অন্ধকারে লাল সবুজ

এনকিদু এর ছবি
লিখেছেন এনকিদু (তারিখ: রবি, ১৭/০৮/২০০৮ - ৪:৫৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১৪ আগস্ট মধ্য রাতের আর একঘন্টা বাকি । আমি দাঁড়িয়ে আছি র‌্যাংস ভবনের সামনে, যেদিকে রাংস ভবন তার বিপরীত দিকে । ফার্মগেট থেকে হেঁটে এসেছি কারন বাস পাইনি, এখন রাস্তা পার হয়ে যাব তেজগাঁওয়ের দিকে । গন্তব্য বেশ দূরে, তবে আপাতত লক্ষ্য মহাখালি । সেখানে গিয়ে বাসে উঠার চেষ্টা করব । এতদূর হেঁটে যাচ্ছি তার আরো একটি কারন হল হাঁটতে আমার ভাল লাগে । হাঁটতে হাঁটতে রাস্তার চারপাশে নগর জীবনের টুকরো টুকরো ঘটনা দেখি । কখনো কখনো মাথায় চিন্তা ভর করে, চিন্তা করতে করতে অনেকদূর হেঁটে চলে যাই কোনরকম ক্লান্তি বোধ করা ছাড়াই । কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের ইশারা না পাওয়া পর্যন্ত রাস্তার গাড়ি গুলো থামবে না, আমারো রাস্তা পার হওয়া হবে না । তাই ফুটপাথে দাঁড়িয়ে ভাঙ্গা র‌্যাংস ভবনের দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকি - আগামী কাল ১৫ই আগস্ট । শোক দিবস । এখান থেকে সামান্য দূরেই তো পর পর অনেক গুলো গুরুত্বপূর্ণ সরকারী দপ্তর, ভবন, স্থাপনা । সেখানে কি শোক দিবস পালনের জন্য আজ রাতে আলাদা করে কিছু করা হচ্ছে ? নাকি আগামী কাল ছুটি তাই সব সরকারী কর্মকর্তা করমচারীরা আগেভেগে কেটে পড়েছেন । র‌্যাংস ভবন ভাংছে যেই শ্রমিকেরা, তারা কি আগামী কাল ছুটি পাবে ? শোক করবে, নাকি কাজ করবে ?

রাস্তা পার হই কয়েক মিনিট পর । রাস্তার এই অংশটা একটু অন্ধকার, কিন্তু সামনেই প্রচুর আলোর বন্দোবস্ত রয়েছে । আলোর উৎস হল প্রধান মন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রধান তোরন । আমার দেশের সবচেয়ে গুরুত্ত্বপূর্ণ সরকারী দপ্তর, প্রধান মন্ত্রীর অবর্তমানে যার নাম এখন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় । তার চারপাশে কিছুদূর পর পর দুই একজন করে নিরাপত্তা-রক্ষীকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায় । কাজেই অন্ধকারেও নিজেকে খুব একটা নিরাপত্তাহীন বলে মনে হয় না । এগিয়ে যাই আমি স্বাভাবিক ভাবেই ।

দুই পা এগিয়ে যাওয়ার পর চোখ পড়ে দুটি মেয়ের দিকে, প্রায় তিরিশ কদম দূরে । আমারই মত বয়স হবে হয়তো । সুন্দরী কিনা আধা আলো আধা অন্ধকারে ভাল মত বুঝতে পারিনা, তবে আকর্ষনীয়া হবার প্রয়াস তাদের বেশভূষায় স্পষ্ট । দুজনেরই পড়নে হাল ফ্যাশনের সালোয়ার-কামিজ, কাপড়ে কিছুটা ঝিলমিল আধা অন্ধকারেও স্পষ্ট বুঝা যায় । আমি যেদিক থেকে আসছি সেদিক থেকে প্রথমে যার উপর চোখ পড়ে, তার পড়নে লালচে রঙের পোষাক । দুজনের মধ্যে সেই কিছুটা লম্বা, প্রায় আমার কাছাকাছি । অন্যজনের পড়নে হাল্কা সবুজ । লাল আর সবুজ পাশাপাশি দাঁড়িয়ে রাস্তার দিকে মুখ করে নিজেদের মধ্যে আলাপে মগ্ন । আমি আরো একটু এগিয়ে গেলে লাল আমার দিকে ক্ষনিকের জন্য তাকিয়ে আবার মুখ ফিরিয়ে নেয় । কিছু একটা অস্বাভাবিকতা আছে তাদের মধ্যে, কিন্তু সেটা কী আমি ধরতে পারিনা । এরা কি হিজড়া ? গতকাল রাতেই অফিস থেকে বেরিয়ে রাস্তায় সেরকম দুজনকে দেখেছিলাম । পরনে পুরোদস্তুর মেয়েলী পোষাক কিন্তু পা ছিল খালি, চলাফেরা আর হাব-ভাব অনেকটা মাস্তানদের মত । রাস্তার পাশের দোকান থেকে চাঁদা তুলতে এসেছিল তারা ।

