দুটি অণু সায়েন্স ফিকশন-৬

নিলয় নন্দী এর ছবি
লিখেছেন নিলয় নন্দী [অতিথি] (তারিখ: শুক্র, ২২/১১/২০১৩ - ১০:৩৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পৃথিবী

প্রতি বছর আমার জন্মদিনে আমাকে নতুন মাইক্রোচিপ দেয়া হয়। এটা আমার বড় হয়ে ওঠার নিদর্শন। প্রতি তিন বছরে আমি নতুন শরীর পাই। আগেরবারের চেয়ে কয়েক ইঞ্চি বড়। মানুষ নাকি নিজে থেকেই বেড়ে ওঠে! কী অদ্ভুত ব্যাপার! আমার আগের মাইক্রোচিপের প্রোগ্রামে অবাক হওয়ার ব্যাপারটা ছিল না, এ বছর নতুন করে এই অনুভূতি পেয়েছি। এই জন্মদিনে স্কুলের প্রিন্সিপাল হাসিমুখে আমাকে শুভেচ্ছা জানালেন- ‘শুভ জন্মদিন আর-জি ৩৯৮!’ আমার বাবা-মাকে অবশ্য অন্যভাবে প্রোগ্রাম করা আছে। তারা আমাকে কখনো আর-জি ৩৯৮ বলে ডাকে না। আমাকে তারা ডাকে রবি বলে।
তোমাকে আমি জানাতে চাই, এখানে আর হানাহানি নেই। মানুষই নেই লড়াই হবে কার সাথে? আবারও সবুজ গাছে ভরে গেছে রুক্ষ প্রান্তর। নদীতে আবার এসেছে মিষ্টি পানি। বাতাসে আর আগের মতো বিষ নেই।
পৃথিবী থেকে একশ ছয় আলোকবর্ষ দূরে বসে তুমি এই বার্তা পড়ছ রজন। মানুষ নেই, তবু মানুষের ছায়া হয়ে আমরাই থেকে গেছি পৃথিবীতে। তাঁদের হয়ে আমরা হাসি, কাঁদি, খেলি, গান গাই।
একবারও কি ইচ্ছে করে না তোমাদের জন্ম-গ্রহ পৃথিবীতে ফিরে আসতে? যে গ্রহে গাছ নেই, নদী নেই, বাতাস নেই তেমন একটা গ্রহে তোমরা কাচে ঢাকা জীবন নিয়ে কীভাবে পড়ে আছ? আমি আমার নতুন পাওয়া অনুভূতি দিয়ে ভাবি আর শুধু অবাক হই!
ফিরে এসো রজন। আমরা আছি তোমাদের অপেক্ষায়।

বাঁশি

অদ্ভুত সুন্দর একটা নীলচে-সবুজ গ্রহের ওপর ভাসছে আমাদের মহাকাশযান। আমাদের কালচে রঙা গ্রহের সাথে এর কোন মিল নেই। কমান্ডার ইন চিফকে দেখলাম মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছেন পৃথিবীর ছবি ফুটে ওঠা ত্রিমাত্রিক পর্দার দিকে। ‘এই গ্রহের প্রধান বুদ্ধিমান প্রাণীদের সাথে আমাদের খুব বেশি পার্থক্য নেই, জানো?’ তিনি হাসলেন আমার দিকে তাকিয়ে, ‘আমাদের ল্যাবরেটরীর জন্য প্রায় হাজারখানেক নমুনা সংগ্রহ করতে হবে। পারবে তো তুমি?’
‘পারব স্যার!’ আমি মাথা নাড়লাম।
‘এদেরকে তুলে আনতে হলে তোমার বিশেষ যন্ত্রের প্রয়োজন হবে। এটা রাখো।’ একটা লম্বাটে যন্ত্র এগিয়ে দিলেন তিনি আমার দিকে। ‘এটা এক ধরণের শব্দ সঞ্চালক। ব্যবহারটা শিখে নিও।’
‘স্যার, আর কিছু লাগবে কি?’
‘চাইলে তোমার পছন্দমতো অন্য কিছুর নমুনাও আনতে পারো। যতদূর জানি পৃথিবীর মানুষ ল্যাবরেটরীতে পরীক্ষার জন্য ইঁদুর বলে একটা প্রাণীকে কাটাছেঁড়া করে। তার কিছু নমুনাও আনতে পারো কিনা দেখ। দেখছি এই অঞ্চলে এই প্রাণীর প্রাচুর্য রয়েছে।’ কমান্ডার ইন চিফ পর্দায় বড় করে একটা ম্যাপ তুলে আনলেন।
‘স্যার, এই জায়গার নাম কী?’
‘পৃথিবীর মানুষ এটাকে বলে জার্মানী।’ কমান্ডার ইন চিফ পর্দাটা আরেকবার দেখে নিয়ে তাকালেন আমার দিকে,‘শহরের নাম হচ্ছে হ্যামেলিন।’


