আমার স্মৃতির শহরটা বড়ই সুন্দর। সেখানের বিকেলগুলো লম্বা আর নরম, মোলায়েম রোদের আলোতে স্নান করে রাস্তার পাশের বড় বড় কৃষ্ণচূড়া গাছ, তাতে বসে থাকে হলুদ রঙের কুটুম পাখি। শব্দ আছে হরেক রকমের, গাড়ির হর্ণ থেকে ঝালমুড়িওয়ালার হাঁকডাক, আছে সুরের মত রিকশার টুংটাং আওয়াজ। দূর থেকে কান পাতলে মনে হবে যেন সঙ্গীত শুনছি। সেই শহরে হেমন্তের সকালগুলো ঘুম ঘুম কুয়াশা মাখা, বসন্ত হাজির হয় সংগোপনে; গ্রী ...
- ফাহিম হাসান
ইশকুলেতে বলেন টিচার হঠাৎ করে কান ধরে-
আমি নাকি বদলে গেছি লাউয়াছড়ার বান্দরে।
অবাক হয়ে আয়নাতে মুখ দেখে দেখে হলাম শেষ
গায়ে মুখে কোথাও তো নেই বানরজাতির খয়েরী কেশ।
পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি লেজের কোন চিহ্ন নেই
আমার আমি, সবার মতন, দেখতে লাগে যেই কী সেই!
পাড়ার বড় ভাইবোনেরা পড়েন যারা কলেজে,
তুখোড় তারা বিজ্ঞানে ও সব ধরনের নলেজে।
বলল তারা বানর আছে মিরপুরেরই ...
আমাদের ওখানে প্রথম বইমেলা হলো ঘোর বর্ষায়, তখন আমরা সবে উঠেছি ক্লাস নাইনে। এতদিন শুধু আমরা শুনে এসেছি কলকাতায় বইমেলা হয় শীতের শেষে, সে এক দুর্দান্ত কান্ড, কিন্তু অতি অল্প কয়েকজন ছাড়া সেই বিরাট বিখ্যাত বইমেলা দেখার সৌভাগ্য কারুর হয়নি৷ ইস্কুল থেকে দিদিমণিরা নিয়ে চললেন আমাদের, রাস্তা জলেকাদায় ভর্তি, মেলা-প্রাঙ্গন কাদা প্যাঁচপেঁচে যথারীতি, কাঠের পাটাতন পেতে পেতে চলার জায় ...
আম্মা আমাকে ঘুম পাড়াতে গিয়ে নিজেই ঘুমিয়ে পড়েছেন। এই ঘটনা বেশি বিরল নয়, দুপুরে একটা বই হাতে নিয়ে শুয়ে পড়তেন, সাথে আমি। বইটা হতে পারে "কেরি সাহেবের মুন্সি" অথবা "অনুবর্তন", যা-ই হোক না কেন, দুপুর বেলা ছাপার অক্ষরে চোখ বুলানো চাই। সেই সময় আমার দুপুরে ঘুমাতে অসহ্য লাগতো, যদিও এখন ফাঁক পেলেই আমি নিদ্রাদেবীর বন্দনা করি।
আম্মা ঘুমিয়ে গেলেই আমি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসি। আমাদের বা ...
মনে পড়ছে সেই দিনটা! স্পষ্ট হয়ে মনে পড়ছে। নাইনের পরীক্ষার সীট পড়েছে দোতলায়, ভীষণ গরম ও লোডশেডিং (লোডশেডিং প্রায় অঙ্গাঙ্গী জড়িত ছিলো গরমের সঙ্গে সেইসব দিনে )৷ সবাই দরদর করে ঘামতে ঘামতে ও আঁচলে মুছতে মুছতে পরীক্ষা দিচ্ছে, সেদিন ইংরেজী পরীক্ষা৷ কাগজ ও প্রশ্নপত্র পর্যন্ত গরম, গার্ড যিনি দিচ্ছিলেন তিনি বোতলে করে জল এনে টেবিলে রেখেছেন, কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে মুখে চোখে দেওয়া হবে৷ প ...
