২০১৩ তে সেনা অভ্যুত্থান বা তৃতীয় শক্তি ক্ষমতায় এলে

মূর্তালা রামাত এর ছবি
লিখেছেন মূর্তালা রামাত (তারিখ: শুক্র, ০১/০২/২০১৩ - ৮:১২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

জে আলফেলডারের হিসাবমতে ২০১৩ তে সেনা অভ্যূত্থানের ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। জে আলফেলডার আমাদের অনেকের কাছে অচেনা নাম হলেও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ হিসেবে তার সুনাম রয়েছে। ২০১২ সালে বাঘা বাঘা রাজনৈতিক বিশ্লেষককে অবাক করে দিয়ে মালি এবং গিনি বিসাউ এ সেনা অভ্যুত্থানের ব্যাপারে তার ভবিষ্যতবানী বাস্তবে রূপ নেয়।সেবার বাংলাদেশও তার তালিকায় ছিল। এবং ২০১২ সালেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একটি ক্যু এর প্রচেষ্টা নস্যাৎ করে দেয় বলে খবরে প্রকাশ পায়। ২০১৩ এর তালিকায় আলফেলডার ৩০ টি দেশকে ঝুঁকির তালিকায় রেখেছেন। এই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৭ তম।

বাংলাদেশে সামরিক অভ্যুত্থান নতুন কিছু নয়।১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট সেনা অভ্যূত্থানের পর বাংলাদেশ টানা ১৫ বছর কোন না কোনভাবে সামরিক ব্যক্তিদের দ্বারাই শাসিত হয়েছে। ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী গণআন্দোলনের জেরে হোসাইন মুহম্মদ এরশাদের পতন হলে সামরিক শাসনের বলয় থেকে বেরিয়ে আসে বাংলাদেশ। ৯০ থেকে ২০০৬ অবধি নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার দেশ শাসন করলেও পর্দার অন্তরালে বেশ কয়েকবার সামরিক ক্যু এর গুজব শোনা যায়; কোন ক্যু ই সফলতার মুখ দেখেনি। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারী বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ও স্বঘোষিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ইয়াজউদ্দীন আহমেদকে সরিয়ে যে অন্তবর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয় তা আদতে সামরিক সরকারই ছিল।

কথিত আছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফখরুদ্দীন আহমেদকে সামনে রেখে তৎকালীন সেনাপ্রধান মাইন ইউ আহমেদ এর নেতৃত্বে সামরিক অফিসারেরা সেসময় দেশের যাবতীয় সিদ্ধান্ত নিতেন।পরবর্তীকালের বিভিন্ন প্রকাশিত নথিপত্র এর সত্যতা মেলে।উইকিলিকসে প্রকাশিত গোপন মার্কিন নথি থেকে জানা যায় যে সেসমেয়ের সামরিক শাসকেরা গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়ার বদলে বরঞ্চ আরো কিছুকাল ধরে সমরিক শাসন জারি রাখতে সচেষ্ট ছিলেন।মূলত পাকিস্তানের জেনারেল পারভেজ মোশাররফ এর শাসন ব্যবস্থার আদলে একটি শাসনব্যবস্থা বাংলাদেশে পরীক্ষামূলক ভাবে চালু করার অভিপ্রায় তাদের ছিল। বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারকারী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে এতে সায় দিলেও পরে জেনারেল মোশাররফের বিরুদ্ধে পাকিস্তানে ক্রমবর্ধমান জনবিক্ষোভ দেখে তারা বাংলাদেশে অনুরূপ মডেল প্রয়োগে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।ফলে ফখরুদ্দীন-মাইনউদ্দীনে কে বিদায় নিতে হয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এই ঘটনা ১/১১ নামে খ্যাত। ১/১১ থেকে জন্ম নেয়া সরকার প্রথম দিকে দুর্নীতির দায়ে বড় বড় রাজনৈতিককে জেলে পুরে, বড় দুই দলের নেত্রীকে অন্তরীন রেখে বাহবা কুড়ালেও ক্রমশ তাদের প্রতি মানুষের সন্দেহ বাড়তে থাকে। বিশেষ করে এসময়ে জামায়াত ইসলামীর নেতাকর্মীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় কানাঘুষা ওঠে যে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করে মৌলবাদীরাই দেশের ক্ষমতা হাতিয়ে নিয়েছে।

সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করে মৌলবাদীদের ক্ষমতা হাতানোর পরিকল্পনা নতুন নয়। জামায়াত ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ছাত্রশিবিরের বহু নথিপত্রে তাদের কর্মীদের ছাত্রাবস্থায় বিএনসিসিতে(বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর) এবং পরবর্তীতে সেনাবাহিনীসহ দেশের অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে যোগ দিতে উৎসাহ যোগানোর তথ্য পাওয়া যায়। এছাড়াও বিভিন্ন্ ইসলামী দাওয়াতী কর্মকাণ্ডের সাথে সেনাবাহিনীর নানা পর্যায়ের সদস্যদের সম্পৃক্ত করে তাদেরকে ধর্মী্য় চেতনায় উদ্বুদ্ধ করার মাধ্যমে দেশে ইসলামী শাসন কায়েমের সংযুক্ত করার জামায়াতী প্রয়াসের কথাও এখন ওপেন সিক্রেট।বিশেষ করে গত জোট সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে সেনাবাহিনীকে ইসলামীকরণে জামায়াত নানাভাবে সক্রিয় ছিল বলে ধারণা করা হয়। ফলশ্রুতিতে তাদের পক্ষে সেনাবাহিনীর ভেতরে একটি ইসলামী নেটওয়ার্ক তৈরি করতে পারাটা অসম্ভব কিছু নয়।এ কারণেই দেখা যায় যে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় যেযসব সেনা কর্মকর্তা জড়িত তাদের সবার সাথেই পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার যোগসাশজ রয়েছে বলে পত্রপত্রিকায় খবর বেরিয়েছে। আর তালেবানের সৃষ্টিকর্তা আইএসআই যে জামায়াতের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক তা কারো অজনা নয়।

