চৌথ

সত্যপীর এর ছবি
লিখেছেন সত্যপীর (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৮/০৯/২০১৭ - ৬:০৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গত লেখায় মনসবদারি সম্পর্কে আমরা সবই জেনে গিয়েছি। মোগল মনসবদার হিসাবে আপনি জায়গির পাবেন আর চার মহলা দালানে থাকবেন। শুক্কুরবারে খাসির বিরিয়ানি। বছর তিন পরপর বদলি। দুইটি পদবী মঞ্জুর হবেঃ জাট এবং সওয়ার। তার বদলে যুদ্ধের জন্য হাতিঘোড়া মজুদ রাখবেন আর সিপাই পালবেন।

বেশ।

তবে সকলে মোগল নয়। কেউ কেউ মারাঠা।

মারাঠা সাম্রাজ্যের ফাউন্ডার প্রেসিডেন্ট শিবাজি মহারাজ ছিলেন একটি চালু বিলাই। সামরিক (যেমন গেরিলা যুদ্ধের কায়দা) এবং বেসামরিক (যেমন রাজস্ব ব্যবস্থা) ব্যাপারে শিবাজির ইন্ডিয়ান আইডল ছিলেন মালিক অম্বর। প্রখর বুদ্ধির অধিকারী আফ্রিকান বংশোদ্ভূত নেতা মালিক অম্বর ওরফে চাপুর জীবন ও যৌবন স্বতন্ত্র লেখার দাবী রাখে। তা সে আরেকদিন।

শিবাজি যেহেতু মোগলদের মোড়ল মানতেন না, তাই তিনি মনসবের ধার ধারেননি। তার ছেলের মনসব ছিল অবশ্য। জেয়েমটিটি শিবাজি মোগলদের সাথে বাটে পড়ে মাঝেমধ্যে সন্ধি করেছেন। শিবাজির ছেলের মনসবের বিষয় যথাসময়ে আসবে।

শিবাজি মোগল তরিকায় জায়গির পদ্ধতি নগদে খারিজ করে দেন। তার আমলে (অল্পকিছু ব্যতিক্রম ছাড়া) সামরিক বেসামরিক সকল কর্মকর্তা কাউকে জায়গির দেয়া হত না। বিশেষ করে ইনাম জায়গির ছিল শিবাজির দুই চোখের বিষ। তার আমলে সিপাইদের নগদ বেতন দেয়া হত, যেটা সমসাময়িক অন্যান্য সামরিক বাহিনীতে বিরল।

তবে মনসব জায়গিরের পাশাপাশি চৌথ সরদেশমুখিও বুঝতে হবে।

পয়লা চৌথ। মনে করেন আপনি রাজা ভূপাতিত সিং। মনসবদার। জাট ৩০০০ সওয়ার ২২০০। অর্থাৎ আপনি মোগল সামরিক কর্মকর্তা। চার মহলা দালান। শুক্রবারে খাসীর ইত্যাদি। হঠাৎ এক সকালে ধূলা উড়ায়ে উপস্থিত কোথাকার এক মারাঠি দূত ডিগবাজি ভোঁসলে। সে ভোঁস ভোঁস করে কয়ে গেল রে ভূপাতিত। আগার মা কী দুধ পিয়ে তো চৌথ রেডি রাখবি সামনে সপ্তায়। সাথে সরদেশমুখি দশ শতাংশ। আবার দেখা হবে, এখনি শেষ দেখা নয়। আবার কথা হবে। এখনি শেষ কথা নয়। বোঝাতে কী পেরেছি ইত্যাদি।

বোঝা গেল চৌথ কী?

চৌথ হল মস্তানি কর। টাইটেল হিসাবে “দস্যুরাজা” শিবাজির জন্য পুরাতন। সমসাময়িক এবং পরবর্তী অনেকেই শিবাজিকে দস্যুরাজা বা ডাকাত সর্দার বলে গেছেন। তার মূল কারণ এই চৌথ। ডাকাতি এবং মস্তানিকে শিবাজি শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। অন্যান্য রাজাবাদশারা এলাকা আক্রমণ করে দখল করে রাখত। যত বেশি এলাকা তত বড় রাজা। তারা শিবাজির মত মস্তানির হুমকি দিয়ে যেত না, তারা চিরস্থায়ী মস্তানী কায়েম করত। তারা এলাকা দখল করত, জমির কর আদায় করত, তাদের মুদ্রা চালাত, সেইখানকার মসজিদে তাদের বাদশার নামে খুতবা পাঠ করাত। মোট কথা এলাকাটাই হস্তগত করত। শিবাজি অন্য চালাকি করলেন। তিনি বলে পাঠালেন এইও। চৌথ দে। সরদেশমুখি দে। তাহলে ছেড়ে দেব। নইলে একদম সুব পুড়িয়ে নাশ করে সোনাদানা নিয়ে যাব কইলাম। এলাকার উপর আমার কোন দাবী নাই আপাতত।

চৌথ অর্থাৎ এক চতুর্থাংশ। মারাঠিরা মোগল ও অন্যান্য অ-মারাঠি এলাকায় গিয়ে তাদের আয়ের এক চতুর্থাংশ চাইত চৌথ হিসাবে। রক্ষাপণ বা প্রটেকশন মানি ধরেন। চৌথ না দিলে আক্রমণ। এমনকী শান্তির সময়ও (শিবাজির শাসনামলের অধিকাংশ সময় মারাঠারা কোথাও না কোথাও যুদ্ধরত ছিল) চৌথ এবং সরদেশমুখি ছিল শিবাজির আয়ের মূল উৎস।

চৌথের টাকা ডাকাতি করে প্রাপ্ত হলেও এইটে ঠিক লুণ্ঠন ছিলনা। মস্তানরাজ শিবাজি শক্ত নিয়ম করে রেখেছিলেন এই টাকা কিভাবে জমা দিতে হবে। তার আমলে সকল সিপাই চার মাস বিশ্রাম নিত আর আট মাস ব্যস্ত থাকত যুদ্ধে বা চৌথের টাকা আদায় করতে। সেই আট মাস কিভাবে সিপাইরা চলবে তা লৌহমুষ্টিতে শিবাজির নেতারা নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁবুতে কোন মেয়ে বা নাচওয়ালি আনলে সাথে সাথে কল্লা নামিয়ে দেয়া হত। লুটের টাকা নিজের পকেটে লুকালেও কল্লা নেয়া হত। সকল টাকা জমা দিতে হত কোষাগারে, তার বদলে সিপাইরা নিয়মিত নগদ বেতন পেত (মোগল মনসবদারেরা এত কঠিন নিয়মে বেঁধে রাখত না তাদের সিপাইদের কিন্তু প্রচুর বেতন বাকি রাখা হত)।

চৌথ তো বুঝলেন। মস্তানি কর। এক চতুর্থাংশ। সরদেশমুখি কী?

