আচার্য্যকে নিয়ে অল্পকথা

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি
লিখেছেন ষষ্ঠ পাণ্ডব (তারিখ: বিষ্যুদ, ২০/০২/২০১৪ - ৪:৫৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে পড়ানো হয়, বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু আবিষ্কার করেছেন যে, গাছেরও প্রাণ আছে। তার মানে কি এই যে, আচার্য্য জগদীশ চন্দ্র বসু বলার আগে মানুষ জানতোই না, উদ্ভিদরাও জীবজগতের অন্তর্ভূক্ত!

পরে খোঁজ করে দেখি, এই উপমহাদেশেই উদ্ভিদবিজ্ঞানের চর্চ্চা ৩০০০ বছরেরও বেশি পুরনো। আধুনিক উদ্ভিদবিজ্ঞানের জনক থিওফ্রাস্টাসের জন্মও প্রায় ২৪০০ বছর আগে। তো এই হাজার হাজার বছর ধরে উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা গাছকে ‘মরা’ বা ‘জড়’ বিবেচনা করেই গবেষণা করে গেছেন? কিন্তু সেটা কী করে সম্ভব! প্ল্যান্ট ফিজিওলজি’র ওপর গবেষণা শুরু হয়েছে আচার্য্য বসু কাজ শুরু করারও ২৫০ বছর আগে। যেহেতু জড় বস্তুর ফিজিওলজি বলে কিছু নেই, তার মানে ‘গাছেরও প্রাণ আছে’ — এই ব্যাপারটি আচার্য্য বসুরও বহু বহু কাল আগে থেকে প্রতিষ্ঠিত। তাহলে আচার্য্য বসু গাছ সংক্রান্ত কী আবিষ্কার করেছেন? ক্রেস্কোগ্রাফ আবিষ্কারের পর তিনি লজ্জাবতী আর বন চন্দল (Codariocalyx motorius) গাছের টিস্যুর ওপর যান্ত্রিক/ভৌত, তাপ, বিদ্যুৎ, রাসায়নিক ও ঔষধের প্রভাব পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পান যে, এসব প্রভাবক প্রয়োগের ফলে গাছের টিস্যুর ইলেকট্রিক্যাল রেসপন্স অনুরূপ পরীক্ষণে প্রাণীর টিস্যুর ইলেকট্রিক্যাল রেসপন্স-এর মতোই। আরো পরীক্ষার পর তিনি অনুসিদ্ধান্ত দেন যে, উদ্ভিদও ব্যথা অনুভব করে, তারাও আকর্ষণ বোঝে, তারাও সাড়া দেয়। ‘উদ্ভিদের সাড়া দেবার ব্যাপারে অনুসিদ্ধান্ত প্রদান করা’ আর ‘গাছেরও প্রাণ আছে’ কথাদুটোর মধ্যে যে ফারাক সেটা আচার্য্য বসুর জানা ছিল, এবং তিনি কখনো দাবী করেননি যে তিনি ‘গাছেরও প্রাণ আছে’র আবিষ্কারক। কিন্তু অতিপণ্ডিত ‘পাঠ্যপুস্তক রচয়িতা’রা সে ফারাক না বুঝেই একটা হাস্যকর ভ্রান্তি শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছেন।

স্নায়ুকোষ না থাকলেও যেহেতু উদ্ভিদ জীবজগতের সদস্য তাই তার অনুভূতি ও সাড়া দেবার ব্যাপারে আমরা অবাক হই না। কিন্তু ১১৪ বছর আগে প্যারিসে পদার্থবিজ্ঞানীদের আন্তর্জাতিক কংগ্রেসে আচার্য্য যে পেপারটি পড়েছিলেন সেটার শিরোনাম শুনলে আজও আমরা নড়েচড়ে বসবো। পেপারটির শিরোনাম — On the Similarity Responses of Inorganic and Living Matter। পেপারটির ই-বুকের লিঙ্ক (http://www.gutenberg.org/ebooks/18986 ) দিয়ে দিলাম, আগ্রহীরা পড়ে এই ব্যাপারে আরো ভাবতে পারেন।

