।।আগষ্ট পনেরো'র 'রাষ্ট্রহত্যা'য় বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবিদের ভূমিকা।।

হাসান মোরশেদ এর ছবি
লিখেছেন হাসান মোরশেদ (তারিখ: শনি, ১৫/০৮/২০০৯ - ৮:৩০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

..

আগষ্ট পনেরো'র ভোরবেলা ঘাতকের গুলীতে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি শেখ মুজিব, গড়পড়তা বাঙ্গালীর চেয়ে দীর্ঘ তার দেহটি নিয়ে তিনি একাই শুধু নিহত হলেন না, নিহত হলো ডিসেম্বর ষোল'র বিকেল বেলা এক অবিস্মরনীয় গৌরবের মধ্য দিয়ে জন্ম নেয়া বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি ও।

ব্যক্তির মৃত্যুতে তার দেহ বর্জিত হয়, আর রাষ্ট্রের মৃত্যুতে তার চরিত্র। ইসলামিক রিপাবলিক পাকিস্তানের পূর্বাংশের মৃত্যুর বিনিময়ে যে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম- চরিত্র তার আলাদা তাই। সে ইসলামিক রিপাবলিক না হয়ে ধর্ম নিরপেক্ষ। চর্চায় সম্পূর্ন না হলে ও অন্ততঃ সাংবিধানিক ভাবে। তিনবছর ন'মাস পরের আগষ্ট পনেরো তারিখে তার চরিত্র বদলালো আবার। মুজিবের হত্যাকারীদের ঘোষনায় - পিপলস রিপাবলিক বাংলাদেশ আবার হলো ইসলামিক রিপাবলিক। এই নতুন ইসলামিক রিপাবলিকের প্রথম স্বীকৃতি দাতা কে? আরেক ইসলামিক রিপাবলিক 'পাকিস্তান' । তার দূতিয়ালীতে মধ্য প্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর স্বীকৃতির ডালা নিয়ে এগিয়ে আসা, যারা আগের তিন বছর নয় মাসের পিপলস রিপাবলিককে স্বীকার করেনি।

যদি ও ক'দিন পর শক্তিশালী প্রতিবেশী ভারতের চাপে নামবদল রহিত হলো কিন্তু অন্তর-আত্না বদল হলো ঠিকই। পঞ্চম সংশোধনীর বদলে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল, সংবিধানের শুরুতে সংযোজন করলেন 'বিসমিল্লাহ', ধর্ম নিরপেক্ষতাকে হটিয়ে রাষ্ট্রের মুলনীতি হলো ' আল্লাহর উপর পূর্ন বিশ্বাস' [ আমার জানতে ইচ্ছে হয়- এই মুলনীতি যারা মানেননা অর্থ্যাৎ অমুসলিম কিংবা নাস্তিক- তাদের কি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নাগরিক হওয়ার আইনগত ভিত্তি আছে, সত্যি?]।
'৭১ এর পরে ঘাপটি মেরে থাকা, কারাগারে থাকা ঘাতক দালালরা পুনর্বাসিত হলো, গোলাম আজম সহ প্রধান ঘাতকরা ফিরে এলো নিরাপদে।

তারপরের বাংলাদেশ- আজকের বাস্তবতা।

ব্যক্তি মুজিব ও তার পরিবারের সদস্যদের ঘাতক কারা সে আমাদের জানা, নামগুলো পরিচিত। মাঝারী র‌্যাংকের কিছু সেনা কর্মকর্তা আর লোলুপ রাজনীতিকের দল- স্রেফ এই? আর কেউ নেই?

ব্যক্তি মুজিবের সাথে এই যে রাষ্ট্র নিহত হলো, অন্ততঃ রাষ্ট্রের চরিত্র- এ কেবল কতিপয় মাঝারী র‌্যাংকের সেনাকর্মকর্তা আর ক্ষমতালোভী রাজনীতিকদের ষড়যন্ত্র মাত্র? এই রাষ্ট্র হত্যার , এই মতাদর্শিক বদলের পেছনে কোন বুদ্ধিবৃত্তিক ইন্ধন, যোগসাজশ নেই?

