বই চুরি

চরম উদাস এর ছবি
লিখেছেন চরম উদাস (তারিখ: বিষ্যুদ, ২০/০২/২০১৪ - ১:৫১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সেই কোন কালে ওস্তাদ মুজতবা আলী বইকেনা প্রবন্ধে লিখেছিলেন - বই কিনে কেউ কখনো দেউলিয়া হয়না। আলী সাহেবের সারাজীবনের কাজ পিডিএফ হিসেবে নামাতে সময় লাগে মিনিট খানেক। খরচ লাগে শূন্য টাকা। সুতরাং দেউলিয়া হবার প্রশ্নই আসে না। একথা জানার পর তিনি বেঁচে থাকলে আজ কি বলতেন জানিনা। তবে 'বই চুরি করে কেউ কখনো পাপী হয়না' এই কথা নিশ্চয়ই বলতেন না।

কথা বলি বই চুরি নিয়ে। লেখক বা প্রকাশকের কাছ থেকে কোনরকম অনুমতির তোয়াক্কা না করে তার বই স্ক্যান করে, পিডিএফ বানিয়ে সেটাকে ওয়েবসাইটে আপলোড করে, সবাইকে ঘোষণা দিয়ে ফ্রি জ্ঞান বিতরণ এর মতো মহান কাজটি করা নিয়ে। যেই মহান কাজটি করে যাচ্ছে আমারবই ডট কম (http://www.amarboi.com) অথবা গ্রন্থ ডট কম (http://www.grontho.com/) এর মতো সাইটগুলো। বিশেষ করে আমরা যারা প্রবাসী তাদের জন্য রীতিমতো লোভনীয় এরকমের সাইটগুলো। এক ক্লিক করে আপনি মুজতবা আলী, বিভূতিভূষণ বা সুনীলের সারাজীবনের লেখা সাহিত্য নামিয়ে নিতে পারেন। তারপর অবসর সময়ে পড়ুন বসে বসে। নিজের বন্ধুদেরকেও লিঙ্ক দিন। জ্ঞানই তো অর্জন করছেন, অন্যায় কি করছেন?

এ ধরণের কাজ ন্যায় কি অন্যায় সেটা বুঝতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে প্রাচীন ভারতবর্ষ এবং গ্রীসের ইতিহাস। প্লেটো বলেছিলেন ... হে হে হে হে ভয় পাবেন না। মশকরা করলাম। এটা চুরি কিনা সেটা বোঝার জন্য আপনাকে প্লেটো সক্রেটিস ফুকো ফ্রয়েড কে কি বলেছেন জানার দরকার নেই, কোন ইতিহাস জানার প্রয়োজন নেই। নিজের সামান্য বিবেক বুদ্ধি দিয়েই বোঝা যায়। চুরি মানে চুরি, চোর মানে চোর। জ্ঞান উন্মুক্ত হলে অবশ্যই ভালো হয়, কিন্তু সেটাকে উন্মুক্ত করতে গিয়ে লেখকের কাছা উন্মুক্ত করার কোন মানে নেই। ঠিক যেরকম আপনি আপনার প্রাইভেট টিউটর বা বিদ্যালয়ের শিক্ষকের কাছ থেকে জ্ঞানার্জন করে - জ্ঞান তো ফ্রি বলে টাকা না দিয়ে পালিয়ে আসেন না ঠিক তেমনি লেখকের কাছ থেকেও আপনি ফ্রি আশা করতে পারেন না। অনেকেই ফ্রি দিতে ইচ্ছুক, সেটা তাদের মহানুভবতা, দায়িত্ব নয়। জ্ঞান যেরকম প্রতিটি মানুষের অধিকার, তারচেয়েও বড় অধিকার অন্ন । কিন্তু সেই অধিকার নিশ্চিত করতে গিয়ে আপনি নিশ্চয়ই পাড়ার মুদির দোকান থেকে পাউরুটি উঠিয়ে নিয়ে দৌড় দেন না। আপনার যদি টাকা থাকে তবে তার বিনিময়ে দোকানদারের কাছ থেকে সেটা আপনাকে কিনতে হয়। টাকা না থাকলে দোকানদারের কাছে ভিক্ষা চাইতে পারেন। অনেকেই হয়তো সেটা মঞ্জুর করবেন। একইভাবে আপনার যদি টাকা দিয়ে বই কেনার সামর্থ্য বা ইচ্ছা না থাকে আপনি লেখকের কাছে সেটা প্রকাশ করুন। আপনার সামর্থ্য না থাকলে অন্ন ভিক্ষা চাওয়ার মধ্যে লজ্জার কিছু নেই, জ্ঞান ভিক্ষার মধ্যে তো লজ্জার আরও কিছু নেই। লজ্জা আছে চুরির মধ্যে, তারচেয়েও বড় লজ্জা চোরের মায়ের বড় গলা হবার মধ্যে।

লেখকের সব বই পিডিএফ বানিয়ে আপলোড করে দেয়া কোন জ্ঞান-বিতরণমূলক মহান কাজ না। এটা পাইরেটেড মুভি ডাউনলোড, গান ডাউনলোড বা সফটওয়্যার ডাউনলোডের মতোই একটি অপরাধ, যার সরল বাংলা নাম চুরি। যারা এধরণের কাজগুলো করছেন তাদের ভাবখানা অনেকটা রবিনহুড এর মতো। টাকার চেয়েও মহান জিনিস তারা লুট করে বিতরণ করছেন - সেটার নাম জ্ঞান। আমারবই ডট কম এক্ষেত্রে আরেক কাঠি উপরে। তারা চুরির মাল আবার পয়সার বিনিময়ে বিক্রি করছেন। ওদের বাৎসরিক ফি পঁচিশ ডলার দিলে আপনি পাবেন আনলিমিটেড ডাউনলোডের সুযোগ! সকল রবিনহুড চোর হলেও সকল চোরেরা রবিনহুড নয়! তারা নিছকই চোর।

আমরা এমন এক অদ্ভুত সমাজে বড় হয়েছি এবং হচ্ছি যেখানের স্কুল কলেজে ঘটা করে আমাদের শেখানো হয় দাড়িয়ে মূত্রত্যাগ করা বা বাম হাতে ভাত খাওয়া কত বড় অপরাধ সেটা । কিন্তু সফটওয়্যার চুরি করা, প্লেজিয়ারিজম, লেখা চুরি, ছবি চুরি, কপিরাইট, মেধা-সত্ত্ব সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞানটুকু আমাদের দেয়া হয়না। আমরা তাই পাইরেটেড উইন্ডোজ আর অফিসকে আমাদের বাপদাদার সম্পত্তি মনে করেই এগিয়ে যাই। ব্যবহার করার সময় মাঝেমাঝে মাইক্রোসফটকে দুইচারটা গালিও দিয়ে নেই, কেন তাদের সফটওয়্যারের দাম এত হবে এই বলে। আমরা দিব্যি আরেকজনের তোলা ছবিকে অনলাইনে পেলে সেটা চুরি করে অফলাইনে বই পত্রিকায় নিজের মনে করে ব্যাবহার করে ফেলি।

তাই বলি চুরি করলে চোরের মতোই করুন, চুপিচুপি কাউকে না জানিয়ে। কপাল ভালো হলে দিনশেষে ধরা পরবেন না, দিনের আলোতে সাধু হয়েই থাকবেন। তবে ঢাকঢোল পিটিয়ে সবাইকে জানিয়ে সেই চুরিটা করতে যাবেন না বা সেই চুরিকে মহান কাজ বলে গ্লোরিফাই করতে যাবেন না। কারণ তখন সেটা আর চুরি থাকবে না, সেটা হবে ডাকাতি। চোরকে মানুষ অনেক সময় উত্তম মধ্যম দিয়েই ছেড়ে দেয়, ডাকাতির শাস্তি অত সহজ নয়।

কপিরাইট নিয়ে কথা বলতে গেলে কিছু প্রশ্ন উঠে আসে। শেষ করি সেরকম কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর দিয়ে।

আপনার কি মনে হয়না জ্ঞান উন্মুক্ত হওয়া উচিৎ?

উন্মুক্ত এবং ফ্রি এর মাঝে কিছু পার্থক্য আছে। জ্ঞান অবশ্যই ফ্রি হলে ভালো হয় কিন্তু তার আগে আমাদের প্রথম চার মৌলিক চাহিদা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও চিকিৎসা ফ্রি হলে আরও ভালো হয়। আপনি যেরকম অন্যের লুঙ্গি খুলে নিয়ে দৌড় দেন না, অন্যের বিছানায় জায়গা খালি বলে সেইখানে শুয়ে পড়েন না বা অসুস্থ হলে ওষুধ চুরি করেন না একইভাবে আপনার বই বা জ্ঞান চুরি করার অধিকার নেই। লাইব্রেরী বলে একখানা জিনিস আছে - সেটার নাম কি কখনো শুনেছেন?

গ্রন্থ ডট কম এর উদ্যোক্তা কপিরাইট নিয়ে এই কথা বলেছেন, আপনার বক্তব্য কি?

কপিরাইট নিয়ে কথা বলতে গেলে পুরো বিশ্বের, বিশেষ করে ভারতবর্ষের প্রাচীনতম সময়ের ইতিহাসও চলে আসবে যখন আমরা দেখব, জ্ঞান ছিলো উন্মুক্ত এবং জ্ঞানীদের ভরণপোষণের ভার সম্পূর্ণভাবে সমাজের কাঁধে ছিলো। কিন্তু, এখন সমাজ "উন্মুক্ত-প্লাটফরমের" অবধারিত পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাচ্ছে "এক দেশ-এক ভাষার" পরিণতির দিকে। যেখানে বই পাবলিশিং এখন খোদ লেখকের হাতে, সেখানে জ্ঞান-ব্যবসা চলবে কেন? আর যদি আইনের কথাই বলি, তাহলে বলতে হয় আইন এমর একটি জিনিস যা কখনো "বিশুদ্ধতম" হতে পারে না। আইনের মাধ্যমে অত্যাচার, শোষণের ইতিহাস পৃথিবীর সর্বত্রই দেখা যায়, অতীতেও ছিলো, এখনও আছে। মূলত, আমরা যাকে আইন বলি সেগুলো মূলত শাসক প্রণীত বিধিবিধান। যে ধর্মশাস্ত্র আইনের উৎস হিসেবে বিবেচিত হয় তা থেকেই ব্যাখ্যা করে শাসকেরা চিরদিন আইনের নামে শোষণ করেছে। এইদেশে ব্রিটিশ আমলের অত্যাচারী আইনের কথাগুলোও ভুলে যাওয়া চলবে না। তাছাড়া, আইন কোনো স্থির বিষয় নয়। এতে ভুল থাকে, এটি বুড়ো হয়ে যায়। আইন এমন জিনিসও নয় যাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে না। সুতরাং, বুড়ো থুড়থুড়ে আইনের কাছে নতজানু না হয়ে চিরনবীন, সদা ধাবনমান সমাজকেই গুরুত্বদিন বেশী। কারণ, সমাজের প্রচলিত প্রথাই আইন, factum vallet নীতিতে হাজার বিধিবদ্ধ আইনকেও প্রথার মাধ্যমে, ব্যবহার্যের সুবিধার মাধ্যমে উল্টিয়ে দেওয়া যায়।
(বক্তব্যটি ফেসবুকে পাবলিক শেয়ার করা পোস্ট থেকে নেয়া। সূত্র উল্লেখ করে পাবলিক শেয়ার করা বক্তব্য তুলে ধরলে কপিরাইট ভঙ্গ হয়না বলে জানি। যদি এটা অন্যায় বলে মনে করেন কেউ, জানাবেন। )

- সত্য ও মিথ্যার মাঝে আমি পার্থক্য করি সহজ একটা পদ্ধতিতে। যেকোনো সরল প্রশ্নের উত্তর দিতে যদি পাঁচটির বেশী বাক্য ব্যয় করা হয় এবং ইতিহাস, দর্শন ও কঠিন কঠিন ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করা হয় তবে সেটি মিথ্যা হবার সম্ভাবনাই বেশী। অনুমতি না নিয়ে বই এর পিডিএফ তৈরি ও বিতরণ হচ্ছে চুরি। যে এই কাজ করে সে রবিনহুড নয়, ছিঁচকে চোর - পিরিয়ড।

বিনামূল্যে বই ডাউনলোড হলে লেখক কি মরে যাবে?
- লেখালেখি যাদের পেশা তারা পেটেভাতে মরবে। আমার জন্য লেখালেখি শখ, আমার মতো শৌখিন লেখকদের তেমন কিছু আসবে যাবে না। আমি অনলাইনে লেখতেই পছন্দ করি, পাঠক আমার প্রায় সব লেখা যেন ফ্রি পড়তে পারে সেটা আমি চাই। কিন্তু শুধু আমার মতো শৌখিন লেখক দিয়ে বাংলা সাহিত্য চলবে না। সাহিত্য সমৃদ্ধ হবার জন্য ফুল-টাইম পেশাদার লেখক দরকার। সেইসাথে একজন লেখক তার লেখা কতটুকু, কোথায়, কিভাবে শেয়ার করবে সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার লেখকের।

কি করবো, বই এর এত দাম ...
- একটা সত্যিকারের ভালো উপন্যাস লিখতে একজন লেখকের তিন থেকে পাঁচ বছর সময় লাগে। সেই উপন্যাস পড়ার জন্য যদি আপনি দুই-তিনশ টাকা খরচ না করতে পারেন অথবা কোন লাইব্রেরী বা বন্ধুর কাছ থেকে ধার নেবার কষ্টটুকু করতে না চান তবে আপনার সেটা পড়ার প্রয়োজন নেই। নীচে গোলপিয়া বার্গারের মেনু দিচ্ছি। খুব দামি কোন বার্গারের দোকান নয়, মাঝামাঝি দামের।

এবারে রকমারি ডট কমের মেনু দিচ্ছি।

তিনশ টাকা দিয়ে আপনি মুরগীর ঠ্যাঙ খাবেন নাকি 'তিন পয়সার জ্যোছনা' পড়বেন সেই সিদ্ধান্ত একান্তই আপনার।

ভাই বাইরে থাকি, বাংলা বই পাওয়া অনেক ঝামেলা। পিডিএফ পড়ার লোভ সামলাতে পারিনা। কি করবো?

- আমার নিজের অবস্থাও আপনারই মতো। ফট করে একটা নতুন বই পিডিএফ আকারে হাতে পেয়ে গেলে মাথা নষ্ট হয়ে যায়, লোভ সামলাতে পারিনা। কিন্তু এই চর্চা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। একটা অনলাইন সংগ্রহশালা গড়ে তোলা সম্ভব যেখানে লেখকদের অনুমতি নিয়ে নামমাত্র মূল্যে অথবা বিনামূল্যে pdf, epub বা অন্য যেকোনো ইবুক ফরম্যাটে প্রবাসীরা বই সংগ্রহ করে নিতে পারবেন। বই-দ্বীপ (http://www.boidweep.com) ইতোমধ্যে এই কাজটি করে দেখিয়েছে এবং দেখাচ্ছে। এক-দুই ডলার বা বিনামূল্যে তারা নিয়মতান্ত্রিকভাবে ইবুক ডাউনলোড করার সুযোগ করে দিচ্ছে।

আপনি কি তবে মোস্তফা জব্বারের দলে?

- ভাই আপনের বাড়ি কোন জেলায়?

-> প্রাসঙ্গিক আরেকটা উদ্যোগের কথা উল্লেখ করি, বইশেয়ার - http://boishare.com/site । সুহানের এই লেখায় (বই নিয়ে) বিস্তারিত বলা আছে এ সম্পর্কে।

আপডেট (ফেব্রুয়ারি ২১ , ২০১৪) - গ্রন্থ ডট কম (http://www.grontho.com/) তাদের সাইট থেকে পাইরেটেড বই সরিয়ে নিয়েছে এবং ঘোষণা দিয়েছে দিয়েছে ভবিষ্যতে লেখকের অনুমতি ছাড়া তারা এখানে বই আপলোড করবে না। কিছু কিছু লেখক তাদের বইগুলো একটা সময় পার হবার পর ওয়েবসাইটে আপলোডের অনুমতি দিচ্ছেন। আশা করি আরও অনেক লেখকরাও এগিয়ে আসবেন।


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আমরা কোথায় পৌঁছে গিয়েছি যেখানে চুরি করে প্রকাশ্যে সেটাকে জাস্টিফাই করার মতো মানুষের অভাব হচ্ছেনা। ওয়েব সাইটে ঘোষণা দিয়ে চুরি কে জায়েজ করার চেষ্টা হচ্ছে!

