সনির মৃত্যুবার্ষিকী!

স্বপ্নহারা এর ছবি
লিখেছেন স্বপ্নহারা (তারিখ: মঙ্গল, ০৮/০৬/২০১০ - ৩:২১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

২০০২ সালের আজকের এই দিনে, স্বাপ্নিক বুয়েট '৯৯, হারিয়েছিল তাদেরই সহপাঠী কেমিকৌশল বিভাগের ছাত্রী সাবেকুননাহার সনিকে। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মুকির নেতৃত্বে তৎকালীন বুয়েট ছাত্রদলের একদল সন্ত্রাসীর সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এস,এম হলের টগরের নেতৃত্বাধীন একদল সন্ত্রাসীর বন্দুকযুদ্ধে ক্রসফায়ারে পরে মৃত্যুবরণ করে সনি।

সনি হত্যার বিচার এবং প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাস বন্ধের দাবীতে ফুঁসে ওঠে বুয়েটের ছাত্র-ছাত্রীরা। অনেক আন্দোলন, অনেক ঘটনা-দুর্ঘটনার পরও, সনির হত্যাকারীদের সুষ্ঠু বিচার আজও হয়নি- হয়নি একটি দাবীও পূরণ! তবুও আমরা আশায় আছি...

আজ স্মরণ করছি আমার দেখা সেই ঘটনাবহুল দিনটির কথাঃ
----------------------------------------------------------------

সেদিন ছিল শনিবার, অন্য একটা সাধারণ দিনের মতই। আমরা বুয়েট স্বাপ্নিক '৯৯ ছিলাম তখন লেভেল-২, টার্ম-২ তে; প্রস্তুত হচ্ছিলাম লেভেল পূর্তি উৎসবের জন্য। আমাদের লেভেল পূর্তি অনুষ্ঠানের সব আয়োজন তখন সম্পন্নপ্রায়; পরের সপ্তাহেই আমাদের অনুষ্ঠান। এদিকে ফুটবল বিশ্বকাপ শুরু হয়ে যাওয়ায় আমরা বেশ কয়েকদিন ধরে দ্বিধা-দ্বন্দে ভুগছিলাম, কারণ অন্যান্য ব্যাচের মধ্যে বিশ্বকাপের জন্য বুয়েট বন্ধের একটা চেষ্টা চলছিল।

আমি ছিলাম লেভেল পূর্তি উপলক্ষ্যে গঠিত কমিটির একজন কো-অর্ডিনেটর, 'খেলাধূলা' কমিটির প্রধান, ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন কমিটির একজন সদস্য। সেবার আমাদের ইচ্ছা ছিল বুয়েটে মূলধারার মঞ্চনাটকের একটি দলকে নিয়ে আসার; সেজন্যে লোকনাট্যদলের 'কঞ্জুষ' নাটকটি বুয়েটে মঞ্চস্থ করার সব প্রস্তুতিও শেষ। সেদিন দুপুর একটায় অগ্রীম টাকা নিয়ে আমার যাওয়ার কথা ছিল লিয়াকত আলী লাকী ভাইয়ের কাছে। একটু আস্তে ধীরেই বাসা থেকে বুয়েটে রওনা দিলাম...যেতে যেতেই খবর পেলাম বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে বন্ধের দাবীতে বুয়েটের গেট আটকানো হয়েছে এবং ভিসি'র সাথে বাকবিতন্ডা চলছে।

আমি বুয়েটে পৌছঁতে পৌছঁতে মনে হয় সাড়ে ১১টা বেজে যায়, ততক্ষণে বুয়েট অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষণা হয়ে গেছে। আমরা স্বাপ্নিকের সদস্যরা দ্রুত ঠিক করি, বুয়েট খোলার পরই হবে আমাদের লেভেল পূর্তি উৎসব, আর এতে আমরা প্রস্তুতির জন্য আরও সময় পাব। আমি লাকী ভাইকে ফোন করে জানিয়ে দেই আমাদের অনুষ্ঠান পিছিয়ে যাওয়ার কথা।

খুব সম্ভব বেলা একটার দিকে আমি বুয়েট ক্যাফের সামনের পাঁচিলে বসে গুলতানি মারছিলাম, তখনই শুরু হয় গুলির আওয়াজ। এর কিছুদিন আগেই আমাদের সবার চোখের সামনে বুয়েট ক্যাম্পাসের ভিতর খুন হয় ঠিকাদার রাশেদ। তাই সবাই ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে ছুটে যাই ক্যাফের ভিতর, সবাইকে ঢুকিয়ে আমি আর '৯৮ ব্যাচের ইয়ামিন ভাই সব দরজা বন্ধ করে দিই। দরজা একটু ফাঁক করে দেখতে পাই একজন ক্যাফের সামনে লম্বা জামার ভেতর থেকে আগ্নেয়াস্ত্র (খুব সম্ভব কাটা রাইফেল) বের করে গুলি করছে বুয়েটের গেটের দিকে, বিকট আওয়াজে সব ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে ভয় ছড়িয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পর আওয়াজ বন্ধ হয়ে সব একটু শান্ত হয়ে এলেই আমি বের হয়ে আসি, আস্তে আস্তে সবাই-ই বের হয়ে আসে। সবার প্রশ্ন কি হয়েছিল এবং কেন? হঠাৎ আমি এক বন্ধুর ফোন পাই যে আমাদের বুয়েটের একজন ঢাকা মেডিক্যালে মারা গেছে; ক্যাফের সামনে উপস্থিত সবাইকে জানাতেই সবাই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যে জানতে পারি সে আমাদের ব্যাচের কেমিক্যালের একজন ছাত্রী; আমি সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যাই ঢাকা মেডিক্যালে... একটু পর সবাই দলে দলে ছুটে যেতে থাকে ইমারজেন্সীতে।

ইমারজেন্সীতে গিয়েই আমরা বেশ কয়েকজন এবং কেমিকৌশলের সনির সহপাঠীরা সবাই সনির বাবা-মা'কে আনার ব্যবস্থা করি, শায়িত সনির লাশের পাশে আমরা অবস্থান নিই। আমরা দ্রুত ঠিক করি এই লাশ নিয়ে কোন রাজনীতি করতে দেবনা এবং মিডিয়া'কেও আমরা আটকে রাখি। তখন চ্যানেল আই এবং একুশে টিভির দুই'জন রিপোর্টারের সাথে আমাদের বাকবিতন্ডাও হয়। আমরা সবাই তখন শোকে বিহ্বল-চারিদিকে কান্নার রোল; বয়সও কম...কী করব বুঝে পাচ্ছিলাম না! পরে কেমিক্যালের স্যারদের কথায় আমরা তাদের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করি।

