কুসুমের মন

তুলিরেখা এর ছবি
লিখেছেন তুলিরেখা (তারিখ: শনি, ১৩/১১/২০১০ - ২:০৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

"শরীর, শরীর, তোমার মন নাই কুসুম?"
আছে তো! মনও তো শরীরের মধ্যেই! শরীরের যেখানে মনটা, সেটা হলো করোটির ভিতরে যত্নে থাকা মগজ। সেইটা নিয়েই এই বই।

কিছুকাল আগে বুকস্টোরে ঘুরতে ঘুরতে প্রথম দেখি বইটা। কীজানি মনে করে হাতে নিয়েছিলাম, সাদা প্রচ্ছদে রেশমী ফিতার ফুল, বইটার নাম The Female Brain, লেখিকার নাম, Louann Brizendine। পেশায় ভদ্রমহিলা নিউরোসাইকিয়াট্রিস্ট। সানফ্রান্সিস্কোর ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ায়। আগে হার্ভার্ডের মেডিক্যাল স্কুলে ফ্যাকাল্টি ছিলেন এছাড়াও আরো অনেককিছু করেছেন, কিন্তু সেসব তো প্রথমে দেখিনি। বইটির প্রকাশক Morgan Road Books, বেরিয়েছে ২০০৬ এ।খুব সাম্প্রতিক গবেষণার ভিত্তিতে। পাতা ওলটাতে ওলটাতে চমকে উঠলাম, এরকম একটা বই পড়তে পারলে হয়তো অনেক ভুলবোঝাবুঝি আর কনফিউশন দূর হয়ে যেতে পারে। কিন্তু সেদিন কেনা হয় নি। পরে হবে, ভেবে রেখেছিলাম। তারপরে যেমন হয়, ভুলেও যেতে শুরু করেছিলাম।

পরে এক ফোরামে ঝগড়াঝাঁটির সনতারিখ নিয়ে আলোচনা শুরু হলো। পুরুষ সদস্যরা অভিযোগ করছিলেন যে তাদের স্ত্রীরা বহুকাল আগের কথা- কাটাকাটির একেবারে সব কথা স্থানকালপাত্রসমেত মনে রাখেন আর নতুন ঝগড়ার সময় সবেগে সতেজে সেসব রেফারেন্স দেন, বেচারা পুরুষেরা কিছু মনেই করতে পারেন না এরকম কবে হলো। তো, সেই আলোচনার সময় বিস্মৃতির স্তূপ সরিয়ে উঁকি দিলো বইটার কথা, আমাজনে অর্ডার দিলাম, পেয়েও গেলাম, পড়তে শুরু করলাম। অসাধারণ। তারই কিছু এখানে ভাগ করে নিই।

শুরুরও শুরু থাকে। বইয়ের ফ্ল্যাপে ছোটো ছোটো চুম্বকসার। প্রত্যেক মস্তিষ্ক শুরু হয়ে মহিলা-মস্তিষ্ক হিসাবে, গর্ভধারনের আট হপ্তা বাদে প্রথম পরিবর্তন দেখা দেয়। ভ্রূণটি পুরুষ হলে মস্তিষ্কের যোগাযোগকেন্দ্র সংকুচিত হয় টেস্টোস্টেরনের প্রাবল্যহেতু ( excess testosteron ), হিয়ারিঙ কর্টেক্স কমিয়ে দিয়ে মস্তিষ্কের অন্য অংশ যা কিনা প্রসেস করে শারীরিক অনুভূতি, সেই অংশটাটাকে তুলনায় বাড়িয়ে দেয়।

কয়েকটা চুম্বকলাইন অনবদ্য
১। প্রত্যেকদিন মহিলারা যোগাযোগের অনেক বেশী রকম উপায় ব্যবহার করেন পুরুষদের তুলনায়।
২। মহিলারা যেকোনো ঝগড়াঝাঁটি মনে রাখেন যেসব কিনা পুরুষরা মনেই করতে পারেন না, বলেন "না না এরকম হয় নি তো কখনো!"
৩। টীন এজের মেয়েরা নিজেদের চেহারা নিয়ে অবসেসড আর ফোনে কথা বলা নিয়ে (এটা অবশ্য কালচারের উপরে নির্ভর, লেখিকা সাম্প্রতিককালের আমেরিকান, তাই নিজের কালচার নিয়ে স্বাভাবিকভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন)
৪। মহিলাদের মস্তিষ্কে যৌনচিন্তা পুরুষদের চেয়ে কম প্রবেশ করে।
৫। মহিলারা মানুষের অনুভূতি ধরতে পারেন, যেক্ষেত্রে পুরুষরা আবেগ-অনুভূতিগত ব্যাপার চিনতেই পারেন না যতক্ষণ না কেউ কেঁদে ফেললো বা সত্যি সত্যি মারবে বলে ভয় দেখালো।

শরীরের আকারের ব্যাপারটা সংশোধনের পরেও দেখা যায় পুরুষ-মস্তিষ্ক মহিলা-মস্তিষ্কের চেয়ে প্রায় ৯% বেশী বড়ো। কিন্তু আগে যেমন মনে করা হতো এর জন্য মানসিক সামর্থ মেয়েদের কম বলে, তা পরে অনুসন্ধানে ভুল প্রমাণিত হয়েছে। দেখা গেছে মগজকোষ(নিউরোন) এর সংখ্যা উভয়ের একই। মেয়েদের ক্ষেত্রে একটু বেশী ঘন করে প্যাক করা থাকে ছোটো খুলির মধ্যে আঁটানোর জন্য।

