অন্যদের দেশে, অন্যদের সময়ে

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি
লিখেছেন ত্রিমাত্রিক কবি (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৪/০৮/২০১৪ - ১:৪৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

(১)

ঘর থেকে বের হয়ে আক্ষরিক অর্থেই দু’গলি পার হয়ে বাস স্টপের সামনে দাঁড়াতে প্রথমেই মনে হল নিশ্চয়ই বড়সড় কোন পুণ্য করে বেরিয়েছি। কিন্তু নিজেকে যতটুকু জানি, তাতে গত দু-চার বছরে তেমন কোন পূণ্য টুণ্য করার কথা না যাতে বাস স্টপেজে এসে দাঁড়াতেই দুজন সুন্দরী সামারিক (সামরিক নয়) পোষাক পরিহিত মেয়ে হাসিমুখে এগিয়ে এসে বলবে, “মে আই ঠক ঠু ইউ স্যার?”। পাঁচ ফিটের চেয়ে সামান্য বেশি উচ্চতা আর একশ ছুঁই ছুঁই ওজন নিয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফেয়ার এন্ড হ্যান্ডসাম আর ফ্রেশ সাবান ব্যবহার করার পরেও, নিজের ব্যপারে যথেষ্ট উচ্চধারণা পোষন করার সর্বোচ্চ চেষ্টা স্বত্ত্বেও নিজেকে ‘স্যার’ পর্যায়ে নিজেই কখনও উন্নীত করতে পারিনি, সেখানে মেঘ না চাইতেই জল তো বটেই একেবারে জমাট আইস্ক্রীমের মত দু’জন এসে কিনা বলছে, “মে আই ঠক ঠু ইউ স্যার, ফর আ সেকেন্ড?”

আমার ভাগ্যে সচারাচর এমন ঘটে না, ঘটার কোন যুক্তিসংগত কারন নেই বলেই ঘটেনা। আমি যুক্তিবাদি মানুষ বলেই, এই বাস্তবতা মেনে নিয়েছি। এসব ব্যক্তিগত প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি আর দেনা পাওনার খুনসুটিতে সাম্প্রতিক কালে প্রভুর সাথে সম্পর্কটা ঠিক ভাল যাচ্ছে না। রাশির দোষেই হোক আর সেলফিশ জ্বিনের কারনেই হোক আমার পক্ষ থেকে এই রেষারেষিতে আমি সামান্য ছাঁড় দিচ্ছি না, কিন্তু প্রভু যদি কিছু সময়ের জন্য হলেও এই রেষারেষি ভুলে আমার দিক দুজন সুন্দরী নারীর চোখ দিয়ে তাকানোর ইচ্ছা পোষণ করেন, আমি সে দৃষ্টি ফিরিয়ে দেবার কে? তাছাড়া লোকে তো বলে, প্রভুর লীলা নাকি বোঝা ভার। লোকের বলা কথা বরাবর অগ্রাহ্য করে গেলেও এক্ষেত্রে অগ্রাহ্য করার কোন যুক্তিঙ্গত কারন পাই না, তাই বুদ্ধিমান যুক্তিবাদি মানুষের মত বোঝাবুঝির চেষ্টার মধ্যে না গিয়ে, চাপা উত্তেজনা চেপে রেখে গলায় বেশ খানিকটা অ্যাকসেন্ট ঢেলে বলি, “শুয়োর, হোয়াই নট?”

হাসি হাসি মুখ করে, পেটের বাইরের দিকের সামান্য ফুলে থাকা অংশটা (যেটাকে অনেক লোক সহজ ভাষায় ভুঁড়ি বলে অভিহিত করতে চান) ভেতরের দিকে একটু টেনে আনতে আনতে, চুলটা একটু অনভ্যস্ত হাতে ঠিক করতে করতে, চিন্তা করতে থাকি, কী উদ্দেশ্যে প্রভু আমার কাছে এঁদের পাঠাতে পারেন। প্রভু আমাকে ভাবার খুব একটা সুযোগ দেন না, ওদের মুখ দিয়েই বলবার ব্যবস্থা করেন, “ডু ইউ হ্যাভ ফাইভ মিনিটস ফর গড স্যার?”। এই কথা শোনার সাথে সাথে নিজেকে কিছুটা বোকা*দা মনে হতে থাকে, আমি কোন বুদ্ধিতে ভেবে বসলাম প্রভু নিজেদের ভেতরকার খুনসুঁটি ভুলে টুলে আমার কাছে এঁদের পাঠিয়েছেন, কী এক অজানা উদ্দেশ্য, এখন দেখি এঁদের ব্যবহার করে রীতিমত আমার কাছে সময় দাবী করে বসছেন। আমি বুঝতে পারি কিন্তু আমি তারে পারিনা এড়াতে, ততক্ষণে ফাঁদে পড়ে গেছি, প্রেমের ফাঁদা পাতা ভুবনে, কে কোথা ধরে পড়ে কে জানে!

