গল্প: অবিনাশ বাবু ও কল্পরাজ্য

অমিত আহমেদ এর ছবি
লিখেছেন অমিত আহমেদ (তারিখ: শনি, ০৫/০৭/২০০৮ - ১:৪০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

auto
এক

‘শুনুন মশাই! ...শুনচেন?’

মিসির আলি ভ্রু কুঁচকে প্রশ্নকর্তাকে দেখার চেষ্টা করেন। এই অদ্ভুত রুমটিতে ভোজবাজীর মতো উদয় হবার পর থেকে থেকে তাঁর ভীষণ মাথা ধরেছে। বেশ কিছুদিন থেকেই এমন হচ্ছে। ক’দিন পর পর শরীর কাঁপিয়ে জ্বর আসে। সেই সাথে অসহ্য মাথা ব্যাথা। বয়সের সাথে সাথে শরীর দুর্বল হবে। নানান রোগ বাসা বাঁধবে। এটিই স্বাভাবিক।

মাথা-ব্যাথা কমানোর সব চেয়ে কার্যকরী উপায় হলো চিন্তা করা। উনি তাই করছিলেন। এরই মাঝে ধুতি পড়া লোকটির বাগড়া।

‘শুনছি! বলুন?’

‘এ কেমনতর জায়গা মশাই?’

‘ব্যাপারটি আমিও ধরতে পারছি না।’

‘চিন্তার বিষয় মশাই! দুপুরের আহার শেষে ঠাকুরকে বলেচি দই আনতে। শ্যামবাজারের খাঁটি দই। গতকাল নিজে গিয়ে কিনে এনেচি। এই বয়সে বুঝলেন তো খাবার পরে একটু দই-টই খাওয়া ভালো। হে হে! তো দই এর কথা বলে ইজিচেয়ারে গিয়ে কেবল বসেচি বুঝলেন... বাইরে নান্টুর খেলনা পিস্তলের টক-টক আওয়াজও বেশ কানে আসচে... এমন সময় দেখি আমি এখানে।’

ভদ্রলোক যতই বলুক চিন্তার বিষয়, এই অস্বাভাবিক ব্যাপারটি নিয়ে তার মনে কোনো চিন্তা আছে বলে মিসির আলির মনে হয় না। বরং আশ্চর্যজনক ভাবে ভদ্রলোকের গলায় কেমন একটি আমুদে ভাব। কিছু মানুষ চিরসুখী হয়ে জন্মায়।

‘একা হলে একটু ঘাবড়ে যেতুম বটে। কিন্তু আমি আসার ক’সেকেন্ড বাদেই দেখি শঙ্কু বাবুও ম্যাজিকের মতো হাজির হলেন। এরপর আপনি। এরপর একে একে মেনীমুখো, তিড়িং-ভো, হলুদ পাঞ্জাবি, লম্বুরাম, কুমড়োপটাশ আর খোকাও এসে হাজির। নামগুলো কেমন হয়েচে বলুন তো মশাই? আপনারও একটি নাম দিয়েছি, রামগড়ুর। হে হে! মশাই আবার কিছু মনে নিলেন না-তো?’

‘শুনুন, আপনার নামটি...?’

‘আজ্ঞে অবিনাশ। অবিনাশ মজুমদার।’

‘শুনুন অবিনাশ সাহেব। আমার প্রচন্ড মাথা ধরেছে। আপনি কিছু মনে না করলে আমি কিছুক্ষণ একা থাকতে চাচ্ছি।’

‘সে-কি! মাথা ধরেচে সেটি আগে বলবেন তো? শঙ্কু বাবুর কি একটি গুল্লি আচে। খেলে বেশ কাজ দেয়। দাঁড়ান আমি দেখচি...’ অবিনাশ বাবু তড়িঘড়ি করে টাক মাথা, শ্যামবর্ণ, মাঝারি হাইটের এক ভদ্রলোকের দিকে ছুটে যান।

দুই

‘তুমি বলছো তোমার এই খেলনা পিস্তল কাজ করে?’ কৌতুক নিয়ে প্রশ্নটি করেন বিজ্ঞান পরিষদের সর্বোচ্চ তিন তারা পাওয়া গনিতজ্ঞ মহামতি ফিহা। অবিনাশ বাবুর ভাষায় তিড়িং-ভো। ভদ্রলোকের বয়স প্রোফেসর শঙ্কুর চেয়ে বেশি নয়, হয়তো ক’বছরের ছোটই হবেন। তবুও এভাবে ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করাটা ভালো লাগে না প্রোফেসর শঙ্কুর। অ্যানাইহিলিন নিয়ে তাচ্ছিল্যটিও গায়ে লাগে। তবে এসব লক্ষ্য করার সময় এখন নয়। এই সমস্যার সমাধান সবাই মিলেই করতে হবে।

প্রোফেসর শঙ্কু বলেন, ‘আপনি যেটিকে খেলনা পিস্তল বলছেন সেটি আমার অন্যতম আবিষ্কার। শতাব্দীর সেরা একশো আবিষ্কারের তালিকায় প্রথম বিশে আমার পাঁচটি আবিষ্কার ছিলো। অ্যানাইহিলিন তার মধ্যে একটি।’

‘আচ্ছা! এই রুমের দেয়ালে চালাও দেখি তোমার খেলনা পিস্তল। দেখি কি হয়!’

‘প্রানহীণ কিছুতে অ্যানাইহিলিন কাজ করে না। এই দেয়ালে এর কোনো প্রভাব পড়বে না।’

ফিহা প্রচন্ড বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে ফেলেন, ‘তাহলে অহেতুক আমার সময় নষ্ট করছো কেনো। তুমি বিদেয় হও!’

