কামাগানি হুকাম!

মামুন হক এর ছবি
লিখেছেন মামুন হক (তারিখ: মঙ্গল, ১৫/১২/২০০৯ - ৪:০৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমার বন্ধু রবার্ট হুবার। জর্মন দেশের লোক। পেশায়-নেশায় ফটুরে। হং কং এ পরিচয়, তারপর মেসেঞ্জার আর কালেভদ্রে দুয়েকটা ইমেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা। এভাবেই চলছিল অনেকদিন। এখন আবার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, কোথাও খুঁজে পাচ্ছিনা। এই লেখাটা নাজিল করার প্ল্যান ছিল অক্টোবরে, আশায় ছিলাম রবার্টের হদিস পেলে রঙ-চঙে একটা সচিত্র পোস্ট দেবার। কিন্তু নিরুদ্দেশ বন্ধুর পাত্তা না মেলায় আপাতত এই সাদামাটা, সাদা-কালো অং বং চং।

ঘটনা ২০০২ সালের। একটা কাজে দিল্লী গেসিলাম। পাঁজি দেখে যাইনি, গিয়ে আটকে পড়লাম পুজোর বন্ধে। বিভুঁয়ে আটকে পড়া বাংলাদেশীদের অনেক হুজ্জত সইতে হয়, আমাকেও হলো। দিন কয়েক ফ্যা ফ্যা করে দিল্লীর অলি-গলিতে ঘুরে বেড়ালাম, কিন্তু তখনো আরও সাত দিন বাকি বন্ধের। কী করা যায় ভেবে ভেবে একসা। এক সন্ধ্যায় মেইল চেক করে দেখি রবার্টের চিঠি। সে জানতো আমি ভারত আসছি। চিঠিতে জানালো সে এখন জয়পুর আছে, কব্জি ডুবিয়ে খাচ্ছে-দাচ্ছে আর রাজ প্রাসাদ, রাজ পরিবারের ছবি তুলছে। ভারতীয় রাজ প্রাসাদ গুলোর একটা ছবি সংকলনের নিয়ে কাজ করার সুবাদে বেশ কিছু রাজ পরিবারের সাথে তার তখন বেজায় খাতির। ইমেইলের সার বস্তু হলো, আমি যদি খুব বেশি ব্যস্ত না থাকি, তাহলে যেন জয়পুরে একবার বেড়িয়ে যাই। বন্ধু দর্শন আর কলা বেচা দু’টোই হবে। ভেবে দেখলাম দিল্লীতে একা একা পঁচে মরার চেয়ে বিয়ার ব্যারন (বন্ধু মহলে ওকে এই নামেই ডাকা হতো) রবার্টের সাথে আড্ডা মেরে আসলেই ভালো হবে, সে রসিক মানুষ , মাতিয়ে রাখবে কয়েকটা দিন।

কোন এক ভোরে, কাক ডাকারও আগে, দিল্লী থেকে বাসে চেপে বসলাম। ঠিক মনে নেই কয় ঘন্টা লেগেছিল। তবে দুপুরের আগেই পৌছে গেসিলাম জয়পুর। রবার্ট নিজেই এসেছিলো বাস স্টপে। লক্কর ঝক্কড় একটা জিপ নিয়ে। একটানে গাড়ি নিয়ে থামালো একটা উঁচু দেয়াল ঘেরা বাগান বাড়িতে। এটাই রাজকীয় অতিথিশালা, আগের সেই জৌলুস আর নেই যদিও। ভেতরে অনেকগুলো ছোট ছোট বাংলো। চমৎকার সাজানো-গোছানো বাগান। পর্যটকদের কাছে নামমাত্র মূল্যে ভাড়া দেয়া হয়। আমার আশ্রয় হলো সুইমিং পুলের পাশের এক কুটিরে। রবার্ট আগেই ঘাঁটি গেড়েছে সদর দরজার সামনের বড়ো একটি বাংলোতে।

