মোক্ষ, নির্বাণ ও মাতৃগর্ভ : দ্বিতীয় পর্ব

সোহেল ইমাম এর ছবি
লিখেছেন সোহেল ইমাম [অতিথি] (তারিখ: শুক্র, ০৫/০৮/২০১৬ - ১১:০৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কঠোর কৃচ্ছ্র সাধনা দিয়েই আরম্ভ হয়েছিল গৌতমবুদ্ধের আধ্যাত্মিক লক্ষ্য অর্জনের পথ চলা। রাজকুমারের জীবনের বিত্ত-সম্পদ আর আরাম-আয়েশ ত্যাগ করে মাত্র ২৯ বছর বয়সেই সংসার ছেড়ে সন্ন্যাস নেন তিনি। কঠোর কৃচ্ছ্র সাধনার সময় গৌতমবুদ্ধ সাত দিন পর একদিন, পরে পনেরদিন পর একদিন এভাবে খাদ্য গ্রহন করতেন। যা খেতেন তাও এমন কিছু নয়। কখনও ফেলে দেওয়া পশুর চামড়ায় লেগে থাকা মাংস, হাঁড়ির তলার পোড়া ভাত, কিছুই না পেলে গোবর। কখনও মাত্র একটি চালের কি তিলের বা মুগডালের দানা খেয়েই থাকতেন। এই খাদ্যাভ্যাসের ফলে শরীরের কি অবস্থা দাঁড়িয়েছিল সে বর্ণনাও দুর্লভ নয়। গভীর কুয়োর জলে প্রতিবিম্বিত নক্ষত্রের মত তার চোখ কোটরাগত হয়েছিল। শরীরের অবস্থা দাঁড়িয়েছিল রোদে শুকোনো লাউয়ের খোসার মত। পেটে হাত দিলে সে হাত শিরদাঁড়ায় গিয়ে ঠেকতো। শরীরে হাত বুলোলে দেহের রোম খ’সে পড়তো। এ ছিল তৎকালীন ভারতীয় কৃচ্ছ্র সাধনার নমুনা। গৌতমবুদ্ধ প্রথমে এ ধারায় সাধনা শুরু করলেও পরে এই কঠোর পন্থা পরিত্যাগ করে মধ্যপন্থা অবলম্বন করেন।

এই কৃচ্ছ্র সাধনার মূল লক্ষ্য কিন্তু আকাঙ্খা আর কামনা-বাসনার নিবৃত্তি। বুদ্ধ বলতেন দুঃখের মূল কারন তৃষ্ণা। জীবন থাকলেই বারবার তৃষ্ণা উৎপন্ন হতেই থাকে – কামতৃষ্ণা, ভবতৃষ্ণা, বিনাশতৃষ্ণা। এই তৃষ্ণা পূর্ণভাবে নিরোধ করা, ত্যাগ করা, তৃষ্ণার হাত থেকে মুক্তি লাভ করা এটাই দুঃখ নিরোধ। গৌতমবুদ্ধ যখন নৈরঞ্জনা বা ফল্গু নদীর তীরে অশ্বত্থ বৃক্ষের নিচে বসে বোধি অর্জনের জন্য ধ্যান মগ্ন হলেন তখন জগতের সকল কামনা, বাসনা, আকাঙ্খা তাকে আক্রমন করতে উদ্যত হলো। অশ্বঘোষের বুদ্ধচরিতকাব্য ও ক্ষেমঙ্করের ললিতবিস্তরে এর কাব্যময় প্রকাশ গ্রন্থিত আছে। সুত্তনিপাতের পধানসুত্তেও এই ঘটনার বর্ণনা আছে। এখানে কামনা-বাসনাকে মার দেবতার রূপকে বর্ণনা করা হয়েছে। মারদেবতা তার তিন পুত্র বিভ্রম, হর্ষ, দর্প এবং তিন কন্যা রতি, প্রীতি ও তৃষ্ণাকে নিয়ে বুদ্ধের সিদ্ধি লাভের পথ আটকাতে চেষ্টা করে। কিন্তু বুদ্ধের সাধনার কাছে, একাগ্র নিষ্ঠা আর সংযমের কাছে মারের এ প্রয়াস ব্যর্থ হয়ে গেল। কামনা বাসনা ও সাংসারিক দায়িত্ব কর্তব্য থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে না পারলে সাধানায় সিদ্ধি আসেনা নির্বাণ লাভও অসম্ভব তখন।