গত শতকে খুব একটা স্পষ্ট ধারণা ছিলো না পুরুষ ও মহিলা মস্তিষ্কের পার্থক্যের ব্যাপারে। এই নিয়ে গবেষণা ভালোভাবে শুরু হয়েছে গোটা দুইদশক ধরে। নতুন সব যন্ত্রপাতি, পজিট্রন এমিশন টোমোগ্রাফি( PET ) বা ফাংশনাল ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (fMRI )এইসব যন্ত্রপাতি জ্যান্ত মগজ দেখার যে সুবিধে দিয়েছে তাতে আরো ভালো করে এই পার্থক্য বোঝা গেছে।

একটি সমস্যাকে একজন পুরুষ ও একজন মহিলা ঠিক একই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেন না, তাই সমাধানের পদ্ধতিও উভয়ের ক্ষেত্রে এক নয়।
ভাষা ও শ্রুতি অংশে মহিলাব্রেনে আছে পুরুষদের তুলনায় ১১% বেশী নিউরোন। মস্তিষ্কের স্মৃতি ও আবেগ অংশ, হিপোক্যামপাস, মহিলার ক্ষেত্রে এখানেও সেল অনেক বেশী, গড়ে বলা যায় মহিলামগজ আবেগের প্রকাশে ও খুঁটিনাটি মনে রাখায় অনেক বেশী সুবিধে পাচ্ছে, প্রতিতুলনায় পুরুষব্রেনের অ্যাকশন আর অ্যাগ্রেশানের অংশে সেল আড়াইগুণ বেশী। পুরুষের ব্রেনে অ্যামিগডালা খানিকটা বড়ো, এই অংশ ভয় রেজিস্টার করে ও অ্যাগ্রেশন ট্রিগার করে।

এই দ্য ফিমেল ব্রেন বইতে চ্যাপ্টারগুলো এইভাবে ভাগ করা:

Introduction

Chapter 1 Birth of the Female Brain

Chapter 2 Teen Girl Brain

Chapter 3 Love and Trust

Chapter 4 Sex

Chapter 5 Mommy Brain

Chapter 6 Emotions

Chapter 7 Mature Female Brain

Epilogue: The Future of the Female Brain

Appendix: The Female Brain and Hormone Therapy

Appendix: The Female Brain and Sexual Orientation

Appendix: The Female Brain and Postpartum Depression

এর মধ্যে প্রথম চ্যাপ্টারে একদম জন্ম থেকে বাচ্চাবেলায় শিশুকন্যারা কিভাবে বিহেভ করে তাই নিয়ে বিস্তারিত বলা। আসলে পেশায় স্নায়ুমনোচিকিৎসক লেখিকা নিজের পেশেন্টদের পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে সরাসরি অভিজ্ঞতায় লিখেছেন বলে খুব কাছের মনে হয়। এই প্রথম চ্যাপ্টারে একটি চমৎকার ঘটনা বলা আছে। একটি বাচ্চা মেয়ের কথা। ওকে ওর বাবামা ইউনিসেক্স খেলনা উপহার দিতেন, মেয়ে বলে বার্বি দেবে তা হবে না, এই ভেবে। মেয়েকে ওনারা একদম স্বাধীনভাবে সত্তা তৈরী করতে সাহায্য করবেন, যাতে কিনা সে মোল্ডেড না হয়ে যায়-এই ভেবেছিলেন। তো, ওকে লাল রঙের এক ফায়ারট্রাক দিয়েছেন ওনারা। কিছুদিন পরে মা মেয়ের ঘরে ঢুকে দেখেন, ছোট্টো বেবী ব্ল্যাংকেটে ট্রাকটাকে শুইয়ে দোল দিতে দিতে মেয়েটা বলছে, "ডোন্ট ওরি, লিটল ট্রাকি, এভরিথিং উইল বী অলরাইট।"

মহিলা-মস্তিষ্ক আবেগ-অনুভূতির বেশী জায়গা ব্যবহার করে, একদম ছোটো থেকেই, মানবিক সম্পর্কগুলো অনেক বেশী গুরুত্ব পায়। স্বরের সামান্য ওঠানামা রেজিস্টার করতে পারে, "মুখ পড়তে পারা" ব্যাপারটায় অসাধারণ এগিয়ে থাকে শিশুকন্যারা সাধারণভাবে। আর কথা বলাতেও এগিয়ে থাকে।

বইতে একজায়গায় একটা বেশ দারুণ কথা। আমাদের মস্তিষ্ক নাকি এখনো প্রস্তরযুগের মস্তিষ্ক, যদিও আমরা বাস করছি একবিংশ শতকে, কিন্তু ভেতরে ভেতরে আমরা গুহাবাসী সত্তাই, টেকনোলজি যেভাবে এগোয় ততগতিতে এগোতে পারে না জেনেটিক পরিবর্তন, সে অনেক ধীর পরিবর্তন। ভাবতে অবাক লাগে, স্টোন এজের মস্তিষ্ক নিয়ে আমরা স্পেস এজে চলে এসেছি!

