দুটি অণু সায়েন্স ফিকশন-৩

নিলয় নন্দী এর ছবি
লিখেছেন নিলয় নন্দী [অতিথি] (তারিখ: মঙ্গল, ২৭/০৩/২০১২ - ৪:৪৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পুতুল

২০১৬ খ্রীষ্টাব্দ । ব্রিটিশ মিউজিয়াম।
‘এইটা কী বাবা?’ পাথরের মূর্তিটাকে দেখাল বিলি।
‘মিশরের পুতুল বাবা,’ বিলির বাবা হাসলেন, ‘কত রকমের খেয়াল ছিল ওদের। যা খুশি লিখে রেখেছে দেখ পুতুলের গায়ে।’
‘কী লিখেছে বাবা?’
‘কী আর লিখবে? কেবল সভ্য হয়েছে লোকগুলো! লিখতে শিখেছে এটাই তো বেশি! চল এখানে সময় নষ্ট করে আর লাভ নেই।’

৩০১৯ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দ। মিশর।
বাবার তৈরি পাথরের মূর্তিটা দেখছে দশ বছরের এসকাজেল। মূর্তিটা শেষ করতে আর কিছুক্ষণ বাকি। বাবা খুব মনোযোগ দিয়ে মূর্তির গায়ে ক্ষুদে ক্ষুদে অক্ষর বসাচ্ছে।
‘কী লিখছ বাবা?’
‘আমাদের সব কথাই লিখছি রে বাবা। আমাদের যত জ্ঞান বিজ্ঞানের কথা। আমাদের অর্জনের কথা। ব্যাটারি থেকে ইঞ্জিন সব কথাই এখানে লিখে রাখছি।’
‘কী হবে তাতে?’
‘ভবিষ্যতে যদি আমাদের সভ্যতা ধবংসও হয়ে যায় এসকাজেল, তবু মানুষ এই লেখা থেকে সব খুঁজে নিতে পারবে। আমাদের জ্ঞান একদিন তাদের কাজে লাগবে।’
‘ওরা কি বুঝতে পারবে তোমার লেখা?’
‘বোকা ছেলে! না পারার কী আছে? ভবিষ্যতের ওরা কি আমাদের চেয়ে বোকা মানুষ হবে নাকি?’
নিজের বোকামীতে লজ্জা পেল এসকাজেল। আর কিছু বলল না।

শূন্য

‘রফিক, আপনি কি আমার কথা শুনতে পারছেন?’
‘হ্যাঁ, ফারজানা। আমি আপনাকে শুনতে পারছি।’
‘রফিক, প্রফেসর জ্যামশেদ মওলার সংবাদ সম্মেলনের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে আমরা জানতে চাইছি।’
‘আমরা দেখতে পারছি প্রফেসর মওলা তাঁর খোলা মঞ্চে দাঁড়িয়ে আছেন।’ রফিক সুজন তাঁর মাইক্রোফোনটা বাম হাতে নিলেন। ‘তিনি ঢাকা শহরের ট্রাফিক জ্যামের যুগান্তকারী সমাধান ফ্লাইং বেল্ট উদ্ভাবন করেছেন বলে দাবী করেছেন। আমরা এখন তাঁর কথা শুনব।’
‘ঢাকা শহরের এই জ্যাম আমার মনে এক অসীম শূন্যতার সৃস্টি করেছিল।’ প্রফেসর মওলা বলে চলেছেন, ‘শূন্য থেকে আসে মানূষ শূন্যে যায় চলে। কী করা যায়? ভাবতে ভাবতে আমি রকেট সায়েন্সের সফল ব্যবহারের কথা ভাবলাম। এবং-,’ তিনি তার হাতের ধাতব বেল্টটা সামনে তুলে ধরলেন, ‘আমি উদ্ভাবন করলাম জ্যাম’স ফ্লাইং বেল্ট। পরবেন তো উড়বেন।’
‘আপনি কি এর আগে এই বেল্ট পরে উড়েছেন?’ জানতে চাইলেন এক টিভি সাংবাদিক।
‘না, কোন প্রয়োজন দেখি নি। একশ ভাগ নিখুঁত এই বেল্ট আজই প্রথম আমাকে নিয়ে উড়বে। মানব জাতির এই অনন্য অভিজ্ঞতার কথা সারা পৃথিবী একসাথে প্রথমবারের মতো দেখবে। সাইদুল, বেল্ট লাগাও।’
সহকারী সাইদুল ‘জ্বী ছার’ বলে এগিয়ে এসে প্রফেসর মওলার কোমরে বেল্ট বেঁধে দিল। বেল্টের সুইচে চাপ দিতেই অদ্ভুত এক ধরনের শব্দ হতে লাগল বেল্ট ঘিরে। হঠাৎ জোরালো একটা বিস্ফোরণের শব্দ হলো মূল মঞ্চের বাইরে। চারদিক ধোঁয়ায় ঢেকে গেছে। সবাই তাকিয়ে দেখল প্রফেসর নেই। ‘সাইদুল সাহেব, উনি কোথায়?’ জানতে চাইলেন রফিক।
‘গেছে গা। ওই যে!’ সাইদুল মাথার ওপরে আঙ্গুল তুলল। আকাশে একটা সাদা বিন্দু ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে।
‘উনি নামবেন কখন?’
‘নামবেন…মানে...উনি?’ সাইদুল হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। ‘সারছে কাম! নামনের কোন সুইচ তো ছার বানায় নাই। খালি উড়নের সুইচ বানাইছে!’
রফিক সুজন তাঁর মাইক্রোফোনটা মুখের সামনে নিয়ে এলেন, কিন্তু কী বলবেন ভেবে পেলেন না। অবশেষে বললেন,‘ফারজানা,এই ছিল এখানকার সর্বশেষ অবস্থা।’


