বাড়ি বদলের গল্প ৩: বিষণ্ন পত্রাবলি

মাহবুব লীলেন এর ছবি
লিখেছেন মাহবুব লীলেন (তারিখ: শনি, ১১/০৭/২০১৫ - ৪:৫১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

যে চিঠি রওয়ানা হয়ে গেছে নরসিংদীর পথে
ওখানে আমার কিছু সংশোধনের ছিল...

যেইখানে বলার বিষয় কম সেইখানেই মূলত কথা হয় বেশি। বলার মতো কথা মাত্র একটা থাকলেই কেবল তারে বারবার অন্যভাবে বলতে ইচ্ছা করে; বারবার মনে হয় বাক্যটা সংশোধন করে দিলে বোধ হয় কথাটা আরেকটু ভালো হয়ে উঠবে। অন্যদিকে দরকারি কথাগুলা হয় বড়ো বেশি একবাক্যের; সংশোধন অযোগ্য...

জীবনে কোনো দরকারি চিঠি লেখা হয়নি আমার। অথচ প্রচুর চিঠি লিখতাম আমি। পেতামও প্রচুর। শুধুই হাবিজাবি; যেইসব চিঠির উত্তর আশা করে না কেউ; বরং আশা করে আরেকটা পাল্টা চিঠি। কোনো সময় একলাইনের চিঠির বিপরীতে এক দিস্তা কাগজভর্তি লেখা; আবার কখনো এক বান্ডিল লেখার বিপরীতে একটামাত্র অক্ষরহীন সুগন্ধি গোলাপি কাগজ...

একটা সময় চিঠিগুলো বিবর্ণ হয়। সুগন্ধ হারায়। তবু তেলাপোকার গন্ধ গায়ে নিয়ে তার মধ্য থেকে কিছু চিঠি উদ্বাস্তু জীবনের পিঠে আটকানো সর্বশেষ পোঁটলায় ঢুকে চলে আসে সাথে। ঢুকে যায় পরবর্তী গেরস্ত জীবনের খাটের তলায় কিংবা ধুলামাখা কোনো অন্ধকার কোনায়। কিন্তু যে চিঠিগুলোর পাল্টা চিঠি আর কোনোদিনও লেখা হবে না; সেগুলোকে কেন এই চূড়ান্ত অবহেলার মধ্যে রাখা?

কুচিগুলো ছোট করে তুলে দিলাম ময়লাওয়ালার ভ্যানে। আমাকে লেখা যে কথাগুলো আমিই আর পড়ব না কোনোদিন; তার একটা সম্পূর্ণ শব্দও যেন আর পড়তে পারে না কেউ...
২০১৫.০৭.০৭ মঙ্গলবার

কোটেশনটা ১৯৯৩ সালে নিজের লেখা ‘অন্য আলো’ কবিতার

বাড়ি বদলের গল্প ২: লিটল ম্যাগাজিন
বাড়ি বদলের গল্প ১: দখলদারি


মন্তব্য

তাহসিন রেজা এর ছবি

একদম বিষন্ন-সুন্দর কবিতার মত লাগছে লেখাগুলি। অবশ্য একজন কবি তো এমন করেই গদ্য লিখবেন।

বাড়ি বদলের গল্প গুলি পড়ে কেমন এক বিষন্নতা ঘিরে ধরছে আমাকে। আমিও ইচ্ছে করে কতবার ফেলে দিয়েছি প্রিয় নুড়ি পাথর গুলি।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”

অলীক জানালা _________

মাহবুব লীলেন এর ছবি

হ। কিছু জিনিস ফালাইয়া দেওনই ভালো

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

কবি (অবঃ) লীলেন কোথায়? চিন্তিত

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

মাহবুব লীলেন এর ছবি

অবসর থাইকা রিটায়ার্ড করার অপেক্ষায়

কল্যাণ এর ছবি

এবারেরটা একটু শক্ত ঠেকতেছে লীলেনদা। তবে আপনি আবার লিখতেছেন এইটা আনন্দের কথা চলুক

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

মাহবুব লীলেন এর ছবি

এই জিনিস বেশি নরম করতে গেলে কোনটা কার চিঠি সেই বিষয়ে জবাবদিহি করতে হইত; তাই একটু শক্ত আর আধাসিদ্দ রাখলাম আর কি

