ভিনগ্রহের কমলা রঙের রোদ

তারেক অণু এর ছবি
লিখেছেন তারেক অণু (তারিখ: শনি, ২৭/১২/২০১৪ - ১১:২১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কাল রাত্তিরে ওয়ারনামবুল শহরের আকাশে কালপুরুষ দেখে বেশ আয়েশ করে ঘাড় বেঁকিয়ে দেখতে যেয়ে চমকে উঠলাম, পুরা তারামণ্ডলটাই উল্টে আছে! কাঁধের আদ্রা চলে এসেছে নিচে, হাঁটুর বাণরাজ ডিগবাজি মেরে উপরে এবং উল্টো দিকে! বিশাল কালপুরুষের বেল্ট আর তার নিচের নীহারিকা চলে গেছে কাঁধের কাছাকাছি! কী কেলেংকারি! এমন অদ্ভুতুড়ে ঘটনা কেন হবে? আমি তো আর উল্টো হয়ে ঝুলে নেই !

নিজে উল্টো ছিলাম না বটে, কিন্তু পৃথিবী উল্টে গেছে যে! মানে চিরচেনা উত্তর গোলার্ধ থেকে চলে এসেছি পৃথিবীর অন্য প্রান্তে, দক্ষিণ গোলার্ধে যেখান সপ্তর্ষি নক্ষত্রমণ্ডল দেখা যায় না বলে নাবিকেরা দিক ঠিক করে হংস মণ্ডল বা সাউদার্ন ক্রশ দেখে! কাজেই কালপুরুষ তো উল্টাবেই!

ভিনগ্রহে কোনদিন যাওয়া হবে কিনা এই আশঙ্কা ছোট থেকে কুরে কুরে খেত, কিন্তু অস্ট্রেলিয়া আসার পর গত দুই দিনে মনে হচ্ছে এক অচিন গ্রহেই চলে এসেছি। এখানে আকাশ অদ্ভুত কমলা রঙের রোদে ছেয়ে থাকে প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত, এখানে গাছেদের বিচিত্র সব গড়ন যা কেবল সাইন্স ফিকশনেই দেখা যায়, ঝোপে ভরা অবারিত প্রান্তর, কান্ড থেকে ফুলে ফেপে গাছে খুলে যেন ভেসে আছে শূন্যে। প্রাণীরা তো আরও এককাঠি বাড়া, বাচ্চা জন্ম দেবার পর আবার থলেতে নিয়ে বড় করে মাসের পর মাস ! সামনে দিয়ে থপ থপ করে চলে গেল ক্যাঙ্গারু আর ওয়ালাবির দল, ঘুমকাতুরে মাতাল কোয়ালা ঠাই ঘুমোল আমাদের দাড় করিয়ে! দুইজাতের প্রাণী ডিম দেয় আবার বাচ্চাকে দুধও খাওয়ায়, প্ল্যাটিপাস আর একিডনা, তাদেরও বাস এই ভিনগ্রহেই! আজ অবশ্য দেখা মিলল না উল্কার আঘাতে সৃষ্ট গহবর আর মৃত আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখে সৃষ্ট বন আর হ্রদ খুঁজেও, কাল নিশ্চয়ই দেখা হবে! যেমন ভাবে দেখা হলো সাদা কাক, কালো রাজহাঁস, উড়তে অক্ষম পাখি ইমুর সাথে!

প্রশান্ত মহাসাগরের বেলাভূমিতে যেখানে সাউদার্ণ রাইট তিমি বাচ্চা দেয়, সেখানে মোলাকাত হল বিচিত্র আরও কিছু জীবের সাথে, আর কোটি বছর আগে সারা বিশ্ব থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া এই দ্বীপের অদ্ভুতদর্শন কিছু পাথরের সাথে! আবারও মনে হল, ভিনগ্রহে আছি।

থাকব আরও সপ্তাহ দুই। একটু ধাতস্থ হয়ে নিই, আরও গল্প হবে।

কেমন?


মন্তব্য

শান্ত এর ছবি

ছবি কই?

__________
সুপ্রিয় দেব শান্ত

সুবোধ অবোধ এর ছবি
আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম ওক্কে, বইলাম।

শাব্দিক এর ছবি

ছোটবেলায় একটা বইতে পড়েছিলাম অসট্রেলিয়া ঘুরে এসে এক পর্যটক নাকি বলেছিল, এ এক উল্টা মহাদেশ।
শীতকালে গরম আর গরমকালে শীত, সকালবেলা বিকাল আর বিকালবেলা সকাল, মানুষেরা সব নাকি হাত দিয়ে হাটে আর পা দিয়ে খায়।
উল্টো মহাদেশের সচিত্র গপ্প শুনতে চা - কফি নিয়ে বসলাম।

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

উত্তম জাঝা!

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

আজব তো!

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি আপনার এই লেখার জন্য।

____________________________

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।