নদী, আমার সজল নদী

তুলিরেখা এর ছবি
লিখেছেন তুলিরেখা (তারিখ: রবি, ০৮/০২/২০০৯ - ২:১৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কতকাল আর খোলামেলা হাওয়াওড়া দিনগুলো নেই। সময়ের সেই খেলা আর নেই, সকাল দুপুর বিকেল সন্ধে রাত ধরে কাজ-অকাজের ঠাসাঠাসি করে ভরা বাক্সের মধ্যে খেলার অবকাশই বা কোথায়? স্বপ্নের চিপাগলির মধ্যে শরতের হঠাত্ রোদ্দুরের মতন শুধু মাঝে মাঝে স্মৃতির আঁচল উড়ে পড়ে এসে আর গলি অবাক হয়ে ভাবে কি এসব, কোথা থেকে এলো? কিছুই বোঝা গেলো না!

আঁচলের হাওয়ায় হাওয়ায় মনে পড়ে সেই লুকোচুরি, সেই দৌড় দৌড় দৌড়। টুকি টু...কতকাল আর খোলামেলা হাওয়াওড়া দিনগুলো নেই। সময়ের সেই খেলা আর নেই, সকাল দুপুর বিকেল সন্ধে রাত ধরে কাজ-অকাজের ঠাসাঠাসি করে ভরা বাক্সের মধ্যে খেলার অবকাশই বা কোথায়? স্বপ্নের চিপাগলির মধ্যে শরতের হঠাত্ রোদ্দুরের মতন শুধু মাঝে মাঝে স্মৃতির আঁচল উড়ে পড়ে এসে আর গলি অবাক হয়ে ভাবে কি এসব, কোথা থেকে এলো? কিছুই বোঝা গেলো না!

আঁচলের হাওয়ায় হাওয়ায় মনে পড়ে সেই লুকোচুরি, সেই দৌড় দৌড় দৌড়। টুকি টুকি টুকি। সেইসব অরূপগন্ধী সকাল,সেইসব শিরশিরে হাওয়া, সেইসব মরিচগন্ধের গ্রীষ্মদুপুর, ক্লান্ত মধুর শেষবিকেল, মনকেমন করা হেমন্ত-গোধূলির ম্লান রাঙামাটি আলো,আনন্দের শরতের দ্রুতচ্ছন্দ প্রহর-আর সবকিছুর ভিতর দিয়ে দৌড় দৌড় দৌড়-টুকি টুকি টুকি। তখন থামার কথা মনেও ছিলো না, চারিদিকে কী অফুরান বিস্ময়! সামনে কী অভাবিতপূর্ব বৈভব! জীবন প্রসারিত খোলামাঠ।

বৃদ্ধ কাল হাসিমুখ দাদামশায়ের মতন, তাঁর একমুখ সাদা দাড়ি শরতের নীল-আকাশের শুভ্র মেঘের মতন। সবকিছুর ভিতরে- ওই আলোছায়া হাসিকান্না রাগবিরাগের ভিতরে সস্নেহ হাসি নিয়ে চেয়ে থাকতেন। কেউ যে কাল পেরিয়ে যেতে পারে না জীয়ন্তে! অথচ ঐ বুড়ো দাদামশায়ের কী যে স্নেহ, বারে বারে ধরা দিতে চান কচি কচি আঙুলগুলোর মধ্যে। ওই শিরাওঠা হাতগুলো ওঁর, কী কোমল, কী স্নিগ্ধ! জলদা হয়ে কোর্টের বাইরে পড়ে যাওয়া বালিকাটিকে নিজের কাছে ডেকে এনে নিজের উত্তরীয়ে মুছে দিতেন ওর ফোঁটা ফোঁটা অশ্রু, সেই অশ্রু যা কেউ কোনোদিন দেখেনি, কোনোদিন দেখবে না! দখিনা বাতাসে শুকিয়ে গেছে সেই জলের দাগ। ছয় সাত-আট থেকে নয়-দশ করতে করতে কবে সে পার হয়ে যাবে আঠেরো-কুড়ি-পঁচিশও একদিন!

