সাধের বই বানাইল মোরে বৈরাগী

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি
লিখেছেন সাক্ষী সত্যানন্দ [অতিথি] (তারিখ: সোম, ১৬/০২/২০১৫ - ৫:৩৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

০১। ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায়ঃ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসটা বড় চমৎকার জায়গা। কার্জন হল কিংবা টিএসসি কিংবা কলাভবনের সামনে স্রেফ নানা রঙের মানুষ দেখেই ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দেয়া যায়। আর যদি দিনটা হয় ফাল্গুনস্য প্রথম দিবস, তবে তো কথাই নেই। আক্ষরিক অর্থেই চারিদিকে নানা রঙের মানুষ, শিশু থেকে বালক-বালিকা, কিশোর-কিশোরী থেকে তরুণ-তরুণী, মাঝবয়েসী থেকে প্রৌঢ়-প্রৌঢ়া কে নেই সেখানে! (লাল গেঞ্জি একটা আমিও নিয়ে গিয়েছিলুম, শেষমেশ লজ্জা-লজ্জা করায় সেটা আর ব্যাগের অন্ধকুঠুরি থেকে বের করা হয়নি।) এভাবে জনস্রোতে ‘কেউ না’ হয়ে হারিয়ে যেতে বেশ লাগে। প্রিয় জায়গা, প্রিয় সময়, কিছু প্রিয় মানুষের সান্নিধ্য; বেঁচে থাকতে আর কি চাই? সেই সঙ্গে উপরি আছে হাকিমের চপ-খিচুরি, চারুকলার ভাজাভুজি, ছবির হাটের মাশ্রুম ভাজা আর গুড়ের চা, টিএসসিতে শাহাবুদ্দিনের মাল্টোভা চা আর কার্জনের চেনামুখ মোটাগুঁফো ফলওয়ালা মামার বাহারি ফলাহার। মাঝেমধ্যে অবাক লাগে, এটা বিশ্ববিদ্যালয় নাকি খাবারের দোকান? যাকগে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচাইতে চমৎকার ব্যাপার হল- একুশে বইমেলা হয় ঠিক এর মধ্যখানটায়। বইমেলার মাসে আজ তাই খাওয়াদাওয়ার কথা বাদ। টলস্টয়ের সাথে গলা মিলিয়ে বলিঃ ‘বেঁচে থাকতে তিনটি জিনিসের প্রয়োজন হয়- বই, বই এবং বই’। আজ তাই বইয়ের গল্পই হবে, ফাঁকে অন্যকিছু।

০২। ডিজিটাল বাংলাদেশ, ডিজিটাল বইমেলাঃ

‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ শব্দবন্ধটি প্রথমদিকে ব্যাখ্যাহীন অতিকথন আর বাগাড়ম্বরের চাপে দুর্বোধ্য এক হেজেমনি কিংবা ডিকনস্ট্রাকশনের প্রতিরূপ হয়ে উঠছিল। কিন্তু, এখন ব্যাপারটা (অনেকাংশে, পুরোপুরি নয় মোটেই) মানুষের হাতে হাতে চলে এসেছে। এখন ট্রেনের শিডিউল জানার জন্য স্টেশন মাস্টারের ঘরে বিক্ষোভ করতে হয়না। জায়গামত নিয়মমাফিক একখানা ক্ষুদেবার্তা পাঠালে ফিরতিবার্তায় ট্রেন ক’টায় ছেড়েছে, এই মুহূর্তে কোন স্টেশনে আছে, পরবর্তী স্টেশন কোনটি এবং কতক্ষণ লেট এই চারটি তথ্য আপনার পকেটে চলে আসবে। আমার মত আলসে লোকের হয়েছে ভারি মজা। সকালে ঘুম থেকে উঠে চেনাজানা ট্রেনগুলোর অবস্থান জানতে বার্তা পাঠাই। ট্রেনের অবস্থান জেনে তারপর উবু-দশ-বিশ করে ঠিক করি ক’টায় বেরুব। সেই মোতাবেক সময় বুঝে বসের সাথে এককাপ চা-পাতা ফ্লেভারের লালচে কুসুম-গরম পানি দু’চুমুকে গিলে, বসকে একখানা লম্বা সেলাম ঠুকে আমি পগারপার। গতদিনের ব্যাপারটা অবশ্য ভিন্ন। সকালে (আসলে ভোরে) ঘুম ভাঙল ককটেলের শব্দে। কি ভেবে একখানা বার্তা পাঠালুম, দেখি একখানা ট্রেন একেবারে প্রায় সময়মত ছেড়েছে। ট্রেনটা ধরতে পারলে একেবারে দুপুর তিনটেয় বইমেলা শুরুর সময়ে ঢাকা পৌঁছনো সম্ভব। যেই ভাবা সেই কাজ। দ্রুম করে লুঙ্গি খুলে, দাঁত মেজে, হাগাঘরে গিয়ে (ঐদিন আন্তর্জাতিক হাগ দিবস ছিল কিনা), নাশতা করে একেবারে ফিটফাট বাবুসাব সেজে অফিসে গিয়েই বসের কক্ষে সেলাম জানালাম। ঘাঘু মানুষ, দেখেই বুঝে গেলেন কি চাই। পরবর্তী কর্মদিবসে যথাসময়ে রিপোর্ট করব এই নাকে খত দিয়ে, সবিনয়ে চা-গন্ধী পানীয়টিকে প্রত্যাখ্যান করে বীরদর্পে বের হয়েই চম্পট। তারপর ট্রেন, ট্রেন থেকে নেমে সোজা বইমেলা। পথে মতিঝিলে জামে পড়ায় পৌঁছুলাম প্রায় চারটেয়, খারাপ না। তারপর বাকিটুকু ইতিহাস। ও হ্যাঁ, বইমলায় এবার বি-ক্যাশে দাম দেয়া যাচ্ছে শুনেও আমি হার্ড-ক্যাশ নিয়ে গিয়েছিলুম। তবু... নাহ থাক, পরে বলব।

