ঝড়ের বেগে চড়ক দেখা

নাশতারান এর ছবি
লিখেছেন নাশতারান (তারিখ: শনি, ১৬/০৪/২০১১ - ৭:২২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পয়লা বৈশাখে মৌলভীবাজারে চড়কপূজা দেখতে যাওয়ার কথা ছিলো, আবার ছিলো না। ছুটির দিনে ঢাকার উপচে পড়া ভিড়ে বারকয়েক অতীষ্ট হয়ে পণ করেছিলাম এবছর নববর্ষে আর যা-ই করি, ঢাকায় ঘুরতে বেরুবো না। বন্ধুদের সাথে আগে থেকেই পরিকল্পনা শুরু হলো। ‘অতি সন্ন্যাসীতে গাঁজন নষ্ট’ যেমন, তেমনিভাবে ‘অতি পরিকল্পনায় সব ভ্রমণই ভণ্ডুল’ হলো। তার উপর ছিলো ই-বুক ‘ভ্রমণীয়’র ডেডলাইন। দুনিয়া উলটে যাক, তবু ১৪ এপ্রিলে এই বইয়ের মুখদর্শন করাতে হবেই হবে।

১৩ তারিখ বিকেলে আমাদের অন্যতম সম্পাদক নজু ভাইয়ের অর্ধাঙ্গিনী ফোন করে যখন আমাকে চট্টলাভ্রমণের ঝটিকা পরিকল্পনায় আমন্ত্রণ জানালো, আমার সামনে তখন ইবুকের খসড়া। তার মানে নজু ভাই যাচ্ছেন চট্টগ্রাম, আর শেষ রাতে মুস্তাফিজ ভাই রওনা দিবেন মৌলভীবাজারের উদ্দেশ্যে। আমার মনে তখন ভর করলো তীব্র “এ জগতে আমার কিচু নেই কিচু নেই” ভাবনা। নূপুরাপুকে না করে দিয়ে বসলাম শেষ মুহূর্তের লেখা-ছবি নিয়ে। সব মোটামুটি গুছিয়ে আনার পরে রাত দশটার দিকে বেশ একটা জেহাদি জোশ নিয়ে মুস্তাফিজ ভাইকে ফোন দিয়ে জানালাম ভোরের চড়কভ্রমণে আমি তাঁর সাথে যাচ্ছি। এক দফা পিডিএফ বানিয়ে নজু ভাইকে মেইল করলাম। নজু ভাই তখন বাসে। সেখান থেকেই কিছু খুঁটিনাটি ভুল খুঁজে জানালেন। মুর্শেদ ভাইয়ের সাথে আলাপ করলাম পৃষ্ঠাসংখ্যা বাংলায় দেওয়ার সমস্যা নিয়ে। তাঁর বাতলানো পথে সমস্যা মিটলো, কিন্তু ‘ঝালেমা’ বাধলো অন্যখানে। পিডিএফ আর হতে চায় না। মাঝপথে গিয়েই নানান তালবাহানা শুরু করে। কনভার্টার দিয়ে সোজা কনভার্ট করে নেওয়া যায়, কিন্তু তাতে ফাইলের যে অমানবিক আকার হয়, ফাইল ওঠানো-নামানোটাই রীতিমতো অত্যাচার হয়ে যায়। এহেন নাকানিচুবানি খাচ্ছি এমন সময় বাসায় এসে হাজির আমার খালাত ভাই হিমেল। আমার অনেক পরিকল্পনার একটা ‘রাঙামাটি-বৈসাবি’ভ্রমণে যোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে সে ঢাকায় এসেছে। এর মধ্যে গোটাকয় পরিকল্পনার জন্ম-মৃত্যু সম্পর্কে তার কোনোই ধারণা নেই। রাঙামাটি যাওয়া হচ্ছে না শুনে তার মধ্যেও তীব্র “এ জগতে আমার কিচু নেই কিচু নেই” ভাবনা জেগে উঠলো। শেষমেষ ঠিক হলো আমাদের চড়কযাত্রায় সে-ও সঙ্গী হবে।

রাত বাড়তে থাকে, কিন্তু পিডিএফ সমস্যার সুরাহা হয় না। ডেডলাইন এখন ভোর চারটা। মুস্তাফিজ ভাই জানিয়েছেন ভোর সাড়ে চারটায় তিনি রওনা দেবেন। বাস থেকে নজু ভাই বারবার তাড়া দিচ্ছেন, এদিকে এই যান্ত্রিক গোলযোগ। আমাকে সান্ত্বনা দিতে যাযাপু আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জিটকে। জিটকের উইনডোতে বেজে চলেছে তার অক্লান্ত ‘পিং পিং’ ধ্বনি। মুর্শেদ ভাই যথাসম্ভব পথ বাতলাচ্ছেন। কিন্তু সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে আর কুলানো যাচ্ছে না। হাতে তখন ঘণ্টাদেড়েক সময়। সিদ্ধান্ত হলো সাময়িক সমঝোতায় যাওয়ার। আপাতত বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হোক। সমস্যার সমাধান করে যথার্থ ভার্সনটা পরে দেওয়া হবে। কিছু ফিচার বাদ দিয়ে সোজা পিডিএফে কনভার্ট করলাম। আকার হলো প্রায় ৬০ মেগা। যা আছে কপালে! আপলোড শুরু হলো। সময় দৌড়াচ্ছে। জিপির নেটে তাকে কোনোমতে ছোঁয়া গেলে হয়। সময়ে না কুলালে কোলে নেটবুক নিয়েই গাড়িতে উঠবো না হয়। চানটান সেরে হিমেলকে ডেকে তুলি। ডেস্কে ফিরে দেখি বেশ ভদ্রোচিত গতিতেই আপলোড হচ্ছে। আপলোড পার্সেন্টেজ বাড়তে থাকে ক্রমশ। ৯৬… ৯৭… ৯৮… এবার হৃৎপিণ্ড খামচে বসি। অবশেষে আপলোড শেষ হলো। ধুগোদা দশ মিনিটের মধ্যে সাইজ নামিয়ে আনলেন আর প্রয়োজনীয় ফিচার জুড়ে দিলেন। বিনিদ্র চোখ আর ফুরফুরে মন নিয়ে দিলাম দৌড়।

