পাত্র-পাত্রী এখন কোথায়?

চুলে জেল মাইরা, গলায় ডিএসএলআর ঝুলায় পাত্র রেডি। পাত্রীর ও ব্যাপক পার্ট। ফতুয়া পইড়া, গলায় ওড়না ঝুলাইয়া, কপালে সানগ্লাস ঠেইলা, শ্যাম্পু করা চুল উড়াইয়া সে আরো সরেস। রু’দ কমার্স এর রাস্তা ধরে হাঁটা শুরু করে ওরা। লা’মতে পিকেত অ্যাভিনিউ এর কাছে আসতেই পাত্রী চিল্লায় বলে “ঐ দেখ, নেপোলিয়নের স্কুল-ইকোলি মিলিতায়ার”। আমগো পাত্রী ইতিহাসের ছাত্রী। পাত্র’র কুকর্মের ইতিহাস ও তাঁর মুখস্থ।
ছবি ১ – ইকোলি মিলিতায়ার

শতে’দ মার্স নামক পার্কটার পাশ দিয়ে আর কিছুদুর যেতেই উঁকি দিল “আইফেল টাওয়ার”। “ইয়েস” বলে এইবার চিল্লানি দিল পাত্র সাহেব। এইরকম চিল্লানি সে আগেও দিছে; প্রোগ্রামিং প্রতিযোগতার সময়। জ্বী, ধরছেন ঠিকই; পাত্র কম্পিউটার বিজ্ঞানী বলে নিজেকে পরিচয় দেয়।
ছবি ২ – আইফেল টাওয়ারের উঁকি

আর তর সয় না। মেট্রো নেয় ওরা। নামে ত্রোকাদেরো স্টেশনে। নেমে কয়েক পা এগিয়ে বামে তাকালেই বস আবার সমহিমায় নিজের উপস্থিতি জানান দেয়।
ছবি ৩ - আইফেল টাওয়ার

ওরা নিজেরাও অনেক ছবি তোলে, একে ওকে ডেকে। সর্বসত্ত্ব ওদের। দিতে পারলাম না সেইসব সিরাম ছবি; সরি।

পাত্র-পাত্রী বেজায় রোমান্টিক। সীন নদীর ধার ঘেঁষে এইবার হাঁটা দেয় ওরা।
ছবি ৪ – সীন নদী আর ঐ দেখা যায় আইফেল টাওয়ার

হাঁটতে হাঁটতেই পৌঁছে যায় ডায়না-ডোডির সেই দারুণ প্রেমের নিদারূণ পরিণতি যেখানে হয়েছিল সেখানে; প্লাস’দ আলমায়।
ছবি ৫ - প্লাস’দ আলমা

মনটা ভার হয় দু’জনেরই। হাত ধরাধরি করে নীরবে এগিয়ে যায়। এসে পড়ে “স্ট্যাচু অব লিবার্টি” এর সামনে। না না, ঠিকই পড়ছেন। কারণটা পাত্রীর মুখ থেকেই শুনুন। “জানো না তো কিছু। খালি কম্পিউটার গুতাও। ম্যানহাটানের টা ফ্রান্সই দিছিল আমেরিকারে ১৮৮৬ সালে। এর থেকে একটু বড় আছে ঐটা।”
ছবি ৬ – স্ট্যাচু অব লিবার্টি, প্যারিস

ক্লান্ত ওরা দুপুরের খাবারটা সেরে নেয়। পাত্রী শুধু সালাদ খায়। পানি খেলেও ইদানীং ওর মনে হয় গায়ে লেগে যাচ্ছে তাই …
ছবি ৭ – পাত্রীর সালাদ

মের্সি বলে বেরিয়ে আসে ওরা খাবারের দোকান থেকে। সবোন (Sorbonne) বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের পথ ধরে পন্টিও (Pantheon) দেখে সেইন্ট মাইকেল এর মনুমেন্টের সামনে গিয়ে পড়ে।
ছবি ৮ - পন্টিও

ছবি ৯ - সেইন্ট মাইকেল এর মনুমেন্ট

রাস্তার ওপারেই দেখা যায় নটরডেম ক্যাথেড্রাল। বিশাল লাইন দেখে আর ওপরে ওঠে না ওরা।
ছবি ১০ - নটরডেম