০৩। একটি আংশিক সচলাড্ডাঃ

বইমেলায় গিয়ে মুঠোফোনে খোঁজ করলাম কার্জনবাসী গবেষক-লেখক হয়রানাবীরের। ব্যাটা ফাজিল, বলে কিনা ডিজিটাল মেলায় এনালগ বৌ নিয়ে ঘুরছে। বইমেলার সময়ে বউ নিয়ে মাতামাতির কোনও মানে হয়? হয়রানের বৌ আগে ছিল স্থপতি (হু হু বাবা, বুয়েট পাশ), তারপর শুনেছিলাম স্বাধীন ভাবে ব্যাবসা শুরু করেছে (এই আইডিয়াটা দারুণ লেগেছিল)। ইদানীং শুনলাম কোনও এক আধা সরকারী ব্যাংকে চিনি ছাড়া লাল চা খেতে খেতে কলম পেশে আর ট্যাকাটুকা গোনে (এই খবর শোনার পর থেকে মানসিক ধাক্কা খেয়ে পরিচিত সবার চুল খাড়া হয়ে গেছে)। যাকগে, বইমেলার গপ্প ফেলে পরস্ত্রীর গপ্প শুরু করে দিয়েছি, লাইনে আসি। হয়রানকে আবার বল্লুম পরের দিন ফাল্গুনস্য প্রথম দিবসে বইমেলায় আসবে কিনা। উত্তর শুনে বড়ই ব্যাথিত হলুম। ঐদিন নাকি তার উত্তমার্ধ সামরিক শাসন জারি করেছে, বাড়ি থেকে বেরুলেই খুন্তির বাড়ি। এই শুনে আর কি বলব, দুটো সমবেদনা জানিয়ে একগাল হাসলুম। বই ছেড়ে বউ ধরেছ, এবার ঠ্যালা বোঝ। যাকগে, বইমেলার শেষাংশে ছায়াবীথির স্টলে তারেকাণুর ছায়াহীন কায়া সাড়ে তেত্রিশ দাঁত বের করে কোনও এক পাঠিকার হাতে ধরা বইয়ে কলমের খোঁচা দিচ্ছে। এই খানে পাঠকদের প্রবেশাধিকার আছে কিনা ঠিক বুঝলাম না, ভয়ে ভয়ে একখানা সালাম ঠুকে আস্তে করে স্টলের দিকে এগুলাম। গিয়ে দেখি “পথ চলাতেই আনন্দ” হাজির। টুক করে সেটা কিনতেই স্টলের হাস্যময়ী বিক্রেতা বললেন ঐ যে লেখক আছেন, অটোগ্রাফ নিয়ে আসুন। এই অভয় পেয়ে এগুতেই অণুদা কলম বাগিয়ে নাম জিজ্ঞাসা করলেন। আসল নামই বললাম। আমার চেহারা বড্ড সন্দেহজনক। ক্যান্টনমেন্ট আর বহুতল ফ্লাটবাড়িতে ঢোকার সময় দারোয়ান আটকায় নি এমন দিন নেই বললেই চলে। সে যাকগে, কে জানে অণুদার হঠাৎ কি বা সন্দেহ হল, চোখ সরু করে জিজ্ঞাসা করলেনঃ ‘আসল নাম কি?’ জেরার মুখে আমি বরাবরই দুবলা-পাতলা। আমি ডিমভাজার মত মুখ করে সভয়ে মিনমিন করে বললাম সাক্ষী সত্যানন্দ। শুনতে না পেয়ে এবার অণুদা ইশকুলের হেডমাস্টারের মতন বাজখাঁই মেঘস্বরে জিজ্ঞাসা করলেনঃ “কীইই?” আমি মগনলাল মেঘরাজের সামনে দাঁড়ানো জটায়ুর মতন দাঁতমুখ খিঁচে কোনমতে চিঁচিঁ করে আবার পুনরুক্তি করলুম। ভাগ্য সহায়, এবার উনি শুনলেন। তারপর অট্টহাস্য দিয়ে বললেনঃ “ওহ! রায়হান বলেছিল আপনি আরো বয়স্ক হবেন!” আমি তৎক্ষণাৎ মনে মনে হয়রানকে কিভাবে বউয়ের খুন্তির বাড়ি খাওয়ানো যায় সেই প্ল্যান ভাঁজতে ভাঁজতে হাসিমুখে ক্যাবলার মতন হাসতে হাসতে বিদায় নিলুম। ও হ্যাঁ, তার আগে বাংলার তরু-গুল্ম-লতা বিশারদ রনি ভাইয়ের সাথেও দেখা হল। জানলাম তাঁর বইটা পরদিন আসবে। এইভাবে মাঘের শেষ দিন কেটে গেল।

