নিরজনে প্রভু নিরজনে---

অনিকেত এর ছবি
লিখেছেন অনিকেত (তারিখ: বুধ, ২৮/০৮/২০১৩ - ৭:৪৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আজ সাতাশে অগাষ্ট আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রয়ান দিবস।

বহুমাত্রিক এই কবির সৃষ্টিশীলতার কাল ছিল চারদশকের একটু বেশি। এই অল্প সময়ের মাঝেই তিনি লিখে গেছেন হাজারো কবিতা,গান, প্রবন্ধ, নাটক ও উপন্যাস। এমনকি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন, সুরও দিয়েছেন সেই চলচ্চিত্রে। বিদ্রোহের জলদ গম্ভীর উচ্চারণ যেমন তার কাব্যে আছে, ঠিক তেমনি আছে ব্যাকুল প্রেমিক হৃদয়ের দীর্ঘশ্বাস। দ্রোহে, মন্ত্রে, ভালবাসায় নজরুল ছুঁয়ে গেছেন আমাদের বাঙালি জীবনের সকল স্তর।

কেবল এই জাগতিকতার মাঝে তিনি বন্দী থাকেননি। শতাব্দীকাল হতে এই গাঙ্গেয় বদ্বীপের মর্মস্থল হতে যে সহজিয়া অনুভব উৎসারিত হয়েছে--তার একটি বড় সুর হল অধ্যাত্মবাদ। নজরুল তার এক জীবনে ধরতে চেয়েছিলেন বাঙালির মন ও মানসের সকল বহিরঙ্গকে অন্তরঙ্গ আলোকে। আর তাই দেখি তাঁর গানে অধ্যাত্মবাদের সুনিবিড় সন্নিবেশন। নজরুলের অধ্যাত্মবাদ রবীন্দ্রনাথের চেয়ে পৃথক--হয়ত জীবনাচরণ ও দর্শনের পার্থক্যের কারণে হয়ে থাকবে। রবীন্দ্রনাথ যেখানে ঈশ্বর-প্রকৃতি-প্রেম কে কখনো একই ভাবের সুতোয় বুনে দিয়ে যান--নজরুল সেখানে অনেক খানি মানুষের কাছাকাছি থেকে এই ত্রিমূর্তিকে ভিন্ন আদলে দেখেন, ভিন্ন রূপে হৃদয়ে স্থান দেন। নজরুল হাঁটেন গ্রাম-বাংলার অধ্যাত্মবাদের সরল-সহজ পথে। তাই তিনি যেমন শাক্ত-সঙ্গীত রচনা করেন, তেমনি রচনা করেন হামদ-নাত--- সমান প্রেমভক্তি নিয়ে এগিয়ে যান হিন্দু-মুসলমানের দিকে।

নজরুলের জীবনকাল, তার রাজনৈতিক দর্শন ও তৎকালীন রাষ্ট্রীয় আচরণ ক্ষণে ক্ষণে তাঁর চিন্তাভাবনা ও সৃষ্টিশীলতাকে আচ্ছন্ন করেছে, প্রভাবিত করেছে, বিকশিত করেছে। নজরুল বুঝে নিয়েছিলেন স্বরাজ পেতে হলে আগে আমাদের মাঝের ভিন্নতাকে অতিক্রম করতে হবে, আমাদের মাঝের বৈপরিত্যকে আলিঙ্গন করতে হবে।‘বঙ্গীয়মুসলমান সাহিত্য সমিতি’র জুবিলি-উৎসবের সেই সুবিখ্যাত সভাপতির ভাষণে নজরুল মর্মস্পর্শী উচ্চারণে উদ্ভাসিত করেন তাঁর জীবন-দর্শনঃ

