চিনসুরা

সত্যপীর এর ছবি
লিখেছেন সত্যপীর (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৯/০২/২০১২ - ১১:০৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

চান্দেরনগরের মাইল তিনেক দূরেই ওলন্দাজ কুঠি চিনসুরা। তখন বাংলার নবাব মীর জাফর। ইংরেজের বদান্যতায় গদীতে বসেছিলেন বলেই হয়তো কবে আবার চড় দিয়ে নামিয়ে দেয় সেই ভয় তার ছিল। তাই নবাব ওলন্দাজদের বাংলায় একটা কুঠিস্থাপনের অনুমতি দেন যেন আবার পোল্টি খাওয়ার দরকার পড়লে আরেক সাদা লোকের সাহায্য পাওয়া যায়। বাটাভিয়া থেকে সাত যুদ্ধজাহাজ বোঝাই করে এল কামানবন্দুক আর ১১০০ সৈন্য, ইয়োরোপীয় আর মালয়। কথা ছিল এরা আসছে করোম্যান্ডেল ঊপকূলে (ছবি দ্রষ্টব্য) ওলন্দাজ ভারতের জন্যে, কিন্তু দিক পালটে এদের হুগলী পাঠানো হয়। ক্লাইভ ছিল অতি ধুরন্ধর, এই ঘটনা তার নজর এড়ায়নি। নবাবের মতলবও তার অজানা ছিলনা। ওলন্দাজেরা কিন্তু তাকে না চটিয়ে বাণিজ্যে মন দিল যুদ্ধসমাবেশে নয়। সদ্য মুসলমান রাজত্ব ভেঙে ছত্রখান হয়েছে, অলরেডি ভারতীয় মুসলমানেরা ক্ষিপ্ত। এই সময় নতুন শত্রু বাড়ানো বুদ্ধিমানের কাজ হবে কিনা ভাবলেন ক্লাইভ। দুই শত্রু জাত অতএব ভালো ছেলের মত পাশাপাশি রইলো।

চান্দেরনগরের মাইল তিনেক দূরেই ওলন্দাজ কুঠি চিনসুরা। তখন বাংলার নবাব মীর জাফর। ইংরেজের বদান্যতায় গদীতে বসেছিলেন বলেই হয়তো কবে আবার চড় দিয়ে নামিয়ে দেয় সেই ভয় তার ছিল। তাই নবাব ওলন্দাজদের বাংলায় একটা কুঠিস্থাপনের অনুমতি দেন যেন আবার পোল্টি খাওয়ার দরকার পড়লে আরেক সাদা লোকের সাহায্য পাওয়া যায়। বাটাভিয়া থেকে সাত যুদ্ধজাহাজ বোঝাই করে এল কামানবন্দুক আর ১১০০ সৈন্য, ইয়োরোপীয় আর মালয়। কথা ছিল এরা আসছে করোম্যান্ডেল ঊপকূলে (ছবি দ্রষ্টব্য) ওলন্দাজ ভারতের জন্যে, কিন্তু দিক পালটে এদের হুগলী পাঠানো হয়। ক্লাইভ ছিল অতি ধুরন্ধর, এই ঘটনা তার নজর এড়ায়নি। নবাবের মতলবও তার অজানা ছিলনা। ওলন্দাজেরা কিন্তু তাকে না চটিয়ে বাণিজ্যে মন দিল যুদ্ধসমাবেশে নয়। সদ্য মুসলমান রাজত্ব ভেঙে ছত্রখান হয়েছে, অলরেডি ভারতীয় মুসলমানেরা ক্ষিপ্ত। এই সময় নতুন শত্রু বাড়ানো বুদ্ধিমানের কাজ হবে কিনা ভাবলেন ক্লাইভ। দুই শত্রু জাত অতএব ভালো ছেলের মত পাশাপাশি রইলো।

ছবিঃ করোম্যান্ডেল ঊপকূলে ওলন্দাজ উপনিবেশ (উইকিমিডিয়া)

