উটকো ব্লগ: ক্যান্সার

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি
লিখেছেন অনার্য সঙ্গীত (তারিখ: বুধ, ২৮/০৯/২০১১ - ১:৫৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এই লেখাটি ঠিক বিজ্ঞানের নয়। প্রথমত বিজ্ঞান লিখতে গেলে খানিকটা জানতে হয়। ক্যান্সার সম্পর্কে আমি কিছুই জানিনা। খানিকটা পড়াশোনা করে জানার চেষ্টা করা যেত, সময় নেই! এই লেখাটা ফাঁকতালে শ্বাস নেয়ার মতো। ভয়াবহ ব্যস্ততার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু কয়েকদিন বিষয়টা খুব ভাবাচ্ছে। একটা অস্বস্থি ভর করে আছে মাথায়। ভাবতে ভালো লাগে না। মাঝে মাঝে মনে হয় মানুষ হয়ে না জন্মালেই ভালো হতো। মানুষ সভ্য প্রাণী নয়। বুদ্ধিমান হয়েও সে সভ্য নয়, এই অপরাধের দায় সে অস্বীকার করতে পারেনা! বলে রাখা ভালো, এই লেখাটি অগোছালো। ঝট করে লিখে ডুব দেবো। বিজ্ঞান পড়ার আশা করে কেউ পড়তে শুরু করলে হতাশ হবেন। কোনোকিছু আশা করলেই হতাশ হবেন।

ক্যান্সার ব্যপারটা নিশ্চয়ই কারো জানতে বাকি নেই। আরেকবার মনে করিয়ে দেয়া যেতে পারে। সবপ্রাণির শরীরের সবকিছু স্বাভাবিক অবস্থায় খুব কড়াভাবে নিয়ন্ত্রিত। সবখানেই একটা সাম্যবস্থা থাকে। সেই সাম্যবস্থায় গণ্ডগোল হলে বিপদ। ভয়াবহ বিপদ। মানুষের কথা বলি,

মানুষের কোষের নিজস্বতা আছে। শরীরের বাইরেও কোষকে খাবার দিয়ে পালা/পোষা যায়। কেউ চাইলে নিজের খানিকটা কোষ নিয়ে বোতলে পালতে পারে। আরামদায়ক তাপমাত্রায় রেখে নিয়ম করে খাবার দিতে হয়। আর দেখতে হয় যেন ব্যাকটেরিয়া ভাইরাস কোষ মেরে না ফেলে।

কোষেরা বৃদ্ধিপায় নিজেরা ভাগ হয়ে। একটা থেকে দুটো, দুটো থেকে চারটে এভাবে। শরীরে কোষের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রিত। কোষের সবকিছু যেহেতু নিয়ন্ত্রণ করে তার ডিএনএ। তাই তার বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রন করার দ্বায়িত্বও থাকে ওই ডিএনএ'র উপর। ডিএনএ হচ্ছে কোষের সংবিধান। কোষের ভালোমন্দ বিচারের ক্ষমতা নেই। সংবিধানে যা লেখা থাকে সে সেই মত কাজ করে। সংবিধানের অর্থবোধক একেকটা অংশকে বলে জিন। যে অংশে কোষের খাওয়া দাওয়া কীভাবে হবে লেখা থাকে সেটা তার খাওয়া নিয়ন্ত্রণকারী জিন। যেটাতে বৃদ্ধি পাওয়ার নিয়মকানুন লেখা থাকে সেটা তার বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণকারী জিন।

কোষের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণকারী জিনটা নষ্ট হয়ে গেলে সে আর বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। সমানে বাড়তে থাকে।

শরীরের কিছু রক্ষী কোষ আছে যারা এরকম বিগড়ে যাওয়া কোষ মেরে ফেলে। কিন্তু শরীরের রক্ষী কোষেরা যদি এরকম বিগড়ে যাওয়া কোষকে মেরে ফেলতে না পারে, তখন?

তখন সেটা ক্যান্সার।

ওই বিগড়ে যাওয়া কোষ উপযুক্ত পরিবেশে অনন্তকাল বাড়তে পারে। কিন্তু অনন্তকাল সে উপযুক্ত পরিবেশ পায়না। তার আগেই সে বাড়তে বাড়তে শরীরের অন্য কোষের কাজে ব্যাঘাত ঘটায়। তারপর যে শরীরের সে অংশ ছিল সেটাকেই মেরে ফেলে। ব্যপারটা আত্মহত্যার মতো। কোনো যুক্তি নেই। কিন্তু সেটাই হয়। ২০০৮ সালে পৃথিবীর প্রায় ৮০ লক্ষ মানুষকে মেরে ফেলেছে তাদেরই একম বিগড়ে যাওয়া কোষ। মৃত্যুর এই হার বাড়ছে। বিশ্বাস করুন, ভয়াবহ গতিতে বাড়ছে। আবেগ তাড়িত হয়ে বলছি না। সত্যি সত্যি বলছি।

ক্যান্সার শুরু হয় একটি কোষ থেকে। ওই একটি কোষ কীভাবে বিগড়ায়?

