বাড়িওয়ালি

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি
লিখেছেন যাযাবর ব্যাকপ্যাকার (তারিখ: শনি, ০২/০২/২০১৩ - ১১:৩৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ঢাকা থেকে ছাড়া সকাল দশটার একতা এক্সপ্রেস পথে পাক্কা আড়াই ঘণ্টা দেরি করায় পার্বতীপুর স্টেশনে পৌঁছাতে আকাশের রাত প্রায় ন’টা বাজলো। স্টেশনের উল্টোদিকের বাড়িগুলোর উপরে তখন রাতের তারাভরা স্বচ্ছ আকাশে চাঁদটা কেবল উঁকি মারছে। কুয়াশা না থাকলেও হিম হাওয়া বরফের ব্লেডের মতোন গাল চিরে যাচ্ছিলো।

“আচ্ছা, কাছেপিঠে কোন সুলভ হোটেল হবে কিনা জানেন নাকি ভাই?”, কুলিকে জিজ্ঞেস করে আকাশ।

“নিদ্রাকুসুম ইন-এ দেখতে পারেন।” রাস্তার মাথার দিকে ইঙিত করে লোকটা, “এই এক কিলোমিটার সামনে গিয়ে ডাইনে।“

ধন্যবাদ দিয়ে নিজের ট্রাভেল ব্যাগটা নিয়ে হাঁটা দেয় আকাশ। আগে এদিকে আসেনি কখনো, এখানে কাওকে চেনেও না। হেড অফিসের মজিবর সাহেব বলেছিলেন শহরটা দারুণ। “নিজের থাকার ব্যবস্থা নিজে করে নিবা বুঝলা? তারপর সোজা গিয়ে ব্রাঞ্চ ম্যানেজারের সাথে দেখা করবা।“

আকাশের বয়স মাত্র একুশ-বাইশ। একটা নেভি-ব্লু কোট পরে আছে, গতকালকে কিনেছে বঙ্গবাজার থেকে, পার্বতীপুর আসা উপলক্ষে। সাথে নতুন খয়েরি একটা মাফলার। মনটা ফুরফুরা হয়ে আছে একদম। রাস্তা ধরে চটপট হাঁটতে শুরু করে। ইদানীং চটপটে ভঙ্গিটা রপ্তের চেষ্টায় আছে। চটপটে আর করিৎকর্মা একটা ভাব না থাকলে বিজনেস করা যাবে না, শিখছে আকাশ। হেডঅফিসের সবাই কেমন স্মার্ট, সেটা মনে মনে একবার ভেবে নেয় আকাশ।

শীতের এই রাতে, চারিদিকে একদম শুনশান। স্টেশনে তাও মানুষজন ছিলো, রাস্তায় কেউই নাই। মেইন রোড ধরে প্রায় দেড় কিলোমিটার হেঁটে ডানে কোন হোটেল পাওয়া মতন রাস্তা পায় না আকাশ। একটা রিকশাও নাই এই হিমের মধ্যে। একটা দোকান খোলা থাকলে নাহয় কাওকে জিজ্ঞেস করা যেত। ডানের একটা রাস্তায় ঢুকে দেখার সিদ্ধান্ত নেয় শেষে।

যে রাস্তাটায় ঢুকেছে সেটা শহরের পুরাতন একটা এলাকা, দুইপাশে বাড়িগুলোর সামনে অযত্নের বাগান, এক একটা বাড়ি কেমন আরেকটা থেকে বিচ্ছিন্ন, একাকী। রাস্তায় আবার বড় বড় গাছ চাঁদটাকেও ঢেকে ছায়া করে রেখেছে। বোঝা যায় এলাকাটা এককালে বেশ খানদানি মানুষজনের পাড়া ছিলো। বাড়িগুলো বেশ পুরানো উঁচু ছাদের সেই ইংরেজ আমলের ধাঁচে গড়া। কিন্তু এখন, এই অন্ধকারেও বাড়িগুলোর দরজা জানালার রঙচটা ভাবটা চোখ এড়ায় না আকাশের। অযত্নে চটে যাওয়া পলেস্তেরার সোঁদা গন্ধ পায় আকাশ।

হঠাৎ রাস্তার আলোয় একটা বাড়ির নিচতলার একটা জানালায় সাঁটা একটা বড় কাগজে, হাতে লেখা নোটিশটা দেখতে পায় - ‘বেড অ্যান্ড ব্রেকফাস্ট’, ইংরেজীতে, শুদ্ধবানানে।
ঠিক তার পাশেই একটা ফুলদানিতে বাড়ির সামনের বাগান থেকে তোলা কিছু বুনোগোলাপ রাখা আছে।
হাঁটা থামিয়ে কাছে যায় আকাশ। সবুজ পর্দা ঝুলছে জানালাটার দু’পাশে, কেমন যেন মখমলের মতন।

জানালা দিয়ে উঁকি মেরে প্রথমেই যেই জিনিসটা চোখে পড়লো তা হলো একটা ফায়ারপ্লেস! তাতে আবার গনগনে আগুন জ্বলছে, কাচের এপাশ থেকে দেখেও তার উষ্ণতা টের পায় যেন আকাশ। ফায়ারপ্লেসের ঠিক সামনেই একটা ছোট কার্পেটে একটা মোটা কালচে বেড়াল গোল্লা পাকিয়ে ঘুমিয়ে। ঘরের ভেতরে যেটুকু দেখা যায় বেশ চমৎকার পুরানো আসবাবে সাজানো, একটা ছোটখাটো গ্রান্ড পিয়ানোও চোখে পড়ে একপাশে, আর একদিকে একটা বড় খাঁচার মাঝে বেশ বড়সর একটা তোতাপাখি। পোষা প্রাণী মানে ভালো লক্ষণ, বাড়ির লোকেরা ভালো হবার কথা, ভাবে আকাশ, অন্তত ‘নিদ্রাকুসুম-ইন’ এর থেকে খারাপ হবে না!

তবে ছোটখাটো হোটেল মানে খরচ কম, সবসময়ে চা-সিঙারা পাওয়া যাবার সম্ভাবনা, আর চা-এর সাথে আড্ডা দেবার দুই-একজন রেডি বান্দা এটাও ঠিক। আর তারউপরে এরকম একটা বাড়িতে পয়সা দিয়ে থাকতে হলে খাবারদাবার আদৌ মনমত হবে কিনা বা বাড়ির বাসিন্দারা কে জানে! তবে এর আগে এরকম বাড়িঘরে থাকেনি সেটাও ঠিক, তাও আবার ফায়ারপ্লেস-ওয়ালা!