আমারবই ডট কম-এর হুইজ তথ্য। এনাকে ফোনে কোয়েরি করা যেতে পারে।

Registrant Email: info@ amarboi.com
Registry Admin ID:
Admin Name: Riton Khan
Admin Organization: Self
Admin Street: 3817 Ventnor Ave
Admin Street: 912
Admin City: Atlantic City
Admin State/Province: New Jersey
Admin Postal Code: 08401
Admin Country: United States
Admin Phone: +1.6096162564

চরম উদাস এর ছবি

চলুক

তারেক অণু এর ছবি

গুরুত্বপূর্ণ লেখা। কোনদিন দেখব সব নয়া বই বিনা অনুমতিতে স্ক্যান করে আপ করে দিছে, বাঙ্গালী সব কিছুতে টাকা খরচ করবে, বইয়ের পেছনে না, এই সংস্কৃতির পরিবর্তন আদৌ দেখে যেতে পারব কিনা সন্দেহ আছে।

তাসনীম এর ছবি

চলুক

বই কিনে কেউ কখনো দেউলিয়া হয়না - কিন্তু বর্তমানে বই লিখে দেউলিয়া হওয়ার সম্ভবনা দেখছি।

এই ধারা বন্ধ হওয়া উচিত। আমার তো মনে হয় প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে বাংলা ই-বুক একটা সম্ভাবনাময় ব্যবসা হতে পারে। বই পাঠানোর ঝামেলা-টামেলা নেই - মিনিটেই ডাউনলোড।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

আমার তো মনে হয় প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে বাংলা ই-বুক একটা সম্ভাবনাময় ব্যবসা হতে পারে। বই পাঠানোর ঝামেলা-টামেলা নেই - মিনিটেই ডাউনলোড।

চলুক

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

চরম উদাস এর ছবি

বই-দ্বীপের মতো আরও কিছু নতুন পদ্ধতি উঠে আসা উচিৎ। রকমারি তো ইতোমধ্যে বিশাল জনপ্রিয়তা পেয়ে গেছে, অরাও চিন্তা করতে পারে এরকম কিছু করার।

হিমু এর ছবি
সাকিন উল আলম  এর ছবি

আমি আন্সার দিসি , সকালেই ।
হাসি

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

ডান হিমু ভাই। হাসি

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

জলের ফোঁটা এর ছবি

অন্যান্য অপশানটা থাকলে ভাল হত। একের অধিক প্রশ্নেরই মনমত উত্তর পাই নাই।

চরম উদাস এর ছবি

অংশ নিয়েছি

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

গুরু গুরু
গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় নিয়ে দারুন একটা লেখা উদাসদা।
সেই, লোকজন রোজ হাজার টাকা দিয়ে ফাস্ট ফুড খেতে পারে শুধু বই কেনার সময় টাকার কথা মনে পড়ে।
অথচ কত অমূল্য সব বই নাম মাত্র দামে পাওয়া যায়।
আমারবই ডট কম, গ্রন্থ ডট কম সহ এই ধরনের সকল বেআইনি সাইটগুলোর বিরুদ্ধে মামলা করা দরকার।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ লেখাটার জন্য।

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

বইদ্বীপ কি সচলায়তনের? তারেকের আঁকা কার্টুন মনে হল।

মূল সাইটটা সুন্দর। আগে দেখিনি। টুকটাক কাজ বাকি আছে। একটা বই ডাউনলোড করতে চাইলাম--টার্মস অব সার্ভিস এক্সেপ্ট করতে বলল। কিন্তু টার্মসে কী লেখা সেটা পড়তে পারলাম না। লেখাটা এরকম--

vel nibh at eros blandit aliquet non vel ligula. Praesent laoreet nibh sit amet neque imperdiet eu tempor felis pharetra. Class aptent taciti sociosqu ad litora torquent per conubia nostra, per inceptos himenaeos. Vivamus iaculis tristique sapien quis consectetur. Curabitur sollicitudin, ante at sagittis suscipit, nulla risus facilisis neque, eu consectetur mi sem sed lectus. Aliquam erat volutpat. Proin in ante risus. Etiam pulvinar vestibulum laoreet.

সাইটটা নজরকাড়া।

সাইটের প্রচ্ছদ এবং সাইট পরিচালনাকারিদের সাথে সখ্যতা/পরিচয়, তাদের গ্রহণযোগ্যতা এসব আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। যে কারণে অন্য সাইট থেকে বই অনেকবার কিনতে চেয়েও কি কারণে যেন কেনা হয়নি। প্রচারণারও দরকার আছে। প্রচারণা না থাকলে আমার মত পাঠক আগ্রহী হবে না। এদেরকে বই সামনে এনে বলতে হবে দেখ এই বই বেরিয়েছে, কিনবা নাকি। বলতে চাইছি নতুন বইয়ের খবরটা যেন পৌঁছে দেয়া হয়। (ইমেইলে বা ফেইসবুকে এটা করা যেতে পারে)

পরিচিত অনেকেরই বই বেরিয়েছে, কিন্তু সেটা কিভাবে পাওয়া যাবে তা খুঁজে দেখার মতো সময় পাইনি। (বাংলাদেশের মানুষ অবশ্য আমার এই কথাটা বিশ্বাস নাও করতে পারে। আমার নিজেরই বিশ্বাস হয়না সময় কেমনে দখল হয়ে যাচ্ছে।)

সাফি এর ছবি

আমাজনে কিছু বাংলা বই দেখেছি। আমার বন্ধু রাশেদ বইটা ছিল যতদূর মনে পড়ে। এরকম উদ্যোগ নিয়ে বাংলা বইকে সহজলভ্য করা যেতে পারে। আমি যত ওয়েব্সাইট দেখেছি ফ্রি বই এর, তাদের প্রতিটাতেই বিজ্ঞাপন দেখেছি। এরা বরং জ্ঞানের বিতরণ এর চেয়ে ফ্রি বই দিয়ে ভিজিটর আকৃষ্ট করে নিজেদের পকেট সম্বৃদ্ধ করতেই বেশী আগ্রহী।
আমি নিজেই এসব সাইট থেকে বই ডাউনলোড করে পড়েছি/পড়ছি। তবে ই-বই সুলভ হলে, লেখকের পরিশ্রমের মূল্য পরিশোধ করেই পড়তে চাই।

এক্ষেত্রে আমাদের বই পড়ুয়াদেরও সচেতনতা জরুরী।

সত্যপীর এর ছবি

পয়সার বিনিময়ে বই আপলোডের বান্দরামি সম্ভবত শুরু করে পাঠাগার ডট নেট। এদের দেখাদেখি বাকিরাও পেইড সাইট করতে থাকে। এদের কালেকশন মারাত্মক, কলকাতা থেকে কেউ চালায় এইটা। এদের সকলেরই দাবী পয়সা তাদের ন্যায্য প্রাপ্য কারণ স্ক্যান করতে অনেক মূল্যবান সময় আর পয়সা লাগে তাদের।

..................................................................
#Banshibir.

উদ্ভ্রান্ত পথিক এর ছবি

চোরের মা এর বড় গলা!

---------------------
আমার ফ্লিকার

অতিথি লেখক এর ছবি

আজ বই নিয়ে আলোচনার একটি সাইটে (বইয়ের পোকা) দেখলাম একজন লিখেছে গ্রন্থ ডট কম নাকি একটা সোনার খনি অ্যাঁ । চুরি করা ও নাকি সোনার খনি হয়? তো সেখানে সেটাকে চুরি বলায় বেশকয়েকজন সিরিয়াস পাঠক ক্ষেপে গেলেন, শুরু হলো ব্যাক্তিগত আক্রমন। পরে অবশ্য যুক্তি তর্কের পর লাইনে এসেছে সবাই।

একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ বই যখন পোশাকের মতো করে ফেলে মানুষ তখন সমস্যার শুরু হয়। অর্থাৎ সুন্দর সুন্দর নিত্য নতুন পোশাকের মতো যদি সবাইকে দেখাতে যান আমি অনেক বই পড়ি আর সব বই একবছরের মধ্যে কিনে ফেলবো এমন ভাবে থাকল বইয়ের দাম তখন আকাশচুম্বী মনে হয়। আপনি প্রতি মাসে সর্বোচ্চ কয়টি বই পড়তে পারবেন দুটি কিংবা তিনটি? সেই তিনটা বইয়ের দাম কোনভাবেই হাজারের উপর নয় । অথচ আপনি প্রতি মাসে মোবাইল বিল দিচ্ছেন হাজার টাকার উপরে, ফাষ্টফুড় খাচ্ছেন হাজার টাকার উপরে, এগুলো প্রতিমাসে নিয়মিত করেন তাও আপনার গায়ে লাগে না অথচ দুই-চার মাস পরপর বই কিনতে গেলে আপনি বই এর দাম বেশী এই স্বৈরাচারি, পুঁজিবাদী ব্যবস্থা মানিনা বলে প্রতিবাদের ঝড় তুলেন। তাহলে বলতে হবে বই আপনার জন্যে নয়।

মাসুদ সজীব

চরম উদাস এর ছবি

চুরিকে জাস্টিফাই করার জন্য পুঁজিবাদ, স্বৈরাচার, শোষক, শোষিত ইত্যাদি বেশ ভালভাল শব্দ।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

আমি লজ্জিতভাবেই স্বীকার করছি, আমি এই সাইটগুলো থেকে এবং এই সাইটগুলো ছাড়াও প্রচুর ই-বুক নামিয়েছি। শুধু বাংলা সাহিত্যই না, লেখাপড়ার জন্য অ্যাকাডেমিক চোরাই বইও নামিয়েছি। সেই চুরির পেছনে আমি কোন অজুহাত দাঁড়া করাতে চাই না।

ইংরেজি বইয়ের বাজারের কথা আমি তেমন একটা জানিনা। তবে এখানের বাজারে কেউ কাউকে এতটা সহজে ছাড়ে না সেটা আন্দাজ করি। অনেক লেখক দু-তিন বছরে একটা বই লেখেন, দিব্যি মিলিয়ন কপি বিক্রি হয় সেসব বইয়ের অনেকগুলোই। সেই জায়গায় আমি আমাদের দেশের বইয়ের বাজার চিন্তা করি। আমাদের বাঙ্গালী লেখকদের মধ্যে হুমায়ূন আহমেদ, জাফর ইকবালের মত দু-চারজন ছাড়া কেবল বই বেঁচে জীবিকা চালাতে পারেন এমন লেখক কয়জন আছেন? মিলিয়ন কপি তো পরের কথা পাঁচ হাজার কপি কয়জন লেখকের বই বিক্রি হয়? অথচ একটা ভাল বই লিখতে কী পরিমাণ সময় লাগার কথা সেটা বোধহয় যাঁরা একটু আধটু লেখালেখির চেষ্টা করেন তাঁরা সবাই জানেন। একজন লেখক যদি বছরে একটা করে বই লেখেন আর তার পাঁচহাজার কপিও বিক্রি হয় দুইশত টাকা করে, ১২% হারে রয়ালিটি ধরলে লেখকের বাৎসরিক ইনকাম হবে এক লাখ বিশ হাজার টাকা মাত্র, মাসে দশ হাজার টাকা, তাতে পেটের ভাতের জোগানই হবার কথা নয়। তাঁকে তখন উন্মুক্ত জ্ঞানের টোটকা খাইয়ে ফ্রি ই-বুক বানিয়ে যত্রতত্র আপ্লোড করা হলে জ্ঞান উন্মুক্ত হবে বটে তবে সেটা হবে অনেকটা সোনার ডিমের লোভে হাঁসকে জবাই করে ফেলার মতই। লেখক যদি লিখে খেয়ে পড়ে বাঁচতে না প্রেন তখন লেখা অনেকের জন্যই হয়ে উঠবে সেকেন্ড বা থার্ড প্রায়োরিটি। কেউ কেউ বছরে একটি মানসম্পন্ন বইয়ের চেষ্টা বাদ দিয়ে পাঁচটি বাজারি সস্তা বই প্রসব করার চেষ্টা করবেন। তখন সেই উন্মুক্ত জ্ঞান লইয়া আমরা কী করিব?

বাংলা বই এর প্রকাশকদেরই ই-বুক বাজারজাতকরনের জন্য একটা লিগ্যাল বিজনেস মডেল নিয়ে চিন্তা করা দরকার। আলটিমেটলি এই যুগে ই-বুক ঠেকানোর কোন উপায় নাই, সেটা ঠেকানো ঠিকও হবে না। কিন্তু তাতে লেখক প্রকাশক যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সে দিকটা দেখা খুব জরুরী। তবে আরেকটা ব্যাপার মাথায় রাখা দরকার। ইনবক্সে স্ক্যান্ড বই বন্ধুর সাথে শেয়ার করা আর ওয়েবসাইট খুলে সেটা তুলে দেয়ার মধ্যে পার্থক্য আছে। আম্রিকা কানাডার মত তথাকথিত উন্নত দেশেও টেক্সটবই অল্পস্বল্প ফটোকপি করা যায়, লিগ্যালিই, পার্সোনাল ব্যবহারের জন্য, প্রফেসররাও এরকম ম্যাটেরিয়াল অনেক সময় রিরাইট করে ক্রেডিট উল্লেখ করে সাপ্লাই দেয়। কিন্তু সেগুলা নির্লজ্জভাবে অনলাইনে তুলে দেয়া যায় না। প্রযুক্তির এই যুগে একেবারে ১০০% চুরি বা শেয়ারিং ঠেকানো হয়ত সম্ভব না। কিন্তু সেটা সম্ভব না বলেই না বলেই নির্লজ্জভাবে একেবারে ওয়েবসাইট খুলে লেখক প্রকাশকের কোন অনুমতি ছাড়া তুলে দেয়াকে সাপোর্ট করা যায় না। সেটা আমি আপনি করলেও যায় না।

তবে এই সাইটগুলো তো আরো এক কাঠি সরেস, তারা শুধু মানুষের বই ফ্রি তুলে দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, তার ওপর নিজেরা আবার ব্যবসা ফেঁদে বসেছে! আর ক্যাক করে চেপে ধরলে বলছে উন্মুক্ত জ্ঞানের কথা, এতই যদি উন্মুক্ত জ্ঞানের গল্প তাহলে বইয়ের মধ্যে জলছাপ কেন? বই ডাউনলোডের জন্য ২৫ ডলার দিয়ে মেম্বার হতে হবে কেন?

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

চরম উদাস এর ছবি

আমরা সবাই এই চুরির মাঝে দিয়েই বড় হয়েছি, হচ্ছি। আমি ঐ দুটি সাইট না হলেও আগে অন্য ফোরাম থেকে বা বন্ধুবান্ধব থেকে পিডিএফ পেয়েছি এবং পড়েছি। কিন্তু এই চর্চা থেকে আসলেই বের হওয়ার রাস্তা দরকার। একেবারে ১০০% চুরি কোনভাবেই ঠেকানো সম্ভব না, তবে পুকুর চুরি ঠেকিয়ে সেখান থেকে সামনে আগানো যেতে পারে।

মন মাঝি এর ছবি

লেখাটা পড়ে একটু গুগ্লাতে গিয়েই চমকে খেলাম। ইন্টারনেট যে বাংলা বইতে এমন সয়লাব হয়ে গেছে কোন ধারণাই ছিল না! বুঝলাম এখনও প্রস্তর (বা কাগজের) যুগে বাস করছি।

নীচে দেখলাম এই রকম সাইটের তালিকা করতে চাইছেন। এই নেন দুইটা তালিকা-সাইট / পোস্ট- http://www.tunerpage.com/archives/105138 , অথবা - http://www.techtunes.com.bd/edutunes/tune-id/122613 । কত তালিকা করতে চান করেন! হাসি

এছাড়াও পেলাম এই 'ফিরি' সাইটগুলি - , , , , ,

তবে, দুঃখের বিষয় আমার কোন লাভ হল না। সুপ্রাচীণ কাগজ-যুগের (paper age) নিয়াণ্ডার্থাল চোখ দিয়ে এইসব পিডিয়েফ-মিডিয়েফে মজা পাই না আমি। মন খারাপ

****************************************

চরম উদাস এর ছবি

চলুক

ঈয়াসীন এর ছবি

চলুক

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

সাকিন উল আলম  এর ছবি

ফেবুতে দেখলাম ,আমার বই তিনকোণার সাইট , এর বিরুদ্ধে তো কপিরাইটের এক্টে মামলা করা দরকার । রেগে টং

চরম উদাস এর ছবি

amarboi.org সম্ভবত তিনকোনার সাইট, ডট কম সম্ভবত অন্য কারো।

স্পর্শ এর ছবি

গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা। কিছু যোগ করি।

এত চুরির পরেও, পাঁচ হাজার না এমনকি দশ বিশ হাজার কপি বিক্রি হলেও লেখক সাধারণত কোনো টাকা পান না। প্রকাশনা শিল্পের এই রোগ সারাতে প্রকাশকদেরকে কেমোথেরাপি দেবার ব্যাপারেও আলোচনা হওয়া উচিৎ।

এবার আসি সিস্টেমের কথায়। হঠাৎ একটা জোরালো আইন করে কোনো বিশেষ অপরাধ দমন করা যায় না।

আমার বুয়েট লাইফে, দুয়েকটা বাদের সব টেক্সট বই-ই ছিলো চুরি করা। নীলক্ষেত ভার্সন। এই বই গুলো বেশিরভাগই মূল ভার্সন বাজারে পাওয়া যেত না। আর পাওয়া গেলেও, আমার সামর্থে কুলাতো না। এখন কী অবস্থা জানি না। যে দেশের উচ্চশিক্ষা দাঁড়িয়ে আছে এই ধরনের ব্যবস্থার উপর (অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কী সবাই বইএর আসল প্রিন্ট কেনে?) , সে দেশে গল্পকবিতার বই চুরি নিয়ে যে কেউ বিচলিত হবে না সেটা বোঝাই যায়। একেকটা টেক্সটবই একেকজন লেখকের পনের-বিশ বছর পরিশ্রমের ফসল।

দেশের নাকি এখন ম্যালা টাকা হইসে। কোটি কোটি ডলার রিজার্ভ। তা সরকার কিছু বই-টই কিনলে তো পারে। পাবলিক লাইব্রেরী গুলোতো ধুকতে ধুকতে এখন শেষ হয়ে গেছে। বিদেশ বিভুইতে দেখি প্রতি পাড়ায় পাড়ায় সরকারী লাইব্রেরী। কী বই নেই সেখানে!! এমনকি দুপ্রাপ্য কোনো বই পড়তে চাইলে, পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে আপনার জন্য সেটা তারা জোগাড় করে দিতে অঙ্গীকার বদ্ধ। দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যেই। চাই কি, টোয়াইলাইট, ফিফটি শেডসঅফ গ্রে মার্কা বইও পাওয়া যায়। এ ধরনের পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার ছাড়া শুধু নীতিমালার কথা বলে বই চুরি ঠেকানো যাবে না।