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

বেশি একটা সুবিধার হয় নাই, আইডিয়াগুলা কেমন জানি নকল নকল মনে হইল।

নিলয় নন্দী এর ছবি

কন কী ভাই? ইয়ে, মানে...
আপনি যদি আমার লেখার পুরানা পাঠক হন, তো মতামত শিরোধার্য!
আমার অন্যান্য লেখাগুলান একটু পইড়া দেখেন তো…?

সত্যপীর এর ছবি

দুই নম্বরে "কছ্কি মমিন?!".

(আবেগঘন তুইতোকারি)

..................................................................
#Banshibir.

নিলয় নন্দী এর ছবি

আপত্তির কী আছে?
আমরা আমরাই তো দেঁতো হাসি

শিশিরকণা এর ছবি

দুই নম্বর টার কাছাকাছি আইডিয়ার একটা সায়েন্স ফিকশন পড়েছিলাম। সেটা অবশ্য অণু ছিল না, তাই বাশিওয়ালা তার স্পেসশিপ নিয়ে একটা গ্রহে ক্র্যাশ ল্যান্ড করে। আর বাচ্চা কাচ্চা গুলো সেখানেই একটা নতুন সভ্যতা গড়ে তোলে। অনেক বছর পরে আরেকটা স্পেস শিপ এক গ্রহে প্রাণের লক্ষণ খুজতে গিয়ে এদের পায় এবং দুই দুই এ চার মিলায়।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

নিলয় নন্দী এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
কার লেখা কী গল্প, বলতে পারবেন?

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

আ ডিসট্যান্ট শ্রাইন। অসাধারণ একটা সাইন্স ফিকশন। শিশিরকণাপু, সুন্দর একটা আইডিয়া দিয়েছেন। দেখি, সময় পেলে অনুবাদ/রূপান্তর করতে বসবো।

____________________________

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

প্রিয়বরেষু নিলয় দাদা,
বৎসরাধিক কাল যাবৎ হরি পন্ডিতের ন্যায় গল্প পড়িব বলিয়া আপনার লেখনী দেখিলেই পড়িতে আসি। কিন্তু অতীব মনস্তাপের সহিত দেখিতেছি উক্ত গল্পের ন্যায় গল্পের কোন আগমন ঘটিতেছে না। আপনি কি ঐ মাকড়াদিগের সহিত গল্পের এই ধারাটিকেও তিন হাত মাটির নিচে পুঁতিয়া ফেলিয়াছেন?

পত্রপাঠ উত্তর প্রদান করিয়া অধমকে কৃতার্থ করিতে দাদার মর্জি হউক।

____________________________

নিলয় নন্দী এর ছবি

প্রিয় প্রফেসর,
পাঠককুলের নিদারুণ অনুগ্রহ প্রাপ্তির পরেও হতভাগা লেখকের কেন কোনরূপ চিত্তচাঞ্চল্য দেখা গেল না, এ ব্যাপারে গোটা তিনেক যুক্তি দাঁড় করানো গিয়াছে।
১। কলম ধরিবার ক্ষেত্রে ব্যাপক অলসতা।
২। পাঠকের চাহিদামাফিক গল্প সরবরাহ না করিতে পারিবার ভীতি ইয়ে, মানে...
৩। পাছে কোন গল্প 'হরিপন্ডিতের' ছায়া হইয়া ওই গল্পটিকেই না কলুষিত করে তাই মুক্তকচ্ছ পলায়নপরনীতি !!

আগামী পর্বে লেখক নিজ হস্তে খড়ম লইবার প্রতিজ্ঞা করিয়াছেন।
"এইবার দেখে নেব তারে !"

