১৪ দিনে ভারতের নাগাল্যান্ডে খুন করা হয়েছে ১ লক্ষ ৪০ হাজার শিকারি পাখি !!!

তারেক অণু এর ছবি
লিখেছেন তারেক অণু (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৯/১১/২০১২ - ১:৩৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

01-amur-falcon-stuck-net_61194_600x450

সকালের ঘুম ভাঙ্গার পরপরই অভ্যাসবসত ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির ওয়েব পেজ খুলতেই চমকে উঠলাম, মনটা বেজায় খারাপ হয়ে গেল। এমন এক খবর যা সারা বিশ্বের কাছে অজানা ছিল এত দিন। উত্তর-পূর্ব ভারতের নাগাল্যান্ড রাজ্যে রীতিমত মোচ্ছব করে প্রতি শরতে মারা হয় এক লক্ষ বিশ হাজার থেকে এক লক্ষ চল্লিশ হাজার আমুর শাহিন, Amur Falcon, Falco amurensis। প্রথম কথা হচ্ছে এই শিকারি পাখি যে কেউ খায় তা জানা ছিল না, ভুমধ্যসাগরের দ্বীপ দেশ মাল্টাতে এমন ভাবে উৎসব করে প্রতি বছর শিকারি পাখি মারা হয় কোন কারণ ছাড়াই ( অনেকে অভিযোগ করেছে এই শিকারি পাখিরা নাকি তাদের ক্ষেতের আলু খায়! মাংসাশী পাখি আলু খায়??? ) । অক্টোবর মাসে পরিযায়ী আমুর শাহিন সাইবেরিয়া থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার দিকে যাত্রার সময় যখন এই অঞ্চল দিয়ে উড়ে যায় তখনই শিকারিরা মেতে ওঠে এই নিধনযজ্ঞে। প্রতি বছর পরিযানের সময় এরা ২২,০০০ কিলোমিটার অতিক্রম করে।

03-migrating-amurs-falcons-on-wires_61196_600x450

তারা সাধারণত এই এলাকা দিয়ে যাবার সময় খাবার হিসেবে স্থানীয় পোকাদের গ্রহণ করে, বৈদ্যুতিক তার বা বনের গাছে বিশ্রাম নেয় , ভোরে যাত্রা শুরু করে আবার, এবং তখন তার মৃত্যুর কবলে পড়ে।

04-amur-nets-hanging_61197_600x450

উপরের ছবির মত শিকারির দল নানা জায়গায় জাল পেতে রাখে, পাখিরা সোজাসুজি জালে আটকা পড়ে।

তারপর তাদের পাখা ভেঙ্গে বা মুচড়ে একসাথে রাখা হয়, পরে ৩ থেকে ৬ মাইল দূরের শহরের নিয়ে যাওয়া হয়। এই যাত্রার সময়ই ক্লান্ত, আহত পাখীগুলোর প্রায় সবাইই মারা যায়।

02-amurs-in-mosquito-nets_61195_600x450

মারা যাওয়ার পর পাখিগুলোকে বাড়ী বাড়ী নিয়ে যেয়ে বিক্রি করা হয়, সাধারণত দুই ডলারের কমেই চার থেকে পাঁচটি পাখি মিলে। এগুলো ধোঁয়া দিয়ে বিশেষ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করা হয়। কিন্তু গ্রামের জনগণ এত পাখি কোথায় বিক্রি করে তা আজ পর্যন্ত জানা যায় নি। বিশাল ট্রাক এসে হাজার হাজার পাখি নিয়ে যায়, কিন্তু কোথায়, সে এখনো এক রহস্য!

05-hunters-with-amurs-on-poles_61198_600x450

আইন অনুযায়ী আমুর শাহিন ভারতে একটি সংরক্ষিত প্রজাতি, পরিযানের সময় নিরাপদেই এর ভারতের উপর দিয়ে উড়ে যাবার কথা, কিন্তু এই ছোট একটি ক্যাম্পেই দেখা হচ্ছে আইনের কী অবস্থা!

07-amur-falcon-camp_61200_600x450

শিকারি পাখি আমুর শাহিনের অস্তিত্ব এখনো হুমকির মুখে নয়, কিন্তু এইভাবে শিকার চলতে থাকলে যে খুব শীঘ্রই তাকে আর পৃথিবীতে দেখা যাবে না সেটা নিশ্চিত।

08-smoked-amurs-falcons_61201_600x450

কিন্তু সামান্য হলেও আশার কথা হচ্ছে এই শরতে আমুর শাহিনের শিকার ব্যাপারটি উদঘাটিত হবার পরপরই তাদের শিকারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে বিশেষ ডিক্রি জারি করা হয়েছে। নাগাল্যান্ডের স্থানীয় জনগণের সাথে প্রকৃতিকর্মীরা কথা বলে বোঝাচ্ছেন যে আমুর শাহিন শুধু ভারতের সম্পদ নয়, বিশ্ব সম্পদ। এটিকে হত্যা করা যাবে না। নানা গোত্রের সর্দারের সাথে কথা বলে এখন পর্যন্ত ইতিবাচক সাড়া মিলেছে। আশা করা যায় যেহেতু একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটে থাকে, তাই এটিকে ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

09-boy-selling-amurs-falcons_61202_600x450

( ছবিসহ উপরের তথ্যগুলো ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির ওয়েব পেজ থেকে নেওয়া হয়েছে)