না জানা অনেক কারণে বিগড়াতে পারে। হয়তো একা একাও। এমনিতে কারসিনোজেনের প্রভাবে বিগড়ায়। কার্সিনোজেন বলে সেইসব জিনিসকে যা কোষের জেনেটিক গঠন বিগড়ে দিয়ে ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। আফলাটক্সিন বলে একরম ছত্রাকের বিষ একটা কার্সিনোজেন। 'এসবেস্টস' কার্সিনোজেন। এই জিনিসটি আমাদের দেশে ঘরের চালে ব্যাবহৃত হত বলে জানি! অন্তত সেটার নাম ছিল এসবেস্টস। সূর্যের আলট্রাভায়োলেট রশ্মি কার্সিনোজেন। আমরা সবাই মিলে বাতাসের ওজন স্তর নষ্ট করে ফেলেছি যেটা আমাদের এই রশ্মি থেকে বাঁচাতো। এখন অতি বেগুনি রশ্মি নির্বিবাদে আমাদের গায়ে এসে লাগে। আয়োনাইজিং রেডিয়েশন (বাংলা জানি না) একপ্রকার কার্সিনোজেন। আমার ভাগ্নের খেলনা দেখেছিলাম অন্ধকারে জ্বলে। তাতে কী দেয়া ছিল কে জানে! হয়তো ক্ষতিকর কিছু নয় কিন্তু আমি খুব ভীতু বলে সেই খেলনা বাতিল করে এসেছি! আরসেনিক একটা কার্সিনোজেন। কিছু ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, পরজীবিও কারসিনোজেন। সিগারেটের ধোঁয়ায় একটা কার্সিনোজেনের ককটেল থাকে। অনেক রকম কার্সিনোজেনের মিশেল। যিনি সিগারেট খান তার হাতে পায়ে চুলে জামায় সবখানে ওই কারসিনোজেন লেগে থাকে। তার পরিবারের সবাই সেটার ভাগ পায়।

ঢাকায় আমরা মোটামুটি কারসিনোজেনে ডুবে থাকি। বাতাসে বিষ, খাবারে বিষ, পানিতে বিষ! ২০৩০ সালে অন্তত ১ কোটি ১০ লক্ষ মানুষ ক্যান্সারে মারা যাবে। এদের বেশিরভাগই মারা যাবে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে।

সম্প্রতি সংক্রামক ক্যান্সারের কথা জানলাম। অনেক দেরিতেই জানলাম। Elizabeth Murchison-এর দেয়া একটি বক্তৃতা থেকে জানলাম। উনি বললেন কীভাবে তাসমানিয়ান ডেভিল নামের একটা প্রাণি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে এই সংক্রামক ক্যান্সারের কারণে! আমি খুব ভয় পেয়েছি। ভাবতেই ভয় লাগছে।

আমাদের এই শহরে আমরা এখন মোটে তিনজন বাংলাদেশি। একজন আমার বড়, আরেকজন ছোট। আমার ছোট ভাইটির ছোটবোন, বাচ্চা একটা মেয়ে। সেদিন শুনলাম তার ক্যান্সার হয়েছে। বাচ্চা একটা মেয়ে! এতো অসহায় লাগে! মেয়েটির কীরকম লাগছে! এতো কষ্ট কীভাবে সহ্য করছে সে! অসহায়ত্বের অসহ্য কষ্টটা কী তার না পেলেই হতনা! ঈশ্বর কী করেন! কোথায় তিনি!

আমি ইনফেকশন বায়োলজি সংশ্লিষ্ট বলে খবরগুলো চোখে পড়ে। রোজ রোজ নতুর রোগ বের হচ্ছে। রোজ রোজ তাকিয়ে দেখছি মানুষের অসহায়ত্ব। সেটা অবশ্য বেশিরভাগেই দেখছে না। সে বরং ভালোই। কী দরকার আতঙ্কে থেকে! অথচ একই সঙ্গে আমি বিজ্ঞানের বিস্ফোরণও দেখছি। মানুষের ক্ষমতা এখন আকাশ ছোঁয়া। মানুষ যা ইচ্ছে তাই করতে পারে। বিশ্বাস হওয়ার কথা নয়, সন্দেহ হওয়ার কথা। আমি জীববিজ্ঞানের ছাত্র না হলে আমারো বিশ্বাস হতো না। কীভাবে বিশ্বাস করাবো জানিনা। কথাটা আরেকবার বলি বরং, জীববিজ্ঞানীরা এখন যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন। আবার বলি, যা ইচ্ছে তাই।

ক্যান্সার সারাতে পারেন না? আরো যে এত এত রোগ?

পারেন। কিন্তু সেটার জন্য কাজ তো করতে হবে। ক্যান্সার নিয়ে হাজারো প্রশ্ন। উত্তর পেলেই ক্যান্সার থেকে মুক্তি। উত্তর পেতে সেই চেষ্টাটা কে করছে? গুটিকয়েক মানুষ করছেন। পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা গুটিকয়েক! বাংলাদেশে ক্যান্সার গবেষণার কী আছে? সারা পৃথিবীতেই তো কতো সামান্য আয়োজন! আহারে, আমরা ভাবতে কষ্ট হয়। এটা এমন কিছু না! সবই তো দেখা যায়, জানা যায়! আমরা চাইলেই পারতাম!

