সহজিয়া রামায়ণ ৩ (প্রথম খসড়া)

মাহবুব লীলেন এর ছবি
লিখেছেন মাহবুব লীলেন (তারিখ: মঙ্গল, ০৫/০৪/২০১৬ - ৫:৩৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

দশরথ অস্থির। ভরত অযোধ্যার বাইরে থাকতেই রামের অভিষেক করে ফেলতে হবে। রামরে ডাইকা সেই সংবাদও তিনি জানাইয়া দিছেন। সচিবগো আয়োজন বুঝাইয়া দিয়া এইটাও কইয়া দিছেন যেন কোনোভাবেই ভরতের নানাবাড়ি আর পোলাপানগো শ্বশুরবাড়ি এই সংবাদ না যায়...

কিন্তু এক রাত্তির পার হইতেই তার অস্থিরতার লগে ডর আইসা যোগ হয়। তিনি স্বপ্নে বহুত হাবিজাবি দেখছেন। ঘুম থাইকা উইঠা তাই তিনি সরাসরি গিয়া হাজির হন রামের ঘরে- পুত কোন সময় কী হয় কে জানে। আমারইবা মতিগতি কখন বদলাইয়া যায় আমিও জানি না। আমি চাই ভরত বাড়ির বাইরে থাকতেই তোর অভিষেকটা হইয়া যাক। খামাখা বড়ো আয়োজনের লাইগা সময় নষ্ট করার মানে নাই। আমি কালকে ভোরবেলাতেই তোর অভিষেক কইরা ফেলতে চাই...

অভিষেকের আয়োজন সংক্ষিপ্ত হইয়া যায। রাজবাড়ির সকলে সংবাদটা জানলেও ভরতের মা কৈকেয়ীর কাছে খবরটা চাইপা যাওয়া হয়। কিন্তু সংক্ষিপ্ত হইলেও অযোধ্যার পরবর্তী রাজার অভিষেক বইলা কথা। তাও মাত্র একদিন পর। বাড়ি জুইড়া হইহল্লা হুড়াহুড়ি তো স্বাভাবিক। সকলের সেই অস্বাভাবিক দৌড়াদৌড়ি চোখে লাগে কৈকেয়ীর দাসী মন্থরার। সে গিয়া মাইনসেরে জিগায়া জানতে পায় রামের যুবরাজ হিসাবে অভিষেক হইব আগামী কাইল ভোরে; পুষ্যা নক্ষত্রের লগনে...

মন্থরা দৌড়াইয়া যায় কৈকেয়ীর কাছে- রাজায় যে ভরতরে নানাবাড়ি পাঠাইয়া আইজ রাত্তির পার হইলেই রামরে রাজ্য দিয়া দিবার সিদ্ধান্ত নিছেন সেই খবর রাখো?

কৈকেয়ী আকাশ থাইকা পড়ে। দেশে অত বড়ো কা- হইয়া যাইতাছে মুখের কথাটাও তারে কইল না কেউ। নিশ্চয়ই এর কোনো কারণ আছে।
মন্থরা কয়- তোমার পোলায় যে নানাবাড়ি গেছে; ধইরা নিতে পারো সে চিরকালের লাইগাই গেছে। রাম যুবরাজ হইলে নানাবাড়িতে বইসাই ভরত নির্বাসনদ- শুনব রাজার কাছ থিকা যাতে আর কোনোদিনও সে ফিরতে না পারে অযোধ্যায়...

কৈকেয়ীর মাথা ঘোরে। রাম বাপের বড়ো পোলা। যুবরাজ তার হইবারই কথা। কিন্তু চুরি কইরা ক্যান? ভরতরে নানাবাড়ি রাইখা লুকাইয়া ক্যান? তারে না জানাইয়া ক্যান? তাইলে তো মন্থরার হিসাবই ঠিক। কোনো চক্রান্ত আছে এর পিছে। ভরতরে দশরথ পুরাই সরাইয়া দিতে চান। ঠিক কথা। রাম এখন যুবরাজ আর পরে রাজা হইলে ভরতের আর অযোধ্যায় থাকা হইব না...

কিছু একটা করা লাগবে। আজকেই করা লাগবে। কিন্তু কী করা যায়? কী উপায়
কথাটা কৈকেয়ী নিজেরেও শোনান; মন্থরাও শোনে। মন্থরা কয়- একটা উপায় কিন্তু এখনো তোমার কব্জায় আছে কৈকেয়ী রানি...

রানি থ মাইরা মন্থরার দিকে তাকান- কী?
- মনে আছে দণ্ডকের অসুর রাজা শম্বরের লগে যুদ্ধে রাজা দশরথ মারাত্মাক আহত হইছিলেন?
- তাতো হইছিলেন। এক্কেবারে অচেতন হইয়া পড়ছিলেন তিনি...
- সেই সময় তুমিও তিনার লগে যুদ্ধ শিবিরে আছিলা। আহত রাজারে সেবা দিয়া তুমিই সুস্থ কইরা তুলছিলা; মনে আছে?
- তা মনে আছে। কিন্তু সেই ইতিহাসের লগে এই সঙ্কটের কী সম্পর্ক?

মন্থরা কয়- সেই ইতিহাসের লগে সঙ্কটের কোনো সম্পর্ক নাই। কিন্তু সঙ্কট থাইকা বাইর হইবার রাস্তা আছে সেই ইতিহাসে...
রানি কন- কেমনে?
মন্থরা কয়- তোমার সেবায় সুস্থ হইবার পর রাজা তোমারে দুইটা বর দিতে চাইছিলেন না? বলছিলেন না যে তুমি তার কাছে যে কোনো দুইটা জিনিস চাইলে তিনি তা তোমারে দিবেন?
- হ হ। কইছিলেন তো
- তো তুমি কি সেই দুইটা জিনিস চাইছিলা রাজার কাছে?
- না তো। তাতো চাই নাই। কইছিলাম যখন লাগব তখন চাইয়া নিমুনে। তারপর তো ভুইলাই গেছিলাম...

মন্থরা হাইসা উঠে- ভুইলা গেছিলা ভালৈছে। নাইলে কী না কী চাইয়া দুইটা সুযোগ নষ্ট করতা। তো কথা হইল তুমি কইছিলা পরে চাইবা। সেই পরটা কিন্তু এখন উপস্থিত হইছে; মানে রাজার কাছে দুইখান জিনিস চাওয়া এখন তোমার দরকার...

কৈকেয়ীর চোখ বড়ো হইয়া উঠে। মন্থরা কয়- রাজার কাছে সেই দুইটা জিনিস তুমি এখন চাইবা। যার একটা হইল রামের বদলা ভরতের অভিষেক আর আরেকটা হইল রামের চৌদ্দ বচ্ছর বনবাস। ...আমার ধারণা শেষ মুহূর্তে রাজা তোমারে সংবাদটা জানইতে আসবেন। যদি আসেন তবে তুমি লগে লগে চাইবা। আর যদি রাইতের মইদ্যে না আসেন তবে তুমি নিজে গিয়া চাইবা। ঠিকাছে?

কৈকেয়ীরে এক্কেবারে না জানাইলে কথা থাইকা যাবে। আর এখন এই রাত্তিরে জানাইলে কোনো ঘিরিঙ্গির ভয় নাই। তাই রাত্তিরে আইসা রাজা দশরথ উপস্থিত হন কৈকেয়ীর মহলে। কিন্তু সব কেমন আউলাঝাড়া। রাজা দারোয়ানরে জিগান- রানি কই?

দারোয়ান কয়- রানিমা কেন যেন কী কারণে মেজাজ খারাপ কইরা ঘরে বইসা আছেন...

রাজা আউগাইয়া দেখেন রানি বিছানাপত্র রাইখা মুখ গোমড়া কইরা মাটিতে শোওয়া। একটা সুসংবাদ দিতে আসছেন রাজা। রানির রাগ না ভাঙাইয়া তো আর সেই সংবাদটা দেওয়া সম্ভব না। তাই রাজা রানিরে তেলান- কী কারণে রাগ হইছে কও। কেডা তোমার লগে বেয়াদবি করছে কও আমারে। আমি তাগো কল্লা কাইট্টা ফালামু। তোমার কি শরীর খারাপ? আমি অত টেকা বেতন দিয়া একপাল কবিরাজ পুষি। শরীর খারাপ হইয়া তুমি মাটিতে পইড়া থাকবা এইটা কি হয়? আমি এক্ষুনি ডাকতাছি তাগোরে...

রাজা রানিরে তেলান কিন্তু কৈকেয়ী কিচ্ছু কন না; খালি কান্দেন। রাজা কন- কাইন্দ না; কাইন্দ না রানি। তুমি কও কার মাথা কাটতে হইব। কোনো দোষ না থাকলেও তুমি কইলে আমি যে কারো মাথা নামাইয়া দিতে পারি। যদি কও যে কোনো বন্দীরে ছাইড়া দিতে হইব; আমি এক্ষুনি তা দিতাছি। কাউরে যদি দান খয়রাত করতে চাও; তাও কও। আমি রাজকোষ খুইলা দিতাছি। কিন্তু কাইন্দ না রানি। উঠো...

রাজা যথেষ্ট আউলা হইছেন বুইঝা কৈকেয়ী কন- কেউ আমারে অপমান করে নাই। আমার একখান ইচ্ছা আছে। তুমি যদি কও যে আমার ইচ্ছাটা পুরণ করবা তাইলে তোমারে আমি তা কমু...

যাউকগা। রানি কথা কওয়া শুরু করছেন অবশেষে। রাজা খুশি। ওইদিকে টাইম যাইতাছে। বহুত কাম বাকি। রাজা লগে লগে রানিরে উত্তর দেন- রাম ছাড়া তোমার থাইকা বেশি পেয়ারের আর কেউ নাই আমার। আমি সব কিছুতে যে রামরে সব থিকা বেশি ভরসা করি; সেই রামের নামে কসম খাইয়া কইতাছি- তুমি যা বলবা আমি তাই করব...