সনির পরিবারের সবাই আসলে সেখানে যে ভয়াবহ করুণ দৃশ্যের অবতারণা হয় তা বলার বাইরে; সারা ঢাকা মেডিক্যাল জুড়ে বুয়েটের ছাত্র-ছাত্রীরা কান্নায়-শোকে-দুঃখে অস্থির। এরপর সনি'কে আমরা নিয়ে যাই মর্গে। ইতোমধ্যে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণে সবাই জেনে যায় ছাত্রদলের চিহ্নিত সন্ত্রাসী মুকি, নেসার, সায়েমসহ বুয়েটের কয়েকজন এবং এস,এম হলের টগর গ্রুপ এর জন্য দায়ী। এদিকে মর্গের সামনে আমাদের বুয়েটের বেশ কয়েকজন সনিকে কাটাছেঁড়া না করার দাবী জানায়; তখন কেমিকৌশলের কয়েকজন স্যার এসে সবাইকে বোঝাতে থাকেন। ছাত্রদলের তৎকালীন নেতা 'হাসিব', এসে সেখানে পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা চালায়। কিন্তু সবার বাধার মুখে সে ক্ষান্ত হয়। সবাই অতঃপর সনির পোস্টমর্টেম করতে দিতে রাজী হয়।

এদিকে, বুয়েটে তৎকালীন ভি,সি ও ডি,এস,ডাব্লু স্যার আসেন; ভিসি মিডিয়াতে বক্তব্য দেন যে বুয়েটের বহিরাগত সন্ত্রাসীরা এই কাজ করেছে এবং বুয়েটে কোন সন্ত্রাসী নেই!!! এতে সেখানে উপস্থিত সব ছাত্রছাত্রীরা হতাশায়-ক্ষোভে ভেঙ্গে পড়ে, তারা সব স্যারদের কাছে আবেদন জানাতে থাকে আসল সত্যিটা মিডিয়াতে বলার জন্য!

শেষ বিকালের দিকে সনির পোস্টমর্টেম শেষ হলে, তাকে এম্বুলেন্সে করে তার বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। কেমিকৌশলের বেশিরভাগ সহপাঠীরাই তার বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। এদিকে ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে ক্ষোভ বাড়তে থাকে; তখন সনি'র দুই ক্লাসমেট-আমার দুই বন্ধু
সাবু ও মিথুন, আমরা তিনজন ঠিক করি পরদিন আমরা সনির হত্যার বিচার চেয়ে এবং বুয়েটে সন্ত্রাস বন্ধের দাবীতে সমাবেশ, রালী, ও প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করব। আর কেউ সাহস করুক আর নাই করুক, আমরা তিনজন পরদিন সবার সামনে ঘোষণা করব সন্ত্রাসীদের নাম এবং তাদের বিরুদ্ধে সনি হত্যার বিচার দাবী করব। সেজন্য আমরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বসে পরের দিনের কার্যক্রম ঠিক করি। কেমিকৌশলের পক্ষ থেকে থাকবে সাবু ও মিথুন এবং আমি থাকব ব্যাচের একজন হিসেবে। এবং আমরা সবাইকে মোটিভেট করব এই দাবীতে যোগ দেয়ার জন্য, দরকার হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও। আমরা আরও ঠিক করি বুয়েটের রাজনৈতিক দলগুলোকে এর বাইরে রাখব...বিশেষত ছাত্রদলকে। এরপর সাবু ও মিথুন ঝুঁকি নিয়ে সেদিন রাতে হলে থাকার সিদ্ধান্ত নেয় আর আমি বাড়ি ফিরে যাই।

সেদিন রাতেই সকল ছাত্রছাত্রী ক্ষোভে-দুঃখে মিছিল বের করে ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে। সকল সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা একযোগে সন্ত্রাসীদের রুম ভাংচুর করে ও তাদের বন্দী করে। তখন বুয়েটের ডি,এস,ডাব্লু সহ অন্যান্যরা এসে সন্ত্রাসীদের ছাড়িয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার নাম করে সন্ত্রাসীদের পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়।

পরদিন থেকে শুরু হয় চারমাস ব্যাপী বিশাল আন্দোলন...যে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে...যে আন্দোলন আমাদের সব ছাত্রছাত্রীকে একত্রিত করে শেখায় অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে...যে আন্দোলন আজও আমাদের সাহস যোগায়-শক্তি দেয়...আমরা আজও স্মরণ করি সেই উত্তাল দিনগুলোকে!
------------------------

সনির মৃত্যুবার্ষিকীতে সনির পরিবারের জন্য জানাই সমবেদনা; সনির আত্মার শান্তির জন্য প্রার্থণা করি।

সনি, আমরা আজও তোমাকে ভুলিনি...স্বাপ্নিক '৯৯ এর কেউ কোনদিন ভুলবে না!


মন্তব্য

FZ এর ছবি

ধন্যবাদ শান্তনু। আমাদের আন্দোলনের ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে বিস্তারিত লিখে রাখা দরকার, কারণ সময়ের সাথে সাথে আমাদের স্মৃতিও ফিকে হয়ে আসছে।

স্বপ্নহারা এর ছবি

হ্যাঁ ভাইয়া। আমি ভাবছি শুরু করবো...আমার কাছে সেসময়ের বহু নিদর্শন-ছবি-ভিডিও-লিফলেট আছে। আমারও স্মৃতি ঘোলা হয়ে আসছে...মন খারাপ
-------------------------------------------------------------
স্বপ্ন দিয়ে জীবন গড়া, কেড়ে নিলে যাব মারা!

-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...

অতিথি লেখক এর ছবি

সেই ভয়াবহ দিনের কথা কোনদিন ভুলবোনা! তখন আমি লেভেল-১, টার্ম-১ এ ছিলাম মন খারাপ

সনি আপুর হত্যাকারীদের সুষ্ঠু বিচার হবে- এই আশা করি তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে।

- মুক্ত বিহঙ্গ

স্বপ্নহারা এর ছবি

হ্যাঁ ববি, আসলেই সেই দুঃখের দিনটি যারা দেখেছে... মনে হয়না কেউই ভুলতে পারবে! মূল অপরাধীরা আজও বাইরে...তাদের কোন শাস্তি হলনা, এটা কিছুতেই শান্তি দেয়না!

-------------------------------------------------------------
স্বপ্ন দিয়ে জীবন গড়া, কেড়ে নিলে যাব মারা!

-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...

প্রখর-রোদ্দুর এর ছবি

কোন উপায়ে শোকের ভাষা তাদের দৃষ্টি কাড়বে যাদের হাত ধরে এই সকল অনাকাঙ্খিত ঘটনার বিচার নিহিত -

আর কতো ????????????????????????

তাসনীম এর ছবি

আমি প্রবাসে বসে শুনেছিলাম এই ঘটনা...শোকে বিহ্বল হয়ে গিয়েছিলাম, শেষ পর্যন্ত বুয়েটে!!! আমার প্রাক্তন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে আমার গর্বের শেষ ছিল না। আমরা কোন খুনের বিচার করি না...তাই মনে হয় হত্যাকান্ডও বেড়েই চলছে। অর্থব রাষ্ট্রযন্ত্রের কাছে বিচার চেয়ে মনে হয় লাভ নেই...ইচ্ছে থাকলে শাস্তি দেওয়া যেত দায়ীদের। আজ পর্যন্ত ক্যাম্পাসে সংঘটিত কোন খুনের জন্য কেউ শাস্তি পায়নি, শুধু ক্যাম্পাস বলি কেন, কয়টা বড় অপরাধের শাস্তি দিতে পেরেছে আমাদের দেশ?

