প্রতিপক্ষ

সত্যপীর এর ছবি
লিখেছেন সত্যপীর (তারিখ: সোম, ০৬/০২/২০১৭ - ৭:৩৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মাহালু নদীর তীরে ঘোড়া ছুটিয়ে যেতে যেতে কিছুক্ষণ পর মুস্তফা টের পেল পেছনে আর কেউ আসছে। নৌরাবাদের কেউ পিছু নিল নাকি? ঝট করে পিছনে তাকিয়ে একঝলক আগন্তুককে দেখে সন্তুষ্ট হয়ে আবার টেনে ঘোড়া ছোটাল সে।

ইদ্রিস। ইদ্রিস আসছে পেছন পেছন।

যাক, ভালো হল তবে। সে ছাড়া আরও অন্তত একজন দেখেছে সাদতকে চম্পট দিতে। বালক সর্দার সাদত এইদিক দিয়ে একা গেছে মুস্তফা নিশ্চিত, কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রের হাউকাউয়ের ভিতর বেশি লোক দেখতে পায়নি একা সাদতের পলায়ন। লোকজন ডেকে সময় নষ্ট করার বদলে মুস্তফা ধনুক শক্ত এক হাতে ধরে আর হাতে ঘোড়া ছুটিয়ে ধাওয়া করেছে। সাদতকে ধরা চাইই। সে পালিয়ে গেলে আবার কোন দল খাড়া করিয়ে ফেলবে পলকের ভিতর, এদিককার আফগান গোত্রগুলোর মধ্যে সাদতের প্রয়াত পিতা আজও জনপ্রিয়। সাদত মুঠোছাড়া হলে মুশকিল বটে।

মুস্তফা ঘোড়ায় চড়া শিখেছে হাঁটতে শেখার আগে। ঘোড়া কোন পথে কতক্ষণ আগে গেছে তা সে রাস্তার ছড়ানো পাতা, ভাঙা ডাল, মাটিতে পায়ের ছাপ দেখেই বুঝতে পারে। সাদত এদিক দিয়েই ঘোড়া ছুটিয়েছে।

এই এলাকা মুস্তফার অতি পরিচিত। মাহালু নদীর ঐপারে সে আর তার বড় ভাই মুরাদ ছোটবেলায় খেলতে আসত মাঝে মাঝে। মুরাদ তির ঠিকমত ধরতে পারত না, হয় বুড়ো আঙুল দিয়ে চিমটি দিয়ে ধরত নইলে তিন আঙুল দিয়ে তির টানত। বেকুব। আব্বাজান তির ঠিকমত না ধরার জন্য মুরাদকে চড় দিয়ে দাঁত নড়িয়ে দিতেন প্রতিদিন কিন্তু বুড়ো আঙুল বাঁকা করে সে তির টানতেই পারত না। আব্বাজানের চড় থেকে বাঁচার জন্য মুরাদ তার ছোটভাই মুস্তফাকে নিয়ে মাঝে মাঝে দূর মাহালু নদীর তীর পর্যন্ত যেত, তির ছোঁড়ায় হাত মকশো করার জন্য।

পরে অবশ্য আরেকটু বড় হলে সবাই বুঝতে পারে মুরাদের বুড়ো আঙুল দুর্বল, সে ধনুকের ছিলা তো দূরের কথা রশিটাও ঐ আঙুল দিয়ে জোরে টানতে পারেনা। তলোয়ার ও মুরাদ ধরত অদ্ভুতভাবে। হেলে যেত একটু লম্বা তলোয়ার ধরলে।

আরেকটু সামনে গেলে নদী ডাইনে বাঁক নেবে। দ্রুত পথ দেখে মুস্তফা বুঝল সাদত ডানদিকেই গেছে, কিন্তু বাঁ দিক থেকে আরেকটা ঘোড়া এসে যোগ দিয়েছে তার সাথে। মাথায় টংটং ঘন্টা বেজে উঠল মুস্তফার। সাদতের সাথে যোগ দিল কে? আমাদের কেউ অবশ্যই নয়, তাহলে দুটার যেকোন একটা ঘোড়া মরত। নৌরাবাদের কেউ।

মুশকিল হল।

পেছনে ইদ্রিস প্রায় কাছিয়ে এসেছিল, কিন্তু আবার কোন কারণে পিছিয়ে পড়েছে। ঘোড়া চালাতে চালাতে ইদ্রিসকে একটা খিস্তি করে আরও জোরে ঘোড়া ছোটাল মুস্তফা। এত কাছে এসে সাদতকে ছেড়ে দেয়া উচিৎ হবে না। সব ঠিকঠাক থাকলে সাদতের কল্লা আজকেই নিতে পারবে সে, ভাবল মুস্তফা।

সামনে বুড়ো একটা গাছ ডাল এলিয়ে নুয়ে আছে। এই গাছটা তাদের বাল্যকালেও ছিল। এই ডাল বেয়ে উপরে উঠে সে আর মুরাদ প্রায়ই পানিতে ঝাঁপ দিত। ঘোড়া চালাতে চালাতে ডানদিকে পানির দিকে তাকাল সে। শান্ত পানি, অল্প কিছু পাতা ভাসছে।

মুরাদ কঠিন ডুবুরি ছিল। মাঝে মাঝে এত দীর্ঘ সময় সে পানির নিচে থাকত যে ভয় পেয়ে যেত মুস্তফা আর তার বন্ধুরা। শেষ মুহুর্তে হুউউস করে মাথা পানি থেকে উঠিয়ে মুরাদ খলখল করে হাসত। তাই দেখে ভয়ে আর রাগে মাঝে মাঝে মুস্তফা ঝটাৎ করে মারতে যেত বড় ভাইকে।

বহুদিন পরে সেই বালকবেলার মাহালু নদী। মুস্তফার ইচ্ছে করল থেমে একটু ভালো করে সব দেখে যেতে। সে আর ইদ্রিস ছোটবেলার বন্ধু। একসাথে বড় হয়েছে, একইসাথে ঘোড়ায় চড়ে তিরন্দাজি করে বেড়াত তারা। তার মনে আছে আব্বাজান মাঠে দশহাত পর পর এক সারিতে মাটির ভাঁড় রেখে দিতেন, তারপর মুরাদ, ইদ্রিস, ইদ্রিসের ছোটভাই ইসমাইল, গুরদাস তারা সবাই মিলে ঘোড়ায় চড়ে চলন্ত অবস্থায় সেই সারির পাশ দিয়ে তির ছুঁড়ে প্রতিটা ভাঁড় গুঁড়িয়ে দিতে হত। মুরাদ কখনোই একটা ভাঁড়েও তির লাগাতে পারেনি। মুস্তফা আর ইদ্রিস পটাপট নিশানা ভেদ করে দিত প্রতিবার।

কিন্তু স্মৃতিকাতরতার সময় নয় এখন। এখন মূল লক্ষ্য সাদতকে জীবিত অথবা মৃত বন্দী করা। মুস্তফা খেয়াল করে দেখল নদী থেকে সরে গিয়ে পার্শ্ববর্তী টিলার দিকে ঘোড়ার খুর সরে যাচ্ছে।

