পাহাড়ের ইঁদুর

সত্যপীর এর ছবি
লিখেছেন সত্যপীর (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৬/০২/২০১২ - ১০:৫১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ছত্রপতি শুনলে মনে হয় ছাতি মাথায় মানুষ বুঝি। মারাঠি ভাষায় ছত্রপতি অর্থ সম্রাট। সংস্কৃত শব্দ ক্ষেত্র (এলাকা) থেকে ছত্র, সুতরাং ছত্রপতি=ক্ষেত্রপতি=ফিল্ড মার্শাল। মোগল সাম্রাজ্যের মাথাব্যথার কারন হয়ে ওঠা দুর্ধর্ষ মারাঠা সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ ভারতের সকল হিন্দু মৌলবাদীদের কলিজার টুকরা। হিন্দু প্রজানিপীড়নকারী মুসলমান মোগল বাদশার বিপক্ষে তিনি ধারাল হিন্দু তলোয়ার নিয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন বলে কথিত আছে। তবে পৃথিবীর অন্যান্য নেতার মতই তার আসল ধর্ম ছিল ক্ষমতা, ক্ষমতার লোভে তিনি যে মোগলের সাথে আজ আড়ি দিতেন কাল তাকেই বুখে আয় বাবুল বলে ডাক দিতেন। শিবাজী প্রতিষ্ঠিত মারাঠা বাহিনী ছিল প্রথম শ্রেণীর গেরিলা যোদ্ধা, সংখ্যায় বৃহত্তর সৈন্যবাহিনীকে ছোট ছোট সুশিক্ষিত মারাঠা দলের হিট অ্যান্ড রান পদ্ধতিতে নাকাল করতে জুড়ি ছিলনা। ছেলে ঘুমালো পাড়া জুড়ালো বর্গী এল দেশে, ছেলেবেলায় পড়া কবিতার বর্গী হল এই মারাঠা গেরিলার দল।

১৮৮৪ সালে প্রকাশিত ডেভিড সিনক্লেয়ার লিখিত “History of India” অবলম্বনে।
…...........................................................................

শিবাজীর উত্থানের আগ পর্যন্ত মারাঠাদের তেমন কেউ আমল দিতনা। ভোঁসলে পরিবারের শা’জীর ছেলে শিবাজী। বিজাপুরের আহমেদনগর দরবারের বড় অফিসার শা’জী। সাওনের দূর্গে শিবাজীর জন্ম, পুনা শহরে তার বেড়ে ওঠা। ১৬২৭ সালের কথা। দাদাজী কোনদেও বলে এক ব্রাহ্মন তার দেখভাল করতো। খাঁটি মারাঠা শিক্ষায় শিক্ষিত শিবাজী। ঠিকমত কলম ধরতে পারতেননা কিন্তু ছিলেন লক্ষ্যভেদী তীরন্দাজ। বর্শা, তলোয়ার, ঘোড়দৌড় সবকিছুতেই একবারে হরলিক্স চ্যাম্পিয়ন। ব্রাহ্মন গুরুর হিন্দু পুজোপাঠে শিবাজী অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন, আর জাতিভেদের অসীম গুরুত্ব তার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায়। সারাদিন খেলা শেষে তিনি রামায়ন মহাভারতের গল্প শুনতেন বসে বসে, আর ঐ নিয়ে মুখে মুখে ছড়া বানাতেন। ষোল বছর বয়স হলে পরে তিনি নানাবিধ গুন্ডা বদমাসদের সাথে মিশা আরম্ভ করেন, আর নিজের হিরু হিরু ভাবের জন্যে অচিরেই তাদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন।

