অতীত - ৩

রেশনুভা এর ছবি
লিখেছেন রেশনুভা (তারিখ: রবি, ০১/১১/২০০৯ - ১১:৪০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


তোমায় নিয়ে অনেকদিন হাঁটা হয় না। সেই যে মনে আছে, কার্জন হলের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের নিচে বসে তুমি অপেক্ষা করতে। আমি বাসে করে এসে হাইকোর্টের সামনে নেমে রুদ্ধশ্বাসে আসতাম। এসে দেখতাম রোদের আলো থেকে বাঁচার জন্য তুমি ওড়না মাথায় দিয়ে বসে আছো। কতদিন তোমার ওড়নার গন্ধ নেয়া হয় না।

তারপর সেখান থেকে উঠে সুইমিং পুলের পাশের ফুটপাত ধরে হেঁটে যাওয়া। ঐ যে, ঐখানে একটা কোক-ফান্টার গাড়ী সবসময় থাকতো। একটা কোক কিনে ভাগ করে নিতাম আমরা। ওড়নাটারও এক ভাগ আমার মাথায় এসে পড়ত ঐ দুপুর রোদে। এখন আমরা আর কিছুই ভাগ করি না। কিছুই না।

শহীদ মিনার অবধি এসে একটু জিরিয়ে নিতাম গাছের ছায়ায়। মনে পড়ে, ওরাও ওখানে বিশ্রাম নিত। মনে নেই? ঐ যে, একদিন হালিম নামের সেই ছোট্ট ছেলেটার সাথে তোমার কত গল্প। আমি তো রীতিমতন ঈর্ষা করা শুরু করে দিয়েছিলাম হালিমকে। ওর ছেড়া গেঞ্জী দেখে তুমি ওকে ফার্মগেটের একটা ‘খালি চল্লিশের’ দোকান থেকে গেঞ্জী কিনে দিয়েছিলে। ও জানে না; তুমি-আমি কখনোই আর একত্রে যেয়ে ওর জন্য কিছু কিনে নিয়ে আসতে পারবো না।

সেখানে থেকে বাদাম খেতে খেতে যেতে থাকি টিএসসির দিকে। যাওয়ার পথেই তোমার গাড্ডা খেতে হয় মাথায়, আমার চোখটা একটু বেয়াড়া হয়ে এদিক ওদিক যেতে চায় বলে। তুমি ফিরে যেতে চাও। আমি পথ আগলে রাখি। খানিক বাদে তুমি আবার আমাকে আগলে নিলে আমরা এগিয়ে যাই। তোমাকে হাওয়াই মিঠাই কিনে দেই গোলাপী রঙের। কে জানতো তখন, আমাদের সম্পর্কটাও এরকম হাওয়াই মিঠাই এর মতন চুপসে যাবে একসময়।

টিএসসিতে বসে থাকি আরো অনেকের সাথেই। একটা বিড়ি ধরানোর চেষ্টা করতেই তুমি ধমকে ওঠো। মাঝেমাঝে দাবী করতে তুমিও খাবে আমার সাথে সাথে। আমি হাসতাম। তুমি রাগ করে মুখ ফিরিয়ে নিতে। আমি দেখতাম তোমাকে। কপালের পাশের অল্পক'টা চুল অবাধ্য হয়ে তোমার নাকে মুখে খেলা করে। নাকটা ঘেমে ওঠে অল্প করে। তুমি আরো একটু দূরে সরে বস। আমি চুলটা সরিয়ে দিতে যেয়ে আলতো করে স্পর্শ করি তোমাকে। ঠোঁটের এক কোণা দিয়ে হেসে ওঠ তুমি। সাথে সাথেই ললি আইসক্রীম খাওয়ার বায়না করে বস। তুমি এখন আর কোন বায়নাই কর না আমার কাছে।

এভাবেই হেঁটেছি তোমার সাথে অনেকদিন। অনেক অনেক দিন।

পথ থেকে আমাদের পায়ের ছাপগুলো মুছে গিয়েছে অনেক আগেই। আমাদের দু’জনের পায়ের ছাপ আর কখনোই পড়বে না একসাথে। পথ তা জানে না।