আমার বন্ধুদের মধ্যে দেখেছি গল্পের বই যারা ডাউনলোড করে পড়ে (মূলত, সুলভে ও সহজে না পাওয়ার কারণে)। তারা কাগজের বই কেনেও বেশি। (এই ব্যাপারে দেশে একটা জরিপ হওয়া দরকার।) বই-দ্বীপের মত সাইটগুলোকে প্রচারের ব্যাপারে আরো মুখর হতে হবে। সাইটটাকেও আরো স্ট্রিমলাইন্ড করতে হবে। কোনো বই বিক্রি হলে লেখক যে তার অংশের টাকাটা পাচ্ছেন, মানে এই সাইটও আর দশজন প্রকাশকের মত মেরে দিচ্ছে না, সেটা কীভাবে নিশ্চিত করা হয়? এইসব ব্যাপারে সুস্পষ্ট ওয়ার্ক ফ্লো থাকতে হবে।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

চলুক

মন মাঝি এর ছবি

জাফর ইকবাল মনে হয় প্রথম আলোতে প্রকাশকদের বিষয়ে একটা মর্মভেদী লেখা লিখেছিলেন। প্রকাশকদের প্রতারণায় অতিষ্ঠ নাট্যকার সাঈদ আহমদ একবার রাগে-ক্ষোভে-দুঃখে ভেঙ্গে পড়েছিলেন আমার কাছে। ক্ষোভের চোটে বলেছিলেন, বাংলাদেশে একটা প্রকাশকও নাই যারা @$#!^%*&+?% না! হয়তো সাময়িক আবেগোচ্ছাসজনিত অতিরঞ্জন, হয়তো না। আমার এ বিষয়ে জানা নাই। তবে তার মত মানুষের (এবং লেখক) মধ্যে এমন ক্ষোভ দেখে স্তম্ভিত হয়ে গেছিলাম, যার অনেকগুলি বইই মনে হয় অত্যন্ত সুপরিচিত ও প্রথমসারির কিছু প্রকাশণা প্রতিষ্ঠান থেকে বেরিয়েছে।

****************************************

চরম উদাস এর ছবি

চলুক

উদ্ভ্রান্ত পথিক এর ছবি

ভাই টেক্সট বই এর যেই দাম! আমি অবশ্য ভারতীয় ভার্সনের আসল টেক্সটবই অনেক গুলাই কিনছিলাম। যেগুলা সবসময় কাজে লাগতো। যেমন কোরমেনের অ্যাল্গোরিদম।
টেক্সটবই এর ক্ষেত্রে নাকি বিস্রি কিছু পলিটিক্স আছে বাইরের বিশ্ববিদ্যালয় গুলাতে। জোর করে প্রফেসররা নাকি টেক্সটবই কেনায় তারপর দেখা যায় সেখান বেশি হলে ১০-১২পাতা পড়াইছে।

---------------------
আমার ফ্লিকার

চরম উদাস এর ছবি

বুয়েট এবং নীলক্ষেত একেবারে একে অপরের সাথে জড়িয়ে আছে। আমরাও সবাই নীলক্ষেতের ফটোকপি পড়েই বড় হয়েছি। কিন্তু বুয়েট অথোরিটি কি পারেনা চাইলে একটা ব্যবস্থা করতে? সব দামিদামি টেক্সট বইগুলোরই কিন্তু অপেক্ষাকৃত কমদামি এশিয়ান এডিশন তৈরি হয়। জানিনা বুয়েট ও অন্যান্যরা মিলে কোন চুক্তি করতে পারে কিনা নিয়মতান্ত্রিকভাবে বইগুলোর কমদামি এডিশন দেশে নিয়ে আসতে। করতে পারলে খুবই ভালো হয়। আমরা যদি গ্রেজুয়েট ডিগ্রী অর্জন করি চোরাই বই দিয়ে তবে পরবর্তীতে কপিরাইট টাইট নিয়ে মাথা না ঘামানোরই কথা।

সাকিন উল আলম  এর ছবি

এক জাভার ই অর্জিনাল হারবার্ট শিল্ড কিনতে লাগসিলো ৪০০০ টাকা, তাই ডিপার্টমেন্টের লাইব্রেরী থেকে বই কিনে চালাতেসি গত দুই তিন সেমিষ্টার মন খারাপ

নীলক্ষেতে তো ওইসব বই এর দাম ১৫০ এর মাঝেই ।

এক লহমা এর ছবি

অত্যন্ত জরুরী পোস্ট। চলুক
এ পর্যন্ত একটি-ই বাংলা পিডিএফ ডাউনলোড করেছি, লেখকের অনুমতি ছিল। আইনি পথে ই-বুক পাওয়ার ব্যবস্থা আরো বিস্তৃত হওয়া দরকার। খুব ভাল লাগল বই দ্বীপের কথা জেনে। এবার সেখানে যেতে হবে।
আলোচনা চলুক।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

বৈধভাবে ই-বই বাজারে আসাটা দরকার শুধু বিদেশে বাসরত বাংলাভাষীদের জন্যই নয়। কাগজ খরচ না হওয়ায় ই-ভার্সনের দাম কমিয়ে বাংলদেশের পাঠকদেরকেও এই পথে আসতে উৎসাহ দেয়া যায়।

[মেঘলা মানুষ]

অনিকেত এর ছবি

চলুক

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

Riton Khan
3817 Ventnor Ave #912
Atlantic City, New Jersey 08401
(609)6162564

এর নামে মামলা ঠুকে দেন। আমেরিকায় কপিরাইট আইন খুব স্ট্রেইট ফরোয়ার্ড। মামলা শুরু করতেও বেশী ঝামেলা হবার কথা না। সিরিয়াসলি বলছি কয়েকজন লেখক মিলে একটা সিজ এন্ড ডিসিস্ট লেটার দিয়ে শুরু করতে পারেন।

চরম উদাস এর ছবি

চলুক

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

চলুক


_____________________
Give Her Freedom!

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

আমার পড়ার বইগুলোও সব নীলক্ষেত ভার্সন ছিলো।

যা যা বলতে ইচ্ছে করছিল তা উপরে মনমাঝি, স্পর্শ, ত্রিমাত্রিক কবি প্রমূখেরা বলে দিয়েছেন।

লেখাতে পাঁচতারা।

____________________________

পৃথ্বী এর ছবি

লেখক-গবেষক শ্রম ব্যয় করে জ্ঞান সৃষ্টি করেন, কেউ মানুক আর না-ই মানুক জ্ঞানও আসলে একটি পণ্যই। এই পণ্যের মূল্য রাষ্ট্র পরিশোধ করবে নাকি নাগরিক পরিশোধ করবে সেটা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে, কিন্তু লেখক-গবেষকের পারিশ্রমিক পাওয়ার অধিকারটা বিতর্কের উর্ধ্বে। একটা আদর্শ দুনিয়ায় রাষ্ট্রই এই মূল্য পরিশোধ করে সবার মাঝে জ্ঞান বিতরণ করে দিত, কিন্তু আমরা প্রাকৃত জগতে বাস করি বলেই লেখকের শ্রম চুরি করা বৈধ হয়ে যায় না।

আমার হার্ডডিস্কে ৩০ গিগার মত বিদেশী বই আছে যেগুলা বাংলাদেশে পাওয়া যায় না, মার্কিন ডলারে কিনতে গেলেও সব স্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে দিতে হবে! কিন্তু তাই বলে এই চুরিতে মহত্ত্ব আরোপ করে চুরির চেয়েও বড় অপরাধ করতে যাব না। যারা বই পাইরেসির প্রসঙ্গ উঠলেই ক্ষেপে উঠে, নিজেকে চোরের ভূমিকায় দেখতে অহমে বাধে বলেই তারা এই চুরিকে র‍্যাশনালাইজ করতে নেমে পড়ে।

বাংলা ইবুক যদি অনলাইনে বিকিকিনির কোন ব্যবস্থা করা হয়, তবে সেক্ষেত্রে মূল্য পরিশোধের ব্যবস্থা যথা সম্ভব সরল রাখা উচিত। বিক্যাশ একটা ভাল ব্যবস্থা হতে পারে।


Big Brother is watching you.

Goodreads shelf

উদ্ভ্রান্ত পথিক এর ছবি

আমার হার্ডডিস্কে ৩০ গিগার মত বিদেশী বই আছে যেগুলা বাংলাদেশে পাওয়া যায় না, মার্কিন ডলারে কিনতে গেলেও সব স্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে দিতে হবে! কিন্তু তাই বলে এই চুরিতে মহত্ত্ব আরোপ করে চুরির চেয়েও বড় অপরাধ করতে যাব না। যারা বই পাইরেসির প্রসঙ্গ উঠলেই ক্ষেপে উঠে, নিজেকে চোরের ভূমিকায় দেখতে অহমে বাধে বলেই তারা এই চুরিকে র‍্যাশনালাইজ করতে নেমে পড়ে।

একেবারে আমার মনের কথা! চলুক

---------------------
আমার ফ্লিকার

চরম উদাস এর ছবি

রকমারির সাথে আলাপ করে দেখি, ওরা ইবুক এর ব্যাপারে কিছু করতে আগ্রহী কিনা। বই-দ্বীপ সম্ভবত দেশে মূল্য পরিশোধের একটা বেবস্থা করেছে বা করতে যাচ্ছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

কপিরাইট আইন মেনে চলার ব্যাপারে আমাদের সচেতনতা ভয়াবহ রকমের কম, সেটা শুধু বইয়ের ক্ষেত্রে কেন - গান, সিনেমা সব ক্ষেত্রেই। বইয়ের ব্যাপারে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হল, ইন্টারনেটে ফ্রি বই ডাউনলোড (বা চুরি) করার সুযোগ পাবার পর আমার বই পড়ার বৈচিত্র বেড়েছে। এমন অনেক বই ডাউনলোড করে পড়া হয়, যেগুলো হয়ত কিনে কখনোই পড়া হতো না। ভাবখানা এমন, মাগনা যখন পাওয়াই যাচ্ছে তখন চেখে দেখি। এভাবে কিছু কিছু বই পড়ে ফেলে বেশি পছন্দ হয়ে গেলে পরে আবার সেগুলোর হার্ডকপিও কিনে সংগ্রহে রাখার চিন্তাভাবনা করি। ইবুক ডাউনলোড করে পড়ার কিছু সুবিধা আছে: আমি যেমন স্মার্টফোনে পড়ি। জ্যামে বাসে আটকে বসে আছি, বোরিং লাগছে, একটা বইয়ের ইবুক/পিডিএফ পড়ে সময় কেটে গেল। সুতরাং হার্ডকপি বইয়ের পাশাপাশি ইবুকও এখন একটা চাহিদা। মাগনা পেয়ে হলেও অভ্যাসটা গড়ে উঠেছে। এখন লেখক প্রকাশকের স্বার্থ অক্ষুন্ন রেখে কিনে ইবুক পড়তে আপত্তি নেই।

যেসব সাইটের কথা বলা হচ্ছে তাদের বইয়ের কালেকশন বেশ ভালো। সব বইয়ের প্রকাশকরা একসাথে হয়ে তাদের কাছ থেকে রয়ালিটি আদায় করার চেষ্টা করতে পারে, আর ভবিষ্যতের জন্য একটা বিজনেজ মডেল দাড় করাতে পারে। এছাড়া অনেক ছোট বড় ব্লগটাইপের সাইট আছে, আরো নতুন নতুন খোলা হচ্ছে নিয়মিত, যেগুলোতে জনপ্রিয় বই বেশি পাওয়া যায়। এত এত সাইট বন্ধ করা বা মনিটর করা কঠিন ব্যাপার।

- সজীব

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

সুন্দরী নারীর মন ছাড়া আর কিছুই চুরি করা জায়েজ না। নারীরা আমার মতো মহান পুরুষদের মন চুরি করতে চাইলে জায়গায় বসে আওয়াজ দিবেন, চুরির কষ্টটুকুও করতে হবে না। বিনামূল্যে ইবুক, ইপাব, মোবি সবি পেয়ে যাবেন চোখ টিপি

যাহোক, চুরি অন্যায়, তীব্র অন্যায়। জ্ঞান হোক বা অজ্ঞান পার্টি হোক... চুরি যে করে সে চোর। নানান ইতং বিতং দিয়ে এটা জায়েজ করার চেষ্টা আরো বড় অন্যায়। এটা বন্ধ করতে হবে। মামলা এখানেই ডিসমিস।

আমাকে এখনো ইবুক ইপাব মোবি কিছুই পড়তে হয়নি। নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। এমনকি আমি নীলক্ষেত থেকেও কখনো পাইরেটেড বই কিনি না।
উচ্চশিক্ষা করিনি তাই নীলক্ষেত থেকে শিক্ষার জন্যও কখনো পাইরেটেড বা ফটোকপিওয়ালা বই কিনতে হয়নি। বইয়ের ক্ষেত্রে নিজেকে 'নিষ্পাপ' ( চোখ টিপি ) ঘোষণাটা দিয়েই দিচ্ছিলাম, হঠাৎ মনে পড়লো ছোটবেলায় বন্ধুদের কাছ থেকে, পাঠাগার থেকে, বইমেলার স্টল থেকে প্রচুর বই চুরির অভিজ্ঞতা... তাই ঘোষণাটা দিতে পারলাম না। তবে আমি এখন নিজাম ডাকাত থেকে নিজাম আউলিয়া হয়ে গেছি। আমি এখন আর বই মারি না, চুরি করি না হাসি

তবে মিউজিক, সিনেমা আর সফটওয়্যার এর ক্ষেত্রে নিজের ফাঁসি চাওয়া ছাড়া উপায় নেই। প্রচুর মিউজিক আর গান বিভিন্ন সাইট থেকে শুনি আমি। এগুলোর প্রচুর লিঙ্ক শেয়ারও হয়। যে কোনো গান খুঁজতেই চোখ বন্ধ করে ইউটিউব, দরিদ্রডটকম ইত্যাদির দিকে হাত চলে যায়। মিউজিক সেক্টরটা একেবারেই ধ্বসে যাচ্ছে শুধু আমাদের এই চুরির জন্য মন খারাপ
এই চুরি নিয়ে আমার কোনা সিনাজুরি নেই, হীনমন্ন্যতা আছে। উপায় খুঁজছি বের হবার।

তেমনি সিনেমার ক্ষেত্রে। বিদেশী সিনেমা দেখার সুযোগ আমাদের এমনিতেই কম। সম্প্রতি কিছু সিনেমা আসছে দেশে, কিন্তু পরিমান কম, টিকিটের মূল্য অহেতুক বেশি। এগুলোর চেয়ে আমি এমন অনেক সিনেমা দেখতে চাই, যেগুলো দেশের সিনেমা হলগুলোতে কখনোই হয়তো প্রচার হবে না।
এগুলোর কপিরাইটওয়ালা ডিভিডি কিনতে চাইলেও আমি কতটুকু পারবো ঢাকা থেকে, সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত না। কারণ ঢাকার ডিভিডির দোকানগুলো সব চুরি করে আমার কাছ থেকে সিনাজুরি করে টাকা নেয়। এটা সমর্থন করতে পারি না আরো বেশি।
সেক্ষেত্রে আমাকে সিনেমা দেখাই বাদ দিতে হবে। এমনিতে সময়াভাবে সিনেমা দেখাও খুব কমেছে। যতটুক দেখি চুরি করেই দেখি মন খারাপ

আমি যা যা সফটওয়্যার ব্যবহার করি নিয়মিত, সেগুলোর কিছু উন্মুক্ত থাকলেও বেশিরভাগই চুরি করা। উইন্ডোজ, অফিস, ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর ইত্যাদি। এটাও স্বীকার করে নিতে বাধ্য হচ্ছি। উবুন্টু চেষ্টা করে দেখেছিলাম কয়দিন। সেটায় অভ্যস্ত হতে আরো কিছুদিন সময় লাগবে।
২০১৫ সালের মধ্যে হয় উন্মুক্ত সফটওয়্যারের দুনিয়ায় ঠাঁই নিবো, নয়তো সফটওয়্যার কিনে ব্যবহার করবো। তার আগ পর্যন্ত চুরি বজায় না রেখে উপায় দেখছি না মন খারাপ

গুরুত্বপূর্ণ পোস্টটির জন্য ধন্যবাদ। নিজের ভেতরের চোরটাকে একটু রিভিউ করে নিলাম। আগামী এক বছরের মধ্যে নিজেকে শুধরে নিতে পারবো আশাকরি। সুন্দরী নারীর মন ছাড়া আর কিছুই চুরি করবো না হাসি

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

বই চুরি জায়েজের ক্ষেত্রে নানান অজুহাত দেওয়ার চেষ্টা আছে। কপিরাইট প্রসঙ্গে সবচেয়ে বেশি টানা হয় সম্ভবত রবিঠাকুরকে। এই বুড়ো পৃথিবীর নানান গান থেকে সুর নিয়ে নিজের গানে ঠেসে দিয়েছিলেন, কপিরাইটের তোয়াক্কা না করেই।
রবিঠাকুরের কাঁধে বন্দুক রাখলেই চুরি জায়েজ হয়ে যায় না।

আরো দুদু'টো বড় অজুহাত সেবা প্রকাশনী আর বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র। চুরির অভিযোগ আনলে সেবা প্রকাশনীর সবটুকুই প্রায় ফেলে দিতে হয়। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র'র প্রকাশনাতেও কপিরাইট মানা হয়না বলেই জানি।
অন্তর্জাল বিকাশের আগের জমানায় অনেক কিছুই হয়েছে। রাজনীতি থেকে বাণিজ্য, বিপ্লব থেকে শিল্প সবখানেই অনেককে অযথাই মহান বানিয়ে রেখে দিয়েছি। কিন্তু এখন আসলে ঘুরে দাঁড়ানোর সময়ই এসেছে।
আর 'ও চুরি করে আমি করলেই দোষ' টাইপ কথাগুলো কোনোরকম ব্যাখ্যা ছাড়াই আপত্তিকর।