তবে কোলকাতার এত কাছে সাদা লোকের নেতৃত্বে সাদা লোকের সৈনিক কামান বন্দুক মজুত, ক্লাইভের খচখচ যাচ্ছিল না। ধ্বজভঙ্গ নবাবকেও হাতের পুতুল বানিয়ে রাখার পথে এরা বাধা। সাতপাঁচ ভেবে ক্লাইভ ওলন্দাজ দমনের সিদ্ধান্ত নিল। তবে দুম করে এরকম কাজ করতে গেলে গভর্নরের সম্মতিপত্রের প্রয়োজন। তার সবসময়ই ধারনা ছিল ভারতীয় গভর্নর পোস্টটি একটি আজাইরা যন্ত্রনা, এরা খালি তার ভালো কাজে বাগড়া দেয়। সম্মতিপত্র ছাড়াই ক্লাইভ হুগলী নদী ধরে চিনসুরামুখী ওলন্দাজ জাহাজ আটকের নির্দেশ দিয়ে কর্নেল ফোর্ডকে পাঠায়। এই আদেশ পেয়ে ফোর্ড পড়ল বিরাট ঝামেলার তলে, আদেশ পালন করলে গভর্নর খেপবে আর না করলে ক্লাইভ। পলিটিক্যালি কারেক্ট থাকার চেষ্টা করে ফোর্ড গভর্নরের সম্মতিপত্র দেখতে চাইল। ফোর্ডের চিঠি যখন ক্লাইভের কাছে আসে তখন সে কার্ড খেলায় ব্যস্ত, চিঠির উল্টোপিঠে খসখস করে পেন্সিলে লিখে দিল, “প্রিয় ফোর্ড, বাবা যুদ্ধ করতে বলেছি করো গিয়ে যাও। কাউন্সিলের অর্ডার কালকে পাঠিয়ে দিব একসময়”। ফোর্ড ওলন্দাজদের নাস্তানাবুদ করলেন, ঠিক ফরাসীদের মত ওলন্দাজদের পথেও কাঁটা হয়ে রইলেন ক্লাইভ।

চিনসুরার উৎপত্তি ঠিক জানা যায়না, তবে গীর্জার এক ঢালের উপর ১৬৬৫ সালে মৃত্যুবরনকারী কোন এক গভর্নরের উল্লেখ আছে। ধ্বংস করে দেওয়ার আগে গুস্তাভ দুর্গের উত্তর দ্বারে ১৬৮৭ আর দক্ষিন দ্বারে ১৬৯২ তারিখ খোদাই করা ছিল। সুতরাং শহরটা মনে হচ্ছে কমপক্ষে শদেড়েক বছর পুরোন।

ভারতে ওলন্দাজদের ব্যবসাপত্র ভালই চলছিল কর্নেল ফোর্ড এসে হুজ্জত পাকানোর আগ পর্যন্ত। ১৭৭০ থেকে ১৭৮০ সালে তারা সবচাইতে ফুলেফেঁপে ওঠে। এর আগে বাংলায় ওলন্দাজ কুঠির লাভের চেয়ে লোকসানই হত বেশী।অযথা বিশাল মিলিটারি পোষা হত, যাদের কাজ ছিল দুইদিন পরপর লুট করা। বাটাভিয়ার এক বড়কর্তার চিঠিতে পাওয়া যায়, “বাংলার ডিরেক্টরেরা এক একটি খাঁটি বদমাইস, তারা কোম্পানীর শাসনকে নিজেদের লুটপাটের লাইসেন্স মনে করতো। অতি জঘন্য উপায়ে তারা আমাদের সকল আদেশনির্দেশ অমান্য করে গেছে দিনের পর দিন।”

