প্রথম বই প্রকাশের বেক্কল মুহুর্ত

মাহবুব লীলেন এর ছবি
লিখেছেন মাহবুব লীলেন (তারিখ: বুধ, ১২/১২/২০০৭ - ৪:৫০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রথম বই প্রকাশ একটা হাবিজাবি ব্যাপার
২০০৪ এর একুশে বইমেলায় প্রকাশ হয় আমার প্রথম বই কবন্ধ জিরাফ
কবিতার বই। প্রকাশক মোড়ক খুলে বই দেখাতেই কী রকম যেন শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল আমার। একটা কপি নিয়ে আমি দৌড় শুরু করলাম শাহবাগের দিকে। খুলেও দেখলাম না। আমার একজন ঈশ্বর আছেন। শামীমা চৌধুরী। পকেটে তার ঠিকানা লেখা একটা প্যাকেট ছিল। বইমেলা থেকে দৌড়াতে দৌড়াতে বইটা প্যাকেটে ঢুকিয়ে শাহবাগে এসে কুরিয়ার করে দিলাম তার ঠিকানায়। তারপর খুব ধীরে ধীরে বিড়ি টানতে টানতে ফিরে গেলাম বইমেলায়। একেবারে ফাঁকা। কোনো অনুভূতি নেই। আমি যে কোনোদিন কোনো একটা অক্ষর লিখেছি তাও তখন আমার খেয়াল ছিল না। বইমেলায় যাচ্ছি; সেখানে কী এবং সেখানে কী হয় তাও মনে করতে পারছিলাম না। শুধু যেতে হবে বলে যাচ্ছি

আমার প্রথম বইটার মোড়ক উন্মোচন করেছি আমি নিজে। রক্তদান করে
মোড়ক উন্মোচন হয়ে যাবার পর কারো সঙ্গে কথা বলতে পারছিলাম না। শরীর কাঁপছিল। কথা জড়িয়ে যাচ্ছিল। কেমন যেন বোকা বোকা অবস্থা। সামনে দিয়ে যাওয়া পরিচিত কাউকে চিনতে পারছিলাম না। পুরো একটা হাবিজাবি। আমার প্রকাশক শুদ্ধস্বরের সম্পাদক আহমেদুর রশিদের হাত থেকে বিভিন্নজন বই নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখছেন। আমি শূন্য মাথায় দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ দেখি খন্দকার আশরাফ হোসেন এগিয়ে আসছেন আমার দিকে। আমি কীরকম যেন হড়বড় করে বললাম- আমার বইটা বেরিয়ে গেছে
- কই দেখি?
আমার হাতে কোনো বই নেই। আহমেদুর রশীদের হাত থেকে একটা বই নিয়ে তাকে দিলাম। তিনি বইটা হাতে নিয়েই আমাকে জড়িয়ে ধরলেন- কংগ্রেচুলেশন। তারপর বইটা নেড়েচেড়ে দেখে জিজ্ঞেস করলেন- দাম কতো?
- আমি জানি না
এই বইয়ের সবগুলো অক্ষর আমার নিজের হাতে বসানো কিন্তু আমি তখন দামটা মনে করতে পারছিলাম না। তিনি পাতা উল্টে দাম দেখলেন- সত্তর টাকা। কিন্তু লেখকের হাত থেকে কিনলে কমিশন কত?
-আমি জানি না
আশরাফ ভাই পকেট থেকে একেবারে নতুন কয়েকটা দশ টাকার নোট বের করে আমার হাতে দিলেন- কম হোক আর বেশি হোক। আমি পঞ্চাশ টাকা দিচ্ছি

