দেশবিদেশের উপকথা-হিরণ্যকশিপু(শেষাংশ)

তুলিরেখা এর ছবি
লিখেছেন তুলিরেখা (তারিখ: রবি, ১৮/১০/২০০৯ - ৩:১৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আগের পর্বগুলো এখানে:
জয়বিজয়

হিরণ্যাক্ষ

হিরণ্যকশিপু প্রথমাংশ

হিরণ্যকশিপু মধ্যাংশ

দিন যায়, হিরণ্যকশিপুর শাসনকালে খুবই উজিয়ে ওঠে দৈত্যরাজ্য। যাকে বলে সুবর্ণযুগ। সব ঋতুতে সব ফলফলাদি পাওয়া যায়, জমিতে অঢেল শস্য তো হয়ই, সমুদ্র থেকে পর্যন্ত সম্পদ আহরণ করা হয়। প্রজারা সুখে আছে, রাজার মনেও আনন্দ।

এদিকে রাজপুত্র প্রহ্লাদের ইস্কুলে যাবার সময় হয়ে হয়েছে, নিয়ম অনুযায়ী তাকে গুরুর আশ্রমে পাঠানোর ব্যবস্থা হলো। দৈত্যদের পরমপূজ্য গুরু হলেন শুক্রাচার্য, কিন্তু তার নিজের তো সময় বেশী নেই, দৈত্যদের ডিফেন্স প্রোজেক্ট দেখতে হয়, গবেষণা করতে হয়, এদিক ওদিক কনফারেন্সে যেতে হয়, সময় কই যে দৈত্যপুত্রদের গুরুগিরি করবেন? তার উপরে আবার মেয়ে দেবযানীর বিয়ে টিয়ে নিয়ে খুবই ঝামেলার মধ্যে ছিলেন তিনি।

শুক্রাচার্যের দুই ছেলে ষন্ড আর অমর্ক আশ্রমের দুই গুরু। তারা দুজনে মিলে দৈত্য বালকদের ধর্মনীতি অর্থনীতি রাজনীতি দন্ডনীতি ভেদনীতি এইসব পড়ান। প্রহ্লাদ এদের পড়ানো শোনে বটে কিন্তু মনে মনে সে তো ভূমিষ্ঠ হবার আগের থেকেই কন্ডিশন্ড হয়ে আছে নারদের আশ্রমের বৈষ্ণব শিক্ষায়। ( "ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড" মনে পড়ে? ) তার মনে বন্ধু আর শত্রুর ভেদ নেই, সকলেই শ্রীহরির চরণরেণুমাত্র।

ছেলে কেমন শিখছে টিখছে দেখার জন্য হিরণ্যকশিপু ডেকে পাঠায় প্রহ্লাদকে। দুই গুরু ছাত্রকে নিয়ে আসে রাজসভায়। দৈত্যরাজ ছেলেকে কোলে বসিয়ে জড়িয়ে ধরে খানিকক্ষণ আদর করে বলে, "খোকা, ভালো করে মন দিয়ে পড়াশোনা করিস তো? এতদিন কি শিখলি সেখানে? "

প্রহ্লাদ বলে, " শিখলাম এ জগতে মানুষেরা যে "আমার" "আমার" করে বেড়ায়, এটা খুবই ভুল ব্যাপার। আসলে জগতের সবই মায়া, সত্য কেবল বিষ্ণু। সময় থাকতে থাকতে সকলেরই বিষ্ণুর চরণে শরণ নেওয়া উচিত।"

রাজা তো একেবারে শকড! " বলিস কী? এসব কে শেখায় ? আমি ভালো করে খোঁজ নিয়ে দেখবো এসব আজেবাজে শিক্ষা কারা তোদের দিয়ে গোল্লায় পাঠানোর ব্যবস্থা করছে। ঠিক আছে, এখন আশ্রমে ফিরে যা, ভালো হয়ে থাকবি, মন দিয়ে পড়াশোনা করবি, কেমন?" কপালে চুমো খেয়ে ছেলেকে কোল থেকে নামিয়ে দেয় রাজা। শিষ্যসমেত দুই গুরু ষন্ড আর অমর্ক ফিরে যায় আশ্রমে।