কৈকেয়ী কন- ঠিকতো? তুমি যে আমারে কথা দিছ সেইটা কিন্তু দেবতারা শুইনা ফালাইছেন। ঠিকাছে তো?
দশরথ কন- অবশ্যই। খালি দেবতা কেন? ভূত-পেত্নী সকলেই শুনছেন যে আমি তোমারে রামের কসম দিয়া কইছি তোমার কথা রাখব। তো এইবার কও কী কথা?
কৈকেয়ী কন- অসুররাজ শম্বরের লগে যুদ্ধে তুমি যে খুব কাহিল হইয়া পড়ছিলা মনে আছে?
রাজা কন- খালি কাহিল? আরেকটু হইলে তো মইরাই যাইতাম। এক্কেবারে বেহুঁশই তো হইয়া গেছিলাম। তুমি সেইখানে আছিলা বইলা না নিজের জানটা আবার নিজের কাছে ফিরত পাইছি...
- তুমি সুস্থ হইয়া আমারে যে দুইটা বর দিতে চাইছিলা সেইটা মনে আছে?
- আছে তো। অবশ্যই আছে। কিন্তু তুমি তো তখন কিছু চাও নাই। কইছিলা সময়মতো পরে চাইয়া নিবা...

কৈকেয়ী কন- আইজকা সেই সময় উপস্থিত হইছে। আইজকা আমি আমার সেই দুইখান বর চামু...

রাজা একটু উসখুস করেন। এইটা একটা সময় হইল? কিন্তু তারপরেও কথা যখন দিছেন তখন তো রানির কথা শুনতেই হইব। রাজা কন- আইচ্ছা ঠিকাছে কও। একটু তাড়াতাড়ি কও...
রানি কন- তুমি কিন্তু কথা দিছ আমার কথা রাখবা। আর আমারে দুই বর দিবার কথা তো আগেই ফাইনাল। এখন যদি কথা না রাখো তাইলে মনে রাইখ আমি কিন্তু বিষ খাইয়া মরব কইয়া দিলাম...
- অতকিছু করার তো দরকার নাই রানি। কথা যখন দিছি তখন অবশ্যই রাখব। কী চাও তাড়াতাড়ি কইয়া ফালাও। তারপরে আমি তোমারে একটা নতুন সংবাদ দিমু। একটা মারাত্মক ঘটনা ঘটতে আছে। তোমারেও সাজুগুজু কইরা রেডি হইতে হইব। তাড়াতাড়ি কও; কী চাও...

রানি কন- আমার সেই দুইটা বর আইজই চাই রাজা। এক নম্বর; অভিষেকের যে আয়োজন তুমি করছ সেইটাতে রামের বদলা ভরতের অভিষেক হইব। আর দুই; রাম দণ্ডক বনে বনবাসে যাইব চৌদ্দ বছরের লাইগা; যাতে ভরতের রাজ্যে আর কোনো কাঁটা না থাকে...

দশরথ উবু হইয়া বসছিলেন কৈকেয়ীরে উঠাইতে। কৈকেয়ী উইঠা বসছেন অনেক্ষণ। কিন্তু এখন কৈকেয়ীর কথা শুইনা রাজা বেকুবের মতো কতক্ষণ হা কইরা রানির দিকে তাকাইয়া হায়রে হায়রে হায় কইয়া চিক্কুর দিয়া মাথা ঘুরাইয়া পইড়া গেলেন মাটিতে....

মাটিতে আছড়াইয়া শুরু হইল রাজার হাহুতাশ। একবার কৈকেয়ীরে গালাগাল করেন তো আরেকবার করেন হাহাকার- তোমারে ভালোবাইসা কোন পাপটা আমি করছি কও? হায়রে হায়; কী কথা তুমি আমারে শুনাইলা রানি? আমারে তো মাইরা ফালাইছ তুমি...

কৈকেয়ী কোনো কথা কন না। দশরথ কৈকেয়ীর দুই পা জড়াইয়া ধরেন- তুমি আমার মাথায় লাত্থি মারো। তাও আমারে দয়া করো রানি। তুমি বহুবার কইছ যে ভরত আর রাম দুইজনই তোমার কাছে সমান। তাইলে কেন তুমি তারে বনে পাঠাইতে চাও?

ভরতরে রাজ্য দিবার শর্তে দশরথ যতটা না কাহিল তার থিকা বেশি ভাইঙা পড়ছেন রামরে বনে পাঠাইবার শর্তে- তিনি কৈকেয়ীর পা ধইরা কান্দেন- পোলাটা কেমনে বনে থাকব কও? রামতো ভরত থাইকা তোমার সেবা বেশি করে। তারে কেন তুমি এই শাস্তি দিলা? আমি কেমনে পোলাটারে গিয়া কমু তুই বনে যা? কৈকেয়ী আমি বুড়া হইছি। পোলার এমন কষ্ট আমি সহ্য করতে পারব না। আমারে একটু দয়া করো রানি। তুমি রামরে একটু দয়া করো। বনবাসের শর্তটা অন্তত ফিরাইয়া নেও...

দশরথ কৈকেয়ীর পা ধইরা কান্দেন। বেহুঁশের মতো মাটিতে গড়াগড়ি করেন। আবার উইঠা কৈকেয়ীর পা ধরেন। কৈকেয়ী এইবার একটা ধমক লাগান- রাজায় যদি কথা দিয়া পরে আবার কথা ফিরাইয়া নিবার লাইগা কাকুতি মিনতি করে তয় কি রাজার ধর্ম থাকে? এইটা করলে তুমি কেমনে নিজেরে সত্যবাদী রাজা কইয়া আবার নিজেরে সমাজে জাহির করবা? আর এইগুলা শুনলে মাইনসেইবা তোমারে কী কইব শুনি? উঠো...

রাজা দশরথ আর কিছু কন না। ভ্যাবলার মতো কৈকেয়ীর মুখের দিকে তাকাইয়া থাকেন। অনেক্ষণ। তারপর হঠাৎ কইরা- রাম রে। বাজান আমার... কইয়া হুঁশ হারাইয়া পইড়া যান মাটিতে...

রাইত বাড়তাছে। সময় আর বেশি নাই। বহুক্ষণ ঘোরে থাইকা দশরথ আবার নিজেরে সোজা করেন- আমার কথা বাদ দেও। তুমিই না হয় রামরে রাজা বানাও...
কৈকেয়ী কন- তাতে কী ফারাক? কে তারে রাজা বানাইল সেইটা তো বিষয় না। বিষয় হইল রাম রাজা হইব না; রাজা হইব ভরত...

দশরথ আবার পয়লা থাইকা শুরু করেন। একবার গালাগালি করেন তো আরেকবার করেন মিনতি। রাইত শেষের দিকে। অভিষেক অনুষ্ঠানের লগ্ন কাছাকাছি। লোকজনরে জানাইতে ও জাগাইতে বৈতালিকেরা বন্দনা শুরু কইরা দিছে। দশরথ উঁকি দিয়া তাগোরে একটা ধমক লাগান- প্যানপ্যানানি বন্ধ করো সব...

কৈকেয়ী ঝাড়ি লাগান রাজারে- বহুত কাজ পইড়া আছে। এখন বিলাপ বন্ধ কইরা যা করবার তা করো...

রাজা দশরথও এইবার ঠাট দেখান- আমি তোমারে ত্যাগ করলাম। তোমার পোলা ভরতরেও ত্যাজ্য করলাম। তুমি শুইনা রাখো; আইজ যদি রামের অভিষেক না হয়; তবে অভিষেকের লাইগা যে আয়োজন হইছে; সেই আয়োজন দিয়া আমার পোলা রাম আইজই আমার মরাদেহ সৎকার করব। কিন্তু ভরত না। কোনোভাবেই না। রাজ্যও পাইব না সে; আমার লাশ সৎকারের অধিকারও না...

নিজের কথা নিজেরই বিশ্বাস হয় না রাজার। কথাটা কইয়া আবার মিনতির চোখে রানির দিকে তাকাইয়া থাকেন। রানি তার কথায় কোনো পাত্তা না দিয়া আরেকটা ঝাড়ি লাগান- উল্টাসিধা কথা কওয়ার সময় না এইটা। রামরে ডাইকা পাঠাও। তারে এইখানে আইনা সব কইয়া বনে পাঠাও আর আমার পোলারে রাজ্য দেও...

ভাঙা দশরথ কোনোমাতে একটা সৈনিকরে কন- তোমরা পারলে কেউ রামরে সংবাদটা দেও। পোলাটারে দেখবার বড়ো ইচ্ছা হয় আমার...

অভিষেকের লগ্ন ভোরে। পুষ্যা নক্ষত্রে। বশিষ্ঠের নেতৃত্বে হইব অভিষেক। তিনি মন্ত্রী সুমন্ত্ররে কন- যাও রাজারে গিয়া সংবাদ দেও। সব রেডি। লোকজনও আইসা পড়ছে। এখন রাজা আর রাজপুত্র আসলেই অভিষেক শুরু হইতে পারে...

মন্ত্রী সুমন্ত্র রাজারে খুঁজতে খুঁজতে কৈকেয়ীর মহলে আইসা উপস্থিত- মহারাজ। সকলে আপনার লাইগা অপেক্ষায়। লগ্নও নিকটে...
রাজা কন- সুমন্ত্ররে। তোর কথা শুইনা বুকটা ফাইটা যাইতাছে আমার...

রাজার এই কথায় সুমন্ত্র ঘাবড়াইয়া যায়। দিলো সুসংবাদ। রাজায় কি না কন তার বুক ফাটাইয়া দিছে সে। সে থতমতো খাইয়া রানির দিকে তাকায়। রানি কৈকেয়ী কন- সুমন্ত্র। ডরানের কিছু নাই। পোলার অভিষেকের খুশিতে রাজায় সারা রাইত না ঘুমাইয়া একটু কাহিল আর আউলা আছেন। তুমি এক কাম করো; তুমি বরং রামরে গিয়া এইখানে নিয়া আসো...
সুমন্ত্র কয়- মহারানি। রাজার হুকুম ছাড়া কেমনে গিয়া তারে ডাকি?
দশরথ বালিশে মুখ লুকাইয়া কন- হ হ। পোলাটারে আমি দেখতে চাই সুমন্ত্র। তুমি গিয়া তারে ত্বরায় নিয়া আসো...