টাকাগুলো হাতে নিয়ে আমি আবার বেক্কল বনে গেলাম। আমার হাত কাঁপছিল। আমি দশটাকার নোটগুলো নিয়ে দৌড়ে গেলাম প্রকাশক আহমেদুর রশীদের কাছে- সম্ভবত এই টাকাগুলোর মালিক তুমি। বলে তার কাছে টাকাগুলো দিয়ে আবার অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলাম শূন্য মগজে। আশেপাশে কে কী বলছিল আমার মনে নেই। আহমেদুর রশীদ সবাইকে মেনটেন করছিল। চিড়ার নাড়ু দিচ্ছিল। আমি আবার তার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম- টাকাগুলো দিয়ে দাও
- কেন?
- ওগুলো আমার। আমার প্রথম বই বিক্রির সবগুলো টাকা আমার। বাকি নয়শো নিরানব্বই কপি বিক্রি করে সব টাকা তুমি নিয়ে নিও। এটা আমার

আহমেদুর রশীদ মুচকি হেসে পকেট থেকে বের করে টাকাগুলো আমার হাতে দিয়ে দিলো। আমি টাকাগুলো মানিব্যাগে না রেখে অন্য এক পকেটে একেবারে আলাদা করে রেখে দিলাম

... আমার বই লিটল ম্যাগাজিনসহ অনেকগুলো স্টলে ছিল। কিন্তু আর কিছু মনে নেই। একটা ঘোর কাজ করছে। মেলার শেষ দিকে কাউকে কিছু না বলে একা একা বের হয়ে গেলাম। আমি কোনোদিন মোবাইল অফ করি না। কিন্তু তখন মোবাইল অফ করে দিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম
একেবারে ছোটবেলা আমি প্রচণ্ড বাদাম আর তালমিছরি খেতাম। হঠাৎ করে আমার তাল মিছরি আর বাদাম খেতে ইচেছ করল। বইয়ের টাকা থেকে পাঁচ টাকার বাদাম কিনে খেতে খেতে হাঁটছি। প্রথম বইয়ের টাকা থেকে আমার এক কৌটা সিঁদুর কেনার কথা। এলিফেন্ট রোড গিয়ে কিনলাম। বিশ টাকায় ছোট এক কৌটা। কিন্তু তাল মিছরি কোথায় পাবো? একজন বলল ফার্মগেট। হেঁটে হেঁটে রওয়ানা দিলাম ফার্মগেটের দিকে। এক দোকানে পেলাম

পাঁচ টাকার তাল মিছরি কিনে খেতে খেতে গিয়ে উঠলাম ওভার ব্রিজের উপর। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলাম। এখনও পকেটে বাকি আছে বিশ টাকা। ওগুলো দিয়ে কী করব? বের করে নাড়াচাড়া করলাম। আর কিছু করার নেই। টাকাগুলো ফেলে দিতে ইচ্ছে হলো। ওভার ব্রিজ থেকে নিচে ছুঁড়ে ফেলে দিলাম দশ টাকা বাকি দুটো নোট...


মন্তব্য

মাহবুব লীলেন এর ছবি

চট্টগ্রামের একটা লিটল ম্যাগ বৃত্তালোক হঠাৎ আমার কাছে আমার প্রথম বই প্রকাশের অনুভূতি জানতে চেয়ে বসে
তাদের জন্য এই লেখা তৈরি করেছিলাম...

মাহবুব লীলেন এর ছবি

সচলায়তন সিস্টেমে আমি মুহুর্তটাকে ঠিক মতো লিখতে পারিনি
এটা মুহূর্ত হয়ে যায়

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

মজা পাইলাম। কবন্ধ মানে কি?
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

মাহবুব লীলেন এর ছবি

যার ধর আছে কিন্তু গলাও নাই। মাথাও নাই

বিপ্রতীপ এর ছবি

খুব ভালো লাগলো...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
খুঁজে যাই শেকড়ের সন্ধান…

পুতুল এর ছবি

এমন অনুভূতি এজীবনে আমার হবে কী? আপনারটা ভাল লাগল।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

মাহবুব লীলেন এর ছবি

হবে হবে। হওয়াতে চাইলেই হবে

কনফুসিয়াস এর ছবি

খুব মজা পাইলাম পড়ে। মনে হচ্ছিলো প্রথম প্রেমের অনুভূতি পড়ছি।
-----------------------------------
যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

লেখাটা পড়ে বুকের ভেতর কেমন যেন ব্যথা ব্যথা লাগে

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আমার ঝামেলাটাই ওখানে
সুখ সুখ লাগার বিষয় লিখতে গেলেও তা ব্যথা ব্যথা হয়ে যায়

আহমেদুর রশীদ এর ছবি

বইটা আমার প্রকাশক হিসাবে যাত্রার স্মারক।

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.