শিবাজির ছিল ইস্পাতের অণ্ডকোষ। বলস অফ স্টীল। তিনি প্রতাপশালী বাদশা আওরঙ্গজেবের কাছে এত্তেলা পাঠান যে তিনি অত্র এলাকার প্রধান, সরদেশমুখ অর্থাৎ দেশমুখদের পয়লা নম্বুরি নেতা (দেশমুখেরা ছিল স্থানীয় জমিদার টাইপ লোক)। সেই হিসাবে যতদূর দুই চোখ যায় দাক্ষিণাত্যের সকল এলাকার তিনি প্রধান এবং তৎসংলগ্ন সকল এলাকার আয়ের দশভাগ তার।

আয়ের দশভাগ।

পাঠক খাড়ান। একটু বুঝি। সরদেশমুখি পদবী শিবাজির কল্পিত এবং দশ শতাংশ আয় ইত্যাদি দাবী তার গাধা হইতে আগত অর্থাৎ কামিং আউট অফ হিজ অ্যাস। কোন আইনি ভিত্তি নাই। শিবাজি কইছেন তাই সরদেশমুখি উনার এবং সরদেশমুখি উনার কেননা শিবাজি কইছেন। বেশ। দশ শতাংশ আয়ের ব্যপারটাও গুরুত্বপূর্ণ। এই দশ শতাংশ শিবাজির ব্যক্তিগত আয়, মারাঠি ভাণ্ডারে যাবে না এই টাকা। তার নিজের ভাণ্ডার যাবে ভরে তোমা সবাকার ইত্যাদি।

আইনি ভিত্তি যেহেতু নাই, তাই শিবাজির লক্ষ্য ছিল আইনি ভিত্তি লাভ করা। মোগল আমলে আইনি ভিত্তি লাভ করার উপায় ছিল বাদশাহী ফরমান আয়ত্ত্ব করা। তাই শিবাজি আওরঙ্গজেবকে ঘোড়ার ডাক পাঠালেন হে আলমপানা। আলমগীর। আলম কি গীর। চৌথের আওতাভুক্ত জমিতে সরদেশমুখি বাবদ দশ শতাংশ মারাঠা নেতার প্রাপ্য এই মর্মে ত্বরা কইরে একটা ফরমান ছাড়ি দিলে ভালো লাগত। বিনীত কেবল আপোনারই। শিবাজি।

আওরঙ্গজেব সেই আহ্বানে মুতে দিয়ে বললেন, পাহাড়ের ইঁদুর কাঁহিকা।

এস্থলে পাঠক আপনি মনসব, জায়গির, চৌথ এবং সরদেশমুখি চারটা সংজ্ঞাই জানেন। আপনাকে অভিবাদন। রাজনৈতিক গুটি হিসাবে এসবের গুরুত্ব সীমাহীন। মোগল মারাঠা গদির লড়াইয়ে মনসব চৌথের খেলা দেখা যাক তবে।

শিবাজি আওরঙ্গজেবের পিটাপিটির লড়াই পুরাতন। তারাপদ রায়ের গল্পের মতন, এক লোক গুলি চালিয়ে কুত্তা ছেড়ে দিয়েছে পিছা করার জন্য। বুলেটও চলে কুত্তাও দৌড়য়। কভি কুত্তা কভি গোলি। কভি গোলি তো কভি কুত্তা। একের পর এক দূর্গ কভি শিবাজির তো কভি আওরঙ্গজেবের। এ একটা ধরে দখল নিলে ও আরেকটার দখল ফের নিয়ে নেয়। এই করে করে ক্লান্ত আওরঙ্গজেব জয় সিং বলে এক মনসবদারকে পাঠালেন শিবাজিকে ঢিঁট করবার আশায়। জয় সিং শিবাজির বুকের ধন পুরন্দর দূর্গ দখল করে ফেলেন। পুরন্দর দূর্গের মধ্যে শিবাজির পরিবার, অষ্টপ্রধানের (মন্ত্রীদল) গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এবং ধনাগার ছিল। বেগতিক দেখে শিবাজি সন্ধি করতে রাজি হয়। সন্ধির চুক্তি অনুযায়ী মোগলের হাতে মারাঠার কিছু দূর্গ আসে আর শিবাজি এক কোটি কুড়ি লাখ রূপী মোগলকে দেন যুদ্ধের খর্চা হিসাবে। বদলে শিবাজির আসে গোলকুণ্ডা দখলের অনুমতিপত্র।

আওরঙ্গজেব এই সন্ধির ঘোর বিপক্ষে ছিলেন। তার মতলব ছিল গাদ্দার শিবাজিকে গারদে পোরা। সন্ধির কয়দিন পরেই শিবাজি পুনরায় মোগল বদ নজরে পড়েন এবং জয় সিং আওরঙ্গজেবকে পত্র লিখেন যে শিবাজিরে একটু ফেস্টাইম দেন, সে গিয়া আপনার সাথে আগ্রা দেখা করুক। সে লোক খারাপ না। কথা কয়ে দেখেন মিটমাট সে করে কিনা। আওরঙ্গজেব কিঞ্চিৎ অনিচ্ছাস্বত্বেও রাজি হলেন এবং যাতায়াত খরচ বাবদ এক লাখ রূপী মঞ্জুর করলেন। শিবাজি মোগল পদবীর ধার ধারতেন না তাই তিনি মনসব নেননি, কিন্তু শিবাজির ছেলে শম্ভুজির নামে ৫০০০ জাটের মনসবদারি জারি করা হয়।

শিবাজি আগ্রা এসে আবিষ্কার করেন আস্ত শহর আলমপানার জম্মদিন পালন করছে। কেবল উৎসব আর উৎসব। এত উৎসবের ফাঁকে আওরঙ্গজেবের সময়ই হলনা শিবাজির সাথে দেখা করার (এস্থলে পাঠক আপনাকে ঘনঘন চোখটিপি ও ঠিশারা)। বাদশার অনুপস্থিতিতে দরবারে শিবাজিকে পাশবালিশ দিয়ে বসতে দেয়া হল ৫০০০ জাটের মনসবদারদের সঙ্গে।

শিবাজি সব দেখেশুনে ক্ষেপে গিয়ে করলেন মারাঠিতে চিৎকার। কইলেন, আমার পুলা ৭ বছর বয়েস সে ৫০০০ জাট। এক আত্মীয় নেতাজি সেও ৫০০০ জাট। আর আমি কিনা তাদের সমান? ধুর্বাল যাইগা।

তিনি দরবার থেকে বেরিয়ে গেলেন আর সঙ্গে সঙ্গে তাকে ধরে জেলে চালান করে দেয়া হল বাদশার অপমানের কারণে। হাউস অ্যারেস্ট। আওরঙ্গজেব তাকে নিয়ে কী করবেন সেইটা ভাবতে ভাবতে শিবাজি দিলেন কাট্টি, পালিয়ে চলে আসলেন আগ্রা থেকে মারাঠা এলাকায়।

পাঠক খেয়াল করেন চৌথ মনসবের খেলা। শিবাজি চাইলেন চৌথ, পাইলেন কানমলা। আবার কানমলায় সুবিধা করতে না পেরে মোগল চাইল তাকে বশ করতে, কিন্তু শিবাজি মনসব নিলেন না। মোগল তখন তার নাবালক পুলারে দিল ৫০০০ মনসব। আবার ঘরে ডেকে এনে অপমান করল ছেলের মনসবের কাতারে বাপকে বসিয়ে। কতনা গুটি।

পালানোর পর বছর দুয়েক শিবাজির তরফে কোন সাড়াশব্দ নাই, তারপর তিনি এক পত্র লিখে আওরঙ্গজেবরে কইলেন ভুল হইয়ে গেছে কত্তা। ছাড়ি দেন গো। আর কত্তাম না দুষ্টামি। আওরঙ্গজেব মাফি মেনে নিলেন আর শিবাজির ছেলের মনসবদারি পুনঃবহাল করলেন। ৫০০০ জাট ও সওয়ার। বেরারে জায়গির দেয়া হল শম্ভুজিকে। কিন্তু তারপর…

তারপর হঠাৎ একদিন আওরঙ্গজেব শম্ভুজির জায়গির কেড়ে নিলেন আর ডিক্রি ফরমাইলেন যে, “এতদ্বারা জানানো যাইতেছে তুমার পিতা শিবাজিকে যাতায়াতবাবদ প্রদত্ত যে একলাখ রূপী প্রদান করা হইয়াছিল, সেইটাকার ক্ষতিপূরণ বাবদ তুমার জায়গির কাড়িয়া লইলাম। নাথিং পার্সোনাল, ওনলি বিজিনেছ। ভালোবাসা সহ, তোমার আওরঙ্গজেব কাকু।”