বাংলাদেশে দাওয়াতে তাবলীগের লোকের অ্যামবুশের মুখে পড়ে কখনই বিব্রত, বিরক্ত এবং রাগান্বিত হন নি এরকম লোক খুঁজে পাওয়া ভার। বাসা ঢাকায় হওয়ার কারনে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে দীর্ঘসময় বসবাস তেমনভাবে হয়ে ওঠেনি, কিন্তু বন্ধুদের কাছে হলে হুজুরদের হাত থেকে নিরাপদে বেঁচে থাকার নানা কৌশল এবং অপকৌশল শোনার সুযোগ হয়েছে। সময় মত ঘুমের ভান করে পরে থাকা থেকে শুরু করে, ফুল ভলিউমে বড় বড় লোকদের ভালবাসাবাসির ছবি দেখা ছাড়াও সেই কৌশল মিথ্যা ঘুমের ঘোরে অসাবধানতার ভান করে নিজের আর্টিলারি প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে মানসিকভাবে দুর্বল করে দেয়া পর্যন্ত বিস্তৃত।

দেশের বাইরে এসে এরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে এ ব্যপারে কোন ধারনা ছিল না। দেশের বাইরে আসার পরে প্রথম যেদিন প্রভুর পক্ষ থেকে ডাক আসে, সেদিন আকাশ থেকে ঝব ঝব করে বরফ পড়ছে। আলগা রোমান্টিকতা ঝেড়ে সেটাকে ‘পেজা তুলার মত বরফ পড়ছে’ বা ‘ স্বপ্নরাজ্যে চলে এসেছি’ এমন সব বালখিল্য করার কোন সুযোগ ছিলনা। দেশ ছাড়ার পর প্রথম শীতকাল, প্যান্ট আর একেবারে ভেতরের প্যান্টের মধ্যবর্তী আরও একটা প্যান্ট পরার ব্যপার যে থাকতে পারে সেটা প্রথম তখন টের পাচ্ছি। সকাল আটটার ক্লাস ধরতে হবে, এইরকম ঘ্যাম তুষারপাতের (ভুল বুঝবেন না এখানে তুষারপাত মানে স্নোফল) মধ্যে মধ্যবয়স্ক, গোয়েন্দা সিনেমার গোয়েন্দাদের মত কাল ওভারকোট পরা মধ্যবয়স্ক দুইজন লোক বিগলিত হাসি নিয়ে আলাপ জমানোর চেষ্টা করল। তারা কী বলেছিল তা আমার ঠিক মনে নেই, সে প্রায় বছর চারেক আগের কথা। কিন্তু বাইরের শীতল আবহাওয়ার কারনেই হোক বা তাদের লিঙ্গ আর বয়সের প্রতি বিশেষ আকর্ষণ না থাকার কারনেই হোক, আমি সম্ভবত বলতে পেরেছিলাম, “সরি আই অ্যাম নট ইন্টারেস্টেড”। তারা তখন হাতে কিছু কাগজ আর কিতাব ধরিয়ে দিয়ে বিদায় নিয়েছিল। এরপর যতবার প্রভুর থেকে ডাক এসেছে কোন না কোনভাবে ফিরিয়ে দিতে পেরেছি। চার বছর চেষ্টার পরে প্রভু স্ট্র্যাটেজি বদলেছেন, এবার আর ফেরাতে পারলাম না। ভাবছি আমাদের অঞ্চলেও প্রভুর এরকম নতুন কোন মার্কেটিং পলিসি দরকার নাকি!

প্রভুর কথা বলে মেয়েদুটির মধ্যে যে মেয়েটি কথা বলছিল, সে তার হাতে রাখা একটা কার্ডের ব্যাগ থেকে একটা কার্ড এগিয়ে দিল। কার্ডটা হাতে নিয়ে দেখলাম, এই কার্ড আগেও দেখেছি, এই এলাকায় একটা মরমন চার্চ থাকায় এঁদের অ্যামবুশের স্বীকার আগেও হয়েছি, তবে সেই সময়গুলোতে প্রভুর স্ট্র্যাটেজিক ভুলের কারনে সেই অ্যামবুশ এত গভীরভাবে আচ্ছন্ন করতে পারেনি আমাকে। কার্ডের ওপর লেখা, ‘দ্যা চার্চ অফ জেসাস ক্রাইস্ট’ তার নীচে ছোট হরফে লেখা ‘অব ল্যাটার ডে সেইন্টস’। প্রিভিয়াস ডে সেইন্টদের টেক্কা দেয়ার জন্য ল্যাটার ডে সেইন্টরা বেশ ভাল স্ট্র্যাটেজিই গ্রহণ করেছে তাহলে। ডানপাশে ছোট করে ওয়েবসাইটের ঠিকানাও লিখে রেখেছে, ডাব্লিউ ডাব্লিউ ডাব্লিউ ডট মরমন ডট ও আর জি। নাহ প্রভুও আধুনিক হয়ে উঠছেন, মনে হল নিজের ওয়েবসাইটটা অনেকদিন ঠিকঠাক করা হয় না, ঠিকঠাক করে ফেলা দরকার।

