জীবনানন্দ,আমার জীবনের আনন্দ - ১০

তারেক অণু এর ছবি
লিখেছেন তারেক অণু (তারিখ: মঙ্গল, ১৭/০৯/২০১৩ - ৩:৩২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

1239627_10153231073210497_1048053248_n
গাছ থেকে গাছে, আর, মাঠ থেকে রোদ শুধু শুধু মরে যায়
সব আলো কোন দিকে যায়!

সব আলো কোন দিকে যায়? জানি না, আলোকে মনে হয় জীবনানন্দের কবিতার মত- সর্বব্যপী, সর্বগামী, জীবনের উৎস, ভালোবাসার উৎস, তিমির হননের প্রেরণা।

তার নক্ষত্রখচিত শব্দগুলো দুর্বল ছবিতে আঁটানোর নেহাত শিশুসুলভ, অনেকটা দেবতাকে নৈবদ্য দেবার মত, তাতে পূজারীরই কেবল সুখ, দেবতার কিছুই যায় আসে না। তাই সেই চেষ্টা চলে অবিরাম--

ঘনিষ্ঠজন মাশুকা তাবাসসুম শুক্তি একবার বলেছিল তার জন্য সবচেয়ে ভাল যে জিনিসটা আমি করতে পারতাম তা করে ফেলেছি আমার জীবনের আনন্দ, জীবনানন্দ ছবি ব্লগ তৈরি করে। এই পোস্টটি বিশেষ ভাবে তার জন্য, শুভ জন্মদিন বন্ধু।

মাছির গানের মতো অনেক অলস শব্দ হয়
সকালবেলা রৌদ্রে; কুঁড়িমির আজিকে সময়।
1185733_10153194824215497_1811501180_n

আজ অন্ধ শতাব্দীর শতচ্ছিদ্রতার
ভিতর আলোর খোঁজে যদি চলে যায়
তবুও শাশ্বত হয়ে থাকে অন্ধকার।
আজ অন্ধ শতাব্দীর শতচ্ছিদ্রতার
ভিতর আলোর খোঁজে যদি চলে যায়
তবুও শাশ্বত হয়ে থাকে অন্ধকার।
1148916_10153103490860497_2061260625_n

তোমায় ভালোবেসেছি আমি,তাই
শিশির হয়ে থাকতে যে ভয় পাই,
তোমার কোলে জলের বিন্দু পেতে
চাই যে তোমার মধ্যে মিশে যেতে
শরীর যেমন মনের সঙ্গে মেশে।
21434_10153168318160497_1259810609_n

তখন শস্যের গন্ধ ফুরায়ে গিয়েছে ক্ষেতে — রোদ গেছে পড়ে,
এসেছে বিকালবেলা তার শান্ত শাদা পথ ধরে;
তখন গিয়েছে থেমে অই কুঁড়ে গেঁয়োদের মাঠের রগড়
হেমন্ত বিয়ায়ে গেছে শেষ ঝরা মেয়ে তার শাদা মরা শেফালির
বিছানার পর;
মদের ফোঁটার শেষ হয়ে গেছে এ মাঠের মাটির ভিতর!
15

ছিন্ন ভিজে খড়
বুকে নিয়ে সনকার মতো যেন পড়ে আছে নরম প্রান্তর ;
বাকা চাঁদ চেয়ে আছে - কুয়াশায় গা ভাসায়ে নেয় অবিরল
নিঃশব্দ গুবরে পোকা -সাপমাসী -ধানী শ্যামাপোকাদের দল ;
দিকে দিকে চালধোয়া গন্ধ মৃদু - ধুসর শাড়ির স্বর

শোনা যায় - মানুষের হৃদয়ের পুরনো নীরব
বেদনার গন্ধ ভাসে –
14

যেখানে আকাশে খুব নীরবতা শান্তি খুব আছে,
হৃদয়ে প্রেমের গল্প শেষ হলে ক্রমে ক্রমে যেখানে মানুষ
আশ্বাস খুঁজেছে এসে সময়ের দায়ভাগী নক্ষত্রের মানুষ
আশ্বাস খুঁজেছে এসে সময়ের দায়ভাগী নক্ষত্রের কাছে:
13