নির্বাণ শব্দের আক্ষরিক অর্থ নির্বাপিত হওয়া। যেমন একটি জ্বলন্ত দীপ শিখার নিভে যাওয়া। আবার বলা হচ্ছে এটা একেবারে বিলীন হয়ে যাবার মত নেতিবাচকও নয়। বৌদ্ধ মতে প্রতীত্যসমুৎপন্ন নামরূপ তৃষ্ণার আকর্ষনে সম্মিলিত হয়ে যে এক জীবন প্রবাহ রূপে প্রবাহিত হতে থাকে সেই প্রবাহের বিচ্ছেদই নির্বাণ। ভারতীয় জন্মান্তরবাদে আত্মাকে বা সত্ত্বাকে বার বার জন্ম নিতে হয়। মানুষ মৃত্যু বরন করার পরই আবার হয় মানুষ রূপে নয়তো পশু, পাখি বা কীট-পতঙ্গ রূপে পুনরায় জন্ম নেয়। এই জন্মচক্রকে রুদ্ধ করে দেওয়াই নির্বাণ। শুধু বৌদ্ধ মতেই নয় ভারতীয় ধারার অন্য মত গুলোতেও জন্মচক্র রোধ করার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েই বার বার আলোচিত হয়েছে। সাধারন দৃষ্টিতেই অবাক লাগে কেননা মৃত্যুর পর পুনরায় জীবন পাবার সুযোগকে যে কেউই পরম বাঞ্ছিত ভাববে। ভারতীয় মিথেই অমরত্ব পাবার জন্য, মৃত্যুকে জয় করবার জন্য মরীয়া হয়ে ওঠার দৃষ্টান্তের অভাব নেই। সেই আবার জীবন পাবার পথকে রোধ করা, বন্ধ করে দেওয়াটা কেন এত প্রার্থিত বলে ভাবা হচ্ছে? অথচ ভারতীয় সাধনায় এই জন্মচক্রকে রুদ্ধ করে দেওয়াটাকেই পরম প্রার্থিত মোক্ষ বা নির্বাণ বলে আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। সত্যিই যদি আর জন্ম না হয়, মানুষের অস্তিত্ব বিলীন হয়েই যায় তবে তা কেনই বা নেতিবাচক ভাবা হবেনা। আসলে মৃত্যু নয় নির্বাণকে জন্মের সাথে সম্পর্কিত ভাবা হচ্ছে বলেই একে নেতিবাচক গন্য করা হয়নি। বৌদ্ধ মতে নির্বাণ বলতে বোঝানো হয়েছে পরম শান্তির মাতৃগর্ভে পুনরায় আশ্রয় নেওয়াটাকেই। আর একবার সেই আশ্রয়ে উপনীত হয়ে যাতে তা থেকে আবার বিচ্যুত না হয়ে পড়তে হয় এই জন্যই প্রয়োজন জন্মচক্রকে রুদ্ধ করে দেওয়া, বন্ধ করে দেওয়া। মানবমনে মাতৃগর্ভের পরম শান্তিময় অবস্থার স্মৃতিটির অস্তিত্বই তার অজান্তেই তাকে চালিত করে আরেকটি মাতৃগর্ভের দিকে যেখান থেকে বিচ্যুত হয়ে এই কষ্টের ধরনীতে যেন ফিরে আসতে না হয়। নির্বাণের প্রকৃতির বর্ণনা দিয়ে ভিক্ষু নাগসেনকে মিলিন্দপঞ তে বলতে শুনি, “নির্ব্বাণকে শান্ত, শুদ্ধ, সুখময়, বিঘ্নহীন, ভয়হীন, উপদ্রবহীন, ক্ষান্ত, নির্মল ও শ্রেষ্ঠ বলিয়া গন্য করা উচিত।” গর্ভস্থ শিশুর জন্য মাতৃগর্ভকে কেউ এইসব শব্দেই বর্ণনা করলে মোটেও ভুল হয়না। আবার ঐ একই গ্রন্থে নাগসেন আবার বলছেন, “ বিভ্রান্ত চিত্তের মানুষ বিপদসঙ্কুল, ভীতিপ্রদ স্থানে নিজেকে বিপন্ন, ভীত মনে করিয়া নিজের উদ্যমে সেই স্থান পরিত্যাগ করিয়া ভয়লেশহীন স্থানে সুখলাভ করে। সেইরূপ সম্যকভাবে নিযুক্ত ব্যক্তি জ্ঞানের দ্বারা জরা, ব্যাধি, মৃত্যু সম্বলিত ভীতিপ্রদ জীবন সংসার অতিক্রম করিয়া নির্ব্বাণের ন্যায় ভয়লেশহীন স্থানে আসিয়া ভীতিহীন মহাসুখ লাভ করেন।”

