কী বিপদেই না ফেলেছিলেন আমাকে মুহম্মদ জাফর ইকবাল!
[ চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের ১৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ]
“ যাবেন? আইস ফ্যাক্টরী রোড, কলেজিয়েট স্কুল?” “ যাব।” “কত?” থতমত খাই। এইদিনও তো মনে হয়, বাসা থেকে ১০টাকায় যেতাম। মনটাকে একটু পিছনে ফেরাই। এসএসসি পরীক্ষার পরও আট বছর হয়ে গেল । সময় এভাবে পালিয়ে যায় কেন? বুকের ভেতরটা কেমন যেন ফাঁকা হয়ে যায়।
তা সে বেশকিছুকাল আগের কথা। গ্রামে একদিন এক গ্রাম্য ডাক্তারের দোকানে বসে আছি। ডাক্তারের কাছ থেকে গ্রাম্য চিকিৎসা পদ্ধতি ও এর হাল হকিকত সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছি।
বাসাংসি জীর্ণানি যথা বিহায়
নবানি গৃহ্ণাতি নরোহপরাণি।
তথা শরীরাণি বিহায় জীর্ণান্য-
ন্যানি সংযাতি নবানি দেহী॥
‘এক ব্যক্তি পুরানো পোশাক ছেড়ে যেমন নতুন পোশাক পরে, অনুরূপভাবে আত্মাও তেমন পুরানো ও অকর্মণ্য দেহ ছেড়ে নতুন জড় দেহ গ্রহণ করে।’
একবার ঠিক হলো পরদিন টিফিনে একটা খুচরো চড়ুইভাতির মতন ব্যাপার হবে, কে কে কী কী আনবে ঠিক করে নেওয়া হলো। আলুকাবলি বানানো হবে। সবাইই আনবে গোটা আলুসেদ্ধ, কেউ নিলো কুচানো পেঁয়াজ, ধনিয়াপাতাকুচি আর কাঁচালঙ্কার দায়িত্ব, কেউ ভিজানো ছোলা, কেউ চানাচুর, ঝুরিভাজা, পাপড়িচাট। আর অবশ্য করে একজনকে বলে দেওয়া হলো বড় ঢাকনাওলা খালি টিফিনবাক্স আনতে, সেটা না হলে হবে না। ওটার মধ্যেই সব মিলিয়ে আসল বস্তুটি বানানো হবে কিনা।
রাতে পড়তে এসে টেবিলে বসে বসে ভাবছি আর করিমের সাথে মাঝে মাঝে নিচুস্বরে কথা বলছি। বলে নেয়া ভাল আব্দুল করিম আমার খালাতো ভাই। ছোটবেলা থেকেই আমাদের বাসায় থেকে পড়াশোনা করতো। আমরা একই ক্লাসে পড়তাম। গাট্রাগোট্রা ধরনের ছেলে। পড়ার টেবিলের এক পাশে বসতাম আমি এবং অপর পাশে ও বসতো। আমাদের কোয়ার্টারে ছিল দুটি রুম সাথে একটি ছোট আকারের রুম, তার মধ্যে একটিতে আমরা দুজন এবং অপরটিতে বাকি সবাই থাকতো। পড়তে বসেই করিম কিছুক্ষন খুব উৎসাহের সাথে পড়তো, আধাঘন্টার মতো এবং তার পরেই মাথা ঢুলতে ঢুলতে বইয়ের উপর পড়ে যেত। আম্মা পাশের রুম থেকে হঠাৎ বলতো “তোরা পড়তাছস নাকি?” আমি আম্মার ভয়ে ওকে মাঝে মাঝে ধাক্কা দিতাম আর ও ধড়মড়িয়ে উঠে আবারো পূর্বের জায়গা থেকে পড়া শুরু করতো। মাঝে মাঝে আড়মোড়া ভেঙ্গে এমন ভাব করতো যেন কয় ঘন্টা যাবৎ পড়ছে! অথচ একমাত্র আমিই জানি সে কয়েকঘন্টা পড়েও বার বার একই জায়গায় ঘুরে ফিরে আসতো। কোন কিছু মনে রাখতে পারতনা।
অনেক অনেক কাল আগের কথা!