মন্তব্য

তারেক অণু এর ছবি

১ম টা বেশী ভালো লাগলো, শব্দচয়ন আরেকটু ধারালো হতে পারত কিন্তু মূল থীম চমৎকার।

নিলয় নন্দী এর ছবি

( ইমো আসছে না কেন?)
যে লেখাগুলো সংলাপপ্রধান সেগুলোকে ঠিক শব্দচয়ন দিয়ে মাপতে চাই না। তবু ভাল লাগা বা না লাগার বিষয়টা আপনাদেরই হাতে।

চরম উদাস এর ছবি

হো হো হো
চলুক
ভালো লাগলো দুটাই

নিলয় নন্দী এর ছবি

গুরু গুরু
আপনার how to সিরিজে সায়েন্স ফিকশন লেখার কিছু তরিকা বাতলান দাদা। চোখ টিপি

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

প্রথমটা চমৎকার।
পরেরটা ভালো লাগেনি। যে ফ্লাইং বেল্ট বানাতে পারে, সে এইরকম ভুল করতে পারে না। হাসি

আপনার আগের লেখাগুলোর লিঙ্কগুলো সচলে মেইল করে দিয়ে অনুরোধ করুন, আপনার লেখা'র তালিকায় সেগুলো যোগ করে দেবেন মডুরা। হয়ত একটু সময় লাগবে। কিন্তু দেবেন। হাসি

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

নিলয় নন্দী এর ছবি

অ্যাঁ অথচ ব্যক্তিগত দৃষ্টিকোন থেকে আমার দ্বিতীয় গল্পটা বেশি পছন্দ। অনেকটা এ্যাবসার্ড টোন থেকে লেখা।
গুরু গুরু পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ।

সত্যপীর এর ছবি

প্রথমে অভিনন্দন। পরে অন্য কথা হাততালি

পুতুল গল্পটা চরম।

..................................................................
#Banshibir.

নিলয় নন্দী এর ছবি

চরম অ্যাঁ ? কেমনে কী! গল্পটা লিখতে আমাকে একটুও ভাবতে হয় নি!
লেখক আর পাঠকের পছন্দের মধ্যে কিছু গরমিল থাকবে এটাও স্বাভাবিক।
আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

দুটোই চমৎকার।
হাচলত্বে স্বাগতম।

নিলয় নন্দী এর ছবি

লইজ্জা লাগে

অরফিয়াস এর ছবি

ভালো, লিখতে থাকুন।

হাচলত্বে অভিনন্দন।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

নিলয় নন্দী এর ছবি

লিখতে থাকি। ভোর তো হবেই।
গুরু গুরু

কুমার এর ছবি

ভালো হয়েছে দুটোই।
সাথে অভিনন্দন।

নিলয় নন্দী এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

তাপস শর্মা এর ছবি

ভালো লাগলো। দুটোই। জারি থাকুক গল্পের সফর। চলুক

পাশাপাশি হাচলত্বের অভিনন্দন। হাসি

বুনান এর ছবি

প্রথম টা ত দারুন ঃ)

রণদীপম বসু এর ছবি

দূর ভাই ! হাচল হয়েই প্রফেসরকে উড়িয়ে দিলেন ! আপনি মানুষ তো সুবিধার নয় দেখছি ! হা হা হা !!

