এ যাবতকাল বাংলাদেশের ক্রিকেটে যা কিছু ঘটেছে তাতে কোনো বরপুত্র কিংবা ওয়ান-ম্যান-শো’র ক্যারিশমাটিক হিরো মঞ্চে আসেনি এখনো। কোনো কোনো ম্যাচে বা সিরিজে একক নৈপূণ্যের কিছু ঘটনা অবশ্যই ঘটেছে, কিন্তু ধারাবাহিকতার তীব্র অভাবে মুছে গেছে সেসব স্মৃতি। ঊনিশশ’ চুরানব্বইতে বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে নাইরোবিতে বাংলাদেশের ব্যর্থতার পর ফিরতি সফরে বাংলাদেশে এসেছিল কেনিয়া - ঠিক এক বছর পরেই। সেবার বাংলাদেশ জাতীয় দল, যুবদল, এমনকি অনুর্ধ্ব উনিশ দলের সঙ্গেও সব ম্যাচে হেরেছিল কেনিয়া। হেরে গেলেও টানা প্রায় সব ম্যাচে বাংলাদেশের আতঙ্ক ছিলো দুইজন; স্টিভ টিকোলো, মরিস উদুম্বে। কেনিয়া মানে এই দুইজন, আর এই দুইজনের টিকে থাকা মানে প্রতিপক্ষের ওপরে চাপ। এরপরের বিশ্বকাপের তিন আসরে এই দুইজনই দেখিয়ে দিয়েছে কেনিয়ার সামর্থ্য। গত এক দশকে বাংলাদেশের ক্রিকেট এগিয়েছে অনেক, জয়ের সংখ্যাও বেড়েছে। কিন্তু, পায়নি নির্ভরযোগ্য কোনো ব্যাটসম্যান কিংবা বোলার যে কিনা একাই পালটে দিতে পারে খেলার সমীকরণ...। বোলিং-ব্যাটিং-ফিল্ডিং; তিন ডিপার্টমেন্টে দারুণ খেললেই কেবল জয়ের দেখা মিলেছে কালেভদ্রে।
আশার ব্যাপার হলো – সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বাংলাদেশ কেবল অভিজ্ঞতা লাভ কিংবা সম্মানজনক পরাজয়ের লক্ষ্যে আর মাঠে নামে না, চেষ্টা করে নিজেদের সেরাটুকু খেলতে। আমরা দর্শকরাও আশায় থাকি - তামিম প্রথম পনেরো ওভারে ধুমাদুম কিছু পিটিয়ে দিলে, ইমরুল কায়েস বা জুনায়েদ সিদ্দিকী ঠান্ডা মাথায় সাপোর্ট দিলে, মাঝে এসে সাকিব-রকিবুল-মুশফিক-মাহমুদউল্ল্যাহ স্লগ ওভার পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেলে, শেষে হয়তো নাঈম ইসলাম-রাজ্জাক কয়েকটা চার-ছয় মেরে দিলে বাংলাদেশ ‘কিছু একটা’ করেও ফেলতে পারে! কতোই বা আর করা হয় সবসময় – সেটাও বড় প্রশ্ন ইদানিং।
ঠিক এ অবস্থায় –রকিবুল হাসান নামের ব্যাটসম্যানটি উপেক্ষা-অভিমানের অনুযোগে দল ছেড়ে চলে গেলে বাংলাদেশ ক্রিকেটের কী-ই বা এসে যায়? রকিবুলের প্রোফাইল দেখছিলাম, আহামারী কোনো পরিসংখ্যান নেই। কিন্তু, এরপরেও রকিবুলকে দলে রাখা যায় বলে মনে হয়েছে বিভিন্ন সময়ে, বিশেষ করে মনে পড়ে গত ওয়েস্ট-ইন্ডিজ সফরে সাকিবের সঙ্গে রকিবুলের কয়েকটি পার্টনারশীপের কথা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চলতি সিরিজে ওয়ান-ডে’তে রকিবুল বাদ পড়লেও প্র্যাকটিস ম্যাচে পরীক্ষা দিয়ে, ভালো পারফর্ম করে দলে ফিরবে এমন ইংগিতই দেখা দিয়েছিলো। এমনকি আশরাফুল-রকিবুলের মধ্যে এক রকম তুলনাও এসেছিল নানান পত্রিকা রিপোর্টে, এরকম শিরোনামে – ‘রকিবুল পেরেছেন, আশরাফুল পারেননি’।
কিন্তু, দলে ডাক পেয়েই সব রকম ম্যাচ থেকে অবসর নেয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে রকিবুল সবাইকে চমকে দেন। মিডিয়ায় উঠে আসে নানান সম্ভাব্যতার কথা। অভিমান, টিজিং, ব্যক্তিগত কারণ, বোর্ড-সিলেক্টরদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব, নাকি মাশরাফি ঘটনার পুনরাবৃত্তি?