আচার্য্য বসু যে ১৮৯৬ সালেই ‘নিরুদ্দেশের কাহিনী’ নামের সায়েন্স ফিকশন লিখেছেন সেটা আমরা জানি। তবে বাংলা ভাষায় সেটাই প্রথম সায়েন্স ফিকশন নয়। ১৮৭৯ সালে প্রকাশিত জগদানন্দ রায়ের লেখা ‘শুক্র ভ্রমণ’কে প্রথম বাংলা সায়েন্স ফিকশন বলা হয়। বিজ্ঞজনেরা এটাকে সায়েন্স ফিকশন না বলে সায়েন্স ফ্যান্টাসি বলতে চান। আমি সেই বিতর্কে যাচ্ছি না। দেড়শ’ বছর আগে একজন বাঙালী ওভাবে ভেবে যে গল্প লিখেছেন তাতেই আমাদের খুশী হওয়া উচিত। কিন্তু খটকাটা হচ্ছে ১৮৭৯ সালে শ্রীযুক্ত রায়ের বয়স ছিল মাত্র দশ বছর। তিনি ১৮৬৯ সালে জন্মেছিলেন আর ১৯৩৩ সালে পরলোকগমন করেছেন। তার মানে হচ্ছে ‘শুক্র ভ্রমণ’ ১৮৭৯ সালে নয়, বরং আরো পরে প্রকাশিত হয়েছে। কেউ কেউ বলেন ১৮৮২ সালে ‘বিজ্ঞান দর্পণ’ পত্রিকায় দুই পর্বে প্রকাশিত হেমলাল দত্তের ‘রহস্য’ গল্পটিই প্রথম বাংলা সায়েন্স ফিকশন। শ্রীযুক্ত রায়ের ১৮৭৯’র দাবী খারিজ হলে শ্রীযুক্ত দত্তের ১৮৮২’র দাবী প্রতিষ্ঠিত হয়। এই দাবীগুলো উনারা করেননি, উনাদের পাঠকদের বা বাংলা ভাষায় সায়েন্স ফিকশন পাঠকদের দাবী। কিন্তু তারপরেও ‘রহস্য’ গল্পটি সায়েন্স ফিকশন না সায়েন্স ফ্যান্টাসি এই বিতর্কটা আছে। আপাতত নতুন কোন দাবী উত্থাপিত ও প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত সব দিক বিবেচনায় আচার্য্য বসুই আমাদের ‘ফাদার অভ সায়েন্স ফিকশন ইন বাংলা ল্যাঙ্গুয়েজ’।

আমরা জানি যে, আচার্য্য বসু আবিষ্কৃত বস্তু/তত্ত্বের পেটেন্ট করানোর বিরোধী ছিলেন, অর্থাৎ বিজ্ঞানকে ব্যাপারীবৃত্তিতে আটকানোতে তাঁর ঘোরতর আপত্তি ছিল। পেটেন্ট না করানোয় রেডিও আবিষ্কারের ক্ষেত্রে কী ঘটনা ঘটেছে সেটারও কিছু কিছু আমরা জানি। এতকিছুর পরও ম্যাসাচুসেটসের সারা চ্যাপম্যান বুল আচার্য্যকে একবার একটা পেটেন্ট করানোতে রাজী করিয়ে ফেলেন। ১৯০১ সালের ৩০শে সেপ্টেম্বর আচার্য্য মিসেস বুলের সাথে আধাআধিতে ইলেক্‌ট্রিক্যাল ডিস্টার্বেন্স ডিটেক্‌টর-এর পেটেন্ট করানোর জন্য আবেদন করেন (US Patent No. 755840 A), ২৯শে মার্চ ১৯০৪ সালে পেটেন্ট পেয়েও যান। কিন্তু পরবর্তীতে আচার্য্য তাঁর সত্ত্ব ত্যাগ করেন।