“আমি কবি হতে আসিনি, আমি নেতা হতে আসিনি– আমি প্রেম দিতে এসেছিলাম, প্রেম নিতে এসেছিলাম– সেই প্রেম পেলাম না বলে আমি এই প্রেমহীন নীরস পৃথিবী থেকে নীরব অভিমানে চিরদিনের জন্যে বিদায় নিলাম। হিন্দু-মুসলমানে দিনরাত হানাহানি, জাতিতে জাতিতে বিদ্বেষ, যুদ্ধ-বিগ্রহ, মানুষের জীবনে একদিকে কঠোর দারিদ্র, ঋণ, অভাব–অন্যদিকে লোভী অসুরের যক্ষের ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা পাষাণ স্তূপের মতো জমা হয়ে আছে — এই অসাম্য এই ভেদজ্ঞান দূর করতেই আমি এসেছিলাম, আমার কাব্যে, সংগীতে, কর্মজীবনে অভেদ-সুন্দর সাম্যকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম– অসুন্দরকে ক্ষমা করতে, অসুরকে সংহার করতে এসেছিলাম– তোমরা সাক্ষী আর সাক্ষী আমার পরম-সুন্দর।”

ধর্মীয় ভেদাভেদজ্ঞান দূরীভূত করার সচেতন প্রয়াস তাঁর ঈশ্বর প্রেম-বিষয়ক রচনাগুলোকে বিশেষায়িত করে দুই ভিন্ন ধর্মের মানুষগুলোর জন্যে। এই দুই সুনির্দিষ্ট ধর্মীয় রচনা গুলোর পরেও অল্প কিছু গান আমরা পাই যেখানে নজরুলকে নৈর্ব্যক্তিক ঈশ্বরের দিকে ফিরে তাকাতে দেখি--কোনো হিন্দু-মুসলিমের ঈশ্বর নন--স্রেফ অবিভাজ্য উদাসীন এক সৃষ্টিকর্তার প্রতি তাঁকে প্রণতি জানাতে দেখি।

"খেলিছ এ বিশ্বলয়ে" তেমনি একটি গান। নৈর্ব্যক্তিক উদাসীন ঈশ্বরকে নজরুল এইখানে দেখেন এক আপনভোলা শিশু হিসেবে---যে তার সৃষ্টির খেলায় রত---সৃষ্টির ভাল-মন্দ সুখ-অসুখের বিচারে সে বসে নেই--আপন মনে সে খেলে যায় নিরবধিকাল---

আমার খুব প্রিয় এই গানটি আপনাদের কাছে নিয়ে এলাম। ভুল-চুক করে থাকলে আগাম ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
সবাই ভাল থাকুন---

কথা ও সুর--কাজী নজরুল ইসলাম
যন্ত্রানুষঙ্গ আয়োজন, বাদন ও কন্ঠ--অনিকেত


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

চমৎকার লেখা আর তার চেয়েও চমৎকার গান, মন ছুঁয়ে গেল হাততালি
ইসরাত

অনিকেত এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ ইসরাত---
শুভেচ্ছা নিরন্তর--

তারাপ কোয়াস এর ছবি

খুবই প্রিয় একটি গান তাও আবার অনিকেত'দার কণ্ঠে! অনবদ্য। গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু

(তবলায় সম্ভবত অনিকেদার কাছ থেকে আরও কিছু দাবি করার অবকাশ রয়ে যায় হাসি )


love the life you live. live the life you love.

অনিকেত এর ছবি

অনেক অনেক ধন্যবাদ বস এমন সহৃদয় মন্তব্যের জন্যে---
তোমার মন্তব্যে সকল সময়েই অনুপ্রাণিত হই (তবলার কথাটা মাথায় রইল বস, থ্যাঙ্কস)

ভিন্ন প্রসঙ্গেঃ তোমাকে মাঝে মাঝে বড্ড মিস্করি এইখানে, তুমি ভাল আছো তো ?---

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক সুন্দর লেখা, সুন্দর গাওয়া।
ভাল লাগল, অনিকেত। শরীর সেরেছে?
- একলহমা (দাদা)

