ড্যাপ (DAP) ও ঢাকার পানিসমস্যা

সচল জাহিদ এর ছবি
লিখেছেন সচল জাহিদ (তারিখ: মঙ্গল, ১৩/০৭/২০১০ - ২:১৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গত ২২ জুন রাজউক ঢাকার ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) গেজেট প্রকাশ করেছে। প্রকাশিত এই মহাপরিকল্পনা নিয়ে দেশ জুড়ে শুরু হয়েছে আলোচনা, সমালোচনা, আন্দোলন ও জনসংযোগ। বিশেষজ্ঞরা এর পক্ষে বা বিপক্ষে মতামত দিচ্ছেন আর রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দরা নিজেদের স্বার্থ বিবেচনা করে তাদের অবস্থান নিচ্ছেন। সাধারণ জনগণের মধ্যেও এর প্রভাব পড়েছে বেশ ভাল করেই। কোথাও কোথাও এই বিরুদ্ধে মিছিল মিটিং হচ্ছে আবার একই সাথে ড্যাপ এর বাস্তবায়ন নিয়ে পরিবেশবাদীদের পদচারণাও থেমে নেই। ড্যাপ এর মত বিশাল পরিকল্পনার অনেকগুলি ক্ষেত্র থাকে যার সব নিয়ে আলোচনা করার দূঃসাহস কিংবা পুঁথিগত ও পেশাগত বিদ্যা আমার নেই। আমার দৌড় পানিসম্পদ, সুতরাং তারই ভিত্তিতে ড্যাপের পরিকল্পনা ও ঢাকার পানিসম্পদ, বন্যা ও জলাবদ্ধতা নিয়ে আলোচনা করব। তবে এই আলোচনায় শুধু পানির পরিমান নিয়ে কথা থাকবে, দূষণ নিয়ে নয়। শুরুতেই বলে নেই, ড্যাপ পূর্ণ বা আংশিক বাস্তবায়ন বা অবাস্তবায়ন বা সংশোধন সবই রাজউক এর এখতিয়ারে পরে। তবে তথ্য ও প্রকৌশলগত জ্ঞাণের ভিত্তিতে এই নিবন্ধে কিছু  আলোচনা যা থেকে ড্যাপের বেশ কিছু অসংগতি বেরিয়ে আসবে বলে আশা রাখছি।

ড্যাপ বা ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান আসলে কি ?

রাজউকের ঢাকা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান এর অধীনে তিনটি প্রকল্প আছে [১],

  • স্ট্রাকচার প্ল্যান প্রকল্প (১৯৯৫-২০১৫)

  • আরবান এরিয়া প্ল্যান প্রকল্প (১৯৯৫-২০১৫)

  • ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান প্রকল্প (২০০৪-২০১০)

মূলত স্ট্রাকচার প্ল্যান ও আরবান এরিয়া প্ল্যানকে সফলভাবে বাস্তবায়নের নিমিত্তেই ঢাকা ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান প্রকল্পের উৎপত্তি। এই প্রকল্পের মোট এলাকা ১৫২৮ বর্গকিলোমিটার। এর আওতাধীন অঞ্চলগুলি হচ্ছে [১]

  • গাজীপুর পৌরসভা থেকে উত্তর দিকে
  • ধলেশ্বরী নদী থেকে দক্ষিন দিকে 
  • বংশী ও ধলেশ্বরী নদী থেকে পশ্চিম দিকে ।
  • শীতলক্ষ্যা ও মেঘনা নদী থেকে পূর্ব দিকে।

পুরো প্রকল্পটির ম্যাপ রাজউকের ওয়েবসাইটে রাখা আছে। আকৃতির বিশালতার কারনে এখানে পোষ্ট করলামনা, আগ্রহী পাঠক এই লিঙ্ক থেকে সেটি দেখতে পারেন। রাজউক এই প্রকল্পের সুনির্ধারিত কিছু উদ্দেশ্য লিপিবদ্ধ করেছে, সেগুলো একটু দেখা যাক [১]

  • উপাত্তের ব্যবস্থাপনা এবং মৌজা পর্যায়ে তার বিস্তরণ।
  • বহুমুখী বিনিয়োগ পরিকল্পনার সুযোগ সৃষ্টি করন। 
  • বেসরকারী খাতের উন্নয়ন নিয়ন্ত্রন এবং অধিবাসী ও বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের যথাযোগ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করন। 
  • সুযোগ ও বাধার উপর নির্ভর করে উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনাবলি নিশ্চিতকরন।
  • পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা নিশ্চিত করন।

 

অর্থাৎ কিনা সরকার সামগ্রিক বিষয়াদি বিবেচনা করে ঢাকা মহানগরীর উন্নয়নের জন্য এমন একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবেন যেখানে সাধারণ মানুষ বা উদ্দোক্তাদের বিনিয়োগের সুযোগ থাকবে তবে তা নিয়ন্ত্রিত ভাবে এবং অবশ্যই তা পরিবেশকে সমুন্নত রেখে। খুবই চমৎকার চিন্তা ভাবনা, আমরা সাধারণ মানুষও তাই চাই। তবে আদতে কি হলো সেটাই এখন দেখার বিষয়। সেজন্য আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে পাঠককে। তার আগে চলুন ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা বা সামগ্রিক পানিসম্পদের একটু ব্যবচ্ছেদ করা যাক। 

