‘দিয়াশলাই’-এর গল্পগুলি : এক পলকে একটু দেখা

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি
লিখেছেন মুহম্মদ জুবায়ের (তারিখ: রবি, ২০/০৪/২০০৮ - ৭:০৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রথমে বন্দনা করি….

সচলায়তনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর বর্ষপূর্তি হতে এখনো প্রায় আড়াই মাস বাকি। সে হিসেবে বয়স দশ মাসও হয়নি। এরই মধ্যে শতকরা একশোভাগ নিজস্ব মালমশলা দিয়ে তিন তিনটি প্রকাশনা রীতিমতো গর্ব করার মতো অর্জন তো বটেই। সবগুলি ই-বুক, সচলায়তন যার নাম দিয়েছে বe, হিসেবে ধরছি না, কারণ এগুলির কোনোটা আগেই মুদ্রিত গ্রন্থ হিসেবে প্রকাশিত, কোনোটা অসম্পূর্ণ ইত্যাদি। এই তিনটি পূর্ণাঙ্গ প্রকাশনার একটি প্রথাগত মুদ্রণ মাধ্যমে, বাকি দুটি আন্তর্জালিক (নাকি অন্তর্জাল? এই সংশয় আমার আজও গেলো না। ইন্টারন্যাশনাল যদি আন্তর্জাতিক হয়, ইন্টারডিপার্টমেন্ট যদি আন্তবিভাগীয় হয়, তাহলে ইন্টারনেট আন্তর্জাল নয় কেন?)।

মুদ্রিত গ্রন্থ হিসেবে প্রকাশিত সংকলনটি এখনো দেখা হয়নি। শুনেছি মুদ্রণঘটিত ও দূরপাল্লার সম্পাদনা সংক্রান্ত কিছু গোলমাল থেকে গেছে। প্রথম ভার্চুয়াল বই আরিফ জেবতিকের সম্পাদনায় ফেলে আসা ছেলেবেলা-ও জন্মেছিলো কিছু ত্রুটি নিয়ে। দুটি ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট কাউকে দোষারোপ করার উপায় নেই। তবে দিয়াশলাই-এর তিন তরুণ সম্পাদক আগের অসম্পূর্ণতাগুলি সম্পর্কে আগাগোড়া সজাগ ছিলেন তা স্পষ্ট বোঝা যায় এই বইয়ের পরিপাটি সাজসজ্জা দেখে।

একটা বিষয় ভেবে মজা লাগে, বিস্ময়ও কম হয় না। সম্পাদক তিনজনের বসত পৃথিবীর তিন মহাদেশে – অমিত আহমেদ উত্তর আমেরিকায়, আনোয়ার সাদাত শিমুল এশিয়ায় এবং কনফুসিয়াস ওরফে মু. নূরুল হাসান অস্ট্রেলিয়ায়। আফ্রিকায় সচল কেউ আছেন কি না আমি নিশ্চিত নই, তবে ইউরোপ থেকেও একজনকে রাখলে মন্দ হতো না। তা এই তিন ভুবনের তিন বাসিন্দা স্থানকালের বিস্তর ব্যবধান সত্ত্বেও প্রযুক্তিকে সম্বল করে এক অসম্ভবকে সম্ভব করে ফেলেছেন। এখন থেকে দশ বছর আগেও হয়তো তা প্রায়-অসম্ভব ছিলো। অভিনন্দন তাঁদের প্রাপ্য।

অণুগল্প

অণুগল্প কী? তার সংজ্ঞা কীভাবে নির্ধারিত হয়? তার বৈশিষ্ট্য কী? স্পষ্ট কোনো সংজ্ঞা নির্ধারণ হয়তো সম্ভব নয়। তবে আমি যা বুঝি তা অনেকটা এরকম: পরিসরে অবশ্যই ছোটো, কিন্তু এতে থাকতে হবে পাঠককে সচকিত করে তোলার মতো কিছু একটা। থাকবে তীব্রতা ও তীক্ষ্ণতা। তীরের মতো ঋজু ও লক্ষ্যভেদী। স্ফুলিঙ্গের মতো জ্বলে ওঠা কোনো অনুভূতি। কোনো ধোঁয়াশাময় বর্ণনা নয়। হয়তো স্কেচ, কিন্তু স্পষ্ট দাগে আঁকা। অল্প কথায় অনেক কথা বলে যাওয়া, তবে পাঠককে যেন বোঝার আশা জলাঞ্জলি দিতে না হয়। সচলায়তনে নজমুল আলবাব ও সুমন চৌধুরী এই গোত্রের গল্পলেখক।

আবার অন্যদিকে কোনো একটা লেখা শুধু পড়ে যেতে ভালো লাগছে, মজা লাগছে, লেখক খুব আবছা কোনো বক্তব্য/ইশারা সেখানে মিশিয়ে রেখেছেন, পাঠক লক্ষ্য না করলেও ওই মজা ও পড়তে ভালো লাগার কারণেই তা সার্থক গল্প হয়ে ওঠে। সচলায়তনে এই ঘরানার একজন লেখক আছেন, তিনি সবুজ বাঘ।

অণুগল্প সংকলন ‘দিয়াশলাই’

এখন সুদৃশ্য প্রচ্ছদের ওপারে যাওয়া যাক। দিয়াশলাই সংকলনে জায়গা পেয়েছে ৩০ জন লেখকের মোট ৩৫টি গল্প। এর মধ্যে ১টি অনুবাদ।

দিয়াশলাই সংকলনের গল্পগুলিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করতে পারি – পরমাণু, অণু, স্বয়ংসম্পূর্ণ, বনসাই এবং হলো না লো হলো না।

পরমাণু

‘দিয়াশলাই’ সংকলনে বিস্ফোরক শক্তিধর মৌলিক পরমাণু গল্পগুলির লেখক সুমন চৌধুরী ও অলৌকিক হাসান। মোট ৫টি গল্প এই শ্রেণীতে। সম্পাদকরা ৫০০ শব্দে গল্প লিখতে বলেছিলেন, সুমন চৌধুরী সর্বসাকুল্যে ২০৪টি শব্দ খরচ করে (শিরোনামসহ ২০৮) ৪টি গল্প লিখে ফেলেছেন। প্রতিটি গল্পের ভাষা অতিশয় সাদামাটা, অথচ কী উজ্জ্বল, সম্পূর্ণ ও লক্ষ্যভেদী। প্রথম গল্পের নাম । স্বরবর্ণের ব্যবহার ছাড়াই ব্যঞ্জনবর্ণের একটিমাত্র অক্ষরে পরমাণু গল্পের পরমাণুসম শিরোনাম। পরমাণুর শেষতম ধাপে, আর ভাঙা যাবে না। সুমনের ৪টি গল্প ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের, তবে প্রথম () ও শেষ গল্প (বাটোয়ারা) দুটিকে অসাধারণ বললেও যথেষ্ট বলা হয় না।

৮৭টি শব্দে অলৌকিক হাসান লিখেছেন পাস ফেল। খুব নিটোল সুন্দর একটি গল্প। যথার্থ পরমাণু। একটু যত্নবান হলে শব্দসংখ্যা আরো কমানো যেতো। ছোটো একটি ঘটনা, ছোটো একটি অনুভব – এইটুকুই গল্পের সম্বল, অথচ মনোহর ও চমৎকার। একটি খচখচ করা ত্রুটি। ‘মরার মতো’ বা ‘মরার ঘুম’ ৪ প্যারার এই গল্প ৪ বার ব্যবহার করা হয়েছে ভুল বানানে। শব্দটি ‘মড়ার’।

সংকলনের একমাত্র অনুবাদ গল্পটিও (লাভ স্টোরি) পরমাণু শ্রেণীভুক্ত। শব্দসংখ্যা ৮০-র নিচে। শুরু থেকে গল্পটিকে এক যুগলের প্রেমের সংলাপ বিনিময় বলে ধারণা হয়, যদিও স্বামী ও স্ত্রী বলে দেওয়া আছে, সেভাবেই সংলাপগুলি পরপর সাজানো। পড়ার সময় কে আর অতো খেয়াল করে। মনে হতে থাকে, অনেক নিষেধ ভেঙে তাদের সম্পর্ক স্বপ্নময় একটি পরিণতির দিকে যাচ্ছে। অথচ শেষের একটিমাত্র বাক্যে জানা যায় তারা যাচ্ছে ডিভোর্সের জন্যে। গল্পের মূল লেখক ম. লিপস্কেরভ। দুর্দান্ত গল্পটির অসাধারণ অনুবাদ করেছেন সংসারে এক সন্ন্যাসী। শিরোনামটিকেও অনুবাদে প্রেমকাহিনী বলা যেতো বোধ করি।

অণু

অণুগল্প শ্রেণীতে পাচ্ছি ৫টি গল্প। হিমু ওরফে মাহবুব আজাদের ২টি এবং কনফুসিয়াস, আনোয়ার সাদাত শিমুল, নিঘাত তিথি ও মুজিব মেহদীর ১টি করে গল্প।

হিমুর গল্প দুটির নাম হাতিসোনা কপাল। হিমুর প্রায় সব রচনাতেই ব্যঙ্গ-পরিহাসের একটা ঝোঁক থাকে। এখানেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। হাতিসোনা অনেকটা কৌতুকের ছলে বলা হলেও চাপা-পড়া কষ্টও আগাগোড়া টের পাওয়া যায়। ‘হাতিরা ভোলে না’ – গল্পের এই অন্তিম বাক্যে ঠোঁটের কোণে অকস্মাৎ একটা স্মিতহাস্য উঠে আসার উপক্রম হতেই কোথাও একটা টান পড়ে। সে হাসি তখন আর কৌতুকের নয়, তা ফাটা-ঠোঁটে হাসতে যাওয়ার বিড়ম্বনার মতো বোধ হতে থাকে। কপাল-ও একটি নিখুঁত অণুগল্প। তবে ছোটো একটি নালিশ। মোনোপোলি খেলার সঙ্গে যাঁদের পরিচয় নেই, তাঁদের কাছে এই গল্পের কোনো আবেদন থাকবে বলে মনে হয় না।

কনফুসিয়াস অথবা মু. নূরুল হাসান গল্পসহ বিবিধ ধরনের গদ্যরচনা করে থাকেন। এই সংকলনে তাঁর বনসাই আমার প্রত্যাশা মেটায় না। গল্পটি সাদামাটা, বর্ণনা ও ভাষায়ও ধারালো লাগলো না। রচনাটি লেখকের শক্তিমত্তার পরিচায়ক নয়, এর চেয়ে অনেক উৎকৃষ্ট গল্প আমরা তাঁর কাছে পেয়েছি। সম্পাদনার ব্যস্ততায় হয়তো গল্পে মনোযোগ দিতে পারলেন না।

আনোয়ার সাদাত শিমুলের লেখার সঙ্গে আমার পরিচয় বছরখানেকের কিছু বেশি হবে। লেখক হিসেবে এই নবীন যুবক ক্রমশ অগ্রসরমান। দুর্বলতাগুলি কাটিয়ে উঠছেন, লেখালেখির পাঠশালায় অক্লান্ত পরিশ্রমী শিক্ষার্থীর মতো মনে হয়, নিজেকে ভেঙে নতুন করে গড়ার চেষ্টাও দেখা গেছে। দৈনন্দিন শিমুলের এই এগিয়ে যাওয়ার একটি স্মারক হয়ে থাকছে বলে আমার ধারণা। এই গল্পটি বোধহয় কোনো নির্দিষ্ট সময়ে বাঁধা পড়ে না, এটি মানুষের নিজের সঙ্গে লুকোচুরি খেলার চিরকালের গল্প।