আশ্রমে পৌঁছে ওরা প্রহ্লাদকে জিজ্ঞাসা করে, "তোকে এসব তো আমরা শিখাইনি! এসব উল্টাপাল্টা কিসব বললি তুই তোর বাবাকে? "

প্রহ্লাদ বলে, "শ্রীহরিই জগতের সারসত্য, এই পরম শিক্ষাকে যারা উল্টাপাল্টা বলে তাদের সাথে আর কি কথা বলবো?"

ষন্ডামর্ক রেগে আগুন হয়ে গিয়ে বলে, "এ ছোঁড়া তো মহা মিচকে! আজকে ভালোমতন ধোলাইয়ের ব্যবস্থা করতে হবে দেখছি। নইলে এ সিম্পটম সারানো মুশকিল হবে।"

গুরুরা এরপরে অনেকদিন খুব পড়াশোনা করালো জোরকদমে, তারপরে নিজেরাই একদিন প্রহ্লাদকে নিয়ে চললো রাজসভায়। আগের বারে শিষ্য ওরকম উল্টাপাল্টা বলায় নিজেরাও তারা মনে মনে ক্ষুব্ধ হয়েছিলো, এবারে পই পই করে রাজপুত্রকে শিখিয়েছে যেন আগেরবারের মতন না হয়।

অনেকদিন পরে ছেলেকে দেখে রাজা তো একেবারে বিগলিত। ছেলেকে কোলে বসিয়ে জড়িয়ে ধরে রইলো অনেকক্ষণ। তারপরে হাসিমুখে বললো, "কত বড় হয়ে গেছিস খোকা! বল্‌ কি শিখলি সেখানে।"

প্রহ্লাদ বলে, " শিখলাম জগতে একমাত্র বিষ্ণুনাম ধ্যান করেই মায়া থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। তাঁরই পূজা করতে হবে, তাঁকেই বন্ধু করতে হবে, তাঁরই চরণে শরণ নিতে হবে। এই ই জগতের শ্রেষ্ঠ শিক্ষা। "

রেগে আগুন হয়ে ষন্ড আর অমর্কের দিকে তাকিয়ে দৈত্যরাজ বলে, "এসব কি শুনছি? শত্রুপক্ষের উপাসনা করা শেখাচ্ছেন আপনারা? আপনাদের বিশ্বাস করে ছেলেপিলেগুলোকে পড়তে পাঠিয়েছি, এভাবে এদের বিষিয়ে দিচ্ছেন?"

ষন্ড আর অমর্ক বলে, " দিব্যি করে বলি রাজা, এসব আমরা শিখাই নি। কখনো না, কোনোদিন না। এসব ও নিজে থেকে বলে। আমাদের দোষ নেই কোনো।"

দৈত্যরাজ ছেলের দিকে ফিরে বলে, " কে তোকে এসব শিখিয়েছে? "

প্রহ্লাদ বলে, " শ্রীহরি সর্বত্র, যার মন প্রস্তুত সেই শিখতে পারে সত্যকে। যার মন রাগ দ্বেষ ঘৃণা দিয়ে ভরা সে আলোর পথ দেখতে পায় না। আসলে সকলেরই উচিত এইসব অন্ধকার ঝেড়ে ফেলে ভগবান বিষ্ণুর চরণ ধ্যান করা।"

এইবারে ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে হিরণ্যকশিপুর, রাগে অন্ধ হয়ে ছেলেকে কোল থেকে ছুঁড়ে মাটিতে ফেলে দিয়ে সে বলে, " জল্লাদ, জল্লাদ, এই ছেলেকে এক্ষুণি নিয়ে গিয়ে শিরশ্ছেদ করো। এ কালকেউটেকে বাড়তে দিলে আমাদের দৈত্যকুল ধ্বংস হয়ে যাবে। হাতপা বিষিয়ে গেলে কেটে ফেলে দিয়ে বাঁচাতে হয় শরীরটাকে, নইলে জীবন রক্ষা হয় না। এই ছেলের জন্য সমগ্র দৈত্যকুল ধ্বংস হোক আমি চাই না। "

