ব্লগ রাইটিং: দিনলিপি না সাহিত্য?

??? এর ছবি
লিখেছেন ??? (তারিখ: মঙ্গল, ১০/০৭/২০০৭ - ১২:১৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বেশি দিন নয় ব্লগ ফলো করতেছি। আবার, ইন ইটস ট্রু সেন্স, আমি যত না ব্লগার তারচে বেশি আপলোডার। অর্থাৎ অন্য মাধ্যমে প্রকাশিত বা প্রকাশযোগ্য লেখামালা এইখানে ব্লগবাসীদের জন্য তুলে ধরি। কিন্তু পড়বার চেষ্টা তো করি। সেই পাঠের অভিজ্ঞতা থেকে মনে মনে ব্লগের একটা চেহারা আঁকার চেষ্টা: ব্লগ কি নিতান্ত দিনলিপি? নাকি সাহিত্য?

দিনলিপি হৈলেই সাহিত্য হৈবে না এমন না। ভাল দিনলিপি বা আত্মজীবনী নিশ্চয় সাহিত্য। রাসেল বা নীরদ চৌ.এর আত্মজীবনীকে সাহিত্যরূপেই পাঠ করা হয়। আবার দিনলিপি সাহিত্যের একটা ফর্মও বটে, দস্তয়েভস্কির পয়লা উপন্যাস "অভাজন" সেই ফর্মেই লেখা হৈছিল। প্রচলিত অর্থে সাহিত্যিক না এমন ব্যক্তিকেও ইতিহাসে সাহিত্যের স্বীকৃতি পাইতে দেখা গেছে: যেমন চার্চিলের সাহিত্যে নোবেল প্রাইজ বা নেভিল কারদুস-এর ক্রিকেট-লেখালেখি।

কিন্তু ব্লগ রাইটিং কি শুধুই দিনলিপি? দিনলিপি যিনি রচনা করেন, তার সামনে তো পাঠক দাঁড়ায়া থাকে না। কিন্তু ব্লগলেখকের সামনে থাকে। তিনি জানেন কারা তার লেখা পড়বে, এভাবে তিনি ধীরে ধীরে সেইসব পাঠকের লেখক হৈয়া উঠেন। আইকন তৈরি হৈতে থাকে।
দেখা যাইতেছে, দিনলিপির মত কোনো নিরীহ এবং আত্মজীবনীর মত কোনো এক্সক্লুসিভ উদ্দেশ্য নিয়া ব্লগের লেখালেখি চলে না। তাদের কাছে ঋণী হৈয়া, তারপর পাশ কাটায়া ধীরে ধীরে সে সাহিত্যের ঘনিষ্ঠতা অর্জন করতে থাকে।

কিন্তু কতদূর এই ঘনিষ্ঠতা? ব্লগ কি সাহিত্য?

ট্রাডিশনাল অর্থে, না। কিন্তু ট্রাডিশন তো ভাঙারও বিষয় আছে। এই প্রশ্নের জবাব আমার একার পক্ষে দেয়া সম্ভব নয়। যারা ব্লগার তারাই বলেন শুনি। একটা তর্ক হোক।


মন্তব্য

শ্যাজা এর ছবি

পরীক্ষা -নীরিক্ষা - আলোচনা চালায়া যান। আমরা লগে আছি।


---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)

ভাস্কর এর ছবি

ব্লগ পইড়া আমার মনে হইছে...ব্লগ ঠিক দিনলিপি না...দিনের কোন উল্লেখ্য বিষয়রে নিজের দর্শনগত অবস্থান থেইকা দেখার একটা চেষ্টা...


স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...


স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...

??? এর ছবি

তাইলে ব্লগ সাহিত্য কিনা? মানে, ব্লগে আমরা যেসব গল্প পড়ি, বা কবিতা পড়ি তাদের সাহিত্য বলা যায় কিনা। যদি বলা যায়, তাইলে তার সাহিত্যিক ভবিষ্যত কি? ব্লগবলয়ের বাইরে তাকে দেখতে যাওয়া যাবে কিনা?

??? এর ছবি

(দুইবার পোস্ট হৈয়া গেছে। তাই একটা মুইছা দিলাম)

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

আমার মনে হয়, দুইটাই। দিনলিপি আর সাহিত্যও ওভারল্যাপড। দিনলিপিও এক ধরণের জীবনদর্শন। আমি যা দিনলিপি হিসেবে লিখি, তার পুরোটাই অ্যাবসলুট ট্রুথ নয়; বরং আমি যেটাকে ট্রুথ বলে ভাবি, সেটার কাছাকাছি যাওয়ার একটা চেষ্টা। সাহিত্যও প্রায়শঃই এরকম একটা সত্য; কিংবা অনুভূতিকে প্রকাশের চেষ্টামাত্র।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

??? এর ছবি

ঠিক আছে। তবে আমি শিউর না ব্লগের লেখার সাহিত্য হৈয়া উঠার আকাঙ্ক্ষা কম কিনা। এইটা ব্লগে যারা দীর্ঘদিন লিখতেছেন, যাদের পোস্ট লোকজন বেশি পড়তেছে বলে জানাজানিও আছে, তাদের ভাল জানার কথা। এরকম অনেকেই সচলায়তনে আছেন, আশা করি তারা কিছু বলবেন।
আর লেখকের ইচ্ছায় সাহিত্য হয়, এটা ঠিক বলছো। প্রথাগত সাহিত্যিকের বেড়ে ওঠার একটা ধরন আছে। এই ধরনটা মোটামুটি ইউনিভার্সাল, এমনকি প্রথাবিরোধী লেখক সুবিমল মিশ্রকেও এই কাতারে দেখা সম্ভব। আমার বিবেচনায় সেটা হৈল, সাহিত্যের ইতিহাসে নিজের/ নিজেদের পজিশনিং করা। সেটা তিনি তার পূর্বসুরীদের স্বীকার করেও করতে পারেন, বাতিল করেও করতে পারেন। এইটুকু আলামত ছাড়া কোনো গোত্রের বা ব্যক্তির সাহিত্যিক কর্মকাণ্ডকে তার নিকটতম সাহিত্যিক ঐতিহ্যের মধ্যে লোকেট করা মুশকিল। এই ব্যবস্থাটা লেখক নিজেই করেন, নানাভাবে। এখন কথা হচ্ছে, ব্লগ একটা নতুন মিডিয়া। তার ভাবনার ধরন ভিন্ন হৈতে পারে, লোকেট করা বিষয়ে তার স্বতন্ত্র বক্তব্য থাকতে পারে।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

জামাল ভাষ্করের কথাটা ভালো লেগেছে।আমারও তাই মনে হচ্ছে।

ব্লগ সাহিত্য কি না এই প্রশ্নে আমার মনে হয় ব্লগ সাহিত্য।এখানে লেখা কবিতা,গল্প,উপন্যাস তো অবশ্যই সাহিত্য এর পাশাপাশি আরো অনেক বিষয় উঠে আসে যেগুলোকে আমার সাহিত্যিক উপদান হিসেবেই মনে হয়।

ব্লগ কেন্দ্রিক এই সাহিত্যের ভবিষ্যত আসলে কি হবে,সেটা এ মুহুর্তে আন্দাজ করা কষ্টকর।
সরাসরি লেখকের সাথে কমিউনিকেট করা যায় বলে এ ধারাটি শক্তিশালী হওয়ার একটা ভালো সম্ভাবনা দেখা যায়।প্রযুক্তি মধ্যবিত্তের নাগালে চলে আসায় এখানে একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

-----------------------------------
কিস্তিমাতের যুদ্ধ শেষে,সাদাকালো ঘুটিগুলো এক বাক্সেই ফেরত যাবে...

??? এর ছবি

অছ্যুৎ বলাই, আমিও কাছাকাছি কিছু একটা ভাবার চেষ্টা করতেছি। দিনলিপির ক্যাজুয়াল ফর্মের ভিতর সাহিত্যের রস এবং, সম্ভবত, সাহিত্যিক অভিলাষও। প্রতিদিনের সাহিত্য। প্রসঙ্গত, আমি গবেষণা করছি নগর গরিবের "প্রতিদিনের রাজনীতি" নিয়ে। এটাকে অনেকে বলেন "ইনফ্রা-পলিটিকস" কেউ বলেন "মাইক্রোপলিটিকস" ইত্যাদি। প্রতিদিনের ধারণাটাই এরকম একটা মৃদু কিন্তু জরুরি আবেদন নিয়ে দাঁড়ানো। মজার বিষয় হল, প্রতিদিনের যে রাজনীতি, তা বৃহত্তর পরিসরে দৃশ্যমান না। প্রতিদিনের সাহিত্যও যেন তাই।

কিন্তু অভিলাষ-প্রশ্নে? প্রতিদিনের ব্লগসাহিত্যের কি চিরকালীন সাহিত্যের পাশাপাশি থাকার অভিলাষ নাই?

ভাস্কর এর ছবি

এইবার একটু কুতর্ক করি...বা প্যাচ লাগাই...ব্লগ সাহিত্য কি সাহিত্য না এই বিবেচনা করতে হইলেতো সাহিত্যের সংজ্ঞা নিয়া আলোচনা হওনটা জরুরী হইয়া পরে।

এমনিতে দিনলিপি বিশ্বব্যাপীই অলরেডি সাহিত্যের মাধ্যম হিসাবে স্বীকৃত হইয়া গেছে...সেইটা ওয়েবলগ কাহিনী তৈরী হওনের আগেই, কাগজ-কলমের সাহিত্য দুনিয়াতেই...