এ-রকম হয়েছে অনেক দিন-রৌদ্রে বাতাসে,
যারা সব দেখেছিলো-
যারা ভালোবেসেছিলো এই সব- তারা
সময়ের সুবিধার নিলেমে বিকিয়ে গেছে আজ।
তারা নেই।
আসো আমরা যে যার কাছে- যে যার যুগের কাছে সব
সত্য হ’য়ে প্রতিভাত হ’য়ে উঠি।
নব পৃথিবী পেতে সময় চলেছে?
হে অবাচী, হে উদীচী, কোথাও পাখির শব্দ শুনি;
কোথাও সূর্যের ভোর র’য়ে গেছে ব’লে মনে হয়!
8

একদিন কুয়াশার এই মাঠে আমারে পাবে না কেউ খুঁজে আর, জানি;
হৃদয়ের পথ চলা শেষ হল সেই দিন — গিয়েছে যে শান — হিম ঘরে,
অথবা সান্ত্বনা পেতে দেরি হবে কিছু কাল
12

নিঃস্বত্ব সূর্যকে নিয়ে কার তবে লাভ!

সচ্ছল শাণিত নদী, তীরে তার সারস-দম্পতি

ঐ জল ক্লান্তিহীন উৎসানল অনুভব ক’রে ভালোবাসে;

তাদের চোখের রং অনন্ত আকৃতি পায় নীলাভ আকাশে;

দিনের সূর্যের বর্ণে রাতের নক্ষত্র মিশে যায়;

তবু তারা প্রণয়কে সময়কে চিনেছে কি আজো?

প্রকৃতির সৌন্দর্যকে কে এসে চেনায়!
10

এইখানে সময়কে যতদুর দেখা যায় চোখে
নির্জন ক্ষেতের দিকে চেয়ে দেখি দাঁড়ায়েছে অভিভুত চাষা;
এখনো চালাতে আছে পৃথিবীর প্রথম তামাশা
সকল সময় পান ক’রে ফেলে জলের মতন এক ঢোঁকে;
অঘ্রানের বিকেলের কমলা আলোকে
নিড়োনো ক্ষেতের কাজ ক’রে যায় ধীরে;
7

এই সব পাখিগুলো কিছুতেই আজিকার নয় যেন-নয়-
এ নদীও ধলেশ্বরী নয় যেন-এ আকাশ নয় আজিকার:
ফণীমনসার বনে মনসা রয়েছে নাকি? আছে; মনে হয়,
এ নদী কি কালীদহ নয়? আহা, ঐ ঘাটে এলানো খোঁপার
সনকার মুখ আমি দেখি না কি? বিষন্ন মলিন ক্লান- কি যে
সত্য সব; তোমার এ স্বপ্ন সত্য, মনসা বলিয়া গেল নিজে।
নিড়োনো ক্ষেতের কাজ ক’রে যায় ধীরে;
6

একবার যখন দেহ থেকে বা'র হয়ে যাব
আবার কি ফিরে আসব না আমি পৃথিবীতে?
5

মাথার উপর দিয়ে কার্তিকের মেঘ ভেসে যায়;
দুই পা স্নিগ্ধ করে প্রান্তরের ঘাস;
উঁচু-উঁচু গাছের অস্পষ্ট কথা কী যেন অন্তিম সূত্র নিয়ে,
বাকিটুকু অবিরল গাছের বাতাস।
1

ঘুমায়ে পড়িব আমি একদিন তোমাদের নক্ষত্রের রাতে
শিয়রে বৈশাখ মেঘ-শাদা-শাদা যেন কড়ি-শঙ্খের পাহাড়
নদীর ওপার থেকে চেয়ে রবে- কোনো এক শঙ্খবালিকার
ধূসর রূপের কথা মনে হবে-এই আম জামের ছায়াতে
কবে যেন তারে আমি দেখিয়াছি-কবে যেন রাখিয়াছে হাতে
তার হাতে- কবে যেন তারপর শ্মশান চিতায় তার হাড়
ঝরে গেছে, কবে যেন; এ জনমে নয় যেন-এই পাড়াগাঁর
পথে তবু তিন শো বছর আগে হয়তো বা- আমি তার সাথে
কাটায়েছি; পাঁচশো বছর আগে হয়তো বা — সাতশো বছর
কেটে গেছে তারপর তোমাদের আম জাম কাঁঠালের দেশে;
4