আচ্ছা, এই কথা। টিলার ওপারে যাচ্ছে তাহলে সাদত আর তার সঙ্গী। মুচকি হাসল মুস্তফা। সাদত, তুমি তোমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটা করলে ওদিকে গিয়ে। ওদিকটা মুস্তফার হাতের তালুর মত পরিচিত। কতবার যে সে এই টিলার দিকে গিয়েছে তার হিসেব নাই। এই টিলার রাস্তা তার মুখস্ত। মনে আছে একবার এই টিলার পথেই ঘোড়া থেকে ছিটকে পড়ে মুস্তফার পা মচকে যায় আর ঘোড়া ছুটে পালায়। তিন কোশের উপর লম্বা রাস্তা মুরাদ ছোট ভাই মুস্তফাকে ঘাড়ে করে নিয়ে গিয়েছিল সেইদিন। তিন কোশ গিয়ে পরে এক সরাই পাওয়া যায় জিরানোর জন্য।

টিলার কাছে গিয়ে আস্তে করে ঘোড়া থামিয়ে দেয় মুস্তফা। ইদ্রিস হারামজাদা এখনো আসে না কেন। দুই জনকে শুইয়ে দেবার জন্য মুস্তফা একাই যথেষ্ট বটে, তবে সাথে একজন থাকলে বুকে বল বাড়ে। ঘোড়াটাকে সন্তর্পনে বেঁধে মুস্তফা নিঃশব্দে টিলার একপাশ বেয়ে ওঠা শুরু করে। এই টিলার ওপারে ঘন জঙ্গল, ঘোড়া ছুটিয়ে যাওয়া মোটামুটি অসম্ভব। ডানদিক দিয়ে পালানো যায় অবশ্য, কিন্তু আগে দেখে নেয়া যাক সাদত থেমেছে কিনা। ঝিরি আছে এখানে একটা, হয়ত পানি খেতে থেমেছে। ঝিরির কাছাকাছি থাকলে তির মেরে সাদতকে শুইয়ে দিতে মুস্তফার এক মুহুর্তও লাগবে না।

টিলা বেয়ে ওঠার আগে তিরন্দাজের বুড়ো আঙুলে পরার যিহগির আংটি ভালো করে লাগিয়ে নিল মুস্তফা। এই পান্না পাথর খচিত যিহগির আংটি আব্বাজান মরার আগে মুস্তফাকে দিয়ে গিয়েছিলেন, সেই নিয়ে মুরাদের সে কি রাগ। বড় ছেলে ডিঙিয়ে ছোট ছেলে কেন বাপের আংটি পাবে সেইজন্য রাগ। কিন্তু সে রাগ যে তার নিজের উপরেই আসলে ছিল, মুস্তফা তা জানে। তিরন্দাজের বুড়ো আঙুলের যিহগির আংটি অলঙ্কার নয়, সামরিক সজ্জার অংশ। বুড়ো আঙুল দিয়ে টানটান ছিলা আংটি ব্যতীত টানতে গেলে মাংস কেটে বসে যাবে। মুরাদ তো তিরন্দাজ নয়, সে বুড়ো আঙুলে জোরে টান দিতে অক্ষম ছিল। তাই মুরাদ যখন যিহগিরের জন্য হাউকাউ করে তিনদিনের জন্য ঘর ছাড়ল, মুস্তফা জানত সে অভিমান কাটিয়ে ঠিকই ঘরে ফিরে আসবে।

টিলার এইদিকটা খাড়াই। উঠতে হাল্কা কষ্ট হচ্ছিল মুস্তফার। পনেরো/ষোল বছর আগে আব্বা মারা যাবার পর দক্ষিণে চান্দেরিতে খুরশিদ শা’র সিপাইদলে ভেড়ে সে আর ইদ্রিস। খুরশিদ শা’র বাপ জামশেদ শা তখন সদ্য মারা গিয়েছেন, আর তরুণ খুরশিদ শা ছিলেন রাজত্ব বাড়ানোর তালে। সা'দি নামে এক ফিরিঙ্গী ছিল খুরশিদ শা’র জং এর নেতৃত্বে, ইদ্রিস আর মুস্তফার ঘোড়ার পিঠে থেকে দুর্ধর্ষ তিরন্দাজি দেখে সা’দি তাদের ঝপাঝপ বাহিনীতে ঢুকিয়ে নেয়। সেই থেকে খুরশিদ শা’র হয়ে লড়ে চলেছে মুস্তফা। চান্দেরি পানির পাশে, নিচু জায়গা। পাহাড়-পর্বত তেমন নেই। তাই এতদিন পরে এই মাহালু নদীর পারের টিলা বাইতে গিয়ে অনভ্যস্ততায় মুস্তফার গা একটু টানতে থাকল।

মুরাদ হলে এতক্ষণে পাঁই পাঁই করে উঠে যেত নিশ্চয়ই। কিম্বা কেজানে, হয়তো তারও সময় লাগত উঠতে। বেঁচে থাকলে এখন মুরাদের বয়েস পঁয়ত্রিশ টয়ত্রিশ হত। এই বয়েসে টিলা বেয়ে ওঠা কি সোজা কথা। মুরাদের বউটারও ছিল পাকানো দড়ির মত শরীর, সেও স্বামীর মত গাছপাহাড় বাইতে পারত। তার নাম ছিল জমিলা। কেমন আছে জমিলা কে জানে। মুরাদ মারা যাবার পর কার সাথে যেন পরিবার নিয়ে জমিলা ভেগে গেছল, মুস্তফা ভাসা ভাসা খবর পেয়েছিল।

টিলার উপরে উঠে নিঃশব্দে কনুই দিয়ে এগুলো মুস্তফা শব্দ না করে। একটু সামনে গিয়ে মাথা উঁচিয়ে ঝিরির দিকে চেয়ে সে একটু হাসল। যা ভেবেছে তাই। সাদত আঁজলা করে পানি খাচ্ছে ঝিরি থেকে, এখান থেকে তির মেরে তাকে শুইয়ে দিতে মুস্তফার কোন সময়ই লাগবে না। আস্তে করে সে ধনুকে তির লাগিয়ে তাক করে ধরল, আর নাড়ানোর সময় ডান হাতের কনুই লেগে একটা ছোট পাথর গড়িয়ে শব্দ হল হঠাৎ।

ঝুপ!

পাশে ঘোড়ার ঐপাশে একটি দশ/এগারো বছরের বালক বসে ছিল, পাথরের আওয়াজে সে তড়াক করে লাফ দিয়ে উঠে সর্দার সাদতকে ধাক্কা দিয়ে গাছের আড়ালে নিয়ে গিয়ে ঝট করে উপরে তাকাল। বালকের দিকে এবার ধনুক তাক করে তার চোখে চোখ পড়তেই মুস্তফার বুকটা ধড়াক করে উঠল।

মুরাদ!

এ তো মুরাদ! দশ বছরের মুরাদ তাকিয়ে আছে তার দিকে। মুরাদ! মাথায় লাল ছিটের পাগড়ি পরা মুরাদ! এই ছিটের পাগড়ি তারও একটা আছে, হলদে। আম্মাজান তাদের দুই ভাইকে এই পাগড়ি বেঁধে দিতেন সকালবেলা।লালটা মুরাদের হলদেটা মুস্তফার। সেই লাল ছিটের পাগড়ি পরে তাকিয়ে আছে বড়ভাই মুরাদ। দশ বছর বয়েসে তার কী চেহারা ছিল তা কি মুস্তফার অজানা!