এখন দিনলিপির সাহিত্য হওনের আকাঙ্খা নিয়া তোলা সুমন রহমানের প্রশ্নটা অনেক জরুরী মনে হইছে। সামহোয়্যার ইন...এ একটা পোলা লিখে ওর নাম অনাহুত আগন্তুক, বেশিরভাগ লেখাই তার দিনলিপি...গুটিকয় গানের লিরিক্স আর কবিতা(?) বাদে। পোলাটার লেখা আমার অসাধারনেরও বেশি লাগে...কেবল তার মধ্যে সাহিত্য করনের আকাঙ্খা নাই বইলা মনে হয় বইলা...এখন আকাঙ্খা হয় তো তার আছে বা থাকে। কিন্তু সেইটা পড়তে গেলে আদৌ মনে হয় না। এইকারনে তার সাহিত্যমূল্য নাই হইয়া যায় না...এই ধরণের ওয়েব লগ নিজের অজান্তেই সাহিত্য হয়...উল্লেখ করনের মতো লেখনী হয়।


স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...


স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...

??? এর ছবি

আরিফ, ব্লগ রাইটিং যদি সাহিত্য হয় তাহলে এর ভবিষ্যত নিয়া ব্লগারদেরই ভাবতে হবে। আরেকটু পরিষ্কার করা যাক: পত্রিকা বা লিটলম্যাগের মত ব্লগও একটা প্রকাশমাধ্যম বা মিডিয়া। আবার ব্লগ একই সঙ্গে আর্কাইভও। ট্রাডিশনালি, সাহিত্যের আর্কাইভ হচ্ছে পুস্তক। এখন ব্লগের রচনার কী পুস্তকায়ন কাম্য?

কবিসভার লেখা বিষয়েও একটা আর্কাইভের ভাবনা আমার মাথায় ছিল। কিন্তু দেখা গেল, বিষয়টা বেশ জটিল। এখন আমি যদি আমার কবিসভার লেখার একটা সংকলন করতে চাই, তাইলে মুশকিল হচ্ছে, আমার লেখা আলাদাভাবে বোধগম্য হওয়া। অর্থাৎ লেখাটা একটা তর্কের অংশ ছিল, সেই তর্কটা না জানলে আমার লেখার প্রেক্ষাপট বোঝা সম্ভব না। আবার সেই তর্কটা পুরা ছাপানোও সম্ভব না। এসব মিলায়া একটা ঝঞ্ঝাট।

কিন্তু ব্লগে এমন ধরনের ঝামেলা খুব বেশি নাই। এখানে ঝামেলাটা হল, পাঠক। ব্লগে লেখক পাঠক একই ব্যক্তি। অর্থাৎ যিনি লেখেন তিনি পড়েন। কেউ লেখেন কম, পড়েন বেশি, আবার কেউ পড়েন কম, লেখেন বেশি। এখানে লেখক-পাঠক সম্পর্কটা ইন্টার‌্যাক্টিভ। আবার এবসলিউটলি কেউ একান্তই লেখক আর কেউ একান্তই পাঠক এমন না। লেখক-পাঠক ইন্টার‌্যাকশন অনেক বেশি হচ্ছে ঠিক, কিন্তু এর কতটা দরকারি? অর্থাৎ, প্রযুক্তির কল্যাণে এই যে লেখক-পাঠক হটলাইন হৈয়া গেল, তাতে ভাইব্রেশন আর কম্যুনিকেশন যেমন বাড়ল, পাশাপাশি সেইটা কখনো কখনো লেখক-পাঠকের মধ্যকার শোভন দূরত্বকে নস্যাৎ করে দিতেও পারে।

বলাবাহুল্য, এসবই সাবেকি প্রিমাইজের ওপর খাড়ানো অনুমান। অর্থাৎ লিখিত সাহিত্যের দুই হাজার বছরের ট্রাডিশনকে ভিত্তি ধরে এক ধরনের ফিউচারিজম। কিন্তু প্রিমাইজ যে ধ্রুব তাতো না। নতুন প্রযুক্তি নতুন প্রিমাইজের সন্ধানও তো দিতে পারে।

ভাস্কর এর ছবি

পশ্চিমের ব্লগ সংস্কৃতি আর বাংলাদেশের ব্লগ আচরন মনে হয় অনেক আলাদা...গতকালকেও যখন বিভিন্ন ব্লগ সাইট ব্রাউজ করতেছিলাম, তখন দেখলাম পশ্চিমের তারা অনেক বিষয় ভিত্তিক লিখে। গুগল দুনিয়াতে এইটা অনেক আবশ্যক হয়...কারন এ্যাডসেন্সে টাকা আছে।

নিউজ পেপার কিনা পড়তাম ৬/৭ মাস আগেও...আর এখন সকালে প্রথম আলো সমকালের অ্যাভেইলেবল ওয়েবসাইট খুঁজি। পশ্চিমে নিউজ পেপারগুলি রীতিমতো পাঠকগো নিউজ এ্যানালিসিস কবার দ্যায়।

তয় পুরান প্রযুক্তির মনিটর ব্যবহার কইরা পাঠক তৈরী করা এখনো একটু কঠিন আছে...চোখের উপর ভালোই প্রেসার পরে। এলসিডি প্রযুক্তি এ্যাভেইলেবল হইলে এই সমস্যার সমাধানও কিছু মাত্রায় হইবো আশা করি।

ব্লগ সাহিত্যে আয়তন ছোট হওয়ার লেইগা মনে হয় এই মনিটর প্রযুক্তিও দায়ী।


স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...


স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...

হাসান মোরশেদ এর ছবি

'কিছুই স্থিত নয় '
আলোচকগন আলোচনা করেন । আমি চোখ রাখি ।

কোন কবিতা কিংবা গল্পকে সাহিত্য বলা যাবে কিংবা কোন মানদন্ডে বলা যাবে কিংবা সেই মানদন্ড আবার কোন মানে উত্তীর্ন- সেই বিষয়ে কি সিদ্ধান্তে আসা গেলো?

-----------------------------------
'পড়ে রইলাম বিধির বামে,ভুল হলো মোর মুল সাধনে'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

??? এর ছবি

হাসান মোরশেদ, শুধু চোখ রাখলে তো হবে না। মনও রাখতে হবে। আমার মত যারা "ছদ্মবেশী" ব্লগার তারা তো মুদ্রার এক পিঠ দেখতে পাই। অন্য পিঠের অভিজ্ঞতা খুব সীমিত। আপনারা দুই পিঠই দেখেছেন। ভাল বলতে পারবেন।

কোন লেখা সাহিত্যপদবাচ্য, সেটা নিয়ে বিতর্কের ফয়সালা এখানে করে ফেলা কঠিন। আমি একটা ওয়ার্কিং ডেফিনেশন পুঁজি করে আগাচ্ছি। সেটা হচ্ছে, মুদ্রণমাধ্যমে সাহিত্য যেভাবে উঠে এসেছে তাকে স্কেল বিবেচনা করা। ব্লগে যে জিনিসটা একেবারেই ভিন্নভাবে উঠে আসছে এমন মনে হয় না, তবে ভিন্নতা তো আছে। সেই ভিন্নতাকে ডিফাইন করার চেষ্টা।

নজমুল আলবাব এর ছবি

সুমন স্যারতো পুরা জমাইয়া দিছেন দেখি।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

সুমন স্যারতো পুরা জমাইয়া দিছেন দেখি।

??? এর ছবি

ঝালমুড়ি আর চা লৈয়া বৈসা পড়েন তাইলে। আপনাদের কথা বলাটা এখানে জরুরি।

দৃশা এর ছবি

সুমন স্যারতো পুরা জমাইয়া দিছেন দেখি।

দৃশা

হাসান মোরশেদ এর ছবি

'ছদ্মবেশ' এ থাকলে কিছুটা সমস্যা হতেই পারে । আশা করি কেটে যাবে ।
ভিন্নতা কিছুটা তো আছেই । প্রথম যেটা হলো পাঠক লেখক কমিউনিকেশন যেটা আপনি নিজেই বলেছেন । আপনার মনে হচ্ছে শোভন দুরত্ব নস্যাৎ করে দিচ্ছে । আমি এই নস্যাৎ এর পক্ষে । লেখক বলে আলাদা দুরত্বের কিছু নেই ।
এটা প্রায় নতুন একটা ধারা । এই ধারা 'অল্টারনেট মিডিয়া' হিসাবে দাঁড়াতে পারে, না ও দাঁড়াতে পারে । সিদ্ধান্ত গ্রহন প্রক্রিয়া আরো অনেক অনুসংগের সাথে জড়িত, আপনি জানেন ।

-----------------------------------
'পড়ে রইলাম বিধির বামে,ভুল হলো মোর মুল সাধনে'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

??? এর ছবি

হাসান মোরশেদ, "ছদ্মবেশ" বলছি এজন্য যে আমরা (বেসিক্যালি এখানে জুবায়ের ভাই, ইমরুল আর আমি এবং আরো কয়েকজন) মূলত ব্লগ ব্যবহার করি "আপলোডার" হিসাবে। আশা করি আপনি সঠিক অর্থেই বুঝেছেন জিনিসটা। যদি বুঝে থাকেন তবে এটা আমার তরফে আমি বলতে পারি যে, এই "সমস্যা"টি থেকে মুক্ত হবার কোনো পরিকল্পনা আমার নাই। মানে, আমি হলাম ব্লগেরও খাই তলারও কুড়াই ধরনের লেখক। ব্লগ আমার জন্য নতুন একটা অ্যাকসেস মাত্র। তবে কে জানে, একদিন এটাই আমার প্রধান প্রকাশমাধ্যম হৈয়া দাঁড়াইতে পারে।

আপনার পরের বক্তব্যে আমি অনেকদূর একমত। লেখক-পাঠক দূরত্ব কমিয়ে আনা দরকার। কিন্তু আমি বলছিলাম যে, ব্লগে যে কম্যুনিকেশন দেখা যাচ্ছে, সেটা মূলত লেখক-লেখক কম্যুনিকেশন। লেখকই অন্য লেখার পাঠক এখানে। অনেকটা সাহিত্যিক আড্ডাগোছের। এর বাইরে আরেকটা বৃহত্তর পাঠকশ্রেণী তো আছে সাহিত্যের। এখন কথা হচ্ছে ব্লগের সাহিত্য তাদের হাতে পৌঁছাবে কিভাবে, বা আদৌ পৌঁছাবে কিনা।