‘নিদ্রাকুসুম’ খুঁজে বের করে সেটার হাল-হকিকত দেখে না হয় সিদ্ধান্ত নেয়া যাক, ভেবে ঘুরতে যেতেই জানালায় সাঁটা বিজ্ঞাপনটায় আবার চোখ আটকে যায় আকাশের, ‘বেড অ্যান্ড ব্রেকফাস্ট’, ‘বেড অ্যান্ড ব্রেকফাস্ট’ মনে মনে বিড়বিড় করে কয়েকবার... প্রতিটা শব্দ যেন কোন মন্ত্রবলে আটকে রাখে তাকে... গরম একটা বিছানা আর সাথে সকালের ফ্রি খাবার! কোন ফাঁকে জানালা থেকে সরে নিজের অজান্তেই বাড়িটার প্রধান দরজায় পৌঁছে কলিং বেলে চাপ দেয় আকাশ।

বাড়িটার কোন এক প্রান্তে বেল বাজার অস্পষ্ট আওয়াজটা শুনতে পেতে না পেতেই খুট করে দরজাটা খুলে যায়, এক্কেবারে সাথেসাথেই! সাধারণত বেল টেপার প্রায় আধামিনিট পরে ভেতর থেকে কেউ অনিচ্ছা নিয়ে এসে দরজা খুলে যেমন মোটেও সেভাবে না, এক্কেবারে তক্ষুণি, কারণ আকাশ তখনো হাত সরায়নি বেল থেকে! সাংঘাতিক চমকে উঠে নিজেকে সামলাবার আগেই দরজার ভেতরে দাঁড়িয়ে থাকা মহিলার মুখে হাসি দেখে খানিক থতমত খেয়ে যায়।

মহিলার বয়স পঁয়তাল্লিশ থেকে পঞ্চাশের মাঝে। মিষ্টি হেসে, ‘বাইরে কেন? ভেতরে এসো!’ বলে দরজাটা পুরোটা মেলে ধরতেই আকাশ কেমন যেন অবলীলায় ভেতরে ঢুকে পড়ে। মহিলার পিছু নিয়ে ভেতরে যাওয়া বা ভেতরের ফায়ারপ্লেসের সামনে গিয়ে বসার জন্যে কেমন যেন অদ্ভুত আর শক্তিশালী একটা টান অনুভব করে।

“জানালায় টাঙানো নোটিশ-টা দেখছিলাম”... নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে করতে বলে আকাশ।

“হ্যাঁ, হ্যাঁ, ওটা।“

“আমি ভাবছিলাম আজ রাতের জন্যে একটা ঘর পাওয়া গেলে...”

“একদম রেডি আছে, তোমার জন্যেই।“ স্নিগ্ধ চোখে, ফরসা গোলাপী মুখে চমৎকার হাসি ফুটিয়ে বলেন ভদ্রমহিলা।

“আমি আসলে ‘নিদ্রাকুসুম-ইন’টা খুঁজছিলাম। ... কিন্তু তখনই নোটিশটা চোখে পড়লো।“

“আহা বাছা, দরজায় দাঁড়িয়ে না থেকে ভেতরে এসো তো!”

“আপনাদের এখানে কত খরচ পড়বে যদি একটু বলতেন...?”

“মাত্র আড়াইশো টাকা প্রতি রাতে, সকালের নাশতাসহ।“

আকাশ আবারও একটু চমকায়, এত কম! এর থেকে বেশি খরচ করতে প্রস্তুত ছিলো হোটেলে থাকতে হলে।

“তোমার যদি বেশি মনে হয়, আমি না হয় আরেকটু কমিয়ে ধরতে পারি।“ ভদ্রমহিলা সাথেসাথে বলে ওঠেন।

“তুমি কি সকালের নাশতায় ডিম খাবে? ডিমের দাম একটু বেড়েছে হালিতে। নাহয় ডিম বাদ দিলে আরেকটু কমিয়ে রাখতে পারি।“

“না! না! আড়াইশো একদম ঠিক আছে।“ আকাশ তড়িঘড়ি বলে ওঠে। “আমি এখানেই থাকতে আগ্রহী।“

“আমি জানতাম তুমি এখানেই থাকবে। এসো, এসো, ভেতরে এসো।“ হেসে জবাব দেন ভদ্রমহিলা।

ভদ্রমহিলার আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয় আকাশ, ঠিক যেন বন্ধুর মা, বন্ধুর বাড়িতে ছুটি কাটাতে এলে যেভাবে আপ্যায়ন করেন তেমনি আচরণ। ঘরের ভেতরে বেশ গরম। ভেতরে ঢুকে নিজের মাফলার আর নীল-কোটটা খুলে ফেলে আকাশ।

“এইখানে টাঙিয়ে রেখে দাও”, ভদ্রমহিলা দরজার পাশের একটা পুরানো-ধাঁচের কোট-হ্যাঙার দেখিয়ে দেন।

আর কোন কোট-ছাতা কিছুই রাখা নাই হ্যাঙারে। আর কোন অতিথি নাই নাকি!

“শুধু আমরাই আপাতত।“ সিঁড়ি বেয়ে উপরে নিয়ে যেতে যেতে স্বভাবসুলভ মিষ্টি হাসিতে ঠিক যেন ওর মনের কথাটা পড়ে ফেলেই জবাব দেন ভদ্রমহিলা। “আমার এই ডেরায় তেমন একটা অতিথি আপ্যায়নের সুযোগ পাইনা আমি বুঝতেই পারছো।“

‘মহিলা বেশ চনমনে আছে এই বয়সেও’, মনেমনে ভাবে আকাশ। ‘যাক বাবা, এত কম খরচে এত আরামের নিবাস মিলবে কে জানতো, কাজেই কীই বা যায় আসে বেশি গপ্পোবাজ হলেও!’

“সেকি! আমি তো ভাবছিলাম আপনার এখানে থাকতে অনেকেই আগ্রহী হবে!” ভদ্রতার উৎকণ্ঠা দেখায় আকাশ।

“তাতো হয়ই সোনা। কিন্তু মুশকিল হলো সবাই আগ্রহী হলেই চলে না। আমি একটু খুঁতখুঁতে মানুষ, বুঝতেই পারছো...”

“জ্বি, নিশ্চয়ই!”

“তবে আমি সবসময়েই প্রস্তুত থাকি। দিনরাত সবসময়ে সবকিছু একদম রেডি থাকে বাড়িতে। বলা তো যায় না, কখন তোমার মতো চমৎকার একজন ইয়ং-ম্যান এসে হাজির হয়! আর আমি আপ্যায়ন করে আনন্দও পাই বুঝছোই তো, যখন দরজা খুলে উপযুক্ত এক-একজন টগবগে তরুণকে দেখি।“

সিঁড়ি বেয়ে ততক্ষণে আকাশ আর ভদ্রমহিলা অর্ধেক উঠেছেন। থেমে গিয়ে, রেইলিং-এ হাত রেখে মাথা ঘুরিয়ে ভদ্রমহিলা চোখ দিয়ে আপাদমস্তক একবার নিরীক্ষণ করেন আকাশকে, তারপর ফ্যাকাসে ঠোঁটে মধুর হেসে আকাশকে বলেন, “ঠিক তোমার মতো!”

দোতলায় পৌঁছে ভদ্রমহিলা জানান, “দোতলাটা পুরোই আমার।“

তিন-তলায় ওঠে ওরা। “আর তৃতীয়-তলা পুরাই তোমার।“...”এই যে, এইটা তোমার ঘর, আশাকরি তোমার পছন্দ হবে।“ লাইট জ্বালিয়ে আকাশকে নিয়ে একটা ছোট কিন্তু চমৎকার করে গোছানো শোবারঘরে ঢোকেন মহিলা।

“এইদিকের জানালা দিয়ে সকালের রোদ আসে বুঝলে সাগর, সাগর না তোমার নাম?”

