পঞ্চমের সত্তর, সত্তরের পঞ্চম-১

মনি শামিম এর ছবি
লিখেছেন মনি শামিম [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ১০/০৭/২০১৩ - ৬:৪৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

rd-burman-1

কিশোর কুমার, দেব আনন্দ, রাহুল দেব বর্মণ এবং অন্যরা। ছবির লিংকঃ http://images.search.conduit.com/ImagePreview/?q=rahul+dev+burman&ctid=CT2849853&SearchSource=15&FollowOn=true&PageSource=Results&SSPV=&CUI=UN04890437331050634&UP=UP_ID&UM=UM_ID&start=0&pos=0

"একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ টিপস আমি আমার বাবার কাছ থেকে পেয়েছি, আর তা হল তাৎক্ষনিক সুর আহরণ। যখন তুমি পাখির কিচিরমিচির শোন আর মনে মনে সেটাই গুনগুন কর তখন জীবনের একটি বিশেষ দিক নিয়ে তোমার মনে ভাবনা জাগে- তাঁর মানে তোমার সামনে রয়েছে বিশেষ একটি অবস্থা যাকে সুরে রূপান্তরিত করা হচ্ছে। বাবাকে যখন প্রথম বলি যে মাঝে মাঝে স্বপ্নে আমি সুর শুনি, বাবা বললেন যে সাথে সাথে যেন ঘুম থেকে আমি উঠে পড়ি আর সেই সুরটিকে রেকর্ড করে ফেলি অথবা সেই সুরকে নোটেশনের আকারে লিপিবদ্ধ করি যেন পরের দিন সকালেই আমি তাকে ইম্প্রোভাইজ করতে পারি।" - রাহুল দেব বর্মণ

সত্তরের দশকের সূচনালগ্ন। ভারতীয় চলচ্চিত্রের সঙ্গীত এই দশকের আগ পর্যন্ত ছিল মূলত রাগনির্ভর। উর্দু লিরিক কে সঙ্গী করে, ভারতীয় রাগ রাগিণীকে প্রাধান্য দিয়ে সুর সংযোজিত হত। নৌশাদ, ও পি নাইয়ার, সি রামচন্দ্র, শচিন দেব বর্মণ, সলিল চৌধুরী, শঙ্কর-জয়কিশন এবং মদন মোহন ছিলেন তখন সুরের জগতের রাজা মহারাজা। একেক জনের একেক রকম স্টাইল ছিল। পরীক্ষা নিরীক্ষাও একেকজন একেক ভাবে করেছেন। সঙ্গীতে তাঁরা কেউই বিপ্লব ঘটান নি। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতকে ভিত্তি ধরে কখনো বিপুলা ভারতের বিভিন্ন এলাকার ফোক গান কিংবা কখনও পাশ্চাত্য ক্লাসিকাল সঙ্গীতের খানিক ফিউশন ঘটিয়েছেন। কারো ফোক সঙ্গীতে দখল ছিল আবার কারোর বা সলিল চৌধুরীর মতন পাশ্চাত্য ক্লাসিকাল সঙ্গীতে। তবে পাশ্চাত্য সঙ্গীতের জনপ্রিয় আধুনিক ধারাকে সেভাবে অনুসরণ করেন নি কেউ। ভারতের স্বাধীনতা প্রাপ্তির আগে পরে গজল গানের ব্যাপক জনপ্রিয়তা ছিল। উর্দু ছিল গানের লিরিক এবং চলচ্চিত্রের ভাষা। এই ট্রেন্ড ষাটের দশকের শেষ পর্যন্ত বলবৎ ছিল। ষাটের দশকে তরুণ তরুণীদের হৃদজগতের বদলে যাওয়া মানচিত্র ঠাই পায়নি ভারতীয় চলচ্চিত্রে তখন পর্যন্ত।

তবে দিন বদলে যাচ্ছিলো, সময়ের হেরফেরে মানুষের রুচির পরিবর্তন হচ্ছিল। ষাটের দশকের শেষ থেকেই তরুণ তরুণীরা তখন সারা বিশ্বে সমাজ পরিবর্তনের দাবী জানাচ্ছেন, হিপ্পি আন্দোলন দানা বেঁধে উঠছে, বিদ্যমান সমাজ ব্যাবস্থায় তিতি বিরক্ত হয়ে তাঁরা ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হতে চাইছেন সমাজ থেকে। এদিকে ভিয়েতনাম যুদ্ধ এবং সমাজতন্ত্রের জয়জয়কার পুঁজিবাদের ভিত নাড়িয়ে দিতে শুরু করেছে। এইসব পরিবর্তন থেকে ভারতবর্ষের সুরের জগত আর বিচ্ছিন্ন থাকতে পারে কতদিন! কিন্তু নিজের নিজের সিংহাসনে অটল সুর সম্রাটরা নিজেদের পরিবর্তনে অনিচ্ছুক, অনাগত কালের ধ্বনি শোনার মতন কান ছিল না কারোর। সঙ্গীতে নতুন বিট, নতুন রিদম, নতুন বাদ্যযন্ত্রের ব্যাবহার এবং নতুন ধ্বনি যেখানে ছিল অবধারিত, তখন সঙ্গীতকে একটু ভিন্ন মোড়কে উপস্থাপন করার চেষ্টা, আরও আধুনিক ঢঙে পরিবেশন করার ইচ্ছা কারোর মধ্যেই সেভাবে দেখা যায়নি। তবে পরিবর্তন এল, আর তা এল যখন, ভারতীয় সঙ্গীতের ভিত সমূলে নাড়া দিয়ে গেল। আর এই পরিবর্তন এল পঞ্চমের হাত ধরে, চুপি চুপি কিন্তু অবধারিত ভাবে।

সন ১৯৭০ হল ভারতীয় চলচ্চিত্র সঙ্গীতে পঞ্চমের পাকাপাকিভাবে বসার কাল। এর আগে ১৯৬৬ সালে তিসরি মাঞ্জিলের গানে ভিন্নধর্মী এবং আদ্যপান্ত আধুনিক সুর দিয়ে নিজের ক্ষমতার জানান দিলেও প্রবল পরাক্রমশালী পিতার রাজ্যে সাধারণ যুবরাজ হিসেবেই দিন কাটাচ্ছিলেন পঞ্চম। কাজ পাচ্ছিলেন না তেমন। কাজ না পেলেও হবে কি, তিনি তখনই একজন প্রশিক্ষিত সুরকার। পনেরো বছর বয়স থেকে যিনি পড়াশুনা গোল্লায় তুলে দিনের বেশীর ভাগ সময় কাটান একজন ফুল টাইম সহকারী সুরকার হিসেবে, একত্রিশ বছরে এসে তিনি যে একজন পরিপক্ক সুরকার হবেন, তাতে নিশ্চয়ই অবাক হবেন না কেউ। অনেকে পঞ্চমকে আখ্যায়িত করেন জিনিয়াস হিসেবে। হ্যাঁ, জিনিয়াস বটে তিনি কিন্তু এই জিনিয়াস আকাশ থেকে টুপ করে আসেনি। এর পেছনে দীর্ঘদিনের সাধনা এবং তপস্যার ইতিহাস রয়েছে যা আমাদের আজও অজানা। তাঁর কারণ হল তিনি তাঁর গান এবং সুর দিয়ে এমন আচ্ছন্ন করে রেখেছেন তাঁর ভক্ত বৃন্দদের যে তাঁর সেই কঠোর কঠিন দিনগুলি নিয়ে আলোকপাত করার মতন সময় ব্যয় করেননি কেউ।