ভাস্কর, নানাদেশের নানাভাষার ব্লগসংস্কৃতি নিশ্চয় আছে। কিন্তু আমি কেবল সামহোয়ার আর সচলায়তনের অভিজ্ঞতা থেকে কথা পাড়লাম, যেহেতু বাকিদের কথা জানি না। তবে বৈষয়িক কারণে আমি অনেকদিন ধরে নিউরোসার্জারি আর নিউরোলজির দুইটা য়ুরোপিয়ান ব্লগসাইটে কথাবার্তা শুনতে যাইতাম। সেখানে দেখছি, একেবারেই স্পেশালাইজড। ডাক্তার, রোগী আর রোগীর প্যারেন্টস নিয়া তাদের সমাজ।

সৌরভ এর ছবি

ম্যালা আলোচনা হইছে দেখি।
আমি মুখ্যু মানুষ, তাও দুইখান কথা কই।

ব্লগিং জিনিষটার শুরু দিনলিপি আকারেই।
আইজকা কী দিয়া ভাত খাইছি, গার্লফ্রেন্ডের সাথে বেড়াইতে গেছিলাম, এইসব জিনিষ দিয়া শুরু।

তারপরে টেকিগুরুরা নানানরকম টেকনিক্যাল জ্ঞান দেওনের লাইগা ব্লগিং জিনিষটারে তাদের মিডিয়াম হিসেবে নিয়া নেন। টেকনিক্যাল ব্লগ লিইখা গুগল অ্যাডসেন্স এর বিজ্ঞাপনের টাকা দিয়া প্যাট চালান, এইরকম অনেক গুরু আছেন।

টেকিগুরুদের দেখাদেখি, সাহিত্যওয়ালারা, জ্ঞানী লোকজনও মিডিয়ামটারে লুইফা নেন আরো পরে।

তারপর, নানানরকম কারণে ইন্টারনেট দুনিয়ায় ম্যালারকম উলটপালট হয়্যা যায়। সেইগুলান টেকনিক্যাল কথাবার্তা বাদ।

এই মুহূর্তে ব্লগের ধরন দুইরকম,
একটা হইলো, ভাত খাইলাম মরিচ ভর্তা দিয়া, আম্মা বকছে, মন খারাপ - এইসব লেখা টাইপ।
এইটা হইলো নিজের বন্ধুবান্ধবের সাথে ব্যাপারগুলো শেয়ার করার জন্যে লেখা, ইয়াহু ব্লগ কিংবা যে কোন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে যে ব্লগ লেখা হয়, তা এই টাইপের।

অন্যটা হইলো, আপনারা যেমনটা লিখতেছেন, পাঠকদের কথা মনে রাইখ্যা, আপাদমস্তক সাহিত্য কিংবা মুক্ত চিন্তা-ভাবনা।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

??? এর ছবি

কয়েকটা জিনিস বিবেচনায় আনা বোধ হয় ভাল। যেমন: আমরা বলি "ব্লগার" এবং এই লেখালেখিকে বলা হচ্ছে "ব্লগিং"। নতুন পরিভাষা কি নতুন কোন ফর্মকে রিপ্রেজেন্ট করার জন্য। অর্থাৎ "ব্লগ" কি লেখালেখির কোনো বিশেষ ফর্ম? আবার একই সঙ্গে সে তো দেখি আধারও। মানে মিডিয়ার নামও এক্ষেত্রে ব্লগ।

দিনলিপি একটা ফর্ম যেটা সাহিত্যে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু সব দিনলিপি কি সাহিত্য? আবার ব্লগের প্রশ্নে, দিনলিপি আর সাহিত্য ওভারল্যাপড যদি হয় (অছ্যুৎ বলাই), তাহলে সেটা কি সাহিত্য-উত্তর নতুন কোনো ফর্মের দিকে ধাবিত হচ্ছে, নাকি সাহিত্যের ট্রেজারিতেই কন্ট্রিবিউট করছে?

ব্লগের লেখার আয়তন বিষয়ে ভাস্করের মতামত বেশ অভিনব। কিন্তু আমি কনভিন্সড হৈতে পারতেছি না। ব্লগের লেখার আয়তন ছোট হবার পেছনে মনিটর-প্রযুক্তি দায়ী? নাকি পাঠকের অ্যাভালেবিলিটি লেখকের মধ্যে প্রকাশের ব্যাপারে অস্থিরতা তৈরি করে? ভাবার বিষয়?

ইমরুল, দৈনিক আর লিটলম্যাগের সাহিত্যের ভিন্নতা তুমি জানো। কিন্তু দুই সাহিত্যেরই আর্কাইভাল গন্তব্য হচ্ছে বই। কিন্তু ব্লগের ক্ষেত্রে সেটা কী হবে? আমরা কি অদূর ভবিষ্যতে শোহেইল চৌধুরীর "দিনের শ্লেট" বা শ্যাজা-র "তিতাস" বাজারে বই আকারে দেখবো? কিংবা হিমু,সুমন চৌধুরী বা আরিফ জেবতিকের লেখামালা? আবার যারা নিকে লেখেন, তাদের ক্ষেত্রে আর্কাইভাল প্লান কি ভিন্ন? সাধক শঙ্কুর যে কাব্য দেখলাম তা তো প্রভূত আনন্দদায়ক। এখন ব্লগের বাইরে সে আনন্দ কিভাবে ছড়াইবে? যদি পুস্তকাকারে ছড়ায়, তাইলে কি শঙ্কু এই নামেই হাজির থাকবেন সেখানে?

জিকো এর ছবি

ব্লগ আলাদা মিডিয়া হলে এর কনটেন্ট আর্কাইভও অনলাইনে, ব্লগেই হতে পারে। আর্কাইভাল গন্তব্য প্রিন্ট মিডিয়ায় হবে, এমনটা তো নয়। কাগজে না ছেপেও অনলাইন আর্কাইভকে 'বই' বলতে পারি। ই-বই, ডিজিটাল বই, অনলাইন বই -- সবই শেষে গিয়ে বই। এজন্য অবশ্য কাগজে ছাপার ওপর অগাধ আস্থা হারানোটা জরুরি।

পরের চিন্তা সম্ভবত পাঠকসংখ্যা বাড়ানো, প্রচার ও বিপণন নিয়ে। ব্লগে ছাপা হওয়া 'তিতাস কোনো নদীর নাম নয়' বা অন্য কোনো লেখা ভবিষ্যতে ই-বই আকারে ছাপা হলে কত বেশি পাঠক পড়বেন, ই-বই প্রকাশকের বাণিজ্যিক কৌশল কেমন হবে, এবং ব্লগ-লেখক বুকার পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পাবেন কিনা, সেসব নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

লিটলম্যাগ করা বন্ধুদের অভিযোগ, কাগজের মতো ইন্টারনেটের সহজপ্রাপ্যতা নেই। ইলেকট্রিসিটি-কম্পিউটার-ইন্টারনেট এবং প্রযুক্তিজ্ঞান থাকলেই কোনো পাঠক নাগাল পাবেন ব্লগের, ব্লগারদের। তাই ঢের ভালো কাগজ। তবে পরিসংখ্যানযোগ্য বর্তমান বাস্তবতা হলো, অনেক লিটলম্যাগ লেখার চেয়ে ব্লগের পাঠক বেশি; বেশি এবং বহুমাত্রিক। আর সাহিত্যিক নিরীক্ষার জন্য ব্লগ-লেখক দায়ী, মিডিয়া নয়।

কাগজে ছাপার বেলায় ব্লগারের ছদ্মনাম না আসল নাম যাবে, সে অপশন, আমার মতে, একান্তই ব্লগ-লেখকের, আই মিন ব্লগারের।

জিকো এর ছবি

নিজেকে 'আপলোডার' মনে করছেন কেন? অন্য মিডিয়ায় ছাপা হওয়া বা ছাপাযোগ্য কনটেন্ট তুলে দিচ্ছেন ব্লগে, তাতে তো ব্লগের প্রচলিত সংজ্ঞা বা বৈশিষ্ট্য ক্ষুণ্ণ হয়নি।

কথা হলো, সময়ের সাথে আপনি নতুন কনটেন্ট যুক্ত করছেন কিনা, ক্রনোলজিক্যালি আপডেট হচ্ছে কিনা আপনার ব্লগ সাইট।

লেখা, দিনলিপি বা সাহিত্য না বলে বড় অর্থে কনটেন্ট বলতে আগ্রহী, কারণ লিপি না লিখেও ব্লগাতে পারেন। হতে পারে তা ছবি, ভিডিও বা অডিও পোস্ট। এগুলোও ব্লগিংয়ের আওতায় পড়ে। আবার লিংকব্লগিং করেন কেউ। দিনলিপি, জীবনদর্শন বা মতামত থাকে না, শুধু ভালোলাগা ওয়েব লিংক তুলে রাখেন নিজের ব্লগে।

ব্লগে কনটেন্ট আপলোডের সময় এ মিডিয়ামের নিজস্ব সুবিধা-সীমাবদ্ধতার কথা ভাবতে পারেন। লেখার সঙ্গে প্রাসঙ্গিক অন্য সাইটের লিংক দেয়া, পাঠকের তাৎক্ষণিক মিথস্ক্রিয়া, মনিটরে পড়ার উপযোগী ফরম্যাট খেয়াল রাখা ইত্যাদি। প্রযুক্তি বদলের সঙ্গে এসব কোড অব কনডাক্ট পরিবর্তন হচ্ছে যদিও, তবু পাঠকের সঙ্গে কম আয়াসে যোগাযোগটা ভাবনার কেন্দ্রেই থাকে।

??? এর ছবি

জিকো-র ই-বইয়ের আইডিয়াটা ভাল, হ্যাঁ, আর্কাইভ তো অনলাইনে হতেই পারে। এখন প্রশ্ন হল অ্যাকসেসের। শত বছর ধরে আমাদের পূর্বসূরী পাঠকেরা গ্রামে, মফস্বলে বসে বসে ভাল ভাল পুস্তক পড়েছেন এবং পড়ছেন। এখন ইন্টারনেট-এর প্রাপ্যতা সে পর্যন্ত কবে পৌঁছাবে, বা আদৌ পৌঁছাবে কিনা। আর না পৌঁছালে, ব্লগ কি একটা নির্দিষ্ট শ্রেণীর মিডিয়া হয়ে থাকবে? ধরা যাক, আগামী একশ বছরে হয়ত বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে ইন্টারনেট অ্যাভাইলেবল হয়ে গেল। তাহলে এখন যারা ব্লগার, অন্তবর্তীকালীন যারা, তারা কী করবেন? শতবর্ষের অপেক্ষা, নাকি মুদ্রণ প্রযুক্তির দ্বারস্থ হবেন তারা ঐ বৃহত্তর পাঠককে রিচ করার জন্য?