গাড়িতে মুস্তাফিজ ভাই অপেক্ষা করছিলেন আরেক ফটোগ্রাফার মাহবুব ভাইকে নিয়ে। যাত্রা হলো শুরু। মাহবুব ভাই থেকে থেকে ঘুমিয়ে পড়েন আর স্টিয়ারিঙে বসে মুস্তাফিজ ভাই “তাইলে আমিও ঘুমাই” বলে হুমকি দিয়ে জাগিয়ে তোলেন তাঁকে। ঢাকার সীমানা পেরুনোর পর খিদে লাগতে শুরু করে। সামনের কোনো পেট্রোল পাম্পে থেমে গাড়ি আর আমাদের সবার উদরপুর্তির আশ্বাস দেওয়া হয়। ভুল করে একটা পাম্প মিস করে যাওয়ার পর আমি মুস্তাফিজ ভাইয়ের বিরুদ্ধে অনাহারে রাখার অভিযোগে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার হুমকি দিতে থাকি। সেই হুমকির জোরেই কি না জানি না, একটু পরেই আরেকটা পাম্প পাওয়া যায় যার পাশে একটা ছাপরা হোটেল। সেখানে বসে শাকিব-অপু’র 'জান, আমার জান' গান শুনতে শুনতে আমরা নাশতা সেরে নিই।

গানটা সাড়ে চার মিনিটের দেখে আমরা ওই সময়েই নাশতা সেরেছি এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। যতক্ষণ আমরা ছিলাম ততক্ষণ বারবার এই গানটাই দেখানো-শোনানো হচ্ছিলো। এই গানের লুপ মাথায় করেই গাড়িতে ফিরে এলাম।

গাড়িতে বসে জানলাম নেটওয়ার্কজনিত সমস্যার কারণে নজু ভাই ইবুকের পোস্ট দিতে পারছেন না। আমাকে বললেন পোস্ট দিতে। জানালাম আমি সিলেটের পথে। নজু ভাইয়ের তব্দাখাওয়া অট্টহাসির শব্দে ফোন ভেঙে পড়ার উপক্রম। অতঃপর যাযাপু পোস্ট দিয়ে রক্ষা করলো আমাদের।

মু্স্তাফিজ ভাইয়ের ঝুলি থেকে নানান গল্প শুনতে শুনতে যখন মৌলভীবাজার পৌঁছাই, তখন বাজে এগারোটার মতো। সিলেটের একদল ফটোগ্রাফার এসে যোগ দিলেন। তাঁদের মধ্যে শাওনদাকেই আগে থেকে চিনি। বাকিদের সাথে পরিচিত হলাম। মুন্সিবাজারর একটা হোটেলে চা খেয়ে রওনা দিলাম চড়কের মেলার দিকে।

দক্ষিণ পাড় থেকে দিঘি, পূর্বদিকে মেলা বসেছে

দিঘির পূর্ব পাড় থেকে

গ্রামের নাম বিষ্ণুপুর। প্রথমেই চোখ জুড়িয়ে দেয় বিশাল এক দিঘি। নাম ছয়ছিটির দিঘি, এই এলাকার জলের প্রধান উৎস। মেলা বসেছে দিঘির পুবপাড়ে। খেলনা, খাবারদাবার আর সাপের খেলা চলছে।

সাপুড়ে মানিক খেলা দেখাচ্ছেন

আমরা যখন গেছি দিঘির পূর্ব আর দক্ষিণ পাড়ে চড়ক গাছ স্থাপনের তোড়জোড় চলছে। চড়ক গাছ হলো ফুটত্রিশেক লম্বা একটা শালদণ্ড। এর গায়ে-মাথায় লাল কাপড় জড়ানো। মাথায় আর চার বাহুতে লাল পতাকা বসানো।

চড়ক বসানোর আয়োজন-১

চড়ক বসানোর আয়োজন-২

কথা হলো এখানকার চড়কের তৃতীয় পদমর্যাদার সন্ন্যাসী নিরঞ্জন দেবনাথের সাথে। তিনি জানালেন দিঘির চার পাড়ে চারটা চড়ক বসে। চৌধুরী বংশের এই জমিতে বিগত দেড়শ বছরে বিভিন্নজনের হাতে প্রতিষ্ঠিত হয় একেকটা চড়ক। নিরঞ্জন বাবু জানালেন প্রায় ৫৫ বছর ধরে নিয়মিত চড়কে চড়ছেন তিনি। নিজের পিঠ খুলে দেখালেন অজস্র বাণের চিহ্ন।

নিরঞ্জন দেবনাথ

তিনি জানালেন, অসুরের দৌরাত্ম থেকে রক্ষা পেতে নিজদেহের রক্তের বিনিময়ে ভগবতীর করুণার প্রার্থনাই এ পূজার উদ্দেশ্য। এজন্য চৈত্রের শেষদিন আর বৈশাখের শুরুতে পূজা-অর্চনা, অগ্নিনৃত্য, রংখেলা আর চড়ক-দোল হয়। পূজার এক সপ্তাহ আগে থেকে শুরু হয় সন্ন্যাসীদের উপবাস ও গ্রামময় ভিক্ষা সংগ্রহ। সেই ভিক্ষার অর্থেই পূজা হয়। রঙ মেখে নাচা আর জ্বলন্ত অঙ্গারের উপর হাঁটা হয়ে গেছে আগের রাতে। তন্ত্রসাধনার পরে সবাই গোল হয়ে কীর্তন গেয়েছে আর সেই বৃত্তের মাঝে হয়েছে মহাদেবের নৃত্য। আজ হবে চড়ক-দোল। পূজা-অর্চনাশেষে সন্ন্যাসীদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে বাণ বিঁধে দেওয়া হবে আর পিঠের দুটো বাণের সাথে দড়ি বেঁধে চড়কগাছে ঘুরানো হবে। বাণেরও নামভেদ আছে- জিহ্বাবাণ, পাশবাণ, বাহুবাণ, কণ্ঠবাণ, পৃষ্ঠবাণ। নাম শুনেই প্রয়োগ বোঝা যায়।