প্রোফেসর শঙ্কু এই অভদ্র লোকটির উপর অ্যানাইহিলিন চালাবেন কি-না তাই ভাবছেন এমন সময় অবিনাশ বাবু এসে তার বাহু ধরে টান দেন, ‘শঙ্কু বাবু, তোমার সঙ্গে সেই বড়িটি আচে তো?’

তিন

‘আপনার সাথে থেকে অনেক আজিব জিনিস দেখেচি। কিন্তু এমনটি কখনো দেখিনি মাইরি! আপনি কি বুঝচেন ফেলুবাবু?’

লম্বুরাম, ওরফে প্রদোষচন্দ্র মিত্তির, ওরফে ফেলুদা কপালে তিনটি ভাঁজ ফেলে তাকিয়ে থাকে, ‘আপনার এই কথাটির সাথে আমাকে একমত হতেই হচ্ছে লালমোহন বাবু। এমনতর ঘটনার কথা এই ফেলু মিত্তিরেরও জানা নেই।’

‘ফেলুদা, আমার কাছে এলিয়েনের কাজ মনে হচ্ছে। একটি গল্পের বইয়ে এমন পড়েছিলাম।’ বলে অবিনাশ বাবুর খোকা ওরফে তপেশ রঞ্জন মিত্র।

তপেশের কথা শুনে কুমড়োপটাশ ওরফে লালমোহন গাঙ্গুলী, ওরফে জটায়ু কেমন যেনো হা হয়ে যান। ঢোক গিলে শিউরে উঠে বলেন, ‘এলিয়েন! মানে ভিনগ্রহের প্রাহা-হা-হা-হা...’

‘প্রানী!’ লালমোহন বাবুর আটকে যাওয়া শব্দটি শেষ করে দেয় ফেলুদা। বলে, ‘এই কথাটি অন্য সময় বললে মাথায় রাম গাট্টা খেতি। কিন্তু এখন কেমন যেনো সবই সম্ভব বলে মনে হচ্ছে রে তোপশে!’

ফেলুদা পকেট থেকে চারমিনারের প্যাকেট বের করে। ধরাতে না ধরাতেই হলুদ পাঞ্জাবি পড়া ক’দিনের না কাটা দাড়ি আর খালি পায়ের এক যুবক পাশে এসে দাঁড়ায়, ‘এই যে ব্রাদার, একটা সিগ্রেট হবে?’

চার

‘দেখুন আমি অষুধ গ্রহন করতে চাচ্ছি না। আমার অষুধে বিশ্বাস নেই।’ মিসির আলি অসম্ভব বিরক্ত নিয়ে বলেন।

‘আহা, টুক করে গিলে ফেলুন দেখি! বেশ কাজ দেয়। আমার সেদিন একটু অম্বল ভাব হয়েছে, শঙ্কু বাবুর কাছ থেকে বড়ি নিতে না নিতেই নিমিষে হাওয়া!’

‘আমার অম্বল হয়নি। মাথা ধরেছে। এর অষুধ আমার নিজেরই জানা আছে।’

কাউকে ইচ্ছের বিরুদ্ধে জোর করা প্রোফেসর শঙ্কু পছন্দ করেন না। কিন্তু বৃদ্ধ লোকটির যন্ত্রনাক্লিষ্ট মুখ দেখে তাঁর খারাপ লাগে। তিনি মোলায়েম ভাবে বলেন, ‘অষুধটি নিন। আপনার ভালো লাগবে। মিরাকিউরলে শুধু অম্বল নয়, যে কোনো রোগ সারে।’

পাশে দাঁড়িয়ে সব দেখছিলেন মহামতি ফিহা। এবার না পেরে হো হো করে হেসে ওঠেন। বলেন, ‘এই ভাঁড় একের পর ঝোলা থেকে অদ্ভুত সব জিনিস বের করছে আর বলছে এগুলো তার মহা-আবিষ্কার। এক অষুধে কখনও সব রোগ সারে? মিসির, তোমার সিদ্ধান্ত ঠিক আছে। আমি হলে আমিও এই ক্যাপস্যুল নিতাম না।’

গিরিডির বিজ্ঞানী প্রতিবেশীটির উপর অবিনাশ মজুমদারের নিজের তেমন ভক্তি না থাকলেও অচেনা হামবড়া লোকটির এহেন অবজ্ঞা তাঁর গায়ে লাগে। তিনি কোমড়ে দুই হাত রেখে বেশ তেজী ভাবে বলেন, ‘দেখুন মশাই, যা জানেন না তা নিয়ে চিল্লাবেন না বলে দিচ্চি। এই বড়ি খেয়ে আমার অম্বল, বাত আর যা অসুখ ছিলো সব সেরেচে।’

ফিহা মিটিমিটি হেসে অবিনাশ বাবুর পিত্তি জ্বলিয়ে দিয়ে ছড়া আওড়ান -
‘করো ভাই হল্লা
নেই কোনো বল্লা
চারিদিকে ফল্লা!’

সামান্য অষুধ নিয়ে ঘটনা বাড়াবাড়ির দিকে চলে যাচ্ছে দেখে মিসির আলি বাধ্য হয়েই অবিনাশ বাবুর হাত থেকে ক্যাপস্যুল নিয়ে গিলে ফেলেন। এবং আশ্চর্যজনক ভাবে মুহূর্তে তাঁর মাথা-ব্যাথা সেরে যায়। মিসির আলি বিস্ময় নিয়ে ছোট-খাটো বিজ্ঞানী লোকটির দিকে তাকিয়ে থাকেন।

লালমোহন বাবু আড়চোখে পুরো ব্যাপার লক্ষ্য করছিলেন। তিনি আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করেন, ‘কি মশাই, কাজ দিলো?’