মাদ্রাসার ছাত্রদের ট্রেনিং দিয়ে তালেবান বানিয়ে যেভাবে আফগানস্থান দখল করা হয়েছিল সেভাবেই বাংলাদেশেও একটি ইসলামী ক্যু ঘটানোর স্বপ্ন পাকিস্তানের অনেকদিনের। বিশেষ করে আল কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেনকে পেলে পুষে রাখা পাকিস্তানের ইসলামপন্থী সেনা কর্মকর্তরা মনে করেন যে বাংলাদেশে তালেবান টাইপের সরকার প্রতিষ্ঠা করা গেলে তা হবে এক ঢিলে দুই পাখি মারার মতো।“আমরা সবাই তালেবান, বাংলা হবে আফগান”- এই শ্লোগান দেয়া লোকজন ক্ষমতায় এলে তা পাকিস্তানের চিরশত্রু ভারতের জন্য অন্যতম মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠতে বাধ্য সেইসাথে পাকিস্তানের প্রতি সহানুভূতিশীল ঐ সরকার মূলত ১৯৭১ পূববর্তী পূর্ব পাকিস্তানীদের মতোই পশ্চিম পাকিস্তানীদের শাসন বলয়ের ভেতরেই থাকবে এবং মূলত তা হবে পাকিস্তান কনফেডারেশনের মতো একটা ব্যাপার। আইএসআই এর এই আইডিয়া বাস্তবায়নের অন্যতম দোসর হলো তাদের সবসময়ের মিত্র জামায়াত ইসলামী। জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমও সময়ে অসমেয়ে “জামাতের হেডকোয়ার্টার তখনও লাহোর এখনও লাহোর বলে বক্তব্য দিয়ে পাকিস্তানীদের প্রতি জামাতের কঠোর আনুগত্যের নমুনা তুলে ধরেছেন। আর এ কারণেই দেখা যায় গত ১০ বছরে শক্ত শেকড় গেড়ে বসা জেএমবি, হুজি, হরকাতুল জিহাদ, হিজবুত তাহরীর মতো সব উগ্র ডানপন্থী দলগুলোর প্রচ্ছন্ন মদদে রয়েছে জামায়াত তথা ইসলামপন্থী তথা ইসলামের ধোয়া তুলে বাংলাদেশে গণহত্যা চালানো পাকিস্তান।মূলত এই শক্তিশালী নেটওয়ার্র কারণেই ২০১২ সালে ইসলামপন্থী সেনাদস্যদের একটি দল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নামে প্রথমবারের মতো অভ্যুত্থান চালানোর স্পর্ধা দেখায়। আন্তর্জআতিকভাবেও এই ঘটনা আলোচিত হয় এবং বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে ক্রমবর্ধমান হারে ইসলামপন্থীদের উত্থানে বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষকের উদ্বেগ লক্ষ্য করা যায়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রকাশ্যে সংবাদ সম্মেলন করে এই অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়ার ঘোষণা দিয়ে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে স্বস্তি ফিরিয়ে আনলেও বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে সেনা বিদ্রোহ দেখা দিতে পারে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করেন।

এ কথা মিথ্যা নয় যে বর্তমান শাসকগোষ্ঠির উপরে জনগণের যে বিপুল প্রত্যাশা ছিল তা পুরোপুরি তারা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছে।নানা ধরণের জরিপে সরকারের উপর মানুষের আস্থা কমে যাওয়ার বিষয়টি পরিষ্কার উঠে এসেছে।অন্যদিকে জামাত-বিএনপি জোট যে জনসমর্থন তাদের দিকে টানতে পেরেছে তাও নও। গত চার বছরে সরকার বিরোধী কোন ইস্যুতেই বিরোধীদল সফলভাবে জনমানুষকে সম্পৃক্ত করতে পারেনি।বরঞ্চ মানুষ যেভাবে দুই দলের শাসনে আশাহত হয়ে ১/১১ এর অনির্বাচিত তৃতীয় পক্ষকে স্বাগত জানিয়েছিল, দেশ আবারও সেরকম পরিস্থিতির দিকেই যাচ্ছে বলে সবার ধারনা।এক্ষেত্রে অনির্বাচিত তৃতীয় পক্ষ আবারও ক্ষমতায় আসতে উদগ্রীব। এবং সেক্ষেত্রে একমাত্র সেনা হস্তক্ষেপের মাধ্যমেই তাদের অভিলাষ পূরণ হতে পারে তা তারা ভালোমতোই জানে।সুতরাং ২০১৩ সালে সেনা অভ্যুত্থানের যে ঝুঁকির কথা আলফেলডার বলেছেন তা্ হেসে উড়িয়ে দেবার উপায় নেই।

২০১৩ সালটি বিশেষ কারণে বাংলাদেশের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ্। স্বাধীনতার ৪০ বছর পর দেশে এখন স্বাধীনতাবিরোধীদের বিচার চলছে। অভিযুক্তদের প্রায় সবাইই বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত ইসলামীর প্রথম সারির নেতা হওয়ায় দলটি যে কোন উপায়ে এই বিচার নস্যাৎ করতে তৎপর।ইতোমধ্যেই তারা প্রয়োজনে দেশে যুদ্ধ বাধিয়ে দেয়ার কথাও বলছে।৭৫ এর ১৫ আগস্ট এর ঘটনা আবার ঘটতে পারে বলে তারা আকার ইঙ্গিতে সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিতও দিচ্ছে। জরুরী অবস্থা জারি বা অন্য যে কোন উপায়ে সেনাবাহিনীকে ক্ষমতায় এনে স্বাভাবিক শাসনব্যবস্থাকে স্থগিত রেখে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিচার প্রক্রিয়াকে মুলতবী রাখাই তাদের আপাত লক্ষ্য।