নিরঞ্জন বাবুর সাক্ষাৎকার নিতে আসা ‘শেষ টিভি’র এক রিপোর্টার জানতে চান আমরা কোথায় লিখি। বললাম, ‘ব্লগ’।
তাঁকে একটু বিভ্রান্ত দেখায়।
-জ্বি?
-ব্লগ…
-জ্বি?
“ওইটা আপনি বুঝবেন না… আপনি নিজের কাজ করেন…” মুস্তাফিজ ভাইয়ের কথায় ভদ্রলোক নিরস্ত হন।

অর্ধনারীশ্বর মহাদেবের বিগ্রহের আগমনীবার্তা পেয়ে নিরঞ্জন বাবু বিরতি নেন। তাঁকে অনুসরণ করে আমরাও যাই বিগ্রহদর্শনে। বিগ্রহের অর্ধেক নারী(দুর্গা), অর্ধেক পুরুষ(শিব)। নারী অংশের বাহন সিংহ আর পুরুষ অংশের বাহন ষাঁড়(নন্দী)। মহাদেব ও তাঁর অর্ধাঙ্গিনী পার্বতীর শক্তির সমন্বিত রূপ এই বিগ্রহ। নারীরা উলুধ্বনি দেন। পুরুষেরা বাজান শিঙ্গা। মন্ত্রপাঠ ও পূজাশেষে ভক্তগণ ষাষ্ঠাঙ্গ প্রণাম করে প্রসাদ হিসেবে হাতের তালুতে দুধ পান।

অর্ধনারীশ্বর বিগ্রহ ও পূজা

বিকেল চারটার আগে চড়ক-দোল শুরু হবে না। দুপুরের খাবার খেতে আমরা ফিরে যাই মুন্সিবাজারর সেই হোটেলে। ফিরে এসে ঘোরাঘুরি আর ছবি তোলা চলতে থাকে।

ছবি তুলতে গাছে চড়েছেন দুজন

দিঘির পাড়ে শিঙ্গা, মাদল বা অন্য কোনো বাদ্যহাতে কোনো এক তরুণকে ঘিরে নাচে একদল বালক ও কিশোর। সবার কোমরে এক খণ্ড লাল কাপড় জড়ানো।

ফটোগ্রাফার-দলের চোখ এড়িয়ে আমি মেলার খাবার চেখে দেখতে থাকি আর মজার মজার জিনিস নেড়েচেড়ে দেখতে থাকি।

মেলার খাবারদাবারের এক অংশ

নানান রঙের নন্দী

একটা খেলনা কিনছি এমন সময় ‘শেষ টিভি'র সেই রিপোর্টার আবারো হাজির। তিনি আমার বক্তব্য ধারণ করতে চান। বেশ বেশ! দিলাম বক্তব্য। এবার তিনি আবারো জানতে চান আমি কোথায় লিখি। আবারো বললাম।
-ব্লগ।
-জ্বি?
-বি এল ও জি = ব্লগ
-আমি ঠিক বুঝতে পারতেসি না।
-আপনি বোধ হয় ইন্টারনেট ইউজ করেন না তেমন।
-ইন্টারনেট ইউজ করি, কিন্তু তাও বুঝতে পারতেসি না।
-ব্লগ হলো অনলাইন জার্নাল।
-ও আচ্ছা, বুচ্ছি। তা আপনি কোন পোস্টে আছেন?
-এইটা অনেকটা ফ্রিল্যান্স জার্নালিজমের মতো। (এবার একটু তব্দা খেয়ে গেছিলাম)
-ও আচ্ছা আচ্ছা। এইবার বুচ্ছি। ফ্রিল্যান্স জার্নালিস্ট।
তিনি আশ্বস্ত হন এইবার।

আমি তাঁর হাত থেকে ছাড়া পেয়েই লাফাতে লাফাতে মুস্তাফিজ ভাই আর শাওনদাকে গিয়ে জানাই এই গল্প। হাতে অনেক সময় তখনো। সময় এখানে খুব ধীর। তবে সুখের কথা হলো দিঘিটা এত সুন্দর যে পাড়ে বসে তার দিকে চেয়ে থেকেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটিয়ে দেওয়া যায়।

দিঘির উত্তরের পাড়

উত্তরের পাড় থেকে দিঘির রূপ

কলার ভেলায় বসানো কালীপ্রতিমা ততক্ষণে দিঘির পাড় ঘুরে এসে থিতু হয়েছে উত্তরপাড়ের গাছতলায়।

কালীপ্রতিমা ও শিঙ্গাহাতে যুবক

চারটার দিকে চড়ক গাছ প্রস্তুত হয়। তার গোড়ায় ফুল দিয়ে, মন্ত্র পড়ে পূজা করেন একজন পুরোহিত।

চড়ক গাছের পূজা করছেন পুরোহিত

রোদ বেশ তেতে উঠেছে ততক্ষণে। চড়ক-দোলের সময়ও তাই পিছিয়ে যায়। জনসমাগম বাড়তে থাকে ক্রমশ। চারদিকে ধূপধুনোর গন্ধ। দিঘির পাড়ে শিঙ্গার ধ্বনি আর ভক্তদের একটানা ছন্দের তালে ঘোর লেগে আসে। দক্ষিণ পাড়ে বেশ আলোড়ন দেখা দেয়। সুর আর অসুরের সাজে দুই পুরুষের আগমন ঘটে। তাদের পেছনে বিশাল মিছিল। এরপর সুর-অসুরের যুদ্ধ মঞ্চস্থ হয়।

