আজব সব জীবগুলি-২

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ৩১/১০/২০১১ - ৫:২১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আজব সব জীবগুলি-১

আমার আগের লেখাটিতে অদ্ভুত এক আর্চার ফিসের কথা লিখেছিলাম। আর এপর্বে অদ্ভুত এক দাবী নিয়ে হাজির হতে চাই।

আচ্ছা বলুনতো ডুবুরীরা পানির নিচে শ্বাস নেয়ে কিভাবে? এই আধুনিক যুগে ডিসকভারি চ্যানেল দেখে দেখে এর উত্তর কারও কাছে আর অজানা নয়। তারা অক্সিজেন ট্যাংক ব্যাবহার করে। কিন্তু অক্সিজেন ট্যাংক আবিস্কারের আগে কি মানুষ পানির নিচে ডুব দিতো না?

অবশ্যই দিতো। এজন্য ব্যবহার করা হতো ডাইভিং বেল

ডাইভিং বেল কিভাবে কাজ করে? খুব সহজ। পানিতে নামার আগে এটিকে উল্টো করে খোলা দিকটি পানির নিচে খাড়া ভাবে নামানো হতো। পানির চাপের কারণে বাতাস ঐ বেল এর মধ্যে আটকা পড়ে যেতো। একজন ডুবুরী একটু ডুব দিয়ে ওটার নিচে ঢুকে যেতেন। ডাইভিং বেলের ভেতরে আটকে পড়া বাতাসের সাহায্যে অতি সহজেই পানির নিচে নিঃশ্বাস নেয়ে যতো। দরকার হলে একবার দম নিয়ে বেল থেকে বের হয়ে ডুব সাতার দিয়ে কিছু কাজ করে আবার ডাইভিং বেল এর ভেতর এসে দম নিয়ে যেতে পারতেন।

শুধু একজনই নয়, প্রয়োজনে একাধিক মানুষ ডাইভিং বেল ব্যবহার করে পানির নিচে বেশ কিছুক্ষন সাচ্ছন্দে কাটিয়ে আসতে পারতেন।

অবশ্য ডাইভিং বেল যে শুধু প্রাচীনকালেই ব্যবহার হতো এটা ঠিক নয়। এখনও ব্যবহার হয়। খালি প্রযুক্তির ব্যবহারে ডাইভিং বেল এর উন্নতি ঘটেছে এই আরকি।

এবার আসা যাক আমার অদ্ভুত দাবীটি নিয়ে। আমি যদি বলি মানুষ এই ডাইভিং বেল আবিষ্কার করার অনেক আগেই প্রানীজগতে এই ডাইভিং বেল এর প্রচলন ছিলো, আপনারা কি বিশ্বাস করবেন?

অবিশ্বাস্য হলেও এটা সত্যি। মানুষ এটা আবিষ্কার করেছে ১৫ অথবা ১৬ শতকের দিকে । কিন্তু জল-মাকড়শারা (Argyroneta aquatica) ডাইভিং বেল ব্যবহার করছে তারও আগে থেকে।

তারা বুঝে গিয়েছিলো পানির নিচে সংসার করতে হলে বাতাসকে পানির নিচে আটকাতে হবে। ওরা বাতাসকে আটকায় কিভাবে জানেন? পানির উপরিতলে এসে পিছনের পা এবং পেটের ভাঁজে কায়দা করে একটি বাতাসের বুদবুদ আটকে নেয়। কিন্তু বেশি গভীরে ডুব দেয়না। কারন যত বেশি পানির নিচে যাবে বুদবুদের উর্ধমূখী চাপও ততবেশি হবে। তাই সাধারনত পানির উপরিতলের ঠিক নিচেই এদের বাসা থাকে।

চিন্তা নেই , এরা মাছ-টাছ ধরে খায়না। সাধারনত জলজ উদ্ভিদের পাতায় আটকে থাকে অতি ক্ষুদ্র পোকামাকড় খেয়েই এরা বাঁচে। দরকার হলে বুদবুদ থেকে অক্সিজেন নিয়ে নেয়। বুদবুদ ফুরিয়ে গেলে আবার পানির উপরিতল থেকে আরেকটা বুদবুদ তৈরি করে ডুব দেয়।

দেখলেনতো এরা প্রযুক্তির ব্যবহার মানুষের কতো আগে থেকেই করা শুরু করেছে?

গল্পটি কি তাহলে এখানেই শেষ?

উহু। কারন শুধু বুদবুদ তৈরি করেই ওরা থেমে থাকেনি। বংশ রক্ষার জন্য ওরা আরেকধাপ এগিয়ে গেলো। পানির নিচে বাসা বানাতে শুরু করলো!!

বাসাটা দেখতে কিরকম? ঠিক উল্টো করে রাখা গ্লাসের মতন।

গাছের লতার সাথে এমন ভাবে আটকানো থাকে যেনো উল্টে যেতে না পারে। বাবা-মাকড়শা আর মা-মাকড়শা মিলে প্রথমে এরকম একটি বাসা বানায়। তারপর দুজনে মিলে পানির উপর থেকে বুদবুদ নিয়ে বাসার ভেতর ছাড়তে থাকে।

বাসার ভেতর বাতাসপূর্ণ হয়ে গেলে এরপর দুজন মিলে বাতাসের পরিমান মেপে দেখে।যদি মনে করে বাসার ভেতর যথেষ্ট বাতাস জমেছে, তাহলে দুজনে পানির নিচে বাসার ভেতর বাসর জমায়। মা-মাকড়সা সেইখানেই ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে ছানাগুলি ছোট থাকা অবস্থায় বাবা-মাকড়শা আর মা-মাকড়শা মিলে লক্ষ্য রাখে বাসার ভেতর অক্সিজেনের পরিমান ঠিক আছে কিনা। একটু বড় হবার পর ছানাগুলি নিজে নিজেই বুদবুদ তৈরি করে পানির নিচে নিয়ে আসতে পারে।

Underwater kingdom মানুষের সপ্ন, কিন্তু দেখুন এরা অনেক আগে থেকেই সেটা তৈরি করে বসে আছে। হাসি

(চলবে)

frdayeen


মন্তব্য

মৌনকুহর এর ছবি

চলুক চলুক!!