১৯৫৬ থেকে ১৯৭০, দীর্ঘ চোদ্দ বছর পঞ্চম একটানা শুধু শিখে গেছেন, বাজিয়েছেন প্রায় সব ধরণের বাদ্যযন্ত্র,কখনও সেতার, কখনও তবলা, আবার কখনও মাউথ অর্গান! আর সবচাইতে বেশী যে কাজটি করেছেন তা হল, তাঁর বাবাকে ফলো করা। শচীন কর্তার ফিউশন তিনি খুব মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করেছিলেন নিশ্চয়ই। শচীন কর্তা তাঁকে বলেছিলেন যে সিনেমার সুর দিতে গেলে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের ওপর চাই টোটাল কমান্ড। এই শিক্ষাটি পঞ্চম বোধ হয় পই পই করে কাজে লাগিয়েছেন সারা জীবন। দীর্ঘ চোদ্দ বছর তিনি সাধনা করেছেন নতুন শব্দের, নতুন ধ্বনির। এবং সনাতন বাদ্যযন্ত্র দিয়ে যদি তাঁর কাঙ্ক্ষিত সঙ্গীতকে না পেয়েছেন, তবে পাশ্চাত্য বাদ্যযন্ত্রকে তিনি গভীরভাবে শুনেছেন। আর এই পাশ্চাত্য বাদ্যযন্ত্র মনোযোগ দিয়ে শুনতে গিয়েই তিনি পেয়েছেন এক নতুন পথের ইশারা। যেটি তাঁর আগে কেউ করার কথা ভাবেননি, অর্থাৎ দেশী এবং পাশ্চাত্য আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের এক অভিনব মিশ্রণ এবং দেশী শাস্ত্রীয় সুরের মধ্যে তাঁকে এক অনুপম আকার দেয়া, সেটির চর্চা তিনি করে গেছেন নিরন্তর! এর আগেই আমরা বলেছি, যে এই পনেরো বছরে নিজে সুর সংযোজন করার সুযোগ তিনি খুব বেশী পান নি, তবে এটিই হয়ত তাঁর জন্য শাপে বর হয়েছে। নতুন নতুন বাজনা, নতুন নতুন সুর, নতুন নতুন ধ্বনির খোঁজ এবং আরও আরও বেশী ফিউশন করবার আকাংখা তাঁকে একজন কালজয়ী সঙ্গীতকার হিসেবে পরবর্তীতে খুব অল্প সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করতে সহযোগিতা করেছে। এবং কঠিন এক অধ্যাবসায় শেষে আমরা যে পঞ্চমকে সত্তর দশকের শুরুতে পেলাম, তিনি হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত, ফোক সঙ্গীত এবং পাশ্চাত্য সঙ্গীত চেটেপুটে খাওয়া এক সম্পূর্ণ আধুনিক সঙ্গীতকার আবার সেই সাথে একজন অনুপম কণ্ঠশিল্পীও। আমরা আরও দেখতে পেলাম যে মাত্র দুই বছরের মাথায় তিনি ভারতীয় চলচ্চিত্র সঙ্গীতের মোড় ঘুরিয়ে দিলেন এক হাতে!

সুরকার হিসেবে পঞ্চমের দিন বদলের সূচনা হল ১৯৭০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত জনপ্রিয় 'কাটি পাতাং,'এবং এরপরে ১৯৭১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত 'ক্যারাভ্যান' এবং 'অমর প্রেম' চলচ্চিত্রের হাত ধরে। 'আরাধনা' চলচ্চিত্র নির্মাণের সময় শচীন কর্তা অসুস্থ হলে পঞ্চম বাকি কাজ সেরে ফেলেন। এটা সবচাইতে বেশী কাছে থেকে জানেন আরাধনা চলিচ্চত্রের পরিচালক শক্তি সামন্ত। শক্তি সামন্ত কি ঠিক এই কারণেই তাঁর কাটি পাতাং চলচ্চিত্রের সুর করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন পঞ্চমকে? কাটি পাতাং-এ কিশোর কুমারের কণ্ঠে গীত তিনটি সোলো গান, পিয়ার দিওয়ানা হোতা হ্যায়, ইয়ে শাম মাস্তানি এবং ইয়ে যো মুহাব্বাত হ্যায় তাঁকে হিন্দি চলচ্চিত্রে প্রধান পুরুষ কণ্ঠশিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে অনেকখানি সহযোগিতা করে এবং মোহাম্মদ রফির গনগনে সূর্যকে একপ্রকার অস্তাচলেই পাঠিয়ে দেয়। এছাড়া লতার কণ্ঠে না কোই উমাং হ্যায় গানটিও ছিল চমৎকার। মজার ব্যাপার হল এই ১৯৭০ সালেই উত্তম কুমার এবং তনুজা অভিনীত 'রাজকুমারী' নামক একটি বাংলা চলচ্চিত্রে সুর দিয়েছিলেন পঞ্চম, যার দুটি গান তিনি ভিন্ন দুইটি চলচ্চিত্রে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। কাটি পাতাং সিনেমায় গুন গুন গুন কুঞ্জে হয়ে গেল পিয়ার দিওয়ানা হোতা হ্যায়, আর এ কি হল হয়ে গেল ইয়ে কিয়া হুয়া যেটি অমর প্রেম চলচ্চিত্রে আমরা পাই। রাজকুমারি রিলিজ হবার একদিনের মধ্যেই গান সহ এই চলচ্চিত্রের ভরাডুবি হলেও কাটি পাতাং এবং অমর প্রেম সত্তরের দশকের শুরুর দিকে বলিউডের সবচাইতে ব্যবসা সফল চলচ্চিত্রের তালিকায় খোদাই হয়ে রইল! এভাবে বাংলা থেকে হিন্দি কিংবা হিন্দি থেকে বাংলা গানে রূপান্তরের কাজ আরও করেছেন পঞ্চম পরবর্তী সময়কালে। কাটি পাতাং এর ইয়ে শাম মাস্তানি গানটিও আকাশ কেন ডাকে গানটির হিন্দি সংস্করণ, তবে আমি এখনও জানিনা এই গানটি কোনও বাংলা চলচ্চিত্রে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল কিনা।

কাটি পাতাং চলচ্চিত্রে আশার কণ্ঠে একটি ক্যাবারে গান ছিল, মেরা নাম হ্যায় শাবনাম, এই গানটিতে পঞ্চম এক অভাবনীয় কাজ করে ফেলেন। সুর ছাড়া গানের কথাগুলিকে চড়া বাদ্যযন্ত্রের মাঝে বসিয়ে দেন। এটাই কি ভারতে সঙ্গীত জগতে প্রথম সার্থক র‍্যাপ গান? প্রথম র‍্যাপ হোক কি না হোক, এই গানে আর একটি জিনিস লক্ষণীয় ছিল। এই গানের কথায় যৌনতা ছিলনা, ছিল রহস্যের ঘনঘটা, আর পঞ্চম সেই কথার সাথে ওয়েস্টার্ন যন্ত্রসঙ্গীতের চড়া প্রয়োগের মাধ্যমে এক অভিনব সঙ্গীতের আয়োজন করেছিলেন। আর এই আয়োজন যেন এক উন্মাতাল যৌনতাকে নির্দেশ করেছিল! শুধু যন্ত্রসঙ্গীতের প্রয়োগে যৌনতার এমন আহ্বান এর আগে আর কেউ করেন নি এমনকি পঞ্চমের পরেও এমনটি দেখা যায়নি। নব্বইয়ের দশকে ভারতীয় চলচ্চিত্রের গানে যে স্থুল যৌনতার ইঙ্গিত পাই তা মুলত এসেছিল লিরিকের মধ্য দিয়ে, আর পঞ্চম তার শৈল্পিক প্রকাশ ঘটিয়েছিলেন শুধু যন্ত্রসঙ্গীতের ব্যাবহারের মাধ্যমে, এ বড় কম অর্জন নয়!