নিঘাত তিথির বন্ধু গল্পটা ভালো লাগে। সন্ধ্যার মুখে এক নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ ও বাড়ির কিশোর বয়সী কাজের ছেলেটি কোনো কথা না বলেও কথা বিনিময় করে, এইটুকুই গল্প। আদর্শ অণুগল্প। বর্ণনার অংশে নিঘাত তিথি আরেকটু সতর্ক ও যত্নবান হলে লেখাটির ধার অনেক বেড়ে যেতে পারতো। ‘এখন হাতে থাকা অফুরন্ত সময়ের অধিকাংশই কাটে অলস ভাবনা আর বিগত দিনের দেনা-পাওনার হিসেব কষে।’ – এই ধরনের বাক্য কিন্তু একটু ক্লিশে ও জীর্ণ-প্রাচীন মনে হয়।

মুজিব মেহদীর তর্কপ্রগতির জন্য প্রকল্পিত একটি অসমাপ্ত সেমিনারের প্রতিবেদন গল্পটি চমৎকার, গতানুগতিক গল্পের অনুগামী নয়। তবে অণুগল্পের নামটি মাইলখানেক দীর্ঘ কেন বোঝা গেলো না। গল্পে কমা ছাড়া অন্য কোনো যতিচিহ্নের ব্যবহার নেই। হয়তো পাঠককে চমকে দেওয়ার চেষ্টা। নাকি এসবের অন্য কোনো ব্যাখ্যা/ব্যঞ্জনা আছে যা আমি ধরতে পারিনি! ভুল বোঝাবুঝির ঝুঁকি নিয়েও বলি, সংলাপে ‘মশাই’ শব্দটি কানে লাগে, বড্ড কৃত্রিম শোনায়।

স্বয়ংসম্পূর্ণ

অণুগল্প সংকলনের বেশ কয়েকটি রচনা স্বল্প পরিসরেও সম্পূর্ণ গল্প হয়ে উঠেছে। এই গল্পগুলি প্রথাসম্মতভাবে লেখা, আকারে ছোটো বলেই সেগুলিকে অণুগল্প বলে সায় দিতে ইচ্ছে করে না।

বিবাগিনীর বাবা আর কাঠগোলাপ গাছ একটি সুন্দর মন-ভালো-করা গল্প।

অমিত ওরফে আহমেদ রাহিদ নিয়মিত লেখেন না। তাঁর এগারোটি রজনীগন্ধা পড়ে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হয়, কেন লেখেন না? মনে হয় গল্পটি ঠিক অণুগল্প হিসেবে লেখার কথা ভাবাই হয়নি। গল্পের অতি দীর্ঘ প্রথম প্যারা অণুগল্পের উপযুক্ত বলে ভাবা মুশকিল। সম্ভবত লেখার চর্চা অনিয়মিত বলেই অমিতের ভাষা ও বর্ণনা কিছুটা আড়ষ্ট। কোনো মিল নেই, কিন্তু এই গল্পটা পড়তে পড়তে হঠাৎ ঋত্বিক ঘটকের সুবর্ণরেখা ছবিটার কথা মনে পড়লো।

মোহাম্মদ আবদুল মুকিত, যাঁর ব্লগনাম জ্বিনের বাদশা, লিখেছেন টান নামে একটি গল্প। সহজ-সরল ভাষায় লেখা নিটোল ও সম্পূর্ণ গল্প। অণু বা পরমাণূ গল্প হিসেবে এর একটি সম্ভাবনা ছিলো। গল্পের শেষ বাক্য ‘হঠাৎ বাসার কড়াটার কথা খুব করে মনে পড়তে থাকে’ সেই ইঙ্গিতই দেয়।

মাহবুর লীলেন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লেখার ক্ষমতা রাখেন। গল্প-কবিতা ছাড়াও লিখতে পারেন যা-খুশি ও যেমন-খুশি। তিনি ঘোষণা দিয়ে বলেছিলেন ছোট্টো পরিসরে লেখা তাঁর পোষায় না। কিন্তু সেখানেও যে উত্তমরূপে পারঙ্গম তিনি, চিঠির আকারে লেখা তৃষ্ণা গল্পটি সেই সাক্ষ্যই দেবে। সম্পাদকদের নির্ধারিত শব্দসংখ্যার মধ্যেই হৃদয়গ্রাহী একটি সম্পূর্ণ গল্প দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। লীলেন প্যারার শেষে কোনো যতিচিহ্ন ব্যবহার করেন না, শুধুমাত্র প্রশ্নবোধক চিহ্ন ছাড়া। নিশ্চয়ই এর একটা ব্যাখ্যা আমরা কখনো পাবো। এই গল্পের একটি বাক্যে আপত্তি জানিয়ে রাখি। ‘… মরার পরেও আমাকে তুই জেলাস করিস প্লিজ’ বাক্যে ‘জেলাস’ শব্দটিতে ব্যাকরণগত ত্রুটি ঘটে। আমি জানি মুখে বলার সময় এই কথাটি খুবই চালু। কিন্তু জেলাস করা যায় না, হওয়া যায়। এখানে জেলাস-এর বদলে ইংরেজি হলে এনভি লেখা যেতো। অথবা চমৎকার বাংলা শব্দ ঈর্ষা ব্যবহারটা আরো বেশি যুক্তিযুক্ত ও প্রত্যাশিত ছিলো।

মাশীদ আহমেদ গল্পের নামই দিয়ে রেখেছেন অণু-পরমাণু এবং শুরুতেই লিখছেন, ‘ এই গল্পের কোনো শুরু নেই, শেষও নেই। আবার হতে পারে, এটা কোনো গল্পও না…’। এবং গল্প শেষ করছেন এইভাবে, ‘… ততদিন গল্পটাও চলতে থাকবে। শুধু একেক সময় গল্পটা হবে একটা ল্যাব রিপোর্ট, একটা কনসার্ট, একটা রেস্টুরেন্টে খাওয়া, একটা মুভি বা বই রিভিউ, একটা বিয়ে বা একটা ঝগড়া। এরকম একেকটা অণুগল্প-পরমাণুগল্প নিয়ে চলতে থাকে গোটা জীবনের উপন্যাস।’ সুন্দর সুলিখিত গল্প আগাগোড়া। শুধু শেষ বাক্যটা গল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, একদমই প্রয়োজন ছিলো না।

নজমুল আলবাব যথারীতি একটি দুর্ধর্ষ গল্প লিখেছেন। গল্পের নাম নিশি-নেশা। নামকরণে চমৎকারিত্ব কিছু নেই, কার্যকারণও ঠিক বুঝিনি। তাতে গল্পের কোনো ক্ষতি অবশ্য হয় না, গল্পের সার্থকতা ও আবেদন অক্ষুণ্ণ থাকে। ছোটো ছোটো বাক্যের প্রায় নৈর্ব্যক্তিক বিবরণে গল্পের উন্মোচন ঘটান লেখক। গল্প শুরু হচ্ছে এইভাবে: ‘কবির তড়পাচ্ছে। কানের পাশ থেকে একটা ধারা গড়িয়ে যাচ্ছে দ্রুত। চিৎ হয়ে পড়ায় হাত দুটো ছড়িয়ে আছে। সিগারেটটা ছিটকে যায়নি। কানের পাশ থেকে যাওয়া রক্তের ধারা সিগারেট নিভিয়ে দিল। কবির আমার দিকে তখনও তাকিয়ে আছে। চোখে অবিশ্বাস। আসলে এভাবে কথা ছিল না। আমরা আজ অন্য প্ল্যান নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু কবির নিজেই গোলমালটা লাগিয়ে দিল। আর এখন তড়পাচ্ছে। সে না তড়পালে হয়তো আমি তড়পাতাম। কিংবা বাদল নিজের রক্তে গড়াগড়ি খেত এতক্ষণে।’ এই বিবরণ পড়ে পাঠক হিসেবে এক অনিবার্য ঘূর্ণাবর্তের মধ্যে পড়ে যাই। প্রায় দম বন্ধ করে এগিয়ে যেতে হয়। রক্তের ধারায় সিগারেট নিভে যাওয়ার ছবিটি মাথায় গেঁথে থাকে। তিন ছিনতাইকারীর একজন কবির তাদের উদ্দিষ্ট শিকারটিকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, কারণ শিকার লোকটি খুঁড়িয়ে হাঁটে, সে মুক্তিযোদ্ধা ছিলো এবং যুদ্ধে আহত। কবির নিজেও এক মুক্তিযোদ্ধার পুত্র। শিকারকে পালাতে দিয়ে সে সঙ্গী একজনের (গল্পের আমি) হাতে গুলিবিদ্ধ হয়। ‘… কবির উদ্দিনের লাশটা কানাগলির শেষপ্রান্তের মাঠে পড়ে থাকে। অন্ধকারে।’ নজমুল আলবাবের গল্পটি আক্রান্ত করে, পড়ার পর অনেকক্ষণ থম ধরে বসে থাকতে হয় আমাকে।

অমিত আহমেদের গল্পের নাম অবশেষে অরিন্দম…। অল্প পরিসরেই লেখাটি প্রথাসম্মত সম্পূর্ণ গল্প হয়ে উঠেছে। অণুগল্পের টান টান ব্যাপারটি অনুপস্থিত, যদিও সম্ভাবনা ও সুযোগ বিদ্যমান ছিলো।

মায়িশার আম্মার সাথে দায়িত্বশীল দুপুর হাসান মোরশেদের গল্প। ঘটনা বর্ণনায় ও পরিস্থিতি তৈরিতে হাসান মোরশেদ বরাবরই দক্ষ। বক্তব্যেও তীক্ষ্ণ। এই গল্পটিতেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। কিন্তু এই গল্পে মায়িশার আম্মা ঠিক কীসের দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলছে তা অস্পষ্ট। আর ‘প্যালেস্টাইনে মরেছে আরো কয়েক ডজন, দারফুরে শিশুর চেয়ে শকুনের পুষ্টি বেশি, বাংলাদেশে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর নিরন্নের মিছিল। কোন হারামজাদা যেনো উপদেশ দিলো ভাতের বদলে বিষ খেতে।’ লাইনগুলি লেখকের ক্ষোভ ও প্রতিবাদ যতোটা তুলে আনে, গল্প হিসেবে লেখাটি ঠিক ততোটুকুই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

অতন্দ্র প্রহরী বা শাহরিয়ার মামুনের ট্রাফিক সিগন্যালে একদিন প্রতিদিনের জীবন থেকে তুলে আনা এক টুকরো গল্প। প্রহরীকে গল্পের বর্ণনা ও ভাষা ব্যবহারে যত্নবান হওয়ার পরামর্শ দেওয়া যায়।

শোহেইল মতাহির চৌধুরী কোনো এক ব্লগপোস্টে নিজেই বলেছিলেন, জীবনে হাতে গোনা কয়েকটি মাত্র গল্প লিখেছেন তিনি। অমিতকে যে প্রশ্নটা আগে করেছি, এখন শোমচৌকেও একই প্রশ্ন করা দরকার: কেন? কী কারণে গল্প লেখেন না আপনি? সংকলনে অস্তিত্বের অন্ধকার পড়ে ধারণা জন্মায়, এই লেখক লেখেন অতি স্বচ্ছন্দে, স্বতস্ফূর্তভাবে। এই গল্প সম্পর্কে আমার অনুভূতি ও প্রশ্নগুলি হাসান মোরশেদ আলাদা একটি পোস্টে করে ফেলেছেন। সেগুলির পুনরুক্তি আর করার দরকার নেই। তবে এতো অল্প শব্দ খরচ করে একটি সম্পূর্ণ গল্প লেখার কৌশলটা আমাকে এবার শিখতে হবে।

এই শ্রেণীভুক্ত সর্বশেষ দুটি রচনা আসলে কল্পগল্প। সবজান্তা নামের আড়ালের জ্যোতির্ময় বনিক লিখেছেন প্রাগৈতিহাসিক এবং লুৎফুল আরেফীনের গল্পের নাম আফসোস। দুঃখের সঙ্গে বলি, কল্পগল্পের ভোক্তা হওয়ার যোগ্যতা আমার অর্জন করা হয়নি বলে কোনো মন্তব্য করছি না। তবে দুটি গল্পই পড়েছি।