শিবাজীর কর্মজীবন আরম্ভ হয় তুর্ণা দূর্গ লুটপাটের মধ্য দিয়ে। ১৬৪৬ সালের কথা। লুটপাটের এক পর্যায়ে বিরাট স্বর্ণভান্ডারের খোঁজ পাওয়া যায়, প্রাচীন আমলের স্বর্ণ। তার দৃঢ় বিশ্বাস হল এইটে দেবীমাতা ভবানীর আশির্বাদ, অতএব এই সোনা কোন একটি মহৎ উদ্দেশ্যে ব্যয় করতে হবে। কিনা হল ব্যাপক গোলাবারুদ, রায়গড়ে তৈরী হল ঝাঁ চকচকে নতুন একটা দূর্গ। পরবর্তী দুই বছর দূর্গের পর দূর্গ লুট করা হল, শিবাজী শক্তিশালী হয়ে উঠতে থাকলেন। বিজাপুরের রাজা খবর পেয়েও কোন এক রহস্যময় কারনে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছিলেননা, কাঁচায় শিবাজীর বাঁশ নুইয়ে দিলে ঐ বাঁশ আর পরে ঠাশ ঠাশ করার সুযোগ পেতনা। শিবাজীর এমনই কপাল যে এমনকি মোগল সাম্রাজ্যে হানা দেবার পরেও বাদশা আওরঙ্গজেব তেমন গা ই করেননি। পরে অবশ্য এর জন্যে হাত কামড়েছিলেন তিনি। তাদের চোখের সামনে মারাঠা সুপার পাওয়ার হয়ে ওঠে, একসময় বিজাপুরকে শিবাজী খাজনা দিতে বাধ্য করেন আর আওরঙ্গজেবকে পিটিয়ে দাক্ষিণাত্য থেকে দূর করা হয়।

যাই হোক, ওসব পরের কথা। কল্যান নগর দখল করে গভর্নরকে জেলে ঢোকানোর খবর পাওয়ার পরে প্রথম বিজাপুর নড়েচড়ে বসে। সুলতান আদিল শা তার কর্মচারী শা’জীকে বন্দী করেন আর বলেন শিবাজী এসে ধরা দিলে তাকে মুক্তি দেওয়া হবে। শিবাজী একটু মুশকিলে পড়লেন। এতদিন চিপায় চাপায় মোগল এলাকা এড়িয়ে লুটপাট চালাতেন, বাদশাহী মিলিটারির তুলনায় তার লোকবল কমই ছিল। বিজাপুরও যে তিনি ফট করে জয় করে ফেলতে পারবেন তারও ভরসা কম। তখনও তিনি স্মল টাইম ক্রুক। তিনি বরং নতুন ফন্দী করলেন, মোগলদের সাথে চুক্তি করে বিজাপুর গুঁড়িয়ে দিলে কেমন হয়? পত্রপাঠ শাজাহানের কাছে খবর পাঠানো হল। শিবাজীর ভালমানুষ পিতাকে বদমাশ বিজাপুরের আদিল শা বিনা কারনে বন্দী করে রেখেছে কেন শাজাহান জবাব চাই। ফরমান জারী হল, শা’জী মুক্ত হলেন। শাজাহান শিবাজীকে পাঁচ হাজার ঘোড়া পাঠালেন।

তখন দাক্ষিণাত্যের গভর্নর হিসেবে নতুন চাকরিতে জয়েন করেছেন আওরঙ্গজেব। বিজাপুরের শিয়া সুলতানের উপর তার ভারি রাগ ছিল। যাই হোক, শাজাহান অসুস্থ এই খবর পেয়ে তড়িঘড়ি করে আওরঙ্গজেব যখন দিল্লীর দিকে দৌড় দিলেন তখন বিজাপুরের সুলতান মারাঠাদের ভর্তা বানানোতে মন দিলেন। পাঁচ হাজার ঘোড়সওয়ার আর সাত হাজার সৈন্য নিয়ে বিজাপুরের কমান্ডার আফজাল খাঁ শিবাজীকে আক্রমন করতে গেলেন। এই কথা শুনে শিবাজী চিঠি লিখে জানালেন তার অতীত কর্মকান্ডের জন্য তিনি দুঃখিত, লজ্জিত, ব্যথিত ও পীড়িত। খাঁ সাহেবের মত ওয়ার্ল্ড ক্লাস কমান্ডার তার মত তুচ্ছ লোকের সাথে যুদ্ধ করতে আসছেন এর থেকে লজ্জার আর কিই বা হতে পারে। খাঁ সাহেব চাইলে আস্ত দূর্গ তাকে আজকেই তুলে দিতে রাজী আছেন শিবাজী এই রকম ইনিয়ে বিনিয়ে লিখা কথায় ভর্তি ছিল চিঠি। চিঠি পেয়ে আফজাল খাঁ অত্যন্ত প্রীত হলেন, শিবাজীর সাথে দেখা করতে রাজী হলেন। ঝুঁকে কুশল বিনিময় করার সময় শিবাজী হাতের তালুতে লুকিয়ে রাখা স্টীলের ধারালো অস্ত্র দিয়ে পেট চিরে দিলেন আফজালের, তারপরে ছুরি বসিয়ে দিলেন বুকে। শিবাজীর সৈন্যরা পিছন থেকে আক্রমন করলো বিজাপুরের সিপাইদের, তারপরে কেটে ফালা ফালা করা হল তাদের। এইভাবে বিশ্বাসঘাতকতা আর দস্যুবৃত্তির মাঝে শিবাজীর হাতি ঘোড়া পাইক বরকন্দাজ সোনা দানা বেড়ে উঠতে থাকলো।