বেশ কয়েকটা চ্যাপ্টার চোখ বুলিয়ে গিয়ে মনে হলো বইটা ঠিক মহিলা- মস্তিষ্কের উৎকর্ষ বা অপকর্ষ বোঝাতে নয়, এটা মস্তিষ্কটা কীরকম আর জীবনের নানা পর্যায়ে এতে কিরকম পরিবর্তন ঘটতে থাকে, সেটারই বর্ণনা।

আমাদের সেই ইস্কুলে যাবার সময় থেকেই তো জানা আছে যে স্নায়ুকোষ (নিউরোন) বিভাজিত হয় না, জন্মের সময় যে সংখ্যক নিউরোন নিয়ে আসে মানুষ, তাই থাকে, আকারে বড়ো হয়। বিভাজিত হয়ে নতুন নতুন হলে মুশকিল ছিলো, কারণ মানুষের "আমিত্ব" ভরা থাকে মস্তিষ্কেই। তাই ঐ দুবছর বয়েসের আমি, দশ বছর বয়সের আমি, পঁচিশ বছর বয়েসের আমি, চল্লিশ/পঞ্চাশ/ষাট বছর বয়েসের আমি, অনেক পরিবর্তন চেহারায় চরিত্রে ঘটে গেলেও, এরা একই "আমি" বলে মানুষ লিংক করতে পারে।

অথচ মস্তিষ্ক কিন্তু ঠিক একই থাকে না,নানাবিধ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। এই পরিবর্তনগুলিই লিপিবদ্ধ করেছেন স্নায়ুমনস্তত্ববিদ লেখিকা। স্বাভাবিকভাবে লেখিকার নিজের ও তাঁর স্টাডি করা পুরুষ ও মহিলাদের ব্রেন ইমেজ, সংস্কৃতি, জীবানযাত্রা সমস্যা সমাধান ইত্যাদির ভিত্তিতেই বইটা লেখা, সেই হিসাবে একেবারে খুব জেনেরিক স্টাডি তাও বলা যায় না। চীনা ভারতীয় আফ্রিকান বা সুদূরের উপজাতীয় মহিলাদের মনের ভাব বিভিন্ন পর্যায়ে কেমন দাঁড়ায় সেটা ইনি দেখার সুযোগ পান নি। অনেক বেশী জোর দিয়েছেন নিজেদের কালচারের ভিত্তিতে আইডিয়াল সমাধান কিরকম হতে পারে তার উপর।

সম্পর্কগত সমস্যায় পড়া বহু দম্পতি এনার কাছে কাউন্সেলিং এর জন্য আসতেন, তাদের স্টাডি করেছেন পরামর্শ দিয়েছেন, ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করেছেন আর যন্ত্রপাতি দিয়ে প্রচুর পরীক্ষা করেছেন, অনেক এক্সপেরিমেন্টের রেজাল্ট পেয়েছেন সতীর্থদের থেকে ও নিজের গবেষণা থেকেও, সেসব এক্সপেরিমেন্ট কিছু মানুষ ভলান্টিয়ারদের উপরে করে করে নেওয়া। কিছু কিছু অন্যান্য প্রাইমেট ও ম্যামালদের উপরে পরীক্ষা করে নেওয়া।

ইমোশন চ্যাপ্টারে রয়েছে জেন আর ইভানের কথা।এই মহিলা ও পুরুষ পরস্পরের পরিচিত হলেন, পরে প্রণয় ও পরিণয় ঘটলো। তারপরে বারো-তেরো বছর কেটে গেলো। এরপরে কোনো সম্পর্কগত সমস্যায় এরা কাউন্সেলিং এর জন্য আসেন লেখিকার কাছে। এক সেশনে এনাদের দুজনকেই এদের পরিচয়ের প্রথম দিককার কথা মনে করতে বলা হলো। দেখা গেলো জেন তেরো বছর পরে একদম গতকাল ঘটা ঘটনার মতন মনে মনে করে করে বলে যাচ্ছে, কোন্ দোকানে খেতে যেতো ওরা, কিরকম দিন ছিলো, কবে কী কী কথা কাটাকাটি হয়েছিলো, কিভাবে জেনের রাগ দু:খ ইত্যাদি হয়েছিলো---এমন খুঁটিনাটি যে ইভান নিজে হাঁ হয়ে শুনলো। সে নিজেও ঘটনার মধ্যে ছিলো, কিন্তু এত কিছু কিছুই ওর মনে নেই। ওর শুধু মনে আছে, একদিন যখন সে হঠাৎ বিবাহ প্রস্তাব দিলো, জেন কেঁদে ফেলেছিলো আর ইভান বুঝতে পারেনি কী করবে। অথচ আরেকদিন দুজনের খুব ঝগড়া হয়েছিলো, জেন ভয় পেয়েছিলো বুঝি ইভান চলে যাবে-কিন্তু ব্যাপারটা ইভানের কিচ্ছু মনে নেই! ইভানের মনে আছে একদিন জেন রেগে গিয়ে ওকে বলেছিলো সে ওকে ছেড়ে চলে যাবে, সেইদিন খুব বিচলিত হয়ে গিয়ে ইভান ভেবেছিলো সত্যি।পরে জেন ঠান্ডা হয়ে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলায় ইভান ওকে অনুরোধ করে বলেছিলো সত্যি না হলে যেন ওরকম না বলে, ও নইলে বুঝতে পারে না।

এই দুজনের মনে রাখা দুরকম।লেখিকা লিখেছেন, যেন একটা মুভি, ইভানেরটা মুভির ট্রেলার আর জেনেরটা পুরো মুভিটা, একদম সব খুঁটিনাটি ডিটেলিং সহ।