সুর ও অসুরের যুদ্ধ দেখছে উৎসুক জনতা

ষাষ্ঠাঙ্গ প্রণাম করছে সুর ও অসুর

যুদ্ধশেষে তারা দুজন ষাষ্ঠাঙ্গ প্রণাম করে অর্ধনারীশ্বর বিগ্রহকে। এরপর মাদল আর শিঙ্গার তালে তালে তাদের অনুসরণ করে ভিড় এগোয় দিঘির জলের দিকে যেখানে সন্ন্যাসীদের বাণবিদ্ধ করার প্রস্তুতি চলে। সেই একই ঘোরলাগা ছন্দের তালে তালে বাণবিদ্ধ করা হয় চারজনকে।

বাণবিদ্ধ করা হচ্ছে

এরপর সেই চারজন দীর্ঘ মিছিল নিয়ে এগিয়ে আসেন চড়ক গাছের দিকে। সময় তখন প্রায় ছয়টা। আধো অন্ধকারে চড়কগাছকে ঘিরে ভক্তকুল ও বাণবিদ্ধ সন্ন্যাসীদের ছন্দবদ্ধ নৃত্য অতিপ্রাকৃত ঠেকে। নৃত্যশেষে চড়ক গাছকে ষাষ্ঠাঙ্গ প্রণাম করে একে একে চড়কগাছে ওঠেন তাঁরা। ভক্তগণ তাঁদের হাতে কলা দেন। তাঁরা সেই কলা প্রসাদ হিসেবে ছুঁড়ে দেন ভক্তদের দিকে। কেউ কেউ নিজের সন্তানকেও সন্ন্যাসীদের হাতে তুলে দেন আশীর্বাদের জন্য।

প্রসাদ আর আশীর্বাদ শেষে সন্ন্যাসীদের পিঠের দুটো বাণ (দেখতে বড়শির মতো) চড়কের চার মাথায় বাঁধা একেকটা দড়ির সাথে বেঁধে চড়ক ঘোরানো হয়। হাততালি দিতে দিতে সাতপাক ঘোরার মধ্য দিয়ে শেষ হয় চড়ক-দোল।

কানে শুনতে যতটা ভয়াবহ আর নির্মম মনে হয়, দেখার অনুভূতি সম্পূর্ণই ভিন্ন। একটা অচেনা শিহরণ বয়ে যায় শিরদাঁড়া বেয়ে, গলার কাছে একটা গুমোট আবেগ দলা বাঁধে যেন। আপাতবিক্ষিপ্ত হিমেলকেও হতভম্ব দেখায়। আকাশে ঘন মেঘ। থেকে থেকে বিদ্যুত চমকাচ্ছে। সম্পূর্ণ অজানা একটা অনুভূতি নিয়ে আমরা ফিরে আসি চড়কের মেলা থেকে।

চড়ক-দোল শেষ

মুন্সিবাজার এসে আরেক দফা চা-টা খাওয়া হয়। সবাইকে বিদায় জানিয়ে রওনা হই ঢাকার উদ্দেশ্যে। এবার আমি মুস্তাফিজ ভাইয়ের পাশে। নির্ঘুম টানা তিনরাতের তাবৎ ঘুম এসে ভিড় করে আমার চোখে। মুস্তাফিজ ভাই জেগে থাকার জন্য গান ছাড়েন। সেই গানে আরো জমিয়ে ঘুম পায় আমার। মুস্তাফিজ ভাইয়ের “তাইলে আমিও ঘুমাই” হুমকিতে সেটা বারবার ছুটেও যেতে থাকে। অন্ধকার পথে পেছনের সিট থেকে কনডাক্টরের দায়িত্ব পালন করেন মাহবুব ভাই। এক সময় শুরু হয় তুমুল বৃষ্টি আর ধুলোঝড়। ঝড়ের সাথে পাল্লা দিয়ে গাড়ি এগিয়ে নিতে থাকেন মুস্তাফিজ ভাই। ভৈরবের কাছে এক হোটেলে রাতের খাবার খেয়ে যাত্রা চলতে থাকে। ঢাকায় যখন ঢুকি তখন রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা বাজে। পথ পাড়ি দেওয়া হয়েছে সাড়ে পাঁচশ কিলোমিটারেরও বেশি, একই দিনে দুইবার। ঘরে ফিরেই আছড়ে পড়ি বিছানায়। টানা চোদ্দো ঘণ্টার ঘুমশেষে জেগে উঠি টগবগে আনন্দ নিয়ে। চোখে নতুন কোনো ভ্রমণের অপেক্ষা …

পুরাণের কথা: দক্ষকন্যা সতী শিবকে বিয়ে করেছিলেন পিতার অমতে। তাই দক্ষরাজা যখন যজ্ঞের আয়োজন করেন তখন নববিবাহিত শিব-সতীকে আমন্ত্রণ জানান না। সতী বিনা আমন্ত্রণেই পিতৃগৃহে যেতে চাইলে শিব বারণ করেন। ক্রুদ্ধ সতী স্বামীর অনুমতি আদায়ের জন্য তৃতীয় নয়ন থেকে আগুন বের করতে থাকেন এবং কালী বা শ্যামায় রূপান্তরিত হন। এই মূর্তি দেখে ভীত শিব পালাতে গেলে সতী দশ মহাবিদ্যার রূপ ধারণ করে শিবকে দশ দিক দিয়ে ঘিরে ফেলেন আর শিব তাঁকে দক্ষযজ্ঞে উপস্থিত থাকার অনুমতিদানে বাধ্য হন। দক্ষযজ্ঞে গিয়ে পিতার কাছে কৈফিয়ত চান সতী। জবাবে রাজা দক্ষ শিবের সমালোচনা করলে উপস্থিত দেবদেবীগণ শিবকে নিয়ে হাস্যপরিহাস করেন। স্বামীর এ অপমান সইতে না পেরে দেহত্যাগ করেন সতী। স্ত্রীর দেহত্যাগের কথা শুনে যজ্ঞানুষ্ঠানে ছুটে আসেন মহাদেব। স্ত্রীর মৃতদেহ দেখে ক্রোধে উন্মত্ত শিব একটি দৈত্য সৃষ্টি করেন। দৈত্য যজ্ঞ লণ্ডভণ্ড করে দেয়। ক্রোধোন্মত্ত মহাদেব স্ত্রীর মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে যেভাবে ঘোরেন, চড়ক-দোল তারই প্রতিনিধিত্ব করে। উল্লেখ্য, সতীর আত্মত্যাগের অনুকরণেই হিন্দুধর্মে সতীদাহ প্রথা প্রবর্তিত হয়েছিল।