ফাগুন-চৈত্রের বিকালে মনকেমন করা বাতাস বইতো! ছাদের উপর থেকে কতদূর অবধি দেখা যেতো! ওই দূরে গাছের ঘন সবুজ রেখা নীল হয়ে আসতো, সেইখানে আকাশের নীল বুকে মিশে গেছে পৃথিবীর সবুজ আঁচল, দিগন্তকুহেলি এসে ঢেকে দিয়েছে সেই ঘন রহস্য।

পশ্চিমের আকাশ মুঠা মুঠা লাল আবীরে ভরে যেতো অস্তবেলায়,পাখিরা ফিরে আসতো পুবের দিকে, সেই রাঙামেঘের পাশ দিয়েই উড়তে উড়তে কোন্‌ অলখ নদীর দিকে চলে গেছে কত প্রিয়মুখ, সেইসব তারাফোটা সাঁঝে!

নদী, আমার পাগল নদী
আমার কাছে আসে যদি,
নীল কাজলের টিপ পরিয়ে
গলায় দেবো মালা।

নদী, আমার ডাগর নদী
আমার কাছে আসে যদি,
চুমকি-রেশম ওড়না দেবো
মকরমুখী বালা।

নদী, আমার সজল নদী
আমার কাছে আসে যদি,
মিহিন সবুজ শাড়ী দেবো
রঙ-কুসুমের থালা।

নদী, আমার অলখ নদী
আমার কাছে আসে যদি,
হৃদয়বনের শিউলি দেবো
কান্নাশিশির ঢালা।

নদী, আমার আঁধার নদী
আমার কাছে আসে যদি-
স্রোত-আঁচলে ভাসিয়ে দেবো
হাজার প্রদীপমালা।


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক (অন্য কম্পিউটারে) এর ছবি

প্রিয় তুলিরেখা,
আপনার লেখাগুলো আমার বেশ ভালো লাগে। আপনি বেশ সুন্দর করে লিখতে পারেন। কিন্তু একটা বিষয় মিস করি তা হলো এমন সুন্দর ভাষা দিয়ে আপনাকে কখনো মন্তব্য করতে দেখিনা। যদিও ব্যাপারটা আপনার ব্যক্তিগত বিষয় তবুও সুন্দর একটা মন্তব্য লেখককে অনেক উৎসাহ দেয় বলে মনে করি। আর আপনি যেহেতু সুন্দর করে লিখতে পারেন, হয়তো সুন্দর মন্তব্যও করতে পারবেন।

তুলিরেখা [অতিথি] এর ছবি

সব বলেছেন বলে খুব ভালো লাগলো প্রকৃতিপ্রেমিক।
আসল কথাটা বলি শোনেন। আমি এখনো নিজেকে এ পাড়ায় খানিকটা নতুন বলেই মনে করি। এ পাড়ায় এত ভালো ভালো লেখক যে মাঝে মাঝে নিজের লিখতে লজ্জাই লাগে। কারুর কোনো কোনো লেখা পড়ে মনে এমন গভীর রেখা পড়ে যে মন্তব্য করতে পারিনা, সেই যে কোন এক কবিতায় ছিলো টূ ফুল টু সাউন্ড অ্যান্ড ফোম, সেই অবস্থা!
মন্তব্য করতে ইচ্ছা করে কিন্তু মনে হয় বুঝি ভুল হবে,বুঝি কি বলতে কি বলে ফেলবো! লেখকের কাছে এক একটা লেখা তো খুব নরম, খুব আদরের, খুব প্রিয় সন্তানের মতন। সেখানে মন্তব্য করা তো স্বপ্নের উপরে পা ফেলা! স্বভাবতঃ অসাবধানী আমার কিরকম একরকম ভয়ভয় লাগে।
ভালো থাকবেন।

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

আচ্ছা তুলি, সেটা চিন্তা ক'রে যদি আমরাও কেউ আপনার লেখায় কমেন্ট না করি বা না করতাম, তবে?! ভালো লাগতো?
স্যরি, মাঝখানে এসে নাক গলানোর জন্য। হাসি

০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০
"আমার চতুর্পাশে সবকিছু যায় আসে-
আমি শুধু তুষারিত গতিহীন ধারা!"