জ্ঞান বিরতণ একটা ভালো অজুহাত। দৈনিক পত্রিকাওয়ালারা যেমন আপনার লেখা অন্তর্জাল থেকে সংগ্রহ করে ছাপিয়ে দিয়ে আপনাকে 'ধন্য' করে দেওয়ার আত্মসুখে ভোগেন।
যারা বই স্ক্যান করে অন্তর্জালে ছড়িয়ে দিচ্ছেন, তাদের অবশ্যই লক্ষ্য রাখা উচিত বইয়ের কপিরাইটের বিষয়ে। আইনের পাশাপাশি নীতিটাও এখানে মূখ্য।
১. যে বই দুষ্প্রাপ্য, সে বইগুলো এখন অবশ্যই স্ক্যান করে সংরক্ষণ করাটা জরুরী।
২. যে বইয়ের লেখক, লেখকের নির্বাচিত স্বত্বাধিকারী এবং প্রকাশক এখন আর কোনোভাবে এই বইয়ের প্রচার থেকে কোনো টেকাটুকা পাবেন না। সেরকম অনেক বই বর্তমান কালের অন্য প্রকাশক ছাপিয়ে ধুমিয়ে ব্যাবসা করছে। এই বইগুলো নিয়ে ব্যাবসা বন্ধ করে বরঞ্চ এগুলো অন্তর্জালে সকলের জন্য উন্মুক্ত হতে পারে। এই ক্ষেত্রে প্রথম উদাহরণ রবীন্দ্র রচনাবলী। বাংলাদেশে এখন রবীন্দ্র রচনাবলী প্রকাশের ঢল নেমেছে। এমনকি খণ্ড বাড়ানোর প্রতিযোগিতাও চলছে।
দ্বিতীয় উদাহরণ প্রগতি রাদুগার বইগুলো... হা কৃষ্ণ করুনা সিন্ধু... যে যার মতো যা খুশি ছেপে যাচ্ছে। এমনকি অনুবাদক জীবিত থাকলেও, এমনকি তিনি বিনাশর্তে এবং বিনা পারশ্রমিকে অনুমতি দিতে রাজী থাকলেও তাঁর সাথে যোগাযোগের ন্যূনতম ভদ্রতাও করা হচ্ছে না। উল্টো 'আমি সাহিত্যের এত্তোগুলা উপকার করতে চাইলাম আর আপনেরা আমারে গাইলান?' টাইপ ক্রন্দন ঝেড়ে যাচ্ছে কেউ কেউ।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

রায়হান আবীর এর ছবি

চলুক

রায়হান আবীর এর ছবি

প্রকাশককে দিয়ে করাতে পারি নি, কিন্তু অবিশ্বাসের দর্শন এবং মানুষিকতা দুইটা বই প্রকাশ হবার পর বিদেশে যারা থাকেন তাদের কথা ভেবে আমি উদ্যোগ নিয়ে বই দুইটার ইপাব/পিডিএফ আমাজনে আপলোড করেছি। সহায়তা করেছিলো প্রবাসী এক ছোট ভাই। কিন্তু বইদ্বীপ আসার পর দুইটা বইয়ের ইবুক প্রকাশিত হয় বইদ্বীপ থেকে। মাত্র দুই ডলারের বিনিময়ে বইগুলো বইদ্বীপ থেকে সংগ্রহ করা যায় বলে অনেক সাড়াও পেয়েছি। তবে চমৎকার ব্যাপার হলো, কেউ একটা কপি কিনলেও তার নোটিফিকেশন পেয়ে যাই। কতো কপি বিক্রি হলো, কতো টাকা রয়্যালিটি বাবদ প্রাপ্য হলো সব সহ। আশা করবো, ইবুকের ক্ষেত্রে আমরা বই-দ্বীপের মডেলটা অনুসরন করবো ভবিষ্যতে।

স্পর্শ এর ছবি

চলুক


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

চরম উদাস এর ছবি

আমার জীবনে কেনা প্রথম বাংলা ইবুক মনে হয় - অবিশ্বাসের দর্শন

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আমি যদিও এখনো প্রাচীনপন্থীদের মতো ইবই এড়িয়ে চলছি। কিন্তু নিশ্চিত জানি আগামী দুনিয়াটা ইবইয়েরই হবে। এখন থেকেই সেই প্রস্তুতি নিতে হবে। নইলে লস হবে। প্রস্তুতিটা লেখক প্রকাশক পাঠক পরিবেশক সব দিক থেকেই হতে হবে।

এখন দুই যুগের মধ্যবর্তী সময়ে আমরা আছি। বিশ্ব সভ্যতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বই দীর্ঘ দীর্ঘ বছর কাগজবন্দী থাকার পর এখন কাগজমুক্ত হচ্ছে। এই কাগজমুক্তিটা পুরোপুরি ঘটতে সময় লাগবে। মাঝখানের এই সময়টা দুর্যোগের। পুরনো অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ বই স্রেফ পৃথিবীর ইতিহাস থেকে হারিয়ে যাবে।
এই বিবর্তনগুলো অডিও ইন্ডাস্ট্রিকে ভুগিয়েছে বেশ। এলপি থেকে ক্যাসেট, ক্যাসেট থেকে সিডি, এখন সিডি থেকে ইভার্সন... এসব চক্করে অনেক মিউজিক হারিয়েছে, টিকে যাওয়াগুলোর মধ্যেও হারিয়ে গেছে অনেক মাধুর্য। অনলাইন থেকে নামানো গানে বা মিউজিকে অনেক ডিটেইলই আর পাই না। (হয়তো এই ডিটেইলগুলো এই শব্দদূষণের দুনিয়ায় আর দরকারও নাই মন খারাপ )

নিকট অতীতে যে বইগুলো প্রকাশিত হয়েছে, সে বইগুলো লেখক প্রকাশক আলোচনা সাপেক্ষে ইবই করে দিতে পারেন। নতুন যে বইগুলো লেখা হবে সেই বইগুলো একই সঙ্গে দুই ফর্ম্যাটেই প্রকাশিত হতে পারে।
পাঠকের আর একটু অভ্যাস হলে শুধু ইবই দিয়েই হয়ে যাবে। খরচ কম হবে সবক্ষেত্রেই।

অনেক লেখকই প্রচারের স্বার্থে নিজের লেখা বই সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে চাইবেন হয়তো। জাফর স্যার সম্প্রতি এক লেখায় নিজের বইগুলো ইবই করার কথা বলেছেন। যে বই বর্তমানে বাজারে নেই, প্রকাশক আর নতুন করে প্রকাশ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না, কিন্তু লেখক চাচ্ছেন বইটা আরো বেশি মানুষ পড়ুক, সেই বইগুলো ইবই হয়ে যেতে পারে।

এখন কথা হচ্ছে ইবইগুলো থাকবে কোথায়? বইদ্বীপ একটি ভালো সাইট। ধারণা করছি অচিরেই এরকম আরো সাইট গড়ে উঠবে। উদার লেখকরা নিজেরাই ইবই বানিয়ে প্রচার করতে পারেন।
তবে অবশ্যই প্লাটফর্ম থাকতে হবে। পাঠক হিসেবে আমি এমন কিছু প্লাটফর্ম অবশ্যই পেতে চাইবো যেখানে গেলে আমি অসংখ্য ইবইয়ের মধ্য থেকে আমার পছন্দেরটা বেছে নিতে চাইবো। আমাকে যদি সাত সাগর তেরো নদী ঘুরে ঘুরে বই খুঁজতে হয় তাহলে একটু কঠিন হয়ে যাবে ব্যাপারটা।
আবার প্লাটফর্ম হলে সেটারও কিছু দায়িত্ব থাকে। অনলাইনে বই প্রকাশের সুযোগ পেলে বহু লেখকই প্রতিদিন একটা করে বই অনলাইনে আনার ক্ষমতা রাখবেন বলে আমি নিশ্চিত। সেই প্রতিদিনের লেখক কবিদের বইব্যাধী যদি আমার কাঁধে জোয়ালের মতো চেপে বসে তাইলে ছেড়ে দিলে কেঁদে বাঁচতে চাইবো আমি।

সে কারনেই অনলাইনেও প্রকাশক প্রয়োজন। ধরা যাক বইদ্বীপ একটি অনলাইন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। এর একজন প্রকাশক আছেন, যিনি তাঁর ব্যানারে বাছাইকৃত বইগুলোই প্রকাশ করেন। বর্তমানের প্রকাশনা সংস্থাগুলোও এরকম শুরু করতে পারে। প্লাটফর্মটাকে পাঠকের আস্থার জায়গা করে তুলতে হবে। নইলে সামু হয়ে যাবে।

এখন যে বাংলা ইবইগুলো পাওয়া যাচ্ছে অনলাইনে, সেগুলো বেশিরভাগই স্ক্যান করে বানানো। ইবই হিসেবে কোয়ালিটি যথেষ্ট খারাপ। ইবুক রিডারে পড়তে অনেক কষ্ট হয়। চোরারা যে বই ফ্রি ছেড়ে দিয়েছে বাজারে, সেই বইটাই যদি প্রকাশক বা লেখক ঠিকঠাকভাবে ইবাজারে ছাড়েন ইবই হিসেবে। তাহলে পাঠক বিনামূল্যের চোরাই বই না পড়ে স্বল্পমূল্যে আসল বইটাই পড়বে। এটুকু আস্থা রাখতে পারি পাঠকের উপরে।

অনলাইন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ সমাধান না। বইদ্বীপ থেকে একজন বই কিনে তারপর তা সবার কাছে শেয়ার করার সুযোগ থাকে। সেক্ষেত্রে বিক্রি কমে যাবে। এই ভয়ে অনেকে অনলাইনে বই প্রকাশ করতে আগ্রহী হন না। যদিও কাগজের বইও একজন কিনে অনেকে মিলে পড়ার ইতিহাস আছে।

আমরা মোটামুটিভাবে বাংলাদেশের অবস্থা নিয়েই আলাপ করছি। সারাবিশ্ব এই বইচুরিব্যাধী কিভাবে সামলাচ্ছে আমার জানা নেই। বিশ্বের জনপ্রিয় লেখকদের বই তো খুব সহজেই অনলাইনে চলে আসছে। এমনকি প্রিন্টেও নকল ভার্সন হচ্ছে। সেই লেখক প্রকাশকরা কি ভাবছেন এসব ঠেকাতে? এগুলো নিয়ে কেউ আলোচনা করলে জানতে পারতাম।

কাজ কাম বাদ দিয়ে মনের আনন্দে অনেকক্ষণ যা খুশি তাই বললাম। সবই খুচরো চিন্তা ভাবনা, ভুল শুদ্ধ মিলিয়ে। আমি নিজেও আসলে জানি না সমাধান কী? চিন্তাগুলো হয়তো একসময় গুছিয়ে আনতে পারবো। এখন সবারটা শুনি পড়ি।

শেষ করি দু'টো বিষয় আলাপে এনে। কপিরাইটের মামলা হলে অনুবাদ সাহিত্য বাংলাদেশে অনেকটাই কমে যাবে। প্রায় থমকে যাওয়ার মতো অবস্থাই হবে বলে ধারণা করি। সেক্ষেত্রে করণীয় কী হবে?

আর উচ্চশিক্ষার্থীদের বড় একটা অংশ ফটোকপি নির্ভর। নীলক্ষেত নির্ভর। অনেক দরিদ্র মেধাবী ছাত্রই আছে যাদের পক্ষে সম্ভব হবে না মূল বই কিনে পড়া। এইটাকে অনেকেই বইচুরির পেছনে আরেকটা অজুহাত হিসেবে দাঁড় করান। সেক্ষেত্রে সমাধান কী হতে পারে তা উচ্চ শিক্ষার্থীরা বলতে পারেন। আমি মুর্খ মানুষ, কিন্তু আমার মনে হয় প্রতিটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠাগারে যদি প্রয়োজনীয় বইগুলো প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পর্যাপ্ত পরিমান কিনে রাখা যায়, তাহলে আর নীলক্ষেত কেন্দ্রীক বইচুরির সাম্রাজ্যর প্রয়োজন হবে না।
আর এই বইগুলোও ইবই হিসেবে কিনে নিয়ে সবার মধ্যে বিতরণ করা গেলে তো সবার পক্ষেই সাধু হয়ে যাওয়া সম্ভব।

(বকবকবকবকবকবক... এবার থামি)

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

স্পর্শ এর ছবি

সে কারনেই অনলাইনেও প্রকাশক প্রয়োজন।

প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন, সচলায়তন থেকে "প্রকাশায়তন" সৃষ্টির একটা প্রক্রিয়া চলছিলো কয়েক বছর আগে। সেটাই কি বই-দ্বীপ রূপ পেয়েছে?

অনলাইন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ সমাধান না। বইদ্বীপ থেকে একজন বই কিনে তারপর তা সবার কাছে শেয়ার করার সুযোগ থাকে। সেক্ষেত্রে বিক্রি কমে যাবে।

আমার মনে হয় খুব একটা কমবে না। এই খানে কিছু সাইকোলজিক্যাল ব্যাপার আছে। বই পড়ুয়ারা সাধারণত একটু “উচ্চ মোরালের” অধিকারী। ই-বই সুলভ-সহজলভ্য হলে আমি নিশ্চিত বেশির পাঠকই ভাগই কিনেই পড়বে। অনেক লেখক এই এক্সপেরিমেন্ট করেও দেখেছেন। বই ওপেনসোর্স করে দেবার পরেও দেদারসে বিক্রি হচ্ছে সেগুলো। তামিম শাহরিয়ার সুবিন ভাইয়ের, “কম্পিউটার প্রোগ্রামিং” বইটার কথা ভাবা যায় এ প্রসঙ্গে। উন্মুক্ত বই কিন্ত হাজার হাজার পাঠক সেটা কিনছেও। ফেসবুক পেজে লক্ষ্যাধিক লাইক। (যদিও শুনেছি প্রকাশক এক পয়সা রয়ালটি দেয় না) বিদেশি অনেক লেখকের ক্ষেত্রেও এমন ঘটে। বিখ্যাতদের মধ্যে পাওলো কোয়েলহো তার বই গুলো ফ্রীতে ইন্টারনেটে দিয়ে দেন। কিন্তু বিক্রি কমেনি। মুক্তমনার পরিচিত অনেক লেখকের বই-ই, সেখানে ইবুক আকারে রেখে দেওয়া। তবুও মানুষ কেদারসে কিনছে।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

চরম উদাস এর ছবি

আরও কতকত কথা বলতে চেয়েছিলাম, নজরুল ভাই খাটনি কমিয়ে দিলেন। আমার পোস্ট মুছে, আপনেই পোস্ট দিয়ে দেন, লেখার চেয়ে মন্তব্য বেশী ওজনদার হইছে দেঁতো হাসি

সাকিন উল আলম  এর ছবি

চলুক

সত্যপীর এর ছবি

বইদ্বীপ থেকে একজন বই কিনে তারপর তা সবার কাছে শেয়ার করার সুযোগ থাকে। সেক্ষেত্রে বিক্রি কমে যাবে।

সচল স্পর্শের সাথে সহমত। বিক্রি কমবে না। একজন আরেকজনের সাথে বই শেয়ার করা সর্বোচ্চ লেভেলের মার্কেটিং, পয়সা দিয়েও এই মার্কেটিং কেনা যাবেনা। লেখক হয়তো একটা বিক্রি কম করলেন কিন্তু একটা নতুন পাঠক পেলেন, যে ভালো লাগলে লেখকের বাকি বইগুলা হ্যারিকেন দিয়ে খুঁজবে। কিনে পড়বে। আবার আরেকজনকে বলবে। ভূত থেকে ভূতে। লস নাই নজরুল ভাই।

সাধারণের নাগালের মধ্যে দাম রেখে চতুর্দিকে ইবই ছড়িয়ে দিলে আর পাইরেসির ভয় থাকেনা। কিন্ডল আইবুকস কোবো ইত্যাদি বুকস্টোরে বই আপ করতে আজকাল তেমন কষ্ট হয়না। বইদ্বীপের কথা তো বলাই হয়েছে। এছাড়া Smashwords.com সেলফ পাব্লিশিং এর জন্য বেশ ভালো সাইট।

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

নীলক্ষেতের ইন্জিনিয়ারিং ও ডাক্তারি পাইরেটেড বইগুলো সম্পর্কে লেখকের এরকম জ্বালাময়ী ও সুচিন্তামূলক লেখার তীব্র দাবী জানিয়ে গেলাম।

পুরো ছাত্রজীবনে ভণ্ডামী করে বিদেশে থিতু হয়ে এখন নিজের দায়ে(নব্য লেখক খাইছে বই বিকোতে হবেনা!!! ) সৎ সাজার এই মহৎ প্রচেষ্টায় আপ্লুত ও বিগলিত হলাম।

আপনাদের দিয়েই হবে।

- বেরসিক বইচোর

চরম উদাস এর ছবি

ঠিক কোন জায়গায় সৎ ও মহৎ সাজার চেষ্টা করলাম ধরিয়ে দিলে ভালো হত।
নিজেকে চোর জানার মধ্যে ও সেই চর্চা থেকে বের হবার একটা রাস্তা খোঁজার মধ্যে বোধকরি লজ্জার কিছু নেই। কিন্তু সেই চুরির কথা কেউ ধরিয়ে দিলে সেটাকে নানা যুক্তি দিয়ে বারবার জাস্টিফাই করার মতো নির্লজ্জ হতে পারিনা।
মাঝেমাঝে তেড়েফুঁড়ে বিভিন্ন বলদের সাথে তর্ক করতে চাই, দিনশেষে নিজেকে এই শিশুটির মতোই মনে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

আহা, এতো চটে গেলে কি হয় ব্রাদার? প্রথম লাইনে আপনার লেখার প্রশংসাই তো করলাম। নিজে চোর স্বীকার করি কিন্তু জাস্টিফাই তো করিনি! স্রেফ জানতে চাইলাম, ফি বছর যে শয়ে শয়ে ছাত্ররা চোরাই বই কিনে কত শত অভাগা প্রফেসরদের পেটে লাত্থি মেরে আবার তাদের কাছেই স্কলারশীপ বাগিয়ে বিদেশে চলে যাচ্ছে! এই অভাগা প্রফেসরদের নিয়ে যদি চাট্টি বলতেন।

আর শিক্ষাজীবনও তো জ্ঞানলাভ তাই না? সেটা এড়িয়ে গেলে তো মুশকিল! আমার-আপনার ফাউন্ডেশনই তৈয়ারি চোরাই মাল দিয়ে( খাইছে )। এখন সেখানে ঠিকঠাক না করে স্রেফ উপর থেকে হালকা মূল্যবোধের পিচ ঢাললে যা হয় তা ফি বর্ষাতেই আমরা প্রত্যেক রাস্তায় দেখি।(আপনি রাস্তা খুঁজছেন দেখে বললাম আরকি)।

আর তা না করলে আর যার কাছে যাই মনে হোক, আমার মতন বেরসিকের কাছে তা ভণ্ডামোই মনে হবে। তাতে আপনার আমাকে বলদ মনে হোক আর যাই মনে হোক।

- বেরসিক বইচোর

সত্যপীর এর ছবি

পাঠ্যবই সবদেশেই দামি জিনিস, এমনকি বিদেশেও তেমন কেউ বই কিনে না এক দুই সেমিস্টারের জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি যথেষ্ট কপি মজুত রাখে আর সেমিস্টার চলাকালিন বই ইস্যু করে বাইরে নেয়া বন্ধ করে রাখে। ফলে সকলে লাইব্রেরি থেকে টুকটাক ফটোকপি করে নেয় যার যে চ্যাপ্টার দরকার। এইটা বাংলাদেশেও চালু করা উচিৎ। ছাত্রের পক্ষে বই পয়সা দিয়ে কেনা সব দেশেই অসম্ভব।

..................................................................
#Banshibir.