মেয়েদুটো কথা বলতে থাকে, আমাদের এই ব্যস্ত সময় থেকে কিছু সময় প্রভুকে দিয়ে দেয়া দরকার, আমাদের এই ষাট সত্তর বছরের জিন্দেগী, কীসে জীবনের সাফল্য, কীসে ব্যর্থতা এইসব কথা বার্তা চলতে থাকে। এঁদের সাথে তর্ক করে লাভ নেই জানি, তাই ধরা যখন দিয়েই দিয়েছি ওদের হ্যাঁ-তে হ্যাঁ আর না-তে না মিলিয়ে যেতে থাকি। ওরা বকতে থাকে, ব্যাগ থেকে কিছু কাগজপত্র বের করে হাতে দেয়। চার্চে যাই কিনা জিজ্ঞেস করল, বললাম যাই না। ওদের চোখ চকচক করে ওঠে, পাশেই স্টারবাকস, সময় থাকলে স্টারবাকসে বসার অনুমতি চায়, বিল নাকি ওরাই দেবে, ওদের ভাষায় ‘বিলস অন গড’। প্রভুর কাছে ঋণী হয়ে যেতে ইচ্ছা করে না, তাই কফি আর সঙ্গের লোভ সংবরণ করি, প্রভুই হয়ত বাঁচিয়ে দেন ঋণী হয়ে যাওয়া থেকে, বেশি কথা বলতে হয় না আর, বাস চলে আসে। আমি বিদায় নিয়ে বাসে উঠে পড়ি।

ওরা পেছনে পড়ে থাকে, জানালা দিয়ে দেখতে পাই, আরেকজনের সাথে কথা বলা শুরু করেছে। আহা নামটাও জেনে নেয়া হল না। থাকুক ওরা না হয় নামহীন ভুক্তি হিসেবেই স্মৃতি-বিস্মৃতির খাতায় জমা থাকুক।

(২)

আক্ষরিক অর্থেই অনেকদিন পর বের হয়েছি ক্যামেরা নিয়ে। তেমন কোন বিশেষ কারনে না, এমনিই। ছবি তোলার অভ্যাসটা চলে যাচ্ছে। ভ্যাঙ্কুভারে আসার পরে কয়েকদিন মুস্তাফিজ ভাইয়ের সাথে বের হয়েছি একবার বা দুইবার, পরে ফাহিম আর কৌস্তভের আগমনে দুই একবার ক্যামেরা নিয়ে বের হওয়া হয়েছে এই যা। অভ্যাসটা ধরে রাখার জন্যই বের হলাম বলা যায়।

বাসে উঠলাম, এই রুটের বাসগুলো আর্টিকুলেটেড বাস, অনেকটা ট্রেনের বগির মত, দুইটা অংশ একটা আরেকটার সাথে লাগানো। এত বিশাল বাসে আমি কোনদিন অর্ধেকও ভরতে দেখিনি। শুধু শুধু এত বিশাল বাস এই রুটে রেখেছে কেন কে জানে! আরেকদিকে দেখি অনেক ব্যস্ত রুটেও এক কম্পার্টমেন্টের সাধারণ বাস, ঐ রুটে বাসে উঠতে গেলে প্রায়ই ভীড়ের কারনে ড্রাইভার উঠতে দেয় না, পরের বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। নগর পরিকল্পনার সমস্যা শুধু ঢাকা শহরের একার সম্পত্তি না, ভ্যাঙ্কুভারের মত ছিমছাম শহরেও মাঝে সাঝে এরকম পরিকল্পনার অভাব চোখে পড়ে। এই বাসগুলাতে উঠলে আমি সাধারণত দুই কম্পার্টমেন্টের মাঝামাঝি যে অংশটা দিয়ে জোড়া লাগানো হয় সেই জায়গাটাতে বসি, অন্তত যদি একা উঠি বাসে তাহলে। জোড়া লাগানোর অংশটাতে দু’টা চেয়ার, যে কোন একটা পেয়ে গেলে পুরো বাসের বেশ ভাল একটা ভিউ মেলে। বাসে উঠে মাঝে মাঝে ফোনে ফেসবুক চেক করা ছাড়া যেহেতু আর কোন কাজ থাকে না, ঐ সময়টাতে তাই আশেপাশের মানুষ দেখতে ভালোই লাগে।