এইবার শিবাজী ঠিক করলো কয়টা মোগল মারা যাক। তিনি আর প্রধানমন্ত্রী মোরারজী মিলে মোগল সাম্রাজ্যে ঝটিকা হানা দিয়ে লুটপাট আরম্ভ করলেন। আওরঙ্গজেবের মামা তৎকালীন জিলা প্রশাসক শায়েস্তা খাঁ ভাবলেন এদের একটা শিক্ষা দেয়া দরকার। তিনি মারাঠা এলাকা দখলে নিলেন, আর পুনায় যেখানে শিবাজী বড় হয়েছেন তার খুব কাছে হেডকোয়ার্টার বানালেন। এইখানে শিবাজী একটা মস্ত সাহসের কাজ করেছিলেন। কোন এক গভীর নির্জন রাতে বড় একটি বিয়ের পরবের পর পুনা শহর ঘুমিয়ে ছিল। অল্প কিছু শাগরেদ নিয়ে শিবাজী শায়েস্তা খাঁর বাসায় হামলা করে বসলেন। শায়েস্তা কোনমতে পালিয়েছিলেন, কিন্তু কাটা পড়ে তার একটি আঙুল।

এরপরে শিবাজী সুরাট আক্রমন করে বিরাট লুটের ভান্ডার গড়ে তোলেন। তবে লুটের মাল আরও বাড়তে পারতো, কিন্তু বদমাস ইংরেজ আর পর্তুগীজ তাদের জিনিষ লুট তো করতে দেয়ই নি বরং অনেক এলাকাবাসীর মালসামানও বাঁচিয়ে দিয়েছিল। শিবাজী এইবার রাজা টাইটেল নিলেন, আর নিজের ছাপ্পামারা কয়েন দিয়ে বাজার ভরিয়ে দিলেন।

শিবাজী তলে তলে একটি নৌবাহিনী গড়ে তুলেছিলেন, ঐ দিয়ে এখন মক্কাগামী হবু হাজ্বীদের জাহাজ আক্রমন করা শুরু করলেন। কুরান শরীফ বগলে রাখা বাদশা আওরঙ্গজেবের বুকে শেল বিদ্ধ হল এই খবরে, ভয়ংকর ক্ষিপ্ত হলেন তিনি। শিবাজীকে তিনি গালি দিয়ে ডাকতেন পাহাড়ের ইঁদুর। কিন্তু ঐ ইঁদুরদমনে বড় সৈন্য পাঠাতে তার হাল্কা সমস্যা ছিল। শাজাহান তখনও জীবিত, যদিও বন্দী। সৈন্যসামন্ত পাশে থাকলে বুকে বল থাকে। যাই হোক, হজ্বগামী জাহাজে ইঁদুর কাটলে তো সমস্যা, তাই জয় সিং আর দিলির খাঁর অধীনে সৈন্য প্রেরিত হল। বিধর্মী কাফির মানেই টু টাইমার, তাই আওরঙ্গজেব জয় সিং এর ছেলেকে দরবারে রেখে দিলেন যেন জয় পরে পোল্টি না খায়। শিবাজী পিছিয়ে চুক্তি করতে বাধ্য হলেন, মারাঠি অধিকৃত সকল মোগল এলাকা ছেড়ে দিতে হল। বদলে তিনি বিজাপুরের কিছু অংশের রাজত্ব পেলেন, যার রাজস্বের এক চতুর্থাংশ তিনি আদায় করতেন। একেই বলা হয় চৌথ।

এরপরে শিবাজী মোগল সম্রাটের বাহিনীতে যোগ দিলেন, আর আওরঙ্গজেব তাকে দরবারে চা বিস্কিট খেতে ডাক দিলেন। পাঁচশো সুশিক্ষিত ঘোড়সওয়ার নিয়ে শিবাজী রওনা দিলেন, কিন্তু দিল্লী পৌঁছে তার আঁতে হাল্কা ঘা পড়লো। তাকে বিরাট কোন সম্মান দেওয়া হলনা, জেনারেল কি মেজর জেনারেল নয়, সামান্য ক্যাপ্টেন মেজরের সম্মান পেলেন শুধু। তারপরে হল আরও মজা, যত্নআত্তি বাদ দিয়ে তাকে গারদে পোরা হল। তবে জয় সিংএর এক ছেলের সহায়তায় একটি ঝুড়ির ভিতরে করে তিনি পালাতে সক্ষম হলেন।