এক মুহুর্তের জন্য মুস্তফা থেমে গিয়েছিল, আর সেই ফাঁকে বালক মুরাদ সাদতকে ঘোড়ায় শুইয়ে ঘোড়া ডানদিকে ছেড়ে দিল। সামলে উঠে তির ছুঁড়ে মারল মুস্তফা, কিন্তু তা যেন ফসকে লাগল মুরাদের মাথার পাগড়িতে, আর পাগড়ি গিয়ে বিঁধল এক গাছে।

দ্রুত লাফিয়ে লাফিয়ে টিলা থেকে নেমে মুস্তফা সেই পাগড়ি নিরীক্ষণ করতে লাগল। কোন ভুল নেই, এ তার ভাই মুরাদের পুরানো পাগড়িই। হঠাৎ একটু শব্দে চমকে উঠে পিছনে তাকাল মুস্তফা, হাত চলে গেল কোমরে গোঁজা ছোরায়। দেখল ইদ্রিস আসছে।

ঢোঁক গিলে একটু দম নিল মুস্তফা। ইদ্রিস কাছে এসে মুস্তফার কাঁধে হাত রেখে ফিসফিস করে বলল, আমি সব দেখছি। সব। ভয় খাইস না, কাকপক্ষীও জানব না তুই সাদতরে পায়াও ছাইড়া দিছস। কেউ জানব না।

মুস্তফা ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইল। ইদ্রিস ঝুঁকে আবার বলল, মুরাদ ভাইর পুলা ছিল তো। দেখছি আমি। তুই যে ইচ্ছা কইরা পিঠের বদলে পাগড়ি তাক করছস আমি জানি। মুরাদ ভাইর পুলার পিঠে তির মারলে তুই আল্লার কাছে কি জওয়াব দিতি? মুরাদ ভাইরেই বা কি জওয়াব দিতি?

মুস্তফা টের পেল আস্তে আস্তে তার চোখ ভরে জল আসছে। সে কত খোঁজ করেছে জমিলা আর তার পরিবারের, কেউ বলতে পারেনি তারা কোথায়। আর আজ সে তার নিজের ভাতিজাকে প্রায় এফোঁড় ওফোঁড় করে দিতে যাচ্ছিল!

... ... ...

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে নেমে আসে মাহালু নদীর তীরে। ধীরে। নদীর উপর দিয়ে উড়ে যেতে যেতে কোন কোন পাখি অবাক হয়ে লক্ষ্য করে টিলার ওপাশে এক মধ্যবয়েসী পুরুষ আরেকজনের কাঁধে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।


মন্তব্য

সত্যপীর এর ছবি

তিরন্দাজের Thumb Ring এর প্রতিশব্দ "যিহগির" খুঁজে দেবার জন্য হিমু ভাইকে কৃতজ্ঞতা।

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

যিহ্‌গির শব্দটা তুর্কী যার শাব্দিক অর্থ মন বা মানসিক। এই শব্দটা যদি সত্যি সত্যি ভারতবর্ষের উত্তর, উত্তর-পূর্ব বা আফগান অঞ্চলে কখনো ব্যবহৃত হয়ে থাকে তাহলে ভারতের তীরন্দাজীর ইতিহাস নিয়ে নতুন করে খতিয়ে দেখতে হবে। কারণ, ভারতে তীরন্দাজীর প্রচলন বৈদিক যুগেরও আগে থেকে। মুসলিমদের আগমনের পর থেকে ভারতে তীরের ব্যবহার ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এখানকার মাস্টার আর্চাররা সাধারণত স্থানীয়। সেক্ষেত্রে বৃদ্ধাঙ্গুলের অঙ্গুরীয়র কোন স্থানীয় নাম থাকার কথা। তা না থাকলে বুঝতে হবে হয় কিছু তুর্কী মাস্টার আর্চার এখানে এসে তীরন্দাজীর কায়দা-কানুন পাল্টেছিলেন, অথবা তীরন্দাজীর জিনিসপত্র তুরস্ক থেকে আমদানী হতো। রত্নখচিত যিহ্‌গির ব্যবহারের প্রচলন সম্ভবত মুঘল আমল বা তার কিছু আগে থেকে। তার আগে cylindrical ধাতব বা চামড়ার যিহ্‌গির ব্যবহার করা হতো।

সত্যপীর এর ছবি

তুর্কী হলেও সমস্যা নাই। হতে পারে মুস্তফার বাপ কিংবা দাদা/পরদাদা তুর্কী মাস্টারের কাছে তিরন্দাজি শিখেছেন। কিংবা, তুর্কী কোন ধনাঢ্য লোক আফগান এলাকা পার হবার সময় স্থানীয় দস্যুদলের হাতে নাজেহাল হন, আর উদ্ধারে এগিয়ে আসে মুস্তফার পূর্বপুরুষ। খুশি হয়ে আঙুলের আংটি খুলে কইলেন, লও এ যিহগির!

গল্পের গরু। ইচ্ছেমাফিক গাছে উঠানো অসম্ভব নয়।

..................................................................
#Banshibir.

হিমু এর ছবি

তুর্কি ভাষায় যিহগির শব্দটা থাকতে পারে, কিন্তু ফার্সিতে এটা কেবল ধানুকীর বুড়ো আঙুলের আংটি অর্থেই ব্যবহৃত।

তির শব্দটাই তো ফার্সি। এর স্থানীয় নাম "বাণ" আর "শর"। ধনুকটা রয়ে গেলেও বাণ বদলে তির হয়ে গেছে শাসকের ভাষার চাপে।

বুড়ো আঙুলের আংটির স্থানীয় নামের কথা বাদ দেন। আমরা চেয়ারের বাংলা আসনটা পর্যন্ত রাখতে পারিনি। কেউ বলে কুর্সি, কেউ বলে কেদারা, এখন বলি চেয়ার। চেয়ার কি আর ইংল্যাণ্ড থেকে আমদানি করা হতো? যিহগিরের জন্যও তুরস্ক পর্যন্ত দৌড়ানোর দরকার পড়ে নাই সম্ভবত, ডাণ্ডা-মেন্টালদের হাতেই ফাণ্ডামেন্টালস তৈরি হয়ে গেছে।

যিহগির তৈরি করা স্বতন্ত্র একটা পেশা ছিলো সম্ভবত, যিহগির নির্মাতাকে ফার্সিতে বলে যিহগিরসাজ।

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

চেয়ারের বাংলা শব্দের অভাবের জন্য কি চেয়ারের অভাবটাও একটা কারন হতে পারে? "আসন" বলতে যে জিনিসটা ছিল বা আছে, সেটা তো অনেকটা মাদুরের মত কিছু একটা, মাটিতে বিছিয়ে তার উপর বসার উপকরন। প্রাক ইউরোপিয়ান যুগে এদেশে রাজা গজাদের সিংহাসন ছাড়া চেয়ারের মত কিছু কি ছিল? না থাকলে তার নাম আসবে কোথা থেকে?

হিমু এর ছবি

বাংলায় একটা শব্দ শুধু প্রাকইয়োরোপীয় আমলে গিয়েই খুঁজতে হবে কেন? একশো বছর আগের গল্প-উপন্যাসে চেয়ারের প্রতিশব্দ হিসেবে আসন পাবেন। এদেশে তো জলহস্তীও নাই, তাই বলে কি জলহস্তী শব্দটা বাংলায় আসেনি?