বনসাই

যে গল্পগুলিকে আমি এই শ্রেণীভুক্ত করেছি, আমার বিচারে সেগুলির স্বাভাবিক বিকাশ ঘটতে দেওয়া হয়নি। অণুগল্প সংকলনের ৫০০ শব্দের বাধ্যবাধকতায় এই লেখাগুলি আটকা পড়ে গেছে। ডালপালা ছেঁটে ফেলা অবস্থায় কৃত্রিম আকৃতিতে সম্পূর্ণতা খুঁজছে।

শেখ জলিলের ক্লিনিক্যাল ডেথ গল্পটি আরেকটু বিস্তার অবশ্যই দাবি করে। পড়তে পড়তে মনে হয়, লেখাটা যেন লাফিয়ে লাফিয়ে সামনে-পেছনে যাওয়া-আসা করছে। শেখ জলিল মূলত কবি হলেও গদ্য লেখার সময় তিনি বিশুদ্ধ গদ্যই লেখেন, কবিতাক্রান্ত গদ্যরচনা করেন না। এখানেই গদ্যলেখক হিসেবে তাঁর শক্তির পরিচয়। তৃতীয় প্যারায় ‘ঘুমের মধ্যে মা স্ট্রোক করেছেন’ বাক্যটিতে আপত্তি জানিয়ে রাখি। রোগী স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়, রোগী স্ট্রোক করে না।

ফকির ইলিয়াসের পলাতক গদ্যগ্রহ লেখাটিতে ঘটনার পরম্পরা বুঝতে সমস্যা হয়। কারণ সম্ভবত ঐ অণুগল্পের আকৃতিগত কাঠামোর ভেতরে রাখার সচেতন চেষ্টা। হায়, সুন্দর মনোগ্রাহী একটি কাহিনী থাকা সত্ত্বেও গল্পটি অসম্পূর্ণ থেকে গেলো। ‘আরেকটি পলাতক গদ্যগ্রহ দুজনের পাশ ঘেঁষে পৃথিবীর প্রান্ত ছুঁয়ে যায়’ – গল্পের এই শেষ বাক্যটি বুঝিনি। পলাতক গদ্যগ্রহ কথাটির মানে কি?

খেকশিয়াল ওরফে কৌশিক দে লিখেছেন তেপান্তর। সম্ভাবনা ছিলো, তার পূর্ণতার জন্যে লেখায় আরো অনেক বিস্তার ঘটানো দরকার ছিলো, শৃঙ্খলাবদ্ধ বর্ণনা ও সুসংবদ্ধ ভাবনার স্ফূরণ আবশ্যক ছিলো।

মেহেদি রাঙা হাত গল্পের লেখক ধুসর গোধূলি। এই লেখা পড়ে ধারণা হয়, ব্যস্ত ব্লগার গল্প রচনায় বেশি সময় ব্যয় করতে নারাজ। তাঁর অবলোকনে অনেক খুঁটিনাটি ধরা পড়ে, এই গল্পের ছোটো পরিসরেও তার নমুনা আছে। কিন্তু গল্পটা কোনোমতে শেষ করতে পারলেই যেন বাঁচেন। এতো তাড়া কীসের? বর্ণনা ও ভাষা ব্যবহারে কিছুটা প্রাচীনতার গন্ধ। তার নমুনা শুরুর বাক্যটিতেই আছে – ‘বসন্তের আগমনী বার্তা নিয়ে …’। ২০০৮ সালের একজন নবীন লেখকের কাছে আরো টাটকা ও অশ্রুতপূর্ব বর্ণনা আশা করি আমি। আর কিছু না হলেও অন্তত ক্লিশেবর্জিত হওয়া তো দরকার।

দ্বিধা গল্পে ঝরাপাতা/অভ্রপথিক সুন্দর একটা বিষয় নিয়েছেন, তবু শেষ পর্যন্তা তা বনসাই গল্প হয়েই থেকে যায়।

গল্পের নাম বাথটাবে একা। লেখকের নাম জাহিদ হোসেন। এই লেখক কিছু গল্পে ইতোমধ্যে আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন তাঁর শক্তিমত্তা। এই রচনায়ও তার পরিচয় আছে। কিন্তু অণুগল্পের দাবি মেটাতে গিয়ে গল্পটি ফুটে উঠতে পারলো না। ‘সেই কখন থেকে হাতের শিরা কেটে বসে আছি বাথটাবে…’ অতিনাটকীয় লাগে। যেমন লাগে মিঠুর আত্মহত্যাও। চরিত্র দুটিকে ফুটে ওঠার সময় ও জায়গা দেওয়া গেলে এরকম বোধ হতো না বলে আমার বিশ্বাস।

নিঝুমের গল্পের নাম পুনশ্চঃ। দুটি দীর্ঘ প্যারা এবং পুনশ্চ পর্ব দিয়ে গল্পটি গল্পের আকৃতি নির্মাণ হয়েছে। গুনে দেখিনি, তবে নির্ধারিত ৫০০ শব্দই খরচ হয়ে গেছে বলে ধারণা করি। প্রথম প্যারা দুটি পড়ে আমার এই বিশ্বাসই পোক্ত হয় যে প্রচুর কাটছাঁট করা হয়েছে অথবা স্থান সংকুলান করতে না পেরে লেখক কোনোমতে গল্প শেষ করেছেন। দ্বিতীয় দীর্ঘ প্যারার শেষের কয়েকটি লাইন খাপছাড়াও লাগলো। নিঝুম লেখা বিষয়ে সচেতন হয়ে উঠছেন, তাঁর উত্তরণের নমুনাও সচলে দেখা গেছে, কিন্তু এই গল্পে তাঁর নবলব্ধ সচেতনতা ও ক্ষমতা অব্যবহৃত দেখলাম।

হলো না লো হলো না

আকাশ অবশ্যই সূর্যের চেয়ে বড় গৌতম রায়ের গল্প। গল্পটি ঠিক কী বিষয়ে এবং গল্পটি কেন গল্প তা বুঝতে ব্যর্থ হলাম।

ইশতিয়াক রউফের দুই পাহাড় স্বগত সংলাপ হিসেবে পড়তে ভালো লাগে। টানা গদ্যে লেখা কবিতা বললেও বলা যায়, এতোটাই সুখপাঠ্য। একটি সুন্দর ভাষাভঙ্গি তাঁর আয়ত্ত্বে। কিন্তু এই লেখাটা ঠিক গল্প হলো কি? গল্প আরো একটু স্পষ্টতা দাবি করে।

পরিবর্তনশীল অথবা মহিবুল কবির সাম্প্রতিককালে তাঁর গল্প লেখার ক্ষমতা দেখিয়েছেন সচলায়তনে। নেই-বিষয় নিয়েও তিনি গল্প লিখতে জানেন। এই সংকলনে তাঁর লাল-সবুজ মেশানো শাড়ির গল্প তাঁর সেই সক্ষমতার প্রতিনিধিত্ব করে না। এই রচনাটি সচলে ব্লগরব্লগর হিসেবে বেশ ভালো হয়। এরকম একটি গুরুগম্ভীর বিষয় অণুগল্পের জন্যে উপযুক্ত হয় না তা বলি না, কিন্তু তাকে সফল গল্প করার জন্যে এই নবীন লেখকের আরো প্রস্তুতি দরকার বলে মনে হয়। আবেগ গল্প রচনার একটি উপাদান বটে, কিন্তু একমাত্র উপাদান নয়। এই লেখায় আবেগটি উপস্থিত, কিন্তু গল্পের আর সব উপকরণ কোথায়?

পথে শিরোনামে মুজিব মেহদীর অপর রচনাটি কবিতাক্রান্ত গদ্যরচনা। গল্প কি?

সর্বশেষ

একটি কথাই বলার। আমার অকপট বিরূপ মন্তব্য কাউকে আহত করার জন্যে নয়, বরং দুর্বলতাগুলি বিষয়ে একটু সচেতন করার চেষ্টামাত্র – এইটুকু বিশ্বাস করলে খুশি হই। মঙ্গল হোক সবার।


মন্তব্য

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

অনেক অনেক অনেক ধন্যবাদ, প্রিয় জুবায়ের ভাই। সম্পাদনার সাথে যুক্ত থাকায় বারবার ভাবছিলাম - কেমন হলো, কী রকম হলো!

আপনার রিভিঊ পড়ে আনন্দে মন ভরে গেলো।

একই শহরে থাকলে - এই সকালে নিজ হাতে কফি বানিয়ে খাওয়াতাম। দুপুর/রাত হলে সাদা ভাত-আলু ভর্তা-ডিম ভাজা-ডাল; তাও নিজের হাতে রান্না করা।

সবিশেষ কৃতজ্ঞতা রইলো।

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

হবে কোনোদিন। আপাতত ভার্চুয়াল কফি হোক। হাসি

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

অমিত আহমেদ এর ছবি

অসাধারণ একটা কাজ হয়েছে। মুগ্ধ হয়ে পড়লাম পুরোটা। নিজেদের কাজ নিয়ে একটু গর্বও হলো। প্রিয় পোস্টে অ্যাডিত হলো।

শিমুলের শহরে থাকলে আপনি-আমি সারাদিন টো টো ঘুরতাম। রাত হলে শিমুলে বাসায় গিয়ে ওর হাতের রান্না "সাদা ভাত-আলু ভর্তা-ডিম ভাজা-ডাল" খেয়ে বেরুতাম পানীয়ের সন্ধানে।


ওয়েবসাইট | ফেসবুক | ইমেইল

কনফুসিয়াস এর ছবি

এত কষ্ট করার দরকার কি, আপনারা সবাই বরং আমার বাসায় চলে আসেন। সর্ষে ইলিশ দিয়ে ভাত খাওয়াবো। হাসি

-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

অমিত আহমেদ এর ছবি

কনফু মিয়া, কুংফু চিনো?


ওয়েবসাইট | ফেসবুক | ইমেইল

কনফুসিয়াস এর ছবি

হা হা হা!
জায়গামতন লেগেছে দেখি!
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

আমন্ত্রণ কি উড়াল দেওয়ার টিকেটসহ? চোখ টিপি

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

@ অমিত আহমেদ, আমার তো আহারের পরে পানীয় চলে না। আগে হলেই ভালো। দেখা যাক, কোনো একদিন সম্ভব করে তোলা যাবে।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

অসাধারণ বিশ্লেষণ! মজা করে পরলাম। অসংখ্য ধন্যবাদ।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

হেহ হেহ হেহ... স্কুল পালিয়ে ধরা পড়ার অনুভূতি! দেঁতো হাসি

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

কে ধরলো? চোখ টিপি

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

হেডমাস্টার, যথারীতি! কাজে লেগেছে। সিমেস্টারটা শেষ হোক, পুষিয়ে দেবো। আপাতত মাথার-ঘায়ে-কুত্তা-পাগল অবস্থা। অ্যাসাইনমেন্ট-সাগরে ডুবে যাচ্ছি।

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

ঠিকাছে। অপেক্ষায় থাকছি। হাসি

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

মাহবুব লীলেন এর ছবি

এতো দেখি মহা পরিশ্রমে দাঁড় করানো এক বিশাল পর্যালোচনা
অভিনন্দন

০২

কিন্তু জেলাস করা যায় না, হওয়া যায়।

এখানে জেলাসটাকে প্রচলিত বাংলা হিসেবে ব্যবহার করেছিলাম
তবে এখন আপনার কথায় মনে হচেছ খটকা থেকেই যাচেছ

আমি এ্যাডজাস্ট করে নেবো
ধরিয়ে দেবার জন্য ধন্যবাদ

০৩
যতি চিহ্ন ব্যবহার না করার পেছনে কিছু যুক্তি আছে আমার
সেগুলো আলাদা কোথাও শেয়ার করব সবার সাথে

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

অভিনন্দনের উত্তরে কী বলা যায়? ধন্যবাদ! হাসি

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

তারেক এর ছবি

হায় হায়!! আমি যে গল্পের আগেই সমালোচনা পড়ে ফেললাম ইয়ে, মানে...
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

কবীরা গুনাহ করেছেন! দেঁতো হাসি

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

দুর্দান্ত ।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

মাহবুব লীলেন লিখেছেন:

যতি চিহ্ন ব্যবহার না করার পেছনে কিছু যুক্তি আছে আমার
সেগুলো আলাদা কোথাও শেয়ার করব সবার সাথে

যতি চিহ্ন ব্যবহার না করার পেছনে আপনার যুক্তি পড়ার আগ্রহে রইলাম।

দেখি শালা যতি (নাকি শালী )এর হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায় নাকি ?