“জ্বি, না। আমার নাম আকাশ, আকাশ দস্তগীর।“

“আকাশ। বাহ! সুন্দর নাম। আমি বিছানায় নতুন চাদর পেতে একটা গরম পানির বোতল দিয়ে রেখেছি যাতে বিছানাটা গরম থাকে। শীতের সময়ে ফ্রেশ চাদর পাতা গরম বিছানায় আরামের ঘুমের মতো আর কিছু হয় না, তাই না? আর এই যে দেখ, এখানে একটা ছোট হিটার আছে, ইলেক্ট্রিসিটিতে চলে, বেশি ঠাণ্ডা লাগলে চালিয়ে নিও।“

“ধন্যবাদ!” বিস্মিত আকাশ দ্রুত বলে ওঠে, “অনেক ধন্যবাদ!”

আকাশ খেয়াল করে বিছানার চাদর শুধু একদম ধোয়া-ধবধবেই না, সযতনে পাতা পরিষ্কার কম্বলটাও পরিচ্ছন্নভাবে এক কোণা মুড়িয়ে পাতা হয়েছে, যেন এইমাত্র কেউ বিছানায় ঢুকে পড়তে পারে!

“তুমি উদয় হও... মানে, এসেপড়ায় আমি খুবই খুশি হয়েছি।“ আকাশের চোখের দিকে তাকিয়ে খুবই সততার সাথে বল ওঠেন ভদ্রমহিলা। “আমার তো চিন্তাই লাগছিলো...।”

“আরে আমাকে নিয়ে ভাববেন না।“ সহাস্যে বলে ওঠে আকাশ। নিজের ব্যাগটা দরজার পাশের চেয়ারের উপরে রেখে খুলতে শুরু করে।
“আর রাতের খাবারের কী? কোথাও কিছু পেটে পড়েছিলো?”

“আমি একটুও ক্ষুধার্ত নই, অনেক ধন্যবাদ।“ আকাশ বলে ওঠে। “আমি বরং দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তে চাই, কালকে সক্কাল সক্কাল আমাকে অফিসে রিপোর্ট করতে হবে।“

“বেশ, বেশ। আমি তাহলে তোমাকে আনপ্যাক করতে দেই আরাম করে। তবে তুমি ঘুমাতে যাবার আগে একবার একটু নিচে বসবার ঘর হয়ে গেলে ভালো হয়। এন্ট্রি-বুকে তোমার নামটা টুকে রাখতে হবে। জানোই তো ঐটাই আইন। আর আমরা এই সময়ে এতদূর এসে নিশ্চয়ই কোন আইন ভাঙতে চাইবো না, তাই না?”, আবারো মিষ্টি হেসে আস্তে করে হাত নেড়ে দরজা্টা ভিড়িয়ে দিয়ে বেরিয়ে যান মহিলা।

বাড়িওয়ালি যে খানিকটা অদ্ভুত, এই ব্যাপারটা আকাশের মন তেমন একটা পাত্তা দিতে চায় না। ভদ্রমহিলা অদ্ভুত নয় বরং একটু বেশিই দয়ালু আর অতিথিপরায়ণ, ভাবে আকাশ। হয়তো নিজের ছেলেকে হারিয়েছেন কখনো অসুখ-বিসুখে, বা আর কিছুতে আর সেটাই ভুলতে পারেননি, কে জানে।

কাজেই কয়েক মিনিট পরে, নিজের ব্যাগ খুলে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বের করা হলে, নিচতলায় বসবার ঘরে এসে ঢোকে আকাশ। বাড়িওয়ালি মহিলা তখন সেখানে নেই। তবে ফায়ারপ্লেসটায় গনগনে আগুনে ওম হয়ে আছে ঘরটা, আর সেই কালো বিল্লিটা চুপ করে গুটি মেরে পড়ে আছে তখনো মাদুরের উপরে। ঘরটা এত আরামদায়ক লাগছিলো যে আকাশ হাত ডলতে ডলতে ভাবে যে সে কতটা ভাগ্যবান এইরকম শীতের রাতে এতটা উদারতা পাচ্ছে অপরিচিত কারও কাছে।

এ সময়ে পিয়ানোটার উপরে গেস্ট-বুকটা চোখে পড়ে আকাশের। নিজের পকেটে যে কলমটা থাকে সেটা বের করে টুক করে নিজের নাম আর ঠিকানাটা লিখে ফেলে নির্ধারিত জায়গায়।

আর মাত্র দুইটা নাম এন্ট্রি করা আছে বইটাতে, ঠিক তার নামের উপরে। আর স্বভাবতই নাম দুইটা পড়তে শুরু করে আকাশ, যেমন আর যে কেউ হলে করবে।

একটা নাম হলো, সীমান্ত চৌধুরী, সুনামগঞ্জের।

আরেকটা হলো, মুরসালিন খান, সাতক্ষীরার।

‘সীমান্ত চৌধুরী... এই নামটা কেমন যেন খুব পরিচিত লাগছে...’ ভাবে আকাশ।
‘এই বেশ অদ্ভুত নামটা আগেও কোথাও শুনেছি যেন, কিন্তু কোথায়?’ অবাক হয় আকাশ। ‘স্কুলের কেউ নাকি! নাকি বাবার বন্ধু কেউ ছিলো এই নামে?... না, না! তেমন কেউ না...’

আর একবার দেখে খেয়াল করে বইতে।

সীমান্ত চৌধুরী
২/৩১ মহেষখোলা, সুনামগঞ্জ।

মুরসালিন খান,
২৭ শ্যামনগর, সাতক্ষীরা।

সত্যি বলতে কি দ্বিতীয়বার খেয়াল করে দুই-নম্বর নামটাও ঠিক প্রথমটার মতোই খুব পরিচিত মনে হতে শুরু করে আকাশের।

“ মুরসালিন খান?” আপনমনেই নামটা উচ্চারণ করে একবার, স্মৃতি হাতড়াতে হাতড়াতে... “সীমান্ত চৌধুরী?”

“চমৎকার দু’টো ছেলে!” পেছন থেকে আসা আওয়াজে চমকে ফিরে তাকায় আকাশ।
বাড়িওয়ালি মহিলা হাতে একটা বড় ট্রে-তে চা নিয়ে ঘরে ঢুকেছেন। ট্রে-টা নিজের থেকে বেশ খানিকটা দূরে বাড়িয়ে ধরে আছেন মহিলা, যেন অদৃশ্য কোন ঘোড়ার লাগাম ধরে আছেন শক্ত হাতে।

“নামগুলো পরিচিত লাগছে,” আকাশ বলে।

“তাই নাকি? অদ্ভুত তো!”

“আমি নিশ্চিত আমি এই নাম দু’টো আগেও কোথাও শুনেছি! আসলেই অদ্ভুত না? হয়তো আমি খবরের কাগজে দেখেছি নাম দুইটা। এরা কি খুব বিখ্যাত কেউ, জানেন নাকি? মানে নামকরা কোন খেলোয়াড়, যেমন দাবাড়ু বা সাঁতারু বা কিছু?”

“বিখ্যাত?” চা-এর ট্রে সোফার পাশের নিচু টেবিলটায় নামিয়ে রাখতে রাখতে বলেন ভদ্রমহিলা, “নাহ, আমার তো মনে হয় না বিখ্যাত ছিলো। তবে তারা দুইজনেই অত্যন্ত সুপুরুষ ছিলো, এটা বলতে পারি তোমাকে। বেশ লম্বা, আর টগবগে তরুণ। একদম তোমার মতো!”