এই ঘটনার পরে বুয়েটে মনে হয় বড়সড় ছাত্র আন্দোলন হয়েছিল, ওই সময়ের প্রথম আলোর দুটো স্ন্যাপ শট আছে। আপনি আর্কাইভ তৈরি করলে আমি পাঠিয়ে দিতে পারি।
++++++++++++++
ভাষা হোক উন্মুক্ত

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

স্বপ্নহারা এর ছবি

ধন্যবাদ ভাইয়া। আমার কাছেও আছে...সেসময় প্রথম আলো সবসময়ের মত সুবিধাবাদী ও ব্যালান্স করে রিপোর্টিং করেছে! বেশকিছু নিউজ চ্যানেল ও পত্রিকাতে খবর আটকে দেয়া হয়েছিল!

আসলেই আমাদের গর্বের সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-প্রশাসনের দলবাজি এবং সাহসের অভাব, অপ্রকাশিত শিক্ষক রাজনীতি, সন্ত্রাসী ছাত্রদের সাদরে লালন-পালন কতটা ভয়াবহ হতে পারে তার নির্মম উদাহরণ সনির মৃত্যু!

আন্দোলন সম্পর্কে জানতে চাইলে নিচের লিংকের ভিডিও সিরিজটি দেখতে পারেন...
http://www.youtube.com/watch?v=823xloaVAnY

-------------------------------------------------------------
স্বপ্ন দিয়ে জীবন গড়া, কেড়ে নিলে যাব মারা!

-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...

সালেহীন এর ছবি

লেভেল - ১, টার্ম - ১ এর ছাত্র ছিলাম তখন ... ... ...
শান্তনুদা কে ধন্যবাদ, ফিকে হয়ে যেতে বসা সেই কালো দিনটিকে আবার চোখের সামনে তুলে আনার জন্য।

বইখাতা এর ছবি

সে সময় আমিও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছিলাম। সেদিনটার কথাও মনে আছে। স্তব্ধ হয়ে গেছিলাম, বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আপনাকে ধন্যবাদ সনিকে স্মরণ করে এই লেখাটার জন্য।

অনিকেত এর ছবি

স্বপ্নহারা,
বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যাবার আগেই সনি'র ঘটনাটা তুলে আনার জন্যে তোমাকে অনেক ধন্যবাদ। রাষ্ট্র ভুলে যায়, সমাজ ভুলে যায়। কিন্তু ভোলে না পরিবার। ভোলে না বন্ধুদল।

সনি, তোমাকে আমরা ভুলিনি। ভুলব না।
শ্রদ্ধা

ফারুক হাসান এর ছবি

১.
এগারোটা-সাড়ে এগারোটার দিকে ছুটির আমেজে আডডা দিচ্ছিলাম ক্যামিকেলের সবাই ক্যাফের সামনের পাঁচিলে বসে। সনিও ছিল। হল থেকে আমার গীটারটা এনে সাবু গান গাইছিল। আড্ডা ভেঙ্গে গেলে আমি আর মিথুন তিতুমীরে আমার রুমে গিয়ে একটা সিনেমা দেখতে বসে গেলাম। সম্ভবত, ডিভাইডেড উই ফল। অর্ধেকের মত দেখেছি, এমন সময় থেমে থেমে গুলির শব্দ। দৌড়ে বাইরে এসে চারতলার রেলিংয়ে দাড়িয়ে দেখি রাস্তার ওপাশে বুয়েটের গেটের পাশে দাড়িয়ে অপরিচিত কয়েকজন গুলি করছে। এদেরকে বুয়েটের কেউ বলে মনে হচ্ছিল না, লুঙ্গি পরা একজন হাতে কাটা রাইফেল। মনে হচ্ছিল তাদের টার্গেট তিতুমীরের দোতলা। মাঝখানে একবার থেমে আবার গুলি শুরু হলো। আমি, মিথুন, আলভী, ৯৮ এর শাহনেয়াজ ভাই সহ চারতলার আরো কয়েকজন ছিলাম। কিছুক্ষণ পর দেখি খুনিচক্রের একজন শরীফ চারতলায় এসে লুকাতে চাইছে, পকেটে ভারীমত কিছু একটা। শাহনেয়াজ ভাই বললো তাড়াতাড়ি গিয়ে রুম লক কর, এই ব্যাটা সম্ভবত রুমে লুকাতে চাইছে।

গুলি থেমে গেলে পর আমি আর মিথুন তাড়াতাড়ি নিচে নেমে আসলাম। সাবুকে খুঁজছিলাম, যখন গোলাগুলি চলছিল তখন ও ক্যাম্পাসের ভেতরেই ছিল। হঠাৎ দেখা হলো লিমার সাথে, পাগলের মত বললো, সনির গুলি লেগেছে, ওকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেছে। সনি আমাদের ক্লাশমেট, বিশ্বাসই হচ্ছিল না যে ওর গুলি লাগতে পারে। আমি আর মিথুন রিকশা নিয়ে ছুটলাম হাসপাতালে। এমার্জেন্সিতে গিয়ে দেখি সনি শুয়ে আছে ট্রলির উপর, শান্ত, মনে হচ্ছে ঘুমিয়ে আছে। বুয়েটের কয়েকজন সহপাঠী আগেই পৌছে গেছিল, একজন বলে উঠলো, স্পটডেড। মাথাটা কেমন যেন গুলিয়ে উঠলো, উদ্ভ্রান্তের মত লাগলো। একজন কর্মচারী এসে বললো, ওকে লাশঘরে নিতে হবে, ট্রলি ধরেন। আমি আর মিথুন যেন ঘোরের মধ্যে ট্রলি ঠেলে সনিকে নিয়ে গেলাম লাশঘরে।

ভয়ংকর দুঃস্বপ্নের মত সেই দিনের স্মৃতিগুলো ফিরে আসে বার বার।

২.
সান্তনু তোকে অনেক ধন্যবাদ এই লেখাটা লিখেছিস বলে। এখানেই থামিস না। পরবর্তী আন্দোলন নিয়ে লিখবি অবশ্যই। সেই সময়টা ধরে রাখবি এখানে।

স্বপ্নহারা এর ছবি

দেখি বন্ধু, ইচ্ছা আছে...আসলেই সবার লিখে রাখা দরকার, অনেক টুকরো স্মৃতি ধূসর হয়ে আসছে!

-------------------------------------------------------------
স্বপ্ন দিয়ে জীবন গড়া, কেড়ে নিলে যাব মারা!

-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...