‘জ্বী, দিয়েছে! প্রোফেসর সাহেব...’ বলেন মিসির আলী, ‘আমার ক্ষেত্রে মাথা-ব্যাথার কোনো অষুধই কাজ করে না। আপনার অষুধ করেছে। আমি কৃতজ্ঞ!’

অবিনাশ বাবু ‘বলেছিলুম না’ ভাব নিয়ে কোমড়ে দু'হাত গুঁজে ফিহার দিকে তাকান।

লালমোহন বাবু একটু ইতস্তত করে, ‘আর নেই? আমাকেও একটি দিন না শঙ্কু বাবু!’ বলে খুব উৎসাহের সাথে প্রোফেসরের দিকে হাত বাড়িয়ে দেন।

‘আপনার আবার কি হলো?’ ফেলুদা জিজ্ঞেস করে।

‘না! মানে মাথা কেমন যেনো চক্কর দিয়ে উঠলো।’ আমতা আমতা করে বলেন লালমোহন বাবু। এরপর তপেশের দিকে ঝুঁকে কানের কাছে গোপন কথা বলার ভঙ্গীতে ফিসফিস করে বলেন, ‘বুঝলে তপেশ বাবু, আগে থেকেই একটি নিয়ে রাখি। পরে যদি আবার শর্ট পড়ে!’

‘তা তুমিও কি বিজ্ঞানী নাকি?’ কৌতুহল নিয়ে জটায়ুকে জিজ্ঞেস করেন ফিহা।

একগাল হেসে জীভ কামড়ান লালমোহন বাবু, ‘আমি আর বিজ্ঞান! ছি ছি!’ এরপর খুব বিনয় দেখিয়ে দু’হাত জোড় করে বলেন, ‘আমি এই যৎসামান্য লেখালেখি করি আরকি। জটায়ু নামে।’

‘যৎসামান্য লেখালেখি মানে কি?’

‘আজ্ঞে গোয়েন্দা কাহিনী! আমার নায়ক প্রখর রুদ্র। নাম শুনেচেন কি?’, গদগদ ভাবে বলেন লালমোহন বাবু।

‘বস্তাপঁচা গোয়েন্দা গল্প আমি পড়ি না। অহেতুক সময় নষ্ট। ছড়া লিখো?’

‘আজ্ঞে?’

‘ছড়া! ছড়া লিখো না? লিখলে কয়েকটা শোনাতে পারো।’

লালমোহন বাবু কেমন যেনো দমে যান, ‘আজ্ঞে না, ছড়া লিখি না।’

‘তা কেন লিখবে। ছড়া লিখতেও তো সামান্য বুদ্ধির দরকার হয়...’

‘অনেক হয়েছে!’ তীক্ষ্ণ স্বরে বলে ওঠে এতক্ষণ ঘরের কোনে চুপকরে বসে থাকা ছেলেটি, অবিনাশ বাবুর মেনীমুখো। সবাই চমকে প্রথমবারের মতো ভালো মতো ওর দিকে তাকায়। ছেলেটি বলে, ‘নিজেদের মধ্যে ঝগড়া না করে সবাই মিলে এই সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজতে হবে।’

‘ছেলেটি ঠিক বলছে...’, সায় দেয় ফেলুদা, ‘...যা বুঝেছি ইচ্ছের বিরুদ্ধে কোনো আশ্চর্য উপায়ে আমরা সবাই এই কামরায় এসে উপস্থিত হয়েছি। সবাই একসাথে আলোচনা করলে হয়তো বোঝা যাবে কিভাবে আমরা এখানে এলাম। কে বা কি এর জন্য দায়ী। আর এ থেকে পরিত্রানের উপায়ই বা কি।’

‘আপনি ঠিক বলেছেন। আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান পাওয়া যেতে পারে। শুধু আমাদের ক’জনের এখানে উপস্থিত হওয়াটি নিশ্চই কাকতালীয় কোনো ঘটনা নয়। প্রথমে সবার পরিচয় জানা যাক। আমিই শুরু করছি, আমার নাম শুভ্র...’

পাঁচ

‘তুমি কি চশমা হারিয়েছো?’ জিজ্ঞেস করে ফেলুদা।

মলিন হাসে শুভ্র, ‘আমাকে এখানে নিয়ে আসা হয়েছে আমি যখন ঘুমোচ্ছিলাম তখন। যেভাবে বিছানায় গিয়েছি সেভাবেই এসেছি। আমার সাথে আমার চশমা আসেনি। আমি চশমা ছাড়া কিচ্ছু দেখতে পাই না।’

‘আহারে...’ বেদনার্ত গলায় বলেন অবিনাশ বাবু।

‘আমরা মোট ন'জন আছি এখানে। কারও কি কোনো ধারণা আছে আমাদের অবস্থান নিয়ে?’ জিজ্ঞেস করে শুভ্র।

‘অবশ্যই আছে!’ বলে ওঠে হলুদ পাঞ্জাবি ওরফে হিমু।

বিস্ময় নিয়ে তাকান ফিহা, ‘কি রকম?’

‘আমরা কোথায় সেটি আমরা এখনই ঠিক করতে পারি।’

‘কিভাবে?’