এরপর শিবাজি আবার মোগলের সাথে পিটাপিটি আরম্ভ করে দিলেন। আওরঙ্গজেব উত্তরপশ্চিমে আফগানদের সাথে একটু ব্যস্ত হয়ে পড়ায় শিবাজি চামে বিজাপুর গোলকুণ্ডাকে লাইনে এনে ফেললেন আর একের পর এক দূর্গ দখলে নিয়ে এলেন। সে নাতিদীর্ঘ টমেঞ্জেরি যুদ্ধের খবর পুনরাবৃত্তি করে বল কী হবে। জীবন খাতার ছিন্ন পাতা।

১৬৮০ সালে শিবাজি পাইলেন অক্কা। গদিতে বসলেন তার ছেলে শম্ভুজি। বছর নয়েক পরে বুইড়া ধুরন্ধর আওরঙ্গজেব তারে বাগে পাইলেন আর শম্ভুজি হইলেন বন্দী। আস্ত শহর শম্ভুজিরে সং সাজায়ে ঘুরানোর পরে তারে মেরে ফেলার হুকুম দেন আওরঙ্গজেব।

শম্ভুজিকে ধরা হয় পরিবারসহ, তারমধ্যে ছিল শম্ভুজির নাবালক পুত্র শাহুজি। বাপের মত শাহুজিকে মেরে ফেলা হয় নাই। নির্যাতন করা হয় নাই। এমনকি ইসলাম ধর্মে দীক্ষিতও করা হয় নাই। সে বাদশার হুকুমে বহাল তবিয়তে মোগল হেরেমে বড় হতে লাগল হিন্দুধর্ম পালন করে। সে পরে মোগল হেরেমের ভিতরেই দুইটি মারাঠি বউ বিয়ে করে বসে।

সুতরাং শিবাজি মইরা ভূত। তার পুলা শম্ভুজি মইরা ভূত। নাতি শাহু হেরেমে বন্দী। মারাঠা গদির লাইনে পরবর্তী চান্দু শম্ভুজির ছোটভাই রাজারাম। তিনিও আওরঙ্গজেবের সাথে টমেঞ্জেরি খেলায় মাতেন এবং ১৭০০ সালে পটল তুলেন। এইবার গদির দাবী নিয়ে আসেন রাজারামের মেজোবউ তারাবাঈ।

তারাবাঈ ছিলেন একটি ঝুনা নারিকেল। দুর্দান্ত বুদ্ধিমতী এই নারীর জীবনের নানাবিধ টাল্টিবাল্টি স্বতন্ত্র লেখা দাবী রাখে। উপস্থিত আমরা সংক্ষেপে সারব। তারাবাঈয়ের বড় ছেলের নাম ছিল তার ঠাকুদ্দার নামে। শিবাজি। এই ছোটা শিবাজিকে সামনে রেখে তারাবাঈ গদিতে বসলেন এবং মোগল দরবারে শান্তির পায়রা পাঠিয়ে কইলেন হে আওরঙ্গজেব। সুলতানে আজম। বাদশায়ে গাজী। মেরা বেটা শিবাজি নাম্বার টু কে রাজা ঘোষণা করে ফরমান জারি করুন। সাথে দিন মনসব। ৭০০০ জাট ৭০০০ সওয়ার। সাথে সরদেশমুখি পদবী। তাইলে মারাঠা হইবে আপোনারই। বিনীত, তারা।

আওরঙ্গজেব এই দাবী ঠাণ্ডা মাথায় বিবেচনা করে দেখছিলেন। তা তিনি দেখতে থাকুন, ইতোমধ্যে আমরা তারাবাঈয়ের দাবী নেড়েচেড়ে দেখে আসি চলেন। মারাঠা রাজার মোগল বাদশার কাছে দাবী বিরল নয়, শিবাজি থেকে রাজারাম সকলেই মোগল দরবারে দাবী পাঠিয়েছেন। তাতে মনসব জায়গির চৌথ সরদেশমুখি প্রভৃতি সাধারণত ছিল (শিবাজি অবশ্য কখনও মনসব চান নাই)। তারাবাঈয়ের দাবীনামাঃ মনসব, চেক। জায়গির, চেক। সরদেশমুখি, চেক। চৌথ...ফোরোফোর নট ফাউন্ড!

চৌথ গেল কই?

যুদ্ধের পর যুদ্ধে ক্লান্ত টলটলায়মান মারাঠা সাম্রাজ্যের নেত্রী তারাবাঈ খালেদার মত আপসহীন নেত্রী ছিলেন না। দুটি সুন্দর ভবিষ্যতের আশায় চৌথের দাবী হজম করে ফেলেছিলেন তিনি। এ যেন তেন আপস নয়হে পাঠক। চৌথের দাবী সেই শিবাজির আমল থেকে মারাঠাদের জানের দাবী, এই প্রথম এই দাবী ছেড়ে দেয়া হল।

আওরঙ্গজেবের মাথায় কিরকিরা বুদ্ধি। তিনি পয়লা পয়লা এই দাবী মোটামুটি মেনে নিয়েছিলেন, কিন্তু শেষমূহুর্তে তারাবাঈয়ের এই দাবী তিনি নাকচ করে দেন এবং বলেন খাড়াও। ইস্টপ। শিবাজির নাতি শিবাজি রাজা হবে বলতেছ, কিন্তু শিবাজির আরেক নাতি শাহুজি কেন রাজা হইবে না কারণ দর্শাও। বড় নাতি হিসাবে তো গদি তারই হওয়ার কথা।

লাগল দুই নাতির মধ্যে গদি ঘটিত পেজগি। চাচি তারাবাঈ কইলেন ভাতিজা শাহু মোগল হেরেমে বড় হওয়া তাঁবেদার। সে জালি নাতি। গদির দাবী প্রকৃত নাতি শিবাজির। ছোটা নাতি কিন্তু আসলি নাতি। এই ব্যাটল অফ নাতিজ এর মধ্যিখানে ১৭০৭ সালে আওরঙ্গজেব গেলেন মরে।

তারপর যমুনায় বয়ে গেল কতনা কুলুকুলু জল। ১১ বছর পরের কথা, ১৭১৮ সাল। মারাঠা গদিতে তখন শাহুজি। বড় ছেলে বড় নাতি। মোগল গদিতে ফররুখশিয়ার।

ফররুখশিয়ার কিডা? আজিমুশশানের পুলা। আজিমুশশান কিডা? বাহাদুর শার পুলা। বাহাদুর শা কিডা? আওরঙ্গজেবের পুলা। অর্থাৎ ফররুখশিয়ার আওরঙ্গজেবের পুলার নাতি অথবা নাতির পুলা।

আওরঙ্গজেব পরবর্তী মোগল গদির লড়াই ঘনঘন ঘটনার ঘনঘটায় ঘনীভূত। ফররুখশিয়ার কীভাবে গদিতে আসলেন সেই রামায়ন ভিন্ন আরেক দিনের জন্য তোলা থাক। আপাতত কেবল জেনে রাখি তার আগে গদিতে ছিলেন চাচা জাহান্দার শা। চাচারে যুদ্ধে হারিয়ে ফাঁস মেরে গদি হস্তগত করার সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন দুই প্রভাবশালী ভাই। তারা ছিল কাদেরের মত সৈয়দ বংশীয়। সৈয়দ হাসান আলী আর সৈয়দ হুসেন আলী।

তাদের হাত ধরে গদিতে আসলেও এই সৈয়দ ব্রাদার্স ইউনিয়নের সাথে বাদশা ফররুখশিয়ারের বন্ধুত্ব দ্রুতই টুটে যায়। দোস্ত দোস্ত না রাহা পিয়ার পিয়ার ইত্যাদি। সৈয়দ হুসেন আলী তখন দাক্ষিণাত্যে। সেইখানে মারাঠা নেতা বড় নাতি শাহুজি। হুসেন আলী করলেন কি, শাহুজির সাথে চুক্তিতে চলে আসলেন। কী কারণে চুক্তি সে বিস্তর ইতিহাস, তাতে জড়িত আওরঙ্গজেবের বিদ্রোহী এবং ফেরারী ছেলে আকবরের কথিত পুত্র মঈনুদ্দিন। কিন্তু সে অন্য গপ, আপাতত কেবল এ ই জেনে রাখি যে সৈয়দ হুসেন মারাঠা নেতা শাহুকে কথা দেন।

কী কথা তাহার সাথে, তার সাথে?