মন্তব্য

ashraf.bsk এর ছবি

আমি মৌলভীবাজার থেকেও এই খবর জানিনা।

নাশতারান এর ছবি

মক্কার হাজি হজ্জ পায় না।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

সুপ্রিয় দেব শান্ত (অতিথি) এর ছবি

ভালো লাগলো।

সুপ্রিয়এদব শান্ত

নাশতারান এর ছবি

হাসি

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

আরিফ (সিলেট) এর ছবি

অসাধারণ বর্ণনা। খুব ভাল লাগলো। ছবি সুন্দর হইসে আপনার।

নাশতারান এর ছবি

ধন্যবাদ। বর্ণনা খুব সহজ। যা ঘটেছে তা-ই। আপনার তোলা ছবিগুলো দেখার অপেক্ষায় রইলাম।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

স্পর্শ এর ছবি

বাহ! খুবই ইন্টারেস্টিং ব্যাপার। "চক্ষু চড়ক গাছ" নামে একটা বাগধারা ছিলো। এবার বুঝলাম কী নিয়ে!!

চড়কগাছে চড়তে কেমন লাগবে ভাবতেসি চিন্তিত

কেউ ডেডিকেটেড ভিডিও ক্যামেরা নিয়ে যায়নি? পুরো অনুষ্ঠানের অনেক কিছুই ভিডিও করার মত ছিলো মনে হয়। মুস্তাফিজ ভাইয়ের তোলা ছবিগুলোও দেখার অপেক্ষায় রইলাম।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

নাশতারান এর ছবি

চড়ক গাছে চড়লে লাগবে শিশুপার্কের দোলনার মতো(বাণগুলো উপেক্ষা করতে পারলে)।

ডেডিকেটেড ভিডিও ক্যামেরা নিয়ে গেছিলো ‘শেষ টিভি'। মুস্তাফিজ ভাইয়ের তোলা ছবির অপেক্ষায় আমিও রইলাম।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

Md. Mahbubur Rahman (Mahbub) এর ছবি

তোমার লেখা পড়ে মনে হচ্ছে আমি না গেলেও পারতাম..........তোমার লেখা পড়ে নিলেই হত !
অনেক ভাল লাগল। আর ছবি গুলোও বেশ ভাল তুলেছ (video clip is awesome).

নাশতারান এর ছবি

মন্তব্য ঘ্যাচাং [উপরের মন্তব্যটা ঘ্যাচাং করতে পারলে ভালো হতো। নিচে প্রায় একই মন্তব্যের জবাব দিয়েছি।]

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

নৈষাদ এর ছবি

......চমৎকার।

নাশতারান এর ছবি

ভ্রমণটা খুব চমৎকার ছিলো ...

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ছবি, ভিডিও এবং লেখা নিয়ে ব্লগটা ইন্টারেস্টিং হয়েছে। থাম্বস আপ।

পুরাণের কথা পড়ে একটু বিরক্তই হলাম। সব ধর্মেই অবিশ্বাস্য রকমের সব ফ্যান্টাসী দিয়ে ভর্তি। স্বামী অনুমতি না দিলে সতী বাপের বাড়ী যেতে পারে না, কিন্তু চোখ গরম আবার ঠিকই অনুমতি আদায় করে নেয়। বাপের বাড়ি গিয়ে আবার সেই স্বামীর দুঃখেই আত্মহত্যা করে! এর থেকে কিভাবে কিভাবে আবার চলে আসলো সতীদাহ - যেখানে ঘটে উল্টোটা, স্বামীর মৃত্যুর কারনে পুড়িয়ে দেয়া হয় স্ত্রীকে। ধর্মের নামের কত বর্বরোচিত কাজ মানুষ করে আসছে যুগে যুগে!!

নাশতারান এর ছবি

পুরাণের সব ঘটনাই তো এমন তীব্র। শাপ দিলে ফিরিয়ে নেওয়ার উপায় থাকত না, ভুল করে কোনো বিশাল বর দিয়ে ফেললে সেটা নাকচ করা যেত না। সেই বিচারে তীব্রতার মাত্রা কমিয়ে এনে স্বামীর অনুমতি ছাড়া কোথাও না যাওয়া, আবার চোখ গরম করে অনুমতি আদায় করা, তারপর স্বামীর অপমানের শোকে কাতর হওয়াটাকে দাম্পত্য বোঝাপড়া হিসেবে মানতে আমার আপত্তি নেই যদি ব্যাপারটা দ্বিপাক্ষিক হয়। স্বামীও স্ত্রীকে না জানিয়ে কিছু করবেন না, স্ত্রী রাজি না হলে বুঝিয়েসুঝিয়ে রাজি করাবেন, স্ত্রীর অপমানে কাতর হবেন ইত্যাদি। সতীদাহ প্রথায় যেমন সতী নারী স্বামীর সাথেই নিজ জীবনের ইতি টানে, একইভাবে মৃত স্ত্রীর সঙ্গে স্বামীও চিতায় চড়লে ভালো হতো। বর্বরতার কথা বলছি না, সামঞ্জস্যের কথা বলছি।
গুপ্তসাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠার আগে উত্তর ভারতে ‘সহমরণ’ প্রথার উল্লেখ পাওয়া যায় দেখলাম। তবে স্বেচ্ছায় প্রাণ বিসর্জনের এই প্রথা কেবল স্বামীহারা নারীদের জন্যই নির্ধারিত ছিলো না তখন। মৃতের বন্ধু, স্বজন, ভক্ত, দাস- যে কেউ প্রিয়জনের প্রতি ভালোবাসা আর আনুগত্যের প্রকাশস্বরূপ বেদনাতাড়িত হয়ে মৃত্যুকে বরণ করে নিতেন। পরবর্তীতে এই ‘আত্মত্যাগ’-এর দায় পুরোই নারীর উপর বর্তায়। সবাই যে স্বেচ্ছায় চিতায় চড়ত তাও নয়। অনেকক্ষেত্রেই মৃতব্যক্তির সম্পত্তি অধিকার করার লোভে আত্মীয়স্বজনেরা তার সদ্যবিধবা স্ত্রীকে ধরেবেঁধে, ঢাকঢোলের শব্দে কান্নার আওয়াজ চাপা দিয়ে মৃত স্বামীর সাথে চিতায় চেপে ধরত। ধর্মের আশ্রয়ে ধ্বংসযজ্ঞ সবখানেই হয় আর তার প্রধান বলি হয় নারী।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