কিন্তু লাল সবুজের পায়ে জুতা দেখা যাচ্ছে, দাঁড়ানর ভঙ্গীটাও তো মেয়েদেরই মত । তাহলে অস্বাভাবিকতাটা কোথায় ? এসব ভাবতে ভাবতে আমি তাদের একেবারে কাছে চলে এসেছি । পাশ কাটিয়ে চলেই যাচ্ছিলাম, হঠাৎ লাল আমার দিকে তাকিয় বলে ওঠে, " এই শোনো " ।

আমি চলা না থামিয়েই তার দিকে তাকাই । দুজনেই আমার দিকে মুখ করে ঘুরে দাঁড়ায় । " **** করাবে ? ", প্রশ্ন করে লাল । উচ্চারন বেশ মার্জিত, অনেকটা প্রমিত বাংলা উচ্চারনের মতই, তবে নিখুঁত না । থতমত খাই আমি, কিন্তু স্তম্ভিত হই না । আগেই বুঝেছিলাম - কিছু একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার আছে । "না" বলে আমি চলে যেতে চেষ্টা করি । লাল এগিয়ে এসে খপ করে আমার ডান হাত চেপে ধরে, " এসো না, মাত্র বিশ টাকায় খুব সুন্দর করে **** করে দেব " । বেশ শক্ত করেই ধরেছে, আমার কব্জিতে গেড়ে বসছে নখ গুলো । "না" আবারো বলি আমি, এবার একটু ভারী ভাবে, তারপার ঝাঁকি দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে হেঁটে চলে আসি আর কিছু বলার বা করার সুযোগ না দিয়েই । এরপর বিশ কদম আর পিছন ফিরে তাকালাম না । বিশ কদম পর ঝোপের মধ্যে একজন নিরাপত্তা-রক্ষীকে দেখতে পেলাম 'দায়িত্বরত' অবস্থায় ।

একটু আগে লাল-সবুজের সাথে যেখানে দেখা হল সেই জায়গাটা এখান থেকে স্পষ্ট দেখা যায় । এই লোকের নিরাপত্তাতেই সম্ভবত লাল-সবুজ খদ্দের খুঁজে ফুটপাথে দাঁড়িয়ে, খদ্দেরকে সেবা প্রদান করে ফুটপাথের পাশে ঝোপের মধ্যে নিয়ে আর রাত শেষে নিরাপত্তা রক্ষীকে তাদের আয়ের কিছু অংশ দিয়ে যায় । বুঝলাম, সরকারী চাকুরির পাশাপাশি জনাব নিরাপত্তা-রক্ষীকে এরকম দুই একটা ছোটখাট খন্ডকালীন চাকুরীও করতে হয় । সরকারী চাকুরীর বেতনে চলা কষ্টকর । আবার আমার মাথায় চিন্তা এসে গেছে । চিন্তাকে সঙ্গী করে বাকি পথ হেঁটে চলে যাব নিশ্চিন্তে ।