এরপরে বাংলার মিলিটারি রাজত্ব কমিয়ে আনা হয়। মোটে দশজন গোলন্দাজ, ঊনসত্তুর নাবিক আর আটচল্লিশ সৈন্য রয়ে যায়। একই সময়ে দেশে ছিল চৌষট্টি সিভিলিয়ান আর দুইটি পাদ্রী। জাভার আফিম বাণিজ্য ছিল কোম্পানীর লাভের মূল উৎস। পাটনা এজেন্সী থেকে আটশো পেটি মাদক বাটাভিয়ায় চালান যেত প্রতি বছর, তারপরে দ্বীপ ঘুরে ঘুরে সম্ভবত চীন পর্যন্ত তা চালান হত। একেকটি পেটি ভরা থাকতো ১২৫ পাউন্ড মাদক, কোম্পানীর কিনা দাম পড়তো ৭০০ থেকে ৮০০ রুপী। ইন্স্যুরেন্স, ঘাটমাশুল সব মিলিয়েই। বাটাভিয়ায় সেই পেটি বিক্রি হত ১২৫০ রুপীতে, সুতরাং ফি বছর লাভ সহজেই চার লাখ রুপীর উপরে পড়তো।

চিনসুরা কুঠি বাটাভিয়ার শাসনের অন্তর্গত ছিল। একজন ছিল গভর্নর বা ডিরেক্টর, কাউন্সিল ছিল সাত সদস্যের। তার মধ্যে পাঁচজনের ভোটাধিকার ছিল আবার পরামর্শও দিতে পারতো, আর দুইজন ভোট দিতে পারতো না খালি বুদ্ধি পরামর্শ দিত মাঝে মাঝে।বড়কর্তা সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কাউন্সিলের মতামত নিতে বাধ্য ছিল, আর সিদ্ধান্তে ভোটাভুটির রায়ই চূড়ান্ত গণ্য হত। কিন্তু বেতনভাতার মালিক ছিল স্বয়ং গভর্নর, তাই কাউন্সিল জিনিষটা আসলে ভুয়াই। বড়কর্তার কাগুজে বেতন ছিল বড়ই অল্প, কিন্তু উপরি জুটতো প্রচুর। কুঠিতে একমাত্র তারই একটি পালকি ছিল, সে শহরের মধ্যে পালকিতে ঘুরার সময় লোকে দাঁড়িয়ে বাজনা বাজাত। কাউন্সিল মেম্বাররা ছিল সিনিয়র ব্যবসায়ী। শহরের দারোগা, যিনি মেয়রও বটে, তার পদবী ছিল সিনিয়র ব্যবসায়ীর কিন্তু বেতন জুটত কম। কিন্তু ওইযুগে জজ ম্যাজিস্ট্রেট হাতে থাকা দারোগার উপরি ইনকাম কোন ব্যাপারই ছিলনা, বেতনে কি আসে যায়। দরকারে অদরকারে রাস্তা থেকে যেকাউকে পাকড়ে চাবকানোর অধিকার তার ছিল, নইলে ফাইন আদায় করা হত। ফাইনের পয়সা তার পকেটেই যেত। শোনা গেছে তারা ধনী ব্যবসায়ীদের চোরাচালানের অপরাধে ধরে বিশ হাজার রুপী পর্যন্ত ফাইন করেছে, আর গাছে বেঁধে তাকে চাবকানো হয়েছে পাই পয়সা উসুল হওয়া পর্যন্ত। ভারতীয়রা গভর্নরের চেয়ে দারোগাকেই বেশি ভয় পেত।