এ ধারার সাধনা ভারতীয় অধ্যাত্মবাদের ইতিহাসে নতুন নয়। গৌতমবুদ্ধের ধর্ম প্রচারের আগেও তা ছিল। উপনিষদে নচিকেতা যমলোকে পৌঁছে মৃত্যুর দেবতার সাথে কথোপকথনে বলছে, “হে মৃত্যু, স্বর্গলোকে কিছুমাত্র ভয় নাই, আপনারও সেখানে কোন অধিকার নাই, বার্ধক্যজনিত জরার ভয়ও সেখানে নাই। সেখানে যাহারা গমন করেন তাহারা ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কোন কষ্ট পাননা, সমস্ত শোক ও মানসিক দুঃখ অতিক্রম করিয়া তাহারা আনন্দ ভোগ করেন।” প্রশ্ন উঠতেই পারে এটা কোন “স্বর্গলোক” যেখানে সময় থমকে থাকে, বার্ধক্য আসেনা, বার্ধক্য জনিত জরারও স্থান নেই, নেই ক্ষুধা-তৃষ্ণার বোধও। কামনা পরিত্যাগের আবশ্যকতার কথা বুদ্ধের বাণীর মতই উপনিষদেও বার বার ফিরে এসেছে। একটা শ্লোকে বলা হচ্ছে মানুষের হৃদয়ে যে সকল কামনা আশ্রিত আছে সেই সকল কামনা যখন দূরীভূত হয় তখন মরনশীল মানুষ অমৃতত্ব লাভ করে এবং ইহজীবনেই ব্রহ্মকে ভোগ করিতে সমর্থ হয়। আবার আরেকটা শ্লোকে দেখি,
যথা নদ্য স্যন্দমানাঃ সমুদ্রেহস্তং গচ্ছন্তি নামরূপে বিহায়
তথা বিদ্বান্নামরূপাদ বিমুক্তঃ পারৎ পরং পুরুষমুপৈতি দিব্যম
অর্থাৎ নদী সকল সমুদ্রে পতিত হইলে নিজ নিজ বিশিষ্ট নাম ও রূপ পরিত্যাগ করিয়া সমুদ্রে অদৃশ্য হয়, সেই রকম ব্রহ্মবিদ জ্ঞানী পুরুষ স্বীয় বিশিষ্ট নাম রূপ হইতে বিমুক্ত হইয়া সর্বশ্রেষ্ঠ স্বপ্রকাশ ব্রহ্মকে প্রাপ্ত হন। উপনিষদের এই শ্লোকটি ভগবদ্গীতাতেও প্রতিধ্বনিত হতে শুনি। মাতৃগর্ভে অবস্থানরত শিশুটি কিন্তু গর্ভবতী মাতার শরীরের অংশ হয়েই বিরাজ করে, তার পৃথক পরিচয় বা অস্তিত্ব তখনও সৃষ্টি হয়নি। আবার আমরা দেখেছি গর্ভের ভেতর থেকেও শিশু মায়ের কণ্ঠস্বরের সাথে ঘনিষ্ঠভাবেই পরিচিত হয়ে ওঠে। শিশুটি বোঝে যে সে সজীব একটা “জগতের” অংশ হিসেবে নিরুদ্বিগ্নভাবে গর্ভে অবস্থান করছে। সেই সজীব অস্তিত্বে আবার ফিরে যাবার আকুলতাই তখন সজীব মাতৃগর্ভের ধরনে ব্রহ্ম বা কোন ধরনের ঈশ্বরকে খুঁজে নেয়। আর তাই মিষ্টিকদের ঈশ্বর শক্তিমত্তার চেয়ে করুনাময়তা ঢেলে দিতেই যেন বেশি আগ্রহী। মমতাময়ী মায়ের ক্রোড়ের আকর্ষনেই যেন মানুষ আবার মাতৃগর্ভে ফিরে নিজের পরিচয় ও সত্ত্বাকে সেই শরীরের সাথে সংলগ্ন করে পরিত্রান পেতে চায় জীবন দুঃখের পরিতাপ থেকে। কিন্তু পূর্ণবয়স্ক মানবমনে সেই প্রত্যাবর্তনের অসারতা উপলব্ধী করেই সে রচনা করে তোলে আরেকটি সজীব মাতৃশরীর যা কল্পনায় ব্রহ্ম হয়ে ওঠে, হয়ে ওঠে ঈশ্বর।

ভাগবত পুরাণে এই বিষয়টিই যেন আরো গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছে। সেখানে বলা হচ্ছে, “ জীবনের মুখ্য উদ্দেশ্য তত্ত্বজিজ্ঞাসা, কর্মের দ্বারা বিষয়ভোগাদি যা লাভ হয় তা নয়। তত্ত্ববিদরা অদ্বৈত জ্ঞানকেই ‘তত্ত্ব’ বলেন। তাকেই বেদান্তে ব্রহ্ম, যোগশাস্ত্রে পরমাত্মা আর ভক্তিশাস্ত্রে ভগবান বলা হয়। শ্রদ্ধাশীল মুনিরা বেদান্ত থেকে সংগৃহীত জ্ঞান ও বৈরাগ্যযুক্ত ভক্তি দিয়ে আপন আত্মার মধ্যে পরমাত্মাকে, ভগবানকে দেখতে পান।” এই ভাগবত পুরাণেরই প্রথম স্কন্ধের ষষ্ঠ অধ্যায়ে দেবর্ষি নারদ ভগবানের সাথে তার প্রথম ক্ষণিক নৈকট্য লাভের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলছেন, “ এক অশ্বত্থ গাছের তলায় বসে অর্ন্তযামী ভগবানের ধ্যান করতে লাগলাম। ভক্তিতে বিহ্বল হয়ে ধ্যান করতে করতে প্রেমাশ্রুতে আমার চক্ষু পূর্ণ হলো। ধীরে ধীরে অন্তরাকাশে শ্রীহরি উদিত হলেন। মুনি, প্রেমভরে আমার অঙ্গ রোমাঞ্চিত হলো। একটা তীব্র সুখ আমি অনুভব করলাম। আনন্দে এতই মুগ্ধ হলাম যে সেই মুহূর্তে নিজেকে পরমাত্মা থেকে পৃথক বলে মনে হলোনা। সবই তখন একাকার।” মনোবিজ্ঞানী স্তানিস্লাভ গ্রফ এ ধরনের আধ্যাত্মিক অনুভূতির সাথে মানব শিশুর গর্ভস্থকালীন অভিজ্ঞতার বিস্ময়কর সাদৃশ্য লক্ষ্য করে বলছেন, If one connects with the periods of fetal life where there were no disturbances, the experiences are associated with a blissful state of consciousness where there is no sense of duality between subject and object. It is an “oceanic” state without any boundaries where we do not differentiate between ourselves and the maternal organism or ourselves and the external world.