অতিথি লেখক এর ছবি

আজকে কেবলি একটা ব্লগ লিখতে বসবো এমন সময় লেখাটা চোখে পড়লো।
কি যে লিখবো বুঝতে পারছি না। আসলে সবাই কেন যেন সহজে স্বাভাবিক হয়ে যায়। হয়তো বা জীবনের তাগিদে। হয়তো বা সময়ের কারণে। কদিন আগেই সম্রাট মারা গেল। সপ্তাহখানেক পলাশীর মোড়টা খালি অবরুদ্ধ ছিল। এখন আবার প্রায় আগের মত।
সনি আপুর সময় ঘটনার আমি ছোট ছিলাম। পরে ঘটনাটা শুনেছি। সে সময়ের না হলেও এতটুকু বলতে পারি," ভাইয়ারা, আপনাদের কষ্ট বুঝতে পারি।"
খুনিচক্র কেন যে এদেশে সবর্দা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়!
ধন্যবাদ শান্তনু ভাইয়াকে তার এই লেখার জন্য।

পলাশ রঞ্জন সান্যাল

ফাহিম এর ছবি

শ্রদ্ধা
=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;

=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;

অতিথি [অতিথি] এর ছবি

লেখক কে ধন্যবাদ বিষয়টি নিয়ে স্মৃতিচারণ করার জন্য। কিন্তু মুশকিল হলো পড়তে গিয়ে বারবার লেখকের "আমিত্ব"-এর গায়ে হোচট খাচ্ছিলাম। "আমি আর '৯৮ ব্যাচের ইয়ামিন ভাই সব দরজা বন্ধ করে দিই", "আমি সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যাই ঢাকা মেডিক্যালে... একটু পর সবাই দলে দলে ছুটে যেতে থাকে ইমারজেন্সীতে" কিংবা "তখন সনি'র দুই ক্লাসমেট-আমার দুই বন্ধু সাবু ও মিথুন, আমরা তিনজন ঠিক করি পরদিন আমরা সনির হত্যার বিচার চেয়ে এবং বুয়েটে সন্ত্রাস বন্ধের দাবীতে সমাবেশ, রালী, ও প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করব। আর কেউ সাহস করুক আর নাই করুক, আমরা তিনজন পরদিন সবার সামনে ঘোষণা করব সন্ত্রাসীদের নাম এবং তাদের বিরুদ্ধে সনি হত্যার বিচার দাবী করব "---- নিজের বা নিজেদের গ্রুপ সম্পর্কে এই ধরণের ওয়াইল্ড ক্লেইম করলে মনে হয় কেউ বুঝি নিজের বা নিজেদের জাহির করার জন্যই এই স্মৃতিচারণ করছে।

বাস্তবে ঐ আন্দোলনে আরও অনেকেই নানান ভাবে যুক্ত ছিল, অনেকেই অনেক কিছু ভেবেছে, করেছে কিংবা করতে পারেনি। শুধু নিজের বা নিজ-বন্ধু গ্রুপের কথা না বলে, বাকিদের প্রসঙ্গটাও আনলে আমরা বোধ হয় পুরো চিত্রটি ধরতে পারব।

FZ এর ছবি

আমার মনে হয় আপনি লেখকের পরিচয় সম্পর্কে ঠিক ওয়াকিবহাল নন. সনি হত্যার পর সাধারন ছাত্রদের যে আন্দোলন 'সন্ত্রাসবিরোধী বুয়েট ছাত্র ঐক্য'র ব্যানারে হয়েছিল, তার নেতৃত্বে যে তিন জন সাধারন ছাত্র ছিলেন, লেখক তাদেরই একজন. বাকি দুজন হল এই সাবু আর মিথুন. এই আন্দোলন কে খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ আমার হয়েছিল এবং আমি আপনাকে বলতে পারি আন্দোলনকে সংগঠিত করার ক্ষেত্রে এই তিনজনের অবদান অনস্বীকার্য. যেহেতু ব্যক্তিগত স্মৃতিচারন, তাই ব্যক্তির স্মৃতিচারন অপ্রত্যাশিত নয়.কিন্তু আমার মনে হয় না এখানে জাহির করার প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়েছে.

হিমু এর ছবি

বাস্তবে যারা যুক্ত ছিলো, তাদের কেউ কথা বলতে নিষেধও করেনি, মুখও চেপে ধরে রাখেনি। তারা লেখে না কেন? লেখার প্রয়োজন বোধ করে না কেন কোথাও?

এই পোস্টের লেখকের কী দায় পড়েছে বাকি সবার বক্তব্য খুঁজে বের করে বলার?

আপনি যেভাবে "বাস্তব" এর কথা বললেন, নিশ্চয়ই জানেন অনেক কিছু। আপনি একটি পোস্ট দিন সেই নানাভাবে যুক্ত থাকা বাকিদের নিয়ে। পোস্ট লিখে এই লেখকের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিন কীভাবে "বাকিদের প্রসঙ্গ" আনতে হয়।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

স্বপ্নহারা এর ছবি

আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। লেখাটিতে 'আমিত্ব' আপনাকে ধাক্কা দিয়ে থাকলে আমি দুঃখিত। এই লেখাটিতে নিজেকে জাহির করার কোন চেষ্টা মনের অজান্তেও আমার ছিলনা...ছিল সনির কথা সবাইকে মনে করিয়ে দেবার চেষ্টা...সেদিনের কথা সবার স্মৃতিতে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা...এই লেখাটির কারণেই হয়ত আপনার মনে পড়েছে সেদিন আপনি কি করেছিলেন...

৮ বছর আগের ঘটনার কথা লিখেছি, স্মৃতিও ধূসর হয়ে আসছে। আমি সেদিন আমার দেখা এবং করা কাজগুলোই এখানে বলেছি, যেমন উপরে বন্ধু ফারুক বলেছে তার সেদিনকার দেখা ঘটনা...আর সত্যি বলতে আমরা সেদিন শোকে-ক্ষোভে এতটাই বিহ্বল ছিলাম যে কে কোথায় ছিল তার কথা মনে নেই। মিথুন-ফারুকের সাথে ট্রলি নিয়ে আমি যেমন গিয়েছিলাম, তেমনি আরো অনেকেই ছিল...কিন্তু সেগুলো কারোই মনে নেই। আমরা ছিলাম একটি ঘোরের ভেতর, সবার মাঝে শোকের সাথে ছিল ভয়-উৎকণ্ঠা! তখন কেউ কেউ সন্ত্রাসীদের নাম মুখে নিতে পর্যন্ত ভয় পাচ্ছিল ...অনেকেই অনেক কিছু ভাবেন-করেন কিন্তু কাজের কাজ কয়েকজনই করতে পারেন। সেই কাজের কাজগুলো আমরা তিনজন করতে চাইছিলাম...অন্যেরা কি ভাবছে-করছে তা চিন্তা না করে আমাদের কি করণীয় তা-ই আমরা ভেবেছি। আর আমার স্মৃতিচারণে আমার কথাতো থাকবেই...তাই না? গুলি শুরু হওয়ার পর সেদিন ক্যাফেতে কি অবস্থা ছিল তা সেখানে যারা ছিলেন তারা জানেন...ইয়ামিন ভাই ও জিয়া ভাই ছিলেন..আরো অনেকেই ছিলেন (আজ মনে নেই)।।.কিন্তু সব দরজা-জানালা বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত আমরা দুই-তিনজনই নিয়েছিলাম, এবং অনেকেই সেখানে কি করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না...