বাংলা নাম- আমুর শাহিন

ইংরেজি নাম- Amur Falcon

বৈজ্ঞানিক নাম- Falco amurensis

বর্ণনা- আমুর শাহিন লাল পা ও বাদামী চোখের ছিপছিপে শিকারি পাখি ( দৈর্ঘ্য ৩০ সেমি, ডানা ২৩.৮ সেমি, ঠোঁট ১.৭ সেমি, পা ৩ সেমি, লেজ ১২.৭ সেমি)। প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেপাখির দেহ প্রায় পুরোটাই কালচে ধূসর, তবে পেট ফিকে, অবসারণী, রান, লেজতল- ঢাকনি গাঢ় মরচে রঙের। মেয়েপাখির পিঠের দিক কালচে ধূসর, দেহের নিচের দিকে সাদাটে, মাথার চাঁদি, ঘাড়ের পিছন ও গুম্ফ-ডোরা কালচে ও মুখ সাদাটে, স্লেট-ধূসর লেজে কালো ডোরা। ছেলে ও মেয়ে পাখি উভয়ের পেট, রান, লেজতল-ঢাকনি কমলা-পীতাভ, ডানার নিচের ফিকে অংশে অনেক কালচে ডোরা, চোখে কালচে বাদামি, পা ও পায়ের পাতা কমলা-হলুদ থেকে কমলা-লাল এবং নখর ফিকে মেটে-শিঙে। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির ফিকে কপাল, পিঠের লালচে –পীতাভ পাড় ও দেহতলের মোটা লম্বালম্বি দাগ ছাড়া চেহারা মেয়েপাখির মত।

স্বভাব- আমুর শাহিন নীচু জমি ও পাহাড়ের পাদদেশ, বনের ধার ও গ্রামাঞ্চলে বিচরণ করে, পরিযানে ১০০- ১০০০টি পাখির ঝাঁকে থাকে। ভূমি থেকে ৫০- ১০০ মিটার উঁচুতে উড়ে এরা তৃণভূমি, চারণভূমি, খেত-খামার ও ক্ষুদ্র ঝোপে শিকার খোঁজে, খাদ্যতালিকায় রয়েছে পঙ্গপাল, ফড়িং, বিছা, ডানাওয়ালা উঁই ও ছোট পাখি। রাতে এরা তীক্ষ গলায় চেঁচিয়ে ডাকে কিউ- কিউ-কিউ…। এপ্রিল-মে মাসে প্রজননকালে উত্তর-পূর্ব চীন ও মঙ্গোলিয়ার পূর্বাঞ্চলে খোলা মাঠ কিংবা গ্রামের ধারে ছোট গাছে এরা ডালপালা দিয়ে স্তুপাকার বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো গাঢ় রক্তলাল, কিংবা কালচে লাল তিলা ও দাগসহ ঈষৎ পীতাভ থেকে ইট লাল, সংখ্যায় ৪-৬টি, মাপ ৩.৬x২.৯ সেমি।

বিস্তৃতি- আমুর শাহিন বাংলাদেশের বিরল পান্থ-পরিযায়ী পাখি, বসন্ত ও শরৎকালে পরিযায়নের পথে চট্টগ্রাম, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের প্রত্যন্ত অঞ্চলে দেখা যায়। শীত মৌসুমে আফ্রিকার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও গ্রীষ্মকালে এশিয়ায় এদের বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে। ভারত, নেপাল, ভুটান ও শ্রীলংকাসহ দক্ষিণ এশিয়ার উপর দিয়ে পরিযান করে।

অবস্থা- আমুর শাহিন বিশ্বে বিপদমুক্ত বলে এখন পর্যন্ত পরিচিত, কিন্তু খুব শীঘ্রই কী হবে বলা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয় নি।

বিবিধ- আমুর শাহিনের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ আমুরল্যান্ডের শাহিন। ( ল্যাতিন falco=শাহিন, amurensis= আমুরল্যান্ডের, চীন-রাশিয়া)

তথ্যসূত্র- বাংলাদেশের উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের পাখি খণ্ড

এর আগে পেরেগ্রিন শাহিন নিয়ে লেখাটিতে অনেকেই পাখিটির পরিবারের নামের ব্যাপারে কৌতূহল প্রকাশ করেছেন, Falconidae পরিবারের নাম দেয়া হয়েছে শাহিন, এ পরিবারে সারা বিশ্বে ১০ গণে ৬৩ প্রজাতি। বাংলাদেশে ১ গণে ৯ প্রজাতি। বাংলাদেশের আমুর শাহিন, পেরেগ্রিন শাহিন ছাড়াও আছে সাকের শাহিন(Saker Falcon), লালঘাড় শাহিন(Red-necked Falcon), লগগর শাহিন(Laggar Falcon), উদয়ী টিকাশাহিন(Oriental Hobby), ইউরেশীয় টিকাশাহিন ( Eurasian Hobby)

এই ব্যাপারে আমাদের করণীয়- কেবল শিকারি পাখি নয় , কোন রকম বন্যপাখি কিনবেন না, খাবেন না এবং অন্যকে খেতে দেখলে নিষেধ করবেন। মনে রাখবেন, আপনার-আমার লোভের জন্য হয়ত প্রজাতিটি বিশ্ব থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

মানুষ বাদে সমগ্র প্রাণীকূলের নৃশংসতা একত্র করলেও নিশ্চিত মানুষের চেয়ে কম হবে। অকারণ নৃশংসতা শুধুমাত্র মানুষের একচেটিয়া। ফুড চেইনে উপরে থাকা মানেই যে প্রাণী হিসেবে আমরা সর্বশ্রেষ্ঠ নই বরং কার্যকলাপে সর্বনিকৃষ্ট সেটা যে কবে বুঝবো কে জানে?

ধন্যবাদ অণু ভাই আরেকটি সময়োপযোগী এবং দুর্দান্ত লেখার জন্য।

ফারাসাত

তারেক অণু এর ছবি

জানি না কোন দিন সেটা বোঝার মত জ্ঞান মানুষের হবে কি না।

লাবণ্যপ্রভা এর ছবি

মন খারাপ

তারেক অণু এর ছবি
মেঘা এর ছবি

ভোরবেলা দেখেই খুব মন খারাপ লাগছিল। স্বপ্নেও দেখছিলাম পাখি শিকার করছে মানুষ! মানুষের তো খাবার জিনিসের অভাব হয় নি! শিকারি পাখি খাবার কী দরকার মাথায় আসছে না!