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

সুমন চৌধুরী এর ছবি

খাইছে! দেঁতো হাসি



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

কে? কারে? দেঁতো হাসি

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

সবজান্তা এর ছবি

লেখা আহবান করে যে পোস্টটা দেওয়া হয়েছিল, তাতে আমি বলেছিলাম যে আমার মাথায় একটা কল্প গল্প বা সায়েন্স ফিকশন টাইপ গল্পের প্লট আছে। চলবে এতে ? সম্পাদক বলেছিলেন, দৌড়াবে।

কতখানি দৌড়ালো জানি না, তবে এখানে এসে স্পষ্টই হোঁচট খেলাম। বাসায় এসে কম্পিউটার অন করে, সচলে ঢুকতেই দেখি দিয়াশলাই নিয়ে পোস্ট। গত কয়েকদিন ধরেই এই পোস্টের অপেক্ষাতেই ছিলাম। গল্প আমি জীবনে এই নিয়ে ২ কি ৩ টা লেখলাম। দুরুদুরু বুকে দ্রুত স্ক্রল করে নিচে নেমেই দেখি... ...

এই শ্রেণীভুক্ত সর্বশেষ দুটি রচনা আসলে কল্পগল্প। সবজান্তা নামের আড়ালের জ্যোতির্ময় বনিক লিখেছেন প্রাগৈতিহাসিক এবং লুৎফুল আরেফীনের গল্পের নাম আফসোস। দুঃখের সঙ্গে বলি, কল্পগল্পের ভোক্তা হওয়ার যোগ্যতা আমার অর্জন করা হয়নি বলে কোনো মন্তব্য করছি না। তবে দুটি গল্পই পড়েছি।

আমার মত পুঁচকে ছোড়ার জন্য ব্যাপারটা ভীষণ হতাশাজনক। নিজের লেখার ত্রুটিগুলি সম্পর্কে জানতে পারলে তাও জুবায়ের ভাইএর মত বিদগ্ধ পাঠক এবং লেখকের কাছ থেকে , তাতে অশেষ উপকার হয় বলেই আমার বিশ্বাস।

যাই হোক কি আর করা, সবই কপাল মন খারাপ

তবে লেখাটা দারুণ হয়েছে, জাঝা আপনাকে।
-----------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

সত্যিই দুঃখিত। কিন্তু সায়েন্স ফিকশন আমাকে কোনোদিনই টানেনি। ফলে এর ভালোমন্দ কিছুই জানিনা, বুঝি না। আকারে ছোটো বলে আপনার লেখাটা পড়ে ফেলেছি, পড়তে ভালো লেগেছে এটুকু নিশ্চয় করে বলতে পারি।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

ভালো লেগেছে অন্যদের লেখা নিয়ে করা আপনার বিশ্লেষণ। সত্যি বলতে এটার জন্য একপ্রকারের অপেক্ষা করেই ছিলাম।

আমার লেখাটা নিয়ে কিছু বললেন না। এটা ঠিক হলো? কল্প-গল্প তো লিখি নি হুজুর। ওটা পটভূমি মাত্র।

যাইহোক, পুরোটা লেখাই অতি সুঃস্বাদু এবং চমৎকার হয়েছে! (বিপ্লব)

___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

আপনার লেখা নিয়ে কিছু বলতে পারিনি সেটা আমার দুর্বলতা। সেখানে আপনার কোনো দায় নেই। এই ধরনের লেখার বিচার করার জন্যে আমি উপযুক্ত নই। আন্তরিকভাবে দুঃখিত।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

এই লেখাটা সচলায়তনে একটা ভিন্ন মাত্রা যোগ করলো। আন্তর্জালের সুযোগে যারা এই লেখালেখির পাটাতনে দূর-দূরান্ত থেকে সামিল হয়েছেন, খুট-খাট লিখছেন, তারা আরেকটু এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা ও সাহস পেলেন। অন্তত: আমার তা মনে হয়।

যারা ইতোমধ্যে প্রকাশিত লেখক তাদের কথা অবশ্যই আলাদা।

নবীন, তরুণ, বা অনিয়মিত লেখকদের পক্ষ থেকে তাই আমার অভিনন্দন রইলো। যদিও এই পরিশ্রম, প্রথমে সবগুলো লেখা পড়া ও পরে তা নিয়ে আলোচনা লেখা, ব্যস্ততার মধ্যে এই সময় দেয়া, সবকিছুর জবাব শুধু কৃতজ্ঞতা স্বীকারে শেষ হয় না।

আপনাকে বিপ্লব

জাঝা

-----------------------------------------------
Those who write clearly have readers, those who write obscurely have commentators.--Albert Camus

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

হিমু এর ছবি

অনুস্বাক্ষর দিলাম।


হাঁটুপানির জলদস্যু

নজমুল আলবাব এর ছবি

আমিও দিলাম স্বাক্ষর

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

যদি কারো কিছুমাত্র কাজে লাগে, তাহলে আনন্দিত হবো।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

কী? দেঁতো হাসি

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

ধুসর গোধূলি এর ছবি
পরিবর্তনশীল এর ছবি

কী অসাধারণ পর্যালোচনা।
জুবায়ের ভাইকে স্যালুট।

আর আমার গল্পটার সম্পর্কে যা বলেছেন তা পুরোপুরি আমার মনের কথা। ঐটা আসলেই গল্প হয় নি। ব্লগর ব্লগর হয়ে গিয়েছে।

পাঁচ তারকা... আর কোন কথা নাই।

---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

ভুল বোঝেননি দেখে ভালো লাগছে। অনেক ধন্যবাদ।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

ক্যামেলিয়া আলম এর ছবি

জিনিয়াস একটা সমালোচনা-------বস------
.....................................................................................
সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ'লে যেতে হয়
কী কাজ করেছি আর কী কথা ভেবেছি..........

.....................................................................................
সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ'লে যেতে হয়
কী কাজ করেছি আর কী কথা ভেবেছি..........

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

জিনিয়াস!!!! বাপ রে! এবার সত্যিই ভয় পেলাম।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

অতিথি লেখক এর ছবি

চুলচেরা বিশ্লেষন।
eru

-------------------------------------------------
সুগন্ধ বিলোতে আপত্তি নেই আমার
বস্তুত সুগন্ধ মাত্রই ছড়াতে ভালবাসে।

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

দম বন্ধ করে পড়লাম !
পিপাসা বাড়িয়ে দিলেন জুবায়ের ভাই।
কিন্তু কষ্টে আছি। বেশ কিছুদিন হলো কিছুই ডাউনলোড করতে পারছি না। ঝামেলা হচ্ছে।
কবে যে পড়তে পারবো...

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

কষ্টের উপশমের জন্যে কিছু করতে পারলে খুশি হতাম। আপাতত বন্ধ করা দমটা ছেড়ে প্রাণ ভরে শ্বাস নিন। পিপাসা নিবারণে এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানির চেয়ে ভালো কিছু নেই। হাসি

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

আরিফ জেবতিক এর ছবি

জুবায়ের ভাই জিন্দাবাদ ।
ভালো সমালোচক পেলে বই বানিয়েও সুখ , লিখেও সুখ ।

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

হায় হায়, জিন্দাবাদ। এরপরে তো মুর্দাবাদ শুনতে হবে অচিরেই। চিন্তিত

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

সম্পাদকমণ্ডলীতে আমি নেই, সুতরাং যতো খুশি ফাঁসি দাবি করে যান। আমি আপত্তি করবো না। তবে তার পাশাপাশি 'নিজে করি' প্রকল্পে সংশোধনের ব্যবস্থা নিলে ভালো হবে। চোখ টিপি

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

বিবাগিনী এর ছবি

বাহ! আমি বকা খাই নাই। ওম শান্তি দেঁতো হাসি

কিন্তু দুই ধরনের ছাত্ররা বকা খায়না।এক দল ভুল করেনি তাই বকা খায়না।আরেক দল আছে যারা ভুল ধরার যোগ্য না তাই বকা খায়না
আমি কোনটা কে জানে মন খারাপ

‌‌::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::

‌‌::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

আমি কি শুধু বকাই দিলাম? এতো যে ভালো ভালো কথা বললাম, আপনার সম্পর্কেও বলেছি, তা কারো চোখেই পড়লো না? চিন্তিত

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

মুজিব মেহদী এর ছবি

যেকোনো লেখক আপনার মতো সমালোচক পেলে খুশিই হবেন। আমিও খুশি হয়েছি। আপনার দীর্ঘ আলোচনায় আমার লেখা দুটো বিষয়ে যা কিছু ভালো বা মন্দ বলেছেন, তা নিয়ে আমার কোনোই কথা নেই। তবে আপনার 'বোঝা গেলো না' ও 'হয়তো'র প্রয়োগকে লক্ষ্য করে দুয়েকটা কথা বলছি।

অণুগল্পের নামটি মাইলখানেক দীর্ঘ কেন বোঝা গেলো না।

ছোট লেখার বড়ো শিরোনাম হতে পারবে না, এমন বোধকরি কোনো কথা নেই। বড়ো লেখকদেরও কারো কারো রচনায় এরকম দেখা যায় না, তাও নয়। কিন্তু বিষয় সেটা না। আমার এই সিরিজের রচনার দু'দুটো বই আছে-- শ্রেণিকরণ এমন এক সংকীর্ণতা যা সৃষ্টির মহিমাকে ম্লান করে দেয় (২০০৩) ও বৃষ্টিগাছের তলায় (২০০৬)। এ দুটো বইয়ে অন্তর্ভুক্ত সকল রচনারই শিরোনাম দীর্ঘ কিংবা সুদীর্ঘ। কেন? প্রথম বিবেচনা হলো, ব্যস্ত মানুষ যেন কেবল শিরোনামটি পড়লেও লেখার বিষয়বস্তু সম্পর্কে প্রায় পূর্ণ একটা ধারণা পান। দ্বিতীয় বিবেচনা হলো, অন্যদের থেকে খানিক আলাদা হওয়া।

গল্পে কমা ছাড়া অন্য কোনো যতিচিহ্নের ব্যবহার নেই। হয়তো পাঠককে চমকে দেওয়ার চেষ্টা।

ক.
বিরামচিহ্ন ব্যবহার না করার ব্যাপারটা আমার ক্ষেত্রে শুরু হয়েছিল একটা পরীক্ষা-নিরীক্ষার স্বার্থে লেখালেখির প্রায় শুরুর দিকেই (১৯৯৪-এ)। তখন টানাগদ্যে অনেক কবিতা লিখেছিলাম, কোনো ধরনের বিরামচিহ্ন ব্যবহার না করে। কেন? দেখতে চেয়েছিলাম যে, শব্দের বিশেষ ধরনের বিন্যাসে যে ঝোঁকটা ধরা পড়ে, তার সহযোগিতায় সচেতন পাঠক থামা না-থামার স্বাধীনতাটা কীভাবে উপভোগ করে। এ পরীক্ষার আনুষ্ঠানিক ফলাফল পেলাম একটা আবৃত্তি অনুষ্ঠানে। কোনো ধরনের বিরামচিহ্নহীন দুটো কবিতা অনার্সের এক ছাত্রী ১০০ ভাগ নির্ভুলভাবে আবৃত্তি করল। এমনকি যেখানে জিজ্ঞাসার ঝোঁক ছিল, সে তাও ঠিকঠাক করে উচ্চারণ করল। এ ঘটনা আমাকে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার আনন্দ দিয়েছিল।

খ.
এখন আকাশে একটুও মেঘ নেই বৃষ্টিসম্ভবা পাখিরা উড়ছে

এই বাক্যটা আমার একটা কবিতার। লক্ষ করুন, যদি এই বাক্যের 'নেই' শব্দের পরে একটা যতি ভাবা হয়, তাহলে বাক্যটার অর্থ একরকম ; আবার যতিটা যদি হয় 'বৃষ্টিসম্ভবা' শব্দের পরে, তাহলে অর্থটা হয় অনেকটাই অন্যরকম, অন্তত শিল্পের প্রশ্নে। এখন পাঠককে যদি শিল্পবস্তু আস্বাদনের তাঁর নিজস্ব ভঙ্গিটা ব্যবহার করে কবিতা পড়বার সুযোগটা উন্মুক্ত করে দেয়া হয় তো মন্দ কী! কোনোই মন্দ নেই। তবু, শেষপর্যন্ত ওইস্থানে আমি দাঁড়িয়ে থাকতে পারি নি বৃহত্তর পাঠকের কথা ভেবে। সবাই তো আর অনার্সের ছাত্রী নন। তাই পরে কমাটা (,)আপোস করেছি।

গ.
কেবল কমা (,) ব্যবহার করে লেখা যে দুটো রচনা 'দিয়াশলাই'য়ে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, সে দুটো কি পাঠকের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে কোনোভাবে ব্যর্থ হয়েছে? যদি তা নাই হয়, তাহলে এই পরিমিতি কেন সমালোচকের স্বীকৃতি অর্জন করবে না?