সূর্য উদয় হইছে। সকলে উপস্থিত। সুমন্ত্ররে দেইখা বশিষ্ঠ আর সকলে জিগায়- রাজা কই?
সুমন্ত্র কয়- তিনি তো আছেন। তিনি আমারে কইলেন রামরে তার কাছে ডাইকা নিয়া যেতে
বশিষ্ঠ জিগান- তিনি আসতাছেন না ক্যান?
সুমন্ত্র কয়- সেইটা তো জিগাই নাই
বশিষ্ঠ ধাতানি দেন- যাও। তিনারে গিয়া জিগাও আর জানাও যে লগ্ন চইলা যাইতাছে...

সুমন্ত্র আবার দৌড়াইয়া যায় রাজার কাছে। তারে দেইখা রাজা খিটখিট কইরা উঠেন- তোমারে কইলাম রামরে নিয়া আসতে। তুমি কেন আবার চেহারা দেখাইতে আসছে এইখানে? আমার আদেশ কানে যায় নাই তোমার?

সুমন্ত্র ঘাবড়াইয়া যায়। রাজারে কিছু জিগায়ও না; কিছু জানায়ও না। সোজা রওয়ানা দেয় রামের মহলের দিকে...

রামের মহলে উৎসব। ভবিষ্যৎ রাজার লাইগা উপহার টুপহার নিয়া লোকজন উপস্থিত। এই দিকের সবকিছু দেখাশোনা করতে আছে লক্ষ্মণ। সুমন্ত্ররে দেইখা সকলে ভাবে রামরে নিয়া যাইতে রাজা তার মন্ত্রী পাঠাইছেন। রামও সাইজা গুইজা আছে। স্বামীর অভিষেকের লাইগা সীতাও সাইজাইছে নিজেরে। সুমন্ত্র গিয়া রামরে কয়-রাজা তোমারে দেখতে চান। তোমারে নিয়া যাইতে পাঠাইছেন আমারে...

রাম বুইঝা ফালায় এইটা অভিষেকে যাইবার ডাক না। মনে হয় অন্য কিছু। নাইলে রাজা তারে দেখতে চাইছেন এমন কথা কইয়া লোক পাঠাইতেন না। সে সীতারে কয়- তুমি থাকো। মনে হয় রাজা আমার লগে কোনো পরামর্শ করতে চান। আমি যাই...

সীতা কয়- আমি কিন্তু তোমার অভিষেক দেখব। সেইটা আবার একলা একলা কইরা ফালাইও না...
রাম কয়- অবশ্য অবশ্যই। অভিষেকের আগে অবশ্যই তোমারে আইসা নিয়া যামু আমি...

লক্ষ্মণও রওয়ানা দেয় রামের লগে সুমন্ত্রের সাথে। রামরে দেইখা দশরথ রাম কইয়া একটা চিক্কুর দিয়া আর কিছু কইতে পারেন না। মুখ লুকাইয়া খালি কান্দেন তিনি...

রাম কৈকেয়ীরে জিগায়- হইছে কী জননী? আমি কি বাপের লগে কোনো বেয়াদবি করছি? নাকি শরীর খারাপ করছে তার? নাকি পরিবারের কারো কোনো দুঃসংবাদের ঘটছে কিছু?

কৈকেয়ী কন- বাপ রাম। তোমার বাপে রাগও করেন নাই। পরিবারে কারো বিপদও ঘটে নাই। আসলে ইনি তোমারে একটা কথা কইতে চান কিন্তু নিজের মুখে কইতে না পাইরা মনমরা হইয়া আছেন লজ্জায়...
রাম কয়-কী এমন কথা যেইটা আমারে কইতে লজ্জা করেন তিনি?
কৈকেয়ী কন- কথাটা হইল; তোমার বাবা আমারে একটা কথা দিছিলেন; সেই কথাটাই তিনি মুখ ফুইটা কইতে পারতাছেন না তোমারে। তো ঘটনা হইল তোমার বাপের মুখ রাখার লাইগা তোমারেই কিন্তু সবকিছু করা লাগবে বাপ। কিন্তু তোমারে সেইটা নিজের মুখে কইতে না পাইরা এখন শরমিন্দা আছেন। আবার উল্টাদিকে আমারে দেওয়া কথার লাইগা এখন নিদারুণ পস্তাইতাছেন...

রাম কয়- এইটা আবার কী রকম কথা? বাবায় যদি আপনেরে কোনো কথা দিয়া থাকেন আর সেই কথা রক্ষার লাইগা যদি আমারে কিছু করতে হয় তবে অবশ্যই আমি তা করব। কন কী করতে হবে আমার?
কৈকেয়ী কন- হ সেইটাই তো কথা। বাপের বড়ো পোলার মতো উপযুক্ত কথা। কথা দিয়া কথা রাখাই তো হইল ধর্মের মূল কথা। কথা দিয়া যদি কথা না রাখতে পারেন তবে রাজার সম্মানের কি আর বাকি থাকে কিছু? ...তয় দেইখো বাপ। তোমার লাইগা যেন তোমার বাপেরে শরম পাইতে না হয়। তুমি যদি কথা দেও যে তুমি বাপের কথা রাখবে তয় তোমারে তোমার বাপের পক্ষে কথাটা কইতে পারি আমি...

রাম কয়- এমন কথা আর কইয়েন না জননী। বাপের কথায় আমি আগুনে লাফ দিতে পারি; বিষ খাইতে পারি; সমুদ্রেও ঝাঁপ দিতে পারি। তিনি যা বলবেন অবশ্যই আমি তা করব। আর এইটাও জাইনা রাইখেন যে রাম একমুখে দুই কথা কয় না কোনোদিন...

কৈকেয়ী কন- তাইলে তোমারে কই শোনো। তোমাগো জন্মের আগে একবার এক অসুর রাজার লগে যুদ্ধে তোমার বাপ খুব কাহিল হইছিলেন। তখন সেবা কইরা তিনারে আমি সুস্থ কইরা তুলি। তো আমার সেবায় খুশি হইয়া তোমার বাপে তখন কইলেন যেকোনো দুইটা জিনিস তিনার কাছে আমি চাইতে পারি; তিনি দিবেন। আমি কিন্তু সেই বরগুলা আগে নেই নাই; কইছিলাম পরে নিমু। তো ঘটনা হইল আইজকে আমি তোমার বাপের কাছে সেই দুইটা জিনিস চাইছি। তার একটা হইল তোমার বদলা ভরতের অভিষেক আর দ্বিতীয়টা হইল আজকেই চৌদ্দ বছরের লাইগা দণ্ডক বনে তোমার বনবাস যাত্রা...

রাম লক্ষ্মণ তাব্দা মাইরা থাকে। দশরথ নিশ্চুপ। একটু থাইমা কৈকেয়ী কন- তুমি যেমন কথা দিছ যে পিতার কথা রাখবা; সেইটা যদি ঠিক হয় তবে আজকেই চৌদ্দ বছরের লাইগ বনবাসী হও। বুঝতেই পারতাছ যে রাজা এই কথা নিজের মুখে তোমারে কইতে না পাইরা খুব মনোকষ্টে আছেন। তোমার মুখের দিকেও তাকাইতে পারতাছেন না। এইবার তোমারই দায়িত্ব বাপ; বাপের কথা রাইখা বাপের সম্মান রক্ষা করা...

রাম ধাক্কাটা সামলাইয়া উঠছে। কয়- এইটাই যদি বাবার ইচ্ছা হয় তবে অবশ্যই আমি তা করব। কিন্তু আমার একখান প্রশ্ন। বাবায় কেন আগের মতো আমার লগে কথা কইতাছেন না? ভরতের অভিষেকের কথা কেন তিনি নিজের মুখে আমারে কইলেন না? রাজা হিসাবে তিনার আদেশ তো বহুত বড়ো কথা; আপনেও যদি আমারে কন; তাইলেও কিন্তু আমি ভরতরে রাজ্যের লগে লগে সীতাও দান কইরা দিতে রাজি...
কৈকেয়ী কন- না না। সীতা লাগব না। তোমার বাপে যে দুইটা কথা দিছেন সেই দুইটা হইলেই হবে....
রাম কয়- ঠিকাছে। রাজায় শরম পাইছেন। আপনি তিনারে শান্ত করেন। খামাখা তিনি কাইন্দা মাটি ভিজাইয়া এখন আর কী করবেন। আর অভিষেকের লাইগা আইজই ভরতরে আনতে লোক পাঠান...
কৈকেয়ী কন- হ। ভরতের নানাবাড়ি অবশ্যই লোক যাবে তারে আনতে। কিন্তু বাজান তোমারেও যে ত্বরায় বনযাত্রা করা লাগবে। তুমি চইলা না গেলে রাজায় শরমে মুখও তুলতে পারবেন না। বোঝেই তো বাপ; রাজার শরম বইলা কথা....

- কষ্টরে... কষ্ট। কষ্ট কষ্ট...

এই চিৎকারটা দিয়া দশরথ বিছানায় মাথা আছড়ান। রাম তারে ধইরা তোলে কিন্তু চোখ খুইলা পোলার দিকে তাকান না তিনি। কৈকেয়ী হিসাব কইরা দেখেন বাপ-পোলারে আবেগি সময় দেওয়া ঠিক না। তিনি রামরে তাড়া দেন- তোমারও তো দেরি হইয়া যাইতাছে বাপ। বহুত কিছু তো তোমারও গোছগাছ করতে হইব...

রাম কয়- চিন্তা কইরেন না জননী। কথা যখন দিছি তখন তা রাখবই। কিছুটা সময় আপনে আমারে বাবার ছোঁওয়াটা পাইতে দেন। তারপর আমি মায়েরে জানাইয়া আর সীতারে কইয়া আজকেই বনে রওয়ানা দিমু। নিশ্চিন্ত থাকেন...