ঈগল এর ছবি

চলুক

উজানগাঁ এর ছবি

বাহ্ ! পুরো প্রক্রিয়াটা সুন্দরভাবে ধরে ফেললেন লেখায়। ছবিলেখাভিডিও ভালো হয়েছে।

নাশতারান এর ছবি

নেটে নানান জায়গায় তথ্য পেলাম। সেগুলোই জুড়ে দিয়েছি। আপনার তোলা ছবিগুলো দেখার অপেক্ষায় রইলাম।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

Md. Mahbubur Rahman (Mahbub) এর ছবি

তোমার লেখা পড়ে মনে হচ্ছে আমি না গেলেও পারতাম..........তোমার লেখা পড়ে নিলেই হত !
অনেক ভাল লাগল। আর ছবি গুলোও বেশ ভাল তুলেছ (video clip is awesome).
"‘শেষ টিভি’"....."মাহবুব conductor" LOL

নাশতারান এর ছবি

আমার খেলনা ক্যামেরাই ভরসা। কালার কনট্রাস্ট ঠিক করে নিলে ছবিগুলো ভালোই দেখায় মাঝেমাঝে। আমার ব্যাটারিটা ঝামেলায় ফেলে দিচ্ছিলো আরেকটু হলে। সন্ধ্যা হতে হতে চার্জ জিরো ছুঁই ছুঁই। চড়কের ছবি তুলতে পারবো কি না সেই ভয়ে ছিলাম। শেষের ভিডিওটা যে করতে পেরেছি এ-ই রক্ষা। আপনার সাথে পরিচিত হয়ে ভালো লেগেছে।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

ফাহিম হাসান এর ছবি

উঁহু, খেলনা ক্যামেরা বলে কিছু নেই। ছবি তো ক্যামেরা তুলে না, তুলেন আপনি। তবে বাড়তি সুবিধার জন্য একটা এস এল আর কিনে ফেলতে পারেন। আপনার ফ্লিকারে ঢুঁ মেরে আঁচ করছি ছবি তোলায় আগ্রহ আছে বেশ। হাসি

নাশতারান এর ছবি

সামর্থ্য হলে জুতসই ক্যামেরা অবশ্যই কিনবো। তবে সচলে ছবি দেওয়া ছাড়া আর কোনো কারণে আজ পর্যন্ত ফ্লিকারে ঢুঁ মারি নাই। আমার আগ্রহের প্রকাশ ফেসবুকের অ্যালবাম পর্যন্তই।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

আরিফ (সিলেট) এর ছবি

আমার একটা ছবি ব্লগ লিখার ইচ্ছা ছিল চারক পূজার উপর কিন্তু সাহস এ কুলাচ্ছে না। কারন এর আগের লিখা ছবি ব্লগে মডেল এর ছবি নিয়ে যেভাবে সমালোচনা হয়েছে (তাও এমন না যে nude মডেল) তাতে চারক এর violence এ ভরা ছবি সচল এ দেওয়া যাবে কিনা বা উচিত হবে কিনা বুঝতে পারছি না ।

মুস্তাফিজ এর ছবি

সমালোচনা থাকবেই, আর সমালোচনার মাঝদিয়েই ভালো কিছু বের হবে। তাই বলে থেমে থাকা ঠিকনা।

...........................
Every Picture Tells a Story

নাশতারান এর ছবি

সচিত্র পোস্ট দিন। মডুরা আপত্তিকর ভাবলে আটকে দেবেন নাহয়। তবে ১৮+ ট্যাগ করে দেবেন আর ভেতরে যে ভায়োলেন্ট জিনিসপত্র আছে, দুর্বলচিত্তের লোকজন যেন না দেখেন- এগুলো শুরুতেই বলে দেবেন।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

ফাহিম হাসান এর ছবি

@ আরিফ: ছবি আসুক, লেখা আসুক, ছবি নিয়ে তর্ক হোক।

মুস্তাফিজ এর ছবি

মুন্সিগঞ্জ না, জায়গাটা মুন্সিবাড়ী।
ছবি লেখা ভিডিয়ো চমৎকার হয়েছে।

...........................
Every Picture Tells a Story

নাশতারান এর ছবি

ধন্যবাদ! Smiley

আমারও কেমন জানি লাগছিলো অবশ্য, কিন্তু মাথায় আসছিলো না। ঠিক করে দিলাম। আপনার রেকর্ডারে সেই মজার মন্ত্র/সুর আছে না? পারলে আপ করে দিয়েন কোথাও।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

পোয়েট অব এ ডিমাইজ এর ছবি

রোমাঞ্চকর বর্ণনা। চলুক

নাশতারান এর ছবি

না, রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হাসি

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

দ্রোহী এর ছবি

ভয়াবহ ভিডিওটা দেখে পেদা টিং টিং!

অসাধারণ ভ্রমণ ব্লগ! খাড়ার উপ্রে পাঁচ।

নাশতারান এর ছবি

কইসিলাম না পুরাই পেদা টিং টিং!