অনিকেত এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ এক লহমা (দাদা)--আপনার সহৃদয় মন্তব্যগুলো আমার চলার পথের পাথেয়--নিরন্তর অনুপ্রেরনার উৎস---
শরীর এখনো সারে নি পুরোপুরি। বিকল শরীর আর ততোধিক বিকল মন নিয়ে বনের মাঝে বসবাস করছি---
আমি স্নেহের কাঙ্গাল--অল্প স্নেহ দেখালেই চোখে জল টলমল করে---এইযে আপনি এত ব্যস্ততার মাঝেও আমার শরীরের খোঁজ নিলেন---এতেই আমার চোখে জল-টল এসে একাকার

বড্ড বিশ্রী রকমের দুর্বল মানুষ আমি, দাদা---

আপনি ভালো থাকবেন সর্বক্ষণ---
শুভেচ্ছা নিরন্তর---

পরমার্থ  এর ছবি

এই যুগে জন্মালে উনি, "ভাঙ্গিছ গরিছ নীতি ক্ষণে ক্ষণে" এর পরিবর্তে লিখতেন "ভাঙ্গিছ গরিছ তুমি ক্ষণে ক্ষণে" । গানটি খুব সুন্দর। ধন্যবাদ লেখাটির জন্য।

অনিকেত এর ছবি

ধন্যবাদ পরমার্থ---
শুভেচ্ছা জানবেন--

তারেক অণু এর ছবি
অনিকেত এর ছবি

ইটা-টা আমার মাথায় মারার জন্যে নাকি রে মামুর বুটা---??

শুভেচ্ছা জাইনো এর পরেও---

বন্দনা এর ছবি

লিঙ্ক দিয়ে চলে গেলাম আপনার গাওয়া গানের ভান্ডারে। কালকে থেকেই খুঁজছিলাম। এত দরদ আপনার কন্ঠে ভাইয়া।

অনিকেত এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ বন্দনা--আপনার দয়ার্দ্র কথাগুলো আমাকে অনুপ্রেরনা যোগাবে--

শুভেচ্ছা নিরন্তর--

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

কোনো হিন্দু-মুসলিমের ঈশ্বর নন--স্রেফ অবিভাজ্য উদাসীন এক সৃষ্টিকর্তার প্রতি তাঁকে প্রণতি জানাতে দেখি।

চলুক

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

অনিকেত এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

অসাধারণ

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অনিকেত এর ছবি

থ্যাঙ্কু বস----

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

চলুক

আব্দুল্লাহ এ এম

অনিকেত এর ছবি

অশেষ ধন্যবাদ আবদুল্লাহ--

ভাল থাকুন সকল সময়ে---

 লীনা দিলরুবা এর ছবি

আপনার কণ্ঠতো মারাত্মক! সুর নড়ে গেছে কোথাও কোথাও। কিন্তু দরদ এত বেশি যে, সেটি কানে লাগেনি তেমন।

অনিকেত এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ লীনা দিলরুবা আপনার মন্তব্যের জন্যে। সুরের ব্যাপারে ভবিষ্যতে আরো যত্নবান হবো।
আবারো ধন্যবাদ বিষয়টা ধরিয়ে দেবার জন্যে---

শুভেচ্ছা নিরন্তর---

 লীনা দিলরুবা এর ছবি

কালথেকে এই গান কতোবার শুনেছি তার কোনো হিসেব নেই। শেষে এসে 'নিরজনে প্রভু নিরজনে' রিপিট করে গাইবার বিষয়টা পারফেক্ট একদম। আপনার কণ্ঠে জাদু আছে জনাব।

অনিকেত এর ছবি

আবারো অশেষ ধন্যবাদ এমন সহৃদয় মন্তব্যের জন্যে---
অনেক অনুপ্রাণিত হলাম--

তাপস শর্মা এর ছবি

বদ্দা, বহুবার শোনা এই গানের মধ্যে অন্যরকম একটা ভাল লাগা মিশে আছে। অসাধারণ

০২

নজরুলের জীবনের শেষ ভাষণটা প্রসঙ্গক্রমে এখানে কোট করে দিয়ে গেলাম। নজরুল ইসলাম এর শেষ ভাষণ ছিল এটা, এরপর উনার বাকশক্তি রুদ্ধ হয়ে যায়