রামের কোমর জড়াইয়া রামের কোলে কাইন্দা উঠেন দশরথ। রাম তার হাত ছাড়াইতে চায়; রাজা আরো শক্ত কইরা ধরেন পোলারে। এইটা রাজা দশরথ না; এইটা এক বৃদ্ধ বাপ। তিনি বুইঝা গেছেন চৌদ্দ বছর পরে পোলারে দেখার লাইগা আর বাইচা থাকবেন না তিনি। এইটাই শেষ দেখা তাই পোলার মুখের দিকে তাকাইতে পারেন না তিনি। পোলার কোলে মুখ লুকাইয়া পোলার আগের চেহারাটাই নিজের ভিতরে গাঁইথা রাখতে চান রাজা। রাম যদি একটা বারের লাইগাও প্রতিবাদ করত; তবে তিনি আবার রাজা দশরথ হইয়া হুঙ্কার দিয়া সব ভাসাইয়া দিতে পারতেন। কিন্তু পোলাটারে তিনি তো রাজপুত্র হিসাবে বড়ো করেন নাই; বড়ো করছেন এক পুত্র হিসাবে। বিবাহের বহু বচ্ছর পরে সন্তান পাইছেন তিনি। রাম তার প্রথম সন্তান। রামের লগে তার সম্পর্ক শুধুই বাপ আর পোলার; রাজা আর রাজপুত্রের না মোটেই...

রাম বাপের মাথায় হাত বোলায়; পিঠে হাত বোলায়। থাইকা থাইকা রামের কোলে ফুঁপাইয়া কান্দেন পিতা। রাম তার হাত ছাড়াইতে চায়; তিনি ধইরা রাখেন। যেন বাপ আর পোলার ভূমিকা বদলাইয়া গেছে আইজ। সেই ছোটকালে কাজে যাইবার সময় বাপের গলা জড়াইয়া রাখত রাম। রাজায় যত চাইতেন তারে ছাড়াইতে; ছোট হাত দিয়া ততই শক্ত কইরা পোলায় ধইরা রাখত বাপের গলা। আইজ যেন তার উল্টা ঘটতে আছে। পোলা ছাড়ইতে চায়; ধইরা রাখেন বাপ...

ছোট্ট শিশুর হাত এক সময় ছাড়াইতেই হইত বাপের। বৃদ্ধ বাপের হাতও এক সময় জোর কইরা ছাড়ায় রাম। বাপে তাকায় না পোলার দিকে। পোলায়ও তাকায় না বাপের দিকে। কোল থাইকা বাপের মাথাটা নামাইয়া কৈকেয়ীর ঘর থাইকা বাইর হইয়া আসে রাম। ছোটকালে পিছনে বাপ শুনত পোলার কান্দন; আইজ পোলায় শোনে বাপের গোঙানি...

ফিরতি পথে রাম অভিষেকের আয়োজনগুলা দেখে। লক্ষ্মণ অতক্ষণ চুপ কইরা আছিল। বুঝতে পারে নাই কী করা আর কী বলা দরকার। তবে সে ক্ষেইপা আছে। রাম কিছুই কইতাছে না। অভিষেকের আয়োজন দেইখা রাম রওয়ানা দেয় নিজের মা কৌশল্যার ঘরে; পিছে লক্ষ্মণ...

পোলার অভিষেকে মঙ্গল কামনায় রাম জননী কৌশল্যা আছিলেন পূজায় প্রার্থনায়। পোলায় উপস্থিত হইয়া কয়- কী যে বিপদ তোমার আর তোমার পোলার উপর নাইমা আসছে সেইটা তো এখনো তুমি জানো নাই মা...

বিত্তান্ত শুইনা কৌশল্যার মাথা ঘোরে। মাটিতে আছাড়িপিছাড়ি কইরা কান্দেন তিনি- পোলা জন্ম দিয়া তাইলে কী লাভ হইল আমার? এর থাইকা তো বাঞ্জা থাকলেই ভালো হইত। এখন ছোট সতীনের দাসী হইয়া জীবন কাটাব আমার?

লক্ষ্মণ এইবার মুখ খোলে- আমি কিন্তু এইসব সিদ্ধান্ত মানি না। বয়সের দোষে বাবার বুদ্ধিনাশ হইছে...

তারপর রামের দিকে ফিরা কয়- ভাইজান। বাইরের কেউ কিছু জানবার আগেই আমি কই কি আপনে দখল কইরা ফালান। আমি আছি আপনের লগে। যদি কেউ ভরতের পক্ষে খাড়ায় তবে সবাইরে নাশ কইরা ফালামু। এমনকি বাবা নিজেও যদি আইসা বাধা দেন তবে তারে বন্দী করব; দরকার লাগলে খুন করতেও আমার আপত্তি নাই। কারণ কাণ্ডজ্ঞান হারাইন্না মুরব্বিগোও শাসন করা লাগে। যে রাজ্য আপনের পাওনা সেইটা তিনি কেমনে কৈকেয়ীরে দিয়া দিতে চান? লন যাই। আমার তো মনে হয় না আপনেরে আর আমারে একলগে দেখলে বাধা দিবার সাহস করব কেউ...

লক্ষ্মণ আবার কৌশল্যার দিকে ফিরে- আমার ক্ষমতা এইবার আপনি দেখবেন। ভাইজান আপনেও দেখবেন। দেখেন না আমি এখনি গিয়া বুদ্ধিনষ্ট রাজারে কেমনে বাইন্ধা নিয়া আসি...

লক্ষ্মণের কথায় কৌশল্যার গলায় পানি আসে। তিনি রামরে কন- লক্ষ্মণের কথা শুনছস? আমার মনে হয় এইটাই তোর করা উচিৎ
রাম কয়- বিষয়টা রাজ্য দখলেরও না; রাজারে বন্দী করারও না। বিষয়টা বাপের কথা রাখা না রাখার। রাজ্য হয়ত দখল করা যায়; রাজারেও বন্দী করা যায়। কিন্তু বাপেরে লজ্জিত করা উচিত না; বাপের বুদ্ধিনাশ হইলেও না। আমি বাবারে কথা দিয়া আসছি। আমারে অন্য কিছু কইও না কেউ। তোমার পায়ে ধরি মা আমারে বনে যাইতে দেও...

তারপর লক্ষ্মণের দিকে ফিরে- আমার লাইগা তোমার টান আমি জানি। কিন্তু আমারে আমার কথা ভাঙতে কইও না। শান্ত হও...

রাম মায়েরে প্রণাম করে- চৌদ্দ বচ্ছর পরে আবার দেখা হইব মা...

লক্ষ্মণ ঠাণ্ড হয় নাই। সমানে চিল্লাইতাছে। রাম কয়- ঠাণ্ডা হও। আমার অভিষেকের লাইগা তুমি যা করতেছিলি এখন তা ভরতের লাইগা করো। বাবারেও আশস্ত করো। কিচ্ছু করার নাই। সবই কপাল। না হইলে আমার এই দশা হইব কেন?

লক্ষ্মণ চিল্লায়- আপনের মাথায়ও গণ্ডগোল দেখা দিছে। যেইটারে আপনে কপাল কইতে আছেন সেইটা আমি বিশ্বাস করি না। পুরাটাই একটা চক্রান্ত। চক্রান্তরে কপাল কইয়া হাত পা গুটাইয়া বইসা থাকার কোনো মানে নাই। দুর্বল আর অক্ষমরাই ভাগ্য মাইনা লয়; যার ক্ষমতা আছে সে কপালের পূজা করে না। আপনে যাই কন না ক্যান; আইজ মাইনসে আমার ক্ষেমতা দেখব। আইজ দেখব কপাল বড়ো না আমার শক্তি বড়ো...

রাম লক্ষ্মণরে থামায়- তুমি যদি তোমার কথামতোও চলো; তাইলেও কিন্তু আমি যেইটা কইছি সেইটাই করব। আমি বনে যাব....

লক্ষ্মণ এইবার একটু বেকুব বইনা যায়। মায়ের কান্দন রামরে টলাইতে পারে নাই। এখন সে কয় কি না লক্ষ্মণ তারে রাজ্য আইনা দিলেও সে নিব না। লক্ষ্মণ বোঝে না তার এখন কী করা দরকার...

রাম রওয়ানা দেয় সীতার কাছে। ভ্যাবাচেকা খাওয়া লক্ষ্মণও দৌড়াইতে থাকে রামের পিছনে। সীতা সাইজা গুইজা বইসা আছে রামের অভিষেকে যাবে। কিন্তু রামের চেহারা দেইখা সে আকাশ থাইকা পড়ে- এমন ভালো দিনে মুখ চিমসা কইরা আছ ক্যান?

রাম ঘটনা কয়। কয়- বনে যাইবার আগে তোমার কাছে বিদায় নিতে আসছি। আমার বনবাসের চৌদ্দ বচ্ছর তুমি ব্রত টত উপবাস কইরা পার কইরা দিও। শ্বশুর-শাশুড়িগো সেবা কইর। আর ভুলেও কোনোদিন ভরতের সামনে আমার প্রশংসা কইর না...

সীতা কয়- খাড়াও। তোমার কথায় হাসি পাইতাছে আমার। তুমি যা কইতে আছ তা কোনো রাজপুরুষের মতো কথা না। বাপ মা আলাদা সংসারের মানুষ। কিন্তু বৌতো তোমার নিজ সংসারের অংশ। তোমার যা গতি আমারও তাই হবে। মানে আমি এই রাজবাড়িতে থাকব না। আমিও তোমার লগে বনে যাব...

রাম সীতারে বহুত বোঝায়- বাঘে ভাল্লুকে বান্দরে ভরা বনে যাইতে আছি আমি। বহুত বিপদ সেইখানে। তুমি কেমনে থাকবা বনে? তোমার যাওয়া ঠিক হইব না সীতা...
সীতা কয়- তুমি আছ না? তাইলে আর অসুবিধা কী? তোমার যে গতি হবে আমারও সেই একই গতি হবে....