লিটলম্যাগের পাঠকের চেয়ে ব্লগের পাঠক নিশ্চয় বেশি এখন। তবে, লিটলম্যাগ ব্লগের চেয়ে অনেক বেশি স্পেশালাইজড। একটা স্পেশালাইজেশনের চিন্তা থেকে যেমন সচলায়তন খোলা হয়েছে। ফলে, স্বাভাবিক কারণেই এর সদস্যসংখ্যা কোনোদিন সামহোয়ারকে ছাড়াবেনা, গুরুতর চরিত্রবদল না হলে। আর সচলায়তনে আমি যেমন ধুম করে আমার যে কোনো লেখা ছেড়ে দিয়ে ভরসা করতে পারি, সামহোয়ারে সেরকম করতে গেলে আমার বুকের পাটা আরো শক্ত হতে হবে!

ই-বুকের ব্যাপারে পুরনোদের একটা ন্যাচারাল রেজিস্ট্যান্স থাকবে এবং থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু যে প্রজন্ম ভিজুয়াল মিডিয়ার প্রশ্রয়ে বেড়ে উঠেছে, যার কাছে ব্রাউজিং হচ্ছে শৈশবের অ্যাডভেঞ্চার, তাদেরকেও দেখি দলে দলে অনলাইন রিসোর্স প্রিন্ট করছে পড়ার জন্য। ফলে, ভাবি, কাগজের ওপর অগাধ আস্থা হারানো কি সহজে সম্ভব? মাত্র তিরিশ বছরের একটা প্রযুক্তি দিয়ে দুহাজার বছরের একটা চর্চাকে কি রাতারাতি রিপ্লেস করে ফেলা সম্ভব?

সৌরভ দুরকম ব্লগচর্চার কথা বললেন: একটায় ক্যাজুয়াল জীবনবিবরণ, অন্যটায় আপাদমস্তক সাহিত্য। অন্যদেশের সাহিত্যের ব্লগ সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নাই। কিন্তু আগ্রহ অনেক। কারো ঠিকানা জানা থাকলে আমারে একটু জানাইয়েন। সৌরভ, আমাদের দেশের যৎসামান্য ব্লগচর্চায় প্রতিদিনের জীবনে যতটুকু সাহিত্য আছে ততটুকু হাজির হচ্ছে ব্লগে, এমনটা অনেকে বলছেন। বাইরে হয়ত বিষয়টা আলাদা। কিন্তু এখানে প্রতিদিনের জীবন মিশে যাচ্ছে সাহিত্যিক আকাঙ্ক্ষাগুলোর সাথে এমনি তো দেখা যাচ্ছে, নাকি?

??? এর ছবি

জিকো-র দ্বিতীয় মন্তব্য এই ভাবনাটাকে আরেকটা মোচড় দিল বলে মনে হচ্ছে। কনটেন্ট.... হুম। "আপলোডার" শব্দটি ব্যবহারের একটা রাজনীতি আছে জিকো। এটা দিয়ে আমি মিডিয়া যে কনটেন্টকে প্রভাবিত করে, সেই ধারণায় আস্থা রাখতে চেয়েছি। বলতে চাইছি, বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত হওয়া লেখালেখির মধ্যে চরিত্রগত কিছু হেরফের থাকে। যত যাই বলা হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত জুতার মাপে পা বানানো কিন্তু হয়ই। যেহেতু দাপটটা জুতার, প্রথমত।

??? এর ছবি

রেটিং নিয়া আমার মাথাব্যথা নাই। তবু, যিনি এই পোস্টে তিন নম্বর রেটিংটা করলেন, তিনি যদি মুখ খুইলা একটু বলতেন কেন এই পোস্ট তার কাছে ফালতু মনে হৈতেছে? কৃতার্থ হৈতাম।

হাসিব এর ছবি

আলোচনার অর্ধেকটার মতো পড়লাম । সবাই নানাভাবে ব্লগিংরে ডিফাইন করা চেষ্টা করছেন । চিপা দিয়া আমার বক্তব্যটা পেশ করি ।

কোন কিছু ডিফাইন করতে গেলে সবার আগে সেটার একটা কমন অবয়ব দাড় করানোটাই উচিত । যেমন গরু রচনা শুরু হয় গরু চেনানোর মধ্য দিয়ে । গরু চাইর পা দুই শিঙ দুই চোখ - এরকম । এ বৈশিষ্ট্যের বাইরেও গরু আছে । যেমন চাইর পা এক চোখ শিঙছাড়া । গরু রচনা লেখার সময় গরু ডিফাইন করতে আমরা কানা শিঙছাড়ার গরুর নমুনা হাজির করি না । কারন ওটা গরুর কমন চেহারা না ।

এই ফ্রেমওয়ার্কটা যদি আমরা মাইনা নেই তাইলে ব্লগ ডিফাইন করার ক্ষেত্রে এটারে কিভাবে এ্যাপ্লাই করা যাইতে পারে সেই প্রশ্নটা আমরা সামনে আনতে পারি ।

আমার কাছে মনে হয় সবচেয়ে ভিজিটেড ব্লগগুলো ব্লগের ডেফিনেশন খাড়া করতে বিবেচনায় আনা যায় । ওখানে কি লেখা হচ্ছে কি বিষয়ে লেখা হচ্ছে সেটা দেখলেই বোঝা যাবে আসলে ব্লগের কনটেন্ট "জেনারেলি" কি হইতে পারে । এখানে টেকনোরাতির সবচেয়ে বেশী রেফার্ড ব্লগগুলার লিস্টে চোখ বোলানো যেতে পারে । ওখানে এক থেকে ১০ নাম্বার ব্লগে সাইটগুলোর বেশীরভাগই হয় নিউজ শেয়ার করে অথবা টেকনোলজি কেন্দ্রিক লেখা পাবলিশ করে । দিনলিপি বা সাহিত্য কোনটাই না ।

আলোচনায় অংশগ্রহনকারীদের বিষয় না কনসিডার করতে অনুরোধ করি ।


আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে

আরিফ জেবতিক এর ছবি

কথা অনেক দূর এগিয়ে গেছে।আমি সেগুলো গোগ্রাসে গিলছি।
এই ফাকে সুমন ভাই আমাকে যে কথাগুলো বলেছেন,সে প্রসঙ্গে আবার ফেরত যাই।

----------------------------------
শতভাগ পাঠক বা শতভাগ লেখক বলে আদৌ কিছু আছে বলে মনে করছি না।আমি হয়তো ছোট পাঠক,আমি হয়তো হুমায়ূন বা মিলন পড়ছি,আনিসুল হক পড়ছি।সেখানেও কিন্তু আমার কিছু একটা বলার থাকে।আমি মফস্বলের কিশোর পাঠক হয়তো সেই কথাটি বলার সুযোগ পাই না,কিন্তু বলতে তো চাই।এই হিসেবে আমিও একজন লেখক ।আমি দেখেছি মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের কাছে প্রায় বস্তা ভরা চিঠি আসে কিশোর কিশোরীদের।জাফর ইকবাল সেই চিঠিগুলোর জবাব হয়তো দিতে অক্ষম কিন্তু ব্লগে হলে হয়তো অন্তত:কিছু কথা বলতে পারতেন।এই ছোট ছোট পাঠক থেকেই কিন্তু একদিন জামাল ভাষ্কর,হাসান মোরশেদ বা আরিফ জেবতিকের মতো অন্তর্মুখী ব্লগ লেখকের সৃষ্টি হয়।সুতরাং লেখক মাত্রই পাঠক আবার পাঠকরাও এক ধরনের লেখকই বটে।

এবার কথা হচ্ছে এই ব্লগের উপাদানগুলোর পুস্তকায়ন কাম্য কি না।আমার মনে হয় এটা খারাপ না।

১/আপলোডার হিসেবে যারা ব্যবহার করছেন,তারাতো এমনিতেই আসলে তাদের বইটাকেই এখানে শুধু অগ্রিম কিছু পাঠকের কাছে তুলে দিচ্ছেন।এখান থেকে কিন্তু তারা লাভবানও হচ্ছেন।কারন এখানকার একটা নির্দিষ্ট পাঠক গোষ্ঠীর মতামত তার লেখার মূল পাঠক গোষ্ঠীর রেসপন্স সম্মন্ধে ধারনা করতে লেখককে সাহায্যও করছে বটে।

২/যারা আপলোডার না,কিন্তু হয়তো একটা আলোচনা কিংবা তর্ক পোস্টে অংশ নিয়েছেন সেক্ষেত্রে পুরো আলোচনাকে একটা মাত্র পুস্তকে নিয়ে আসা যায়।আলোচনার মতো আলোচনা হলে একটা চমৎকার এবং সংগ্রহে রাখার মতো বিষয় হবে।উদাহরন দেই।একটা আলোচনায় বসেন না মার্ক্সবাদী,ধর্মবাদী,আর আরো যতো মতামত দানকারী ব্লগাররা।আলোচনা চলুক।সেখান থেকেই যুক্তি পাল্টা যুক্তিতে একসময় একটা গতি পাবে আলোচনা।তখন পুরো বিষয়টিকে পুস্তকে নিয়ে আসুন।যেহেতু তর্ক বিতর্কের মাঝ দিয়ে বিষয়টি এগিয়েছে তাই অনেক সুক্ষ বিষয় সেখানে উঠে আসবে।সাধারন পাঠকের পক্ষে তখন তার পছন্দের মতটি খুজে পেতে সেই বই সাহায্য করতে পারে।

-----------------------------------
কিস্তিমাতের যুদ্ধ শেষে,সাদাকালো ঘুটিগুলো এক বাক্সেই ফেরত যাবে...