১৭৭০ সালে চিনসুরা কুঠি হেঁটে কভার করতে পঁয়তাল্লিশ মিনিটমত লাগতো। বাসাগুলোতে কোন চিমনি ছিল না, একতলা মোটামুটি মাটির লেভেলেই তৈরী করা হত। কাঁচের জানালা জিনিষটা অপরিচিত ছিল, বাঁশের বা বেতের ফ্রেম ঝুলত ওখানে। “কাঁচ জিনিষটা”, তারা বলতো, “বছরের নয় মাস তীব্র গরমের দেশে বড়ই অস্বস্তিকর।” এইটে পাঙ্খা আবিষ্কারের আগের কথা। পাঙ্খা জিনিষটা এক ওলন্দাজ গভর্নরের কীর্তি, তার কাছে আমরা চিরকৃতজ্ঞ। এখন কাঁচের জানালা একটি অত্যাবশ্যক জিনিষ, শীতের কনকনে হাওয়া আর গ্রীষ্মের গরম বাতাস ঠেকানোর প্রকৃষ্ট উপায় কাঁচ। আজকের আধুনিক যুগে ঘর ঠান্ডা রাখার একমাত্র উপায় হল কাঁচের জানালা বন্ধ করে রুম অন্ধকার করে দেয়া আর পাংখা ছেড়ে দেয়া।

চিনসুরার গীর্জা শহরের দক্ষিণ ঘাটের সামনে, সম্মানিত জনাব সিক্টারম্যান আর ভেরনেটের বদান্যতায় তৈরী। তবে ধর্মকর্মে ওলন্দাজেরা ছিল চরম উদাস, গীর্জাস্থাপনের অনেক বছর পর্যন্ত কোন পাদ্রী ছিলনা, এক যিকেনট্রুস্টার বা “রোগী অভয়দানকারী” ধর্মকর্মের কাজ সারতো। তার টাইটেল ছিলনা, ছেলেদের ব্যাপ্টাইজ করার সময় কোলকাতা থেকে পাদ্রী আমদানী করা হত। চিনসুরার সবচাইতে পুরোন গীর্জা আর্মানীদের তৈরী, ১৬৯৫ সালে। বাংলায় ভিনদেশীদের তৈরী এটাই সর্বপ্রথম গীর্জা। গীর্জার প্রতিষ্ঠাতার ছেলে য়োহান মার্কারের কবরে খোদাই করা, “এইখানে সমাহিত প্রসিদ্ধ বিদেশী কোহা য়োহান, মার্কার বংশীয়, শোশদেশীয় জুলফার আর্মানী। তিনি ছিলেন এক মহান ব্যবসায়ী, রাজামহারাজার স্নেহধন্য। তিনি উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব এবং পশ্চিমে ভ্রমণ করেছিলেন, হিন্দুস্তানের হুগলীতে ১৬৯৭ সালের ৭ই নভেম্বর তার মৃত্যু ঘটে”।

হুগলী কালেক্টরের জবানীতে চিনসুরার বর্ণনা পাওয়া যায় এখানেঃ

সপ্তদশ শতাব্দীতে ওলন্দাজেরা চিনসুরায় ঘাঁটি গাড়ে। মহান সম্রাট শাজাহানের দেয়া কুঠি পত্তনের সনদে তারিখ লিখা আছে ১৬৩৮। বর্তমানে র‍্যাকেট কোর্টে একটি খোদাই করা উদ্বোধনের তারিখ অবশ্য ১৬৮৭, তবে সেটা গুস্তাভ দূর্গপত্তনের তারিখও হতে পারে।

১৭৯৫ এর ২৮ জুলাই ইংরেজ চিনসুরার দখল নেয়, পরে ১৮১৭ এর ২০ সেপ্টেম্বর তা ওলন্দাজের হাতে ফিরত দেওয়া হয়। মাঝামাঝি সময়টা ওলন্দাজ বাৎসরিক ৮৪৭ রুপী খাজনা দিত অল্প কিছু জমি যা তাদের দখলে ছিল তার জন্য। ২৭ মে ১৮১৮ তারিখের এক চিঠিতে কালেক্টরের প্রতি এক ওলন্দাজ অধিবাসী ওভারবেক বর্ননা করেন যে তার কাছ থেকে ইংরেজ সরকার ১৮১১ সালে জরাজীর্ণ ঢাকা কুঠি ১১৫২ সিক্কা রুপীতে ক্রয় করেন, ওইটে দিয়ে ১৮১৭ সাল পর্যন্ত চিনসুরার খাজনা পরিশোধ করা হয়। চিঠিতে আরও বর্ণনা পাওয়া যায় একটি দূর্গের আর ভ্যান হুর্ন ডাইক নামের একটি রাস্তার। দূর্গটির আজ কোন নামগন্ধ নেই, কিন্তু রাস্তাটির ভগ্নাবশেষ আজও চিনসুরা আর চান্দেরনগর রেলস্টশনের মাঝামাঝি দেখতে পাওয়া যায়।