আজ পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে দেখছিলাম, রকিবুল মুখ খুলেছেন -
‘দল থেকে বাদ পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভেবেছি যে আমি আমার যোগ্যতা দিয়ে, আমার পারফরম্যান্স দিয়ে আবারও দলে ঢুকেই অবসর নেব।’ নিজেকে প্রমাণ করার জন্য রকিবুল বেছে নিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন দিনের প্রস্তুতি ম্যাচকেই, ‘তিন দিনের প্র্যাকটিস ম্যাচে প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি এবং দ্বিতীয় ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরি করি। এর পরই ঘোষণা করা হয় জাতীয় দল। এবং জাতীয় দলে সুযোগও পেলাম। এর পরই স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে নিলাম।’
এ কথা শুনে মনে হচ্ছে, আবেগের পাশাপাশি ‘দেখিয়ে দেয়ার’ একরকম জেদও আছে। প্র্যাকটিস ম্যাচে সেঞ্চুরি, হাফ সেঞ্চুরি না করলে রকিবুল কি এ সিদ্ধান্ত নিতেন? কিংবা নিতে পারতেন? এখনো পর্যন্ত পাবলিক সেন্টিমেন্ট রকিবুলের পক্ষেই বলে মনে হচ্ছে। অন্ততঃ কোচ এবং বোর্ডের পক্ষ থেকে রকিবুলের সঙ্গে যোগাযোগের ও বোঝানোর যে খবরগুলো মিডিয়ায় এসেছে তাতে স্পষ্ট রকিবুল চাইলেই দলে ফিরতে পারেন। ব্যতিক্রম কেবল অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। সাকিব মনে করেন “এই সিদ্ধান্তটা আবেগ থেকে নেওয়া। এর ফলে রকিবুলই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এবং আগের ঘটনাগুলোতে (মাশরাফির সরে দাঁড়ানো জাতীয়) বোর্ড শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি বলেই এই রকিবুল অধ্যায়”। সাকিবের এ মন্তব্যে অধিনায়কোচিত কাঠিন্য আছে, আবেগ বাদ দিয়ে বাস্তবতার ছাপ আছে; কিন্তু কিছুদিন আগে সাকিব-মাশরাফি শীতল সম্পর্ক নিয়ে ক্রিকেটীয় উত্তাপ চাপা দেয়ার একটা সুপ্ত সুক্ষ্ম চেষ্টাও আছে। একটি চলতি সিরিজে টীমমেটের নাটকীয় বিদায়ের কারণ যখন ঘোলাটে, তখন অধিনায়ক সাকিব এমন গরমাগরম বক্তৃতা দিয়ে কতোটা সুবিবেচনার পরিচয় দিলেন সেটা ক্রিকেট বোদ্ধারাই বিচার করবেন আগামীতে। টিভি চ্যানেলে এক সাক্ষাতকারে যেমনটা বলছিলেন সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল; ক’দিন আগে মাশরাফি এবং এখন রকিবুল নিয়ে যা ঘটলো এরকম যদি আরো কয়েকটি ঘটে, তাহলে ২০১১ এর বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল নির্বাচন হতে পারে সবচে’ সংবেদনশীল কাজ। বোর্ড এবং টীম ম্যানেজমেন্টের এখনি উচিত হবে ঘটনার পেছনের ঘটনা বিচার বিশ্লেষণ করা। কোচ জিমি সিডন্স যেমনটা বলছেন - পেছনে অন্য কিছুও আছে। বাংলাদেশের ক্রিকেট পাকিস্তানের পথে যাচ্ছে কিনা সে প্রশ্নের জবাবে সিডন্স বলেছেন - 'আশা করি, সেদিকে যাবে না। পাকিস্তানের ক্রিকেটে তো এখন রীতিমতো হট্টগোলই চলছে। আমরা ওদের চেয়ে অনেকটাই সভ্য।'
রকিবুলের বিদায় নিয়ে আরেকটি ইন্টারেস্টিং খবর শেয়ার না করে পারছি না। চট্টগ্রাম থেকে সাইদুজ্জামানের পাঠানো রিপোর্টের সুত্রে দৈনিক কালের কন্ঠ প্রশ্ন তুলেছে “আধ্যাত্মিকতার আহ্বানেই রকিবুলের বিদায়!” রিপোর্টে বলা আছে – “ইদানীং তাঁর মধ্যে নাকি ধর্মীয় চিন্তা-ভাবনাগুলো প্রাধান্য পেত বেশি। সুদ নিতে হবে না, এমন ব্যাংকে টাকা রাখতেন রকিবুল। তবে ধর্মের প্রতি অন্ধ অনুরাগ থেকেই জাগতিক প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তিকে উপেক্ষা করতে পেরেছেন রকিবুল? 'টাকা দিয়ে কী হবে? কদিনই বা বাঁচব,' সতীর্থদের নাকি এমন কথাও বলতেন তিনি। এই মানসিকতার কারণেই হয়তো আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের চেয়ে রকিবুলের কাছে দল থেকে বাদ পড়ার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে”।
রকিবুল নিয়ে আরো কয়েকদিন মিডিয়ায় হৈ-চৈ হবে নিশ্চয়। গাল-গপ্প রটবে আরো বেশ কিছু হয়তো। তবে এটা নিশ্চিত - বিদায়ী রকিবুল হারিয়ে যাবেন, বিস্মৃত হবেন। পদ্মা-মেঘনায় যেমন করে অনেক জল বয়ে যাবে, তেমনি বিশ্ব ক্রিকেটের মাঠে শত শত ওভার বল করা হবে, রান হবে হাজারে হাজার, দর্শক হাততালি দেবে উল্লাস করবে নতুন কোনো খেলোয়াড়ের চার-ছয়- সেঞ্চুরীতে।
বাইশ বছর বয়েসী অভিমানী রকিবুল, হায়, রকিবুল, হায়!
পৃথিবী খুব কঠিন জায়গা, এখানে চলে গেলে কেউ কাউকে মনে রাখে না। আমাদের বিকাশমান এ ব্লগ সমাজ থেকে কতো কতো অভিমানী চলে গেলো, কিছুদিন হৈ-চৈ হলো, কিন্তু তারপরে? মান্না দে যেমন দেখে গেছেন - কফি হাউজের সাতটি চেয়ার সাতটি পেয়ালা খালি থাকেনি। কিছু থেমে থাকেনি, থাকে না, থাকবেও না। নিরালা ডাকনামের রকিবুল হাসান সদ্দিচ্ছায় চলে গেলে কী-ই বা হবে আর!