রাম তারে যত বোঝায় সীতা তত বলে বনে যাবে। তারপর কয়- তুমি যদি আমারে তোমার লগে নিয়া যাইতে না চাও তবে কিন্তু বিষ খাইয়া কিংবা গায়ে আগুন দিয়া কিংবা পানিতে ডুইবা মরব আমি কইলাম...

রাম তবুও বোঝায়। শেষে সীতা কয়- বাপে তো তোমারে বীর জাইনাই মাইয়া বিবাহ দিছিলেন। যদি জানতেন যে তার জামাই এমন একটা কাপুরুষ যে নিজের বৌরেও নিজের লগে রাখতে সাহস করে না; তাইলে কী করতেন কওতো?
রাম ঝিমায়। সীতা কয়- কী কারণে তুমি নিজের বিবাহিত বৌরে পরের হাতে ফালাইয়া যাইতে চাও?

রাম কয় ঠিকাছে তাইলে। তুমিও যখন যাইতে চাও তখন আমাগো যা কিছু আছে তা চাকর বাকর আর ব্রাহ্মণগো মাঝে দান কইরা দেওয়াই ভালো....

লক্ষ্মণ দেখে সে পুরাই বেকায়দায় পইড়া গেছে এখন। রামের লাইগা চিল্লাচিল্লি করছে। ভরতরে মারার কথা কইছে। এমনকি রাজার বিরুদ্ধেও বিদ্রোহ করছে। এখন ভরতের রাজ্যে তার কী অবস্থা হবে? ...সেও সিদ্ধান্ত নিয়া ফালায়- আমিও আপনেগো লগে বনে যামু ভাইজান। আমি অস্ত্রপাতি নিয়া আপনেগো পাহারা দিমু...

রাম কয়- তুমি বনে গেলে আমার মা কৌশল্যা আর তোমার মা সুমিত্রারে দেখব কে? ভরত আর কৈকেয়ী তো তাগো নির্যাতন করব...
লক্ষ্মণ কয়- ওইটা হবে না। আপনে তো আর মইরা যাইতাছ না। আপনের ডরেই ভরত কৌশল্যা আর সুমিত্রার লগে বেয়াদবি করতে সাহস করব না; বরং সম্মানেই রাখব। আর রানি কৌশল্যার নিজের যত সম্পত্তি আছে; তা দিয়া তিনি হাজারটা মাইনসের এখনো পালতে পারেন। তাগো ভরণ পোষণ নিয়া চিন্তার কিছু নাই...

যাত্রার আয়োজন করে রাম আর লক্ষ্মণ। পয়লা গোছায় অস্ত্রপাতি। লগে নেয়। তারপার রাম সীতা গরু বাছুর অলঙ্কার পোশাক আশাক দান কইরা দেয় ব্রাহ্মণ আর দাসদাসীগো মাঝে...

দানটান কইরা তারা রওয়ানা দেয় রাজা দশরথের কাছে বিদায় নিতে। ততক্ষণে রাজ্য জুইড়া সংবাদ বিস্তার হইয়া গেছে। রাস্তায় রাস্তায় লোকজন হুমড়ি খাইয়া দেখতে থাকে রাম আর সীতারে। কেউ করে হাহাকার। কেউ করে রাজা দশরথ আর কৈকেয়ীরে গালাগালি। রাম লক্ষ্মণ সীতা আগায়। পিছনে তাগো জিনিসপত্র নিয়া আগায় দাসদাসী...

সুমন্ত্র রাজারে জানায় রাম বিদায় নিতে আসতাছে লক্ষ্মণ আর সীতারে নিয়া। রাজা কন- আমার সকল স্ত্রীরে এইখানে আনাও সুমন্ত্র। রাজার সংবাদ পাইয়া দশরথের সাড়ে তিনশো স্ত্রী আইসা উপস্থিত হন রামরে বিদায় দিতে। রামরে সামনে দেইখা বুক ধইরা মাটিতে পড়েন রাজা- রামরে; পুত আমার...

রাজারে খাটে শোয়নো হয়। রাম কয়- মহারাজ বনবাসে যামু। লক্ষ্মণ আর সীতাও আমার লগে যাবার সিদ্ধান্ত নিছেন। বহুত নিষেধ করলাম কিন্তু তারা শুনলেন না। এখন আমাগো বনবাসে যাওনের অনুমতি দেন...
দশরথ কন- আমার মাথা ঠিক নাইরে বাজান। কৈকেয়ীর কথায় কী কইছি না কইছি সেইটা মনে রাখিস না। তুই এখনই আমারে বন্দী কইরা অযোধ্যার রাজা হ বাপ...
রাম কয়- সিদ্ধান্ত যা হইবার তা তো হইয়া গেছে। আপনিই রাজত্ব করেন মহারাজ। চৌদ্দ বচ্ছর পরে আবার ফিরা আসব নে আমি...
দশরথ কন- তাইলে অন্তত আরো একটা দিন থাইকা যা বাপ। বাড়তি একটা দিনও যদি তোরে দেখি তবু জানটাতে শান্তি পামু। আইজ রাত্তিরটা থাক। কাইলকে যাইস...
রাম কয়- আইজ রাইতে আপনের বাড়িতে যে রাজভোগ পামু; কালকে আমারে তা কে দিব? বনবাসে যখন যাইতেই হবে তখন যত তাড়াতাড়ি পারা যায় বনে যাওয়াই ভালো....

দশরথ পোলারে ধইরা কান্দেন। রাম কয়- আপনে প্রতিজ্ঞা করছেন কৈকেয়ী জননীর কাছে। আর আমি প্রতিজ্ঞা করছি আপনের প্রতিজ্ঞা রাখার। তার লাইগা দরকার পড়লে আমি সীতারেও বিসর্জন দিতে রাজি। তবু আপনের সম্মানটা থাক। মায়া আর বাড়াইয়েন না মহারাজ...

দশরথ কান্দেন। পোলারে ধইরা খালি কান্দেন রাজা দশরথ...

দশরথের মন্ত্রী সুমন্ত্র এইবার ক্ষেইপা উঠে কৈকেয়ীর উপর- আপনে একটা স্বামীঘাতিনি নারী। রাজারে যে আপনে মাইরাই ফালাইছেন; সেইটা বোঝেন? আমি রাজা দশরথের কর্মচারী। আপনার পোলা ভরত রাজা হইলে আমাগো আর এইখানে থাইকা কী কাম? আমরা সবাই না হয় রামের লগে বনেই যামু। আপনে পোলারে রাজা বানাইয়া সুখে থাকেন। আসলে বেখাসলতি বেইমানি আপনার রক্তের মইদ্যেই আছে। এই রকম বেইমানির লাইগা আপনের বাপে যেমন আপনের মায়েরে ত্যাগ করছিলেন; রাজা দশরথেরও উচিত আছিল তেমনি আপনেরে ত্যাগ করা। তাইলে আর অত আকাম দেখতে হইত না আমাগো...

কৈকেয়ী কিছু কন না দেইখা সুমন্ত্র এইবার কৈকেয়ীরে অনুনয় করে- মহারানি। একমাত্র আপনেই পারেন এই ধ্বংস থামাইতে। থামান দয়া কইরা...

কৈকেয়ী কিছু কন না। পরিস্থিতি সামাল দিবার লাইগা দশরথ কন- সুমন্ত্র; রামের লগে যাইবার লাইগা চতুরঙ্গ সেনা সাজাও। অস্ত্রপাতি দেও। বনের রাস্তাঘাট চিনে এমন মানুষ দেও। লাঠিয়াল- বণিক শিকারি- মিস্ত্রি এমনকি বনচতুরা বেশ্যাও জোগাড় কইরা দেও। টেকাপয়সা শস্যপাতি খাবার দাবার রামের লগে পাঠাও। যাতে বনে গেলেও রাজার মতো থাকতে রামের কোনো অসুবিধা না হয়...

কৈকেয়ী এইবার হাহাকার কইরা উঠেন- মানে কী? মানে কী? এ্যাঁ? টেকা পয়সা ধনরত্ন সব যদি রাম নিয়া যায় তবে ভরত কি পানসা রাজ্যের রাজা হবে?
দশরথ কন- তোমার যে দুইটা শর্ত আছিল তা আমি মাইনা নিছি। এখন আবার নতুন শর্ত দেও ক্যান? এমন তো কোনো কথা আছিল না যে রাম তার লগে ধনরত্ন নিয়া যাইতে পারব না?
কৈকেয়ী কন- নির্বাসন মানে নির্বাসন। বনবাস মানে বনবাস। এক্কেবারে খালি হাতে। সন্ন্যাসীগো মতো পোশাকে...

একটা হাউকাউ শুরু হয় সভায়। সভাসদরা রাজার পক্ষেই কথা কন। রাম দেখে এইসব নিয়া আর হাউকাউ করা অর্থহীন। সে কয়- আমি সব কিছুই ভরতের লাইগা ছাইড়া দিলাম। কেউ আমারে সন্ন্যাসীর কাপড় চোপড় আইনা দিলে আমি পরনের পোশাকটাও খুইলা রাইখা যামু...

কৈকেয়ী কন- এইতো। এইতো বাপের বেটার মতো কথা। শুনছেন সবাই? বাপের সম্মান রাখতে যে বনবাস স্বীকার কইরা নিলো আপনেরা কেমনে ভাবেন সে টেকা পয়সায় লোভ করবে?

কৈকেয়ী এইবার রামের দিকে ফিরেন- আমি কিন্তু বাজান তোমাগো লাইগা সন্ন্যাসীর পোশাক আগেই জোগাড় কইরা রাখছি। আমি জানতাম তুমি এইটা চাইবা। তোমারে আমি চিনি তো; এক কথার মানুষ...

কৈকেয়ী নিজের হাতে রামেরে সন্ন্যাসীর পোশাক আগাইয়া দেন। লক্ষ্মণ সীতারেও দেন। বিশ্বামিত্রের লগে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থাইকা রাম লক্ষ্মণ সেই পোশাক সহজেই পইরা নেয়। কিন্তু দুই টুকরা গেরুয়া হাতে নিয়া বোকার মতো খাড়াইয়া থাকে সীতা- এই কাপড় কেমনে পরে?