১৭ মার্চ ১৮২৪ সালে লন্ডনে লিখিত চুক্তি অনুযায়ী চিনসুরা কুঠিসহ কাল্কাপুর, ঢাকা, পাটনা, ফুলতা আর বালাসোরের ওলন্দাজ কুঠি ইংরেজের হাতে পড়ে। চুক্তির কিছু চম্বক অংশ নিচে বর্ণিত হলঃ

“(অনুচ্ছেদ ৮) মহান নেদারল্যান্ড সাম্রাজ্য ভারতবর্ষে তার সকল স্থাবর সম্পত্তি ও জমিজমা ইংরেজ সাম্রাজ্যের হাতে অর্পন করিল।

(অনুচ্ছেদ ৯, ১০) সুমাত্রা ও মার্লবোরো দূর্গের বদলে মালাক্কা ইংরেজের হাতে সমর্পণ করা হইল।

(অনুচ্ছেদ ১১, ১২) বেনকুলেন দ্বীপ নেদারল্যান্ডস ও সিংগাপুর দ্বীপ ইংরেজের হাতে অর্পিত হইল।

(অনুচ্ছেদ ১৪) হাতবদলকৃত জমিতে অধিবাসীরা অনধিক ছয় বৎসর (চুক্তির তারিখ হইতে) পর্যন্ত বিনা বাধায় বসবাস ও বাণিজ্য করতে পারবে, এরপরে তারা যেকোন একটি সাম্রাজ্যের আনুগত্য প্রকাশে বাধ্য থাকিবে।”

অধিকাংশ ওলন্দাজ চিনসুরায় রয়ে গেল, মহামান্য ওভারবেক আট কর্মকর্তাসহ নেদারল্যান্ডের পেনসন টানছিলেন। পরে ১৮৪০ এ হারক্লট সাহেব চিনসুরার রেজিস্ট্রি অফিসের দায়িত্ব পান। তার বেতন ছিল মাসপ্রতি ৫০০ রুপী। তার সহকারী মিচেল পেত মাস গেলে ৬০ সিক্কা রুপী। আর্মানী গীর্জার কাছে ফিরিঙ্গিটোলায় ছিল তার অফিস। মোগল সম্রাটের ওলন্দাজদের প্রতি লিখিত ফার্সি সনদ আর ফরমান রাখা হত প্রেসিডেন্সি কমিটির কাছে, আর যেকোন ইয়োরোপীয় দলিল রক্ষিত হত হারক্লটের রেজিস্ট্রি অফিসে। সনদ ফরমান বলতে ১৬৩৮ থেকে ১৬৫০ সালের মধ্যে সম্রাট শাজাহান প্রেরিত দুইটি, ১৬৬২ সালে সম্রাট আওরঙ্গজেব প্রেরিত একটি আর ১৭১২ সালে জাহাঙ্গীর শা প্রেরিত একটি, মোট চারটে ফরমান। ঠিক চান্দেরনগরের মত এখানেও ওলন্দাজ দিল্লী হতে জমি লীজ নিয়েছিল, আর পরে তালুকদার লাখেরাজদের মাধ্যমে সেই জমি ম্যানেজ করা হয়। সীমানা নির্ধারন করে দেয়া হয়নি সেই ফরমানে, কিন্তু ঘাটে ঘাটে পুলিশপ্রহরা ছিল পুশ ইন পুশ আউট ঠেকানোর জন্য। মোগল সরকারের কাছে ওলন্দাজদের খাজনা নিম্নরুপঃ

চিনসুরা সদরঃ ৯১০ সিক্কা রুপী আট আনা

মীর্জাপুর বাজারঃ ২৩৫ সিক্কা রুপী আট আনা

দুর্গের জমিঃ ২৬৬ সিক্কা রুপী দশ আনা

….......................................

