জিলাপীর প্যাচ

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ২২/০৮/২০১১ - ১০:৪৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ছোটবেলায় আমি রোজা রাখতাম বা রাখার চেষ্টা করতাম দুটি কারণে। বেগুনী আর জিলাপী খাবার জন্য। আমাদের ছোটবেলায় চিটাগং এ যে জিলাপী পাওয়া যেত তা হল কমলা রং এর ছোট ছোট কিছু বস্তু। আসল মজার জিলাপী প্রথম খাই ঢাকার গাউসিয়ায় নয়/দশ বছর বয়সে। তারপর চট্টগ্রামের জিইসির মোড়ের সেন্ট্রাল প্লাজায় এক জিলাপীর দোকান খুলে যে দোকানের নিয়মিত আনাগোনা ছিল আমি আর আমার বন্ধুদের। একটা নিয়মই ছিল প্রায় প্রতিদিন বিকালে একটা উদ্দেশ্যহীন রিক্সা টুর, শেষ গন্তব্য জিইসি, টাকা পয়সার হিসাব করে ফুচকা তারপর ঝালে কাদতে কাদতে জিলাপী। অনেক সময় টাকার টানাটানি থাকলে ৪ জন মিলে একটা জিলাপী ভাগ করে খাওয়া। আহ কি সব দিনই না ছিল…………………
তারপর ঢাকায় চাকরি আর সংসার শুরু করার পর আমার জিলাপী খাওয়ার ঠেক হয় জয়পুর মিষ্টান্ন ভান্ডারের বাচ্চা জিলাপী। এরপর তো চলে আসি মরার দেশ কানাডায়। প্রথম একবছরের জরিপে দেখলাম সব পাওয়া যায় এই দেশে। বলাবাহুল্য, জিলাপীও পাওয়া যায় ইন্ডিয়ান, বাংলাদেশী, পাকিস্তানী আর আফগানি দোকানে। খেতেও খারাপনা। তবে চোখের সামনে কড়াইয়ে ভাজা ফ্রেশ জিলাপী আবার বাংলাদেশ এ গেলেই খাওয়া হবে এই সান্তনা নিয়েই দিন কাটাচ্ছিলাম ভালই কষ্টে।
এই কষ্টের দিনে একদিন পাশের বাসা থেকে ইফতারি এল। থালায় অন্য পদের সাথে দেখি চারখানা জিলাপী!!!!!!! খেতে গিয়ে দেখি এখনো গরম আর মুচমুচে। কোনরকমে ইফতারি খেয়েই চলে গেলাম ভাবীর কাছে। কোথায় পাওয়া যায় এই জিনিস জানতে।
ওমা আমাকে অবাক করে দিয়ে ভাবী বললেন উনি নাকি নিজেই বানান। সারাজীবন শুনে এসেছি জিলাপী বানানোর জন্য ইস্পিসাল কারিগর লাগে। কারো বাসায় যে বানানো যায় আমার ধারণাতেই ছিলনা। ধন্য প্রবাসী বাংগালী রমণী। এরা সবই পারেন দেখি…। যাইহোক, ভাবীর কাছ থেকে রেসিপি নিলাম।
রেসিপিটা এই রকম- এককাপ ময়দা, আধা কাপ চালের গুড়ো (ইন্ডিয়ান/বাংলাদেশী/ চাইনিজ দোকানে পাওয়া যায়…আমাদের এইখানে Bulk Barn বলে একটা দোকান আছে ওখানেও পাওয়া যায় ), একচামচ ইস্ট, এক চিমটি বেকিং পাউডার, একটু জরদা রং বা ফুড কালার মিশিয়ে একদম অল্প luke warm পানি মিশিয়ে একটা শক্ত মন্ড বানাতে হবে। মন্ডটা শক্ত হবে কারণ পরে ফুলে গেলে অনেকটা তরল হয়ে যাবে ।
এইভাবে একদিন রেখে দেবার পর যদি দেখা যায় মন্ডটি থেকে একটু জিলাপী জিলাপী গন্ধ আসছে তা হলে জিলাপী বানানোর জন্য মন্ডটা প্রস্তত। আরেকটা ব্যাপার দেখতে হবে তা হল জিলাপীর কারিগরা মন্ডটা একটা কাপড়ে বেধে তারপর হাত ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে তেলে ছাড়ে। বানানো মন্ডটা ততটুকু তরল হয়েছে কিনা দেখতে হবে। যদি না হয়, তা হলে একটু room temperature এর পানি মিশাতে হবে। পুরো ব্যাপারটি depend করছে আপনি কতটুকু ভাল ভাবে একজন কারিগরকে জিলাপী বানাতে দেখেছেন তার উপর।
তেলে জিলাপী ছাড়ার আগে চিনির সিরা বানিয়ে রাখতে হবে। সিরাটা মধুর মত ঘন হবে। মানে পানি আর চিনির অনুপাত এমন হবে যেন তা ঘন মধুর মত হয়। তারপর তেল কড়া গরম করে নিয়ে তারপর আচ কমিয়ে জিলাপী ছাড়তে হবে। জিলাপি ছাড়ার জন্য সবচাইতে কাজের বস্ত হল HIENZ এর পুরানো সস এর বোতল। হাতের উপর পুরো কন্ট্রোল থাকে সসের বোতলে জিলাপীর মিশ্রণটি ভরে ঢাললে। এরপর মাঝারী আচে মুচমুচে ভাজা হলে তুলে সিরায় দিতে হবে। ব্যাস রেডী…।