জামাতের শরিক দল বিএনপিও জোট রক্ষার খাতিরে খোলাখুলিভাবেই তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়ার স্বামী সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সেনা কর্মকর্তা হওয়াও তিনি(খালেদা জিয়া) সেনাবাহিনীকে বিএনপির প্রতি সহানুভূতিশীল বলে মনে করেন।১/১১ এ তার সেনাবাহিনী (উইকিলিকসে প্রকাশিত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের তারবার্তায় দেখা যায় খালেদা জিয়া সেনাবাহিনীকে আমার সেনাবাহিনী বলে সম্বোধন করছেন)তার ভাষায় তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলেও তিনি আওয়ামী শাসনের চেয়ে সেনা শাসনের ভেতর থাকতেই বেশি স্বচ্ছন্দ্য বলে ঘষিষ্ঠজনদের বরাতে জানা যায়।যেহেতু প্রধানমন্ত্রী ২০১৪ সালের জানুয়ারীর আগেই নির্বাচন হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে না আনতে বর্তমান সরকার অনড় সেহেতু বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা মনে করছেন নির্বাচনের আগেই সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করলে পরবর্তী নির্বাচন পিছিয়ে দেয়া সম্ভব। এতে করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুণরায় ফিরিয়ে আনা যেমন সম্ভবনা তৈরি হয় তেমনি নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য দলকে গুছিয়ে নেয়ার সময় ও সুযোগ দুটোই পাওয়া যায়।সেনাবাহিনী ক্ষমতায় এলে রাজনীতিবিদদের মাইনাস করার ফর্মূলা আবার বাস্তবায়ন হতে পারে জেনেও দলটি শঙ্কিত নয়। তাদের ধারনা বিডিআর বিদ্রোহে সেনা অফিসারেরা প্রাণ হারানোয় সেনাবাহিনীর বড় একটা অংশ আওয়ামী লীগের ওপর নাখোশ। তাই এবার মাইনাস ফরমুলা কার্যকর হলে ঝড়ঝাপটা যা যাওয়ার তা আওয়ামী লীগের ওপর দিয়েই যাবে।

অন্যদিকে সেনাবাহিনীকে নিয়ে শাসক দল আওয়ামী লীগের অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে।অতীতের কোন সেনা অভ্যুত্থানই আওয়ামী লীগের পক্ষে যায়নি।এমনকী ১/১১ এর প্রচ্ছন্ন সামরিক সরকারেকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আমাদের সরকার বলে প্রথমে স্বীকৃতি দিলেও পরে তার সেই বক্তব্য থেকে সরে আসতে বাধ্য হন।ফলে সেনাবাহিনীকে নিয়ে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে অস্বস্তি রয়েই গেছে। তবে প্রচুর মুক্তিযোদ্ধা এবং প্রগতিশীল অফিসার থাকায় সেনাবাহিনীকে তারা ভারসাম্যহীন মানতে নারাজ।তাই দলটির অনেকে মনে করেন সেনাবাহিনীতের ইসলামপন্থীরা সক্রিয় থাকলেও ক্ষমতা দখল করার মতো যথেষ্ঠ শক্তি তারা এখানো অর্জন করতে পারেনি। আর যেহেতু জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বিপুল হারে সেনাবাহিনীর সদস্যরা কর্মরত এবং সেনাবাহিনীর যে কোন ধরনের অগনতান্ত্রিক তৎপরতা তাদের জাতিসংঘ মিশনকে হুমকির মুখে ফেলবে সেহেতু ইসলামপন্থীরা বা জাতীয়তাবাদীয়রা কোন অভ্যুত্থান ঘটাতে সক্ষম হলেও শেষ পর্যন্ত সেনাবাহিনীর বড় অংশই সেই অভ্যুত্থানে সমর্থন জানাবে না।তবে বিএনপি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে না আসে এবং জামাত তাদের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালাতেই থাকে তবে জরুরী অবস্থা জারির মাধ্যমে সেনাবাহিনীর প্রগতিশীলদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেয়ার একটা অপশন তাদের রয়েছে।সব শেষ অস্ত্র হিসেবে অপশনটি থাকলেও দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সেনাবহিনীর উদয় মানেই বুমেরাং কিছু ঘটে যাওয়ার সম্ভাবনা সেটা তারা ভালোমতোই জানে। তাই সেনাবাহিনীর যে কোন মুভমেন্টের ব্যাপারে তারা বেশ সতর্ক।এক্ষেত্রে পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের অবস্থান তাদেরকে সাহস যোগাচ্ছে।

বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা মানেই ভারতের জন্য অস্বস্তি। বিশ্বের উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি ভারত যেকোন মূল্যেই তার অর্থনৈতিক অগ্রগতি ধরে রাখতে চায়। বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা পাকিস্তানপন্থী বা ইসলামপন্থীদের হাতে চলে গেলে ভারতেও তার ঢেউ এসে লাগবে।ভারতীয়রা এমনিতেই মাওবাদী আন্দোলনে টালমাটাল। তার ওপর আছে লস্করই তৈয়বা সহ বিভিন্ন পাকিস্তানপন্থী উগ্রবাদীদের উৎপাত।এই অবস্থায় বাংলাদেশ অস্থিতিশীল হয়ে আরেকটি আফগানস্থানে পরিণত হলে ভারতের সামনে সমূহ বিপদ। তাই বাংলাদেশে ভারতের স্বার্থবিরোধী যে কোন জরুরী অবস্থা সৃষ্টি হলে ভারত এখানে হস্তক্ষেপ করবেই।বিশ্ব রাজনীতিতে যে নতুন মেরুকরণ হয়েছে তাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট এখন ভারতের ঘনিষ্ঠ মিত্র। এই অঞ্চলে চীনের আধিপত্য রুখতে মার্কিনীরা ভারতের সাথে একযোগে কাজ করছে।তাই সৌদি আরব যেমন মার্কিন মদদে বাহরাইনের শিয়াপন্থী আরব বিপ্লব ঠেকাতে সেখানে জাতিসংঘের অনুমোদন ছাড়াই সৈন্য পাঠিয়েছে তেমন করে ভারতও যে বাংলাদেশে তেমন কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সামরিক হস্তক্ষেপ করবে না তা বলা যায় না।তেমনটি হলেও জামায়াতের সুবিধা হয়।কারণ ঐ রকম যুদ্ধাবস্থায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া আপনাতেই বন্ধ হয়ে যেতে বাধ্য। এবং বাংলাদেশের মাটিতে ভারতীয় বা অন্য কোন বিদেশী সৈন্য এলে ইসলাম ও জাতীয়তাবাদী চেতনাকে জোড়া লাগিয়ে বাংলার মানুষকে তাদের বিরুদ্ধে জাগিয়ে তোলাটা হবে নতুন এক মুক্তিযুদ্ধের মতো। আফ্রিকান দেশগুলোতে আলকায়েদা সংশ্লিষ্ট জঙ্গীরা যেভাবে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী বা আফ্রিকান ইউনিয়ন বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়ছে বা তালেবানেরা আফগানস্থানে যেভাবে ন্যাটো বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়ছে সেভাবে দীর্ঘমেয়াদী লড়াইয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশকে ইসলামী জিহাদের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করে সে্ই যুদ্ধের নায়ক বনে অতীতের খলনায়ক ভূমিকা থেকে বেরিয়ে আসার সুবর্ণ সুযোগকে কাজে লাগাতে চায় জামায়াত।

এই যখন অবস্থা তখন বলতে হয়ে যে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ এই প্রথম সত্যিকারভাবে আরেকটি যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। যুদ্ধপরাধীদের বিচার বাংলাদেশের অদৃশ্য দুটো ভাগকে দৃশ্যমান করেছে।একভাগ হচ্ছে বাংলাদেশকে অস্বীকার করা স্বাধীনতাবিরোধীরা, অন্যভাগে আছে স্বাধীনতাকে স্বীকার করা প্রগতিশীল মানুষেরা। যেহেতু স্বাধীনতাবিরোধীদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে সেহেতু তারা যে কোন উপায়ে আত্মরক্ষায় মরিয়া। দেশ জাতির চেয়ে এদের কাছে এখন বড় কথা হলো ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের মাধ্যমে জনজীবনে ভয় ধরিয়ে দিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করা।অপরদিকে অন্য পক্ষের মানুষের কাছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টা আজন্ম টেনে বেড়ানো একটা পাপের বোঝা যেটা আজ হোক আর কাল হোক ঝেড়ে ফেলতেই হবে। বিচার যেহেতু একবার শুরু হয়েছে সুতরাং তা শেষ করতে তারা প্রত্যয়ী। এই দুয়ের সংঘাতের সুযোগ নিয়ে গণতান্ত্রিক পন্থার গলা টিপে তৃতীয় পক্ষ ক্ষমতায় আসা মানেই সমস্যা জটিল থেকে জটিল আকার ধারণ করা। বাংলাদেশের অতীত ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় সেনাবাহিনী বা তৃতীয় কোন পক্ষ এখানে ক্ষমতায় এসে নতুন কোন কিছু করে দেখাতে পারেনি।তারা বরং ধর্মীয় রাজনীতি উন্মুক্ত করে দিয়ে, দেশকে ইসলামী রাষ্ট্রের আলখেল্লা পরিয়ে এবং ধর্মকে ঢাল বানিয়ে সুরক্ষিত থাকা স্বাধীনতাবিরোধীদের না ঘাটিয়ে ধর্মব্যবসায়ীদের উঠে দাঁড়াবার সুযোগ করে দিয়েছে।মূলত সেইসব সুযোগকে কাজে লাগিয়েই মৌলবাদীরা বাংলাদেশের বিশাল জনগোষ্ঠীকে ধর্মের নামে ভুলিয়ে ভালিয়ে বশ করতে সমর্থ হয়েছে।সুতরাং আগামী নির্বাচনের আগেই যে কোন ধরনের সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তৃতীয় শক্তির ক্ষমতা দখলের পয়তারায় আশার কিছু নেই। বরঞ্চ এতে করে জনগনই ক্ষমতাহীন হয়ে পড়ে অনির্বাচিত গোষ্ঠীর ক্রীড়ানকে পরিণত হবার সম্ভাবনা প্রবল। আর জামায়াতের মতো দল যাদের সরাসরি ক্ষমতায় আসার মতো জনসমর্থন নেই তারা এভাবেই পেছন দরজা নিয়ে জনতার ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে নিজেদের আখের গোছাতে লোভীর মতো অপেক্ষায় আছে।