এমনিতে কিছু রাষ্ট্রের টাকা নেতারা খায় আর কিছু রাষ্ট্রের টাকা তারা আরেক রাষ্ট্রের মানুষেকে মেরে ফেলার প্রস্তুতি নিয়ে শেষ করে। সব রাষ্ট্র কুকুর পোষে। তারা খানিক করে মানুষ মারে আর বিবৃতি দেয়। শুওরেরবাচ্চারা খালি বিবৃতি দেয় আর বাচ্চা দেয়। একটা মানুষ বাঁচিয়ে দেখাক কতো ক্ষমতা! তাতে নেই। এরা খালি সংখ্যায় বাড়ে। অনবরত বাড়ে।

আমার খুব অসহায় লাগে। আমরা চাইলেই পারতাম। আমরা মানুষ। চাইলেই হেরে যাওয়া ক্যান্সারের দিকে তাকিয়ে খ্যা খ্যা করে হাসতে পারতাম, কিন্তু তা পারিনা। আমরা হেরে যাই। ক্যান্সারের কাছে হেরে যাই। আমি আমার চারপাশে তাকিয়ে দেখি। আমার মা, আমার বোন, আমার বাবা, আমার বন্ধু, আমার একরত্তি ভাগ্নে, আমার সুহৃদ, আমার স্বজন। আমাদের অনেকেরই ক্যান্সার হবে। তারপর আমরা হারানোর বেদনায় নীল হয়ে থাকবো। আমাদের শান্তনা দেয়ার কোনো ভাষা থাকবে না। আমরা কেবল কিছুই হয়নি, কিচ্ছু হবেনা, এরকম ভান করতে থাকবো।

আমার মতো কেউ কেউ হয়তো তীব্র ঘৃণা পুষে পুষে ক্লান্ত হয়ে যাবে। বুঝে যাবে পৃথিবী মানুষের নয়। অথবা অকথ্য ব্যাথায় স্থবির হয়ে থাকবে। তবে তাতে কিছু এসে যাবে না। ঘৃণা বস্তুত অর্থহীন আবেগ! তাতে কারো কিছু এসে যায় না! এই গ্রহের অনেকেই মৃত্যু দেখে হাসতে পারে। সুখে থাকতে পারে।

পুনশ্চ: এরকম অগোছালো উটকো লেখা কে পড়বেন জানিনা। খানিকটা অস্বস্থি উগরে দিয়ে সুস্থির হওয়ার প্রয়োজন ছিল। তাই লিখলাম। আরেকবার পড়ে দেখাও হচ্ছে না। অসংখ্য ভুল হয়েছে নিশ্চয়ই। সেসবের জন্য দুঃখপ্রকাশ করছি। কেউ যদি মন্তব্য করেন, সেটার জবাব দিতেও দেরী হবে। সচলায়তনে আমি ব্যক্তিগত ধরনের লেখা সাধারণত লিখিনা। এটা লিখলাম খানিকটা অস্বস্থি আর ঘৃণা ভাগ করে নেয়ার জন্যে। কোনো যোগ্যতা ছাড়াই এখানে আমার অনেক স্বজন।

Elizabeth Murchison-এর বক্তৃতার ভিডিওটা দিয়ে দিলাম। চাইলে দেখতে পারেন।


মন্তব্য

তাসনীম এর ছবি

আমার মা ক্যান্সারে আক্রান্ত হন ৭৩ বছর বয়েসে, ২০০৬ সালে। সৌভাগ্যক্রমে ওই ক্যান্সার চিকিৎসা সম্ভবপর ছিল, ওই যুদ্ধে উনি জয়ী হয়েছেন। এক বন্ধুর বোন মারা গেল ক্যান্সারে, ২০০৫ সালে। চিকিৎসার ব্যয়বহন করতে গিয়ে পরিবারের সব সঞ্চয় শেষ। আমার এক সহকর্মীর ১৯ বছরের মেয়েটাও কয়েক বছর আগে ক্যান্সারে মারা গেল। এই মুহুর্তে ক্যান্সারে আরো একটা চেনা পরিবারের বাচ্চা ভুগছে...

তোমার লেখায় বাচ্চা মেয়েটার ক্যান্সারের কথা শুনে খুব খারাপ লাগলো। এই যুদ্ধে আমরা কবে জয়ী হব?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

যুদ্ধে জয়ী হওয়া এমনিতেও সহজ নয়। আর আমরা তো যথার্থ চেষ্টাও করছি না!

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

কল্যাণF এর ছবি

অনার্যদা' স্বদিচ্ছা মনে হয় বহুমুখী জটিল স্বার্থের আড়ালে ঢাকা পড়ে গেছে। এখন ক্যান্সার ট্রিটমেন্ট আবিস্কারের চে ড্রোন হামলা বেশি দরকার। অথবা বেশি দরকার বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন। ঠগ বাছতে গাঁ উজাড়। আমারো খুব আশ্চর্য লাগে যখন এগুলো চিন্তা করি, ভাবি যে সত্যিই কি বিজ্ঞান এগিয়েছে? কিন্তু সংক্রামক ক্যান্সার? কইলজা ঠান্ডা করে দিলেন তো ভাই অ্যাঁ

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

বিজ্ঞান এগিয়েছে। অল্পকিছু মানুষ আছেন বলেই।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

পুতুল এর ছবি

ব্রেষ্ট ক্যান্সার নিয়ে তিন বছর কাজ করেছি, তার পরেও আমার কাছে লেখাটা মোটেও উটকো মনে হয়নি। ক্যন্সারটা খুব ভালই বুঝাতে পেরেছেন। ভুক্তভোগী হিসাবে কিছু আবেগ থাকা খুবই স্বাভাবিক। ক্যন্সারের বিরোদ্ধে জীবনযুদ্ধে ছোটবোনটির যেন জয় হয়।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