এক লহমা এর ছবি

দুটোই ভালো হয়েছে। এই সাথে আপনার আগের অণুগল্পগুলোও পড়ে এলাম, যে কটার লিঙ্ক পেলাম। সব কটা খুব উপভোগ করেছি। পরের পর্বের জন্য বসে রইলাম।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

নিলয় নন্দী এর ছবি

ধন্যবাদ লেখা -গুড়- হয়েছে
পরের পর্ব আসছে।

মেঘলা মানুষ এর ছবি

ভাল লাগলো।
আরও অণু ফিকশান চাই সামনে।

শুভেচ্ছা হাসি

নিলয় নন্দী এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
শিঘ্রীই আসছে।

চরম উদাস এর ছবি

দ্বিতীয়টা জটিল লাগলো

নিলয় নন্দী এর ছবি

গুরু গুরু জ্বী বস !

নীড় সন্ধানী এর ছবি

সত্যি বলতে কি আপনার আগেরগুলো এত ভালো ছিল যে এই দুটোকে একটু ম্রিয়মান লাগছে। হাসি

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

নিলয় নন্দী এর ছবি

গুড হাসি
পরের বার ঠিক হয়ে যাবে।
আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

চলুক

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নিলয় নন্দী এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

শাব্দিক এর ছবি

বাঁশি গল্পটা মজার হইসে। তবে সাইন্সফিকশান ছাড়া আপনার অন্য লেখাগুলি আমার বেশি লাগে।

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

নিলয় নন্দী এর ছবি

গুল্লি
ভাই বুকে আসেন, এই প্রথম কেউ আমার লেখা সম্পর্কে এই কথা বলল।

নিলয় নন্দী এর ছবি

@শাব্দিক, একটা কিশোর উপন্যাসের বুনোট নিয়ে ব্যস্ত আছি।
তার মধ্যে দুটো অণুগল্প লিখে আপনাদের হাতে দিলাম।
আশা করছি ভালো কিছুই পাবেন।

শাব্দিক এর ছবি

কিশোর উপন্যাস ভাল পাই। আমরাও আশা করছি। আপনার লেখা প্রথম থেকেই পড়ছি। ভাল লাগে বেশ আপনার লেখার স্টাইল।

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

অনেকদিন পর আপনার লেখা দেখে সায়েন্স ফিকশন পড়তে ঢুকলাম। হতাশ হলাম না। একনম্বরটা ভালো লাগেনি। দুইনম্বরটা মারাত্মক। চলুক

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

নিলয় নন্দী এর ছবি

হ্যাঁ, প্রথমটা একটু সাদামাটাভাবেই লেখা। আসলে প্রতিটা গল্পের শেষে
একটা টুইস্ট বা পাঞ্চ লাইন দিতেই হবে
এই ধারণা থেকে একটু সরে আসতে চাইছিলাম।
আর সায়েন্স ফিকশনে apocalyptic future (বিধ্বস্ত-বিপর্যস্ত ভবিষ্যৎ)
খুব প্রচলিত একটা ধারা। এ নিয়ে অনেক গল্প-উপন্যাস-ছবি আছে।

ধন্যবাদ হাসি সঙ্গে থাকুন।

অতিথি লেখক এর ছবি

দুটোই ভালো লাগলো। আপনার আগের লেখাগুলো পড়া হয়নি, যাই পড়ে আসি।

-এস এম নিয়াজ মাওলা

নিলয় নন্দী এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
এই দুটো লেখা বাম দিকের কলামে দেখছি না। লিঙ্ক দিয়ে দিলাম
দুটি অণু সায়েন্স ফিকশন-১
দুটি অণু সায়েন্স ফিকশন-২

অতিথি লেখক এর ছবি

বাঁশি অসাধারণ হয়েছে। আমি সচলের নতুন পাঠক, অধিকাংশের লেখা আগে পড়া হয়নি। আপনার পুরনো লেখাগুলো দ্রুত পড়ে ফেলতে হবে মনে হচ্ছে।

শব্দ পথিক
নভেম্বর ২৫, ২০১৩

তীরন্দাজ এর ছবি

হ্যামিলন নিয়ে দুই নম্বর গল্পটি বেশ ভালো লেগেছে। শহরটি আমার বেশ পরিচিত। অফিসের কাজে তিন মাস ওখানে ছিলাম।

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

অতিথি লেখক এর ছবি

দুনম্বরটা ভাল লেগেছে, যদিও সে সময়ে কি মানুষ ইঁদুর কাঁটাছেড়া করতো ?

-সো।

নিলয় নন্দী এর ছবি

চমৎকার ধরেছেন তো !
আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।