জৈন ধর্মের পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে গর্ভস্থ শিশুর গর্ভকালীন অভিজ্ঞতার ছায়া। গৌতমবুদ্ধের ধর্ম প্রচারের আগেই জৈনধর্মের প্রচলন ছিল। গৌতমবুদ্ধের প্রথম জীবনের কঠোর কৃচ্ছ্র সাধনা জৈন সাধনাচারেরই আবশ্যিক অঙ্গ ছিল। জৈনমতে চব্বিশ জন তীর্থঙ্করের হাতেই জৈন ধর্মের বিকাশ হয়েছে। জৈনদের শেষ ও চব্বিশতম তীর্থঙ্কর মহাবীর জৈনদের ইতহাস মতে বৈশালীর কুণ্ডগ্রামে ৫৯৯ খ্রীষ্টপূর্বাব্দের দিকে জন্ম গ্রহন করেন। মহাবীরের পূর্ববর্তী তীর্থঙ্কর ছিলেন পার্শ্বনাথ। জৈনধর্মের আদি ও প্রথম তীর্থঙ্কর ছিলেন ঋষভনাথ। তবে ঋষভনাথ ও পার্শ্বনাথের পূর্ববর্তী তীর্থঙ্করদের সম্পর্কে যা তথ্য পাওয়া যায় তাতে ইতিহাসের চেয়ে মিথই বেশি। আর তাই মহাবীরকেই জৈনধর্মের প্রকৃত প্রবর্তক বললে ভুল হয়না। কেউ কেউ অবশ্য বলেন জৈনধর্মে পার্শ্বনাথের অবদানও গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে মহাবীরই অনেকাংশে ঐতিহাসিক চরিত্র। মূলতঃ মহাবীর প্রচারিত ধর্মই আমাদের কাছে জৈনধর্ম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। মহাবীর মাত্র তিরিশ বছর বয়সেই বিত্ত, সম্পদ ত্যাগ করে সন্ন্যাস নিয়েছিলেন। কঠোর কৃচ্ছ্র সাধন তার সাধনার বিশেষ একটা দিক ছিল। সমস্ত কিছু ত্যাগের সাথে সাথে মহাবীর পরিধেয় বস্ত্রটুকুও ত্যাগ করেন। জৈনদের দিগম্বর শাখার সাধকরা মহাবীরের মতই নগ্ন থাকতেন। জৈন সাধকদের বক্তব্য ছিল পার্থিব ও সাংসারিক সকল সম্পর্ক ও আসক্তি সম্পূর্ণরূপে ত্যাগই এই নগ্নতা। জৈনমতে একটা শিশু যেমন নিজের নগ্নতা নিয়ে লজ্জা অনুভব করেনা তেমনি এই জৈন সাধুরাও ব্রহ্মচর্যায় ও সাধনাবলে সেই চারিত্র্যিক ও পারমার্থিক উৎকর্ষতা অর্জন করেছিলেন যা পূর্ণবয়স্ক মানুষকেও নিস্পাপ শিশুর সারল্যে উপনীত করে। বিশেষ করে নগ্নতা যেখানে যৌনচেতনার কারনেই লজ্জার কারন হয়ে ওঠে এই সাধকরা তাদের ব্রহ্মচর্যায় সেই যৌনচেতনাকেই মন থেকে উৎপাটন করেছিলেন। কামনা-বাসনা, পার্থিব জগতের আসক্তি ত্যাগ করে নগ্নতা আত্মস্থ করার মধ্যেই যেন জৈন সাধকদের মাতৃগর্ভে প্রত্যাবর্তনের ঐকান্তিক অভিলাস মূর্ত হয়ে উঠেছে। জৈনধর্মের উপাদান গুলো হাতড়ালে যে মিথ গুলো উঠে আসে সেখানেও সেই একই ইঙ্গিত বার বার দেখা যায়।