এই সচলায়তনেই কে যেনো কবে বলেছিলো - আবেগ বড্ডো বিধ্বংসী। অপটু ব্যবহারে নিজেরই সর্বনাশ হয়।
মন্তব্য
আবেগ বড্ডো বিধ্বংসী। অপটু ব্যবহারে নিজেরই সর্বনাশ হয়। কথাটা সত্য। তবে এ থেকে কিছু প্রাপ্তিও আসতে পারে। মনের শান্তি।
...........................
Every Picture Tells a Story
এই একজনের মনের শান্তি অন্যদের বিরক্তি ও ক্ষতির কারণ। পেশাদারিত্বে একজনের মনের শান্তি মূল্যহীন।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
পৃথিবীতে নাকি নোতুন কোনো ঘটনা ঘটে না, পুরোনো ঘটানাই ঘুরেফিরে আসে। বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের চল কমলেও বাংলাদেশ ক্রিকেট টীমে আবার বাল্যবিবাহ সিস্টেম চালু হয়েছে। অনভিজ্ঞতাই যেন এখানে সবচেয়ে বড়ো যোগ্যতা। অভিজ্ঞ পাইলটকে রিপ্লেস করছে ১৫ বছরের মুশফিক, সেরা টেস্ট ব্যাটসম্যান বাশার এখন শুধুই ওল্ড ম্যান আর রফিকের নাকি মেজাজ খারাপ। খালেদার একপুত্র চাঁদাবাজি করে, আরেক পুত্র ক্রিকেট নিয়ে খেলে, তত্ত্ব সরকারের সময় আর্মির বুড়াভাম হয় ক্রকেট বোদ্ধা আর এখন বঙ্গবন্ধুর ক্রিকেট নিয়ে দেখা গায়েবী স্বপ্নের বাস্তবায়নে লুটা কম্বল হাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে এক মুজিব সৈনিক।
এইটা একটা ডাহা মিথ্যা কথা। আগে সম্মানজনক পরাজয়ের চিন্তা করে মাঠে নামা হতো আর এখন জয় পরাজয় নিয়েই কোনো চিন্তা করা হয় না। ব্যক্তিগত পারফর্ম্যান্সের গ্রাফ নিয়া গবেষণা হয়। তবে এখানে ব্যক্তি হলো একটা ডায়নামিক এনটিটি। যে একটা ৪০ মারতে পারে, তার গ্রাফটাই সামনে আসে। অবশ্য পরের সিরিজে সে তার ২২ অ্যাভারেজ ঠিক রাখতে ঠিকই টেলিফোন নাম্বার স্কোর করা শুরু করে। সুতরাং প্রতি সিরিজে ব্যক্তি চেইঞ্জ হয়। টীমের ওভারঅল পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হয় না।
রকিবুল হলো এই নষ্ট সিস্টেমের ফসল। স্পষ্টতই সে পেশাদারিত্ব শেখেনি। হরতাল ভাঙচুরও পেশাদার কাজ না; কিন্তু বাংলাদেশে হরতাল না করলে আসলে কেউ কথাই শোনে না। রকিবুল আর বাংলাদেশ দলে আসতে পারবে না, অন্তত দীর্ঘমেয়াদী সুযোগ সে পাবেই না। জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া পুরোটাই নির্ভর করে কর্তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর। পুরা ঘটনায় রকিবুলের একারই ক্ষতি, সিডন্স ঠিকই বছরের পর বছর টাকা পাবে, বিসিবি কর্তারা ক্রিকেটের টাকায় বিদেশভ্রমণ করবে, সাকিবের প্রতিভা বিকশিত হবে পলিটিশিয়ান হিসেবে, মাশরাফি আর ফিরবে না, অর্থহীন ঢাকা লীগের রকিবুলের কখনো অফ ফর্ম যাবে, কখনোবা হয়তো আরেকটা ট্রিপল সেঞ্চুরিই হাঁকিয়ে বসবে। কী বা আসে যায়!
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
এইখানে বঙ্গবন্ধুরে নিয়া টানা হেচড়ার তীব্র প্রতিবাদ জানাই। দিন দিন এইটা একটা ফ্যাশন হয়ে যাচ্ছে!!
প্রথমেই শিমুল ভাই আপনাকে ধন্যবাদ জানাই এমন সুলিখিত একটি লেখার জন্য।মাশরাফির ঘটনার পরে প্রথমে পত্রিকার সংবাদ পড়ে সাকিবের উপর খুব মেজাজ খারাপ হয়েছিল। পরে আমার ভুল এবং অপেশাদারিত্বটা মাশরাফিরই বেশি মনে হয়েছে। টিম ম্যানেজমেন্ট যদি মনে করে পরের ম্যাচে মাশরাফি বর্তমান ফর্ম আর ফিটনেস মিলিয়ে প্রথম একাদশে আসার যোগ্য না, সেটা মেনে না নিয়ে মাশরাফি যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে সেটা চরম ছেলেমানুষী বলেই আমার মনে হয়েছে পরে।
সিডন্স যদিও বলেছেন তিনি মনে করেন রকিবুল টোয়েন্টি টোয়েন্টিতে ৩০ জনের প্রাথমিক দলে থাকার যোগ্য(আমিও মনে করি)--কিন্তু রকিবুল কোনোমতেই টোয়েন্টি টোয়েন্টির জন্য আদর্শ ব্যাটসম্যান না। গত টোয়েন্টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে যে সময়টায় সমানে পিটিয়ে খেলার কথা সে সময়টায় অনেক বল নষ্ট করে রকিবুল বুঝিয়ে দিয়েছেন যে এইটা তাঁর পেয়ালার চা নয়।সবাই আসলে সব কিছু পারে না---যেমন ফর্মে থাকা রকিবুলের মত ধীর-স্থির এবং নির্ভরযোগ্যভাবে সহজাতভাবে ইনিংস বিল্ড-আপ করতে বাংলাদেশের আর কোনো ব্যাটসম্যান পারে না।তাই ওয়ানডে এবং টেস্টের জন্য রকিবুলকে আমি অনেক বড় প্রোসপেক্ট মনে করি এবং আশা করি তিনি তার বালকসুলভ অভিমান ভুলে তাড়াতাড়ি ফিরে আসবেন।
রকিবুলের এই অবাক অবসরের ঘোষণা ক্রিকইনফো মারফতে জানতে পেরে প্রথমে বিষ্মিত হয়েছিলাম। কিন্তু আমি ভাবছি-
১.