ধরছেন সঠিক। চৌথের কথা। সরদেশমুখির কথা।

সৈয়দ হুসেন ছিলেন দাক্ষিণাত্যের গভর্নর। প্রাদেশিক শাসক হিসাবে কাউকে চৌথ বা সরদেশমুখি অনুমোদনের অধিকার তার ছিলনা, সেই অধিকার কেবলই বাদশার। কিন্তু সেসব তোয়াক্কা না করে সৈয়দ হুসেন চুক্তি করেটরে ফররুখশিয়ারকে তার পাঠালেন সুখবর! আকবরের ছেলে মঈনুদ্দিনকে ধরা গেছে, তার বদলে আমি বলে দিয়েছি শাহু চৌথ আর সরদেশমুখি পাবে দাক্ষিণাত্যে। ওকে? ওকে। ইতি আপোনার, সৈয়দ হু।

তার পেয়ে ফররুখশিয়ার দশ মিনিট ধরে তেতে থাকা কড়াইয়ের তেলে ছিটিয়ে দেয়া পানির মত সশব্দে জ্বলেপুড়ে উঠলেন। হারামজাদা বলে কি। চৌথ আর সরদেশমুখি পাবে কিরকম? তুই চৌথ সরদেশমুখি দিবার কে?

দরবারে ফররুখশিয়ারের সমর্থক ছিল অল্প, সশস্ত্র সমর্থক আরও অল্প। বাদশা হলেও শেষতক সৈয়দ ভ্রাতৃদ্বয়ের কাছে তার পরাজয় ঘটে এবং তাকে বন্দী করে আঁধি করে দেয়া হয়। গদিতে বসানোর জন্য অন্দর ঘেঁটে টেনে আনা হয় ফররুখশিয়ারের চাচাত ভাই রাফি উদ দরজাত কে।

কইঞ্চাইন দেখি রাফি উদ দরজাত গদিতে বসে পয়লা কী কামটা করেন?

সঠিক। তিনি সৈয়দ ব্রাদার্স ইউনিয়নের আদেশে মারাঠি শাহুর চৌথ আর সরদেশমুখি হালাল করে মোগল ফরমানে ছাপ্পড় মেরে দেন। আপনি বাঁচলে বাপের নাম।

ব্যস চৌথের গপ ফিনিশ। কতনা কাহিনী। পড়ার জন্য ধন্যবাদ। যাবার আগে শুনিয়ে যাই একটি ভাবের কবিতা। সদ্য গদিচ্যুত অন্ধ কারারুদ্ধ সাবেক বাদশা ফররুখশিয়ার রচিত দুইটি ছত্র:

বাগানির ছলনে ভুলিও না হায়, হে পাখি।
জেনে রেখো এই বাগিচায় একদা আমারও ছিল যে বাসা।

(শেষ)


মন্তব্য

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

সমস্ত সম্ভাবনা নিয়ে, এক সময় মুঘলদের চেয়ে বড় জিওগ্রাফিক্যাল এরিয়া কাভার করে, এক সময় দিল্লী দখল করে, মুঘলদের যা ছিল না সেই ব্লু ওয়াটার নেভী নিয়ে মারাঠারা 'মারাঠা ডায়নাস্টি' হতে পারলো না শুধুমাত্র এই লুটেরা মানসিকতা আর জাতিভেদের জন্য। এমনকি ভারতবর্ষে মহাজনপদ কায়েম করার বা ফেডারেল রিপাবলিক বা ইউনাইটেড স্টেটস করার সব সম্ভাবনা নিয়ে এরা আহমদ শাহ্‌ আবদালী দুররাণীর মতো ডাকাত বা স্যার জন ম্যালকমের মতো ধূর্তের কাছে হেরেছে এই নীচ প্রবৃত্তির জন্য। আজকে ভারতের আচ্ছেদিনওয়ালারা আরব সাগরে শিবাজীর ২১০ মিটার উঁচু মূর্তি বসাচ্ছে, মারাঠাদের আমলকে নিজেদের গৌরবময় ইতিহাস বলছে, অথচ এই মারাঠারা ব্রিটিশদের সাথে মিলে একের পর এক ব্রিটিশবিরোধী দেশীয় রাজ্যগুলোকে যুদ্ধে হারিয়ে দেশটাকে তাদের হাতে তুলে দিতে সাহায্য করেছে, বছরের পর বছর হত্যা-লুট-হামলা-অগ্নিসংযোগ-ধর্ষণ চালিয়ে বাংলার পশ্চিমাংশকে শ্মশান বানিয়েছে। সাধারণ মানুষের কাছে চৌথ আর সরদেশমুখী মরার উপর খাঁড়ার ঘা ছাড়া আর কিছু ছিল না। কারণ, স্থানীয় নৃপতি এই ৩৫% মারাঠা ট্যাক্স প্রজাদের কাছ থেকেই আদায় করতো।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মন মাঝি এর ছবি

আজকে ভারতের আচ্ছেদিনওয়ালারা আরব সাগরে শিবাজীর ২১০ মিটার উঁচু মূর্তি বসাচ্ছে, মারাঠাদের আমলকে নিজেদের গৌরবময় ইতিহাস বলছে

"আচ্ছেদিনওয়ালা" কি চীজ জানি না, কিন্তু উপমহাদেশে বহু মানুষের কাছেই (সংখ্যাগরিষ্ঠের কাছেই কি?) মনে হয় সেকালের মারাঠারা সব সত্ত্বেও -- এত এত নিষ্ঠুরতা, নৃশংসতা, বর্বরতা আর দেশীয় স্বার্থের পরিপন্থী কর্মকাণ্ড সত্ত্বেও - জাতীয়তাবাদী হিরো হিসেবে পুজিত! আমজনতা, শিক্ষিত, অশিক্ষিত, ছাত্র, শিক্ষক, রাজনীতিবিদ, শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, মায় ইতিহাসবিদ পর্যন্ত - কোন শ্রেণীই মনে হয় এই মোহের আওতার বাইরে নয়? কেন? এর কারন সম্পর্কে আমার কিছুটা অনুমান আছে, আপনারও মনে হয় আছে। একইভাবে মোগলদের সম্পর্কেও একটা বিশেষ কম্যুনিটির প্রায় একই রকম মনোভাব - ভাতৃপিতৃহন্তারক, খুনি, লোচ্চালম্পটদের বংশ হওয়া সত্ত্বেও (অন্যান্য আরও অনেক খারাপ বিষয়ের পাশাপাশি যেসব এমনকি ঐ কম্যুনিটির ঘোষিত বিশ্বাসের সাথে যায় না বলে অন্যদের ক্ষেত্রে দাবী করতে তাঁরা দেরি করেন না) । কেন? সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, আমি লক্ষ্য করেছি অনেক আপাতত বা বর্তমানের প্রসঙ্গে উদারপন্থী উচ্চশিক্ষিত বা সেকুলার প্রগতিশীল মানবতাবাদী হিসেবে পরিচিত মানুষের মধ্যেও এ প্রসঙ্গে নানারকম প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য বায়াস বা নিদেনপক্ষে মানসিক জটিলতা রয়ে গেছে মনের ভাঁজে ভাঁজে, চেতনে বা অবচেতনে। যারা এসব বুঝি এমনকি তাদেরও, এমনকি হয়তো আমারও! সত্যি বলতে কি, ইতিহাস নিয়ে এই সমস্যাটা বোধহয় শুধু উপমহাদেশীয় ফেনোমেননই নয়, পৃথিবীর অন্যান্য অনেক দেশ বা মহাদেশেই আছে - হয়তো এখানে একটু বেশি-বেশিই আছে, এই যা। কেন? এসবের কারন সম্পর্কে আমার একটা অনুমান আছে, আপনারও মনে হয় আছে। আপনার মন্তব্যে এই ডেলিকেট প্রশ্নটা যেহেতু প্রকারান্তরে উঠেই এসেছে, তাই এনিয়ে খানিকটা গভীরতাপূর্ণ আলোচনা করবেন? একথা বলবেন না প্লিজ, এনিয়ে আপনার কোনো ধারনাই নেই! চোখ টিপি দেঁতো হাসি