আমার কাছে কেনো জানি মনে হয়- এই জায়গাটা একেবারে অনুচ্চারিত রয়ে গেছে বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে। যে কোনো রাষ্ট্রীয় পরিবর্তনেই বুদ্ধিজীবিদের ভূমিকা থাকে। ধর্মজীবি পাকিস্তান থেকে ধর্ম নিরপেক্ষ বাংলাদেশের রূপরেখা প্রনয়নে ও বুদ্ধিজীবিদের ভূমিকা ছিলো গৌরবের। রাজনীতির মিছিলে কিংবা যুদ্ধের মাঠে তারা ততোটা প্রকাশ্য না হলে ও রূপকল্প প্রনয়নে তারাই ছিলেন অগ্রনী। তার পর আবার ধর্ম নিরপেক্ষ বাংলাদেশ থেকে বিসমিল্লাহ যুক্ত, আল্লাহর উপর পূর্ণ বিশ্বাসী বাংলাদেশ, যে মুসলিম বাংলার জন্য মুজিবরের মৃত্যুর কোন বিকল্প ছিলোনা তার রূপকল্পে কোন বুদ্ধিজীবি ছিলেন না?

নাহ, আমি কোন নাম উচ্চারন করতে চাইনা। এই বিশাল গবেষনার সুযোগ ও আমার নেই। কিন্তু আমার মনে হয়- যতোটা সামান্য করে দেখা হয় মুজিবের মৃত্যু ততোটা সামান্য নয়। এই মৃত্যুতে, এই মৃত্যুর পরিনতিতে রাষ্ট্রের চরিত্র বদলের নেপথ্যে বাংলাদেশের রঙ বদলানো বুদ্ধিজীবিদের কেউ কেউ ও ছিলেন। কিন্তু তারা পার পেয়ে গেছেন, যেমন তারা পার পেয়ে যান তাদের সকল বদমায়েশী থেকে।
ইংরেজী পত্রিকার নামী সম্পাদক যিনি বাকশালের প্রধান প্রচারক ছিলেন তিনিই কেনো নিহত মুজিবকে ফেরাউন বানালেন কিংবা জ্ঞানী অধ্যাপকটির কাছে হত্যাকান্ডের পর পরই আমেরিকান রাষ্ট্রদূত কেনো ছুটে গেলো এইসব নিয়ে কেউ একদিন হয়তো গবেষনা করবেন।

সময় একদিন সেই নামগুলো উচ্চারন করুক ।



প্রাসংগিক আরেকটি পোষ্ট
এয়ার ভাইসমার্শাল তোয়াব ও '৭৬ এর ছয়দফা


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আমরাও জানতে চাই।

অম্লান অভি এর ছবি

আমরা প্রায় সবাই শুনতে চাই সেই অপ্রকাশিত নাম আর কর্মকাণ্ড.....
বাংলাদেশ...........
হায় বাংলাদেশ..............
হায় ১৬ ডিসেম্বর...........
হায় রক্ত ধারা.............
হায় হীনতায় বসবাস...

মরণ রে তুহু মম শ্যাম সমান.....

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

বছর দুই আগে এই দিনে মোরশেদ ভাই কমেন্টে একটা ফাইলের লিংক দিয়েছিলেন।
খুঁজে পেতে সময় লাগলো। সাধক শঙ্কুর এই পোস্ট এবং কমেন্টে দেয়া এই লিংক দুটোই গুরুত্বপূর্ণ।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

শিমুল ভাই একটা চলমান আর্কাইভ হাসি

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

ডকুমেন্টটা পড়লাম। পড়ে একটা জিনিসই মনে হলো, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীই এই দেশের সবচেয়ে বড়ো সর্বনাশ করে চলেছে।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

অতিথি লেখক এর ছবি

ইতিহাস ইতিহাসই! তার মুখ চেপে ধরার যতই চেষ্টা-কসরত করা হোক না কেন একদিন জনসম্মুখে প্রকাশ হয়ই। বাংলাদেশ, শেখ মুজিব আর স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে যত জল ঘোলা হয়েছে আর যত অপপ্রচার চালানো হয়েছে তা ইতিহাসকেও হার মানাবে । তবে সুখের কথা আমরা এখন দিন দিন ইতিহাস সচেতন হয়ে উঠতে শুরু করছি...............
কবির য়াহমদ

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

পোস্টটার জন্য ধন্যবাদ।

সময় একদিন সেই নামগুলো উচ্চারন করুক ।
কবে আসবে সেই সময়? মন খারাপ

ফিরোজ জামান চৌধুরী এর ছবি

লেখাটির জন্য ধন্যবাদ হাসান মোরশেদ।

বঙ্গবন্ধুর সঠিক মূল্যায়নের মাধ্যেমই কেবল বাংলাদেশ ফিরে পেতে পারে একাত্তরের মূলেবোধ।