একটু পরেই এসে পড়ি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সামনে । রাস্তার দুই দিকেই প্রচুর আলোর ব্যবস্থা । আমি এখন সাদা মার্বেল পাথরের বেদীতে সাজিয়ে রাখা তিনটি ধাতব মুক্তা সমেত একটি ফোয়ারা পার হচ্ছি । ডানে তাকিয়ে দেখা যায় কার্যালয়ে ঢোকার প্রধান তোরন । ভেতরে কোথাও একটা লাল সবুজ রঙের পতাকা উড়ান হয় প্রত্যেকদিন সকালে । আগামীকাল সেটা উড়বে অর্ধ্বনমিত হয়ে । সূর্যাস্তের সময় তা আবার নামিয়ে ফেলা হবে । তারপর রাত গভীর হলে লাল সবুজ এই ফুটপাথে এসে দাঁড়াবে, পথচারীদের মধ্যে থেকে খদ্দের ধরার চেষ্টা করবে । মাত্র বিশ টাকায় "সুন্দর করে **** করে দেয়ার" অঙ্গীকার নিয়ে বিজ্ঞাপণ করবে । হায়রে আমার ১৫ই আগস্ট । জাতীয় শোক দিবস তো প্রতিদিনই, যতদিন লাল-সবুজ গভীর রাতে অন্ধকার ফুটপাথে দাঁড়াবে । এসব চিন্তা করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলি । চিন্তা করতে করতে হেঁটে চলে এসেছি শাহিনবাগের কাছে, ফ্যালকন হলের সামনে ।

এমন সময় হঠাৎ করে মাথায় এল , লাল-সবুজের মধ্যে অস্বাভাবিক কী দেখেছিলাম । তাদের সাথে কোন পার্স বা ভ্যানিটি ব্যাগ ছিলনা । মাত্র বিশ টাকা দাম যাদের, ব্যাগ বহন করার মত "ভ্যানিটি" সম্ভবত তাদের হয়না ।


মন্তব্য

রায়হান আবীর এর ছবি

কঙ্কি? অ্যাঁ

=============================
তু লাল পাহাড়ীর দেশে যা!
রাঙ্গা মাটির দেশে যা!
হেথায় তুরে মানাইছে না গ!
ইক্কেবারে মানাইসে না গ!

এনকিদু এর ছবি

হাঁ ঘটনা সত্য । সেই সময় রাস্তায় দেখা হলে তোমাকে দেখাতে পারতাম আমার ডান হাতের কব্জির কাছে লাল এর নখের দাগ ।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

ইমরুল কায়েস এর ছবি

ভাল্লাগে না ।
-----------------------------------------------------
কেউ একজন অপেক্ষা করে

রাফি এর ছবি

নির্মম বাস্তবতা...

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

রণদীপম বসু এর ছবি

ভেতরে কোথাও একটা লাল সবুজ রঙের পতাকা উড়ান হয় প্রত্যেকদিন সকালে । আগামীকাল সেটা উড়বে অর্ধ্বনমিত হয়ে । সূর্যাস্তের সময় তা আবার নামিয়ে ফেলা হবে । তারপর রাত গভীর হলে লাল সবুজ এই ফুটপাথে এসে দাঁড়াবে, পথচারীদের মধ্যে থেকে খদ্দের ধরার চেষ্টা করবে । মাত্র বিশ টাকায় "সুন্দর করে **** করে দেয়ার" অঙ্গীকার নিয়ে বিজ্ঞাপ করবে । হায়রে আমার ১৫ই আগস্ট । জাতীয় শোক দিবস তো প্রতিদিনই, যতদিন লাল-সবুজ গভীর রাতে অন্ধকার ফুটপাথে দাঁড়াবে ।

খুবই স্বাভাবিক, তবু ধাক্কা দিলেন একটা ! আহা লাল-সবুজ !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

এনকিদু এর ছবি

আজ রাত দশটার দিকে সেই একই রাস্তা দিয়ে এসেছি গাড়ি চড়ে । আসার সময় দেখলাম গাছের গায়ে হেলান দিয়ে ঝিলমিলে পোষাক গায়ে এক মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে । আজকে আর অবাক হলাম না ।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

সবজান্তা এর ছবি

অনেক আগে আমি পুরানো ঢাকায় আমার এক কাজিনকে টুকি-টাকি অঙ্ক - বিজ্ঞান দেখানোর জন্য যেতাম প্রত্যেক শুক্রবার। গল্প-সল্প করে, খাওয়া দাওয়া করে রোজই বের হতে বের দেরি হয়ে যেত। প্রায় দিনই সাড়ে এগারোটার দিকে থাকতাম রমন পার্কের সামনে রিকশাতে। সরাসরি এমন আহবান না পেলেও, দায়িত্বরত বহু পুলিশকেই দেখেছি দায়িত্বপালন করতে। আরো অনেক কিছুই দেখেছি, যা আর বলতে ইচ্ছা করে না, অনেক কিছুই মনে নেই।