জল্লাদেরা এসে নিয়ে গেল প্রহ্লাদকে ধরে। ষন্ড আর অমর্ক এতখানি হবে বুঝতে পারে নি, তারা একেবারে হতভম্ব। মেরেই ফেলবে? একেবারে মাথা কেটে ফেলবে? আহা ছেলেটা খুব মেধাবী ছিলো, স্বভাবেও এমনিতে ভালো। কেন যে বাপের কাছে এসে এইসব বলে কেজানে! কত করে তারা বুঝিয়ে আনলো--

এদিকে জল্লাদেরা তরোয়াল, বর্শা, কুঠার সবকিছু ট্রাই করেও কিছুই করতে পারলো না রাজপুত্রের, কিছুতেই অস্ত্র দিয়ে কিছু করা যায় না, বর্শা ঢোকে না বুকে, কুঠার বা তরোয়াল কিছু দিয়েই গলা কাটা যায় না। এতটুকু বাচ্চা ছেলে, দিব্যি হাসিমুখে বসে আছে যেন কিছুই হয় নি! (স্ক্যান্ডিনেভিয়ার উপকথার সূর্যদেবতা বালডারের গল্প মনে আছে? সবাই বর্শা পাথর তীর ছুঁড়ে মারছিলো, বালডারের গায়ে লেগে সব ফিরে আসছিলো? )

হিরণ্যকশিপু এই রিপোর্ট পেয়ে অন্যান্য উপায় প্রয়োগে হত্যার চেষ্টা করলো, প্রহ্লাদকে বিষ খাওয়ানো হলো, আগুনে ফেলে দেওয়া হলো, পাহাড় থেকে ঠেলে ফেলা হলো, হাতী দিয়ে মাড়ানো হলো। কিছুতেই কিছু হলো না, প্রহ্লাদ যেমনকে তেমনই রইলো। একেবারে পেল্লাদ মার্কা ছেলে যাকে বলে! হাসি

দৈত্যরাজ গভীর উদ্বেগে চুপ করে মাথা নিচু করে বসে রইলো, সে এভাবে এত রকম উপায়ে ছেলেকে মারার চেষ্টা করেছে, এ খবর প্রহ্লাদের মায়ের কাছে যাবে। ছেলের কোনো ক্ষতি হয় নি ঠিকই কিন্তু ---আহ, কি দরকার ছিলো--- ছেলেও কি এসব ভুলতে পারবে কোনোদিন?

ষন্ড আর অমর্ক বলে, " মহারাজ, কেন এত বিষন্ন হচ্ছেন? এখন রাজপুত্রের বয়স কম, বড় হলে নিজের বিচারবিবেচনা হবে, তখন সব ঠিক হয়ে যাবে। আপনি ত্রিভুবনবিজয়ী বীর, আপনার কি এই সামান্যতে বিচলিত হওয়া শোভা পায়? "

রাজা বলে, "আমাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন ? যা হয়ে গেছে তাতো আর মুছে দেওয়া যাবে না। এখন শুধুই অনুশোচনা। আসলে আমিই নিজের মাথা ঠান্ডা রাখতে পারিনি। ঠিক আছে, চিন্তা করেই বা এখন কি হবে? আপনারা ওকে আশ্রমে নিয়ে যান, ভালো করে আমাদের নীতিগুলো শেখান, পরবর্তীকালে রাজ্যপরিচালনার ভার তো ওকেই নিতে হবে। এই পরবর্তীকাল খুব দূরেও নয় বলেই মনে হচ্ছে। "