আচার্য্য বসু’র বহুগুণের মধ্যে দুটো গুণের ব্যাপারে আলোচনা প্রায় হয়ই না। এক, তিনি প্রত্মতত্ত্বে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু এই ব্যাপারে তাঁর কাজের বিবরণ ও ফলাফল সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানতে পারিনি। দুই, তিনি ফটোগ্রাফিতে আগ্রহী ছিলেন। ১৮৮০’র দিকে তিনি যখন লন্ডনে পড়তে যান সেলুলয়েড তখন বাজারে আসি আসি করছে। ১৮৮৮-তে কোডাকের ক্যামেরা তো বাজারেই চলে এসেছিল। সুতরাং, ফটোগ্রাফিতে তাঁর আগ্রহ হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু তাঁর তোলা কোন ছবি দেখার সৌভাগ্য হয়নি।

আরেকটা কথা। আচার্য্য বসুর মহাপ্রয়াণের পর ৭৭ বছর কেটে গেছে। তারমানে, কপিরাইট আইনের ৬০ বছরের সময়সীমা শেষ। এখন আচার্য্য বসুর সকল লেখা একসাথ করে একটা রচনাসমগ্রের ই-বুক কি বের করা যায় না! আচার্য্যের লেখা বইগুলো হচ্ছেঃ

১. Response in the Living and Nonliving, Longmans, Green & Co., London, 1902.
২. Plant Response as a Means of Physiological Investigations, Longmans, Green & Co. London, 1906.
৩. Comparative Electro-Physiology, Longmans, Green & Co. London 1907.
৪. Researches on Irritability of Plants, Longmans, Green & Co. London 1913
৫. Collected Physical Papers, Longmans, Green & Co. London 1920.
৬. Plant Autographs and Their Revelations. The Macmillan Company, New York, 1927.
৭. অব্যক্ত, বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ, কলকাতা, ১৯২১
৮. Physiology of Ascent of Sap, Longmans, Green & Co. London 1923
৯. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে লেখা চিঠি, দ্য বোস ইনস্টিটিউট, কলকাতা, ১৯৯৪

আচার্য্যের এক ঘনিষ্ট বন্ধু তাঁর ‘বিশ্বপরিচয়’ গ্রন্থের উৎসর্গপত্রে আরেক পদার্থবিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুকে লিখেছিলেনঃ

“বড়ো অরণ্যে গাছতলায় শুকনো পাতা আপনি খসে পড়ে, তাতেই মাটিকে করে উর্বরা। বিজ্ঞানচর্চার দেশে জ্ঞানের টুকরো জিনিসগুলি কেবলই ঝরে ঝরে ছড়িয়ে পড়ছে। তাতে চিত্তভূমিতে বৈজ্ঞানিক উর্বরতার জীবধর্ম জেগে উঠতে থাকে। তারই অভাবে আমাদের মন আছে অবৈজ্ঞানিক হয়ে। এই দৈন্য কেবল বিদ্যার বিভাগে নয়, কাজের ক্ষেত্রে আমাদের অকৃতার্থ করে রাখছে।“

আমাদের চিত্তভূমিতে বৈজ্ঞানিক উর্বরতার জীবধর্মকে জাগিয়ে তুলতে আচার্য্যের লেখাগুলোর নিবিষ্ট পাঠ প্রয়োজন।


মন্তব্য

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

চমৎকার সময়োপযোগী একটা লেখা। দেশে তো এখন নানাভাবে বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড ইত্যাদি হচ্ছে - এগুলোর সাহায্যে আচার্য্যের লেখাগুলোকে কিশোর-তরুণদের কাছে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করে দেয়া কি খুব কঠিন?