'' বন্ধুগণ,

আপনারা যে সওগাত আজ হাতে তুলে দিলেন, আমি তা মাথায় তুলে নিলুম। আমার সকল তনু-মন-প্রান আজ বীণার মত বেজে উঠেছে। তাতে শুধু একটি মাত্র সুর ধ্বনিত হয়ে উঠেছে- "আমি ধন্য হলুম", "আমি ধন্য হলুম"।

আমায় অভিনন্দিত আপনারা সেই দিনই করেছেন, যেদিন আমার লেখা আপনাদের ভাল লেগেছে। বিংশ শতাব্দীর অসম্ভবের সম্ভাবনার যুগে আমি জন্ম গ্রহণ করেছি। এরই অভিযান সেনাদলের তূর্য্যবাদকের একজন আমি- এই হোক আমার সবচেয়ে বড় পরিচয়। আমি এই দেশে, এই সমাজে জন্মেছি বলে, শুধু এই দেশেরই, এই সমাজেরই নই; আমি সকল দেশের, সকল মানুষের। কবি চায় না দান, কবি চায় অঞ্জলি। কবি চায় প্রীতি। কবিতা আর দেবতা সুন্দরের প্রকাশ। সুন্দরকে স্বীকার করতে হয়, যা সুন্দর তাই দিয়ে। সুন্দরের ধ্যান, তাঁর স্তবগানই আমার ধর্ম। তবু বলছি, আমি শুধু সুন্দরের হাতে বীণা, পায়ে পদ্মফুলই দেখিনি, তাঁর চোখে চোখ ভরা জলও দেখেছি। শ্মশানের পথে, গোরস্তানের পথে তাঁকে ক্ষুধাদীর্ণ মুর্তিতে ব্যাথিত পায়ে চলে যেতে দেখেছি। যুদ্ধভূমিতে তাঁকে দেখেছি। কারাগারের অন্ধভূমিতে তাঁকে দেখেছি। ফাঁসির মঞ্চে তাঁকে দেখেছি।

আমাকে বিদ্রোহী বলে খামখা লোকের মনে ভয় ধরিয়ে দিয়েছেন কেউ কেউ। এ নিরীহ জাতটাকে আঁচড়ে-কামড়ে তেড়ে নিয়ে বেড়াবার ইচ্ছা আমার কোনদিনই নেই। আমি বিদ্রোহ করেছি, বিদ্রোহের গান গেয়েছি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অত্যাচারের বিরুদ্ধে, যা মিথ্যা-কলুষিত-পুরাতন-পঁচা সেই মিথ্যা সনাতনের বিরুদ্ধে। ধর্মের নামে ভন্ডামি ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে।

কেউ বলেন আমার বাণী যবন, কেউ বলেন কাফের। আমি বলি, ও দু’টোর কোনটাই নয়। আমি কেবলমাত্র হিন্দু-মুসলমানকে এক জায়গায় ধরে এনে হ্যান্ডশেক করাবার চেষ্টা করেছি; গালাগালিকে গলাগলিতে পরিণত করার চেষ্টা করেছি। সে হাতে হাত মিলানো যদি হাতাহাতির চেয়ে অশোভনীয় হয়ে থাকে, তাহলে ওরা আপনি আলাদা হয়ে যাবে। আমার গাঁটছড়ার বাঁধন কাটতে তাদের কোন বেগ পেতে হবে না। কেননা, একজনের হাতে আছে লাঠি, আরেকজনের আস্তিনে আছে ছুরি। হিন্দু-মুসলমানে দিনরাত হানাহানি, জাতিতে জাতিতে বিদ্বেষ, যুদ্ধ-বিগ্রহ, মানুষের জীবনে এক দিকে কঠোর দারিদ্র-ঋণ-অভাব; অন্যদিকে লোভী অসুরের যক্ষের ব্যাঙ্কে কোটি কোটি টাকা পাষাণ স্তুপের মত জমা হয়ে আছে। এ অসাম্য ভেদজ্ঞান দূর করতেই আমি এসেছিলাম। আমার কাব্যে সংগীতে কর্মজীবনে অভেদ ও সুন্দর সাম্যকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম। আমি যশ চাই না, খ্যাতি চাই না, প্রতিষ্ঠা চাই না, নেতৃত্ব চাই না। জীবন আমার যত দুঃখময়ই হোক, আনন্দের গান- বেদনার গান গেয়ে যাব আমি। দিয়ে যাব নিজেকে নিঃশেষ করে সকলের মাঝে বিলিয়ে। সকলের বাঁচার মাঝে থাকবো আমি বেঁচে। এই আমার ব্রত, এই আমার সাধনা, এই আমার তপস্যা।