পরের কয়েকটা দিন খুব মজায় কাটলো। মন্দির দেখলাম, প্রাসাদ দেখলাম, গুলাবী নগরীতে ঘুরে বেড়ালাম -সব নামধাম মনে নেই। একদিন রবার্টের সাথে যাওয়া হলো কুণ্ডলিনী ইয়োগার এক ক্লাসে। জটিল বিষয় আশয়, বিদেশী শিক্ষার্থীই বেশি। চক্র-শক্তি ইত্যাদি নিয়ে অনেক কথা হলো, কিছু বুঝলাম, বাকিসব হিব্রু মনে হলো। একা একা এক সন্ধ্যায় সিনেমাপ্লেক্সে গিয়ে বিবেক ওবেরয় এর 'রোড' সিনেমাটা দেখে আসলাম, ভালোই লেগেছিল। আরেকদিন রাতে খাবার দাওয়াত পড়লো অতিথিশালার ম্যানেজারের ঘরে । ছাদের উপরে চমৎকার আয়োজন, অনেক পদের রান্না-বান্না। সব গুলোর কথা মনে নেই, তবে সাদা গোস্ত নামে একটা আইটেমের কথা এখনো মনে পড়ে। খাবার পরে পানের বন্দোবস্ত। রবার্ট তার বিয়ার ব্যারন নামের স্বার্থকতা জাহির করতে একাই সাত বোতল কিং সাইজ কিংফিশার মেরে দিল। চেয়ে চেয়ে দেখলাম।

তিন বা চার দিন পরে এক সকালে দেখি চারদিকে ত্রাহি ত্রাহি শোরগোল, ব্যস্ততা। সব মুছে ঝকঝকে তকতকে করা হচ্ছে, চুনকাম পড়ছে বিমর্ষ দেয়ালগুলিতে। রবার্টকে কোথাও পেলাম না যে ব্যাপারটা কী জেনে নেব। সারাদিন একলা একলা বাগানের আরাম কেদারায় শীতের রোদের আমেজে বই পড়ে সূর্য ডুবিয়ে ফেললাম। রাতে ফটুরে সাহেবকে ধরতেই জানা গেলো ঘটনা। জয়পুরের মহারাজার জন্মদিন উপলক্ষে সব ঝাড়পোষ করা হচ্ছে। রাজা এদিকে আসবেন না তবুও। আসল ফুর্তি সব প্রাসাদে হবে। বিশাল পার্টি। নামীদামী সব লোক আসবেন, রাজা-রানী-রাজকন্যা-রাজ্জামাতা সবাই থাকবেন। রবার্ট ছবি তুলতে গিয়ে তাদের সাথে দারুন সম্পর্ক তৈরী করে ফেলেছে। আয়োজনের মূল দায়িত্ব রাজার একমাত্র মেয়ে জামাই নরেন্দ্রর কাঁধে, সমবয়সী আর ফটোগ্রাফিতে আগ্রহ থাকার কারণে তার সাথেও রবার্টের খুব ভালো খাতির। আমি সংকোচের মাথা খেয়ে জানতে চাইলাম আমিও আসতে পারি কিনা। রবার্ট জানালো আমন্ত্রিত অতিথিদের লিস্ট হয়ে গেছে, এখন আর নতুন করে কাউকে নেয়ার অনুমতি পাওয়া সম্ভব না। জীবনে কোনদিন কোন রাজা-রাজড়ার ধারে কাছেও যাইনি, এত কাছে এসেও সুযোগ হবেনা এই দুঃখে আমি ঘ্যান ঘ্যান করে রবার্টের মাথা ধরিয়ে ফেললাম।

‘ দ্যাখ শালা তোর জন্যই আমি এত দূরে আসলাম আর তুই আমারে রেখে একলা যাবি কোন মুখে?’—এ জাতীয় গোলাগুলিতে ওকে বিব্রত করে তুললাম।

‘ওকে ওকে। লেট মি থিংক। ডু ইউ হ্যাভ রয়্যালটি ইন ইওর ফ্যামিলি? কারণ আমন্ত্রিত অতিথিরা সবাই হয়তো রাজ পরিবারের অথবা হাই প্রোফাইল সরকারী অফিসার। হাউ ডু আই ম্যানেজ অ্যান ইনভাইট ফর ইউ?’-রবার্ট আমাকেও চিন্তায় ফেললো।