এই সিরিজের বাকী পর্বগুলো এইখানে


মন্তব্য

নিলয় নন্দী এর ছবি

হৃদয়ে প্রেমের গল্প শেষ হলে ক্রমে ক্রমে যেখানে মানুষ
আশ্বাস খুঁজেছে এসে সময়ের দায়ভাগী নক্ষত্রের মানুষ
আশ্বাস খুঁজেছে এসে সময়ের দায়ভাগী নক্ষত্রের কাছে:

চলুক

তারেক অণু এর ছবি

দারুণ লাইনগুলা

Joltorongo এর ছবি

চলুক

তারেক অণু এর ছবি
প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

চলুক

____________________________

তারেক অণু এর ছবি
স্যাম এর ছবি

প্রিয় সিরিজ হাসি

তারেক অণু এর ছবি

জানতাম এইকথা বলবে স্যাম দা

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

তবুও ছবিগুলোকে উপেক্ষা করতে পারলাম না। চলুক

তারেক অণু এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

সময়ের কাছে সাক্ষী দিয়ে চলে যেতে হয় সবাইকে
কি কাজ করেছি আর কি কথা ভেবেছি

মাসুদ সজীব

তারেক অণু এর ছবি

মন খারাপ

তানিম এহসান এর ছবি

একবার যখন দেহ থেকে বা'র হয়ে যাব
আবার কি ফিরে আসব না আমি পৃথিবীতে?

তারেক অণু এর ছবি

না মুনে অয়

এক লহমা এর ছবি

অণুদাদার ঘনিষ্ঠজন মাশুকা তাবাসসুম শুক্তিকে জন্মদিনের বিলম্বত শুভেচ্ছা।
প্রিয় কবি আর প্রিয় ব্লগারের সমন্বয়ের এই অসাধারণ সিরিজের এই পর্বও অসাধারণ লাগল।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

তারেক অণু এর ছবি

ধন্যবাদ, লেখা পড়িতেছি

অতিথি লেখক এর ছবি

কবিতায় ছবি আর ছবিতে কবিতা। অনন্যসাধারণ।

প্রথম ছবিটা দেখে ব্যাপক লোভ হচ্ছে সংগ্রহে রাখতে।
কেমতে কি?

-ছায়াবৃত্ত

তারেক অণু এর ছবি

রাইখা দেন !

গান্ধর্বী এর ছবি

প্রথম ছবিটা দেখে মনে হচ্ছে গাছ হয়ে যাই! আর সাত নম্বরটা দেখে মনে হয় ভোর!

কবিতার কথা কি আর বলব, ছবিগুলো মারাত্মক!
চলুক চলুক

গান্ধর্বী

তারেক অণু এর ছবি

আহ , এমন কবিতা লিখতে পারলে- !

গান্ধর্বী এর ছবি

তবে হয়ে যেতেন তারেকানন্দ
হো হো হো

গান্ধর্বী

তারেক অণু এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

১,৯,১১ ছবিগুলা কি বাস্তব নাকি স্বপ্নদৃশ্য??!!!
অ্যাঁ

--------------------------
সুবোধ অবোধ

তারেক অণু এর ছবি

বাস্তব স্বপ্নের চেয়ে বেশী স্বপ্নময়

মুহাম্মদ আশরাফুল আলম এর ছবি

অণুদা, প্রথম ছবিটা ফেবুতে কাভার পিক বানাতে ইচ্ছা করছে। আপনাকে ফটো কার্টেসি দিয়ে কাজটা কি করে ফেলবো?

তারেক অণু এর ছবি

অবশ্যই

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

গুরু গুরু

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

তারেক অণু এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

ভালা লাগছে বস, চালায়া যান গুরু গুরু

- আরাফ করিম

তারেক অণু এর ছবি

ওকে হাসি

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

আজকে একটা জীবনানন্দ পাব না? পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

তারেক অণু এর ছবি
সংগীতা এর ছবি

দারুন।।।।। ছবিগুলো যেন জীবন বাবুর কথায় আরো জীবন্ত হলো।।।

তারেক অণু এর ছবি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।