‘আমাদের সংজ্ঞার উপরে নির্ভর করে আমাদের সব কিছু। আমার সংজ্ঞা ধরে আমি যদি বলি ‘আমি মানুষ’ তবে তা যেমন সত্যি তেমনি যদি বলি ‘আমি কচ্ছপ’ তবে সেটিও সত্যি।’ ঘ্যাস ঘ্যাস দাড়ি চুলকাতে চুলকাতে বলে হিমু।

‘রিলেটিভিটি পারসেপশন! চমৎকার!’ বলেন ফিহা।

‘এসব তত্ত্ব কথা বাদ দিয়ে মূল আলোচনায় ফেরা যায় না?’ বিরক্তি নিয়ে বলে শুভ্র।

শুভ্রর কথায় বাঁধা দেন মিসির আলি, ‘হিমুর একটি কেসে আমি কাজ করেছিলাম। ওর কথা আপাতদৃষ্টিতে অহেতুক মনে হলেও পরে কথার পেছনের কারণটি বোঝা যায়। আমি তাই ওর কথা ফেলে দিতে পারছি না!... ‘...হিমু,’ জিজ্ঞেস করেন মিসির আলি, ‘তোমার সংজ্ঞানুযায়ী আমরা এখন কোথায় আছি?’

‘আমরা এখন করোটির ভেতরে।’

‘করোটির ভেতরে?’ প্রতিধ্বনি করে ফেলুদা।

‘জ্বী! করোটির ভেতরে।’

লালমোহন বাবু ফিসফিস করে বলেন, ‘মোস্ট অ্যামেজিং!’

ছয়

‘একটি ব্যাপার আমি লক্ষ্য করেছি আমাদের এখানে উপস্থিত অধিকাংশই সাধারণ পেশার নন। গোয়েন্দা, মনোবিজ্ঞানী, বিজ্ঞানী, আবিষ্কারক, লেখক... চারিত্রিক বৈশিষ্টও সাধারণের চেয়ে একটু আলাদা। হিমুর সুপার ন্যাচারাল পাওয়ার, শুভ্রর চশমা অন্ধত্ব, অবিনাশ বাবুর চিয়ারফুল ক্যারেক্টারিস্টিক... যদি জিজ্ঞেস করেন এর সাথে আমাদের এখানে আটকে পড়ার যোগসূত্র কি? তা আমি জানিনা। কিন্তু ব্যাপারটি আমাকে ভাবাচ্ছে।’ বলে ফেলুদা।

‘আমার অবাক লাগছে আমরা কিভাবে এখানে এলাম তাই নিয়ে। জলজ্যান্ত করেকজন মানুষকে এভাবে স্থানান্তর করা কিভাবে সম্ভব? আমাদের দেহকে যদি এনার্জি প্যাটার্নে রুপান্তরিত করা যায় তাহলে সেই প্যাটার্নকে অন্য যে কোনো জায়গায় প্রতিরূপান্তর করা সম্ভব। কিন্তু আমাদের এনার্জি প্যাটার্ন জানতে হলে কিছু পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। তেমন কিছু আমার সাথে করা হয়েছে বলে আমার মনে হয় না।’ বলেন মহামতি ফিহা।

‘তপেশ বাবু বলচে ভিনগ্রহের প্রানীর কাজ...’ লালমোহন বাবু হড়বড়িয়ে বলেন।

‘এটি সম্ভব।’ সায় দেন প্রোফেসর শঙ্কু, ‘এমন হতে পারে আমাদেরকে বিভিন্ন সময় এবং বিভিন্ন পেশা থেকে তুলে আনা হয়েছে। একসাথে রেখে দেখা হচ্ছে আমরা কি করি। অনেকটি গবেষণাগারের ইদুরের মতো।’

‘আরও গেরো আচে মশাই। ফিহা বাবু বললেন উনি সিরান পল্লীতে থাকেন। বিজ্ঞান পরিষদে কাজ করেন। এসব জায়গার নাম তো কখনো শুনিনি...’

‘এটি লালমোহন বাবু একটি ভালো কথা বলেছেন। আমাদের সবার জগত কেমন যেনো অন্য রকম। আমি কখনো প্রোফেসর শঙ্কুর নাম শুনিনি। খোদ বাংলায় এমন একজন প্রতিভা থাকবেন আর আমি জানবো না, এটি আমি মানতে পারছি না।’ বলে ফেলুদা।

‘...আর তাঁর আবিষ্কারগুলোও ফেলুদা!’ গলা মেলায় তপেশ, ‘কখনো শুনিনি।’

‘আমার আরেকটি সম্ভাবনার কথা মনে হচ্ছে। ধরো আমরা কেউ আসল নই। আমাদের জন্ম কম্পিউটার হার্ডডিস্কে। আমরা একেকজন একেকটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম।’ বলেন ফিহা।

‘এটা কি সম্ভব ফিহা সাহেব?’ জিজ্ঞেস করে শুভ্র।

‘অবশ্যই সম্ভব। সিরান পল্লীর কম্পিউটার সিডিসি অনায়াসে এমন প্রোগ্রাম তৈরি করতে পারে।’

‘এমন হতে পারে না আমরা ভিন্ন ডাইমেনশনে থাকি? কোনো আশ্চর্য কারণে একটা দরজা খুলে গেছে। এই রুমটি হচ্ছে কয়েকটি ডাইমেনশনের সংযোগস্থল?’ মহামতি ফিহাকে জিজ্ঞেস করে শুভ্র।

‘ভিন্ন ডাইমেনশনের চেয়ে প্যারালাল ইউনিভার্সের ধারণাটি বেশি গ্রহনযোগ্য। আমরা আলাদা আলাদা ডাইমেনশনের হলে একে অন্যকে আমাদের সাধারণ চোখে এভাবে মানবিক আকারে দেখতে পেতাম না। আমাদের সবার আলাদা জগতের ব্যাপারটিও প্যারালাল ইউনিভার্স-ধারণা সমর্থন করে। রুমটি তাই কয়েকটি প্যারালাল ইউনিভার্সের সংযোগস্থল হতে পারে।’