নাসির হুসেনের ব্যানারে নির্মিত তিসরি মাঞ্জিল-এর পর সত্তর দশকের গোড়াতেই নাসিরের প্রিয় নায়িকা আশা পারেখকে নিয়ে আরেকটি থ্রিলার নির্মিত হয়, 'ক্যারাভ্যান।' এই সঙ্গীতের দায়িত্ব দেয়া হয় যথারীতি পঞ্চমকেই। পঞ্চমও মন প্রাণ উজাড় করে এই মিউজিকাল চলচ্চিত্রে সুর দেন। ক্যারাভ্যানের সবগুলি গানই ছিল সিচুয়েশনাল। আর গানগুলিতে যেন জান ভরে দিয়েছিলেন পঞ্চম। মোট আট টি গান ছিল এই সিনেমায়। আভ যো মিলে হ্যায় তো, কিতনা পিয়ারা ওয়াদা হ্যায়, দিলবার দিল সে পিয়ারে , দাইয়া রে ম্যায়, পিয়া তু আভ তো আজা, গোরিয়া কাহাঁ তেরা দেস রে, চাড়তি জাওয়ানি মেরি, হাম তো হ্যায় রাহি দিল কে। সেই সময় এই চলচ্চিত্রের প্রথম সাতটি গানই ব্যাপক জনপ্রিয় হয়। এর মাঝে পঞ্চমের জীবনে সবচাইতে উল্লেখযোগ্য গান হয়ে থেকেছে 'পিয়া তু আভ তো আজা,' যেখানে তিনি নিজেও কণ্ঠ দেয়ার সুযোগ পেয়েছেন, হিন্দি ক্যাবারে গানের ক্ষেত্রে এই গান একটি মাইল স্টোন হয়ে আছে আজও। এই গানটিতে আমরা যে আশাকে পাই, এমনটা এর আগে শুধু তিসরি মাঞ্জিলের আ আ আজা গানের দুটি অন্তরায় আমরা পেয়েছিলাম। তবে সেটি ছিল রফির সাথে একটি ডুয়েট। পিয়া তু আভ তো আজা গানে পঞ্চম যেন একেবারে স্বরূপে আবির্ভূত। চড়া পিচে আশা গাইছেন একদম খুল্লাম খুল্লা। কোনও রাখ ঢাক না রেখে সরাসরি জানাচ্ছেন যৌন আমন্ত্রণ! আর তাছাড়া গানের ধ্বনি নতুন, আশার কণ্ঠ নতুন, বাদ্যযন্ত্রের প্রয়োগ নতুন। এই হল রাহুল দেব বর্মণের আগমন ধ্বনি। এভাবেই ক্যারাভ্যান হয়ে রইল পঞ্চমের গানের যাত্রার এক মাইলস্টোন।

অমর প্রেম চলচ্চিত্রে পঞ্চম মোট পাঁচটি গানে সুর দেন। আর তাঁর মধ্যে একটি ছিল একেবারে আদ্যপান্ত শাস্ত্রীয় সঙ্গীত আর একটি কালজয়ী বেদনার গান। র‍্যায়না বিতি যায় এবং চিঙ্গারি কোই ভাড়কে। এটা অস্বীকার করার কোনই উপায় নেই যে দুটি গানেই কর্তার প্রভাব স্পষ্ট। কিন্তু সুর তো স্বতন্ত্র, আর কি সুরই না দিয়েছেন পঞ্চম! চিঙ্গারি কোই ভাড়কে হয়ে রইল কিশোর কুমারের জীবনের অন্যতম সেরা গান আর র‍্যায়না হয়ে থাকল লতার কণ্ঠে এক ক্লাসিকাল জেম। আমার নিজের সীমিত বিচার বুদ্ধিতে 'চিঙ্গারি কোই ভাড়কে' ভারতীয় চলচ্চিত্রের গানের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা গানগুলির একটি। শুধু সুর নয়, এই গানে আনন্দ বক্সী সাহেব কথার যে বরমাল্য নিয়ে এসেছেন, এ যেন কথা নয় এক অমৃত বানী। কথা এবং সুরের এই অপূর্ব মেল বন্ধন এই গানকে নিয়ে গেছে এক অনন্য উচ্চতায়। এই গানে আছে কাব্যের সুধা, হাহাকারের তীব্রতা, বেদনার গুঞ্জন। কিশোর কুমার, আনন্দ বক্সী এবং পঞ্চম এই তিনজনই চিঙ্গারি কোই ভাড়কে দিয়ে শ্রোতাবৃন্দের মাথায় চড়ে বসলেন। অমর প্রেম অন্তত শ্রোতাদের এটুকু আশ্বস্ত করতে পেরেছিল যে কর্তার অসুস্থতা হেতু অনুপস্থিতি বোধ হয় আর সেভাবে টের পাওয়া যাবেনা! এসে গেছেন ছোটে নবাব! উপরের দুটো গান ছাড়াও এই চলচ্চিত্রে ছিল আরও তিনটি জনপ্রিয় গান। লতার কণ্ঠে বাড়া নাটঘাট হ্যারে এবং কিশোরের কণ্ঠে আরও দুটো অবিস্মরণীয় গান, ইয়ে কিয়া হুয়া (যে গানটির কথা আগেই উল্লেখ করেছি) এবং কুচ তো লোগ কাহেঙ্গে। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে 'অমর প্রেম' মহাম্মদ রফিকে একপ্রকার নির্বাসনেই পাঠিয়ে দিল আর সেই সাথে কিশোর কুমারকে হিন্দি চলচ্চিত্রের সুরের আকাশে উজ্জলতম নক্ষত্রে পরিনত করল।