যারা আন্দোলনের সাথে কোনভাবে যুক্ত ছিলেন, তারা আমাদের তিনজনকে কখনোই উপেক্ষা করবেন না...তা ব্যক্তিগত সম্পর্ক যা-ই হোক না কেন। নিজের কথা বাদ দিয়ে বলছি, সেদিন সাবু-মিথুন আমার কাছে এসে পরদিনের করণীয় সম্পর্কে না বললে- বুয়েটের ইতিহাসে ন্যায়ের পক্ষে এত বড় আন্দোলন কখনোই হতনা-যে আন্দোলনের সূচনা আমাদের তিনজনের সেদিনের সেই মিলিত সিদ্ধান্ত থেকেই! যে আন্দোলন কারো স্বার্থের জন্য নয়, পরীক্ষা পেছানোর জন্য নয়, বিশ্বকাপের বন্ধের জন্য নয়, নয় কোন রাজনৈতিক দলের জন্য, নয় কোন একাডেমিক কারণে...সেটা ছিল নিঃস্বার্থ, ন্যায়ের জন্য, বিবেকের দায়ের জন্য, বিচারের জন্য...যে আন্দোলন বুয়েটের ছেলেমেয়েদের পথে নামিয়েছে, খোলা আকাশের নিচে কঙ্ক্রীটের মেঝেতে ঘুমাতে শিখিয়েছে, না খেয়ে দিনের পর দিন কাটাতে শিখিয়েছে, ছেলেমেয়েরা নিজের স্বার্থ ভুলে প্রতিবাদ করেছে, বুয়েটের যে মেয়েরা কোনদিন হয়ত বাসায় বকাও খায়নি-তারাই পুলিশের মার খেয়েছে-টিয়ার গ্যাসের ঝাঁঝ সহ্য করেছে, পথে পথে হাত পেতেছে...কেউ নিজের জন্য কিছুই করেনি...করেছে মানুষের জন্য...অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের জন্য...বুয়েটের ছেলেমেয়েরা যে মেশিন না-মানুষ সেটা প্রমাণ করিয়েছে।

অনুগ্রহ করে মনে রাখবেন, এই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী কাউকে সেইসময় নিয়ে আঘাত করা মানে সবাইকে আঘাত করা...উপরের দুটা জবাব থেকে তা নিশ্চয়ই বুঝেছেন! আমার আমিত্বকে আঘাত করুন অসুবিধা নেই, কিন্তু সাবু-মিথুনকে আমার শুধু বন্ধুগ্রুপে ফেলে দেয়াটা খুবই অনুচিত হয়েছে! আমি না থাকলে হয়ত ব্যাচের পক্ষ থেকে অন্য কেউ সাহস করে এগিয়ে আসত...কিন্তু সাবু-মিথুন না থাকলে হলে রাতের সেই ঘটনা আর পরদিনের রালির পরই হয়ত সব থেমে যেত!

জাহির করা নয়...সত্যিটা মিনিমাল লেভেলে প্রকাশ করলে যা দাঁড়ায় এটা হল তাই...বাকিটা না-হয় বাদই দিলাম!

-------------------------------------------------------------
স্বপ্ন দিয়ে জীবন গড়া, কেড়ে নিলে যাব মারা!

-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...

অতিথি লেখক এর ছবি

শ্রদ্ধা

তিথীডোর এর ছবি

শ্রদ্ধা

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

সনি আপুকে বুয়েটের সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা আজও স্মরণ করে...

_________________________________________

সেরিওজা

অতিথি লেখক এর ছবি

সনি আপুর ঐ ঘটনাটির সময় আমি ছোট ছিলাম, তাও মনে আছে, পেপারে পড়েছিলাম...মা-পাপা খুব কষ্ট পেয়েছিলো খবরটা পড়ে...এখনো বলে ঘটনাটির কথা...আমি ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়ি, প্রায় প্রতিদিনই বাসা থেকে বের হওয়ার সময় হাসি মুখে বিদায় দেয়ার বদলে মা আমাকে বারবার বলে- মারামারি-গোলাগুলি থেকে দূরে থাকবি...এমনকি ফোনেও বলতে থাকে... অবস্থাটা প্রায় এমন দাঁড়িয়েছে যেন আমি যমের কাছে যাচ্ছি পড়তে, মত বদলে পড়ানো ছেড়ে সে আমাকে যে কোনো সময় মেরে ফেলতে পারে...

শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ গুলো কেনো যে দিনকে দিন যমের বাড়ি হয়ে যাচ্ছে... ...

দুঃখিত...অনেক অগোছালো মন্তব্য করে ফেললাম মনে হয়...
সনি আপুর জন্যে দোয়া ছাড়া আমার কিবা করার আছে...

''চৈত্রী''

স্বপ্নহারা এর ছবি

ঠিকই বলেছেন...মানুষ আগে ভাবত ছেলেমেয়ে পড়তে যাচ্ছে...এখন বাসায় না ফেরা পর্যন্ত শান্তি নেই। বুয়েটে এরকম ঘটনা ঘটবে তা কেউ কোনদিন ভাবেনি!

-------------------------------------------------------------
স্বপ্ন দিয়ে জীবন গড়া, কেড়ে নিলে যাব মারা!

-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...

রায়হান আবীর এর ছবি

আউল্লাহর সামনের রাস্তায় বসলেই চোখ পড়ে সাবেকুননাহার সনি'র জন্য বানানো স্মৃতিস্তম্ভের দিকে। সেখানে লেখা কবিতাটা পড়ি আর কষ্ট হয় ...

মোঘল [অতিথি] এর ছবি

একটা কথা না বলে পারছি না।আমরা আসলে অকৃতজ্ঞ।সনি’র সহপাঠীদের অনেক কিছু’ই করার ছিল, কিন্তু তারা কি করেছে আজ পর্যন্ত? একটা সৃতিস্তম্ভ আর ৮ই জুনের প্রাক্কালে কিছু লেখাজোখা। আমরা বুয়েটের ছাত্ররা অনেক কিছুই ভাবি, কিন্তু বাস্তবায়ন হয় না। বুয়েটে থাকাকালীন কথা বলতে ভয় পাই, যদি কোনো স্যার চিনে ফেলে, তথাকথিত “বাশঁ” দেয় স্যারেরা। যারা আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিল, ঐ সময় তাদের সাহসী ভূমিকার জন্য ধন্যবাদ জানাই।৯৯ ব্যাচ এর ছাত্ররা ঐ ঘটনার পর আর ৩ বছর বুয়েটে ছিল। কেমিকৌশল এর সনি’র সহপাঠীরাই বা কি করেছে? কেমিকৌশল এর সনি’র সহপাঠীরা তার সৃতিরক্ষায় কেমিক্যাল লাইব্রেরীতে কিছু বই ডোনেট করার সিদ্ধান্ত নেয়। ঐ পর্যন্ত ই, বাস্তবায়ন হয়নি। আমরা কি এখনো কিছু করতে পারি না?

স্বপ্নহারা এর ছবি

আপনি কে বা কী আমি জানিনা, তবে আপনার কথাগুলো কতটা অজ্ঞতাপ্রসূত এবং কতটা অপমানজনক তা বোঝার সাধ্য খুব সম্ভব আপনার নেই!

সনি'র সহপাঠীরা কী করেনি? সরকারের রক্তচক্ষুর ভয়ে যখন সনির পরিবারও পিছিয়ে গিয়েছিল, তখন এই সহপাঠীরাই সব কিছুর ভয় (শুধু ক্যারিয়ার নয়...মনে হল আপনি ক্যারিয়ার নিয়ে বেশি চিন্তিত!), মৃত্যুর হুমকি, সারাজীবন জেলে থাকার হুমকি...সব কিছু উপেক্ষা করে সনি হত্যার বিচার চেয়েছে, খুনিদের ছাত্রত্ব বাতিল করার দাবী করেছে, ছাত্রী হলের নাম সনির নামে হোক এই দাবী জানিয়েছে। '৯৯ এবং '৯৮ ব্যাচের প্রায় সকলেই এতে শামিল ছিল, আর কেমিকৌশলের সবাই তো ছিলই। আর স্মৃতিস্তম্ভ? সেটা আমাদের দাবীগুলোর মধ্যে সবার নিচে ছিল, বুয়েট কর্তৃপক্ষ তার পাপমোচনের জন্য এতটুকুই করেছে...