****************************************

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আমার কাছে বিষয়টা মনোজাগতিক 'বুত্প‌রস্তি' (পৌত্তলিকতা) বলে মনে হয়। এটা যে কেবল ভারতবর্ষের মানুষের মধ্যে আছে তা নয়, এটা যে কেবল ধর্মীয় দিক দিয়ে মূর্তিপূজকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ তাও নয়। এটা মানুষের মনোজগতে সৃষ্টিশীল মানুষ, রাজনৈতিক বা অন্য কোন প্রকার আন্দোলনের নেতা, উদ্ভাবক, ধর্মগুরু, সন্ত ইত্যাদি সাধারণ পংক্তির বাইরের মানুষদেরকে মহামানব/অতিমানব/অবতার বানানোর প্রবণতা তৈরী করে। ফলে যে ধর্ম সকল প্রকার অবতার বা মূর্তরূপকে নাকচ করে (বুত্‌শিকন্‌) সে ধর্মের অনুসারীও তার প্রচারককে সকল সীমাবদ্ধতার, সকল সমালোচনার ঊর্ধ্বে ভাবে; এমনকি এটা তার ধর্মীয় বিধির পরিপন্থী হলেও। তাই এমন পূজনীয় ব্যক্তি পঞ্চরিপুর এক বা একাধিকের দোষে দোষী হলেও, অনৈতিক হলেও, নিষ্ঠুর হলেও, অবিবেচক হলেও তার পূজারীর কাছে এগুলোর সবই ঠিক আছে।

আরেকটি বিষয় হচ্ছে মনোজগতে ঔপনিবেশিকতা। যাদের মনোজগতে ঔপনিবেশিকতা থাকে তারা ঔপনিবেশিক প্রভু ছাড়া স্বচ্ছন্দ্যবোধ করে না। এই মানুষগুলোর কাছে তাই যুক্তি প্রমাণ ছাড়া 'পাকিস্তান আমল ভালা আছিল' < 'ব্রিটিশ আমল ভালা আছিল' অথবা 'আয়ুব খানের আমল ভালা আছিল' < 'সায়েবগো আমল ভালা আছিল' অথবা নিদেনপক্ষে 'এরশাদের আমল ভালা আছিল'। নিয়মিতভাবে কোমরে কারো লাথি না খেলে এইসব মানুষের পেটের ভাত হজম হয় না। মাথার উপরে মুঘল নাগড়া/ব্রিটিশ বুট/মাড়োয়ারী-গুজরাতী চটি না থাকলে এরা নিজেদের নিরাশ্রয় ভাবে।

এই দুটি কারণের একটিও সত্যি হলে মানুষটি উদারপন্থী/উচ্চশিক্ষিত/সেকুলার/প্রগতিশীল/মানবতাবাদী যাই হোক না কেন তার কাছে এমন বায়াসনেস পাওয়া যাবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সত্যপীর এর ছবি

স্থানীয় নৃপতি এই ৩৫% মারাঠা ট্যাক্স প্রজাদের কাছ থেকেই আদায় করতো।

কথা সত্য। মাঝখান দিয়া মাঠের চাষা খাইল মারা। মোগল ফসলের কর ৩০/৩৩ শতাংশ, চৌথ ৩৫ শতাংশ। নিজেরা খাইব কী আর পরব কী।

চৌথ টু পয়েন্ট ও বুঝার চেষ্টা করতেছি। চৌথের আওতাভুক্ত এলাকা শেষমেশ মারাঠি দখলে নিয়া আসলে চৌথ্ সরদেশমুখির ৩৫ শতাংশ পরিবুর্তন হয়ে রাজস্ব হার ৪০ শতাংশের এলাকায় রূপান্তরিত হয়। কিন্তু এই ব্যবস্থা নানাবিধ গিয়াঞ্জামে পরিপূর্ণ, কেননা চৌথের দাবীদার মারাঠা সর্দারের কিছু ভাগ রয়ে যায় আর কিছু মারাঠা সরকারী ভাগে পড়ে। সরদেশমুখির ১০ শতাংশের বদলে বারো না চৌদ্দ শতাংশ কি যেন একটা গিয়ে সুপ্রীম লিডারের কোষাগারে যায়। সবমিলায় এর ওর তার দাবী মানতে গিয়া চাষার আগের মতই দফারফা মন খারাপ

শান্তি নাই।

..................................................................
#Banshibir.

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

সরদেশমুখির ১০ শতাংশের বদলে বারো না চৌদ্দ শতাংশ কি যেন একটা গিয়ে সুপ্রীম লিডারের কোষাগারে যায়

। - ওটা দু'আনা, মানে সাড়ে বারো পারসেন্ট।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সোহেল ইমাম এর ছবি

আপনার এর আগের লেখাটা কপি করে রেখে দিয়েছি। এবারেরটাই ইতিহাসের গল্প পেয়ে ভালো লাগলো। মালিক অম্বরকে নিয়ে একটা লেখা আসলে ভালো হয়। আপনার অনেক লেখাতেই মালিক অম্বরের প্রসঙ্গ উঠলেই বলেন এই গল্পটা একটু রসিয়ে করতে চান। আসুকনা মালিক অম্বর এবার।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

সত্যপীর এর ছবি

মালিক অম্বর একটি বিস্ময়।

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

মালিক অম্বরের জন্য অপেক্ষায় রইলাম। দুর্দান্ত হচ্ছে এই সিরিজ টি।

--মোখলেস হোসেন

সত্যপীর এর ছবি

এইটে ঠিক সিরিজ না। পরের লেখা মোগল মারাঠা ইত্যাদি রাজস্ব নিয়ে নয়, যদিও চমৎকার একটা বই পড়ে উঠলাম ভারতের বিবিধ টাকশালের উপরে। শিবাজির কয়েন একেবারে তৃতীয় শ্রেণীর... মন খারাপ

মালিক অম্বর নিয়েও নিকট ভবিষ্যতে লেখা আসবে না। তবে এক সময় অবশ্যই লিখতে চেষ্টা করব।

ভালো থাকুন।

..................................................................
#Banshibir.

মেঘলা মানুষ এর ছবি

বাপ্রে! কঠিন সব প্যাঁচ, আর কাউন্টার প্যাঁচ। মাঝখানে গানের লাইন‌গুলা সেরকম 'রিমিক্স' খাইছে! মাঝে মধ্যে মনে হয় ভাগ্যিস ঐ আমলে জন্মাই নাই।

শুভেচ্ছা হাসি

সত্যপীর এর ছবি

প্যাঁচানো জিনিস সহজ করে তুলে ধরলে পাঠকের কাছে প্যাঁচালো লাগার কথা না। এই লেখাটার ফোকাস আরেকটু ঠাণ্ডা মাথায় করলে হত। সবচাইতে ভালো হত শিবাজির পটল তোলা পরবর্তী ঘটনা যদি দ্বিতীয় পর্ব হিসেবে দিতে পারতাম, তাহলে এত তাড়াহুড়া প্যাঁচ ভাবটা থাকত না। কিন্তু এত লেখা কিস্তি খেলাপ করেছি যে এই লেখাটায় আর দ্বিতীয় পর্ব দিতে ইচ্ছে করল না।

ঐ আমলে জন্মাইলে ভালই তো হইত। ঘনঘন ঘটনার ঘনঘটায় ঘনীভূত।

..................................................................
#Banshibir.