একটা গুরুত্বপূর্ণ টেষ্টের ঠিক আগে আগে নিজেকে দল থেকে প্রত্যাহার করা কতটা দায়িত্ববোধের পরিচয় দেয়? রকিবুল নিজেই বলেছে যে সে আগে থেকেই অবসরের পরিকল্পনা করে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। এটা দায়িত্বশীলতার চরম অপমান। এর জন্য তার শাস্তি হওয়া উচিৎ। অবসর নেবার ভাবনা মাথায় থাকলে সেটা প্রথমে নির্বাচকদের জানানো উচিৎ ছিল যাতে সেই অনুযায়ী তারা দল নির্বাচন করতে পারে। কিন্তু, না, উনি তো তার যোগ্যতা দেখিয়ে ছাড়বেন। এই মনোভাব হটকারী এবং এই পয়েন্টে আমি সাকিবের সাথে পূর্ণ একমত, এটা শাস্তিযোগ্য উপরাধ বলে গণ্য করা উচিৎ।
২.
সাকিবকে এখানে টেনে আনা হচ্ছে কেন? দলের শৃঙ্খলা বজায় রাখা অধিনায়কের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং সেটার প্রতিকার হিসেবেই সে শাস্তির কথা উল্লেখ করেছে। সাকিবকে পলিটিশিয়ান ভাবার কোনো কারণ আমি দেখি না।
এই বক্তব্যে ১০০% সহমত।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
পূর্ণ সহমত। সাকিবের বয়সের তুলনায় ওকে আমার অসম্ভব পরিণত মনে হয় যা বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য একদমই ব্যতিক্রম এবং অসম্ভব দরকারী।এবং ওর পা্রফরম্যান্সই সম্ভবত সবচেয়ে বড় প্রমাণ। আর সংবাদ সম্মেলনে সাকিব যে কথাগুলো বলেছে সেগুলো সাংবাদিকরা ওকে জিজ্ঞেস করেছেন দেখেই বলেছে এবং এটাও বলেছে যে ও চাচ্ছে না এই প্রশ্নগুলো সাংবাদিকরা ওকে করুক। আমিও
ফাহা ভাই, সাকিবও ইম্যাচিউর। কালের কণ্ঠের বক্তব্য কত পার্সেন্ট ফিলটার করে বাদ দিতে হবে, এটা নিশ্চিত না। কিন্তু এখানে সাকিবের কথাগুলো তার বালকত্বকেই প্রকাশ করে। ক্রিকেটারদের কোড অব কন্ডাক্ট অনুসারে মাশরাফির যদি সাজা প্রাপ্য হয়, তাহলে বোর্ড তাকে, সেই সাজা দিবে। কিন্তু সেটার ওকালতি সাকিবের (ক্যাপ্টেনের) মুখে মানায় না। রকিবকে স্বাগত জানানো, না জানানোর ব্যাপারেও তার উত্তর অপেশাদার। দল নির্বাচনে ক্যাপটেনের ভূমিকা থাকতে পারে; কিন্তু অ্যাট দি এন্ড অব দ্য ডে, সে যে দল পাবে, তা-ই নিয়েই খেলতে হবে, স্বাগত জানাবো কি জানাবো না - এই অপশন ক্যাপ্টেনের হাতে থাকে না।
দল থেকে রকিবের বাদ পড়ার পক্ষে সাফাই গাওয়াও ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব না, সেটা নির্বাচকদের কাজ। এখন তামিম, সাকিবরা দলে ভালো অবস্থানে আছে; কিন্তু সবদিন সমান যায় না। পাশার দান উলটে গেলে তখন কার পরিণতি কেমন হবে, এটা বলা টাফ। বাংলাদেশ ক্যাপ্টেনের উচিত এখন সাংবাদিকদের সামনে মুখ না খুলে খেলায় মনোযোগ দেয়া।
ক্যাপটেনের আচরণ কেমন হওয়া উচিত, তার উদাহরণ হতে পারে গাঙ্গুলি। সতীর্থদের স্বার্থ না দেখলে একজন দলনেতা কখনো শ্রদ্ধা পায় না, দলের পারফর্ম্যান্সেও তার প্রভাব পড়ে। অন্যদিকে বোর্ডের চামচামি করলে (বোর্ডকে সতীর্থদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর হওয়ার জন্য ছাড়পত্র দিলে) কিছুটা সময় হয়তো পদ ধরে রাখা যায়; কিন্তু আসল কাজের কিছুই হয় না। একজন ইনোভেটিভ মেরুদন্ডওয়ালা ক্যাপ্টেনের অভাব বাংলাদেশ ক্রিকেটের একটা বড়ো সমস্যা। সাকিবের পক্ষে এরকম একজন ক্যাপ্টেন হওয়া সম্ভব; কিন্তু সেই পথে না হেঁটে গতানুগতিকতার লাইনে চলে গেলে ক্রিকেটেরই ক্ষতি।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