কালকে সমাজ-বিজ্ঞান পরীক্ষা, তারপর ধর্ম, তারপর শেষ- আহ্ কী যে শান্তি! এই শান্তির বাতাস পেয়ে এখনই পড়াতে আর মন বসছে না, ফলাফল কালকের সমাজ-বিজ্ঞান পরীক্ষাটা খারাপ হবে নিশ্চিত। তারপর একটু পড়ে নিই, তারপর আবার ভাবতে বসে যাই, বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হলেই ব্যাডমিন্টন খেলার শুরু। শীতের কুয়াসা মোড়া বিকেল শুরু হতেই সবাই ব্যাডমিন্টন কোর্টে হাজির। আমাদের খেলা শেষ হতো সন্ধ্যায়, তারপর বাতি লাগিয় ...
ছোটবেলাটা জেঠুর বাড়িতে বেশ মজাতেই কেটে যাচ্ছিল। কিন্তু একটু বয়স হতেই মায়ের টনক নড়ল, স্কুলে ভর্তি হতে হবে। তখনকার দিনে আজকের মত ভর্তির এত হ্যাপা ছিল না। বাড়ির পেছনে পুকুর, পুকুরের ওপারে স্কুল। সুনীল কাকা একদিন কাঁধে করে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করে দিয়ে এলেন।
ছোটবেলায় নানা রকম অসুখে ভুগে আমার পায়ের জোরটা একটু কমে গিয়েছিল। সমবয়সীদের মত লাফালাফি করতে পা ...
কত বছর হয়ে গেলো, এখন পিছন ফিরে দেখলে মনে হয় যেন গতজন্ম৷ অথচ সেরকম ততবেশী কি ? হ্যাঁ, আমাদের মাধ্যমিকের রেজাল্ট বেরুনোর দিন৷ তখন না ছিলো এত কম্পুটার, না ছিলো ইন্টার্নেটের এমন রমরমা৷ দিদিমণিরা মাস্টারমশায়েরা নিজেরা গিয়ে বড় চটের ব্যাগে ভরে নিয়ে আসতেন ছাত্রছাত্রীদের ফলাফলের কাগজপত্তর৷ প্রথম দিন শুধু মুখে মুখে জানিয়ে দিতেন, পরের দিন হাতে পাওয়া যেতো৷
শামীম।
আমরা ডাকতাম বড় আম্মা। আম্মা আব্বা ডাকতেন “নানীজী”। প্রথম দিকের স্মৃতি যা মনে পড়ে তা হলো সাদা শাড়ি পরা একজন বুড়ো মানুষ। সফেদ চোখ মুখ। বিড়ালের চোখের মতো ঘোলা চোখ। হাতে তসবি। জায়নামাজে বসা। আমার স্বল্প স্মৃতিতে বড় আম্মাকে কখনো জায়নামাজ ছাড়া অন্য কোথাও দেখিনি। তাকালেই মনে একটা শান্তি শান্তি ভাব চলে আসত।
বড় আম্মার ছেলে ছিলেন একজন। আম্মার মামা। আম্মা বলতেন মামুজী। চিটাগা ...
একটা সাইকেল আমার শৈশবের অনেক বড় আনন্দের উপাদান হয়ে ছিলো। সাইকেলে চড়তে শেখা, প্রথমে সাইকেল হাতে নিয়ে ছোটা, তারপর বাঁকা হয়ে মাঝখানের ফাঁকা দিয়ে পা ঢুকিয়ে অনেক কসরত করে চালানো কারন সিটে বসে প্যাডালের নাগাল পেতামনা! তারপর এক দিন রডের উপর বসে “ব্যথা” উপেক্ষা করে তুফান বেগে সাইকেল চালানো। ঝুঁকিপূর্ণ, জান হাতে নিয়ে চালানো যাকে বলে!
তারপর কোন একদিন আবিষ্কার করলাম সাইকেল চালানো আসলে হচ ...