টুকরো আনন্দ

রেশনুভা এর ছবি
লিখেছেন রেশনুভা (তারিখ: বুধ, ০২/০৯/২০০৯ - ৬:৪৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


নতুন কিছু বিশেষ করে যন্ত্রপাতি টাইপ জিনিসপাতি কেনা হলে প্রথম ক’দিন আমি ওটার পিছনেই লেগে থাকি। বাসায় প্রথম সাদাকালো টিভি আসার পরে, বিকাল পাঁচটার আগেই টিভি খুলে সামনে বসে থাকতাম; বর্ণহীন ডোরাকাটা পর্দা দেখতাম। অভ্যাসটা এখনও যায়নি। নতুন বাসাটায় এসে একটা ওভেন কিনে ফেললাম। মাইক্রোওয়েভ, গ্রীল সবকিছুই করা যায়। সন্ধ্যায় মনে হল আলু ভাজা খাব। কিনে আনলাম এবং ওভেনের কার্যকারিতা দেখে নিজেকেই আরো একবার বাহবা দিলাম। ওভেনটা কিনে ফেলার জন্য। কিন্তু সাধের আলু ভাজা আর খাওয়া হল না। কারণ? রয়ে সয়ে, বলছি।

ক্যাডেট কলেজে সুযোগ, পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল, জীবনের প্রথম চাকরিতে যোগদানের নিয়োগপত্র, বিদেশে বৃত্তিপ্রাপ্তি – সবগুলোর অনুভূতি কম বেশি একইরকম। আমাদের অনেকেরই জানা আছে এই অনুভূতিগুলো কি রকম হয়। যাক গে, সেইসব সুখকর অনুভূতির কথা। আলু দিয়ে উদরপুর্তি করতে যাওয়ার মুহুর্তে দেখলাম নতুন ই-মেইল। কি লেখা ছিল ই-মেইলে? যাঁরা আমার লেখা আগে পড়েছেন এবং আমার নামটা মনে আছে, তাঁরা এতক্ষণে বুঝে গেছেন। আর যাঁরা পড়েননি, পৃথিবীর সব কিছু কি বোঝা যায় না বোঝার দরকার হয়? আজ বেশ কিছুদিন পর ঐ রকম কাছাকাছি একটা অনুভূতির পুনরাবৃত্তি ঘটল। ধন্যবাদ, সচলায়তন।

আমার মত একজন অতি তুচ্ছ ব্লগারের জন্য এটা বিশাল পাওয়া। চিৎকার করে সব্বাইকে জানাতে ইচ্ছা হয়। শুনবে শুধু একজনই; আমার অতি বিশ্বস্ত একাকীত্ব। তাইতো এখানে এসে চিৎকারে চিৎকারে আপনাদের কান ভারী করে তোলা। নিজ দায়িত্বে কানে তুলো দিয়ে নেবেন।

আমার অতি কাছের কিছু বন্ধু যাঁরা কিনা আমার এসব চিল্লাপাল্লা অতি মনোযোগের সাথে পড়ে তাঁদের একটা অভি্যোগ আছে। আমি নাকি ইনিয়ে বিনিয়ে সব লেখায় একটা নাই-নাই ভাব নিয়ে আসি। ওরা তো আর জানে না, এটা পাঠক টানার একটা কৌশল মাত্র; এখন কি আর পড়বেন না আপনারা আমার লেখা? আজ আর বেশি সময় নষ্ট করব না; ছোট্ট একটা গল্প দিয়ে শেষ করি।
-------------------------------------------------------

মেয়েটার বয়স সবে মাত্র আঠারো পার হল। সাবালিকা বলা যায়। আজকের দিনটা ওর জন্য একটু অন্যরকম করে সাজানো। মা’র নিস্পৃহ, ভাবলেশহীন মুখটা অগ্রাহ্য করেই বের হয়ে যায় ও বাসা থেকে। পরিপাটি সাজ। কপালে ছোট্ট একটা টিপ। আর নিজের অনভ্যস্ত হাতে খোঁপা করা; মা আজ যে খোঁপা করে দিল না তাই।