আরিফ জেবতিক এর ছবি

ব্লগ কি প্রয়োজনীয় পাঠক পাবে?

আমার ধারনা পাবে।
ধীরে ধীরে কিন্তু আমরা সবাই নেট নির্ভর হয়ে পড়ছি।ছোটখাটো বিষয়েই আমরা গুগুলে সার্চ দিচ্ছি,নেটে
পত্রিকা পড়ছি,প্রথম আলো'র মতো পত্রিকার ঈর্ষনীয় হিট আছে প্রতিদিন।

এই বিশাল পাঠককে ধরে ফেলা সম্ভব,খুবই সম্ভব যদি সেরকম শক্তিশালী লেখক হয়।

আমার তো মনে হয় যদি সুন্দর পলিটিক্যাল এনালাইসিস দেয়া যায় তাহলে সেটার পাঠক থাকবেই।

একসময় অনেক বার্ণিং ইস্যুতে আমাদের জনৈক প্রবাসী কলামিস্ট কি বলেন সেটা দেখার জন্য অনেকেরই আগ্রহ আমি দেখেছি।উনার কলাম যেদিন ছাপা হতো সেদিন প্রথম আলো ১০ হাজার বেশি চলতো,এটা ভেতরের খবর।
এখন উনি যদি তার ব্যক্তিগত ব্লগে সেই লেখাটা লিখতেন তাহলেও কিন্তু পাঠক সেটা পড়বে।তর্ক করার সুবিধা থাকায় সেটি বরং আগ্রহ নিয়েই পড়বে।

শক্তিশালী লেখকের আবির্ভাব নিশ্চয়ই ব্লগকে বিশাল সংখ্যক পাঠক দিতে পারে,আর সেটা আগামী ১০ বছরের মাঝেই হবে বলে আমার ধারনা।

-----------------------------------
কিস্তিমাতের যুদ্ধ শেষে,সাদাকালো ঘুটিগুলো এক বাক্সেই ফেরত যাবে...

??? এর ছবি

হাসিবের লিংকে ক্লিক কৈরা ঐ পেইজটা পাওয়া গেল না। তবে তথ্য হিসাবে এটা কাজের হবে যে, ব্লগ কনটেন্ট হিসাবে সাহিত্য খুব বেশি ব্যবহৃত না। অর্থ দাঁড়াচ্ছে, ব্লগে সাহিত্য বা সাহিত্যিক লেখালেখি একটা নতুন ধারণা। ধন্যবাদ।

আরিফের মত আমারও মনে হয় ব্লগকেন্দ্রিক লেখালেখির পুস্তকী আর্কাইভ করা সম্ভব। অনলাইন আর্কাইভ তো হতেই পারে, জিকো যেটা বলছিলেন। তবে রাতারাতি প্যারাডাইম শিফট মনে হয় সম্ভব না। এখনো প্রিন্ট সভ্যতা থেকে অনেক কিছু নেয়ার আছে। লেখালেখির ধর্মই হয়ত ছড়িয়ে পড়া। ফলে আমাদের মত কাগজের লেখকেরা যদি ব্লগের সুবিধা নিতে এখানে আসতে পারি, ব্লগাররা নিশ্চয় কাগজে যেতে পারেন। তাতে লাভই হওয়ার কথা।

হাসিব এর ছবি

- লিংক রিচেক করলাম । ঠিক আছে । তাও যদি না হয় তাহলে গুগলে technorati top 100 লিখে সার্চ দেন । প্রথম লিংকটাই আমি দিয়েছি ।

- ব্লগে সাহিত্য বা সাহিত্যিক লেখালেখি থাকাটাই বেশী সম্ভব । কম জনপ্রিয় বলে আমরা হয়তো সেগুলোর খবর জানি না ।

- প্রিন্টেড মাধ্যম উঠি যাবে এটা আমি যখন স্কুলে পড়তাম তখন শুনতাম । বাস্তবে এটা হয়নি । অনলাইন সাহিত্য প্রিন্টেড সাহিত্য সাবস্টিটিউট করার পরিবর্তে আমি বলবো এটা সাহিত্যের একটা নতুন মাত্রা যোগ করেছে বলবো । যেকারনে এখনও দেদারছে মানুষ বই কেনে । হ্যারি পটারের পিডিএফ ভারসন পড়ার থেকে ২৫ টাকা দিয়ে একটা বই কিনে পড়া অনেক আরামের । নতুন প্রযুক্তি এখনও এই আরামকে রিপ্লেস করতে পারেনি ।


আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

এই আলোচনায় ঢুকতে ইচ্ছে করছে। লগ-ইন করে বসে আছি, কাজের ফাঁকে ফাঁকে একটু উঁকি দিয়ে যাই। সময় কম বলে সবগুলো মন্তব্য পড়ে ওঠা হলো না। আপাতত ছোটো একটা মন্তব্য করে কেটে পড়ি, পরে আসা যাবে।

আমার পর্যবেক্ষণটি এরকম : এটার নাম ব্লগসাহিত্য হলে ক্ষতি কী? নাটকের ইতিহাস হাজার হাজার বছরের। তখন শুধু মঞ্চে হতো, তারপর এলো রেডিও নাটক, টিভি নাটক। যে কথাটা বলতে চাই, আসলে ব্লগ একটি নতুন মাধ্যম। ছাপার অক্ষরে সব "সাহিত্য" যেমন সাহিত্য হয়ে ওঠে না, ব্লগসাহিত্যও তার ব্যতিক্রম কিছু হবে বলে মনে করি না।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

উৎস এর ছবি

আমার মতামত এরকমঃ

ব্লগ একটা মাধ্যম। যেমন বই, টিভি, সিনেমার পর্দা, আদি যুগের পাথরের ট্যাবলেট। বই যেমন নিজে সাহিত্য নয়, তবে বইকে ব্যবহার করে সাহিত্য লেখা যেতে পারে। বইয়ে সাহিত্যের বাইরে অন্য কিছুও থাকতে পারে। মানে দাড়াচ্ছে এরকম বই নিজে তার কনটেন্ট সংজ্ঞায়িত করে না, অর্থাৎ বই হলেই তার মধ্যে সাহিত্য থাকবে এমন কোন নিশ্চয়তা নেই। আসলে দুটো জিনিষ একটা আরেকটার সাথে এধরনের সম্পর্কে জড়িত নয়। ব্লগও তাই। এটা এখনকার সবচেয়ে সহজলভ্য মাধ্যম হতে যাচ্ছে মানুষের মনের ভাব লিখিত (আরো নির্দিষ্ট করে বললে frozen) আকারে প্রকাশের জন্য। ব্লগ এজন্য বইয়ের প্রতিদ্বন্দি মাধ্যম হিসেবে, টিভি, সিনেমারও প্রতিদ্বন্দ্বি। সাহিত্য বা দিনলিপির সাথে সে অর্থে সরাসরি সম্পর্ক নেই। শুরুতে দিনলিপি হিসেবে ব্যবহার হতো এই মাধ্যমটি। যেমন ইউরোপে ছাপাখানা আসার পর শুরুতে ছাপানো বই ছিল বাইবেল (যতদুর মনে করতে পারছি), তাই বলে ছাপানো বই মানেই বাইবেল নয়।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ব্লগসাহিত্য কথাটা পছন্দ হয়েছে।

ব্লগ মূলধারার সাহিত্য না, কারণ এতে দিনলিপি ঢুকে যায় অনেকটাই। দিনলিপির সংস্রবটা সমস্যা না। মূলধারার সাহিত্যে সবটা সাহিত্যিক/শৈল্পিক সৃষ্টি খুব গাঢ় হয়, ব্লগে সেটা ছড়িয়ে থাকে হাজারটা ছোট ছোট কথায়। উদাহরণ, আপনার এই এন্ট্রি এবং তার জবাবগুলো সবই সাহিত্যরস সমৃদ্ধ, কিন্তু কোনটাই ঠিক পাবলিশেবল না।

ব্লগ প্রকাশযোগ্য না, এটাই সমস্যা। সমস্যার বিশাল একটা কারণ হল, ব্লগের প্রতিটা এন্ট্রির পিছনেই কিছু কনটেক্সট থাকে যেটা বাঁধানো বইয়ে ধারন করা কষ্টকর। উদাহরণ, মুখফোড়ের আদমচরিত, ছাগুরামকে নিয়ে আপনাদের যত স্যাটায়ার। ওগুলো ভয়ংকর রকম উপভোগ্য, কিন্তু সাধারণ পাঠকের ওতে খেই পাওয়ার সম্ভাবনা সীমিত। মূলধারায় লেখক কনটেক্সট তৈরি করেন, ব্লগে কন্টেক্সট অন্য কোন স্থান, সময়, বা ঘটনার সাথে লিংক করে দেওয়া যায়।

যদি ব্লগার ও পাঠকেরা হোমরা-চোমরা হন, তাহলে সেটার প্রভাব অনেক বড় হতে পারে। উদাহরণ, হাফিংটনপোস্ট।

??? এর ছবি

জাল বহুদূর ছড়ানো হৈছে। এখন না গুটাইলে মাছ ঘুমায়া পড়তে পারে। তবে গুটাইবার আগে আমাদের "মেগা" ব্লগারদের আওয়াজ পাইলে আরো ভালো লাগত। উনাদের কেউ কেউ প্রশাসনিক দায়িত্ব নেয়ার পর কথা কম কম বলতেছেন। হয়ত প্রশাসনিক ব্যস্ততা বাড়ার কারণে।

উৎস ব্লগকে প্রথমত মিডিয়া হিসাবেই দেখতে চান। আবার মুহম্মদ জুবায়ের এবং ইশতিয়াক রউফ "ব্লগসাহিত্য" শিরোনামের পক্ষপাতী। জুবায়ের ভাইয়ের দৃষ্টান্তটা বেশ কাজের মনে হচ্ছে। রেডিও নাটকের সাথে টিভি নাটক বা মঞ্চনাটকের নিশ্চয় পার্থক্য আছে। আমরা যদি ব্লগসাহিত্য বলে আলাদা কোনো ক্যাটাগরি করি, তাইলে সে কোথায় কোথায় অন্য সাহিত্য থেকে পৃথক সেটা বের করবার দায় আমাদেরই।

বাঁধানো বইয়ে ব্লগকে অ্যাকোমোডেট করার নিশ্চয় রাস্তা বের করা সম্ভব! নাকি?