চরম উদাস এর ছবি

চমৎকার এবং ভাবানোর মতো পোস্ট। চলুক
সারা দুনিয়া ছুটে (বিশেষ করে আমেরিকা) চলছে মিলিটারি আর consumer device এর পেছনে রিসার্চ করতে। টিভি বা ক্যামেরার ছবি কিভাবে আরও ভালো করা যায়, 2D/3D/4D করতে করতে লোকজনকে কিভাবে নতুন নতুন ডাইমেনশন দেখানো যায়, iphone/ipad কে কিভাবে আরও thinner, lighter, and faster বানানো যায় অথবা কিভাবে ওয়াশিংটনে থেকে মিসাইলকে একবারে উড়ায়ে বেইজিং ফেলা যায় এইসবের পিছনে এতো বিলিয়ন ডলার না ঢেলে কামের গবেষণায় টাকা ঢাললেই হয়! মাঝে মাঝে ভাবলে হতাশ লাগে। স্বপ্ন দেখতাম গবেষক হব। স্বপ্ন সত্যি হয়তো হয়েছে। কিন্তু মাঝে মাঝে পেছনে ফিরে তাকালে মনে হয় কি সব কেশের গবেষণা করেছি আর এইসব আসলেই মানুষের কতটুকু উপকারে লাগবে। সুপারভাইজর এর ধান্দা ছিলো ফান্ড বাগানো, সেইটা যদি চিকার গু নিয়ে রিসার্চও হয় কিছু আসে যায় না। আর আমার ধান্দা ফাঁকি ঝুকি মেরে কেম্নে ডিগ্রী পাওয়া যায়। মাস্টার্সে কাজ করলাম মিলিটারির ফান্ডে। জঙ্গলের কোন চিপায় কোন ট্যাঙ্ক বা রহস্যজনক কিছু লুকায়ে আছে কিনা আসমান থেকে তোলা ছবির ইমেজ প্রসেসিং করে সেইটা বের করা। আর পিএইচডি তে কাজ করলাম কামেরায় ক্যামনে মানুষের ফেস ডিটেক্ট করা যায়, কামেরার ছবি ক্যামনে আরও শার্প করা যায় ইত্যাদি নিয়ে। এইসবের একদম যে দরকার নাই তা না কিন্তু এইসব না করলেও মানুষের বাঁচা মরাতে কোন ফারাকই পরত না। কিভাবে আরেকটু আয়েশ করে বেঁচে থাকা যায় সেটা নিয়ে এতো সময় নষ্ট না করে কিভাবে বেঁচে থাকা যায় সেইতার পেছনে আরেকটু সময়, অর্থ, মেধা এবং শ্রম ব্যয় করলে মনে হয় পৃথিবীটা অনেক বেশী সুন্দর হতো।

কল্যাণF এর ছবি

মন্তব্যে চলুক

হিমু এর ছবি

আপনার গবেষণার কাজ নিয়ে একটা সরস সিরিজ লিখুন না কেন?

চরম উদাস এর ছবি

হ্যাঁ, লেখার ইচ্ছে আছে। তবে গবেষণা নিয়ে লিখতে গেলে পরে দেখা যাবে সেইটা গবেষণার বদলে সুপারভাইজর/প্রফেসর চরিত হয়ে গেছে ... :D।।
দুনিয়াতে মানুষ চেনার দুইটা উপায় আছে, মানুষ কে বিয়ে করা অথবা মানুষকে PhD সুপারভাইজর বানানো। আফসোস দুইটার কোনটাই একবারের বেশী করা হয়না সাধারণত। তাই দুনিয়াতে দুইজনের বেশী মানুষও চেনা যায়না ... চিন্তিত

ধুসর গোধূলি এর ছবি
চরম উদাস এর ছবি

ভয় দেখান কেন? ইয়ে, মানে...

ধুসর গোধূলি এর ছবি

আপনার মন্তব্যটা পড়ে আমার কেবলই মনে হচ্ছে, "জীবন বাঁচানোর চেয়ে জীবন সাজানোতেই আমাদের আগ্রহ বেশি!" সাথে মনে পড়ছে লালসালু'র সেই অবিস্মরণীয় কথা, "ধান দিয়া কী হইবো, জানই যদি না বাঁচে!"

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

ঠিক বলেছেন। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

সাফি এর ছবি

আহারে বাচ্চা মেয়েটা তাড়াতাড়ি এই যুদ্ধে যেন জয়ী হয় মন খারাপ

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

সেই আশা করে থাকি।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

pathok এর ছবি

আজ একটা মেইল এ খানিক যোগাযোগ এর পর ভেবেছিলাম অ-স এর লেখা পেতে দেরিই হবে চোখ টিপি যাক সারপ্রাইজড হলাম আজই তার লেখা পেয়ে - বরাবর এর মত দারুন!