এটাকে যদি এরপরও আপনি চমকে দেওয়ার চেষ্টাই বলেন, তো আমার আর কিছু বলার নেই।

................................................................
আমার সমস্ত কৃতকর্মের জন্য দায়ী আমি বটে
তবে সহযোগিতায় ছিল মেঘ : আলতাফ হোসেন

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

আমার অকিঞ্চিৎকর আলোচনায় আপনার লেখা দুটি সম্পর্কে আমার মন্তব্যের প্রেক্ষিতে দীর্ঘ ব্যাখ্যা দিয়েছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।

আপনি লিখেছেন

ছোট লেখার বড়ো শিরোনাম হতে পারবে না, এমন বোধকরি কোনো কথা নেই। বড়ো লেখকদেরও কারো কারো রচনায় এরকম দেখা যায় না, তাও নয়।

উদ্ধৃতাংশের প্রথম বাক্যটা না হয় মানলাম। যদিও বারো হাত কাঁকুড়ের তেরো হাত বিচির কথা মনে আসছে। আমার আলোচনায় আমি শুধু দিয়াশলাই-এ অন্তর্ভুক্ত লেখাগুলির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলাম, বড়ো লেখকদের প্রসঙ্গ এখানে কেন এলো বুঝতে পারছি না। কিন্তু সে বিষয়ে সম্পূর্ণ উল্টো উদাহরণও কি কম আছে? আপনার দুটি বইও এখানে প্রাসঙ্গিক বলে মানি কী করে?

দীর্ঘ শিরোনামের ব্যাপারে আপনার ব্যাখ্যা:

প্রথম বিবেচনা হলো, ব্যস্ত মানুষ যেন কেবল শিরোনামটি পড়লেও লেখার বিষয়বস্তু সম্পর্কে প্রায় পূর্ণ একটা ধারণা পান। দ্বিতীয় বিবেচনা হলো, অন্যদের থেকে খানিক আলাদা হওয়া।

আপনার প্রথম বিবেচনা যদি মানি তাহলে শুধু শিরোনামেই দিব্যি কাজ চলে যায়, বাকিটা কি আমরা পাঠককে পড়তে দিতে চাই না? তাহলে বাকিটা না লিখলেই বা কি? আজকাল বাংলাদেশের খবরের কাগজগুলিতে এই হাস্যকর জিনিসটা প্রায়ই দেখি – শিরোনাম এতো দীর্ঘ করে দেওয়া হয় যে খবরটা পড়ার দরকার মনে হয় না, আগ্রহও হয় না। অথচ আমার মনে হয় (হয়তো আমি পুরনো মানুষ এবং সেই কারণে প্রাচীনপন্থী), শিরোনামে কিছু উহ্য রেখে, সাসপেন্স রেখে পাঠকের আগ্রহ জাগিয়ে তুলে লেখাটা পড়তে বাধ্য করাটাই বেশি কার্যকর। চ্যালেঞ্জিং-ও বটে।

দ্বিতীয় ব্যাখ্যা সম্পর্কে বলি, লেখার নিজস্ব শক্তি, যদি তা থাকে, নিজেই নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদা করে নিতে পারবে। আলাদা গিমিক-চমকের বা সযতনে আলাদা সাজে সাজার দরকারই হয় না।

আর যতিচিহ্ন নিয়ে আপনার নিজস্ব যুক্তি যেমন থাকতে পারে, আমার নিজের মতো করে তা অনুভব করারও অধিকার থাকে। আমি সেই অনুভবটাই লিখেছি। আপনি উদাহরণ সহযোগে জানিয়েছেন যে আপনার নিরীক্ষা খুব সফল হয়নি বলে নিজেই সরে এসেছেন। না, কমা ছাড়া অন্য কোনো যতিচিহ্ন ব্যবহার না করায় লেখা বুঝতে সমস্যা হয়নি, চোখে লেগেছিলো বলেই উল্লেখ করেছি। ‘অন্যদের থেকে আলাদা’ হওয়ার যে চেষ্টার কথা নিজেই বলেছেন, আমি খুব আলাদা কিছু বললাম কি?

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

আরেকটা কথা উল্লেখ করা আবশ্যক বিবেচনা করি। আপনি যতিচিহ্ন বিষয়ে নিরীক্ষার যে উদাহরণ টেনেছেন, তা কবিতার প্রসঙ্গে। একটা কথা হয়তো মানবেন যে কবিতায় ও গদ্যে এই ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা এক নিক্তিতে মাপা যায় না। কবিতায় এমনিতেই অনেক বেশি স্বাধীনতা নেওয়ার জায়গা আছে, সুযোগও। গদ্যে সেই সুযোগ অনেক সীমিত।যেমন, কবিতায় কোনো বাক্য সম্পূর্ণ করার বাধ্যবাধকতা নেই, গদ্যে তা অতি আবশ্যক ও বাধ্যতামূলক। আমার সীমিত বিদ্যাবুদ্ধিতে এরকমই বুঝি।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

সমালোচনা বইয়ের চেয়েও দীর্ঘ মনে হলো। দেঁতো হাসি
বেশ ভালো লাগল এরকম যত্ন নিয়ে করা সমালোচনা দেখে।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

বারো হাত কাঁকুড়ের তেরো হাত বিচি! দেঁতো হাসি

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

সুজন চৌধুরী এর ছবি
মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

আমিও না! চোখ টিপি

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

ফকির ইলিয়াস এর ছবি

আমার লেখা এর আগেও অনেকে বুঝেন নি।
এর সাথে নতুন করে যুক্ত হলেন মুহম্মদ জুবায়ের।
কবি মুজিব মেহদী অনেক দীর্ঘ বলেছেন।
আমি পারলাম না। দু:খপ্রকাশ ছাড়া কোনো গতি
আপাতত: নেই আমার।

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

আমি জানি, পাঠককে লেখা বোঝানোর দায় লেখকের নয়। সুতরাং আমি যদি না বুঝতে পারি তা আমার অপারগতা। আমি অকপটে সেই কথাটাই প্রকাশ করেছি যেহেতু ভার্চুয়াল এক সমতল পাটাতনে আমাদের একটা যোগসূত্র আছে। সেই যোগসূত্রের সুবাদে আপনি নিজের কথাগুলি জানালে হয়তো এই না-বোঝা বা ভুল বোঝাবুঝি সরিয়ে ফেলা সম্ভব। আমি শুনতে আগ্রহী। বলবেন কি?

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

অতিথি লেখক এর ছবি

বাবার অসুখের সুত্রে দেশে ছিলাম কয়েকদিন । সচলায়তন এ আসা ও হয়নি । ফিরে এসে , একটু থিতু হয়ে যখন ঢুঁ মারতে গেছি , দেখি দেয়াশলাই জ্বলে আছে ! সেই সঙে এই জরুরী আলোচনাটা ও । ধন্যবাদ মুহম্মদ জুবায়ের । স্বীকার করে নেই , আলোচানা পড়ে তবেই মুল লেখাগুলো পড়েছি , প্রভাবিত হলে ও হতে পারি , অবচেতনে ; কিন্তু সত্যি হলো এই , আলোচকের সঙেই মিলে যাচ্ছে আমার পাঠোত্তর অনুভুতি ।
বাড়তি একটা কথা , শুরু থেকেই লক্ষ্য করেছি , সচলায়তনে বাহবা পাওয়া লেখাগুলোর সিংহভাগ-ই উত্তমপুরুষে লেখা । তাতে দোষের কিছু নেই । দেয়াশলাই' র লেখাগুলো পড়তে পড়তে কেন জানি , অমিয়ভূষণ মজুমদারের সেই উক্তিটার ( উত্তমপুরুষে লেখাগুলো , বিশেষত: গল্প , লেখকের শক্তিহীনতাকেই প্রমাণ করে । আমদের সাহিত্যে উত্ কৃষ্ট গল্পগুলোর প্রায় কোনটিই উত্তমপুরুষে লেখা নয় , এমন কি রবীন্দ্রনাথের পোস্টমাস্টার ও তাঁর অন্যান্য গল্প থেকে দুর্বল । প্রতীতি , ঊনবিংশতম সংখ্যা , সম্পাদক অনিলতরু সেন , জামশেদপুর )কার্যকারীতার প্রমাণ মিলে যায় ।
অস্থিত্বের অন্ধকার এর মতো দু'একটা লেখা যে
উত্ রিয়েছে , তার অন্যতম কারণ মনে হয় , লেখক বেশী আমি আমরা / আমার / আমাদের করেন নি । হাসান আজিজুল হক ও
তাঁর ' সাহিত্যের বাস্তব ' প্রবন্ধে ও এমন কথাই লিখেছিলেন , কেবল আমি আমি করে লেখা গল্প-উপন্যাস সাহিত্যের সরিয়াস পাঠকের মনোযোগ হারাতে বাধ্য ।
ভালো লেখার আকালে মুহম্মদ জুবায়েরে এই আলোচনা আমাদের সকল কে কিঞ্চিত হলে ও পথ দেখাবে । ধন্যবাদ তাকে

অরিত্র আন্দালিব , স্যুইডেন

হিমু এর ছবি

সতীনাথ ভাদুড়ির "জাগরী"র কথা মনে পড়ে গেলো। অমিয়ভূষণ, হাসান আজিজুল হক কিংবা আপনি, বোধহয় তাঁকে "শক্তিহীন" লেখকের দলে ফেলে দেবেন না। আরো উদাহরণ মনে পড়ছে শীর্ষেন্দুর "আশ্চর্য ভ্রমণ" আর গার্সিয়া মার্কেজের "অটাম অব দ্য প্যাট্রিয়ার্ক"।

উত্তমপুরুষে লেখা গল্প নাম পুরুষে লেখা গল্পের চেয়ে দুর্বল বা ঊনতর হবে, এমন বক্তব্যের সপক্ষে আপনার কাছ থেকে একটি সরস পোস্টের প্রতীক্ষায় আছি। বিষয়টি নিয়ে আগে খুব বেশি ভাবিনি। অমিয়ভূষণ বা হাসান আজিজুল হক তাঁদের বক্তব্য দিয়ে ফেলেছেন, সেটিকে নিকষে ফেলার দায় তো আমাদেরই। তা না হলে শ্লোকোচ্চারণের মতোই নিরর্থক হয়ে দাঁড়ায় ব্যাপারটা।

আমার একটি ছোট্ট প্রশ্ন, একটি গল্প থেকে যাবতীয় আমির পরিবর্তে কোন রহিম/করিম/সেলিমের নাম বসিয়ে দিলে কি তাহলে সেটি লেখকের শক্তিমত্তার পরিচয় বহন করবে, অন্যথায় নয়?