অতিথি লেখক এর ছবি

যিহ্‌গির শব্দটা ফারসীতেও ব্যবহৃত হয় এটা জানতাম না। তুর্কী ভাষাতে এর শাব্দিক অর্থ যাই হোক, প্রচলিত অর্থে একে থাম্ব রিং-ই বোঝায়। যিহ্‌গির শব্দটা ফারসীতেও গৃহীত হয়ে থাকলে সেটা এই দেশে আসা কোন ব্যাপারই না, কয়েক শতাব্দী ধরে ফারসী এদেশের রাজভাষা ছিল।

শাসক ভাষার চাপে অসি বা কৃপাণ, তলওয়ার বা খঞ্জর হয়ে গেছে। এমন আরও শত-সহস্র উদাহরণ আমরা টানতে পারবো।

নিত্যদিনকার কোন জিনিসের নাম বিদেশি ভাষার হলে একটা প্রবল সম্ভাবনা থাকে সেটার শুরু আমদানী দিয়ে হয়েছিল। পরে স্থানীয় উৎপাদন বা ব্যবহার আমদানীকে প্রতিস্থাপন করে ফেললেও নামটা থেকে যায়।

কিছু কিছু ক্রাফট সারা জীবনের জন্য হারিয়ে যায়, সাথে সেই কারিগরেরাও। ত্রিশ বছর আগেও এদেশে কাঠের আর সীসার টাইপ বানানো কারিগরেরা ছিলেন। আজকে এমন কিছু যে ছিল সেটা মানুষকে বোঝাতে গলদঘর্ম হতে হবে। রত্মখচিত যিহ্‌গির বেশ সুন্দর একটা অলঙ্কার। এখনকার কোন অলঙ্কার নির্মাতা এটাকে জনপ্রিয় করে তোলার চেষ্টা করতে পারেন।

সত্যপীর এর ছবি

এখানকার মাস্টার আর্চাররা সাধারণত স্থানীয়।

মুরাদ মুস্তফার পিতা স্থানীয় কিনা (কিংবা তার ট্রেনিং স্থানীয় কিনা) গল্পে খোলাসা হয়নি। তবে, কিছু ডিডাকশন ড্র করা সম্ভব। আমরা দেখেছিঃ

১। মুরাদ চিমটি দিয়ে তির ধরে টানত কিংবা তিন আঙুলে টানত দেখে বাপ চড় দিয়ে দাঁত নড়িয়ে দিয়েছে, বাপের দৃঢ় শিক্ষা বুড়ো আঙুল বাঁকিয়ে ধরতে হবে। বুড়ো আঙুল বাঁকিয়ে তির টানার কেতা (Thumb draw) ভারতীয় নয়, তুর্কী/মঙ্গোল/মধ্য এশিয়ার।
২। মুস্তফা এবং তার সকল বন্ধুকে মুস্তফার বাপ ঘোড়ায় চড়ে ধাবমান অবস্থায় তির মারা প্র্যাকটিস করাতেন। ভারতের আচার্য কি সেটা করাতেন না কখনও? হয়তো। কিন্তু অশ্বারোহী তিরন্দাজ তুর্কী/মঙ্গোল/মধ্য এশিয়ার যোদ্ধার রক্তে।

অতএব মুরাদ মুস্তফার পিতা যে ভারতীয় শিক্ষায় শিক্ষিত মাস্টার আর্চার তা ভরসা করে বলা যাচ্ছেনা।

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

পটভূমি ব্যাখ্যা করতে গেলে এই গল্প আরও বড় হবে। তাতে মুরাদ-মুস্তফার বাবার গল্প জানা যাবে, মুরাদের মৃত্যুর কথা জানা যাবে। আবার পরবর্তীতে মুরাদ জুনিয়রের সাথে তার চাচা মুস্তফার সোহরাব-রুস্তম টাইপ লড়াইয়ের গল্পেরও প্রবল সম্ভাবনা আছে। সেটা ভালোই হয়। "জয় বজরঙ্গবলী!" বলে ঝাঁপিয়ে পড়বেন নাকি?

তীর কীভাবে ধরতে হবে সেটা কয়েকটা বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। যেমন, পালকের আকার ও আকৃতি (fletchings), ডাঁটের ব্যাস (shaft), তীর কী দিয়ে তৈরি (ওজন বোঝার জন্য) ইত্যাদি। এই জন্য স্থানভেদে তীর ধরার কায়দায় হেরফের হয়। বোধগম্য কারণে স্থির ধনুর্ধর আর গতিশীল ধনুর্ধরদের তীর-ধনুকের আকার-আকৃতি এক নয়, তাই তাদের তীর ধরার কায়দায়ও হেরফের হয়।

ঘোড়া ছুটিয়ে ভারতীয় ধনুর্ধররা তীর মেরেছে অনেক পরে। তার আগে তারা হয় মাটিতে স্থির দাঁড়িয়ে, অথবা রথে চেপে বা হাতির হাওদায় থেকে তীর মারতো।

সত্যপীর এর ছবি

"জয় বজরঙ্গবলী!" হো হো হো

নাহ, চাচা ভাতিজার গপ এইখানেই খতম। তারপর কি হইল জানে শ্যামলাল।

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

বুড়ো আঙুল বাঁকিয়ে তির টানার কেতা যদি তুর্কী/মঙ্গোল/মধ্য এশিয়ার হয় তাহলে একলব‌্য কি ভারতীয় নয়? সে তো তার আঙুল কেটে ফেলল গুরু দক্ষিনা দিতে গিয়ে; গুরুও আঙুল চাইলো যেন শুধু অর্জুন সেরা তিরন্দাজ থাকে।

অতিথি লেখক এর ছবি

যিহ্গি‌র দিয়ে তীর ছোঁড়ার ক্ষেত্রে তর্জনী তীরকে স্পর্শ করে না, শুধু যিহগির আর বৃদ্ধাঙ্গুলী ও তর্জনীর মধ্যবর্তী অংশ স্পর্শ করে। পক্ষান্তরে ভারতীয় কায়দায় বৃদ্ধাঙ্গুলী আর তর্জনীর সাহায্যে ফ্লেচিং বা শ্যাফ্ট‌ চেপে তীর ছুঁড়তে হয়। সুতরাং একলব্য, অর্জুন, দ্রোণাচার্য বা অন্য যে কোন ভারতীয়ের পক্ষে বৃদ্ধাঙ্গুলীর সাহায্য ছাড়া তীর ছোঁড়া সম্ভব নয়।

আরেকটা বিষয়, প্রাচীন আখ্যানগুলোতে উত্তর কুরু, উত্তর মদ্রের মতো অনেকগুলো রাজ্যকে ভারতের অন্তর্ভূক্ত দেখানো হলেও সেগুলো এখনকার হিসেবে মধ্য এশিয়ায় পড়ে। সুতরাং একলব্যের পূর্ব পুরুষ মধ্য এশিয়া থেকে মোটে পাঁচ-সাতশ' কিলোমিটার দূরের পাঞ্জাবে আসেনি এ'কথা জোর দিয়ে বলার উপায় নেই।

হিমু এর ছবি

একলব্য, অর্জুন, দ্রোণাচার্য বা অন্য যে কোন ভারতীয়ের পক্ষে বৃদ্ধাঙ্গুলীর সাহায্য ছাড়া তীর ছোঁড়া সম্ভব নয়।

একলব্য কিন্তু গল্পে দ্রোণকে গুরুদক্ষিণা দেওয়ার পরও দক্ষ ধানুকী হিসেবে পরে জরাসন্ধের হয়ে নানা ছোটোবড় যুদ্ধ করেছিলো।

সত্যপীর এর ছবি

তিন আঙুলে ছিলা টেনে?