পরদিন সকাল থেকেই বইমেলায় দৌড়। গিয়ে শুনলাম আজ নাকি শিশুপ্রহর, বাচ্চা ছাড়া ঢুকতে দেবে না। আমি ব্যাচেলর মানুষ, বললেই দুম করে বাচ্চা পাব কোথায় শুনি? তবু আলুভাজার মত মুখ করে ভয়ে ভয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে গেলুম। ক্যাপ্টেন টগবগের মত বোম্বেটে দাড়ি না থাকুক, আলসেমি করে এক হপ্তার না কামানো খোঁচা খোঁচা দাড়ি গালে। শিশু মনে করবার সুযোগই নেই। ভাবলুম বেশি তেড়িবেড়ি করলে মাফলার দিয়ে দাড়ি ঢেকে, গুপ্তচর সিঁধেল কিংবা ভেনিয়া কাশকিনের মতন চিকন স্বরে ‘আমরা হাসি-খুশি অতি, এক-দুই’ গাইতে গাইতে টুক করে ঢুকে যাব। পরে অবশ্য সবাইকেই ঢুকতে দিল। বাংলা একাডেমিতে গিয়ে দেখি ৭০% ছাড়। লোভে পড়ে সাতটা পেটমোটা বই কিনলুম, বিল হল ২৪৪ টাকা। তারপর আর কি, বাংলা একাডেমির মূল চত্বরে আবেগঘন দুটো চক্কর দিতেই পুরানো বান্ধবীর ফোন। পতিপ্রবর ঢাকার বাইরে, উনি বিরহের ভারে একলা ফাল্গুন পালন করতে কার্জন হলে এসে ভাংতি সঙ্কটে পড়েছেন। তাঁকে উদ্ধার করে দুটো সুখদুঃখবিরহের গল্প করতে করতে কাপ সাতেক (হ্যাঁ, ঠিকই দেখেছেন) চা খেয়ে ফেললাম। সদ্য দেশে ফেরা দুয়েক জন প্রবাসী গবেষক বন্ধু-বান্ধবীর সাথে দেখা করে আবার যখন বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে এলাম তখন ঠিক তিনটা বাজে। বেলা চারটেয় ১৩৬ নং স্টলের সামনে প্রৌঢ় ভাবনা দা থাকবেন কথা হয়েছিল। চারটে থেকে সাড়ে চারটে পর্যন্ত তাঁর দেখা না পেয়ে একটু উদ্বিগ্ন হলাম, শরীর খারাপ নয় তো? শেষমেশ দেখা হল না তো হলই না। শেষকালে অণুদার স্টলের সামনে সম্ভাব্য একটা মুখ দেখে কবলি জিজ্ঞাসা করতে যাচ্ছিলুম- “প্রৌঢ়দা নাকি?” আমার ঘাড়ে তখন প্রায় আধমনী বস্তা। তা দেখে অণুদা হালুম করে এসে বললেনঃ ‘আরে আপনার কষ্ট হচ্ছে, স্টলে রেখে দিন।’ আমি খুশি মনে ব্যাগট্যাগ রেখে ঘুরতেই দেখি ভদ্রলোক হাওয়া। যাব্বাবা, একেবারে গেছোদাদার মত অবস্থা। কি আর করা, ভাল থাকুন প্রৌঢ়দা, ভবিষ্যতে আবার কোনও একদিন দেখা হবে নিশ্চয়।

বিকেলের শেষবেলায় বোনাস হিসেবে দেখা হয়ে গেল চার্বাক বিশারদ রণদীপমদার সঙ্গে। একখানা স্টলে দেখি কাপড়ের টুপি মাথায় দেড়েল এক ভদ্রলোক বই ঘাঁটছেন। পাশ থেকে দেখে ঠিক জুত হচ্ছিল না। এমন সময় ফোন বাজতেই ভদ্রলোক ঘুরে তাকালেন, চেহারা দেখে মনে হলঃ “আমি পাইলাম, উনাকে পাইলাম।” ফোনে কথা শুনে যখন মুখে লোনা হাওয়ার ঘ্রাণ পেলাম তখন নিশ্চিত হলাম, ইনি রনদীপম বসু না হয়ে পারেনই না। ভয়ে ভয়ে নানরুটির মতন মুখ করে পেছন থেকে ডাক দিলামঃ ‘মাফ করবেন, আপনি কি রনদীপম দা?’ আগেই বলেছি, আমার চেহারাটা বড্ড সন্দেহজনক। উনিও সম্মতিসূচক মাথা ঝাঁকিয়ে আর্মির হাবিলদারের মত মুখ সরু করে ঝাড়া আধা মিনিট আমার দিকে এক্স-রে দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেন। তারপর, পরোটার মতন কাঁচুমাচু মুখখানা দেখে বোধহয় মায়া হল, গম্ভীরভাবে জিজ্ঞাসা করলেনঃ ‘নাম কি?’ পিতৃপ্রদত্ত নামের আধখানা বললুম। এবার স্বরে গোয়েন্দা ঝাকানাকার মতন আধখানা মেঘ মিশিয়ে জিজ্ঞাসা করলেনঃ ‘তা তো বুঝলাম, সচলের নামখানা কি?’ আশেপাশে পরিচিত দুয়েকজন মানুষ ছিলেন, নিরাপত্তার খাতিরে তাই বলা গেল না। দাদাও অবস্থাটা বুঝলেন। আমি দাঁত বের করে বললুম পোস্টে জানাব। তারপর আর কি, অঙ্গীকার তো অঙ্গীকারই, ভঙ্গীকার নয়। প্রিয় রনদীপম দা, রোদেলা’র স্টলের সামনে সেই চশমা পড়া চ্যাংড়ামতন খ্যাংড়াকাঠিটাই আমি। আবার দেখা হলে অনেক কথা হবে নিশ্চয়। ততদিনে আপনার বইটাও এসে যাবে নিশ্চয়। অনেক ভাল থাকুন।