হাঁটুপানির জলদস্যু

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার একটি ছোট্ট প্রশ্ন, একটি গল্প থেকে যাবতীয় আমির পরিবর্তে কোন রহিম/করিম/সেলিমের নাম বসিয়ে দিলে কি তাহলে সেটি লেখকের শক্তিমত্তার পরিচয় বহন করবে, অন্যথায় নয়?

না জনাব হিমু সাহেব , তা নয় । কিন্তু রহিম/করিম / সেলিমের গল্প বলতে গেলে কব্জির জোর একটু বেশীই লাগে । নিজের ক্যামেরা দিয়ে তোলা ছবিতে দৃশ্য ধারণ যতো সহজ , পরের ক্যামেরা দিয়ে সেই একই দৃশ্যের নির্মাণই একটু বেশী কষ্টকর । ( এই উদাহরণ ও হাসান আজিজুল হকের । দ্রষ্টব্য : সাহিত্যের বাস্তব )

তুলনামুলক সাহিত্যে যাদের বিচরণ , তারা ভালো বলতে পারবেন , আমি নগণ্য পাঠক , তবু বলি , জাগরী র কথা বললেন , ঢোড়াঁই চরিত মানস ? কিংবা অটাম অফ দ্যা প্যাট্রিয়াক
র কথা ( বইটি পড়িনি ) তাহলে হানড্রেড ইয়ারস অব সল্যিচিয়ুট ?

আমার বলবার কথা ছিলো এই , উত্তম পুরুষে লেখা , লেখকের জন্য সহজতরো ফর্ম , দুর্বলতম নয় ।
বুঝাতে না পারার অক্ষমতা আমার ।

অরিত্র

হিমু এর ছবি

ঢোঁড়াই চরিত মানস বা হানড্রেড ইয়ারস অব সলিচ্যুডের কাহিনীর বুনোট দেখুন। উত্তম পুরুষের স্থান কোথায় সেখানে? ঢোঁড়াই চরিত মানসে ঢোঁড়াইয়ের শৈশব থেকে উত্তরযৌবনের বর্ণনা, সেখানে উত্তম পুরুষ কিভাবে আসে? হানড্রেড ইয়ারস অব সলিচ্যুডে আউরেলিয়ানো বুয়েন্দিয়াসের বাপ থেকে শুরু করে নাতি নাতনি পর্যন্ত গড়িয়েছে, কোথায়, কোন জায়গাটায় গিয়ে দাঁড়াবে উত্তম পুরুষ?

আপনার কি মনে হয় না, গল্পের একটা নিজস্ব দাবি বা প্রয়োজন আছে পুরুষ নির্বাচনের? ধরা যাক জাগরীর কথা, সেখানে যদি নাম পুরুষে বর্ণনা থাকতো, আমরা কি শুধু সেই নাম পুরুষের গুণেই বহুগুণিত শক্তিশালী কোন উপন্যাস পেয়ে যেতাম?

হাসান আজিজুল হকের যে উদাহরণ আপনি দিলেন, সেটি দুর্বল। লেখক উত্তমপুরুষে লিখতে পারেন গল্পের প্রয়োজনেই, কব্জির জোরের অভাবে না, কল্পনাশক্তির অভাবেও না। ঢোঁড়াই চরিত মানসের কাহিনী বুনোটে চাইলেও একটা উত্তম পুরুষ ঢোকানো যায় না, কোন তাৎমা বা ধাঙড়ের মুখে মানায় না ঢোঁড়াইয়ের জীবনকথন, কিন্তু জাগরীতে একজন বিপ্লবীর আত্মকথন মানায়। এই মানিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটাকে পাশ কাটিয়ে গেলে তো চলবে না।

আশ্চর্য ভ্রমণ (জানি না পড়েছেন কি না) এর কাহিনী বরং উত্তম পুরুষ বা নাম পুরুষ, দু'টির মধ্যে যে কোন একটিকে বেছে নেয়ার সুযোগ দেয়। আপনি একই গল্প উত্তম পুরুষকে সরিয়ে নাম পুরুষ বসিয়ে পড়ুন, কী হেরফের হয়?

আপনার কাছে যদি মনে হয় উত্তম পুরুষে লেখা সহজ, আমি বলবো আপনার কাছে হয়তো সহজ। উত্তম পুরুষে গল্প লিখলে নিজের অভিব্যক্তির বর্ণনা দেয়া যায় না। নাম পুরুষে লিখলে সেটা করা যায়। এটি অনেক সীমাবদ্ধতার একটি। এই সীমাবদ্ধতা নিয়ে অনেকে উত্তম পুরুষে লেখেন। সেটা কিভাবে সহজ হয় আমি জানি না।

উত্তম পুরুষে অনেক বালছাল উপন্যাস রচিত হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে, কিন্তু যাবতীয় উত্তমপুরুষে রচিত উপন্যাসই অমিয়ভূষণ আর হাসান আজিজুল হকের বেদবাক্যের কবলে পড়ে লেখকের কব্জির দৌর্বল্য প্রকাশ করে যাবে, এ কথা মেনে নিতে আমার বাধছে। গল্পের কাঠামো বিচার না করেই নাম পুরুষকে সেরা বলে রায় দেয়ার কোন অর্থ আমি খুঁজে পাচ্ছি না, অমিয়ভূষণ আর হাসান আজিজুল হক যা-ই বলে থাকুন না কেন।


হাঁটুপানির জলদস্যু

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

আমি সাহিত্যের ছাত্র না, তাই বলতে পারছিনা সবসময়েই উত্তম পুরুষের ব্যবহার লেখাকে দূর্বল করে কিনা ,,,
তবে নিজে এখন পর্যন্ত যে পাণনচদশটা অখাদ্য লেখার চেষ্টা করেছি, সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি যে উত্তম পুরুষে লেখাটা সহজ হয় ,,, আবেগটাও সহজে ধরা যায় ,,, আবার এও বলতে পারি যে পড়ে মজা পেয়েছি এমন বেশীরভাগ উপন্যাসই উত্তম পুরুষে লেখা ,,,জানিনা এখানে পাঠকের মনস্তাত্বিক ব্যাপারটা আছে কিনা ,,,উত্তম পুরুষে লেখা পড়তে গিয়ে সহজেই নিজেকে ইনভল্ভড করে ফেলে কিনা চরিত্রের সাথে সেটা একটা ব্যাপার ,,, এক্ষত্রে লৈঙ্গিক ব্যাপারটাও আছে ,,,, বয়েসের ব্যাপারটাও থাকতে পারে ,,, খুব পছন্দের দুটো উপন্যাসের উদাহরণ দিয়ে বলি, দ্য আলকেমিস্টের মেষপালকের সাথে যত সহজে বিচরণ করতে পেরেছি, টু কিল আ মকিংবার্ডের পিচ্চি মেয়েটার সাথে তত সহজে বিচরণ করতে পারিনি

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

রণদীপম বসু এর ছবি

আপনাদের মননশীল আলোচনায় সত্যি আমি আগুন্তুক। তবু মন্তব্য করার ইচ্ছাটা সংবরণ করতে পারলাম না।
আসলে গল্প নিজেই নির্ধারণ করে ওটা উত্তম পুরুষে হবে, না কি নাম পুরুষে হবে। তবে উত্তম পুরুষের ক্ষেত্রে আবেগটাকে সহজেই ধরা যায় বলেই হয়তো ধার কমে বাহুল্যটা চলে আসে। এক্ষেত্রে ইঙ্গিত ব্যবহারও সীমাবদ্ধ হয়ে যায়। অন্যদিকে নাম পুরুষে লিখতে গেলে আবেগের বাহুল্য সহজে আক্রান্ত করতে পারে না। এবং ইঙ্গিতময়তার ব্যবহার করে পাঠককে অনেক বেশি স্বাধীন কল্পনার মধ্যে ঠেলে দেয়া যায়, অনেকটা কবিতার মতো।

সে যাক্, যাবতীয় মন্তব্যসহ গোটা পোস্টটাই অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও সমৃদ্ধ। প্রিয়তে রাখার মতো। সংশ্লিষ্ট সবাই আন্তরিক অভিনন্দন।

যদিও মূল লেখা না পড়ায় অন্যর মুখে ঝাল খাওয়া হলো, আনন্দে একটুও কমতি হয় নি।
ধন্যবাদ সবাইকে।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্যে। সংকলনটি সচলায়তনের নীড়পাতা থেকেই পেতে পারেন। তাহলে আর পরের মুখে ঝাল খেতে হবে না।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

হাসান মোরশেদ এর ছবি


আমার বলবার কথা ছিলো এই , উত্তম পুরুষে লেখা , লেখকের জন্য সহজতরো ফর্ম , দুর্বলতম নয় ।

যাক,কিছুটা ভরসা পাওয়া গেলো । আগের কথায় তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম- আমার যে তাহলে আর কোন আশাই থাকেনা । আমি যে গল্পের ছলে খালি নিজের কথাই বলি ।

আমার আশা না থাকলে ও তেমন কোন ক্ষতিবৃদ্ধি হয়না কিন্তু তাহলে যে আলবেয়ার কামু বাতিল হয়ে যায়,বাতিল হয়ে যায় তার আউটসাইডার?

কামু আর তার আউটসাইডার যদি দুর্বল সাহিত্য হয় তাহলে আমি সাহিত্য থেকে দূরে সরে যেতে চাই ।

(অরিত্রঃ বাবা কেমন আছেন এখন?)

xxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxx
...অথবা সময় ছিলো;আমারই অস্তিত্ব ছিলোনা

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রিয় হাসান মোরশেদ ,
বাবা এখন কিছুটা সুস্থ । তবে শরীরের এক অংশকে প্যারালাইজ্ড হওয়া থেকে রক্ষা করা গেলো না মনে হয় । আপনার সহানুভুতির জন্য অসীম কৃতঞতা ।
অরিত্র

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

অরিত্র বনাম হিমু ভালই চলছে। যেহেতু জুবায়ের ভাই এর উছিলায় আমরা এই প্রানবন্ত আলোচনা পেলাম তাই জুবায়ের ভাইকে আরেকবার ধন্যবাদ।

যতির ব্যপারে মুজিব মেহেদির ব্যাখ্যা পেলাম । এবার মাহবুব লীলেনের পালা ।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

ধন্যবাদ জুবায়ের ভাই ,,, আপনার এই নিঃসংকোচ সমালোচনাটা সচলায়তনের মন্তব্যের ইতিহাসে নতুন মাত্রা যোগ করবে, এই আশা করি ,,,, শোহেইল ভাই অবশ্য বরাবরই এরকম রিভিউ চাচ্ছিলেন পাঠকদের কাছে থেকে ,,, একজন যখন আমার একটি লেখা মনোযোগ দিয়ে পড়ে, লেখালেখির বিনিমময়ে তার চেয়ে ভালো কি প্রতিদান আশা করা যাতে পারে?