চরম উদাস এর ছবি

My apologies ... ব্যক্তি আক্রমণ না করে আপনার কথাগুলো সহজভাবে বলতে পারতেন। সেটা না করে সারকাজম করায় আমিও আপনাকে বলদ বলে ব্যক্তি আক্রমণ করে বসলাম। চিন্তা করে মনে হল, আমি দিনরাত নিজেই অনেক সারকাজম করি, তাই অন্যের সারকাজম সহ্য করার ক্ষমতা থাকা উচিৎ খাইছে
বুয়েট, নীলক্ষেত এই সম্পর্কে কথা কিন্তু কমেন্ট সেকশনে বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে সবার আগে দেশের ইউনিভার্সিটিগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। পীরবাবা যা বলল সেটা সত্য, বই এর দাম বাইরেও গলাকাটা। ভরসা লাইব্রেরী অথবা কমদামী এশিয়ান এডিশন (পাইরেটেড না ওগুলো)। আরও নিশ্চয়ই কোন না কোন উপায় আছে, সেটা যারা শিক্ষকতা পেশায় আছেন তারা ভালো আরও বলতে পারবেন।

আর আপনার যুক্তিমতে যেহেতু বাংলাদেশের প্রায় সমস্ত লোকই জীবনের কোন না কোন সময়ে পাইরেটেড সফটওয়্যার, মুভি বা বই ব্যাবহার করেছে, সেহেতু তাদের কারোরই এটা নিয়ে কথা বলার অধিকার নেই। বললেই সে হয়ে যাবে ভণ্ড। আর কেউ সেই প্রসঙ্গ উত্থাপন করলেই আপনার মতো বেরসিক বইচোররা এসে এড হোমিনিমের বগল বাজাবে 'ঐ মিয়া তোমার দাড়ি কই' বলে। অথবা একটা ইস্যু নিয়ে কথা বললে, কেন আগে ঐটা নিয়ে বললেন না বলে ক্রন্দন।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমিও আন্তরিকভাবেই দুঃখিত। আপনি রসিক মানুষ, নিছক রসিকতাই করেছিলাম তাই; এতো সিরিকাস হয়ে যাবেন বুঝিনি।

মোটাদাগে কমেন্ট সেকশনের সাথে একমত। শুধু বলার অধিকার নিয়ে যা বললেন তাতে একটু দ্বিমত (খাইছে)। আমি মনে করি যে আগে আমাদের ভুলটা স্বীকার করে তারপরে সামনে এগোনো উচিত যেকোনো সমস্যার সমাধানে। এটা বলার অধিকার থাকা বা না থাকা নয়; স্রেফ সত্যটা স্বীকার করার সৎসাহসটুকু ধারণ করা; স্রেফ এটুকুই।

যাই হোক, ভালো থাকুন। হাসি

- বেরসিক বইচোর

আয়নামতি এর ছবি

উত্তম জাঝা!
খাইছে আমার মত আস্তো চুরের মুখে চুনকালি মাখানোর মত একটা পুস্ট রে ভাই! সেকারনেই সহযোগী আরেক চুরা বন্ধু বললো এখন সচলায়তনে যাসনে খবর্দার। ঘটনা তাইলে এই! যে আমি ই-বুক সহ্য করতে পারতাম না সেই আমি এখন অম্লান বদনে ই-বুকের জন্য হন্যে হই। নিজে চুরি করি অন্যকেও সেই পাপের ভাগীদার করি। তবে এটাও সত্যি, সুযোগ পাইলে কিনতেও কসুর করিনা। আমাজন আর নিউইর্য়কের বইয়ের দোকানগুলো সাক্ষি। এরা দ্বিগুন/তিনগুন দাম রাখে বইয়ের কিন্তু কী করার পাচ্ছি এই কত! এটা বলে কিনি। এখন সেটা সম্ভব হচ্ছে না আর তাছাড়া কাহাতক ইনরাজি গেলা যায়। বাংলার জন্য প্রাণ আইঢাই করে যে! তাই জেনে শুনে বিষ করেছি/করছি পান। নেটফ্লেক্সে তো সব মুভির পাইনা, বাংলা ঋতুপর্ণের দু'টোসহ ফালতু কিছু আছে। তাই সেটার জন্য ইউটিউবে ভিক্ষা নিতে যাই। গানের ক্ষেত্রেও একই কথা। আয়হায় রে চুরিতে চুরিতে সয়লাব জীবন!
ব্যাপক শরমিন্দা হয়ে উত্তম জাঝা দিয়ে গেলাম আরো কিছু অজানা বইচুরির সাইটের নাম দেবার জন্য খাইছে

রকিবুল ইসলাম কমল এর ছবি

প্রকাশকদের এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভুমিকা পালন করা উচিত বলে মনে করি। কাগজের বই প্রকাশের পাশাপাশি তাদের নিজেদেরই উচিত সেই বইটির ই-বই প্রকাশের ব্যাবস্থা করা। কোন রকমে পিডিএফ করে আপলোড করে দিয়ে না।

প্রচলিত অধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে। ফ্রি-ফ্লোইং টেক্সট, কিন্ডেল, নুক, আই প্যাডের সব সুবিধা ব্যাবহার করে পড়ার মত ই-বই প্রকাশ করতে হবে। তবেই না বেটার রিডিং এক্সপেরিয়েন্সের জন্যে হলেও পাঠক ই-বই কিনে পড়বে। বই গুলোর সুন্দর বিজ্ঞাপন করত হবে। যেখানে পাঠক সমাজের চোরাই সাইট থেকে বই ডাউনলোড করাকে নিরুৎসাহিত করার সাথে সাথে প্রকাশকদের সাইট থেকে কেনা বইয়ের সুবিধা গুলো প্রচার করা হবে। চোরাই বই ডাউনলোডের বাজে অভ্যাস দূর করণে সুনির্দিষ্ট দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা থাকতে হবে।

বিভিন্ন শহরে ই-বইয়ের আউটলেট করা যেতে পারে। যেখানে পাঠক তার রিডিং ডিভাইস নিয়ে গিয়ে বই কিনে নিয়ে আসতে পারবে। দোকান থেকে কেনার অনুভুতি এবং অনলাইনে ট্র্যানজেকশনের সমস্যা বাইপাস করাও আউটলেট গুলোর উদ্দেশ্য হতে পারে।

প্রকাশকদের পক্ষ থেকে অনলাইনে এবং অফলাইনে কাস্টমার সার্ভিসের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। মূলকথা প্রকাশকরা নিজেদের ভালো মত গুছিয়ে এগিয়ে এলে সুলভ মূল্যে বই দিতে পারলে আমার মনে হয়না পাঠকরা চুরি করার মত অনুভুতি নিয়ে সাহিত্যের উচ্চ-মার্গের বই খুজতে যাবে ফালতু সাইট গুলোতে। প্রকাশকদের কাছ থেকে অনলাইনে টাকা দিয়ে ই-বই কিনে অপেক্ষাকৃত ভালো রিডিং এক্সপেরিয়েন্স পেলেই এখনকার সিনারিও পাল্টে যেতে শুরু করবে বলে আমার ধারনা।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এই পোস্টের ফজিলত... গ্রন্থ ডটকম সকল অননুমোদিত ইবই সরিয়ে নিয়েছে হাসি

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

চরম উদাস এর ছবি

চমৎকার সিদ্ধান্ত চলুক

মাহবুব ময়ূখ রিশাদ এর ছবি

সহমত, প্রতিটি কথার সঙ্গেই চলুক

------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

দীনহিন এর ছবি

আমি খুব বেশি ভ্রমন করিনি ফ্রি বইয়ের ব্লগগুলি। মূল কারণ: পিডিএফ বইয়ে অনভ্যস্ততা। তবে যতদূর মনে পড়ছে, ব্লগগুলিতে মূলত খুব জনপ্রিয় ও বিখ্যাত কিছু বই আছে, যেগুলোর বেশীরভাগই পুরনো। সুতরাং, এই বইগুলির জন্য লেখকের অনুমতি সহজেই অনুমতি মিলবে মনে হয়। আর লেখকেরও উচিত হবে না এত পুরনো বইগুলি নিয়ে কিপ্টেমি দেখানো! একজন মহৎ লেখক নিশ্চয় যুগের পর যুগ আয় করার উদ্দেশ্যে বই লেখেননি, বরং তার চিন্তার সর্বাত্মক বিস্তার ঘটুক, এটাই চাইবার কথা তার। অনেক বয়স হওয়ার পর একটি বইকে ফ্রি ডাউন-লোডের অনুমতি দিয়ে দিতে তাই তার আপত্তি থাকার কথা না। দিনশেষে বই লেখা একটি অবাণিজ্যিক ও অলাভজনক কাজ!

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

হিমু এর ছবি

আর লেখকেরও উচিত হবে না এত পুরনো বইগুলি নিয়ে কিপ্টেমি দেখানো!

জ্বি। কিপ্টেমি দেখানোটা শুধুই পাঠকের এখতিয়ার।

দিনশেষে বই লেখা একটি অবাণিজ্যিক ও অলাভজনক কাজ!

সিঁদেল চোরও বলতে পারে, বাড়িতে দরজায় খিল দেওয়া বা জানালায় গ্রিল দেওয়া একটি অবাণিজ্যিক ও অলাভজনক কাজ।

দীনহিন এর ছবি

ভুল হইছে, হিমু ভাই! মাফ চাইতেছি!
আমি ত লেখক না, তাই লেখকের কিপ্টেমি দেখানো উচিত কিনা, বই লেখা লাভজনক না অলাভজনক কাজ, সেই বিষয়ে আমার মন্তব্য একেবারেই অনুচিত হয়েছে!
ফ্রি ডাউনলোড করতে দেবেন কিনা, নাকি সব ফুটো বন্ধ করে দেবেন, সিঁদেল চোরদের আটকাতে দরজায়-জানালায় কি করে শক্ত খিল দেবেন - এসবই লেখকদের এখতিয়ার - তাদের সিদ্ধান্তের ব্যাপার।

দিনশেষে, লেখক বুঝে লেখকের দুঃখ, পাঠক পাঠকের।

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

হিমু এর ছবি

আপনি লেখক হন আর কসাই হন, কার জিনিস নিয়ে কে কিপ্টামি করবে কি করবে না সেটা বলার আপনি কেউ না।

সৌরভ কবীর এর ছবি

দাম নিয়ে কথা দেখে বলতে হচ্ছে। অনেকের কথাবার্তাতেই মনে হয় ভালো বই মানেই অনেক দাম।

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বইয়ের তালিকা নাড়াচাড়া করছিলাম। মোট ৩৫৭টা বইয়ের মধ্যে মাত্র ৪৫টা বইয়ের দাম দুইশো টাকার চেয়ে বেশি। আর বইমেলা থেকে কিনতে গেলে এই তালিকার মূল্যের চেয়ে আরো কম টাকায় পাবেন। আর বইয়ের সিলেকশন নিয়ে তাদের নিজেদের বাক্যটাই আসলে ভালো মানায়, "বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ বই কিনুন। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বই কিনুন।"

__________________
জানি নিসর্গ এক নিপুণ জেলে
কখনো গোধূলির হাওয়া, নিস্তরঙ্গ জ্যোৎস্নার ফাঁদ পেতে রাখে

অতিথি লেখক এর ছবি

বিসাকের বেশীরভাগ বই অনুবাদ এবং রিপ্রিন্ট। কতটা অনুমতি নেওয়া হয়েছে জানিনা।

অতিথি লেখক এর ছবি

১) টেকনিকাল ভাষায় না গিয়ে বলি, স্টিভ জবস বলেছিল সফটওয়্যার লিখতে চাও তো এপেলের প্লাটফর্মে লিখতে হবে আর বিল গেটস এম-এস ডস দিয়ে বলেছিল যেভাবে চাও লিখ; ফলাফল চোখের সামনে।

২) অর্থোপেডিক্স ডাক্তার নকল পা লাগিয়ে দিয়ে বলল যে, এই যে এককালীন ফি এবং যতদিন এই পা আছে তোমার, ততদিন আমাকে এত করে দিয়ে জন্য।

লেখকের বই প্রকাশের উপযুক্ত হলে প্রকাশক তাকে টাকা দিবে। বই বিক্রি হলে টাকা পাবে, ই-বুক বিক্রি হলে টাকা পাবে। বইটা পাবলিক ডোমেইনে চলে আসলে যতদিন, যতজন হাত ঘুরে পড়বে; সেটা হার্ডকপি /সফটকপি হোক; প্রত্যেককে টাকা দিতে হবে, এ কেমন কথা? আমার মায়ের বিশাল লাইব্রেরী ভান্ডার পড়ে কি নিজেকে চোর মনে করব????!!!!

আইডিয়া নিচের লিঙ্ক থেকে পাওয়া। ৪১৮ টা কমেন্ট, খুবই যুক্তিপূর্ণ আলোচনা। যারা অপরপক্ষের যুক্তি শোনেন তাদের জন্য।

অদ্রি

http://pogue.blogs.nytimes.com/2010/07/08/no-easy-answers-in-the-copyright-debate/?_php=true&_type=blogs&_r=0

মন মাঝি এর ছবি

বইটা পাবলিক ডোমেইনে চলে আসলে যতদিন, যতজন হাত ঘুরে পড়বে; সেটা হার্ডকপি /সফটকপি হোক; প্রত্যেককে টাকা দিতে হবে, এ কেমন কথা?

আসলেই তো! এ কেমন কথা? কে বলল এমন কথা?

****************************************

অতিথি লেখক এর ছবি

তাই তো বলছেন!! ফ্রি ডাউনলোড করলে চুরি আর ১ ডলার দিয়ে কিনলে ঠিক আছে। পাশের বাসার ভাইয়ার কাছ থেকে বই নিয়ে পড়তে পড়তে ভাবব আহা কিনলে তো লেখকের পকেটে টাকাটা যেত। কপিরাইট জিনিসটা কি সেটা আমাদের একটু ভালভাবে বোঝা দরকার।

[আচ্ছা আমাদের দেশের রিকন্ডিশন্ড গাড়ির ব্যবসা কিভাবে দাঁড়িয়ে আছে? টয়োটা ঠিকঠাকমত পাচ্ছে তো?]

অতিথি লেখক এর ছবি

আমাদের সময় যেটা হত এলাকার বড় ভাই শহর থেকে বই (নুতন/পুরানো) কিনে আনতেন পাড়ার লাইব্রেরির জন্য। আমরা নূন্যতম ফিএর বিনিময়ে মেম্বার ছিলাম আর সবাই শেয়ার করে পড়তাম। লাইব্রেরি কালচারটাই কিন্তু শেয়ারিং। এখন একজন কিনে স্ক্যান করে আপ্লোড দিচ্ছে আর ডাউনলোড করছে সবাই। আগে এক্সেস ছিল দশজনের এখন হাজারজনের। কিন্তু তাতে লেখক/প্রকাশকের কতটুকু ক্ষতি হচ্ছে তার স্ট্যাটাস্টিক্স দরকার। টাইমফ্রেমে ইকোনমিক মডেল দরকার তাহলে অযথা এই তর্কাতর্কি বন্ধ হবে।

বিসাকে কিন্তু স্কুলে বিনামূল্যে বই দিত দুই সপ্তাহের জন্য, তারপর নতুন বই, পরীক্ষা, পুরস্কার। তারাও কিন্তু কম পাঠক তৈরী করেনি।

হিমু এর ছবি

আপনি যখন পাশের বাসার ভাইয়ার কাছ থেকে বই ধার নেন, তখন পাশের বাসার ভাইয়ার কাছে বইটা আর থাকে না। সে জায়গায় একটা অনুপস্থিতি তৈরি হয়। কিন্তু অনলাইন থেকে যখন ফ্রি ডাউনলোড করেন, সে জায়গায় কোনো অনুপস্থিতি তৈরি হয় না। ফলে সেটা ধার নেওয়া হয় না, বরং একটা কপি বিনা মূল্যে নিজের দখলে নেওয়া হয়।

অনলাইনে যদি আপনি কোনো বই ডাউনলোড করার পর সেটা সার্ভার থেকে গায়েব হয়ে যেতো, তাহলে পাশের বাসার ভাইয়ার কাছ থেকে ধার নেওয়ার সঙ্গে তুলনা দিতে পারতেন। এই দুইটা কেন তুলনীয় নয়, আশা করি বুঝতে পেরেছেন। কাগজের বই শেয়ার করা যায়, সেটার ইলেকট্রনিক কপি তৈরি করে লোকজনের হাতে তুলে দিলে ব্যাপারটা আর "শেয়ার" থাকে না, রেপ্লিকেশন হয়ে যায়।

চরম উদাস এর ছবি

মন মাঝি এর ছবি

১। না, তাই তো বলছেন না! এখানে পোস্ট-লেখক ও চুরিবিরোধীরা কপিরাইট ও মেধাস্বত্বের কথা বলছেন। দুনিয়াজুড়েই কপিরাইটের একটা জীবনসীমা আছে। এটা অনন্তকালের জন্য নয়। আমার জানামতে সাধারণত মাত্র ৫০ বছর। দেশভেদে একটু এদিক-ওদিক হতে পারে হয়তো। অর্থাৎ, আপনার ভাষ্যমতে -

যতদিন, যতজন হাত ঘুরে পড়বে;... প্রত্যেককে টাকা দিতে হবে...

