যথেষ্ট পরিমাণ পোলা-শালা-ভাই-ভাতিজা-শ্বশুর-সম্বন্ধি না থাকলে রাজাগো পক্ষে বড়ো রাজা হওয়া তো দূরের কথা নিজের রাজ্যে নেংটি সামলাইয়া টিকা থাকাই কঠিন। রাজা দশরথ এক বাপের এক পোলা। মা ইন্দুমতি যেমন না দিছেন আর কোনো সন্তানের জন্ম তেমনি বাপ অজ না করছেন আর কোনো বিবাহ। রাজত্বের লাইগা দরকারি আত্মীয়-স্বজনের অভাব পুরনের লাইগা তাই অজ-ইন্দুমতীর পোলা দশরথ সাড়ে তিনশোখান বিবাহ কইরা বহুত শালা-সম্বন্ধি-শ্বশুর সংগ্রহ করলেও তার সমস্যা পুরাপুরি মিটে নাই। এক শ্বশুর যেমন আরেক শ্বশুরের মাতব্বরি সহ্য করতে পারে না তেমনি শালা-সম্বন্ধিরাও সহ্য করতে পারে না অন্যপক্ষের শালা-সম্বন্ধির কোনো কথা...
দশরথের অযোধ্যা রাজ্যখান পয়লা রানি কৌশল্যার বাপের রাজ্য কোশল দিয়া ঘেরা। এতে অবশ্য দশরথ নিজের নিরাপত্তার লাইগা পয়লা শ্বশুরের সহায়তা পাওয়ার পাশাপাশি অন্য শ্বশুরগো ঝামেলা থাইকাও কিছুটা রেহাই পায়। কারণ কোশল রাজার কারণে দূরবর্তী শ্বশুররা দশরথরে ঘাঁটাইতে খুব একটা সাহস করে না...
শ্বশুরে-শ্বশুরে কিংবা শালাতে-শালাতে গেঞ্জাম এড়াইবার লাইগা অবশ্য দশরথ নিজেই একখান বাড়তি বুদ্ধি খাটাইছে; অযোধ্যার কোনো রাজকীয় পদে কোনো পক্ষের শ্বশুর-শালারেই সে কোনো পদ দেয় নাই। রাজ্যের সকল সচিব-আমাত্য-সেনাপতির পদে নিয়োগ দিছে অনাত্মীয় পেশাদার লোক। এতে কাউরে খুশি করতে গিয়া অন্য কাউরে নাখোশ করার ঝামেলা যেমন গেছে; তেমনি অনাত্মীয় পাত্র-আমাত্যরেও ভালো চাপে রাখা গেছে। কারণ যে রাজার সাড়ে তিনশো শ্বশুরপক্ষ আছে তার লগে বেইমানি করতে অনাত্মীয় সেনাপতি-মন্ত্রীরা দশবার ভাবে...
কিন্তু দশরথ সাড়ে তিনশোখান বিবাহ করছে কি খালি শালা-শ্বশুরের প্রদর্শনী দিবার লাইগা? মোটেও তা না। এক বাপের এক পুতের অতখান বিবাহের মূল উদ্দেশ্য হইল পোলা জন্মাইয়া নিজের ঘরেই একখান সেনাবাহিনি গইড়া তোলার পাশাপাশি আশপাশের রাজ্যগুলায় পোলা-মাইয়া বিবাহ দিয়া বন্ধুত্ব কিংবা নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা...
তয় একলা এক মানুষের পক্ষে অতগুলা বৌর ঘরে পোলাপান জন্ম দিতে খাটনিও লাগে; সময়ও লাগে। তার থাইকা পুত্রেষ্টী যজ্ঞ দিয়া বৌদের একলগে গর্ভবতী কইরা একলগে একগাদা পোলাপানের বাপ হইয়া যাওয়া শাস্ত্রসম্মত সহজ উপায়। পুত্রেষ্টী যজ্ঞে রাজার বৌরা আমন্ত্রিত বামুন দ্বারা গর্ভবতী হইয়া রাজার ঘরে পোলাপানের জন্ম দেন; যারা শাস্ত্রমতে পরে রাজার পোলাপান হিসাবেই গণ্য হয়...
তো রাজা দশরথ সেই ব্যবস্থাই ভাবে। পুত্রেষ্টী যজ্ঞ...