আমার ঠিক বিপরীত দিকের সিটেই বসে আছে একটা মেয়ে। একটা বই পড়ছে। এখানে অনেক লোকজনকেই বাসে বই পড়তে দেখি। কাউকে বই পড়তে দেখলে বইয়ের নামটা জেনে নিতে ইচ্ছে হয়। আমাদের দেশের বইগুলোতে বইয়ের নাম বড় করে লেখা থাকে, এখানে দেখি উলটা। এখানে বেশিরভাগ বইয়ের নামে লেখকের নাম বড় করে লেখা থাকে, সম্ভবত ব্র্যান্ডিংএর ধারনা থেকে। অনেক বইয়ের ওপরেই লেখা দেখি, একটা হ্যাশট্যাগ দিয়ে লেখা থাকে নিউইয়র্ক টাইমস বেস্ট সেলার। বইয়ের মলাটের ওপর বড় করে লেখা ‘লিন্ডা লায়েল মিলার’। বোঝা গেল এটা লেখকের নাম। আরেকটু খেয়াল করে দেখলাম, বইয়ের নাম, ‘দেয়ার অ্যান্ড নাউ’। লেখক বা বই কোনটার নামই আগে শুনিনি। কত কিছু যে না জানা থেকে যাবে, এদিকে বয়স বেড়ে যাচ্ছে।

বাসটা মেইন স্ট্রিট থেকে মোড় নিয়ে হ্যাস্টিংসএ উঠল। বাসের মূল গন্তব্য ডাউনটাউনের দিকে। এটা ডাউনটাউনের পুরোনো অংশ। এই রাস্তাটা নেশারু আর হোমলেস লোকজনদের অভয়ারণ্য। দুইপাশের ফুটপাথে ওদের বসবাস, সবাই প্রায় হাই হয়ে থাকে অধিকাংশ সময়। কেউ কেউ ফুটপাথের ওপর পুরোনো জিনিস কেনাবেচার দোকান দিয়েছে, কেউ সাইকেল সারাইয়ের কাজ করছে, কেউ বেসুরো গিটার বাজাচ্ছে, কেউ কিছু করছে না একেবারে। এই রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে নিশ্চিতভাবেই কেউ না কেউ ডেকে বসবে, কেউ ডেকে স্মোক চাইবে, কেউ বা স্মোক বেঁচতে চাইবে। খুচরা সিগারেট কিনতে চাইলে এদের কাছ থেকে কিনে নেয়া যেতে পারে, কারন বড় বড় স্টোরগুলোতে খুচরা সিগারেট কেনা যায় না। একটু আড়ালে ডাক দিলে স্মোক বিক্রেতার কাছ থেকে স্মোকের অধিক অন্য কিছুও পাওয়া যায়। সমসময়েই দুচারটা পুলিশের গাড়ি পার্ক করা থাকে রাস্তার ওপরে, ল্যাম্পপোস্টে হেলান দিয়ে কাল পোষাকের পুলিশ, বেশিরভাগ সময় খোশগল্প করতেই ব্যস্ত দেখি তাদের। এদের পুলিশ তেমন একটা ঘাঁটায় না, কিন্তু ডাউনটাউনের মোটামুটি এই অংশটাতেই এদেরকে রাখা হয়। তবে এই এলাকায় সম্ভবত পুলিশের সাথে ওদের ভাল বোঝাপড়া আছে। কয়েকদিন আগে একটা পাবের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের সামনেই উইড চাইতে দেখলাম। জায়গাটা ছবি তোলার জন্য আসলেই ভাল। রাস্তার ওপরে ওখানে ওদের নিজস্ব একটা জীবন আছে। আশেপাশের পাবগুলোও বেশ সস্তা, মূল আধুনিক ঝকমকে ডাউনটাউনের চেয়ে প্রায় অর্ধেক দামে বিয়ার মেলে। ডাউনটাউনের ঝা চকচকে জীবনের পাশে এখানে একটা ভিন্ন জীবন আছে, বড় শহরের দামী গাড়ি আর ফ্যাশন দুরস্ত জীবনের বাইরের কিছু গল্প আছে। সেই গল্পগুলোর কিছুটা ক্যামেরায় ধরে রাখতে পারলে খারাপ হত না। কিন্তু এখানে নেমে ছবি তুলতে ঠিক সাহস পাই না, আগে দুএকবার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু অনেকেই উত্তেজিত হয়ে যায়, গালাগালি করে, কেউ তেড়ে আসে।