আপনি দুনিয়ার কারজন্য কতটুকু কী করেছেন বা করছেন জানিনা, কিন্তু সে আন্দোলনকারীরা তাদের জীবনের সবটুকু সেসময় নিঃস্বার্থভাবে দিয়েছে...সরকারের বিরুদ্ধে সে যুদ্ধ কতটা ভয়াবহ ছিল, তা আপনার তিলমাত্র ধারণা নেই বলেই এমন কথা আপনি বলতে পেরেছেন। '৯৮-'৯৯ ব্যাচের কত ছাত্রছাত্রী বুয়েট থেকে -সন্ত্রাসীদের থেকে কী পরিমাণ হুমকি পেয়েছে...তাদের পরিবারের উপর দিয়ে কী গিয়েছে সেটা শুধু তারাই জানে। '৯৯ ব্যাচ যতদিন বুয়েটে ছিল, ততদিন সেখানে কেউ অন্যায় করতেও ভয় পেত...তা সে ছাত্রনেতাই হোক আর শিক্ষক! কারণ সবাই জানত, এই ব্যাচ প্রতিবাদ করতে জানে...আপনার ওই তথাকথিত বাঁশের ভয় সেদিনের পর থেকে '৯৮-'৯৯ ব্যাচের কেউ কোনদিন করেনি, তা সে ক্লাসের ১ম জনই হোক বা শেষ জন।

সনির স্মৃতিরক্ষায় কী কী করা যায়? হ্যাঁ, অনেক কিছুই করা যায়। আমরা আমাদের সাধ্যের অতিরিক্ত করেছি...দায়িত্ব ছিল পরের ব্যাচগুলোর...আপনি শুরু করুননা...দেখান না কি করতে পারেন?
৮ই জুনের প্রাক্কালে কিছু লেখাঝোঁকা? এটা আপনাদের বিবেক জাগানোর জন্য... সেসময়ের বুয়েটের ছাত্র-ছাত্রীরা কেউ সেই দিনগুলো কখনো ভুলেনি-ভুলবেও না!

-------------------------------------------------------------
স্বপ্ন দিয়ে জীবন গড়া, কেড়ে নিলে যাব মারা!

-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...

ফারুক হাসান এর ছবি

মোঘল সাহেব, যেহেতু আপনি পরের কমেন্টে বলেছেন যে আপনি সে সেময় বুয়েটে ছিলেন, তাহলে সব দায়দায়িত্ব কেবলমাত্র সনি'র সহপাঠীর ঘাড়ে চাপাচ্ছেন কেন? আপনি নিজে কি করেছেন একটু খোলাসা করে বলেন যাতে সনি'র যারা সহপাঠী তারা বুঝতে পারি আমরা কি করতে পারতাম। আদতে, আপনার মত মোঘলরাই বুয়েটে থাকাকালীন সময়ে কথা বলতে ভয় পায়, আবার এত বছর পরে এসেও প্রশ্ন তোলে। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে, আপনি কীভাবে সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্র ঐক্যের মূল শক্তি সনি'র সহপাঠীদের অবদানকে নাকচ করে ফেললেন। হয়তো আন্দোলনে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারেন নি (কারণ সম্পৃক্ত থাকলে উপরে যে কথাগুলো বলেছেন সেগুলো বলতেন না), তাই বলে একে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেবার অধিকার আপনাকে কে দিল? আর দয়া করে এই ফালতু যুক্তি দেবেন না যে, যারা সনি'র সহপাঠী ছিল না তাদের দায়দায়িত্ব কম। আপনি কি জানেন আমরণ অনশনে কতজন সনি'র সহপাঠী না হয়েও অংশ নিয়েছিল?

সনি’র সহপাঠীদের অনেক কিছু’ই করার ছিল - এরকম আধ্যাত্মিক অভিযোগ যখন আনলেনই তখন একটু আমাদের হেদায়েত দান করেন, বলে দ্যান সেই অনেক কিছু জিনিসটা কী বস্তু যা সনি'র সহপাঠীরা করে নাই? বুয়েটের ইতিহাসে সাধারণ ছাত্রদের সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসবিরোধী আন্দোলনের সূত্রপাত এবং নেতৃত্ব দেয়া কি আপনার অনেক কিছুর রাডারে পড়ে না? অবশ্য যেহেতু আপনি সনি'র সহপাঠী নন, সুতরাং আপনার জানার কথাও নয় যে সনি'র মৃত্যুর দিন থেকে তার সহপাঠীদের অনেকের জীবনই অন্যরকম হয়ে গিয়েছে সারা জীবনের জন্য। আপনার জানার কথা নয়, সাবু ও মিথুন নামে সনি'র যে দুই ক্লাশমেট পুরোটা আন্দোলনে সবার সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে তাদের জীবনের উপর দিয়ে কতটা ঝড় বয়ে গেছে। আপনার জানার কথা নয়, কতটা ঝুঁকি আর সাহস নিয়ে সনি'র সহপাঠী সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা সরকারী গোয়েন্দা, বুয়েট প্রশাসন, ছাত্রদলের সন্ত্রাসী, ক্যাডারবাহিনী আর খুনিচক্রের হুমকি, স্বার্থান্বেষী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কুটকৌশলকে মোকাবেলা করেছে। আপনার জানার কথা নয়, কারণ আপনি ওদের মত জীবন বাজি রেখে কোন আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন নি, আন্দোলনকারী ছাত্রদের বহিষ্কারের প্রতিবাদে আপনি কখনো আমরণ অনশণ করেন নি, পুলিশের টিয়ারগ্যাস আর লাঠির সামনে দাড়ান নি। আপনার জানার কথা নয়, কেবলমাত্র সনি'র সহপাঠী হবার কারণে কতজনকে হলে, হলের বাইরে আন্দোলনের ছয়টি মাস কতটা দুর্বিষহভাবে কাটাতে হয়েছে, কারণ আপনি তখন বাড়িতে বসে সনি'র সহপাঠীদেরকে দোষারোপ করছেন বুয়েট বন্ধ হবার জন্য, আপনার পাশ করতে আরো ছয়মাস দেরি হয়েছে এজন্য হয়ত এত বছর পরও সেই ক্ষোভ মেটেনি, তাই এখনও আঙ্গুল তুলছেন।