‘কিংবা কল্পজগতও তো হতে পারে...’ বলেন প্রোফেসর শঙ্কু।

‘কি রকম?’ জিজ্ঞেস করেন মিসির আলি।

‘তিব্বতে আমি আর আমার দুই বন্ধু, সন্ডার্স আর ক্রোল, একটি লুকানো কল্পজগতের খোঁজ পেয়েছিলাম। উঁচু দেয়াল দিয়ে ঘেরা জায়গা। দেয়ালের এপাশে আমাদের জগত আর দেয়াল টপকালেই ইউনিকর্ণ, ড্রাগন, আর সব কল্পজগতের প্রানী। এমন হতে পারে না, আমরা সবাই এক একটি কল্পজগত থেকে এসেছি? কিংবা এই কামরাটিই একটি কল্পজগত?’

‘তার মানে মশায় বলচেন...’ ঢোক গেলেন লালমোহন বাবু। অতি উত্তেজনায় উচ্চারণে গোলমাল করে বলেন, ‘আমরা কারউ কহলপনা?’

‘হতে পারে না?’

সারা ঘর কেমন যেনো নিস্তব্ধ হয়ে যায়। ফেলুদা আপন মনে বলে, ‘এই জন্যই হিমু বলছিলো করোটি। বোঝো!’

সাত

‘এই যে মিস্টার ইনডেস্ট্রাক্টেবল, সিগ্রেট আছে?’ তরল গলায় জিজ্ঞেস করে হিমু।

‘নামটি খাসা দিয়েচেন তো। ইনডেস্ট্রাক্টেবল, মানে কি-না অবিনাশ!’ এক গাল হাসেন অবিনাশ বাবু, ‘তবে তামাক আমার চলে না।’

‘এখন চলে না, কিন্তু পরে চলবে।’

‘আজ্ঞে?’

‘গিরিডিতে ফিরে আপনি টাকা পাবেন। অনেক টাকা। তখন শখ করে গড়গড়া ধরবেন।’

‘কি বলচেন মশাই! আমি কিভাবে টাকা পাবো? এই শেষ বয়সে?’

হিমু কিছু বলে না। আপন মনে হাসে।

অন্যদিকে প্রোফেসর শঙ্কু আর মহামতি ফিহার ঝগড়া থামাবার চেষ্টা করেন মিসির আলি, ‘কল্পজগতের ব্যাপারটি আমার কাছে বেশ গ্রহনযোগ্য মনে হচ্ছে। আপনি একটু আগেই বললেন বাবুই পাখির ডিম আর কর্পূর মিশিয়ে মিরাকিউরলের মতো অষুধ বানানো সম্ভব নয়। কিন্তু তবুও প্রোফেসর শঙ্কুর অষুধ যে কাজ করে তার প্রমান আমি। কল্পজগত ছাড়া এমন সম্ভব?’

ফিহা কিছু বলেন না। বোঝা যায় যুক্তিটি তার মনে ধরেছে।

লালমোহন বাবু বলেন, ‘ভেবে দেখুন, কোনো কল্পজগতে দিব্যি হেঁটে চলে বেড়াচ্চে প্রখর রুদ্র! উফ! আমার রোম খাড়িয়ে যাচ্চে মশাই!’

‘আপনার নতুন উপন্যাসের প্লট চলে এলো নাকি?’ জিজ্ঞেস করে ফেলুদা।

লালমোহন বাবু চোখ বুঁজে বিড়বিড় করে বলেন, ‘কল্পজগতের কালোকঙ্কাল... উফ!’

‘আচ্ছা ধরে নিলাম প্রোফেসর শঙ্কুর কথা ঠিক - আমরা সবাই কল্পজগতের মানুষ। তারপরেও আমাদের সমস্যা একই থেকে যাচ্ছে। এই রুম থেকে মুক্তি। তার সমাধান কিভাবে হবে?’ জিজ্ঞেস করেন ফিহা।

প্রশ্নটি কানে যেতেই ঝট করে ফিরে দাঁড়ান অবিনাশ বাবু। বলেন, ‘আপনাদের বিজ্ঞান-বদ্যি যদি শেষ হয়ে থাকে তো বলি... এ নিয়ে চিন্তা কি? সমস্যার সমাধান তো হাতেই আচে।’

রুমে যেনো বোমা পড়ে। এক মুহূর্তে নিশ্চুপ হয়ে যায় সবাই।

শুভ্র জিজ্ঞেস করে, ‘সেটা কিভাবে অবিনাশ সাহেব?’

‘আপনারা বলচেন আমরা সবাই কল্পনার তাই তো? গল্প নভেলের মানুষ? বই-পত্তর আমি পড়িনি বটে... এত ধৈর্য আমার নেই। তবে হ্যাঁ... গল্প অনেক শুনেচি। ঠাকুমার কাচে... তেপান্তরের মাঠ, ব্যাঙমা-ব্যাঙ্গমী, পঙ্খীরাজ, ডালিমকুমার, সূঁচ রাজকুমার... কতো গল্প... কত কল্পজগত...’

অবিনাশ বাবুর ভাষণে ধৈর্য হারান লালমোহন বাবু, বিরক্তি নিয়ে বলেন, ‘আহ মশায়। বাজে গপ্প ছেড়ে লাইনে আসুন তো!’

