে খুশি ভাঁজ করে মানিব্যাগের ভিতর ফেলে পকেটে পুরে রাখা যাবে, আবার ভাঁজখুলে অবলীলায় আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যাবে!

গ্রাফিনের গুণগান করতে থাকলে বই লিখে ফেলা যাবে। আসলে গ্রাফিন নিয়ে বিজ্ঞানীরা বই লিখেছেন ও বেশকিছু। এখন শুরুতে যা বলছিলাম সে কথায় ফিরে আসি। অধ্যাপক আন্দ্রে জেমস এবং অধ্যাপক কস্তা নোভোসেলভ খেলতে খেলতে গ্রাফিন আবিষ্কার করলেও আবিষ্কারটা ছিল যুগান্তকারী। তাই তাঁরা গ্রাফিন আবিষ্কারের জন্য ২০১০ সালে পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পান। ব্যাপারটা তাঁরা আকস্মিক ভাবে আবিষ্কার করলেও কিভাবে সেটাকে কাজে লাগানো যায় সেই মেধা এবং বুদ্ধির জোর তাঁদের ছিল। তাইতো নভোসেলভ (৪৫ বছর) আর আন্দ্রে (৬০ বছর), এই দুই বিজ্ঞানি মৃত্যুর আগেই বলতে গেলে অমর হয়ে গেছেন।খেলাচ্ছলে যদি এত দারুন আবিষ্কার হয়, এমন ২/১ টা শুক্রবার দেরি করে বাসায় ফেরা যায় বৈকি!

লিখেছেন- সানজিদ আহমেদ সৌখিন
(মেলবোর্ন অস্ট্রেলিয়া থেকে)

ছবি: 
24/08/2007 - 2:03পূর্বাহ্ন

মন্তব্য

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

চমৎকার লেখা।
আরো পড়ার আশায় রইলাম।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

আহ, কতদিন পর বিজ্ঞানব্লগ!

সচলে স্বাগতম! লিখতে থাকুন!

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সৌখিন  এর ছবি

ধন্যবাদ
-সৌখিন

নিয়াজ মোরশেদ খান এর ছবি

দারুণ লেখা।পড়ে বেশ আনন্দ পেয়েছি।আরও এরকম লেখার অপেক্ষায় রইলাম বন্ধু।

সৌখিন  এর ছবি

ধন্যবাদ
-সৌখিন

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

সর্বসাধরণের জন্য লেখা বিজ্ঞান বিষয়ক নিবন্ধ প্রাঞ্জল না হলে এর উদ্দেশ্যটাই মাটি। এই লেখাটা প্রাঞ্জল এবং প্রাণবন্ত – এই কারণে পড়তে ভালো লেগেছে।

গ্রাফিনের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম নিয়ে কয়েকটা বাক্য লিখলে পাঠকের পক্ষে ‘গ্রাফিন’ জিনিসটা কেমন তা বোঝা আরও স্পষ্ট হতো। গ্রাফিনের একটি স্তর আরেকটি স্তরের সাথে কী করে আটকে থাকে? এখানে কার্বন-কার্বন বিন্যাসটি কি শুধুই দ্বিমাত্রিক, নাকি তৃতীয় মাত্রায়ও এর অংশগ্রহন আছে? মানে, ষড়ভুজের বিস্তৃতি কি একটি স্তর বরাবর নাকি সংলগ্ন অন্য দুটি স্তরেও তা বর্ধিত? গ্রাফিনের একটি স্তর আলাদা করার প্রক্রিয়াটি একটু বিস্তারিত থাকলে ভালো হতো। স্টিকি/স্কচ টেপ থেকে গ্রাফিনের একটি স্তর না ছিঁড়ে কী করে আলাদা করা হয়? গ্রাফিন ইস্পাতের চেয়ে ২০০ গুণ বেশি শক্তিশালী কোন ধর্ম অনুযায়ী (Hardness/ Tensile Strength/ Compressive Strength/ Flexural Strength/ Malleability/ Ductility ইত্যাদি)? গ্রাফিনের তাপ পরিবহন ক্ষমতা কীরূপ?