কল্যাণ এর ছবি

হো হো হো

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

দেঁতো হাসি

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

এই যুগে তো আর চিঠি কুচি কুচি করে ছেড়ার উপায় নাই। চিঠি জমা হয় ইনবক্সে। হাজার গিগাবাইট জায়গা পেয়েও ডিলিট করে দেয়া ইনবক্সের চিঠিগুলো মাঝে মধ্যে নেড়েচেড়ে দেখতে ইচ্ছে করে। মনে হয় ইন্টারনেটের এক কোনা কানি জায়গায় রেখে দিলে বিশেষ ক্ষতি ছিল না।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

এমন লেখা আরো পড়তে চাই, মাহবুব লীলেন।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

কই পাব? সব তো ফালাইয়া দিলাম

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ভালো কথা মনে করিয়ে দিলেন। চিঠি যা কিছু আছে - যা এসেছিল আর যা পাঠানো হয়নি তার সব, এবং যে লেখাগুলো আর কখনো পড়বো না তার সব অচিরেই অগ্নিদেবের চরণে নিবেদন করতে হবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

কল্যাণ এর ছবি

অগ্নিদেবের চরণে দেওয়ার আগে সব স্ক্যান করে হার্ড্ড্রাইভে ভরে ফেলেন পান্ডবদা! অবসরে চোখ বুলাতে ইচ্ছে হলে ক্লিক।

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

মাহবুব লীলেন এর ছবি

তাড়াতাড়ি বাকশো খালি করেন পাণ্ডব দা; নাইলে কোনদিন কোন উইকিলিস আইসা সব পাব্লিক কইরা দিব

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

উইকিলিকসের নজরে পড়ার মতো কুলীন আমি না। তবে দুনিয়ার বুকে জঞ্জাল পুষে রাখাটা পাপ। সেই পাপের বোঝা আর না বাড়াই।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

তারচেয়ে,

গঙ্গাজলে ভেসে যেতে দিও ওকে মুক্ত, স্বেচ্ছাচারী…

কারণ হয়ত,

প্রিয় করস্পর্শ ওর গায়ে লেগে আছে।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

এক লহমা এর ছবি

চলুক
অনেকদিন ধরে হারিয়ে বসে থাকা জিনিষ বাড়ি বদলের কারণে খুঁজে পাওয়া নিয়ে একটা কবিতা লিখে বন্ধুকে একটা চিঠি পাঠিয়েছিলাম একসময়। ই-মেইল চিঠিতে নরম-তারে লেখা। এখন দেখি সেই চিঠিটাও হারিয়ে গেছে, আপদ গেছে।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

মাহবুব লীলেন এর ছবি

ভালৈছে; থাকলেই ঝামেলা

Sagar এর ছবি

অতিব সুন্দর। ছোট ছোট কথা কিন্তু সুন্দর।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

ধন্যবাদ

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

যে চিঠি রওয়ানা হয়ে গেছে নরসিংদীর পথে
ওখানে আমার কিছু সংশোধনের ছিল...

জীবনের সবচেয়ে রুঢ় বাস্তবতা।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

অতিথি লেখক এর ছবি

কত চিঠি রয়ে গেছে এখানে সেখানে। থাক, খুব মন চাইলে গন্ধ শুঁকে দেখি।

দেবদ্যুতি

মাহবুব লীলেন এর ছবি

হ। সুযোগ থাকলে জিনিসটা ভালোই

নাশতারান এর ছবি

খুব সুন্দর

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

দইন্যবাদ

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

চিঠি না ফালানোই ভালো। পড়তে সময় লাগে না। অ-নে-ক দিন পর পড়লে নেশার মতো লাগে। হয়তো ২০ বছর পর মন চাইবে পড়তে। স্কুল জীবনের লেখার খাতা ফেলে দিছিলাম অখাদ্য হাস্যকর বলে। এখন মনে হয়, আহা কী ভুলটাই না করছি!

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

মাহবুব লীলেন এর ছবি

হ। তুমি তো কইবাই যে চিঠি না ফালানোই ভালো। মিয়া বিয়াশাদি করো নাই তো...

০২
ইস্কুলের খাতাতো নিরীহ জিনিস; বড়োজোর কোনো ম্যাডামরে নিয়া ছড়া কবিতা থাকতে পারে। এই জিনিসটা ফালাইয়া ভুলই করছ। বিয়ার আগে বৌরে খাতাটা দিয়া কইতে পারতা- তোমার আগে সেই ছোটবেলা খালি ম্যাডামরে নিয়া ভাবছি; এই দেখো প্রমাণ (এতে বৌ বিশ্বাস যাইলেও যাইতে পারত যে তুমি একটা সত্যবাদী মানুষ)

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।