কথায় এভাবে বাগড়া পড়াই দৃশ্যতই মনোক্ষুন্ন হন অবিনাশ বাবু। বেজার মুখে বলেন, ‘...বলছিলুম কি, ওই সব গল্পই তো এক সময় শেষ হয়েচে!’

‘আজ্ঞে?’

‘না মানে, কোনো ছ্যাচ্চোড়ের কল্পনা জন্য যদি আমরা বন্দি হই, তাহলে কল্পনা শেষ হবার সাথে সাথে মুক্তিও পাবো। সব গল্পেরই শেষ আচে? না-কি মশাই? ভুল বললুম?’

© অমিত আহমেদ

দ্বিতীয় প্রকাশ: সংকলন, "সচলায়তন সংকলন: ২য় খন্ড", সচলায়তন ও শুদ্ধস্বর প্রকাশন, বইমেলা ২০০৯

ব্যবহৃত ছবি: রাজর্ষি দেবনাথ, সত্যজিৎ রায় (সত্যজিৎ রায়ের চরিত্রগুলি) এবং ধ্রুব এষ এর (হুমায়ূন আহমেদের চরিত্রগুলো) আঁকা ছবি ফোটোশপে মিলিয়ে বানানো।


মন্তব্য

রেনেট এর ছবি

চমতকার আইডিয়া।
তিন গোয়েন্দা কোথায়? মন খারাপ
-----------------------------------------------------
We cannot change the cards we are dealt, just how we play the hand.

---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে

এনকিদু এর ছবি

তিন গোয়েন্দা থাকলে মন্দ হত না । মুসা আমানের সাথে অবিনাশ বাবুর হাসিখুশি মনোভাবের একটা তুলনা হয়ে যেত । তবে তিন গোয়েন্দার মধ্যে কিশোর পাশা ছাড়া বাকি দুইজন তো আবার বাংলার লোক না । এই গল্পে সবাই এপার বাংলার আর নয়তো ওপার বাংলার লোক ।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

মাহবুব লীলেন এর ছবি

কোনো ছ্যাচ্চোড়ের কল্পনা জন্য যদি আমরা বন্দি হই, তাহলে কল্পনা শেষ হবার সাথে সাথে মুক্তিও পাবো।

অবশেষে অমিতের কল্পনা শেষ হওয়ায় তাহারা মুক্তি পাইল...

সুমন চৌধুরী এর ছবি
পরিবর্তনশীল এর ছবি

ভাল্লাগছে। হাসি
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

অনিন্দিতা এর ছবি

চমৎকার ককটেল!

মুশফিকা মুমু এর ছবি

দারুন আইডিয়াতো, মজার প্লট হাসি ভাল লিখেছেন চলুক , অনেকটা বিগ ব্রাদার হাউস এর মত খাইছে হি হি হি, কয়েকজন ক্যারেকটার ছারা সবাইকেই চিনতে পেরেছি হাসি

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

নজমুল আলবাব এর ছবি

অমিত ফাটালিরে ভাই। চরম ফাটালি।

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

debottom এর ছবি

কে বলেছে দুই বাংলা এক নয় ? আমার চোখের সামনে সবাই মিলে মিশে একাকার, আহা সুমন ভাই আপনি কি কোনভাবে কোন জাদুকাঠি দিয়ে কল্পনাকে বাস্তবে পালটে ফেলতে পারেন না ?

অয়ন এর ছবি

চলুক

আমার জন্য অসম্ভব দু:খের দিন ছিলো যেদিন শঙ্কু কালেকশানটা শেষ হয়। এটা চিন্তা করতেই সবসময় ভালো লাগে যে ফেলুদার কয়েকটা বই এখনো পড়া বাকি আছে হাসি

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

দারুণ কাজ রে ভাই... ফাটায়ালছেন... ভালো লাগলো... আইডিয়াটা চমৎকার। অনেক কিছু মনে করায়ে দিলেন।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

মজা লেগেছে। তবে অনেকগুলো চরিত্র একসাথে আসায় একটু হযবরল হয়ে গেছে বলে বোধ করেছি। আবার ক্যারেক্টার আরো কম হলে গল্পটা গল্প হত না। হাসি

থাম্বস আপ।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

স্নিগ্ধা এর ছবি

ভাগ্যিস নেই গল্পের শেষ, ভাগ্যিস নেই কল্পনার শেষ,

ভাগ্যিস আছে অমিত আহ্‌মেদ হাসি

আইডিয়াখান চমৎকার!

দ্রোহী এর ছবি

কি অদ্ভুত ব্যাপার !! হুমায়ূনের মিসির আলি আর আমাদের হিমুকে নিয়ে আমি একটা কেচ্ছার এক পাতা ফেঁদে বসে আছি সেই কবে থেকেই !!!!


কি মাঝি? ডরাইলা?

অভ্রনীল এর ছবি

নস্টালজিয়া... ছোটবেলার দিনগুলো মনে পড়ে গেলো... সেই ফেলুদা, শঙ্কু, তারিণীখুড়ো, কাকাবাবু, নন্টে ফন্টে, হাঁদা ভোঁদা, বাঁটুল... কী দিনগুলোইনা ছিলো...

এই গল্পে কাকাবাবুকে নিতে পারতেন, বিশেষ করে জোজোকে!!

অতিথি লেখক এর ছবি

বলছেন কি? শুধুই নস্ট্যালজিয়া আর ছেলেবেলা? ভার্সিটি-লাইফ পেরিয়েও এদের সাথেই আড্ডা দিচ্ছি মশাই! এম,বি,বি,এস ফাইন্যাল চলার সময় আমার আর আমার রুমমেটের একমাত্র বিনোদন ছিল - নণ্টে আর ফন্টে!!