-- ব্যাপারটা মোটেই তা নয়। লেখককে একটা অতি সীমিত সময়ের জন্য মিনিমাম একটা সম্মানী দিয়ে মানুষের সৃষ্টিশীলতাকে ন্যূনতম সম্মানটুকু জানাতে বলা হচ্ছে। অন্য যে বাস্তব, বস্তুগত কারনগুলির কথা চউ উল্লেখ করেছেন - সেগুলির কথা আর উল্লেখ করলাম না। তো এই নির্ধারিত সময়টুকু পেরুলে পরে প্রাণভরে যত্তখুশি ডাউনলোড-মোচ্ছব করার সুযোগ তো থাকছেই! একজন স্রষ্টাকে যদি এইটুকু সম্মান দেখাতে না পারেন, সীমিত একটা সময়ের জন্য স্রেফ এইটুকু প্রতিদান দেয়ার মত বিবেকও যদি না থাকে - উলটে তার বই ডাকাতি করে চোরাচালানের উদ্দেশ্যে সার্ভারে গুদামজাত করে সর্বসক্ষে পরম পরিতোষের সাথে উচ্চকণ্ঠে বীরত্ব ফলান, নিজের মহত্বকীর্তন করেন, তাহলে আমার মনে হয় না ঐ বইগুলি পড়ে আপনার আসলে কোনকালেই কোন লাভ হবে। এর চেয়ে ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ বর্ডারে গরু চোরাচালান করাও বরং ভাল! (এখানে মন্তব্যগুলি সরাসরি আপনাকে উদ্দেশ্য করে করা হচ্ছে না)।

এখানে কেউ অস্বীকার করছে না যে আমরা অনেকেই অসচেতনতা বা নানাবিধ কারনে মেধাস্বত্ব লঙ্ঘনের অপরাধে কম বা বেশি অপরাধী, বিশেষ করে ফ্রি ডাউনলোডের ক্ষেত্রে। কিন্তু মানুষমাত্রেই ভুল হয়। সেজন্যেই ভুল বোঝা, স্বীকার করা, সংশোধনের আহবান বা সম্মিলিত চেষ্টার মাধ্যমে ঐ ভুলের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করার সুযোগ তার জন্য উম্মুক্ত থাকে। ভুল করলেই ভুলকে ভুল বলে স্বীকার করা যাবে না বা অন্যকে ঐ একই ভুল না করতে উদ্বুদ্ধ করা যাবে না, এমন কোন কথা নেই। এর মধ্যেও একরকম মানবিকতা আছে। কিন্তু, উলটে - কিসের যেন... মায়ের বড় গলার মত গলা মোটা করে চুরি শুধু না - রীতিমত দিনেদুপুরে রাহাজানি বা সাগরচুরির পক্ষে সাফাই গাইতে থাকলে পুরো ব্যাপারটাই রীতিমত অমানুষিক হয়ে যায়।

২। নীচে হিমুর মন্তব্যটা ভাল করে লক্ষ্য করুন। "[আপনার] মায়ের বিশাল লাইব্রেরী ভান্ডার" চোরাই বইয়ের সাইটের সাথে কেন তুলনীয় নয়, বা আপনার "মায়ের বিশাল লাইব্রেরী ভান্ডার" থেকে বই নিয়ে পড়া আর চোরাই বইয়ের সাইট থেকে ডাউনলোড করে পড়া কেন এক নয় বোঝার চেষ্টা করুন। নীচে অতিথি লেখকের কমেন্টটাও (৭৫) দেখুন এবং লাইব্রেরি কালচার আর চোরাই সাইট-কালচারের মধ্যে পার্থক্য কি এবং লেখকের উপর তার ইম্প্যাক্ট কি বোঝার চেষ্টা করুন।

৩। "রিকন্ডিশন্ড গাড়ির" উদাহরণ দিয়ে কি বুঝাতে চাইলেন বুঝলাম না! টয়োটাকে তাদের প্রাপ্য টাকা না দিয়ে কোন অবৈধ ব্যবসা হচ্ছে? বইচুরির পোস্টে এর প্রাসঙ্গিকতা কি? নাকি একটা অন্যায় দিয়ে আরেকটা অন্যায়কে লাঘব বা জাস্টিফাই করতে চাচ্ছেন? একটা অন্যায় দিয়ে আরেকটাকে যে কোনকালেই জাস্টিফাই বা আড়াল করা যায় না, এটা কি জানেন? টু রংস ডোন্ট মেক আ রাইট - এই কথাটা কি শুনেছেন কখনও?

বাস্তব চর্চার দিক থেকে আপনার থেকে আমার দূরত্ব হয়তো খুব বেশি না। কোন না কোন ভাবে হয়তো অনেক সময় মেধাস্বত্ব লঙ্ঘন করেছি। তবে সেটা আমি জাস্টিফাই করার চেষ্টা করছি না এবং সংশোধনের চেষ্টায় আছি। এটুকই পার্থক্য।

****************************************

অতিথি লেখক এর ছবি

যাক মনমাঝি ভাই এতক্ষণে কেউ কপিরাইটের টাইমফ্রেমের কথা উল্লেখ করল। চরম উদাস ভাই যেভাবে ঢালাওভাবে সবাইকে চোর বানিয়ে দিচ্ছিল সেটাতেই আমার আপত্তি ছিল। আমেরিকায় ১৯২৩ সালের আগে পাবলিশ হওয়া যে কোন কিছুই পাবলিক প্রপার্টি। আর ইন্ডাস্ট্রি অনুসারে কপিরাইট ২০ বছর থেকে সত্ত্বাধিকারীর লাইফটাইম পর্যন্ত।

হিমু ভাইয়ের কথা বুঝলাম। ধরেন আমার লেটেস্ট এডিশনের মেডিকেলের অরিজিনাল বই কিনার বাতিক। কিন্তু খুব একটা পরিবর্তন না হলেও আমি নতুন বই কিনি আর আগেরটা জুনিয়রদের দিয়ে দেই। আমার দশ বছরের জুনিয়রের কাছে আমার বই আছে। এটাকে কি বলবেন?

নীলক্ষেতের সেকেন্ড হ্যান্ড বইয়ের মার্কেট, যেখানে বইমেলার বই বইমেলার চেয়ে কম দামে পাওয়া যায়? আমার একটা ফ্রেন্ড যে বইয়ের পাগল সে বইমেলা থেকে বই দেখেশুনে নীলক্ষেত থেকে কিনত। গ্রে মার্কেট নিয়ে অনেক কিছুই বলা যায়।

ইউএসএর প্রফেসররাও বিভিন্ন বইয়ের অংশবিশেষ ফটোকপি করে দেন, আমাদের স্যারদের কথা বাদই দিলাম। এটা কি?

আমি অন্যায় দিয়ে আরেক অন্যায়কে জাস্টিফাই করছিনা। বলতে চাচ্ছি আজ আপনাদের টনক নড়ল কেন? কেন আপনারা মাসে লাখ টাকা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েননি আর এখন যারা পড়ছে তাদের কোন ফিসিবল সলুশন না দিয়ে ঢালাওভাবে চোর বলছেন? নিজেকে চোর বলা এক জিনিস আর অন্যকে বলা আরেক জিনিস। এক কাজ করুন না আপনার এমপিথ্রিতে যা গান আছে গত দশ বছরের মধ্যে প্রকাশিত, সব ডিলিট করে তারপর কিনে শুনুন; আমরাও সংশোধনের পথ দেখি।

হ্যা অন্যায় এটাই যে সদ্য পাবলিশ হওয়া যে কোনকিছু আপ্লোড করে দিলে কয়েক সংস্করণ বিক্রির যে আনন্দ আর সন্মান, তা থেকে একজন একজন সৃষ্টিশীল মানুষকে বঞ্চিত করা। অন্য দেশের কথা জানি না তবে আমাদের দেশের ডিস্ট্রিবিউটার আর সৃষ্টিশীল মানুষগুলোর মধ্যে এমন চুক্তি হওয়া উচিত যাতে ইনফ্রিঞ্জমেন্ট হলেও তাদের আর্থিক ক্ষতি না হয়। আর ফ্রি করার মাধ্যমে কিন্তু পাবলিক ডিমান্ডটা বোঝা গেল; এখন তাদেরই এক্সপ্লোর করতে হবে এই বিশাল মার্কেট কিভাবে ধরবে।

এটা যেহেতু গল্প না তাই আরো তথ্য উপাত্ত আর রেশনালাইজেশনের প্রয়োজন ছিল। অভিযোগ করার এরিয়া স্পেসেফিক করার দরকার ছিল। তা না হলে অহেতুক তর্ক আর কমেণ্টের সংখ্যাবৃদ্ধি ছাড়া কিছু দেখিনা।

আর সবশেষে অনেক শ্রদ্ধা আর সন্মান আচার্য্য বসু, রামানুজন, অভ্রর মেহেদী ভাই, লিনাক্স, মজিলা, রাগিব ভাইয়ের শিক্ষক, খান একাডেমি আর অসংখ্য গবেষক আর প্রোগ্রামারদের যারা বিনামূল্যে তাদের সৃষ্টি আপ্লোড করে দিয়েছেন; অর্থনৈতিক বৈষম্যের শিকার তৃতীয় বিশ্বকে প্রথম বিশ্বে মাথা তোলার সুযোগ করে দিয়েছেন।

হিমু এর ছবি

আর ইন্ডাস্ট্রি অনুসারে কপিরাইট ২০ বছর থেকে সত্ত্বাধিকারীর লাইফটাইম পর্যন্ত।

একটু সূত্র উল্লেখ করে বলুন এই কিচ্ছা কোথায় পেয়েছেন। সব দেশের কপিরাইট আইন একরকম নয়।
কপিরাইট হোল্ডারের মৃত্যুর ৫০ বা ৬০ বছর পর্যন্ত কপিরাইট তার উত্তরাধিকারীদের থাকে।

ধরেন আমার লেটেস্ট এডিশনের মেডিকেলের অরিজিনাল বই কিনার বাতিক। কিন্তু খুব একটা পরিবর্তন না হলেও আমি নতুন বই কিনি আর আগেরটা জুনিয়রদের দিয়ে দেই। আমার দশ বছরের জুনিয়রের কাছে আমার বই আছে। এটাকে কি বলবেন?

এটাকে উপহার বলবো। কারণ আপনার কেনা জিনিস আপনি আরেকজনকে দিয়ে দিয়েছেন। যদি আপনার নিজের কাছে কেনা জিনিসটা রেখে একটা অনুকৃতি (ফটোকপি/স্ক্যাণ্ড কপি) উপহার দিতেন, তাহলে কপিরাইট লঙ্ঘিত হতো।

ইউএসএর প্রফেসররাও বিভিন্ন বইয়ের অংশবিশেষ ফটোকপি করে দেন, আমাদের স্যারদের কথা বাদই দিলাম। এটা কি?

নিজের বই থেকে তিনি যতো ইচ্ছা কপি করতে পারবেন, যদি তিনি নিজে কপিরাইট হোল্ডার হন।

বলতে চাচ্ছি আজ আপনাদের টনক নড়ল কেন? কেন আপনারা মাসে লাখ টাকা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েননি আর এখন যারা পড়ছে তাদের কোন ফিসিবল সলুশন না দিয়ে ঢালাওভাবে চোর বলছেন? নিজেকে চোর বলা এক জিনিস আর অন্যকে বলা আরেক জিনিস। এক কাজ করুন না আপনার এমপিথ্রিতে যা গান আছে গত দশ বছরের মধ্যে প্রকাশিত, সব ডিলিট করে তারপর কিনে শুনুন; আমরাও সংশোধনের পথ দেখি।

কবে থেকে এই কথা বললে আপনার চোখে জায়েজ হবে? আমাদের ঐ সময়ে নিয়ে চলুন, বলি। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি-র সাথে কপিরাইটের কী সম্পর্ক? এখন যারা পড়ছে, তাদেরই বা কোথায় ঢালাওভাবে চোর বলা হচ্ছে? আর আপনি চুরি করলে আপনাকে সাধু বলবে কে? নাকি আমরা সবাই চুরি করলে সেই চুরি জায়েজ হয়ে যায়? আপনি কেন ধরে নিচ্ছেন যে সবারই পকেটে এমপিথ্রি প্লেয়ার বোঝাই চোরাই গান আছে?

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখকের অনুমতি ছাড়াই তার বই পিডিএফ করে নেটে ছেড়ে দেয়া একটা বড় ধরনের অপরাধ, এই সহজ কথাটা না বোঝার কি আছে আমি বুঝতে পারছি না!! "আমি এই অপরাধ করছি এবং করতেই থাকব" বলে একদল লোক এই গুরুতর অপরাধের পক্ষে সাফাই গেয়ে যেতে পারে সেটা কমেন্ট না দেখলে বিশ্বাস হত না। চোখের সামনে অডিও বাজার ধ্বংস হয়ে যেতে দেখলাম। ফলাফল ভাল মানের গান এখন খুবই কম তৈরি হচ্ছে। শিল্পীরা না খেতে পেয়ে বাধ্য হয়ে গান করা ছেড়ে দিচ্ছে। সবাই শুধু ভাল গান চায়, ভাল বই চায়। অথচ, একটা গান তৈরি করতে একজন শিল্পীর কি পরিমাণ শ্রম, সাধনা, টাকা লাগে ; একটা বই লিখতে লেখকের উপর দিয়ে কি পরিমাণ ঝড় বয়ে যায় তা কেউ বুঝতে চায় না!! এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে কোন প্রকাশকই আর বই প্রকাশে আগ্রহী হবে না। তখন এইসব তথাকথিত বই প্রেমিরা কি করবেন খুব জানতে মন চাচ্ছে।

সুবোধ অবোধ

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাই টাকার জন্য যারা বই লিখে/ গান করে তাদের আসলেই দরকার নেই করার। ওগুলো এম্নিতেই গারবেজ হয়। দেখেন না যেসব সিনেমা চলে না সেগুলো টিভিতে দিয়ে দেয় আর চলতেই থাকে টিভিতে।

যতদিন ডিমান্ড থাকবে ততদিন বই প্রকাশিত হবেই। এদেশের মানুষের বই পড়ার কালচার কিছু উদার মানুষ ফ্রি পড়িয়ে পড়িয়ে করেছেন। সংখ্যা কমিয়ে দাম বাড়াবে, ই-বুক ছাড়বে কিন্তু বন্ধ হবে না।

সুবোধ অবোধ এর ছবি

ভাই টাকার জন্য যারা বই লিখে/ গান করে তাদের আসলেই দরকার নেই করার। ওগুলো এম্নিতেই গারবেজ হয়।

এমন কাঠবলদীয় তত্ত্ব আপনাকে কে দিছে ভাই?
পৃথিবী জুড়ে বড় বড় মিউজিশিয়ান, লেখকরা প্রফেশনালী তাদের এইসব কাজ করে গিয়েছেন। তারা গারবেজ বানিয়েছেন?? চুরি জায়েজ করার জন্য আর কত উদ্ভট যুক্তি দেখাবেন ভাই?
(এই কমেন্টটা দেখিনি তখন, তাই উত্তর দিতে বিলম্ব হল। দুঃখিত।)

সত্যপীর এর ছবি

সুবোধ অবোধ, প্রতিমন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ...নাহলে এরম ব্যাপক একটা মন্তব্য চোখের আড়ালে থেকে যেত। নামবিহীন ভাইসাহেব বলিয়াছেন,

এদেশের মানুষের বই পড়ার কালচার কিছু উদার মানুষ ফ্রি পড়িয়ে পড়িয়ে করেছেন।

অতএব এই উদার মানুষের দল মাথার ঘাম পাছায় ফেলে আরেকজনের লেখা বই বাপের কিনে দেওয়া স্ক্যানারে স্ক্যান করে আপলোড না করলে এদেশের মানুষ বই পড়তোই না।

হালা গাড়ল।

..................................................................
#Banshibir.