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

আপনাকে যেমন বলেছিলাম। আমি আসলেই খুব ব্যস্ত। খানিকটা ফ্রেশ হওয়ার জন্যে লেখা বলতে পারেন। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

উচ্ছলা এর ছবি

ছোট বোনটির চিকিৎসার আপডেট জানাবেন প্লিজ।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

সে হয়তো ব্লগে জানানো হবে না। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

মন মাঝি এর ছবি

একজন ভুক্তভোগী (আসল ভূক্তভোগীর নিকটজন) হিসেবে আপনার রাগ, দুঃখ, ঘৃনা, অসহায়ত্ব আমি যে কতটা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করি তা হয়তো আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। আপনি ইউরোপে বসে অসহায় বোধ করছেন, আমি জানি না বাংলাদেশের ভূক্তভোগীদের কি অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয় তা কয়জন জানেন।

২০০৬-এ আমার মা ক্যান্সারে (AML-5) আক্রান্ত হন। শুরুতেই হেরে যাওয়া সে লড়াইতে পরবর্তী ৮টি মাস প্রাইমারি কেয়ার-গিভার হিসেবে প্রায় সর্বক্ষণ তার পাশে থেকে, পরিণতি কি তা নিশ্চিত জেনেও লড়াই করতে করতে রাগ আর অসহায়ত্বের সম্পূর্ণ বর্ণালী চেতনার কোষে কোষে, মর্মে মর্মে, উপলব্ধি করেছি। চিকিৎসাবিজ্ঞানের অনগ্রগতিজনিত পরিণতির অনিবার্যতাতো আছেই, সেইসাথে একটুখানি রক্ত, একটুখানি প্লাটিলেট, ইত্যাদির জন্য কিভাবে মানুষের দরজায়-দরজায় ঘুরেছি কাকুতি-মিনতি করেছি এবং অনেকসময় তাদের হাসি-ঠাট্টা-বিরক্তি-বিদ্রূপ-অপমান-তাচ্ছিল্য-অবহেলার শিকার হয়েছি সেসব এখন ভাবলে.... নাঃ এখন আর অতটা রাগ হয় না, বরং কেন জানি প্রকাণ্ড হাসি পায়!

ক্যান্সার-চিকিৎসার উন্নতি হলে বাংলাদেশের মানুষের কত পার্সেন্টের কতটুকু উন্নতি হবে জানি না। প্রথম সারির বেসরকারী হাসপাতালগুলির কীর্তিকলাপতো ইদানীং পত্রপত্রিকা মারফৎ প্রকাশ পাচ্ছেই - কিন্তু বেশির ভাগ মানুষের অগতির গতি সরকারী হাসপাতালগুলির কি অবস্থা ? একটা আস্ত প্যারাসিটামল ট্যাবলেটও কি বরাদ্দ আছে তাদের কপালে ? ২০০৭-এর ১/১১-র সময় আমাকে রাত ১টার সময় কার্ফিউ ভেঙ্গে হাসপাতাল থেকে বেরুতে হয়েছে ঢাকা শহরে প্লাটিলেট আলাদা করার মেশিনের খোঁজে - ডাক্তারের এই সাবধানবানী মাথায় রেখে যে - আজ রাতেই লাগবে, নইলে... । পিজিতে যেটা ছিল সেটা ভেঙ্গে গেছে হঠাৎ করে, বারডেমে যেটা ছিল সেটার উপর সব চাপ- পরদিন ১২টার আগে সিরিয়াল পাওয়া যাবে না- আর ততক্ষণ আমার অপেক্ষা করার উপায় নেই। কেউ বলতে পারছে না আর কোথায় আছে। এখন এত রাতে যানবাহনহীন, নির্জন দাঙ্গাতঙ্কিত কার্ফিউস্তব্ধ শহরে কই পাই একটা প্লাটিলেট মেশিন (নামটা ভুলে গেছি এই যন্ত্রের) ? আমার সেই অসহায় উম্মত্ত অবস্থা ৫ বছর পরে এখন অবশ্য আর অতটা পীড়িত করে না... মনের একটা অদ্ভূত মেকানিজম আছে - কষ্টের স্মৃতির অংশগুলি আসলে সে অটো-শাটডাউন ট্রিগার করে। কিংবা হ্যাং করে যায়। তখন রিস্টার্ট দিয়ে অন্য প্রসঙ্গে চলে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। বাঁচোয়া।

মোদ্দা কথা, চিকিৎসাবিজ্ঞানে ক্যান্সার চিকিৎসার উন্নতি ছাড়াও এই দেশে তার আগে আরো অনেক কিছুতে উন্নতি প্রয়োজন।

****************************************

কামরুল হাসান রাঙা এর ছবি

সহমর্মিতা আপনার জন্য।
আসলেই বাংলাদেশে অনেক কিছুরই উন্নতির প্রয়োজন। স্বাস্থ্যখাতে বাজেটে যে পরিমাণ বরাদ্দ থাকে তাতে প্রকৃতপক্ষেই সবার জন্য অর্ধেক প্যারাসিটামল বড়ি মেলার কথা নয়।
ডাক্তারীবিদ্যার একজন স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী হিসেবে এটুকু বুঝি, এই অবস্থা বদলাবার সম্ভবনা কম।
বাংলাদেশের রোগীদের তিনটি শ্রেণীতে ফেলা যায়- একশ্রেণী যারা পর্যাপ্ত টাকাপয়সার মালিক নয়; বিদেশ তো প্রশ্নই উঠে না, দেশেও নিজ খরচে চিকিৎসা করা এদের পক্ষে সম্ভবপর নয়। রাষ্ট্র দায়ত্ব না নিলে বিনা চিকিৎসায় মারা যাওয়া ছাড়া এদের গতি নেই।
আর এক শ্রেণী হল বিত্তশালীরা। এরা কখনই দেশে চিকিৎসা করায় না, সামান্য সর্দি-জ্বর হলেও এরা সিংগাপুর, ব্যাংকক, মাদ্রাজ ছোটে। আমাদের নেতানেত্রীরাও তাদের অবৈধ আয়ের বিশাল একটা অংশ এই বাবদ ব্যয় করে থাকে।
মাঝখানে আছি আমার-আপনার মত নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণী। আমরা দেশে যতটুক্ত পারি চিকিৎসা করাই, আর তন্নত চিকিৎসার জন্য হা-হুতাস করে মরি।
বিদেশ না ছুটে এই দেশেই যদি টাকাওয়ালারা করাত তাহলে তিন শ্রেণীর মানুষেরই উপকার হত। তাদের ব্যয়িত টাকার একটা অংশ দিয়ে গরীব মানুষ কম খরচে বা বিনা খরচে চিকিৎসার সুযোগ পেত। বলতে পারেন যে, আমাদের দেশে পর্যাপ্ত বিশেষজ্ঞ নেই বা অবকাঠমোগত সুবিধা নেই। এসব তখনই হবে যখন সরকার এসব ব্যাপারে আন্তরিক হবে। অনেকেই একটা কথা বুঝতে চান না, যে কোন সেবা পাওয়ার জন্য কাউকে না কাউকে মূল্য পরিশোধ করতে হবে, সেটা সরকার হোক আর যেই হোক।
হাসপাতালের ওয়ার্ডে প্রতিদিনই ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর পাশে দাঁড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না।