সন্ধ্যার পরে রনি ভাইয়ের সাথে দেখা হল বিশ্বসাহিত্য ভবনের স্টলে, ওখানেই ‘বাংলার তরু-গুল্ম-লতা’ বের হয়েছে কিনা। উনি আবার বেশ করে আমাকে লেখক হিসেবে পরিচয় করিয়ে হালুম করে প্রকাশককে বলে দিলেন কমিশন বেশি দেবার জন্য (আহা, আগে জানলে একডজন কিনতাম)। যাই হোক, এরপরে কলম বাড়িয়ে দিলুম লেখকের দিকে, তিনিও একগাল হেসে স্বাক্ষর দিয়ে দিলেন। অনেক ভাল থাকুন, রনি ভাই।

একটু পরে আবার দেখা হল ইবনে বতুতার সঙ্গে। আমাকে দেখেই আগ বাড়িয়ে বললেন যে উনি কলা খান না। ব্যাপার হল, অণুদা পরে এসেছিলেন টকটকে লালরঙা এক ফতুয়া, মানিয়েছিল বৈকি। কে জানে কোন নিন্দুকে কি বা বলেছে! আমাকে দেখেই উনি পাশে থাকা বান্ধবীকে দেখিয়ে হড়বড় করে বললেনঃ “এটা ও গিফট করেছে তো তাই পড়লাম!” আজব তো, আমি জানতে চাইনি, তবু আপনি বললে। আমার অবশ্য তখন হোজ্জার একটা গল্প মনে পড়ছিল! (কোনটা ভেঙ্গে বলতে হবে? বুঝে নিন!) যাকগে, বান্ধবীর সামনে অণুদার ফতুয়া নিয়ে বেশি টানাটানি না করি। কেননা, তাঁর সুবাদেই দেখা হল আমাদের দুবারের এভারেস্ট বিজয়ী এবং অতি বিনয়ী অভিযাত্রী মুহিত ভাইয়ের সাথে। কেবল দেখা নয়, হাত ধরে ঝাঁকিয়েও দিলেন। আমি তখন এতটাই বিহ্বল, যে অটোগ্রাফ নেবার কথাটাও ভুলে গেলাম। পরেরবার নিশ্চয় ডজনখানেক অটোগ্রাফ নেব মুহিত ভাই, ভাল থাকুন সবসময়। আর হ্যাঁ, ভাল থাকুন অণুদা, প্রতি বসন্তে নতুন নতুন ফতুয়া গিফট পান এই কামনা থাকল।

০৪। দেউলেপনার আটকাহনঃ

এবার বইমেলায় গিয়ে মূল ইচ্ছা ছিল সচলদের বইগুলো সংগ্রহ করার। হিমু ভাইয়ের ‘আশাকর্পূর’ পেলাম পরের দিন। বিপিএল যে মূল চত্বরে, সেটা প্রথম দিন বুঝি নি আসলে। সুহান ভাইয়ের বই কিনলাম বি-ক্যাশে, শুদ্ধস্বরের স্টলে আমিই বোধহয় প্রথম ডিজিটাল ক্রেতা। রয়ালের সামনে দিয়ে আসতে কি মনে করে চোখ বোলালুম ডিসপ্লে তে। ছায়াগোলাপ না দেখে চিনি ছাড়া রঙ চায়ের মতন মুখ করে চলে আসছিলুম। এক বিক্রেতা জিজ্ঞাসা করল কিছু খুঁজছি কিনা। আমিও মিনমিন করে জিজ্ঞাসা করলুম মাহবুব আজাদের ছায়াগোলাপ আছে কিনা। প্রথমজন চিনতে পারল না, দ্বিতীয় আরেকজন হালুম করে তিনবার বলল “হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ, আছে আছে আছে।” তারপর বইটা বাড়িয়ে দিল, তিনবার নয়, একবার। আমি ছোঁ মেরে যক্ষের ধনের মত সেটা ব্যাগে পুরে ভয়ে ভয়ে টাকা দিলুম। আশঙ্কায় ছিলুম, তৃতীয় সেলসম্যান যদি আবার বাকাবুয়ার রীতি অনুসারে ‘হারেং হারেং হুক্কা হুয়া’ বলে ডাক ছেড়ে নাকে নাক ঘষতে চায়! না বাবা, ভাগি। ও হ্যাঁ, তাঁর আগে আড়চোখে দেখলুম তৎক্ষণাৎ তিনখানা ছায়াগোলাপ ডিসপ্লেতে এসে গেল। (ইয়ে, হিমু ভাই, আমার কমিশন কই?) অনার্যে গিয়ে ‘হাবুলের জলদস্যু জাহাজ’ পেলাম না। পেলাম না চার্বাকের খোঁজ আর মহাভারত। শেষমেষ নান্দনিক থেকে এককপি ‘এসো নিজে করি’ সাঁটালুম আর আদর্শ থেকে দু বগলে বগলদাবা করলুম রাগীব ভাইয়ের জোড়া বই। শেষের দিকে মেলায় বি-ক্যাশের নেটওয়ার্ক চলে না গেলে আরও ভালমত দেউলে হতে পারতুম, সে সৌভাগ্য আর হলনা। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের এক বন্ধু পকেটভর্তি হার্ড-ক্যাশ এনে দুদিনের জন্য চিরঋণী করে দিল (এইরে, টাকাটা এখনও ফেরৎ দেই নি)।

০৫। পুনশ্চ বইমেলার বুদ্ধমূর্তিঃ

বই! আমার বই!! আপনার বই!!! আমাদের বই!!!! সচলায়তনের বই!!!!!