তবে যে চলচ্চিত্রটি পঞ্চমকে ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে প্রতিষ্ঠিত করে ছাড়ে, তা হল ১৯৭১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত দেব আনন্দের নবকেতন ব্যানারে নির্মিত চলচ্চিত্র 'হারে রামা হারে কৃষ্ণা।' এই চলচ্চিত্রের কাহিনী ছিল হিপ্পি আন্দোলনকে ঘিরে, সেই সাথে দাম্পত্য জীবনের সংকট এবং ভাই ও বোনের সম্পর্ককেও গুরুত্ব দেয়া হয়েছিলো। যথারীতি চলচ্চিত্রের কাহিনী দেব আনন্দের প্রিয় শচীন কর্তাকে শোনানো হল,কিন্তু কাহিনী খুব একটা মনে ধরলনা কর্তার, দেব কে বললেন পঞ্চমের কথা। দেব রাজী হলেন আর পঞ্চমও সুর দিলেন মনের মতন করে আর মুক্তির পর এই চলচ্চিত্রের জুটল বিপুল সাফল্য। তবে শুধু কাহিনীর অভিনবত্ব কিংবা হিপ্পি আন্দোলনকে কেন্দ্র করে চলচ্চিত্র নির্মাণ এই চলচ্চিত্রের সাফল্য নিয়ে আসেনি। এই সিনেমার সাফল্যের অন্যতম কারণ ছিল একটি গান। মাত্র একটি গান। আশার কণ্ঠে সেই যুগে প্রায় অবিশ্বাস্য একটি রক ঘরানার গান, দাম মারো দাম এই চলচ্চিত্রের অন্যান্য গান যেমন, কাঞ্চি রে কাঞ্চি রে এবং ফুলো কা তারোঁ কা চমৎকার কম্পোজিশন, কিন্তু দাম মারো দাম এর কাছে সেগুলি যেন উড়ে গেল এক ফুঁৎকারে।

দাম মারো দাম ছিল সেই যুগে একটা ক্রেজ। তরুণ তরুণীদের প্রাণের গান। হিপ্পি আন্দোলন, তরুন তরুণীদের সমাজ বিচ্ছিন্ন হবার আকাঙ্ক্ষা পঞ্চম সুর এবং বিট দিয়ে যেন মূর্ত করে দিয়েছিলেন এই গানে। আর এই এক গান দিয়ে আশা ভোঁষলে ভারতের আধুনিক গানের রাণীর খেতাব পেলেন। কিন্তু শুরুতে এটি ছিল স্রেফ সাধারণ একটি সিচুয়েশনাল গান। মানে কিছু বখে যাওয়া যুবক যুবতী গাঁজায় দম দিচ্ছেন আর এই গান ধরেছেন আর তার পরপরই কিশোর কুমারের কণ্ঠে রাম কে নাম বাদনাম না কারো নামক একটি ভজন টাইপের গান যা চিত্রায়িত হবে দেব সাহেবের ওপর। পঞ্চম এবং গীতিকার আনন্দ বক্সী যখন এই গানের সুর শোনালেন প্রথম দেব সাহেবকে, তখন গান শুনে দেব সাহেব বলেছিলেন এই গান নাকি তাঁর গানকে খারাপ করে দেবে, কাজেই বাদ দাও এই গান । তখন বক্সী সাহেব দেবকে বলেছিলেন যে চলচ্চিত্রে না রাখলেও গানটি যেন এল পি ডিস্কে রাখা হয়। পরে দেব সাহেব মুল চলচ্চিত্রেই রেখেছিলেন এই গান, তবে শুধু মুখ আর প্রথম অন্তরাটুকু, পুরো গানটিও রাখেন নি তিনি! দাম মারো দাম বিপুল জনপ্রিয়তা পেল। ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এই চলচ্চিত্রের এলপি রেকর্ড সর্বপ্রথম সিলভার জুবিলি রেকর্ড হিসেবে স্বীকৃতি পেল অর্থাৎ তাঁর ২৫,০০০ রেকর্ড বাজারে বিক্রি হল। আর এই গান এবং এই চলচ্চিত্র পঞ্চমকে এনে দিল অভাবনীয় সম্মান এবং বিপুল কাজের সুযোগ। এমনই জনপ্রিয় হয়ে উঠলেন পঞ্চম যে ১৯৭০ থেকে ১৯৭৪ পর্যন্ত, মাত্র পাঁচ বছরে উনি ৭৪ টি চলচ্চিত্রে সুর সংযোজন করার কাজ পেয়েছিলেন। আর এই কাজ যে একবার শুরু হল, তার গতি ১৯৮৫ সালের আগ পর্যন্ত একটুও থামলনা।

পঞ্চমের এই বিপুল জনপ্রিয়তার মাঝে তিনি বিয়ে করলেন তাঁরই সঙ্গীতের এক ভক্ত জনকে। নাম তাঁর রিতা পাতিল। দার্জিলিং এ রিতাকে অটোগ্রাফ দিয়েছিলেন পঞ্চম, সেই প্রথম দেখা, এরপর বান্ধবীদের সাথে বাজী ধরে পঞ্চমকে বোম্বের এক সিনেমা হলে একসাথে সিনেমা দেখার নিমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন রিতা, পঞ্চম গিয়েছিলেন সেই সিনেমা দেখতে, এরপরে পরিণয় এবং অতঃপর বিয়ে ১৯৭০ সালে। তবে এই বিয়ে টিকেছিল মাত্র চার বছর!

১)
417968465_9fca60cee3_z

কাটি পাতাং চলচ্চিত্রের এলপি কভার। সূত্রঃ http://images.search.conduit.com/ImagePreview/?q=kati+patang+lp+cover&ctid=CT2849853&SearchSource=15&FollowOn=true&PageSource=ImagePreview&SSPV=&CUI=UN04890437331050634&UP=UP_ID&UM=UM_ID&start=0&pos=2

২)
caravan-r.d.-burman-hit-with-piya-tu-ab-to-aaja--[2]-4497-p

ক্যারাভ্যান চলচ্চিত্রের এলপি কভার। সূত্রঃ http://images.search.conduit.com/ImagePreview/?q=caravan+hindi+LP+record&ctid=CT2849853&SearchSource=15&FollowOn=true&PageSource=Results&SSPV=&CUI=UN04890437331050634&UP=UP_ID&UM=UM_ID&start=0&pos=3

৩)
amar-prem-near-mint--5480-p

অমর প্রেম চলচ্চিত্রের এলপি কভার। সূত্রঃ http://images.search.conduit.com/ImagePreview/?q=amar%20prem%20lp%20cover&ctid=CT2849853&searchsource=15&CUI=UN04890437331050634&UP=UP_ID&UM=UM_ID&start=0&pos=0

৪)
hare-krishna-hare-rama-mint-condition-[2]-2990-p

হারে রামা হারে কৃষ্ণা চলচ্চিত্রের এলপি কভার। সূত্রঃ http://images.search.conduit.com/ImagePreview/?q=hare+rama+hare+krishna+lp+song+cover&ctid=CT2849853&SearchSource=15&FollowOn=true&PageSource=Results&SSPV=&CUI=UN04890437331050634&UP=UP_ID&UM=UM_ID&start=35&pos=16


মন্তব্য

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

উত্তম জাঝা!

পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

মনি শামিম এর ছবি

ধন্যবাদ।

তানিম এহসান এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- হাসি

মনি শামিম এর ছবি

ধন্যবাদ তানিম ভাই। আমাদের মিলিত প্রজেক্টের কাজ শুরু করতে হবে শীঘ্রই। আওয়াজ দেবেন।

সুমাদ্রী এর ছবি

মনিদা, আপনার এই লেখা পড়ছি আর গানগুলো শুনছি। কতদিন, কতরাত যে ' চিঙ্গারি ' গানটা গেয়েছি সুরে, বেসুরে, অসুরে। সত্যিই তো পঞ্চমের কারণেই কিশোর কুমারের অমন দরদভরা কণ্ঠটির খোঁজ পাওয়া।

অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।

মনি শামিম এর ছবি

ধন্যবাদ সুমাদ্রি। সচলের ফরম্যাটে লেখার সুবিধে হল, অনেক গান শোনানো যায়, অনেক ছবি সংযুক্ত করা যায়, পাঠকের সাথে সব মিলিয়ে একটা দারুণ যোগাযোগের ক্ষেত্র তৈরি করা সম্ভব হয়।

চিঙ্গারি কোই ভারকে গানটি আমি নিজেই বলেছি, কিশোর কুমারের একটি অমর গান। এই গানটির কিছু লিরিক, কিছু জায়গায় কিশোরকে শুনলে এখনও শরীরের লোম খাড়া হয়ে যায় আজও। কোনও বিশেষণই এই গানকে প্রকাশ জন্য যথেষ্ট মনে হয়না। আর তোমার কথার সাথে আমিও একমত। এই গানে কিশোরের সেরা সেরা সম্পদ পঞ্চম যেন টেনে বের করে এনেছেন। পঞ্চম অনেক জায়গায় স্বীকার করেছেন, ভারতবর্ষে কিশোর কুমারের মতন বৈচিত্রপুর্ণ কণ্ঠশিল্পী তিনি আর দেখেন নি।

শোয়েব মাহমুদ সোহাগ এর ছবি

উত্তম জাঝা! আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

মনি শামিম এর ছবি

ধন্যবাদ শোয়েব, শুধু মন্তব্যের খাতায় নয়, আপনাকে নিড়পাতায়ও দেখতে চাইব!

সুমাদ্রী এর ছবি

মনি'দা, এই গানটা কি বাদ পড়ে গেছে? এইরকম সুর কে দিয়েছে কবে আর?

অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।

মনি শামিম এর ছবি

আরে বাদ পড়বে কেন, পরের পর্বে আসবে আরও কত গান! ধৈর্য ধরো একটু। অনেক কিছু লিখছি তো! খনি শোনাবো তোমাদের, খনি!

জিল্লুর রহমান  এর ছবি

আমি সব গানগুলো শুনে তারপর মন্তব্য করতে বসলাম। এভাবে গান ধরে ধরে লেখার মত একটি দুর্বিসহ কাজ আপনি করে দেখালেন। অসাধারণ লেগেছে, যদিও সবগুলো ভিডিও দেখা সময় সাপেক্ষ, তবুও আপনি এতো কষ্ট করে এতোগুলো ভিডিও লিঙ্ক কালেক্ট করে দিতে পেরেছেন, আমি কেন সেগুলো সামান্য সময় নিয়ে দেখতে পারবোনা। আসলে এই জনপ্রিয় গানগুলোর সাথে আমরা সবাই কম বেশি পরিচিত, কিন্তু এর পেছনের ইতিহাস নিয়ে কখনও ভাবিনি। আশা করি আমাদের এপার বাংলার গীতিকার ও সুরকারদের ইতিহাস নিয়ে আগামীতে আপনার লেখা পাবো। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গান ও সিনেমাগুলো এবং স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের গানের যে বিবর্তন ঘটেছে; সেখানে ব্যান্ড, পপ ও রেপ সংগীত এবং আধুনিক বাদ্যযন্ত্রগুলো আমাদের সংস্কৃতিতে কিভাবে প্রবেশ করলো। এতে করে আমাদের সংগীত জগত কতটা লাভমান হলো, এ বিষয়গুলো নিয়ে লেখা যায় কিনা একটু ভেবে দেখবেন আশা করি।

মনি শামিম এর ছবি

কষ্টসাধ্য হলেও এখানে অন্যকে গান শোনানোর একটা দারুণ সুযোগ আছে জিল্লুর ভাই। আর তাছাড়া গান শুনে শ্রোতারা নিজেরাই বিবেচনা করে দেখতে পারেন, যা বলা হচ্ছে তা আদৌ কতটুকু সঠিক। আবার অনেক তথ্যও যুক্ত করা যাচ্ছে, যেমন সেই সময়ের নানান চলচ্চিত্রের এলপি রেকর্ডের ছবি। একটা প্রামান্য ব্যাপার থাকে লেখার সাথে, ফলে পাঠক কিংবা শ্রোতা তাৎক্ষণিক ভাবে নিজেদের লেখার সাথে কানেক্ট করতে পারেন সহজেই।

আমাদের ইচ্ছে আছে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী গান নিয়ে কিছু কাজ করার যার আইডিয়া আমাকে দিয়েছেন তানিম ভাই। অবশ্যই করা যায়, তবে এই কাজে খাটনিটা একটু বেশী করতে হবে কারণ বেশীর ভাগ তথ্য নেটে পাওয়া যাবেনা, সংগ্রহ করতে হবে।

কিন্তু ঠিক এভাবেই গানের লিংক, এলপির ছবি, ছোট ছোট টিকার সংযোগে বেশ প্রামান্য একটা কাজ করা সম্ভব। আবার স্বাধীনতা উত্তর এবং পুরো সত্তর দশকের অস্থির এবং গুমোট সময় আমাদের গানের জগতকে কিভাবে প্রভাবিত করেছিল, তা নিয়ে বড় আকারে কাজ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে অনেকের সহযোগিতা লাগবে জিল্লুর ভাই। বিদেশে অবস্থা করে এই কাজ তো আরও কঠিন হবে মনে হচ্ছে।

তারপরেও দেখা যাক। আইডিয়া যখন এসেছে, তাকে সামনে নিয়ে যাওয়া শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র!

ঈয়াসীন এর ছবি

খুবই তথ্যবহুল এবং সে সাথে সুখপাঠ্য।

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

মনি শামিম এর ছবি

ধন্যবাদ ঈয়াসিন ভাই। আপনার লেখাও পড়ছি। চমৎকার লাগছে। লিখুন, হাত খুলে লিখুন।

তাপস শর্মা এর ছবি

অসাধারণ কাজ হচ্ছে মণি ভাই। সিমপ্লি অসাধারণ গুরু গুরু

আগের লেখাগুলোও পড়ছি। মন্তব্য করা হয়ে উঠেনা সব সময়। কিন্তু দুরন্ত লেখা হচ্ছে সব আপনার। থামবেন না প্লিজ

০২

পঞ্চমের জন্মস্থানেই আমার জন্ম, মানে ত্রিপুরায়। ত্রিপুরার সাথে পঞ্চমের খুব একটা যোগাযোগ ছিল না যখন উনার ক্যারিরায় বম্বেতে একেবারে স্যাটেল হয়ে যায়। তবে মোটামোটি ছিল যোগাযোগ। তাঁর বাবার ছিল আজন্ম সম্পর্ক এই রাজ্যের সাথে। আশা ভোঁসলে'জীকে যদিও এখনো বলতে শুনি ত্রিপুরায় আমার শ্বশুর বাড়ি। শচীন কর্তাদের পরিবারের মধ্যেই কেমন জানি নিরবিচ্ছিন্নভাবে সঙ্গীত চর্চার একটা ধারা লুকিয়ে আছে, সেই ধারাই যেন বয়েছে পঞ্চমের মধ্যে