--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি

তারেক অণু এর ছবি

আমারও না! যারা শিকার করছে তারা খুব অভাবী মানলাম, কিন্তু যারা কিনছে? চাহিদা না থাকলে তো এত মারত না শিকারিরা।

অতিথি লেখক এর ছবি

উহ! কি বেদনাদায়ক।

তারেক অণু এর ছবি
স্যাম এর ছবি

মন খারাপ

তারেক অণু এর ছবি

মন খারাপ ভয়ংকর।

অমি_বন্যা এর ছবি

সামগ্রিক ভাবে সকল মানুষের মাঝে সচেতনতা বোধ তৈরি না হলে এই পাখি নিধন বন্ধ হবে না।
মন খারাপ হল বিশেষ করে ছবিতে এদের ধরার জন্য পাতা ফাঁদ দেখে। কি নিশ্চিন্ত মনেই না উড়ে যায় এসব পাখিরা। খোলা আকশের বুকে নিজেদের মুক্ত ভেবে উড়াল দেয় নিজ গন্তব্যে। তারপর নীড়ে ফিরে হয়তো খুঁজতে থাকে আপনজনদের। কাউকে হয়তো পায় আবার ফাঁদে আটকে পড়া সঙ্গীদের অথবা নিকটজনদের না পেয়ে যে করুণ পরিণতি তা ভেবে হয়তো মন খারাপ করে।

আমরা যদি আমাদের দিয়ে এইসব আটকে পড়া পাখিদের কথা চিন্তা করি তাহলেই তো বোধোদয় হউয়া উচিৎ। ওরা পাখি নয় প্রাণী এই চেতনা জাগ্রত হোক মানুষের সেই কামনায় করি।

মন খারাপ করা লেখা অনু দা।

তারেক অণু এর ছবি

মনে হচ্ছে কুৎসিত কোন দুঃস্বপ্ন দেখছি।

হিমু এর ছবি

ফ্যালকনের বাংলা তো জানতাম বাজ। শাহিন কেন?

তারেক অণু এর ছবি

FALCONDAE পরিবারের নাম দেয়া হয়েছে শাহিন। এছাড়া বাজ, তিসা বাজ, খোঁপা বাজ এমন বেশ আলাদা কিছু শ্রেণী বিভাগ করা হয়েছে পাখির বইটাতে।

হিমু এর ছবি

Falconidae হবে বানানটা। ফ্যালকনিডি পরিবারের নাম বাজ থাকতে সমস্যা কী?

তারেক অণু এর ছবি

Aviceda গণের বাংলা নাম দেওয়া হয়েছে বাজ। তাদের ইংরেজি বাজা, হানি বাজার্ড।

দুর্দান্ত এর ছবি

খুন বলছেন কেন? বিষয়টা কি বাংগালির ইলিশ মাছ শিকার, ফারো দ্বীপের পাইলট তিমি শিকার, উত্তর সাগরের হেরিং ধরার মত বিষয় ‌ ‌নয়কি? আমার তো মনে হয় স্থানীয় জাতিগোষ্ঠিদের তার নিজস্ব অঞ্চলের সকল জীবসম্পদের ওপরে অধিকার আছে।

"শিকারি পাখি আমুর শাহিনের অস্তিত্ব এখনো হুমকির মুখে নয়, কিন্তু এইভাবে শিকার চলতে থাকলে যে খুব শীঘ্রই তাকে আর পৃথিবীতে দেখা যাবে না সেটা নিশ্চিত।"

এই নিশ্চয়তায় আপনি কিভাবে আসছেন?

***
যদি ধরে নেই স্থানীয়জনগোষ্ঠির প্রানিজ আমিষের জন্য এই পাখি একটি গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখে, তাহলে কি ইন্দোনেশিয়ার সুইফটের-বাসা-শিল্পের আদলে এদেরও চাষ করা সম্ভব?
***

"এই ব্যাপারে আমাদের করণীয়- কেবল শিকারি পাখি নয় , কোন রকম বন্যপাখি কিনবেন না, খাবেন না এবং অন্যকে খেতে দেখলে নিষেধ করবেন। মনে রাখবেন, আপনার-আমার লোভের জন্য হয়ত প্রজাতিটি বিশ্ব থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।"

এই কথাটাকে কে আপনি শুধু পাখিদের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ রাখতে চান? মৎসসম্পদের ক্ষেত্রে আপনার বক্তব্য কি? শুধু থাই পাঙ্গাস?

তানিম এহসান এর ছবি

এই কথাটাকে কে আপনি শুধু পাখিদের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ রাখতে চান? মৎসসম্পদের ক্ষেত্রে আপনার বক্তব্য কি? শুধু থাই পাঙ্গাস? চলুক

তারেক অণু এর ছবি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৫ বিলিয়ন প্যাসেঞ্জার পিজিয়নকে মেরে নিশ্চিহ্ন করে ফেলে ছিল মানুষ, আমুর শাহিনের সংখ্যা তার চেয়ে বেশী নয়, এভাবে প্রতি বছর দেড় লাখ পাখি কেবল একটি প্যাসেজ রুটে মারা হলে সারা বিশ্বে কী হচ্ছে এবং হবে সেটি বোঝা কি খুব কঠিন!