এক মুঠো ইতিহাস। এগুলো পড়ে শেষ করি, তারপর আবার খন্দকার ঘাঁটব।

লুঙিতে যেমন বুকপকেট নেই, এই সব বইয়ের তেমন ক্যাপশন নেই; ভিনি! ভিডি! ভিসি!

এক চিমটি বিজ্ঞান, এক মুঠো দর্শন, এক হাঁড়ি ধর্ম আর ঘুটাঘুটাঘুটা, হয়ে গেল ওরস্যালাইন!

০৬। মুজতবা আলীকে ধরে ‘ইয়ে’ করা দরকার!

সৈয়দ আলী সায়েব তো বলেই খালাস- বই কিনে নাকি কেউ দেউলে হয় না! ব্যাটা ফাজিল কাঁহিকা, বই কিনেছে জীবনে? নাকি বাবা কোটিপতি ছিলেন? সে যাকগে, বে-লাইনে চলে যাচ্ছি। আসল কথা হল- আমাদের কলেজ লাইব্রেরিতে মুজতবা আলীর সমগ্র ছিল। প্রতি লাইব্রেরি ক্লাসে আমি একেক খন্ড পড়তে পড়তে প্রায় পুরোটাই পড়ে ফেলেছি। পড়ে ফেলা বই কেনা হয় কমই। তবু নিজের কপি বলে একটা কথা আছে না? তাই, প্রতি বইমেলায় আমি বাজেট বরাদ্দ করি। বইমেলায় এসে প্রথমেই মুজতবা সমগ্রটা উলটে পালটে দেখি, আর দাম দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবার রেখে দেই। তারপর হিসেব করি, আহা মুজতবা-সমগ্রের টাকায় আরো কত্তগুলো বই কেনা যাবে। ভাগ্যিস সেটটার ম্যালা দাম। কত্ত টাকা বেঁচে গেল। পাগলের সুখ মনে মনে আরকি। তারপর? তারপর আর কি? তখন মনে হয়ঃ ‘মুজতবা আলীকে পায়ে ধরে সালাম করা দরকার!’ কেন, আপনি কি অন্যকিছু ভেবেছিলেন নাকি?

০৭। পণ ভাঙিয়া ফেলিয়া হাঁফ ছাড়িবার উপলক্ষঃ

বারবার ভাবি এই শেষ, আর ভুলেও এমুখো হবো না। কিন্তু দেড়েল বুড়ো কি সাধে বলেছেনঃ “মানুষ পণ করে পণ ভাঙ্গিয়া ফেলিয়া হাঁফ ছাড়িবার জন্য!” মোটেই না। তাই ভঙ্গীকার যখন, সেটা ভাংতেই হয়। আর তাছাড়া, লিস্টি করা অনেক বই এখনও এসে পৌঁছে নি। তাহলে আমার কি দোষ, শুনি? দুদিনের দুনিয়া, দুটো ভালমন্দ বই কিনতে না পারলে ক্যাম্নে কী? অর্থাৎ কিনা, দুই দু’গুণে চার, হাতে থাকল পেনসিল। ওদিকে ত্রৈরাশিকের হিসেব বলছে বইমেলায় আসতে হয় তিনবার, নইলে ভগ্নাংশ হয়ে যাবে। কি আর করা, আবার আসব, শেষ সপ্তাহে। ততক্ষণ বিদায়, যারা ঢাকায় আছেন, চলে আসুন। পকেটের টাকা বাঁচিয়ে আসুন, বার্গারের বিল বাচিঁয়ে আসুন, রিক্সা না নিয়ে হেঁটে আসুন, সিয়েনজিতে না এসে বাসে আসুন (বর্তমান পরিস্থিতিতে বলা ঠিক হল না অবশ্য), শাহাবাগ হয়ে আসুন, নীলক্ষেত হয়ে আসুন, সকালে আসুন, বিকালে আসুন, একলা আসুন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে আসুন, প্রেমিকার হাত ধরে আসুন, বাচ্চাকে কোলে নিয়ে আসুন, বৌয়ের খুন্তি বাঁচিয়ে আসুন, খেলার সাথে রাজনীতি মেশাতে মেশাতে আসুন, পাকিস্তান হেরেছে এই আনন্দে আসুন, বাংলাদেশ ক্রিকেটদলের জন্য শুভকামনা জানাতে জানাতে আসুন, পিঠে ব্যাগ নিয়ে আসুন, পকেটে মানিব্যাগ নিয়ে আসুন, সারাদিনের জন্য না পারেন অফিস শেষে এক ঘন্টার জন্যই নাহয় আসুন। তবু আসুন, বইমেলায় আসুন। ভারতীয় জনৈক টিভিতারকা যখন বলেছেন- পৃথিবীটা উটপাখির ডিমের মতন গোল, ঘুরতে ঘুরতে একদিন দেখা হবে নিশ্চয়।


মন্তব্য

আয়নামতি এর ছবি

দেঁতো হাসি

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

দেঁতো হাসি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

আয়নামতি এর ছবি

বই মেলা নিয়ে এত চমৎকার একটা পোস্ট লিখলে কেম্নে হিংসা করি রে!
আপাতত তাই হিংসেকে দিলেম ছুটি। অসম্ভব ভালু পেলেম পোস্টটা।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

লইজ্জা লাগে আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- লইজ্জা লাগে

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

মুক্তমন এর ছবি

বইমেলার একটা খণ্ডাংশ যেন উঠে এল আপনার লেখায়৷ভাল লাগল৷সাধারণ সব কথাতেও এত হাসাতে পারেন!