আমার নিজের গল্পটা নিয়ে এইচান্সে একটু গ্যাঁজাই ,,, আপনি পুরোপুরি ঠিক ধরেছেন দেখে মজাটা বেশী পেয়েছি ,,,, আমি লেখাটা পাঠানোর সময়ই শিমুলকে লিখেছিলাম যে এটা কোনভাবেই অণুগল্প হয়নি; সাধারণ গল্পই, অনেক পিটিয়ে-ফাটিয়ে ছোটখাট করে পাঠাচ্ছি চোখ টিপি
মজার ব্যাপার হলো, "টান" গল্পের শেষ লাইনের পরে আরেকটা লাইন ছিল, সেটা হলো, "শান্তিনগরের নতুন বাসার দরজায় কোন কড়া নেই, শুধু কলিংবেল।" পরে ভাবলাম, লাইনটাকে রেখে দিলে খুব বেশী ডিসাইসিভ হয়ে যায়, উঠিয়ে দিই। তাহলে আমার যেমন মনে হবে আরেকটু লিখতে চেয়েছিলাম, পাঠকেরও মনে হতে পারে আরেকটু পড়তে চেয়েছিলাম। অধমের এই ম্যানিপুলেশনটার ইফেক্ট আপনি ধরে ফেলেছেন। বাকীটা আমি স্বীকার করে নিলাম।

আরেকটু শেয়ার করছি,
অণুগল্প জিনিসটা যে কি সেটা সম্পর্কে আমার ধারনা ছোটবেলায় লিটলম্যাগে পরা একটি গল্পতেই সীমিত ,,, গল্পটা এমন -- এক লোক রামদা হাতে ছুটে চলেছে মন্দিরের দিকে, কারণ সে শুনেছে ইশ্বর মন্দিরে নেমে এসেছেন; এখনই মোক্ষম সুযোগ ইশ্বরকে খুন করার। মন্দিরে গিয়ে লোকটি দেখতে পেল ঈশ্বর বেদীর উপরে বসে কাছিম খাচ্ছে। লোকটাকে দেখে একটুকরো কাছিমের মাংস বাড়িয়ে দিয়ে ঈশ্বর বলল, "নে, খা!"
বড়জোর তিনশ শব্দের (আকৃতিটা মনে নেই) গল্পের পরিবেশনা এতই ভালো ছিলো যে বিশ বছর আগে পড়া আমার মনে থাকা খুব কম জিনিসের একটা হলো সেই গল্পটা

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

অরিত্র, হিমু, হাসান মোরশেদ ও জ্বিনের বাদশা-র মন্তব্য/প্রতিমন্তব্য বিষয়ে আমার দুই পয়সা:

অমিয়ভূষণ মজুমদার ও হাসান আজিজুল হক বড়ো লেখক এবং তাঁদের মতামত ও বিশ্বাসের জায়গা থেকে তাঁরা উত্তম পুরুষে লেখার বিষয়ে অনাস্থা জানিয়েছেন। তা তাঁরা জানাতেই পারেন। তবে সেগুলি যেহেতু ঐশী বাণীর মতো প্রশ্নাতীত নয়, মানা না-মানার ব্যাপারেও বাধ্যবাধকতা থাকার কথা নয়। সুতরাং প্রশ্ন আছে, প্রশ্ন উঠবেই। আসলে এই বিষয়ে শেষ কথা আজও হয়নি। হবে তেমন আশাও নেই।

আমার বুদ্ধি-বিবেচনায় বুঝি, একজন লেখক কাহিনী ও চরিত্র বিকাশের প্রয়োজনে, বক্তব্য বা দর্শন পাঠকের ভেতরে সঞ্চারিত করার জন্যে, এমনকি পরিবেশ-প্রতিবেশের বিবেচনায় নির্ধারণ করেন লেখাটি উত্তম পুরুষে হলে সঠিক হয় কি না, অথবা তৃতীয় পুরুষে। ‘জাগরী’ বা ‘আশ্চর্য ভ্রমণ’ বিষয়ে হিমুর সঙ্গে একমত হয়ে বলি, এই লেখাগুলি প্রথম পুরুষে লেখা অনিবার্য ছিলো। ‘পদ্মানদীর মাঝি’ উত্তম পুরুষে কি লেখা যেতো? অরিত্র অমিয়ভূষণকে উদ্ধৃত করেছেন যেখানে রবীন্দ্রনাথের ‘পোস্টমাস্টার’কে অপেক্ষাকৃত দুর্বল লেখা বলা হয়েছে। মন সায় দেয় না, তবু না হয় মানলাম।
‘কাবুলিওয়ালা’ সম্পর্কে কী বলা হবে? আসলে উত্তম পুরুষে লিখলেই যে লেখা পাতে তোলা যাবে না, এই ধরনের অনড় মতের বিষয়ে শ্রদ্ধা রাখা কঠিন।

উত্তম পুরুষে লেখা সম্পর্কে আমার কিছু অভিজ্ঞতার কথা বলি। বছর তিন-চারেক আগে এক তরুণ লেখকের একটি গল্প পড়ে খুব ভালো লাগলো। আমি খুঁজেপেতে তার ইমেল ঠিকানা সংগ্রহ করে আমার মতামত জানিয়ে তার আরো কিছু গল্প থাকলে পাঠানোর অনুরোধ করি। ফিরতি ইমেলে গোটাদশেক গল্প এলো। চার কি পাঁচ নম্বরে গিয়ে আমার মাথা ধরে গেলো। কারণ, প্রতিটি গল্পই উত্তম পুরুষে লেখা এবং ভাষাভঙ্গি, শব্দচয়ন, এমনকি গল্পের পরিবেশও প্রায় একই রকম। তবে আলাদাভাবে প্রতিটি গল্পই উতরে যায় ভালোভাবে। কিন্তু পরপর ঐ আমি-আমি মার্কা গল্প ক্লান্তিকর। অরিত্র হয়তো এরকমই একটা পরিস্থিতির কথা বলতে চেয়েছেন।

সচলায়তনে ‘চুপকথা’ নামে আমার একটি খসড়া উপন্যাস তোলা আছে। এই লেখার প্রথম বাক্যটি ছিলো, ‘বাংলাদেশে, আমার দেশে, এখন আরেকটি ভোরের আলো ফুটছে’। শুধু ওই ‘আমার দেশে’ কথাটির কারণে লেখাটি আমি উত্তম পুরুষে লিখতে বাধ্য হই। কারণ এখানে ‘তার দেশে’ বা ‘অমুকের দেশে’ লিখলে কেমন অচেনা ও দূরবর্তী মনে হয়। তা আমি মানতে পারছিলাম না।

যৎকিঞ্চিৎ লেখালেখির সুবাদে আমিও এই বিষয়ে একমত যে, উত্তম পুরুষে চরিত্রের ভেতরে ঢুকে পড়া ও চরিত্রটিকে ফুটিয়ে তোলা অনেক সহজ হয়। আরোপিত মনে হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় থাকেই না। তৃতীয় পুরুষে লিখলে সেই চ্যালেঞ্জ সার্বক্ষণিক।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

এই বিষয়ে একটি সংযোজন:

হাসান আজিজুল হকের এ পর্যন্ত একমাত্র প্রকাশিত উপন্যাসের নাম 'আগুনপাখি'। প্রথম আলো-র ঈদসংখ্যায় বেরিয়েছিলো ২০০৫-এ 'অপরূপকথা' নামে। এই উপন্যাসের জন্যে সম্প্রতি তিনি কলকাতার 'আনন্দ পুরস্কার' পেলেন। পুরস্কার আসল কথা নয়, আমার বিবেচনায় এই উপন্যাসটি একটি বড়ো মাপের কাজ মনে হয়েছে।

মজার কথা হলো, যে হাসান আজিজুল হক উত্তম পুরুষে লেখার বিপক্ষে, তিনি এই উপন্যাসটি লিখেছেন একটি গ্রামীণ মেয়ের জবানিতে। এই বিষয়ে কথোপকথন চলাকালে আমার মনেই পড়েনি। আজই আচমকা প্রথম আলো-র ঈদসংখ্যাটি ওল্টাতে গিয়ে চোখে পড়লো।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

নজমুল আলবাব এর ছবি

বিশাল ব্যাপার। তবে লাইনেই আছে বাবা... এই লাইনটা হবে বলেই সচলের জন্ম হয়েছে। বছর ঘুরার আগে সচল তার উদ্দিষ্ট চরিত্র ধারণ করে ফেলেছে বলা না গেলেও অনেকটাই এগিয়েছে এ কথা বলা যায়।

মূদ্রণ মাধ্যমে প্রায় তিন'শ পাতার একটি সংকলন, একটি গল্প সংকলন (ইবুক) এবং স্মৃতিচারণমূলক সংকলন (ইবুক) ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে। আরও কয়েকটি ইবুক তৈরি হচ্ছে। রাইটার্স ফোরাম সাবটাইটেল লাগানো একটি ওয়েব সাইটের জন্য এটিই মূল রাস্তা বলে আমি মনে করি।

ইন্টারএকশন মানেই আজাইরা ঝগড়া কিংবা পিঠ চাপড়ানি নয় এই সত্যটাও প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে সচলে। আর এই চরিত্র তৈরিতে জুবায়ের ভাই আছেন সামনের কাতারে। যার প্রমাণ এই আজকের লেখাটা।

আমি অনুগল্পের লেখক হয়ে গেলাম নিজের অজান্তেই। আগে আরও কয়েকবার বলেছি, কোনরকম ভাবনা কিংবা তৈরি করা ধারনা নিয়ে আমি কিছু লিখিনা। তবে একটা সময় অনেক কিছুই ছিল ভাবনায়। সে সেই আদ্দিকালের কথা...
গল্প লিখতেও বসিনা। শুধুই লিখতে বসি, লেখ আগায়, সেটা যেখানে থামে সেখানেই আমি থামি। থামার পর যেটায় দেখি গদ্যভাব আছে সেটারে গল্প বলি, যেটায় পদ্যভাব পাই সেইটারে কবিতা বলে চালায়া দেয়ার একটা গা জোরাজুরি চেস্টা চালাই...

আমার ভান্ডারে যত শব্দ আছে তার প্রায় সবি আমি মুখে বলে শেষ করে ফেলি। আমি আবার বাচাল কীনা। তাই যখন লিখতে বসি তখন দ্রুতই আমার শব্দ সংকট দেখা দেয়। তাই মহা উপন্যাস হওয়ার কথা যে কাহিনীর সেই কাহিনী অনু গল্প হয়েই জন্ম নেয়। বেঁচে থাকার চেষ্টা করে, সংগ্রাম করে পাঠকের মনে উঠার জন্য আর আমাকে অভিশাপ দেয়, তাদেরকে উপন্যাসের এলিট শ্রেনীতে নিয়ে যাইনি বলে উত্তম সিং এর মতো আমার গোষ্টি উদ্ধার করে।

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

ধুসর গোধূলি এর ছবি
মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

গল্প লিখতেও বসিনা। শুধুই লিখতে বসি, লেখ আগায়, সেটা যেখানে থামে সেখানেই আমি থামি। থামার পর যেটায় দেখি গদ্যভাব আছে সেটারে গল্প বলি, যেটায় পদ্যভাব পাই সেইটারে কবিতা বলে চালায়া দেয়ার একটা গা জোরাজুরি চেস্টা চালাই...