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার বলায় ভুল ছিল। আমার বলা উচিত ছিল, "একলব্য, অর্জুন, দ্রোণাচার্য বা অন্য যে কোন ভারতীয়ের পক্ষে বৃদ্ধাঙ্গুলীর সাহায্য ছাড়া অমন দক্ষতায় তীর ছোঁড়া সম্ভব ছিল না"।

ভারতীয়রা সাধারণত চিমটি পদ্ধতিতে (pinch draw) তীর ছুঁড়তো। এতে বৃদ্ধাঙ্গুলী আর তর্জনী ব্যবহার আবশ্যক। বৃদ্ধাঙ্গুল পদ্ধতিও (thumb draw) প্রচলিত ছিল। এই দুই বিবেচনায় দ্রোণাচার্য একলব্যের বুড়ো আঙুল চেয়েছিল। যাদের বৃদ্ধাঙ্গুলী মুরাদের মতো কমজোরী বা শক্ত ছিল তারা তিন আঙুল পদ্ধতিতে (Mediterranean draw) তীর ছুঁড়তো। এই কায়দায় ভারতীয়রা দড় ছিল না। তাই পরবর্তীতে একলব্যের পক্ষে জরাসন্ধকে সার্ভিস দেয়া গেলেও আর অর্জুনকে ছাড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। এছাড়া স্থানভেদে ও গুরুভেদে এই পদ্ধতিগুলোর আরও অনেক প্রকরণ ছিল।

হিমু এর ছবি

ভারতীয়রা সাধারণত চিমটি পদ্ধতিতে (pinch draw) তীর ছুঁড়তো ... এই কায়দায় ভারতীয়রা দড় ছিল না।

এ নিয়ে তথ্যসূত্র দিতে পারেন?

আমার ধারণা, দ্রোণ যে কারণে একলব্যের বুড়ো আঙুল চেয়েছিলেন, সেটার সাথে শরক্ষেপের সম্পর্ক ক্ষীণ, বরং নতুন তির ছিলায় জুড়বার কাজটায় একলব্যের ক্ষিপ্রতানাশই তাঁর অভিপ্রায় ছিলো। ধানুকীরা যে হাতে ছিলা টানেন, সে হাত দিয়েই পরবর্তী তির ছিলায় জোড়েন। বুড়ো আঙুল না থাকলে সে কাজটা ক্ষিপ্রতার সাথে করা খুব কঠিন।

শরক্ষেপের পুরো কাজটাকে আমরা সাধারণত দাঁড়িয়ে ধীরেসুস্থে করার কাজ ভাবি, সম্ভবত সিনেমার প্রভাবে। বাস্তব রণক্ষেত্রে দূরপাল্লার ধানুকীদের খুব দ্রুত তির ছুড়তে হতো, হ্রস্বপাল্লার ধানুকীদের সেটা করতে হতো ঘোড়ায় চড়ে বা দৌড়ের ওপরে থেকে। একলব্যের বুড়ো আঙুল টিউশন ফি হিসাবে আদায় করে তাকে অন্তত এই একটা চিপায় ফেলেছিলেন দ্রোণ। মহাভারতে অর্জুনের হাতের টিপ নিয়ে অনেক ফ্যানানো হয়েছে বলে হয়তো শরক্ষেপের ক্ষিপ্রতার দিকটা আড়ালে পড়ে গেছে।

বিষ্ণুর ধনুকের নাম নাকি ছিলো শার্ঙ্গ (অর্থ: শিং থেকে নির্মিত)। শিং ঠিক স্থিতিস্থাপক ম্যাটেরিয়াল না, আর ধনুক তৈরি করতে গেলে দুটো বিপরীতধর্মী ম্যাটেরিয়াল লাগে, একটা প্রসারণে বাধা দেবে, আরেকটা সংকোচনে (এ কারণে ইংলিশ লংবো ইউ কাঠ থেকে তৈরি হতো, যেটার বাইরের দিকটা (স্যাপউড বা শাঁসকাঠ) প্রসারণে বাধা দেয়, আর ভেতরের দিকটা (হার্টউড বা আঁটিকাঠ) সংকোচনে বাধা দেয়)। মঙ্গোলদের মুল্লুকে কাঠ খুব সুলভ ছিলো না বলে তারা ধনুক তৈরি করতো দুটো ভিন্ন বস্তু জুড়ে, যৌগিক কাঠামোয়। পশুর পায়ের রগ দিয়ে তৈরি হতো স্থিতিস্থাপক অংশটা, আর শিং দিয়ে হতো সংকোচনরোধী অংশ। শার্ঙ্গ নামটা থেকে ধরে নেওয়া যায়, মঙ্গোলীয়দের মতো যৌগিক ধনুকের চল পশ্চিম ভারতেও ছিলো। যৌগিক ধনুকের টানবল সাধারণত একক ধনুকের চেয়ে অনেক বেশি হয়, বুড়ো আঙুল দিয়ে টানার এটা একটা কারণ হতে পারে। যিহগিরের সংস্কৃত ভায়রাভাই "অঙ্গুলিত্র", কাজেই এটার ব্যবহার হয়তো একলব্যের যুগেও থেকে থাকতে পারে।

অতিথি লেখক এর ছবি

দেরি করে উত্তর দেবার জন্য দুঃখিত হিমু। আসলে এই ব্লগটাতে ফিরে আসা হয়নি তাই জানতে পারিনি যে আপনি আরও আলোচনা করেছেন, প্রশ্ন রেখেছেন।

তীর ছোঁড়ার ব্যাপারে ভারতীয়দের কায়দা জানার জন্য কারো বর্ণনা বা চিত্রকর্ম, মন্দিরের গাত্রচিত্র বা পাথর খোদাই বা পোড়ামাটির ফলকের ওপর নির্ভর না করে আমরা বরং সরাসরি ধনুর্বেদে এই ব্যাপারে খোঁজ করি। ধনুর্বেদের ইংলিশ ভার্সান থেকে বাংলা অনুবাদ করছি, শ্লোক ১৭৯৭ থেকে ১৮০১:

১৭৯৭: ধনুর্ধরের আঙুল বাঁকা করে তীর ধরে ছিলা থেকে তীর ছোঁড়ার কতিপয় পদ্ধতি আছে; যথা, পাতক, বজ্রমুষ্ঠি, সিংহকর্ণ, মাৎসারী, কাকতুণ্ডী ইত্যাদি।
১৭৯৮: যদি তর্জনী প্রসারিত করে বৃদ্ধাঙ্গুলীর মূলের কাছে আনা হয় তাহলে এই পদ্ধতির তীর ধরাকে ‘পাতক’ বলা হয়। দূরবর্তী লক্ষ ভেদ করার জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।
১৭৯৯: যদি বৃদ্ধাঙ্গুলীকে তর্জনী আর মধ্যমার মাঝখানে প্রবিষ্ট করে তীর ধরা হয় তাহলে এই পদ্ধতিকে ‘বজ্রমুষ্ঠি’ বলা হয়। পুরু (ভারি) তীর অথবা সম্পূর্ণ লোহার তীর (‘নরক’) ছোঁড়ার জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।
১৮০০: যদি তর্জনীর অগ্রভাগ বৃদ্ধাঙ্গুলীর নখের উপর চেপে তীর ধরা হয় তাহলে এই পদ্ধতিকে ‘মাৎসারী’ বলা হয়। সূক্ষ্ম বা সরু লক্ষ (‘চিত্র’) ভেদ করার জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।
১৮০১: বৃদ্ধাঙ্গুলীর ঊর্ধ্বাংশ তর্জনীর অগ্রভাগকে চেপে তীর ধরার পদ্ধতিকে ‘কাকতুণ্ডী’ বলা হয়। বৃহদাকার লক্ষ ভেদ করার জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।