মাতৃগর্ভ প্রত্যাশী বৌদ্ধদের মতই জৈন সাধকরাও সংসারকে নাকচ করতে চেয়েছেন সর্বাংশে। মহাবীর তার শিষ্য গৌতমকে উপদেশ দিচ্ছেন, “ সব আসক্তি ত্যাগ কর, পদ্মের মত শরৎকালের জলের মত পবিত্র হও।” সাংসারিক বন্ধন ও পার্থিব আসক্তি মহাবীরের কাছে কি পরিমান অপছন্দনীয় ছিল তার প্রমান পাই যখন তিনি বলেন, “এই জীবিতের জগত সংক্লিষ্ট, দুঃখময়, যেখানে শিক্ষাদান দুঃসাধ্য, বিচারবুদ্ধি শূণ্য। এই দুঃখময় জগতে অজ্ঞান ব্যক্তিরা বিভিন্ন কাজের দ্বারা দুঃখ ভোগ করছে ও দুঃখের সৃষ্টি করছে।” সম্পদ ও বিষয় তৃষ্ণা প্রসঙ্গে মহাবীর বলছেন, “যে এই সকল গুন অধিকারের জন্য ব্যাকুল, সে বিরাট দুঃখের স্বীকার হয় কেননা সে বিবেচনাহীন। (কারন সে ভাবে) আমাকে আমার মায়ের জন্য, বাবার জন্য, বোনের জন্য, স্ত্রীর জন্য, পুত্রদের জন্য, পুত্রবধুদের জন্য, কন্যাদের জন্য, বন্ধুদের জন্য, নিকট ও দূরের আত্মীয়দের জন্য, পরিচিতদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সম্পত্তি, মুনাফা, খাদ্য ও পরিধেয়র ব্যবস্থা করে যেতে হবে। এই সকল বস্তুর প্রত্যাশায় মানুষ বিবেচনাহীন হয়ে পড়ে, দিবারাত্র কষ্টভোগ করে, ঠিক ও বেঠিক সময়ে কাজ করে, ধন ও সম্পদ কামনা করে, আঘাতমূলক ও হিংস্র কাজে লিপ্ত হয় এবং এইসব ক্ষতিকর জিনিসের দিকেই পুনঃ পুনঃ মনকে চালনা করে।” অর্থাৎ জীবনের সমস্তটাই মহাবীরের মতে পরিত্যাজ্য। কিন্তু জীবনকে কেন এভাবে ছেঁটে ফেলা। ঠিক কি অর্জন করবার জন্য জীবনের এতখানি নাকচ করে দেওয়া জৈনসাধকদের জন্য এমন জরুরী হয়ে ওঠে। জৈনধর্মের বিভিন্ন উপাদান গুলিতে একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক।

জৈনধর্ম বিশেষভাবেই নিরীশ্বরবাদী।এই ধর্মে ঈশ্বরের প্রাসঙ্গিকতা নেই বললেই চলে। এই ধর্ম মতে বিশ্ব সৃষ্টি ও রক্ষার ক্ষেত্রে কোন দৈব হস্তক্ষেপ নেই, এক ব্যতিক্রমহীন সার্বজনীন বিধান এই বিশ্বকে নিয়ন্ত্রন করছে। অন্যান্য ধর্ম মতে যেমন এই বিশ্ব-জগতের সৃষ্টির পর প্রলয় তারপর আবার সৃষ্টি এবং পুনরায় প্রলয়ের মাধ্যমে সমস্ত কিছু ধ্বংস হয়ে যায় বলে সৃষ্টিতত্ত্ব বর্ণিত হয়েছে জৈনধর্মে তা নেই। জৈন মতে এই বিশ্ব সব সময়ই বর্তমান আছে কেবল পর্যায়ক্রমিক ভাবে এর উন্নতি আর অবনতি ঘটে। উন্নতির পর্বে (উৎসর্পিন) মানব সমাজে সকল ক্ষেত্রেই উন্নতি দেখা যায় এবং অবনতির (অবসর্পিন) কালপর্বে তেমন ভাবেই আবার তা অন্ধকারে তলিয়ে যেতে থাকে। জৈন ধর্মে মৃত্যু ও মৃত্যু পরবর্তী জীবন নিয়ে যা বলা হয়েছে তা হিন্দু ধর্মের জন্মান্তরবাদেরই রকমফের। মানবাত্মা জন্ম গ্রহন করে এবং তার কর্মফল অনুযায়ী সে মৃত্যুর পর আবার জন্ম নেয়। কর্মফলই নির্ধারন করে দেয় সে পশুযোনীতে জন্ম নেবে না কীট-পতঙ্গ হয়ে আবার এ পৃথিবীতে ফিরে আসবে। মানুষ হয়ে পরজন্ম লাভ করলেও সে কোন শ্রেণীতে জন্ম নেবে, ধনী না দরিদ্র না ভিখারী তাও পূর্ব জীবনের কর্মফলেই নির্ধারিত হয়ে যায়। জৈনমতে এই সব পার্থিব জন্ম ছাড়াও দেখা যায় মানবাত্মা স্বর্গলোকের বিভিন্ন স্তরের কোন একটিতেও জন্ম নেয়। কর্মের ফেরে নরকেও তার গতি হতে পারে, তবে স্বর্গলোক হোক বা নরক কোনটাতেই মানবাত্মার অবস্থান চিরন্তন নয়। কর্মফল ক্ষয় হলেই সেই স্বর্গলোক থেকে হয় ফের পার্থিব জন্মে নেমে আসতে হয় অথবা আরো কোন উচ্চস্তরের স্বর্গলোকে সে জন্ম নেয়। দেবতাদের অস্তিত্ব থাকলেও তারা শাশ্বত নয়, মানবাত্মা যেমন তার কর্মফলে দেবতার স্তরে উন্নীত হতে পারে তেমনি দেবতারাও কর্মফলের ফেরে মানব হয়ে পৃথিবীতে জন্ম নিতে পারে। সঠিক পন্থায় কর্মক্ষয় করতে পারলেই কেবল আত্মা জন্মচক্রের বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে মোক্ষ লাভ করতে পারে, আর তখনই তাকে আর জন্ম নিতে হয়না।