ড্যাপ ও ঢাকার পানিসম্পদঃ

যেখানে মাঝখান দিয়ে একটি মাত্র নদী বয়ে গেলেই বিশ্বের বড় বড় শহরগুলির অধিবাসীদের জন্য প্রয়োজন মিটে যায় সেখানে ঢাকার চার দিয়ে রয়েছে নদী যা কিনা এই শহরটিকে বেষ্টনী করে রেখেছে। ঢাকার উত্তরে রয়েছে টঙ্গীখাল, পশ্চিমে তুরাগ, পূর্বে বালু আর শীতলক্ষা আর দক্ষিণে বুড়িগঙ্গা। এছাড়া এই শহরে ভেতর দিয়ে বয়ে চলত বেগুনবাড়ী খাল,  খিলগাঁও-বাসাবো খাল, শাহজাদপুর খাল, সুতিভোলা খাল, আবদুল্লাহপুর খাল, রাজাবাজার খাল, ধোলাইখাল, শাহজাহানপুর খাল, গুলশান-বনানী খাল, ধানমন্ডি খাল, দক্ষিণগাঁও-নন্দীপাড়া খাল, রাজারবাগ-নন্দীপাড়া খাল, নাসিরাবাদ-নন্দীপাড়া খাল, নন্দীপাড়া-ত্রিমোহনী খাল, ডুমনি খাল, বাউখার খাল, পরীবাগ খাল, কাটাসুর খাল, আরামবাগ খাল, গোপীবাগ ইত্যাদি। এই খালগুলি ঢাকা শহরের পানি নিষ্কাশন ও পানির প্রয়োজন মেটাত একসময়। এই নদী ও খালগুলি ছাড়াও ঢাকা শহরের আশে পাশে অসংখ্য নিচু জলাভুমি ছিল যেগুলোতে বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত পানি জমে থাকত। এই সুন্দর প্রাকৃতিক ব্যবস্থাটিকে আমরা তিলে তিলে মেরে ফেললাম। কি করলাম, খালগুলি বন্ধ করে দিলাম সংস্কার না করে ফলে আগে যেখানে প্রাকৃতিক ভাবেই বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন হয়ে যেত এখন সেখানে আমাদের অপর্যাপত স্টর্ম স্যুয়ারেজ লাইন দিয়েও আমরা বর্ষায় বৃষ্টির পানি সরাতে পারিনা। ফলে খানিক ক্ষণের ভারী বর্ষণই ঢাকার জীবনযাত্রা বিঘ্নিত করে দেবার জন্য যথেষ্ট।  আমাদের নগরজীবনের সব আবর্জনা দিয়ে আমরা শহরের আশেপাশের নদীগুলোকে ভরিয়ে দিলাম, ফলাফল আজ খাবার পানির জন্য আমাদের ভূগর্ভস্থ পানির দিকে চেয়ে থাকতে হয় কিংবা সাত সমুদ্র তের নদী পেরিয়ে ঢাকার জন্য পানীয় জলের উৎস খূঁজতে হয়। আগে বর্ষামৌসুমে ঢাকার জলাভূমিগুলোতে জমে থাকা পানি এর ভূগর্ভস্থ পানির স্তরকে ঠিক ঠাক রাখত, আমার নিচু জমিগুলো ভরে ফেলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সাধের বাড়ি বানালাম আর তার বিনিময়ে দিয়ে গেলাম প্রায় পানি শুন্য একটি এক্যুইফার। 

ঢাকার পানিসম্পদের উপর এই আগ্রাসন অনেক দিনের অথচ ২০০৪ এ এসে আমাদের মনে হল একটি ড্যাপ প্রয়োজন। তবে নয় মণ দুধ জোগানের পরেও  রাধা যে শেষ পর্যন্ত নাচল সেটা আমাদের ভাগ্য।

ঢাকার বন্যা ও জলাবদ্ধতাঃ

নিঃসন্দেহে ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতার প্রধান কারন এর নিষ্কাশন ব্যবস্থা। প্রশ্ন হচ্ছে ঢাকা শহরের নিষ্কাশন ব্যবস্থা কি অপ্রতুল নাকি প্রকল্পিত বা বাস্তবায়িত নিষ্কাশন ব্যবস্থার চেয়ে অনেক বেশি অনুপাতে এর জনসংখ্যা বেড়ে চলেছে। একটি উদাহরণ দেই, ধানমন্ডি এলাকা আজ থেকে বছর দশেক আগেও ছিল একতলা বা দু'তলা বাসার এলাকা আর এখন সেখানে তা পরিনত হয়েছে ছয় থেকে আট তলার এপার্টমেন্ট এলাকা। কিন্তু ঐ এলাকার নিষ্কাশন ব্যবস্থা কিন্তু পরিবর্তিন হয়নি খুব একটা ফলে বেড়ে চলেছে জলাবদ্ধতা। সব থেকে বড় কথা ঢাকা শহরের পরিকল্পনার ধানমন্ডি এলাকা হঠাৎ করে ফ্ল্যাট নির্মাতাদের আখড়াতে পরিনত হবে এটি হয়ত ছিলনা। পুরো ঢাকা শহর জুড়ে এই রকম উদাহরন পাওয়া যাবে। অর্থাৎ পরিকল্পনাহীন আবাসন কিংবা নগরায়ন জলাবদ্ধতার সমস্যাকে তরান্বিত করে যা ঘটেছে ঢাকার ক্ষেত্রে। 

একই সিদ্ধান্তে আসা যায় বন্যার ক্ষেত্রে। এক্ষেত্রে আমি স্বাভাবিক বন্যার কথা বলছি যা প্রাকৃতিক ভাবেই বাংলাদেশের মত অববাহিকায় প্রতিবছরই ঘটে। ভূপ্রাকৃতিকগত দিক থেকেই একটি নদীর নির্দীষ্ট একটি অববাহিকা থাকে যার একটি বিশেষ অংশ জুড়ে থাকে ফ্লাডপ্লেইন বা প্লাবনভূমি। প্লাবনভূমি সাধারনত নদীর দুই ধারে প্রস্থ বরাবর নির্দীষ্ট দূরত্ত্ব পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে যা কিনা ঐ নদীর হিস্টরিকাল প্রবাহ থেকে নির্ণয় করা যায়। প্রাকৃতিক ভাগেই এই প্লাবনভূমিতে বর্ষা মৌসুমে পানি বেড়ে গিয়ে স্বাভাবিক বন্যা হবে এবং তা প্রতিবছর। এখন সেই প্লাবনভূমিতে যদি আমরা মাটি ভরাট করে আবাসন কিংবা অন্যান্ন যেকোন উন্নয়ন কর্মকান্ড করি সেক্ষেত্রে বন্যার পানি সেই যায়গা থেকে উপচে এর আশেপাশের এলাকায় যাবে এবং বেশি বিস্তৃত হবে কারন পানির আয়তন যদি আমরা ধ্রুব ধরি তাহলে মাটি ভরাট করে গভীরতা কমিয়ে দিলে  এর বিস্তৃতি বাড়বে ( আয়তন = গভীরতা × বিস্তৃতি)। ঠিক এই ঘটনাই ঘটে যাচ্ছে ঢাকার ক্ষেত্রে প্রতিবছর। ঢাকার পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিনের দিকে বাঁধ থাকায় তা টের পাওয়া যাচ্ছেনা এখন কিন্তু পূর্বাঞ্চল হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে নোংরা পানির বন্যা কাকে বলে। 

