জীবনানন্দ,আমার জীবনের আনন্দ - ১২

তারেক অণু এর ছবি
লিখেছেন তারেক অণু (তারিখ: রবি, ১৬/০৩/২০১৪ - ৩:৪১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

0
আমরা যাই নি মরে আজও তবু- কেবলই দৃশ্যের জন্ম হয়;

অব্যক্ত সেই দৃশ্যে দেখি কাপ্তাইয়ের বনে মাকড়শার ছেঁড়া জালে ভোরের কিরণ কী অপূর্ব বিস্ময় সৃষ্টি করেছে পৃথিবীর সমস্ত রঙ নিয়ে। কল্পনার চেয়েও সুন্দরতর দৃশ্যে চোখ আটকে থাকে, জীবনানন্দের পঙক্তিগুলো অণুরন করে চলে ধূসর মস্তিস্কের কোষে কোষে। নীল গ্রহের সমস্ত কোণে কোণে এই কবি বাকরুদ্ধ করে দেন শব্দতীর দিয়ে সুনিপুণ লক্ষ্য ভেদ করে, কারণ তিনি জীবনকে ভালবাসার গাঢ় বেদনা নিয়ে তা অন্যভাবে উপস্থাপন করে ছিলেন আমাদের সামনে।

সিরিজের বাকী পর্বগুলি পাবেন এইখানে

কঠিন অমেয় দিন রাত এই সব।
চারি দিকে থেকে থেকে মানব ও অমানসিকতা
সময়সীমার ঢেউয়ে অধোমুখ হয়ে
চেয়ে দেখে শুধু মরণের
কেমন অপরিমেয় ছটা।
তবু এই পৃথিবীর জীবনই গভীর।
1

হয়তো এসেছে চাঁদ মাঝরাতে একরাশ পাতার পিছনে
সরু-সরু কালো-কালো ডালপালা মুখে নিয়ে তার,
শিরীষের অথবা জামের,
ঝাউয়ের - আমের ;
6

যেদিন সরিয়া যাব তোমাদের কাছ থেকে – দূর কুয়াশায়
চ’লে যাবো, সেদিন মরণ এসে অন্ধকারে আমার শরীর
ভিক্ষা ক’রে লয়ে যাবে;- সেদিন দু’দও এই বাংলার তীর —
এই নীল বাংলার তীরে শুয়ে একা একা কি ভাবিব, হায়;-
সেদিন র’বে না কোনো ক্ষোভ মনে –এই সোঁদা ঘাসের ধুলায়
জীবন যে কাটিয়াছে বাংলায় – চারিদিকে বাঙালীর ভিড়
বহুদিন কীর্তন ভাসান গান রুপকথা যাত্রা পাঁচালীর
নরম নিবিড় ছন্দে যারা আজো শ্রাবণের জীবণের জীবন গোঙায়,
2

হায় চিল, সোনালী ডানার চিল, এই ভিজে মেঘের দুপুরে
তুমি আর কেঁদোনাকো উড়ে উড়ে ধানসিড়ি নদীটির পাশে!
3

রামধনু রঙের কাচের জানালা
ময়ুরের পেখমের মতো রঙিন পর্দায় পর্দায়
কক্ষ ও কক্ষান্তর থেকে আরো দূর কক্ষ ও কক্ষান্তরের
ক্ষণিক আভাস-
আয়ুহীন স্তব্ধতা ও বিস্ময়।
4

কোথায় গিয়েছে আজ সেইসব পাখি, – আর সেইসব ঘোড়া -
সেই শাদা দালানের নারী ?
বাবলা ফুলের গন্ধে, সোনালি রোদের রঙে ওড়া
সেইসব পাখি, আর সেইসব ঘোড়া
চ’লে গেছে আমাদের এ – পৃথিবী ছেড়ে;
হৃদয়, কোথায় বলো – কোথায় গিয়েছে আর সব !
5