সীতার প্রশ্নে একটা বিদ্যুৎ খেইলা যায় পুরা সভায়। রাজপুরোহিত বশিষ্ঠ হুঙ্কার দিয়া উঠেন- রানি কৈকেয়ী। আপনে আসলে বেশি বাইড়া গেছেন। আমার কথা শুইনা রাখেন। সীতা বনে যাবে না। সীতা রামের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হইয়া এইখানে থাকবে। আর যদি সীতা রামের লগে বনে যাইতেই চান তবে আমরা সকলেই তাগো লগে যামু। আপনে সীতার শরীর থাইকা রাজ পোশাক খুইলা ভালো কাম করেন নাই। যদি নিজের ভালো চান তো তার পোশাক আর অলঙ্কার ফিরাইয়া দেন। এই রাজবধূর যদি বনে যাইতেই হয় তবে রাজবধূর মতোই পোশাক অলঙ্কার আর দাসদাসী নিয়া যাবেন...

বশিষ্ঠের কথায় রাজা দশরথ হুঁশ পান- আমি কষ্মিনকালেও এই কথা কই নাই যে সীতাও এক কাপড়ে বনে যাবে। বশিষ্ঠ যেমন কইছেন; সেইভাবেই এই রাজকইন্যা আর অযোধ্যার রাজপুত্রবধু বনে যাবে...

কৈকেয়ী দেখেন বেশি কচলাইলে তিতা বাড়বে। তিনি চুপ কইরা থাকেন। দশরথের আদেশে সীতার লাইগা চৌদ্দ বছরের উপযোগী পোশাক অলঙ্কার জিনিসপত্র আর দাসদাসী আইসা হাজির হয়। দশরথ একটু ঠা-া হইয়া সুমন্ত্ররে কন- তুমি রথ সজাইয়া নিজে গিয়া রামরে জনপদের বাইরে রাইখা আসবা...

সুমন্ত্র নিজেই চালাইব রথ। রাম লক্ষ্মণ সীতা গিয়া সেই রথে উঠে। রাম কয়- রথ চালান...

রথের লগে লগে দৌড়াইতে থাকে জনতা। কেউ কান্দে কেউ করে হাহাকার। রাম পিছনে ফিরা দেখে পিছনে খালি পায়ে পাগলের মতো দৌড়াইতে আছেন রানি কৌশল্যা আর রাজা দশরথ। রাজা দশরথ সুমন্ত্রের নাম ধইরা চিল্লাইতেছেন- সুমন্ত্র থামো। থামো সুমন্ত্র...

রাজার ডাকে সুমন্ত্র ঘোড়া থামায় তো রামের তাড়ায় আবার ঘোড়া দাবড়ায়। রাম কয়- ঘোড়া চালান। পরে কইয়েন তিনার ডাক শুনতে পান নাই আপনে। সুমন্ত্র সপাং চালায় ঘোড়ায়। রাম লক্ষ্মণ সীতারে নিয়া অদৃশ্য হইয়া যায় সুমন্ত্রের রথ। আর রাস্তায় পইড়া আছাড়িপিছাড়ি করেন রাজা দশরথ- রাম। রামরে। পুত আমার...

সকলেই জানল কী ঘইটা গেলো অযোধ্যায়। সকলের কাছেই সকলে বিদায় নিলো; সকলেই বিদায় দিলো সকলরে। শুধু একজন জানল না কিছুই। সে লক্ষ্মণের বৌ ঊর্মিলা। রামের অভিষেকের নামে বাড়ি থাইকা লক্ষ্মণ বাইর হইছিল সেই ভোরে। তারপর ঊর্মিলা বুঝতেই পারল না যে তারে না জানাইয়াই তার স্বামী ভাই আর ভাবীর লগে চৌদ্দটা বচ্ছরের লাইগা অদৃশ্য হইয়া গেলো...
২০১৬.০৪.০৩ রোববার

নোট: এই গল্পের ঘটনা-পরম্পরার লাইগা রাজশেখর বসুর রামায়ণ অনুসরণ করা হইছে

সহজিয়া রামায়ণ ২
সহজিয়া রামায়ণ ১
.....

রামায়ণের শোলক সন্ধান ২: সীতার সতীত্ব পরীক্ষা

রামায়ণের শোলক সন্ধান ১: সীতা কার মেয়ে?


মন্তব্য

তারেক অণু এর ছবি
মাহবুব লীলেন এর ছবি

হ। আমরা তো আর বর্তমান দুনিয়ায় ঘুরতে পারি না; তাই পুরাইন্না দুনিয়ার পাহাড় পর্বতই দেখি

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আগায়া যান...

মহাভারত রামায়ণকালে ঐ অঞ্চলের সাধারণ মানুষরা কেমন আছিলো সেইটা জানতে মঞ্চায়

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

মাহবুব লীলেন এর ছবি

সাধারণ মানুষের জীবন অন্তত মহাভারত রামায়ণে নাই
মহাভারতে সাধারণদের কিছুটা মানুষ হিসাবে দেখাইল্ওে রামায়ণে পুরা বান্দর হনুমান ভাল্লুক পাখি বানাইয়া থুইছে

০২
খাবারদাবারের তালিকা মোটামুটি পাইছি। প্রায় সব ধরনের আমিষ। লগে কিছু অঞ্চল কৃষিনির্ভরও আছিল। রামরে বাপের দেশে অন্য সব পশুর লগে উট আর গাধা আছিল কিন্তু সীতার বাপের দেশে উট-গাধা নাই

০৩
যাগোরে রামায়ণে বান্দর বলা হইছে তাগো বড়ো অংশটা হইল কানাড়া ভাষার মানুষ। পাহাড়েই থাকত। 'বন-নর' এর সংক্ষিপ্তটাই পরে বানরে পরিণত হইছে। কিছু আদিবাসী মাচার উপর ঘর বা টঙঘর বানাইয়া থাকত তাও পাওয়া গেছে। কিন্তু সাধারণের সাধারণ জীবনযাত্রা প্রায় নাই

০৪
রামায়ণ পুরাটাই ব্রাহ্মণ শাসিত উপাখ্যান। আদিবাসীগো অনুগত করার উপখ্যান। মহাভারতের সময় পর্যন্ত আদিবাসীরা যতটুটু প্রতিরোধ গইড়া তুলতে পারছিল অযোধ্যার আশেপাশের আদিবাসীরা তার বিন্দুমাত্রও পারে নাই। কারণ এখইখানে দেখা যায় আদিবাসী অঞ্চলগুলাতে পয়লা ব্রাহ্মণরা গিয়া গরু চরাইবার আর ইস্কুল খোলার নামে গ্রাম পাইতা বসছে। তারপর তাগো রাজারা (ক্ষত্রিয়) গিয়া ব্রাহ্মণগো সহায়তায় আদিবাসীগো খেদাইয়া সেই অঞ্চল নিজের রাজ্যের অঙশ বানাইতাছে। সিস্টেম অনেক স্ট্রাকচার্ড

০৫
বাকিটা খুঁজতে আছি। আমার হিসাবে রাম আর রাবণ দুই সময়ের মানুষ। রাবণ রামের বহু আগের এক নায়ক। তারলগে হনুমাণগো যুদ্ধ হইছিল। পরে সেই কাহিনিটা রামের সাথে যোগ হইয়া যায়; রামেরে বীর বানাইতে গিয়া

০৬
রামায়ণ সোসাইটিতে কিন্তু নারীরা প্রায় অস্তিত্বহীন। প্রায় পুরুষের সম্পদ। অন্যদিকে মহাভরতে নারীদের স্বকিয়তা অনেক

হাসিব এর ছবি
  • বনচতুরা বেশ্যা শব্দটা কী এভাবেই লেখা হয়েছে? প্রশ্নটা করলাম এ কারণে যে বৈদিক যুগে বেশ্যা আর গণিকার পার্থক্য ছিল। রাজপুত্রদের জন্য গণিকা থাকার কথা। বেশ্যা আরেক্টু নিচু শ্রেণী।
  • লক্ষণ লোকটা একটু ভাদাইম্যা ছিল এইটা পরিষ্কার।
  • টেকাটুকার (মানে মুদ্রা, সেটা দিয়ে কেনাবেচা ইত্যাদি) আলাপ রামায়ণে কতটুকু আছে?
মাহবুব লীলেন এর ছবি

'বনচতুরা বেশ্যা' একেবারে এইভাবেই রাজশেখর বসু লিখছেন। এটা গণিকা না। রামের লগে সৈনিকরা যাবে সম্ভবত তাগো লাইগা এই দলের কথা রাজা বলছেন

রামায়ণের যুগটা কিন্তু বৈদিক না। বহু পরের লেখা। যীশুর জন্মেরও পরের (এইখানে কথা বাড়াব না এই বিষয়ে। আলাদা পর্বে আসবে বিষয়টা)
তবে একটা বিষয় সত্য; মহাভারতের সোসাইটি থেকে বহু প্রজন্ম পরের সোসাইটি হইল রামায়ণ সোসাইটি

০২
লক্ষ্মণ নিয়া চিন্তায় আছি। একবার মনে হয় বেডা বিয়াই করে নাই। আবার মনে হয় সে বিবাহিত চিরকুমার। আবার মনে হয় আদৌ এই নামে কোনো চরিত্রই আছিল না

০৩
মুদ্রার উল্লেখ বেশি নাই। কিন্তু বিভিন্ন রকমের বণিকদের উল্লেখ আছে। তারা সওদা ফেরি করত বিভিন্ন জায়গায়। তাতে বোঝা যায় কেনাবেচার লাইগা মুদ্রা ব্যবস্থা ছিল। কারণ সেই কেনাবেচায় ঠিক দ্রব্য বিনিময়ের হিসাব পাই নাই আমি...

