"সোনার পিত্তল মূর্তি"

রাফি এর ছবি
লিখেছেন রাফি (তারিখ: শনি, ১৬/০৮/২০০৮ - ৬:৪১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

দুষ্টলোকেরা একটা কথা খুব বলেন। ছ্যাকা ছাড়া নাকি কবিতা আসে না, কবি হওয়া যায় না। এই মিথ গড়ে উঠার পেছনে নাটক সিনেমার বেশ বড়সড় অবদান আছে। ইদানীং বাংলাদেশের নাটক বেশ ভদ্রস্থ হয়েছে; তবে সিনেমায় এখনো আগের রূপ চোখে পড়ে। নায়ক প্রেমে ব্যর্থ হয়ে উদাস মুখে সিগারেট টানছে, আর তার সুযোগসন্ধানী চক্র গ্লাসে লাল পানি ঢেলে দিচ্ছে এই দৃশ্য রূপালী পর্দা থেকে এখনো বিদায় নেয়নি। এতো গেল সিনেমার কথা।বাঙ্গালীর সাদামাটা জীবনেও প্রেম আসে অবিরাম; জীবনের একটা সময়ে সব বাঙ্গালীই কবিতা লেখে। আর যারা লেখে না তারা আকাশ পাতাল ভাবে। মোদ্দা কথা কান টানলে যেমন মাথা আসে তেমনি প্রেম ঘাটলে কাব্য ফুটে।

এই মহান সত্যের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে বাংলা কবিতার রাজপুরীর কোঠরে কোঠরে লুকিয়ে আছে শত শত প্রেমের কবিতা। একদিকে হেলাল হাফিজের প্রেম যেমন বিদ্রোহের আবরণে ঢাকা অন্যদিকে নীরেন্দ্রনাথ বা আজকের মহাদেব সাহার প্রেম একেবারে স্বরূপে উদ্ভাসিত। তবে আর সব বিষণ্নতার অভিধার মত প্রেমের কবিতার আগে যার নামটি সর্বাধিক উচ্চারিত হতে দেখি তিনি জীবনানন্দ দাশ। অনেককেই বলতে শুনি প্রেমিকা হিসেবে কাউকে কল্পনা না করলে জীবনানন্দের অধিকাংশ কবিতাই মাথার উপর দিয়ে নয়; মাথার কয়েক কি.মি.উপর দিয়ে যায়। অভিযোগটি একেবারে অগ্রাহ্য করার মতোও না, তাঁর অল্প কবিতাই আমি বুঝি।

প্রেমিকার আশ্রয়ে কবিতা উপভোগ করা বেশ রোমান্টিক ব্যাপার; কিন্তু সমস্যা হল শুধু জীবনানন্দের নয় অধিকাংশ কবিতায়ই “আমি” মানে কবি নিজে নন; “তুমি” মানে প্রেমিকাকে সম্বোধন নয়। তবুও এই সরলীকরণ যদি পাঠককে কবিতার রস আস্বাদন করতে সাহায্য করে তাতে কারো আপত্তি থাকার কথা নয়। মজার ব্যাপার হল পংক্তির অর্থ যাই হোক, কবিতার তুমিকে নারী ধরলে হাতে গোণা কয়েকটি বাদে জীবনানন্দের প্রায় সব কবিতাই প্রেমের কবিতা। আমার নিজের কথাই বলি ।জীবনানন্দে আসক্তির একেবারে শুরুর দিকে এক সহপাঠীর খাতায়

“আমি তারে পারি না এড়াতে
সে আমার হাত রাখে হাতে;
পৃথিবীর সব কাজ তুচ্ছ হয়, পন্ড মনে হয় ,
সব চিন্তা-প্রার্থনার সকল সময় শূন্য মনে হয়,
শূন্য মনে হয়!”
(বোধ-জীবনানন্দ দাশ)

এই স্তবক দেখে একে ভালবাসার তুমুল প্রকাশ ভেবেছিলাম; কবিতার নাম জেনে যথারীতি আগ্রহ সহকারে পুরাটা পড়লাম। বলা যায় কিছুই বুঝলাম না, শুধু এইটুকু বুঝলাম আমি একটা উঁচু স্তরের গাধা। এই কবিতা আর যাই হোক ভালবাসার কবিতা না। বলাই বাহুল্য আমি কিন্তু এখানে প্রেমের বিস্তৃত শ্রেণীবিভাগে যাচ্ছি না। মানবপ্রেম বা প্রকৃতিপ্রেমও এক ধরণের প্রেম এই কথাতে আমার আপত্তিও নেই।