তবে এই "ব্লগসাহিত্য" কনসেপ্ট-এর পাশাপাশি ভাস্করের "নিজের অজান্তে সাহিত্য হওয়া" কনটেন্টকেও আমরা একই পাল্লায় বিবেচনা করবো কিনা, সেটাও ভাবার বিষয়।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

'অপরবাস্তব' নামে একটা প্রকাশনা হয়েছিলো , সামহোয়ারের কিছু আলোচনা নিয়ে ।
আপনি কি দেখেছিলেন? ব্লগের বিষয় নিয়ে বাঁধানো বই হয়ে গেছে গত বইমেলাতেই ।

-----------------------------------
'পড়ে রইলাম বিধির বামে,ভুল হলো মোর মুল সাধনে'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

??? এর ছবি

তাই নাকি? আমি তো দেখি নাই। কোথায় পাওয়া যাবে বইটা বলুন তো?

হাসান মোরশেদ এর ছবি

ভাস্করের সংগ্রহে থাকার কথা । সংগ্রহে না থাকলে ও ভাস্কর ব্যাবস্থা করতে পারবেন ।
'ছাপাকল' নামে একটা প্রকাশনী এটা করেছিল ।
-----------------------------------
'পড়ে রইলাম বিধির বামে,ভুল হলো মোর মুল সাধনে'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

আরেকটু যোগ করি। ব্লগ কিন্তু লেখালেখি মকশো করার জায়গা হিসেবেও মন্দ না। সম্পাদকের শাসন নেই, প্রত্যাখ্যাত হয়ে নবীন লেখকের মুষড়ে পড়ার ভয় নেই। বরং আছে তাৎক্ষণিক মন্তব্যে ভালোমন্দ যাচাইয়ের সুবিধা। অভ্যাসটা ধরে রাখতে পারলে তা ফল দেবে, কেউ কেউ ভালো লেখকও হয়ে উঠবেন। কলাগাছ কাটতে কাটতে ডাকাত হয়ে ওঠার মতো আর কি!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

আরেকটু যোগ করি। ব্লগ কিন্তু লেখালেখি মকশো করার জায়গা হিসেবেও মন্দ না। সম্পাদকের শাসন নেই, প্রত্যাখ্যাত হয়ে নবীন লেখকের মুষড়ে পড়ার ভয় নেই। বরং আছে তাৎক্ষণিক মন্তব্যে ভালোমন্দ যাচাইয়ের সুবিধা। অভ্যাসটা ধরে রাখতে পারলে তা ফল দেবে, কেউ কেউ ভালো লেখকও হয়ে উঠবেন। কলাগাছ কাটতে কাটতে ডাকাত হয়ে ওঠার মতো আর কি!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

সম্পূর্ণ আলোচনাই বেশ ভাল লেগেছে। ধন্যবাদ সবাইকে। কোনভাবে এরকম মেগা-ডিসকাশনগুলোকে ফ্ল্যাগ/মার্ক করে রাখা গেলে ভাল হত (উন্মুক্ত সচলায়তনের পাঠকদের জন্য)।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

অপর বাস্তব ছাড়াও আরেকটা বইয়ের নাম করতে চাই।সচলায়তনের ব্লগার শুভ একটা বই করেছিলেন গত বই মেলায় ,নাম শুভ'রব্লগিং।

বাজারে মন্দ চলে নি,বেশ ভালোই কাটতি ছিল।

-----------------------------------
কিস্তিমাতের যুদ্ধ শেষে,সাদাকালো ঘুটিগুলো এক বাক্সেই ফেরত যাবে...

??? এর ছবি

জুবায়ের ভাই, মকশো সব মাধ্যমেই করা যায়। তবে ব্লগে স্পেস আছে সেটা হল কথা। তাৎক্ষণিক মন্তব্য একটা ভালো দিক, তবে সবসময় ভালো এমন মনে হয় না। আর মন্তব্যকারী ব্লগে সবসময় ভালো স্পিরিট দিয়ে চালিত হন, এমন কিন্তু দেখা যায় না। অপ্রয়োজনীয় এবং অসৎ মন্তব্য বরং নবীন লেখকের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

এখানে অনেক লেখার বেশ হৈ হৈ প্রশংসা হৈতে শুনি। কখনো কখনো আমার এমন মনে হয় যে, ঐগুলা আন্তরিক প্রশংসা না, সামাজিক বা স্ট্র্যাটেজিক প্রশংসা। অবশ্য এইটা আমার অভিমত। বাস্তবতা এমন নাও হৈতে পারে।

ইশতিয়াক রউফ, আলোচনা ভালই চলতেছে, তবে শেষ হৈবার আগে আপনাদের এবং অন্যান্য অভিজ্ঞ ব্লগারদের কথা শুনতে চায়, যদি উনারা মুখের ছিপি খোলেন এই প্রসঙ্গে। না খুললে আমি অবসরমত এই আলোচনার একটা সারাংশ বানাইতে চেষ্টা করবো।

দুইটা বইয়ের নাম পাওয়া গেল। এগুলো কি অনলাইনে অ্যাভাইলেবল?

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

আমাকে ছোট করে অভি ডাকতে পারেন। ফোনেটিকে নিজের নাম লিখতে নিজেরই বিরক্তি ধরে যায়, আপনাদের কষ্টটা বুঝতে পারছি! হাসি

আমার খুব ভালো লেগেছে এই আলোচনা। আমিও আরও কিছু মন্তব্যের অপেক্ষায় ছিলাম আসলে।

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

সুমন, মন্তব্য সম্পর্কে আপনার উদ্বেগের জায়গাটা বুঝতে পারি। কিন্তু অন্য মাধ্যমেও কী সেই স্ট্র্যাটেজিক বা সামাজিক বা পৃষ্ঠকণ্ডুয়নমূলক মন্তব্য/আলোচনা/সমালোচনা নেই? আছে। থাকবেও। বাদ দেওয়ার কোনো উপায় নেই বলে। সে ক্ষেত্রে মন্তব্যের প্রাপকের মেধা ও বিবেচনা ছাড়া অন্য কোনো পরিশোধন-পদ্ধতি নেই।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

??? এর ছবি

খুব ভালো বলেছেন জুবায়ের ভাই। ইন ফ্যাক্ট এইটাই এখানে রিমেডি, আমিও জানতাম। তাও রোগের নাম নিলাম একটু, ডায়াগনোসিসে নাকি অনেক রোগ আধা ভালো হয়ে যায়!

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

boi-mela.com এ পাওয়া যায় মনে হয়।

নজমুল আলবাব এর ছবি

কিন্তু ব্লগে এমন ধরনের ঝামেলা খুব বেশি নাই। এখানে ঝামেলাটা হল, পাঠক। ব্লগে লেখক পাঠক একই ব্যক্তি। অর্থাৎ যিনি লেখেন তিনি পড়েন। কেউ লেখেন কম, পড়েন বেশি, আবার কেউ পড়েন কম, লেখেন বেশি। এখানে লেখক-পাঠক সম্পর্কটা ইন্টার‌্যাক্টিভ। আবার এবসলিউটলি কেউ একান্তই লেখক আর কেউ একান্তই পাঠক এমন না। লেখক-পাঠক ইন্টার‌্যাকশন অনেক বেশি হচ্ছে ঠিক, কিন্তু এর কতটা দরকারি? অর্থাৎ, প্রযুক্তির কল্যাণে এই যে লেখক-পাঠক হটলাইন হৈয়া গেল, তাতে ভাইব্রেশন আর কম্যুনিকেশন যেমন বাড়ল, পাশাপাশি সেইটা কখনো কখনো লেখক-পাঠকের মধ্যকার শোভন দূরত্বকে নস্যাৎ করে দিতেও পারে।

শোভন দুরত্বটা বজায় রাখতেছে মনে হয় অনেকেই।

ঝামেলাটা হল, পাঠক এই শব্দগুলাও ভালো লাগেনি। মনে হয় আপনে একটা উন্নাসিকতা নিয়া আমাদের দেখেন। 'এইগুলা আর কি! আবাল পাঠক।' এই টাইপের কিছু।
একবার দেখলাম বলছেন, 'মেগা ব্লগার'। এইটা কি মনে হইলো,একটু যেন খোচা দিলেন।
উস্তাদি লোকদের থাইকা অনেকেই দুরে থাকে। স্যারদের স্যারামো সবসময় সবার ভালো লাগেনা। বিশেষ কইরা যারা পাঠক, যাদেরকে ঝামেলা বইলা ভাবেন অনেকে...