মাহবুব লীলেন এর ছবি

তুমি কিন্তু স্যার প্রথম প্রকাশনার কাহিনী লিখতে পারো
একেকজন লেখক প্রকাশককে কত কিসিমে যন্ত্রণা দেয় তার ঘটনাও কম মজার হবে না

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

মুহুর্তটাকে ফুটাতে পারেন নাই মানে? এর চেয়েও মারাত্মক ছিল না কি?!!
আমাকে তো ভালোই নাড়া দিল!

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আমি মুহূর্ত বানান লেখার কথা বলেছি
মুহুর্ত বানাতে হ-এর সাথে দীর্ঘ উকার হবে
কিন্তু সচলায়তনে লিখতে গেলে তা হ-এর সাথে ঋকার হয়ে যায়
এজন্য হ্রস্য উ দিয়েই লিখলাম

নজমুল আলবাব এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

আমি মাহবুব লীলেনের সব কিছুতেই মুগ্ধ হতাম সব সময়। আজ ব্যতিক্রম হলোনা।
কবন্ধ জিরাফ-এ প্রথম তোমার ঈশ্বরের কথা জেনেছিলাম। খুব পরিচিত মানুষ কে অন্যরকম লেগেছিলো তখন।
যাইহোক তোমাকে নিয়ে নিজের এক দুখের কথা বলি, শেষবার যখন তোমায় ডেকে ছিলাম শ্রীহট্টে....তুমি দেখা দিলেনা.....হয়তো অনেক দূরের মানুষ আমি তাই।

..................................................
প্রীয়ক

মাহবুব লীলেন এর ছবি

ভাইজান তোমাকে/তোকে/আপনাকে যে চিনতে পারছি না আমি
একটু দাগ খতিয়ান দিলে চিনতে পারতাম

অনিন্দিতা এর ছবি

বই টা আমি পড়েছি। কিন্তু এখন লেখাটা পড়তে গিয়ে মনে হলো যেন নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। সত্যি খুব চমৎকার । এভাবে আর বেক্কল মুহূর্ত পাঠকের সামনে তুলে ধরলে তো দুর্ঘটনা ও ঘটে যেতে পারে। এত ভাল লিখেন কিভাবে?

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আমি তো কম বেক্কল হয়েছি
আমার এক বন্ধু বইমেলায় তার প্রথম বই হাতে পেয়ে এক ঘণ্টার মধ্যে ১৯বার পেশাব করেছে
চিন্তা করেন তার কতটুকু বেক্কল অবস্থা...

অমিত আহমেদ এর ছবি

কবে যে নিজের বেক্কল মুহুর্তের কথা লিখতে পারবো, তাই ভাবি! লেখাটা অসাধারণ হয়েছে!


ওয়েবসাইট | ফেসবুক | ইমেইল

মাহবুব লীলেন এর ছবি

শুদ্ধস্বর সম্পাদক আহমেদুর রশীদের সাথে যোগাযোগ করেন
তার কাজই হলো লেখকদের ধরে ধরে এনে বেক্কল মুহূর্তের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়া
এখন পর্যন্ত অনেক লেখকের প্রথম বই প্রকাশের কৃতিত্ব তার