টীন এজে যখন মস্তিষ্কে বড়োরকমের রিওয়ারিং শুরু হয় (মেয়েদের গড়পড়তায় ছেলেদের তুলনায় এক-দেড় বছর আগে শুরু হয়), তখন ব্যাপারটা যেন বহু এক্সটেনশন কর্ড বেরিয়ে আসছে মস্তিষ্কের যোগাযোগকেন্দ্র থেকে, কিন্তু এগুলো মায়েলিনেটেড নয় (মায়েলিন সীথ হলো স্নায়ুকোষের লম্বা অ্যাক্সনে উপরে ঘেরা স্নেহপদার্থের আবরণ, কোষটাকে রক্ষার জন্য) তখনো, আর কোন্ আউটলেটে কোনটা গাঁথা হবে, তখনো ঠিক হয় নি।পুরোপুরি জিনিসটা ঠিকঠাক তৈরী হয় আর্লি অ্যাডাল্টহুডে, সেটা টীন এজের অনেকটাই পরে।

তাই বয়সন্ধির এইসময়টা অত্যন্ত স্পর্শকাতর। নানারকম হঠকারী সিদ্ধান্ত নেবার প্রবণতা এইসময়ে দেখা যায়, মেজাজেরও কোনো ঠিক থাকে না। কিশোরী মেয়েদের মধ্যে সমস্যাটা আরো জটিল, কেননা এস্ট্রোজেন অ্যানড্রোজেন আর প্রোজেস্টেরন বলে যে তিনখানা নিউরোকেমিকেল আমাদের মেজাজের হাল ধরে থাকে, সেটা মেয়েদের ক্ষেত্রে গোটা মাস জুড়ে ওয়েভের মতন ওঠানামা করে, একবার একটা পীকে উঠেছে তো আরেকটা নেমে একেবারে গ্রাফের তলায় চলে গেছে। এটা যদি উঠে গিয়ে স্টেডি হয়ে যেতো, তাহলে সমস্যা তত ছিলো না, ওঠানামা করে বলেই মহা মুশকিল। একদিন হয়তো সে খুব মিষ্টি শান্ত মেয়ে, দিব্যি খোশমেজাজে আছে,পরদিন রেগে জিনিসপত্র ভেঙে অকথ্য গালাগাল দিয়ে হুলুস্থূলু ঘটাচ্ছে।

শানা বলে এক বয়সন্ধিগতা কিশোরীর কথা আছে, যার বয়সন্ধিসমস্যা এতটাই ছিলো, যে সিরিয়াস ট্রীটমেন্ট শুরু করতে হয়েছিলো। শানাও লেখিকার পেশেন্ট ছিলো। এইসময়ে আত্মহত্যার প্রবণতাও খুব বেশী থাকে কিশোরীদের মধ্যে। অগ্রপশ্চাৎ না ভেবেচিন্তে প্রচুর মেয়ে এইসময়ে প্রেমিকের সঙ্গে পালায়। অনেকক্ষেত্রে উভয়ে একসঙ্গে আত্মহত্যা করে।(ছেলেদের ক্ষেত্রে ম্যাচুরিটি আরো পরে আসে, তাই একবয়সের প্রেমিক-প্রেমিকা হলে দুজনের কেউই সমস্যা সমাধান করতে পারে না, একক বা সম্মিলিত ভাবে)

তাই বিচক্ষণ ও সমব্যথী বাবামায়ের খুব প্রয়োজন বয়সন্ধিসমস্যায় পড়া কিশোরকিশোরীদের। পড়তে পড়তে উঁকি দিয়ে যায় পুরানো স্মৃতি, নতুন আলোয় চমকে উঠে ব্যাখ্যা খুঁজে পাই তখন না খুঁজে পাওয়া নানা ঘটনার। হয়তো এইটা একটা বড়ো পাওয়া এই বইটি থেকে।

লাভ অ্যান্ড ট্রাস্ট চ্যাপ্টারে পুরুষ নারীর পারস্পরিক ভালোবাসা ও বিশ্বাস নিয়ে আলোচনা।পরবর্তী চ্যাপ্টার পুরুষনারীর যৌনমিলন নিয়ে আলোচনা। এই দুই চ্যাপটারে উভয়ের ব্রেনের পার্থক্য আরো সুস্পষ্ট হয়ে ফুটে ওঠে।
যৌনচিন্তা এত তাড়াতাড়ি পুরুষমস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে যে বাকীগুলো যেমন জাজমেন্টাল এরিয়া, বিশ্বাস করার জায়গাগুলো অনেকটাই আউট অব ফোকাস হয়ে যায়। ব্রেন-ইমেজ নিয়ে ও তাই নাকি দেখা গেছে।

এদিকে মহিলাদের ব্রেনের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা বেশ জটিল, এই ব্রেনের কাছে বহুগুণ বেশী গুরুত্ব পায় অন্যগুলোই, যৌনতার ক্ষণিক আনন্দের চেয়ে অনেক বেশী গুরুত্ব পায় এই ধরনের প্রশ্নগুলো, বিশ্বাস করা যাবে তো লোকটাকে? কতটা নির্ভর করা যাবে এর উপরে? কতটা ভালোমানুষ এ? একে যদি ভরসা করে ঝাঁপিয়ে পড়ি, এ আমার ঘরসংসার ও সন্তানদের জন্য ভালো হবে তো? হলে কতটা ভালো হবে এবং কতদিনের জন্য?

অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে ফিমেল ব্রেনে টনটনে হয়ে থাকে ব্রেনের জাজমেন্টাল অংশগুলো, যৌনতার মতন ক্ষণ-অনুভূতি নয়, দীর্ঘ প্রসারিত ভবিষ্যৎচিন্তা নারীমস্তিষ্ককে আচ্ছন্ন করে রাখে। মহিলা-জিনের মধ্যে গভীরভাবে কোডেড হয়ে আছে ঘর ও সন্তান, আধুনিকযুগের অনেক অনেক পালিশের পরেও মস্তিষ্কে একেবারে ছেনিহাতুড়ী দিয়ে খোদাই হয়ে থাকা সেটা কিছুতেই পাল্টায় নি।

লেখিকার মতে পেরিক্লিয়ান গোল্ডেন এজ এসে গেছে মহিলাদের জন্য। ঐ সময়েই নাকি ইউরোপের পুরুষেরা প্রথম যথেষ্ট সম্পদ আহরণের পরে নিশ্চিন্ত হয়ে উচ্চচিন্তা করার সময় সুযোগ পেয়েছিলেন। আর এই যুগে এই প্রথম নেট-ওয়ার্কড ইকোনোমি মহিলাদের জন্য দরজা খুলে দিয়েছে একইসঙ্গে কর্মজগত ও সংসার সামলানোর।এই প্রথম এত ব্যাপকভাবে মহিলারা অর্থনৈতিকভাবে আত্মনির্ভর হয়েছেন, নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারার সুযোগ পেয়েছেন, চিকিৎসাশাস্ত্রের ও চিকিৎসা-প্রযুক্তির উন্নতিতে কখন কীভাবে ও কেন সন্তানধারণ ও পালন করবেন নিজেরা ঠিক করতে পারছেন।
লেখিকার মতে এই সময়টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এই সময়ের নারীর সঠিক পথ খুঁজে পাওয়ার উপরেই নির্ভর করবে মানুষের সন্তানদের ভবিষ্যৎ।


মন্তব্য

তাসনীম এর ছবি

খুবই আগ্রহোদ্দীপক রিভিউ লিখেছেন। বইটা জোগাড় করে পড়ব...মেয়ে বাচ্চা মানুষ করতে হলে এই নলেজ দরকার।

যৌনচিন্তা এত তাড়াতাড়ি পুরুষমস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে যে বাকীগুলো যেমন জাজমেন্টাল এরিয়া, বিশ্বাস করার জায়গাগুলো অনেকটাই আউট অব ফোকাস হয়ে যায়। ব্রেন-ইমেজ নিয়ে ও তাই নাকি দেখা গেছে।

ধ্রুব সত্য বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠা পেল...লাইনগুলো পড়ে বিল ক্লিনটনের কথা মনে পড়ল হাসি

একটি বাচ্চা মেয়ের কথা। ওকে ওর বাবামা ইউনিসেক্স খেলনা উপহার দিতেন, মেয়ে বলে বার্বি দেবে তা হবে না, এই ভেবে। মেয়েকে ওনারা একদম স্বাধীনভাবে সত্তা তৈরী করতে সাহায্য করবেন, যাতে কিনা সে মোল্ডেড না হয়ে যায়-এই ভেবেছিলেন। তো, ওকে লাল রঙের এক ফায়ারট্রাক দিয়েছেন ওনারা। কিছুদিন পরে মা মেয়ের ঘরে ঢুকে দেখেন, ছোট্টো বেবী ব্ল্যাংকেটে ট্রাকটাকে শুইয়ে দোল দিতে দিতে মেয়েটা বলছে, "ডোন্ট ওরি, লিটল ট্রাকি, এভরিথিং উইল বী অলরাইট।"


মহিলা-মস্তিষ্ক আবেগ-অনুভূতির বেশী জায়গা ব্যবহার করে, একদম ছোটো থেকেই, মানবিক সম্পর্কগুলো অনেক বেশী গুরুত্ব পায়। স্বরের সামান্য ওঠানামা রেজিস্টার করতে পারে, "মুখ পড়তে পারা" ব্যাপারটায় অসাধারণ এগিয়ে থাকে শিশুকন্যারা সাধারণভাবে। আর কথা বলাতেও এগিয়ে থাকে।

এই জিনিসগুলো আমি নিজেও বাচ্চাদের উপর ছোটখাটো পরীক্ষা করে দেখেছি। দু'জনের মস্তিষ্ক দু'ভাবে ফাংশান করে - এই অনুসিদ্ধান্ত আমারও।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

তুলিরেখা এর ছবি

আহারে বেচারা বিল ক্লিন্টন! কী বাটেই না পড়সিল। হাসি
বইটা চমৎকার, পইড়া ফালাইয়েন পাইলে।
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

কৌস্তুভ এর ছবি

লেখায় পাঁচতারা। অনেকগুলো সতর্কবার্তা দিলেন আমাদের জন্য হাসি

তুলিরেখা এর ছবি

ধন্যবাদ, সতর্কবারতা আমি না, লেখিকাই দিছেন। হাসি
আপনার স্ট্যাটিসটিক্স কী কয় এই ব্যাপারে? হাসি

-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

কৌস্তুভ এর ছবি

"নারী চরিত্র বেজায় জটিল, কিছুই বুঝতে পারবে না..." চোখ টিপি

তুলিরেখা এর ছবি

আর, পুরুষচরিত্র সোজাসাপ্টা ন্যালাক্ষ্যাপা টাইপ, খোলা বইয়ের মত পড়ে ফেলি আমরা। চোখ টিপি

-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

অনিকেত এর ছবি

চমৎকার, চমৎকার!!!