চরম উদাস এর ছবি

হো হো হো

হিমু এর ছবি

গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজকে তাহলে গাব্রিয়েল গার্সিয়া গার্বেজ ডাকতে হবে দেখছি।

সুবোধ অবোধ এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

আজ রকমারি'র নীতিগত অবস্থানের প্রেক্ষিতে লেখাটায় বড় ধরণের রদবদল আনা জরুরী মনে করছি। রকমারি'র এমন নীতি নিঃসন্দেহে এই লেখাটার যুক্তিগুলোকে দুর্বল করে ফেলেছে এবং সেইসাথে বই-ব্যবসার স্বরূপ অনেকখানিই উন্মোচন করে ফেলেছে। ফলে, স্পষ্ট হয়েছে জ্ঞানের উন্মুক্ততার প্রয়োজনীয়তা।

তাছাড়া লেখাটায় আরও একটা জায়গায় একটু পরিবর্তন আনতে অনুরোধ করছি। বলা হয়েছে "গ্রন্থ.কম এর কর্ণধার"। আমার কর্ণধার শব্দটিতে একটু আপত্তি আছে, কারণ আমি অথরিটারিয়ান কোনোকিছুতে আস্থা রাখি না। গ্রন্থে সরাসরি আপলোড করার সুযোগ না থাকলেও, সকলেই মেইল করে বা হার্ডকপি দিয়ে এতে বইয়ের যোগান দিতে পারেন এবং দিয়ে থাকেন। তাছাড়া আমি কেবলমাত্র এটার একজন নিয়ন্ত্রক মাত্র, বই আপলোড করা আমার কাজ। এটা কোনো ব্যক্তিমালিকানার প্রতিষ্ঠান নয়, এতে কোনো অর্থনৈতিক বিনিয়োগ করা হয় নাই বা সেরকম উদ্দেশ্যও নাই, পুরোটুকুই বন্ধুত্ব-বোঝাপড়া এবং স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে গড়া হয়েছে। তাছাড়া আরও মানুষ আছেন যারা এটার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করছেন। সুতরাং, সে অর্থে এখানে একক অধিপতি বা কর্ণধার নাই, সবাই কর্ণধার। তাই কর্ণধার শব্দটিকে এডিট করলে খুশী হব।

- ইস্ক্রা

হিমু এর ছবি

জনাব ইষ্ক্রা, রকমারির নীতিগত অবস্থানের প্রেক্ষিতে "জ্ঞানের উন্মুক্ততার প্রয়োজনীয়তা" কেন স্পষ্ট হবে? জ্ঞান তো উন্মুক্তই আছে, কিন্তু মাগনা নাই। আপনি যদি তৃতীয় ব্যক্তির লেখা বইয়ের জ্ঞান সে বইয়ের কপিরাইট হোল্ডারের অনুমোদন ছাড়া স্ক্যান করে আপনার গ্রন্থ ডট কমে তুলে দেন, তাহলে ইতিমধ্যে উন্মুক্ত থাকা জ্ঞানকে কপি করে বিনামূল্যে বাজারজাত করা হয়। এটাকে সোজা বাংলায় চুরি বলে।

আপনি অথরিটারিয়ান কোনোকিছুতে আস্থা রাখেন কি রাখেন না, তাতে কিছু এসে যায় না। নিজে বই লিখে সেইটা স্ক্যান করে আপলোড করে দিয়েন। অন্যের বইতে হাত লাগায়েন না।

অতিথি লেখক এর ছবি

জনাব, আমি অত্যন্ত ক্ষুদ্র নগন্য মানুষ, জ্ঞানের ভাণ্ডারে মূর্খ, তাই এই চৌর্যবৃত্তি ধরিয়াছি, এই করিয়াই আমার দুইবেলা জ্ঞানান্ন জোটে। তবে, বলছি কি, ইহাতে আমি দেখিলাম রকমারির বেশ ভালো বিজ্ঞাপন হইয়াছে তাই ছোট মুখে বড় কথাখানা বলিয়া ফেলিয়াছি। তবে আপনার যদি মনে হয় যে, ইহা অন্যায় বলিয়াছি তবে সেই যুক্তি আপনার সম্মানে মাথা পাতিয়া লইব। গুস্তাকি মাফ হয়, জনাব।

অন্যের বই সংরক্ষণে আপনার বলিষ্ঠ ভূমিকার প্রশংসা না করিয়া পারিলাম না।

হিমু এর ছবি

জনাব বইচোর ইষ্ক্রা, জ্ঞান চুরির পাশাপাশি কিছু আক্কেল আত্মস্থ করলে এই এঁড়ে তর্কের প্রয়োজন লুপ্ত হয়। রকমারি একটা দোকান, সেই দোকান ছাগুদের হুজুর মেনে কিছু বই বিক্রি করা থেকে বিরত আছে। এই ঘটনায় আপনার বই চুরি জায়েজ হয় কীভাবে?

অতিথি লেখক এর ছবি

জনাব ইস্ক্রা,
"অন্যের বই সংরক্ষণে আপনার বলিষ্ঠ ভূমিকা" কথাটায় হাসি পেল ।

ছাগুরা প্রায়ই একটা কুযুক্তি ব্যবহার করে থাকে, "৭১ এ কি আপনার মা বোন রেপ হইছে নাকি ? আপনি এত চিল্লান কেন ? "

তর্ক করার সময় একটু আগপাশ ভেবে তর্ক করলে কাজে দেয়, নাহলে সেটা কুতর্কই থেকে যায় । রকমারির কর্নধারের নিজের ব্যক্তিগত প্রেফারেন্স, মুর্খতা, ভয় যে কোন কারনেই হোক না কেন অভিজিত রায়ের বই বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন । ফারাবীর মত বিকারগ্রস্থকে পুলিশে সোপর্দ না করে তার ফাকা হুমকিকে প্রাধান্য দেয়ার মাশুল তাকেই গুনতে হবে । আজ ফারাবী হুমকি দিয়েছে , কাল বেনামে অন্য কোন ছাগু অন্য কোন বই সরিয়ে নেয়ার হুমকি দেবে । বই সরাতে সরাতে উনার ব্যবসা শেষ পর্যন্ত "জ্বীন জাতির ইতিহাস" বেচাতেই গিয়ে ঠেকবে ।

কৃষকের ধানের দাম, রিকশাওয়ালার শ্রমের দাম দিতে পারেন, কেবল লেখকের মেধার দাম দেয়ার বেলাতেই আপত্তি ??
========================
দস্যু ঘচাং ফু

হিমু এর ছবি

ইষ্ক্রা সাহেব আর ওনার ইয়ারদোস্তোরা যে "বন্ধুত্ব-বোঝাপড়া এবং স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে" কৃষকের জমির ধান কেটে এনে বাসায় বস্তাবন্দী করে রাখেন না, সেটাই বা বুঝবো কীভাবে? জ্ঞানচুরি আর ধানচুরির মধ্যে পার্থক্য তো খুব বেশি না তো।

চরম উদাস এর ছবি

ইস্ক্রা - কর্ণধার শব্দটি বদলে উদ্যোক্তা করে দিলাম, এটা ঠিক আছে?

'লেখকের অনুমতি নিয়ে তার বই আপনারা আপলোড করবেন' - যতদূর জেনেছিলাম আপনারা আপনাদের নীতি বদলে এরকম একটি অবস্থানে এসেছেন। এখন কি সেটি আবার বদল হয়েছে? আপনাদের বর্তমান অবস্থান কি এর উত্তর কি দুই এক লাইনে দিতে পারবেন? আমি আমার লেখার এই আপডেটে যা লিখেছিলাম তা কি আপনি সমর্থন করেন??

আপডেট (ফেব্রুয়ারি ২১ , ২০১৪) - গ্রন্থ ডট কম (http://www.grontho.com/) তাদের সাইট থেকে পাইরেটেড বই সরিয়ে নিয়েছে এবং ঘোষণা দিয়েছে দিয়েছে ভবিষ্যতে লেখকের অনুমতি ছাড়া তারা এখানে বই আপলোড করবে না।

রকমারি অবস্থান নিয়েছে - মৌলবাদীরা পছন্দ করেনা এমন কোন বই তাদের সাইটে রাখবে না। এর অর্থ কি এখন এই দাঁড়ালো যে যারা বিজ্ঞান ও যুক্তি নিয়ে লেখালেখি করেন তাদের সব বই উন্মুক্ত করে দিতে হবে? রকমারি বই ডিস্ট্রিবিউশন এর একটা মাধ্যম মাত্র। এরকম মাধ্যম আরও আছে দেশে এবং আরও তৈরি হবে। তাদের একজনের অবস্থান পরিবর্তন কিভাবে লেখকের অনুমতি ছাড়া বই এর পাইরেটেড কপি যেকোন ওয়েবসাইটে আপলোড করাকে জায়েজ করে দিল এটা বুঝলাম না।

অতিথি লেখক এর ছবি

হিমু ভাইয়ের দেওয়া উপাধি "বইচোর" আমার খুব পছন্দ হয়েছে। আমি এটা গ্রহণ করলাম। চরম উদাস দা, উদ্যোক্তা শব্দটিও গ্রহণযোগ্য। আপনার কথাটি ঠিক আছে, আমাদের দেশে যাঁদের কপিরাইট এখনো বলবৎ আছে, তাঁদের অনুমতি সহকারেই বই দেওয়া হচ্ছে এখন। তবে বিদেশী বইয়ের ক্ষেত্রে নয়।

রকমারি অবস্থান নিয়েছে - মৌলবাদীরা পছন্দ করেনা এমন কোন বই তাদের সাইটে রাখবে না। এর অর্থ কি এখন এই দাঁড়ালো যে যারা বিজ্ঞান ও যুক্তি নিয়ে লেখালেখি করেন তাদের সব বই উন্মুক্ত করে দিতে হবে?

=> এর অর্থ কখনোই এরকম নয়; এটা একটা পথ হতে পারে। আমার ধারণা** এটা সবচেয়ে শক্তিশালী পথ হতে পারে (যেমন: ব্লগ)। অবশ্যই আমি জোড় করার কেউ না, কিন্তু দাবী করার "কেউ"। আমি শুধু বললাম, বাজারের মধ্যে বই থাকলে সেখান থেকে ভবিষ্যতে আবারও এমন পরিস্থিতি অনিবার্য। তারচেয়ে, উন্মুক্ত করে দিলে নিজের হাতেই প্রকাশনা থাকলো (এমনটা তো নতুন নয়! বাংলা ব্লগগুলোই তো এর প্রকৃষ্ট প্রমাণ)। অবশ্য আমার বক্তব্যে কোথাও অর্থাগমনের বিষয়টা নাই, আমি মনে করি না এর আদৌ প্রয়োজন আছে, পেটের দায়ে কেউ নিশ্চয়ই বিজ্ঞান ও সমাজ বিশ্লেষণী বই লেখেন না, চেতনার দায়ে লেখেন। এই সরল বিশ্বাস বাস্তব জীবনে লেখকেরা কতটুকু গ্রহণ করতে পারবেন সেটার উপরেই ডিপেন্ড করছে এই উন্মুক্ততার বিষয়টি গড়ে উঠবে কিনা।

হয়তো বলতে পারেন, বিনামূল্যে বই প্রকাশ ও বিতরণের পয়সা কোথা থেকে আসবে (আমাকে গালি দিলেও দিতে পারেন)? আমি বলব, পৃথিবীতে আজও অনেকসময় বিনামূল্যে ধর্মগ্রন্থ বিলি করা হয়। মুক্তমনার মতো ব্লগ বাংলাদেশে আছে, আছে আরও উন্মুক্ত ব্লগ-প্লাটফরম। আমি জানিনা সেগুলোর অর্থসংস্থান কোথা থেকে হয়েছে, কিন্তু গ্রন্থ ডটকম চালু করা গেছে স্রেফ বন্ধুত্ব-বোঝাপড়ার জোরে। জাফর ইকবাল স্যারের লেখা "মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস" বইটা স্কুলে স্কুলে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছিলো, বইটা নামমাত্র মূল্যে এখন বাজারে পাওয়া যায়। এসবের মূলে কোন স্পিরিটটা কাজ করে? আমার তো মনে হয় চেতনার দায়। এগুলোকে বাস্তবে রূপ দেয় স্রেফ বন্ধুত্ব-বোঝাপড়া এইসব মানবীয় বিষয়াদী।

মুক্তচিন্তাকে বাজারে টিকতে হবে, বাজারের মহাজনের ভয়, কৌশল, ব্যক্তিগত বিশ্বাসের মর্জিতে চলতে হবে এইটা ভাবা খুবই গ্লানিকর ব্যাপার। আজ শুধু রকমারি বলে নয়, দেশে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব বহুবার ঘটেছে যখন আমরা খোদ সরকারকে (যে দলেরই হোক) মৌলবাদীদের মূল্য দিতে দেখেছি, তাছাড়া, সরকারই মৌলবাদী, ধর্ম বিক্রি করে মানুষকে ব্ল্যাকমেল করেছে এমন উদাহরণ তো জিয়া বা এরশাদের আমলে দেখেই এসেছি। আর, সরকারের উপরে ডিপেন্ড করে দেশের সামগ্রীক বাজার - এতো আমরা সবাই জানি। তাই, আজ শুধু রকমারি বলে নয়, কোনোদিন যে অন্যান্য প্রকাশনী, বইয়ের দোকান বাজারের হাওয়ার সাথে সাথে তাদের স্ট্র্যাটেজি চেঞ্জ করে মুক্তমনাদের বিপন্ন করবে না এমন হলফ করে বলা যায় না।

আমি শুধু বলতে চাচ্ছিলাম, যদি মুক্তমনা ব্লগ প্রকাশ করে ফেলা যায়, তবে মুক্তমনা প্রকাশনা নয় কেন, যেখানে বিনামূল্যে অথবা নামমাত্র মূল্যে (নামমাত্র মূল্য ব্যাপারটা আমার নিজেরও পছন্দ নয়) বই পাওয়া যাবে? অবশ্য এক্ষেত্রে লড়াইটা আরও প্রত্যক্ষ হবে, টিকে থাকার জন্য আরও ধারালো যুক্তির চর্চা মাঠপর্যায়ে নেমে আসবে, আসবে বড় বড় প্রতিকূলতা - সেগুলোর কথাও মাথায় রেখে উদ্যোগ নিতে হবে, কিন্তু ফলাফলটাও আসবে আরও প্রত্যক্ষভাবে।

"বন্ধুত্ব-বোঝাপড়া এবং স্বেচ্ছাশ্রম" এর ভিত্তিতে ইতিহাসে কখনো চুরি যায়নি। অবশ্য ওইসব আন্দোলনকে রাজপক্ষের লোকজন চুরি, নৈরাজ্য, অপরাধ - এসবের দৃষ্টিতেই বিবেচনা করতেন। তাই, আজ যেটা চুরি ঠেকছে, আগামীকাল সেটাই বাজারী হাওয়ায় মহতী উদ্যোগ হয়ে যেতেও পারে, মহান বাজার সবই পারে, তবে যদি সত্যি সত্যি মুক্তমনা প্রকাশনী তৈরি করে ফেলাই যায়, তবে তা কখনো বাজারের হাওয়ায় পাল তুলবে না - এইরকম প্রত্যাশা করি।

আপাতত "চুরির দায়" মাথা পেতে নিলাম।

আপনাদের স্নেহের
বইচোর ইস্ক্রা হাসি

হিমু এর ছবি

ভদ্দরলোকের জিনিস চুরি করার পর সে সেই জিনিস "পেটের দায়ে করে না, চেতনার দায়ে করে", ইত্যাদি বললে ভদ্দরলোকেরা সাধারণত চক্ষুলজ্জার কারণে সাড়াশব্দ করেন না, পাছে তার পেট আছে, এটা আর দশজনে জেনে যায়।

তৃতীয় ব্যক্তির জিনিস সে পেটের দায়ে করে, নাকি চেতনার দায়ে করে, সে বিচার তার ওপর ছেড়ে দিলেই কি ভালো হয় না? নাহলে দুইদিন পর শুনবো রিকশাওলারা চেতনার দায়ে রিকশা চালায়, তাই তার ভাড়া না দিলেই সমিস্যা নাই।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার বক্তব্যে আমার মনটা বেশ খারাপ হলো। লেখকেরা চেতনার দায়ে লেখেন - এই কথা আপনি আমাকে করতে যে কারণে বলতে দিতে নারাজ, সেই কারণে আমিও এই কথা বলতে দিতে নারাজ - লেখকেরা পেটের দায়ে লেখেন। কিন্তু এই নিয়ে তর্ক করলে ফল আসবে না, আমি আমার লেখায় আমি কি আশা করি সেটা বুঝিয়ে বলেছি, আশাকরি সেই পয়েন্টে কথা বলবেন, কারণ, আমি যে চোর সেটা আমি ইতিমধ্যেই স্বীকার করেছি, সেটা নিয়ে আর ত্যানা প্যাঁচানোর কিছু নাই। আবার, চোর কোনোকিছু আশা করতে পারবে না এরকমও আইনের বিধানে নাই। সুতরাং, জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক।

হিমু এর ছবি

আমি তো বলি নাই লেখক চেতনার দায়ে লেখেন কি লেখেন না। লেখক কীসের দায়ে লেখেন, সেটা লেখকের বইচোর কেন ঠিক করে দেবে? আমার আপত্তি সেখানে। লেখক কীসের দায়ে লেখেন সেটা লেখককে ঠিক করতে দেন।

অতিথি লেখক এর ছবি

ভদ্দরলোকের জিনিস চুরি করার পর সে সেই জিনিস "পেটের দায়ে করে না, চেতনার দায়ে করে", ইত্যাদি বললে ভদ্দরলোকেরা সাধারণত চক্ষুলজ্জার কারণে সাড়াশব্দ করেন না, পাছে তার পেট আছে, এটা আর দশজনে জেনে যায়

লাইনগুলো তারমানে আপনি লেখেন নাই? সরি সরি সরি তালগাছটা আপনাকে দিলাম

হিমু এর ছবি

লেখকের চেতনার দায় আর পেটের দায়কে মিউচুয়ালি এক্সক্লুসিভ বানালে কি আপনার চুরিদারির কাজ সুবিধা হয়?

কপিরাইট অফিস তো দেওয়ানী আদালত। সেখানে আপনার পেট আর চেতনা মাপার ফিতাটা কাজে আসে কি না একটু ডিপার্টমেন্টের স্যারদের জিজ্ঞাসা করে দেইখেন।

মন মাঝি এর ছবি

...আমি যে চোর সেটা আমি ইতিমধ্যেই স্বীকার করেছি, সেটা নিয়ে আর ত্যানা প্যাঁচানোর কিছু নাই। আবার, চোর কোনোকিছু আশা করতে পারবে না এরকমও আইনের বিধানে নাই।...