যোধপুরের যশবন্ত সিং আর দাক্ষিণাত্যের সুলতান মুয়াজ্জেমকে শিবাজীর বিপক্ষে পাঠানো হল, কিন্তু খাঁটি যোদ্ধার মত শিবাজী তাদের ঘুষ দিয়ে নিজেদের দলে ভিড়ালেন। বিজাপুর গোলকোন্ডা দখল করা হল, রাজধানী রায়গড়ে শিবাজী এলাকার রাজা হিসেবে নিজেকে ঘোষনা দিলেন। তাকে পাল্লার একপাশে বসিয়ে অন্য পাল্লায় যতটা সোনা উঠলো তা ব্রাহ্মনদের দান করা হল।


ছবিঃ শিবাজীর রাজ্যাভিষেক (উইকিমিডিয়া)

কিছুদিন পরের কথা। কর্ণাটক তখন শিবাজীর দখলে, গোলকোন্ডা আর বিজাপুরও। শিবাজী অভ্যন্তরীন কোন্দল মিটাতে ব্যতিব্যস্ত ছিলেন, তার ছেলে শামবাজী দিনে দিনে অবাধ্য হয়ে উঠছিল। সে পালিয়ে শত্রুপক্ষে যোগ দেয়, দিলির খাঁ তাকে ব্যবহার করে মারাঠাদের দুই ভাগে বিভক্ত করতে চাইছিল। আওরঙ্গজেব কিন্তু অটল, শামবাজীকে বন্দী করে দিল্লী পাঠানোর হুকুম দিলেন। হুকুম কার্যকর হবার আগেই শামবাজী চম্পট দেয়, শোনা যায় পরে সে আবার বাপের সাথে মিলিত হয়। রাজধানী রায়গড়ে ৫ই এপ্রিল ১৬৮০ সালে শিবাজী মারা যান।

…............................................................
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ লিখকের মতামতের জন্য অনুবাদক দায়ী নহেন।


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

ছত্র বোধহয় ক্ষত্র থেকে এসেছে, ক্ষেত্র থেকে নয়।

শিবাজীর ঐ নিনজা অস্ত্রটার নাম ছিলো বাঘনখ, যেটা দিয়ে আফজাল খাঁকে সে স্ট্যাব করে। আর তাকে (সম্ভবত) বন্দী করা হয়েছিলো আওরঙ্গজেবের দরবারে সম্রাটের দিকে পিছন ফিরে বেরিয়ে আসার বেয়াদবির কারণে।

সত্যপীর এর ছবি

ছত্র বোধহয় ক্ষত্র থেকে এসেছে, ক্ষেত্র থেকে নয়।

ছত্র = ক্ষেত্র এই জিনিষটা আমি পেয়েছি এখানে, প্রথম লাইনে। আপনার কথা ঠিক হতে পারে, আবার এটাও ঠিক হতে পারে।

শিবাজীর ঐ নিনজা অস্ত্রটার নাম ছিলো বাঘনখ

ঠিক, টাইগার্স ক্ল।

আর তাকে (সম্ভবত) বন্দী করা হয়েছিলো আওরঙ্গজেবের দরবারে সম্রাটের দিকে পিছন ফিরে বেরিয়ে আসার বেয়াদবির কারণে।

এই কথাটা সিনক্লেয়ার ভাইয়া লিখতে ভুলে গেছেন মনে হয় চিন্তিত

..................................................................
#Banshibir.

চরম উদাস এর ছবি

এইবার কার ইয়োগা মারলেন গো? দাড়ান পড়ে দেখি।

সত্যপীর এর ছবি

আমি কিন্তু লুক ভালো উদাস ভাই, না বুইঝা মাঝে মাঝে "ইয়োগা" মারি আর কি দেঁতো হাসি

..................................................................
#Banshibir.

ধুসর গোধূলি এর ছবি

ইয়োগা না, ইয়োগা না। বলতে হবে, 'কার গোলাম-আযম মেরে দিলেন, হে সইত্যপীর!'