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

নিলয় নন্দী এর ছবি

এমন উড়ন ছুঃ গল্প লিখলাম, আপনারা পছন্দই করলেন না। খাইছে
আর যেটাকে খেলার 'পুতুল' জ্ঞান করলাম সেটাই ভাল লেগে গেল! দেঁতো হাসি
কি জানি ভাই, আপনাদের পছন্দেরও বলিহারী বটে!

পথিক পরাণ এর ছবি

চমৎকার। সিরিজ চলুক।

তানিম এহসান এর ছবি

ভালো লাগলো দুটোই হাসি

রামগরুড় এর ছবি

প্রথমটা চরম হইছে, পরেরটা কিছুই বুঝলাম না, চালায়ে যান!

নিলয় নন্দী এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

নিলয় নন্দী এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

নিলয় নন্দী এর ছবি

একই ইমো ৩/৪ বার চলে আসছে। মোছার উপায় কী জানা নেই। ইয়ে, মানে...
আমি খুব দুঃখিত।

নিলয় নন্দী এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

খুবই ভালো লাগল। চালিয়ে যান।

নিলয় নন্দী এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

উত্তম জাঝা! চলুক

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

কাজি মামুন এর ছবি

প্রথমেই 'হাচল' হওয়ার জন্য অভিনন্দন।
আপনার দুটো অণু গল্পই ভাল লেগেছে। দ্বিতীয় গল্পটি আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে। আমাদের রাষ্ট্র-যন্ত্রের অন্তসারশুন্যত, যা মহাশূন্যের মতই অনন্ত ও অসীম, তাকে রূপকাচ্ছলে যেভাবে ছোট্র কলেবরে তুলে ধরলেন, তা সত্যি প্রশংসার দাবী রাখে। আমাদের সমাজে এমন অপরিণামদর্শী কুশলীর কিন্তু অভাব নেই, যারা ভোজবাজি দেখিয়ে বাহবা কুড়ানোর পায়তারা করে নিজেরা তো ফাঁসেই, সঙ্গে জাতিকেও বিপদগ্রস্ত করে।
ভাল থাকবেন।

নিলয় নন্দী এর ছবি

এতক্ষণে ইয়েস বাঘ মামা, ইয়েস!!!

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

প্রথমটি অসাধারণ, দ্বিতীয়টিও বেশ!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

নিলয় নন্দী এর ছবি

আমি কাজি মামুনের সাথে শতভাগ সহমত নই। তবে তিনি মূল আইডিয়াটা ধরতে পেরেছেন।
ঠিক আছে, এক্সপেরিমেন্ট চলবে। আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

নীড় সন্ধানী এর ছবি

প্রথমটা সেইরকম লেগেছে গুল্লি
হাচলত্বের অভিনন্দন আপনাকে (গুড়)

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

নিলয় নন্দী এর ছবি

থ্যাঙ্কু্ ! চাল্লু

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

পুতুল-টাই বেশি ভালো লেগেছে।
অনেক ভালো। হাসি

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

নিলয় নন্দী এর ছবি

আপনাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। হাসি

মর্ম এর ছবি

প্রথমটা চমৎকার লাগল।

নিয়মিত লিখুন! চলুক

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

তদানিন্তন পাঁঠা এর ছবি

দুটোই ভাল। তবে ২য়টা একটু হালকা টাইপ, অনেকটা যেন সফদর আলী। ১মটায় ৫ হলে ২য়টায় ৩। হাততালি

নিলয় নন্দী এর ছবি

ওটা সফদর আলীর চাদরেই লিখেছি পাঁঠাদা, ভিতরে কিছু সারবস্তু দিয়েছিলাম যেটা পাত্তাই পেল না। ইয়ে, মানে...
নিজের লেখা বুঝিয়ে বলতে গেলে পাঠক কিন্তু সেই লেখকের কাছ থেকেই মুখ ফিরিয়ে নেয়। অন্তত পাঠক হিসেবে আমি নিজে তা-ই করি।
একটা যে আপনার ভাল লেগেছে এটাই অনেক। অণু ৪-এ সব পুষিয়ে দেব আশা করি। আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

নিটোল এর ছবি

প্রথমটা দারুণ। লেখা চলুক।

_________________
[খোমাখাতা]

কল্যাণ এর ছবি

চলুক
হো হো হো ২ নাম্বারটা বেশি ভালা

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

অন্ত আফ্রাদ এর ছবি

কেমতে মাতায় আহে এগুলান দাদা!
অসাধারণ! চলুক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।