আর একবার গেস্ট-বইটার পাতায় চোখ বুলায় আকাশ।

“আরে! শেষ এন্ট্রিটা দেখি প্রায় দুই বছর আগের!”

“তাই নাকি?”

“হ্যাঁ, তাই তো! আর সীমান্ত চৌধুরীরটা তারও প্রায় এক বছর আগের... মানে প্রায় তিন বছর আগের।“

“কী বলো!” ভদ্রমহিলা মাথা নাড়েন, হালকা একটা দীর্ঘশ্বাসের সাথে। “আমার তো মনেই হয়নি। সময় কত দ্রুত যায়, তাই না সমীর?”

“আকাশ, স্বরে আ, ক-এ আ-কার, তালব্য-শ, আকাশ দস্তগীর।" খানিকটা বিরক্তি নিয়ে বলে আকাশ।

“ওহ, তাই তো!” ভদ্রমহিলা নিজেকে শুধরে নেন সোফায় বসতে বসতে। “আমিও যে কী না! দুঃখিত। এই কান দিয়ে ঢুকে অন্য কান দিয়ে বেরিয়ে যায় সব কথা... আকাশ, আকাশ দস্তগীর।“

“এই নামগুলোর ব্যাপারে কিছু একটা আছে, জানেন?” আকাশ বলে, “খুব বিশেষ কিছু!”

“না মানিক, আমি জানি না, কী সেটা?”

“দেখেন, এই নাম দুইটা, এই যে সীমান্ত চৌধুরী আর মুরসালিন খান, নাম দুইটা যে আমার কাছে শুধু পরিচিতই লাগছে তাইই না, নাম দুইটা যেন জড়িতও এমন মনে হচ্ছে... যেন দুইজনেই একই ধরনের কোনকিছুর জন্যে বিখ্যাত, যেমন... যেমন ধরেন লরেল এন্ড হার্ডি, বা ধরেন, ধরেন খালেদা আর হাসিনা!”

“হা হা হা! দারুণ তো!” ভদ্রমহিলা মজা পান। “কিন্তু বাছা এবার এসো দেখি, বসো এখানে আমার পাশে। তোমাকে এক কাপ গরম চা দেই, সেই কখন এসেছো ঠাণ্ডার মধ্যে, এখনো এক কাপ চা খাওনি। নাও, গরম চা আর এলাচ দেয়া বিস্কিট খাও ঘুমাতে যাবার আগে, ভালো লাগবে।“

“আহা! আপনি শুধু শুধু খাটনি করলেন, কোন দরকারই ছিলো না এসবের।“ পিয়ানোর পাশে দাঁড়িয়ে থেকেই বলে আকাশ। তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলো ভদ্রমহিলা কেমন সরু সরু ত্রস্ত আঙুলে চা-ঢালছেন কাপে, দুধ-চিনি মেশাচ্ছেন দ্রুতলয়ে, লাল নেইল-পলিশওয়ালা নখে।

“আমি একদম নিশ্চিত,” আকাশ আবার বলে, “আমি এই নাম দুইটা খবরের কাগজেই দেখেছি। এক্ষুণি মনে পড়বে...”

মনে পড়িপড়ি করেও মনে না পড়ার মতো এমন বিড়ম্বনা আর হয় না, ভাবে আকাশ। হাল ছাড়তে রাজি হয় না মন।

“আরে দাঁড়ান, দাঁড়ান,” বলে ওঠে সে, “সীমান্ত... সীমান্ত চৌধুরী সেই ছেলেটার নাম ছিলো না? যে সিলেট এম. সি. কলেজে পড়তে দিনাজপুর বেড়াতে এসেছিলো একা একা ঘোরার নেশায়, আর তারপরে...”

“দুধ?” বাধা দেন ভদ্রমহিলা, “চিনি কয় চামচ?”

“জ্বি, দুই চামচ, প্লিজ।“

“এম. সি. কলেজ? না, না, আমি নিশ্চিত তাহলে এ সেই সীমান্ত নয়। আমার কাছে সীমান্ত চৌধুরী যখন এসেছিলো তখন সে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র। তুমি এদিকে এসো তো, বসো আমার পাশে এখানে আগুনের কাছে, আর এই নাও তোমার চা।“ নিজের পাশে সোফার খালি অংশে হাত চাপড়ে ডাকেন আকাশকে, আর সে পাশে গিয়ে না বসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে থাকেন মুখে হাসি ধরে রেখে।

আকাশ ধীরে ধীরে পিয়ানো থেকে সোফা পর্যন্ত দূরত্ব অতিক্রম করে, তার পর সোফার কিনারায় গিয়ে বসে। ভদ্রমহিলা চায়ের কাপটা তার সামনের টেবিলে নামিয়ে রাখেন।

“এইতো,” বলেন তিনি। “দেখতো, এখন কত আরাম লাগছে না?”

আকাশ আস্তে আস্তে চায়ে চুমুক দেয়, ভদ্রমহিলাও। প্রায় আধা-মিনিটের মতো দুইজনেই চুপ করে চা খেতে থাকে। কিন্তু আকাশ চায়ের কাপ থেকে মুখ না তুলেও টের পায় ভদ্রমহিলা তার দিকে ফিরে তার মুখে দৃষ্টি রেখে নিবিষ্ট মনে পর্যবেক্ষণ করে চলেছেন তাকে নিজের চা-এর কাপের ওপাশ থেকে। মাঝেমাঝেই ভদ্রমহিলার কাছ থেকে যেন একটা অদ্ভুত গন্ধ আসছিলো আকাশের দিকে, ঠিক মন্দ কোন বাস নয়, আবার ঠিক করে বোঝা যায় না কীসের সেটা, অনেকটা যেন বাদামের হালুয়ার মতো? নাকি নতুন চামড়ার মতো? নাকি গন্ধটা হাসপাতালের করিডরের মতো?

“সীমান্ত চৌধুরী একজন ভালো চায়ের সমঝদার ছিলো।“ বেশ খানিকক্ষণ পরে বললেন ভদ্রমহিলা। “আমি এর আগে কাওকে এত খানি চা খেতে দেখিনি। চমৎকার ছেলে।“

“ভদ্রলোক বোধকরি কিছুদিন আগেই গিয়েছেন এখান থেকে?” আকাশ তখনো মনে মনে নাম দু’টো নিয়ে ভাবছিলো। অবশ্যই এই নাম দুইটাই সে কখনো না কখনো কাগজে দেখেছে, কিন্তু কবে আর কোথায়!

“গিয়েছেন?” ভদ্রমহিলা ভ্রু আকাশে তুলেন, “না না মানিক, যাবে কেন! এখানেই আছে। মুরসালিন খানও আছে। ওরা আছে চারতলায়, দুইজন একসাথে।“

ধীরে ধীরে চায়ের কাপ টেবিলে নামিয়ে রেখে আকাশ চোখ বড় বড় করে তাকায় বাড়িওয়ালির দিকে।

ভদ্রমহিলা তার ভুবনভোলানো হাসি দিয়ে, নিজের সাদা হাত বাড়িয়ে আকাশের হাঁটুতে চাপড় দেন আলতো করে। “তোমার বয়স কত হবে সোনা?”