-‘মর শালা, আমি চাষা-ভুষা ঘরের ছেলে, রাজা-জমিদার এই সবের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নাই। বিদেশে একা থাকি, ব্যবসা করে খাই। নিজের পরিচয়ে যদি ঢুকতে পারি তাহলে যাব, আর নয়তো দরকার নাই’—ক্ষেপে গিয়ে বলি।

রবার্ট হাল ছাড়লোনা, খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে জেনে নিল আমার মাতুল বংশে কোন জমিদার আছে কিনা। মায়ের দাদার জমিদারী ছিল এই কথা শুনে তাকে কিছুটা চিন্তামুক্ত মনে হলো। পরদিন আমরা লাঞ্চে গেলাম অনুষ্ঠানের মূল আয়োজক নরেন্দ্রর সাথে। সে নিজেও গরীব ঘরের ছেলে, ঘটনাচক্রে রাজকুমারীর সাথে প্রেম হয়ে যাওয়ায় এখন নিজেও রাজকুমার পদবী ব্যবহার করে। এ ঘটনা নিয়ে নাকি অনেক শোরগোল হয়েছিল জয়পুরে। রবার্ট আমাকে পরিচয় করিয়ে দিল বাংলাদেশের এক জমিদারের প্রোপৌত্র হিসেবে, আমিও ব্যাখ্যা করার ঝামেলায় না গিয়ে রাজার জন্মদিনের অনুষ্টান দেখের লোভে দাঁত কেলিয়ে এটা সেটা বলতে লাগলাম। লাঞ্চ শেষে নরেন্দ্র নিজে থেকেই আমাকে পরদিন সন্ধ্যায় প্রাসাদে যাবার আমন্ত্রণ জানালো। মনে মনে একটা হাই ফাইভ করে নিলাম দোস্তের সাথে।

পরদিন আরেক ঝামেলা। গিয়েছি বেড়াতে, পোষাক আশাকের ছিরি নিয়ে ভাবিওনি। রবার্ট চকচকে স্যুট ড্রাই ক্লিনিং করতে দিলো, কী পড়ে যাবো জানতে চাইলে আমতা আমতা করা ছাড়া বলার মতো কিছু পেলাম না। শেষ পর্যন্ত শহরের এক দোকানে গিয়ে হাল ফ্যাশনের কুর্তা-পাজামা কিনে আনলাম। রাজবাড়ী যাচ্ছি, ফুলবাবু না সেজে উপায় আছে?

সেজেগুজে দু’বন্ধু সন্ধ্যা নামতেই রাজ প্রাসাদের ফটকের সামনে হাজির হলাম। ভেতরে সাধারণের গাড়ী ঢোকা নিষেধ। নিরাপত্তা কর্মীরা নরেন্দ্রকে ফোন করে নিশ্চিত হয়ে নিল আমাদের সম্পর্কে। সদর দরজার ভেতরে পিচ ঢালা সরু রাস্তা। রাজার বাহন আর এক্কা গাড়ী চলাচল করে সেটার উপর দিয়ে। আমরা হেঁটেও ভেতরের দিকে যেতে লাগলাম। প্রথমেই চোখে পড়ে বিশাল দরবার হল। সামনে বিশাল একটা ঘন্টা ( পাঠক বিরক্ত হবেন না, সামনে বিশাল শব্দটা আরও অনেকবার ব্যবহৃত হবে, কাচা চোখে তখন সবই বিশাল ঠেকেছিল)। ঘন্টার নীচে , আশে পাশে শুধু প্রদীপ আর প্রদীপ। পরে মূল প্রাসাদে গিয়েও হাজারে হাজার প্রদীপের মেলা দেখেছিলাম চারদিকে। দরবার হলের ভেতরে বিশাআআল একটা ঝাড়বাতি। আমি ভেতরে ঢুকতে চেয়েছিলাম, কিন্তু রবার্টের ঝাড় খেয়ে সম্বিত ফিরলো। মূল অনুষ্ঠান আরও সামনে , দেরী না করে ওখানেই চলে যাওয়া উচিত।