আহা, আমি যদি এরকম বলতে পারতাম!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

রানা মেহের এর ছবি

বিশাল দেরী।
প্রথম পাঁচ দেয়া কোন লেখায়।
অনেক অনেক ভালো লাগা থাকলো
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

দেরি মোটেও হয়নি। কারণ, আমি এখনো কিছু মতামত/মন্তব্য আশা করছি। হয়তো সেগুলি পাওয়া যাবে, হয়তো যাবে না। ধন্যবাদ আপনাকে আমাকে আপনার হাতের প্রথম পাঁচ বানানোর জন্যে। হাসি

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

অতিথি লেখক এর ছবি

শ্রদ্বেয় হিমু এবং অন্যানজন

এই সব কিছু নিয়ে একটা পুর্ণাঙ পোস্ট লেখার ইচ্ছা রাখি ।
অরিত্র

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

অরিত্র, আপনার পোস্টের জন্যে অপেক্ষা করবো। তাড়া নেই, আপনার বাবার শারীরিক অবস্থা ভালো হলে তখন লিখবেন।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

ধুসর গোধূলি এর ছবি

ফাজলামো রেখে এবার সিরিয়াসলী বলি জুবায়ের ভাইকে। আপনার পর্যবেক্ষণ ক্ষমতায় আরেকবার মুগ্ধ হই আপনার প্রতি। এটা আবারও প্রমাণ হয় অনুজরা খুব সহজে অগ্রজদের দৃষ্টি ফাঁকি দিতে পারে না।

মেহেদি রাঙা হাত- এর পটভূমি যখন মাথায় প্রথম আসে তখন মনে হয়েছিলো এক প্যারাতেই বুঝি নামিয়ে ফেলা সম্ভব হবে। কিন্তু লিখতে গিয়ে টের পাওয়া গেলো কাজটা আসলে কতোটা কঠিন। বিশেষতঃ আমার মতো আনাড়ির চোখে যখন কেবল ছোট ছোট ব্যাপারগুলোই বেশি প্রাধাণ্য পায়। দৈর্ঘ্যে বড় হয়ে যাচ্ছিলো দেখে হঠাৎই হ্যান্ডসব্রেক কষে ফেলতে হয়। এখানে অবশ্য ধৈর্য্য আর চঞ্চলতাও সমভাবে দায়ী। আলস্যে সেই দৈর্ঘ্যকেই কোনোরকমে কেটেকুটে পাঠিয়ে দিয়েছি সম্পাদকের টেবিলে। গল্পটা তাই পড়লে মনে হয়, প্রায় সব জায়গাতেই অপ্রত্যাশিত 'পজ'। এটা চোখে লাগে। এর কারণেই মেহেদি রাঙা হাত শেষ পর্যন্ত গল্প হয়ে উঠতে পারেনি। একজন সম্পাদক অবশ্য বলেছেনও, আমি গল্পের প্লটটাকে খুন করে ফেলেছি। আমি শতভাগ একমত মূল্যবান এই অভিমতের সঙ্গে।

ভাষার ব্যবহারের বেলাতেও সীমাবদ্ধতা আমার ঈর্ষণীয়। আমি কেনো জানি আটপৌড়ে ভাষার গাঁথুনী থেকে বের হতে পারি না। নিজের ভেতরের অরণ্য ফিরে পাওয়ার অদম্য বাসনাটা বোধহয় লেখাতে ঘুরে ফিরেই চলে আসে। অপ্রতুল শব্দসম্ভারও এর একটা কারণ বলে মনে করি আমি।

একেবারে বটমলাইনে আমি যা বলতে পারি তা হলো অনভিজ্ঞতা। তবে এটা স্বীকার করতে দ্বিধা নেই আমার যে এখান থেকেই শিখছি আমি। উদাহরণ দিলে বলা যায়, আপনার জাজমেন্টটা আমার জন্য অনেক বড় একটা পাওয়া। লেখা-লেখির ব্যকরণের ব্যাপারে বেশ খানিকটা পথ খোলাসা হয়েছে আমার।

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সেজন্য। হাসি
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

লেখালেখি সিরিয়াসলি করতে চাইলে বিরামহীন পড়া দরকার। ভাতঘুম দেওয়ার আগের পড়া নয়, দরকার মনোযোগী পাঠ। দরকার হলে প্রতিটা শব্দ ও বাক্য ভেঙে ভেঙে পড়তে হবে। তাতে যা হবে তা এরকম : শব্দভাণ্ডার বাড়বে, লক্ষ্য করে পড়লে এটা বানান শেখার সবচেয়ে কার্যকর উপায় (আমার ধারণা), কোন লেখক বাক্যগঠন ঠিক কীভাবে করছেন সেটা জানা হলে নিজের জন্যে একটা সুন্দর প্রকাশভঙ্গি তৈরি করা সহজ হয়ে উঠবে। আরেকটা কাজ করতে পারেন যা আমি নিজে প্রচুর করি। একটা গল্প পড়তে পড়তে প্রতিটা বাক্যে ভাবতে চেষ্টা করি আমি হলে এই বাক্যটা ঠিক কীভাবে লিখতাম, এই শব্দটার বদলে অন্য একটা শব্দ দিলে কেমন হতো?

আর ভালোমন্দ যা-ই হোক প্রতিদিন কিছু না কিছু লেখা দরকার। এটা অবশ্য আমি নিজেই করি না। তবে পরামর্শ দিতে কোনো বাধা নেই, কী বলেন? চোখ টিপি

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

সময় থাকলে খরচ করতে অসুবিধা নেই। হয়ে যাবে কোনো একসময়, দেখবো নিশ্চয়ই।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

লেখালেখি নিয়ে দারুণ কিছু পরামর্শ পেলাম। ধন্যবাদ জুবায়ের ভাই।

ধুসর গোধুলীকে থ্যাংক্স।

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

যদি কারো কোনো কাজে লাগে, সেই সম্ভাবনা ভেবেই আমি উত্তেজিত। সত্যি বলছি।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

নিঝুম এর ছবি

লেখাতে পরিশ্রমের ছোঁয়াটা আমাকে অভিভূত করল।বিবাগিনী'র গল্পটা সম্পর্কে আরেকটু বলা যেত।অসাধারণ গল্প ছিল এটি।

লিখবার জন্য ধন্যবাদ।ভালো থাকবেন

---------------------------------------------------------
শেষ কথা যা হোলো না...বুঝে নিও নিছক কল্পনা...

---------------------------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন

বিবাগিনী এর ছবি

আমি ভাবতে পারিনি এতটা ভাল লাগবে সবার হাসি অনেক অনেক ধন্যবাদ!

আমি যখন ছোট ছিলাম তখন আমার একটা কাঠগোলাপ গাছ ছিল যাকে আমি খুব ভালবাসতাম।বুয়েটের ভিসি বাংলোর ঐ গাছটা এখনো আছে। দেখিনা অনেকদিন।বুয়েটে পড়তে রোজ বাসায় ফিরতে দেখতাম গাছটাকে।স্কুল শেষে নানুর বাসায় ফিরে গাছের ঐ চারডালিটাতে বসে অনেক বই পড়েছি।মন খারাপ হলে চুপিচুপি চোখ মুছেছি।আমার কাঠগোলাপ গাছটাও আমার অনেক কথা জানে।‌‌

তিতলীর মত আমার বাবাও এমন মায়া মায়া আর একদম ছেলেমানুষ।আল্লাহ তাকে অনেক অনেক ভাল রাখুন।আমার বিয়ের রাতে বাবা যে কেমন করে কাঁদছিলেন! অনেকদিন আমার আব্বুকে দেখিনা।আব্বু তুমি ভাল থেকো।

::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::

‌‌::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- ভিসির বাসার সামনের গাছের কথা যখন বললেন, আমি ভাবলাম ছোট বয়সেই আপনি বুয়েটের ভিসি ছিলেন কীনা। পরে বুঝলাম, ধুরো এইটা কেমনে হয়?

শেষে যখন বললেন,

আমার বিয়ের রাতে বাবা যে কেমন করে কাঁদছিলেন!

এইবারও ভাবলাম, ধুরো এইটা কেমনে হয়?

আপনের কি সত্যই বিয়া হইয়া গেছে?

অই কেঠা আছোস, আমার লাইগ্যা ধুতুরা পাতা আন। আমি সুইসাইড খামু! মন খারাপ
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

বিবাগিনী এর ছবি

ধুরো ধূগো! আমি না আমার নানা!

হু! বিয়ে হল প্রায় দুই বছর!আর বিয়ে হইছে তো কি হইছে? আমি তো বিবাগিনী! দেঁতো হাসি

অফ টপিক হাউকাউ বললে জুবায়ের ভাই বকা দিবেন মন খারাপ
আমি ভাগি।

‌‌::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::

‌‌::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- জুবায়ের বকা দিবো ক্যান?
ধুতুরা পাতার জ্যুস খাওয়া আমার আমলাতান্ত্রিক অধিকার! খাইতে না দিলে জুম্মার নামাজের পরে মিটিং, মিছিল, সিম্পোজিয়াম করুম। ফাইজলামী নাকি?

আর আপনে ইট্টু এদিকে আইলে, তো দুনিয়া ছাইড়া নেপচুনের দিকে রওনা দিমু আমি। জুবায়ের ভাই তখনও বকা দিতে আইলে ধুতুরা পাতার জ্যুসের গেলাসটা তাঁর হাতে ধরাইয়া দিয়া কমু, "খান বস। বড়ই কামের জিনিষ।" দেঁতো হাসি

তারপর আর কি। ঢাক্কিতাকিন বোলে আপনের লগে বলরুম ডান্স করতে থাকুম! চোখ টিপি
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

বিবাগিনী এর ছবি

ভয় পাইছি দেঁতো হাসি

‌‌::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::

‌‌::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::

সুমন চৌধুরী এর ছবি

কচি কোন ননদ নাই?



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

লেখাতে পরিশ্রমের ছোঁয়াটা আমাকে অভিভূত করল।

এরকম স্বীকৃতি পেলে আমিও অভিভূত হই।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

ধুসর গোধূলি এর ছবি

জুবায়ের বকা দিবো ক্যান?

জুবায়ের ভাই হবে। নিতান্ত দুঃখিত। মন খারাপ

এইবার পিডা মাফ নাই আমার। মন খারাপ
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

নিঘাত তিথি এর ছবি

জুবায়ের ভাই,
প্রাণবন্ত সমালোচনা। লেখক-সম্পাদক সবাই উপকৃত হবে নিশ্চয়ই।
আমার গল্পটি ভালো লেগেছে জেনে কৃতার্থ হলাম। তবে বর্ণনা নিয়ে সত্যিই অনেক সচেতন হতে হবে আমাকে। আপনার উপদেশ মনে থাকবে। ধন্যবাদ।
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

খেকশিয়াল এর ছবি

দারুন একটা সমালোচনা ! দারুন পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা !

খেকশিয়াল ওরফে কৌশিক দে লিখেছেন তেপান্তর। সম্ভাবনা ছিলো, তার পূর্ণতার জন্যে লেখায় আরো অনেক বিস্তার ঘটানো দরকার ছিলো, শৃঙ্খলাবদ্ধ বর্ণনা ও সুসংবদ্ধ ভাবনার স্ফূরণ আবশ্যক ছিলো।

সবগুলো কথা একদম ঠিক ! লেখাটা লিখে আমারও মনে খচখচ করছিল , ৫০০ শব্দের ভয়ে আধমরা হয়ে ছিলাম, কিন্তু এই অপূর্ণতা আসলে আমারই দোষ, আপনার কথাগুলি অনেক উপকার করল, অনেক ধন্যবাদ ।

-----------------------------------------
রাজামশাই বলে উঠলেন, 'পক্ষীরাজ যদি হবে, তা হলে ন্যাজ নেই কেন?'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

আপনার এই লেখাটাকে একটা পূর্ণাঙ্গ গল্প হিসেবে লেখার কথা ভাবতে পারেন।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

খেকশিয়াল এর ছবি

যখন থিমটা মাথায় আসে লিখতে বসে তাকে বনসাই করতে হয়েছিল অনেক, ধন্যবাদ, গল্পটা নিয়ে আবার বসার ইচ্ছা আছে ।

-----------------------------------------
রাজামশাই বলে উঠলেন, 'পক্ষীরাজ যদি হবে, তা হলে ন্যাজ নেই কেন?'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

শেখ জলিল এর ছবি

বেশ ক'দিন ধরে পোস্টটি পড়ছিলাম। অণুগল্প নিয়ে সমালোচনা খুব ভাল্লাগছে। মুহম্মদ জুবায়ের-এর মতো এরকম সমালোচনা ব্লগে বিরল। তাই প্রথমেই তাকে সাধুবাদ। আর লেখকরা নিজেদের লেখা সম্পর্কেও যা বলেছেন তাতে অণুগল্প প্রকাশনা আরও সার্থক হয়ে রইলো।
সবশেষে বলতে হয়...সচলের পোস্টগুলোর সাধারণ মন্তব্যের চেয়ে এরকম সমালোচনা একজন লেখককে পূর্ণাঙ্গতা দানে ভূমিকা রাখবে অবশ্যই...

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

তারেক এর ছবি

দিয়াশলয়াই পড়া শেষ। দেঁতো হাসি
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।