ক্রমহ্রাসমান ঢাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তরঃ

ঢাকা শহরের ক্রমহ্রাসমান পানির স্তর আর তা কৃত্রিমভাবে পূরণের উপর ২০০৪ সালে আমার বন্ধু ওয়াসিম ও আমি একটি যৌথ প্রকাশনায় দেখিয়েছিলাম যে ঢাকা ওয়াসার প্রায় ৯৫ ভাগ মিউনিসিপাল ওয়াটার আসলে ভূগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরশীল। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রাকৃতিক ভাবে শুষ্ক মৌসুমে নেমে যায় আবার বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির ও বন্যার পানি নিচে যেয়ে সেই স্তরকে আবার উঠিয়ে দেয়। ঢাকা শহরের পানির বিশাল চাপ এর ভূগর্ভস্থ স্তরকে শুধুই নিচে নিয়ে যাচ্ছে, কারন যে হারে পানি তোলা হচ্ছে সেই হারে পানি প্রাকৃতিকভাবে নেচে যাচ্ছেনা। আমরা ঢাকা শহরের প্রায় ১৫ টি পরীক্ষণ কূপের এর উপাত্ত বিশ্লেষন করে দেখেছিলাম  যে গড়ে প্রতিবছর ভূগর্ভস্থ পানির স্তরের নেমে যাওয়ার হার বছরে প্রায় ২ মিটার। ২০১০ এ এসে সেই হার আরো বাড়ার কথা। পানির চাপ বৃদ্ধির সাথে সাথে এই ক্রমহ্রাসমানতার একটি বড় কারন হচ্ছে ঢাকা শহরের অভ্যন্তরস্থ বা এর আশে পাশের জলাভূমি বা নিচু এলাকা ভরাট করে ফেলা। শহরাঞ্চলে যেহেতু অধিকাংশ এলাকা সিমেন্ট না পিচের আস্তর দিয়ে মোড়ানো তাই বৃষ্টির পানি ভূগর্ভে যেতে পারেনা। শহরের অভ্যন্তরে নিচু এলাকা বা জলাভুমি থাকলে বৃষ্টির পানি আগে সেখানে গিয়ে জমা হয় পরে তা ভূগর্ভে আস্তে আস্তে প্রবেশ করে। ফলে শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর যতটুকু নেমে যায় বর্ষা মৌসুমে তা পূরণ হয়ে যাবার সুযোগ থাকে। কিন্তু গত কয়েক দশকে ঢাকা শহরের নিচু এলাকা ও জলাভূমিগুলোকে ভরাট করে আবাসন তৈরী করা হয়েছে ফলে পানির ভূগর্ভে প্রবেশ করা হয়েছে বন্ধ আর তার বিপরীতে নব আবাসন প্রকল্পের ফলে পানির চাহিদা বরং বেড়েছে।

 

ঢাকার পানিসমস্যা ও ড্যাপঃ

তাহলে উপরের আলোচনা থেকে যা বেরিয়ে আসল তার সারাংশ হচ্ছে ঢাকা শহরের পানিসমস্যা মূলত নিম্নরূপঃ

  • শহরের অভ্যন্তরস্থ প্রাকৃতিক নিষ্কাশন ব্যবস্থার কারনে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা।
  • অপরিকল্পিত আবাসন অনুমোদনের ফলে সৃষ্ট নিষ্কাশন চাহিদার বিপরীতে অপর্যাপ্ত নিষ্কাশন ব্যবস্থা।
  • প্লাবনভূমিতে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে স্বাভাবিক বন্যার পানি অপ্লাবনভূমিতে ছড়িয়ে পড়া।
  • নিচু এলাকা ও জলাভূমি ভরাটের ফলে প্রাকৃতিক ভাবে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর পূনঃভরন না হওয়া প্রকারান্তরে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া।

 

এখন দেখা যাক ড্যাপ এর মধ্যে এই সমস্যাগুলো সমাধানের কোন নমুনা বা নির্দেশনা আছে কিনা।  প্রাকৃতিক নিষ্কাশন ব্যবস্থার পূনরুদ্ধার নিয়ে এবং নিচু অঞ্চল ও জলাভূমি পূনরুদ্ধার নিয়ে সন্দেহাতিত ভাবে ড্যাপের আলোচনা ও নির্দেশনা এসেছে। যেমন [২],

"The options to reduce and minimize these major constraints rest with utilizing and optimizing naturally flood-free land and carrying out major flood protection works and protecting existing natural depressions and khals" (Article 3.3) 

 "In order to optimize the full potential of existing and potential new development land areas, the areas designated as retention ponds in natural depressions and the city’s existing natural drainage system and khals must be protected at all costs (Article 3.3)

"Preserve the Beels, khals as lakes with demarking buffer distance" (3.3.15)

স্ট্রাকচার প্ল্যান প্রকল্পে ঢাকা শহরের প্লাবনভূমিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল, একঃ মুখ্য প্লাবনভূমি (Flood Flow Zone) এবং গৌন প্লাবনভূমি (Sub Flood Flow Zone) এবং নির্দেশ ছিল যে একমাত্র কৃষি, নিষ্কাশন ও রাস্তাখাট ছাড়া ঐ সব এলাকায় কোন ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হবেনা। কিন্তু বাস্তবে দেখা গিয়েছে যে গৌণ প্লাবনভূমিতে উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা দূরুহ হয়ে গিয়েছিল স্ট্রাকচার প্যানের কিছু দূর্বলতার জন্য। ফলে ড্যাপে এই দুই অঞ্চলক একত্রিত করে করা হয়েছে শুধু প্লাবনভূমি ( ফ্লাড ফ্লো জোন) ।নিচের উদ্ধৃতিটি দেখুন [২]

 

But in reality, controlling Subflood Flow Zone is being very difficult because of some existence of flexibility of using this zone mentioned in structure plan. Therefore, in order to provide stricter measures to safeguard flood plain areas, in detailed Area Plan, these two types of zone have been merged and named Flood Flow Zone (Article 3.3.6)
 

অর্থাৎ কিনা এই ফ্লাড ফ্লো জোনে কোন ধরনের উন্নয়ন কার্যক্রম করা যাবেনা। আমরাও তাই মন করি, দ্বিমতে যাবার প্রশ্নই উঠেনা।

ড্যাপে অসংগতি তাহলে কি ??