আমি ধনুর্বেদের যেটুকু পেয়েছি তাতে ‘সিংহকর্ণ’ পদ্ধতির বর্ণনা নেই। আশঙ্কা করছি সিংহকর্ণ পদ্ধতিতেও বৃদ্ধাঙ্গুলির ব্যাপক ভূমিকা থাকার কথা। সুতরাং একলব্যের কাছে দ্রোণাচার্যের বুড়ো আঙুল চাওয়ার একটা কারণ ধারণা করা যাচ্ছে।

ধনুর্বেদ খ্রীষ্টপূর্ব ১৭০০ থেকে খ্রীষ্টপূর্ব ১১০০ সালের মধ্যে রচিত বলে ধারণা করা হয়। এই বেদের আদি ও সমগ্র পুস্তক পাওয়া যায়নি। ধনুর্বিধি, দ্রোণবিদ্যা, কোদণ্ডমন্দন, ধনুর্বেদসংহিতা ইত্যাদি বিচ্ছিন্ন অংশ পাওয়া যায়। আমার পড়া অংশে ধনুকের মেটেরিয়াল নিয়ে স্পষ্ট কিছু বলা নেই। তবে পক্ক বস্তুর ব্যবহার (টেম্পার্ড?), ধাতুর ব্যবহার, বিজোড় সংখ্যক জোড়া লাগানোর কথা বলা হয়েছে। জোড়া লাগানোর কথায় বোঝা যাচ্ছে পরিধির দিকে টানসহ বস্তু (tensile strength) আর কেন্দ্রের দিকে চাপসহ বস্তু (compression strength) ব্যবহারের চর্চ্চা ছিল। ১৫৮০ নং শ্লোকে বলা হচ্ছে, হস্তীপৃষ্ঠ আসীন বা অশ্বারোহী যোদ্ধা ‘সারঙ্গ’ ধনু ব্যবহার করবে; রথে আসীন বা পদাতিক যোদ্ধা বাঁশনির্মিত ধনু ব্যবহার করবে। এখানে উল্লেখ্য যে, সারঙ্গ হচ্ছে বিশ্বকর্মার বানানো বিষ্ণুর ধনু যা সাধারণ ধনুকের চেয়ে সাতগুণ লম্বা। সারঙ্গ নির্মাণে যেহেতু বিশ্বকর্মার হাত আছে তাই এখানে ধাতু ব্যবহারের সম্ভাবনা সমূহ। ভারতে ধাতুকৌশল শুরু হয়েছে খ্রীষ্টপূর্ব তৃতীয় সহস্রাব্দ থেকে, লোহার ব্যবহার শুরু হয়েছে খ্রীষ্টপূর্ব অষ্টাদশ শতক থেকে; সুতরাং কুরু-পাণ্ডবদের ধনুক যৌগিক ধাতব হবার বা কাঠ ও ধাতুর যুগলে তৈরি হবার সম্ভাবনা ব্যাপক।

ধনুর্বেদের ১৭৬১ থেকে ১৭৬৭ নং শ্লোকে বলা হচ্ছে — তিন লহরে পাকানো রেশমী সুতা; হরিণ, মাদী মহিষ বা গাভীর অন্ত্র; সদ্য উৎসর্গীকৃত ছাগ বা গোকর্ণের (পারিভাষিক অর্থে মৃগ) চামড়া; পাকা বাঁশের ছিলকা (রেশমী সুতা দিয়ে বাঁধতে হবে); ভাদ্র মাসে অর্ক গাছের ছাল তুলে তিন লহরে পাকানো দড়ি দিয়ে ছিলা বানাতে হবে।

আমি আমার প্রথম মন্তব্যে বলেছিলাম, আগে বেলনাকার (cylindrical) ধাতব বা চামড়ার যিহ্‌গির ব্যবহার করা হতো। এর সংস্কৃত নাম যদি ‘অঙ্গুলিত্র’ হয়ে থাকে তাহলে ধারণা করা যাচ্ছে এটার ব্যাবহার মুঘলদের কয়েক শতাব্দী আগের ব্যাপার নয়, বরং কয়েক সহস্রাব্দ আগেও হতে পারে। সুতরাং একলব্যের কাছে দ্রোণাচার্যের বুড়ো আঙুল চাওয়ার আরও একটা কারণ ধারণা করা যাচ্ছে।

ক্ষিপ্রতা বিষয়ক আপনার ভাবনাকে অস্বীকার করার উপায় নেই। কারণ, ধনুর্ধরের অবস্থান যেখানেই হোক না কেন, অথবা তার চলার গতি যাই হোক না কেন অতি দ্রুততায় পরবর্তী তীর জুড়বার জন্য বৃদ্ধাঙ্গুলের প্রয়োজনীয়তা অনসীকার্য। ভূমধ্যসাগরীয় পদ্ধতিতে নাকি প্রতি ৩ সেকেন্ডে একটি করে তীর ছোঁড়া যায়। তীর ছুঁড়ে কুকুরের মুখ বন্ধ করে দেয়া থেকে ধারণা করা যাচ্ছে একলব্যের ক্ষিপ্রতা যথেষ্ট। এই পয়েন্টে একলব্যকে ঘায়েল করার জন্য দ্রোণাচার্য তার বুড়ো আঙুল দক্ষিণা চাইতেও পারে।

হিমু এর ছবি

এখানে উল্লেখ্য যে, সারঙ্গ হচ্ছে বিশ্বকর্মার বানানো বিষ্ণুর ধনু যা সাধারণ ধনুকের চেয়ে সাতগুণ লম্বা।

ধনুর্বেদের টেক্সটে বানানটা অবশ্য "শার্ঙ্গ" (শৃঙ্গ থেকে নির্মিত)। ৪৪ ক্রমিকের শ্লোকে এর দৈর্ঘ্য দেওয়া আছে সাত বিতস্তি, মানে তেষট্টি ইঞ্চি। আমলোকের বানানো ধনুক সাড়ে ছয় বিতস্তি, ৪৬ ক্রমিকের শ্লোকে বলা আছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

‘শার্ঙ্গ’ ধনুক ‘সারঙ্গ’ হয়ে যাওয়ার আংশিক দায় আমার বাকিটা সায়েবদের। উনারা রাধামাধবকে বলেন Krishna, আবার তার গার্লফ্রেন্ড যাজ্ঞসেনীকেও বলেন Krishna। তাদের অনুবাদকে পুনরায় অনুবাদ করতে গিয়ে এই বিঘ্নটা হয়েছে।

শুধু বিষ্ণু বা বিশ্বকর্মা কেন, শৃঙ্গ দিয়ে বানানো ধনুকের ব্যবহার ভারতীয়, মোঙ্গল, মধ্য-এশীয়, তুর্কী কারা না করেছে! বিশেষত recurve bow (পুনরাবৃত্ত ধনুক) বা recurved composite bow (যৌগিক পুনরাবৃত্ত ধনুক)-এর limb (অভিক্ষেপ) তৈরিতে এর ব্যবহার বহুল। ধনুর্বেদে মাপজোকগুলো একেক জায়গায় একেক রকম করে বলা। সেই মাপও আবার পরিমিত নয়। যেমন, এক হাত = ২৪ আঙুল; এটা কার হাত? কার আঙুল? এদিকে বেশির ভাগ মানুষের হাত নিজের আঙুলের মাপে ২২-২৩ আঙুল। ১৭৪৫ নং শ্লোকে বলছে সেরা বা স্বর্গীয় টাইপ ধনুকের দৈর্ঘ্য হচ্ছে সাড়ে পাঁচ হাত (৯৯ ইঞ্চি)! আবার তার দুই শ্লোক আগে বলছে — ধনুর্ধরের জীবনের মূল্য ধনুকের চেয়ে বেশি; যে ধনুর্ধর তার ধনুকের ভারে ন্যুব্জ সে কখনো লক্ষ ভেদ করতে পারবে না। তো এই সাড়ে পাঁচ হাত লম্বা ধনুক দিয়ে সাড়ে তিন হাত লম্বা ধনুর্ধর তীর ছুঁড়বে কী করে? আবার ১৭৪৮ নং শ্লোকে বলছে মানবকুলের জন্য ‘চতুর্হস্ত’ (৭২ ইঞ্চি) লম্বা ধনুকই ঠিক। আসলে কোনটা যে ঠিক! যাকগে, মাপামাপির ব্যাপার-স্যাপারে আমি ক্ষ্যান্ত দিলাম।