গীতিকবি এর ছবি

লেখাটা পড়ে বেশ ভাল লাগল।
আমার তো মনে হয় মুহূর্ত ই হবে। অভিধান দেখতে হবে।

____________________________
শেখ ফেরদৌস শামস ভাস্কর
"আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি।"

মাহবুব লীলেন এর ছবি

এখানে হ-এর সাথে দীর্ঘ উকার লিখলে তার ঋকার হয়ে যায়। যেমন আপনারটাও হয়ে গেছে

গীতিকবি এর ছবি

আমিতো হ এর সাথে দীর্ঘ উ-কার ই দেখতে পারছি আমারটায়। আপনার কম্পিউটারে মনে হচ্ছে ফন্টজনিত কোন টেকনিকাল সমস্যা আছে।

____________________________
শেখ ফেরদৌস শামস ভাস্কর
"আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি।"

রাহা এর ছবি

অনুভূতিশূন্য অনুভূতি.....
ভালো লাগল সহজ প্রকাশে...

..হৃদি ভেসে যায় অলকানন্দার জলে...

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ভাল্লাগলো।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

ধুসর গোধূলি এর ছবি
সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

এমন বেক্কল মুহূর্ত আমার জীবনেও এসেছিল। কিন্তু আপনার মতো করে সেই অনুভূতির বর্ণনা দিতে আমি পারতাম না নির্ঘাত!

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

মাহবুব লীলেন এর ছবি

হাত পা ছেড়ে লিখতে বসে গেলেই লেখা যায়
আর লেখা যদি লেখা না হয়ে উঠে তাহলে লোকজন বড়োজোর গালাগালি দেবে
মারবে তো না?

ঝরাপাতা এর ছবি

মনে হয়েছিলো, প্রথম বই বিক্রির টাকাটা আপনি সংগ্রহে রেখে দিবেন। কিন্তু সেই টাকাটা আপনাকে হুট করে যে সেই ছেলেবেলায় নিয়ে যাবে বুঝতেই পারিনি, আসলে কবিকে কি এতো সহজে বোঝা যায়?


রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

ওই চিন্তাও মাথায় এসেছিল
একবার ভেবেছিলাম দশ টাকার পাঁচটা নোট লেমিনেট করে রেখে দেবো
কিন্তু পরে বাতিল করে দিলাম। ওগুলো রাখবো টা কোথায়?

অনিিন্দতা এর ছবি

আর কখন ও নিজের সৃষ্টি থেকে উপার্জিত টাকা রাখা নিয়ে সমস্যা হলে আমার কাছে পাঠিয়ে দেবেন। ঠিকানা দিয়ে দিব। অন্যরাও দিতে পারেন । সুবিধা মতো এ দুর্লভ সংগ্রহের একটা প্রদর্শনী করে ফেলব। বলা তো যায় না এ কারণে আমি ও বিখ্যাত হয়ে যেতে পারি।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

বুদ্ধি ভালো
তবে গ্রহণযোগ্য নয়। দুঃখিত
(উল্টোটা সাদরে গ্রহণযোগ্য। মানে আপনার টাকা আমার কাছে থাকবে)

বন্যা এর ছবি

মাহবুব লীলেন, আপনার অভিজ্ঞতা পড়ে রীতিমত হিংসা হল। বই প্রকাশের আনন্দ যে কি, প্রবাসে বসে তা বুঝতেও পারলাম না। এবারের মেলায় আমার প্রথম বই আর অভিজিতের দ্বিতীয় বই বের হল। প্রকাশক সাহেব যে তারিখ বলেছিলেন তার দুই দিন আগে বই বেড়িয়ে গিয়েছিল। প্রথম আলো আর সমকালে নতুন বইয়ের লিস্টে অনেক বইয়ের চিপা দিয়ে আমাদের বইগুলোর নাম দেখে জানলাম বই তো বেড়িয়ে গেছে মেলায় দুই দিন আগেই। তারপর প্রায় সপ্তাহ খানেক পরে ফেড এক্সে বইগুলো হাতে এসে পৌছালো, তখন প্রথমবারের মত অবাক হয়ে দেখলাম আনেক কিছুই যেমন বলে দিয়েছিলাম তেমনটা হয়নি। এখানেই শেষ নয়, ক'এক সপ্তাহ পর শিক্ষা আন্দোলন মঞ্চ জীবনের উতপত্তি এবং বিবর্তনের উপর এক সেমিনার করে আমাদের বই দুটোর উপর ভিত্তি করে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিসনেস ফ্যাকাল্টির অডিটেরিয়ামে। সারাদিন ছটফট করার পর গভীর রাতে দেশে ফোন করে জানতে পারলাম সেমিনারটা কেমন হয়েছিল...... কবে যে দেশে ফিরে যাওয়া হবে কে জানে!