তাই বলা চলে যে, যারা সাংসদীয় গণতন্ত্রের উপর বীতশ্রদ্ধ, বড় দুই দলের উপর আস্থা হারিয়ে সেনা শাসনকে বুকে টেনে নেবার জন্য উদগ্রীব হচ্ছেন তারা প্রকারন্তরে বুঝে বা না বুঝেই যুদ্ধপরাধীদের বিচার বানচালে জামায়াতী কূটনীতিতে সামিল হচ্ছেন।কথিত আছে সর্বউৎকৃষ্ট সেনা শাসনও সবচেয়ে নিকৃষ্ট গণতন্ত্রের চেয়ে খারাপ। তাই উন্নত দেশগুলোতে গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় রাজনীতি হয়, সরকার বদল হয়, দেশ চলে।ক্রমশ উন্নতির পথে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশকে পিছিয়ে নিয়ে যাবার কোন সুযোগ নেই। ব্যর্থ রাষ্ট্রগুলোর অনুকরণে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে যারা দেশটাকে পিছিয়ে নিতে চান তাদের জন্য হাতের কাছে জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ হলো পাকিস্তান। সেনা শাসনের কারণে পাকিস্তানের বর্তমান কী হাল হয়েছে তা নতুন করে আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।পাকিস্তানের পরিণতি বরণ করার জন্য বাংলাদেশের জন্ম হয়নি। আশা করি আমরা জনগণ সেটা বোঝার চেষ্টা করবো এবং সেনা শাসন বা জামাতমনস্ক তৃতীয় শক্তি বা অন্যকোন অগণতান্ত্রিক শক্তিকে অর্নিদিষ্টকালে জন্য ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার থামিয়ে দেয়ার যে কোন ধরনের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে সচেষ্ট হবো।

বি:দ্র- খুব অল্প সময়ের ভেতর লেখা বিধায় বানান বা অন্যকোন তথ্যগত ভুল থাকলে তা শুধরে দেয়ার অনুরোধ থাকলো।

১/০২/২০১৩
সিডনি, অস্ট্রেলিয়া।
তথ্যসূত্র:
http://dartthrowingchimp.wordpress.com/2012/12/21/coup-forecasts-for-2013/
http://www.foreignpolicy.com/articles/2012/06/18/the_watch_list
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2013-01-12/news/320631
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-01-19/news/217827
http://www.weeklyblitz.net/522/islamist-infiltration-in-bangladesh-army
http://www.google.com/hostednews/afp/article/ALeqM5hbPSMX2ZdbHnY15NE3fio7lWUFxQ?docId=CNG.c0bb0deb4fe03f815d3a2dc161d87a0e.3b1
http://openblogbd.wordpress.com/2011/07/01/manmohan-singh-jamaat-e-islami-in-bangladesh-and-isi/
http://www.secularvoiceofbangladesh.org/Jamaat%20i%20Islami%20%20A%20threat%20to%20Bangladesh%20by%20Chris%20Blackburn.htm
https://www.facebook.com/video/video.php?v=10150542972918000


মন্তব্য

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

...জরুরী অবস্থা জারির মাধ্যমে সেনাবাহিনীর প্রগতিশীলদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেয়ার একটা অপশন তাদের রয়েছে।

সেনাবাহিনীর প্রগিতিশীলরা কারা?

সেনাশাসন আসলেই দেশে ইছলাম কায়েম হয়ে যায়! নারীরা পর্দার আড়ালে যান, ছেলেদের লম্বা চুল কাটা পড়ে, বেলেল্লাপণা বন্ধ হয়ে যায়, ইত্যাদি ইত্যাদি! নিয়ম ছিরিংখলা মিলে দেশের শনৈ শনৈ প্রগতি দেখা যায়! আবার জলপাই ক্ষমতায় আসলেও সেরকমই হবে।

হাসিনা সরকারের কাণ্ডজ্ঞান থাকলে পনেরো কোটি মানুষের ত্রিশ কোটি হাত দিয়ে হস্তমৈথুন করা মঈন উ আর ফখরুদ্দিনকে বাংলাদেশে বন্দুক দেখায়ে ইতরামী করার অপরাধের আইনি ব্যবস্থাটুকু অন্তত নেবে। তা না নিলে আর কী! দেশে জলপাই বীর আসবে ক্ষণে ক্ষণে!

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

সুমন চৌধুরী এর ছবি

আমাদের সেনাবাহিনিতে কোন প্রগতিশীল অতীতে ছিল না। বর্তমানে নাই। ভবিষ্যতে থাকার সম্ভবনা এরশাদের বাপ হওয়ার মতই।

স্যাম এর ছবি

দেঁতো হাসি

তানিম এহসান এর ছবি

চলুক

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আ.লীগ একক ভাবে ইলেকশন করলে তথাকথিত তৃতীয় শক্তিকেই প্রশ্রয় দেয়া হবে। সাধারণ আমজনতা হিসেবে আমার সেরকম আশংকা।

লেখা পড়ে ভালো লেগেছে।

রিপন মজুমদার এর ছবি

কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়লো।

দুর্দান্ত এর ছবি

কাঠামোগত ভাবেও ২০১০-২০১২ সময়ে আমাদের সামরিক বাহিনীর কমান্ড-কন্ট্রোল ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সাথে রাওয়ালপিন্ডির সাথে দূরত্ব বেড়েছে, ফোর্ট উইলিয়ামের সাথে সখ্য়তা বেড়েছে। উপরন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসে সামরিকবাহিনী ক্ষমতাশীল দলের এতটা কাছাকাছি কোনদিন আসেনি ও আদর্শিক পৃ্ষ্ঠপোষন কোনদিন পায়নি। যেভাবেই ঘটে থাকুক, বিডি-আর পাইকারি খুনের ঘটনায় আমাদের সেনাবাহিনীতে আওয়ামী/বিয়েম্পি/জংগী প্রভাবমুক্ত ও প্রগতিশীল চিন্তা ক্ষমতাধর কিছু তরুন অফিসার নিশ্চিহ্ন হয়েছে। যদি কোনদিনও বাংলাদেশে কোন তৃতীয় শক্তির উদ্ভব ঘটতো, তাহলে ঐ অফিসারদের সামনের সারিতে দেখা যাবার সম্ভাবনা অবান্তর ছিলনা।