ঘুষ দেবার সিস্টেমও কিন্তু ছিল। হনুমান লঙ্কায় গিয়া ঘুষ দিয়া চর ঠিক করতে গিয়া দেখে এরা এত পয়সা্ওয়ালা যে এদেরে ঘুষ দিয়ে দালাল বানানো সম্ভব না

অতিথি লেখক এর ছবি

তবে একটা বিষয় সত্য; মহাভারতের সোসাইটি থেকে বহু প্রজন্ম পরের সোসাইটি হইল রামায়ণ সোসাইটি

এই আলোচনাটা আপাতত পেন্ডিং থাকুক। মূল রামায়ণ শেষ হলে যখন টেকনিক্যাল বিষয়গুলো নিয়ে লিখবেন তখন আলোচনাটা করবো। আপাতত এইটুকু বলে রাখি, এই ব্যাপারে আমি আপনার সাথে দ্বিমত পোষণ করি।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

নোট কইরা রাখলাম। নিজেও আরেকটু খুইজা দেখব আমার বর্তমান হিসাবটা ঠিকাছে কি না।

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রমিত বাংলা থেকে আলাদা হতে গিয়ে বাংলার আরও একটি প্রমিত রূপ গড়ে উঠছে দেখছি! এই বাংলা বর্তমান ঢাকার কথ্য ভাষাকে কতখানি ধারণ করে জানিনা (অনেক অনেক বছর ঢাকায় যাইনি)। আমি যখন ঢাকায় ছিলাম তখন ঢাকার একেক অঞ্চলে একেক ধরনের (স্টাইল অর্থে) কথ্য ভাষা প্রচলিত ছিল। অবশ্য ঢাকাকে স্ট্যান্ডার্ড ধরাও ঠিক নয়। যাই হোক, লীলেনের রামায়ণ আমার ভালো লাগছে মূলত চেনা কাহিনীকে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে উপস্থাপন করার কারণেই।

-----মোখলেস হোসেন

মাহবুব লীলেন এর ছবি

তোমরা হচ্ছ গুরু মানুষ রে ভাই। এই রকম একটা ভাষা নিয়ে আমি মহাভারতটা করেছি। (জানি না তোমার দেখার সুযোগ হয়েছে কি না। অভাজনের মহাভারত নামে বইটা বেরিয়েছে ২০১৫তে)

মহাভারতের ভূমিকায় ভাষা বিষয়ে বেশ বড়ো একটা চ্যাপ্টার যোগ করেছি। কেন এবং কীভাবে ভাষাটা নিচ্ছি আমি।

মহাভারতটা লিখেছি অলৌকিত্ব বাদ দিয়ে; লৌকিক ব্যাখ্যায়। রামায়ণও একই স্টাইলে শেষ করার ইচ্ছা। যদিও রামায়ণের ঘটনার নৃতত্ত্ব প্রায় অনুপস্থিত। আর গোঁজামিল অনেক বেশি মহাভারত থেকে। মহাভারত যেখানে সাংস্কৃতিক অনেক উপাদন ধারণ করে; রাময়ণ সেখানে ধর্মে আটকা পড়ে থেমে যায়। এর কারণ বোধহয় মহাভারত ব্রাহ্মণ বর্জিত আর রামায়ণ ব্রাহ্মণ শাসিত একটা উপাখ্যান। দেখা যাক কত দূর যেতে পারি

অতিথি লেখক এর ছবি

ভুলটা আমারই লীলেন। সমালোচনা হিসেবে কথাগুলো বলিনি, কিন্তু পড়ে দেখলাম আসলে অমনই শোনাচ্ছে। পড়া এবং লেখা থেকে দূরে ছিলাম অনেক বছর। গত ষোল বছরে লেখার ধরন যে বদলেছে এটা জানতে পারিনি। পড়তে গিয়ে তাই এক আধটু হোঁচট খাচ্ছি। রাজশেখর বসু যখন লিখেছিলেন তখনো মানুষ ধাক্কা খেয়েছিল, এটাই স্বাভাবিক।

তোমার গল্প ভালো লেগেছে, প্রধান কারণ পুরনো কাহিনী নতুন রূপে জানা, ক্ষেত্রবিশেষে একেবারেই নতুন গল্প খুঁজে পাওয়া। কিন্তু জানবার জন্য পড়তে তো হচ্ছে লীলেন। তুমি চমৎকার লিখছ বলেইনা পড়ছি। বয়েস হয়ে গিয়েছে, হাতে সময় কম, লেখা খারাপ হলে পড়তে চাইনা। এর আগে একবার বলেছি, তোমার লেখা সুপাঠ্য, কিন্তু সুপাচ্য নয়। সুপাচ্য নয় আমার কাছে, অন্যদের কথা বলার আমি কে? এর দায় কিন্তু আমারই। এমনিতেই বহুকাল পড়িনা, তার উপর লেখার নতুন স্টাইল।

অভাজনের মহাভারত পড়া হয়নি। মাযহার ভাইয়ের কাছ থেকে তক্ষশিলা নামে একটা অনলাইন বুক হাউসের লিংক পেয়েছি। তোমার বইটা ওদের কাছে থাকলে কিনে পড়বো। দারুণ পরিশ্রমের একটা কাজ করছ তুমি, বুঝতে পারছি নতুন পর্ব আসতে সময় লাগবে। বেশি দেরি নাকরলেই খুশি হব। এর মধ্যে তোমার আরও কিছু লেখা পড়ে ফেলতে পারবো আশা রাখছি।

আরেকটা কথা, রাত সাড়ে তিনটায় তোমার খাইয়া দাইয়া আর কোন কাম নাই নাকি? ঘুমাও।

----মোখলেস হোসেন।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

তোমার ভুল ধরলাম কই? এরকম লেখা সমালোচনা ছাড়া সম্ভব না। মহাভারতটা শেষ করেছি অসংখ্যা মানুষের সমালোচনায় আর অংশগ্রহণে। কয়েক বছর ধরে

০২
ভাষা নিয়ে আমি যে একশোভাগ নিশ্চিত তা কিন্তু না। আমার পয়েন্টটা হলো যে তথাকথিত প্রমিত ভাষাটা আমি বহু বছর খাটনি দিয়ে শিখেছি (আক্ষরিক অর্থেই এক গ্রামীণ সিলেটি হিসেবে আমাকে খাটতে হয়েছে ওটা শিখতে। পরে এক সময় দেখলাম ওটা বিটিভি ছাড়া কেউ ব্যবহার করে না। করে এক ভিন্ন ভাষা। মিক্সড ভাষা। আমি সেটা ধরার চেষ্টায় আছি...

০৩
অভাজনের মহাভারতটা কিছুদিনের মধ্যে ই-বুক আকারে আসবে। আশা করি
০৪
ঘুমের স্টক শেষ। এখন খালি ঝিমাই; ঘুমাই না

Emran  এর ছবি

মহাভারতের তুলনায় রামায়ণ নীরস। মহাভারতের ঘটনা জটিলতর, এবং চরিত্রগুলির মধ্যে গ্রে এরিয়া অনেক বেশী। রাবণের ব্যাপারে আপনার ইন্টারপ্রিটেশন কি হবে জানি না; কিন্তু এখন পর্যন্ত যে চরিত্রগুলিকে দেখেছি, সেগুলিকে মোটা সাদা-কালো দাগে আঁকা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

একেবারে একমত। মহাভারতের তুলনায় রামায়ণ পুরা ম্যাটম্যাটা কাহিনি। বৈচিত্র নাই বললেই চলে

০২
রাবণ নিয়া সঙ্কটে আছি। পুরাণের রাবণ আর রামায়ণের রাবণ কিন্তু এক না। রামায়ণের রাবণ এক্কেবারে ম্যাটম‌্যাটা

০২
রামায়ণ পুরাটাই মূলত লেখা হয়েছে একটা চরিত্রকে তৈরি করতে। রাম। কিন্তু অদ্ভুতভাবে আশপাশের চরিত্রগুলারে ছোট করে ফেলায় রামের চরিত্রটা অন্তত রামায়ণে দাঁড়ায়নি। মানে 'রঘুপতি রাজা রাম' নামে যে ইমেজটা আছে সেইটা রামায়ণে নাই...

০৩
আমার হিসাব মতে রাবণ আর রাম দুই সময়ের মানুষ। রাবণকে রামায়ণে আনা হয়েছে রামের চরিত্র তৈরি করতে। এখানে রাবণ খণ্ডিত

দেখি কদ্দুর যেতে পারি। বিবিধ রকম নোটগুলারে পর্বে পর্বে ভাগ করে খসড়া করাটাই মূল চ্যালেঞ্জ

ঈয়াসীন এর ছবি

মেঘনাদ বধ আর রাম রাজা থাকা অবস্থায় শম্বুক হত্যা এই দুইটা পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম। এই দুই পর্বে বহু অনাচার উঠে এসেছে।

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

'মেঘনাধ বধ' আর রামায়ণ কিন্তু দুই জিনিস...

০২
আশা করি ধীরে ধীরে আসবে সব

ঈয়াসীন এর ছবি

মেঘনাদ হত্যার উল্লেখ রামায়ণে নেই? জানা ছিল না। 'মেঘনাদ বধ' বলতে কাব্য বুঝাই নাই। মেঘনাদ হত্যা বুঝাতে চাইছিলাম।

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

মেঘনাদ হত্যা আছে তো। আপনার মেধনাদ বধ শুইনা আমি মধুকবির মেঘদানে চইলা গেছিলাম

দেশীছেলে  এর ছবি

চলুক চালায়া যান। রাবনের অতীত ইতিহাসের (মাতৃদোষে রাক্ষস, বরপ্রাপ্তি ইত্যাদি ইত্যাদি) ব্যাপারে আগ্রহী

মাহবুব লীলেন এর ছবি

হ। রাবণায়ন হইব

এক লহমা এর ছবি

চলুক

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আইচ্চা

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

মাহবুব লীলেন এর ছবি

সুমন চৌধুরী এর ছবি

ভাল্লাগতেছে ...