ভ্রমণীয় আর ভ্রমণ একই দিনে না হলে এটাই নাহয় দিয়ে দিতুম Smiley

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

মুস্তাফিজ এর ছবি

হ, আমার ভাত মারতেছে চোখ টিপি

...........................
Every Picture Tells a Story

নাশতারান এর ছবি

আপ্নে পোলাও খান তাইলে দেঁতো হাসি

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

রাসেল মাহমুদ এর ছবি

যদি যাওয়ার রাস্তা বাতলে দিতেন তাহলে নিশ্চই পরের বার আমরাও যেতে পারতাম।

নাশতারান এর ছবি

মৌলভীবাজার-মুন্সিবাড়ি-বিষ্ণুপুর গ্রাম-ছয়ছিটির দিঘি

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

ভ্রমণীয় সম্পাদকদের তো একেকটা জটিল অভিজ্ঞতা, তবে নজু ভাইয়ের পহেলা বৈশাখ অভিজ্ঞতা আপনাদের চাইতেও জটিলতর। ফিরে এলে বিস্তারিত শুনে নেবেন।

তবে আজকে কি অবস্থায় জানি না, ফোন যাচ্ছেনা, বোধহয় বান্দরবান পাহাড়ের ভেতরে এখনো।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

নাশতারান এর ছবি

নজু ভাই বলেছিলেন গাড়িতে বসে কাজ করতে করতে যেতে। কিন্তু মাথায় তখন ভূত চেপেছিলো। এখন মনে হচ্ছে না গিয়েই ভালো হয়েছে। গেলে 'ভ্রমণীয়'র কী হতো কে জানে। আপলোড করা তো দূরের কথা, নেটওয়ার্কের অভাবে উনি পোস্টও দিতে পারলেন না ওখান থেকে। রাত এগারোটার বাস, বের হতে হতো তারও আগে। ইবই ঠিকঠাক হতে হতে ভোর পাঁচটা। সাত-আট ঘন্টা নেটবুকে চার্জ থাকত না। ইবুক দেরিতে বেরুলে কেউ আমাকে মারতেন না নিশ্চয়ই, তবে আমার নিজের কাছে খারাপ লাগত।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

অদ্রোহ এর ছবি

শিরোনামটা দেখে ধাঁই করে পথের পাঁচালীতে অপূর্বর চড়কের পূজো দেখার বায়নার কথা মনে পড়ে গেল।

মুশকিল হল, নেটের বিটকেলেপনার জন্য ভিডিওটা দেখতে পারছিনা। তবে শেষের ছবিগুলো আক্ষরিক অর্থেই রোমহর্ষক, হঠাৎ দেখলে মনে হবে চড়কে বুঝি মড়ক লেগেছে। যাই হোক, লেখা দুর্দান্ত, আরেকবার এবেলা বলে যাই।

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

নাশতারান এর ছবি

শেষের ভিডিওটা দেখার চেষ্টা কোরো। আসল জিনিস এর ধারেকাছেও না যদিও, তবু আঁচ করতে পারবে।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

আয়নামতি1 এর ছবি

দারুণ লাগলো ছবি আর লেখা(ডরে ভিডিও দেখিনাই ইয়ে, মানে... )! 'তাইলে আমিও ঘুমিয়ে পড়লাম' কমন পড়লো কিন্তু দেঁতো হাসি সতী কী বোকা ছিলেন রে বাবা! যার এত ক্ষমতা, তিনি তো দিব্ব্যি স্বামী(শিব) কে 'তুমি থাকো মিনশে, আমি চললাম' বলেই বাপের বাড়িমুখে যাত্রা করতে পারতেন। তা না করে খামোখাই ধুনপুন খাইছে নববর্ষের শুভেচ্ছা থাকলো বুনোহাঁস।

নাশতারান এর ছবি

চেনা চেনা লাগে Smiley

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

আয়নামতি1 এর ছবি

গোয়েন্দা ঝাঁকানাকারে এব্যাপারে নিযুক্তি দেয়া হউক শয়তানী হাসি "তোমার সাথে আমার, কিংবা আমার সাথে তোমার" কখনো আলাপ পরিচয় হয়েছিলো বলে মনে পড়েনা। তবে আমি আরো একজন বুনোহাঁসকে চিনি, তিনি রীতিমত পুরুষমানুষ খাইছে

নাশতারান এর ছবি

সেই পুরুষ বুনোহাঁসের সাথে আলাপ করিয়ে দিন তাহলে চোখ টিপি

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

সবুজ পাহাড়ের রাজা. এর ছবি

অসাধারণ পোস্ট।
অনেক কিছু জানলাম দিদি।
খুব ভাল লাগলো।

ছবিগুলো দারুন হইসে............

নাশতারান এর ছবি

"দারুণ একটা ভ্রমণ"-এর গল্প বলতে পেরে আমারো ভালো লেগেছে হাসি

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

সারাদিন কামলা খেটে এই মধ্যরাতে এসে পড়বার সময় বের করলাম (এখনো কামলাগিরি টু বি কন্টিনিউড)। বক্তব্য হলো -

১. মাথার মধ্যে 'জাআন আমার জাআআন' ঢুকে গেল!

২. জিটকের পিংপং বন্ধ করার উপায় আছে, মনে করিও জানাবোনি, আমারটা মেলা আগেই অফ করে দিয়েছি।

৩.

বললাম, ‘ব্লগ’।
তাঁকে একটু বিভ্রান্ত দেখায়।
-জ্বি?
-ব্লগ…
-জ্বি?
“ওইটা আপনি বুঝবেন না… আপনি নিজের কাজ করেন…” মুস্তাফিজ ভাইয়ের কথায় ভদ্রলোক নিরস্ত হন।

গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি

৪. মধ্যরাতে খাবারের ছবি দেখে আমার বলতে ইচ্ছা করছে - "ম্মাহ্‌! ক্ষুদা পেয়েছ ম্মাহ্‌!"
একথা বিকালেও তোমার আপ করা ছবি দেখে মনে হয়েছিল, সেজন্যে তোমাকে মাইনাস।

৫. আমার সাপের খেলা দেখার শখ অনেকদিনের!