অতিথি লেখক এর ছবি

ধুর! তিন গোয়েন্দা নাহয় বাদ গেল বিদেশী বইলা, মাগার আমাগোর দেশের পোলা MR9 কি দোষ করল?

এইডা ঠিক হয় নাই

ফরিদ

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

অমিত আহমেদের কল্প(না)রাজ্য!
ধন্যবাদ।

____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

সৌরভ এর ছবি

নতুন জায়গায় হাত দিলেন দেখি।
অন্যরকম হয়েছে।


আহ ঈশ্বর, আমাদের ক্ষোভ কি তোমাকে স্পর্শ করে?


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

অমিত আহমেদ এর ছবি

অরূপ ভাই: কমিকস করলে কিন্তু দুর্দান্ত হয়। আনন্দবাজার ফেলুদার কিছু কমিকস করেছে। গত পূজোয় পড়লাম। মন্দ লাগেনি। খুব যত্ন নিয়ে করা। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ হাসি
...
রেনেট, এনকিদু, ফরিদ:মাথায় গল্পের ভাবটা ছিলো। কিভাবে নামাবো বুঝতে পারছিলাম না। পরে সত্যজিত রায় আর হুমায়ূন আহমেদ ধার করতে হলো। যে কয়টি চরিত্র প্রয়োজন শুধু সে কয়টিই এনেছি। আর এই গল্পের ভাইব-এর সাথে রেনেটের ‘তিন গোয়েন্দা’ কিংবা ফরিদের ‘মাসুদ রানা’ খাপ খেতো না হাসি এনকিদু ভাইয়ের কথাটাও মন্দ না – একমাত্র বাংলাভাষী হিসেবে ‘তিন গোয়েন্দা’ থেকে কেবল কিশোর পাশাকেই আনা যেতো।
...
অভ্রনীল: হ্যাঁ, জোজো এই গল্পের ভাইব-এর সাথে বেশ মানিয়ে যেতো। এখন আপনি মনে করিয়ে দেয়ায় আফসোস হচ্ছে। সে বলতো, এমন কল্পরাজ্যে সে অনেকবারই গেছে। তার নিজেরও কয়েকটা আছে। কল্পনা করার আগে অনেকেই তার বাবার কাছে গননা করিয়ে নেয়। হা হা!
...
মাহবুব লীলেন: জ্বী, এটাই গল্পের মূল মাজেজা!
...
সুমন চৌধুরী: গুরু গুরু

পরিবর্তনশীল, অনিন্দিতা: ধন্যবাদ।
...
মুশফিকা মুমু: কাদেরকে চিনতে পারো নাই বলো? চিনানোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
...
নজমুল আলবাব: অপু ভাই তো লজ্জায় ফেলে দিলেন।
...
দেবোত্তম: দুই বাংলাকে আলাদা করে আমিও কেনো জানি দেখতে পারি না। আমার মনে হয় বাঙালি মানেই এক। তবে এখন ব্যাপারটা রাজনীতি হয়ে গেছে। ঢাকায় কলকাতা, আর কলকাতায় ঢাকা নিয়ে নেতিবাচক প্রোপাগান্ডা চলে। আপনার মন্তব্য খুব ভালো লাগলো। তবে সুমন ভাই বলে আমাকেই সম্বোধন করেছেন নাকি তা নিয়ে একটু দ্বিধায় আছি।
...
অয়ন: আমারও একই অবস্থা হয়েছিলো। তবে আমার সত্যজিতের প্রতিটি লেখা একাধিক বার পড়া।
...
নজরুল ইসলাম: ধন্যবাদ রে ভাই। খুব ভাল্লাগলো আপনার মন্তব্য।
...
এস এম মাহবুব মুর্শেদ: হুমম... চরিত্র একটু বেশি হয়ে গেছে... তবে পূর্ব মন্তব্যে মনে হলো অনেকেই এর সাথে দ্বিমত করবেন হাসি আপনি ব্যাক অন ট্র্যাক। ভাল্লাগলো।
...
স্নিগ্ধা: কৃতজ্ঞচিত্তে প্রশংসা গ্রহন করছি। চিত্ত বেশ উৎফুল্ল হয়ে গেলো আপনার মন্তব্য পড়ে। কসম হাসি
...
দ্রোহী: তাহলে আর দেরি কেনো? পোস্ট দেন মিয়া!
...
জুলিয়ান সিদ্দিকী: হাসি আপনাকেও ধন্যবাদ!
...
সৌরভ: একটা পরীক্ষা করলাম বলা যেতে পারে। শুকরিয়া মেহেরবান।


ওয়েবসাইট | ফেসবুক | ইমেইল

কনফুসিয়াস এর ছবি

গল্পটা আমার খুব পছন্দ হইছে। এইসব ক্যারেক্টারগুলাকে আসলেই মিস করি। শঙ্কু সাথে নেই তাই অনেকদিন পড়া হয় না, অমিতকে অনেক ধন্যবাদ।
গল্পটার চরিত্রদের মুখের সংলাপে অমিতের দক্ষতা ঈর্ষণীয়। পড়তে পড়তে ভাবছিলাম, শেষটা কেমন জানি হয়। এবং শেষটা পড়ে মনে হলো, চমৎকার!