এতক্ষণ কিন্তু ড্যাপের প্রাকৃতিক নিষ্কাশন ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার, ফ্লড ফ্লো জোন একত্রিকরণ ও ফ্লাড ফ্লো জোনে উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়ন্ত্রন করা এই সব কিছু নিয়েই একমত ছিলাম। কিন্তু সমস্যা দাড়াল যখন ড্যাপের চুড়ান্ত ম্যাপটা দেখলাম যেখানে এই জোনগুলি চিহ্নিত করে দেখানো হয়েছে। ম্যাপটি বড় বিধায় এমবেড করলামনা, পাঠক এই লিঙ্ক থেকে দেখে নিতে পারেন। পাঠক নিচের ম্যাপটি লক্ষ্য করুন আগে,

 

ছবিসুত্রঃ ড্যাপ, রাজউক

বালু নদী আর শীতলক্ষার ঠিক মাঝখানে লালচে বাদামী অঞ্চলটাই রাজউকের  পূর্বাচল প্রকল্প। বালু আর শীতলক্ষা এই দুই নদীর প্লাবনভূমি মিলে এদের মধ্যবর্তী প্রায় পুরো এলাকাই আসলে প্লাবনভুমি এবং ড্যাপের নীতিমালা অনুযায়ী প্লাবনভূমিতে কোন উন্নয়ন বাস্তবায়ন করা যাবেনা। সুতরাং কি করা হলো এই অঞ্চলকে প্লাবনভূমি হিসেবে চিহ্নিতই করা হলোনা !! তাই প্লাবনভুমির মাঝখানে অসুরের মতে পড়ে রইল পূর্বাচল। একই কাজ করা হয়েছে ঝিলমিল প্রকল্পের ক্ষেত্রে। নিচের ছবিটি দেখুনঃ

 

 

ছবিসুত্রঃ ড্যাপ, রাজউক

শেষকথাঃ

ড্যাপের এই পরিকল্পনায় ঢাকা বা এর আশেপাশের প্রায় সব আসাবন প্রকল্পই অবৈধ হয়ে যাবে, আমার সেটি নিয়ে কোন দ্বিমত নেই। বৃহত্তর স্বার্থের জন্য যদি সেটা দরকার হয় তাহলে রাজউক তা করবে কিন্তু সেক্ষেত্রে রাজউককেও একই নিয়ম মানতে হবে। ফ্লাড ফ্লো জোন একটি প্রাকৃতিক জোন যা কোন ভাবেই নিজের ইচ্ছেমত পরিবর্তন করা যাবেনা। রাজউক গায়ের জোরে নিজের প্রকল্পকে ফ্লাড জোনে বসিয়েও তাকে ফ্লাড জোন বলে চিহ্নিত যদি না করে তাহলে বেসরকারী উদ্দোক্তরা এই ড্যাপ মেনে নিবে কেন ? আশা রাখি চুড়ান্ত বাস্তবায়নের আগে রাজউক এই জিনিসগুলো আবার পূনর্বিবেচনা করবে। আইন বানানোর বা মানানোর আগে নিজেকে আগে আইন মেনে চলার উপযোগী করে তুলতে হবে।

 

তথ্যসুত্রঃ

[১] ড্যাপ, রাজউক

[২] রিপোর্ট গ্রুপ 'এ'  


মন্তব্য

তাসনীম এর ছবি

খুবই তথ্যবহুল ভালো লেখা।

ড্যাপের নাম ছাড়া আর কিছুই জানতাম না। পানিসমস্যা ও ড্যাপের দিকগুলো জেনে উপকৃত হয়েছি। রাজউকের পূর্বাচলের প্রজেক্টে মনে হয় এইবার সবচেয়ে বেশি মানুষ এপ্লাই করেছিল প্লটের জন্য। সেটা যে বন্যাপ্রবন এলাকায় এটা মার্ক না করে রাজউক তাদের অসাধু কাজের তালিকায় আরো একটা বুলেট যোগ করেছে।

পানি নিষ্কাশনের স্বাভাবিক পথ বন্ধ করা হয়েছে, এক্যুইফার রিচার্জ জোনগুলোতে বহুতল ভবন উঠেছে, এর ফলস্বরূপ নোংরা পানির বন্যায় যে ঢাকা শহর ভাসাটা এখন আর একাডেমিক আলোচনা নয় বরং প্রতিদিনের বাস্তবতা। কিছুদিন পরে মনে হয় মানুষকে শহর ছেড়ে পালাতে হবে।

একটা প্রশ্ন করি, একটু অফটপিক হতে পারে। ঢাকা ওয়াসা কি সারফেস ওয়াটার রিসাইকেল করে ব্যবহার করে? এদেশে দেখি যে পানির সোর্স হচ্ছে লেইক, এক্যুইফারের উপর নির্ভরশীলতা কম মনে হয়। টেক্সাসে প্রায় সব বড় শহরের পাশেই বিশাল লেক কেটে জলাধার তৈরি করা হয়েছে যেগুলো শহরের পানির সোর্স। বাংলাদেশে এটা করা যায় না কেন?