পিতামহ রঘুর নামে দশরথের বংশটা রঘুবংশ নামে পরিচিত। রঘুবংশে বশিষ্ঠ ঘরানার ব্রাহ্মণেরাই হন কূলগুরু। ইনাদের আলাদা কোনো নাম নিজেরাও ব্যবহার করেন না। অন্যরাও করে না। গোত্র প্রতিষ্ঠাতা মুনি বশিষ্ঠের নামেই ইনাদের সকলে জানে-মানে ও ডাকে। পাশাপাশি কশ্যপ আর গৌতম গোত্রের বামুনেরাও উপদেষ্টায় আছেন। আর আছেন বস্তুবাদী কিংবা নাস্তিক বামুন জাবালি...
এইসব যজ্ঞটজ্ঞে কূলগুরুর কথাই শেষ কথা। বশিষ্ঠ দশরথরে অশ্বমেধ যজ্ঞের লগে পুত্রেষ্টীর বুদ্ধি-পরামর্শ দিবার পাশাপাশি আরেকখান বুদ্ধি দিলেন। সেইটা হইল দেশের খরা-টরা একটু কমানো যায় কি না সেই চেষ্টা করা। অযোধ্যা দেশখান একটু আধা মরুভূমি টাইপের দেশ। তো কথিত আছে যে বিভাণ্ডক মুনির পুত্র ঋষি ঋষ্যশৃঙ্গর লগে বৃষ্টি বাদলার একটা সম্পর্ক আছে। যদি ঋষ্যশৃঙ্গরে পুত্রেষ্টীর পুরোহিত করা যায় তবে পোলাপান পাইবার সাথে সাথে অযোধ্যার অনাবৃষ্টি সমস্যাটা কমলেও কইমা যাইতে পারে। ঋষ্যশৃঙ্গ এখন অঙ্গরাজ্যের রাজা লোমাপদের মাইয়ারে বিবাহ কইরা শ্বশুর বাড়িতেই থাকেন। অঙ্গরাজ্যেও আগে খরার খুব প্রকোপ আছিল কিন্তু ঋষ্যশৃঙ্গ আসার পরে এখন নাকি সেইটা প্রচুর বৃষ্টি আর বাদলার দেশ...
দশরথ নিজেই অঙ্গরাজ্যে গিয়া রাজা লোমাপদরে কন- আপনের জামাইরে মাইয়ার লগে কয়েকদিনের লাইগা ধার নিতে চাই...
ঋষ্যশৃঙ্গ বৌ নিয়া অযোধ্যায় আইসা উপস্থিত হন। তিনার আগমনে রাস্তাঘাট সাজানোর লগে লগে পানি মাইরা ধুলাবালিও বসাইয়া দেওয়া হয়। বৃষ্টি হইল না কিন্তু ঋষ্যশৃঙ্গ থাকতে থাকলেন অযোধ্যায়। অন্যদিকে চলতে থাকল যজ্ঞের আয়োজন। মাটি কামলা আইল; ঘর মিস্ত্রি আইল। আইল স্থপতি। তৈরি হইতে লাগল অতিথি আর ব্রাহ্মণগো লাইগা ইটের ঘর; ঘোড়ার লাইগা ঘোড়াশাল। আয়োজনের সরঞ্জাম সমানে টানতে থাকল হাতি-ঘোড়া-উট-গাধা-গরু-মহিষ আর মানুষ। শিল্পীরা আইসা নিয়োজিত হইল সৌন্দর্য বর্ধনের কামে। ঘর রং করা- রাস্তা সাজানি; লগে লগে আইসা উপস্থিত হইল পয়সার বিনিময়ে লোকজনের গৌরবগাথা রচনা আর গাওয়ার লাইগা সূত্রধর কবি- ভাট বামুনের দল। আসলো নর্তক-নর্তকী; অভিনয় শিল্পী-গণক আর খুচরা বামুন-পণ্ডিতের দল...
পুরা রাজ্যে উৎসব। ধীরে ধীরে দূরান্ত থাইকা আসতে থাকলেন নিমন্ত্রিত ব্রাহ্মণগণ। নিজে নিজে আইসা জড়ো হইল রবাহুত মানুষ। রাজ্যের মন্ত্রী আর সচিবরা সতর্ক নজর রাখলেন লোকজনের সেবায়; খাদ্য-পানীয়-বাসস্থান- আরাম- বিনোদন। শূদ্র-বৈশ্যরাও বাদ গেলো না আতিথেয়তায়...