এই সবকিছু দেখতে দেখতে আজকাল খুব ক্লান্ত বোধ করি।

লেখাটা ভালো হয়েছে।


অলমিতি বিস্তারেণ

এনকিদু এর ছবি

ধন্যবাদ ।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সৈয়দ মুজতবা আলী ঢাকার দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকায় একটি কলাম লিখতেন। কলামের শিরোনাম ছিলো "পরিবর্তনে অপরিবর্তনীয়"। এই লেখাটা পড়তে পড়তে মনে পড়ে গেলো সেই শিরোনাম।

সত্তর দশকে রাতের ঢাকার রাস্তায় একই বাস্তবতা বিদ্যমান ছিলো, ৩০ বছর পরেও আছে। আসলে আমাদের আকাঙ্ক্ষা যা-ই হোক বা যা কিছুই উচিত মনে হোক, আমাদের চরম হতাশার কারণ ঘটিয়ে কিছু কিছু জিনিস কিছুতেই পালটায় না আমাদের সমাজে। একটি গানে যেমন ছিলো : That's just the way it is, some things never change...

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

স্বপ্নাহত এর ছবি

এইসব দেখতে আর পড়তে সত্যিই আর ভাল্লাগেনা।

---------------------------

থাকে শুধু অন্ধকার,মুখোমুখি বসিবার...

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

এনকিদু এর ছবি

বদলে দিন ।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

স্বপ্নাহত এর ছবি

খাড়ান, বাংলালিংক সীম টা উঠায় লই।

---------------------------

থাকে শুধু অন্ধকার,মুখোমুখি বসিবার...

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

এনকিদু এর ছবি

মন খারাপ


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

স্বপ্নাহত এর ছবি

কি হইলো? মন খারাপ করেন ক্যান ? মন খারাপ

---------------------------

থাকে শুধু অন্ধকার,মুখোমুখি বসিবার...

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

স্পর্শ (অফলাইন) এর ছবি

মনটা খারাপ হয়ে গেল। নির্মম বাস্তবতা। মন খারাপ

মুশফিকা মুমু এর ছবি

অ্যাঁ মন খারাপ
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

পলাশ দত্ত এর ছবি

এমন সময় হঠাৎ করে মাথায় এল , লাল-সবুজের মধ্যে অস্বাভাবিক কী দেখেছিলাম । তাদের সাথে কোন পার্স বা ভ্যানিটি ব্যাগ ছিলনা । মাত্র বিশ টাকা দাম যাদের, ব্যাগ বহন করার মত "ভ্যানিটি" সম্ভবত তাদের হয়না ।

হ্যাটস্ অফ।। এর বেশি কিছুই না।।

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

এনকিদু এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ ।

কিছুদিন ঢাকার বাইরে ছিলাম, তাই জবাব দিতে একটু দেরি করে হয়ে গেল ।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

কীর্তিনাশা এর ছবি

ভালই নাড়া দিলেন।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

এরা তো কিছুটা মার্কা মারা।
এক সময় ঢাকার একটি তিন তারা হোটেলে ফ্রন্টডেস্ক অফিসারের ট্রেনিং নিচ্ছিলাম। তো তখন দেখেছি হরেক রকমের সুন্দরীরা আসছে যাচ্ছে। সবাই দেখা করতে এসেছে। কিন্তু যাওয়ার সময় কারো মাথার চুল দেখতাম ভেজা। পিঠের কাছে বিন্দুবিন্দু পানির ফোঁটাও।
কৌতুহলী হয়ে একদিন যে অফিসারটির সঙ্গে দাঁড়িয়েছিলাম তাকে জিজ্ঞেস করলাম- ঘটনা কি?
ততদিনে ট্রেনিঙের প্রায় দেড়মাস পেরিয়ে গেছে। তিনি বললেন- এতদিন পরে দেখলেন?
- না। আগে দেখলেও নতুন অবস্থায় এমন প্রশ্ন করা ঠিক হবে কি না এ নিয়ে চিন্তিত ছিলাম।
- এরা হইলো ভদ্রলোকের ভদ্র বউ। পার্টটাইম একহাজার টাকা কামাই করে গেল।