মাহবুব লীলেন এর ছবি

ধইন্যবাদ

শামীম রুনা এর ছবি

অভাজনের রামায়ণ।

_________________________________________________________
খাতার দিকে তাকিয়ে দেখি,এক পৃথিবী লিখবো বলে-একটা পাতাও শেষ করিনি। ( জয় গোস্মামী)

মাহবুব লীলেন এর ছবি

হ। কিন্তু রামায়ণের মূল অভাজনদের হিসাব বার করতেই তো হিমশিম অবস্থা

মেঘলা মানুষ এর ছবি

কথায় কথায় 'সীতারে দিয়া দিব' টাইপের ডায়লগ দেয়াটা মোটেও ঠিক না। আবার, বেচারী লক্ষণের বউ টেরও পাইলো না জামাই বনবাসে রওনা দিছে। ভাগ্য ভালো যে, এদের ১টা কইরা বউ ছিল; ৩৫০ দু'গুণে ৭০০ বউ থাকলে ঐ বেচারীদের কপালে খারাপই আছিল।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

সীতারে দিয়া দিব; সীতারে ছাইড়া দিব; এইটা কিন্তু আমার সংযোজন না। রামেরই কথা। শেষকালে যে সীতা বিসর্জন সেইটা কিন্তু কোনোভাবেই হঠাৎ ঘটে নাই; এইটা আগাগোড়াই রামের মাথায় ছিল; এবং বনবাসে যাবার আগে অন্তত দুইবার সে সীতারে দিয়া দিব কথটা নিজের মুখে উচ্চারণ করছে রামায়ণে

০২
লক্ষ্মণ আদৌ বিবাহিত কি না সেইটা নিয়া আমার সন্দেহ আছে। বনবাসের সময় একবার রাম পরিষ্কার কইরা বলে (সুপর্ণখারে) যে রাম অবিবাহিত

০৩
সাড়ে তিনশো বৌয়ের জামাই বনবাসে যায় না; বাড়িতে বইসা গেরস্থগিরি করে

রাজীব এর ছবি

আপনের এই সিরিজটা আর আগের মহাভারতের সিরিজটা বেশ আগ্রহ নিয়া পড়ছি। এইটা কি আসলে রামায়ণের আঞ্চলিক অনুবাদ? তবে আপনের এই লেখা ঠিক কোন ক্যাটাগেরিতে পড়ে বুঝতে পারিনি। আমার কাছে মনে হয়েছে, আপনি অনুবাদ করতে গিয়া ব্যক্তিগত চিন্তা বেশী প্রকাশ করে ফেলতেছেন,অনেক ক্ষেত্রে মূল লিপি থেকে অনেক বাইরে। যেগুলার সপক্ষে কোন রেফারেন্স আপনি দিতে পারবেন বলে মনে হয় না। আপনেরা নমস্য মানুষ, আপনাদের কোন জ্ঞান দেবার সাহস আমার নাই। তবে অনুবাদ করার সময় মনে রাখিয়েন, এই বইগুলা কয়েক হাজার বছরের পুরানো। আর অনেক হিন্দু ধর্মালম্বী এই বই গুলা কে এখনও পবিত্র বই মনে করে। অনুবাদের নামে এই মানুষ গুলার অনুভূতিকে বিনা কারনে খোঁচানোর কোন আবশ্যিকতা আছে কি না, দয়া করে একটু চিন্তা করে দেখবেন। আর যদি খোঁচাইতেই হয় সেটা নিজের ঘর থেকেই শুরু করেন দেখি। সেক্ষেত্রে সচালায়তন মনে হয় না, আপনার সেই লেখা বাংলাদেশের বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে প্রকাশ করবে! আমার কথাতে যদি আপনি মনে কষ্ট পেয়ে থাকেন, তবে নিজ গুনে ক্ষমা করে দিয়েন।

ঈয়াসীন এর ছবি

পুরাণে কোনো লেখকের ব্যক্তিগত চিন্তা প্রকাশ নতুন কিছু নয়। কচ দেবযানীর মূল কাহিনী থেকে রবীন্দ্রনাথ অনেকটা সরে এসে লিখেছিলেন 'বিদায়-অভিশাপ'; চিত্রাঙ্গদার ক্ষেত্রেও অনেক ওলট পালট আছে। এই রচনায় লেখককে ১০০ তে ১০০ দিতে হবে তা নয়; কোথাও কোথাও ভাষার ব্যবহার আমার মত সামান্য পাঠকের চোখেও অপ্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে, মনে হতেই পারে, সে অধিকার পাঠকের আছে; কিন্তু ধর্মীয় অনুভুতিতে খোঁচাখুঁচির বিষয়টি কিন্তু কোথাও চোখে পড়েনি।
কোন লেখক কোন লেখায় পৌরাণিক কাহিনীতে নিজস্ব চিন্তা প্রকাশ করেছেন, তা চাইলে আলাপ করতে পারি। যদি আপনি আগ্রহী হন। এতে করে ভুল বোঝাবুঝির অবসান হতে পারে।

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

হাসিব এর ছবি

অনেক ক্ষেত্রে মূল লিপি থেকে অনেক বাইরে

আপনার বক্তব্যে এই লাইনটাই গুরুত্বের দাবি রাখে। আপনি এরকম কোন অংশ রেফার করতে পারবেন যেখানে মূল কাহিনী থেকে বিচ্যুতি হয়েছে?

অনুবাদের নামে এই মানুষ গুলার অনুভূতিকে বিনা কারনে খোঁচানোর কোন আবশ্যিকতা আছে কি না, দয়া করে একটু চিন্তা করে দেখবেন। আর যদি খোঁচাইতেই হয় সেটা নিজের ঘর থেকেই শুরু করেন দেখি। সেক্ষেত্রে সচালায়তন মনে হয় না, আপনার সেই লেখা বাংলাদেশের বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে প্রকাশ করবে!

হাউ মাউ খাউ, কিসের যেন গন্ধ পাউ!

মাহবুব লীলেন এর ছবি

রাজীব ভাইজান

০১
আমার লেখা পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতা

০২
আমার লেখাটা অনুবাদ না। ঘটনা পরম্পরার ক্ষেত্রে অনুসরণ করছি রাজশেখর বসুর বাংলা রামায়ণ (বাল্মিকী রামায়ণের অনুবাদ)। আর লেখার চেষ্টা করছি অলৌকিকতামুক্ত একটা রামায়ণ আখ্যান (অভাজনের মহাভারতের মতো)

এতে সোর্স হিসেবে নিচ্ছি প্রচলিত রামায়ণ কাহিনি (বাংলা এবং ইংলিশ) + নৃতাত্ত্বিক স্টাডি আর বিশ্লেষণ+ অন্যান পুরাণের সহায়তা আর আউটপুটটা হচ্ছে সব কিছু মিলিয়ে আমার পর্যবেক্ষণ

বইটা শেষ করে আমার পর্যবেক্ষণগুলা বইয়ের শুরুতে জুড়ে দেব একেবারে নিরপেক্ষভাবে। যেখানে আমি কোনো সূত্র জোগাড় করতে পারিনি এবং নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গী যোগ করেছি তাও উল্লেখ করব (অভাজনের মহাভারতেও তাই করেছি ভূমিকায়)। আপাতত গল্পের কাঠামোটা তৈরি করার চেষ্টা করছি

০৩
প্রসঙ্গ: আসল রামায়ণ: আমার জানা মতে আসল রামায়ণ বলতে কিছু বোঝায় না। বহুবিধ রামায়ণ কাহিনি আছে। তার মধ্যে একটা বাল্মিকী রামায়ণ; কিন্তু সেই বাল্মিকী রামায়ণের ৭ কাণ্ড একজনের লেখা না। আদি বাল্মিকী রামায়ণ ৫ কাণ্ডের। প্রথম আর শেষ কাণ্ডটা (মূলত ধার্মিক দুইটা অধ্যায়) পরে যোগ করা হয়েছে

০৪
লেখাটা এখানে খণ্ডে খণ্ডে প্রকাশ করার মূল উদ্দেশ্য মতামত আর সহযোগিতা নেয়া। কোথাও যদি মনে হয় রামায়ণ গাইতে গিয়ে আমি মহাভারত গাওয়া শুরু করে দিয়েছি অবশ্যই ধরিয়ে দেবেন

০৫
ব্যক্তিগত চিন্তা প্রকাশের ইচ্চা না থাকলে কিন্তু আমি হাজার মানুষের লেখা রামায়ণ আবার লিখতে যেতাম না। এর মূল চিন্তাটাই হলো অলৌকিতা বাদ দিয়ে রামায়ণ কাহিনিটা বলা

০৬
পবিত্র পুস্তকগুলাতো আমি বাতিল করে দিচ্ছি না। সেইগুলা জায়গাতেই আছে। রামায়ণের বিদ্যমান ভার্সনগুলাকে স্বীকার করে যদি কাহিনিটাকে কেউ পবিত্র মনে করতে পারে তবে আমারটার বিন্দুমাত্র ক্ষমতাও নাই তাকে অপবিত্র বানায়

০৭
একটা বিষয় আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি; তা হলো শুধু রামায়ণ পড়ে অন্তত রামভক্ত হওয়া সম্ভব না (বরং হনুমান ভক্ত হবার চান্স বেশি) রামভক্ত হওয়ার তরিকা আর সূত্র আলাদা (ও্ইটার সাথে রামায়ণের সম্পর্ক নাই; ওটার জন্য রামায়ণ পড়াও লাগে না। এবং ওইখানে আমার কোনো কাজও নাই)

০৮
সমস্যা হইল শইলে দগদগে ঘা থাকলে জ্বলার লাইগা কারো খোঁচার দরকার পড়ে না; বাতাস দিলেও ঘায়ের মইদ্যে শিরশির করে আর জ্বলে...

তাই জিগাই অত সুন্দর যুক্তি দিয়া শুরু কইরা কইলেন খোঁচা মারছি; কোনখানে? একটু দেখাবেন?

০৯
হিন্দু ধর্ম নিয়া ঠিক না; তবে কৃষ্ণ আর রাম নিয়া আলাদা রচনা লিখব রাময়ণ শেষ করে। আশা করি সেইখানে আপনার ইনপুট পাব (বিতর্কসহ)

১০

আর যদি খোঁচাইতেই হয় সেটা নিজের ঘর থেকেই শুরু করেন দেখি।

!? !?

১১
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।