মন মাঝি এর ছবি

ঐ আমলে জন্মাইলে ভালই তো হইত। ঘনঘন ঘটনার ঘনঘটায় ঘনীভূত।

না জনাব, মোটেই ভাল হইতো না। হয় শিবাজী-মারাঠা-বর্গীদের তরোয়ালের কোপে কল্লা হারাইতেন, নয়তো মোগলরা দিতো দৌড়ানি - তারপর দিত ঝুলাইয়া, আর নয়তো মগরা ফাসাইতো ভুড়ি! আর পথেঘাটে ফাঁসুড়ে "ঠগী " থেকে শুরু করে কতরকম আততায়ী-খুনি-ডাকাত-ডাইনি-পিশাচ-নরখাদক-নরবলিসাধক কত কিছুই না ছিল। পর্তুগীজ-ফিরিঙ্গি-দিনেমার স্লেভ-ট্রেডার এদের কথা বাদই দিলাম!

তাছাড়া ঐ আমলে জন্মাইলে, এই আমলে আমাদের জন্য ঐ আমলের কাহিনিগুলা লিখত কে?? তারচেয়ে এই ভাল - এই আমলের আপনি ঐ আমলের ঘনঘন ঘটনার ঘনঘটায় ঘনীভূত ঘোর জমজমাট কাহিনিগুলা ধুমায়া লিখতে থাকেন আর এই আমলের আমাদের ঘটনাহীণ অঘটনে ধূম্রভূত জীবনকে জমিয়ে একটু তুলুন! হাসি

****************************************

সত্যপীর এর ছবি

আমার আব্বা কুলাউড়ার একটা গ্রামের মানুষ। আমার দাদাও সেই গ্রামেরই, তারে আমি দেখিনাই। দাদার আগের পূর্বপুরুষ কারো কথাও আমার জানা নাই, কিন্তু আমি মোটামুটি নিশ্চিত তিন চারশ বছর আগে তারা দুনিয়ার ঐপ্রান্তেই চাষবাস করে থেকেছেন। মোগল-বর্গী-ঠগী-আততায়ী-পর্তুগীজ-দিনেমার-স্লেভ ট্রেডার-ফিরিঙ্গি আমলে তারা আরামেই জিন্দেগী-বন্দেগি পার করে গেছেন যখন, আমিও বহাল তবিয়তেই থাকতাম। খবরের কাগজ/ইন্টার্নেটের অভাবে ঘনঘন ঘটনার ঘনঘটার কথা সম্ভবত তেমন টের পাইতাম না, কিন্তু জোর দিয়ে কিছু বলা যায়না। জীবন জটিল।

এই আমলে বইসা ঐ আমলের কথা লেখার কথায় ঘনঘন মাথা দুলানি সহযোগে একমত। ভাবতেছি আফিম ব্যবসায় আবার মন্দিব।

..................................................................
#Banshibir.

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

ভাবতেছি আফিম ব্যবসায় আবার মন্দিব

গল্পে, নাকি বাস্তবে? চিন্তিত

সত্যপীর এর ছবি

বাস্তবেই মন্দিব। হর্নক্লিফের বাটাভিয়া কানেকশন দেখা জরুরী।

..................................................................
#Banshibir.

মেঘলা মানুষ এর ছবি

আবার এমনও হতে পারতো যে, সামান্য রোগের চিকিৎসা না পেয়ে অকালে পরলোকগমন।

সত্যপীর এর ছবি

..................................................................
#Banshibir.

মন মাঝি এর ছবি

দেন। আমারেও কিছু সাপ্লাই দিয়েন। চীনা আপিম অনেক কাল পাই না।

****************************************

সত্যপীর এর ছবি

২০১৭ তে শুভমুক্তি।

..................................................................
#Banshibir.

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

মোগল-বর্গী-ঠগী-আততায়ী-পর্তুগীজ-দিনেমার-স্লেভ ট্রেডার-ফিরিঙ্গি আমলে তারা আরামেই জিন্দেগী-বন্দেগি পার করে গেছেন

- কথাটা ঠিক না। ষোড়শ-সপ্তদশ শতকে হাওড় এলাকা তো বটেই তার কাছাকাছি বৃহত্তর সিলেটের দক্ষিণাঞ্চল থেকেও রেগুলার ধরে নিয়ে গিয়ে দাস বাজারে ডাইরেক্ট বিক্রি করা হতো বা খোজা বানিয়ে বিক্রি করা হতো। সুতরাং 'লাইপ ওয়াজন্ট দেট মাচ সিম্পিল'! দেঁতো হাসি


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সত্যপীর এর ছবি

কথা সত্য। জীবন কঠিন।

দাস বাজারে ডাইরেক্ট বিক্রি করা হতো বা খোজা বানিয়ে বিক্রি করা হতো।

খোজা বানায়া শিপ করার দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা হইল, বংশধর থাকেনা। তারা যে হিল্লি-দিল্লি গিয়া থাছে কাজ করছে মইরা গেছে আজকে চারশত বচ্ছর পরে তার কোন চিহ্ন নাই। বড় দুঃখের কথা এইটা। অখোজা অবস্থায় উপমহাদেশের যারা সাউথ আফ্রিকা ব্রাজিল গায়ানা ক্যারিবিয়ানে গেছিল জাহাজের খোলের ভিতরে, তাদের বংশধরদের সাথে আমার দেখা হয় নিয়মিত। আমি খিচুড়ি খাই তারা চানা-ভাত খায়। আমি রুটি খাই তারা রোটি খায়। আমি মাছের কোপ্তা ভাইজা খাই তারা কঙ্ক ভাইজা খায়। আমি আনারস কই তারা আনানাস কয়। এ ই হইল কথা। হাওড় অঞ্চলের খোজা করে দেওয়া বালকের বংশধরের সাথে দেখা হইলে এরকমই আনন্দ হইত ধারণা করি।

..................................................................
#Banshibir.

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

অখোজা অবস্থায় উপমহাদেশের যারা সাউথ আফ্রিকা ব্রাজিল গায়ানা ক্যারিবিয়ানে গেছিল জাহাজের খোলের ভিতরে, তাদের বংশধরদের সাথে আমার দেখা হয় নিয়মিত।

- আখ, রাবার, আনারস ইত্যাদি ক্ষেতে কাজ করতে নেয়া ভারতীয় দাসদের কথা ভাবলে আমার খুব কষ্ট হয়। কোথায় না নিয়ে গেছে তাদের! বাড়ীর কাছের মরিশাস থেকে শুরু করে ক্যারিবিয়ান, দুই আমেরিকা, ওসেনিয়া, আফ্রিকা। ইউরোপীয় ডাকাতদের হাত থেকে অন্য ডাকাতদের হাতে। সেখানে সব ভারতীয়কে একই ভাবে ট্রিট করা হতো। তাদেরকে একই ভাবা হতো। অথচ ভারত মোটেই একটা দেশ না। নিজেদের ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি-ধর্ম-ভাষা হারানো এই মানুষগুলোকে এত প্রজন্ম পরে মূলধারা কি আজও গ্রহন করতে পারলো? নয়তো বাভাদ্রা বা মহেন্দ্র চৌধুরীরা ভোটে জিতে সরকার গঠন করতে গেলে সিতিভেনী রাবুকা বা জর্জ স্পেইতরা কেন সেটা সহ্য করতে পারে না!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মন মাঝি এর ছবি

মরিশাস খারাপ জায়গা না। ওরা আখ থেকে দারুন একটা খাবার বানায়! হাসি ♪♫♪

****************************************

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

কোনটার কথা বলেন, আলুদা নাকি Rhumerie de Chamarel-এর অমৃত?