মোটঃ ১৪১২ সিক্কা রুপী ১০ আনা

১৮২৯ সালে চিনসুরায় দুইটি হোটেল ছিল, একটি নিলামঘর আর ছিল এন ডিরোজারিও সাহেবের ছাপাখানা। ১৮ বছরের বেশী বয়সের খ্রিস্টান ছিল চিনসুরায় ৭৬ আর ব্যান্ডেলে ৩০ জন। ওভারবেক, হফ, হারক্লট, ফেইথ (জার্মান জুতা প্রস্তুতকারী), মিশেল (ফরাসী), এবং বার্গ-অ্যান্ড্রেস, তালদানিবাসী একটি ড্যানিশ নীলকর...এই নামগুলি চিনসুরার অধিবাসী লিস্টে পাওয়া যায়। এছাড়াও আমরা পাই নিলামকারী ব্ল্যান্ড, দস্তানা প্রস্তুতকারক স্টিফেন ম্যাথিস আর চুরুট ফ্যাক্টরীর সুপার রবার্টস সাহেবের নাম। দুইটি মিশনারীও ছিল। পুরোন ওলন্দাজ গীর্জা আর গোরস্তান দুইটি কোলকাতার বিশপের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রেভারেন্ড মর্টনকে পাদ্রী নিযুক্ত করা হয়। বিশ রুপীতে একটি কেয়ারটেকার, ছয় রুপীতে চৌকিদার, দুই রুপীতে বেয়ারা আর ৩-৮ রুপীতে দুইটি কুলি পান তিনি। আলো আর রেড়ির তেলের জন্য ৫ রুপি বরাদ্দ হয়। পুরোন পুলিশ স্টেশনটিকে ঝেড়েপুঁছে একটি প্রার্থনাস্থান বানানো হয়।

….........................................................

১৮৮৮ সালে প্রকাশিত জর্জ টয়েনবির “A sketch of the administration of the Hooghly district from 1795 to 1845” অবলম্বনে।

সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ লিখকের মতামতের জন্য অনুবাদক দায়ী নহেন।

পাদটীকা

  • ১. চিনসুরা অর্থাৎ বর্তমান পশ্চিম বাংলার চুঁচুড়া
  • ২. বর্তমান ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তাকে ঔপনিবেশিক আমলে ডাকা হত বাটাভিয়া

পাদটীকা

  • ১. চিনসুরা অর্থাৎ বর্তমান পশ্চিম বাংলার চুঁচুড়া
  • ২. বর্তমান ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তাকে ঔপনিবেশিক আমলে ডাকা হত বাটাভিয়া

মন্তব্য

মরুদ্যান এর ছবি

পড়লাম। হাসি

সত্যপীর এর ছবি

থ্যাঙ্কু ভাই।

..................................................................
#Banshibir.

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

ভাল লেগেছে। চলুক আরো লেখা চাই।

সত্যপীর এর ছবি

দিমু দিমু।

..................................................................
#Banshibir.

পথের ক্লান্তি এর ছবি

ভাল লাগল ইতিহাসের পাঠ।

সত্যপীর এর ছবি

ধন্যবাদ।

..................................................................
#Banshibir.

আশফাক আহমেদ এর ছবি

চলুক

-------------------------------------------------

ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

তারেক অণু এর ছবি
তানিম এহসান এর ছবি

বাহ!

উত্তম জাঝা! লম্ফঝম্ফ এমন হলে কেমন হয় চোখ টিপি

সত্যপীর এর ছবি

কুনো লম্ফঝম্প নাই, সব বন! খালি আমি লাফামু চাল্লু

..................................................................
#Banshibir.