-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

একরামুল হক শামীম এর ছবি

অমিত ভাই আগেই বলেছি আপনার লেখার স্টাইলটা আমার কাছে ভালো লাগে। এই গল্পে প্লট সাজানোটা দারুন লেগেছে। আইডিয়াটা চমৎকার
--------------------------------------------------------

স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি। স্বপ্ন দেখতে এবং দেখাতে চাই আজীবন।

----------------------------------------------------------
স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি। স্বপ্ন দেখতে এবং দেখাতে চাই আজীবন।
----------------------------------------------------------

শেখ জলিল এর ছবি

সত্যজিত-হুমায়ূন চরিত্রের শংকর গল্পটা মারাত্মক হইছে। অমিত আহমেদ এর গদ্য রচনায় সাবলীলতা আমাকে মুগ্ধ করে। তবে এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর মন্তব্যের সাথে আমিও একমত।

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

অমিত আহমেদ এর ছবি

কনফুসিয়াস: আমিও প্রচন্ড ভাবে মিস করি। সহৃদয় মন্তব্যে জন্য ধন্যবাদ ব্রাদার।
...
একরামুল হক শামীম: অসংখ্য ধন্যবাদ।
...
শেখ জলিল: আপনি আর আর sm3 ভাই যখন বললেন তখন এই ব্যাপারে পরবর্তিতে একটু সতর্ক থাকার প্রয়োজন বোধ করছি। আপনার মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ জলিল ভাই।


ওয়েবসাইট | ফেসবুক | ইমেইল

ঝরাপাতা এর ছবি

এই লেখাটা এতো দেরীতে পড়লাম। দুর্দান্ত আইডিয়া, দুর্দান্ত গল্প।


যে রাতে গুঁজেছো চুলে বেগুনি রিবন বাঁধা ভাট,
সে রাতে নরকও ছিলো প্রেমের তল্লাট।
. . . . . . . . . . . . . . . . . . (আবু হাসান শাহরিয়ার)


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

অমিত আহমেদ এর ছবি

পুরাণো লেখা কেউ খুঁজে-পেতে বের করে, পড়ে, মন্তব্য দিয়েছে দেখলে মন কেমন দ্রবীভূত হয়ে যায় রে ভাই! ধন্যবাদ।


ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল

অবনীল এর ছবি

ফ্যান্টাসি গল্প খুঁজতে গিয়ে আপনার লেখাটা পেয়ে গেলাম। দারুন কন্সেপ্ট, এবং দারূনভাবে চরিত্রগুলো তুলে ধরেছেন। খুবি মজা পেলাম পড়ে।

___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা

এন্ড্রোমেডা [অতিথি] এর ছবি

অসাধারণ একটি গল্প। প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম প্রফেসর শঙ্কু-অবিনাশ বাবু , ফেলুদা-তোপশে-জটায়ুকে । নিজেকে অপরাধী লাগছে । কিভাবে এতো সহজে ভুলে গেলাম সত্যজিৎ রায়ের অসাধারণ ফিকশনাল ক্যারেক্টার গুলোকে ।

মহাস্থবির জাতক এর ছবি

পড়াটা আর আইডিয়াটা ভালো লাগছিলো বেশ। কিন্তু, শেষটা যেন হঠাৎই হয়ে গেলো, লেখকের কল্পনাবিস্তারের উড্ডীন পাখার প্রতি সুবিচার করলো না।
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!

(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)

_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!

(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাই ভাল হইচে!!!

অতিথি লেখক এর ছবি

অভিনব ভাবনা। বাংলা সাহিত্যে যদিও এমন আইডিয়া আগেও এসেছে, তারপরও বলতেই হবে- ককটেলটা জম্পেস জমেছে!

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাল লেখা। কিন্তু আমাদের বাংলা সাহিত্যে মেয়ে (হিরোইন) কই?

অমিত্রাক্ষর
অমিত্রাক্ষর@জিমেইল ডট কম

অমিত আহমেদ এর ছবি

এতো পুরোনো লেখায় হঠাৎ এতোগুলো নতুন মন্তব্য আবিষ্কার করে বিস্মিত হলাম। আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ!

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে বসে ছিলাম । গল্পটা পড়া শুরু করা মাত্র কখন যেন মনটাই ভাল হয়ে গেল। ফেলুদা, তপশে, শঙ্কু বাবু, মিসির আলী , হিমু,,, এত জনকে অনেক দিন পর পেলাম। লেখনীটাও কোন টেনশন ছাড়া। অবসর সময়ে যা পড়তে চাই তেমন ।

আরো পড়তে ইচ্ছা হচ্ছে।

পিয়েতা

তিথীডোর এর ছবি

অনেকদিন পর কাল রাতে একবার ... এখন আবারো পড়লাম।
দুর্দান্ত! গুরু গুরু

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

এটা আমার সেই ইন্টারগ্যালাক্টিক স্বপ্নটার মতোন!
পড়ে মজা পেলাম। চরিত্র সংখ্যার ব্যাপারে মুর্শেদ ভাইয়ের সাথে একমত, আর ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রের সংলাপের ব্যাপারে কনফুসিয়াস ভাইয়ের সাথে, আপনার সংলাপ দক্ষতা অবশ্য অন্যান্য গল্পেও লক্ষ্যণীয়।

তবে একটা কথা মাথায় আসলো, অমিত আহমেদের কল্পনা-সমাপ্তি না হলে শুভ্রর চোখের সমস্যাটা এই হাতে মিরাকিউরলে সারিয়ে ফেলা যেত! হাসি

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

অমিত আহমেদ এর ছবি

ধন্যবাদ।

তবে মিরাকিউরলে শুভ্রর অন্ধত্ব সারতো কিনা সে বিষয়ে ঠিক নিশ্চিত নই। বলা আছে মিরাকিউরলে যে কোন ব্যামো সারে - disease। Disorder (এর বাংলা কি?) এর কথা অন্য।

পিয়েতা ও তিথীডোরকেও ধন্যবাদ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।