যদি ধরে নেই স্থানীয়জনগোষ্ঠির প্রানিজ আমিষের জন্য এই পাখি একটি গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখে কিন্তু সেই প্রত্যন্ত অঞ্চলের অল্প কিছু মানুষে এই বিপুল সংখ্যক পাখি শিকারের দরকার হবার কথা না, যদি না বাহিরে এই মাংসের ক্রেতা থাকে।

সকালে খবরটি চোখের পড়ার পরপরই লিখেছি মন খারাপ করে, মাছের কথা ভাবি নাই, মাছ নিয়ে লিখলে তখন লিখব

তারেক অণু এর ছবি

আমার তো মনে হয় স্থানীয় জাতিগোষ্ঠিদের তার নিজস্ব অঞ্চলের সকল জীবসম্পদের ওপরে অধিকার আছে। কেন মনে হয় একটু পরিষ্কার করে জানাবেন কি-

দুর্দান্ত এর ছবি

জাতিসংঘের স্থানীয় জাতিগোষ্ঠির অধিকার সম্পর্কিত ওহীর ২৬ নম্বর সুরা দ্রষ্টব্য।

মন মাঝি এর ছবি

Article 26
1. Indigenous peoples have the right to the lands, territories and
resources which they have traditionally owned, occupied or otherwise
used or acquired.
2. Indigenous peoples have the right to own, use, develop and
control the lands, territories and resources that they possess by reason
of traditional ownership or other traditional occupation or use,
as well as those which they have otherwise acquired.
3. States shall give legal recognition and protection to these lands,
territories and resources. Such recognition shall be conducted with
due respect to the customs, traditions and land tenure systems of the
indigenous peoples concerned.

এইটা?

এখানে কিন্তু এ্যবসলিউট রাইট বলা হয়নি। তাছাড়া আমার জানামতে আইন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানসহ অন্য কোন ডিসিপ্লিনেই "right" বলতে নিঃশর্ত সীমাহীন যথেচ্ছাচারের অধিকারকে বুঝায় না। কোন অজুহাতেই না। শর্তযুক্তভাবে সংগঠিত সমাজের শর্তযুক্ত কাঠামোর প্রেক্ষিতেই কেবল এই "right"-নামক প্রত্যয়ের অস্তিত্ত্ব ও প্রয়োগ আছে ও সম্ভব, আর কোথাও নেই - সম্ভবও না। ফলে এটাও শর্তযুক্ত। এটা বিভিন্ন শর্তযুক্ত, অন্যের এবং অন্যান্য অধিকার ও অনধিকার দ্বারা সীমায়িত একটা সম্প্রত্যয়/কন্সেপ্ট। যেসব শর্ত ও সীমার সীমানার ওপাশে এই "right"-এর আর কোন অস্তিত্ত্ব থাকে না।

যেমন ধরা যাক, পৃথিবীর কোন কোন ইন্ডিজিনাস সম্প্রদায়ের মধ্যে অন্য গোত্রের মানুষকে মেরে খেয়ে ফেলার custom বা প্রথা প্রচলিত ছিল বা আছে। ভারতের নাগাদের মধ্যেও নাকি সাবালকত্ব অর্জনের রিচুয়ালের অংশ হিসেবে এমন custom প্রচলিত আছে। তো এখন কি রাষ্ট্র due respect to the customs, traditions মানতে গিয়ে এই প্রথাকেও বৈধতা দিবে? আমি নিশ্চিত এমনটা বোঝানো হয়নি এখানে। তাছাড়া এমনটা করতে গেলে জাতিসংঘেরই মানবাধিকার সনদ লঙ্ঘিত হবে। তাহলেই বুঝা যাচ্ছে, এখানে 'রাইট'-কে নিঃশর্ত অর্থে বোঝানো হচ্ছে না। 'resources'-এর বেলাতেও এটা প্রযোজ্য হবে, কেননা 'সম্পদ' ব্যবহারের ক্ষেত্রেও অনেক ইউনিভার্সাল বা আন্তর্জাতিক শর্ত থাকতে পারে, পারা সম্ভব ও আছে - যার বাইরে আদিবাসীরাও পড়বে না।

এখানে due respect to the customs, traditions -এর কথা বলা হয়েছে। due বলতে মনে হয় এখানে 'প্রাপ্য' বোঝাচ্ছে। আমার বুঝ হচ্ছে, এর মানে হল 'অপ্রাপ্য' (undue) বা প্রাপ্যের বাইরে বলেও তাহলে কিছু আছে - অর্থাৎ যার প্রতি respect দেখানো বা মেনে নেয়া সম্ভব না। যার একটা উদাহরণ উপ্রে দিয়েছি। তা না হলে total, complete, unconditional, unreserved - এই জাতীয় কিছু বলা হত due-এর বদলে।

পরিযায়ী পাখি বা মনে হয় যেকোন পাখিই কোন সুনির্দিষ্ট ইন্ডিজিনাস অধ্যুষিত এলাকার একক সম্পদ না। এগুলি জন্ম-মৃত্যু থেকে শুরু করে সারা জীবন শুধুই ঐ সুনির্দিষ্ট ইন্ডিজিনাস এলাকায় তাদের চলাফেরা সীমাবদ্ধ রাখে না কোন নিশ্চল/স্ট্যাটিক সম্পদের মত। ইন্ডিজিনাস অধ্যুষিত এলাকা তাদের জন্য কোন কারাগার না। অন্যভাবে বললে, ঐ পাখি অন্যদেরও সম্পদ। এর উপ্রে অন্যদেরও অধিকার আছে - এবং সেই অধিকার বা right / custom / tradition বা law-এর শর্তও ইন্ডিজিনাসদের উল্লেখিত "right"-এর উপর প্রযুক্ত হবে এবং তাকে সীমায়িত করবে এক্ষেত্রে।

"জীবজগত"-এর সবকিছুকেই 'গণিমতের মালের' মত মানুষের "ব্যবহার্য সম্পদ", অর্থাৎ কেবলমাত্র বিশুদ্ধ ভোগের মাল হিসেবে গন্য করার মধ্যেও কোথায় যেন একটা বিশাল ঘাপলা আছে। জাতিসঙ্ঘের সনদদের স্পিরিটটা আমার সেরকম মনে হয়নি।

****************************************

দুর্দান্ত এর ছবি

আমি বাংলায় বললাম অধিকার, সেইটার আপনি আপনার নিজস্ব শরীয়তি পরিভাষায় বুঝলেন গণিমত - ঘাপলা কার?