তাপস শর্মা এর ছবি

চলুক

পীরিতিহাস পড়তে ভালু পাই দেঁতো হাসি

সত্যপীর এর ছবি

পীরিতিহাসটা কি বাই?

..................................................................
#Banshibir.

তাপস শর্মা এর ছবি

পীর এর লেখা অনুবাদের ইতিহাস = পীরিতিহাস। আম্নেতো মিয়া চিপাচুপার কথা ভাইবা বইসা আছেন, তো ক্যাম্নে কী খাইছে

সত্যপীর এর ছবি

আমিতো ভাবসি পীরিতির কথা পড়তে চাইসিলেন চোখ টিপি

..................................................................
#Banshibir.

তাপস শর্মা এর ছবি

তো করেন না, আপনারে আটকায় কেডা দেঁতো হাসি । আর ইয়ে মানে ইতিহাসের দুষ্টু রাজাদের মতো ইয়ে ইয়ে না করলেই হয় ইয়ে, মানে...

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

চমৎকার, চলতে থাকুক।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

সত্যপীর এর ছবি

থাকিবে ভয় নাই হাসি

..................................................................
#Banshibir.

কালো কাক এর ছবি

এটা একটু একাডেমিক ছাঁচের লাগলো। লম্ফঝম্প মন্তব্য করতে চাআআই দেঁতো হাসি

সত্যপীর এর ছবি

একাডেমিক পড়াও দরকার আছে হাসি

লন আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

..................................................................
#Banshibir.

দ্যা রিডার এর ছবি

চলুক হাসি

ফাহিম হাসান এর ছবি

আপনার অনুবাদের সিরিজটা বেশ ভাল লাগছে। কিছু জায়াগায় অবশ্য হোঁচট খেয়েছি, কিন্তু লেখার গুণে পরক্ষণেই সেগুলো ভুলে যাই।

আপনার আগের পোস্টে কিছু অপ্রাসঙ্গিক বা অবুঝ মন্তব্য দেখেছি। কেউ কেউ ধরতে পারছেন না যে এইটা অনুবাদ, আবার আপনার বৈঠকী ঢংটাও কারো কাছে ভাল লাগছে না। তাই একটা ডিসক্লেইমার দেওয়াটা জরুরী ছিল।

কিন্তু -

মন্তব্যে অযথা লম্ফঝম্প করা হইতে বিরত থাকুন।

এই টোনটা ভাল লাগে নাই। এতে পাঠকের প্রতি একটা অশ্রদ্ধা প্রকাশ পায়। কারো বক্তব্য আপনার পছন্দ না হলে প্রতিমন্তব্যে জবাব দেওয়া উচিত। ঢালাওভাবে "লম্ফঝম্প থেকে বিরত থাকুন" বলাটা অশোভন। আর যারা আগের লেখাগুলো পড়েন নাই তারাও এই ডিস্ক্লেইমারের কন্টেক্সটটা বুঝবে না।

সত্যপীর এর ছবি

আচ্ছা যান সরিয়ে দিলাম।

..................................................................
#Banshibir.

ফাহিম হাসান এর ছবি

ধন্যবাদ
হাসি

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি
সত্যপীর এর ছবি

হঠাত আপনার চোখে পড়ে গেছি মনে হচ্ছে? একদমে সবগুলিতে প্রশংসা করে ভরিয়ে দিচ্ছেন? দেঁতো হাসি

লন এক কেজি আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- , পরবর্তী পর্বগুলোতেও ফিডব্যাক চাই কিন্তু।

..................................................................
#Banshibir.

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

আসলে আপনার পোস্টগুলো পড়ে খুব মজা পাচ্ছি। হাসি
খুব ভালো লিখেন।

সত্যপীর এর ছবি

বিরাট শরমিন্দা হইলাম লইজ্জা লাগে

..................................................................
#Banshibir.

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।