ভেতরে ঢুকে আমার আক্কেল-গুড়ুম না হলেও মুখ কিছুটা হলেও হা হলো। ভ্যাবলার মতো চোখ বড়ো বড়ো করে দেখলাম, বিশাল এল শেপের প্রাসাদ, কতগুলো ঘর আছে তাতে সেটা ভগবানই জানেন। সামনের চত্বর ফুলে ফুলে শোভিত। ফুলের পাপড়ির নীচে চাপা পড়ে আছে গোটা মেঝে। ছোট ছোট দলে মেয়েরা নাচছে, হিন্দী ছবির মতো নাচ না, শোভন-দৃষ্টি নন্দন নাচ। একদিকে একটা মঞ্চ, সেখানে ব্যস্ত সব গাইয়ে-বাজিয়েরা। ভেবেছিলাম দ্রিম দ্রিম ঢোলের বাড়ি শুনবো, তেমন কিছু না, তবুও মনে ভরে গেলো সুললিত যন্ত্র সঙ্গীতের মূর্ছ্বনায়। মেয়েরা নাচছিল তালে তালে।

রবার্ট কামান বসিয়ে নিয়ে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে গেলো। আর আমি বানোয়াট ঢাকাই জমিদার স্মিত হাসি মুখে ঝুলিয়ে এদিক সেদিক ঘুরে ঘুরে দেখলাম। রাজ প্রাসাদের কিছুটা দূরে আরেকটা কিছুটা মলিন প্রাসাদ, জানা গেলো সেটা এককালের রাজকীয় ভুলভুলাইয়া। টিলার ওপরে আরেকটা ছোট প্রাসাদ দেখেছিলাম, সেটা ওখান থেকে নাকি অন্য কোন সময়ে তা মনে পড়ছেনা। তবে জেনেছিলাম ওটা নাকি রাজা-রানীর মধুর সঙ্গমালয়। হুমমমম...আসলেই রাজকীয় কাজ-কারবার সব।

ঘন্টা আধেক পরে রাজা-রানী-রাজকন্যা একসাথে অনুষ্ঠানে হাজির হলেন, বড়ো ধরনের হৈচৈ ছাড়াই। রবার্ট আমাকে আসার আগেই শিখিয়ে এনেছিল, পরিচিত হবার সময়ে রাজাকে অভিবাদন জানাতে হবে , ‘ কামাগানি হুকাম’ বলে, আর তিনি হাত না বাড়ালে হ্যান্ড শেকের জন্য নিজে থেকে হাত বাড়ানো যাবেনা ইত্যাদি ইত্যাদি। শুরুতে আমি ভেবেছিলাম ‘ কামাগ্নি হুকাম’ , অশ্লীল! বার বার কানের কাছে বলতে থাকায় বুঝলাম কথাটা ‘কামাগানি হুকাম’—যদিও কথাটার অর্থ বুঝতে পারিনি, এখনো জানিনা। সম্মানসূচক কিছু হবে। রাজা তেমন মাঞ্জা মেরে আসেন নি, দামী শেরোয়ানী গায়ে, তবে রাজকীয় কিছু না। শেরোয়ানীর পকেটে অনেকগুলো মেডেল। বৃত্তান্ত জানতে চাওয়ায় রবার্ট জানালো মহারাজা ভারতীয় সেনা বাহিনীতে ছিলেন, রিটায়ার্ড ব্রিগেডিয়ার। মেডেলগুলো যুদ্ধে বীরত্বের কারণে পাওয়া।

জয়পুরের মহারাজা ভবানী সিং ঘুরে ঘুরে সবার সাথে পরিচিত হচ্ছিলেন, কুশল বিনিময় করছিলে। একেবারেই নিরহংকারী, নিপাট ভদ্রলোক বলে মনে হচ্ছিলো দূর থেকেই। পাশে রানীমা, তার পোষাকও সাদাসিধা তবে তাতে চমৎকার রুচির ছাপ। তবে রাজকুমারী ( নাম মনে নেই, দেবশ্রী হলেও হতে পারে) এসেছেন একেবারে ঝলমলে পোষাকে আবৃত হয়ে। সাথে চোখ-মন সব কাড়া সৌন্দর্যের জেল্লাতো আছেই। রাজকুমারীর হাত ধরে পরীর মতো ফুটফুটে একটি শিশু। ওঁর মেয়ে। আমি ফাজলামী করতে রবার্টকে ফিসফিসিয়ে বলছিলাম, আর বছর পাঁচেক আগে আসলে ঐ মেয়ের বাপ আমি হতাম। আমাদের প্রেম কাহিনী নিয়ে বলিউডি ফিল্ম বানানো হতো। চাহুনীর চাবুকে রবার্ট আমাকে চুপ করালো।

