আপনি বলেননি কখনো
পৃথিবীর যাবতীয় বিবর্তনকে পাল্টে দিতে
একবার সময়ের কন্ঠে ছুরি বসাতে
নতুন আবর্তনের মেরুপথে
থাবা বসাতে বলেননি আপনি।
শুধু আমি ভেবেছি
আজও ভাবি
গতিহীন চারুলতার চিরঞ্জয়ী অসুখ
বিবর্ণ রাধাচূড়ার উদাসীন মুখ
পরিনত গোলক ধাধায় হাতড়ে
শুধু আমি ভেবেছি ।
আপনি বলেননি কখনো
তবু মৃত্যু এসেছে ভালবাসার আঁচল বেয়ে
সন্ত্রাস এসেছে পাল্টে দেবার স্বপ্ন দেখিয়ে
যৌথতা, কেন বলছ ভেজা বরষায়
কত প্রসঙ্গ আসে— ‘সে এক বিস্ময়’
সেই কবে, জোড়া-চোখের গহনায়
গ্রহণলাগা মৌসুমী ফলের পাতায়…
যৌথতা, মাতালের নেই কোন দায়
আগামী অধিকার এমনও হতে পারে
অমন না-হলে প্রতিবেদনা খুব ধীরে
মেলামেশা করে, সারমর্মটুকু আঁধারে
অলস দিনের মত রূপ ধরে ও ঝরে—
যৌথতা, ‘ইচ্ছার ব্যাখ্যা’ জানবে সন্ধ্যা পরে
জলে না-ভিজে কীভাবে নেবে জলজ্ঞান?
জলের চিবুক যে অর্ধেক জেনেছি, কারণ
নিরালা দুপুর কাঁদে ঝমঝম বৃষ্টির ধারায়
ভেজা কাক কাঁপে কদমের ডালে, দমকা হাওয়ায়
সুসবুজ পাতার অন্তরে বেঁধে সূচালো বৃষ্টির শর
ঠিক আট বছর আগের এমনই দুপুর বেলা
চলে গেছে সে কাঁপিয়ে এই মগ্ন চরাচর।
খুব বেশি স্মৃতিচিহ্ন রাখিনি এ ঘরে
তবু দিনরাত বেসামাল বেশুমার
মাকড়সার জালের মতো অজান্তে উঠছে বেড়ে
ছাদের পলেস্তারায়, দেয়ালে দেয়ালে সবই
নিরুদ্দেশ দিবসের সেই স্পষ্ট প্রতিচ্ছবি।
খুব নিশীথে জলের তিয়াস পেলে
হাতড়ে ফিরি তীব্র কালাহারি
বরফ শীতল জলের গেলাস ফেলে
শুয়েই থাকি বিষণ্ন বিচ্ছিরি
সর্বনাশে কথা ভাবতে-ভাবতে জিভে বিঁধে
যাচ্ছে দাঁত, কাউকে বলি নি হঠাৎ বোধে
বোধের পূর্ণমাত্রা গুটিয়ে নিচ্ছো একা হৃদে
হৃদয়ের পূর্ণতাও দুলছে ভেজা ভেজা রোদে
যেমন, সে-ও দাঁড়িয়েছে দ্বিধাহৃতচোখে; ক্ষুরধার
আশায় দোলছে পরশখানি, বুকে বহিতেছে ঝড়
সরে যাবে বললে দ্বিধাও হাসে, নিকটে দাঁড়াবার
আগে কীভাবে বলি— টানিয়া তোলো দেহাঙ্গীকার…
বহুদিন ইনিয়ে-বিনিয়ে বলছি কথা, দয়ার আশায়
তুমি তো এখানে স্মৃতি শুধু নও, বাস্তবে আশাতীত,
তোমার উনুনে অঙ্গার হোক এবার আমার শীত।
শেকড় যেখানে সেখানে ফিরছি নভেম্বরের রোদে,
মেটে শালিকের বেনোজলে ভেসে খেয়ালি ক্লান্ত বোধে।
ঘুঘু নেই; ঘুঘু ডাকে কবিতার নাড়িছেঁড়া নীড় কবিতায়,
কবিতা পাঠের শেষে, কয়েকটি অ-বিরল ঘুঘু খুঁজে পায়
কোন এক ডানা তার ডানাহীন, তারপর উড়ে যেতে চায়
পথহারা পথ ধরে ফেলে আসা গাবগাছ, জামের শাখায় -
তবুও ঘুঘুরা ডাকে - সকাতর অন্ধচোখ - চোখের ভাষায় -
ব্যথাহীন হৃদয়ের নীরবতা সব তার, অকাতরে হায়
বলে যায় সব ব্যথা! অথচ ঘুঘুর কথা কাব্যের খাতায়
লিখে ফেলে যদি কেউ, তবু তার সবটুকু কথা থেকে যায়!!
১।
মৌনতার মধ্যে কয়েকফোঁটা অনিশ্চয়তা মিশে আছে।
মাঝে মাঝে সেই গন্ধে বেঁচে উঠি
মাঝে মাঝে সেই গন্ধে মরে যাই!
২।
হৃদয় ওখানে নয়
হৃদয়ের বেশ দূরে আছো
ওখানে সমস্ত মেঘ
অতি তুচ্ছ বৃষ্টি যায় আসে।
অভিজ্ঞ তড়িৎ গতি
মাঝে মাঝে সামলে নেয়া ভালো
আমি তো জ্যোৎস্না চাই
তুমি শুধু অন্ধকার ঢালো!
৩।
নিজের মৃত্যু সম্পর্কিত একটা দৃশ্যে একটা পাখিকে একা একা গান গাইতে দেখি।
৪।
বাঙ্গালী!!
বাঙ্গালী তর্ক চেনে, গর্ত চেনে, দোষ চেনে, মন্দ চেনে-
বাঙ্গালী সূর্যের চাইতে বালির উত্তাপ বোঝে
বাঘের মামা টাগ বোঝে
নাট-বল্টু-ইস্ক্রুপ ঢিলা বোঝে
মেদ-ভুঁড়ি, ইশারা-ইঙ্গিত, সুড়সুড়ি বোঝে
এমনকি মাগনা পেলে আলকাতরা খাওয়া বোঝে,
বাঙালী সব বোঝে, জ্ঞান বোঝে, গরিমাও বোঝে -
বাঙালী শুধু ‘বাঙালী’ বোঝেনা!!
(২৯.০৮.২০১১)
উৎসর্গঃ কাব্যবিশারদ রোমেল চৌধুরী।
হিমাঙ্কের বালুঘর বদ্ধমুখ হয়েছিল পায়,
শূন্যতার বেলাভূমে কৃশতায় জমেছিল কিছু
নিরাশার সুখ,
বিভাজিত যুগ।
সুনিবিড় ছায়াঘরে জীবনেরা গড়েছিল স্তূপ,
ঝরনার প্রিয়সখা চিরবাধ্য অনুমিত প্রজা
দণ্ডায়মান ঠায়,
শুভ্রসিক্ত কায়।