ষন্ডামর্ক প্রহ্লাদকে নিয়ে বিদায় গ্রহণ করলো। রাজসভা সেদিনের মতন শেষ করে হিরণ্যকশিপু নিজের ঘরে গেল (রাণীর কাছে মুখ দেখালো কিকরে সে ব্যাপারে উপকথাকার নীরব, হয়তো রাণী ক্ষমাই করে দিয়েছিলো। কৌতূহল বেশী থাকলে অম্লান অভীকে জিগান, তিনি তার স্মৃতি থেকে বলে দিতে পারতেও পারেন। হাসি )

আশ্রমে ফিরে গিয়ে এবারে প্রহ্লাদ মন দিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি আরেকটা কাজ করলো। ষন্ডামর্ক গুরুদ্বয় যখন পড়িয়েটড়িয়ে শেষ করে ছুটির ঘন্টা বাজিয়ে হাওয়া খেতে চলে যেতেন, সেসময়টার জন্য প্রহ্লাদ নিজেই একটা ইস্কুল খুলে ফেলে অন্যান্য দৈত্যবালকদের নারদীয় ভক্তিবাদ শিক্ষা দিতে শুরু করে দিলো। এইসব ছেলেপুলেরা ছিলো খুব স্মার্ট! তারা বাই রোটেশন কয়েকজন খেয়াল রাখতো গুরুরা ফিরছেন কিনা, ফিরতে দেখলেই নানা সাঙ্কেতিক গানে জানিয়ে দিতো তাঁরা ফিরছেন, অমনি সবাই জোরেসোরে দৈত্যনীতি মুখস্থ করতে লেগে পড়তো। গুরুরা এসে শিষ্যদের সুমতি দেখে একেবারে আপ্লুত! এরা তো দৈত্যরাজ্যের মুখোজ্জ্বল করে তবেই ছাড়বে, দেশের উন্নতি ঠেকায় কে!

কিন্তু এত সাবধানতা নিলেও একদিন ধরা পড়ে গেল তারা। আতঙ্কিত ষন্ড আর অমর্ক সব খবর রাজার কাছে পাঠালো। খুবই বিপজ্জনক খেলা শুরু হয়েছে, তারা আর দায়িত্ব নিতে পারবে না। রাজপুত্র একা না, সঙ্গীসাথীসহ যদি শত্রুনীতির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতে যায়, তাহলে সব হাতের বাইরে চলে যাবে। ত্রিভুবনজয়ী রাজা সব শুনে যা করার করুন।

হিরণ্যকশিপু প্রহ্লাদকে ডেকে পাঠালো। পিতাপুত্রে যখন দেখা হলো তখন সূর্য ডুবে গেছে, রক্তিম সন্ধ্যাবেলা। প্রাসাদের সামনে বিরাট বিরাট থামওয়ালা বারান্দা, তার সামনে সিঁড়ি নেমে গেছে নিচে। ভারী অপূর্ব একটা সময়, রাঙা মেঘের ছায়ায় সব কেমন রঙীন হয়ে গেছে।

হায় রাজার জীবন, এমন সময়ে এমন সুন্দর জায়গায় দাঁড়িয়ে সবচেয়ে প্রিয়জনকে সামনে পেয়ে তাকে কেন অদ্ভুত প্রশ্ন করতে হয়? হিরণ্যকশিপু ছেলেকে বললো, "আমি সব সংবাদ পেয়েছি। কেন এমন করছো তুমি? নিজের লোকেদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করার ফল ভালো হয় না। এই মুহূর্তে তোমাকে প্রাণদন্ড দিতে পারি, দিলে কোনো অন্যায় হয় না। আমি শুধু জানতে চাই, কেন এমন করছো?"