“একুশ।“

“একুশ!” খুশিতে প্রায় চেঁচিয়ে ওঠেন মহিলা। “ওহ, একদম মিলে গেছে! সীমান্ত’র বয়সও একুশ ছিলো। তবে মনে হয় সে তোমার থেকে একটু খাটো ছিলো লম্বায়। মনে হয় না, খাটোই হবে একটুখানি। আর ওর দাঁতও তোমার মতো এমন ঝকঝকে সাদা ছিলো না। তোমার দাঁতগুলো দারুণ বাছা। খুবই চমৎকার দাঁত আকাশ, জানো তুমি?”

“দেখতে যত সুন্দর আসলে অতটা নয়,” আকাশ বলে ওঠে। “পেছনের দাঁতে ফিলিং-করা আছে ক্যারেইজে।“

“মুরসালিন অবশ্য সামান্য বড় ছিলো বয়সে,” আকাশের কথা যেন শুনতেই পাননি এমনভাবে ভদ্রমহিলা বলতে থাকেন। “তার বয়স আসলে আটাশ ছিলো। তবে আমাকে না বললে আমি বুঝতেই পারতাম না, কখনোই না। একটা দাগ পর্যন্ত ছিলো না শরীরে।“

“একটা, কী?!” আকাশ বলে ওঠে।

“ওর ত্বক একদম বাচ্চাদের মতো নরম আর সুন্দর ছিলো!”

নীরবতা নেমে আসে ঘরে। আকাশ অপেক্ষা করে ভদ্রমহিলার আর কিছু বলার। তার চায়ের কাপটা তুলে নিয়ে একটা চুমুক দেয়, তারপর সাবধানে যত্ন করে পিরিচের উপরে নামিয়ে রাখে। কিন্তু ভদ্রমহিলা যেন নিজের কোন খেয়ালে ডুবে গেছেন। আকাশ চুপ করে নিজের নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে ঘরের দূরের কোণার দিকে তাকিয়ে থাকে।

“ঐ তোতাটা,” নীরবতা ভাঙে নিজেই, “আপনি জানেন, আমি কিন্তু প্রথমে ভালোই ধোঁকা খেয়েছিলাম ওটাকে দেখে! জানালা দিয়ে যখন দেখেছিলাম, উঁকি দিয়ে রাস্তা থেকে, আমি শিওর ছিলাম ঐটা জীবন্ত একটা পাখি!”

“আহ! না, এখন আর বেঁচে নেই।“

“খুবই দারুণ কাজ বলতে হবে,“ আকাশ বলে। “দেখে একদমই বোঝার উপায় নেই যে ওটা জীবন্ত নয়। কে করেছে?”

“আমি।“

“আপনি?”

“আলবাৎ!” বলেন ভদ্রমহিলা। “আর আমার সোনামানিক সুহাসিনীর সাথে তো তোমার আলাপ হয়েছে না?” ফায়ারপ্লেসের সামনে কার্পেটে আরাম করে তখনো গোল হয়ে থাকা কালো মোটা বেড়ালটাকে দেখান মাথার ইঙ্গিতে।

আকাশ ভালো করে তাকিয়ে দেখে বেড়ালটাকে এবার। আর হুট করে খেয়াল হয়, সেই তখন যখন সে এই বাসায় ঢুকেছে, তখন থেকে বেড়ালটা একবারও নড়াচড়া করেনি। ঠিক তোতাটার মতোই নিশ্চুপ আর স্থির হয়ে আছে।

আস্তে করে হাত বাড়িয়ে আকাশ বেড়ালটার পিঠ ছোয়ঁ। ঠাণ্ডা আর শক্ত। আলতো করে লোম সরাতে ছাঁই-ছাঁই কালচে আর শুকনো চামড়াটা নজরে আসে তার, দারুণভাবে সংরক্ষিত।

“সর্বনাশ! কী দুর্দান্ত কাজ!” বেড়ালটার দিক থেকে ফিরে ভদ্রমহিলার দিকে প্রশংসার চোখে তাকায় আকাশ। “এটা তো বেশ জটিল কাজ হবার কথা! এত দারুণ ট্যাক্সিডার্মি আমি এর আগে দেখিনি।“

“আরেহ নাহ,” ভদ্রমহিলা বলেন। “আমি সবসময়েই আমার সব পোষা-প্রাণীকে এভাবে সংরক্ষণ করি। তোমাকে আর এক কাপ চা দেই?”

“না থাক, ধন্যবাদ।“ চা-এ কেমন যেন তেতো পেশতা-বাদামের একটা স্বাদ আছে, আকাশের ভালো লাগেনি একেবারেই।

“তুমি তো বইতে স্বাক্ষর করেছ, তাই না?”

“জ্বি, জ্বি, করেছি।“

“বেশ। কারণ পরে যদি আমি ভুলে যাই তোমার নাম কী ছিলো, তাহলে আমি সবসময়েই এখানে এসে দেখে নিতে পারবো। আমি এখনো অমনটা প্রায়ই করি ওদের দুইজনের জন্যে, সীমান্ত চৌধুরী আর মুরসালিন ... “

“খান, মুরসালিন খান।“ আকাশ সাহায্য করে। “মাফ করবেন, কিন্তু গত দু-তিন বছরে কি তাহলে ওরা দু’জন বাদে আর কোন গেস্টই আসেননি আপনার এখানে?”

চা-এর কাপটা এক হাতে উঁচু করে ধরে, ঘাড়টা একদিকে সামান্য কাত করে আকাশের দিকে তাকিয়ে আর একবার মিষ্টি করে হাসেন ভদ্রমহিলা.

“না সোনামানিক, শুধু তুমি!“

পাদটীকা

  • ১. প্রিয় কাইদান-অনুবাদক, ছড়াকার খেকুদা'র জন্মদিন উপলক্ষ্যে এই গল্পটা অনুবাদ করার অভিপ্রায় গত দুই বছর ধরে। পিসির কোন এক চিপায় আধাআধি অনুবাদ করে ফেলে রাখা গল্পটা আজকে ধুলা ঝেড়ে বের করে শেষ করলাম বাকি অংশ অনুবাদের কাজ।
    গল্পটা পড়বার সময়েই ওডিন'দা আর খেকুদা'র কথা মনে পড়েছিলো। এই দুইজন সচলায়তন থেকে ব্যক্তি জীবনে লাভ হওয়া দুই তুখোড় ঘুরনদার, পড়ুয়া বড় ভাই। ওডিন'দার জন্মদিনে ইচ্ছা থাকলেও কিছুমিছু পোস্ট দেবার সময় সংকুলান না হওয়ায় তাই এই দুই বছরের বাসি অনুবাদটাই দুজনকে উৎসর্গ করলাম। তোমাদের অনুবাদ অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে আমার নিজের অনুবাদ ইচ্ছাটাকে।
    শুভ জন্মদিন!
    হাসি
  • ২. পাশাপাশি উল্লেখ করতে চাই সুহান-এর নাম, বারবার দেশীয় প্রেক্ষাপটে বিদেশী গল্পকে এনে ফেলার তোমার মতামতটুকু এই গল্পটাকে দেশের পটভূমিতে এনে ফেলতে আগ্রহ জুগিয়েছে। এই গল্পটাতে সবথেকে ভুগিয়েছে উপযুক্ত নামকরণ (ওডিন'দাকে ধন্যবাদ কোন এক কালে কিছুটা হেল্পানোয়), আর জায়গাগুলো। সব গল্প, সবকিছুই সেভাবে দেশের পটভূমীতে এনে ফেলে মূল গল্পের স্বাদ অক্ষুণ্ণ রাখা যায় না মনে করি আমি। তবে তা করতে হলে এমনভাবে করা উচিত যেন কোন টুকরো জিনিসে বেখেয়ালে ফট করে বিদেশী রূপটা প্রকাশ না হয়ে পড়ে। সেইদিক থেকে এই গল্পটা বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিলো। রোয়াল্ড দাল এত বেশি পছন্দের একজন লেখক যে তার গল্পবলার স্টাইলটা অনুবাদ করতে গিয়ে পরিবর্তন না করে ফেলি সেই ভয় সবসময়েই থাকে। আশাকরি পাঠকদের পাশাপাশি তোমার পছন্দ হবে।
  • ৩. মূল গল্প - The Landlady - Roald Dahl