শেষ দিকে আসলেন রাজা রাজড়ার দল। সকলেই কিছু না কিছু উপহার নিয়া আসছেন রাজা দশরথের লাইগা...
দশরথের যজ্ঞের দীক্ষা নিবার বচ্ছর পুরা হইয়া গেছে। এক বচ্ছর আগে ছাইড়া দেওয়া যজ্ঞের ঘোড়ারে এইবার ফিরাইয়া আইনা থুওয়া হইল বাইন্ধা...
ঋষ্যশৃঙ্গর পৌরহিত্বে যজ্ঞ শুরু হইল ঋষিগো হাতে বলিদান দিয়া। চতুষ্পদি; গরু-ঘোড়া-ভেড়া-ছাগল। সরীসৃপ; সাপ-গুঁইসাপ-কচ্ছপ। পাখি; হাঁস মুরগি এইসব আর জলচর মানে বিবিধ প্রকার মাছও দেওয়া হইল বলি। বলিপর্বের সমাপ্তি হইল দশরথের প্রধান রানি কৌশল্যার খড়গের তিন কোপে যজ্ঞের সেই ঘোড়া বলিদান দিয়া...
যাউকগা। অশ্বমেধ শেষ হইলে ঋষ্যশৃঙ্গই নেতৃত্ব দিলেন পুত্রেষ্টীর আনুষ্ঠানিকতায়। যেহেতু পুত্রেষ্টীতে যোগদানকারী সকল ব্রাহ্মণই বিষ্ণুর ভক্ত তাই ঘোষণা দেওয়া হইল যে এই পুত্রেষ্টী থাইকা রাজা দশরথ যত পুত্র পাইবেন তারা সকলেই গণ্য হইবেন বিষ্ণু কিংবা নারায়ণের অবতার বইলা। তারপর নিয়মমতো সেই পুত্রেরা জগতে কী কী সম্ভাব্য কীর্তি করব তার কাল্পনিক ফিরিস্তি দিলেন পেশাদার কবি-সূত্রধর আর ভাট বামুনের দল। ব্রাহ্মণরা আগাম আশীর্বাদ জানাইলেন দশরথের অনাগত পুত্রগণরে। তারপর দক্ষিণা টক্ষিণা নিয়া তারা বিদায় হইলেন। অতিথিরাও ফিরা গেলেন যার যার দেশে। অন্য যারা আসছিলেন উৎসবে দুই চাইর পয়সা কামাইতে; উৎসব শেষ হওয়ায় তারাও পাততাড়ি গুটাইলেন...
ধীরে ধীরে গর্ভ বাড়তে থাকে রানিগো। অবশেষে চৈত্র মাসে পয়লা বড়ো রানি কৌশল্যা জন্ম দেন এক পোলা; তারপর কৈকেয়ীর গর্ভে এক পোলা আর তারপর সুমিত্রার গর্ভে জন্ম হয় যমজ পুত্রের। পয়লা পুত্রের নাম রাখা হইল রাম; দ্বিতীয় ভরত আর যমজ দুই পোলার নাম হইল লক্ষ্মণ-শত্রুঘ্ন। দশরথের বাকি রানিগো গর্ভে আরো পোলাপান হইল; কিন্তু যেহেতু উত্তরাধিকার হিসাবে রাজা-প্রধানমন্ত্রী আর সেনাপতির পদগুলা পয়লা তিন পোলাই পায় সেহেতু পয়লা তিনটা জন্ম ছাড়া বাকিগুলার হিসাব নিজেগো মায়েরা ছাড়া আর তেমন রাখল না কেউ...
দিনে দিনে দশরথের বুকের বল বাড়াইয়া পোলারা বড়ো হইতে থাকে। বড়ো হইতে হইতে দশরথের পোলাপান বড়ো দুই ভাইরে কেন্দ্র কইরা পরিষ্কার দুইটা দলেও ভাগ হইয়া যায়। একদলের নেতা রাম আরেক দলের নেতা ভরত। সুমিত্রা গর্ভজাত জমজের মইদ্যে লক্ষ্মণ হইল বড়ো ভাই রামের সমর্থক আর শত্রুঘ্ন হইল মেজো ভাই ভরতের সাপোর্টার...