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

তুলিরেখা [অতিথি] এর ছবি

আরে সাইফুল, আমি নতুন লোক, তায় অতিথিমাত্র, আমার লেখায় কমেন্ট না পেলে তো ধরে নিবো আর লেখা জায়েজ হবে না। মানে মুখের সামনে তো আর কেউ বলবে না
আপনে আর আইসেন না, নানা লক্ষণে বুঝে নিতে হবে। হাসি

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

স্যরি, মানতে পারলাম না। অজুহাত যথেষ্ট হাতভাঙা হয়েছে। হাসি

০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০
"আমার চতুর্পাশে সবকিছু যায় আসে-
আমি শুধু তুষারিত গতিহীন ধারা!"

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

অনিকেত এর ছবি

আবারো আমাকে হতাশ করলেন----

কবে বাজে রকমের একটা লেখা দেবেন?

বরাবরকারের মতই 'বিশ্রী রকমের ভাল' হয়েছে।

তুলিরেখা [অতিথি] এর ছবি

অনিকেত, আপনে যে কি কন!

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

কবিতাটা খুব ভাল লাগলো। আপনার লেখাগুলোর অন্য রকম এক কাব্যিক স্নিগ্ধতা থাকে। মন অস্থির থাকলে তাই আপনার লেখায় চোখ দেই না। আজকে একটু সময় হল। একটু জোরে শব্দ করে পড়লাম। ভাল, যথারীতি।

তুলিরেখা [অতিথি] এর ছবি

ধন্যবাদ রইলো। সব শুনে খুব ভালো লাগলো।

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

তেঅইলে লদী লিচ্চয় আসবে আনে!

[কী সুন্দর!! ক্যাম্নে কী!!!]

০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০
"আমার চতুর্পাশে সবকিছু যায় আসে-
আমি শুধু তুষারিত গতিহীন ধারা!"

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

তুলিরেখা [অতিথি] এর ছবি

আরে কোইনসিডেন্স! একবার এক বন্ধু উড়িষ্যার এক নদীর সম্বন্ধে লেখা এক কবিতা শুনে কবিতায় জবাব দিয়েছিলো-
"ওড়িয়া হয়েচু বলি লদি হবো ন বা!
উই লদি বড় লদি তাতো মোর কি?
আমাদের ছোটো লদি হৃদসখিটি!"

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

হাসি

০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০
"আমার চতুর্পাশে সবকিছু যায় আসে-
আমি শুধু তুষারিত গতিহীন ধারা!"

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

মন্তব্যে যথারীতি পুনরাবৃত্তি হয় সেই আগের ঘটনাই। প্রতিটা লেখায়। আচ্ছা আপনে কি নস্টালজিয়ার ফ্যাক্টরি খুলে বসেছেন? আপনার লেখা পড়লেই ক্যামন নস্টালজিক হয়ে যাই বারবার।

তুলিরেখা [অতিথি] এর ছবি

নস্টালজিক? আমিও মাঝে মাঝে নস্টালজিক হই, লজিক ও কাজ করে না তখন। হাসি

তুলিরেখা [অতিথি] এর ছবি

আরও একটা ব্যাপার আছে। আমি অনেক কমেন্ট করি লগিন না করে, তাই হয়তো সেগুলো গুনতিতে আসে না। কমেন্ট যে খুব কম করি তাও না, আজই তথ্য পাতায় গিয়ে দেখলাম লগিন করে করা কমেন্টসংখ্যাই শতাধিক!!!
তবু স্বীকার করতেই হবে কমেন্ট সেভাবে প্রাণখুলে করতে পারিনি কখনো। অপরিচয়ের দ্বিধা থেকে গেছে। আসলে নিয়মনীতিগুলোর সাথে আমার ঠিকঠাক পরিচিত হয়ে আসতে আরো কিছু সময় হয়তো লাগবে। সমস্ত ত্রুটিবিচ্যুতির জন্য ক্ষমা চেয়ে রাখছি।
শুভেচ্ছা রইলো সকলের জন্য। সচলঘর দিনদিন আলো হয়ে উঠুক।

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

...............................................................

০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০
"আমার চতুর্পাশে সবকিছু যায় আসে-
আমি শুধু তুষারিত গতিহীন ধারা!"

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

প্রকৃতিপ্রেমিকের কমেন্টে উত্তম জাঝা!

তুলিরেখার কমেন্টও দেখতে চাই। চোখ টিপি

তুলিরেখা এর ছবি

অ্যাঁ!!!!!!
কন্কি?
হাসি
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।