গ্রাফিন অক্সাইডের পানি শোধনক্ষমতার কথা জেনে আমি বিস্মিত! এটা যদি সত্যি হয় তাহলে আগামী দিনের ইতিহাস পালটে যাবে। আগামী দিনে যেসব কারণে পৃথিবীব্যাপী যুদ্ধ হবে তার প্রধানতম হচ্ছে ‘সুপেয় পানির জন্য যুদ্ধ’। মধ্য যুগের আগে রেফ্রিজারেটর আবিষ্কার হলে পৃথিবীর ইতিহাস যেমন পালটে যেতো গ্রাফিন অক্সাইড বাণিজ্যিকভাবে পানি শোধন করতে পারলে অমন কিছু হবে।

বিজ্ঞান নিয়ে এমন লেখা আরও আসুক। সবিস্তারে, সচিত্র হয়ে আসুক।

কতিপয় সাধারণ পরামর্শঃ

১. অতিথি লেখক হিসাবে নিজের নাম/নিক নিবন্ধিত করে নিলে পাঠকের পক্ষে লেখককে অনুসরণ করা সহজ হয়।

২. নিবন্ধনের ক্ষেত্রে নাম/নিক ঠিক করে নিতে হবে। এক লেখায় লেখকের এক নাম আরেক লেখায় আরেক নাম হলে পাঠক বিভ্রান্ত হবেন।

৩. লেখার শেষে দুয়েক লাইন স্পেস দিয়ে শুধু নাম/নিকটা লেখাই যথেষ্ট। ‘লেখকের নামঃ’ অথবা ‘লিখেছেনঃ’ লেখার দরকার নেই। লেখকের অবস্থান (অমুক জায়গা থেকে) জানানোরও দরকার নেই।

৪. লেখা শেষে অভ্র’র স্পেলচেকার দিয়ে বানান চেক করে নিলে অসাবধানবশত করা ভুল বানানগুলো শুধরে নেয়া যায়।

৫. ‘অতিথি লেখক’ পর্যায়ে লেখা পোস্ট করার সময় ক্যাটেগরিতে নিজের নাম/নিক দিলে পরে লেখক/পাঠক সবার পক্ষে লেখাগুলো খুঁজে বের করা সহজ হবে।

৬. ‘অতিথি লেখক’ পর্যায়ে প্রতিটি মন্তব্যের উত্তরে করা প্রতিমন্তব্যের নিচে নিজের নাম/নিক উল্লেখ করতে হবে। নয়তো পাঠক বুঝতে পারবেন না উত্তরটি কে দিলেন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সৌখিন  এর ছবি

ধন্যবাদ। দ্বিতীয় প্যারায় যা যা জানতে চাওয়া হয়েছে সবগুলো নিয়ে এক একটা প্রবন্ধ লেখা যাবে। ভবিষ্যতে চেষ্টা করব। কিন্তু খুব সাধারন ভাষায় কিংবা মজা করে লিখতে পারব কিনা জানিনা। এই লেখাটার উদ্দেশ্য ছিল কেবলমাত্র গ্রাফিন সম্পর্কে প্রাথমিক ধারনা দেয়া।
সাধারন পরামর্শ গুলো সানন্দে গৃহীত হলে। অতিথি লেখক হিসাবে নাম নিবন্ধনের প্রক্রিয়া জানা নেই। ঘেঁটে দেখতে হবে।

হিমু এর ছবি

এখানে দেখুন।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ। কিন্তু আমাকে দেখাচ্ছে যে "আপনার এই পৃষ্ঠা দেখার অনুমতি নেই।"

হিমু এর ছবি

"অতিথি লেখক" অ্যাকাউন্ট থেকে লগ-আউট করে দেখুন।

সৌখিন  এর ছবি

ধন্যবাদ

অতিথি লেখক এর ছবি

কিছু এক কথায় উত্তরঃ

একটি স্তর আরেকটি স্তরের সাথে কী করে আটকে থাকে?

ভ্যান ডার ওয়ালস আকর্ষণ বল।

এখানে কার্বন-কার্বন বিন্যাসটি কি শুধুই দ্বিমাত্রিক, নাকি তৃতীয় মাত্রায়ও এর অংশগ্রহন আছে? মানে, ষড়ভুজের বিস্তৃতি কি একটি স্তর বরাবর নাকি সংলগ্ন অন্য দুটি স্তরেও তা বর্ধিত?

শুধুই দ্বিমাত্রিক

গ্রাফিনের একটি স্তর আলাদা করার প্রক্রিয়াটি একটু বিস্তারিত থাকলে ভালো হতো। স্টিকি/স্কচ টেপ থেকে গ্রাফিনের একটি স্তর না ছিঁড়ে কী করে আলাদা করা হয়?

ছিঁড়ে যাওয়ার সম্ভবনা আছে। তাই ক্যামিকেল ভ্যাপার ডিপোজিশান এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে গ্রহনযোগ্য প্রক্রিয়া।

গ্রাফিন ইস্পাতের চেয়ে ২০০ গুণ বেশি শক্তিশালী কোন ধর্ম অনুযায়ী (Hardness/ Tensile Strength/ Compressive Strength/ Flexural Strength/ Malleability/ Ductility ইত্যাদি)?