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ

frdayeen এর ছবি

ধন্যবাদ! ধন্যবাদ!

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

দারুণ..
চলুক

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

frdayeen এর ছবি

ধন্যবাদ! হাসি

ফাহিম হাসান এর ছবি

চলবে মানে? দৌড়াবে ...

শিরোনামটা এরকম করে দেওয়া যায় না - "আজব সব জীবগুলি: আর্চার ফিশ"? ১,২ করে দিলে কোনটা কী নিয়ে লখা পরে ভুলে যাব।

frdayeen এর ছবি

হুমম, ঠিক বলেছেন।
সচল হয়ে গেলে একসাথে একটা সূচিপত্র করা যেতে পারে। হাসি কিন্তু এই মূহুর্তে যেহেতু আগের লেখাগুলির শিরোনাম বদলাতে পারছিনা, মন খারাপ তাই ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য আপাতত থাকুক নাহয়।

রু (অতিথি) এর ছবি

অসাধারণ সব কায়কারবার! আরও লিখুন। পারলে ছবির সূত্রগুলো দিয়ে দিবেন। আপনার লেখায় কিছু সাধারন তথ্য যোগ করতে পারেন, যেমন কোন অঞ্চলে এই প্রজাতি দেখা যায়, বিরল প্রজাতি কিনা, এই সব আর কি।

frdayeen এর ছবি

ছবির প্রথম তিনটি উইকিপেডিয়া থেকে নেয়া। আরো তথ্য দেবার চেষ্টা করবো।

শাব্দিক  এর ছবি

পৃথিবীতে আমি যদি একটি জীব অপছন্দ করে থাকি তা হল মাকড়শা।
কিন্তু আপনার লেখার ভঙ্গী এমন অসাধারন,যে মাকড়শার গল্পও পড়ে ফেললাম। লিখতে থাকুন, খুব মজা পাচ্ছি পড়ে।

frdayeen এর ছবি

সত্যি কথাটা হলো এই জীবটিকে আমিও এড়িয়ে চলি ইয়ে, মানে... । অনেক খুঁজে-টুজে যেগুলোকে একটু সহনীয় মনে হলো, সেগুলো যোগ করলাম।

উচ্ছলা এর ছবি

এটা এবং আগেরটা দুটাই ভাল লেগেছে হাসি

frdayeen এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ হাসি

frdayeen এর ছবি

হাসি

সাফি এর ছবি

বাহ দারুনতো

frdayeen এর ছবি

হাসি

কল্যাণF এর ছবি

অতি চমতকার, চলুক চলুক চলুক। (হাততালির ইমো)

frdayeen এর ছবি

দেঁতো হাসি :D

হিমু এর ছবি

চলুক, চমৎকার হচ্ছে। একটা বাংলা নিক বেছে নিন প্লিজ।

frdayeen এর ছবি

রেজিস্ট্রেসনের সময় বিভ্রান্ত হয়ে সদস্য পরিচয়টাও ইংরেজিতে লিখেছিলাম আরকি ইয়ে, মানে... । তাই আপাতত সচল হওয়ার আগ পর্যন্ত ওটাই ব্যবহার করছি।
অফটপিকঃ আমি আপনার গোয়েন্দা ঝাকানাকার সেইরকম ফ্যান। দেঁতো হাসি

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

হ্যা চলুক, সাথে আছি দেঁতো হাসি

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

frdayeen এর ছবি

দেঁতো হাসি

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

ইমো দিতে পারছিনা। তাই মন খারাপ। (মন খারাপের ইমো)। লেখা দারুন হচ্ছে। (চলুক এর ইমো)

frdayeen এর ছবি

ধন্যবাদ। (হাসিমুখের ইমো)

মুশফিক এর ছবি

দারুন হইসে মামা!

বন্দনা কবীর এর ছবি

অনেকটা শাব্দিকের মতই বলি, পৃথিবীতে দুটি জিনিসকেই আমি ভয় পাই, বিষাক্ত মাকড়শা আর বিষাক্ত মানুষ।
আর দেখুন দিব্যি আপনার এই প্রজাতিটিকে নিয়ে লেখা পোস্টই গোগ্রাসে গিলে ফেললাম!!

চমৎকার হচ্ছে। চলুক আপনার পরিশ্রম আর আমাদের জানা হাসি

বন্দনা কবীর এর ছবি

দারুন হচ্ছে। চলুক...

তারেক অণু এর ছবি

দারুণ। চলুক---

আশালতা এর ছবি

ভালো লাগছে পড়তে। হাসি

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

কৌস্তুভ এর ছবি

এবারেরটা ভালোতর হয়েছে, এরকম চালাতে থাকুন। হাসি

সজল এর ছবি

বেশ ভালো হচ্ছে কিন্তু। সচলে আরেকজন ভালো বিজ্ঞান লেখক বাড়লো।

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

বন্দনা এর ছবি

পোষ্ট পড়ে বেশ জ্ঞান লাভ হোল।আর আপনার লিখার হাত ও ভালো, পড়ে যেতে আরাম পাচ্ছি।

সপ্তর্ষি এর ছবি

ভালো লাগা জানিয়ে গেলাম দেঁতো হাসি

ইস্কান্দর বরকন্দাজ এর ছবি

হাততালি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।