____________________________

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

অত কাঠখড় পোড়ানোর দরকার নেই। বইগুলো একসাথ করে, ইংলিশে লেখাগুলোর বঙ্গানুবাদ সাথে জুড়ে দিয়ে একটা রচনাসমগ্র অনায়াসে বের করা যায়। সেটা বাংলা একাডেমি, বিজ্ঞান একাডেমি এমনসব প্রতিষ্ঠানগুলো অল্পদিনের মধ্যেই করতে পারে। সাথে সাথে ই-বুকও বের করে উন্মূক্ত করে দেয়া যায়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

এক লহমা এর ছবি

"এখন আচার্য্য বসুর সকল লেখা একসাথ করে একটা রচনাসমগ্রের ই-বুক কি বের করা যায় না!" চলুক

"আমাদের চিত্তভূমিতে বৈজ্ঞানিক উর্বরতার জীবধর্মকে জাগিয়ে তুলতে আচার্য্যের লেখাগুলোর নিবিষ্ট পাঠ প্রয়োজন।" চলুক

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

আয়নামতি এর ছবি

বেশ কিছু অজানা তথ্য জানা হলো হাসি
ইলেক্‌ট্রিক্যাল ডিস্টার্বেন্স ডিটেক্‌টর-এর পেটেন্টের সত্ত্ব ত্যাগের ইতিহাসটার ব্যাপারে কৌতুহল হচ্ছে খুব।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ইতিহাস বিশেষ কিছু না। তিনি সবসময়ই পেটেন্ট করে আবিষ্কারের অবাধ ব্যবহার রুদ্ধ করার বিরোধী ছিলেন। সুতরাং যখনই তাঁর মনে হয়েছে, তখনই তিনি ঐ একমাত্র সত্ত্বটা ত্যাগ করেছেন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

আয়নামতি এর ছবি

ব্যাপারটা জানলাম। অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া গড়াগড়ি দিয়া হাসি

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

আচার্য্য বসুর সকল লেখা একসাথ করে একটা রচনাসমগ্রের ই-বুক কি বের করা যায় না!

চলুক চলুক

লেখাগুলোর কোনটা কি বাংলাতে পাওয়া যায় পাণ্ডবদা?
আমার সঠিক জানা নেই। না পাওয়া গেলে অনুবাদে দক্ষ এমন কেউ অনুবাদ করার কাজে হাত দিলে কিন্তু বেশ হয়।
লেখাটার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। হাসি

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

কাজটা দুইভাবের যে কোন একভাবে হতে পারে। এক, বাংলাদেশ সরকার বা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার উদ্যোগ নিয়ে অনুবাদের কাজটা দক্ষ কাউকে দিয়ে করাতে পারে। দুই, আগ্রহী যে কেউ একটা/দুটো করে অনুবাদ করে প্রকাশ করতে পারেন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সাফি এর ছবি

আজকের জামানা হলে পত্রিকার শিরোনাম হত, গাছের প্রাণ দিলেন আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু। লেখায় অনেক অজানা জিনিস জানা হলো। তবে আচার্য এর বইগুলোর শিরোনাম অনেকটা পড়ার বই এর মতন। কৌশলে আমাদের পড়াশোনা করিয়ে নেওয়ার মতলব না তো পান্ডবদার?

ধুসর গোধূলি এর ছবি

আর টিভি চ্যানেলের ইতর, গর্দভ, আয়োডিনহীন রিপোর্টারদের সামনে পড়লে আচার্য্য ধূতি ফেলে পালাতেন নির্ঘাত!

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

সাফি, শিরোনামগুলো আসলেই পড়ার বইয়ের। উচ্চে/করল্লা/চিরতা/কালোমেঘ গেলানোর জন্য এক-আধটু শুগারকোটিং তো লাগেই, আমি ঐটুকু ছলনা না হয় করলাম!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

রকিবুল ইসলাম কমল এর ছবি

কী অদ্ভুত মিল! কিছুদিন আগে জগদীশ চন্দ্র বসুকে নিয়ে আমিও একটি পোস্ট দেয়ার কথা ভাবছিলাম। সে প্রেক্ষিতে লেখাটি দাঁড় করানোর জন্যে যে ভাবে শুরু করেছিলাম তা ড্রাফট থেকে কোন রকম কাট-ছাট না করে এখানে তুলে দেয়ার লোভ সামলাতে পারছি না!