রিকশাটা এসে থামে কোন এক রেস্টুরেন্টের সামনে। ভিতরে ভিতরে কেমন যেন রোমাঞ্চ কাজ করে ওর। আবার কষ্টগুলোও কেমন যেন দলা পাঁকিয়ে উঠতে চায়। রেস্টুরেন্টের কর্মচারী দরজাটা খুলে বাড়িয়ে ধরে। ধীরপায়ে ভেতরে ঢোকে ও। ওইতো, ওদিকটায় বসে থাকতে দেখা যায় কাউকে এদিকে পিঠ ফিরিয়ে। সেদিকেই এগোয়। মানুষটার সামনে এসে দাঁড়ায়। উঠে দাঁড়ায় লোকটাও।

অস্ফুটস্বরে ‘বাবা’ বলে ওঠে মেয়েটা। ঐ মাঝবয়সী লোকটার দু’চোখ জলে ভরে ওঠে। জীবনে প্রথমবারের মতন ডাকটা শুনতে পেলেন বোধহয় উনি। মেয়ের হাতটা চেপে ধরে ডুঁকরে কেঁদে ওঠেন। মেয়েটা বাবার বুকে মাথা রাখে; কেমন জানি নির্ভার মনে হয় ওর নিজেকে।

আমরা জানি না কি এক অজ্ঞাত কারণে ঐ ভদ্রলোক নিজের মেয়েকে ছেড়ে গিয়েছিলেন অনেক বছর আগে। আজ না হয় সেই কারণটা অন্ধকারেই থেকে যাক। শুধু জানব, পিতৃস্নেহ বঞ্চিত এক কন্যা খুঁজে পেয়েছে তাঁর অতি আপন একজনকে; আর ঘুঁচে গেল অনেক প্রাপ্তির মধ্য দিয়েও যে অপ্রাপ্তির কষ্ট ছিল মেয়েটার বাবার বুকে।

বেশ খানিকটা বাদে দু’জনকে হাঁটতে দেখা যায় একত্রে এই নগরীর বুকে। মেয়েটার হাতে ছিল তখন একটা মস্ত বড় পুতুল। আর ঐ মধ্যবয়সী মানুষটার হাতে একটা ছবি। মেয়েটারই আঁকা; বাবাকে ঘোড়া বানিয়ে বসে থাকা একটা বাচ্চার ছবি।

ওরা ভালো থাকুক।

----------------------------------------------------------
[লেখাটা শেষ করেছিলাম বাংলাদেশ সময় রাত তিনটার দিকে। প্রায় সাড়ে চার ঘন্টা পরেও আমার আগের পোস্টটা (যদিও অতিথি হিসেবে প্রকাশিত) বহাল তবিয়তে প্রথম পাতায় দেখা যাচ্ছে। কিন্তু আমার যে আর দেরি সয় না। দিয়ে দিলাম, নিজ গুণে ক্ষমা করে দিবেন।]


মন্তব্য

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

পড়লাম হাসি
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...

রেশনুভা এর ছবি

প্রথম হওয়াটাকে যে অভ্যাস বানিয়ে ফেলেছ হে ... দেঁতো হাসি

_প্রজাপতি এর ছবি

অভিনন্দন রেশনুভা হাচল হবার জন্য,আপনার লেখা ভাল লাগে বেশ।

----------------------------------------------
ছিন্ন পাতার সাজাই তরণী, একা একা করি খেলা ...

ছিন্ন পাতার সাজাই তরণী, একা একা করি খেলা ...

রেশনুভা এর ছবি
শাহান এর ছবি

প্রথম অংশের জন্য অভিনন্দন ! হাসি
আলুর কথায় আমাদের সেই মিরপুর-১০ এর মেয়োনিজ সহকারে ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের কথা মনে পড়ে গেল মন খারাপ

দ্বিতীয় অংশের জন্য কি বলব বুঝতেছিনা ... না বলাই ভাল।

রেশনুভা এর ছবি

আহা ... সেই দিনগুলা, সেই বিকালগুলা ... মন খারাপ

প্রবাসিনী এর ছবি

আলু ভাজা কেমন হলো জানাবেন কিন্তু হাসি
_______________________________________________

হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে

________________________________________________

হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে

রেশনুভা এর ছবি

আলু ভাজা তুখোড় হইছে ... দেঁতো হাসি
বৈরুতবাসী সহ দাওয়াত থাকল। চোখ টিপি

অতিথি লেখক এর ছবি

খাড়ান আইতাসি কিন্তুক... চোখ টিপি

স্বপ্নহারা এর ছবি

অভিনন্দন...হাসি
আলুভাজা আমার ব্যাপক প্রিয়...দেঁতো হাসি
-------------------------------------------------------------
স্বপ্ন দিয়ে জীবন গড়া, কেড়ে নিলে যাব মারা!