মাহবুব লীলেন এর ছবি

চলে আসেন চোখ বন্ধ করে
অত হিসাব করে কী হবে?

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার লেখাটি পড়ে খুবই ভাল লাগলো, এবং আমার নিজের একটি কথা মনে পড়ে গেল। গত বেশ কয়েক বছর ধরে টুকটাক লেখালেখি করি। গোটা দশ বারো গল্প ছাপা হয়েছে উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন বাংলা পত্রিকায়। যারা সেগুলো পড়েছেন তাঁরা ভালই বলেছেন গল্পগুলোকে। একজন বুদ্ধি দিল গল্পগুলো একসাথে করে একটি বই প্রকাশ করার। ঢাকাতে কয়েকজন প্রকাশকের সাথে দেখা করলাম, গল্পগুলোকে দেখাতে চাইলাম। সবাই একই কথা বললেন। গল্পগুলো কেমন তা নিয়ে ওনারা কেয়ার করেন না। আমি পয়সা দিলেই ওনারা মহা আনন্দে বই ছেপে দেবেন।
টাকা দেয়াটা আমার জন্যে সমস্যা ছিলনা, কিন্তু ঠিক এভাবে বই ছাপতে ইচ্ছে হয়নি। পান্ডুলিপি বগলে করে ফিরে এসেছি।
আজকাল কি এভাবেই নতুন লেখকদের বই ছাপা হচ্ছে নাকি?
আমি কি তাহলে ভুল করলাম?

-নির্বাসিত

মাহবুব লীলেন এর ছবি

গল্পগুলো একটা একটা করে সচলায়তনে পোস্ট করে দিন

অতিথি লেখক এর ছবি

সচলায়তনে গল্প পোস্ট করার ব্যাপারে কোন আপত্তি নেই। কিন্তু তার সাথে বই প্রকাশ করার সম্পর্কটা বুঝলাম না।

-নির্বাসিত

আরিফ জেবতিক এর ছবি

প্রিয় নির্বাসিত ,
আজকাল এভাবে বই ছাপা হচ্ছে এমন নয় , তবে নতুন লেখকদের জন্য বিষয়টা খুব স্ট্রাগলের । বিশেষ করে যারা ঢাকার বাইরে থাকেন , তাদের জন্য ।

তবে এভাবে বই ছাপায় কিন্তু কোন দোষও নেই । অনেক নতুন লেখক এভাবে বই ছাপান , আগেও ছাপিয়েছেন ।

লিস্ট দেব ?
তসলিমা নাসরিন থেকে শুরু করে নাসরিন জাহান , আজকের প্রায় সবগুলো বড়ো কবি , ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন ...এদের সবার বইই কিন্তু নিজের পয়সায় বের করা ।
তাই বলে পরবর্তীতে তাদেরকে সেই কাজ করতে হয় নি ।

আমি সাজেস্ট করবো , দেশের পত্রিকাগুলোতে লেখা পাঠান । ছাপুক না ছাপুক , নিয়মিত পাঠান ।
একটা পরিচিতি থাকলে আর প্রকাশক ট্যা ফো করেন না ।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আমিও আরিফের সঙ্গে একমত
নিজের বই নিজে করায় কোনো লজ্জা নেই
এটাই নিয়ম
আর প্রথম বই যদি অন্য কেউ করে তাহলে সেটা ব্যতিক্রম