গাছের জীবন আছে; এটা প্রথম আবিস্কার করেছিলেন জগদীশ চন্দ্র বসু। এরকম একটা কথা আমরা অনেকেই আমাদের ছোট বেলা থেকে জেনে আসছি। খুব সম্ভবত স্কুলের কোন একটি ক্লাসের বিজ্ঞান বইয়েও এরককম কিছু লেখা ছিলো। অন্য আরো অনেক কিছুর মত ছোট বেলার সন্দেহাতীত ভাবে মেনে নেয়া এই জানাটাও বড় হয়ে দেখলাম ভুল। বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু গাছের জীবন আবিস্কার করেনি। গাছের যে জীবন আছে সেটা আরো অনেক আগে থেকেই সবার জানা ছিল। নির্দিষ্টভাবে কেউ কোনদিন দাবি করে বলেনি যে, আমি বা আমার রিসার্চ গ্রুপ আবিস্কার করিলো- গাছের প্রাণ আছে! কিন্তু তাহলে জগদীশ চন্দ্র বসু সমন্ধে যেটা জানতাম সেটা কি মিথ্যা? উনি তাহলে কি আবিস্কার করেছেন? কিছুদিন জগদীশ চন্দ্রের কাজ নিয়ে খোঁজ খবর করে দেখলাম তাঁর মৌলিক অবদান আছে বিজ্ঞানের বেশ কয়েকটি শাখায়। আর গাছ সমন্ধে উনার আবিষ্কারটিকে সহজে বুঝবার মত করে এক লাইনে বলতে হলে বলতে হবে, উনি আবিস্কার করেছিলেন `গাছের অনুভুতি আছে; উত্তেজনায় গাছ সাড়া দেয়।´

উনাকে নিয়ে আগ্রহের শুরুর ঘটনাটাও বলি, একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরীর বইপত্র রাখার তাকে উদ্দেশ্যবিহীন ভাবে পুরোনো জার্নাল গুলো দেখছিলাম। তখন বিখ্যাত বিজ্ঞান পত্রিকা `সেল´ এর একটি প্রচ্ছদে চোখ আটকে যায়। প্রচ্ছদটি যে গবেষনা পত্র থেকে নেয়া সেটার বিষয় বস্তু ছিল উদ্ভিদের বৃদ্ধির উপর স্পর্শের প্রভাব। সেই গবেষণার পরীক্ষালব্ধ ফলাফলের একটি হল, বার বার হাত দিয়ে স্পর্শ করলে উদ্ভিদের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।

তখন হঠাৎ মনে হল এই পেপারটির সাইটেশনে হয়ত জগদীশ চন্দ্র বসুর কোন পেপার উল্লেখ থাকতে পারে। তখন জে. সি. বোস মাথায় ঢুকল। নেচারে পাবলিশ করা পেপার থেকে শুরু করে বাংলা ইংরেজী দুই ভাষার বইই যোগার করে মুগ্ধ বিস্ময়ে পড়া শুরু করলাম। তখনই ভেবেছিলাম বাংলার এই বিজ্ঞানীকে নিয়ে আমার এই বিষ্ময় বোধ সবার সাথে ভাগাভাগি করে নেব। তাই কাঁচা হাতেই তাকে নিয়ে কিছু একটা লেখার তাগিদ অনুভব করছিলাম।

আমার একটি পেন্ডিং কাজ কমিয়ে দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। (যদিও আপনার মত গুছিয়ে এত তথ্যবহুল ভাবে লেখা আমার পক্ষে কোনোদিনই সম্ভব হত না।)

টাচ রেসপন্স

উনার সমন্ধে পড়তে গিয়ে উনার মৃত্যু বিষয়ে কৌতূহল হয়েছিল। কোন এক জায়গায় থেকে জেনেছিলাম, উনি আত্মহত্যা করেছিলেন। এখন উৎস খুঁজে পাচ্ছি না। আপনি কি এ বিষয়ে কিছু জানেন?