এই অঞ্চলের দেয়ালগুলোও অন্যরকম, রাস্তার মানুষগুলোর মতই কিছুটা ভিন্ন রঙের। অনেক দেয়ালেই বিশাল বিশাল গ্রাফিতি। আধুনিক ডাউনটাউনে খুঁজে পেতেও এরকম একটা গ্রাফিতি খুঁজে পাওয়া যাবে না। এর সাথে কি আমাদের দেশের চিকা মারা বা দেয়াল লেখার কোন সম্পর্ক আছে? শুধু ডাউনটাউন নয়, শহরের এই অংশ ছাড়া ভ্যাঙ্কুভারের কোন জায়গাতেই আমি গ্রাফিতি দেখিনি, বা থাকলেও হয়ত নজরে পরার মত নেই। আমাদের দেশে যেমন দেয়ালে দেয়ালে শ্লোগান, রাজনৈতিক ব্যানার বা ‘কষ্টে আছি আইজুদ্দিন’এর মত লেখালেখি দেখি, তার সাথে কি জীবন সংগ্রামের কোন সম্পর্ক আছে?

(৩)

অভ্যাসবশত সেলফোনটা বের করি। তারিখের দিকে চোখ পড়ে যায়, আগস্ট মাস, আমাদের শোকের মাস। আগস্ট মাসটাতে পৃথিবীতে খুব খারাপ খারাপ ঘটনা ঘটে গেছে। এই মাসের এগার তারিখে মারা গেছেন হুমায়ূন আজাদ, চোদ্দ তারিখে জন্ম হয় বিশ্বের অশ্লীলতম রাষ্ট্র পাকিস্তানের, আর পনের তারিখে সেই পাকিস্তানি ধামাধরাদের হাতে নিহত হন বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু নিহত হবার পরেই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় সৌদি আরব, সেই থেকে শুরু।

মনে পড়ে চার বছর আগের এরকম একটা আগস্ট মাসেই আমি দেশ ছেড়েছিলাম। এই দেশে এসে চার বছর ধরে শুধু মনে হয়েই গেল, চারটা বছর আমি অন্যদের দেশে কাটিয়ে দিলাম। আমি না হয় চাইলেই ফিরে যেতে পারি, একটা ফিরতি টিকেট কেটে ফেললেই হয়ে যায়। হুমায়ূন আজাদ তো আর চাইলেই ফিরতে পারেন না। আমার শুধু বারবার মনে হয় হুমায়ূন আজাদের কথা, যিনি বেঁচে ছিলেন অন্যদের সময়ে। কিন্তু এখন স্বার্থপর সময়, কেউ তার নিজের সময়ের ভাগ অন্যকে দিতে চায় না। তাই অন্যদের সময়ে বেঁচে থাকার কষ্ট ওনাকে খুব বেশিদিন করতে হয়নি। সময়টা অস্থির, সবাই নিজের ভাগটা বুঝে নিতে জানে। আমি তাই শুধু চেষ্টা করে যাই সময়টাকে নিজের করে নিতে, কিন্তু যতই করতে চাই হুমায়ূন আজাদের মত আমার খালি মনে হয় আমি সময় আমি বেরিয়ে যাচ্ছি সময় থেকে, টিকতে পারছি না। আমি বারবার ফিরে আসার চেষ্টা করি, কিন্তু সময় ফিরতে দেয় না।


মন্তব্য

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

হাসি আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

১। 'সামারিক' শব্দটা ভালো লেগেছে। প্রভুর ভক্তদের নতুন ধরনের আক্রমণ কৌশলও ভালো লেগেছে।

২। লিন্ডা লায়েল মিলারের নামও কোনদিন শুনি নাই। এই পোস্ট পড়ে খোঁজ নিয়ে দেখি ও বাবা! ইনি দেখি লেয়ার মুরগীর ডিম পাড়ার হারে বই লিখে চলেছেন।

৩। ঢাকায় দুই কোচওয়ালা বাসের মাঝখানে জায়গাটাতে দাঁড়াতেও দেয় না।

৪। একটা শহরের আত্মা বোধকরি ডাউনটাউনে বাস করে। ওখানকার প্রতিটি জিনিস, প্রতিটি মানুষের মাধ্যমে সেই আত্মার পরিচয় একটু একটু করে পাওয়া যায়।

৫। আমার পক্ষে সম্ভব হলে ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে অগাস্ট মাসটা মুছে ফেলতাম। ব্যক্তিগত আর জাতীয় উভয় পর্যায়ে নানা প্রকার আঘাতে আঘাতে আমার অগাস্ট জর্জরিত।