আরেকবার চেষ্টা করি, হ্যাঁ/না তে উত্তর করেন। "অধিকার" এর ইংরেজী কি "রাইট"?

***
নাগাল্যান্ডের ওনারা যেভাবে পাখি ধরে, আমরাও তো আংশিক "পরিযায়ী" ইলিশ মাছ ধরি।
এখন যদি দিল্লীর তেনারা যারা জীবনে ইলিশের স্বোয়াদ জানেনাই, বাংলাদেশে মানুষের বাতসরিক আমিষ যোগানে এই প্রজাতির ভূমিকা জানেনা, সে আইসা বলে, করছস কি মাইঙ্কা। ইলিশ একটা পরিযায়ী মাছুম মাছ, ঐটা মাইরা তো অশেষ বদী হাছেল কইরালছস্ অহনই থামা, নাইলে কিন্তু গজপ।

তখন আপনের এই বড় মন্তব্যটা কোথায় রাখবেন?

মন মাঝি এর ছবি

কি মুশকিল! আমি উদ্ধৃত ও আলোচনা করলাম "United Nations Declaration on the Rights of Indigenous Peoples"-এর Article 26 থেকে [যেটা আপনিই রেফার করেছেন] right/rights এর, আর আপনি কিনা আপনার নিজস্ব মারেফতি পরিভাষায় বুঝলেন আমি আপনার 'বাংলায়' বলা 'অধিকার'-এর অধিকার ক্ষুন্ন করেছি! ভালা মুসিবৎ! আমি আপনার 'বাংলায়' বলা মন্তব্য বা 'অধিকার' কোথায় কোট করেছি বলুন তো? তাই ঘাপলাটা মনে হয় আপনার কথাতেই।

আপনার সুবিধার্থে আরেকবার চেষ্টা করি একদম পানির মত 'বাংলায়', হ্যাঁ/না তে উত্তর করেন। আমার ১ম মন্তব্যের কোটেশন চিহ্নের ভিতর লেখাটা কি বাংলা ভাষায়? এর মধ্যে কি 'বাংলায়' 'অধিকার' শব্দটা আছে? এটা কি আপনার লেখা?

আরও একটা প্রশ্নঃ আপনি যখন "United Nations Declaration on the Rights of Indigenous Peoples"-শীর্ষক ডকুমেন্টটার লিঙ্ক দেন এইরকম একটা বাংলা টেক্সট দিয়ে - "স্থানীয় জাতিগোষ্ঠির অধিকার সম্পর্কিত ওহীর" - তখন আপনার 'বাংলা' 'অধিকার' কি ঐ শিরোনামে 'Rights' শব্দটার বঙ্গানুবাদের মতই শোনায় না? হ্যাঁ অথবা না।
--------------------------------

"অধিকার" এর ইংরেজী কি "রাইট"?

রাইট-রং-লেফট-আপ-নাকি ডাউন কোনটাই বলার যোগ্যতা বা 'অধিকার' আমার নাই। আমি বাঙালি, ইংরেজ না। আমি শুধু অভিধান যা বলে সেটুকুই বলার ক্ষমতা রাখি। তবে আপনি পণ্ডিত ব্যক্তি। আপনি বোধহয় আরও বেশি জানেন মারেফতি দৈবদৃষ্টিবলে। তবে আমি দেখছি আপনি নিজেও আপনার মন্তব্যে 'অধিকার' হিসেবেই বঙ্গানুবাদ করেছেন। তবু কিছু রেফারেন্স দিচ্ছিঃ
১। "Bangla Academy Bengali-English Dictionary" [First Edition, Ashar 1401/June 1994] 'অধিকার'-এর ইংরেজি বলছেঃ (noun) ownership; right; title;
২। কলকাতা থেকে প্রকাশিত খ্যাতনামা Everyman's Dictionary [English-Bengali] (First edition, September 2001 reprint) ইংরেজি "right" শব্দটার বাংলা দিয়েছে (একাধিক অর্থের মধ্যে) - (noun) 'অধিকার, হক' ইত্যাদি। প্রতিবর্ণায়ন করেছে - 'রাইট্‌'।
৩। এছাড়াও ইংরেজি ভাষার ম্যাকমিলিয়ান ডিকশনারি, মেরিয়াম-ওয়েবস্টার, ক্যাম্ব্রিজ ডিকশনারি অনলাইন, ইয়াহু এডুকেশন, উইকশনারি সহ সমস্ত অভিধানই ইংরেজি right শব্দটার বিভিন্ন অর্থের মধ্যে noun হিসেবে বাংলা 'অধিকার'-এর সমার্থক ব্যাখ্যা/সংজ্ঞাও অন্তর্ভূক্ত করেছে। এদের উচ্চারণের অডিওটাও আমার কানে 'রাইট'-ই শোনায়।

আমি এটুকুই বলতে পারি। তবে আপনি যদি উপরে উল্লেখিত সব অভিধানের অভিধানকারদের চেয়েও বেশি জানেন, তবে আপনার জানার রেফারেন্স দিয়ে আমাকে আলোকিত করুন।
--------------------------------