আমার মনে হয়না আওয়ামী লীগের এই কিস্তিতে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী ক্ষমতা থেকে খুব দূরে অবস্থিত। ১/১১ থেকে যে সামরিক-কর্পোরেট এক্সিস বাংলাদেশের ক্ষমতায় উঠে আসে, আওয়ামীলীগ তাদের সাথে কোন বিরোধিতায় যায়নি, বরং ঐ এক্সিসের কিছু অতিলোভি কাজকামের আলামত মিডিয়ায় চলে আসলে আমরা দেখেছি আওয়ামিলীগকে বিশ্বস্ত বন্ধুর মত জনমত ট্য়াকেল দিয়েছে। ডেস্টিনি ২০০০ এর হারুন, রুপপুরে ততকালীন কোয়ারটারমাস্টার সাহেবের জমিদখল (আজকের সেনাপ্রধান) এরকম আরো উদাহরন দেয়া যায়।

মিডিয়ায় হাসিনা-খালেদার পাল্টাপাল্টি কাইজা ও রাস্তায় জামায়াতের তান্ডবে পাবলিক মেতে আছে। কিন্তু লক্ষ্য় করুন বাংলাদেশের ইতিহাসে সামরিকবাহিনীর বানিজ্য়িক ক্ষমতা ও দেশের কর্পোরেট অংগনে সামরিক অফিসারদের বানিজ্য়িক ইন্টারেস্ট আজকের চাইতে বেশী কোনদিন ছিলনা। এই সময়ে একটি তৃতীয় শক্তির উত্থান অথবা সামরিক বা্হিনী নিজের হাতে ক্ষমতা নিয়ে নেওয়া আজকের এই সামরিক-কর্পোরেট এক্সিসের লাভজনক সাম্য়াবস্থাকে বিপর্জস্ত করবে।

আমার তাই মনে হয় সামরিক বাহিনী নিজে থেকেই ২০১৩ তে যাতে কোন সেনা অভ্যুত্থান বা তৃতীয় শক্তি ক্ষমতায় না আসতে পারে, সেই প্রস্তুতিতে অনেকদিন ধরেই ব্য়াস্ত রয়েছে।

আইলসা এর ছবি

হাসিনা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ইলেকশন করবেনা, খালেদা নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া ইলেকশন করবে না।
শান্তিপূর্ণ ইলেকশনের সম্ভবনা প্রায় শূন্য।
অশান্ত ইলেকশনের পরে রাজনীতি অস্থিতিশীল হতে বাধ্য। তখন কি হবে? জলপাই পার্টি কি বসে থাকবে? বাংলাদেশে যাদের স্বার্থ জড়িত, তারাই বা কি করবে?

স্ট্যাটিসটিক্যালি হিসাব করলে, জলপাই পার্টি আসার চান্সই বেশি, "কিন্তু" তা হইলো স্পেশাল ইভেন্ট।

আওয়ামী লিগ শেষ মূর্হুতে নিরপেক্ষ সরকার মেনে নিলো [স্ট্র্যটেজিক্যালি এইটা কিন্তু একটা চমৎকার মুভ হওয়ার কথা, লাস্ট মোমেন্টে বিএনপি নিরপেক্ষ সরকারের কাঠামো নিয়ে ঝামেলা করতে পারবেনা, প্লাস আন্দোলনের দাবী মেনে নেয়ায় আন্দোলনে মাধ্যমে সংগঠিত হওয়ার সুযোগ পাবেন। এবং হাসিনা আমার ভোট পাবে ফর সাচ নাইস স্ট্রাটিজিক গেম।]
আরেকটা স্পেশাল ইভেন্ট হতে পারে বিএনপি আওয়ামী লিগের আন্ডারে নির্বাচন করলো, বিনিময়ে আওয়ামী লীগ বড় গনতন্ত্রকে দেশে এসে সে্টল হতে দিলো। যদিও এইটা বিএনপির জন্য ভালো হবে না।
অথবা সত্যপীরের পানি পড়া খেয়ে ইনুস কাকু দল গঠন করে রাজনীতিতে নেমে গেলো...

অনেক কিছুই হতে পারে, তবে জলপাই হওয়ার চান্সটা বেশী মন খারাপ

থর এর ছবি

সেনাবাহিনীতে জামাতিদের ক্ষমতাকে আপনি কম করে দেখছেন বলেই আমার মনে হল। জামাত-শিবির যেভাবে আজকে মতিঝিলে পুলিশকে মারামারির ওপেন ইনভাইটেশন জানালো তা মোটেও হটকারি কিছু নয়। শেষপর্যন্ত দেশটা লিবিয়া বা সিরিয়ার দিকেই যাচ্ছে মনে হচ্ছে। আঙ্কেল স্যামের জামাতি তোষন নীতি এই অংকে খুবই ক্রুশাল।

অপ্রস্তুত লেনিন এর ছবি

ভালো বিশ্লেষণ, অনেক দিক থেকেই বিশ্লেষণ করেছেন, ভালো লাগলো।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

একটা সময়োপযোগী প্রয়োজনীয় বিশ্লেষণ। এই বছরটা সত্যিই আশংকার বছর।

প্রতিদিন পত্রিকা খুললেই জামাতী নৃশংসতার খবর। জ্বালাও,পোড়াও, পুলিশ পেটাও। জামাত কি সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমে যাচ্ছে? নাকি একটা যুদ্ধের পরিবেশ তৈরী করার চেষ্টা করছে। ওদের এই সাহসের উৎস কি? এগুলো তো বিচ্ছিন্ন ঘটনা মনে হচ্ছে না। তাই ২০১৩ সাল আশংকারই বছর। এই বছরে অনেক কিছুই ঘটে যেতে পারে বাংলাদেশে। হবুচন্দ্র গবুচন্দ্রেরা আত্মতৃপ্তির কলা চুষতে চুষতেই খতম হয়ে যেতে পারে। সেনা শাসনের চেয়েও দেশ জামাতী নৈরাজ্যের আশংকা বেশী। জামাত বাংলাদেশে কোনদিন বৈধ পথে ক্ষমতায় আসতে পারবে না। কিন্তু দেশব্যাপী নৈরাজ্য সহিংসতা সৃষ্টির ক্ষমতা তাদের আছে। যে পরিমান নৈরাজ্য সৃষ্টি করলে দেশে সেনা শাসনের পরিস্থিতি হয় সেই পরিমান নৈরাজ্য করতে পারে। ১/১১ আর যাই হোক জামাতী সেনা শাসন ছিল না। কিন্তু আগামীতে জামাতী ১/১১ হবারও আশংকা রয়েছে। সম্ভাবনার দেশ পরিণত হতে পারে নৈরাজ্যের দেশে।