সত্যপীর এর ছবি

একলব্য ভারতীয়। তবে, প্রাচীন ভারতের বদলে মধ্যযুগীয় ভারতের তিরন্দাজি এই গল্পে প্রাসঙ্গিক। মধ্যযুগে/মোগল আমলে ভারতীয় তিরন্দাজের ধনুকের গড়ন এমন ছিল যে তির বুড়ো আঙুল এবং তর্জনি/মধ্যমা দিয়ে চিমটি দিয়ে ধরে (Pinch Draw) টানলে হত। মঙ্গোল/তুর্কী তিরধনুকের গঠন আপনাকে বাধ্য করে কেবল বুড়ো আঙুল বাঁকিয়ে ধরা (Thumb Draw)।

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

পাহাড়ের আখ্যানে জমিলা বা জামিলারা কি কেবল মুরাদ বা সাদিককে ছেড়ে চলে যায়!

অতিথি লেখক এর ছবি

একবার ভাবলাম জিগ্যেস করি কোন সময়ের গল্প এটি, গল্পের মানুষগুলোকে এমন চেনা চেনা লাগছে কেন! ভাবতে ভাবতেই অনুধাবন করলাম, এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানাটা আবশ্যক নয়। চমৎকার গল্প সত্যপীর, বলেছেন দারুণ ঢঙে। এমনকি শেষদিকে ঢাকার বর্তমান বোলচাল ঠেসে দেওয়াটাও অবিশ্বাস্য ভাবে মানিয়ে গিয়েছে।

----মোখলেস হোসেন

সত্যপীর এর ছবি

শুদ্ধ নদীয়ার ভাষা হলেও মানাত কি?

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

হয়তো মানাতো, আমি লিখলে তথাকথিত সেই প্রমিত বাংলাতেই লিখতাম। অন্য কিছু করার ভাবনা আমার মাথায় আসতোই না। আপনার এসেছে, এবং পড়ার পর আমার মনে হয়েছে ,'আরে দারুণ তো!' আফগান উপত্যকার দুজন যোদ্ধা বইয়ের ভাষায় নিজেদের মধ্যে কথা বলছেন, এই ক্লিশেটা দারুণ ভাবে ভেঙ্গেছেন আপনি।

--মোখলেস হোসেন

সত্যপীর এর ছবি

ক্লিশেটা আমি ভাঙিনি বলেই মনে হয়। ফ্রন্টলাইনের যোদ্ধা প্রমিত ভাষায় কথা বললে সিপাই আর নবাবের জবান ফারাক করব কিভাবে? ঐতিহাসিক মুভি-টিভি সিরিজে দেখবেন যোদ্ধারা কথ্য ভাষায় আর জেনারেল শুদ্ধ ইংরেজিতে কথা বলে। এইটা বহুল প্রচলিত প্র্যাকটিস, আমি ক্লিশে ভাঙার বহু আগে এটি ভেঙে আছে।

তাই বলে কি আমি কথ্য ঢাকাইয়া ভাষা চালাতে পারি? পারি। কারণটা বলি। ন্যাট জিও/ডিস্কভারি/হিস্ট্রি চ্যানেল/এইচ বি ও র টিভি সিরিজে বিরাট বেতন টানা ল্যাঙ্গুয়েজ এক্সপার্ট থাকে। তারা কেবল ভাষার কারুকাজ নিয়েই কাজ করে। সেইসব টিভি সিরিজে দেখবেন হয়তো ১৬০০ সালের স্কটিশ ককনি টানে খিস্তি দিয়ে বলছে ফোকিং এল। অর্থাৎ ফাকিং হেল। স্কটিশ কি ফাকিং হেল বলে খিস্তি দিত ৪০০ বছর আগে? না। দিত না। তাদের কি ককনি টান ছিল? হ্যাঁ, ছিল। কিন্তু মুভিতে যেরকম দেখায় ঠিক সেরকম না। সমস্যা হল স্কটিশ সিপাই বই লিখে রেখে যায়নি যে সে ঠিক কি বলে এডিনবরার পাবের সামনে খিস্তি দিত। ফাকিং হেল বললে আজকের দর্শক/পাঠক বুঝতে পারে সে খিস্তি দিচ্ছে, তাই সেটা তার মুখ দিয়ে বলানো হয়। আসলেই সে সেই কথা বলত কিনা কিংবা তার সেই টান ছিল কিনা, সেইটা মুখ্য নয়। মুখ্য হল চরিত্রের মনের ভাব ফুটিয়ে তোলা।

আমার লেখার চরিত্রের মুখের ভাষা নিয়ে আপনি আগেও দ্বন্দ্বে ছিলেন, তাই আজ একবারে খোলাসা করে দিলাম। আশা করি ভবিষ্যতে আফগানের মুখে ঢাকাইয়া ভাষা শুনে আপনার আটকাবে না। আফগানের মুখে পশতু বা রাজপুতের মুখে রাজস্থানি আমার গল্পে কখনই আসবে না। শিক্ষিতের মুখে নদীয়ার ভাষা আর সিপাইর মুখে মোটামুটি ঢাকাই বা অন্য কথ্য ভাষা দেখবেন।

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

এই ক্লিশেটা যে বহু আগেই ভেঙ্গে গিয়েছে সেটি আমার কাছে আসলেই নতুন। দীর্ঘ একটা সময় বাংলাভাষায় লেখা গল্প-উপন্যাস-প্রবন্ধ-ছড়া-কবিতা না পড়ে কাটিয়ে দিয়েছি। মাত্র কয়েক বছর হয় নতুন করে চিনতে শুরু করেছি সব, ধাতস্ত হতে সময় লাগছে। পড়তে শেখার পর থেকেই দেখে এসেছি নবারের ভাষা আর সিপাইয়ের ভাষায় কোন ফারাক নেই, বিশেষ করে অনুবাদ আর বিদেশি প্রেক্ষাপটে লেখা গল্প-উপন্যাসে। কেন নেই সেই প্রশ্নও মনে জাগেনি কোনোদিন। প্রথম ভাঙতে দেখেছিলাম হুমায়ুন আজাদকে, নারী বইটিতে তিনি লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার এর একটি অংশ যখন ঢাকাইয়া খিস্তি দিয়ে বর্ননা করেছিলেন। বহুবছর পর লীলেন কে দেখলাম পুরনো স্টাইলটাকে ভেঙ্গেচুরে কী দারুণ একটা ফর্ম তৈরি করে ফেলেছে! চেনা প্রেক্ষাপটে লেখা গল্প-উপন্যাসে আঞ্চলিক ভাষার ব্যাবহার সেতো ছিলোই, তবে এই ফর্মটি আমার কাছে একেবারেই নতুন। ভীষণ ডিনায়ালের মধ্যে ছিলাম। এই নিয়ে লীলেনের সাথে কম চাপানউতোর হয় নি। আপনার আগের কয়েকটি লেখায়ও আমার মন্তব্যে সেই ডিনায়ালটা দেখা যায়। আজকাল অচলায়তন ভেঙ্গে বেরিয়ে আসছি বলেই মনে হচ্ছে। এবারের মন্তব্যে লক্ষ্য করেছেন হয়তো, সেই ডিনায়ালটা আর নেই। রয়েছে মুগ্ধতা।

--মোখলেস হোসেন

আয়নামতি এর ছবি

হাসি

মুরাদ জানত সে অভিমান কাটিয়ে ঠিকই ঘরে ফিরে আসবে।

এখানে একটু খটকা লাগলো। এটা কার ভাবনা, মুস্তফা নাকি মুরাদের?