আপনি বারবার ইলিশ মাছের প্রসঙ্গটা টেনে আনছেন। আমার কিন্তু আপনার এই অধিকার/রাইট ও ইলিশ মাছের যুক্তি বা উদাহরণকে 'রেড হেরিং'-এর মতই মনে হচ্ছে। ইলিশের মত না। আমার জানামতে ইলিশ মাছ 'বিপন্ন' (এন্ডেঞ্জার্‌ড) প্রজাতির মাছ নয়, বা বর্তমানে প্রচলিত নিধনমাত্রার প্রেক্ষিতে 'বিপন্ন প্রজাতির' তালিকাভূক্ত হয়ে পড়ার সম্ভাবনাও নেই অদূর ভবিষ্যতে। তবে আমার জানায় ভুল থাকতে পারে। তাই আপনার প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে, যদি ইলিশ 'বিপন্ন' শ্রেণিভূক্ত হয় বা বর্তমানে প্রচলিত নিধনমাত্রার প্রেক্ষিতে বর্তমানেই বা অদূর ভবিষ্যতে 'বিপন্ন' শ্রেণীভূক্ত হয়ে পড়ার যথার্থ আশংকা থাকে বিশেষজ্ঞদের মতে, তাহলে ইলিশ ধরা বন্ধ বা কমিয়ে দেয়াই সঠিক হবে। মোদ্দা কথা - যাই করা হোক, তা [i]'সাস্টেনেবল' পন্থাতেই করা উচিত।[/i] আপনারে ও আপনার ঐ দিল্লীর মাইঙ্কারে এই কথাই বলব। আমার মতে পাখির ক্ষেত্রেও এই একই কথাই প্রযোজ্য, প্রযোজ্য ইন্ডিজিনাসদের অধিকার বা রাইটসের ক্ষেত্রেও। এইভাবেই বৃহত্তর রাষ্ট্রের আইন তার অন্তর্ভূক্ত ইন্ডিজিনাস জনগোষ্ঠীর right / custom / tradition এর উপর প্রযুক্ত হয়ে তাকে সীমায়িত করবে, তার বেশি না। অর্থাৎ যেখানে, যদি ও যতটুকু তাদের কোন প্র্যাক্টিস মৌল মানবাধিকারের চরম পরিপন্থী হয় বা পরিবেশ/প্রতিবেশের ব্যপক ও অপূরণীয় ক্ষতি কারন হয়, তাহলে তা ঐ রাষ্ট্রের due respect to the customs, traditions (ঐ জনগোষ্ঠীর) সেখানে ও ততটুকু প্রযোজ্য হবে না এবং তাদের right / custom / tradition-ও সেখানে অক্ষতিকর মাত্রায় সীমাবদ্ধ হতে হবে। এনিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে, তবে আমার সীমিত জ্ঞান সাপেক্ষে এটাই আমার মত এখনও পর্যন্ত

মোদ্দা কথা আমি সাস্টেনেবল চর্চার পক্ষপাতি। যদি তা না হয়ে চর্চাটা জীবজগতকে ধ্বংস, এনাইহিলেশন বা এক্সটিংশনের কারন হয় বা সেইরকম আশংকা থাকে, তাহলে আমি সেটা নিয়ন্ত্রনকেই সমর্থন করবো। সাস্টেনেবল মাত্রায় নিয়ন্ত্রন করা না গেলে - বন্ধ। তা সে যেই করুক না কেন - ইন্ডিজিনাস বা নন-ইন্ডিজিনাস। পাখি, মাছ বা গরু। ইলিশ-পাঙ্গাস বা তিমি।
--------------------------------

তখন আমার এই "বড়" দুই মন্তব্য 'সাস্টেইনেবিলিটি' আর 'আনসাস্টেইনেবিলিটির' মধ্যে যে বিশাল ক্রুশাল (crucial) পার্থক্য - সেই পার্থক্যের উপর রাখব। আপনি দেখতে পাচ্ছেন সেই পার্থক্য?

এ প্রসঙ্গে এটাই আমার শেষ মন্তব্য। ধন্যবাদ।

****************************************

তারেক অণু এর ছবি

আমার তো মনে হয় স্থানীয় জাতিগোষ্ঠিদের তার নিজস্ব অঞ্চলের সকল জীবসম্পদের ওপরে অধিকার আছে।- আমার মনে হয় না। মানুষের তৈরি আইন তো মানুষের লাভই দেখবে, জানা কথা। যদিও সেই লাভ যে আখেরে ক্ষতি সেটা বোঝার ক্ষমতা মানুষের হয় নি এখনো।

মন মাঝি এর ছবি

তাছাড়া "জীবসম্পদ" - টার্ম ও ধারণাটাও আমার কাছে অস্বস্তিকর লাগে। এটা শুনলে মনে হয় দুনিয়াতে "জীব" মাত্রেই সেটা মানুষের ভোগের 'সম্পদ'। মানুষের ভোগের সম্পদ হওয়াই তার নিয়তি, এছাড়া আর কোন গতি নাই তার। আর সেই ভোগের সম্পদ যথেচ্ছ ও একচ্ছত্র ভোগের অধিকার মানুষের। এর মধ্যে পৃথিবীর জীবজগতকে নিজেদের একচ্ছত্র ব্যবহার্য 'সম্পত্তি' হিসেবে দেখার বাইরে আর কোন দৃষ্টিভঙ্গি যেন স্থান পায় না। এই দৃষ্টিভঙ্গিটাই মনে হয় পালটানো দরকার। বোঝা দরকার যে বিশ্বব্রম্মাণ্ড বা তাবৎ জীবজগত কেবল মানুষ ও তার প্রয়োজনকে ঘিরেই আবর্তিত হয় না - এর বাইরেও তাদের নিজস্ব অস্তিত্ত্ব, সত্তা ও মূল্য আছে। নিজস্ব মেরিটেই। এই চেতনাটা না আসা পর্যন্ত মনে হয় কোন কিছুতেই কিছু হবে না - মানুষ সব কিছু খেতে খেতে যখন খাওয়ার আর কিছু বাকি থাকবে না, তখন আবার সেই ক্যানিবালিজমের যুগে ফিরে যাবে - শেষ পর্যন্ত নিজেকেই খাওয়া ধরবে। অনেকটা লূ ভার্বেইন-এর মত। হাসি