অতিথি জলতরঙ্গ এর ছবি

নির্বাসিত
আপনি ই তিনি হলে আপনার বই তো প্রকাশ হলো গত বই মেলা তে না? সচল এ লেখেন না কেন? আপ্ নার লেখা ভালু পাই। হাসি

গৌতম এর ছবি

আপনার বইটা আমি পড়ি নি। কিন্তু বেক্কল মুহূর্তের কাহিনী পড়ে ভালো লেগেছে। প্রথম যেদিন ভোরের কাগজে আমার লেখা ছাপা হয়, সেদিন আমিও বেক্কল হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু কী করেছিলাম, তা তো বলা যাবে না...

..................................................
ছিদ্র খুঁজে বেড়াই, বন্ধ করার আশায়

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

ফারলিন এর ছবি

আমার ধারণা আপনি রক্ত না দিলেও ওরকম একটা ঘোরে থাকতেন। সেটা আরো মজার হত। এখন মিছি মিছি এই ঘটনার আরেকটা কারণ হিসেবে রক্তদানজনিতদূর্বলতার লেবেল সেঁটে থাকলো।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ-আরিফ জেবতিক ও মাহবুব লীলেন তথ্যের জন্য।

-নির্বাসিত

গীতা দাস এর ছবি

মাহবুব লীলেন এর 'প্রথম বই প্রকাশের বেক্কল মুহুর্ত' পড়ে নিজের ছাত্রজীবনে 'সাপ্তাহিক সন্ধানী'তে প্রথম লেখা প্রকাশিত হবার স্মৃতি মনে পড়ছে। তবে লীলেন এর মত অনুভূতি বলার ভাষা যোগানো বড় দুরহ। যার গদ্যই এত শক্তিশালী তার 'কবন্ধ জিরাফ' এর কবিতা না জানি কেমন! বইটি পড়ার আগ্রহ রইলো। সিঁদুরের কৌটার রহস্য কি অনাবৃতই থেকে যাবে?

অতিথি লেখক এর ছবি

চমৎকার লেখা! মুহূর্তটা অনুভব করতে পারছি। সিঁদুরের কৌটোর রহস্যটা বললেন না যে?

আর চট্টগ্রামের কোন ছোট কাগজে আপনার লেখাটা এসেছিল?

তাপস শর্মা এর ছবি

এই অনুভূতিগুলি যেন ছুঁয়ে দেখা যায়। হাসি

ক্রেসিডা এর ছবি

প্রথম বই! আহা!! তিক্ত অভিঞ্জতা অনেক নতুন লেখকদের জন্যে। বিশেষ করে এখনকার সময়ে। আবার নতুন লেখকদরে বই পরিচিতজনদের দয়া ছাড়া অচেনা পাঠকের হাতে খব কমই পৌছায়! পরিচিতজনেরা যারা কিনে তারাও যে বইটা পড়ে না খুব একটা, সে ব্যাপারেও আমার সন্দেহ খুব একটা নেই। তাই সবসময়ই আমার মেলার বাজেটে লিটল ম্যাগাজিন চত্তর, বা শুদ্ধস্বর, বাংলায়ন ... এদের জন্যে আলাদা বাজেট থাকে।

আমার প্রথম বই এর নাম, প্রচ্ছদ সবই ঠিক! বই এর নাম ছিল "নামতা" ! কভার ও ফ্লাপের কাজ অলমোস্ট কম্লিট, আমার প্রথম মেয়ে এর জন্ম। বই এর নাম বাদ দিলাম। মেয়ের নাম রাখলাম নামতা। প্রথম বই এর এইটুকু স্মৃতিই আমার সঙ্গী।

__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;

তারানা_শব্দ এর ছবি

জীবনে 'প্রথম' কোনকিছুর অনুভূতি যেন এমনই হয়।।। খুব ভালো লাগলো পড়ে। চলুক

"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।