ডানার অস্পষ্ট ছায়া বাদুড়ের ক্লান্ত হয়ে চলে
যদি সে পাতার পরে – শেষ রাতে পৃথিবীর অন্ধকারে শীতে
7

গভীর ঘাসের গুচ্ছে রয়েছি ঘুমায়ে আমি, — নক্ষত্র নড়িছে
আকাশের থেকে দূর-আরো দূর-আরো দূর-নির্জন আকাশে
বাংলার-তারপর অকারণ ঘুমে আমি পড়ে যাই ঢুলে।
আবার যখন জাগি, আমার শ্মশান চিতা বাংলার ঘাসে
ভরে আছে, চেয়ে দেখি,-বাসকের গন্ধ পাই-আনারস ফুলে
ভোমরা উড়িছে,শুনি-গুবরে পোকার ক্ষীণ গুমরানি ভাসিছে বাতাসে
রোদের দুপুর ভরে-শুনি আমি; ইহারা আমার ভালোবাসে-
8

যেইখানে সবচেয়ে বেশি রূপ- সবচেয়ে গাঢ় বিষণ্ণতা;
যেখানে শুকায় পদ্ম- বহু দিন বিশালাক্ষী যেখানে নীরব;
যেইখানে একদিন শঙ্খমালা চন্দ্রমালা মানিককুমার
কাঁকন বাজিত, আহা, কোনোদিন বাজিবে কি আর !
9

যে পাতা সবুজ ছিল,- তবুও হলুদ হতে হয়,-
শীতের হাড়ের হাত আজও তারে যায় নাই ছুঁয়ে-
যে মুখ যুবার ছিল, তবু যার হয়ে যায় ক্ষয়,
হেমন্ত রাতের আগে ঝ’রে যায়,- প’ড়ে যায় নুয়ে;-
11

দেখিব না আর আমি পরিচিত এই বাঁশবন,
শুকনো বাঁশের পাতা-ছাওয়া মাটি হয়ে যাবে গভীর আঁধার
আমার চোখের কাছে;
12

কোথাও মঠের কাছে — যেইখানে ভাঙা মঠ নীল হয়ে আছে
শ্যাওলায় — অনেক গভীর ঘাস জমে গেছে বুকের ভিতর,
পাশে দীঘি মজে আছে — রূপালী মাছের কন্ঠে কামনার স্বর
যেইখানে পটরানী আর তার রূপসী সখীরা শুনিয়াছে
বহু বহু দিন আগে — যেইখানে শঙ্খমালা কাঁথা বুনিয়াছে
সে কত শতাব্দী আগে মাছরাঙা — ঝিলমিল — কড়ি খেলা ঘর;
কোন্‌ যেন কুহকীর ঝাঁড়ফুঁকে ডুবে গেছে সব তারপর
একদিন আমি যাব দু-প্রহরে সেই দূর প্রান্তরের কাছে,
14

অই দিকে শোনা যায় সমুদ্রের স্বর,
স্কাইলাইট মাথার উপর
আকাশে পাখিরা কথা কয় পরস্পর
তারপর চলে যায় কোথায় আকাশে?
তাদের ডানার ঘ্রাণ চারিদিকে ভাসে।
15

তারপর তুমি এলে, মাঠের শিয়রে ,-চাঁদ ;-
পৃথিবীতে আজ আর যা হবার নয়,
একদিন হয়েছে যা,- তারপর হাতছাড়া হয়ে
হারায়ে ফুরায়ে গেছে,- আজো তুমি তার স্বাদ লয়ে
আর একবার তবু দাঁড়ায়েছে এসে !
নিড়নো হয়েছে মাঠ পৃথিবীর চারদিকে,
শস্যের ক্ষেত চষে- চষে
গেছে চাষা চ’লে;
তাদের মাটির গল্প- তাদের মাঠের গল্প সব শেষ হ’লে
অনেক তবুও থাকে বাকি,-
তুমি জান – এ- পৃথিবী আজ জানে তা কি !
10