আমি কী আর বলবো। পেশাটার প্রতি নির্ভরতা হারিয়ে ফেললাম। তবুও কোনো কাজের মাঝপথে থেমে যেতে আমার ইচ্ছে হয় না। ট্রেনিং শেষ হবে হবে, পরীক্ষা সপ্তাহখানেক পর। তেমনি এক সন্ধ্যার দিকে দেখি মাথায় ঝাঁকড়া চুলের একজন অতি পরিচিত মহিলা। মিরপুরে থাকা কালীন মহিলাকে প্রতিদিন দেখতাম ঘর থেকে বেরিয়ে একটি সবুজ রঙের পাজেরোতে চড়তে। ভাবতাম কোনো এনজিওর ভালো কর্মকর্তা। কিন্তু হয়! আমার সেই ধারণাও হোচট খেলো!

____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

এনকিদু এর ছবি

এরা হইলো ভদ্রলোকের ভদ্র বউ। পার্টটাইম একহাজার টাকা কামাই করে গেল।

ভদ্রলোকেরা মনে হয় তাদের ভদ্র বউ দেরকে হাত খরচের টাকা দিতে খুব একটা আগ্রহী নন ।

যাহোক, আমি এদেরকে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লাল সবুজের সাথে এক কাতারে ফেলব না কোন হিসেবেই । এরা শখ করে আসেন তিন বা তদূর্ধ্ব তারকা বিশিষ্ট হোটেল গুলোতে "দেখা" করতে । ব্যাপারটা একজন প্রাপ্ত বয়ষ্ক মানুষের স্বাধীন সিদ্ধান্ত ।

তবে আপনি যেই হরেক সুন্দরীদের দেখতেন "দেখা" করতে এসেছে, শুনেছি তাদের মধ্যে কেউ কেউ বাধ্য হয়ে আসেন, শখের বশে না । আর সেক্ষেত্রে ব্যপারটা ঠিক একহাজার টাকার না, আরো বড় ব্যাপার থাকে । দূর্ভাগা কারো কারো ক্ষেত্রে তার "ভদ্রলোক" স্বামীপ্রবরটিও এতে জড়িত থাকেন । তাদেরকে আমি রাস্তায় দাঁড়ানদের সাথেই হিসেবে ফেলব ।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

s.azizul rajon এর ছবি

মধ্য রাতের ঢাকা এমনি হয়. অবাক হবেন না .

এনকিদু এর ছবি

অবাক খুব একটা হইনি । ব্যাথীত হয়েছিলাম ।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

obachirno এর ছবি

তবে একটা ব্যপার কি এসব কিছর জন্য আমাদের সমাজ ব্যবস্থা অনেক অংশে দ্বায়ী৷ একটা মেয়ে কখনোই ইচ্ছা করে এটা করে না তার কাছে শোক দিবসের চেয়ে বেচে থাকার আকুলতাটা অনেক বেশী মূল্যবান৷

এনকিদু এর ছবি

তাতো বটেই । ১৫ আগস্ট পালন করা বা না করাতে কারো থালায় ভাত একটু বেশি বা কম পড়বে না । আগে থালায় ভাত আসুক, তার পর না শোক দিবস । এটা ওদের দিক থেকে চিন্তা করলে ।

কিন্তু আমাদের মধ্যে যাদের থালায় ভাত থাকে, যতদিন ওদের একজনকেও এরকম করে রাস্তায় দাঁড়াতে হবে, ততদিন পর্যন্ত প্রতিটি দিনকেই জাতীয় শোকদিবস হিসেবে গন্য করা উচিৎ । আর "রাস্তায় দাঁড়ান" মানে আমি শুধু রাস্তায় দাঁড়ায় যারা তাদের কথা বলছি না, রাস্তা ছাড়াও আরো অনেক জায়গায় অনেক রকম করে দাঁড়িয়ে বা বসে থাকে যারা একই উদ্দেশ্যে তাদের সবাইকে হিসাবে আনতে হবে ।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

হাসান মোরশেদ এর ছবি

লজ্জা ও বোধ করি লজ্জা পায় । আমরা আর পাইনা ।

-------------------------------------
"শিয়রের কাছে কেনো এতো নীল জল? "

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।