বুক রিভিউ হলে এইরকমটাই হওয়া উচিত।

নিজের অনেক ধারনার সত্যতা প্রমানিত হতে দেখলাম---যার কিছু স্বস্তিদায়ক আর কিছু উদভ্রান্তকারী। শুধু একটা জিনিস ঠিক বুঝলাম না।

প্রত্যেক মস্তিষ্ক শুরু হয়ে মহিলা-মস্তিষ্ক হিসাবে, গর্ভধারনের আট হপ্তা বাদে প্রথম পরিবর্তন দেখা দেয়।

মহিলা-মস্তিষ্ক বলতে আসলে কী বুঝিয়েছেন লেখিকা এখানে? মেয়েদের মস্তিষ্ক প্রাপ্তবয়স্কালে যেসব মূল আঙ্গিক বা বৈশিষ্ট্য বজায় রাখে---একেবারে শুরুর বেলা সবার মস্তিষ্ক সেইরকম থাকে? এইটাই বলতে চেয়েছেন কি?

তুলিরেখা এর ছবি

প্রস্ফুটনের প্রাথমিক পর্যায়ে একই রকম থাকে মহিলা ও পুরুষ ভ্রূণের মগজ। ভ্রূণটি পুরুষ হলে প্রচুর টেস্টোস্টেরন তৈরী হতে শুরু করে একসময়। মস্তিষ্কের যোগাযোগ-কেন্দ্রটি সংকুচিত হয় টেস্টোস্টেরনের প্রাবল্যহেতু (excess testosteron ), হিয়ারিং কর্টেক্স কমিয়ে দিয়ে মস্তিষ্কের অন্য অংশ যা কিনা প্রসেস করে শারীরিক অনুভূতি, সেই অংশটাকে তুলনায় বাড়িয়ে দেয়। এই অ্যাসিমেট্রি দেখা দেয় না নারী ভ্রূণে, টেস্টোস্টেরনের প্রাবল্য থাকে না বলে। সেটি স্বাভাবিক গতিতে পর্যায়ে পর্যায়ে ডেভেলাপড হতে থাকে। যদ্দূর মনে হলো এই কারণেই লেখিকা বললেন সব মগজ মহিলামগজ হিসাবে শুরু হয়। তবে এটি আমার খুব বেশি জানা বিষয় নয়, এই বিষয়ের লোকেরা আরো ভালো জানবেন।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ অনিকেত, ভালো থাকবেন। সতত শুভেচ্ছা।

-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

তারাপ কোয়াস এর ছবি

লেখায়


মহাকাগুর লেখা "ডিসিশান পয়েণ্টস" বইটা পড়লে নিউরোসাইকিয়াট্রিস্ট ভদ্রমহিলা নিশ্চিত পুরুষদের মস্তিস্ক সম্পর্কে আবার গবেষণা শুরু করতেন হাসি(কমপক্ষে মহাকাগুর মস্তিস্ক নিয়ে!)


love the life you live. live the life you love.

তুলিরেখা এর ছবি

আহারে মহাকাগু! এই নিউরোসাইকিয়াট্রিস্ট ভদ্রমহিলা মহাকাগুরে পাইলে এম আর আইয়ের ঘরে ঢুকাইয়া দিতেন। হাসি

কিন্তু মহাকাগুর বইতে আছেটা কী এমন? চিন্তিত
------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

তারাপ কোয়াস এর ছবি

কি নাই কন? বাপে কুন বিমানে কইরা কই বম্ব ফালাইছে থেইকা শুরু কইরা নিজে কুন প্রস্তর আমলে কয় পেগ টানতো, কিমনে সেই অভ্রেস ছাড়ান দিলো তার বিশদ বর্ণনা! মহাকাগুর মস্তিস্ক, মাশাল্লাহ্!!(অখনো আফগান আর ইরাক যুদ্ধের চ্যাপ্টারগুলাতে আসি নাই। না জানি কি বোমা রাখছে!)


love the life you live. live the life you love.

অতিথি লেখক এর ছবি

এই কারণেইতো বলি যে আমার কেন কিছু মনে থাকে না কিন্তু আমার বেটার হাফের সব একদম পই পই করে মনে থাকে। আজকে বিষয়টা খোলাসা হলো। দেঁতো হাসি
বই পড়তে মঞ্চায় কিন্তু ঘাটের পয়সা খরচ করে কিনবো কিনা বুঝতে পারছি না। অ্যাঁ

পাগল মন

তুলিরেখা এর ছবি

হাসি
দ্যাখেন এতদিনে একটা পথ পাইলেন। বইটা হাতে থাকলে ঝগড়ার সময় ফটাস কইরা খুইলা দিবেন বেটার হাফের সামনে। হাসি
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

সুরঞ্জনা এর ছবি

লেখার জন্যে সাধুবাদ জানাই। একদম একটানে পড়েছি। দেঁতো হাসি
আর,

"ডোন্ট ওরি, লিটল ট্রাকি, এভরিথিং উইল বী অলরাইট।"

আহারে পিচ্চিটা। কি মিষ্টিই যে বাচ্চারা হয়। মন খারাপ
............................................................................................
স্বপ্ন আমার জোনাকি
দীপ্ত প্রাণের মণিকা,
স্তব্ধ আঁধার নিশীথে
উড়িছে আলোর কণিকা।।

............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্‌ চিনে।

তুলিরেখা এর ছবি

ধন্যবাদ।
মূল বইটা সত্যি চমৎকার।
এমন একটা কোমল সহানুভূতির সঙ্গে নানা সমস্যায় তার কাছে আসা মানুষদের কথা লিখেছেন ভদ্রমহিলা! ছোটো বাচ্চাদের সম্পর্কে এমন সুন্দর করে লিখেছেন! পেলে পড়ে ফেলবেন।