সত্যপীর এর ছবি

চিন্তিত

..................................................................
#Banshibir.

অরফিয়াস এর ছবি

যাহ, ছত্রপতির ছত্র হাওয়া

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

সত্যপীর এর ছবি

চাল্লু

..................................................................
#Banshibir.

আসিফ হাসান এর ছবি

আফজাল শিবাজীকে ডেকেছিলেন না শিবাজী আফজালকে এটা নিয়ে পরষ্পরবিরোধী ব্যাখ্যা আছে। Stewart Gordon এর The Marathas এ বলা হয়েছে আফজাল খান নিজেই শিবাজীকে ডেকে পাঠান। এর আগে ১৬৩৯ সালে আফজাল খান কস্তুরি রাঙ্গা নামে এক রাজাকে একইভাবে মিটিং করতে ডেকে কোপা শামসু করে দেন বলেই নাকি শিবাজীর মনে সন্দেহ ছিল। উইকিপিডিয়াতেও শিবাজীর পেজে লেখা শিবাজী চিঠি লিখে ডেকেছেন আবার আফজাল খানের পেজে লেখা আফজাল দুত পাঠিয়ে ডেকেছেন। তবে শিবাজীর কাজেকর্মে এই ঘটনার আগে ও পরে দুই নাম্বারী পদ্ধতি ব্যবহার দেখে এটা শিবাজীর কান্ড ভাবতে খুব একটা কষ্ট হয় না। তবে মারাঠারা এই ঘটনাকে মারাত্বক সম্মান করে ও যেকোন মূল্যে জয়ের একটা উদাহরন হিসেবে দেখে। কিছুদিন আগে মহেশ মান্জরেকার "আমি শিবাজী রাও বলছি"(মারাঠী নাম বলতে পারছিনা) নামের একটি সিনেমা বানিয়েছিলেন যেটাতে এই ঘটনাটি বেশ হাইলাইটেড হয়েছিল। সেই একই সিনেমা পশ্চিমবঙ্গে "আমি সুভাস বলছি" নামে রিমেক হয় যেটাতে নেতাজীর জীবনে এমন দুই নাম্বারীর কোন উদাহরন না থাকায় নেতাজী মিঠুন চক্রবর্তীকে(ছবির হিরো) শিবাজীর উদাহরন দিয়ে বোঝান যে ঠেকায় পড়লে কোপা শামসু করে দেয়া জায়েজ আছে। চাল্লু

আর তাদের মারামারিটা দুর্দান্ত! নিনজা শিবাজী আফজালের নাড়িভুড়ি বের করে দেবার পর আবার একটা ছোরা দিয়ে কোপ মারেন। এই সময় আফজালের বডিগার্ড কোপ মেরে শিবাজীর পাগড়ি দুটুকরো করে ফেলেন। শিবাজীর বডিগার্ড আবার এক কোপে সেই বডিগার্ডের হাত কেটে ফেলেন আর শিবাজী চান্সে এক হাত নিয়ে বেঁচে থাকার কষ্ট থেকে মুক্তি দেবার জন্য বেচারার কল্লা নাই করে দেন। সামুরাই কোপাকুপি ফেইল পুরো। ওদিকে নাড়িভুড়ি বের হওয়া আফজাল বেচারা পালকী চেপে ফেরত যাবার পথে তাকেও "শিবাজী মুন্ডুদান কর্মসূচী"র আওতায় ফেলে দেয়া হয়। শিবাজীর পাগড়ি টুকরো হওয়াটা বিশাল ব্যাপার কারন শিবাজী চেইন মেইলের বর্ম পরেছিলেন বলে দেহ সুরক্ষিত থাকলেও মাথাটা অরক্ষিতই ছিল। একটু এদিক ওদিক হলেই নিজেও "শিবাজী মুন্ডুদান কর্মসূচী"র মহান কার্যক্রমে অংশ নিয়ে ফেলতেন। অ্যাঁ

লেখা যথারীতি ভাল তবে এবার একটু রসের কমতি ফীল করলাম। "ঘনাদা তস্য তস্য অমনিবাস" এর "আগ্রা যখন টলমল" গল্পটি না পড়ে থাকলে পড়ে ফেলুন। ঘনাদার পূর্বপুরুষ বচনরাম দাসের কারনে শিবাজী মিষ্টির ঝুড়িতে করে পালানোর পর ধরা না পড়া নিয়ে বেশ চমৎকার একটা গল্প। ঘনাদা ফ্লেভারে অবশ্যই।

সত্যপীর এর ছবি

আপনি ইতিহাস নিয়ে পোস্ট দেননা কেন? অসাধারন কমেন্ট।

লেখা যথারীতি ভাল তবে এবার একটু রসের কমতি ফীল করলাম।

হুমম। কিঞ্চিৎ দুঃখিত। সব লিখা কি আর একরকম হয়?