কামরুল হাসান রাঙা

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি আসলে কোনো অলৌকিক ব্যপার নয় যে বসে বসে প্রার্থনা করতে হবে। সামর্থ ব্যয় করলেই উন্নতি হবে। সামর্থ ব্যয় করার মানসিকতাটা দরকার।

আপনার অভিজ্ঞতা নিয়ে একটা পুরো লেখা লিখুন। হাসি

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

হিমু এর ছবি

ক্যান্সারের গবেষণার পেছনে শুধু ব্যয় করলেই চলবে না। সেই ব্যয়টা যদি বহুগুণিত লাভের উদ্দেশ্যে বাণিজ্যিক বিনিয়োগ হয়, তাহলে ক্যান্সারের চিকিৎসা সম্ভব হবে, কিন্তু শুধু গুটিকয় মানুষের জন্যে। জোনাস সাল্ক যেমন পোলিও ভ্যাকসিনের জন্যে কোনো পেটেন্টের আবেদন করেননি, সর্বসাধারণের জন্যে উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন, সেরকম উদ্যোগ প্রয়োজন।

ক্যান্সার শুধু রোগীকে মারে না, তার চেনা পৃথিবীর একটা অংশকেও সাথে কিছুটা মেরে ফেলে। ক্যান্সারে প্রকৃত আক্রান্ত লোকের সংখ্যা তাই ক্যান্সার রোগীর চেয়ে অনেক বেশি।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

ঠিক বলেছেন হিমু ভাই, ক্যান্সার আসলে কেবল রোগীকে মারে না!

বাণিজ্যিক বিনিয়োগের চাইতে "চ্যারিটি" বিনিয়োগ নিশ্চয়ই বেশি কাম্য। কিন্তু এখনকার বায়োসায়েন্সের গবেষণায় বড় একটা বিনিয়োগ কিন্তু বাণিজ্যিক। সেটাকে অগ্রাহ্য করা সহজ নয়। সেটার অবদানও কম নয়। তবে নিশ্চয়ই উন্মুক্ত উদ্যোগটাই সবচে জরুরী।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

তাপস শর্মা এর ছবি

কিছুই বলার নাই। এভাবেই একদিন আমারা সবাই নিঃশেষ হয়ে যাব।
বাচ্চা মেয়েটির জন্য খারাপ লাগছে, তবে আমারা সবাই অসহায়, শুধু অপেক্ষা করছি ফল পেকে খসে পরার জন্যে।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

ঠিক বলেছেন। ধন্যবাদ।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

কৌস্তুভ এর ছবি

ক্যান্সার সম্পর্কে আমার জ্ঞান সামান্যই, কিছু স্ট্যাট-সংক্রান্ত নাড়াচাড়া করেছি কেবল। তবে দুটো খবর দেখলাম, শেয়ার করছি -

flowers are the source of a new cancer drug

Researchers are poised to start clinical trials with a new "smart bomb" treatment, derived from the flower, targeted specifically at tumours.
The treatment, called colchicine, was able to slow the growth of and even completely "kill" a range of different cancers, in experiments with mice.
The researchers at ICT have now altered the colchicine molecule so it is inactive in the body until it reaches the tumour.
Once there, the chemical becomes active and breaks up the blood vessels supplying the tumour, effectively starving it.

'Anti-cancer virus' shows promise

An engineered virus, injected into the blood, can selectively target cancer cells throughout the body in what researchers have labelled a medical first.
The virus attacked only tumours, leaving the healthy tissue alone, in a small trial on 23 patients.
Using viruses to attack cancers is not a new concept, but they have needed to be injected directly into tumours in order to evade the immune system.