Tensile Strength

গ্রাফিনের তাপ পরিবহন ক্ষমতা কীরূপ?

চমৎকার। যেকোন বস্তুর চেয়ে বেশি। কক্ষ তাপমাত্রায় 3000 - 5000 W/mK

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

কোন প্রকার ভ্যান ডার ওয়ালস, উইক লন্ডন ডিসপার্সন নাকি স্ট্রংগার ডাইপোল-ডাইপোল?

কীসের ভ্যাপার ডিপোজিশন? স্টিকি টেপটা কী দিয়ে বানানো?

অধাতব বস্তুর উচ্চ Tensile Strength একটা ইন্টারেস্টিং বিষয়। সেক্ষেত্রে তার Ductility কেমন সেটা জানতে চাই। কল্পনা করলাম, একটা ইউটিএম-এ গ্রাফিনের একটা রড/শিট আটকে টানা হচ্ছে টানা হচ্ছে টানা হচ্ছে .....

তাপ পরিবহনের ক্ষেত্রে যেখানে প্রবহী ব্যবহার করা যায় না (যেমন, অতি সূক্ষ্ম ও জটিল ব্যবস্থায়) সেখানে গ্রাফিন ব্যবহার করা যাবে দেখছি। সেক্ষেত্রে ইনস্যুলেশনের কী উপায় হতে পারে?


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সৌখিন  এর ছবি

ডাই পোল ডাই পোল
যেকোন হাইড্রকারবন ভ্যাপার হতে পারে ( যেমন মিথেন, বিঊটেন, হেক্সেন)
ডাক্টিলিটি ভাল। একটা রিসার্চ পেপারে দেখেছি ৯৫ মেগাপ্যাসকেল লোডেও কিছু হয় নাই।
ইন্সুলেশানের আইডিয়া নাই।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

একটা অধাতু যার তাপ পরিবাহিতা, বিদ্যুৎ পরিবাহিতা চমৎকার; Tensile Strength - Ductility বেশ ভালো; অতি পাতলা অবস্থায় কাজ করতে পারে; permeability অদ্ভূত - পরীক্ষাগারের সীমার বাইরে বাণিজ্যিক ব্যবহারে আসতে পারলে বিদ্যমান অনেক ব্যবসায়ে ধ্বস নামিয়ে দেয়া যাবে। বাণিজ্যিকভাবে সফল না হতে পারলে এটা নিয়ে জম্পেশ সায়েন্স ফিকশন লেখা যাবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মেঘলা মানুষ এর ছবি

আপনার লেখার হাত আসলেই ভালো, ঝরঝরে ভাষায় লিখেছেন -এটাও স‌হজ কাজ নয়।

সাধারণত মুদ্রার অন্যপিঠ সম্পর্কে খুব লেখা হয় না, কেবল একতরফাভাবে ভালো দিকগুলো নিয়ে কথা বলা হয়। সেই অপ্রিয় কাজটা করছি।

  • ১।মান নিয়ন্ত্রণ:
    গ্রাফিন চমৎকার মানের বিদ্যুৎ পরিবাহী, কিন্তু এটা নির্ভযোগ্যভাবে এবং পুনরাবৃত্তি (Reliable and Repeatable) করা যায় -এমন প্রক্রিয়া দাঁড় করানো কঠিন।

    মান নিয়ন্ত্রণের সমস্যার কারণেই কিন্তু অনেক আবিষ্কার গবেষণাগার থেকে কারখানার উৎপাদন প্রক্রিয়ায় যেতে পারেনি।

    ধরুন, গ্রাফিন দিয়ে একটা দুইটা ট্রাঞ্জিস্টর বা প্রথম-নমুনা (prototype) জিনিসপত্র বানানো নয় -একে দিয়ে রীতিমত ভোগ্যপণ্য(consumer goods) বানানো অবধি অনেক বাধা আছে।

    আমি অসম্ভব বলছি না, তবে সুবিধার পাশাপাশি অনেক অসুবিধাও আছে এর।

  • ২। উৎপাদন অনেক কিছু ল্যাবরোটরিতে তৌরি করা সম্ভব। তার জন্য নিবিড়ভাবে প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ ( Process control) এর প্রয়োজন হয়। তারপর আছে ব্যব‌হারযোগ্য/উৎপাদিত (Yield) দ্রব্যের হিসাব। অনেক প্রযুক্তি যখন বড় উৎপাদনে গিয়েছে, তখন দেখা গিয়েছে যে এর শতকরা ৩০-৪০% অব্যব‌হার্য্য এবং একারণে উৎপাদিত পণ্যের দাম আশানুরুপ কম রাখা যায় নি।