এই জন্মান্তর চক্রে যে স্বর্গলোকের কথা জৈনমতে শোনা যায় তার কয়েকটার বর্ণনায় চমৎকৃত হতে হয়। ঋষভদেবের আধ্যাত্মিক জীবন কাহিনীতে বলা হচ্ছে পরজীবনে স্বর্গলোকে কিভাবে মানবাত্মা জন্ম নেয়। বলা হচ্ছে মানবাত্মার মনে হবে সে যেন ঘুম থেকে একটা আরামদায়ক শয্যায় জেগে উঠলো। আর নরকের সম্পর্কে বলা হচ্ছে প্রায় গোলাকার ঘন্টাকৃতির বস্তুর ছোট একটা ছিদ্র দিয়ে সে নরকের মধ্যে পড়বে। স্বর্গলোকের আরেকটি স্তর হচ্ছে ভোগভূমি। স্বর্গের পরেই তার স্থান। সেখানে মানবাত্মার প্রবেশ ঘটে অনেকটা পৃথিবীতে জন্ম নেবার মতই। কিন্তু কোন মাতাপিতাই এখানে সন্তানের মুখ দর্শন করতে পারেননা, কেননা সন্তান জন্ম মাত্র এখানে মাতাপিতার মৃত্যু ঘটে। ভোগভূমিতে জন্ম নেবার উনপঞ্চাশ দিনের মধ্যেই আত্মা সাবালকত্ব অর্জন করে। ভোগভূমিতে জন্ম হবে সব সময় জমজ। একই গর্ভ থেকে একই সময়ে একটা মেয়ে ও একটা ছেলের জন্ম হবে, তারাই পরে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে ভোগভূমিতে জীবনকাল নির্বাহ করবে। ভোগভূমিতে জন্ম নেবার পর কারোরই চোখেরা পাতা কখনও বন্ধ হবেনা, তাদের শরীরে কখনওই ঘাম দেখা দেবেনা এবং তাদের শরীর থেকে কখনওই মল-মুত্র নির্গত হবেনা। তারা খাদ্য গ্রহন করবে তিন দিনে একবার তাও সে খাদ্যের পরিমান একটা কুল বা বড়ইয়ের চেয়ে বড় হবেনা। এই ভোগভূমিতে থাকবে কল্পবৃক্ষ। ভোগভূমির অধিবাসীরা এই বৃক্ষের মধ্যেই সচ্ছন্দে বাস করবে। শুধু বসবাসই নয় এই কল্পবৃক্ষ ভোগভূমিজদের পছন্দনীয় খাদ্য, পানীয়, পোষাক-পরিচ্ছদ, রত্ন-অলঙ্কার, সুগন্ধ দ্রব্য এমন কি সঙ্গীতের জন্য বাদ্যযন্ত্র শুদ্ধ সরবরাহ করবে। এ যেন মাতৃগর্ভেরই ছবি অন্য রঙে আঁকা। যে গাছের কোটরে বাস সে গাছই আবার সরবরাহ করছে পুষ্টি। সব আকাঙ্খার নিবৃত্তিরও ব্যবস্থা আছে সেখানে। ভোগভূমি থেকেও অসম্ভব সুন্দর আর শান্তিময় স্থান হচ্ছে সর্বার্থসিদ্ধি। এটা ভোগভূমি থেকে উচ্চতর স্তরের আরেকটা দেবলোক। এখানে আত্মা সব আকাঙ্খা তৃপ্ত হয়ে একটা শান্তিময় অস্তিত্ব অর্জন করে। কোন ধরনের যৌনতাড়না, আক্ষেপ, অতৃপ্তি মানসিক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে এখানে আত্মাকে বিচলিত করতে পারেনা। সর্বার্থসিদ্ধিতে বসবাসকারীদের আয়ুস্কাল অত্যন্ত দীর্ঘ। এতই দীর্ঘ এই সময়কালটা যে কেবল বৎসরের মাপে এর পরিমাপ করা যায়না। এর পরিমাপ তাই করতে হয় কয়েক সমুদ্র পরিমান বছরকে কল্পনা করে। এখানে বসবাসকারীদের আয়ুস্কাল ধরতে হয় তেত্রিশ সাগরোপম বছর। পূর্ব জন্ম সমূহের কঠোর সাধনা, আধ্যাত্মিক নিষ্ঠা আর নিখাদ ধর্মীয় আচার পালনের মধ্যে দিয়ে আত্মা এ অবস্থায় উন্নীত হয়। আত্মার এ অবস্থাকে বলা হয় অহমিন্দ্র। অহমিন্দ্র শব্দটি এসেছে দুটি শব্দ অহম অর্থাৎ আমি ও ইন্দ্র বা শ্রেষ্ঠ থেকে। সর্বার্থসিদ্ধিতে প্রত্যেকেই নিজেকে অহমিন্দ্র বা শ্রেষ্ঠদেব বলে উপলব্ধী করে। অহমিন্দ্ররা তেত্রিশ হাজার বছর পর একবার খাদ্য গ্রহন করে, আবার তেত্রিশ পক্ষকাল পরে একবার করে শ্বাস নেয়। এদের শরীর থেকেও কখনও ঘাম নির্গত হয়না, মল-মুত্র ত্যাগের ব্যাপারটিও তাদের নেই। তাদের দৈহিক বর্ণনায় বলা হচ্ছে তারা স্বচ্ছ ও আলোকোজ্জ্বল, তাদের আকৃতিও খুব বড় নয় বরং বেশ ক্ষুদ্রই বলতে হয়। এই সর্বার্থসিদ্ধি থেকেই কয়েকশো যোজন উপরে সেই সর্বোৎকৃষ্ট স্থান যেখানে যোগীরা নির্বাণ লাভ করে আশ্রয় গ্রহন করে। এই স্থানে একবার পৌঁছাবার পর কোন আত্মাকেই আর পার্থিব জীবনে ফিরে আসতে হয়না। অক্ষয় শান্তির একটা অনন্তকলস্থায়ী এই জগত। মিথোলজীর অধ্যাপক জোসেফ ক্যাম্পবেল যেন ঠিক এই অবস্থাটির কথা ভেবেই বলেছেন, The state of the child in the womb is one of bliss, actionless bliss, and this state may be compared to the beatitude visualized for paradise. In the womb, the child is unaware of the alteration of night and day, or of any of the images of temporality. It should not be surprising, therefore, if the metaphors used to represent eternity suggest, to those trained in the symbolism of the infantile unconscious, retreat to the womb.