প্রহ্লাদ হেসে বললো, " 'ওরা শত্রু' 'ওরা শত্রু' করে শত শত যুগ ধরে শুধু যুদ্ধই করে যেতে হবে আমাদের? কী লাভ হবে তাতে? একবার ওরা জিতবে, একবার আমরা জিতবো, আমাদের কিছু লোক মরবে তাদের কিছু লোক মরবে। এই তো শুধু হবে। আমরা কি এর থেকে ভালো সমাধান কিছু খুঁজে পেতে পারি না? সকলেই যখন বিষ্ণুর অংশমাত্র, তখন--"

দৈত্যরাজ বলে, "চুপ, একদম চুপ। সর্বক্ষণ খালি বিষ্ণু আর বিষ্ণু। প্রত্যেকটা কথার মধ্যে খালি বিষ্ণু আর বিষ্ণু। আর শুনতে পারছি না। কোথায় তোমার বিষ্ণু?"

প্রহ্লাদ বলে, "শ্রীহরি সর্বত্র আছেন।"

সামনের থামটার গায়ে হাত রেখে দৈত্যরাজ বলে, "এই থামেও আছেন?"

" হ্যাঁ, অবশ্যই।"

রাজা বলে " তাই নাকি? তবে বের হোন থাম থেকে।"

বলতে না বলতেই ধুড়ুমধামধামধামধাম করে থাম ভেঙে ভয়ঙ্কর নৃসিংহমূর্তিতে বিষ্ণু বেরিয়ে এলেন, তার দেহের উর্ধাংশ সিংহের মতন, নিচের অংশ মানুষের মতন। কেশর ফোলানো সিংহমুখ, থাবায় বড় বড় নখ।

হিরণ্যকশিপুকে নৃসিংহ থাবা দিয়ে এক ঝাপটা দিতেই সে অবশ হয়ে গেল। দুই থাবায় ধরে নিজের উরুর উপরে তাকে রেখে নখ দিয়ে পেট চিরে দিলো নৃসিংহ। সিঁড়ি বেয়ে রক্তের ধারা গড়িয়ে যাচ্ছে, আকাশে রক্তসন্ধ্যা তখন আরো গাঢ় হয়ে উঠেছে।

আস্তে আস্তে চেতনা কুয়াশায় ঢেকে যাবার আগে হিরণ্যকশিপুর মনে হলো- এ যে দিনও নয় রাতও নয় এ যে সন্ধ্যা! এ যে ঘরও নয় বাইরে ও নয়, এ যে বারান্দা! এ যে মানুষও নয় জন্তুও নয় এ যে মানুষজন্তুর হাইব্রিড! আমি যে এখন মাটিতেও নেই জলেও নেই বাতাসেও নেই, আমি এখন এই কিম্ভুতের হাঁটুর উপরে! কোনো অস্ত্র দিয়ে তো না, সে আমায় নখ দিয়ে পেট চিরে ফেলেছে-তবে আর দেরি নেই, অবশ্যই দেরি নেই। সেই দরজাটা! খুলে গেছে!
"ভেঙেছ দুয়ার, এসেছ জ্যোতির্ময়-
তোমারই হোক জয়...."

সত্যিই আর দেরি ছিলো না, কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই মৃত্যু হলো হিরণ্যকশিপুর। দেহ পড়ে রইলো নিস্পন্দ প্রাণহীন, অজ নিত্য শাশ্বত আত্মা ফিরে চললো প্রতীক্ষালোকে, সেখানে জয় অপেক্ষা করে আছে বিজয়ের জন্য।

শ্রাদ্ধের দিন আগুনের কুন্ডের সামনে সদ্য-রাজ্যাভিষিক্ত প্রহ্লাদ মন্ত্র পড়ছে "মধুবাতা ঋতায়তে, মধুক্ষরন্তি সিন্ধব:, মাধ্বীর্ণ সন্তোষধী।
মধুনক্তম্‌ উতোষসো, মধুমং পার্থিবং রজ: ......”
বাতাস মধুময় হোক, নদীরা মধুময়ী হোক, সব ওষধী মধুময় হোক।
রাত্রি ও ঊষা মধুময়ী হোক, মধুর হোক পৃথিবীর ধূলি ......