পুত্রেষ্টী থাইকা পাওয়া পোলাপানের বয়স এখন ১৫ পার হইয়া গেছে। শিক্ষাদীক্ষার পাশাপাশি বিবাহ টিবাহ বিষয়েও কিছু আলাপ আলোচনা শুরু হইছে। এর মাঝে একদিন আইসা উপস্থিত ঋষি বিশ্বামিত্র...
রাজা দশরথের বাড়িতে খাইয়া দাইয়া বিশ্বামিত্র কন- আমি এক জায়গায় একটা যজ্ঞ করতে চাই। কিন্তু স্থানীয় জংলী লোকজনের নেতা মারীচ আর সুবাহু আমারে সেই জায়গা দিতে রাজি না। তো আমি আপনের বড়ো পোলা রামরে লগে নিয়া যাইতে চাই যাতে সে মারীচ আর সুবাহুরে মাইরা আমার যজ্ঞের জায়গাখান উদ্ধার কইরা দেয়...
দশরথ ডরাইলেন। তার পোলার বয়স এখনো ষোলো হয় নাই। এর মাঝে তারে বিশ্বামিত্র নিয়া যাইতে চান আদিবাসী মারীচ আর সুবাহুর লগে যুদ্ধ করতে। তিনি বিকল্প প্রস্তাব দেন- আপনে আমার সেনাদল নিয়া যান। দরকার লাগালে আমি নিজেও যামু। কিন্তু আমার নাদান পোলাটারে নিয়েন না। জংলীগো লগে যুদ্ধ করলে জানে বাইচা ফিরা আসতে পারব না আমার পুত...
কিন্তু বিশ্বামিত্র অনড়। তিনি দশরথরে মনে করাইয়া দেন যে তিনি আগে একবার বিশ্বামিত্ররে কথা দিছিলেন যে তার যেকোনো আব্দার তিনি রাখবেন। এইবার তবে আব্দার রাখতে গড়িমসি ক্যান?
দশরথ ভাইঙা পড়েন। বড়ো পোলারে ছাড়তে যেমন দুশ্চিন্তা তেমনি বিশ্বামিত্রের কথা না রাখাও দুশ্চিন্তার বিষয়। ইনি একটু ঘিরিঙ্গি কিসিমের মানুষ। আদিতে আছিলেন এক ক্ষত্রিয় রাজা। একবার মুনি বশিষ্ঠর আশ্রমে বেড়াইতে গিয়া আবিষ্কার করেন যে তিনি রাজাগিরি কইরা যত সম্পদের মালিক তার থিকা বহুগুণ সম্পদের মালিক বশিষ্ঠ বামুনগণ। তো বশিষ্ঠের আশ্রমে খানপিনা কইরা ফিরা আসার সময় তিনি বশিষ্ঠের সম্পদ লুট করারা ধান্দা করেন। কিন্তু যাগো সম্পদ আছে তাগো লাঠিও আছে। লুট করতে গিয়া বশিষ্ঠের শিষ্যগো হাতে বেঘোরে মাইর খাইয়া ফিরতে হয় বিশ্বামিত্রের। এতে দইমা না গিয়া তিনি কয়েকদিন পরে আবারো আক্রমণ করেন বশিষ্ঠের সম্পদে। কিন্তু ফলাফল একই। বশিষ্ঠের লগে যুদ্ধে একটা ছাড়া নিজের সব পোলাপান পর্যন্ত হারাইয়া ভাগেন তিনি। কিন্তু এইবার তার মনে হয় খামাখা রাজা হইয়া কামড়াকামড়ি কইরা সম্পদ সংগ্রহের থাইকা বশিষ্ঠগো মতো ব্রাহ্মণ হইয়া ভিক্ষা করলে বেশি সম্পদ জোগাড় করা সম্ভব। এই চিন্তায় তিনি রাজাগিরি ছাইড়া ব্রাহ্মণ হইবার চেষ্টায় পঠন-পাঠন চালাইতে থাকেন। ব্রাহ্মণের মতো বিদ্যাশিক্ষা অর্জন করলেও পয়লা দিকে তারে মানুষ বড়োজোর রাজর্ষি কইত। কিন্তু তারে বশিষ্ঠরা যেমন ব্র্রাহ্মণ হিসাবে স্বীকার করত না তেমনি কেউ ডাকতও না যজ্ঞের পুরুতগিরি করতে। এর মাঝে এক চণ্ডাল ত্রিশঙ্কুর শখ হইল যজ্ঞ করে। কিন্তু কোনো বশিষ্ঠই চণ্ডালের যজ্ঞে পুরুত হইতে রাজি না। সকল ব্রাহ্মণের কাছে প্রত্যাখ্যাত হইয়া ত্রিশঙ্কু অবশেষে আইসা বিশ্বামিত্ররে কয়- আপনে আমার যজ্ঞ করেন ঠাকুর...