রবীন্দ্রনাথ আমায় প্রায়ই বলতেন,"দ্যাখ উন্মাদ, তোর জীবনে শেলীর মত, কীটসের মত খুব বড় একটা ট্র্যাজেডী আছে, তুই প্রস্তুত হ'।" জীবনে সেই ট্র্যাজেডী দেখবার জন্য আমি কতদিন অকারনে অন্যের জীবনকে অশ্রুর বরষায় আচ্ছন্ন করে দিয়েছি। কিন্তু, আমারই জীবন রয়ে গেল বিশুষ্ক মরুভূমির মত দগ্ধ। মেঘের উর্ধ্বে শূণ্যের মত কেবল হাসি, কেবল গান, কেবল বিদ্রোহ।

আমার বেশ মনে পড়ছে। একদিন আমার জীবনের মহা অনুভূতির কথা। আমার ছেলে মারা গেছে। আমার মন তীব্র পুত্রশোকে যখন ভেঙে পড়ছে ঠিক সেই দিনই সেই সময় আমার বাড়িতে হাস্নাহেনা ফুটেছে। আমি প্রানভরে সেই হাস্নাহেনার গন্ধ উপভোগ করেছিলাম। আমার কাব্য, আমার গান আমার জীবনের সেই অভিজ্ঞতার মধ্য হতে জন্ম নিয়েছে। যদি কোনদিন আপনাদের প্রেমের প্রবল টানে আমাকে আমার একাকিত্বের পরম শূণ্য থাকে অসময়ে নামতে হয়, তাহলে সেদিন আমায় মনে করবেন না, আমি সেই নজরুল। সেই নজরুল অনেক দিন আগে মৃত্যুর খিড়কী দুয়ার দিয়ে পালিয়ে গেছে। মনে করবেন পুর্ণত্বের তৃষ্ণা নিয়ে একটি অশান্ত তরুণ এই ধরায় এসেছিল, অপূর্ণতার বেদনায় তারই বিগত আত্মা যেন স্বপ্নে আপনাদের মাঝে কেঁদে গেল।

যদি আর বাঁশী না বাজে, আমি কবি বলে বলছি নে, আমি আপনাদের ভালবাসা পেয়েছিলাম, সেই অধিকারে বলছি, আমায় আপনারা ক্ষমা করবেন। আমায় ভুলে যাবেন। বিশ্বাস করুন, আমি কবি হতে আসি নি। আমি নেতা হতে আসি নি। আমি প্রেম দিতে এসেছিলাম, প্রেম পেতে এসেছিলাম। সে প্রেম পেলাম না বলে আমি এই প্রেমহীন নিরস পৃথিবী হতে নিরব অভিমানে চিরদিনের জন্য বিদায় নিলাম।

যেদিন আমি চলে যাব, সেদিন হয়ত বা বড় বড় সভা হবে। কত প্রশংসা কত কবিতা বেরুবে হয়ত আমার নামে। দেশপ্রেমী,ত্যাগী,বীর,বিদ্রোহী- বিশেষনের পর বিশেষন। টেবিল ভেঙে ফেলবে থাপ্পর মেরে। বক্তার পর বক্তা। এই অসুন্দরের শ্রদ্ধা নিবেদনের প্রার্থ্য দিনে বন্ধু তুমি যেন যেও না। যদি পার চুপটি করে বসে আমার অলিখিত জীবনের কোন একটি কথা স্মরণ কোর। তোমার ঘরের আঙিনায় বা আশেপাশে যদি একটি ঝরা পায়ে পেষা ফুল পাও, সেইটিকে বুকে চেপে বোল বন্ধু আমি তোমায় পেয়েছি।