-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

দারুণ লাগলো লেখাটা। অনেক তথ্যবহুল লেখা। সুযোগ করে বইটা অবশ্যই পড়তে হবে। অনেক রেফারেন্স আমারো মনে থাকেনা। বইটা হাতের কাছে থাকলে সুবিধাই হয়।

তুলিরেখা এর ছবি

ধন্যবাদ।
বইটা সত্যিই ভালো।
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

দারুণ রিভিউ।

আগ্রহীদের জন্য বইটা এখানে

তুলিরেখা এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

স্নিগ্ধা এর ছবি

তুলিরেখা - লেখাটা চমৎকার লাগলো!! রিভিউ হিসেবে সার্থক, কারণ বইটা পড়ার কৌতূহল হচ্ছে।

"মহিলারা মানুষের অনুভূতি ধরতে পারেন, যেক্ষেত্রে পুরুষরা আবেগ-অনুভূতিগত ব্যাপার চিনতেই পারেন না যতক্ষণ না কেউ কেঁদে ফেললো বা সত্যি সত্যি মারবে বলে ভয় দেখালো।"

সমকামি পুরুষদের ক্ষেত্রে একথাটা অনেকাংশে ঠিক নয় বোধহয়, তাই না?

'লিটল ট্রাকি'র উদাহরণটা কতখানি জুতসই ঠিক সিদ্ধান্তে আসতে পারছি না, কারণ ঐ বাচ্চা মেয়েটা নিজে খেলনা হিসেবে পুতুল বা বার্বি না পেলেও টিভিতে, বা বাস্তবে তার বয়সী অন্যান্য বাচ্চা মেয়েদের তো ওভাবেই খেলতে দেখেছে - সেখান থেকেও ঐ বিহেভিয়ারটা এ্যাডাপ্ট করতে পারে। তবে, এরকম খুঁটিনাটি ব্যাপারে প্রশ্ন থাকলে সেসবের উত্তর বইটা পড়েই পেতে হবে।

আরও লিখুন এরকম লেখা হাসি

তুলিরেখা এর ছবি

ধন্যবাদ স্নিগ্ধাজী। হাসি
আসলে উনি আরো বেশ কিছু বাচ্চাদের এরকমই দেখেছেন। আরো ব্যাপকভাবে, বিশেষ করে শিশুপুত্র ও শিশুকন্যারা যেভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করে, শোনা আর বলার ব্যাপারে, আই কনট্যাক্টের ব্যাপারে বেশ স্পষ্ট পার্থক্য দেখেছেন। বইটা পেলে পড়ে দেখবেন।

একটা অন্য এক্সপেরিমেন্টের কথাও পড়েছিলাম অন্য কোথাও, যেখানে বাচ্চা ছেলে ও বাচ্চা মেয়েদের একইরকম খেলনা দেওয়ার পরে দেখা গেছিলো ছেলে ও মেয়েরা ভিন্ন ভিন্ন ভাবে খেলনাটাকে নিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে। ছেলেরা জিনিসটাকে খোলার চেষ্টা করছে, স্ক্রু ইত্যাদি নিয়ে টানাটানি করছে। আর মেয়েরা কথা বলার চেষ্টা করছে খেলনাটার সঙ্গে। তবে এটা গড়পড়তা রেজাল্টের ব্যাপার। ব্যতিক্রম আছে অনেক।
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ধুরো, আমি আরো ভাবলাম পুতুল নাচের ইতিকথা নিয়ে কথা টথা বলছেন... ঢুকে দেখি কঠিন কঠিন সব কথা... মন খারাপ

একটা গপ কই শোনেন... একবার লিও ক্লাবের ক্যাম্প করতে গেছি ময়মনসিংহ শহরে। ক্যাম্পের আগেরদিন আমরা কয়েকজন শহরটা ঘুরে দেখতে বের হইছি। দূর থেকে দেখি একটা বাংলোমতো বাড়ি, তার সামনে একটা কাঠের সাইনবোর্ডে লেখা "নারীর মন" মূল্য ২০ টাকা। আমরা সবাই পকেট হাতড়ে সবগুলো টাকা বের করে দৌড় দিলাম সেই বাড়ির দিকে, যতগুলো সম্ভব এই বস্তু কিনে ফেলবো বলে... গিয়ে দেখি এই বাড়ির মালিকের লেখা একটা বইয়ের নাম নারীর মন, আর তার দাম ২০ টাকা মন খারাপ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

সহস্র বছরের সাধনার ধন ২০ টাকায় কিনতে চাইসিলেন? দেঁতো হাসি

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

হো হো হো!! হা হা হা!

তুলিরেখা এর ছবি

হায় হায় মাত্র ২০ টাকা?????
হাসি
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

শিরোনামটা দারুণ লাগল।

লেখাটাও চমৎকার হাসি

সবকিছু মনে থাকা, অতিরিক্ত সংবেদনশীল হওয়াটা মাঝে মাঝে বেশ ঝামেলার মনে হয় আমার কাছে। ভুলে যাওয়াটাই সুবিধাজনক হাসি

স্নিগ্ধা এর ছবি

ঠিক, শিরোনামটা আমারও খুবই পছন্দ হইসে!