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

লইজ্জা লাগে আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- লইজ্জা লাগে

এত্তগুলা সিরিয়াস কথা লিখলাম, তাও হাসি পেল? ইয়ে, মানে...

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

মুক্তমন এর ছবি

আসলে কৌতুকের হাসি নয়,মজা পেয়ে হাসলাম,সেটাই বোঝাতে চেয়েছিলাম৷ধনেপাতার জন্য ধন্যবাদ৷

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

খাইছে! আইচ্ছা যাউকগা, ধন্যবাদের জন্য আপনারে আবার আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
এইডা আবার ফিরত দিয়েন না যেন, ইনফানাইট লুপে পইড়া যামু খাইছে

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

এক লহমা এর ছবি

ওরে সাক্ষী-দাদারে, একবার আমায় ঢাকায় যেতেই হবে, কম সে কম এক মাসের জন্য। আর তারপর রোজ তুমার বাড়ি ঐ বইগুলোর পাতায় পাতায় ডুবে যাবো আর থেকে থেকে ভেসে উঠে তুমার সাথে গপ্সপ করতে থাকব। - স্বপ্ন দেখতে হলে এই রকমই দেখা দরকার। (এই রকম আর একটা স্বপ্ন আছে আমার, একদিন একটা দুর্গে ঢোকার, মাঝে মাঝে আমি সেটায় বুঁদ হয়ে যাই। হাসি )

৫ তারা।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

লইজ্জা লাগে আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- কোলাকুলি আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- লইজ্জা লাগে

হাততালি আইসা পড়েন, কি আছে জীবনে? দেঁতো হাসি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

মানুষ এমন ভালো লেখে কী করে? গুরু গুরু

দেবদ্যুতি

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

লইজ্জা লাগে আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- লইজ্জা লাগে

ঈমানে কইতাছি নিজের লেখা, চউদা'র ম্যাটল্যাবে লেখা না। ইয়ে, মানে...

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

আয়নামতি এর ছবি

আমি কলা খাইনি বলে দেখি রে!
লিশ্চয়ই কোনো ঘটমা আছে... চিন্তিত

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

কিছু কথা থাক না গুপন শয়তানী হাসি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

এত্ত এত্ত বই কিনেছেন! পোস্টটাও হয়েছে অসাধারণ সুন্দর। বই পড়ুয়াদের হিংসা করি না, শ্রদ্ধা করি। চমৎকার। আমি কিছু বই হাতে পেয়েছি। বাকিগুলো সামনের সপ্তাহে পাবো আশা করি। শুভকামনা প্রাণবন্ত সাক্ষীদাদার জন্য।

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

লইজ্জা লাগে আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- লইজ্জা লাগে

ভয় নাই, বই কিনি ঘর সাজানোর জন্য, শো-পিস খাইছে

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

চমৎকার লেখা চলুক

মহাবিশ্বের পরিব্রাজক

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

লইজ্জা লাগে আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- লইজ্জা লাগে

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

ওরে বাপরে, লম্বা লেখা তবুও পড়লাম। অনেক কিছু জানাও হলো।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

লইজ্জা লাগে আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- লইজ্জা লাগে

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

বেলা চারটেয় ১৩৬ নং স্টলের সামনে প্রৌঢ় ভাবনা দা থাকবেন কথা হয়েছিল। চারটে থেকে সাড়ে চারটে পর্যন্ত তাঁর দেখা না পেয়ে একটু উদ্বিগ্ন হলাম, শরীর খারাপ নয় তো? শেষমেশ দেখা হল না তো হলই না। শেষকালে অণুদার স্টলের সামনে সম্ভাব্য একটা মুখ দেখে কবলি জিজ্ঞাসা করতে যাচ্ছিলুম- “প্রৌঢ়দা নাকি?” আমার ঘাড়ে তখন প্রায় আধমনী বস্তা। তা দেখে অণুদা হালুম করে এসে বললেনঃ ‘আরে আপনার কষ্ট হচ্ছে, স্টলে রেখে দিন।’ আমি খুশি মনে ব্যাগট্যাগ রেখে ঘুরতেই দেখি ভদ্রলোক হাওয়া। যাব্বাবা, একেবারে গেছোদাদার মত অবস্থা। কি আর করা, ভাল থাকুন প্রৌঢ়দা, ভবিষ্যতে আবার কোনও একদিন দেখা হবে নিশ্চয়।

হ্যাঁ, আজি এ বসন্তে...বসন্তের প্রথম দিনে বইমেলায় গিয়েছিলুম বটে, তবে যানজট আর জন-জটে পড়ে জায়গায় পৌঁছতে দেরীই হয়ে গেছিল। শরীর খারাপ! আরে না, তবে দরজার কপাটের সাথে গুঁতিয়ে পায়ের আঙ্গুলের একটা নখ উপড়ে ফেলেছি। ব্যান্ডেজ বেঁধে খুব সাবধানে (বাব্বা, চারুকলার সামনে থেকে যে ভীড় শুরু, তাতে আর সাবধানে) ধীরে ধীরে ফাগুনের হাওয়ায় তন-মন রাঙ্গানো মানুষ দেখতে দেখতে প্রায় ৩০ মিনিট সময় নিয়ে পৌঁছলাম ১৩৬ নং স্টলের সামনে। ওখানে কাউকে না পেয়ে এলুম 'ছায়াবীধি'র সামনে। ওখানেই লাল কোর্তা পরা ঢ্যাঙ্গাপানা তারেক অণুকে পাওয়া গেল। খোঁজ নিয়ে জানলাম, সাক্ষী সত্যানন্দ এসেছিল বটে তবে এতক্ষণে সম্ভবত চলে গিয়েছে। হ্যাঁ, দেখা হলোনা। আগামীর জন্য তোলা রইল, যদি কখনও দেখা হয় এ জনমে!

