চোখে চোখে শাহবাগ

অরফিয়াস এর ছবি
লিখেছেন অরফিয়াস (তারিখ: সোম, ১১/০২/২০১৩ - ৯:২২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আসুন, শাহবাগ আন্দোলনে নিজেদের দেখা হৃদয়স্পর্শী ঘটনা আর ছবিগুলো জড়ো করি এখানে। বিশ্ব দেখুক আরেক মুক্তিযুদ্ধ।

০৬-০২-২০১৩

শাহবাগ এ যখন গেলাম অজস্র মানুষের ভিড়ে নিজেকে দিশেহারা মনে হচ্ছিল। উদ্দেশ্যহীনভাবে হাঁটতে হাঁটতে জনারন্যে একটি দৃশ্য দেখে দাঁড়িয়ে গেলাম। এক বাবা তার দুসন্তানকে নিয়ে এসেছেন প্রতিবাদের মিছিলে শামিল হতে। দুটো ছেলেরই বয়স অল্প, হয়তো ৭ম/৮ম শ্রেণীতে পড়ে। এই বয়সে অভিভাবকেরা মিছিল এর নাম শুনলে সন্তানদের ১০০ হাত দূরত্বে রাখার চেষ্টা করেন। সেখানে একজন পিতার হাত ধরে এরকম জনস্রোতে শামিল হওয়ার দৃশ্য কেন চোখে পড়বে না? পাঞ্জাবি আর চোখে চশমা পড়া সেই পিতাকে দেখে মনে পড়ে গেল, এরকম অজস্র আত্মত্যাগের জন্যই আমরা আজ স্বাধীন। মনে পড়ে গেল, সেই ৭১ এ, যেই মায়ের বড় সন্তান যুদ্ধে শহীদ হওয়ার পড়ে তিনি তাঁর অপর সন্তানের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিলেন যুদ্ধে যাওয়ার জন্য। মনে পড়ে গেল, সেই কিশোর লালু, ধ্রুব, হেলাল, টিটোদের যারা কৈশোর পেরোতে না পেরোতেই যুদ্ধে গিয়েছিল লাল টকটকে ওই সূর্যটাকে ছিনিয়ে আনবে বলে। ওরা শহীদ হয়েছিল কিন্তু রেখে গিয়েছিল ওদের চেতনা যা ৪২টা বছর পরেও লুপ্ত হয়নি বরং আরও গভীরে, অনেক গভীরে শেকড় গেড়েছে। যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠী বারবার পরাজিত হবে শুধুমাত্র এই চেতনাবোধ এর কাছে, কারণ বাঙালি বার বার এভাবেই ফিনিক্স পাখির মতো নিজের ভস্ম থেকে আবার নতুন করে জন্ম নিতে জানে।

০৮-০২-২০১৩

বিকেলের রোদে যখন পোস্টার বিছিয়ে বসে গেছি তখন কিছুটা নিরবতা কাজ করছিল আমাদের মাঝে। হঠাৎ একজন মধ্যবয়সী মানুষ এসে হাজির। মানুষটির একটি মাত্র হাত। সেই হাতে সগর্বে তুলে নিয়েছেন দেশের পতাকা। আর বিরামহীনভাবে স্লোগান দিয়ে যাচ্ছেন। "জয় বাংলা", "রাজাকারের ঠাঁই নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই" !! লক্ষ করলাম অনেকক্ষণ ধরে একবারের জন্যও তার একটিমাত্র হাত নিচে না নামিয়ে পতাকা ধরে রেখেছেন। না, আমরা এরপরে আর নিরব ছিলাম না। সেই মানুষটির "জয় বাংলা" তখন আমাদের কন্ঠেও। এরপর তাতে যোগ দিয়েছে আরও অনেক কন্ঠ। স্লোগান চলেছে অবিরাম রাত পর্যন্ত। সেই মানুষটিকে আর লক্ষ্য করিনি পরে। তবে যেই ভালোবাসায় তিনি নিজের প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে আমাদের দেখিয়ে দিলেন, সেটা আসলেই মনে দাগ কাটে।

111

[ছবিটি তুলেছেন উজানগাঁ, মূল ছবি থেকে ক্রপ করে নেয়া]

বিকেলে আরও একটি ঘটনা ছিল, টিএসসির দিক থেকে হঠাৎ দেখি মেয়েদের বেশ বড় একটা মিছিল শাহবাগ এর দিকে আসছে। সবার হাতে লাঠি, ঝাটা, কন্ঠে স্লোগান। তাদের দেখে এক অদ্ভুত সাড়া পড়ে গেল সমগ্র জায়গাটিতে। অসংখ্য মানুষ দাঁড়িয়ে গিয়ে স্লোগান আর তালি দিয়ে স্বাগত জানালো সেই মিছিলটিকে। এভাবেই নারীরা কালে কালে পথে নেমেছে, আত্মত্যাগ করেছে। প্রীতিলতা থেকে লাকি এভাবেই বাঙালি ইতিহাস গড়তে জানে। আমাদের নারীরা মমতা আর দ্রোহের মিশেলে বারবার প্রমান করেছে, তারা লড়তে জানে। শাহবাগ এ নারীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহন প্রমান করে ইতিহাস মিথ্যা বলে না।


মন্তব্য

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

এধরনের মানুষদের কথা আরও শুনতে চাই। ধন্যবাদ অরফিয়াস।

দেশে ফিরে অবশ্যই শাহবাগ যাবো।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