ডিসক্লেমারঃ আমি কিন্তু জীবনেও জিলাপী বানাইনি। তাই কেও এই রেসিপি ফলো করে জিলাপী বানিয়ে ধরা খেলে আমার দোষ নাই। আমি পাশের বাসার ভাবীকে ডেকে দেব। যা বলার উনাকে বলবেন।
আর রিস্ক না নিতে চাইলে দেখুন:
http://www.manjulaskitchen.com/2007/04/02/jalebi-sweet/

জিলাপীর ছবিঃ http://wwle.com/imgres?q=jilapi&um=1&hl=en&sa=N&tbm=isch&tbnid=Z2bnXcMxJ4dljM:&imgrefurlw.goog retrived Aug 21, 2011

ছবি: 
24/08/2007 - 2:03am

মন্তব্য

ফাহিম হাসান এর ছবি

heinz এর বোতলের কথা পড়ে গড়াগড়ি দিয়া হাসি রোজার মধ্যেই ট্রাই করে দেখতে হবে।

হে জিলাপেশ্বরী, নাম দিলেন না যে? দিফিও আপা বলে সন্দেহ করি

রুমঝুমা এর ছবি

এর পরের বার নাম ছাড়া পোষ্ট দিবনা আর। তবে ভুয়া রেসিপি দিয়ে পাবলিকের মাইরের হাত থেকে বাচার জন্য উত্তম নাম ছাড়া পোষ্ট। ট্রাই করলে রেজাল্ট জানাবেন।

আশালতা এর ছবি

জিলাপি বানাবার বেশ কয়েকটা তরিকা আছে। আমি জানি দেঁতো হাসি এখানে যারা বানায় তারা বেশিরভাগই কেমিকেল মিশিয়ে সাথে সাথেই বানায়। আপনার পোস্ট পড়ে মনে হচ্ছে একটা রেসিপি পোস্ট দিয়ে দিই। তাও দশের কাজে লাগবে। হাসি

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

রুমঝুমা এর ছবি

প্লিজ দেন। আমার ট্রাই করা হবেনা জানি। কিন্তু অনেকের উপকার হবে।

অপছন্দনীয় এর ছবি

ঠাম্মি, একটু কয়দিন পরে দিলে হয় না?