****************************************

তারেক অণু এর ছবি

বোঝা দরকার যে বিশ্বব্রম্মাণ্ড বা তাবৎ জীবজগত কেবল মানুষ ও তার প্রয়োজনকে ঘিরেই আবর্তিত হয় না - এর বাইরেও তাদের নিজস্ব অস্তিত্ত্ব, সত্তা ও মূল্য আছে। নিজস্ব মেরিটেই। গুল্লি

অতিথি লেখক এর ছবি

এভাবে নির্বিচারে পাখি নিধনের ফলে অনেক পাখি ই আজ বিলুপ্ত, খাদ্য শৃংখলার অমোঘ নিয়মে আমরা আমাদের অস্তিত্বের মূলে কুঠারাঘাত করছি
দ্রোণাচার্য

তারেক অণু এর ছবি

ঠিক

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

কী কান্ড!!!

তারেক অণু এর ছবি
রবাহূত এর ছবি

স্থানীয় রিচুয়াল এর সাথে এগুলোর অঙ্গাঙ্গী যোগ আছে। বহুদিন ধরে চলে আসা প্রথা। তারউপর দুর্গম এলাকা। সহসা থামবে বলে তো মনে হয় না। তবে আশার কথা সচেতনতা বাড়ছে।

পূর্বোত্তোর ভারতে এরকম বেশ কিছু রিচুয়াল চালু আছে। জাটিঙ্গা এমনই আরেকটা জায়গা। যদিও জাটিঙ্গার ব্যাপারটা দীর্ঘদিন ধরেই রহস্যাবৃত।

http://nchills.gov.in/NCHILLS-JATINGA.htm
http://en.wikipedia.org/wiki/Jatinga

তারেক অণু এর ছবি

দেখা যাক,জাতিংগার ব্যাপারটা যতদূর জানি কিছুটা আলাদা, আর সেই রহস্য সম্ভবত ভেদ হয়ে গেছে অনেক বছর আগেই।

তানিম এহসান এর ছবি

ঢাকাতেও আর কিছুদিন পর ‘শীতের পাখী’ বিক্রি হবে, ‘এই শিকার শিকার’ বলে চিৎকার হবে নির্দিষ্ট কিছু কিছু জায়গায়।

কিন্তু গ্রামের জনগণ এত পাখি কোথায় বিক্রি করে তা আজ পর্যন্ত জানা যায় নি। বিশাল ট্রাক এসে হাজার হাজার পাখি নিয়ে যায়, কিন্তু কোথায়, সে এখনো এক রহস্য! - তাইতো!

তারেক অণু এর ছবি

ঢাকার যে মানুষগুলো সেই শিকার কিনবে, তাদের বন্ধুরার ভারতে হয়ত সেই হাজার হাজার পাখির ক্রেতা।

দিগন্ত এর ছবি

এইভাবে যে দেশে কত শত প্রজাতিকে আমরা বিলুপ্তির পথে ঠেলে দিচ্ছি, তার ইয়ত্তা নেই।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

তারেক অণু এর ছবি

শীঘ্রই একটাই প্রজাতি থাকবে মনে হচ্ছে

কড়িকাঠুরে এর ছবি

পাখী খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ বা দুই ডলারে বিক্রয় করে রুটি-রুজির যোগান!!! কি আর বলার থাকে...

তারেক অণু এর ছবি

এর চেয়ে সেই পাখিগুলো পর্যবেক্ষণের জন্য ছোট ছোট লজ হোটেল করে পাখিপ্রেমীদের ডেকে আনার সুযোগ থাকলে উপার্জন বাড়ত, অনেক দেশেই এমন হচ্ছে, শিকারিরা আজ সংরক্ষক বিভিন্ন অঞ্চলে এই কারণেই,

অরফিয়াস এর ছবি

অতিরিক্ত শিকার করলে সংখ্যা হ্রাস পাবে এটা বলা যায়, আর হয়তো তখন এদের যাত্রা পথেরও পরিবর্তন আসবে। স্থানীয়ভাবে এরকম অনেক পাখিই শিকার করা হয়ে থাকে, সাধারণ নাগরিকের মাঝে সচেতনতা না থাকলে শুধু আইন করে শিকার বন্ধ করা সম্ভব না।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

তারেক অণু এর ছবি

সাধারণ নাগরিকের মাঝে সচেতনতা না থাকলে শুধু আইন করে শিকার বন্ধ করা সম্ভব না। বাংলাদেশ তার অন্যতম বড় উদাহরণ।

সুমাদ্রী এর ছবি

সুন্দর পাখিটাকে দেখেই তো মায়া লেগে যায়। খারাপ লাগল।

অন্ধকার এসে বিশ্বচরাচর ঢেকে দেওয়ার পরেই
আমি দেখতে পাই একটি দুটি তিনটি তারা জ্বলছে আকাশে।।

তারেক অণু এর ছবি
ক্রেসিডা এর ছবি

সুন্দর নিধণে মানুষের জুঁড়ি মেলা ভার !!! একদিক থেকে মানুষ প্রতিদিন নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। নিজের ক্ষতি করতেও তাদের কোন তুলনা নেই... ভয়ংকর খবর.. কবে যে আমরা শিখবো ...

মানুষের মধ্যে সত্যিকারের সচেতনতা আর সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকার বোধের উদয় হোক !

__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;

তারেক অণু এর ছবি
জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

কি ভয়ঙ্কর ! খুব মন খারাপ হয়ে গেল ।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

তারেক অণু এর ছবি
বান্ধবী এর ছবি

অসম্ভব সুন্দর আর আকর্ষনীয় কিছু উপভোগ করার একমাত্র উপায় যে খেয়ে ফেলা না – এটা আমরা কবে বুঝবো?