বিশ্বামিত্ররে দিয়া চণ্ডলের পুরণ হয় যজ্ঞের শখ আর চণ্ডালরে দিয়া বিশ্বামিত্রের উত্তরণ ঘটে যাজক ব্রাহ্মণের মর্যাদায়...
এখন পর্যন্ত ছোটখাটো আরো কিছু যজ্ঞে পুরোতগিরি করলেও সর্বজনের কাছে বিখ্যাত ব্রাহ্মণের সম্মান পাইতে এখনো বহু পথ বাকি আছে তার। বামুনেরা বড়ো বইলা গণ্য হন মাত্র দুইভাবে। এক; যার শিষ্যগো মাঝে বড়ো বড়ো ঋত্বিক আছেন তিনি আর দুই; যিনি যত বড়ো রাজার পুরোহিত বা কূলগুরু তিনি। উজানের দেশে এই দুইটা ক্ষেত্রই মোটামুটি বশিষ্ঠ বামুনগো দখলে। তার পাশাপাশি আছে ভরদ্বাজী-কশ্যপ আর গৌতমীর মতো খানদানি বামুনের দল। ভার্গব বামুনেরা বিখ্যাত হইলেও তারা বড়োবেশি আত্মমগ্ন আর বদমেজাজি; পুরুতগিরি খুব একটা করেন না তারা। ভার্গবেরা মূলত আচার্য হিসাবে বিখ্যাত আর পাশাপাশি গ্রন্থ রচনা- যুদ্ধবিদ্যা আর চিকিৎসা বিদ্যার অনুশলীন তারা করেন...
বিশ্বামিত্র রাজাগিরি ছাইড়া দিছেন। সম্পদেও এখন আর লোভ তার নাই। সবকিছু ছাইড়া তিনি এখন বড়োবোন সত্যবতীর বাড়িতে থাকেন-খান- ছোট ছোট যজ্ঞ করেন আর এদিক সেদিক ঘুইরা বেড়ান নিজেরে আরো বড়ো ব্রাহ্মণ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার আশায়। বিশেষত বশিষ্ঠ গোত্রের ব্রাহ্মণ থাইকা উপরে। কিন্তু বশিষ্ঠগো দাপটের সামনে আধা ক্ষত্রিয় আধা ব্রাহ্মণ বিশ্বামিত্ররে যেমন কূলগুরু হিসাবে নিয়োগ করে না কোনো প্রতিষ্ঠিত রাজা; তেমনি ভার্গবগো বিখ্যাত ইসকুলের সামনে খুব একটা মেধাবি আর ধনী শিষ্যও জোটে না তার...
বিশ্বামিত্র তাই কৌশলে বাইছা নিছেন ভবিষ্যৎ রাজা। ভবিষ্যৎ রাজার উপরে প্রভাব খাটাইতে পারলে ভবিষ্যতে তার নিজের বিখ্যাত হইবার পথে খাড়াইতে পারব না কেউ। সেই চিন্তার অংশ হিসাবেই তিনি দশরথের কাছ থিকা তার কিশোর উত্তরাধিকারটারে সাথে নিতে চান...
দশরথের দুশ্চিন্তায় আইসা ভরসা দেন কূলগুরু বশিষ্ঠ- বিশ্বামিত্ররে ক্ষেপাইলে সমস্যা আছে মহারাজ। ইনি ক্ষত্রিয় অবস্থায় ব্রাহ্মণরে আক্রমণ করতে দ্বিধা করেন নাই। এখন ব্রাহ্মণ অবস্থায় যে ক্ষত্রিয়রে আক্রমণ কইরা বসবেন না তার কী নিশ্চয়তা? তিনারে কথা যখন দিছেন তখন কথা রাখাই মনে হয় ভালো। যুদ্ধ আর অস্ত্র চালনার কৌশল শিখার লাইগা ইনি এখনো বহুত বড়ো গুরু। রামরে যাইতে দেন। ইনি যখন সাথে আছেন; চিন্তার বিশেষ কারণ দেখি না আমি। ইনার সাথে গেলে বহুত কিছু শিখতেও পারব রাম...