গতকাল রাতে ফিনকি দেয়া জ্যোছনায় চিরপরিচিত ঢাকাকে অপার্থিব মনে হয়ে ছিল। জানতে ইচ্ছা করছিল কজন ঢাকাবাসী আজ ভুল করে হলেও চন্দ্রাহত হয়েছেন, মুখে পূর্ণিমার চাদের ঝলসানি নেবার জন্য নিভৃতে জানালার পাশে বা ছাদের উপরে দাঁড়িয়েছেন। সাথে ছিলেন জীবনানন্দের আক্ষরিক প্রেমিক রুহুল আমিন ভাই, যিনি জীবনানন্দকে সবসময় বলে জি দাস ( তাঁর জীবনে অবশ্য দুইজন j এর রাজত্ব, জীবনানন্দ দাশ এবং জ্যাক ানিয়েল ! )। যার প্রিয় সংলাপ- কখনো একটি পাখি যদি একটি মাছকে ভালবেসে ফেলে তাহলে তারা ঘর বাঁধবে কোথায়?

জীবনের বিপন্ন বিস্ময়কে ছুঁয়ে ছেনে পরখ করে নিতে চাওয়া রুহুল ভাইয়ের জন্য এই সামান্য পোস্টটি। আশা করি শীঘ্রই আমরা জীবনানন্দ ভ্রমণ সেরে বরিশাল থেকে ফিরে আপনাদের জানাতে পারব তীর্থ ভ্রমণের অনুভূতি।

পুনশ্চ- আজ রাতের চাঁদকে মুগ্ধতা জানাতে ভুলবেন না কিন্তু। )


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

দারুণ সামঞ্জস্যপূর্ণ ছবি-সমেত লেখা।

শুভেচ্ছা, অনু ভাই।।।

-masum.badal
মাসুম বাদল

তারেক অণু এর ছবি

ধন্যবাদ

অতিথি লেখক এর ছবি

অপূর্ব !!!

রংধনুর ছবিটা দেখে মনে হচ্ছে ছুয়ে ফেলা যাবে হাসি

তাহসিন রেজা

তারেক অণু এর ছবি

সেটা অসাধারণ মুহূর্ত ছিল। চলমান গাড়ী থেকে তোলা

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

আপনার প্যাশন কি? ফটোগ্রাফি, নাকি লেখালেখি, নাকি ঘোরাঘুরি, নাকি বার্ড ওয়াচিং, নাকি প্রকৃতি বিক্ষন, নাকি ..............?

তারেক অণু এর ছবি

বেঁচে থাকার মত বেঁচে থাকা

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

এ মানব জনম এক পরম পাওয়া ! প্রতিটা মূহুর্ত বাঁচার আনন্দ উপভোগ করো। বাঁচার মতো বাঁচো। মন যখন যা চাইবে তাই করো । এ মানব জীবন বড়ই অনিশ্চিত। পর মুহূর্তে বেঁচে থাকব কিনা সেটাই অজানা। আমি বলি, মানব জীবনে ভবিষ্যৎ বলে কিছু নেই। আছে অতীত আর চরমতম সত্য হচ্ছে বর্তমান, মানে ঠিক এই মুহূর্তটি । এ জগতে কে কবে আগামীকাল দেখেছে!

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

হ্যা, ভাল লাগলো। আর আজতো দোলপূর্ণিমা! অবশ্যই জোছনা দেখবো।
ভাল থাকুন। আনন্দে থাকুন।

বন্দনা এর ছবি

গতকাল রাতে চাঁদটা আসলেই মারাত্তক সুন্দর ছিল।প্রথম ছবিটায় চোখ আটকে গেল হে।

তারেক অণু এর ছবি

আমার প্রথমে বিশ্বাসই হয় নি এমন রঙচঙে মাকড়সার জাল দেখে -

এক লহমা এর ছবি

চলুক
কয়েকবার পড়লাম, দেখলাম। উত্তম জাঝা!