লেখাটা পড়ে দেখা পাবার আগ্রহ বেড়ে গেল। ভাল থাকুন। আনন্দে থাকুন। হাসি

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

ওহো! পায়ের কি অবস্থা এখন? ইয়ে, মানে...

ব্যাপার না, এর মাঝেও বইমেলায় এসেছিলেন এটাই বড় কথা। বইমেলাও আছে, আমরাও আছি। একদিন দেখা হয়ে যাবে নিশ্চয়। অনেক ভাল থাকুন, প্রিয় প্রৌঢ়দা। হাসি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

মাসুদ সজীব এর ছবি

১। বইয়ের ছবি সব ফুটুশপ, একখান স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, আর্ন্তজাতিক মানের তদন্ত দল গঠন করলে সব তথ্য বেরিয়ে আসবে। চোখ টিপি

২। এর নাম কপাল, পহেলা ফাল্গুন আমারও থাকার কথা ছিলো মেলায়। রওয়ানা দিয়েছিলাম ঠিকি কিন্তু বাকশালী ষড়যন্ত্রের কারণে রাস্তায় এত জ্যাম ছিলো যে আসতে আসতে মেলা শেষ। মন খারাপ

৩। শনিবারে ছিলেন নাকি? আমিও তো ছিলাম তারেকাণুর সাথে সারাটা বিকেলে, পরিচয় হলো না যে চিন্তিত

৪। বইমেলায় আসুন এর চেয়ে বড় বার্তা হবে বই কিনুন, নিজে পড়ুন, অন্যকে পড়তে উৎসাহ দিন। মেলাতে বই বিক্রি দেখে হতাশ হয়েছি, প্রচুর মানুষের সমাগম কিন্তু বিক্রি নেই মন খারাপ

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

১। আসিপ্নজ্রুলের বাজার মন্দা যাচ্ছে, ফোন দ্যান। খাইছে

২। হুমম... তবে যে মিডিয়ায় হররতাল হচ্ছে বড়? চোখ টিপি

৩। নাহ, ঐদিন আপিস ধরতে ভোরের ট্রেনে ভোঁ! ওঁয়া ওঁয়া

৪। হায় হায়, এত্ত মানুষ সবাই কেবলি শো-পিস? চিন্তিত

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালু লাগলো। পরেরবার আসার আগে আওয়াজ দিয়েন। আড্ডা দিবানি।

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

লইজ্জা লাগে আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- লইজ্জা লাগে

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

আরিফুল হোসেন তুহিন এর ছবি

[১] জুলফিকার নিউটনের অনুবাদ খুব বাজে। সন্দেহ করতেছি ঐটা কিনে ঠকলেন।

[২] আলী দাশতির বইটা আমি গতকাল আর পাই নাই। আজকে খবর পাইলাম রোদেলা নাকি হুমকির মুখে বই প্রত্যাহার করে নিয়েছে। তাদের বাংলাবাজার অফিসে নাকি হামলাও হয়েছে। বইপত্র নিয়ে ফাজলামি এই দেশে বন্ধ হল না।

[৩] মুকাদ্দীমার অনুবাদের অবস্থাও বেশী ভালো না। মাস ছয়েক আগে, কয়েক পৃষ্ঠা দোকানে দাঁড়িয়ে পরে আমি এই সিদ্ধান্তে এসেছিলাম। এখন ইংরেজিটাই পড়ছি। এই বইয়ের উপর ভিত্তি করে প্রচুর গবেষণা হয়েছে। বইটা পড়া হলে, একাডেমিয়াতে খালদুনের অর্থনীতি কিংবা রাজনীতির উপর কমেন্টারিগুলো ঘেটে দেখতে পারেন।

[৪] বঙ্কিম রচনাসমগ্র মনে হল বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত(প্রচ্ছদ দেখে সালমা বুক ডিপো অথবা ক্যাবকো মনে হচ্ছে)। এটাতে কি তার প্রবন্ধ এবং অন্যান্য লেখাগুলো সবগুলো আছে? পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রকাশিত বঙ্কিম রচনাসমগ্র দুই খণ্ডের(দুইটিই বেশ পেটমোটা), অন্যদিকে দেশে প্রকাশিতগুলো একখণ্ডে পাওয়া যায়। তাই আমার সন্দেহ হয়, বাংলাদেশে সমগ্রতে সম্ভবত সবকিছু নেই।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

১। সেবা ছাড়া অনুবাদ সাধারণত কিনি না। এটা কয়েক পৃষ্ঠা উলটে একেবারে খারাপ লাগল না। পড়ে জানাতে পারব। ঠকা খেলে কি আর করা?