পাত্রী বলে যায় নটরডেম মানে আওয়ার লেডী। পাত্র অন্য দিকে তাঁকিয়ে মাথা নাড়ায়। কোন দিক তা তো বুঝছেন? এই যে, এইদিকে...
ছবি ১১ - বালিকা

সামনে খানিক এগোলেই প্যারিস টাউন হল। সেই জায়গা পেরিয়ে গিয়ে সেন্টার পম্পিদু মানে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী। লাইব্রেরীর সামনে বিশাল চত্বরেই একটু জিরিয়ে নেয় ওরা। ২+২=৪ ইউরো দিয়ে কেনা কোন আইসক্রিম খায়। পাত্রী তো খেতেই চায় না; মোটা হয়ে যাবে বলে। শেষতক খায়।
ছবি ১২ - প্যারিস টাউন হল

ছবি ১৩ - সেন্ট্রাল লাইব্রেরী

মেট্রো ধরে ওরা এবার যায় স্যাক্রা ক্যার (sacre coeur) কাছে। মেট্রোতে ওঠার আগে অবশ্য দেখে নেয় বাস্তিলের পতনের স্মৃতিস্তম্ভকে।
ছবি ১৪ - বাস্তিল পতনের স্মৃতিচিহ্ন

স্যাক্রা ক্যার ও একটা চার্চ। বেশ উঁচুতে। কেবল কারে উঠতে উঠতে পাত্রী আবার বলে যায় “স্যাক্রা ক্যার মানে পবিত্র হৃদয়; বুঝলা, তোমার মতন না।” পাত্র বোকা হাসি দেয়।
ছবি ১৫ - স্যাক্রা ক্যার

ঘোরা শেষ হলে পাত্র’র জোড়াজুড়িতেই মৌলিন হুজ (Moulin rouge) যায়। বেশি কাছেও যেতে দেয় না পাত্রী, পাত্র কে। কেন? এটা যে প্যারিস এর রেড লাইট এলাকা। এই তথ্যটা কিন্তু আমাদের পাত্র সাহেব আগেই জানতেন।
ছবি ১৬ - মৌলিন হুজ

দিনের আলো ফুরিয়ে আসতে চায়। ঘোরা তবু শেষ হয় না। পরবর্তী গন্তব্য শঁজেলিঁজের কাছে ভিক্টরি গেট।
ছবি ১৭ - শঁজেলিঁজে-দুরে ভিক্টরি গেট

ছবি ১৮ - ভিক্টরি গেট, প্যারিস

ক্লান্ত ওরা নাস্তা সেরে নেয় কাছেপিঠের এক ম্যাকডোনাল্ডসে। বিখ্যাত ফরাসী ‘কুসন’ আর কফি।
ছবি ১৯ -

খাওয়া শেষেই আবার দৌড়। মেট্রো নিয়ে প্লাস’দ লা কনকর্ড। নেমেই চোখে পড়ে ১৮২৯ সালে মিশরীয়দের দেয়া ‘অবলিসক্যু’ (obelisque)। দূরে আইফেল টাওয়ারও দেখা যায়। বড়ই সৌন্দর্য।
ছবি ২০ - অবলিসক্যু

পাত্রী তাড়া দিয়ে ওঠে এইবার ছবি তোলায় মগ্ন পাত্রকে। রাতের আইফেল দেখতে যাবে বলে। যাওয়ার পথে ট্রেনেই চোখে পড়ে আইফেল টাওয়ার। তড়িঘড়ি করে কম্পমান হাতে ছবি তুলে নেয় পাত্র।
ছবি ২১ - চলন্ত ট্রেন থেকে আইফেল টাওয়ার

পাশাপাশি বসে ওরা দু’জনে। সামনে রাতের আইফেল টাওয়ার।
ছবি ২২ - রাতের আইফেল

ছবি ২৩ - আইফেলের ছায়া

অনেকক্ষণ বসে থেকে উঠে পড়ে দু’জন। টাওয়ারের উপরে উঠবে বলে। দো’তলায় লিফট পরিবর্তন করে তিনতলায় উঠে ওরা। চারদিক খোলা; মিষ্টি মিষ্টি, হিম হিম বাতাস। রাতের প্যারিসের অনেকখানি চোখে পড়ে।
ছবি ২৪ - রাতের প্যারিস

ঠান্ডা বাতাসে ওরা শরীরের উষ্ণতা ভাগাভাগি করে নেয়। ছায়া দু’টো মাটিতে পড়ার অনেক আগেই মিলেমিশে যায়।