যাই হোক;ঐ ঘটনার পাঁচ বছর পর ঢাকার ফুটপাতে হাঁটছি, উদ্দেশ্য সস্তা দামে কিছু বই যোগাড়। কিছুক্ষণ পরপরই চোখে পড়ছে “জীবনানন্দের শ্রেষ্ঠ প্রেমের কবিতা”, “জীবনানন্দের প্রেমের কবিতা সমগ্র” দরকার থাকুক না থাকুক বরাবরের মতই বইটা হাতে নিলাম এবং কবিতাগুলির শিরোনামে চোখ বুলিয়ে মনে মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। হ্যা আছে; “বোধ”, “আট বছর আগের একদিন”, “সুচেতনা” সবই আছে। যাক দুনিয়ায় আমি একা গর্দভ নই!

কয়েকদিন আগে সচলায়তনে বইয়ের নাম চেয়ে একটা ব্লগ লিখেছিলাম; পাওয়া নামগুলোর কয়েকটা সেদিন কিনে নিয়ে এলাম আজিজ থেকে। মাহমুদুল হকের “কালো বরফ” পড়তে পড়তে হঠাৎ জীবনানন্দের ‘কারুবাসনা’র কথা মনে পড়ল। জীবনানন্দের উপন্যাস খুব কষ্টদায়ক; দাম্পত্য জীবনে স্নায়ুযুদ্ধ কী ভয়ংকর রূপ ধারণ করতে পারে তা এই উপন্যাসগুলো পড়লে বোঝা যায়। প্রতিটি উপন্যাসের প্রেক্ষাপট একই। প্রতিটি উপন্যাসই কোন না কোন পরাজিত মানুষের গল্প, স্ত্রী’র অসংবেদনশীলতায় এক সংবেদনশীল স্বামীর নিদারুন মর্মবেদনার গল্প। প্রায় সব কবিতায় নারীকে নানা উপমা, চিত্রকল্প আর রূপকের মাধ্যমে আবেগময়ী করে তুললেও উপন্যাস আর ছোটগল্পগুলোর নারীচরিত্র চরমভাবে অমার্জিত আর বৈষয়িক। কবিতায়ও কি এর উদাহরণ নেই? আছে। অন্তত একটি কবিতায় তা আমার চোখে ধরা পড়ে।

“একবার নক্ষত্রের পানে চেয়ে – একবার বেদনার পানে
অনেক কবিতা লিখে চলে গেল যুবকের দল;
পৃথিবীর পথে পথে সুন্দরীরা মূর্খ সসম্মানে
শুনিল আধেক কথা – এই সব বধির নিশ্চল
সোনার পিত্তল মূর্তিঃ তবু, আহা, ইহাদেরই কানে
অনেক ঐশ্বর্য ঢেলে চলে গেল যুবকের দলঃ
একবার নক্ষত্রের পানে চেয়ে – একবার বেদনার পানে।”
(ইহাদেরই কানে- জীবনানন্দ দাশ)

সুর আর সৌন্দর্যের সতত বন্দনা পড়ে যখন মনে হয় জীবনানন্দের প্রেমবোধ অদৃশ্য অথবা অস্পৃশ্য কোন মনোজ রাজকুমারীর সংবেদনশীলতার বেদীতলে সমর্পিত; তখন মাঝে মাঝেই নিজেকে প্রশ্ন করি সমালোচকদের শত বিরোধিতায় যিনি নির্বিকার ছিলেন, যাকে তার ঘনিষ্ঠজনেরা বর্ণনা করেছেন দেবতুল্য এক ব্যক্তিত্তরূপে, নারীত্বকে যিনি কবিতার প্রতিটি পংক্তিতে অমরত্ব দিয়ে গেছেন, সেই কবি নারী সম্পর্কে এরকম তীব্র বিবমিষাকর উক্তি কেন করলেন? জীবনানন্দের রহস্যময় জীবনের কোন এক বাঁকে প্রেমে ব্যর্থ হওয়ার মত কিছু ঘটেছিল কি? নাকি এই কবিতাটি কবি তার একমাত্র জীবনসঙ্গিনীকেই উৎসর্গ করে গেছেন?


মন্তব্য

রায়হান আবীর এর ছবি

সুন্দর লিখছেন... *****

হ্যা আছে; “বোধ”, “আট বছর আগের একদিন”, “সুচেতনা” সবই আছে। যাক দুনিয়ায় আমি একা গর্দভ নই!

হা হা হাসি
=============================
তু লাল পাহাড়ীর দেশে যা!
রাঙ্গা মাটির দেশে যা!
ইতাক তুরে মানাইছে না গ!
ইক্কেবারে মানাইসে না গ!