মন্তব্য

মন মাঝি এর ছবি

দারুন! অপূর্ব অনুবাদ ও এডাপ্টেশন! খুব সাবলীল ভাবে আবহটা ফুটিয়ে তুলেছেন।

তবে ভূত-প্রেত-ডাইনি-পাংশুপিশাচ-কন্ধকাটা-আর ড্রাকুলাদের গন্ধ দশ মাইল দূর থেকেই আমার ভূত-রাডার নাকে টের পাই বলে - গল্পের মাঝপথেই এরকম কিছুর গন্ধ পেয়েছিলাম। তবে আমার ধারণা ছিল ভালমানুষির ছদ্মবেশ ঝেড়ে ফেলে মহিলা হয় মানুষখেকো নয়তো ড্রাকুলার মত রক্তচোষা হিসেবে আবির্ভূত হবেন। প্রশ্নটা রয়েই গেল - মহিলা ছেলেগুলিকে শুধুই স্টাফ করেন, নাকি স্টাফ করার আগে ভেতরের জিনিষপত্রগুলি চেটেপুটে খেয়ে নেন? আপনার কি মনে হয়? হাসি

আর ইয়ে, ছোট্ট একটা টাইপো বা বেখেয়ালজনিত ভুলঃ "‘ব্রেড এন্ড ব্রেকফাস্ট’" না - মূল গল্পে এটা - "BED AND BREAKFAST"।

****************************************

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

ধন্যবাদ। হাসি

স্কুলবেলায় একটা হরর উপন্যাস পড়েছিলাম লাইব্রেরি থেকে এনে যেখানে একটা বেশ নার্ড টাইপের স্কুল-পড়ুয়া ছেলে সব প্রজাতির প্রাণীকে স্টাফড করে ফেলেছে, শুধু মানুষ বাকি! দারুণ লেগেছিলো! বইটার লেখক-টেখক কিছুই আর মনে নেই এখন, খুঁজে দেখতে হবে, পেলে ঐটা অনুবাদ করা যায় (সেক্ষেত্রে এই কমেন্টটা স্পয়লার হয়ে যাবে যদিও!) দালের এই গল্পটা দুবা গতবছর সচলায়তনেই দেখি অনুবাদ করে পোস্টেছিলো, আগে খেয়াল করিনি।

টাইপো ঠিক করে দিলাম।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

শিশিরকণা এর ছবি

তাই তো বলি, চেনা চেনা লাগছিলো কেন গল্পটা, অনুবাদ উমদা হয়েছে।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- শিশির। হাসি

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

শাকরান এর ছবি

ভালও লেগেছে

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

ধন্যবাদ শাকরান। হাসি

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

এই গল্পটি আগেই পড়েছিলাম অন্য কারো অনুবাদে, কার আজ আর মনে নাই।
তবে আপনার অনুবাদটি দুর্দান্ত হয়েছে। হাততালি খুবই ভালো লাগল অনুবাদ, এমনিতেই এইধরনের গল্প আমার খুব ভালো লাগে।

দিদি, আমি জানি আপনার বাড়ি রাজশাহীর। আমিও যে রাজশাহীর জানেন কি? হাসি

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

তাই নাকি! বেশ তবে দেখা হয়ে যাবে কোনদিন পথে অবশ্যই। হাসি
আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

শাব্দিক এর ছবি

এই গল্পটি আগেই পড়েছিলাম অন্য কারো অনুবাদে, কার আজ আর মনে নাই।

হুম, আমারো তাই মনে হচ্ছে। কিন্তু ভাল লাগল অনুবাদ, আপনার অনুবাদ খুব সাবলীল।

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

ঘ্যাচাং

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

অপ্রস্তুত লেনিন এর ছবি

এক নাগাড়ে পড়ে ফেললাম ভালো লেগেছে।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

ধন্যবাদ লেনিন।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

রু এর ছবি

অপছন্দনীয় আর কৌস্তুভকে পচানি দিয়ে এই গল্প একবার পড়েছি মনে হয়।

আপনার লেখা সবসময় ভালো লাগে, এবারেও ব্যতিক্রম নয়। খেকশিয়াল আর ওডিনকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার লেখা ভাল লাগল।
শুভকামনা রইল।

তুহিন সরকার

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

আপনাকেও শুভকামনা তুহিন। আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

অতিথি লেখক এর ছবি

বাদামের হালুয়া, নতুন চামড়া আর হাসপাতালের করিডোরের গন্ধ!!! এই তিনটা কেন ব্যবহৃত হলো-- এতে কি সিমিলিরাটি আছে বা কোন ডাইভার্সিটি আছে?? সাসপেন্সটা তেমন ফুটে ওঠেনি!!! তবে, লেখায় প্রাণ আছে বটে।।। (স্বপ্নীল সমন্যামবিউলিসট)
হাসি

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

কইতারিনা। দালের সাথে দেখা হলে জিজ্ঞেস করা লাগবে...! চিন্তিত

পড়বার জন্যে ধন্যবাদ। হাসি

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

১। দেশীয় পটভূমিতে এই গল্পের বাংলা রূপান্তর সচলেই করা হয়েছে সেকথা সত্য, তবে তাতে ক্ষতি নেই। রূপান্তরকর্ম কতোটুকু ভালো করা গেল সেটা জরুরী।

২। এই রূপান্তরে দেশীয় পটভূমিটা ভালো খাপ খায়নি, ফলে পড়তে গিয়ে এটা যে অনুবাদ সেটা মনে পড়েছে। তবে ভাষার সাবলীলতা, নাটকীয়তায় যথারীতি যাযাবরীয় (বিনয় মুখুজ্জে নয়, সা_কী) মুন্সীয়ানা আছে, ফলে বাংলায় পাঠকরাও রোয়াল্ড ডালের স্বাদ প্রায় পুরোমাত্রায় পাবেন। যেটুকু লাইন লস্‌ হয়েছে সেটা এক ভাষার শব্দ/শব্দবন্ধ বা পান/মজা'র আরেক ভাষায় অনুবাদ হয় না বলে।