-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

হাচলায়তনে স্বাগতম !!
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!

সমুদ্র এর ছবি

অভিনন্দন!
আলু ভাজার গল্প শুনে হালকা মেজাজ বিলা হলো, রোযার দুপুর বলে কথা মন খারাপ

"Life happens while we are busy planning it"

রেশনুভা এর ছবি

তোমার এতদিন দেশে থাকা দেইখা আমার যে পরিমাণ মেজাজ বিলা হইছে সেই তুলনায় নিশ্চয়ই ঐ টা কিছু না ... খাইছে

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

অভিনন্দন হাচল রেজওয়ান।

দ্বিতীয় অংশের ব্যাপারে আসলেই কিছু বলার নাই চলুক

রেশনুভা এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ ভাই। আপনাদের সেই মিরপুরে চিকেন তন্দুরী খাওয়া দেইখা মুখে লোল চলে আসছিল। দেশে আসলে এবার আপনাদের সাথে বসে আমিও খাব আশাকরি। দেঁতো হাসি

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

অনেক অভিনন্দন, রেশনুভাই দেঁতো হাসি

গল্পটাও বেশ ভালো লাগল। হাসি
হাত-পা খুলে নিয়মিত লিখতে থাকেন। পূর্ণ সচল হলে নাকি সবাই শীতনিদ্রায় চলে যায়, তাই ভাবতেসি আপনার এই আধা-সচল অবস্থা দীর্ঘায়িত হওয়ার দোয়া করবো নাকি! খাইছে

রেশনুভা এর ছবি

'রেশনুভাই'...ডাকটা তো ভাই আমারে একটানে আগের দিনগুলায় নিয়া গেল। বলব কেন কোন এক সময়।
হাচল অবস্থাটাই বেশ ভালো লাগতেছে। করতে পারো ... দেঁতো হাসি

স্পর্শ এর ছবি

আপনার বলার ভঙ্গি সুন্দর। লিখতে থাকুন সব গল্প হাসি


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

রেশনুভা এর ছবি

'তারার ফুল' পড়লাম। এরকম গল্প পড়লে আর লেখার সাহস হয় না।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

দুর্দান্ত এর ছবি

পড়লাম। কৈ নাই-নাই তো মনে হল না।
গল্পের (ধরে নিয়েছি ওটা গল্প) বাবার প্রথম পরিচয়ে মানুষটা আর লোকটা থাকায় মনে হচ্ছিল দুজন পুরুষের কথা হচ্ছে। আরেকটা খটকা। এতদিন যে বাবা একটিবার দেখা দেয়নি, সেই বাবাকে একটু কাঁদতে দেখেই এই মেয়েটি তাকে ক্ষমা করে দিল?

রেশনুভা এর ছবি

এতদিন যে বাবা একটিবার দেখা দেয়নি, সেই বাবাকে একটু কাঁদতে দেখেই এই মেয়েটি তাকে ক্ষমা করে দিল?

হাহাহা...এইটা ভালো বলছেন। চরিত্রগুলারে দিয়া ঝগড়া-ঝাটি করায় অহেতুক সময় নষ্ট করি নাই।
কৈ নাই-নাই তো মনে হল না।

এইটা বস নাই-নাই টাইপ ছিল না। ভরা-ভরা করার প্রয়াস নিছিলাম। দেঁতো হাসি

রায়হান আবীর এর ছবি

খালি ক্যাডেট কলেজে ভর্তির আনন্দটাই পাইছি। মনে আছে, আনন্দের চোটে আম্মু আব্বুর সবার কোলে ঝাঁপ দিয়েছিলাম।


পুচ্ছে বেঁধেছি গুচ্ছ রজনীগন্ধা

রেশনুভা এর ছবি

কেন? ইনকামিং শুনলে আনন্দ পাও না ...? চোখ টিপি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।