৬। একটু চেষ্টা করলে তুমি হয়তো নিজের স্থানে ফিরতে পারবে, কিন্তু নিজের সময়ে - একেবারেই না। দেশটা তো পাল্টায়নি, এর মানুষগুলো পালটে গেছে। আমরা যারা দেশে থাকি তারা প্রতি মুহূর্তে টের পাই আমরা আমাদের সময়ে নয়, অন্য কারো সময়ে বাস করছি।

** সামনে পরীক্ষা আছে নাকি? বেশ নিয়মিত লেখা পোস্ট করে যাচ্ছ!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

১) হাসি

২) আমিও দেখলাম বাসায় এসেই, কেমন লেখেন জানিনা। গুডরিডসে দেখলাম রিভিউ বেশ ভাল। অবশ্য রিভিউ দেখে অনেক সময়েই কেমন বই বলা যায় না, হয়ত একটা নির্দিষ্ট পাঠকগোষ্ঠী পড়ে, তারা কেমন পাঠক সেটার ওপর রিভিউয়ের নাম্বার নির্ভর করবে। লেয়ার মুরগির ডিম পাড়ার হার না হয় বুঝলাম তুষারের ভিটামিন খাওয়ানোড় ওপর নির্ভর করে, কিন্তু এনাদের ভিটামিন খাওয়ায় কে? অবশ্য আমাদের হুমায়ূন আহমেদের তুলনায় বইয়ের সংখ্যা সম্ভবত অনেক কমই হবে।

৩) ঢাকায় আমি শেষ গেছি প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে তখন ডাবল কোচের বাস চলতে দেখিনি। সম্ভবত কারও কাছ থেকে শুনেছিলাম ডাবল কোচের বাস ঢাকায়ও চালু হয়েছে। কবে থেকে চালু হল? এটা কি বিআরটিসির?

৪) বিশেষ করে বড় শহরে যেখানে অনেক অনেক রকম মানুষ বাস করে তার জন্য এটা আরও বেশি সত্যি, শহরের সব রকম সব শ্রেণির মানুষই দেখা যায় ডাউনটাউনের বিভিন্ন যায়গায়। কিছু ছবি নিলাম ওইদিন, কিন্তু যেটা লেখাতেও বলেছি, একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গার ছবি নেয়া হয়ে উঠল না। সুযোগ পেলে একটা ছবিসহ পোস্ট দেব হয়ত।

৫) আগস্ট আক্ষরিক অর্থেই বাঙ্গালির জন্য, বাংলাদেশের জন্য শোকের মাস। এই মাসের ক্ষতি সম্ভবত কোনদিনই আমরা পুষিয়ে উঠতে পারব না।

৬) নিজের স্থানে ফিরে আসার চেষ্টা করছি। দেখি নিজের সময়ে ফিরতে পারি কিনা!

**সামনে পরীক্ষা না, আপাতত একটু বিরতিতে আছি পাণ্ডবদা। সেই সুযোগে কিছু লেখালেখির চেষ্টা।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

৩। হ্যাঁ, ডাবল কোচের আর্টিকুলেটেড বাস বিআরটিসি'রই। এই ব্যাপারে খবর দেখো এখানে


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মাসুদ সজীব এর ছবি

গুল্লি গুল্লি

দিন কয়েক পূর্বে শাহবাগের আজিজের সামনে দাঁড়িয়ে আছি গাড়ির জন্যে তখন সিএনজি তে একটা বানী চোখে পড়লো " ইহকাল মিথ্যা, পরকাল সত্য" নিজের অজান্তে তেরসা একটা facial expression মেরে দিল মগজ " শালা তোমরা কি ধার্মিক, চোখের সামনে ইহকাল, তার পরও বল মিথ্যা "......... রুমে এসে একটা বই খুললাম, সেখানে আইন্সটাইন বলেছন " জগৎ নিতান্তই একটা মায়া" তৎখনাৎ গান এল " বিজ্ঞানী বল্লে লিলাখেলা, ধার্মিক বল্লে কারেক্টার ঢিলা"।

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

লাইনে আসুন, আপনেরা খালি ধর্ম নিয়ে ঝামেলা করেন।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক
জাতীয় পর্যায়ে আগষ্ট মাস - শোকের মাস।
কিন্তু ব্যক্তিগত পর্যায়ে আগষ্ট একটু অন্যরকম আমার কাছে। আমার নিজেরটা সহ সন্তান, বোন, আত্মীয়, বন্ধু, মাইকেল জ্যাকসন অনেকের জন্মমাস এই আগষ্ট।

আমার পক্ষে সম্ভব হলে ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে অগাস্ট মাসটা মুছে ফেলতাম।