দূর ভবিষ্যতরে মাথায় রাইখা অযোধ্যা ছাড়েন বিশ্বামিত্র। আর কিছুই না বুইঝা বিশ্বামিত্ররে দেয়া বাপের কথা রাখতে পয়লাবারের মতো ঘর ছাইড়া পথে পা বাড়ায় দশরথপুত্র রাম...
২০১৬.০৩.০৪ শুক্রবার
নোট: এই গল্পের ঘটনা-পরম্পরার লাইগা রাজশেখর বসুর রামায়ণ অনুসরণ করা হইছে
মন্তব্য
পুত্রেষ্টি যজ্ঞ তো দেখা যায় ছিল একটা orgy! বামুনগুলা নিজেদের জন্য ভালই সিস্টেম কইরা রাখছিল!
ওইটা বামুনরা নিজেগো লাইগা বানায় নাই। বরং ক্ষত্রিয়গো চাহিদা পুরণের লাইগা বানাইছে। যে কোনো ক্ষত্রিয়ের প্রধান সাধনা আছিল সন্তান; পোলা সন্তান। পোলাপান ছাড়া তারা না পারত চাষাবাদ করতে; না পারত রাজাগিরি করতে। সেই চাহিদা থাইকাই যে কোনো উপায়ে জন্মরে আগাগোড়া পুরাণে স্বাগত জানানো হইছে
০২
রাজাগো চাহিদায় ব্রাহ্মণরা আনুষ্ঠানিকতা যোগ করছে আর কি
আপনি যে ভাষায় লিখেন তাকে সাধুভাষায় বলে ধুর্বাল।
শিখলাম
সাড়ে তিনশ শ্বশুরপক্ষ
..................................................................
#Banshibir.
কি ব্যাপার? আপনার মন খারাপের কি কারন?
হ। সৌদির বাদশা আর আমাগো দ্রোহী ছাড়া তিনারে ডাউন দিতে পারব না কেউ
নিকটারে সাইদাবাদী স্টাইলে বাস্তবায়ন করেন - চিন্তা নাই, দেখবেন আপনেও পারবেন! ৩৬৫ দিনের জন্য ৩৬৫-টাতো অন্তত পারবেনই!
****************************************
চমৎকার! চলুক।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
ধন্যবাদ
"বিশ্বামিত্ররে দিয়া চণ্ডালের পূরণ হয় যজ্ঞের শখ আর চণ্ডালরে দিয়া বিশ্বামিত্রের উত্তরণ ঘটে ব্রাহ্মণের মর্যাদায়........."
এই ডটের মিছিল আর থামেনাই।
--মোখলেস হোসেন
বিশ্বামিত্রের নিজস্বর সংগ্রাম কিন্তু রামায়ণে একটা বিশাল ফ্যাক্ট। আর বিশ্বামিত্র সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের একটা দারুণ বিশ্লেষণ আছে। তা হলো- বিশ্বামিত্রই পশুজীবি সমাজকে কৃষি সমাজের সাথে কানেক্ট করে দিয়েছিলেন..
তারপর?
এই পুত্রেষ্টি যজ্ঞের আরও একটু বিশদ বর্ণনা দিলে ভাল হয়। মানে- ঋষ্যশৃঙ্গর নেতৃত্ব ঠিক কতজন বামুন কতদিন ধইরা কতজন বৌএর গর্ভে কতটি সন্তান উৎপাদন করছিলো। ঋষ্যশৃঙ্গ নিজে কোন বৌএর দায়িত্বে আছিলেন? কৌশল্যার? ঋষ্যশৃঙ্গ এবং কৌশল্যার মধ্যে কার গায়ের রঙ্গ রামের মত কাল ছিল?
পুত্রেষ্টীর বর্ণনা আপাতত আর বেশি দিমু না। বর্ণনার লাইগা অশ্বমেধ যজ্ঞও আজকের যুগে খুব একটা ভালো কিছু না...
০২
এইরকম যজ্ঞের যত বর্ণনা পাওয়া যায় তার বেশিরভাগই ভক্তিসহযোগে রচিত কাব্যের বর্ণনা। এগুলোতে ফ্যাক্ট কম
০৩
ঋষ্যশৃঙ্গ কার লগে আছিলেন সেইটা সরাসরি পাই নাই। তবে প্রধান পুরোহিত প্রধান মহিষীর সাথে থাকারই সম্ভাবনা বেশি
০৪
গায়ের রং ঘাটিঁ নাই। ঘাঁটব
১। পুত্রেষ্টি যজ্ঞের বামুন ঠাকুরেরা দেখি সেই যুগের হুজুর সাইদাবাদী!