অতীত - ১
অতীত - ২


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

" কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে..." *তিথীডোর

রেশনুভা এর ছবি

সত্ত্বায় বেদনাই জাগ্রত; আনন্দের মাঝে তাই নিজেকে অস্তিত্বহীন মনে হয়।

সাইফ তাহসিন এর ছবি

দুর্দান্ত লাগল, আগে পড়ি নাই আপনার এই সিরিজটা
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদ্বপি গরীয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

রেশনুভা এর ছবি

সাইফ ভাই অ্যাডান তাতাড়ি। দেঁতো হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

রেশনুভা ভাই বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা গুলি মনে করিয়ে দিলেন, আমারও সেই দিন আর ফিরে আসবে না। যেদিন যায়, সেদিন আর ফিরে আসে না, এটাই নিয়তি। যে যায় তার আর খোঁজ নেয়া হয়না, এটা মানুষের ধর্ম। যে আসবে আরো কাছে, তাঁকে নিয়েই কাটুক না হয় সময় ভালোবাসার খেলাখেলে!!!!!!
দলছুট।

রেশনুভা এর ছবি

মনের উপর গাড় পরত, আসলে কাছে যায় যে দেখা।

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

দিলাম ফার্স্ট কমেন্ট, এইবার ঘুমাইতে যান দেঁতো হাসি
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

নাঃ, আগে আরো তিনজন আছে মনে হচ্ছে দেঁতো হাসি
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...

রেশনুভা এর ছবি

দেঁতো হাসি
কেমন আছো? দৌড়ানি খাচ্ছো মনে হয়?

ভ্রম এর ছবি

কিরে ভাই মনটা তো খারাপ করে দিলেন...

সুন্দর লেখা। হাঁটাহাঁটির সঙ্গী মনে হয় একটা সময়ে আর কারোরই থাকেনা। তারচেয়ে বরং শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একা হাঁটাই ভালো।

রেশনুভা এর ছবি

মন খারাপ করে দিতে পারলেই তো সার্থকতা। দেঁতো হাসি

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- ওড়নার গন্ধ পান না? মিয়া কপালে আপনের আরও গাড্ডা আছে দেখতাছি। ভূতের কিল তো খান নাই সুখে থাইকাও। বুঝবেন নে মজা।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

হো হো হো

রেশনুভা এর ছবি

বুঝি নাই ধুগো ভাই। বুঝায় দেন। মন খারাপ

পেন্সিলে আঁকা পরী এর ছবি

"জানালার ফাঁক দিয়ে ভোরের সোনালী রোদ এসে আমারে ঘুমাতে দেখে বিছানায়,
আমার কাতর চোখ , বিমর্ষ ম্লান চুল- এই নিয়ে
খেলা করে; জানে সে যে বহুদিন আগে আমি করেছি কি ভুল,
পৃথিবীর সবথেকে ক্ষমাহীন গাঢ় এক রূপসীর মুখ ভালোবেসে!"

অতীত নিয়ে বসে থাকার কোন মানে নাই।মাঝে মাঝে জীবনানন্দ পড়েন আর ভুলে যান সবকিছু হাসি

-------------------------------------------------------
আমি সেই অবহেলা, আমি সেই নতমুখ, নীরবে ফিরে চাওয়া, অভিমানী ভেজা চোখ।

-------------------------------------------------------
আমি সেই অবহেলা, আমি সেই নতমুখ, নীরবে ফিরে চাওয়া, অভিমানী ভেজা চোখ।

রেশনুভা এর ছবি

এই কী প্রথম? ভালো লাগলো।
জীবনানন্দ বেশি পড়ি নাই। পড়বো।

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

লাইফটা রেললাইন না। তাই পাশাপাশি'র সাথে সামনে-পিছেও হাটা যায়, আবার দুইজনের রাস্তা আলাদাও হয়ে যায়। এই জন্যেই লাইফ হালারে আমি ভালু পাই
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

রেশনুভা এর ছবি

মন খারাপ
আমি ভালু পাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি।

প্রবাসিনী এর ছবি

ভাইয়া,

লেখাটা খুব সুন্দর হয়েছে। আমার খুব খুব খুব ভাল লেগেছে।

আর পায়ের ছাপ না পড়লে নাই, এখন সবাই জুতা পড়ে।
________________________________________________

হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে

________________________________________________

হইয়া আমি দেশান্তরী, দেশ-বিদেশে ভিড়াই তরী রে

রেশনুভা এর ছবি
অনিকেত এর ছবি

রেশনুভা,

চমৎকার লাগল। তোমার লেখার হাতটা আসলেই খুব ভাল।
আরো লেখা আসতে থাকুক।

রেশনুভা এর ছবি

আপনি অনেকদিন পর অনিকেত'দা। ভাবছিলাম ভুলে গেছেন। একটু চাপা কষ্টও ছিল। এখন আর নাই। দেঁতো হাসি

অনিকেত এর ছবি

ভাবছিলাম ভুলে গেছেন

আরে ধুর, ভুলে যাব কেন!
আসলে বস, বিস্তর দৌড়াদৌড়ির মাঝে আছি----

ভাল থেকো, সব সময়

সমুদ্র এর ছবি

ভালো লাগলো।
হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে হয় মাঝেসাঝে...

"Life happens while we are busy planning it"

রেশনুভা এর ছবি

আছো কেমন? ব্যস্ত? চলে আস না একদিন।

সমুদ্র এর ছবি

ব্যস্ততার মাঝেই আছি। চলে আসার ইচ্ছা আসে একদিন হাসি

"Life happens while we are busy planning it"

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার এই ধরনের লেখা হইতে ১০০ গজ দুরে থাকুম।যদিও বার বার পড়তে মন চায়।

স্বপ্নদ্রোহ

রেশনুভা এর ছবি

মন চাইলে বার বার পড়েন। হাসি

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

রেসশ্নুভাই, সুন্দর লিখেছেন, কিন্তু ভালো লাগলোনা, সত্যি বলতে অসহ্য লাগলো! কথাগুলো উলটো দিক থেকে সত্যি ছিলো আমার জন্য! বাট পাস্ট ইজ পাস্ট!

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

রেশনুভা এর ছবি

এতো সহজে কী মুছে ফেলা যায় ... ?
ভালো থাকবেন।

অবাঞ্ছিত এর ছবি

হুমম। মন খারাপ হয়ে গেল।

__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

রেশনুভা এর ছবি

হাসি
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

অতিথি লেখক এর ছবি

রেশনুভাই...আগেও কইছি আবারও কইতাছি "যত প্রেম ততো জ্বালা"। দেঁতো হাসি
আর কতো বিরহের গান শোনাবেন? এগুলার চেয়ে কৌতুক-রিমিক্স ই বরং ভালো। চোখ টিপি
/
ভণ্ড_মানব

রেশনুভা এর ছবি
আহির ভৈরব এর ছবি

খুব ভালো লাগলো লেখাটা। সচলায়তনে এই লেখাগুলি পড়ে স্মৃতিকাতর হয়ে যাই, কী যন্ত্রণা!
-----------------------------------------------------
আর কিছু না চাই
যেন আকাশখানা পাই
আর পালিয়ে যাবার মাঠ।

-----------------------------------------------------
আর কিছু না চাই
যেন আকাশখানা পাই
আর পালিয়ে যাবার মাঠ।

রেশনুভা এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ আহির।

বালক এর ছবি

এই প্রথম পড়লাম আপনার লেখা। ভালো লাগলো।

_____________________________________________
তুমি হতে পারো একটি স্বার্থক বিষাদের সংজ্ঞা। স্বার্থক নদী, স্বার্থক ক্লান্তি অথবা স্বার্থক স্বপ্ন।

____________________________________________________________________
"জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক;
আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ হয়তো
এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।"

রেশনুভা এর ছবি
মূলত পাঠক এর ছবি

ভালো লাগলো। তবে তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেলো, আরেকটু বড়ো করে লেখেন না।

রেশনুভা এর ছবি

অনেকদিন আপনার কোন মন্তব্য না দেখে ভাবছিলাম আপনি মনে হয় আমার উপর বিরক্ত হয়ে আমারে ত্যাগ করছেন। একটু স্বস্তি পেলাম আজকে। হাসি
বড় করে লেখার চেষ্টা থাকবে।

বিপ্রতীপ এর ছবি

চলুক...চলুক
লেখা ভাল্লাগলো...আগের দুটি পর্বও পড়লাম।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ব্যাক্তিগত ব্লগ | আমার ছবিঘর

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।