জৈনদের ধর্মীয় মিথে স্বর্গলোক গুলোর বর্ণনায় আমরা এভাবে বার বারই মাতৃগর্ভকেই নানাভাবে চিত্রিত হতে দেখি। যারা এই মিথ রচনা করে তুলেছিলেন তারা নিজেরাও সঠিক জানতেননা তারা তাদের স্বর্গলোকের ছবি আঁকছেন নিজেদের জন্ম অভিজ্ঞতা ও বিস্মৃতপ্রায় মাতৃগর্ভস্থ জীবনকে স্মরন করে। কিন্তু যে আকুলতা তারা চিত্তের মধ্যে অনুভব করেছিলেন, যে আকুলতার জন্য পার্থিব সংসারের শান্তিকেও তাদের ফিকে অনুভব হতো, সেই আকুলতা, অস্থিরতার চরিত্র নিবিষ্ট ভাবে অনুধাবন করতে চেষ্টা করেন তারা। তারপর সেই অস্থিরতার প্রতিকারে যে স্বর্গলোকের ছবি এঁকে নিজেদের চিত্তের শান্তি ফিরিয়ে আনলেন তারা তা সেই মাতৃগর্ভের জীবনেরই ছবি। সেখানে পৌঁছে আর যেন তা থেকে বিচ্যুত না হতে হয়, সেই অক্ষয় শান্তির গর্ভে যেন অনন্তকাল অবস্থান করা যায় তাই হয়ে দাঁড়ায় এই সাধকদের পরিভাষায় মোক্ষ, নির্বাণ। আর এই মোক্ষকে অর্জন করার জন্যই সংসার আর পার্থিব বৈষয়িকতা সর্বাংশে ছেঁটে ফেলাটা অমোঘ হয়ে ওঠে। জন্মের পর থেকে শিশু এই বৈষয়িকতাই একটু একটু করে অর্জন করতে করতে মাতৃগর্ভের প্রশান্তি থেকে ক্রমশঃ অত্যন্ত দূরে এসে পৌঁছায়। এখন উল্টো পথে সন্ন্যাসের মাধ্যমে, পার্থিব সমস্ত আসক্তি আর সম্পর্কের জাল না ছিঁড়ে গর্ভস্থ শিশুর সারল্যে কোনক্রমেই পৌঁছানো সম্ভব নয় জেনেই জৈন সাধকরা সংসার ত্যাগের উপর এতখানি গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। এ প্রসঙ্গেই মহাবীরের সংসার বিষয়ক দৃষ্টি ভঙ্গীর উদাহরন তার উক্তিতেই দেখেছি। চতুর্থ শতাব্দীর জৈন সন্ন্যাসী পুজ্যপাদকেও বলতে শুনি, “দেহ, গৃহ, সম্পদ, স্ত্রী, পুত্র, মিত্র এবং শত্রু সবই জীব থেকে আলাদা। একমাত্র নির্বোধ মানুষই এদের নিজের বলে ভাবে।” আরো বিশদভাবে বোঝাতে গিয়ে তিনি বলেন, “ এরা নানা দিক থেকে উড়ে আসা পাখির মত, যারা সন্ধ্যায় একই বৃক্ষ শাখায় আশ্রয় নেয় কিন্তু ভোর হলেই আবার আপন খেয়ালে বিভিন্ন দিকে উড়ে চলে যায়।”

তথ্যসূত্র ও সহায়ক গ্রন্থঃ

১। গৌতমবুদ্ধ : দেশকাল ও জীবন - রুবী বড়ুয়া ও বিপ্রদাশ বড়ুয়া। সাহিত্যসমবায়। ঢাকা।
২। মিলিন্দপঞ - অনুবাদ : সাধনকমল চৌধুরী । করুণা প্রকাশনী। কোলকাতা।
৩। উপনিষদ (অখণ্ড সংস্করন) –অতুল চন্দ্র সেন, সীতানাথ তত্ত্বভূষন, মহেষচন্দ্র ঘোষ কর্তৃক অনুদিত ও সম্পাদিত। হরফ প্রকাশনী। কোলকাতা।
৪। শ্রীমদ্ভাগবত – সম্পাদনা রণব্রত সেন। হরফ প্রকাশনী। কোলকাতা।
৫। ভারতীয় ধর্মের ইতিহাস –নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচারয। জেনারেল প্রিন্টার্স য়্যাণ্ড পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড। কোলকাতা।
৬। প্রাচীন ভারতের ইতিহাস (প্রথম খণ্ড) – সুনীল চট্যোপাধ্যায়। পশ্চিমবঙ্গ পুস্তক পর্ষদ। কোলকাতা।
৭। Rishabha Deva - The Founder of Jaininsm : Champat Rai Jain / Allahabad : The Indian Press Ltd. 1929
৮। THE MASKS OF GOD : PRIMITIVE MYTHOLOGY :Joseph Campbell / LONDON : SECKER & WARBURG : 1960
৯। THE HOLOTROPIC MIND : The Three Levels of Human Consciousness And How They Shape Our Lives : Stanislav Grof with Hal Zina Bennett/ Harper SanFrancisco.