চোর ভাই ইস্ক্রা,

প্লিজ মন খারাপ করবেন না। আপনার আসলে আনন্দিত ও গর্বিত হওয়া উচিৎ। আর কিছু না হোক, অন্তত ৩টি অসাধারণ ও ঐতিহাসিক কাজ আপনি সম্পাদন করেছেন। সারা জীবন যা বাংলা ২য় পত্রের পাঠ্যপুস্তকে পড়ে এসেছি আর গালাগালি আকারেই ব্যবহৃত হতে দেখেছি - তা এভাবে বাস্তবে দেখতে পাব ভাবিনি। একটি নয়, দু'টি নয়, তিন-তিনটি বাংলা প্রবাদ আপনি সর্বসমক্ষে অক্ষরে অক্ষরে সত্য প্রমান করে ছেড়েছেন!

যথাক্রমে এগুলি হল --

১। চোরের মা'র বড় গলা
২। চোরায় না শুনে ধর্মের কাহিনি
৩। এক কান-কাটা লজ্জায় রাস্তার একপাশ দিয়ে চলে কাটা-কান লুকিয়ে, আর দুই কান-কাটা কাটা-কান দুলিয়ে রাস্তার মাঝখান দিয়ে চলে বীরদর্পে।

আপনাকে সমালোচনা করার জন্য আমার এই মন্তব্য নয়। বরং আন্তরিকভাবে প্রশংসা করার জন্যই। বাংলা প্রবাদ-প্রবচণের জগতকে এভাবে প্রাক্টিকাল দৃষ্টান্ত সহযোগে substantiate ও সমৃদ্ধতর করার জন্য আপনাকে অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।

****************************************

হিমু এর ছবি

ছিঁচক্রা সাহেব শুনেছি আইনের ছাত্র। সে হিসাবে কিন্তু ওনার আরো একটা বাড়তি পিঠথাবড়া প্রাপ্য।

চরম উদাস এর ছবি

আমাদের দেশে যাঁদের কপিরাইট এখনো বলবৎ আছে, তাঁদের অনুমতি সহকারেই বই দেওয়া হচ্ছে এখন।

- অনেক ধন্যবাদ এই অবস্থানের জন্য।

দেখুন জাফর ইকবাল বছরে গড়ে পাঁচ দশটি বই লিখে সেই বাবদ রয়ালিটি নিচ্ছেন। সেখান থেকে উনি উনার ইচ্ছা সুযোগ সুবিধা মতো কিছু বইকে উন্মুক্ত করে দিচ্ছেন। আমার কথা হচ্ছে একজন লেখককে সেই সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতাটুকু দিতে হবে। আপনি লেখকের গলায় পাড়া দিয়ে বলতে পারেন না, বই ফ্রি দিলে দে নাইলে আমি এইটারে ফ্রি বানায়ে দিমু।

আমি কি আমার লেখা ফ্রি দিচ্ছি না? 'লাইনে আসুন' বই এর মাত্র দুটি গল্প ছাড়া বাকি সব সচলে আছে - এই কথা আমি বারবার ঘোষণা দিয়ে বলছি। এবং ভবিষ্যতেও আমি হয়তো এভাবেই লেখালেখি করে যাবো। ব্লগে লিখব, তার সাথে কিছু যোগ করে বই আসবে। কিন্তু তারপরেও অনেক অনেক পাঠক শখ করে আমার বই কিনেছে এবং কিনবে বলে আশা রাখি। না কিনলেও আমার কিছু আসে যায়না আসলেই। কারণ আমি ভালো জায়গায় চাকরী করি, লেখালেখি থেকে অর্থ উপার্জনের প্রয়োজন আমার নেই। কিন্তু আমি এরকম করছি বলে বাকি সব লেখকদের এমন করতে হবে এই যুক্তি আমি মানিনা কোনভাবেই। বিশ্বের অনেক বড় বড় উপন্যাস লেখা হয়েছে প্রকাশকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে, শুধু চেতনার দায় থেকে নয়। হুমায়ূন আহমেদ যখন তার 'অমানুষ' উপন্যাসটি লিখেন তার ভীষণ অর্থকষ্ট ছিল। নিজে স্বীকার করেছেন ওইসময় Man on Fire এর অবলম্বনে লিখা উপন্যাস থেকে পাওয়া টাকাটা তার অনেক কাজে এসেছে। তাতে কি ঐ উপন্যাসের মানের কোন ক্ষতি হয়েছে? যখন তার টাকার অত প্রয়োজন নেই তখন হয়তো চেতনার দায় থেকে 'দেয়াল' লিখেছেন। আমার কাছে কিন্তু 'দেয়াল'থেকে 'অমানুষ' কেই অনেক বেটার মনে হয়। আরও অন্তত একশত উদাহরণ দিতে পারি বিশ্বসাহিত্য থেকে যেখানে প্রকাশক থেকে এডভান্স টাকা নিয়ে লেখা হয়েছে দারুণ সব সাহিত্যকর্ম। সেইসাথে একশত উদাহরণ এরকমও আছে যেখানে শুধু নিজের মনের আনন্দ থেকেই অনেকে লিখে ফেলেছেন দারুণ অনেক কিছু। কেউ যদি লেখালেখিকে তার ফুলটাইম প্রফেশন হিসেবে নিতে চায় তবে তাতে বিন্দুমাত্র দোষের কিছু নেই এই সহজ কথাটাই কেন যেন অনেককে বোঝাতে পারছি না। শুধু চেতনা দিয়ে লেখা হয় না, লেখককে চেয়ার টেবিলে বসতে হয়, গাদাগাদা বই পড়তে হয়, অনেক সময় একটি লাইন বের করতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় ব্যয় করেন একজন লেখক। একজন পেশাদার লেখককে তার সময়ের দাম দিতে গেলে কেন আপত্তি থাকবে?

মুক্তমনা প্রকাশনা নয় কেন, যেখানে বিনামূল্যে অথবা নামমাত্র মূল্যে (নামমাত্র মূল্য ব্যাপারটা আমার নিজেরও পছন্দ নয়) বই পাওয়া যাবে?

বইয়ের দাম কমিয়ে কিভাবে নামমাত্র মূল্যে বই দেয়া যায় সেটা নিয়ে অনেকেই ভাবছেন। আশাকরি একটা কিছু দাঁড়াবে। এইযুগে কোন কোন প্রকাশক লেখককে ১০% রয়ালিটিও দিতে চান না। এক্ষেত্রে যদি প্রকাশনা ও ডিস্ট্রিবিউশন এর আরও কোন ডায়নামিক মাধ্যম উঠে দাড়ায় আমাদের মতো নবীন লেখকরা অনেকেই দেখবেন তাদের কাছে যাবে। সেখেরতে বই ফ্রি না হলেও দাম অনেক কমে আসবে। শুধুমাত্র বই এর PDF না বানিয়ে ভেবে দেখুন আপনারা আরও কিছু অফার করতে পারেন কিনা। যেখানে আপনাদের মতো ওয়েবসাইট সরাসরি প্রকাশনা মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে। কিছু লেখক আপনাদের বিনামূল্যে বই দিবেন কেউবা হয়তো নামমাত্র কিছু মূল্য চাইবেন। যারা পেপার বুক বের করছেন তাদের অনেকে নতুন বই বের হবার দুই থেকে তিন মাস পর তাদের বইটির ইবুক ভার্সন আপনাদের দিবে। স্ক্যান করা লো রেজুলেশন কপি না, একেবারে চমৎকার হাই রেজুলেশন অরিজিনাল ইবুক। আমি আমার মতো নতুন লেখক যারা আছেন তাদেরকেও অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করবো। কেউ দিবে, কেউ হয়তো দিবে না। কেউ হয়তো প্রকাশের পরপরেই দিবে, কেউ দুই মাস কেউবা এক বছর পর দিতে চাইবে। এর মধ্যেই কিন্তু অভিজিৎ রায় সহ আরও অনেকেই অনুমতি দিয়েছেন। ব্যাপারটা কিন্তু সহজ। যে লেখক মনে করলো তার লেখাগুলো বিনামূল্যে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিয়েই তার আনন্দ, সে তাই করলো। যে মনে করলো তার বই এর দাম এক ডলার হলে ভালো হয়, সেই টাকা তার দৈনন্দিন প্রয়োজনে আসতে পারে, সে তার বই এর দাম তাই রাখল। পাঠক যদি মনে করে, ধুর এই লোকের বই আবার টেকাটুকা দিয়ে কিনুম কেন, তাহলে তারা কিনবে না। পাঠক যদি মনে করে এই লোকের এত পরিশ্রমের বিনিময়ে তাকে এই ন্যূনতম সম্মানী দেয়া যায় তবে সে সেটা দিবে। সৃষ্টিটা যার তাকে এই ক্ষমতাটুকু দিতে কেন আপনাদের আপত্তি থাকবে?

অতিথি লেখক এর ছবি

চরম উদাসদা, দেখুন, আমি কিন্তু কোনো পথকে বন্ধ করে দিতে চাইনি, বলিনি, বই বিক্রি বন্ধ করে দাও, শুধু ফ্রিতে বই দাও। নাহলে আমি সাইট থেকে বই সরিয়ে দিতাম না, গোঁয়াতুর্মি করে রেখে দিতাম। আমি শুধু একটা পথের কথা বলেছি, আমি আহবান করেছি- আসুন বইকে উন্মুক্ত করে দেই - ব্যাস, এটুকুই। যারা প্রকৃতই মুক্তচিন্তা করেন তাঁরা নিজেকে অনবরত শোধরাতে শোধরাতে চলেন, নিজেকে পরিবর্তনের ক্ষমতাটুকুর নাম মুক্তভাবে চিন্তা করা, যেকোনো শাস্ত্র-নীতি-আইনকে প্রশ্নবিদ্ধ করাই হলো মুক্তচিন্তা, একলা চলার নামই মুক্তচিন্তা - অন্তত আমার তাই মত।

লেখকের অনুমতি নেওয়ার বিষয়টি আমার মাথায় শুরু থেকেই যে ছিলো না তা কিন্তু নয়। কিন্তু, আমি ভেবেছিলাম, আগে বই, পরে অনুমতি, নয়তো গতি অনেক কমে যাবে। এক্ষেত্রে আমার ভুলটা হলো - আমি আশা করেছিলামি, যাঁরা মুক্তমনা লেখক তাঁদের সাথে অন্তত আমার বিরোধ হবে না। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাঁদের সাথে একটা বোঝাপড়ার ঘাটতি হয়েছে, এজন্য আমি অভিজিৎ রায়ের কাছে ক্ষমাও চেয়েছি। তিনি সায়ও দিয়েছেন - সেটা পুরোই ভিন্ন আলোচনা।

আমি শুধু দেখাতে চেয়েছি, এভাবেও সম্ভব, অনলাইনস্ফিয়ারে সম্ভব, সত্যিকার জীবনেও সম্ভব (অলরেডি এই ব্যাপারে উপরে একটা আইডিয়া দিয়েছি)। তাছাড়া, মানুষ যে উপকৃত হচ্ছে না, তাও নয়। বিনামূল্য জ্ঞান খুবই সম্ভব এবং সম্ভাবনাময় একটা পথ। অতীতেও তাই ছিলো, ভবিষ্যতও এইরকম অনিবার্য পরিণতির দিকে যাচ্ছে (আমি যতটুকু বোধ করতে পারছি)।

অবশ্যই, লেখকের বই সে নিজে উন্মুক্ত না করলে কারোরই অধিকার নাই সেটা উন্মুক্ত করে। আমি যে প্রত্যাশা করি সেটা অমূলক নয়, আইন পরিপন্থীও নয় - যদি সেখানে লেখকের কনসেন্ট থাকে, একটা বড় জনসমর্থন থাকে।

রকমারির প্রসঙ্গ এখানে কেন প্রাসঙ্গিক তার জন্য বলা যায় - রাজার স্বরূপ, বাজারের স্বরূপ না বুঝলে আর ঠেকে ঠেকে না শিখলে বোধহয় বুঝতে পারব না, আইন ও বাজার কখনোই ব্রাত্যের নয়, শাসকের। আইন, প্রশাসন, ধর্মশাস্ত্রনীতি, রাজনীতি,বাজারনীতি- এইসব রাজাকারকেও মন্ত্রী বানাতে পারে, সেখানে মানুষের কিচ্ছু বলার থাকে না, মার্শাল ল - এক প্রকার "ল"। তাই, শুধু শাস্ত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করলে চলবে না, আইনকেও প্রশ্নবিদ্ধ করতে হবে, ওপেনলি করতে হবে, বাজারের বিপরীতে উন্মুক্ত পৃথিবী গড়তে হবে, নয়তো চিন্তার মুক্তি নাই। আমার আশা ঠেকে ঠেকে হলেও একটা সময় সবাই বুঝবে, আরও মানুষ একমত হবেন, এরপরের বিবেচনা আপনাদের হাতে।

মন মাঝি ও হিমু ভাইয়ের প্রতি সহমর্মিতা থাকলো, যেদিন আপনাদের মনে হবে আপনারা দুর্ব্যবহার করেছিলেন সেদিন শুধু জানাবেন, আমিই আপনাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিব। গালির বিপরীতে গালি দিতে আমি শিখিনি। তাই, আপনাদের জন্য শুধুই ভালোবাসা।

বইচোর ইস্ক্রা

চরম উদাস এর ছবি

মন্তব্য ভালো লাগলো। আপনার সাথে আমার চিন্তাভাবনার বেশ ফারাক এখনও কিন্তু তার মানে এই না সব কথায় দ্বিমত আছে। অনলাইনে সমস্যা হচ্ছে হার্ড লাইনে চলে গিয়ে দ্রুত একজন আরেকজনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়া যায়। আমার নিজের ধৈর্যও অতও বেশী না, কেউ দ্বিমত করলে মনে হয় দেই ব্যাটারে উস্টা ইয়ে, মানে... । তবে মাতামুতা ঠাণ্ডা হলে কে কি বলল সেটা নিয়ে চিন্তা করি।

অতিথি লেখক এর ছবি

হুম, উস্টা খেলাম, মনোমালিন্য হলো। তাতে লাভটা কোন পক্ষের হলো আমার এখনও বোধগম্য নয়। আমার কিছু প্রিয় মানুষ সম্পর্কে যাচ্ছেতাই বলা হলো। আমিও মন খারাপ করে অনেককিছুই বললাম। আপনি এই লেখাটা লিখলেন, রকমারিকে সাজেস্ট করলেন, পরবর্তীতে সেই রকমারিই তার চেহারা দেখালো। এতসব করে আল্টিমেটলি লাভটা দেখলাম রকমারিরই হলো, এই লেখার প্রচারণার কারণে তারা কিছু গ্রাহক পেলো আবার তাদের চেহারা বেরিয়ে যাওয়ার পরেও তারা যতটা না হারালো তারচেয়ে বেশী গ্রাহক পেলো। আপনি-আমি হাতে কদু ধরে বসে রইলাম, লাভ লুটলো বাজার। বড্ড বেশী হুজুগে মেতে এই ভ্যাকুয়ামে পড়ে গেলাম সবাই মিলে।

ফারাক যেখানে থাকবে সেখানে সম্ভাবনাই বেশী থাকবে। আমি নিজেকে কাস্টমাইজ করতে প্রস্তুত, নিজের ভুল শোধরাতে প্রস্তুত, নতুন বুদ্ধি নিতেও প্রস্তুত। আমার মাথা কেন যে গরম হয় না কে জানে!

হিমু এর ছবি

বইচোর ইস্ক্রা সাহেব, এই কাজে আইনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য নিজের এবং বন্ধুবান্ধবের বইকে ব্যবহার করেন। আপনার বিপ্লবের বিল যেন অন্যকে দিতে না হয়।

বইচুরি করলে একটু আধটু দুর্ব্যবহার মানুষের কাছ থেকে পাবেনই। ক্ষমাটমা চেয়ে অভ্যাস করে রাখেন, ভবিষ্যৎ জীবনে কাজে দেবে।

অতিথি লেখক এর ছবি

দোয়া রাখবেন। আর আপনি চিন্তা করবেন না প্লিজ। আপনার শুধুমাত্র স্নেহসুলভ এবং গঠনমূলক সমালোচনা পেলেই হবে। আশাকরি পাব?

হিমু এর ছবি

অবশ্যই পাবেন। পাশাপাশি আমিও পাট ও পাটজাত দ্রব্যকে উন্মুক্ত করার একটা আন্দোলন শুরু করবো ভাবছি। আপনার কাছ থেকে চুরিদারির পরামর্শ পাব আশা করি।

অতিথি লেখক এর ছবি

এতোকিছু থাকতে পাট কেন? পাট নিয়ে আমার জীবনে একটা বড় ধরণের দুঃখজনক ঘটনা আছে তো, তাই জানতে চাইলাম

হিমু এর ছবি

আপনি এতোকিছু থাকতে বই চুরি করলেন কেন?

অতিথি লেখক এর ছবি

বইচুরিরই বোধহয় পরকালে বিচার হবে না। বেহেস্ত আমার চাই ই চাই, আবার চুরি না করেও থাকতে পারি না। সুতরাং

হিমু এর ছবি

পরকালের বিচারের স্ট্যান্ডার্ডে শুনেছি ইহকালে চুরিদারির জন্য হাত কেটে দিতে হয়।

সুবোধ অবোধ এর ছবি
আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

ইপাব মোবি ফরম্যাটে বাংলা ইবুক এলে, যখন ৩০০ টাকার বই ৫০ টাকায় কেনা যাবে, তখন চুরিদারি কমবে বলে আশা রাখি।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।