ভাস্কর এর ছবি

কিন্তু ব্লগে এমন ধরনের ঝামেলা খুব বেশি নাই। এখানে ঝামেলাটা হল, পাঠক। ব্লগে লেখক পাঠক একই ব্যক্তি। অর্থাৎ যিনি লেখেন তিনি পড়েন।

সুমন রহমানের এই বক্তব্য পড়তে গিয়া আমার মনে হইছে সচলায়তনের প্রত্যেক ব্লগারের কথা। বিশেষ কইরা অরূপের কথা, যার চরম উৎসাহে সচলায়তন রাইটার্স কম্যুনিটি হিসাবে অ্যাপিয়ার করছে, আর আলবাবের মনে পড়ছে আবাল পাঠকের কথা। নিজেরে অম্মানিত ভাবনের প্রয়াসে গেছে সে, আর আমি নিজেরে নিয়া একটু আহ্লাদিত হইছি। মানুষের দৃষ্টিভঙ্গী বোঝা বড়ই দায়।

এই ব্লগেই আমি কবিতা লিখলে সেইটা হয় অনেক সিরিয়াস কথার ফাকে সহজিয়া, আবার যখন রেফারেন্স ছাড়া খালি রিজনিং'এ থাকি তখন বক্তব্যের গুরুত্ব যায় কইমা। ব্লগ সংস্কৃতি এইরম অনেক ইন্টারেস্টিং আছে। এইখানে কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ-অনুযোগ থাকলে তার ভাল পছন্দনীয় লেখায় অনায়াসে মন্দ রেটিং দেওন যায়। আবার ঠিক উল্টাটাও ঘটে।

এই বিষয়ে সারা পৃথিবীর আচরন কেরম সেইটা বুঝনটা কঠিন...কিন্তু বাংলা ব্লগিং'এর দুইটা অভিজ্ঞতা থেইকা দেখতেছি ব্লগিং'এর সাথে গ্রুপিং কাহিনীটা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়াইয়া গেছে। যেই কারনে শোভন দূরত্ব তৈরীর প্রসঙ্গ তুইলা ফেলেন ব্লগারের সাথে অনেকেই, সেই ব্লগারের ব্লগিংয়ের সাথে নয়।

তয় আলবাব মাস্টারী আমিও অপছন্দ করি। যেই কারনে কখনোই এই ধরনের প্ল্যাটফর্মে লেখালেখিতে উপদেশ দিতে অনাগ্রহী থাকি। বড়জোর নিজের অবস্থান ব্যখ্যা করতে চাই। কিন্তু আপনের স্যারামীর বিরোধীতারে আমার অন্য ধরণের স্যারামীই মনে হইলো...

তয় শোভন দূরত্ব আর এইরম উস্তাদির বিরোধীতা সচলায়তনরে আরেকটা সামহোয়্যার ইন ছাড়া আর কিছু বানানের সম্ভাবনা রাখে কিনা, সেইটা নিয়া আমার বক্তব্য আছে...


স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...


স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

তয় শোভন দূরত্ব আর এইরম উস্তাদির বিরোধীতা সচলায়তনরে আরেকটা সামহোয়্যার ইন ছাড়া আর কিছু বানানের সম্ভাবনা রাখে কিনা, সেইটা নিয়া আমার বক্তব্য আছে...

তাইলে কি - 'শোভন দূরত্ব' আর 'উস্তাদি'-টা টিকায়ে রাখা খুব দরকার, অন্তত: সচলায়তনরে সামহয়্যার না বানানোর জন্য? কাউরে উস্তাদি করার এখতিয়ার কে কখন কিভাবে দিবে? আর যে কোনো ফোরামে গ্রুপিং গড়ে উঠা অস্বাভাবিক কিছু না। এখন এই শোভন দূরত্বের মিলিমিটারের জন্য উস্তাদি ফলাইলে ঐটা তো 'স্যারামি'ই হবে, নাকি!

ভাস্কর এর ছবি

আমার বাক্যগঠন আর ব্লগ সংস্কৃতির ধারবাহিকতার ফাকে অনেক সময়ই ভুল বোঝাবুঝি তৈরী হয় সেইটাও আমি বুঝতে পারলাম। কারণ এই খানে আমি শোভন দূরত্ব আর উস্তাদী কইতে নজমুল আলবাব উল্লেখিত শব্দ দুইটা আর উদ্দেশ্যপূর্ণ ইঙ্গিতরে বুঝাইছিলাম। আমি সুমন রহমানের আচরনে মাস্টারীভাব দেখি নাই...তিনি দেখছেন। আর উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবেই দেখছেন সেইটা নিশ্চিত...নাইলে তার ঐ কমেন্টে জোর কইরা পাঠকবিরোধী বক্তব্য খুঁইজা বাইর করতেন না। সুমন রহমানের আগের মন্তব্যে পাঠকের বিরোধীতা ছিলোনা আদৌ সেইটাতো পরিস্কার আপনের কাছে...নাকি না?

আর এইরম পরিস্থিতি তৈরীর চেষ্টারেই পায়ে পারা দেয়া কয়। পায়ে পারা দেওয়া নিয়া যদি তর্ক শুরু হয় সেই তর্কে আমি আছি পুরামাত্রায়


স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...


স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...

??? এর ছবি

ভালো না লাগলে দূরে থাকা ভাল। দূরে থাইকা থাইকা চামে চিকনে অনেকেই রেটিং করে। খারাপ কি?

আপনার মন্তব্যের জবাব দিই, যেহেতু দয়া কৈরা কাছে আসছেন। "শোভন" দূরত্ব একান্ত আমার ধারণা। পরের মন্তব্যেই হাসান মোরশেদ এই মতের বিরোধিতা করেছেন। প্রত্যুত্তরে আমি উনার মতের বিরোধিতা করি নাই। দূরত্ব সম্পর্কে আমার একটা নিজস্ব মত আছে। সেটা আমি বলেছি মাত্র, যেহেতু অন্যকে আহত না করে আমার মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে।

আমি কাউকেই অ্যাবসলিউট পাঠক মনে করি নাই। যিনি পাঠক তিনিই লেখক। এটাই আমার বক্তব্য ছিল। আপনি পাঠক আর আমি লেখক এইটা ব্লগে চলে না। বলার বিষয় ছিল ঐটা। উন্নাসিকতা আবিষ্কারের বদলে একটু অভিনিবেশ নিলে বোঝা যাইত জিনিসটা।

ধন্যবাদ।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

আমি তো বলি, ব্লগের বড় অর্জন এটাই । ঐ সো কল্ড লেখক পাঠক শোভন দুরত্ব ঘুচিয়ে দেয়া । বাঁধানো বই সংস্কৃতিতে পাঠকের ঐ রকম সুযোগ কই,লেখককে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর? ব্লগের পাঠকের কিন্তু এই সুযোগ আছে, ব্লগের লেখককে ইন্সট্যান্ট জাজমেন্ট এর । এই জাজমেন্ট এর কারনে মন্তব্যগুলো কখনো অতি পিঠচাপড়ানো মনে হতেই পারে, এর পেছনে যে কৌশলগত কার্যকারন নাই সেটা হলফ করে বলা যায়না । আবার এটা যে বাঁধানো বই সংস্কৃতিতে নেই , সেটা ও বলা যায়না- জুবায়ের ইতিমধ্যেই এটা বলে ফেলেছেন ।
পিঠচাপড়ানোর মতো লেখকের চামড়া ছিলানো পাঠকের ও কিন্তু অভাব নেই ব্লগে । 'বাঁধানো বই' সংস্কৃতির তুলনায় ব্লগ সংস্কৃতিতে পাঠক অনেক সরাসরি,তীক্ষ্ণ মন্তব্য করার সুযোগ পায় যা অনেক ক্ষেত্রেই হয়তো প্রযোজ্য ।

আমার ধারনা'বাঁধানো বই' সংস্কৃতির বহু লেখক যারা আমাদের তথাকথিত মুল ধারায় প্রতিষ্ঠিত বলে পরিগনিত, তাদের অনেকেই পাঠকের এই সরাসরি চাপ নিতে এখনো প্রস্তুত নয় কিংবা সেই হেডম ও অনেকের নেই । এটা কিন্তু প্রমানিত ও হয়েছে কোথাও কোথাও ।

-----------------------------------
'পড়ে রইলাম বিধির বামে,ভুল হলো মোর মুল সাধনে'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

পাঠক খুবই পেচালো জিনিস। অনেকটা ক্রিকেটের দর্শকের মত। গম্ভীর আলোচনার মধ্যে একটা অগম্ভীর অভিজ্ঞতা কই।

৯৫ সালের কথা। ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে বসে আছি, ক্লাস শুরু কবে হবে জানা নাই। এই সুযোগে রেগুলার ক্রিকেটের ট্রিপ মারতেছি। একবার এক ম্যাচে আমার ওভারে ছক্কা খাওয়ার পর সাইড লাইনে ফিলডিং করতে গেছি। এক দর্শক পুরা কুমিল্লার উচ্চারণে কয়, "তুমি আমার চ্যান খ্যালো?"

তারপর আমাগো ব্যাটিংয়ের সময় আমি যথারীতি রাহুল দ্রাবিড়। এক বল সলিড ডিফেন্স কইরা পরের বলে ছক্কা পিটাইছি। দর্শক বেজায় তালি। একজন আরেকজনরে কইতাছে, "দ্যাখ, দ্যাখ। অ্যামবায়ই বল মাইপা খ্যালতে অয়।"

আমি দুই দর্শকের মন্তব্যই (গালি এবং প্রশংসা) সমানভাবে উপভোগ করেছি এবং এখনো করি। লেখকদের কাছে পাঠকও অনেকটা এমন। লেখক অনেক দরদ দিয়ে একটা কিছু ফুটিয়ে তুলতে চাইলেও সেটার চেহারা পাঠকের কাছে কেমন হবে, তা পাঠকই সবচেয়ে ভালো বিচার করতে পারবে। সেই বিচারে লেখকের বিবেচনায় ভুল থাকলেও পাঠককে 'আনপড়' বলাটা মনে হয় তেমন মানানসই অ্যাপ্রোচ না। কোনো নির্দিষ্ট পাঠকের মন্তব্যকে ধ্রুব সত্য হিসেবে ধরে না নিলে লেখকের কোনো ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। পাঠক সম্পর্কে সহনশীল হলেই বরং লেখকের জন্য লাভ।