তোমাদের পানে চাহিয়া বন্ধু আর আমি জাগিব না,

কোলাহল করে সারা দিনমান কারো ধ্যান ভাঙিব না।

নিশ্চল নিশ্চুপ আপনার মনে পুড়িব একাকী গন্ধবিঁধুর ধূপ।''

অতিথি লেখক এর ছবি

একটা সময় ছিল যখন যৌবনের জলতরংগে আমি ঝমঝম করে বাজতাম। কত জায়গায় যে আমার অতি প্রিয় এই লাইনগুলো আবৃত্তি করে বেড়াতাম তখন, আমাদের সেই যৌবনের কলকাতায়!
- একলহমা

অনিকেত এর ছবি

একেবারে আমার মনের কথা বলেছেন এক লহমা দাদা--

অনিকেত এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ রে তাপস বস! এই ভাষনটার একটা ঈষৎ সংক্ষেপিত রূপ আবৃত্তি আকারে করেছিলেন নজরুলের সুযোগ্য তনয় কাজী সব্যসাচী। খুব ছোটবেলা থেকে তাঁর এই আবৃত্তি শুনে আসছি রেকর্ডে।
এইখানে ইউ টিউবের লিঙ্কটা দিলাম---

রাজীব রহমান এর ছবি

দ্রোহ অার বিদ্রোহ কি সমার্থক?

গান ভাল লাগল।

অনিকেত এর ছবি

সুপ্রিয় রাজীব, ধন্যবাদ প্রসঙ্গটা সামনে নিয়ে আসার জন্যে। দ্রোহ আর বিদ্রোহ সমার্থক নয়--যতটুকু আমি জানি। দ্রোহের মূল মানে খুব সম্ভবত শত্রুতা। এইখানে আসলে 'দ্রোহ' শব্দটা আমি রাজদ্রোহ অর্থে ব্যবহার করছিলাম--সেইক্ষেত্রে হয়ত সেটা বিদ্রোহের কাছাকাছি হয়---

আবারো ধন্যবাদ--

ক্যাপ্টেন নিমো এর ছবি

মন ছুয়ে গেল

অনিকেত এর ছবি

ধন্যবাদ ক্যাপ্টেন নিমো--
শুভেচ্ছা জানবেন--

অতিথি লেখক এর ছবি

মুগ্ধতা শব্দটিও অপ্রতুল এখানে ।।।

আফরিন আহমেদ

অনিকেত এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ আফরিন--

শুভেচ্ছা নিরন্তর--

অতিথি লেখক এর ছবি

অস্থির রকমের ভাললাগা ।

শাকিল অরিত

অনিকেত এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ শাকিল বস---

শুভেচ্ছা জানবেন--

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অনিকেত এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

মিতা  এর ছবি

অসাধারণ . আমার ও খুব প্রিয় একটা গান

দাদা, ট্র্যাক নিশ্চই আপনার তৈরী। আমি কিছু ট্র্যাক খুঁজছি।কোথায় পেতে পারি। নিজের জন্য।

আবার ও অনেক অনেক ধন্যবাদ চমত্কার এই গান এর জন্য

অনিকেত এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ মিতা মন্তব্যের জন্যে।
হ্যাঁ, ট্র্যাক আমার নিজের করা।
আপনি কি কি গানের ট্র্যাক খুজছেন? কিছু কিছু জনপ্রিয় গানের ক্যারাওকি ট্র্যাক পাওয়া যায়। সেইসব যোগাড় করা শক্ত কিছু নয়।

শুভেচ্ছা জানবেন---

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

বস-এর মৃত্যু দিনে অশেষ শ্রদ্ধা। আর আপনার জন্য রণতূর্য।

অনিকেত এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ পিপি দা---
শুভেচ্ছা নিরন্তর---

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।