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

খবর দুটো সময় করে পড়ে দেখব।
ক্যান্সার চিকিৎসায় জিন থেরাপির সর্বশেষ পরীক্ষাটা কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে। এখনো অনেক পথ হাঁটতে হবে সফল হতে হলে।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

খবর দুটো সময় করে পড়ে দেখব।
ক্যান্সার চিকিৎসায় জিন থেরাপির সর্বশেষ পরীক্ষাটা কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে। এখনো অনেক পথ হাঁটতে হবে সফল হতে হলে।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অতিথি লেখকঃ অতীত এর ছবি

এইটাই এখন নির্মম সত্য। কেনোজানি ক্রমশ মানুষ শব্দটার অর্থবহতা আর নিজের মধ্যে পাই না। শুধু অসহায় লাগে। সহ্যক্ষমতা কিংবা অভিযোজন এর এভোলিউশন প্রসেসে নিত্য নিজেকে কত খাটি গিনিপিগ করা যায় সে ধারায় নিয়োজিত।

এই মুহূর্তে মনে করতে পারছিনা, কে জানি বলেছিলো, আনন্দে সবাই একইরকম, কষ্টে প্রত্যেকে আলাদা। আপনার সেই স্বজনের কষ্ট হয়তো আপনার মতো করে কেউ অনুভব করবে না। আর নিজে যে মানুষের কথা ভাবি বা ভাবতে পারি, সেই যোগ্যতাও মনে হয় আছে কিনা সন্দেহ। তবুও যতটুকু আছে, তারই সবমিলে দোয়া করি ক্যান্সার আক্রান্ত সকল রোগীদের রোগমুক্তিতে।

অতীত

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ জানবেন।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

আপনার এই লেখাটি ও মন্তব্য-প্রতিমন্তব্যগুলো আমাকে খুব আলোড়িত করেছে!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

দ্রোহী এর ছবি

মন খারাপ

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

মন খারাপ

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

... ...

এসব পড়লে আসলে ভয় হয়। ইগ্নোরেন্স ইজ ব্লিস। জানি না দেখেই আসলে বেঁচে আছি, কারসিনোজেনে ডুবে থেকেও নিশ্চিন্ত আছি।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

সেটা ভাবতেও কি আর ভালো লাগেরে ভাই মন খারাপ

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

তারেক অণু এর ছবি

চমৎকার লিখেছেন, আর এই পোষ্ট যদি আপনার কাছে উটকো মনে হয় তাহলে এমন কিছু উটকো আরও উপহার দিন আমাদের

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

ধন্যবাদ। আমি তো নিয়মিতই লিখি। ইদানিং কেবল খানিকটা ব্যস্ত বলে কম লেখা হচ্ছে।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

যুদ্ধ আসলে প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অগ্রগতিতেও ভূমিকা রাখে। যুদ্ধের ইমপ্যাক্ট একসাথে অনেকের ওপর আসে, রোগের ইমপ্যাক্ট সাধারণত ওয়ান বাই ওয়ান আসে। মানুষের বুদ্ধিমত্তা ওভাররেটেড। কারণ, মানুষ অনেক সময়ই এই ইমপ্যাক্টের কারণে বিগ পিকচার দেখে না। অস্ত্র বানানোর চেয়ে যে রোগের ওষুধ বানানো বেশি জরুরি, এটা বোঝার এবং বাস্তবায়ন করার মতো বুদ্ধির পর্যায়ে যেতে মানুষের আরো অনেকদিন লাগবে।

বিজ্ঞানের লেখা এরকম হলেই তা 'লেখা' হয়ে ওঠে, ঘুমপাড়ানি সেমিনার হয়ে ওঠে না। আপনার এই যোগ্যতা ঈর্ষণীয়।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

রোগের ইমপ্যাক্ট ওয়ান বাই ওয়ান আসে বলে আপাতদৃষ্টিতে মনে হলেও তা কিন্তু নয় বলাই দা। ক্যান্সার, এইডস, যক্ষা ... এসব বিশাল জনগোষ্ঠীর মধ্যে আছে/ছড়াচ্ছে।
আপনি কেবল ভেবে দেখুন আপনার আশেপাশে কতজন হৃদরোগী আছেন!

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। হাসি

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

নজমুল আলবাব এর ছবি

ক্যান্সারে মারা গেলেন চাচা। জানিনা সেই শোকেই কী না, ৩৯ দিনের মাথায় আব্বা চলে গেলেন। বড় খালা ক্যানসারের সাথে লড়ছেন। খুব কাছের এক বড়ভাই লড়ছেন এক বছর ধরে। বড় দুলাভাই এক বছর আগে মারা গেছেন ক্যানসারে। এ বছরের শুরুতেই এক ভাগ্না, মাত্র ১৪ বছর বয়েস ধাম করে মরে গেলো। সেও ক্যানসারের কারনেই। গতকাল একজনকে রক্ত দিয়ে এলাম, ক্যানসার। শীর্ণ হাতে একটা আপেল তুলে দিলেন, তিন মাস হলে যদি প্রয়োজন পড়ে, তবে যেন আবার রক্ত দেই, সেই অনুরোধ জানালেন...

নিজের আশেপাশেই এখন এত এত ক্যানসার আক্রান্ত। অথচ বিশ বছর আগেও ক্যানসার শুধুমাত্র নাটক-সিনেমার নায়কদেরই হতো।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

অথচ বিশ বছর আগেও ক্যানসার শুধুমাত্র নাটক-সিনেমার নায়কদেরই হতো।

সেটাই বলতে চাইছিলাম। ক্যান্সারের প্রকোপ তীব্র গতিতে বাড়ছে!

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

কর্ণজয় এর ছবি

লেখাটা ভাল লাগলো... একটু না... ভালোই ভাল।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

ধন্যবাদ।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

মেহবুবা জুবায়ের এর ছবি

পড়লাম। পাঁজর ভাঙ্গা দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া আর কি করতে পারি আমরা!