ঘুরতে ঘুরতে রাজা যখন আমাদের সামনে আসলেন আমার বিশালবপু বন্ধু বাজখাই গলায় ‘কামাগানি হুকাম’ বলেই প্রায় একেবারে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। আমি থতমত খেয়ে পাশে দাঁড়িয়ে রইলাম, প্রণামের ভঙ্গীতে দুই হাত জোড় করে। রবার্ট উঠে নিয়ে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিল, ‘দিস ইস মাই ফ্রেন্ড মামুন , হি ইজ ফ্রম বাংলাদেশ...’
তারপর ঘাড় টেনে মাথা আনার মতো করে যখনই আমার পূর্ব পুরুষের জমিদারীর কথা বলতে যাবে, রাজা নিজে থেকেই বলে উঠলেন, ‘ ওহ বাংলাদেশ! আমি ৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। ’

আমি কথা খুঁজে না পেয়ে সভ্যতা-ভব্যতা ভুলে হাত বাড়িয়ে দিলাম, রাজা স্মিত হেসে করমর্দন করলেন। রানীমাকেও প্রণাম করলাম। দু’দন্ড দাড়িয়েই তারা অন্য অতিথিদের দিকে চলে গেলেন। আমি তখনো ঘোরের মধ্যে। রবার্ট কতক্ষণ আমার দিকে চোখ মটকে তাকিয়ে তাদের পিছু পিছু চলে গেল। আমি নরেন্দ্রকে খুঁজে নিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে রাজার অংশগ্রহনের ব্যাপারটা জানতে চাইলে সে বললো, মহারাজা অসীম বীরত্বের সাথে পাক বাহিনীর মোকাবিলা করেছিলেন। কোন ফ্রন্টে বা কার অধীনে সেসব তার জানা ছিলনা। তবে জানালো যে ভারত সরকার তাঁকে মহাবীর চক্র খেতাবে ভূষিত করেছিল আমাদের মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য। আর তাঁর শেরোয়ানীর পকেটের মেডেলগুলো সেটারই নিদর্শন।

বাকি অনুষ্ঠানে আমি আর রাজার দেখা পাইনি, আরও অনেক অতিথিদের নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। এক ফাঁকে এসে আমাদের খাওয়া-দাওয়া কেমন হচ্ছে সেটার তদারকিও করে গেসিলেন, কিন্তু কথা বলার সুযোগ হয়নি। রাজকীয় খাবার-দাবারের বিস্তারিত বর্ণনায় আর যেতে ইচ্ছা করছেনা। এখনও মন ভারী হয়ে আছে সামনা সামনি পেয়েও কৃতজ্ঞ বাঙ্গালী জাতির পক্ষ থেকে মহারাজাকে ধন্যবাদ জানাতে ব্যর্থ হওয়ায়।

এই বিজয়ের মাসে, বিজয় দিবসের প্রাক্কালে লক্ষ লক্ষ শহীদ, বীরঙ্গনা ,যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, বিজয়ী বীরদের সাথে মহারাজা মহাবীর সোয়াই ভবানী সিং কেও জানাই আন্তরিক কৃতজ্ঞতা আর হৃদয় নিংড়ানো শ্রদ্ধাঞ্জলি।

‘কামাগানি হুকাম!’


মন্তব্য

মুস্তাফিজ এর ছবি

কামাগানি হুকাম

...........................
Every Picture Tells a Story

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

কামাগানি হুকাম দেঁতো হাসি
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...

সাঈদ আহমেদ এর ছবি

কামাগানি হুকাম

মামুন হককেও এই চমৎকার লেখাটার জন্য।

-----------
"সে এক পাথর আছে কেবলি লাবণ্য ধরে"

-----------
চর্যাপদ

গৌতম এর ছবি

কামাগানি হুকাম।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

মামুন হক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ সবাইকে হাসি

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

‘কামাগানি হুকাম!’
শ্রদ্ধাঞ্জলি বানান ভুল (সেজন্য ৪ দিলাম)।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

বেয়াদবি নিয়েন না। কিন্তু দু'টি বানানই তো পত্রিকাওয়ালারা লেখে... মন খারাপ
____________________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ !

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

মামুন হক এর ছবি

আমিও তাই ভাবছিলাম, কিন্তু প্রকৃতি প্রেমিকের মুখের উপ্রে কথা বলার দুঃসাহস আমার নাই। তাই বানান বদলে দিসি। একটাই মাত্র কল্লা আমার ঘাড়ের উপরে হাসি

মামুন হক এর ছবি

দোস্ত ধন্যবাদ তোরে, বানান ঠিক করে দিলাম।

নাশতারান এর ছবি

কামাগানি হুকাম!

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

ওডিন এর ছবি

শ্রদ্ধাঞ্জলি বানান ভুল হলেও শ্রদ্ধায় তো কোন কমতি নাই, তাই আমার পক্ষ থেকে একখান পাঁচ (অবশ্যি সেটা ভেবে নিতে হবে, দেখা যাবে না! খাইছে )
______________________________________
আসলে কি ফেরা যায়?

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আচ্ছা যাও, তোমার অদৃশ্য পাঁচকে দৃশ্যমান করে দিলাম হাসি

ওডিন এর ছবি

ধন্যবাদ এবং দেঁতো হাসি
______________________________________
আসলে কি ফেরা যায়?

সাইফ তাহসিন এর ছবি

মামুন ভাই ফাইনালি শীত নিদ্রায় আক্রান্ত হইছেন, মাসে ১টা লেখা? মিয়া, আর কয়দিন পরে তো ২ দেবশিশুর আবির্ভাব হবে, তখন কি করবেন কে জানে!

লেখাতো না যেন আগুনের গোলা, খুব ভালো লাগল বস! সামনে ব্যস্ত হবার আগে আরো কিছু ছাড়েন বস।

কামাগানি হুকাম!
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদ্বপি গরীয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

মামুন হক এর ছবি

সেইটাই সাইফ, এখনই যেমন চোখে মুখে আঁধার দেখি সামনে কী আছে কপালে খোদায় জানে। দেখি আর কিছু ছাইপাশ লিখে রাখা যায় কিনা তার আগে ভাগেই।

ধন্যবাদ তোমাকে।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

কামাগানি হুকাম

____________________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ !

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

চলুক চলুক

কামাগানি হুকাম !!

_________________________________________

সেরিওজা

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

বন্ধু, তোকে অনেক ধন্যবাদ রে...
আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য যারা লড়াই করেছিলো নিঃস্বার্থভাবে, তাদের জন্য শ্রদ্ধা শুধু না, আরো অনেক কিছু...

আর তোর জীবনটাকে আমি সত্যিই অনেক ঈর্ষা করি
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

মামুন হক এর ছবি

দোস্ত তোরেও অনেক ধন্যবাদ।

অমিত এর ছবি

ইনি যদি হয়ে থাকেন তাহলে উইকির তথ্যানুসারে ১৯৭১ সালে উনি ইস্টার্ন ফ্রন্টে নিযুক্ত ছিলেন না, যুদ্ধ করেছিলেন সিন্ধে।

মামুন হক এর ছবি

জ্বি ইনিই মহারাজা ভবানী সিং যার সাথে আমার দেখা হয়েছিল। সিন্ধে যুদ্ধ করলেও সেটা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সাথেই সম্পর্কিত ছিল। সেই সময়ে যে কোন উপায়ে পাকি নিধনে যারা অংশ নিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে সাহায্য করেছিলেন তাদের আমি মুক্তিযোদ্ধাদের সমগোত্রীয়ই মনে করি।

আপনাকে ধন্যবাদ লিংক্টার জন্য।

স্পার্টাকাস এর ছবি

মামুন হককে "কামাগানি হুকাম" তার ভ্রমনকাহিনীর জন্য।
উইকিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে "indo-pakistan war" বলা হচ্ছে কেন?