আচার্য্য বসু আবিষ্কৃত বস্তু/তত্ত্বের পেটেন্ট করানোর বিরোধী ছিলেন।

তার এই মতামতের সূত্রটা উল্লেখ করবেন?

পেটেন্ট না করানোয় রেডিও আবিষ্কারের ক্ষেত্রে কী ঘটনা ঘটেছে সেটারও কিছু কিছু আমরা জানি।

এই লাইনটাও আরেকটু ব্যাখ্যার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করি। আমার জানা মতে উনি মাইক্রো ওয়েভ নিয়ে কাজ করছিলেন। রেডিও ওয়েব নয়।

সবার শেষে জগদীস চন্দ্র বোসের ভাস্কর্যের সাথে আমি এবং আমার কয়েকজন বন্ধুর ছবি। ছবিটি আজ থেকে সাত/আট বছর আগের। বন্ধুরা মিলে লং রাইডে ঢাকা থেকে দোহার সাইকেল ট্যুরে যাবার সময় শ্রীনগরে ভাস্কর্যটি দেখতে পাই। যে পথচারীর হাতে ক্যামেরা দিয়েছিলাম সে আমাদের ছবি ঠিক মত তুললেও ভাস্কর্যের মাথা কেটে ফেলেছেন।

3

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

১। আমি লিখেছি বলে আপনার লেখা দেয়া যাবে না তা তো নয়। আচার্য্যকে নিয়ে এবং তাঁর কাজ নিয়ে যতবেশি লেখালেখি হবে আমাদের গোল্ডফিশ মেমোরি তত জাগ্রত হবে। আমি নিশ্চিন্ত মনে আপনার লেখা কমপ্লিট করে পোস্ট করে ফেলুন। আমি আপনার পেন্ডিং কাজ কমাচ্ছি না। আপনার ইন্টারেস্টের সাথে যায় আচার্য্যের অমন একটা পেপার অনুবাদে হাত দিন।

২। আচার্য্যের মৃত্যু বা আত্মহত্যা নিয়ে আমার আগ্রহ নেই। এই ব্যাপারটাতে কিছু খোঁজ করতে চাইছি না।

৩। After Bose's Friday Evening Discourses at the Royal Institution, The Electric Engineer expressed 'surprise that no secret was at any time made as to its construction, so that it has been open to all the world to adopt it for practical and possibly money-making purposes.' Bose was sometimes, and not unnaturally, criticised as unpractical for making no profit from his inventions. [Sir Patrick Geddes, The life and work of Sir Jagadis C. Bose, Longmans, Green, 1920]

এমন তথ্য আরো আছে। একটু খুঁজলেই পাবেন। তবে খোঁজার দরকার আছে বলে মনে হয় না।

৪। রেডিও নিয়ে আপনার প্রশ্নের উত্তর আমি দেবো না। কারণ, একটু উইকি ঘাঁটলেও এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। রেডিও সংক্রান্ত ঘটনাবলী একজন বাঙালী হিসেবে আমাদের নিজ উদ্যোগে জানা উচিত।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

তাসনীম এর ছবি

আসিফ ইসলাম খানের এই পেপারটা বেশ ইন্টারেস্টিং

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

আশালতা এর ছবি

অনেক আগ্রহ নিয়ে পড়লাম। তিনি গাছের প্রাণ আবিষ্কারক এই তথ্যটা নিয়ে আমারও খটকা ছিল। পড়ে ভালো লাগলো।

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

মাহবুব ময়ূখ রিশাদ এর ছবি

ইন্টেরেস্টিং। চলুক

------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক অজানা বিষয় জানা হলো আপনার অল্পকথার লেখায়, তাই আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