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

সচল জাহিদ এর ছবি

তাসনীম ভাই ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।

প্রথমতঃ একটি শহরের অবস্থান নদীর কাছাকাছি হলে সাধারনত যে করা হয় তা হচ্ছে নদীর উজান থেকে পানি সংগ্রহ করে তা পরিশোধন করে সরবরাহ করা হয়। ব্যবহৃত পানি ( গৃহস্থালী ) একটি নির্দীষ্ট মাত্রায় পরিশোধন করে নদীর ভাটিতে ছেড়ে দেয়া হয় যেন তা উৎসকে দূষিত না করে। সেই ভাটিতে ছেড়ে দেয়া পানি হয়ত অনেক দূরে যেয়ে আরেক শহরে উৎস হিসেবে কাজ করে তবে দূরত্ত্বে কারনে তা ততক্ষণে মিশে যায়।

দ্বিতীয়তঃ যে শহরে নদী নেই সেখানে আশে পাশের হ্রদ থেকে পানি এনে পরিশোধন করে তা ব্যবহার করা হয় এবং একই ভাবে ব্যবহৃত পানি ( গৃহস্থালী ) পুনরায় পরিশোধন করে আবার একই হ্রদে বা অন্য হ্রদে ফেলা হয়।

তৃতীয়তঃ নদী বা হ্রদ কোনটাই না থাকলে অথবা থাকলেও যদি তা পরিশোধন করার মত পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকে অথবা যদি তা অর্থনৈতিক ভাবে ফিজিবল না হয় তখন সাধারণত ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করা হয়।

তবে বৃষ্টির পানি বা স্টর্ম স্যুয়ারেজ সাধারনত পরিশোধন না করেই নদীতে বা হ্রদে ফেলে দেয়া হয়। এজন্যই শহরে স্টর্ম স্যুয়ারেজ আর পয়ঃ স্যুয়ারেজ পৃথক লাইনে প্রবাহিত করা হয়।

ঢাকার ক্ষেত্রে ঘটেছে তৃতীয়টি। ঢাকা ওয়াসা একসময় বুড়িগঙ্গা থেকে পানি নিয়ে তা পরিশোধন করে সাপ্লাই দিত তবে কখনই তা পুরো ঢাকার জন্য নয়, শুরুর দিকে অপর্যাপ্ত পরিশোধন ব্যবস্থা ছিল মূল কারন। অর্থনৈতিক ভাবে ডিপ টিউবওয়েল দিয়ে পানি তোলা অনেক সহজ কারন তাতে পরিশোধনের ঝামেলা থাকেনা। কিন্তু আস্তে আস্তে যখন ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নামা শুরু করল ততদিনে বুড়িগঙ্গা আসলে দূষনে ভরপুর হয়ে গেছে। সুতরাং এখন বুড়িগঙ্গার পানি পরিশোধন করাই অর্থনৈতিক ভাবে ফিজিবল না। মাঝে পরিকল্পনা হয়েছিল মেঘনা থেকে পানি নিয়ে আসার। এখন কি খবর জানিনা।

মজার বিষয় হচ্ছে ঢাকাতে একই পাইপ দিয়ে গৃহস্থালীর বর্জ্য ও বৃষ্টির পানি প্রবাহিত করে নদীতে ফেলা হতো। অর্থাৎ ব্যবহৃত গৃহস্থালীর পানি কোন রকম পরিশোধন না করেই ফেলে দেয়া হতো। ফলে নদী দূষিত হয়ে অনেক দ্রুত হারে।

ঢাকার আশে পাশে যেহেতু সেইভাবে হ্রদ নেই তাই আস্তে আস্তে এর চারপাশের নদীগুলোকে বাঁচিয়ে তুলে সেখান থেকেই পানি নিয়ে আসা ছাড়া আর ভাল কোন সমাধান আমার কাছে মনে হয়না। অবশ্য যারা পেশাগত ভাবেই ওয়াসার সাথে সংশ্লিষ্ট আছেন তারা আরো ভাল বলতে পারবেন।

----------------------------------------------------------------------------
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

তাসনীম এর ছবি

প্রশ্নের বিস্তারিত উত্তরের জন্য অনেক ধন্যবাদ জাহিদ।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

কিপ ইট আপ, জাহিদ ভাই। চলুক

সচল জাহিদ এর ছবি

ধন্যবাদ পিপিদা।

----------------------------------------------------------------------------
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ, জাহিদ ভাই। আপনি সুন্দর করে ব্যাপারটি বুঝিয়ে বলেছেন। আপনি এখানে শুধু ড্যাপ বাস্তবায়নে এর দুর্বলতাটুকু (যা রাজউকের পক্ষে গেছে) তুলে ধরেছেন।

রাজউক কিন্তু দাবী করতে পারে যে পুর্বাচলের অংশটা বন্যা প্লাবন এলাকায় পড়েনি যেহেতু এইসব ম্যাপ তৈরি এবং কোন এলাকায় কি পড়বে তা ঘোষণা করার এখতিয়ার তাদের আছে। তবে ম্যাপ দেখে বুঝলাম দুই পাশে প্লাবন এলাকার মাঝে হঠাৎ করে আবাসন এলাকা উঠে দাড়িয়ছে! সবচেয়ে চোঁখে লেগেছে একদম নদীর গা ঘেঁষে দাঁড়ানো পুর্বাচলের অংশ যা কমন সেন্সেই বলে প্লাবন অংশে পড়বে।

আপানার পয়েন্টে ভুমিদস্যুরা বেশ খুশি হবে। তাদের মুল আক্ষেপই হল তাদের সব দখল করা জমি প্লাবন এলাকায় পড়েছে। তাই তাদেরটা বাদ পড়লে রাজউকেরও কিছু বাদ পড়া উচিত। ঝিলমিলের কিছু অংশ অবশ্য বাদ পড়বে কিন্তু পুর্বাচলের কিছু বাদ পড়বে কিনা জানি না। তবে ঢাকা শহরের টিকে থাকার জন্য ড্যাপের বাস্তবায়ন জরুরি। তাই আমি মনে করি আরো ভালমত পর্যালোচনা করে এর দুর্বলতা গুলো বের করে তারপর মাঠে নামা উচিত যাতে আর প্রশ্ন না উঠে।

আর একটা জিনিস আমি বুঝি না, যে ব্যবসা করে সেই আবার কিভাবে প্ল্যানার (রাজউক) হয়? এমনি এমনি তো আর রাজউক কিছু রাজনীতিবিদদের জন্য সোনার খনি হয় নাই।