২। টেস্টুব বেবি/সারোগেট মাদার এই ধারণা তাহলে রামায়ণসঞ্জাত?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
সাইদাবাদী হুজুর তো ডিমপড়া দিতেন জানতাম
ডিমডুম দিয়া মাত্র একটা দুইটা জন্মানো যায়। পালে পালে জন্মাইতে হইলে পায়েসের মতো লাখো দানার খাদ্যবস্তু লাগে
এহ্হে, এইটা কি কইলেন? জীবনে আর আসল পায়েস খাইতে পারুম না!
****************************************
ইয়ে মানে, মাঝি ভাই, আপনার 'পায়েসানুভূতি' এত ঠুনকো ক্যান?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
নারে ভাই, আমার পায়েসানুভূতি আর খায়েশানুভূতি - দু'টাই যথেষ্ট প্রবল। আমি শুধু এই দুইটার মধ্যে স্থানবদল করতে চাই না, এই আরকি!
****************************************
আরে না। বামুনরা দিনমজুর টাইপের মানুষ। পয়সার বিনিময়ে রাজার পক্ষে কামলা-খাইট্টা দিতেন মাত্র...
০২
টেস্টুব বেবি/সরোগেট মাদারের দাবিদার আবার মহাভারতের কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন। কুমড়া কাইট্টা লাউয়ের খোলের ভিতর ঘি দিয়া ভিজাইয়া রাইখা তিনি জন্মাইছিলেন গান্ধারীর শত পোলা আর এক মাইয়া
হুমম... একটা 'লা' বেশি হয়ে গেছে, খুঁজে নিন কোনটা।
০২।
হ, সবই কোনও না কোনও বিজ্ঞানময় কেতাবে আছে!
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
সাড়ে তিনশ বউরে সামলাইত ক্যামনে? পুত্রেষ্টি যজ্ঞ ভালা পাইসি।
ফাহমিদুল হান্নান রূপক
ক্যামনে আবার সামলাইত - আউটসোর্স কইরা দিত নিশ্চয়ই!
হ, ভালা তো পাইবেনই, রাজা দশরথের সময় অযোধ্যায় বামুন হইয়া জন্মাইলে কি যে ভালা হৈতো - তাই না?!
****************************************
যজ্ঞটার নাম 'পুত্রকামেষ্টি' বলে জানি, 'পুত্রেষ্টি' নয়।
পুত্রাকামেষ্টি- পুত্রয়েষ্টীয়- পুত্রেষ্টি তিনটাই তো পাইছি
খুব আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি পরের পর্বের জন্য। আশা করছি বেশ কয়েক পর্ব চলবে।
সোহেল ইমাম
বেশ কয়েক পর্ব না। পুরাটা শেষ হবে আশা করি
দ্রুত গতিতে "সহজিয়া রামায়ণ" এর পরবর্তী পর্ব গুলো ছাড়া শুরু করেন লীলেন দা। দরকার হইলে এই সিরিজের একটা "পুত্রেষ্টি" যজ্ঞ করে ফেলন। এটা মহাভারতের মত ঢিমেতালে না চালনোর অনুরোধ রইল। প্রথম পর্বেই একগাদা নতুন আর মজার তথ্য পেলাম। পরবর্তী পর্বের জন্য দেরি করা যাচ্ছে না।
কৌশিক
পুত্রেষ্টি দিয়া লেখা কমপ্লিট করতে হইলে তো দশরথের মতো শ্বশুর সংখ্যা বাড়াইতে হইব আগে
০২
মহাভারত ঢিমে তালে করার কারণেই রামায়ণ একটু দ্রুত হবে আশা করি; কারণ মহাভারতের ঘাটাঘাটিগুলা এইখানে কাজে লাগছে
হাহা বশিষ্ঠ আর বিশ্বামিত্রের গরু নিয়া গ্যাঞ্জামটার ভাল বাস্তব রূপ বাইর করছেন, এইটাই সম্ভব। কামধেনু ফেনু পরে রূপকথা হইয়া আইছে। মুনি ঋষিগো নিয়া একটা সিরিজ করবেন নাকি? ভাইবা দেইখেন। একদম গোত্র ধইরা?