বাংলাদেশে আসলে আসবেন কখনো এইদিকে, এখানেই এখনো আছে এঁদের স্মৃতিধন্য যায়গাগুলি। সেরকম কিছুই না তবুও বেশ গর্ব লাগে বলতে যে, উনারা যে যায়গায় বসে সঙ্গীত চর্চা করতেন সেখানে আমি যাই বারবার, যেখানে বসে আড্ডা দিতেন সেখানে বসে আমিও আড্ডা দেই। উনাদের পরিবার এখানে এখনো আছেন, এঁদের সাথে কথা বললেই বোঝা যায় যে এঁরা আসলেই কতটা বিদগ্ধ সঙ্গীতজ্ঞ

মনি শামিম এর ছবি

ধন্যবাদ তাপস। আরে, মন্তব্য সবসময় করতেই হবে, এমন কথা আছে? আমি পঞ্চমকে নিয়ে লিখতে চাইছি অনেক দিন থেকে। সচল সেই সুযোগ করে দিল তাইতো অনেক। কিন্তু পঞ্চমকে আমি শুধু একটি লেখা দিয়ে সীমিত করতে চাইনি। আমি পঞ্চমকে আমার মতন করে উন্মোচিত করতে চাই। তবে আমার লেখা আর একটি ভক্তিগীতে পর্যবসিত হোক, তা চাইনা। আমি তাঁকে কাটা-ছেঁড়া করতে চাই। এইযে এত এত কাজ উনি করলেন, অনেক দায়সারা গোছের, একেবারেই পাতে না দেয়ার মতন গানেও সুর দিলেন, টুক্লিফাইং করলেন অনেক, কেন? আর কি হল তাঁর দাম্পত্যজীবনের? তাঁর পতনে অন্যকে দায় দেয়া হল, কিন্তু এতে তাঁর ভূমিকা কি ছিল সেগুলিও অনুসন্ধান করা দরকার। নেট ভিত্তিক মাল মশলার সীমাবদ্ধতা অনেক তাতো তুমি জানোই। কিন্তু আমি এর মধ্যে অসাধারণ একটি ডকুর খোঁজ পেয়েছি। "পঞ্চম আনমিক্সড।" এটা দুই ঘণ্টার একটি অসামান্য ডকু।

খাটা খাটনি হয় অনেক। তারপরেও একটা প্রশান্তি পাই।

তোমার ত্রিপুরার স্মৃতিটা ভালো লাগলো খুব। শচিন কর্তার বাবা ভালো বাজিয়ে ছিলেন কলকাতায়। কর্তার সঙ্গীতের হাতেখড়ি উনার কাছেই। আর একটা তথ্য তোমায় দিই। পঞ্চমের আদতে কোনও যোগই ছিলনা ত্রিপুরার সাথে। বাংলাই উনার দ্বিতীয় নিবাস। উনার মা মানে মীরা দেবীর অরিজিন সম্ভবত পূর্ব বাংলা, খুব নিশ্চিত নই। মীরা দেবীর সাথে কর্তার বিয়ে কিন্তু ত্রিপুরার রাজবংশ মেনে নিতে পারেনি। কর্তার সাথে ত্রিপুরার যোগ বিচ্ছিন্ন হবার এটাই কি কারণ?

তাপস শর্মা এর ছবি

ডকুটার একটা ঠিকানা সম্ভব হলে আমাকে দিয়েন

০২

একটু আগে এই বিষয়টা নিয়ে ত্রিপুরার রাজ পরিবারের একজনের সাথে কথা হল। তিনি যা তথ্য দিলেন তাতে আপনার একটা কথা মিলে গেলো যে ত্রিপুরার সাথে পঞ্চমের যোগাযোগ ছিল না বললেই চলে। তারপর উনি যা তথ্য দিলেন তা নীচে হুবহু লিখে দিচ্ছি

রাহুল দেববর্মণ ত্রিপুরার রাজন্য পরিবারের সাথে যোগাযোগ রাখেন নি। তিনি তেমনভাবে কাউকে চিনতেনও না! রাহুল দেববর্মণ কলকাতায় জন্মেছিলেন। ত্রিপুরাতে এসে থাকার তাই প্রশ্নই ওঠে না। তবে আশির দশকে এক কনসার্ট গ্রুপের প্রোগ্রামে অংশ নিতে তিনি আগরতলায় এসেছিলেন।

মীরা দেবী পূর্ব বাংলার বাঙালি মেয়ে ছিলেন। মীরা দেবীর সঙ্গে শচীন দেববর্মণের বিয়ে ত্রিপুরার রাজ পরিবার মেনে নিতে পারে নি - এমন কথা আমাদের পরিবারে কখনও শুনিনি। এমন তথ্য প্রমাণের কথাও জানা নেই। ত্রিপুরার রাজ পরিবার অত্যন্ত সেক্যুলার - এই তথ্য অন্তত আমি হলফ করে বলতে পারি। প্রচুর ভিন জাতের মেয়ে এই পরিবারে বৌ হয়ে এসেছে। তবে সম্ভবত পান্নালাল রায় তার একটি লেখায় এই তথ্য দিয়েছেন যে বাংলার সাধারণ ঘরের মেয়ে মীরা দেবীকে বিয়ে করার জন্যই শচীন দেববর্মণ ত্রিপুরার রাজ - সিংহাসন হারিয়েছিলেন!

আমাদের পরিবারের জানা তথ্য ---- শচীন দেববর্মণ মামলায় হেরে গিয়েছিলেন বলেই ত্রিপুরার রাজ -সিংহাসনের ওপর দাবী ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন এবং তিনি রাজ পরিবারের সঙ্গে সমস্ত সংশ্রব ত্যাগ করে প্রথমে কলকাতা এবং তারপরে মুম্বই'এ আস্তানা গাড়েন। বাকীটুকু ইতিহাস।

মনি শামিম এর ছবি

ইউটিউব থেকে আমি কয়েক দফা পঞ্চম আনমিক্সড ডকু দেখে ফেলেছি। এটি পরিচালনা করেছেন ব্রম্মানন্দ সিং নামের একজন পরিচালক, এটি বাজারজাত করেছে শেমারু। আমি এর অনেক তথ্য আমার লেখায় ব্যাবহার করছি। যেমন ধর, ঠিক কবে পঞ্চম রিতাকে বিয়ে করলেন, এই নিয়ে নেটে নানান বিভ্রান্তি রয়েছে। কেউ বলছেন ১৯৬০, কেউবা ১৯৬৬, ডকুতে দেখছি ১৯৭০, কাজেই ১৯৭০ কেই আদর্শ বিচার করছি।

শচীন কর্তার রাজসিংহাসন দাবি করাটা আমার কাছে অদ্ভুত লাগে। যতদূর জানি উনারা অনেকগুলি ভাই বোন ছিলেন যার মধ্যে উনার অবস্থান পঞ্চম। কর্তার বাবা ছিলেন ত্রিপুরার রাজকুমার, রাজা নন আবার কর্তার মা মণিপুরের রাজকুমারী ছিলেন, রানী নন। এইসব কিছু বিবেচনায় কর্তা রাজসিং - হাসনে বসতেন কিনা সেটাই সন্দেহজনক। হয়ত সহায় সম্পত্তির ভাগ বাটোয়ারা সংক্রান্ত কিছু মামলা থেকে থাকবে, যা রাজপরিবারে হরহামেশাই হয়ে থাকে। আর তাছাড়া এইসব গানের জগতের খেয়ালী মানুষ। কখন মনে হয়েছে মামলা করেছেন, কখন মনে হয়েছে আদালতের ত্রিসীমানাতেও প্রবেশ করেননি! আসলে নেট ঘেঁটে খালি শোনা কথার সমাহার দেখি, প্রামান্য কোনও তথ্য কোথাও পাইনা। ভারতবর্ষে এবং বাংলাদেশেও প্রখ্যাত গীতিকার এবং সুরকারদের নিয়ে প্রামান্য কিছু কোথাও মেলেনা। আর তাছাড়া এদের নিয়ে গবেষণা করার টাকার যোগানই বা আসবে কোত্থেকে?