সুন্দর প্রাণী -> খাও/শিকার করে সংগ্রহ করো
সুন্দর গাছ -> কাটো, ফার্নিচার বানাও
সুন্দর জায়গা -> পিকনিক করো, গাকগাক শব্দের গান বাজাও, ময়লা করো

তারেক অণু এর ছবি

সব প্রাণীই সুন্দর, সব গাছই সুন্দর, মানুষ সব প্রাণীই খায়, সব গাছই কাটে।

বান্ধবী এর ছবি

হ্যাঁ। কিন্তু নিজের প্রয়োজনে করা আর কোন একটা কিছুকে একদম ধ্বংস করে দেয়া - দুটো ব্যপারতো আলাদা।
তবে কথা হল, কার কাছে প্রয়োজনের সংজ্ঞা কতোটুকু বা কেমন - এই ব্যপারগুলোই ধোঁয়াটে

ধুসর জলছবি এর ছবি

মন খারাপ

তারেক অণু এর ছবি
প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

মন খারাপ

তারেক অণু এর ছবি
রংতুলি এর ছবি

যেখানে মানুষের পোল্ট্রিজাত প্রোটিনের অভাব নাই সেখানেই বরং এইসব দুঃস্থ বন্য প্রোটিন খুবলে খাওয়ার মানুষের সংখ্যা বেশি, আর সেকারণেই হয়তো এই মাত্রাটা এতটা ভয়াবহ। বড় ট্রাকে করে পাখিগুলোকে কোথায় নেয়া হয়? অবশ্যই অবৈধ বন্যপ্রাণীর বাণিজ্যের সাথে জড়িত কোন চক্র সেখানে কাজ করছে।

ভিয়েতনামের কিছু রেস্টুরেন্ট থেকে সিজ করা কিছু অবৈধ বন্যপ্রজাতির নমুনা দেখো এখানে। রিপোর্টটিতে বলা হয়েছিল – “Illegal trade is the largest single threat to wildlife in Asia”

এরপরেও আমাদের হুঁশ হবে না, বরং কেউ সত্যটা দেখাতে আসলে তাকেই দশ কথা শুনায় দিবো, আর শীতে বাজার থেকে অতিথি পাখি কিনে খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলবো...

জয় মানবপ্রজাতি! জয় তোমার বীরত্ব! প্রকৃতিকে বোধ করি এই এক মানব প্রজাতির খেসারৎ দিতে দিতেই ক্রমে কঙ্কালসার হতে হবে... তখন টিকে থাকব শুধু আমরাই!

তারেক অণু এর ছবি

আমরাও টিকে থাকব না, কিন্তু একটা জিনিস বুঝব হয়ত যে টাকা খাওয়া যায় না।

রংতুলি এর ছবি

হুম! মন খারাপ

তারেক অণু এর ছবি

সেদিন এক নতুন প্রজাতির গিরগিটি পাওয়া গেল ভিয়েতনামের এক রান্না ঘরে!

সাফিনাজ আরজু  এর ছবি

খুবই সময়োপযোগী এবং গঠনমূলক লেখা অনুদা।
শীতের সময়ে আপনি নিশ্চয় জাবিতে গেছেন পাখি দেখতে।
আমার কাছে সব সময়েই মনে হয়েছে, অতিথি পাখিরা জাবির সৌন্দর্য আরও অনেক বাড়িয়ে দেয়।
লেকের ধারে ঠায় দাড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পাখি দেখা আমার খুব পছন্দের একটা কাজ ছিল।
মাত্র কয়দিন আগে এক বন্ধুর কাছ থেকে শুনতে পেলাম মাথামোটা ভার্সিটি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা লেকগুলোকে মাছ চাষের জন্য লিজ দিয়েছে। বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যাবহারের ফলে পাখির খাদ্য সংকট সহ মাঝে নাকি কিছু পাখি মারাও গেছিল। গত বছর থেকে পাখি আসার পরিমান অনেক কমে গেছে। ঘটনার সত্যি মিথ্যা জানিনা, কিন্তু শুনে খুব খারাপ লেগেছিল।

মানুষ আসলে প্রাণী হিসেবে খুবই বর্বর। আমরা সুন্দর কোন ফুল দেখলে ছিড়ে ফেলি, সুন্দর পাখি দেখলে খেয়ে ফেলি, যা কিছু সুন্দর তা ধ্বংস করে নিজেদের পিঠ চাপড়ায় , নিজেদের বাহবা দেই, খুব অবাক লাগে আমার, এত বুদ্ধিসম্পন্ন প্রাণী হয়ে কিভাবে আমরা নির্বোধের মত আচরণ করি???

তারেক অণু এর ছবি

মাছের চাষ করলে সেখানে পাখি বসবে না, জাবির পাখি কিন্তু সেখানে শুধু বিশ্রামের জন্য আসে, খাবার জন্য নয়।

তানিম এহসান এর ছবি

মাছের চাষ করলে সেখানে পাখি বসবে না, জাবির পাখি কিন্তু সেখানে শুধু বিশ্রামের জন্য আসে, খাবার জন্য নয়। চলুক

সবকটা জলাশয় মাছ চাষের জন্য লীজ দেয়া হয়েছে। আমাদের সময় যে পরিমান পাখি আসতো তার তুলনায় এখন পাখির সংখ্যা কমেছে।

তারেক অণু এর ছবি

হুম, অন্তত ২টা পুকুর ছেড়ে দিতে পারত পাখিদের জন্য। সারা দেশের মানুষ জাবি ক্যাম্পাস মানেই যে অতিথি পাখি বোঝে তা তো মিথ্যে নয়!

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

অমানবিক! মন খারাপ

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

তারেক অণু এর ছবি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।