সত্যপীর এর ছবি

আপনি মনোযোগী পাঠক। পাল্টে দিলাম লাইনটা। ভাবনা মুস্তফার হওয়াই উচিৎ।

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার উপস্থাপনার মুন্সিয়ানায় এবারও মুগ্ধ। অদেখা সময়ের প্রেক্ষাপটে লেখা আপনার গল্পগুলো পড়তে বেশ ভালো লাগে। "জুয়াড়ি" বেশ ভালো লেগেছিলো।

-ইকরাম ফরিদ চৌধুরী

সত্যপীর এর ছবি

ফ্রন্টিয়ার দেখছি। ক্যানাডার ফার ট্রেড নিয়ে স্থানীয়/ইংরেজ/ফরাসীর কামড়াকামড়ির সময়কার কাহিনী। সম্ভব হলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চীনে আফিম চোরাচালান নিয়ে একটা গল্প লিখতাম। অদেখা সময়ের গল্প।

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

সম্ভব করে ফেলেন। ফিরিঙ্গীরা চীনে আফিম চোরাচালান করতো এটা ঐতিহাসিক সত্য।

সত্যপীর এর ছবি

চীন নিয়ে আমার পড়াশোনা সীমিত। এই গল্পে চীনা চরিত্র এবং ক্যান্টন হংকং এর মত চীনা জায়গায় আসলে আমি ঠেকে যাব। সুতরাং গল্প ইংরেজ ভারতীয়র মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে অথবা চীন নিয়ে পড়াশোনা করতে হবে। দুইই আলী সাহেবের ভাষায় "গব্বযন্ত্রণা"।

..................................................................
#Banshibir.

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

এই গল্পে চীনা চরিত্র এবং ক্যান্টন হংকং এর মত চীনা জায়গায় আসলে আমি ঠেকে যাব

- ঐখানে ঠেকে গেলে আপনাকে পার করার মতো মানুষ সচলে আছে। আফিমের গল্পে নেমে পড়ুন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সত্যপীর এর ছবি

আচ্ছা।

..................................................................
#Banshibir.

মেঘলা মানুষ এর ছবি

অপ্রত্যাশিত ছিল। প্রথমে ভেবেছিলাম মুরাদের সাথে দেখা হবে ছোটাভাইয়ের। মাঝে দেখলাম, মুরাদ মারা গেছে। তারপর ভাবলাম হ্যালুসিনেসন। অবশেষে একটা অন্য গল্প আসলো। #সত‌্যপীর_পাথর

শুভেচ্ছা হাসি

সত্যপীর এর ছবি

জীবন বিচিত্র।

..................................................................
#Banshibir.

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

এই গল্পটাতেই কি তিন চতুর্থাংশ লেখার পর ট্রাফিক সিগনালে জ্যাম লাগছিল? জ্যাম ছুটাইলেন ক্যামনে?

সত্যপীর এর ছবি

এইটা না।

..................................................................
#Banshibir.

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

পীরের গপ্পে খুনাখুনি নাই! এই পীর সহীহ না নাকি? চিন্তিত

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সত্যপীর এর ছবি

মুস্তফার মনটা যে খুন হয়া গেল ভাতিজারে দেইখা সেইটাও হিসাবে আনতে হবে।

..................................................................
#Banshibir.

মন মাঝি এর ছবি

আপনারে কতদিন ধরে বলতেসি - এইবার আপনার ইতিহাসভিত্তিক গপ্পগুলান নিয়া একটা সংকলণ বাইর করেন। আপনে পাত্তাই দ্যান না! তাই আবারও সেই একই আর্জি জানায়ে যাইতেসি!!

****************************************

সত্যপীর এর ছবি

আচ্ছা শখানেক গপ্প জমলে একটা সংকলন দিমু। বইয়ের সম্ভাব্য নাম: "পীরের একশটি ফুঁ"।

..................................................................
#Banshibir.

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম গোস্টরাইটার লাগল কন, তাত্তারি শ' পুরায়া দেই! চাল্লু

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সত্যপীর এর ছবি

এইটা উত্তম বুদ্ধি। বইয়ের নাম সেইক্ষেত্রে পাল্টায় রাখা যাক "পীরের ছয়টি এবং ভূতের চুরানব্বইটি ফুঁ"।

..................................................................
#Banshibir.

মন মাঝি এর ছবি

গল্প অণুগল্প মিলে ৩৭-৩৮ টার মত হয়েছে। এটা নেহাত মন্দ না। একটা বই দিব্যি হয়ে যেতে পারে।

****************************************

সত্যপীর এর ছবি

সমস্ত পুরান গপ দিয়া বই বাইর কইরা শঙ্খচিলের ডানা্র মত ভেসে পোস্ট দিলে পাঠক দিব মাইর। একটু ভাইবা দেখব প্রকাশিত অপ্রকাশিত মিলায় বিজলিবই করা যায় কিনা। (আর আমার সচলগ ধইরা গেলে আপনেরা তো এমনেই সব লেখা পাইবেন, বইয়ের তাড়া কি)

..................................................................
#Banshibir.

স্পর্শ এর ছবি

টানটান গল্প। ভাল লাগলো। বুড়ো আঙুলের আংটি পরে কিভাবে তীর টানে সেটাও ইউটিউব দেখে জেনে নিলাম। নতুন ব্যাপার আমার কাছে।

পিছন পিছন আসা লোকটা, যাকে ইদ্রিস বলে অনুমান করেছিল মুস্তফা, সেটা অন্য কেউ হয়ে গল্প অন্য কোথাও মোড় নেবে বলে মনে হচ্ছিল পড়তে পড়তে।

ছোটো গল্পগুলো আরেকটু বড় করে লিখেন মিয়া। আপনার ভাষা বেশ গতিময়। গল্প আকারে ছোট হলে হুঠ করেই শেষ হয়ে যায়।।। হাসি


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

সত্যপীর এর ছবি

পিছন পিছন আসা লোকটা, যাকে ইদ্রিস বলে অনুমান করেছিল মুস্তফা, সেটা অন্য কেউ হয়ে গল্প অন্য কোথাও মোড় নেবে বলে মনে হচ্ছিল পড়তে পড়তে।

এই দিকটা ভাইবা দেখিনাই। সেইটা করা যাইত। শেষ মুহুর্তে পিছন থেকে মুস্তফার গলার ফাঁস নিল ইদ্রিস রূপধারী মুরাদের পুলা মুইন... সেইটাও জবরদস্ত এন্ডিং হইত বটে।

..................................................................
#Banshibir.

সোহেল ইমাম এর ছবি

চমৎকার।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

এক লহমা এর ছবি

হাততালি

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

দেবদ্যুতি এর ছবি

বাহ্! চমৎকার গল্প, চমৎকার সমাপ্তি হাসি

...............................................................
“আকাশে তো আমি রাখি নাই মোর উড়িবার ইতিহাস”

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।