অনেক অনেক আশংকা কোন সন্দেহ নেই। তাই বলে কি আমরা আশা ছেড়ে দেবো? না, বাংলাদেশের সবচেয়ে ভরসার জায়গা হলো সাধারণ মানুষ। বাংলাদেশ পাকিস্তান নয়। এখানে তালিবান মানসকিতার লোকেরা সংখ্যালঘু। এরা মাথাচাড়া দিয়ে বেশীদূর যেতে পারবে না। বাংলাদেশের মানুষ জেগে উঠলে এদের পিটিয়ে বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেবে। আমাদের রয়েছে শত বছরের সংগ্রামী ইতিহাস। আমাদের রক্ত মাংস হাড় মজ্জায় স্বাধীনতার চেতনা। অশুভ শক্তি এখানে জয়ী হতে পারবে না।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

তানিম এহসান এর ছবি

বাংলাদেশের মানুষ জেগে উঠলে এদের পিটিয়ে বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেবে। আমাদের রয়েছে শত বছরের সংগ্রামী ইতিহাস। আমাদের রক্ত মাংস হাড় মজ্জায় স্বাধীনতার চেতনা। অশুভ শক্তি এখানে জয়ী হতে পারবে না।

এইটার উপর আর কোন কথা থাকতে পারেনা। মার জামাতি!

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

১/১১ আর যাই হোক জামাতী সেনা শাসন ছিল না।

চার উদ্দীনের শাসনামলে জামায়াত বা জাতীয় পার্টির কোন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার হতে দেখেছেন? তাদের বিরুদ্ধে কি কোন মামলা হয়েছে? এই দুই দলকে কি চার উদ্দীনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে বা মতামত দিতে দেখেছেন?


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

আমি ভেতরের খবর জানি না। কিন্তু নাগরিক হিসেবে আমার কয়েকটা অবজারবেশান বলি-

১] ১/১১ সরকারের টার্গেটের ফোকাসে ছিল দুই নেত্রী আর তার ঘনিষ্ঠজন।

২] ১/১১ সরকারের প্রতি তখনো সবচেয়ে নাখোশ জামাত শিবির। এখনো নাখোশ। ওদের নিশ্চিত গ্রাস কেড়ে নিয়েছিল ১/১১ সরকার।

৩] আমার জানামতে ১/১১ সরকার শুধু জামাত জাতীয়পার্টি না, প্রধান দুই দল বাদে আর কোন দলের বিরুদ্ধে তেমন উচ্চবাচ্য করেনি।

৪] জোট আমলে ক্যান্টনমেন্টে সব কটা প্রগতিশীল পত্রিকা নিষিদ্ধ ছিল। আমারদেশ সংগ্রামের মতো পত্রিকার রাজত্ব ছিল সেখানে। ১/১১ এর পর সেই নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়। অন্যন্য পত্রিকা প্রবেশাধিকার পায়।

৫] পাঠ্যপুস্তকে বঙ্গবন্ধুকে নির্বাসন থেকে ফিরিয়ে আনা হয়।

এই কয়টা বিষয় দেখে বোঝার জন্য যথেষ্ট যে ১/১১ সরকার জামাত সমর্থিত সরকার ছিল না।

অন্যদিকে, জামাত ১/১১ সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে খুব বেশী উচ্চবাচ্য করেনি বরাবরের মতো পিঠ বাঁচিয়ে থাকতে, কারণ তাদের ধারণা ওই্ সরকারের সাথে আওয়ামীলীগের একটা বোঝাপড়া ছিল। বেশী নড়াচড়া দেখলে তাদেরকেও গরাদে পুরে দিতে পারে। আর জাতীয়পার্টি তো চির সুবিধাবাদী। ওরা যে কোন সামরিক শাসনের পক্ষে। এমনকি এখনো। লম্পট এরশাদতো গত সপ্তাহেও আবার আজান দিয়ে জানান দিল। জাতীয়পার্টি ১/১১ সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললেই বরং বিস্মিত হতাম।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

তানিম এহসান এর ছবি

নীড়’দা, ১/১১ এর পর জামাত নিজেদের গুছিয়েছে সবচাইতে বেশি। বিএনপি আমলে কলাবাগানে লাগানো ব্যবসা ফুলেছে চতুর্গুন, চাকরী থেকে শুরু করে সবকিছুতে নিজেদের ক্ষমতা বহুদূর কুক্ষিগত করেছে তারা।

এরা সুবিধা নেয়নি কোন আমলের!