(শেষ)

অ্যানাক্রোনিজমের ত্রুটী মার্জনীয়।


মন্তব্য

বর্ষা এর ছবি

অসাধারণ সিরিজ। আজেবাজে বিশেষন বাদ দিয়ে মূল কাহিণি অত্যন্ত ঝরঝরে করে লেখা। অনেক অনেক ধন্যবাদ।
মনে কিছু না নিলে একটা ফরমাইয়েশ করি। স্ক্যান্ডিনেভিয়ার উপকথা বা অন্যান্য উপকথার সাথে এই অঞ্চলের উপকথার মিল নিয়ে কি একটা আলোচনা লিখে ফেলবেন?
আমার ঠিক অতো ভালো মতো রামায়ণ আর মহাভারত পড়া নেই।ঃ( কিন্তু অনেক মিল অনুভব করি উপকথা গুলোর মাঝে।
********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।

********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।

তুলিরেখা এর ছবি

আসলে নানা দেশের উপকথার মিল-অমিল নিয়ে বলার যোগ্য ব্যক্তি বোধহয় আমি নই। ব্যপারটা শুনতে যেমন মনে হয় ভিতরে ঠিক তা না। জটিল সময় ঢুকে আছে, জাতিগোষ্ঠী ও তার ছড়িয়ে পড়া ও ভাগ হয়ে যেতে থাকা, ভাষাতত্ত্ব, প্রত্নতত্ত্ব, ইতিহাস ভূগোল রাজনীতি সমাজতত্ত্ব ধর্মভাবনা সবকিছু একেবারে জড়িয়েমড়িয়ে একাকার হয়ে আছে ।

এসব নিয়ে আলোচনা করার জন্য এসব বিষয়ে যথাযথ জানা পন্ডিত ব্যক্তি প্রয়োজন। আমি সন্ধ্যাবেলা আগুনের ধারে বসে শোনা গল্পের সুতো এনে বুনে বুনে শোনাই, ইতংবিতং কাছের কথা ঢুকিয়ে দিই পুরানো সুতার সঙ্গে, আমার পক্ষে ঐ গভীর আলোচনায় যাওয়া অনধিকার চর্চা।

ভালো থাকবেন,পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

মাহবুব লীলেন এর ছবি

ওর মরাটাকে বড়ো গৌরবহী করে দিলেন মনে হয়? বড়োই সাদামাটা?

তুলিরেখা এর ছবি

গৌরবহীন কেন? আসলে জয়-বিজয়ের পরিপ্রেক্ষিতে গল্পটা কিনা, তাই মনে হলো তার মুক্তি পর্যন্ত দিলেই ঠিকঠাক হয়। মরে যাবার পরে তো তার নিজের আর কোনো পার্থিব বাধ্যবাধকতা নেই, সব সমান। ( সে তো হাফ ছেঁড়ে বেঁচে গেল, মনে আছে পৃথিবীতে জন্মাতে হবে শুনে ওরা কত দু:খ পেয়েছিলো? )

যারা রইলো তাদের পক্ষে অবশ্য অন্য কথা। আসল কাহিনিতে এর পরে তো যাকে বলে --- সে গল্পে ঢুকতে গেলে শিকলের মতন টানে টানে বামন অবতার অবধি এসে যাবে, আর পালাবার পথ থাকবে না। এমনিতেই আমার চৌকিতে বসে চৌকিদার অবস্থা থেকে মাটিতে বসে জমিদার হয়ে যাবার দশা হয়েছে। সময় মতন সটকে না পড়তে পারলে কি দশা হয় ----সে যাক গে।

ভালো থাকবেন।
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

ভুতুম এর ছবি

চমৎকার! আপনার রূপকথার রিকিক্সগুলো বড় উপাদেয় হয়।

-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি

-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি

তুলিরেখা এর ছবি

হয় বুঝি? ধন্যবাদ।
ভালো থাকবেন।

----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

খেকশিয়াল এর ছবি

আপনার লেইগা উপহার এই ভয়ানক ছবিটা
auto

এইবার আফ্রিকার উপকথা লেখেন দেঁতো হাসি

------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

তুলিরেখা এর ছবি

ও:, কেন বাপু মিষ্টি সকালে এইসব ছবি দেন? মন খারাপ
ভালো থাকবেন, আফ্রিকার একটা মিষ্টি প্রেমের উপকথা দেবো সামনে কোনো বার। হাসি
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