জননীর নাভিমূল ছিঁড়ে উলঙ্গ শিশুর মত
বেরিয়ে এসেছ পথে, স্বাধীনতা, তুমি দীর্ঘজীবি হও।

অমিত এর ছবি

একটা কারণ হতে পারে অফিসিয়ালী ইন্ডিয়া যুদ্ধ করেছে পাকিস্তানের সাথে, যেটার স্থায়িত্ব ছিল ১৩ দিন।৩রা ডিসেম্বর থেকে ১৬ই ডিসেম্বর। অন্যদিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ছিল ২৬শে মার্চ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর। (যদিও আমার নিজস্ব মতামত জানতে চাওয়া হলে বলব যে যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি, হিসাবের খাতায় অনেক পাওনা বাকি আছে এখনো)

মামুন হক এর ছবি

একমত!

তানবীরা এর ছবি

কামাগানি হুকাম।

হায় হায় মামুন ভাই, আপনি কি পিংক প্যালেসের ভিতরে গিয়েছিলেন পার্টিতে? নাকি অন্য প্যালেসে পার্টি দিয়েছিলো তারা? শুনিতো এখনো ওনারা পিঙ্ক প্যালেসে থাকেন তাই ওখানে দর্শনার্থীদের থেকে অনেক টাকা দর্শনা রাখেন।

আপনি কি ওটার পাশে যে প্যালেসকে হোটেলে রুপান্তর করে হোটেল রাজস্থান নাম দিয়েছে সেটাতে ছিলেন?

আপনে মিয়া বস মানুষ, রাজার গেষ্ট

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

মামুন হক এর ছবি

যদ্দুর মনে পড়ে পার্টিটা পিংক প্যালেসে না অন্য কোথাও হয়েছিল। আর হোটেল রাজস্থানেও থাকি নাই, আমি ছিলাম সাদামাটা একটা গেস্ট হাউসে, তবে খুব ছিম ছাম, নিরিবিলি।

ধুর আমারে কি চেহারা দেখে দাওয়াত দিসিলো নাকি? আমার বন্ধুভাগ্য প্রবল আর সেটার প্রভাবেই... হাসি

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

ভাল্লাগলো লেখাটা। হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

কামাগানি হুকাম...
লেখাটা অনেক ভালো লাগ্লো।
---- মনজুর এলাহী ----

রানা [অতিথি] এর ছবি

মামুন, আপনার কাহিনি পড়ে বুকের ভেতর কষ্ট অনুভব করলাম।

রবার্টের কাছ থেকে ওই অনুষ্ঠানের ছবি কিছু আপলোড করলে দেখে চোখ সার্থক করতাম। বিশেষ করে খাবার-দাবার ছবি। আমারও মা'র দাদাও জমিদার ছিলেন, কিন্তু এরকম সৌভাগ্য আমার হয়নি।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

চলুক

দূর্বাক [অতিথি] এর ছবি

এটা কী করলেন? চোখে পানি এসে গেল তো!!

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

কামাগানি হুকাম!!!



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অনিকেত এর ছবি

মামুন বস,
নানান যন্ত্রণায় প্রায় দিশেহারার মত দিন কাটাচ্ছিলাম।
আজ একটু ফুরসত করে নিয়ে পড়তে এসেই তোমার লেখা দেখলাম।
গোগ্রাসে গিললাম বলা যেতে পারে। তোমার লেখা নিয়ে আমার মুগ্ধতা নতুন না। কিন্তু আমি যেটা সবসময়ে বলি---তোমার 'জীবন থেকে নেয়া' লেখাগুলো অন্যমাত্রার, অন্য ভুবনের।

এত ঝরঝরে লেখা , মুচুমুচে বর্ণনা---খুব চমৎকার লাগল বস।

সারাদিন একলা একলা বাগানের আরাম কেদারায় শীতের রোদের আমেজে বই পড়ে সূর্য ডুবিয়ে ফেললাম।

চাহুনীর চাবুকে রবার্ট আমাকে চুপ করালো

দূর্দান্ত অভিব্যক্তি!

রাজা ভবানী সিং কে আমার তরফ থেকেও 'কামাগানি হুকাম'!!

সাফি এর ছবি

কামাগানি হুকাম মামুন ভাই

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।