দুর্দান্ত এর ছবি

"১/১১ সরকারের প্রতি তখনো সবচেয়ে নাখোশ জামাত শিবির। এখনো নাখোশ। ওদের নিশ্চিত গ্রাস কেড়ে নিয়েছিল ১/১১ সরকার।"

এই মন্তব্যে ১/১১ সমীকরনে জামায়াত-জলপাইকে যে অক্ষে দেখেছেন, জামায়াতের রাজনৈতিক অবস্থান কি আসলেই সেরকম ছিল। অবাধ অথবা বিয়েম্পি প্রভাবযুক্ত নির্বাচনে জামায়াতের শক্তি ঐসময়ে কি সরাসরি ক্ষমতায় আসবার মত ছিল? আমার মনে হয় ১/১১ র আগেই দেশে জামায়াত/বিয়েম্পি বিরোধী জনমত এরকম ছিল যে, নির্বাচনে অনেক জামায়াতি সিট আম্লকির কব্জায় চলে যেত।

কুর্মিটোলার বড়সাহেবেরা জামায়াতকে শত্রু ভাবার কোন কারন কখনো খুজে দেখেনি। পিলখানায়(অনেকাংশে কুর্মিটোলার সরাসরি প্রভাবমুক্ত) মাঝে মাঝে কিছু জামাত ঠ্যাঙ্গাতে দেখা গেছে, কিন্তু সেটা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের নির্দেশ ফেলতে না পেরে। ৭৫-৭৬ ভাটিয়ারির বাইতুল ইজ্জত (!) এর ব্রেনওয়াশ যন্ত্রের চালকেরা মোটামুটি সবাই পাকিস্তান প্রত্যাগত ও কাকুল থেকে আফগানিস্তানে জঙ্গী পাঠানোর কারখানার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। ১/১১ এ ক্ষমতার পুরোভাগে যে ২-৩ তারকা জেনারেলরা ছিলেন, তাদের একটি বড় অংশ নিজেদের যৌবনে সিরাতুল মুস্তাকিমের দেশকে ফিরিয়ে আনবার জিহাদী যোশ বুকে নিয়ে জিয়া ও এরশাদকে স্যালুট দিয়েছেন। যেটা শুনেছি (প্রমাণ নেই) খালেদা-হাসিনা খাঁচায় থাকাকালীন সেসময় জামায়াতের সাথে বহুতারকা জলপাইদের একটা নৈকট্য তৈরী হয়, তবে ২০০৮ এর পূনঃপ্রজ্জ্বলিত আন্তর্জাতিক জংগীবিদ্বেষ ও কুর্মিটোলা একালায় সেক্টরকমান্ডারদের ৭১-স্মৃতি নির্ভর কার্যক্রম জলপাইকে সরাসরি সিরাতুল মুস্তাকিমে আসতে নিরুতসাহিতে করেছে।

একা ছেড়ে দিলে আমাদের জলপাই কিন্তু খুব দ্রুত সিরাতুল মুস্তাকিমে ফেরত নিয়ে যাবে। জিয়া ও এরশাদ যেমন নিয়েছিল। ঐ কাঠামোতে ছাগলেরা দেশব্যাপি বিচরন ও বংশবৃদ্ধি করে, সাফারি স্যুটওলায়ার তাবত সরকারি কন্ট্রাক্ট পেয়ে নিরব থাকে, আর মুসলিমলীগের হাতাকাটা কালো কোট ওয়ালারা রাজপথ গরম রাখে।

জলাপাই বনে ছাগলের মহানন্দ বিচরন বাস্তব।

আলী হায়দার এর ছবি

আলফেলদার সাহেব দেশের একটি তালিকা করেছেন বটে, কিন্তু বাংলাদেশ কেন সেনা অভুথানের ঝুকিতে এই ব্যাপারে তাঁর কোন ব্যাখা নেই। অতএব এই তালিকায় বাংলাদেশের নাম থাকাকে খুব একটা গুরুত্ত দেয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করিনা।

একটি ব্যাপার খুব লক্ষনীয় যে যখন এই ধরনের আলোচনার অবতারনা হয় তখন কিছু ছক মাথায় রাখা হয়, যেমন ১/১১, এরশাদ, জিয়া ইত্যাদি। কিন্তু সশস্র বাহিনীতে যে পরিবতন সূচিত হয়েছে, তা তো আমলে আনতে হবে। জাতিসঙ্ঘ শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশ প্রথম স্থানে রয়েছে। এটা তাদের পরিপক্কতা অর্জনের প্রমান। তারা এখন অনেক বেশি জাতীয় উন্নয়নের সাথে সম্প্রিক্ত। অধূনা পদ্মা সেতুতেও সেনাবাহিনিকে সপ্রিক্ত করার কথা জোরে শোরে শোনা যাচ্ছে। এখন তারা রাজনিতিবিদ এবং বেসামরিক প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সাথে একসঙ্গে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। এই প্রজন্মের সেনা অফিসাররা সেনা অভ্যুথানের সেকেলে ধারনা থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখছে। তারা জাতিসঙ্ঘ মিশনের সুবাদে ভাল আয় করছে এবং তা ভাল কোন যায়গায় বিনিয়োগ করছে।

তারা অন্য সকল নাগরিকের মত বাংলাদেশকে একটি স্থিতিশীল এবং সছছল দেশ হিশেবে দেখতে চায়। তাই দেশের যেকোন রাজনৈতিক দোলা চালে তাদেরকে টেনে আনার মানসিকতা পরিহার করতে হবে।

তানিম এহসান এর ছবি

জামাতের একটা চিংড়ী মাছ-ও যদি কুয়া থেকে পানাপুকুরে যায় তার-ও সর্বোচ্চ ধান্ধা থাকে গন্ধ ছড়ানো, দেশের পেছন দিয়ে কিভাবে বাঁশ দিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করা যায় তার চিন্তা। বিগত বিএনপি আর চার-উদ্দিন আমলে যারা জাতিসংঘ শান্তি মিশনে গেছে তাদের ভেতর নিশ্চিত জামাত মনোভাব সম্পন্নরা ছিলো প্রমোটেড। এরা বিভিন্ন দেশে শান্তি পয়দা করা ছাড়া আর কি কি করেছে তার কোন খোঁজ আছে কারো কাছে?

যাদের রাখা উচিত ছিলো মাইক্রোস্কোপের নীচে এরা-ই সব হিসেব-নিকেশের বাইরে থেকে গেছে গত কয়েক যুগ! হায়রে অভাগা জাতি!!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।