পঞ্চমের নানা অর্থাৎ মিরা দেবীর বাবা (নাকি নানা) নাকি ঢাকা কোর্টের বিচারক ছিলেন? তুমি ত্রিপুরায় আছ। তুমিই ভালো জানাতে পারবে। তুমি নিজেই তো শচীন কর্তাকে নিয়ে ধারাবাহিক লিখতে পার তাপস? তুমি তো লিখেছিলে সুমন কে নিয়ে।

তিথীডোর এর ছবি

সিরিজে উত্তম জাঝা!
সঙ্গে আছি। হাসি

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

মনি শামিম এর ছবি

সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ তিথী। একটু খাটা খাটনি যাচ্ছে বেশী। কিন্তু ভালো লাগছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রিয় মণি,
এই চিঠিটা তোমার কাছে আসছে আজ থেকে ধরো, কুড়ি বছরের ও পার থেকে। তখন তো চিঠি পাঠানো মানুষটা এক নেই-মানুষ কি প্রায়-নেই-মানুষ। কিন্তু সেদিনগুলোয় সেই মানুষটা যদি তার ভাল লাগার, ভালবাসার কোন লেখা পড়তে পারে তবে তোমার এই সঙ্গীতময় লেখাগুলো তার ডিজিটাল ঝাঁপি থেকে বার করে এনে পড়ে। শ্রবণের যতটুকু অবশিষ্ট আছে তাই দিয়ে এই লেখাগুলো থেকে লিঙ্কগুলো খুঁটে খুঁটে তুলে আনে, নুনে-জলে মাখামাখি হয়ে শোনে। ধূসর কোষগুলো বাতিল করে দিচ্ছে চারপাশের বেশীরভাগ সংকেত। হয়ত এর মধ্যে তোমার সাথে পরিচয় তার ঘন হয়েছিল কোনদিন আরো - অথবা হয়ত কুড়ি বছরের পারে - কুয়াশায় তোমারে মনেই নাই। তখন তো কুয়াশা নিশ্চয়ই ঘিরে রাখে, ঘিরে আসে - গহীন হয়ে। কিন্তু কড়ি-শঙ্খের মত শাদা হয়ে আসা সেই দিনগুলোতেও এই নিভৃত-আনন্দ-সম লেখাগুলো তার ধরাছোঁয়ার মধ্যে থাকলে, তার মন ভাল হয়ে থাকবে। ইচ্ছে করবে তোমায় সেই খুশির শরীক করে নিতে। তাই সেই দিনটা থেকে এই চিঠিটা আজকেই পৌঁছে দিলাম তোমার ব্লগ-জানালায়।
পরের পর্বের সাদর অপেক্ষায়।
একলহমা

মনি শামিম এর ছবি

বাপরে! এটা কি চিঠি না কবিতা? নাকি অনাগত কাল থেকে আসা কোনও আনন্দ-কথা? আমি তো একদম লইজ্জা লাগে

শান্ত এর ছবি

অসাধরন। চলুক।

__________
সুপ্রিয় দেব শান্ত

মনি শামিম এর ছবি

ধন্যবাদ! আপনি অনেকদিন লেখেনি কিন্তু!

তারেক অণু এর ছবি

দারুণ দারুণ!

একটাই সমস্যা, আপনার এই লেখাগুলো পড়ার কারণে অনেক সময় গানে চলে যাচ্ছে ইদানীং ! যদিও তাতে আফসোসের চেয়ে আনন্দের পরিমাণ অনেক গুণ বেশী

মনি শামিম এর ছবি

গানগুলি যুক্ত করতেও অনেক সময় আর মনোযোগ লাগেরে। এখন আবার সিনেমাগুলির এলপি রেকর্ডের ছবি যুক্ত করা শুরু করেছি। এতে করে অনেক সময় লাগে, তবে লেখায় প্রামান্য ভাবটা আরও বেশী আসে।

তোর পরবর্তী যাত্রাগুলির সংবাদ জানাস, বাঁধন আসছে ষোলতে, মনে আছে তোর?

অতিথি লেখক এর ছবি

এই অসাধারন গাঁথায় যে সব গানের কথা বলেছেন, আমাদের কৈশরে সে সব গানের জন্ম। তখন আমাদের রেকর্ড প্লেয়ার ছিল না, ক্যাসেট প্লেয়ারের যুগ তখনও শুরু হয় নি। রেডিও সিলোন আর আকাশবানীর বিবিধ ভারতী ধরে তীর্থের কাকের মত অপেক্ষায় বসে থাকতাম, যখন বাজতো তখন ডুবে যেতাম এক অনির্বচনীয় আনন্দে। এই গানগুলোর কারনেই তখন মোহাম্মদ রফি আর মুকেশের মত অসাধারন শিল্পীকে অবজ্ঞা করে গেছি, মান্না দে শুনেছি শুধু বাংলায়। সে সব স্মৃতি আবার ফিরিয়ে আনলেন, ধন্যবাদ।

এই সিনেমার সাফল্যের অন্যতম কারণ ছিল একটি গান। মাত্র একটি গান। আশার কণ্ঠে সেই যুগে প্রায় অবিশ্বাস্য একটি রক ঘরানার গান, দাম মারো দাম এই চলচ্চিত্রের অন্যান্য গান যেমন, কাঞ্চি রে কাঞ্চি রে এবং ফুলো কা তারোঁ কা চমৎকার কম্পোজিশন, কিন্তু দাম মারো দাম এর কাছে সেগুলি যেন উড়ে গেল এক ফুঁৎকারে।

না তা নয়, "দম মারো দম" সুপারহিট হয়েছিল, আরও বেশী এটা শ্রোতাসাধারনকে হতবাক করে দিয়েছিল তার অভিনবত্বের কারনে। কিন্তু আমার সে সময়ের পর্যবেক্ষন অনুযায়ী "কাঞ্চি রে কাঞ্চি রে" এবং "ফুলো কা তারোঁ কা" গান দুটিও একই মাত্রায় জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।