৩। দুই দুই জনের জন্মদিনের উপহার মোটে একটা গল্প, তাও আবার দুই বছরের পুরানা জিনিস! এই কিপ্টামীর জন্য তোমার সাত দিনের ফাঁসি আর তিন মাস জেল।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

ধন্যবাদ পাণ্ডব'দা, আপনার মন্তব্যের অপেক্ষা করি লেখার গঠন নিয়ে ইন্টারেস্টিং মতামতের আশায়। হাসি

১-এ সহমত। একেকজন একেকভাবে কাজটা করবেন, তার স্বকীয়তা সেখানে থাকবে। আর পাঠকের ফিডব্যাক তার পরবর্তী কাজ আরও ভালো করতে সহায়তা করবে মনে করি আমি। 'একই জিনিস কেন দ্বিতীয়বার এলো', এই ভাবনার গুরুত্ব নেই তেমন একটা আমার কাছে, সেভাবে ট্র্যাক রাখাও কঠিন। তবে 'নতুন' জিনিস এলে বৈচিত্র থাকে নিঃসন্দেহে।

২ -
Pun বা রসের ব্যাপারটা আসলেই জটিল, অনুবাদে এসে এই মার খায় বলেই আমি নিজে পারতপক্ষে অনুবাদ পড়া ছেড়েছি অনেক আগেই! মন খারাপ
প্রথমবার পড়বার সময়ে সব গল্প-উপন্যাস-লেখারই অনেককিছু চোখ এড়িয়ে গেলেও, পছন্দের কিছু আবার পড়তে গিয়ে অনেক জিনিস নতুন করে চোখে পড়ে। যেমন এই গল্পে একটা জায়গায় মহিলা বলেন, "You see, it isn’t very often I have the pleasure of taking a visitor into my little nest."
অনুবাদের সময়ে nest শব্দটায় এসে এমন একটা হেঁচকি ওঠা হাসি একা একা হাসছিলাম বসে যে কী বলবো! দেঁতো হাসি
কিন্তু এই শব্দটা ইংরেজীতে মূল গল্পে এত subtly ইন্ট্রোডিউস করেছেন Dahl, যে ঐযে প্রথমবার পড়বার সময়ে আমার সেভাবে চোখেই পড়েনি! অথচ গল্পটা পুরোটা যে জানে, তার কাছে সেইইরকমের মজা লাগার কথা এইটা চোখে পড়লে! এখন কথা হলো nest শব্দটা ইংরেজীতে এক ইংরেজ মধ্যবয়সী একাকী মহিলা ইংল্যান্ডে নিজের ফাঁকা গেস্ট-হাউজ নিয়ে রসিকতা করে ব্যবহার করলে সেভাবে কানে নাও লাগতে পারে এক ক্লান্ত তরুণের। কিন্তু চিন্তা করে দেখেন, মহিলা কী পরিমাণ যাকে বলে রঙবাজ ক্যারেক্টার, রীতিমতো বেশ কিছু হিন্টস ড্রপ করেছেন জায়গামতো, বোকা ছেলেটা ধরতেই পারেনি! বেশ একটা ক্ষিক্ষিক শয়তানী হাসি হেসেছে শিওর মনে মনে! মানে দাল-যে হেসেছেন লেখার সময়ে সে ব্যাপারে আমি শিওর! শয়তানী হাসি

এখন কথা হলো এই nest-টাকে বাংলায় সেরকম pun শব্দ কী দিয়ে প্রতিস্থাপন করি?! গতানুগতিক আক্ষরিক অনুবাদ 'নীড়' বললে কিন্তু পুরা মজাটাই মাঠে মারা যায়! 'ডেরা' বা 'আস্তানা'? একজন মধ্যবয়সী বাংলাদেশী মহিলা, যিনি একাকী একটা গেস্ট-হাউজ/বোর্ডিং/হোটেল কিছুমিছু চালান একটা ছোট্ট শহরে, তার এমন শব্দ চয়ন কিন্তু দালের pun-এর সেই subtlety-টুকুই কিন্তু নষ্ট করে দেয় একেবারে! আর লেখকের লেখার স্টাইলের উপরে কারিকুরি করতে অনুবাদক হিসেবে আমার বাধে!

তবে এ কারণেই সচলায়তন আমার পছন্দের জায়গা! অনুবাদ জাতীয় লেখা নিয়ে কিছুটা দ্বন্দ্বে থাকলেও মোটামুটি গুছিয়ে নিয়ে কোন লেখা পোস্ট করলে, তা নিয়ে বেশ ভালো ফিডব্যাক পাওয়া যায় লেখক-পাঠকদের, ভবিষ্যতে অনুবাদের বা মৌলিক লেখার জন্যে যেটা দারুণভাবে সহায়ক, অন্তত আমার কাছে! হাসি

৩ - পাইপলাইনে মেলাআআআআ লেখা জমে আছে! গুছিয়ে না পোস্টালে আমার নিজের মন খুঁতখুঁত করে। আর গোছাবার জন্যে যে মানসিক শান্ত অবস্থা আর যতটুকু ফ্রি সময় দরকার আমার লেখক সত্তার, তা আমি পাচ্ছি না আসলেই। যাযাবর ব্যাকপ্যাকার ব্যাকপ্যাকিং-ও কম করছে না, ঝুলিতে গল্পও কম জমছে না হয়তো, কিন্তু সেগুলো গুছিয়ে উপহার দেয়ার সময়টুকু তার নাই এ মুহূর্তে। মন খারাপ
চেষ্টা আছে, ইচ্ছাও... দেখা যাক!

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

খেকশিয়াল এর ছবি

ওরে আমার জন্য গল্প!!! থ্যাঙ্কু থ্যাঙ্কু !! দেঁতো হাসি

আমি পড়িনি আগে। গল্পটা ত দারুণ হে! অনুবাদ/রূপান্তর বেশ ভাল হয়েছে, দেশীয় পটভূমিতে গল্পগুলি পড়ার মজা অন্যরকমের।
আবারো অনেক ধন্যবাদ হাসি

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

আরে! মূল গল্পটা আগে পড়োনি নাকি! বাহ! আমি তো মূলত জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতেই পোস্টটা দিয়েছিলাম, আরেকবার পড়তে মজা লাগবে হয়তো তাই ভেবে, এইটা বোনাস লাভ তাহলে। হাসি

অ-নে-ক অ-অ-নে-এ-এ-ক বড় হও! দেঁতো হাসি

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

খুব সম্ভব দালের সবচেয়ে বেশিবার অনুদিত হওয়া গপ্পো এটা। আমি নিজেই আপনি সহ অন্তত চারজন অনুবাদকের কলমে এই গল্পটা পড়েছি। তবে ঐ যে, দেশীয় স্বাদে নিয়ে আসলে আপন লাগে- এজন্যেই এই গল্পটা তরতর করে পড়ে নিতে এদ্দমই বাঁধে নি। হাসি

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

ধন্যবাদ সুহান।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

তুলিরেখা এর ছবি

দারুণ লাগলো।
প্রথমদিকে কামিনি ডাইনির গল্প বারে বারে মনে পড়ছিল, মায়া বিস্তার করে টেনে নিতো লোককে।

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

এক্কেরে! দেঁতো হাসি
মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ তুলিরেখা'দি।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