'ষষ্ট পান্ডব' এর মন্তব্যের এতোটুকু পড়ে - মন খারাপ

ভালো থাকবেন ত্রিমাত্রিক কবে।
আপনার দিনলিপি যেন নিয়মিত হয়, সেই কামনা করছি।
শুভকামনা জানবেন।

-------------------------------
কামরুজ্জামান পলাশ

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

চেষ্টা করব লেখায় আরও নিয়মিত হবার। আপনাকেও শুভকামনা।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

অভিমন্যু .
________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ, অভিমন্যুদা

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

মরুদ্যান এর ছবি

চলুক চলুক

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

দেঁতো হাসি আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অতিথি লেখক এর ছবি

বেশ কয়েক বছর আগে আমাকেও ধরেছিল এরকম মা-মেয়ের এক নারী-জুটি। মেয়ে অত্যন্ত সুন্দরী। পাঁচ মিনিট প্রভুর গুণকীর্তন শোনার পরে বিরক্ত হয়ে হাসিমুখে মেয়েকে বললাম সে আমার সঙ্গে একটা ডিনারে যেতে আগ্রহী কিনা। মাও যেতে চাইছিল, কিন্তু আমি কেবল মেয়ের সঙ্গেই ডিনারে যেতে আগ্রহ দেখালাম। তারপর থেকে এই মা-মেয়ে জুটিকে আমার বাড়ির আশেপাশে আর দেখিনি।

Emran

হিমু এর ছবি

আম ছালা দুইটাই গেলো।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

হেহে এত জলদি অ্যাম্বুশে গেলে হবে? প্রথমে না হয় একটা ফুল ফেমিলি ডিনারই করতেন। তারপর ধীরে ধীরে লাইনে নিয়ে আসতেন।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

রণদীপম বসু এর ছবি

চলুক এটাকেই বলে ফাঁকিবাজি কমেন্ট ! হা হা হা !
লেখার কায়দাটা আকর্ষণীয়, বলতেই হয়। আর নিয়মিত এটা চলুক, তা বলি কী করে ! আমি নিজেই তো ক-অক্ষরে বকেশ্বর !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

হেহে ফাঁকিবাজি কমেন্টের ফাঁকিবাজি উত্তর আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

চলুক

____________________________

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

লেখাটা দারুণ লেগেছে। মনে হচ্ছে দেখছি। খুবই ভালো হয়েছে। ছবিটবি আশা করেছিলাম কিন্তু শেষমেষ ছবি না থাকাতে ভালো হয়েছে। বাসে ওঠার পর বর্ণনাটুকু বেশী ভালো লেগেছে। এটুকু পড়ে অনেকদিন আগের নিজের অভিজ্ঞতার সাথে মিলিয়ে নিতে পারলাম।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ পিপিদা। ছবি নিয়ে আরেকটা পোস্ট দিতে পারি সামনে, ভাবলাম ছবি দিলে লেখার প্রতি আগ্রহ কমে যাবে হয়ত। ফোকাসড থাকার চেষ্টা হাসি

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

দীনহিন এর ছবি

কত কিছু যে না জানা থেকে যাবে, এদিকে বয়স বেড়ে যাচ্ছে।

এই অনুভূতিটা আমারও হয়! কোন ভাল বই, কোন ভাল সিনেমা, কোন ভাল জায়গা, এমনকি কোন নতুন ধরনের ভাল খাবারের সান্নিধ্যে এলেই প্রথম যে কথাটা মাথায় আসে, মরে যাব না তো এগুলি আস্বাদ করার আগেই?

আপনার কাছে নিয়মিত গদ্য চাই!

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

চেষ্টা করব আরও নিয়মিত লিখতে হাসি

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

তিথীডোর এর ছবি

গলায় বেশ খানিকটা অ্যাকসেন্ট ঢেলে বলি, “শুয়োর, হোয়াই নট?”

চোখ টিপি হো হো হো

প্রথম নেমেছিলাম টেক্সাসের হিউস্টনে, বিমানবন্দরে পাশের সিটের বুড়ি দু-চার খানা মিষ্টি কথার পর একখানা চকচকে বাইবেল গছিয়ে দিয়েছিলেন।
আস্তে করে ওখানেই সেটা ফেলে এসেছিলাম।

কাজে বিরতিই চলছে যেহেতু, ব্লগিং ধুমসে চলুক তাহলে। হাসি

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

হেহে আংরেজি ব্যপারটায় এখনও অভ্যস্ত হতে পারলাম না তো, তাই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মাত্রার অ্যাক্সেন্ট ঢালতে হয়। আর বাইবেল অবশ্য আমি নিয়ে এসেছি, আমার কাছে এখন দুইটা বাইবেল, মাঝে সাঝে সময় কাটানোর জন্য খারাপ না তো!