..................................................................
#Banshibir.

নীহার এর ছবি

দারুন লাগলো , আমি মহারাষ্ট্র তেই থাকি আর মারাঠি গুলোর এই ব্যাটা কে নিয়ে লাফালাফি অসহ্য লাগে ! এইবার দুটো কথা শোনানো যাবে।

সত্যপীর এর ছবি

আপনি কথা শুনালে উনাদের লাফালাফি থামবে কি? বরং আপনাকে আরও বিরক্ত করবে এইটা নিয়ে। ক্ষেমা দেন ভাই হাসি

..................................................................
#Banshibir.

দ্রোহী এর ছবি

আপনে মিয়া!

ছত্রপতির পুটুতে ছাতা ঢুকিয়ে টেনে বের করলেন!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!

সত্যপীর এর ছবি

কই না তো! যা পড়লাম তাই তো লিখলাম পুটু একদম ধরি নাই চোখ টিপি

..................................................................
#Banshibir.

অরফিয়াস এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

শাব্দিক এর ছবি

পার পীস বদ! হাসি

সত্যপীর এর ছবি

সারভাইভাল। সে না করলে অন্য কেউ করতো, দোষ দিয়া কি লাভ কন?

..................................................................
#Banshibir.

সাই দ এর ছবি

শিবাজীর মৃত্যু কি স্বাভাবিকভাবে হইয়েছিল ???

সত্যপীর এর ছবি

নানা মুনির নানা মত। অধিকাংশই বলেন স্বাভাবিক মৃত্যু, কিন্তু সন্দেহপিচেশ কিছু লোকের মতে বউ সূর্য্যবাঈ তাকে বিষ খাইয়ে মারে। প্রাসাদ ষড়যন্ত্র। কইতারলামনা কোনটা ঠিক।

..................................................................
#Banshibir.

দুর্দান্ত এর ছবি

শিবাজীর চেহারার সাথে ওসামা বিল লাদেনের চেহারার এত মিল কেনু কেনু কেনু?

সত্যপীর এর ছবি

চরম উদাস ভাইকে আহবান জানাচ্ছি হাবিয়া দোযখে এদের দুইজনকে দেখা করাতে এবং এই বখেড়া ফয়সালা করতে। এক চেহারার দুই ধর্মের বদকে টেরম টেরম যুদ্ধে লাগায় দেন।

..................................................................
#Banshibir.

সুজিপ্পে এর ছবি

ছেলে ঘুমালো পাড়া জুরাল
বর্গী এলো দেশে।
বুলুবুলিতে ধান খেয়েছে
খাজনা দেবো কিসে??
মনে হয় বর্গী আর পর্তুগীজ বা হার্মাদ একই। কারণ মারাঠাদের বাংলা পর্যন্ত আসা ও খাজনা নেয়া কি সম্ভব??

আবছায়া এর ছবি

উইকিপিডিয়া অনুসারে বর্গী মানে মারাঠি ই, পর্তুগিজ নয়।।

সত্যপীর এর ছবি

মনে হয় বর্গী আর পর্তুগীজ বা হার্মাদ একই।

না রে ভাই, হার্মাদ বর্গী দুই জিনিষ। হার্মাদ = armada = স্প্যানিশ/পর্তুগীজ যুদ্ধজাহাজ। বর্গীর সংজ্ঞা দেখুন এখানে। এরা মারাঠাই।

..................................................................
#Banshibir.

তারেক অণু এর ছবি

আয় বাবুল গড়াগড়ি দিয়া হাসি

সত্যপীর এর ছবি

চাল্লু

..................................................................
#Banshibir.

তাপস শর্মা এর ছবি

পুরাই সেরাম গুল্লি

সত্যপীর এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

..................................................................
#Banshibir.

কাজি মামুন (অতিথি লেখক) এর ছবি

যথারীতি অসাধারণ লেখা। সচলের পাঠকদের জন্য আরেকটি চমকপ্রদ ইতিহাস!