    উদাহরণ: মুদ্রণযোগ্য জৈবযৌগ ভিত্তিক সৌরকোষ (printable organic solar cell)

অতিপরিবাহী (Super conductor) পদার্থ নিয়েও একসময় অনেক উৎসাহ ছিল, সেটা আর নেই। গ্রাফিনের তুলনায় কার্বন ন্যানোটিউব অনেক বেশি মনোযোগ, গবেষণা আর অর্থায়ন পেয়েছে। কার্বন ন্যানোটিউব যতটা প্রতিশ্রুতি শুনিয়েছিল, দুর্ভাগ্যবশত সে তুলনায় এর সত্যিকারের প্রয়োগ অনেক কম।

(পরিভাষার ব্যব‌হারে ভুল হলে দুঃখিত)

শুভেচ্ছা হাসি

সৌখিন  এর ছবি

আমি সম্পূর্ণ একমত। আমার পি এইচ ডি গ্রাফিন সিন্থেসিস, গ্রাফিনের ডিফেক্ট কনট্রোল আর লম্বা সময় ধরে কিভাবে মরিচা প্রতিরোধী হিসাবে কাজে লাগানো যায় তা নিয়ে। হাসি আমি নিজেই গত সাড়ে তিন বছর ধরে গ্রাফিনের নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত ওঁয়া ওঁয়া তবে গ্রাফিন অক্সাইড কিন্তু আসলেই বাজারজাত করার মত পর্যায়ে যাবে/গেছে অনেকটাই। আর বিশুদ্ধ গ্রাফিন ইলেকট্রনিক আপ্লিকেশানে কাজে লাগছে, মেকানিক্যাল এপ্লিকেশান বা লারজ স্কেলে আসবে কিনা সেটা নিয়ে আমারও সন্দেহ আছে চোখ টিপি

সৌখিন  এর ছবি

আরেকটা বিষয় হল জগতের সব ভালো জিনিস মনে হয় সাথে কিছু সমস্যা নিয়ে আসে। ঈশ্বর ভালো জিনিস সহজে দেন না। ডিফেক্ট ফ্রি গ্রাফিন মনে হয় তেমন জিনিস। আমি মোটামুটি গ্রহনযোগ্য পর্যায়ে ডিফেক্ট কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি যা একই কন্ডীশান ব্যাবহার করলে পুনরাবৃত্তি করা যায় । প্রক্রিয়াটা প্যাটেন্ট এর জন্য ফাইল করা হয়েছে। রমন স্পেক্ট্রাম এর পয়েন্ট এনালাইসিসে এ কোন ডি পিক(ডিফেক্ট পিক)দেখায় না। রমণ ম্যাপিং করলে একটু আধটূ পাওয়া যায়।
- সৌখিন

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

'ডিফেক্ট' কী? কোন ফরেন পার্টিকল্‌?


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সৌখিন  এর ছবি

ডিফেক্ট নিয়ে আরেকটা প্রবন্ধ লেখার ইচ্ছা আছে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ভালো ইচ্ছা। বাংলাভাষী গবেষকগণ তাঁদের কাজের কিছু কিছুও যদি বাংলায় লেখেন বা অনুবাদ করেন তাহলেও বাংলা নন্‌-ফিকশন খাত অনেক সমৃদ্ধ হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

এক লহমা এর ছবি

গ্রাফিন থেকে আমাদের প্রাপ্তি কি দাঁড়াবে সেটা জানতে হয়ত এখনও লম্বা পথ পার হতে হবে। কিন্তু, গ্রাফিন নিয়ে আপনার লেখাটা চমৎকার হয়েছে। আরো এই রকম লেখার অপেক্ষার রইলাম।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

সৌখিন  এর ছবি

প্রথম লাইনের সাথে একমত, দ্বিতীয় লাইনের জন্য ধন্যবাদ। তৃতীয় লাইনের জন্য অনুপ্রানিত হলাম

সোহেল ইমাম এর ছবি

পড়ে ভালো লাগলো। আরো লিখবেন আশা করি।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

সৌখিন  এর ছবি

ধন্যবাদ। চেষ্টা করব।

উটিংওয়াং  এর ছবি

ধন্যবাদ জানাই

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।