দেখা যাক কদ্দিন চলে!

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

সাম্য এর ছবি

ওয়াটারলু/কিচেনার এরিয়ায় ২০১২ থেকে মর্মন চার্চের লোকজনের উৎপাত খেয়াল করেছি (এর সাথে ২০১২-এর এ্যামেরিকার নির্বাচনে মিট রম্‌নির উত্থানের কোন সম্পর্ক আছে কি না জানি না)। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখেছিঃ
- সাদা শার্ট - কালো প্যান্ট ইউনিফর্ম পরা শ্বেতাঙ্গ
- বুকের কাছে আইডি জাতীয় একটা কার্ড লাগানো যেখানে ইংলিশ আর ম্যান্ডারিনে নাম লেখা (চায়নিজ বন্ধু-বান্ধবী দ্বারা ভেরিফাইড!)
- ইংলিশ আর ম্যান্ডারিনে অনর্গল কথা বলতে সক্ষম
- বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, বাসস্টপ আর শহরের প্রধান রাস্তাগুলোর ইন্টার-সেকশনে দাঁড়ায় শিকার ধরতে (বিশেষ করে প্রকৌশল, গণিত - এসব ফ্যাকাল্টিতে প্রত্যেক দিন এদের দেখা যায়)
- ওদের টার্গেট প্রধানত চায়নিজ/চায়নিজ বংশোদ্ভূত ছেলে-মেয়েরা, তবে বাকিদেরও বাদ দেয় না

এত প্রচারণায় কিছু তো লাভ হয়ই। আমার পরিচিত একজন চায়নিজ মেয়েকে দেখেছি সারাজীবন কোন ধর্মের সংস্পর্শে না থেকেও এসবের পাল্লায় পড়ে চার্চে যাওয়া শুরু করেছে, 'জীবনের অর্থ' খোঁজার জন্য!

--------------------------------
বানান ভুল থাকলে ধরিয়ে দিন!

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

হ্যাঁ চায়নিজদের নতুন করে চার্চে যাবার রেট সম্ভবত সব জায়গাতেই বেশি। ওরা ছোট থেকে ধর্মহীন পরিবেশে হয়, ধর্মের ব্যপারে কোন ধারণা ছাড়াই। আমাদের দেশে যারা নিধার্মিক বা ধর্মত্যাগী তারা মোটামুটি ধর্মের খারাপ দিকগুলো নিয়ে জানে, কিন্তু ওদের সেই জ্ঞানটুকু না থাকায়, প্রচারকদের স্পিরিচুয়াল কথাবার্তায় সহজে আকৃষ্ট হয়। আমি নিজেও দুই একবার এক্সপ্লোর করতে চার্চে গিয়েছি, এখানকার পাদ্রীরা আমাদের হুজুরদের থেকে চাল্লু। এথিস্ট, অবিশ্বাসী, এগ্নোস্টিক, ননরিলিজিয়াস এগুলা শুনলে এদের চোখ চকচক করে ওঠে। নানা রকম ভুংভাং দেয়, এবং লোকে কনভিন্সড হয়ে যায়। কোনদিন গুছিয়ে লিখতে পারলে সেই অভিজ্ঞতা লিখব।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

লেখাটাতে একজন চুপিসারে একতারা দাগিয়ে চলে গেছেন। লেখার তারা নিয়ে মাথা আমি ঘামাই না, কিন্তু কী কারনে কেউ একতারা দিল সেটা জানতে পারলে খুব ভাল লাগত।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

বাঃ চমৎকার! নিয়মিত লিখলে এগুলোই হয়ে উঠতে পারে ভাবিকালের "শ্রীকান্ত"।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

হাতখুলে প্রশংসা করলেন, আমি মন খুলে ধন্যবাদ জানিয়ে যাই হাসি

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

এক লহমা এর ছবি

চলুক (ফাঁকিবাজি করে গেলাম, সময়-এর চিপায় পড়ে গেছি)।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

আমিও ফাঁকিবাজি করে যাই আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখা দারুণ হৈসে! চলুক

--ঋ

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

হাসি

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

এই লেখাটাই খুঁজতেসিলাম।

কাল মোবাইল থেকে এই লেখাটা পড়ে বেশ ভালো লাগলো, কিন্তু আজকে মন্তব্য করতে এসে নীড়পাতায় কিছুতেই পাচ্ছিলাম না। ফাঁক দিয়ে অন্য কয়েকটা লেখা পড়া হয়ে গেলো।

খাঁটি ব্লগরব্লগর হইছে। এরকম লেখা ভালো লাগে হাসি

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

খুঁজে টুঁজে মন্তব্য করে যাওয়ার জন্য আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।