--------------------------------------------------------------------------------

ফরহাদ এর ছবি

লেখক ভাই,
আমি নিজে একজন ক্যান্সার জয়ী।গত বছর রোযায় সেমেস্টার ফাইনাল দিয়ে যখন ঢাকা থেকে বাসায় আসি, তখন কিছু সমস্যার জন্যে ডাক্তারি পরীক্ষা করতে হয়। ফলাফল আসে স্টোমাক ক্যান্সার। তখন ঢাকায় গিয়ে আরো দুই-তিন জায়গায় পরীক্ষা করে দেখা যায় স্টোমাক ক্যান্সার না স্টোমাকে এন-এইচ-এল ( non-hodgkin-lymphoma) হয়েছে। non-hodgkin-lymphoma এক ধরনের ক্যান্সার যা সাধারণত আমার মতো ১৯-২০ বছরের কারো হয় না। এজন্যে ডাক্টাররা একটু অবাক হয়। পরে ডাক্টাররা সিদ্ধান্ত নেয় প্রথমে পাকস্থলীতে অপারেশন হবে, পরে ক্যামোথেরাপী দেওয়া হবে। প্রথমে ভারতে যাবার কথা ছিলো।কিন্তু শেষে দেশেই সব কিছু করার সিদ্ধান্ত হয়। তাও প্রায় ১৫ লাখ টাকার ঝামেলা। বাইরে কোথাও করতে গেলে ৩০-৪০ লাখ টাকা লাগতো।
ঈদের পর আমার অপারেশন হয় ঢাকার এক হাসপাতালে। এক কষ্টকর অভিজ্ঞতা হয় তখন যা বলে বঝানো যাবে না। অনেক বড়ো একটা অপারেশন হয়। তাও ১০-১২ দিনের ভিতর আমি সাভাবিক হাটাচলা শুরু করি। এবার ক্যামোথেরাপী দেবার পালা। ডাক্টার বলে আমাকে ৬ টা ক্যামোথেরাপী দেওয়া হবে। প্রায় ৩ মাস লাগবে সব গুলা দিতে। এতো সময় ঢাকার থাকার কোনো ইচ্ছা আমার ছিলো না। তাই বাধ্য হয়ে নিজের শহর চট্টগ্রামে ক্যামোথেরাপী দেবার সিদ্ধান্ত নেয়। অনেক কষ্টকর এক সময় গেছে তখন। প্রথম ক্যামোথেরাপী এর সময় থেকে শুধু দিন গনতাম কবে শেষ হবে ছয়টা ক্যামোথেরাপী।প্রতি ক্যামোথেরাপী এর সময় প্রথম ৪ দিন অনেক কষ্ট হতো। ১০ দিনের মতো বের হইতে পারতাম না। কিন্তু ১১ তম দিন আমি বন্ধুদের সাথে বের হয়ে আড্ডা মারতাম। যারা জানতো আমার অসুখের কথা তারা খুব অবাক হইত আমাকে দেখে। আমার চলাচল স সাভাবিক ছিল। একসময় অনেক কষ্ট দিয়ে অবশেষে শেষ হয়। সব সমস্যা থেকে আপাতত মুক্ত হই, শুধু খাবার নিয়ে সমস্যা ছাড়া। অনেক কিছু মেনে চলতে হয়। এই বয়সে এসব ভালো লাগে না।

এতো কিছু হলো আমার কিন্তু একবার এর জন্যেও মনে হয় নি আমি বাচবো না। আমি এখন খুব ভালোভাবে বেচে আছি। সব কিছুই করি এখনো। খেলাধুলা, ঘুরে বেরানো সব কিছুই চলছে আগের মতো। শুধু কয়েকদিন বিরতি ছিলো।
এখন আমি কোনো কিছুই ভয় পাইনা। আমার চিকিৎসা শেষ হয়েছে ৬ মাস এর মতো হবে। এই কয়েকদিন আগে আমি কিউকারাডং ঘুরে এসেছি। আমি নিজেও ভাবি নাই যে আমি পারবো। কিন্তু সাহস করে গিয়েছিলাম এবং আমি পেরেছি। আমার মনে হয় না বাংলাদেশের কোনো ক্যান্সার রোগী কিউকারাডং উঠেছে । এখন আমার সাহস আরো বেরেছে। সামনে আরো দূরে যাবার ইচ্ছা আছে আমার। জীবনে অনেক কষ্ট করেছি। তাই সুখের মানে ভালোভাবে বুঝি। আশা করি গত এক বছরের শিক্ষা আমার বাকি জীবনে ভালোই কাজে দিবে। আমার ডাক্তার আমাকে বলে ছিলো ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম এর ও একই রোগ হয়েছিল। উনি এখন অনেক সফল একজন ব্যক্তি। হয়তো আমিও সফল হবো। হয়তো বা নয়। দেখি ভাগ্যে কি আছে।

মন মাঝি এর ছবি

মন্তব্যকারী ভাই,

আপনার মন্তব্য পড়ে দারুন উজ্জীবিত বোধ করলাম। আপনার ক্যান্সার-যুদ্ধের সাফল্যে আপনাকে অভিনন্দন। আশা করি আপনার সামনের দিনগুলি সুখ, স্বাস্থ্য আর সাফল্যে সোনালি হয়ে উঠবে। আশা করি অনাগত দিনগুলি আপনি পুরোপুরি পজিটিভলি নিতে পারবেন চাওয়া-পাওয়ার হিসাব-নিকাশে কোনরকম বৈষম্যে বিব্রত না হয়েই। আপনাকে স্যালুট।

****************************************

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।