শিবাজির ভালমানুষ পিতাকে বদমাশ বিজাপুরের আদিল শা বিনা কারণে বন্দী করে রেখেছে কেন শাজাহান জবাব চাই

বিষয়টি পরিষ্কার বুঝলাম না! শাহজাহান এতই ভাল মানুষ ছিলেন যে অসহায় পুত্রের আর্জি শুনেই ফরমান জারি করে পিতাকে মুক্ত করলেন? আর পরে ৫ হাজার ঘোড়াই বা পাঠালেন কেন?

শা‌‌য়েস্তা কোনমতে পালিয়েছিলেন; কিন্তু কাটা পড়ে তার একটি আংগুল।

এই শায়েস্তা কি বাংলার শায়েস্তা খান, যার আমলে দ্রব্যমূল্য অবিশ্বাস্য কম ছিল বলে জানা যায়?

কিন্তু জয় সিংএর এক ছেলের সহায়তায় একটি ঝুড়িতে করে তিনি পালাতে সক্ষম হলেন

কাহিনীটি ব্যাপক কৌতূহল জাগাচ্ছে! ঝুড়ির মাধ্যমে কি করে পালালেন?

কিন্তু খাঁটি যোদ্ধার মত শিবাই তাদের ঘুষ দিয়ে নিজেদের দলে ভেড়ালেন

আমি কিছুটা কনফিউজড! 'খাঁটি যোদ্ধা' শব্দটি বিদ্রূপাত্মক অর্থে ব্যবহার হয়েছে?
হিমু ভাই জানালেন,

ছত্র বোধহয় ক্ষত্র থেকে এসেছে, ক্ষেত্র থেকে নয়।

যদি ক্ষত্র হয়, তাহলে তা কি ক্ষত্রিয় শব্দের সাথে সম্পর্কিত? ক্ষত্রিয়রা তো যোদ্ধা ছিল!

সত্যপীর এর ছবি

এই শায়েস্তা কি বাংলার শায়েস্তা খান, যার আমলে দ্রব্যমূল্য অবিশ্বাস্য কম ছিল বলে জানা যায়?

এক ও অদ্বিতীয় সেই শায়েস্তা, যার আমলে খাবার পানির দরে পাওয়া যেত তবু লোকে অনাহারে মরতো। দুর্ভিক্ষ দামের উপর নয় ক্রয়ক্ষমতার উপর নির্ভর করে।

'খাঁটি যোদ্ধা' শব্দটি বিদ্রূপাত্মক অর্থে ব্যবহার হয়েছে?

আইজ্ঞা হ।

মন্তব্যের জন্য লন আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

..................................................................
#Banshibir.

আসিফ হাসান এর ছবি

যদিও আপনার প্রশ্নগুলো পীরব্রোর কাছে তাও আমি দুএকটার জবাব দেবার চেষ্টা করি।

শাহজাহান এতই ভাল মানুষ ছিলেন যে অসহায় পুত্রের আর্জি শুনেই ফরমান জারি করে পিতাকে মুক্ত করলেন? আর পরে ৫ হাজার ঘোড়াই বা পাঠালেন কেন?

বিজাপুরের রমরমা অবস্হা দেখে মোগলদের চোখ টাটানো বোধহয় এর কারন। ভারতবর্ষে মোগল ছাড়া আর কোন বড় কুতুব থাকবে এটা হতে দিতে চাচ্ছিলেন না তারা। শিবাজীকে ঘোড়া দেয়া তাকে সুপারী কিলার হিসেবে ভাড়া করার মত ধরতে পারেন। শিবাজী আদিল শাহদের সাফ করে দেবেন তারপর মোগলরা ড্যাংড্যাং করে নাচতে নাচতে দাক্ষিনাত্যের একটা বড় অংশ দখল করে নেবেন এটাই প্লান ছিল। শাহাজীকে(শিবাজীর বাবা) ছাড়তে বলাটা আর কিছু না হোক পাবলিসিটি স্টান্ট হত যে মোগল সম্রাট কত উদার আর আদিল শাহের সংগে বিশাল খাতির থাকায় সেটা করানো বেশ সহজ ছিল! যদি শিবাজী ধরা খায় তাহলে মোগলদের ওপর কোন বদনাম আসবেনা কারন বিশিষ্ট ঘোড়াচোর হিসেবে ভারতে শিবাজীর সুনাম ছিল তাই ঐ ঘোড়া চুরি করা এই দাবী করে পার পেয়ে যাওয়া যাবে। কিন্তু শিবাজী কাজ সারতে পারলে তো কেল্লা ফতে। অনেকটা হোয়াইট হাউসের পাশে বাজুকাসহ বিন লাদেনকে ছেড়ে দেবার মত। কাজ হলে তো হলই আর না হলে সবাই ধরে নেবে ওটা বিন লাদেনের নিজের কীর্তি।

এই শায়েস্তা কি বাংলার শায়েস্তা খান, যার আমলে দ্রব্যমূল্য অবিশ্বাস্য কম ছিল বলে জানা যায়?