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

তারেক অণু এর ছবি

শুভেচ্ছা

ঝিঝি পোঁকা এর ছবি

অসাধারণ কম্পোজিশন ৷বরাবরের মতই দারুণ লাগল ৷১১,১২ নং চমৎকার ৷
পুনশ্চ মনে থাকিবে ৷ আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

------------------------------------------
ঝিঝি পোঁকা(ভুল বানানেই সচলে)

তারেক অণু এর ছবি

দেখে জানিয়েন--

অতিথি লেখক এর ছবি

কবিতা আর ছবি দিয়ে একটা দারুণ দৃশ্য দেখলাম মনেহলো। কবিতা-সিকোয়েন্স-ছবি সব মিলিয়ে একটা মায়ার জগত সৃষ্টি করলেন। অপুর্ব হাসি

Shah Waez (শাহ্‌ ওয়ায়েজ।)
Facebook

..............................................................................................
কোথাও নেই ঝুমঝুম অন্ধকার
তক্ষক ডাকা নিশুতিতে
রূপকথা শুনে শিউরে উঠে না গা
স্বপ্নে আমার শরীরে কেউ ছড়ায় না শিউলি ফুল
আলোর আকাশ নুয়ে এসে ছোঁয় না কপাল

তারেক অণু এর ছবি

অনেক অনেক ধন্যবাদ --

স্যাম এর ছবি

আবার এসেছে ফিরে প্রিয় সিরিজ ... হাসি
আজ রাতের চাঁদকে মনে করিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ 'উড়ন্ত ঘুড়ি' (নামটা কে দিয়েছিল?)

তারেক অণু এর ছবি

তানিম এহসান

তারেক অণু এর ছবি

তানিম এহসান ভাই

অতিথি লেখক এর ছবি

বরাবরের মতোই মুগ্ধতা জাগানিয়া পোষ্ট।

-এস এম নিয়াজ মাওলা

তারেক অণু এর ছবি

ধন্যবাদ

অতিথি লেখক এর ছবি

বরাবরের মতোই মুগ্ধতা জাগানিয়া পোষ্ট।

-এস এম নিয়াজ মাওলা

তারেক অণু এর ছবি
আয়নামতি এর ছবি

যথারীতি চমৎকার চলুক

সেদিন দু’দও এই বাংলার তীর

দু'দও শব্দের অর্থ কী হবে?

যেটা খুব জরুরী: নিজের টাইপো শুধরে নেবার পাশাপাশি অন্যেরটা শুধরে নিতে সাহায্য করুন( আসছে একজন! বললেও শুনছিনা)
অণুরন- অনুরণ, চাঁদের ঁ বিন্দু ধুয়ে গেছে জ্যোৎস্নায়। ওর কপালে ফিরিয়ে দেবেন ফোটাটি প্লিজ!

নীড় সন্ধানী এর ছবি

চাঁদের ঁ বিন্দু ধুয়ে গেছে জ্যোৎস্নায়। ওর কপালে ফিরিয়ে দেবেন ফোটাটি প্লিজ!

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

নীড় সন্ধানী এর ছবি

আপনারে দিয়ে আরেকটা বই বাইর করাতে হবে।
নাম হবে "জীবনান্দের দোয়েল ফড়িং এর সাথে তারেক অনুর সোনালী ডানার চিল"।
আগা গোড়া কবিতাময় অ্যালবাম। খাইছে

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

হৈ মিয়া - আপনে কৈত্তে এরহম মারাত্মক সব ফটুক বাইর করেন বলেন তো!!

আমার জীবনের একটা আনন্দ - তারেকাণুর এই সিরিজ!!

____________________________

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

অনুদার প্রশংসা আর করব না, লেখার না, ঘোরার না, ছবির না ...... কিচ্ছুর না !
এটা যে কি চমৎকার একটা সিরিজ সেটাও বলব না। খাইছে

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনের জন্য হিংসার বস্তা উপুর করে ঢেলে দিয়ে গেলাম!!!!
যেমন ছবি, তেমন সামঞ্জস্যপূর্ণ কোটেশান। হাততালি

সুবোধ অবোধ

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হাততালি হাততালি হাততালি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।