বলাইদা, আমার মনে হয় না সাকিব বোর্ডের পক্ষে ওকালতি করেছে। বরং একজন মেরুদন্ডওয়ালা ক্যাপ্টেনের মতই রকিবুলের এই নাটকে সে যে বিরক্ত সেটা বলেছে, এর কারণে দলে যে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে সেটা সে তুলে ধরেছে , এবং দুয়েকটা জায়গা ছাড়া তার ভাষাও যথেষ্ঠ পরিমিত ছিল বলেই আমার বিশ্বাস। কালের কন্ঠে প্রকাশিত তার ভাষাতেই, এসব ঘটনা দলে অবশ্যই প্রভাব ফেলে। জানি না এ ক্ষেত্রে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। এটা পুরোপুরিই ক্রিকেট বোর্ডের ব্যাপার। তারা এ ব্যাপারে আরো কঠোর হলেই ভালো।' তবে রকিবুলের টিটুয়েন্টি থেকে বাদ পড়ার সাফাইটা আমার কাছেও ভালো লাগেনি।
যাই হোক, গাঙ্গুলির মত ইদানিংকালে সাঙ্গাকারাকেও আমার যথেষ্ট পরিণত একজন অধিনায়ক বলে মনে হয়। সাকিবের শেখার আছে অনেক কিছু, এবং বাংলাদেশ দলের গুটিকয়েকজনের মধ্যে সেই একজন যার শেখার আগ্রহ আছে।
রকিবুল প্রসঙ্গে আরেকটা কথা না বলে পারছি না, যে খেলোয়াড় দেশের আগে, তার দলের আগে নিজের অভিমানকে প্রাধান্য দেয় তাকে বোধহয় দলে খুব একটা প্রয়োজনও পড়ে না।
সেমিঅফটপিক: আজকে টসে জিতে ফিল্ডিং নেয়াটা একটা বালকসুলভ সিদ্ধান্ত হয়েছে এতে আমার কোনো দ্বিমত নেই।
রকিবুলের রেজিগনেশন লেটারের একটা ফোটোকপি আশরাফুলকে দেয়া উচিত। নাম-সিগনেচারের জায়গাটা সাদা কালি মেরে দিয়ে কপি করলেই হবে।
রকিবুলের জায়গায় আমি হলে একই কাজই করতাম। হোক বিধ্বংসী। তবুও আবেগ আছে বলেই প্রাপ্য সম্মান আদায় করে নেওয়া যায়। রকিবুল খুব ঠিক কাজ করেছে। এই টীম ওকে ডিসার্ভ করেনা।
"আমরা কি কখনও খেলা কে খেলা হিসেবে নিতে পেরেছি? আমাদের সব কিছুই হচ্ছে ম্যাটার অফ লাইফ এন্ড ডেথ"- সত্যজিত রায়ের চলচ্চিত্র কাঞ্চনজঙ্ঘা।
হায় কবে যে আমাদের দেশের ক্রিকেটারগুলো পেশাদারিত্ব শিখবে কে জানে।
ব্যাপারটা দুঃখজনক বটে, কিন্তু এটা আরেকবার বাংলাদেশ ক্রিকেটের অদূরদর্শী সিস্টেমের প্রকৃত চেহারাটা তুলে ধরল। বলাইদার সাথে সম্পুর্ন একমত...
ইমম্যাচিউরড ছেলেপেলেকে যে হারে গত বেশ কয়েক বছর ধরে নেওয়া হচ্ছে, তাতে এ টাইপের ঘটনা ঘটবেই। ঘরোয়া ক্রিকেটে এক-দুই সিজন মোটামুটি ভাল করলেই জাতীয় দলের দরজা খুলে যায়। যার ফলে পেশাদারিত্বটাও আসে না, দলের উপর সেরকম মায়া-মমতাও জন্মায় না!
যদি ঘরোয়া ক্রিকেটে পাঁচ-ছয় বছর ধরে ভাল পারফর্ম করে, অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে চান্স পেত, তাইলে আমাদের সোনার ছেলেরা বুঝত জাতীয় দলকে প্রতিনিধিত্ব করার কি মহিমা, কত বড় সম্মান! হুটহাট তখন কেউ বলতে পারত না, আজকে খেলব, কালকে খেলব না!
সুতরাং, অনভিজ্ঞ, নবীনদের জন্য জাতীয় দলে চান্স পাওয়াটাকে কঠোর থেকে কঠোরতর করতে হবে এবং এখনি সেটা করার উপযুক্ত সময়।
আর রকিবুলের প্রতি সমবেদনা থাকছেই (কারন সে সিস্টেমের বলি), কিন্তু তাকে মাফ করা উচিত হবে না। আমার শুধু প্রত্যাশা যে, এই বলিটা যেন বৃথা না যায়, নির্বাচক ও ক্রিকেট বোর্ডের যেন টনক নড়ে এবং তারা যেন বুঝতে পারে গলদটা কোথায়?
=====================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!
==========================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!