একই ব্যক্তি। ওনার কাটা যাওয়া আঙুলটি কিন্তু বুড়ো আঙুল। এর পর থেকে উনি "Two Thumbs Up, WAY UP" বলার আনন্দ চিরতরে হারান। সেই শোক মেটানোর জন্য দ্রব্যমূল্য কমানোর নেশা তাকে পেয়ে বসে। তবে সে আমলে দ্রব্যমূল্যের সংগে পাল্লা রেখে সাধারন মানুষের উপার্জন কমার কুরটনাও শোনা যায় বেশ।

কাহিনীটি ব্যাপক কৌতূহল জাগাচ্ছে! ঝুড়ির মাধ্যমে কি করে পালালেন?

উনি ধরা খেয়ে ভাব করছিলেন ওনার অবস্হা কেরোসিন, এই যায় সেই যায় অবস্হা। তাকে ভালবেসে তার দেশী ভাইরা প্রত্যেকদিন বিশাল ঝুড়ি ভর্তি করে ফল, মিষ্টি এসব পাঠাতো। সবাই লুটেপুটে খাবার পর সেই ঝুড়ি গুলো ফেলে দেয়া হত। প্রথম দিকে আনার ও নেবার সময় চেক করলেও বেকুব মোগল প্রহরীরা শেষের দিকে ধরে নেয় এই লোকের শেষ সময় হাজির তাই এত কষ্টের দরকার নেই। এই সুযোগে একদিন খালি ঝুড়িতে বসে থাকেন শিবাজী ও তার ছেলে এবং তাদের বয়ে বাইরে নিয়ে আসার পর লুঙ্গি তুলে পালান। (তবে ঘনাদার পূর্বপুরুষ বচনরামের ভাষ্য অনুযায়ী তার ও শিবাজীর চেহারা এক হওয়ায় তিনি নানা জায়গায় দেখা দিয়ে মোগলদের কনফিউজড করে দিয়েছিলেন শিবাজীর দেশের ফেরার রুটের ব্যাপারে। তবে সেটার সত্যতা ঘনাদাই বলতে পারবেন।)-প্রেমেন্দ্র মিত্রের "ঘনাদা তস্য তস্য অমনিবাস" দ্রষ্টব্য।

বাকী প্রশ্নদুটোর একটার উত্তর পীরব্রো দিয়েছেন আর অন্যটার উত্তর আমি ঠিক জানি না। এগুলোর উত্তর দেবার ধৃষ্টতা দেখানোর জন্য অগ্রীম ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি পীরব্রোর কাছে। কোথাও ভুল করে থাকলে শুধরে দেবেন প্লীজ।

সত্যপীর এর ছবি

চলুক চলুক চলুক
আবারও জিজ্ঞেস করছি, আপনি ইতিহাস নিয়ে পোস্ট দেননা কেন?

..................................................................
#Banshibir.

আসিফ হাসান এর ছবি

অলসতা ব্রাদার। আপনার পোস্টগুলো দেখে উদ্দীপনা এসে যায় বলে ঝাপিয়ে কমেন্ট করি। নিজে লিখবো ভাবলেই কেমন ম্যাদামারা একটা ভাব ভর করে আর হাত বিগড়ে বসে। আপনি চালিয়ে যান, আমি ব্যাকআপে আছি। কোনদিন যদি এই ফোবিয়া থেকে মু্ক্তি পাই তখন লিখব। দেঁতো হাসি

সত্যপীর এর ছবি

ফোবিয়া থেকে আশু মুক্তি ঘটুক এই কামনায় (সকলে বলি আআআআমিন।)

..................................................................
#Banshibir.

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ইতিহাস জানা হলো। চলুক

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

দস্যিছেলে শিবাজী! শয়তানী হাসি

সত্যপীর এর ছবি

চোখ টিপি

..................................................................
#Banshibir.

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।