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মন মাঝি এর ছবি

ইয়ো-হো-হো, আপনি কিসের থেকে কি বুঝেন! আমি মোরগার ল্যাঞ্জার সূপের কথা বলছি। মোরগার ল্যাঞ্জা থেকে দারুন সব স্যুপ বানায় কিন্তু বিভিন্ন দেশে, জানেন না আপনি?!! হাসি মরিশানরা হরেক পদের দারুন সব মোরগার ল্যাঞ্জার সূপ বানায়, তার মধ্যে ইয়ো-হো-হো করতে করতে মরা মানুষের সিন্দুক থেকে বার করা লং জন সিলভারের প্রিয় সেই আখের সসটাও দিয়ে দেয়। আমি এদের স্যূপটা খেয়েছি, আলাদাভাবে শুধু সসটা না। একবারই, তাও দাওয়াতে। অনেক আগে মরিশানদের কোন একটা জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথির সাথে আমিও ল্যাংবোটের মতো নিমন্ত্রিত ছিলাম। বিশিষ্টজনদের উপস্থিতিতে এমনিতেই স্বচ্ছন্দ ছিলাম না, তারপর আরও যাতে ছন্দহীণ না হয়ে যাই বা মাইনষে ছোচা মনে না করে তাই 'মরিশান' স্যূপ বেশি চাখতে পারিনি। যদিও ফাটাফাটি ছিল এটা মনে আছে। তবে আমি লং জন সিলভারের বন্ধুমানুষ ছিলাম, একসাথে বসে অন্য দেশের অনেক সস চেখেছি। লুই স্টিভেনসন কেন যে আমার কথা লিখে যাননি বুঝলাম না! দেঁতো হাসি

****************************************

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আমি ধরেন ছোটবেলা থেকে আখ/গেন্ডারি চিবিয়ে খাওয়া মানুষ। একটু বড় হবার পর জানলাম আখ মাড়াই করে, রস বের করে, সেই রস থেকে চিনি গুড় বানানো হয়। আরও একটু বড় হবার পর জানলাম দর্শনাতে আখের ওপর ভিত্তি করে শুধু যে সুগার মিল আছে তা নয়, আখ দিয়ে সেখানে 'কেরু এন্ড কোম্পানী'ও চলে। তারপর যথা নিয়মে একদিন শ্রী 'রাম' দর্শন! অবশ্য কখনো আমি 'রাম'ভক্ত হতে পারিনি।

সামুদ্রিক উদ্ভিদ-প্রাণী ইত্যাদি সহযোগে বানানো স্যুপ ছাড়া অন্য কোন স্যুপ আমার বিশেষ পছন্দ না। আর রামপাখীর স্যুপ লোকে যতই উপাদেয় বলুন, আমার ভালো লাগে না।

আমার খুব বেশি প্রকারের সস্‌ চাখার সুযোগ হয়নি। অবশ্য বিভিন্ন প্রকার সস্‌ বা ভিনেগারের মধ্যে রঙ-স্বাদ-গন্ধে যে সূক্ষ্ম পার্থক্যগুলো থাকে সেগুলো নির্ণয় করতে আমি অক্ষম। তাই হাতে গোনা কয়েকটা সস্‌ আর ভিনেগারের মধ্যে ঘুরপাক খায়। (ইয়ে, টাবাস্কো সসের ব্যাপারটা কিন্তু অনেক দিন হয় পেন্ডিং আছে। এর ফয়সালা হওয়া দরকার।)

আপনি লং জন সিলভারের বন্ধু হলে কী হবে আপনার তো কাঠের পা নেই, চোখে পট্টি নেই বা আপনি তো "Fifteen men on a dead man's chest, yo-ho-ho and a bottle of rum" গাইতে গাইতে এক চুমুকে রামের বোতলে আদ্ধেক সাবাড় করে দিতে পারবেন না। তাহলে বব্‌ আপনার কথা আখ্যানে লিখবেন কেন?


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সত্যপীর এর ছবি

নয়তো বাভাদ্রা বা মহেন্দ্র চৌধুরীরা ভোটে জিতে সরকার গঠন করতে গেলে সিতিভেনী রাবুকা বা জর্জ স্পেইতরা কেন সেটা সহ্য করতে পারে না!

প্রসঙ্গতঃ, নানকের অনুসারী জনৈক জগমিত সিং দুই দিন আগে ক্যানাডার তৃতীয় বৃহৎ রাজনৈতিক দল এন্ডিপির গদিতে বসছেন। পরবর্তী নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীর পদে খাড়াবেন ধরে নেওয়া যায়। পচুর কীবুড সিপাই টাওয়েলহেডের সম্ভাব্য গদি দখল বিষয়ে চিন্তিত, চমকিত ও রাগাণ্বিত। জগমিত পা'জির ফিদেল কাস্ত্রো বিষয়ে দুর্বলতা আছে সেই ব্যাপারেও তাহাদের চিন্তার অবধি নাই।

..................................................................
#Banshibir.

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

জগমিতের কথা জানতাম না। ধন্যবাদ। সাইটটা দেখলাম। তার এই কথাগুলো গুরুত্বপূর্ণ -

I saw kids around me—kids no less capable, no less worthy of respect and dignity—who were not in a position to follow their dreams, simply because their families couldn’t afford it. That struck me as incredibly unfair.

My friends had a lot of potential, but they were not given the tools or the opportunities to reach their potential. Their hopes were dashed and their self-esteem diminished. I’ve felt this too. It's something that eats away at you. Nobody should be made to feel like they don’t matter.

Often, self-esteem is anchored in our collective identity. It was during my childhood in Windsor that I began to understand the importance of language to culture. My parents told me that in their childhood their language was not respected, which caused them a sense of shame.


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

আকারে প্রকারে আচার আচরণে শিবাজি বাবাজির দলকে ডাকাত দল ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না, অনেক গুণীজনের এই মতের সাথে আমিও একমত। কিন্তু অনেক সময় ডাকাইতরাও কোন কোন সেগমেন্টে খুব পপুলার হইয়া যাইতে পারে। কেতাবের দস্যু মোহন, দস্যু বনহুর কিংবা ফিলিমের ডাকু সুলতানদের মানবদরদী চরিত্র বোধ হয় বাস্তবের কোন ডাকাত জীবনের মিথ থেকে উৎসারিত। যদিও এক অর্থে দেখলে রাজা-বাদশারাই বা ডাকাত ছাড়া আর কী? কিন্তু মগের মুল্লুক কিংবা বর্গির হাঙ্গামার চেয়ে বাদশাহি ডাকাতি বোধ হয় অনেকটাই সহনীয় ছিল।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

এই প্রকার ডাকাতি রাষ্ট্র/সাম্রাজ্য এখনকার দুনিয়াতেও আছে। কিমের ব্যাটা কিম বা কিমের নাতি কিমের দেশের খোঁজ নিলে কাছাকাছি ধরনের গল্প দেখতে পারবেন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

অনিয়মিত হয়ে গেছি সচলায়তনে।
আজকে এই লেখাটা পড়তে গিয়ে আগেরটাও পড়ে আসলাম।
ভাল্লাগছে।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

সত্যপীর এর ছবি

তার আগেরটা পড়ছেন? জায়ফল? চৌদ্দ হাজার মানুষ এক বিকালে জায়ফল বেচাকিনা নিয়া কাইজ্যায় মইরা নাশ মন খারাপ

..................................................................
#Banshibir.

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

পড়লাম। পড়তে পড়তে ফুরায় গেলো।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

সত্যপীর এর ছবি

কী হবে আর কান্দিয়া। টানা লিখলে ঘুম আসে তাই পিস পিস কইরা দেই।

..................................................................
#Banshibir.

সত্যপীর এর ছবি

কাইট্যালা।

..................................................................
#Banshibir.

আলতাইর  এর ছবি

১. তার মানে পলিটিকাল চান্দাবাজি ওই আমলের কিচ্ছা? আর মুরুব্বিরা হুদাই আমগো জেনারেশনরে গাইলায়? ধুর্বাল!!