তুলিরেখা এর ছবি

ধন্যবাদ আনন্দী।
মাঝে মাঝে আমারও মনে হয় সিলেকটিভ কিছু কিছু জিনিস ভুলে যাওয়ার অপশন থাকলে ভালো হতো।
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

দিগন্ত বাহার [অতিথি] এর ছবি

চমৎকার!! রিভিউ ঠিক এমনটাই হওয়া উচিত। বইটা পড়ে ফেলতে হবে ।
শেয়ার না দিয়া পারলাম না। হাসি

তুলিরেখা এর ছবি

ধন্যবাদ।
বইটা পাওয়ামাত্র পড়ে ফেলুন।

-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

চমৎকার রিভিউ!

মনে রাখার ব্যাপারটা নিয়ে একটু ধন্দে পড়ে গেলাম। আমার আর দিশার মধ্যে পুরনো ঘটনা নিয়ে নটঘট বাঁধলে দিশা অবলীলায় বলে, "আমার কিছু মনে নাই।" "আমি কি এমনটা বলেছিলাম?" "অসম্ভব! এমন কিছু হয়ই নাই!!" ইত্যাদি ইত্যাদি। অন্যদিকে আমার সন-তারিখ পুরোপুরি মনে না থাকলেও ঘটনার খুঁটিনাটি বেশ মনে থাকে। প্রশ্ন হচ্ছে দিশার বক্তব্যগুলো কি সত্যি? না কি ভাণ??



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

তুলিরেখা এর ছবি

হাসি
ব্যাতিক্রম আছে অনেক, আপনাদের কেসটা ব্যতিক্রম হতে পারে।
স্নায়ুমনোবিদ গড়পড়তা হিসাবে বলেছেন।
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

অতিথি লেখক এর ছবি

চমৎকার রিভিউ আপু। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার সাথে অনেক কিছুই মিলে গেল হাসি

---আশফাক আহমেদ

তুলিরেখা এর ছবি

মিলে গেল? বা:
হাসি

-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

মূলত পাঠক এর ছবি

একবার চোখ বুলিয়ে জমিয়ে রেখেছিলাম পরে পড়বো বলে, বেড়াতে এসেছি এখন, কম্পু নিয়ে বসে থাকা মুশকিল। এখন পুরোটা পড়ে খাসা লাগলো। যদিও ঐ লেখকের সাথে আমি সহমত হতে চাই না, কারণ সে ও এক ধরনের স্টিরিওটাইপিং, আর কে জানে বিজ্ঞ সাজার সোজা উপায় এই প্রবণতা নেই আমার মধ্যে এটা প্রমাণ করা। কিন্তু ঘটনা হলো ছেলে আর মেয়ে শিশুর মধ্যে এই জাতীয় ফারাক আমার চোখেও পড়েছে। ব্যাখ্যা হয়তো যেটা স্নিগ্ধা দিয়েছেন সেটাই হবে। কিন্তু ফারাকটা আমার ছোটো স্যাম্পলে ছিলো।

তুলিরেখা এর ছবি

আপনার কমেন্ট পেয়ে ভালো লাগলো। হাসি
রিভিউ পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

অতিথি লেখক এর ছবি

এই বই সিরিয়াসলি পড়তেই হবে। অন্তত কিছু ব্যাখ্যা মনে হয় পাওয়া যাবে। মুশকিল হল দেশে বসে পাই কই।

অমিত্রাক্ষর
অমিত্রাক্ষর@জিমেইল ডট কম

তুলিরেখা এর ছবি

বইয়ের দুই দুইজন লিঙ্ক দিয়া দিসেন। পইড়া ফেলান। হাসি
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ভালো লাগলো। অসাধারন রিভিউ। অনেক গুরত্বপূর্ন ব্যাপার জানা গেল। বইটা পড়লে সবাই যে বেশ উপকৃত হবে এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। এরকম তথ্যবহুল লেখা আরও চাই আপনার কাছ থেকে। শুভ কামনা রইল।

-শাহেদ সেলিম

তুলিরেখা এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ।

-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

চমৎকার।

--


আগ্রহীদের জন্য বইয়ের লিঙ্ক

--

আব্‌জাব্‌ কথা:

অধ্যায়গুলোর নাম এভাবে না দিয়ে অন্যভাবে দেয়ার কথা ভাবতে পারেন। নাও ভাবতে পারেন।

শুরুতে [ ] এর মধ্যে justify আর শেষে [ ] এর মধ্যে /justify দিলে পড়তে কিছুটা আরাম হতো।


-----------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

তুলিরেখা এর ছবি

ধন্যবাদ শুভাশীষ।

-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

আগ্রহ জাগালো!

তুলিরেখা এর ছবি

বইটা পেলে পড়ে ফেলুন।
হাসি

-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

একটানে পড়ে ফেললাম তুলিদি। বইটা পড়তে ইচ্ছা করছে। দেখি পড়ে।

আর এইসব মনে রাখারাখির ব্যাপারে মোটামুটি আমিও বড় বেশীই কাঁচা। আমারও আবার কোনও কিছুই মনে থাকে না! মন খারাপ

খুব সুন্দর লিখেছো! আর নামটাও খুব ভালো হয়েছে! দেঁতো হাসি

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

তুলিরেখা এর ছবি

ধন্যবাদ হে দুষ্ট বালিকা। হাসি
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

অপছন্দনীয় এর ছবি

খেয়েছে, এই জিনিস কিনা আমি এতদিন পড়িইনি! আজ ফেসবুকে কৌস্তুভের লিঙ্ক দেখে এলাম!

দারুণ রিভিউ দিদি - বইটাও কিনতে হবে।

(তবে ইয়ে, মনে রাখার ব্যাপারে উল্টো কয়েকটা ঘটনা দেখেছি - ব্যতিক্রম হতে পারে অবশ্য)

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।