এটাকে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত ছাড়া আর কিছুই বলার নেই
-- তাজবিনূর শোভন
বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে হা-হুতাশ আসলে আমাদেরও মানায় না। খুব প্রতিযোগিতাপূর্ণ ঘরোয়া ক্রিকেটের মধ্যে দিয়ে পিরামিডের আগায় উঠে আসা খেলোয়াড়রা জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া শুরু করলে এইসব রকিবুলীয় রঙ্গরসিকতা দেখতে হয় না।
আমাদের দেশে মনে হয় আঞ্চলিক বিভাজন করে জমজমাট ঘরোয়া ক্রিকেটের একটা সংস্কৃতি শুরু করা যায়। "দুনিয়া কাঁপানো" স্পনসরদের সাড়া পেলে আর পুরস্কারের মূলাটা বড় থাকলে সেই ক্রিকেটে উৎসাহী খেলোয়াড়েরও অভাব পড়বে না। চৌষট্টিটা জেলা আছে, জেলাওয়ারি ক্রিকেট ক্লাব হোক, সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে বত্রিশ-ষোলো-আট-চার-দুই-এক হিসেবে দেশ সেরা টিম উঠে আসবে। এই খেলা থেকেই বহু প্রতিভাবান বেরিয়ে আসবে যারা উৎকট শুভ্রদের তৈরি আশরাফুলীয় বেলুন ফাটিয়ে দিতে পারবে। সিলেক্টরদের হাতে তখন প্রকাশ্য স্ট্যাটস থাকবে, সারা দেশের লোক দেখতে পারবে কারা কেন কী যোগ্যতায় জাতীয় দলে চান্স পাচ্ছে। তা না হলে ক্যাচ-ভোদু মুশফিকের মতো লোকজন উইকেটের পিছে গ্লাভস নিয়ে দাঁড়াতেই থাকবে।
"চৌষট্টিটা জেলা আছে, জেলাওয়ারি ক্রিকেট ক্লাব হোক, সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে বত্রিশ-ষোলো-আট-চার-দুই-এক হিসেবে দেশ সেরা টিম উঠে আসবে। এই খেলা থেকেই বহু প্রতিভাবান বেরিয়ে আসবে"-----এই ফরম্যাটে খেলইতে গেলে এক সিজনে হবে না। আর জেলাওয়ারি ক্রিকেট ক্লাব অলরেডি আছে এবং সেইখান থেকেই বিভাগীয় দলগঠন করে বিভাগীয় লীগ হয়।
অস্ট্রেলিয়ানরা ২৮ বছরে ডেব্যু করে, আর বাঙালি ২২ বছরে রিটায়ার করে...
চমৎকার লাগলো লেখাটা।
তবে রকিবুলের এমন সিদ্ধান্ত পছন্দ হয়নি আমারও, যে কারণেই নিয়ে থাকুক না কেন। এমন একটা সময়ে এই সিদ্ধান্তটা নিলো, যা মোটেও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয় না।
রকিবুল, মাশরাফি, যা করেছে তার পুরাটাই বিরক্তিকর। এটা নিয়ে কথা বলতেও বিরক্ত লাগে।
প্রতিভা দিয়ে কাজ হবে না। প্রতিভার বাস্তব প্রয়োগ দেখাতে হবে। প্রতিভাবান অনেকেকই আমরা দেখেছি যারা বাস্তবে দুধভাত। (আল শাহরিয়ার রোকনের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে, তার প্রশংসা আমি লিপুর মুখে শুনেছি যে ও নাকি খুবই-খুবই প্রতিভাবান খেলোয়াড়)
--রোকন মামারে আমি সামনে থেকে খেলতে দেখছি ২০০৩ এর সাউথ আফ্রিকা বিশ্বকাপে। কেনিয়া বিরুদ্ধে খেলা। রোকন ওপেনার। প্রথম বলে মারলো চার, পরের বলে ছয়, তার পরের বল উঠাইয়া দিল আকাশে। পরদিন পত্রিকায় আসছিলো,' ছাগলের মতো শট খেলে আউট হলেন রোকন'। এই হইলো আমাগো প্রতিভাবানদের নমুনা।
রকিবুল গেছে যাউক। এক রকিবুল লোকান্তরে, হাজার রকিবুল ঘরে ঘরে।
রকিবুল আর মাশরাফি যা করেছে- তার পুরোটাই বিরক্তিকর ও অপেশাদার। কিন্তু বোর্ডের অবস্থা কী? লোটাস কামাল ভদ্রলোক বোর্ডের চেয়ার হওয়ার পর থেকে নানা ধরনের অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। সাকিব তাঁর পা ধরে ক্ষমা চাচ্ছেন- এরকম দৃশ্যও দেখা গেছে। ক্রিকেট টিমে পেশাদারিত্বের বদলে স্বজনপ্রীতি বা তোষামোদির চল প্রচুর পরিমাণে বেড়ে গেছে বলে শোনা যায়। বোর্ড যদি পেশাদার না হয়, তাহলে খেলোয়াড়দের কাছ থেকে পেশাদারিত্ব আশা করি কী করে?
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
রকিবুল যদি মনে করে থাকে তার এই সিদ্ধান্তে কোন স্টেটমেন্ট তৈরি করা হবে তাহলে সেটা ভুল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার পারফর্মেন্স বলার মতো কিছু নয়। সে যেই পারফর্মেন্সের কারণে দলে ফিরেছে, সেটাও একটা ফার্স্ট ক্লাস হতে হতে না হওয়া ম্যাচে। আন্তর্জাতিক ম্যাচে তেমন একটা সেঞ্চুরি করে খেলা ছেড়ে দিলে সেটা অন্তত এর থেকে ভালো হতো। জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার পরে দলকে বিপদে ফেলে এইভাবে চলে যাওয়া (বলছি না সে থাকলে হাতী ঘোড়া মেরে ফেলত, কিন্তু সে চলে যাওয়ায় তার জায়গাতে আবার নতুন খেলোয়াড় খুঁজতে হয়েছে) খুবই অপেশাদারিত্বপূর্ণ হয়েছে।
কর্মকর্তাদের ব্যাপারে নতুন করে বলার কিছু নেই। আরেক পাকিস্তান ক্রিকেট দল হতে না চাইলে এই ব্যাপারে সচেতন হতে হবে খুব তাড়াতাড়ি। শুধু ক্রিকেটেই নয়, সব ক্ষেত্রেই অবকাঠামোতে দুর্বলতা নিয়ে কাজ করতে হবে, তৃণমূল পর্যায় থেকে কাজ শুরু করেই সম্ভব প্রকৃত অর্থে উন্নতি।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
ক্ষতিটা শুধু রকিবুলেরই।
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
লেখায় এবং সাকিবের বক্তব্যের সাথে একমত!!
ক্রিকেট মান-অভিমানের বিষয় না, এইখানে খেলতে হইলে এমনেই খেলতে হইব নাইলে ফুট!!