(সচলের এমন গুরুত্বপূর্ণ লেখাগুলো ফেবুতে শেয়ার দিলেও দেখা যায় নানান কারনে অনেকেই পড়ে দেখে না। সময়, আগ্রহের অভাব ছাড়াও অনেকেই মোবাইলে ফেসবুক ব্যবহার করে বলে লিংকে গিয়ে বড় লেখাগুলো পড়তে চায় না। তাই আপনি যদি অনুমুতি দেন আপনার লেখার গুরুত্বপূর্ণ অংশ আপনার নাম উল্লেখপূর্বক স্ট্যাটাস আকারে দিতে চাই।)

মাসুদ সজীব

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আমি তো জানতাম মূল লেখকের নাম উল্লেখ করে উদ্ধৃতি দেবার জন্য লেখকের কাছ থেকে কোন অনুমতির দরকার হয় না।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

অনেক তথ্যই অজানা ছিল। হয়তো ততটা প্রাসঙ্গিক নয়, তবুও তাঁর সম্পর্কে একটা তথ্য উল্লেখ করতে চাই- শৈশব/কৈশোরে ময়মনসিংয়ে তিনি প্রচুর যাত্রা পালা দেখতেন। তখন যাত্রা পালাগুলো অধিকাংশই পৌরাণিক কাহিনী নির্ভর হতো। মহাভারতের ট্র্যাজিক চরিত্র কর্ণ তাঁর মনে গভীরভাবে রেখাপাত করে, কর্ণ হয়ে ওঠে তাঁর রোল মডেল।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

তাঁর জন্মটাই তো ময়মনসিংহে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

গুরু গুরু

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

'অব্যক্ত'র একটা কপি জোগাড় করেন তো।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

আমার কাছে অব্যক্ত'র একটা পিডিএফ ভার্সন আছে। আপনার মেইল এ্যাড্রেস পেলে পাঠিয়ে দিতে পারি।

অতিথি লেখক এর ছবি

বেশ কিছু গুরুত্বপুর্ণ তথ্য জেনে নিলাম। অনেক ধন্যবাদ কষ্ট করে এবং এত সুন্দর করে লেখার জন্য। হাসি

- বাউন্ডুলে বাতাস

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

হ্যাঁ, অবশ্যই অজানা কিছু তথ্য জানলাম । আরও লিখুন । আমরা নতুন নতুন অনেক কিছুই আপনার কাছ থেকে জানতে পারবো আশাকরি । হ্যাঁ, তবে অন্যদের কথা বলা ঠিক হবেনা । আমার অজানা অনেক কিছুই হয়তো আপনার কাছ থেকে জানতে পারবো । চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

“আচার্য্য বসুর সকল লেখা একসাথ করে একটা রচনাসমগ্রের ই-বুক কি বের করা যায় না!”
অবাক হই আমাদের দেশে এত তরজমাকারী ও প্রকাশনী যারা প্রতি বছর অনেক লেখার বাংলা তরজমা বের করেন ,আচার্য্যের কথা তাঁদের একবারও মনে হয়নি!!? অথচ এমন নজির আছে যে একই বই/সায়েন্স ফিকশনের বহু তরজমা প্রকাশিত হয়েছে।
একারনেই হয়ত ,”চিত্তভূমিতে বৈজ্ঞানিক উর্বরতার অভাবে আমাদের মন আছে অবৈজ্ঞানিক হয়ে”

বরাবরের মত গোছানো ও তথ্যবহুল। গুরু গুরু

অভিমন্যু .
________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি

কল্যাণ এর ছবি

গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

উটিংওয়াং  এর ছবি

অনলাইন থেকে অনেক কিছু শিখা যায় ! অনলাইন গুতাগুতি করে হঠাৎ এ পেইজে অাসতে হলাম ! এ পেইজে এসে কিছু পড়ে বুঝতে পারলাম এবং অাশাকরি অারো পাবে বলে প্রত্যাশা করছি !
ধন্যবাদ জানাই
সবাই কে ---

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।