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
রামায়ণ শেষ করতে পারি কি না দেখি। তারপর না হয় ঋষি আর মুনি
জোস জোস! এইডা কুনু কতা, এই ভাবে মুনিদের পাতলুন ধরে টানছেন যে, যদি দুর্বাসারা অভিশাপ দেওয়া শুরু করে!
facebook
শুরু কি এখনো করে নাই?
দারুণ মজারু আপনার এই বলার ভঙ্গিখান।
**
ঋতুপর্ণ ঘোষের অন্তরমহলে পুত্রেষ্টী যজ্ঞের ব্যাপারটা ছিল।
**
তাই তো বলি, একবাপের একপোলা হয়ে দশরথের মাথায় এত কূটবুদ্ধি আসলো কেম্নে। আসল হোতা বশিষ্ঠ- ব্যাটা।
**
বশিষ্ঠ- বিশ্বামিত্রের হয়ে ওকালতি করলেন কেন? এজন্য কেমন পার্সেন্টেজ দিতে হইছে তারে? এইগুলা তো হাড়েবজ্জাত হয় নিশ্চয়ই তলে তলে কিছু ছিল।
**
তিনি চাকরিজীবী মানুষ। রাজা রাজি হইলে তার না করার কী আছে?
অসাধারণ, পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
আইসা গেছে তো
সাড়ে তিনশো বউ, সাতশ শ্বশুর-শ্বাশুড়ির নাম মনে রাখত কিভাবে? দেখা করার সময় সবার গলায় পরিচয়পত্র ঝুলানো দরকার হত মনে হয়। আর, কোন রাণী কাতলমাছ খেতেন, কে রুই মাছ খেতেন এটার হিসাব রাখাও তো বিশাল ঝক্কি!
কুটির শিল্প আর 'শিল্প কারখানা'র মাঝে একটা পার্থক্য আছে না? কুটির শিল্প হইলে না সব কিছু নিজে নজরদারি করতে হয়। শিল্প কারখানায় এইসব বিষয় আশয় দেখার লাইগা কেরানিরা নিয়োজিত থাকে
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
নমশূদ্র পৈতা ঝুলালেই ব্রাহ্মণ হইবার সুযোগ আছিল না মনে হয়। তখন পড়াশোনা আর যাজযজ্ঞ জানা লোকই ব্রাহ্মণ হিসাবে গণ্য হইত। তার কে কোন ইস্কুল থাইকা পাশ সেইটা দিয়া তাগো গোত্র নির্ধারণ হইত। নয়া যারা ব্রাহ্মণ হইতে চাইত তাগো বিশ্বামিত্রের মতো বহু পরীক্ষা দিতে হইত
মহাভারতের দ্বৈপায়ন; রামায়ণের বাল্মীকি দুইজনই কিন্তু নমশূদ্র থাইকা ব্রাহ্মণ (মহাব্রাহ্মণ) হওয়া মানুষ
আমার হিসাবে তখন পৈতা কিন্তু ক্ষত্রিয়রাই পরত। মূলত উপনয়নের পরেই পৈতা লাগাইত। সাধারণত ১০ বছর বয়সে। গুরু ব্রাহ্মণগো জীবনীতে আমি পৈতার কোনো উল্লেখ পাই নাই
রবাহুত ব্রাহ্মণরা (অপরিচিত) কিন্তু মূল অনুষ্ঠানে থাকত বলে মনে হয় না। মূল যাজযজ্ঞস বিখ্যাত আর নিমন্ত্রিত ব্রাহ্মণরাই করত। রবাহুতরা কিন্তু দান খয়রাত ভিক্ষা টিক্কা নিয়া চইলা যাইত
০২
হ। কবিরা একটু সিরামই আছিল। কিঞ্চিত ইরাম সিরামন না থাকলে কোবি হওয়া যায় না
সেকালে যে পরীক্ষা টরীক্ষা দিয়ে ব্রাহ্মণত্ব পাওয়া যেত সেটা জানতাম না। তা এই গ্রাজুয়েশন সিস্টেম কবে এবং কেন বন্ধ হয়ে গেল?
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
এইটা বন্ধ করছে ভৃগুমুনির বংশধরেরা; জন্মসূত্রের বামুন হইবার সিস্টেম চালু করে
নতুন মন্তব্য করুন