ঝিনুক নীরবে সহো, নীরবে সয়ে যাও
ঝিনুক নীরবে সহো, মুখ বুঁজে মুক্তো ফলাও।

বালক এর ছবি

সময় একদিন সেই নামগুলো উচ্চারন করুক

_____________________________________________
কার জন্য লিখো তুমি জলবিবরণ : আমার পাতার নৌকা ঝড়জলে ভাসে...

____________________________________________________________________
"জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক;
আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ হয়তো
এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।"

জুয়েইরিযাহ মউ এর ছবি

পোস্টটির জন্য ধন্যবাদ লেখককে।
তবে সেসব নাম এবং ঘটনা স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করার সময় বোধহয় এখনই। স্কুল-কলেজ লাইফে ইতিহাসকে এতোটা ঘোলা হতে দেখেছি; যেসব সহপাঠীদের পারিবারিকভাবে সত্যটা জানার সুযোগ হয়নি তাদের ক্রমশ ইতিহাস নিয়ে ধোঁয়াশার মাঝেই থাকতে দেখেছি। তবে সবচেয়ে পীড়াদায়ক হল যখন পরিবার থেকে জলজ্যান্ত মিথ্যাকে সত্য হিসেবে জানতে দেখেছি আমাদের প্রজন্মের কোন কিশোর-কিশোরীকে।

পরিবর্তনশীল এর ছবি

সে সময়টার জন্য অপেক্ষাটা আর কত লম্বা হবে?

ধন্যবাদ হাসান মোরশেদ ভাইকে এই লেখাটার জন্য।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

রেজুয়ান মারুফ এর ছবি

কিছু কিছু বুদ্ধিজীবির নোংরামি - ইতিহাস কলংকিত করেছে বহুবার। বুদ্ধিবৃত্তির তবক আঁটা এই সব স্বার্থপররা তবু বহাল তবিয়তেই থেকেছে - থাকছে। জাতি তাদের সম্মানও করে! আর সেনাবাহিনীর ক্ষমতা হরণ আকাঙ্খা তো সেনা প্রধানদের বর্দ্দিতে সর্বোচ্চ তারকা খচিত হবার মতো একটি ব্যাপার। নতুন নতুন মোড়কে ইতিহাস বিভ্রান্তির ফলে যে ক্লোন ইতিহাস আমাদের সামনে হাজির হচ্ছে, তার দায়ভার কি আমাদেরকেও বহন করতে হবেনা? কাউকে না কাউকে তো বলতেই হবে। তাই গবেষনা অব্যাহত থাক, উচ্চারিত হোক সব প্রতারকের নাম!

---------------------------------------------------------------

আমার জীবন থেকে আধেক সময় যায় যে হয়ে চুরি
অবুঝ আমি তবু হাতের মুঠোয় কাব্য নিয়ে ঘুরি।

আমার জীবন থেকে আধেক সময় যায় যে হয়ে চুরি
অবুঝ আমি তবু হাতের মুঠোয় কব্য নিয়ে ঘুরি।

জেবতিক রাজিব হক এর ছবি

সত্য বেরিয়ে আসুক। কাউকে খুশি করার সত্য নয়, সত্যিকারের সত্য।
শিরোনাম দেখে পোষ্টটাকে আরো ইনফরমেটিভ আশা করেছিলাম। ইঙ্গিত-টিঙ্গিত না মোরশেদ ভাই, একেবারে লুঙ্গি ধরে টান দেন।

সজারু এর ছবি

কি যে কন্না !! লুঙ্গি পড়া বুদ্ধিজীবি দ্যাখছেন কখনো?
_________________________

সর্বাঙ্গ কন্টকিত-বিধায় চলন বিচিত্র

_________________________

সর্বাঙ্গ কন্টকিত-বিধায় চলন বিচিত্র

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

ফরহাদ মজহার বুদ্ধিজীবী নন তাহলে? আহ বাঁচলাম! দেঁতো হাসি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

মন খারাপ
কতোদূর, আর কতোদূর?!
আমরা তো বরং উদ্ভট হেঁটে যাচ্ছি উল্টোরথে উল্টোপথে!
মন খারাপ
___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

কীর্তিনাশা এর ছবি

পোস্টটার জন্য ধন্যবাদ মোরশেদ ভাই।

সময় একদিন সেই নামগুলো উচ্চারন করুক ।

আমাদের জীবদ্দশায় কি সেই সময় আসবে ?? মন খারাপ

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

এনকিদু এর ছবি

কিছু করতে চাইলে নিজেরই করা উচিত । যাদের জানা আছে, নিজেরাই নাম গুলো উচ্চারন করুক আর নাহয় ভুলে যাক সব কিছু । অবশ্য ভুলেই যাওয়াই চলছে বহুদিন ধরে ।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

s-s এর ছবি

চলুক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।