তুলিরেখা এর ছবি

আমি একবার একজনকে জিগিয়েছিলাম দিনও নয় রাতও নয় এমন সময় তো প্রথম ভোর বা ঊষাকালও হতে পারতো, সেসময়ও তো ওকে মারতে পারতো!
সে শুনে বললো ঊষাকালের মতন পবিত্র সময় মানুষ মারার পক্ষে খুব খারাপ হতো!
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

খেকশিয়াল এর ছবি

হো হো হো

------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

খেকশিয়াল এর ছবি

মনে হয় ঊষাদেবী এয়সের লগে বনিবনা আছিলো না বিষ্ণুর

------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

তুলিরেখা এর ছবি

ঊষাদেবী এয়সের লগে বনিবনা করতে গলে হরির সংসারে আগুন লাইগা যাইবো গা। একে তো লক্ষ্মী মহা শুচীবাই, ভৃগু আইসা একটা পা একটু ছোঁয়াইছেন কি ছোঁয়ান নাই, অমনি লক্ষ্মী হাওয়া, কয় আমি আর নাই!
তারপরে তুলসী রাধা সত্যভামা দ্বারকার ১৬ হাজার কারা সব, এই সব সামলাইয়া আবার যদি এয়স আফ্রোদিতি এদেরও সামলাইতে হয়, তাইলে কেস গড়বড়। হাসি
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

খেকশিয়াল এর ছবি

হো হো হো হ, বাকি লুইচ্চামিগুলি ইন্দ্র আর জিউসের লেইগাই থাক

------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

তুলিরেখা এর ছবি

তা যা কইছেন! ওরা দুইজনেই এক্সপার্ট! এমন নিঁখুত ম্যানেজমেন্ট স্কিল আর কারুর নাই।
ওরা দুইজনে কারিকর বিড়ি ধরাইসিলো না আপনের গল্পে? হাসি
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

খেকশিয়াল এর ছবি

হাহাহা.. হয়

------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

তুলিরেখা এর ছবি

লিঙ্কটা দ্যান না, পইড়া আবার একটু হাসি। হাসি
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

খেকশিয়াল এর ছবি

http://www.sachalayatan.com/khekshial/16658

------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

তুলিরেখা এর ছবি

ধন্যবাদ।
আবার পইড়া হাসতে হাসতে গড়াগড়ি যাইতাসি। হো হো হো
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

সাফি এর ছবি

এত তাড়াতাড়ি শেষ কইরা দিলেন? মন খারাপ

তুলিরেখা এর ছবি

জয়বিজয়ের সে জন্মের কাহিনি ই শেষ হইয়া গেল গা যে!
পরের জন্মে তারা রাবণ-কুম্ভকর্ণ হইলো আইলো, সে এক বিরাট কাহিনি।
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

s-s এর ছবি

তুলিরেখা, থ্রি চিয়ারস শেষ করার জন্য!

তুলিরেখা এর ছবি

Thanks.
কিন্তু, আমার সিঙারা কোথায় ? বেগুনী কোথায়? চপ কোথায়? চিন্তিত
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

এক্সেলেন্ট...।
বহুদিন পর এই গল্পটা একবার রিভাইস হলো- ছেলেবেলায় যেই মজাটা পেয়েছিলাম, সেটাই ফিরে এলো যেনো আবার...

-------------------------------------------------------------
মধ্যরাতের কী-বোর্ড চালক

তুলিরেখা এর ছবি

ধন্যবাদ সুহান রিজওয়ান।
কিন্তু.... কিন্তু, একটা লোক অমনভাবে মারা গেল আর আপনি মজা পাইলেন? চিন্তিত
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

Hirimba এর ছবি

দারুন! কি‌নতু দৈত্যের বুক চিরেছিলেন বলেই তো জানতাম এতদিন!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।