আপনার জন্য করুণা হচ্ছে, সমসাময়িক থেকেও আপনি আসল ইতিহাসটা জানেন না। বাইরে থেকে যা দেখছেন, ঐ স্মৃতিস্তম্ভ আর লাইব্রেরির বই - সেগুলো নিয়ে এসেছেন রেফারেন্স হিসেবে (আসল ব্যাপার হচ্ছে, সন্ত্রাসবিরোধী আন্দোলনের যে কয়টি মূল দাবি ছিল তার মধ্যে এগুলো পরেই না)। বুয়েট প্রশাসন এই দিক থেকে সফল, ক্যাম্পাস থেকে সন্ত্রাস নির্মূলে নিজেদের ভূমিকা এড়াতে, সনি'র হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নিতে আর আন্দোলনকারী ছাত্রদের উপর অত্যাচার আর তাদের বহিষ্কারের ঘটনাকে চাপা দিতে, ছাত্রী হলের নাম যেন সাবেকুন নাহার সনি হল না হয় সেটা পোক্ত করতে আই ওয়াশ হিসেবে দাড় করিয়েছে এই স্মৃতিস্তম্ভ। আর তার তলায় দাড়িয়ে মোঘলের মত ভাড়েরা আজকে প্রশ্ন তুলছে, কি করেছে সনি'র সহপাঠীরা।

মোঘল [অতিথি] এর ছবি

আপনি হয়তো আমার বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করেছেন। ঐ ঘটনা বা তার অব্যাবহিত পরের ঘটনাবলীর আমি ও একজন সাক্ষী। ঘটনার সময় আমি আহসানউললার গেটে দাড়ানো ছিলাম। গুলিটা আমার দিকে ও আসতে পারত।
আপনি যদি ভেবে থাকেন যে আমি অজ্ঞতাপ্রসূত কিছু বলেছি বা অপমান করেছি তাহলে হয়তো একটু ভুল করবেন। আমি কোনোভাবেই আপনার কথার বিরুদ্ধে না। আন্দোলনকারীরা তাদের জীবনের সবটুকু সেসময় নিঃস্বার্থভাবে দিয়েছে...আমি ও সহমত। কিন্তু, আমাদের সব দাবী কি কতৃপক্ষ মেনে নিয়েছিল? চার মাস পর সবাই সব ভুলে গেল।আমরা সেই শোক কে শক্তিতে রুপ দিতে পারিনি।আপনি যদি মনে করে থাকেন ঐ চার মাস ই সব, তাহলে ভিন্ন কথা। সনি’র মৃত্যুর দুই বছরের মাথায় মিলাদ মাহফিল এ যাওয়ার লোক হয়নি। গ্রুপিং এর কারনে কোনো উদ্যোগ ই বাস্তবায়ন হয়নি। আজ না হয় আপনি স্মৃতিচারণ লিখছেন, আপনাকে ধন্যবাদ।
“৮ই জুনের প্রাক্কালে কিছু লেখাঝোঁকা? এটা আপনাদের বিবেক জাগানোর জন্য...” আমি যদি নিজেকে প্রশ্ন করি, আমাদের প্রাপ্তি কি? উত্তর পাই না। আপনি ও নিজেকে করুন (তবে ঐ চার মাসের জ্ঞান দিবেন না, প্লিজ)।
“৯৯ ব্যাচ যতদিন বুয়েটে ছিল, ততদিন সেখানে কেউ অন্যায় করতেও ভয় পেত...তা সে ছাত্রনেতাই হোক আর শিক্ষক”। এইভাবে ঢালাও উক্তি না করাই ভালো। যদিও ভালো মন্দ আপনার বিচার।
আমি আপনার সাথে একমত অনেক বাপারেই, কিছু কিছু বাপারে মতান্তর রয়েছে। আপনার সহপাঠীর জন্য কিছু করার দায়িত্ব আপনার ই সবার আগে। তবে সেটা অবশ্যই আপনার সাধ্যের বাইরে নয়। “দায়িত্ব ছিল পরের ব্যাচগুলোর” কথাটি একটু পরে আসে।

স্বপ্নহারা এর ছবি

দুঃখিত, আমরা যখন নিজেদের প্রশ্ন করি আমাদের প্রাপ্তি কী? উত্তর পাই অনেক কিছু...প্রতিবাদের সাহস, জীবনে একবারের জন্যও ন্যায়ের পক্ষে কিছু করার চেষ্টা করা, আর সবচেয়ে বড় যেটা...সকলের unity! দাবী পূরণ করার জন্য আমাদের এরচেয়ে বেশিকিছু করা সম্ভব ছিল বলে মনে হয়? দুঃখিত, আমরা কেউই তা মনে করিনা। আর আপনার মত জীবনের প্রতিটা কাজের লাভক্ষতি নিয়ে চিন্তা করলে নিশ্চিতভাবেই নিঃস্বার্থ একটা আন্দোলন গড়ে ওঠেনা, দুনিয়াতে তাহলে কোন মহান কাজই সম্ভব হয়না!...আপনি কিছু না পেয়ে থাকতে পারেন, আমরা পেয়েছি অনেককিছুই। দাবী মানা না মানা আমাদের হাতে ছিলনা...হয়ত সেজন্য আরো বড় সশস্ত্র বিপ্লব দরকার ছিল...দুঃখিত আমরা সে পথে যেতে পারিনি, আমরা চাইওনি...সেকারণেই এত বড় একটা আন্দোলনে আন্দোলনকারীদের হাতে বুয়েটের একবিন্দু সম্পদহানি-ভাংচুর (টেলিফোন লাইন কাটা ছাড়া) হয়নি!

আপনি ভুল করছেন, ৪ মাস ছিল আন্দোলনের প্রকাশ্য স্থায়িত্বকাল...এরপরের ঘটনা যেহেতু আপনি জানেন না, তাই আপনি আন্দোলনের প্রথম দিকে থাকা কেউ নন...এটা পরিষ্কার! শোক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়েছে বলেই এতকিছু ঘটেছিল। দুই বছরের মাথায় গ্রুপিং-এর কথা আমি জানিনা, কিভাবে সেটা হল তাও জানিনা...আমি নিজে কখনই সনির বাসায় যাইনি বা তার পরিবারের সাথে খুব একটা তবে পরবর্তী দুই বছর আমরা কী করেছি তা আমি জানি...সেটা অবশ্য আপনি জানেন না! দূর থেকে অন্ধের হাতি দর্শন না করাই বোধহয় ভাল...

ঢালাও উক্তি? দুঃখিত, এটা আমার কথা নয়...যাদের ভয়ে আপনি-আপনারা কাপুরুষ হয়ে থাকেন, এটা তাদেরই একজনের উক্তি...স্যারের নামটা সঙ্গত কারণেই উহ্য রাখছি। উক্তিটা অনেক বেশিই ক্লেইম করে...তবে এটাও সত্যি যে আসলেই আমরা প্রতিবাদ করতে শিখে গিয়েছিলাম!

সহপাঠীর জন্য কতটা করা হলে আপনার যথেষ্ট মনে হয় যখন সহপাঠীর পরিবারই ভয়ে ভীত হয়ে সেটা আর না চায়? আমি আবারও বলছি, আন্দোলনকারীরা সাধ্যের অনেক অনেক বেশিই চেষ্টা করেছে...আর যা করা যেত তা আপনি-আপনারা করে দেখান...সহপাঠীরা নিরূপায়..আর কিছু করা হবেনা সেটাও ঠিক নয়....বিপ্লবী'রও বিশ্রাম দরকার হয়! পিরিয়ড।
-------------------------------------------------------------
স্বপ্ন দিয়ে জীবন গড়া, কেড়ে নিলে যাব মারা!

-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...