রাফি এর ছবি

ধন্যবাদ আবীর।

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

রণদীপম বসু এর ছবি

আসলে মনে হয় প্রেম নয়, একধরনের কষ্টবোধে আক্রান্ত হলেই চিরায়ত আবেগপ্রবণ বাঙালি তরুণরা কবিতায় ঢুঁ মারতে শুরু করে। এবং এক সময়ে এসে আশ্রয়ও হয়ে ওঠে। আর কবিতার মোহে একবার জড়িয়ে গেলে, প্রেয়সী থাক বা যাক, কাব্যের ছিটগ্রস্ততা (কল্পপ্রেয়সী) থেকে আর পরিত্রাণ পায় না। এদেরই কেউ কেউ হয়তো নির্ভেজাল কবিই হয়ে ওঠেন।

ভাগ্যিস তা হয় ! নইলে আমরা যে কবিশূণ্য জাতি হয়ে যেতাম। একমাত্র এই ছিটগ্রস্তেরাই তো বিনিময়ে কিছু না চেয়ে বা না পেয়ে শুধু দিতে জানে।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

রাফি এর ছবি

একমাত্র এই ছিটগ্রস্তেরাই তো বিনিময়ে কিছু না চেয়ে বা না পেয়ে শুধু দিতে জানে।

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

স্নিগ্ধা এর ছবি

জীবনানন্দের গল্প এবং উপন্যাস কয়েকবারই চেষ্টা করেছি, কিছুতেই শেষ পর্যন্ত পৌছাতে পারিনি।

লেখাটা ভালো লাগলো।

রাফি এর ছবি

জীবনানন্দের গল্প এবং উপন্যাস কয়েকবারই চেষ্টা করেছি, কিছুতেই শেষ পর্যন্ত পৌছাতে পারিনি।

সময় করে আরো একবার চেষ্টা করে দেখুন; আমি নিশ্চিত রচনাগুলোকে আপনাকে ভাবাবে।

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

উদ্ধৃতি
নাকি এই কবিতাটি কবি তার একমাত্র জীবনসঙ্গিনীকেই উৎসর্গ করে গেছেন?

-প্রশ্নের পেছনে উত্তর আসার কথা। কিন্তু আমার মনে উদয় হলো একটি জিজ্ঞাসার। আর তা হলো- দাম্পত্য জীবনে কি কবি সুখী ছিলেন?

কোনো দুঃখবোধ থেকে কবিতা উৎসারিত হয় বলে মনে হয় না। বিশেষ করে ছাত্র জীবনে অনেকেই তুমুল কবিতা লেখে। সংসারজীবনে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে তার কাব্যপ্রতিভা অনেকাংশে মার খেয়ে যায়। কারো কারো তা আজীবন থেকে যায়। যেমন শাসুর রাহমান বৃদ্ধ বয়সেও কোনো যুবতীর প্রেমে পড়ে সেই অনুভূতি নিয়ে কবিতা লিখেছেন। (তসলিমা নাসরীন তাঁর লেখায় বলেছেন।)
তেমনি হেলাল হাফিজ তসলিমার কাছে চান্স না পেয়ে লিখেছেন- ‌বিড়াল পোষো, কুকুর পোষো"... ইত্যাদি ইত্যাদি।

তবে কবিতাই কেবল নয়, সাহিত্যের যে কোনো শাখার ক্ষেত্রেই মনের ভেতর একজন নিরবচ্ছিন্ন ভাবুক মানুষ থাকতে হবে। তার দুঃখ-আনন্দ মনে হয় প্রধান কথা নয়। সেই ভাবুকটিই লেখক বা কবিকে পরিচালিত করে। অনেক সুখী মানুষ কি কবিতা লিখতে পারে না? রবীন্দ্রনাথের প্রথমাবস্থায় কী এমন দুঃখবোধ ছিলো যে কারণে তিনি কবি হয়ে উঠলেন।?

সাহিত্য একটি নিরন্তর চর্চার বিষয়। আবেগনির্ভর কোনো কিছুই বেশিদিন স্থায়ী হয় না। যিনি যে বিষয়ে যত চর্চা করবেন তিনি অবশ্যই সে বিষয়ে তত দক্ষতা অর্জন করবেন। কথায় বলে না যে, বাজাতে বাজাতে বাইন, গাইতে গাইতে গাইতে গাইন! তেমনি যিনি শব্দ নিয়ে খেলতে পারেন, নানা ধরনের বাক্য তৈরীতে দক্ষ তিনিই একসময় কবি কিংবা সাহিত্যিকের জাতে উঠে যান।