অনন্ত

সচল জাহিদ এর ছবি

অনন্ত ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। আসলে ড্যাপের মত একটি মহাপরিকল্পনা অনেক আগেও প্রয়োজন ছিল, সেই বিচারে এর বাস্তবায়ন নিয়ে বিন্দুমাত্র প্রশ্ন নেই মনে। কিন্তু একটি আইন বা নির্দেশনা কখনই পক্ষপাত দোষে দুষ্ট হওয়া উচিৎ নয়, হলে তা প্রশ্নের জন্ম দেয় ফলে তার বাস্তবায়ন বিঘ্নিত হয়।

----------------------------------------------------------------------------
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ধুর মিয়া
আমি গত কয়দিন ধরেই ভাবতেছিলাম এই বিষয়ে একটা বিশেষজ্ঞ লেখা পড়তাম চাই। এবং প্রথমেই তোমার নাম মনে হইছিলো।
ব্যস্ততা হেতু তোমারে নক করা হয় নাই। কিন্তু মনে মনে অপেক্ষাটা ছিলো যে তুমি লেখবা।

স্যালুট বস...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সচল জাহিদ এর ছবি

নজু,

লেখাটা শুরু করছিলাম সপ্তাহ দুয়েক আগে কিন্তু পেড়ে উঠছিলামনা। ২৫ জুলাই 'হরিণ চিতা চিল' নাটকটার প্রদর্শনী তাই মহা ঝামেলায় আছি। ধন্যবাদ বন্ধু।

----------------------------------------------------------------------------
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

প্রত্যাশিত লেখা, এবং তোমার কাছ থেকেই প্রত্যাশিত ছিল।

ড্যাপ নিয়ে ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলোতে ফেনা তুলে ফেলা বিশেষাজ্ঞদের (বানান লক্ষ্যনীয়) বাতুল-বচন শুনে সময় নষ্ট করার চেয়ে এমন একটা পোস্ট পড়া কাজের।

এই সংক্রান্ত তোমার লেখা জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হওয়া প্রয়োজন। কারণ সিংহভাগ মানুষ এখনো ইন্টারনেট সুবিধা থেকে বঞ্চিত।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সচল জাহিদ এর ছবি

পান্ডব দা,

প্রত্যাশা পূরণের জন্য অহর্নিশ চেষ্টা থাকবে। আসলে মাঝে মাঝে মনে হয় দেশের বিশেষজ্ঞরা কোন না কোন দিকে বায়াসড হয়ে কথা বলে।অন্তত টিপাইমুখ ইস্যু থেকে আমার এই ধারনা আরো প্রবল হয়েছে। যাই হোক দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশের চেষ্টা থাকবে।

----------------------------------------------------------------------------
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

অগ্নিবীণা এর ছবি

ড্যাপ নিয়ে জানার ইচ্ছেটা ছিলো দুরন্ত! বিশেষত এই ব্যাপারে ভুমি প্রতিমন্ত্রীর সাথে ডেভোলাপারদের চরম বিবাদের কথা পত্রিকায় পড়ার পর থেকেই! সচল জাহিদ সে ব্যাপারটিকেই স্পষ্ট করে তুলে ধরলেন! অসংখ্য ধন্যবাদ...চমৎকার এবং তথ্যবহুল একটি পোষ্ট!
কিন্তু ভাবছি, ড্যাপের প্রকৃ্ত বাস্তবায়ন কী আদৌও হবে নাকি সাত চক্রে ভগবান ভুত হবার মতো কিছু একটা হবে!

সচল জাহিদ এর ছবি

ধন্যবাদ অগ্নিবীণা আপনার মন্তব্যের জন্য। ড্যাপের বাস্তবায়নের আগে এর সংশোধন প্রয়োজন বিশেষত রাজউকের নিজস্ব প্রকল্পের প্রতি পক্ষপাতটা চোখে পড়ার মত। ঢাকা শহরের হাইড্রোলজিকাল সার্ভেও তার আগে করা উচিৎ।

----------------------------------------------------------------------------
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

Architect Iqbal Habib এর ছবি

Dear Mr. Shochol Jahid,
First of all I am sorry for my incompetence to type in bangla. I congratulate you from my part as well as from BAPA for your wonderful write-up and seems like you have enough expertise and long tome study on Dhaka and its water resources. As an activist and a member of the review committee for DAP, I like to share some background facts of your raised issue. You have justly pointed the Purbachol as well as the Jhillmill project of RAJUK. The issues came to the notice of the committee with similar numerous cases and we had to resolve them case by case. In case of these two;
1. As the Purbachol (initiated as Yosufganj development project) was initiated before the structure plan of DMDP master plan (that before defining the flood flow or sub flood flow area or any layout of master plan of capital Dhaka)) we have agreed upon with RAJUK to consider this project as 'Overlay' - that is changed Land use with a caution to revise the 'Balu' river and Sitolakha' side again to mitigate the obstruction to flood flow as much as possible. It is to remember here that the yosouf ganj was naturally an island of highland which was having some canals within.
2. The 'Jhilmil' project has two had two phases where the first one was roughly 350acres while the 2nd one is more than 1500 acres. The committee commented to consider the 1st phase as 'Overlay' again as this was assumed before the structure plan where they discarded the allowance of the 2nd phase due to its adaptation after structure plan.
Basically all the flood flow areas are considered as 'untouchables' as you have explained the reason very well but this discriminations are the bores in the plan. With all these we are eager to see the DAP to be implemented before it is too late to keep Dhaka livable and that’s why we are struggling and need every possible voice for immediate implementations of DAP. Obviously the job of the Consultants has still many flaws (the major of whom we tried to rectified with our six month 'pro bono' evaluation and study with Prof JRC's as chair), we feel the vested group is not going to get it implemented. As planning is a continuous process, we feel that with participation and revision of all the professional and enlightened quarter, we would have better outcome once the implementation of DAP will come to stage of 'Action Plan' level. We all can participate as watchdog if the implementation process keeps proper public participation in its process of implementations. But anything else, we activist are fighting without any result as we don’t have a plan after 39 years of our liberation for our capital.