মোশাররফ হোসেন ... এর ছবি

লেখক ও সাবু, মিথুন আন্দোলনের সক্রিয় নেতা ছিলেন। আন্দোলনে যুক্ত কারো কারো শাস্তিভোগ করতে হয়েছিল। আর পেছনে থেকে ছাত্র ফ্রন্ট যে ভুমিকা রেখেছিল তা লেখক ভুলে জাওয়ার কথা নয়।
সাম্প্রতিক ঘটনায় ছাত্র ফ্রন্ট থাকলেও সাধারণ ছাত্ররা সাহস দেখাতে পারছেনা।

স্বপ্নহারা এর ছবি

মোশাররফ ভাই, একটা সিরিজ লেখার ইচ্ছা ছিল। সময়ের অভাবে হচ্ছে না। এই পর্বে শুধু আমার কথাই আছে, কারণ তখনো ছাত্রফ্রন্টের সাথে ততটা চেনাজানা ছিলনা। পরের পর্বে ডিটেইলস লেখার ইচ্ছা আছে। ভুল বোঝাবুঝির জন্য ক্ষমা করবেন প্লিজ।

-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...

Md. Asadullah এর ছবি

Asole jara ghotona krome ei rokom Ahsanullah Hall er Gate a dariye ghotona dekhesilo...kintu pore r Sokriyo Andolone jog dite pare nai(kano tader bibek e jane?) tara ekhon nana kothai bolte pare.....R oi somoy Mithun vhai, sabu vhai r shantonu vhai ra jevabe agiye assilen ta sokolei dekhese......sokolei jane........

Asad_ChE_00

guest_writer এর ছবি

আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। সেদিনের ঘটনা আমাদের মাঝেও ভীষণ নাড়া দিয়েছিলো। আন্দোলনে শরিক হতে পারিনি কারণ হল থেকে আমাদের উপর প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিলো। অবাক লাগে যখন দেখি সেই সকল ঘাতকগুলো বুকচিতিয়ে ঘুরে বেড়ায় সকলের সামনে আর আমরা ওদের দেখে মুখ লুকাই বিবেক যন্ত্রণায়।
ঠিক এইরকম আরেকটা ঘটনা দেখেছিলাম ১৯৯৯ সালে। তখন আমি ঢাকা কলেজে পড়ি। একদিন বিকেল বেলা হৈচৈ-এর শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায়। বারান্দায় বের হয়ে এসে দেখি ছাত্রলীগের দুগ্র“পে মারামারি লেগেছে। ভয়ংকর সব অস্ত্র নিয়ে ওরা ক্যাম্পসের এক মাথা থেকে আরেক মাথা চষে বেড়াচ্ছে। হঠাৎ করে গোলাগুলি শুরু হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরে দেখলাম সেসময়ের ঢাকা কলেজের ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্টকে পরপর তিনটা গুলি করা হলো। লোকটা কেমন যেন একটু কেপে উঠে একেবারে স্থির হয়ে গেলো। ঘন্টা দুয়েক পরে গেটে গেটে পুলিশ পাহাড়া বসানো হলো খুনিকে ধরতে। আর পরের দিন সকালে দেখলাম সেই খুনিকে কলেজে ঢুকতে।
ভীষণ রকম বিবেক যন্ত্রণায় কেটেছে আমার প্রায় ১ টা বছর। এতটুকু প্রতিবাদ করতে না পারার অপরাধে। প্রায় বছর খানেক পরে শুনতে পাই অস্ত্র ব্যবসায় ঝামেলার কারণে প্রতিপক্ষের হাতে নির্মমভাবে খুন হয়েছে খুনি সুজন।
খবরটা শোনার পরে মনটা আমার সেদিন ভীষণ রকম শান্ত হয়েছিলো। মুখ দিয়ে দুচারটা গালিও বের হয়েছিলো। কিন্তু অবাক লেগেছিলো খুনের সাথে জড়িত অন্য লোকগুলোর কিছুই হয়নি।

অর্ক রায় চৌধুরী

উদ্ভ্রান্ত পথিক এর ছবি

ভাই, এরপর ছাত্রদের অনশনের ঘটনাগুলে একটু লেখে রাখেন। সবার জানা দরকার তখন কোন কোন সমিতি কিরকম সাপোর্ট দিছিলো ছাত্রদের।

---------------------
আমার ফ্লিকার

পলক এর ছবি

" নিজের কথা বাদ দিয়ে বলছি, সেদিন সাবু-মিথুন আমার কাছে এসে পরদিনের করণীয় সম্পর্কে না বললে- বুয়েটের ইতিহাসে ন্যায়ের পক্ষে এত বড় আন্দোলন কখনোই হতনা-যে আন্দোলনের সূচনা আমাদের তিনজনের সেদিনের সেই মিলিত সিদ্ধান্ত থেকেই!"

লেখা টা পড়ে অনেক দিন পর মনে হল তুই আবদুল গাফফার চৌধুরীর যোগ্য উত্তরসূরি হতে পারবি।

স্বপ্নহারা এর ছবি

সাবু-মিথুনের অবদানকে ছোট করাটা ঠিক হবে না। কাউকে বড় করার জন্য কাউকে ছোট করারও দরকার নেই। এর পরের ঘটনাপ্রবাহ ভিন্নদিকে চলে যায়- যেটা নিয়ে পরের পর্বে লেখার ইচ্ছা আছে। একটু অপেক্ষা কর। কমেন্টের কথাটা একটু মাথা গরম করে লেখা। স্যরি!

-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...

angel এর ছবি

বুয়েটে রাজনৈতিক দলের চ্যালামিবন্ধ না হলে এই পরিস্থিতি বারবার ফিরে আসবে।
যে কোন মুল্যে রাজনৈতিক দলের চ্যালামি বন্ধ করতে হবে।

এ ব্যাপারে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।

শিশিরকণা এর ছবি

গোলাগুলির পুরো ঘটনা টা ই এম ই র মহিলা কমন রুমের জানালা দিয়ে দেখা। ছাত্রী হলের গেটে সনি আপুর লেখা কবিতার টুকরো অংশটা প্রতিবার মন খারাপ করিয়ে দিত।
"

এই আমি খুব ছেলেমানুষ
এই আমি কিছুটা বাস্তব
এই আমি খুব একা

"
খালি মনে হতো কবরের মত বাধানো ঐ স্মৃতিস্তম্ভের আড়ালে উনি ক্যাম্পাসের প্রাণবন্ত জীবনকে খুব মিস করছেন।

ঘোড়ার ডিমের ছাত্রী হলের তো কোন নামও নাই। সনি আপুর নামে হলের নামকরণ করলে কার কি সমস্যা , এটা কিছুতেই মাথায় আসে না।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

স্বপ্নহারা এর ছবি

সনি আপুর নামে হলের নামকরণ করলে কার কি সমস্যা , এটা কিছুতেই মাথায় আসে না।

-

এটা নিয়ে বুয়েটের কর্তৃপক্ষের সাথে (শিক্ষক) দুইরাতব্যাপী আলোচনা হয়েছিল- উনাদের যুক্তি ছিল, সাম্নের বছর আরেকজন মারা গেলে তার নামে তোমরা আরেকটা ছাত্রী হল দাবী করবে- যতজন মরবে তত হল দাবী করবে তোমরা!!! অবিশ্বাস্য হলেও এটা ছিল উনাদের যুক্তি।

-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।