২. সৈয়দ এন্ড ব্রাদার্স কি তাহলে এখনকার আলুপেপার কোম্পানির সফল ভার্শন? কিংডমের কিংমেকার্স? আরেক সৈয়দ এর ল্যাখ্যায় পড়ছিলাম মনে হয়।

৩. মালিক আম্বর নিয়া তিনমাসের মইদ্দে ল্যাখা দিলে আপ্নেরে খাওয়ামু! পমিজ!!

৪. শিবাজি ভার্সাস মুঘল টমেঞ্জেরি খেলার বিস্তারিত কই পাওয়া যাবে? জানার আগ্রহ আছে একটু।

৫. পাঁচতারা

সত্যপীর এর ছবি

৪। যদুনাথ সরকারের বই আছে পড়তারেন। কেম্ব্রিজ হিস্ট্রি অফ ইন্ডিয়ার মারাঠা বই আছে পড়তারেন। গুগল বুক্সে হানা দিলে আরও পাইবেন। (ইন্টার্নেটে আর্টিকেল পড়ার বদলে বই পড়েন শিবাজির পিটাপিটি বুঝার জন্য। শিবসেনার বান্দরেরা শিবাজিরে পটায়া লাল বানায়ালাইছে বিবিধ অনলাইন আর্টিকেলে, সত্যিমিথ্যা সেইখানে বুঝা বড় দায় মন খারাপ )

৫। সাব্বাস।

৩। কী খাওয়াইবেন বিস্তারিত কন। ভাইবা দেখি।

২। তারা বাদশামেকার এবং বাদশা ওয়ানাবি। তিমুরিদ রক্ত না থাকায় সরাসরি বাদশার গদিতে চইড়া বসার সাহস তাদের হয়নাই। জাহান্দার শা'রে সরায়া তারা ফররুখশিয়াররে আনছে। তাপ্পর সে বেগড়বাঁই করায় তারে সরায়া রাফি উদ দরজাত রে আনছে। তাপ্পর আনছে তার ভাই রাফি উদ দৌলারে। তারপর আনছে মুহম্মদ শা'রে। কিন্তু মুহম্মদ শা উল্টা খেইপা শেষমেশ সৈয়দ ব্রাদার্স ইউনিয়নরে ২-০ গোলে হারায় মাইরালাইলেন। ব্যাপক গিয়াঞ্জাম।

..................................................................
#Banshibir.

তাহসিন রেজা এর ছবি

ইতিহাস জানা হল। কিছুদিন আগে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর বই "অন্ধকারের বন্ধু" পড়েছিলাম। সেখানে ভাস্কর রাম কোলহাটকর পণ্ডিত, রঘুজী ভোঁসলে এদের উল্লেখ্ ছিল। এদের নিয়ে কিছু লিখবেন কি? দেঁতো হাসি পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম দেঁতো হাসি

------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”

অলীক জানালা _________

সত্যপীর এর ছবি

সেসব পরের গপ, তার আগে তারাবাঈ ইত্যাদি আসা জরুরী। উপরে মাসয়াফ দূর্গের আলতাইর কইছেন ব্যাপক খাওয়াইবেন মালিক অম্বর আসলে, মেন্যু দেইখা সিদ্ধান্ত নিতেছি কি করি না করি।

..................................................................
#Banshibir.

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আমিন

নীড় সন্ধানী এর ছবি

অনেক বিলম্বে পড়া হলেও আনন্দপাঠ হলো এই পর্বটা। আপনি লেখনীর মিষ্টির ভেতর দিয়ে ইতিহাসের তেতোগুলো এত চমৎকার করে গেলাতে পারেন, ভাবতে অবাক লাগে। ভারতবর্ষের ইতিহাসের মতো কুৎসিত ইতিহাস কমই আছে। পরতে পরতে এত বেশী কুৎসিত ইতরতার নজির যে শখের ইতিহাস পাঠক হিসেবে ক্লান্তি এসে যায় মূল বইগুলো পড়তে। কিন্তু আপনার এই সুস্বাদু পরিবেশন দেখে পড়তে খুব লোভ লাগে। আমজনতার জন্য এই তালের গল্পই ভালো ।

এক্ষণে একটা আবদার রেখে যাই। শিবাজী মোগলের টম এণ্ড জেরী অংশের একটা গল্প আপনার ভাষায় পড়তে ইচ্ছে করছে। যে গল্পে আওরঙ্গজেবের বন্দীখানা থেকে শিবাজীর পলায়নের বিস্তারিত বিবরণটা থাকবে। ঘটনাটা আওরঙ্গজেবের জন্য দুঃসংবাদ হলেও ইতিহাস পাঠকের জন্য রসালো খোরাক।

আপনি এখানে অতি সংক্ষেপে পার করে দিয়েছেন মজার গল্পটা।

তিনি দরবার থেকে বেরিয়ে গেলেন আর সঙ্গে সঙ্গে তাকে ধরে জেলে চালান করে দেয়া হল বাদশার অপমানের কারণে। হাউস অ্যারেস্ট। আওরঙ্গজেব তাকে নিয়ে কী করবেন সেইটা ভাবতে ভাবতে শিবাজি দিলেন কাট্টি, পালিয়ে চলে আসলেন আগ্রা থেকে মারাঠা এলাকায়।

সময় করে এটা নিয়ে একটা পর্ব নামান। হাসি

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

সত্যপীর এর ছবি

আপনি এখানে অতি সংক্ষেপে পার করে দিয়েছেন মজার গল্পটা।

এই লেখার ফোকাস ছিল চৌথ, সরদেশমুখি, মনসব ইত্যাদির প্র্যাক্টিকাল ব্যবহার। শিবাজির পলায়নগল্প বা দূর্গ দখলের টমেঞ্জেরি কাহিনী নিয়ে কথা বললে লেখা বেলাইনে চলে যেত। ইচ্ছে ছিল মনসবের রাজনৈতিক দিক নিয়ে আরেকটু লিখব, কিন্তু লেখা বেশি লম্বা হয়ে গেল বিধায় দিলাম না। এই লেখার বাইরে যেসব প্রশ্ন রয়ে গেল তার মধ্যে উল্লেখযোগ্যঃ আকবর দুই হাতে মনসবদারি বিলাইছেন রাজপুত আর ইরান তুরানের লুগজনের হাতে। হোয়াই রাজপুত। হোয়াই ইরান তুরান। আওরঙ্গজেবের আমলে আকবরের আমল থিকাও বেশি হিন্দু মনসবদার, এদিকে তাদের মন্দির ভাইঙ্গা নাশ কিম্বা জিজিয়া কর পুনরাগমন। হোয়াই। আওরঙ্গজেবের মারাঠি মনসবের ছড়াছড়ি (আর রাজপুত মনসব অল্প), এদিকে মারাঠা মোগল টমেঞ্জেরি। হোয়াই। শিখ মনসবদার কারা কারা। মহিলা মনসবদার কারা কারা (এবং তাদের হারেম থেকে দুনিয়া চালানোর তরিকা কী)। ইত্যাদি ইত্যাদি।

শিবাজির পলায়নের গপ তো খিয়াল করলেই পাওয়া যায়। আমি একটু চেষ্টা করে দেখলাম মোগল গদির লড়াই বুঝতে পারি কিনা।

ভারতবর্ষের ইতিহাসের মতো কুৎসিত ইতিহাস কমই আছে।

হ। নাইট ইজ ডার্ক অ্যান্ড ফুল অফ টেরর্স। কুৎসিত মানুষে ইতিহাস ভরা। কিন্তু পড়তে চমৎকার।

..................................................................
#Banshibir.

তুলিরেখা এর ছবি

বহুদ্দিন পর সচলে এসে আপনার লেখাটা পড়ে বড়ই ভালো লাগল । আগের লেখাগুলিও পড়লাম । হাসি

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

সত্যপীর এর ছবি

দেরি করে পড়ার জন্য দশ টাকা জরিমানা করা হৈল।

..................................................................
#Banshibir.

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।