একজন মানুষ যা অনুভব করে, তার পুরোটা প্রকাশ করা সম্ভব নয়, সেটা রবীন্দ্রনাথ হোক আর টলস্টয়। আবার মানুষ যা প্রকাশ করতে পারে, তার পুরোটাই ভাষায় বা লেখনীর মাধ্যমে তুলে আনা যায় না। একটা গ্যাপ থেকেই যায়। সুতরাং লেখকের অনুভূতির পুরোটাই পাঠকের মাঝে সঞ্চারিত হবে - এমনটা আশা করা ঠিক না। আবার ওই গ্যাপের জন্য হয়তো কোনো লিখা পাঠকের কাছে একটি নতুন দিগন্ত খুলে দিবে, যার অস্তিত্ব সম্পর্কে লেখকের কোনো পূর্বধারণাই ছিলো না।

----
অনেক কঠিন কথা হইলো। এবার বলাই অফ। হাসি

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

??? এর ছবি

ধন্যবাদ ইমরুল। আলাপটা সেদিকে যাতে না যায়, সেজন্য এই ইস্যুতে আগে আমি খুব এলিমেন্টারি মন্তব্য (শোভন দূরত্ব) করে এড়িয়ে গেছিলাম।

লেখক-পাঠক ইন্টার‌্যাকশন বিষয়ে আমি একটু ক্রিটিক্যাল। "শোভন দূরত্ব" সম্ভবত সঠিক শব্দ-নির্বাচন ছিল না, ফলে হাসান মোরশেদের আলাপে সেটা বাঁধানো বই সংস্কৃতি আর ব্লগীয় সংস্কৃতির ডাইকোটমি তৈয়ার করে ফেলছে। লেখক পাঠকের জন্যই লেখেন। কিন্তু পাঠক লেখকের শত্রু কি মিত্র, সেটা কি এত সহজে ফয়সালা করার ব্যাপার? জাঁ জেনে-র "লে ফ্লুনবল" নামে একটা গদ্য আছে, যেখানে তিনি সার্কাসের বাজিকরকে উদ্দেশ্য করে কিছু কথা বলেছেন। জাঁ জেনে বলেন, দর্শকের অপরাধ কি? দর্শকের অপরাধ হল, তুমি যখন তোমার সবচে বিপদজনক খেলাটা দেখাও তখন সে চোখ বন্ধ করে ফেলে। জাঁ জেনে আসলে রূপকচ্ছলে লেখক-পাঠক সম্পর্কটিকেই তুলে ধরছিলেন। তিনি বলছিলেন, বাজিকর (পড়ুন লেখক) উৎকট রঙচঙা পোশাক পরে কেন? যাতে দর্শক (পড়ুন পাঠক) তাকে আটপৌরে গ্রামারে সনাক্ত করতে না পারে। ইত্যাদি ইত্যাদি।

এই ধরনের জাঁ জেনে ফিলিং থেকে লেখক-পাঠকের মধ্যকার দূরত্বের কথা বলা। আমি নিশ্চিত না লেখক-পাঠকের ঘনিষ্ঠতা লেখার জন্য ভালো কিনা, কিংবা পাঠক বিহনে লেখকের কলম শুকায়া যায় কিনা।

ব্লগের চামড়াছিলা পাঠকের পাল্লায় বাঁধানো-বই সংস্কৃতির কোন্ লেখক পড়েছিলেন সেটা আমার জানা নাই। পড়তেই পারেন। ব্লগে যেমন, ব্লগের বাইরেও ছাগুর তো অভাব নাই। বাঁধানো বইয়ের লেখকমাত্রই মহান কিছু তো না।

কারুবাসনা এর ছবি

বাপরে গাড়ি ত আনেক দুর আগাইসে। তাল দিব কেমনে।মন্তব্য পড়তে সময় লাগবে।


----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।


----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।

সাধক শঙ্কু এর ছবি

সবাই ঠিক কইছেন । এখন আরো বোশী কইরা লিখেন।


গড়ি দালানকোঠা ফেলে দিয়ে শ্মশাণে বৈঠকখানা

অমিত আহমেদ এর ছবি

একটানে পুরো আলোচনা পড়ে গেলাম। প্রথমেই প্রানবন্ত বিষয়ে আলোচনার সূত্রপাত করার জন্য সুমন রহমানকে ধন্যবাদ। আলোচনা এত এগিয়ে গেছে যে হুট করে মন্তব্য করাটা এখন কঠিন। কেবল আমার কিছু ব্যক্তিগত মতামত দিয়ে যাই:

১) ব্লগ রাইটিং সাহিত্য কিনা সেটা বলার আগে দেখতে হবে কে কিভাবে ব্লগ ও সাহিত্যকে ডিফাইন করেন। ব্লগে রোজনামচা, ছবি থেকে শুরু করে ধর্ম প্রচার, বিদ্বেষ প্রকাশ সবই হয়ে থাকে। এর মাঝে খুব কম লেখারই সাহিত্য ভ্যালু থাকে (এই খানেও ব্যাপার আছে, আমার কাছে কোন লেখার সাহিত্য ভ্যালু নাই মনে হলে অন্যদের কাছেও তাই মনে হবে এমনটা কথা নেই), কিন্তু কিছু লেখার সাহিত্য ভ্যালু থাকে উগ্র ভাবেই।

২) আপলোডার বলে আসলে কিছু নেই ব্লগ জগতে, যদিনা অন্যের লেখা পোস্ট করা হয়। নিজের লেখা নিজে পোস্ট করলে সেটা আর আপলোড থাকে না (রি)পাবলিশ হয়ে যায়। আপনার যে লেখাটা প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে সেটা ব্লগে দিলেও আপনার ব্লগ এন্ট্রি হিসেবেই থাকছে। ব্লগ সৃষ্টির মূল কারনটা ছিল পাঠক আর লেখকের মাঝে ইন্টারমিডিয়ারি এলিমিনেট করা। অনেক লেখাই পাবলিশার নেবে না, সংবাদপত্র ছাপবে না, কারনটা হতে পারে লেখকের অখাদ্য লেখা কিংবা বিষয়ের সংবেদনশীলতা, কিন্তু সে যাই হোক লেখকের কিন্তু অধিকার থাকে সেটা পাঠকের কাছে পৌঁছে দেবার। সে চিন্তা থেকেই ব্লগের সৃষ্টি।

৩) পাঠক লেখকের দূরত্ব বিষয়টা আপেক্ষিক। লেখক ভেদে, পাঠক ভেদে সেটা বদলে যাবে। আর যে দূরত্বের কথা বলা হচ্ছে সেটা আছে, কিন্তু বাংলা ব্লগিংয়ে সেটা লক্ষ্য না করারই কথা যেহেতু বাংলা ছোট্ট একটা গ্রুপকে রিপ্রেজেন্ট করে (ইন্টারনেট অ্যাকসেস আছে শতকরা কতজনের? যাদের আছে তারা সমাজের কোন স্তর থেকে?)। কদিনেই সামহোয়ার, সচলাতয়নের সবাইকে আমরা চিনে ফেলি। কিন্তু অনলাইনে কিছু ব্লগিং আমরা দেখি যেখানে কয়েক হাজার হিট পরে ঘন্টায়, কিন্তু মন্তব্য আসে গুটি কয়। কারন হচ্ছে ব্লগার এমন এক অবস্থানে পৌঁছে গেছেন যে সবাই মন্তব্য করতে বুকে সাহস পান না। তবে আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে ব্লগে পাঠক-লেখক দূরত্ব না থাকাটাই কাম্য। কারন আমি ব্লগে লিখি কারন পাঠকের সরাসরি নির্ভয় মন্তব্যটা পাওয়া যায় (অল্প কিছু আসা তোষামোদি, গালিগালাজ উপেক্ষা করা যায়)। আমার সামনে মুখোমুখি হয়তো কোন পাঠক সেটা বলতে পারতেন না। আর লেখক-লেখক কমিউনিকেশনে কিন্তু পাঠক লেখক দুজনেই লাভবান হন - যেমনটা হলো এ লেখার। সত্য মন্তব্যে ভর করে কিন্তু অনেক লেখক তাঁর লেখা পরিবর্তন করতে পারেন, কাহিনীতে নতুন মোড় টানতে পারেন। পরে সে লেখাটা পরিমার্জিত হয়ে আবার প্রিন্ট মিডিয়াতেও আসতে পারে।

এখন পর্যন্তই থাক, পরে না হয় আরো কথা হবে।


আমার বেলা যে যায় সাঁঝ-বেলাতে
তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আহারে এই আলোচনাটা এতদিন পরে চোখে পড়ল!!! কত কিছু বলার ছিল!!! মন খারাপ

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

সিরাত এর ছবি

দারুণ একটা আলোচনা। চলুক

সচলায়তন দিনলিপির জায়গা নয় বলেই মনে হয়। সচলায়তন ভাল, না হলে অন্তত পাঠকপ্রিয় লেখার জায়গা। দিনলিপি ভাল সাহিত্যের মত লেখা গেলে সেটা হয়তো ঠিক আছে। নাহলে পাঠক খায় না। তার মানে সচলায়তনের জন্য ফিট না।

আরেকটা বড় কনফিউশন - কার জন্য লিখছেন? নিজের জন্য না পাঠকের জন্য? আমাদের ৯৫% লেখাই কিন্তু পাঠকের জন্য। নিজের জন্য এত কষ্ট করে এলাবোরেট লেখা কি লাগে? হুম, হয়তো নিজের পাঠক সত্ত্বার জন্য। আমি নিজে মজা না পেলে লিখতে চাই না। সেটাও একটা ফ্যাক্টর।

ইশতিয়াকের কনটেক্সট সংক্রান্ত কথাবার্তা ভাল লাগলো। বই-এর আলাদা গুরুত্ব আছে।

ইংরেজি ব্লগজগতে এখনো সচলায়তন টাইপ কিছু খুঁজে পেলাম না, তবে দারুণ কিছু ফোরামে অংশগ্রহন করেছি। কেউ এরকম কিছু চিনলে আমাকে পারসোনাল মেসেজে লিংকটা একটু পাঠিয়ে দেবেন কি?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।