আব্দুল্লাহ এ এম

মনি শামিম এর ছবি

ধন্যবাদ। আসলে কি জানেন, বিভিন্ন সাক্ষাৎকার এবং ডকুমেন্টারি থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে সেই সময়টুকু খানিক তুলে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমি অবশ্য একটা নির্ঘণ্ট জুড়ে দেব সামনের লেখায়। আমি দেখতে পাচ্ছি, এইসব স্মৃতিচারণমূলক লেখা কিংবা ডকুমেন্টারি গুলিতে বারবার 'দাম মারো দাম' গানটির প্রসঙ্গই এসেছে। অন্য গানগুলি সেভাবে ঠাঁই পায়নি নানান আলোচনায়। আপনি বলছেন 'দাম মারো দাম' সহ বাকি দুটি গানও একই মাত্রায় জনপ্রিয় হয়েছিল। আসলে কি জানেন, শুধু গানের মান বিচারে কিংবা শ্রোতাপ্রিয়তার কথা যদি বিবেচনায় আনি, তাহলে ওই দুটি গান কে খাটো করার সুযোগ নেই কোনভাবেই। আমার নিজের বরং ওই দুটি গানই বেশী ভালো লাগে। তবে তাৎক্ষনিক জনপ্রিয়তার কথা যদি বিবেচনা করি, তাহলে দাম মারো দাম 'হয়ত' এগিয়েই ছিল। এখন স্মৃতি নয় বরং সূত্র উল্লেখ করলেই হয়ত এই তথ্যের সত্যাসত্য যাচাই করা সম্ভব। কিন্তু আপনার মতামতকেও উপেক্ষা করি কিভাবে? যখন একটি এলপি রেকর্ড বাজারে আসে তখন সেখানে থাকে অনেক গান, কাজেই শুধু একটি গানকে আলাদা করে উল্লেখ করাটা কিছুটা প্রশ্নসাপেক্ষ। তবে যাই হোক না কেন, 'দাম মারো দাম' বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল, তুলনামুলকভাবে বাকিগুলি কেমন করেছিল সেটা নিয়ে খানিক অনুসন্ধান করা যেতে পারে বৈকি। আপনার আলোচনা এই অনুসন্ধিৎসু মনটাকে আরও জাগিয়ে দিল। ধন্যবাদ।

স্যাম এর ছবি

কোলকাতায় বসের স্টুডিও তে (নাম টা মনেই করতে পারলাম্না) যাওয়া হয়েছিল একবার নচিকেতার সঙ্গে দেখা করতে - আশা ভোঁশলের ছবি টাঙ্গানো ছিল এটুকু মনে আছে আর মনে আছে অদ্ভুত এক শিহরণের কথা!

মনি শামিম এর ছবি

আপনি বসের স্টুডিয়ো দেখে এসেছেন? বাপরে! আচ্ছা, উনার তাহলে কলকাতায় আরেকটা স্টুডিও ছিল? কত কিছু যে এখনও জানার আচে স্যাম দা!

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আপনি অদ্ভুদ!
খাটনিটা তো চোখেই দেখা যাচ্ছে। তাড়াহুড়ার কিছু নেই। আস্তে ধীরে লেখেন। তাড়াহুড়া করতে গিয়ে এই সিরিজে ফাঁকি দিবেন না কইলাম হাসি

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

মনি শামিম এর ছবি

ব্লগে ফাঁকি দেয়ার সুযোগ নেই নজ রুল ভাই। ফাঁকি দিলে আপনাদের হাতে ধরা খাওয়ার ভয় আছে না? একটু একটু করে সময় নিয়েই লিখতে হচ্ছে তো! আর হ্যাঁ, আমার যে একখান বই লাগে! আর ডি বর্মণঃ দি ম্যান, দি মিউজিক। বইটি ইন্ডিয়া থেকে প্রকাশিত। কোথায় কিভাবে পাই নজরুল ভাই? আপনার শরনাপন্ন হওয়া ছাড়া তো আর গতি নেই।

আয়নামতি এর ছবি

সত্তর দশকের শুরুতে

নৌশাদ, ও পি নাইয়ার, সি রামচন্দ্র, শচিন দেব বর্মণ, সলিল চৌধুরী, শঙ্কর-জয়কিশন এবং মদন মোহন ছিলেন সুরের জগতের রাজা মহারাজা।

এঁদের মধ্যে শচিন
দেব বর্মণ, সলিল চৌধুরী বাদে সবাই হিন্দী-উর্দু(?) তেই গান করতেন ঠিক না? তখন বাংলা গানের জগতটা কতটা জমজমাট ছিল? শচীন-সলিল বাদে আরো সব সুরকারেরা নিশ্চয়ই বাংলা গানের ক্ষেত্রে দারুণ সব কাজ করেছেন- এ বিষয়ে একটা সম্পূর্ণ পোস্টের কথা মাথায় রাখবেন নাকি ভাইয়া? খুব কষ্টের কিন্তু দারুণ একটা সিরিজ হচ্ছে কিন্তু চলুক নজরুল ভাইয়ের কথার প্রতিধ্বনি করে গেলাম

তাড়াহুড়ার কিছু নেই। আস্তে ধীরে লেখেন। তাড়াহুড়া করতে গিয়ে এই সিরিজে ফাঁকি দিবেন না কইলাম হাসি

হাসি

মনি শামিম এর ছবি

আয়নামতি, ধন্যবাদ। এই সিরিজটা লিখতে বসেছি যখন, বিভিন্ন অনুরোধ আসছে। আমাদের তানিম ভাই বলছেন, স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে সঙ্গীত জগত নিয়ে লিখতে। আবার আপনি বলছেন সম্ভবত পঞ্চাশ, ষাট আর সত্তর দশকের বাংলা আধুনিক সঙ্গীত জগত নিয়ে লিখতে। পঞ্চমকে নিয়ে লিখতে গিয়ে একটা ব্যাপার খেয়াল করছি। পঞ্চমের সুরারোপিত প্রায় সব চলচ্চিত্রের সঙ্গীত ইউটিউবে সহজলভ্য। এতা আমার কাজ অনেক সহজ হয়ে যায়, কেননা আমি আপনাদের গান শোনানোর একটা দারুণ সুযোগ পাচ্ছি। কাজেই শুধু বিশ্লেষণ নয়, বরং আমরা নিজেরা গান শুনে নিজেদের উপলব্ধি বয়ান করার সুযোগও পাচ্ছি। এখন বাংলা গান কিংবা বাংলাদেশের গান নেটে এত সহজে পাওয়া যাবেনা। এইজন্য অনেক মাল মশলা ফিল্ড থেকে সংগ্রহ করতে হবে। আমাকে কেউ যদি সহযোগিতা করেন তাহলে আমি অবশ্যই সেগুলি নিয়েও লিখতে পারি। এতে করে হয় কি, পুরো সিরিজটিই দারুণ সংগ্রহে রাখার মতন একটা কাজ হয়ে যায়। এবং আমার উদ্দেশ্যও অনেকটা তাই। এইজন্য আমি এই লেখাটিতে এলপি রেকর্ডের কভারের ছবিও যুক্ত করলাম। আর সামনের পর্বগুলিতেও যা যা প্রামান্য বস্তু পাব, এখানে যুক্ত করে দিব। শুধু পঞ্চম কেন, বাংলা গানের যে কোনও কাজে নিজেকে যুক্ত করতে পারলে ধন্য মনে করব। আর এইজন্যই সকলের সহযোগিতা কামনা করি। একা একা এই কাজ করা বড় কঠিন হবে।

আর তাড়াহুড়া করছিনা, করবোনা। কথা দিচ্ছি। হাসি

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

আপনার এই সিরিজটি মুগ্ধতা নিয়ে অনুসরণ করে চলেছি প্রথম থেকেই। হাসি

মনি শামিম এর ছবি

ধন্যবাদ। আরে ভাই লেখা তো চলছিল ভালই। আজ রায় শুনে তো লেখালেখির ইচ্ছে সব উবে গেল। আর কিচ্ছু ভালো লাগেনারে ভাই।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।