Lets keep us united for a better future of our children.

হিমু এর ছবি

কন্ট্রোল + অল্ট + পি চাপলে ফোনেটিক লেআউট সক্রিয় হয়ে যাবে। তখন amar টাইপ করলে বাংলায় "আমার" দেখাবে। সচলায়তনে কনটেন্ট যতদূর সম্ভব বাংলায় রাখার চেষ্টা করা হয়। একটু কষ্ট হবে শুরুর দিকে, কিন্তু অভ্যস্ত হতে সময় লাগবে না। ধন্যবাদ।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

আরিফ জেবতিক এর ছবি

আমি আপনার মন্তব্য থেকে যেটি বুঝতে পারলাম যে, পুর্বাচল এবং ঝিলমিল প্রকল্প- এ দুটোই আপনারা 'ওভারলে' হিসেবে ' হয়ে গেছে তো কী আর করা' স্লোগানে গ্রহন করে ফেলছেন। সেক্ষেত্রে বেসরকারী ডেভেলপর যারা কয়েক শ একর করে জায়গা একই সময়ে ভরাট করে ফেলেছে তাদের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত হবে ? বিশেষ করে পুর্বাচলের আশেপাশে বসুন্ধরা গ্রুপ, যমুনা গ্রুপ, পিংক সিটি, ছাড়াও কমপক্ষে আরো ৭/৮টি ছোট বড় প্রজেক্ট আছে, যারা গত কয়েক বছর ধরে জায়গা ভরাট করতে করতে ওদিকে আর কোনো নিচু জমি রাখেনি। এখন তাদেরটাও কি 'ওভারলে' গন্য হবে ? যদি হয়, তাহলে উনারা কেন ড্যাপ বাস্তবায়নের বিরোধিতা করছেন এবং যদি না হয় তাহলে রাষ্ট্র কেন শুধু নিজের বেলা অন্যায়কে 'ওভারলে' হিসেবে গন্য করবে ?

সচল জাহিদ এর ছবি

শ্রদ্ধেয় ইকবাল হাবিব

অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। জেনে আনন্দিত হচ্ছি যে ড্যাপের রিভিউ কমিটির একজন সদস্য আমাদের সাথে আলোচনায় অংশগ্রহন করছেন। আমি নিজে পানিসম্পদ নিয়ে পড়াশুনা করছি আজ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে, একসময় প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পানিসম্পদের শিক্ষক ছিলাম, এখন পিএইচডি গবেষণা করছি কানাডায়। এখানে একটি বিষয় পরিষ্কার করে নেই আমি অবশ্যই এবং অবশ্যই ড্যাপের বাস্তবায়নের পক্ষে তবে বাস্তবায়নের পূর্বে এর কিছু বিষয় সংশোধন প্রয়োজন বলে মনে করিঃ

প্রথমতঃ 'ফ্লাড ফ্লো জোন' একটি প্রাকৃতিক বিষয় শুধুমাত্র একটি নদী বা খালের এক পাশে বা দুই পাশে একটি 'বাফার জোন' চিহ্নিত করে তাকে 'ফ্লাড ফ্লো জোন' বানিয়ে দেয়াটা যৌক্তিক নয়। এর জন্য ঢাকার হাইড্রোলজিকাল সার্ভে প্রয়োজন এবং অবশ্যই তা 'আরবান হাইড্রোলজিকাল মডেল স্টাডি করে'।

দ্বিতীয়তঃ আপনার উল্লেখিত মন্তব্যে পূর্বাচলকে 'ওভারলে' বলে নির্ধারিত করার ব্যখায় আসছি।

ড্যাপের রিপোর্টে 'ওভারলে' র সংজ্ঞা প্রণিত হয়েছে নিম্নরূপেঃ

The uses that are not compatible to the surrounding landuses but will not be removed are called overlay sites and the sites compose the Overlay Zone.(পৃষ্টা IV 42, গ্রুপ A রিপোর্ট)

অর্থাৎ যে জায়গাগুলো তার আশেপাশের চিহ্নিত জোনের সাথে সংগতিপূর্ণ নয় তবে তাদেরকে ব্যাতিক্রম হিসেবে স্বঅবস্থানে সংরক্ষণ করা হবে তাই হচ্ছে 'ওভারলে' জোন।

এখন দেখা যাক কি কি গুরুত্ত্বপূর্ণ স্থানকে ওভারলে হিসেবে চিহ্নিত করা হতে পারে। ড্যাপের রিপোর্টে স্পষ্ট লেখা আছে,

It may be of any type ranging from heritage site to graveyard as some are mentioned here:
1. Historic Preservation Overlay Site
2. Water Body Preservation Overlay Site
3. Graveyard Overlay Site
4. Sports and Recreation Overlay Site
5. Special Use Overlay Site. (পৃষ্টা IV 12, গ্রুপ A রিপোর্ট)

এখন আপনিই বলুন 'পূর্বাচল প্রকল্প' এলাকা এর কোনটিতে পড়ে ?? আপনি হয়ত বলবেন ৫ নাম্বারে পড়বে অর্থাৎ 'স্পেশাল ইউজ'। কিন্তু দেখুন একই রিপোর্টে এর সম্পর্কে লেখা আছে,

There are some areas that will be used for special use. These are termed as Special Use Overlay Site. Special Temporary Events like Carnivals, Fairs, Hats etc. will be permitted in this zone. (পৃষ্টা IV 44, গ্রুপ A রিপোর্ট)

অর্থাৎ কোন সংগাতেই আপনি 'পূর্বাচলকে' ওভারলে হিসেবে চিহ্নিত করতে পারবেননা। একই ভাবে ঝিলমিল প্রকল্পকে এক্ষেত্রে ওভারলে হিসেবে চিহ্নিত করন করা যাবেনা।

একটি ছোট্ট উদাহরণ দেই, ধরুণ আপনার একটি পাঁচতলা বাড়ি আছে এবং আপনি বৈধভাবে অনুমোদন নিয়েই সেটি করেছেন। এখন বাড়ি বানানোর ১০ বছর পর সরকার মনে করল সেখান দিয়ে একটি রাস্তা বানানো দরকার যা কিনা ঐ বাড়িরত উপর দিয়ে যাবে। এক্ষেত্রে ঐ বাড়ির মালিকের কিন্তু কিছু করার নেই, তাকে তার বাড়ি বিসর্জন দিতেই হবে। হয়ত ক্ষতিপূরণ দিবে কিন্তু বাড়ি কিন্তু ভাঙ্গা পড়বেই। এখন ঢাকা শহর রক্ষা কল্পে যে ড্যাপের সৃষ্টি তাকে বাস্তবায়ন করা জরুরী নাকি 'পূর্বাচল প্রকল্প' কে ওভারলে আখ্যা দিয়ে স্বঅবস্থানে বসিয়ে রাখা জরুরী ??