দাঁত ব্যথায় টিকতে না পেরে ডাক্তারের কাছে গেছিলাম। একহাতে নাকি দাঁত তুলবে আর আরেকহাতে কুচ কুচ করে পকেট কাটবে। অর্ধেকটার এস্টিমেট দিয়েছে, বাকি অর্ধেকটাও দিতে যাচ্ছিলো কিন্তু আমি বললাম "আমার হার্ট দুর্বল" তাই আর দেয়নি মন খারাপ - তবে ঘুম খাওয়া সব কেড়ে নেয়ার জন্য ওই অর্ধেকটার অর্ধেকটাই যথেষ্ট!

তাই বলছিলাম আর কি, নাদান নাতিপুতিদের দাঁতে, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে আর হার্টে ব্যথা তো একসাথেই শুরুই হয়ে গেছে - মনে ব্যথাটা কি একটু পরে দিলে হয় না?

অতিথি অন্যকেউ এর ছবি

"একহাতে নাকি দাঁত তুলবে আর আরেকহাতে কুচ কুচ করে পকেট কাটবে।" হো হো হো হো হো হো

রুমঝুমা এর ছবি

আমাদের ক্লাসের এক ভারতীয় মেয়ের দাঁতে একটা অস্ত্রপ্রচার করার দরকার। সে হিসাব করে দেখলো পুরো সামার ক্লাস না নিয়ে কাজ করলে ওর যে টাকা হবে তা দিয়ে সে ভারতের আপ-ডাঊন প্লেন ভাড়া দিয়ে দাঁতের ট্রিটমেন্ট করে আসতে পারবে। আর এইখানে দাঁতের ট্রিটমেন্ট করালে ওর বাকিসময় না খেয়ে থাকতে হবে। বুঝেন অবস্থা। তাই এইভাবে হাসবেন না। তা হলে দাঁত কিন্তু আপনাকেও ভোগাবে............।। দেঁতো হাসি

ahasnat এর ছবি

জিলাপী খাইতে মুঞ্চায়

এ হাসনাত

রুমঝুমা এর ছবি

হাসি

নিটোল(অতিথি) এর ছবি

আহা! জিলাপী আমার অতি প্রিয়। শুধু খাদ্য হিসেবেই নয়, আমার অর্থনৈতিক অবস্থা পুনরুদ্ধারের কাজও করছে এই জিলাপী। কীভাবে? এই রমজানে আমাকে প্রতিদিনই জিলাপী আনতে দোকানে পাঠানো হয়। আর সেখান থেকে কামাই হওয়া টু-পাইস দিয়ে আমার ভালো ত চলছে!!

রুমঝুমা এর ছবি

হাসি

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

ওই আড়াই প্যাঁচ আমার কম্মো নয়।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

রুমঝুমা এর ছবি

আমাদের দুই নেত্রী ভাল জিলাপী বানাতে পারবেন মনে হয়।এইটা সহজ সরল মানুষের জন্য কঠিন।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

মরার দেশ কানাডায় কিন্তু থেকে-খেয়ে শান্তি আছে। কী বলেন?

রুমঝুমা এর ছবি

হাসি

আয়নামতি এর ছবি

ছবির জিলাপী গুলো কী আপনার বানানো? দেখতে দারুণ লোভনীয় হয়েছে কিন্তু! দারুণ নাম দিয়েছেন তো ফাহিম, জিলাপেশ্বরী হো হো হো হো হো হো হো হো হো
আশাদি জিলাপীর রেসিপিটা জলদি জলদি দাওওওওওও তো.....

রুমঝুমা এর ছবি

লজ্জা দিয়েননা আয়নামতি। আমার প্রতিভা শুধু খাওয়াতেই। ছবিটা গুগল ফটো থেকে নেয়া।

শাব্দিক এর ছবি

জিলাপী বানাবার জন্য কোন মানবীয় গূণাবলীর প্রয়োজন আছে কি না তা তো বল্লেন না, ধরুন মনে কত টুকু প্যাচ থাকলে কত ভাল জিলাপী বানানো যাবে?

রুমঝুমা এর ছবি

ব্যাপারটা নিয়ে একটু গবেষণার দরকার...... চিন্তিত

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।