গল্পটা আগেও কারো অনুবাদ পড়েছিলাম। আবারো পড়তে ভালো লাগলো। হাসি

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

ধন্যবাদ নীড়'দা।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

স্যাম এর ছবি

চলুক চলুক

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

বন্দনা এর ছবি

আগেই পড়েছিলাম অন্য কার ও অনুবাদে, আপনার অনুবাদ বেশ হয়েছে।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

তারানা_শব্দ এর ছবি

ভালো হইসে অনুবাদ। তবে 'গটনা' আগে থেকে জানলেও আবারও ভয় লাগসে। ওঁয়া ওঁয়া

"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

ধন্যবাদ আপামণি! গল্পের নাম একবার 'ট্যাক্সিডার্মি' দেবো কিনা ভাবছিলাম। কিন্তু তাতে করে 'গটনা'র মজাটা এক্কেরে গোড়াতেই মারা পড়বে যারা টার্মটার সাথে পরিচিত তাদের জন্যে, এই ভেবে স্থগিত রেখেছি। খাইছে

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

তিথীডোর এর ছবি

অনুবাদ বেশ ভাল্লাগলো। চলুক একই গল্প নিয়ে সচলে অবশ্য আগেও কাজ হয়েছে।

কিঞ্চিৎ অফটপিক : তোমার বড়সড় সাইজের মন্তব্য/ উত্তরগুলো আমি বিশেষ আগ্রহ নিয়ে পড়ি। দেঁতো হাসি

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

বড় মন্তব্য যাদের আগ্রহ হবে তাদের পড়াই ভালো। আর যার ইচ্ছা হবে না পড়ার তারা না পড়লে পড়বে না, তাতে এমন কিছু যাবে আসবে না।
আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- আপনাকে।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

তাসনীম এর ছবি

দুর্দান্ত হয়েছে গল্পটা।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

ধন্যবাদ তাসনীম ভাই। মূল কৃতিত্ব Dahl-এর! চোখ টিপি

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

চলুক

দেশীয় প্রেক্ষাপট কিছু জায়গায় বেশ খাপছাড়া লেগেছে। যেমন হুট করে "বেড অ্যান্ড ব্রেকফাস্ট" লেখা নোটিশ বা ফায়ারপ্লেসওলা বাড়ি। দেশীয় প্রেক্ষাপটে ঠিক যায় না বোধ হয় এগুলা। আর বারবার "মানিক" না ডেকে দুয়েকবার "বাবা" ডাকলে আরও দেশীয় আমেজ থাকত। যাই হোক, অনুবাদ এমনিতে খুব ভালো হয়েছে। ভালো লাগল গল্পটা পড়ে। আগ্রহ নিয়েই পড়লাম পুরাটা।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

দেশে কোন দোকানটোকানে ইংরেজী লেখা দেখোনি? আমি তো হরদম দেখি! বিশেষ করে তোমার শহরে! কেউ বিদেশী স্টাইলে একটা গেস্ট-হাউজ চালাবে, খুব গেস্টের বিশেষত্ব নিয়ে খুঁতখুঁতে আবার তার মালিক, তাও যদি মালিক 'বিশেষ' ভাবে নোটিশ না ঝুলা্তো, তাতেই বেশি অড লাগতো না? আমি আসলে অনুবাদের সময়ে নিজেকে চরিত্রগুলোতে প্রতিস্থাপন করে করে, আমি ঐ চরিত্র হলে কীভাবে কথা বলতাম বা কী রিঅ্যাকশন হতো ভেবে লিখতে চেষ্টা করি, সেটা সবার সাথেই মিলে গেলে তো স্বকীয়তা থাকবে না মনে হয়।

আর ফায়ারপ্লেসের আলাপটা তোলায় ধন্যবাদ, এটা নিয়ে ফেসবুকের শেয়ারে আলাপ করেছি, এখানে কেউ পয়েন্টআউট করলে মন্তব্যটা করা যেত মনে হচ্ছিলো। প্রথমত, গল্পের আবহ তৈরিতে একটা অন্যতম উপাদান মনে হয়েছে ফায়ারপ্লেসটাকে। ঘরের ভেতরের গরম ভাবটা আর বাইরের শীতের মধ্যে পার্থক্যটা ভিজুয়ালি তৈরি করতে এই গল্পে ঐটা থাকা জরুরি মনে হয়েছে আমার, চাইলেই বাদ দেয়া যেত, তাও মন চায়নি। এ কারণে বাসাটা পুরানো ধাঁচে তৈরি, ব্রিটিশ আমলের, এগুলা লিখেছি, যেটা মূল-গল্পে নাই স্বভাবতই। এই অ্যাডিশনটুকু ফায়ারপ্লেসটাকে বাদ দিতে চাইনি বলেই। এছাড়াও শুধু শীতের রাতে বাইরে দাঁড়িয়ে কাঁপছিলো বলেই না, ঐ ফায়ারপ্লেসটাই হয়তো একটা ইয়ং ছেলেকে ঘরের ভেতরে টেনে নিয়ে যেতে আরও আকর্ষণ করেছে?! May be that fireplace is something that attracts a curious mind, something peculiar and not so common! I know I myself won't pass off a chance to see a fireplace in action for the first time in my life to be honest!
দ্বিতীয়ত, উত্তরবঙ্গের পঞ্চগড়, দিনাজপুরের দিকে অনেকেই এখন নতুন বাড়িতেও ফায়ারপ্লেসের বন্দোবস্ত রাখছেন শুনেছি। শীতে যেখানে তাপমাত্রা ২°C এ নেমে যায়, সেখানে ফায়ারপ্লেস রাখা আসলে সময়ের দাবী হয়ে গেছে। যারা উত্তরবঙ্গের শৈত্যপ্রবাহ নিয়মিত 'উপভোগ' করেন তারা বোধকরি বুঝবেন ব্যাপারটা কতটা 'দেশীয়' হয়েছে!

'বাবা' শব্দটা কেন জানি তখন মাথায়ই আসে নাই! ধন্যবাদ। পরে কখনো এটাও দিতে হবে! দেঁতো হাসি

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

স্পর্শ এর ছবি

দুষ্ট বালিকাও এই গল্পটার ভাবানুবাদ করেছিলো।
http://www.sachalayatan.com/ishshire/44778

দেখি দুইটা মিলায়ে, কারটা বেশি সফল হলো দেঁতো হাসি


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

'ভাবানুবাদ' আর 'অনুবাদ' ব্যাপারটার মাঝে মনে হয় কিছুটা পার্থক্য আছে। আমি নিজে 'কম্পারিজনে' আগ্রহী না অবশ্য লেখক হিসেবে। একই জিনিসের অনুবাদ একাধিকবার আসা নিয়ে আমার চিন্তাভাবনা পাণ্ডব'দাকে করা প্রত্যুত্তরের এক-নং পয়েন্টে দেখে নিতে পারো।

আর পাঠক হিসেবে, বেশ ইন্টারেস্টিং কোন টপিকের উপরে একাধিক লেখা বা পছন্দসই কোন গল্প, আমার নিজের বারবার পড়তে আপত্তি নেই।

আশাকরি তুলনা বাদে এমনিতে লেখাটা তোমার ভালোই লাগবে, হোঁচট খেয়ে খেয়ে পড়তে হচ্ছে এমন না মনে হলে যে কোন অনুবাদই সফল আমার পাঠক-চোখে।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।