আপনি বলেছেন পূর্বাচল প্রকল্প এলাকায় বেশ কিছু খাল আছে এবং ধারণা করছেন সেখান দিয়ে বন্যার পানি চলে যেতে পারবে। এটি একটি ভ্রান্ত ধারনা। এক্ষেত্রে 'বোটল নেক' বলে একটি টার্ম আছে। আপনি একটি বোতলে পানি ভরে মুখ নিচের দিকে রেখে পানি ফেলে দেবার চেষ্টা করুন দেখবেন কি ঘটে। পানি আসবে ১ মাইল প্রস্থ পথ দিয়ে আর সেই পানিকে যদি ২০ ফুট খাল দিয়ে পার করার কথা ভাবা হয় তাহলে সেটা কতটা যৌক্তিক তা বোঝার জন্য পানিসম্পদ বোদ্ধা হবার প্রয়োজন নেই।

আশা করব আমার বক্তব্যে আমি পরিষ্কার ভাবে আমার অবস্থান জানিয়েছি। এবং আবারও দ্ব্যার্থহীন কন্ঠে বলছি 'ড্যাপের বাস্তবায়ন হোক তবে তা সংশোধন করে'

আবারো ধন্যবাদ আলোচনায় অংশগ্রহণ করবার জন্য।

----------------------------------------------------------------------------
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

জাহিদ, এই বিষয়ে একটা লেখা পত্রিকায় দাও।
যে কোনো প্রয়োজনে আমি আছি
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সচল জাহিদ এর ছবি

সচলে মেসেজ দিয়েছি।

----------------------------------------------------------------------------
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

তানভীর এর ছবি

কাজের পোস্ট চলুক

ইকবাল হাবিবের মন্তব্য থেকে যেটা বুঝতে পারলাম পূর্বাচল ও ঝিলমিল-১ (প্রথম পর্যায়) DMDP তৈরী বা ফ্লাড ফ্লো জোন চিহ্নিত করার আগে ডেভেলপের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল; তাই তারা সেটিকে ওভারলে হিসেবে নিয়েছেন। ঝিলমিল-২ স্ট্রাকচার প্ল্যান তৈরীর পরে করা হয়েছে, তাই সেটিকে বাতিল করা হয়েছে। সম্ভবত ফ্লাড জোনে বেসরকারি সব আবাসন প্রকল্পও প্ল্যান তৈরীর পর করা হয়েছে। তাই এগুলোও বাতিল হয়েছে। তবে এসবের জন্য পারমিট নিশ্চয়ই রাজউকই দিয়েছে। ড্যাপ বাস্তবায়নের স্বার্থে সরকারের ফ্লাড ফ্লো জোনে রাজউকের প্রকল্পগুলোও বাতিল করা উচিত।

শামীম এর ছবি

ড্যাপ প্রকাশিত হওয়ার আগে, পূর্বের ফ্লেক্সিবিলিটির সুযোগ নিয়ে যে সকল প্রকল্প করা হয়েছে সেগুলোর দায়িত্ব কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে। ঢাকা শহরকে রক্ষা করতে যেহেতু ড্যাপের বিকল্প নাই, তাই ক্ষতিগ্রস্থদেরকে (আগে/এ পর্যন্ত নেয়া প্রকল্পগুলো) পূণর্বাসন করা উচিত।

একটা উদাহরণ/পরিকল্পনা এমন হতে পারে:

প্রথমে.
বন্যা প্রবাহ মুক্ত এলাকায় সরকারি জমিতে যদি সরকার বিরাট আকারের আবাসন পরিকল্পনা গ্রহণ করে এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো (যথা রাস্তা, পয়ঃনিষ্কাশন, বিদ্যূৎ, পানি, প্রতি পাড়ায় ময়লা ফেলার মিনি ট্রান্সফার স্টেশন) গড়ে তোলা হল + বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য জায়গা বরাদ্দ রাখা হল (সরকারী/প্রশাসনিক অফিস, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ স্টেশন, পয়ঃশোধনাগার, বর্জ্যভূমি, বিশ্ববিদ্যালয়/কলেজ/স্কুল, ঈদগাহ, মসজিদ, লাইব্রেরী, বিনোদন স্পট ইত্যাদি)।

তারপর.
ড্যাপের বন্যা-প্রবাহ এলাকায় আবাসিক প্রকল্পগুলোর জমি খাস-জমি হিসেবে অধিগ্রহণ করে, বন্যা-প্রবাহ এলাকার বাইরে অবস্থিত সেই প্রকল্পে (জমির বিনিময়ে জমি সিস্টেমে) হাউজিংগুলোকে পূণর্বাসন করা হল।

হাউজিংগুলোই আগের মত করে এখানে ভূমি উন্নয়ন করবে, এবং পূর্বের গ্রাহকদের কাছ থেকে ভূমি উন্নয়ন বাবদ অর্থ/ফী পেতে থাকবে।

বন্যাপ্রবাহ এলাকার অধিগ্রহণ করা জমিতে শুকনা মৌসুমে সমবায় ভিত্তিতে কৃষিকাজ করানো যেতে পারে।

---

এতে নতুন আবাসিক সহ বাণিজ্যিক এলাকাসহ বিরাট অংশ ঢাকা থেকে একটু দুরে চলে যাবে। দূষণ, যানজট সহ বহু সমস্যা কমবে। (একই রকম উদ্দেশ্যে স্যাটেলাইট টাউন করার ঘোষণা দেখেছিলাম)
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।