আর অনেকেই পলিটিক্সের কথা বলতেছেন, টেস্ট খেলুড়ে কোন দেশের বোর্ডে পলিটিক্স নাই, সেইটা আগে বলেন?? সবকিছুর সাথে মানাইয়া নিয়াই বোর্ড যা বলে সেইটার মত কইরাই চলতে হইবে চান্দু।
সাকিব আমাদের মতো রাম-শ্যাম-যদু-মধুটাইপ থার্ড পার্সন সিংগুলার নাম্বার হলে তার বক্তব্য ঠিক আছে। কিন্তু ক্যাপ্টেন বা একটা দলের অংশ হিসেবে সহখেলোয়াড়দের সম্পর্কে এরকম মন্তব্য একেবারেই অপেশাদার। মাশরাফি বা রাকিব ক্যাপ্টেনের আয়ত্তাধীন শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে সে যদি তাদেরকে কোনোভাবেই ম্যানেজ করতে না পরে, তাহলে তার দায়িত্ব সেটা ম্যানেজমেন্টে রিপোর্ট করা, সাংবাদিকের কাছে গিয়ে অভিযোগ করা না যে বিসিবি এদেরকে শাস্তি দেয় নাই বলেই এত সমস্যা। মাশরাফি বা নাফিস যখন দলে ফিরবে, তখন স্বভাবতই সাকিবের এই বক্তব্যের একটা খারাপ প্রভাব পড়বে। বিষয়টা ক্লিয়ার না হলে সচলায়তনের উদাহরণ ধরা যাক। ধরি, মডুরা হলো বিসিবি বা ম্যানেজমেন্ট। একজন সচলের বিরুদ্ধে আমার অভিযোগ আছে, তাকে ব্যান মারা হোক বলে যদি পোস্ট দেই, তাইলে সেই সচলের সাথে আমার সম্পর্কটা কেমন হবে? সচলের তুলনায় ক্রিকেট টীমের সদস্যরা অনেক টাইটলি-কাপল্ড। কারণ, তাদেরকে সবাই মিলে দলগতভাবে খুব ফ্রিকোয়েন্টলি একটা লক্ষ অর্জন করতে হয়। ক্যাপ্টেনের সাথে অন্যদের সম্পর্ক খারাপ হলে সেই দলের কাজে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বেই।
টেস্ট খেলুড়ে সব দেশের ক্রিকেট বোর্ডে পলিটিক্স থাক বা না থাক, কোন 'সুস্থ' দেশের সুস্থ ক্যাপ্টেনকে সুস্থ বোর্ড সভাপতির কাছে নতজানু হয়ে ক্ষমা চাইতে হয়েছে, এমনটা অন্তত আমার জানা নাই।
আর রাজনৈতিকভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত বোর্ড কর্তাদের খপ্পর থেকে ক্রিকেটকে যতো মুক্ত করা যায়, ততোই মঙ্গল। ৩ জন নির্বাচক, কয়েকজন কোচ এবং ১ জন ক্যাপ্টেন থাকার পরেও নির্বাচিত দলে বোর্ড সভাপতির কাঁচি চালানোটাও অসুস্থতার পরিচায়ক। কথা হলো, এই অসুস্থ চর্চাকে উৎসাহিত করা উচিত, না নিরুৎসাহিত করা উচিত, সেটা বলাই আমাদের মতো থার্ড পার্সন সিংগুলার নাম্বারের দায়িত্ব।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
এটা হলুদ সাংবাদিকতার একটা নমুনা। যা শুনেছি সাকিব তখন সভাপতির সাথে আলাপ করছিলেন, ক্ষমা চাইছিলেন না। ক্যাপশন বদলে দিয়ে সাধারণ ঘটনাকে এভাবেই বদলে দেয়া যায়।
ঠিক। সাকিব আসলে ওই পোজে লোটাস কামালকে প্রোপোজ করছিলো।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
হাসাইলেন!! ভূমিদস্যুর মালিকানার পত্রিকার রেফারেন্স তাও ছবিসহকারে!! তাইলে চলেন আর একটা ছবি দেখি
দেখছেন ওবামা লোকটা কি বদ। কিন্তু এই ছবির ঘটনা কি আসলেই তাই যা দেখা যাইতাছে?
যাইহোক আপনে যেই ছবিটা দিছেন তার ডানদিকে দেখা যাইতাছে সাকিবের ছবির নিচে কিছু লেখা আছে, কিন্তু পড়া যাইতাছে না। আমি যতদূর জানি ঐখানে সে তার টিমমেটদের ব্যাপারে কিছু বলছে। আপনে কি আপনার কিবোর্ডের মাধ্যমে তার বক্তব্যটা আমাদের জানাবেন এবং সেই বক্তব্যটা কি রাম-শ্যাম-যদু-মধুটাইপ থার্ড পার্সন সিংগুলার নাম্বার টাইপ নাকি ক্যাপ্টেন টাইপ সেইটাও জানাইয়েন। মজার বিষয় হইল পত্রিকাওয়ালারা যা খাওয়াইতে চায় আমরা সেইটাই খাই আর কোকিল কন্ঠ ছাড়া মাপ-মুপ এর ছবি কি আর কেউ ছাপাইছে?