মোক্ষ, নির্বাণ ও মাতৃগর্ভ : প্রথম পর্বের লিংক :
http://www.sachalayatan.com/sohelimam/56067


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার এই লেখাটি পড়তে খুব কষ্ট হয়েছে। পড়ার পর ভাবলাম সোহেল ইমাম ঠিক কেন এইরকম একটি লেখা লিখলেন!

---মোখলেস হোসেন

সোহেল ইমাম এর ছবি

দুর্ভাগ্য মোখলেস ভাই, আমরই দুর্ভাগ্য। আপনার কষ্টের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনি প্রবন্ধ লেখেন গল্প বলার মতো করে। আপনার সেই সহজাত স্টাইলটি এই লেখায় খুঁজে পাইনি। লেখাটি গুরুত্বপূর্ণ সন্দেহ নেই, আপনার পরিশ্রমমের প্রতিও আমার অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা রয়েছে। তবে মনে হচ্ছে এই লেখাটি আপনি পণ্ডিতদের জন্য লিখেছেন। সেটারও প্রয়োজন আছে বৈকি!

--মোখলেস হোসেন

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

দুটি পর্ব পড়ে কিছুটা মোক্ষ লাভ করলাম! অমানুষিক পরিশ্রম করে এই অসাধারন লেখাটি উপহার দেয়ার জন্য আন্তরিক অভিনন্দন!

মানবজাতি সত্যকে অকুণ্ঠ প্রশংসায় ভাসিয়ে দেয়, মিথ্যাকে দেয় অভিসম্পাত। কিন্তু মানবসভ্যতায় মিথ্যারও রয়েছে বিশাল ইতিবাচক ভূমিকা, মানবসভ্যতার পরতে পরতে জড়িয়ে আছে অপূর্ব সব মিথ্যাচার। মানুষ যদি মিথ্যাচার না জানতো- তাহলে শিকার করতে পারতো না, ধর্ম সৃষ্টি করতে পারতো না, মহাকাব্যগুলি রচিত হত না, শিল্পকলার উদ্ভব ঘটতো না। তবে কঠিন সত্য যেমন নিষ্ঠুর, মোহময় মিথ্যাও তেমনি অপার দুঃখের কারন হিসাবে দেখা দিতে পারে।

সোহেল ইমাম এর ছবি

সত্যিই তাই মিথ্যাই হয়তো এত বৈচিত্র্যের সৃষ্টি করেছে। লেখাটা ধৈর্য্য ধরে পড়বার জন্য আর মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ আব্দুল্লাহ ভাই।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

অতিথি লেখক এর ছবি

বহুদিন পর, কি জানি হয়তো জীবনে এই প্রথমবার এতো জ্ঞানগর্ভ কোনো রিভিউ পড়লাম।

“জৈনদের ধর্মীয় মিথে স্বর্গলোক গুলোর বর্ণনায় আমরা এভাবে বার বারই মাতৃগর্ভকেই নানাভাবে চিত্রিত হতে দেখি। যারা এই মিথ রচনা করে তুলেছিলেন তারা নিজেরাও সঠিক জানতেননা তারা তাদের স্বর্গলোকের ছবি আঁকছেন নিজেদের জন্ম অভিজ্ঞতা ও বিস্মৃতপ্রায় মাতৃগর্ভস্থ জীবনকে স্মরন করে।“

- অসাধারন।

হয়তো সময়ের থেকে বহু বহু সময় এগিয়ে থাকা আত্মানুসন্ধানী মানুষ সমাজ, জগত ও মানবকুল কে সেই প্রেরণা যোগাবার যখন প্রয়াস করে, তখনই মিথের জন্ম দেয়। হয়তো, সেই পরাবাস্তবতাগুলো সময়ের ধারায় কখনোবা বিজ্ঞানের সাধনা ও লভ্যতায় যখন কিছু কিছু মিলেও যায়, তখন চেতনা, ঘনত্ব, সত্তা নিয়ে নাম নেয় ‘বাস্তবতা’, আর যেটুকু তখনো মিললনা সেটা রয়ে যায় অমূলপ্রত্যক্ষ নামেই; হয়তো।

--- জে এফ নুশান

সোহেল ইমাম এর ছবি

হয়তো সময়ের থেকে বহু বহু সময় এগিয়ে থাকা আত্মানুসন্ধানী মানুষ সমাজ, জগত ও মানবকুল কে সেই প্রেরণা যোগাবার যখন প্রয়াস করে, তখনই মিথের জন্ম দেয়।

সুন্দর বলেছেন।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।