৬. শেষের ছবিটা অসাধারণ। ছবিটা আমার কাছে একাধারে শৈল্পিক, প্রতিকী, প্রতিবাদী, সমর্পন নির্দেশক মনে হয়েছে। হয়তো 'চড়ক'-এর পুরো ব্যাপারটাই তাই। এই একটা ছবি দিয়েই অনেক কথা বলা হয়ে গেছে মনে হয়েছে, চমৎকার উপসংহার এই চমৎকার লেখাটার।

৭. আমার পড়া অন্যতম দুর্দান্ত ভ্রমণাভিযান এটা। এত সুন্দর করে একাধারে সংক্ষিপ্ত কিন্তু জরুরি তথ্য সম্বলিত, গোছানো, প্রাণবন্ত লেখা অনেকদিন পড়ি নাই। যে এরকম ভ্রমণকাহিনি লিখতে পারে, তার কাছ থেকে ভ্রমণের ই-বুক বঞ্চিত হলো ভেবে খারাপ লাগছে।

৮. ভেবেছিলাম আমার যে যাওয়া হলো না, সেজন্যে আফসোস করবো, কিন্তু আসলেই তোমার লেখা, ছবি, ভিডিও দিয়ে নিজে উপস্থিত না থাকার দুঃখ পুষিয়ে গেল। সাব্বাশ!

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

নাশতারান এর ছবি

১) "জাআন আমার জাআআন" গানটাই অমন। মাথায় ঢুকলে বের হতে চায় না। তবে নাশতা খাওয়ার সময় পিছন ফিরে যখন শুনছিলাম, শুরুতে গানের কথাগুলো মনে হয়েছিলো "মনটা সবাই নিতে পারে, আমি তোমার প্রাণটা নিতে চাই..." >:)

২) ডিজিটাল পিংপিং বন্ধ করতে জানি। তবে প্রায়ই আমি ভুলে যাই জবাব দিতে, তাই আবার অন করে দিয়েছি।

৩) গড়াগড়ি দিয়া হাসি

৪) ওখানে তেলেভাজা পিঠাকে বলে সন্দেশ পিঠা। বেশ ফিকে মিষ্টি। আমার ভালো লেগেছে দেঁতো হাসি

৫) খেলার চেয়ে বেশি ইন্টারেস্টিং সাপুড়ে। চোখে ঘন সুরমা, গলায় মোটা মালা আর দারুণ বাগ্মিতা- খুবই চমকপ্রদ ক্যারেক্টার।

৬) প্রথামাফিক প্রতিবছর একবার ঘোরে চড়ক গাছ। তার অংশগ্রহণ নেই, সে আছে অনুষঙ্গ হয়ে। ছবিটা আমার কাছে নির্লিপ্ততার প্রতীক। আর এই সমগ্র প্রক্রিয়াকে মনে হয়েছে যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে আত্মশুদ্ধির প্রচেষ্টা। এর পক্ষে-বিপক্ষে চাইলে অনেককিছুই বলা যায়। আমি নিরঞ্জন বাবুর কাছে জানতে চেয়েছিলাম যেসব শিশু-কিশোর চড়কে উঠছে, তারা স্কুলে যায় কি না। এ যুগের শিশুদের দৃষ্টিভঙ্গি জানার আগ্রহ ছিলো। কিন্তু বিগ্রহের আগমনে আলাপটা আর শেষ হয়নি।

৭) ধন্যবাদ! ধন্যবাদ! উলটোটাও তো হতে পারে। সবার কাহিনি পড়ে পড়েই হয়ত জোশ বেড়ে গেছে হো হো হো

৮) এটা জেনে খুশি হলাম হাসি

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

ফাহিম হাসান এর ছবি

ছবি, ভিডিও, লেখা - সবমিলিয়ে রাপুখাপাং (শব্দটা শেখার পর ব্যবহার করতে পেরে স্বস্তি লাগছে)।

ই-বুকের শানে নজুল পড়ে মনে হল "সব্বোনাশ!"

নাশতারান এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

আপলোড পার্সেন্টেজ যখন ৯৭, তখন যাযাপুকে বলছিলাম, "such a breathtaking moment!" হো হো হো

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

রু (অতিথি)  এর ছবি

দারুণ লিখেছেন। সারারাত জেগে জার্নি করার অনেক অভিজ্ঞতা আছে। সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে ভোর হওয়ার আগে বের হয়ে পরা, চোখের সামনে অন্ধকার ফিকে হয়ে আসে, সূর্য ওঠা; অসাধারণ লাগে।

নাশতারান এর ছবি

ধন্যবাদ। রাতভর জার্নি আমারো ভালো লাগে। গতির মধ্যে ঘুমুতে ভালো লাগে আমার।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

গৌতম এর ছবি

সুন্দর লেখা। সুন্দর ছবি।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

নাশতারান এর ছবি

হাসি

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

অসাধারণ বর্ণনা, ছবি ও ভিডিও দেখে চোখ সত্যি চড়কগাছ! আপনাদের সাথে ঘুরে আসতে পারলে মন্দ হতো না।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

নাশতারান এর ছবি

ধন্যবাদ। আপনি যে ঢাকায় থাকেন জানতাম না। দুঃখিত।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

অসাধারণ, সবকিছু!!!

নাশতারান এর ছবি

Smiley

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

দারুণ বর্ণনা...

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নাশতারান এর ছবি

ধন্যবাদ, নজু ভাই। আপনার ভ্রমণকাহিনি কিন্তু বকেয়া আছে। আপনিও লিখে ফেলেন।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

কৌস্তুভ এর ছবি

ছবিগুলো ফেসবুকে দেখেছিলাম, দীর্ঘদিন সচলে ঢোকা হয়নি বলে লেখাটা এইবার পড়লাম। ভাবছিলাম ভালো লেগেছে সেটা বলে যাই, কিন্তু তেল দেওয়ার অভিযোগে জেলহাজত হতে পারে এই ভয়ে চেপে গেলাম।

নাশতারান এর ছবি

ব্রেশ ব্রেশ

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

দময়ন্তী এর ছবি

আরিব্বাস! এইটা দারুণ তো! লেখা, ছবি মিলিয়ে ব্যপক লাগল৷

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।