এখন পর্যন্ত (পড়তে হইব বিশ্বকাপ খেলা শুরুর পর থিকা) বাংলাদেশ টিমের কোন ক্যাপ্টেন মাঠের বাইরে হেডম দেখাইছে বিশেষ কইরা যখন কোন সিনিয়ার প্লেয়ার টিমে ছিল? এমনকি মাঠের মধ্যেই অনেককাল পর্যন্ত বোতল বয়রা, নাইলে বাউন্ডারি লাইন থিকা কোচের, নির্বাচকের বা ম্যানেজার আর নাইলে বোর্ড সভাপতির বার্তাও ক্যাপ্টেনের কাছে পৌছানো হইছে অনেককাল এখন এইটা করতে হইব। আমার যদি ভুল না হয় চাচার (সুজন ভাই) সময় থিকাই এই অবস্থার পরিবর্তন কিছুটা হইলেও হইছে এবং আজ পর্যন্ত অর্থাৎ মাঠে ক্যাপ্টেন একা বা মিটিং কইরা ডিশিনত নিতে পারতাছে। হঠাৎ কইরাই সেই সিস্টেমে ম্যালফাকশন দেখা দিছিল আর লোটা কম্বলের সাথে গন্ডোগোলটা এই কারণেই।
কথা হইল গিয়া সাকিব ক্যান ওপেনলি সাংবাদিকগো এই কথা কইল? কারণটা হইল কিছু কিছু সিনিয়র খেলোয়ার সাংবাদিক পালে। তাই সেইসব সিনিয়র খেলোয়াড় যারা টিমে নাই তারা এবং তাদের অনুসারীরা যাতে সতর্ক হয় সেই জন্যই বলছে তা না হইলে হয়ত দেখা যাইত আরও অনেকেই সকল ধরনের খেলা থিকা অবসর নিতাছে। একটা সিরিজের মাঝখানে কই পুরাটিম গেম প্লান নিয়া কথা কইব তা না সাংবাদিক আর অন্যসব ঝড়ঝাপটাই সামলাইতে সামলাইতে হিমশিম খাইতাছে।
ধরেন আমি একজন সেলিব্রেটি ব্লগার সচলের এবং কোনদিন যদি কালা-মডুরে গাইল দেই এবং পরে মাপ-মুপ চাই তাইলে কি মডু সব ভুইলা যাইব নাকি আমার পান থিকা চুন খসলে আমারে বান মারবো? যদি আমি সেই সূত্র ধইরাই কই মাশরাফি এবং তারপর রকিব লোটা কমবলের আশকারাতেই এই কু-কামটা করছে যাতে কইরা সাকিব বিপদে পরে এবং তারে সরানোর পথটা মসৃন হয়, তাইলে কি বেশী ভুল হইব!!
"এই অসুস্থ চর্চাকে উৎসাহিত করা উচিত, না নিরুৎসাহিত করা উচিত, সেটা বলাই আমাদের মতো থার্ড পার্সন সিংগুলার নাম্বারের দায়িত্ব। "-----এইখানে এই দায়িত্ব পালন করলে বাংলাদেশ টিমের কোন ক্ষতি নাই কিন্তু এই দায়িত্ব যখন উটপালকরা পালন করে এবং লিখে (ওডিআই সিরিজের মাঝখানে) সাকিব কেন মাশরাফিকে ফোন করল না------ক্ষতিটা তখনই হয়।
আগের যামানা হইলে সাকিবের হাতে হারিকেন আর পিঠে কম্বল অনেক আগেই উঠত, কিন্তু কোচ, নির্বাচক, আর বিশ্বের ১ নম্বর খেলোয়াড়ের তকমাটা আছে বইলা কিছুদিনের মত বাইচ্যা গেল। এখন ভালয় ভালয় বিশ্বকাপ ২০১১ পর্যন্ত টিমে থাকলেই হয়।
এটাতো একদল-একনীতির মতো হয়ে গেল। গণতান্ত্রিক দেশে এরকম স্বৈরাচারী নীতি তো হতে পারেনা। সাকিব যা বলেছে তা ক্যাপ্টেনের মুখে, তাও এই মুহূর্তে, মনে হয় মানায়নি। এটাও বেশ অপেশাদারী হয়েছে বলে মনে হয়। ক্যাপ্টেনকে শুধু পেশাদারিত্ব দেখানোই নয়, ডিপ্লোম্যাটিকও হতে হয়। খেলোয়াড়দের থেকে খেলা বের করে আনাও তার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে বলে আমার মনে হয়। তার এই বক্তব্যে দলের মধ্যে যে নতুন করে টানাপোড়েন শুরু হবেনা তা নিশ্চিত করে বলা যায় না।
মজার বিষয় হলো এই সাকিবের যখন ফর্ম থাকবেনা, সেদিন এসব নিয়েই তাকে আবার খোঁচানো হবে। এটাই আমজনতার বৈশিষ্ট্য। তবে সত্য একটাই হয়, তার একাধিক রূপ থাকেনা।
"গণতান্ত্রিক দেশে এরকম স্বৈরাচারী নীতি তো হতে পারেনা"--------কাগজে কলমে গণতান্ত্রিক তাই স্বৈরাচারী নীতি এখনও অটুট আছে। আর এই উপমহাদেশে এই সব হয় বলেই গাঙ্গুলি দ্রাবিদেরও বোর্ডের সাথে তাল মিলাইয়া চলতে হয় নাইলে বাই বাই!!
বাকী বিষয় উপরের কমেন্টে আলোচনা করছি।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
রকিবুল কেবল নিজেকে অ-দায়িত্বশীলই নয়- প্রমাণ করলেন অপরিপক্ক বলেও। ক্রিকেট বোর্ডের নীতি ঠিক কীভাবে কাজ করে আমি নিশ্চিত নই। আফতাব বা নাইম ইসলামকে টেস্ট দলে না নিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে সারা বছর পারফর্ম করা ফয়সাল হোসেনকে নেয়া হলো না ক্যান, বুঝি না।
ওয়ানডে বা কুড়িকুড়ি ম্যাচ রকিবুলের জন্যে ছিলো না- তবে চেষ্টা করলে সে অবশ্যি টেস্টদলের একটা ভালো অংশ হতে পারতো।
সাকিব বক্তব্যে খেলার দিকে সকলের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চেয়েছে, সেটাই বোধহয় উচিৎ হয়েছে।
_________________________________________
সেরিওজা
নতুন মন্তব্য করুন