মূল কথা আবেগটাকে যিনি নিজের ইচ্ছা মাফিক পরিচালিত করতে পারবেন তাঁর লেখায় ঠিক সেই ভাবটিই ফুটে উঠবে। এটি আমাকে দিয়েই কখনো টের পাই।
যেমন এই সচলায়তনে প্রকাশিত আমার লেখা (ক্ষুধা ও প্রেমের যুগল কান্না, নিক্কণ, নষ্ট সময়।) পুরোপুরি কাল্পনিক। আমার কিংবা কারো জীবনের সঙ্গে কোনো সাযুজ্য নেই। তবুও সেই লেখা দু'একজন পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে আমার আবেগটিকে ঠিক সেই পথেই পরিচালিত করতে চেষ্টা করেছিলাম।

তবে শানে নুযুল হিসেবে স্বীকার করতে বাধা নেই যে, ব্যক্তিগত যন্ত্রণা ও দুঃখবোধ-এর অভিজ্ঞতা যদি কিছুটা থাকে, তাহলে সাহিত্যচর্চার জন্য খুবই ভালো। যেমন আলবেয়ার কামু্, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। (তাঁদের যন্ত্রণা ছিলো আসন্ন মৃত্যু।

____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

রাফি এর ছবি

দাম্পত্য জীবনে কি কবি সুখী ছিলেন?

বেশিরভাগ বিশ্লেষক বলেন দাম্পত্য জীবনে কবি সুখী ছিলেন না। এ সম্পর্কে কবি বা কবিপত্নীর কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। আব্দুল মান্নান সৈয়দ কবিপত্নীর একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন; সেখানেও লাবণ্য দাশ এ প্রশ্ন সযত্নে এড়িয়ে গেছেন।

কোনো দুঃখবোধ থেকে কবিতা উৎসারিত হয় বলে মনে হয় না

আমার কাছে কিন্তু উলটো মনে হয়; দুঃখবোধ ছাড়া কোন সৃষ্টি শুদ্ধ হতে পারে না।

হেলাল হাফিজ তসলিমার কাছে চান্স না পেয়ে লিখেছেন- ‌বিড়াল পোষো, কুকুর পোষো"

হেলাল হাফিজের জীবনী আমার পড়া নেই; এই পয়েন্টটা আরেকটু পরিষ্কার করবেন কি?

এই সচলায়তনে প্রকাশিত আমার লেখা (ক্ষুধা ও প্রেমের যুগল কান্না, নিক্কণ, নষ্ট সময়।) পুরোপুরি কাল্পনিক। আমার কিংবা কারো জীবনের সঙ্গে কোনো সাযুজ্য নেই।

জুলিয়ান ভাই এটা কিন্তু বেশ বিস্ময়কর ব্যাপার; আবেগটিকে সম্পূর্ণ নিজের ভেতর ধারণ না করে সৃষ্টি সম্ভব নয়। এমন কি হতে পারে যে আপনার কাছে মনে হয়েছে আপনি অনুভূতিগুলোকে নিজের করতে ব্যর্থ হয়েছেন কিন্তু আসলে তা ঠিকই আপনার হৃদয় ছুঁয়ে গেছে?

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

হিমু এর ছবি

জীবনানন্দের দাম্পত্যজীবন সুখের ছিলো না। তাঁর স্ত্রী তাঁর তুলনায় অনেক সবলা ছিলেন, এবং জীবনানন্দের প্রতি তিনি খুব একটা বিশ্বস্ত ছিলেন, এমনটাও নয়। এমনকি জীবনানন্দকে নিয়ে প্রকাশ্যে লোকে এ প্রসঙ্গ তুলে হাসাহাসি করতো। তাঁর ট্রামচাপা পড়ে মৃত্যুর সাথেও অনেকে এই বিষয়কে একটা সরলরেখা টেনে যোগ করেন। এই দাম্পত্য অশান্তির ছাপ তাঁর উপন্যাস বা ছোটগল্পে পড়তে পারে।


হাঁটুপানির জলদস্যু

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

হিমু, আপনার বক্তব্য অস্বীকার করার জো নেই। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে ব্যক্তিগত সুখ-দুখের ছায়া অনেকের লেখার (বেশিরভাগই) ক্ষেত্রেই পরিস্ফুট হয়েছে। আর তা এতটাই উজ্জ্বল যে চিন্তা-ভাবনা করে আর বুঝে উঠবার সুযোগ থাকে না। যেমন মাহমুদুল হকের লেখায় জন্মভূমি ত্যাগের দুঃখবোধ, অচেনা পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার অসহায় প্রচেষ্টা।
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