২। ভাগ্যিস কিনেছিলাম। এমনটা হবে জানলে আরও কয়েক কপি কিনে রাখতাম, রোদেলার বেশ কিছু বই ভাল লেগেছিল। ডকিন্সের একটা অনুবাদ আসার কথা ছিল, আর বোধহয় আসল না।

৩। প্যাকেট করা ছিল, খুলে দেখার সুযোগ পাইনি। মুকাদ্দিমা নিয়ে আগ্রহ বহুদিনের, অনেকেই বইটা পড়তে বলেছিলেন। এতদিন পাইনি, পেয়ে আর ছাড়লাম না। ইংরেজি বইটা ঢাকায় কোথাও পাওয়া যাবে কি?

৪। হুমম, ঠিক ধরেছেন। সালমা থেকেই কিনেছি। উল্টেপাল্টে পুরোটাই আছে মনে হল। আর দুটোই কিন্তু ২ খণ্ডের, ছবি একই হওয়াতে দুবার দেইনি।

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

আপনার লেখায় এত রস থােকে, সেই আপনি কিনা এমন মুখচোরা মানুষ! পথম দেখা ভাবতেই পারিনি।

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

লইজ্জা লাগে হাতের কাজ কি আর মুখে হয়? খাইছে

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সত্যপীর এর ছবি

নাউজুবিল্লা!

..................................................................
#Banshibir.

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চিন্তিত

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

বাহ, বেশ ঝরঝরে একটা লেখা। হাসি

মেলায় আমি ছিলাম দিন তিনেক। প্রতিদিনই বেশ ভিড় দেখেছি, কিন্তু বিক্রি প্রকৃতই সে অনুপাতে ছিলো না। আমি আশা করি আরো খানিক কেনাকাটা করবো আগামী উইকেন্ডের দিকে।

... আর বই পড়ে রিভিউ জানাতে ভুলবেন না হাসি

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

ঝরঝরে লেখকের কাছ থেকে নুবেল! ওরে, আমি পাইলাম, ইহাকে পাইলাম। কোলাকুলি

আহা, দেখা হলনা কেন? বইখানা সত্যায়িত করে নিতাম! এই উইকেন্ডে
আসতে পারব না, পরেরটাতে আবার ইচ্ছা আছে। আসলে জানিয়েন। হাসি

বইগুলো জমিয়ে নিই, সচলের সব বইগুলো নিয়েই অল্পসল্প রিভিউয়ের ইচ্ছা আছে। (শেহাব
ভাইয়ের রিভিউটার পড়ে অবশ্য আপনার বইটার রিভিউ করতে যে কারও হাঁটু কাঁপবে ইয়ে, মানে... )

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫, শুক্রবার!
আচ্ছা একটু চিপায় নিলাম। পরে কখনও এইখানেই কনফার্ম করবেন কিন্তু।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

এ-এ-এ-নশাল্লাহ কোলাকুলি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

বইমেলায় যাচ্ছি কিন্তু, আগামীকাল শুক্রবার ৪টা থেকে ৪-৩০ এর মধ্যে আশাকরি শুদ্ধস্বরের আশোশেই থাকবো।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আপনি এত বই কিনছেন ক্যান? বইয়ের দোকান আছে আপনার?

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হ! তয়, হেই দোকানের একমাত্র ক্রেতা আমি নিজে। দেঁতো হাসি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

এপোলোনিয়া  এর ছবি

অসাধারণ! খুব ভাল লাগলো বইমেলা নিয়ে লেখাটি, ধন্যবাদ।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

লইজ্জা লাগে আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- লইজ্জা লাগে

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

তিথীডোর এর ছবি

ভাবলুম বেশি তেড়িবেড়ি করলে মাফলার দিয়ে দাড়ি ঢেকে, গুপ্তচর সিঁধেল কিংবা ভেনিয়া কাশকিনের মতন চিকন স্বরে ‘আমরা হাসি-খুশি অতি, এক-দুই’ গাইতে গাইতে টুক করে ঢুকে যাব।

আপনি লোকটা রসিক আছেন! হো হো হো

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

পিচ্চিকালের স্মৃতি কি কমন পড়ে গেল, খুকিদি? চিন্তিত

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

তিথীডোর এর ছবি

ছিতি মানেই বেদনা। হাসি

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

মন খারাপ

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

তিথীডোর এর ছবি

বিটিডাব্লিউ, আপনি হয়রানবীরের ব্যাচমেট নাকি? তাহলে তো আম্মো সমান বয়সী।

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

কোলাকুলি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

গগন শিরীষ  এর ছবি

সর্বনাশ! এত বই পড়ে শেষ করতে করতে তো পরের বইমেলা চলে আসবে ভাই!

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হ,
আগেরবারের গুলা এখনও শেষ করতে পারিনাই
হায়, জীবন এত ছোট ক্যানে গো? ওঁয়া ওঁয়া

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

স্যাম এর ছবি

হাহাহাহা। দারুণ মজার লেখা।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- প্রিয় শিল্পী লইজ্জা লাগে

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

যা বই দেথছি সবই আপনার বুঝি দাদা!

----------
রাধাকান্ত

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

নাহ! বাসার সবার মিলিয়ে। হাসি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

কেন যেন মনে হচ্ছে আপনাকে অনুসরণ করা দরকার! লেখা খুব ভালো লাগলো।

----------
বর্ণী

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

অ্যাঁ ক্যান? আমি কি মান্না!! চিন্তিত

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

তারেক অণু এর ছবি
সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চিন্তিত

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

"আরো কি হতে চান হিরো মান্না ,
নাগরিক কমিটিতে চলে তাইলে যান-না।।"

-----------
রাধাকান্ত

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

গাইল পাড়েন ক্যা? রেগে টং

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।