ক্রেসিডা এর ছবি

আজ বড় একটা মিছিল ব্যানার সহ হেঁটে হেঁটে এয়ারপোর্ট থেকে শাহবাগ পর্যন্ত গেছে দেখলাম।

__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;

অরফিয়াস এর ছবি

শাহবাগ এর আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের, জর্জিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির শিক্ষার্থীদের। সিদ্ধান্ত হচ্ছে সিএনএন ওয়ার্ল্ড হেডকোয়ার্টারে এই শুক্রবার স্মারকলিপি জমা দিতে যাবে আটলান্টার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা।

BSAGT1resized

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

খেকশিয়াল এর ছবি

আজকে বেশিক্ষণ থাকতে পারিনি। অফিস থেকে বের হলাম সাড়ে আটটায়, হেঁটে হেঁটে শাহবাগ এসে পড়লাম। বিরামহীন স্লোগানের জোয়ারে ভেসে ভেসে পাবলিক লাইব্রেরী পেরোতেই একটা জিনিস দেখতে পেয়ে খুবই ভাল লাগলো। দেখি কারা যেন রাজাকার, যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির দাবি নিয়ে লেখা পোস্টার ছাপিয়ে এনে বিলি করছে সবার মাঝে। সচলায়তনের পক্ষ থেকে কি এরকম করা যায়? খুব ভাল হতো।

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

ক্রেসিডা এর ছবি

আমি এটা ভাবতেছিলাম সচলায়তনে "শাহবাগের অর্জন জামাতের ব্যবসা বর্জন" এ যে ৬টা পোষ্টার এসেছে, সেগুলো প্রিন্ট করে ওখানে বিলি করলে দারুন হতো.. অনেকেই সবগুলো জামাত পন্য ও প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বচেতন না।

আমরা এটা সচলায়তন থেকে করতে পারি... কি বলেন?

__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

ওখানে ইতোমধ্যেই (গতকাল ১১ ফেব্রুয়ারী ২০১৩ তারিখে) ব্যানার টাঙানো হয়েছে।

তমসা  এর ছবি

আমার বড় ছেলেটা (বোনের গর্ভে জন্ম, কিন্তু বড় হয়েছে আমার আর আম্মার কাছে,সেই সুবাদে) চলনে বলনে খাঁটি ইংলিশ মিডিয়ামের ব্রয়লার মুরগী। সে-ও গত ৩ দিন ধরে ইউনিভার্সিটির ক্লাস শেষ করে চলে জাচ্ছে শাহবাগ। ভেবেছিলাম হুজুগ (কি করব, সন্দেহবাদিতা যে না চাইতেও মিশে গেছে রক্তে) ; কিন্তু আজ ফোনে কথা বলে যে টগবগে আগুনের আঁচ পেলাম ওর গলায় মনটা ভরে গেল। কি আফসোস করছে আমি কয়দিন আগেই ঢাকা ছেড়ে আসলাম কেন বলে, আমাকে শেখাচ্ছে সাইবার যুদ্ধের কলা কৌশল---------- নাঃ শাহবাগ সব অংক ওলট পালট করে দিল।অংক ভুল করে এত আনন্দ আগে কখন পাইনি।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

চমৎকার উদ্যোগ। তবে একটা সুপারিশ ছিল। ঢাকায় যারা কাছ থেকে শুরুটা দেখেছেন তারা একদম শুরু থেকে একটা ধারাবাহিক বর্ননা দিতে পারেন। সূচনার ইতিহাসটা জরুরী। পাঁচ তারিখ কটায় কিভাবে শুরু হলো, কিভাবে ছড়ালো, কারা ছিল সবকিছু থাকা উচিত।

নইলে সুযোগ সন্ধানীরা এটাকেও স্বাধীনতা ঘোষণার মতো ছিনতাই চেষ্টা করতে পারে। ইতিমধ্যে তার লক্ষণ দেখা গেছে। কৃতিত্ব হাইজ্যাকে আমাদের জুড়ি মেলা ভার।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

প্রবলভাবে সহমত। আপনি বস্‌ চট্টগ্রামেরটার খোঁজ নিয়ে লিখে ফেলেন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

হিমু এর ছবি

দয়া করে নিজের দেখা উল্লেখযোগ্য ঘটনা বা চরিত্র বর্ণনা করুন। থামসাপ না।

হৃদয় এর ছবি

ডিউটি থেকে বাসায় ফিরেই দ্রুত বের হয়ে যাই প্রজন্ম চত্বর শাহবাগের দিকে । সি.এন.জি থেকে যখন মৎস্য ভবনের সামনে নামলাম ঘড়ির কাটায় তখন ঠিক ৩.৫৫ টা । পাঁচশো টাকার নোটটা এগিয়ে দিতেই উত্তর পেলাম ভাংতি হবেনা । একদিকে সময় নেই, অন্যদিকে মানিব্যাগে ভাংতি মাত্র ৪০ টাকা । এই কথা জানাতেই সি.এন.জি চালক জড়িয়ে ধরে আমাকে বলে, ৪০ টাকা দিয়া তাড়াতাড়ি যান, ৪টা বাজতে বেশি বাকি নাই । অজান্তে চশমার আড়ালে চোখটা ভিজে গেল । এই আবেগ ও ভালোবাসা উপেক্ষা করার ক্ষমতা উপরওয়ালা আমাকে দেয় নাই ।।

মনির এর ছবি

ব' তে বাংলাদেশ
ভ' তে ভালোবাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।