রাফি এর ছবি

তাঁর স্ত্রী তাঁর তুলনায় অনেক সবলা ছিলেন, এবং জীবনানন্দের প্রতি তিনি খুব একটা বিশ্বস্ত ছিলেন, এমনটাও নয়।

লাবণ্য দাশ বড় বেশি সবলা ছিলেন সেটা আমিও পড়েছি; কিন্তু বিশ্বস্ততার ব্যাপারটা কি আরেকটু ব্যাখ্যা করবেন? জীবনানন্দের জীবন ও সৃষ্টি সম্পর্কে যে আমার কী পরিমাণ আগ্রহ তা বলে বোঝাতে পারব না; এই পয়েন্টটা নতুন মনে হচ্ছে আমার কাছে। তাই খোলাখুলি বললে উপকৃত হতাম।\

তাঁর ট্রামচাপা পড়ে মৃত্যুর সাথেও অনেকে এই বিষয়কে একটা সরলরেখা টেনে যোগ করেন।

এই বিষয়ে একটা পোস্ট দেওয়ার ইচ্ছে আছে; সেখানেই সব কথা বলব।

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

মনজুরাউল এর ছবি

জীবনানন্দকে নিয়ে মাসখানেক আগে আজফার হোসেন মহা বিতর্কীত একটা রিভিউ লিখেছে 'কালর খেয়া '(সমকালের সাহিত্য পাতা )তে।
পড়ে ভিমরি খেলাম । আপনারটা পড়ে টাসকি ! জীবনানন্দকে শুধু কবি চিহ্নিত করলে বোধকরি সবটা বলা হয় না ।

পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

রাফি এর ছবি

জীবনানন্দকে নিয়ে মাসখানেক আগে আজফার হোসেন মহা বিতর্কীত একটা রিভিউ লিখেছে 'কালর খেয়া '(সমকালের সাহিত্য পাতা )তে।

রিভিউ এর লিঙ্কটা কি দেয়া যায়? তাহলে অশেষ উপকৃত হতাম।

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

মনজুরাউল এর ছবি

http://www.shamokal.com/archive.details.php?nd=2008-06-06&nid=95103

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

.......................................................................................
আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে
চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর
তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা
হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

রাফি এর ছবি

ধন্যবাদ।

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

মাল্যবান এর ছবি

কবিতা, এবং বিশেষ করে, জীবনানন্দের কবিতা, ঠিক বোঝার জিনিস নয় বলেই মনে করি। আসল কথা তাঁর কবিতা পড়ে পাঠকের মনে কোন ভাব, কোন ছবি আসে কী-না।
আর "একবার নক্ষত্রের পানে চেয়ে- একবার বেদনার পানে চেয়ে" কবিতায় ভুল কী লিখেছেন কবি?

রাফি এর ছবি

"মাল্যবান" নামটাই বলে দিচ্ছে আপনি জীবনানন্দকে ধারণ করেন।

"একবার নক্ষত্রের পানে চেয়ে- একবার বেদনার পানে চেয়ে" কবিতায় ভুল কী লিখেছেন কবি?

কোন কবিই ভুল লিখতে পারেন না। জীবনানন্দও লিখেন নি। আমি শুধু বলতে চেয়েছি এই কবিতাটি জীবনানন্দের অপরাপর কবিতা থেকে প্রেমের প্রকাশ থেকে ভিন্ন।
মন দিয়ে পড়লে আশা করি আপনিও ধরতে পারবেন। সেই কষ্টটুকু করলে আবিষ্কারের আনন্দ পাবেন।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

শেখ জলিল এর ছবি

ধন্যবাদ জীবনানন্দ ভক্ত।
'আট বছর আগের একদিন' আমার প্রিয় কবিতা।

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

রাফি এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকেও.

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

মেঘা এর ছবি

প্রেমের ব্যর্থতা মানুষের মধ্যে একটা ভয়াবহ রকম হাহাকার তৈরী করে আর এই হাহাকার কেমন করে নিজের মধ্যে থেকে যাবে সেটার উপায় খুঁজতে অনেকেই লেখালেখির দিকে ঝুঁকে যায় এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। আমার নিজের ক্ষেত্রে আমি বলতে পারি আমার মধ্যে যখন ভীষণ রকম কোন বিষণ্ণতা কাজ করে তখন আমার লেখাগুলো অন্য রকম হয়ে যায়। মনে হয় যেন ঘোরের মধ্যে আছি। চোখের জলের সাথে মিশে একেকটা শব্দ লেখায় ফুটে উঠছে। বেদনা আমাকে ভীষণ স্পর্শ করে। আমার লেখার মধ্যে তাই অনেক বিষাদময়তা থাকে!

--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।